তাবলীগের আমীর মাওলানা সা’দ সাহেব সম্পর্কে দেওবন্দের ফতোয়ার অনুবাদ

মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে

নিঃসন্দেহে তাবলিগ জামাত আমাদেরই দীনপ্রচারের একটি মাধ্যম৷ ব্যক্তি বিশেষ কারোর কোনো বক্তব্যের ফলে খোদ তাবলিগ জামাত দীনবিচ্যুত হতে পারে না৷ কোনো সমালোচনা উদ্দেশ্য নয়, বরং একে বাড়াবাড়ি থেকে রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব৷ সে লক্ষ্যেই দু-চারটে কথা :
তাবলিগ জামাতের প্রধান আমির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের বক্তব্য শুনলাম গভীর মনোযোগসহ৷ ভূপালে তাবলিগ জামাতের জোড়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাওয়া যায় তার একপেশে ধ্যানধারণার খোঁজ৷

গত পরশুদিন ভারতীয় উর্দু দৈনিক ইনকিলাব, আখবারে মাশরিক, সাহারাসহ বেশকিছু দৈনিকে এ ব্যাপারে ছিলো দ্বিমুখী টাটকা বয়ান-বক্তব্য৷ দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আমাদের উস্তাযে মুহতারাম হজরত মুফতি আবুল কাসেম নোমানি বানারসি (দামাত বারাকাতুহুম) তার বক্তব্য স্পষ্ট করবার জোরালো কোশেশ করেছেন মিডিয়ায়৷

এদিকে দারুল উলুম দেওবন্দের আকাবির আসাতিযায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরাম বরাবর তার একাধিক বক্তব্যের রেকর্ড পৌঁছে৷ অডিওগুলি শুনে তারা পত্র মারফত তাকে রুজু করবার ব্যাপারে জানান৷ অথচ তার পক্ষ থেকে মেলে না আশ্বস্ত হবার মতো তেমন কোনো জবাব৷

অগত্যা দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতা থেকে প্রকাশ করা হয় তার উৎপটাং বক্তব্যের ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্কতাস্বরূপ একটি অবহিতনামা৷ দারুল উলুম দেওবন্দের আকাবির আসাতিযায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরামের মধ্য হতে ১৭ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত উর্দুভাষায় রচিত চার পৃষ্ঠার সেই ফতোয়াটির বাংলা অনুবাদ এমন—

শুরুর কথা
জনাব মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের কয়েকটি ভ্রান্ত ধ্যানধারণা এবং প্রশ্ন উত্থাপনযোগ্য বয়ানসমূহের ব্যাপারে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রাপ্ত চিঠিপত্র, নানা প্রশ্ন দেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মুরব্বিপর্যায়ের আসাতিযায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরাম স্বাক্ষরিত সর্বসম্মত একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো৷ কিন্তু সেটি লেখার আগে জানা গেলো, হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে একদল লোক কথা বলার জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে আসতে চায়৷

তারা এসে হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে এই বার্তা পৌঁছুলো, তিনি রুজু করার জন্য প্রস্তুত৷ তাই সিদ্ধান্তকৃত একটি কপি তাদের মারফত তার বরাবর পাঠানো হয়৷ তার পক্ষ থেকেও পত্রটির একটি জবাব মেলে৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দ তার জবাব দ্বারা আশ্বস্ত হয় না৷ যার কিছুটা সবিস্তারে তার বরাবর পত্রের মাধ্যমে আবার পাঠানো হয়৷

আকাবির প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের পবিত্র কাজকে উল্টো ধ্যানধারণার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করতে, মাসলাকে আকাবিরের ওপর কায়েম রাখতে, তাবলিগের ফায়দা এবং হক্কানি উলামায়ে কেরামের মাঝে এর ওপর পূর্ণ ভরসা অবশিষ্ট রাখতে, নিজেদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ও আলেমদের হজরত বরাবর উম্মাহর স্বচ্ছতাস্বরূপ সিদ্ধান্ত প্রেরণকে দীনি কর্তব্য ভাবে দারুল উলুম দেওবন্দ৷ আল্লাহতায়ালা এই মোবারক জামাতকে পূর্ণাঙ্গ হেফাজত করুন৷ আমাদের সবাইকে মাসলাক ও আমলের দিক থেকে হকপথে কায়েম থাকবার তৌফিক দিন৷ আমিন৷

