৩ দিনের জোড়ে ইউনুস শিকদার স্যারের আলোচিত বয়ান

প্রফেসর ইউনুস শিকদার স্যারের বয়ান।
তারিখ : ১৭ই মার্চ ২০১৭ তারিখ শুক্রবার
স্থান : টঙ্গী ময়দান, টিনশেড মসজিদ
অনুষ্ঠান : ত্রৈমাসিক মশোয়ারা।
সময় : সকাল ১১.০০ টা।



(উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর পূর্ন বর্ননা)

বাদশা আকবর যে ছিলেন বাদশা আকবর? শুনেছেন না তার নাম? মোগল বাদশাহ। দীনে ইলাহী নামে আরেকটি ধর্ম চালু করেছেন। দীনে ইলাহী। তাকে যারা গোমরাহ করেছে তারা কারা? তাকে কারা গোমরাহ করেছে? এমন একজন আলেম তাকে গোমরাহ করেছে যিনি এরকম কোরআনের তাফসীর লিখেছেন যার মধ্যে নোকতা নাই। এরকম শব্দ একেকটা শব্দ যেমন, গাইনের উপর, নূনের উপর, তায়ের উপর নোকতা আছে, জীমে নোকতা আছে। নোকতা ছাড়া হরফের শব্দ দিয়ে কোরআনের তাফসীর করেছেন। তাহলে তিনি কত বড় আলেম? কত বড় আলেম চিন্তা করেছেন? এই ব্যক্তি এই বাদশা আকবরকে গোমরাহ করেছেন। এই দিয়ে হযরতজী মাওলানা ইউসুফ রহ. বুঝিয়েছেন; এই কাজের কবুলিয়াতের জন্য বড় আলেম হওয়া যোগ্যতা শর্ত নয়। অথবা এই সব দিক দিয়ে ফিট এটা বলা যাবে না।



এত বড় একজন ব্যক্তি যিনি আকবর বাদশাকে গোমরাহ করেছে। আপনারা আপনজন বলে বললাম কথাটা। এটা বড় হুশিয়ারীর বিষয়। আবার হযরত আলী রাযি. (তিন বার) তিনি হচ্ছেন ইলমের সাগর। হুজুর স. এর জামাই। যিনি বড় কাফেরদেরকে হত্যা করেছেন। এমন একজন ব্যক্তিকে কে হত্যা করেছে? আলী রাযি. এর হত্যাকারী কে? এমন একজন ব্যক্তি আলী রাযি. কে হত্যা করেছে যিনি এত বড় জাকের যে, যখন সে ধরা পড়ে গেল, হত্যাকারী যখন ধরা পড়ে গেল তখন তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এভাবে যে, তার হাত-পা কাটা হচ্ছে। জিহ্বা কাটার পরিকল্পনা চলছে। তখন সে বলতেছে যে, ভাই তোমরা আমার সব অঙ্গ কাট, জিহ্বা কাটিওনা। কারন আমি সব সময় আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত আছি। আমার এই জিহ্বাটা তোমরা কাটিও না। কত বড় জাকের চিন্তা করেন । আমার এই জিহ্বাটা জিকিরে লিপ্ত থাকে। কত বড় জাকের।



তাহলে আমাদের তিন নম্বরে যে ‘ইলম ও জিকির’ সে ইলমের সবচেয়ে উপরে যারা-যিনি এত বড় আলেম, যিনি নোকতা ছাড়া কোরআনের তাফসীর লিখেছেন, এত বড় আলেম আর এত বড় জাকের যিনি আলী রাযি.এর কাতিল। বরং সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি যিনি এত বড় জিকিরি করনেওয়ালা। সুতরাং আপনার আমার এ কাজের জন্য ‘ইলম ও জিকির’ কোন বুনিয়াদ নয়। এ কাজের জন্য, এ কাজে টিকে থাকার জন্য। এ ব্যক্তি মরদূদ, যে ব্যক্তি আকবর বাদশাকে গোমরাহ করেছে, আর আলী রাযি. কে হত্যা করেছে।



