ফতোয়া: জাকাত

ফতোয়া নং: ৭৩২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনাব, নি¤œলিখিত মাসআলার শরয়ী ফায়সালা দানকরে বাধিত করিবেন।ক. আমার ব্যবসা...

প্রশ্ন

জনাব, নি¤œলিখিত মাসআলার শরয়ী ফায়সালা দানকরে বাধিত করিবেন।

ক. আমার ব্যবসা থেকে খরচাদি বাদে উদ্বৃত্ত টাকা জমা করা হয় পরবর্তীতে বড় কোন একটি বিনিয়োগের জন্য। অর্থাৎ ব্যবসায়িক কাজে অথবা কোনো বাড়ি করার জন্য। বিনিয়োগের সুযোগ আসার আগ পর্যন্ত উক্ত টাকা আমি আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে এফডিআর করে রাখি। যা ২/১ বছর পর ভাঙ্গিয়ে মূল টাকা বিনিয়োগ করি এবং ব্যাংক কর্তৃক প্রদেয় মুনাফার টাকা আলাদা একটি একাউন্টে রেখে দেই, যা গরীবদের মধ্যে প্রয়োজনমত বিতরণ করা হয়। এবং অতীতে এ ধরনের টাকা দিয়ে জনকল্যাণার্থে রাস্তা তৈরিতে এবং পাবলিক টয়লেট তৈরিতে খরচ করা হয়েছে।

খ. এ ছাড়া সরকারী’ আধা-সরকারী সংস্থার সাথে ব্যবসা করতে হলে এবং কোনো লাইসেন্স নিতে হলে সেখানেও কিছু টাকা জামানত অত্যাবশ্যক হয়। উক্ত জামানতের নগদ অর্থ না দিয়ে এফডিআর আকারে জমা করা হয় এবং মেয়াদান্তে তাতেও কিছু টাকা মুনাফা আসে যা (ক) এর পদ্ধতিতে খরচ করি।

আমার এই পদ্ধতি ঠিক আছে কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে অন্য কোনো সহীহ পথ আছে কি না?

উল্লেখ থাকে যে, উক্ত (ক) এবং (খ) -এ বর্ণিত এফ ডি আর ভাঙ্গানোর আগ পর্যন্ত উক্ত টাকার নিয়মিত যাকাত দিয়ে থাকি।

প্রকাশ থাকে যে, আমি নিজে ব্যবসায়িক অথবা কোন বিনিয়োগের কাজে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করি না।

উত্তর

(ক, খ) ব্যাংকে জমাকৃত টাকার মালিক আপনি নিজে। সুতরাং পুনরায় বিনিয়োগ করা বা নিজ প্রয়োজনে খরচ করা ঠিক আছে। আর ব্যাংক থেকে প্রদত্ত টাকা গরিব-মিসকিনের হক। তাদেরকে দিয়ে দেওয়াই কর্তব্য। সুতরাং এ টাকা গরিব-মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিংবা তাদের পেছনে ব্যয় করা বা এমন খাতেও দেওয়া যেতে পারে যার ভোক্তা বা ব্যবহারকারী শুধুই গরিবরা।

তবে কিছু ওলামায়ে কেরাম যেহেতু এ ধরনের টাকা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে খরচ করারও অনুমতি দিয়ে থাকেন, এ হিসেবে অতীতে এ টাকা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা বা বাথরুম বানিয়ে দেয়ার দ্বারাও আপনি দায়িত্বমুক্ত হয়ে গেছেন।

অবশ্য এগুলোর ব্যবহারকারী যেহেতু শুধু গরিবরা নয় তাই সামনে থেকে এ টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় না করে গরিবদেরকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। এফডিআর করলেও জমার উপর বছরান্তে যাকাত দিতে হয়। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৭০; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৭; কেফায়াতুল মুফতী ১০/২৪৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭৩১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত প্রদানকালে ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া জরুরি কি না? ঈদের দিন...