মূল আলোচনা
বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ হক্কানি উলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখগণের আবদার হলো, জনাব মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের চিন্তাচেতনার ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ নিজেদের মতামত যেনো স্পষ্ট করে দেয়৷ হালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকজন উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে চিঠিও মিলেছে৷ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগে প্রশ্ন এসেছে বহু৷

তাবলিগের ভেতরকার মতনৈক্য ও যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কথা আলোচনা বৈ সরাসরি পেশ করতে চাই, গেলো বছর কয়েক ধরে ইস্তিফতা ও পত্র মারফত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের মতাদর্শ-চিন্তাচেতনা সম্পর্কিত তথ্য দারুল উলুম দেওবন্দে মেলে৷ সেগুলো যাচাইয়ের পর স্পষ্টভাবে তার বয়ানে কুরআন ও হাদিসের ভুলত্রুটি তথা মারজুহ ব্যাখ্যা, গলদ ইস্তিদলাল, মনগড়া ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়৷

কিছু কথায় আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বেয়াদবিমূলক আচরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ অথচ অনেক ব্যাপার এমন রয়েছে, যার ফলে আলোচ্য ব্যক্তি জমহুরে উম্মাহ ও ইজমায়ে সালফের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যেতে থাকেন৷

বেশকিছু ফিকহি মাসায়েলেও তিনি গ্রহণযোগ্য দারুল ইফতাসমূহের দেয়া ফতোয়ার বিপরীত মূলনীতিহীন মত কায়েম করে আমজনতার সামনে তাগিদের সঙ্গে বয়ান করে থাকেন৷

তাবলিগজামাতের কাজের গুরুত্ব তিনি এভাবে বয়ান করে থাকেন, যার মাধ্যমে দীনের অন্যান্য শাখার ওপর কঠোরভাবে দোষত্রুটি আরোপ করা এবং হীনতা প্রদর্শিত হয়; সালফে সালেহিনের দাওয়াতি পুরোনো পন্থার রদ ও অস্বীকার লাজিম আসে৷ ফলে আকাবির ও আসলাফের মাহাত্ম্যেও ঘাঁটতি, হীনতা প্রদর্শিত হয়৷

তার এই মতাদর্শ তাবলিগ জামাতের সাবেক দায়িত্বশীল হজরত মাওলানা ইলিয়াস সাহেব রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহ., হজরত মাওলানা ইনামুল হাসান সাহেব রহ.-এর একেবারে বিপরীত৷

মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের বয়ানসমূহের যতোটুকু আমাদের অবধি পৌঁছেছে, আর যেগুলোর সম্বন্ধ তার প্রতি সত্যই প্রমাণিত হয়েছে, তার মধ্য থেকে কিছু এমন—

০১.রাব্বুল আলামিনের ডাকে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম নিজ কওম ও জামাত ছেড়ে একাগ্রতায় চলে যান৷ ফলে বনী ইসরাঈলের ৫ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়৷ মূল তো ছিলেন তিনিই৷ আর তিনিই ছিলেন দায়িত্বশীল৷ মূল যিনি, তার থাকা চাই৷ হজরত হারুন আলাইহিস সালাম তো ছিলেন তার সহযোগী৷

০২.
নকল ও হরকত তওবার পূর্ণতা ও আত্মশুদ্ধির জন্য৷ তওবার তিনটে শর্ত তো লোকে জানে৷ কিন্তু চতুর্থটি কারোর জানা নেই৷ ভুলে গেছে৷ আর সেটি হলো আল্লাহর পথে বের হওয়া৷ এটিকে মানুষ ভুলিয়ে দিয়েছে৷ নিরানব্বইভাগ খুনির সাক্ষাৎ কোনো পাদ্রীর সঙ্গে হয়েছে৷ পাদ্রী তাকে নিরাশ করেছে৷ এরপর তার দেখা এক আলেমের সঙ্গে হয়েছে৷ আলেম তাকে বলেছে, ‘তুমি অমুক বস্তিতে বেরিয়ে পড়ো৷’