প্রিয় হাজেরিন, দুস্ত ও বুজুর্গ! ইলমের সাথে সাথে আপনাকে আমাকে একাজের অনেক গভীরে যেতে হবে। অনেক গভীরে গেলে এর উসূল বুঝে আসবে। উপরে উপরে একাজের উসূল বুঝে আসবে না। খুব গভীরে, এ কথাটা আল্লাহর ফজলে এ বছর হজ্জ্বের মওসূমে তিন দেশের মুরব্বীরা যে হজ্জ্বে যায় আমিও খাদেম হিসেবে ছিলাম। আমাদের সাথে মুরব্বীদের বৈঠক হয়েছে। সে হজ্জ্বে থেকে শুরু করে বহুত মজলিস হয়েছে। বা টঙ্গীর ইজতেমায় আমাদের বহুত মজলিস হয়েছে। আমাদের কাছে তো আল্লাহর ফজলে এক এক মজলিসে কিন্তু এক এক বৈঠকে আমাদের কাছে সাফ হয়েছে, অনেক পরিস্কার হয়ে গেছে।



একটু শুনে কথা বলি, আপনারা যাচাই করেন, সেটা হচ্ছে এই যে, সেটা হচ্ছে এই যে, কোরআন হাদীসে যা পাওয়া যায়, কোরআন হাদীসে পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে যে আমীর পাওয়া যায়। আমীর পাওয়া যায়। আমীর, আমাদের কাজের জন্য আমীর লাগবে। এই যে পালাক্রমে শূরা হওয়া, পালাক্রমে ফয়সালর হওয়া, একমাস, দুই মাস, সাত দিন। আমাদের দেশেও চালু আছে। আমাদের জিলায় জিলায়ও চালু আছে। এটা কোরআন হাদীসের দলীলে পাওয়া যায় না। কোরআন হাদীসে দলীলে পাওয়া যায় আমীর। একজন আমীর। আল্লাহকে মান, রাসূলকে মান এবং জমানার আমীরকে মান;

أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولى الأمر منكم



শূরা হচ্ছে সাহায্যকারী। পরামর্শ দেওয়া। যারা কুরবানি করেছে, যাদের দিলে দুনিয়া নেই, এরকম লোক দরকার। কিন্তু আমীর, চারজনই আমীরুল মুমিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন- আবু বকর রাযি., উমর রাযি., উসমান রাযি, আলী রাযি. তাদের সাথে শূরা ছিল। পরামর্শ দাতা ছিল। কিন্তু এ রকম দলীল পাওয়া যায় না। বাকী আপনারা যাচাই করবেন। আমি তো কোন আলেম না। কিন্তু মদীনাতে ফয়সাল এক সাপ্তাহ পর এক সাপ্তাহ, এমন ছিল না। আমীর ছিল সবসময়। একথা সবাই আপনারা যাচাই করবেন। কোরআনে যখন আমীরের কথা বলা হয়েছে কোরআনে যখন শূরার কথা নাই কোরআনের যেটা সেটাকে বাদ দিয়ে কেউ যদি এটার উপর চাপ দেয়, জোড় দেয় যে শূরা হতে হবে তাহলে সে কোরআনকে অসম্মান করল, অসম্মান করল। কোরআনে যেটা বলা আছে সেটা হচ্ছে; কোরআনের হুকুম যারা আমীর মানতে রাজি আছে তাদেরকে ছোট মনে করা কোরআনকে তাওহীন করার সমান । বরং কোরআনকে না মানার সমান। আমীরের সথে শূরা থাকতে পারে এটা পরিস্কার বুঝার জিনিস।