প্রশ্ন

যাকাত প্রদানকালে ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া জরুরি কি না? ঈদের দিন অনেক গরীব-মিসকিন বখশিশ চায়, তাদেরকে বখশিশ স্বরূপ যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর

যাকাত প্রদানের সময় গ্রহীতাকে যাকাতের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে দাতার নিয়তই যথেষ্ট। অতএব, যাকাতের যোগ্য কেউ বখশিশ চাইলে তাকে না জানিয়ে যাকাতের টাকা প্রদান করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নিজ গৃহের কর্মচারী বা অধীনস্ত কর্মচারিদেরকে যাকাতের টাকা ঈদবোনাস হিসাবে দেওয়া যাবে না। কারণ সেগুলো তাদের পারিশ্রমিকেরই অংশবিশেষ। অবশ্য কর্মচারীকে তার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস দেওয়ার পর গরিব হওয়ার কারণে যাকাত থেকে কিছু দিতে চাইলে তা জায়েয হবে।

-আল বাহরুর রায়েক ২/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭৩১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাতের টাকা মসজিদ মাদরাসার নির্মাণকাজে ব্যয় করা যাবে কি?

প্রশ্ন

যাকাতের টাকা মসজিদ মাদরাসার নির্মাণকাজে ব্যয় করা যাবে কি?

উত্তর

না, মসজিদ মাদরাসার নির্মাণ কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না; বরং যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হল, যাকাত গ্রহণের যোগ্য কাউকে যাকাতের টাকার পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া।

-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক ৪/১১৩; হেদায়া ১/২০৫; ফাতহুল কাদীর ২/২০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৮২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭৩১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমরা ৩০ জন সদস্য মিলে একটি সমিতি করেছি। এতে প্রত্যেক...

প্রশ্ন

আমরা ৩০ জন সদস্য মিলে একটি সমিতি করেছি। এতে প্রত্যেক সদস্যকে এককালীন ১০০০/- টাকা করে জমা দিতে হয়েছে। ফলে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩০,০০০/- টাকা। বিগত দু’বছর ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ হয়েছে ১২০০/- টাকা। কিন্তু আমরা এ টাকার যাকাত পরিশোধ করিনি। এখন আমাদের জানার বিষয় হল, আমাদেরকে কি উক্ত টাকার যাকাত পরিশোধ করতে হবে?

উত্তর

সমিতির উপর যাকাত ফরয হয় না। যাকাত ফরয হয় ব্যক্তির উপর। তাই সমিতির সদস্যদের মধ্যে যার সমিতিতে জমাকৃত অর্থসহ অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদ মিলে নেসাব পরিমাণ হবে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; মাজমাউল আনহুর ১/২৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭৩০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কাছ থেকে একজন ১লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার কাছে...

প্রশ্ন

আমার কাছ থেকে একজন ১লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার কাছে যে নগদ টাকা আর গয়না আছে, তার যাকাত তো আমি দিবই। কিন্তু ওই ধার নেওয়া টাকার যাকাতও কি আমাকে দিতে হবে?

উত্তর

হাঁ, ওই এক লাখ টাকার যাকাতও আপনাকে দিতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৩০৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একটি সরকারী চাকুরিতে কর্মরত আছি। আমার বেতনের নির্দিষ্ট একটা...

প্রশ্ন

আমি একটি সরকারী চাকুরিতে কর্মরত আছি। আমার বেতনের নির্দিষ্ট একটা অংক প্রতি মাসে সরকার প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামুলক কেটে রাখে। যার উপর চাকুরি শেষে অধিক হারে সুদ দেওয়া হবে। এখন আমার প্রশ্ন হল-

১. মূল বেতনের অতিরিক্তটা নেওয়া কি আমার জন্য বৈধ হবে?

২. এই টাকার উপর কি প্রতি বছর আমাকে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

১. সরকারী প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতামূলক জিপি ফান্ডে যতটুকু জমা করা আবশ্যক শুধু ততটুকু রাখা হলে জমাকৃত অংশ এবং অতিরিক্ত অংশ পুরোটাই আপনার জন্য বৈধ। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশকে সরকারীভাবে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদের অন্তর্র্ভুক্ত নয়।

২. ঐ টাকা হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার উপর যাকাতও ফরয নয়। হস্তগত হওয়ার পর থেকে তা যাকাতযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।

প্রকাশ থাকে যে, প্রভিডেন্ট ফান্ডে যতটুকু বাধ্যতামূলক কেটে রাখা হয় তার চে বেশি কাটানো নাজায়েয। অতিরিক্ত কাটালে শুধু কর্তিত টাকা অর্থাৎ জমাকৃত টাকা হালাল হবে। স্বেচ্ছায় জমার উপর অতিরিক্ত যা দেওয়া হবে তা সুদ ও হারাম হবে। আর কেউ যদি স্বেচ্ছায় জিপি ফান্ডে জমা করে তাহলে মূল জমার উপর তাকে বছরান্তে যাকাত দিতে হবে।

-মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৭৯; আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার অধীনে প্রায় ৪০ জন কর্মচারী কাজ করে। আমি রমযান...