অতঃপর সেই খুনি বেরোলো৷ আর আল্লাহতায়ালা তার তওবা কবুল করেছেন৷ এর দ্বারা বোঝা যায়, তওবার জন্য আল্লাহর পথে বেরোনো শর্ত৷ অন্যথায় তওবা কবুল হয় না৷ এই শর্তটি মানুষ ভুলে গেছে৷ অন্য তিনটি শর্ত বয়ান করে কেবল৷ অথচ চতুর্থ শর্ত অর্থাৎ আল্লাহর পথে বেরোনোর শর্তটি ভুলে গেছে একেবারেই৷

০৩.
হেদায়েতপ্রাপ্তির স্থল একমাত্র মসজিদ৷ যেখানে কেবল ধর্মীয় পড়াশোনা হয়, তাদের সম্পর্ক যদি মসজিদের সঙ্গে কায়েম না হয়, তাহলে আল্লাহর শপথ সেখানেও দীন রয়েছে বলে ধরা হবে না৷ সেখানে ধর্মীয় পড়াশোনা হতে পারে, কিন্তু দীন বা ধর্ম হবে না৷

(এই চয়নে মসজিদের সম্পর্কের সঙ্গে তার উদ্দেশ্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া নয়৷ এজন্য এ কথা তিনি মসজিদের গুরুত্ব এবং দীনের কথা মসজিদেই নিয়ে করার ব্যাপারে নিজের বিশেষ মতাদর্শ বয়ানকালে বলেন৷ যার বিস্তারিত অডিও বিদ্যমান৷ তার এই দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে গেছে এমন, দীনের কথা মসজিদের বাইরে বলা সুন্নতের বিপরীত; আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরামের মতাদর্শের খেলাফ)৷

০৪.
পারিশ্রমিক নিয়ে দীন শেখানো দীনবিক্রির নামান্তর৷ ব্যভিচারকারী কুরআনে কারিম শিখিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকারীর আগে জান্নাতে যাবে৷

০৫.
আমার মতে ক্যামেরা সিস্টেম মোবাইল পকেটে রাখাবস্থায় নামাজ হয় না৷ উলামায়ে কেরাম থেকে যতো ইচ্ছে ফতোয়া নাও, ক্যামেরা সিস্টেম মোবাইলে কুরআনে কারিম শোনা, দেখে দেখে পড়া কুরআনে কারিমের অপমান করার মতো৷ এর দ্বারা গোনাহ বৈ সওয়াব মিলবে না৷ এর কারণে আল্লাহতায়ালা কুরআনে কারিমের ওপর আমল করা থেকে বঞ্চিত করে দেবেন৷

যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে বৈধতার ফতোয়া দিয়ে থাকেন, তারা নিঃসন্দেহে ‘উলামায়ে সু’৷ তাদের মন-মস্তিস্ক ইহুদি, খৃস্টানদের চিন্তাচেতনায় প্রভাবিত৷ তারা একদম মূর্খ আলেম৷

আমার মতে যে আলেম এর বৈধতার ফতোয়া দেয়, আল্লাহর শপথ! তার অন্তর অাল্লাহতায়ালার কালামের মাহাত্ম্যশূন্য৷ এ কথা আমি এজন্য বলছি, আমায় একজন আলেম জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এতে অসুবিধে কী?’ আমি বলেছি, ‘আসলে এই আলেমের অন্তর আল্লাহতায়ালার বড়ত্বশূন্য; চাই তার বুখারি শরিফই মুখস্থ হোক না কেনো৷ আরে, বুখারি শরিফ তো অমুসলিমদেরও মুখস্থ থাকতে পারে৷

০৬.
কুরআনে কারিম বুঝে বুঝে পাঠ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব৷ যে এই ওয়াজিব ছেড়ে দেবে, তার ওয়াজিব ছেড়ে দেবার গোনাহ মিলবে৷

০৭.
আমার আফসোস হয় তখন, যখন কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘তোমার ইসলাহি সম্পর্ক কার সঙ্গে?’ কেনো বলুন না তখন, আমার ইসলাহি সম্পর্ক এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সঙ্গে! এ কথার ওপর বিশ্বাস করো, দাওয়াতের কাজ তরবিয়তের জন্য যথেষ্ট নয়; বরং জামিন তথা দায়িত্বশীল৷ আমি অনেক ভেবে দেখেছি, কর্মীদের পা তোলার মূল কারণ এটাই৷