আরেকটি বিষয় হল দোস্ত-বুজুর্গ! আমাদের পুরা বিশ্বের মানুষ দাওয়াতের কাজে লাগছে। কোন দেশ যদি আলাদা হয়ে যায়, নিযামুদ্দিন থেকে কোন দেশ যদি আলাদা হয়, বাংলাদেশ বলেন, পাকিস্তান বলেন যেই হউক, পুরা দুনিয়াকে কখনো একমত কারা যাবে না। পুরা দুনিয়া আমাদের কাছে বাংলাদেশে যে আসতেছে, পুরা দুনিয়া বাংলাদেশে আসতেছে, দুস্ত-বুজুর্গ হাজার হাজার তাবলীগী ভাইয়েরা আসতেছে এটা আপনার আমার বুনিয়াদে নয়, নিযামুদ্দিনের জামাত আসে বলে তারা আসেন। তা সেখানে যাইতে পারেন না। ভিসা সমস্যা আছে। তারা আসেন বলে এখনে আসেন। যদি একথা মনে করি যে, আমাদের বাংলাদেশ পুরা হয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে একজন আমীর হবে, আমরা নিজেরা সব করতে পারবো। আল্লাহ পাকের যেটা মানশা সেটা হবে। পরিস্কার, আপনারা সবাই এখানে আপন মানুষ। মাও. সা’দ সাহেবকে আসতে বাধা দিয়েছে যারা তারা এ কথা ইয়াকীন হওয়া দরকার, আমাদের বাধা আল্লাহর কাছে কত অপছন্দ হয়েছে, যেহেতু আল্লাহ পাক তাকে নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ পাকের মর্জি এটাই। আল্লাহর মানশা ছাড়া কোন কাজ হয় না। আল্লাহর কাছে সব লেখা আছে। মাও. সা’দ সাহেব এসেছেন। আল্লাহ আনছেন। এরকম বাধার সম্মুখীন আমরা কোন দিন বাংলাদেশের শূরারা সম্মুখীন হইনি। একটা সংকটময় পরিস্থতি গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে যে, আমাদের বরদাশত করা সম্ভব ছিলনা। আল্লাহ করেছেন। বিশেষ ভাবে বিভিন্ন দেশের মাসাআলা থাকে, মাসআলাগুলো জিজ্ঞেস করে এইটা একমাত্র দেশ। রাইবেন্ডে এখন বিদেশী মেহমান আসা বন্ধ। কম সংখ্যক আসে। রইবেন্ডেও যাইতে পারে না। নিযামুদ্দিনেও যাইতে পারে না। সারা বছর তারা মাসআলা জমায় রাখে নিযামুদ্দিন ওয়ালারা বড় এতমিনানের সাথে জবাব দেন। ভাই আমারা টঙ্গি ইজতেমায় আসব, টঙ্গি আমাদের আপন জায়গা। এদেশের উপর থেকে শুরু করে সবাই কত হুসনে জন, কত সাহায্য করে ....



হযরত মাও. সা’দ সাহেব এসেছেন। আল্লাহ পাক আনছেন। যারা বাধা দিয়েছেন, তাঁদের তওবা করা উচিৎ। বাধা দেওয়া আল্লাহর নিকট কত অপছন্দনীয় হয়েছে!



আরো একটি কথা শুনেন। সেটা হচ্ছে দুস্ত-বুজুর্গ, মাওলানা ইলিয়াছ রহ. এর মার্কাজ মসজিদের যে দেয়াল ছিল তারা দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। তিনি বালেছেন; তারা আমার দেয়াল ভাঙ্গে নাই তারা নিযামুদ্দিনকে ভেঙ্গেছে। মাওলানা ইলিয়াছ রহ. এর কথা এটা, ‘আমার এ কাজ হচ্ছে এক শানিত তলোয়ার’। শানিত বুঝেন তো আপনারা? খুব ধার। এই শানিত তলোয়ার নিয়ে যে খেলবে সে নিজেই টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। দু’দিকেই ধার থাকে । বাচ্চারা যে ব্লেড নিয়ে খেলে মা-বারা অস্থির হয়ে পরে। বাচ্চারা হাত কেটে ফেলে, রক্ত বের হয়। একাজ হচ্ছে শানিত তলোয়ার যে খেলবে নিজে টুকরা হয়ে যাবে। এ কাজের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। কাম আল্লাহ পাকের কুদরতে চলতেছে। এটা পাহাড়ের মত মজবুত কাজ। এর দলীল হল, প্রত্যেক নবীর সাথে যে কওম, যে বাদশা নবীর বিরোধিতা কারেছে সে বাদশা নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা নবীর বিরোধিতা করেছে তারা ধ্বংস হয়েছে। যমানায় যমানায় একই কিচ্ছা, কোন ব্যতিক্রম পাওয়া যাবে না।



(41:27 মিনিট পর)



আমি দোস্ত আরেকটি কথা বলব, সেটা হচ্ছে এই যে, তাবলীগের কাম আমরা যেটা বুঝেছি, ছোট কাল থেকে সেটা হচ্ছে, আল্লাহর রাস্তায় চিল্লা দেও, আল্লাহর রাস্তায় বের হও। বের হও, বের কর, নিজেও বের হও, বের করো। কি ভাই আমার কথা বুঝেছেন, না বুঝেন নাই? নিকলো-নিকালো এটা হলো তাবলীগ। নিকলো-নিকালো। যে ব্যক্তির বহু বছর যাবৎ চিল্লা কাজা, চাই আলেম হোক না কেন, বহু বছর চিল্লা দেয় না যে মনে করে তাবলীগের উপকার করার জন্য চিল্লা লাগাচ্ছি, অসম্ভব ক্ষতি গ্রস্ত সে। তাবলীগে যে সময় লাগায় না, তাবলীগে সময় লাগাবে নিজের উপকার হবে। তখন সে কিছু উপকার করবে। আর যে তাবলীগে সময় লাগায় না, মনে করে তাবলীগের উপকার করতেছি। তুমি সময় লাগাও, তোমার নিজের উপকার হউক। তাবলীগ আমাদের মুখাপেক্ষী না। তাবলীগের বাইরে থেকে যে সংশোধনের চেষ্টা করে এটা তাবলীগের মহা ক্ষতি।



ফতোয়া আমি দিতে পারব না। তবে একটা শুনা কথা বলি; যে ইমাম সাব নামাজ পড়াচ্ছেন, নামাজের এক জায়গায় সূরা পড়েছেন। যদি একজন লোক সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। সে বাইরে থেকে লোকমা দিল তাইলে আলেম-উলামারা বলেছেন, ইমামের নামাজও নষ্ট, সমস্ত মুক্তাদিদের নামাজও নষ্ট । যদিও আয়াত সহীহ হোক। তেলাওয়াত যদিও সহীহ হয়। নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি পিছনে মুক্তাদী আছে সে আলেম নয় তার সূরাটি জানা, সে যদি ধরায় দেয়, ইমাম সাহেব কবুল করে তাদের নামাজ সহীহ হবে।



এজন্য সময় লাগাইতে লাগাইতে তাবলীগের কাজে মনে হয় সময় লাগাইবে না বাইরে থেকে সংশোধন করবে, তাবলীগের কাম এতিম নয়, তাবলীগের কাম তো আল্লাহ চালাচ্ছেন। তাবলীগ তো এতিম নয় যে সময় লাগাবে না বাইরে থেকে পরামর্শ দিবে, পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এটা আল্লাহর কাম, আল্লাহর কাম, আল্লাহই করবেন। বড় গভীরে যেতে হয়, বড় গভীরে। আমাদের বহুত বৈঠক হয়েছে। হজ্জ্বের মওসূম থেকে শুরু করে বহুত বৈঠক আমাদের হয়েছে তিন দেশের- আমাদের কাম তো চিল্লা দেওয়া, তিন দিন দেওয়া, আড়াই ঘন্টার মেহনত করা। মসজিদ আবাদীর মেহনত করা। যে কাম উসূলের সাথে করা হয় নিযামুদ্দিন থেকে, কাকরাইল থেকে সে অনুসারে চলা। এজন্য ভাই মূল হচ্ছেই নিকলো; আল্লাহ কে রাস্তামে নিকলো।