আমার তো সেসব লোকের জন্য চিন্তা হয়, যারা এখানে বসে বলে—‘ছয় নম্বর পূর্ণ দীন নয়৷’ নিজের দইকে নিজেই টক বর্ণনাকারী কখনও ব্যবসা করতে পারে না৷

আমার বড় আফসোস হলো, যখন আমাদের একজন তাবলিগি ভাই আমায় বললো, ‘আমার এক মাসের ছুটি দরকার৷ অমুক শায়খের সঙ্গে এতেকাফের উদ্দেশ্যে যেতে হবে৷’ আমি বললাম, আজ অবধি তোমরা দাওয়াত ও ইবাদতকে এক করো নি৷ তোমাদের কমপক্ষে চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলো তাবলিগের কাজে৷ এতোদিন পর একজন এসে এভাবে বলে—‘আমার ছুটি প্রয়োজন৷ এক মাস এতেকাফের জন্য যেতে চাই৷’

আমি বললাম, যে ইবাদতের জন্য দাওয়াত থেকে ছুটি চাচ্ছে, সে দাওয়াত বিনে ইবাদতে উন্নতি করতে পারে কী করে?

আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, আমালে নবুওয়াত এবং আমালে বেলায়েতের মাঝে যেই পার্থক্য, সেটি কেবল নকল ও হরকত না হবার৷

আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা কেবল দীন শেখবার জন্য তাশকিলে বেরোই না৷ কারণ দীন শেখবার তো আরও পথপন্থা রয়েছে৷ সুতরাং তাবলিগে বেরোনোটা কেনো জরুরি? দীনই তো শেখা দরকার৷ মাদরাসা থেকে শেখো, খানকা থেকে শেখো৷

তার বয়ানের কিছু এমন অংশও পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের মতে দাওয়াতের প্রশস্ত বুঝের ভেতর কেবল তাবলিগি জামাতের বর্তমান ব্যবস্থাপনাই অন্তর্ভুক্ত৷ একে কেবল তিনি আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরামের পথপন্থার সঙ্গে ব্যাখ্যা করেন৷

আর এই বিশেষ সিস্টেমকে সুন্নত ও হুবহু আম্বিয়ায়ে কেরামের মেহনতের মতো সাব্যস্ত করেন৷ অথচ উম্মতের সর্বসম্মত মাসলাক হলো, দাওয়াত ও তাবলিগ একটি সামগ্রিক বিষয়৷ শরিয়তে যার এমন কোনো বিশেষ পদ্ধতি আবশ্যক করা হয়নি, যা পরিত্যাগের ফলে সুন্নত ছেড়ে দেয়া সাব্যস্ত হয়৷ বিভিন্ন কালে দাওয়াত ও তাবলিগের নানান পদ্ধতি ছিলো৷ কোনো যমানায়ই দাওয়াতের দায়িত্ব থেকে কোনোরূপ একপেশে আঞ্জাম প্রকাশ পায়নি৷

সাহাবায়ে কেরামের পরে তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন আইম্মায়ে কেরাম, মুজতাহিদিন, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মাশায়েখ, আওলিয়ায়ে কেরাম এবং নিকটতম সময়ে আমাদের আকাবিরে কেরাম দুনিয়ায় দীন কায়েম রাখতে নানামুখী পথপন্থা অবলম্বন করেছেন৷

সংক্ষিপ্ততার কারণে আমরা এই সামান্য কথাগুলিই পেশ করলাম৷ এছাড়াও এমন অনেক কথাও আমাদের অবধি পৌঁছেছে, যা জমহুর উলামায়ে কেরাম থেকে দূরে সরে একটি নবউদ্ভাবিত বিশেষ মতাদর্শের প্রমাণবাহক৷ তার এসব কথা ভুল হওয়াটা একদম স্পষ্ট৷ সেজন্য এখানে এর ওপর বিস্তারিত আলোচনার দরকার নেই৷

এর আগেও দারুল উলুম দেওবন্দের তরফ থেকে বার কয়েক পত্র মারফত এবং দারুল উলুম দেওবন্দে তাবলিগের ইজতেমাকালে বাংলাঅলি মসজিদের প্রতিনিধিদলের সামনেও এসবের ওপর মনোযোগ দেবার কোশেশ করানো হয়েছিলো৷ কিন্তু সেসব চিঠিপত্রের আজ অবধি কোনো জবাব মেলে নি৷

তাবলিগ জামাত একটি খালেস ধর্মীয় জামাত৷ যা আমল ও মাসলাক হিসেবে জমহুরে উম্মাহ ও আকাবিরের পদ্ধতি থেকে দূরে সরে গিয়ে সংরক্ষিত থাকতে পারে না৷ আম্বিয়ায়ে কেরামের ব্যাপারে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, উল্টো ধ্যানধারণা, মনগড়া তাফসির, হাদিস-আসারের মনগড়া ব্যাখ্যার সঙ্গে হক্কানি উলামায়ে কেরাম কখনও ঐক্যমত পোষণ করতে পারেন না৷ আর এর ওপর চুপ থাকাও যায় না৷ কারণ এধরনের চিন্তাচেতনার ফলে পরবর্তীতে পুরো তাবলিগ জামাতকে হকপথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়ার মতো হয়৷ যেমনিভাবে আগেও কতক ইসলাহি ও দীনি জামাতের সঙ্গে এমন ঘটনাই ঘটেছে৷

এজন্য আমরা এসব উত্থাপিত প্রশ্নের আলোকে উম্মাহ বিশেষ করে সাধারণ তাবলিগি ভাইদেরকে এ কথাগুলি সম্বন্ধে অবহিত করানোকে নিজেদের কর্তব্য মনে করছি, মৌলবি মুহাম্মদ সাদ সাহেব স্বল্প ইলমের কারণে নিজের চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ এবং কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যায় জমহুর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সঠিক পথপন্থা থেকে সরে যাচ্ছেন৷ যা নিঃসন্দেহে ভ্রষ্টতার পথপন্থা৷ এ কারণে এসবের ওপর চুপ থাকাটা সমীচীন নয়৷ কারণ যদিও এই চিন্তাচেতনা একজনের, কিন্তু এসব সাধারণ মানুষের মাঝে খুব প্রবল বেগে ছড়িয়ে যাচ্ছে৷

জামাতের হালকায় প্রভাবিত ইতিদালি মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদেরকেও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আকাবিরের প্রতিষ্ঠিত এই জামাতকে জমহুর উম্মাহ ও আকাবির দায়িত্বশীলদের পথপন্থায় কায়েম রাখবার আপ্রাণ কোশেশ করুন৷

আর মৌলবি মুহাম্মদ সাদ সাহেবের যে ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব সংশোধনের পূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যান৷ যদি এর ওপর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আশঙ্কা হয়, আগামীতে তাবলিগ জামাতের কারণে উম্মাহর একটি বৃহৎ অংশ পথভ্রষ্টতার শিকার হয়ে গোমরাহ দলের রূপ নেবে৷

আমাদের প্রার্থনা হলো, রাব্বুল আলামিন যেনো তাবলিগ জামাতের হেফাজত করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে আকাবিরের পথে একনিষ্ঠভাবে জারি ও প্রবহমান রাখেন৷ আমিন৷ সুম্মা আমিন৷

পুনশ্চ
আগে এধরনের অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা তাবলিগ জামাতের কিছু লোকের থেকে প্রকাশ পেয়েছিলো৷ সেকালে উলামায়ে দেওবন্দ, যেমন হজরত শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ও অন্যান্যরা তাদের সতর্ক করেন৷ তারা থেমে গেছেন৷ কিন্তু এখন স্বয়ং দায়িত্বশীলই এধরনের; বরং এরচেও বড়ধরনের কথাবার্তা (যেমনি উপরোল্লিখিত আলোচনায় স্পষ্ট) বয়ানে উল্লেখ করছেন, তাকে সতর্কও করানো হচ্ছে, কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপই করছেন না৷ ফলে সাধারণকে এধরনের ফেৎনা থেকে রক্ষা করতে এই সিদ্ধান্ত ও ফতোয়ার সত্যায়ন করা হলো৷