প্রশ্ন

আমার অধীনে প্রায় ৪০ জন কর্মচারী কাজ করে। আমি রমযান মাসে যাকাত আদায় করি। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার সময় আমার কাছে বেতন বাবদ তাদের বেশ টাকা পাওনা থাকে। আমি উক্ত টাকা ঋণ হিসেবে বিয়োগ করে অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত আদায় করি। মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আমার এভাবে যাকাত আদায় করা ঠিক আছে কি?

উত্তর

হাঁ, কর্মচারীদের বেতন বাবদ পাওনা অর্থ আপনার ঋণ। অতএব তা বাদ দিয়ে যাকাত আদায় করা ঠিক আছে।

প্রকাশ থাকে যে, কর্মচারীদের বেতন যথা সময়ে আদায় করে দেওয়া কর্তব্য। ইসলামে এর গুরুত্ব অনেক। যথাসময়ে তাদের প্রাপ্য না দেওয়া এবং বিলম্ব করা গুনাহ।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই পাগল। সম্প্রতি আমার বাবা মারা গিয়েছেন।...

প্রশ্ন

আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই পাগল। সম্প্রতি আমার বাবা মারা গিয়েছেন। সম্পত্তি বণ্টনের সময় আমরা ঐ ভাইকে মীরাছ দিয়েছি। সে প্রায় ১ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এখন জানতে চাই, তার উপর কি যাকাত ফরয হবে?

উত্তর

না, আপনার উক্ত ভাইয়ের উপর যাকাত ফরয নয়। তার সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। কেননা পাগল ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হয় না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬২; বাদায়েউস সনায়ে ২/৮২; ফাতহুল কাদীর ২/১১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ঢাকার ওয়াশপুর এলাকায় আমার একটি জমির উপর ৩ তলা ভবন...

প্রশ্ন

ঢাকার ওয়াশপুর এলাকায় আমার একটি জমির উপর ৩ তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি হয় একটি হাউজিং কোম্পানির সাথে। বিনিময় ছিল ৪৮ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে ৩৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এদিকে ভবন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট ১৫ লক্ষ টাকা ধীরে ধীরে কিস্তিতে কয়েক মাসে পরিশোধ করব। এদিকে এখনই আমার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই জানতে চাই, এখন যাকাতের হিসাবের সময় এই ১৫ লক্ষ টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার যেহেতু যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেছে এবং বাকি পনের লক্ষ টাকা পরবর্তীতে কিস্তিতে ধীরে ধীরে আদায় করতে হবে। তাই এ টাকা গত বছরের যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে না। অতএব এই পনের লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে।

-জামিউর রুমূয ১/৩০০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯১; রদ্দুল মুহতার ২/২৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার বাড়ীতে ঘর করা জরুরি। তাই ঘর করার জন্য আমি...

প্রশ্ন

আমার বাড়ীতে ঘর করা জরুরি। তাই ঘর করার জন্য আমি কিছু কিছু করে টাকা জমাচ্ছি। এখন আমার ঘর করতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মত লাগে। কিন্তু আমি গত দুই বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকার মত জমিয়েছি। ইচ্ছা হল দুই বা আড়াই লাখ টাকা হলে ঘর করা শুরু করবো, বাকি নগদে মিলিয়ে। এখন প্রশ্ন হল, আমার এই জমাকৃত টাকার উপর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

জমাকৃত টাকাগুলো যদি নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই এর দ্বারা নির্মাণ সামগ্রী কিনে ফেলা হয় তাহলে তার আর যাকাত দিতে হবে না। তবে নেসাবের উপর বছর পুরা হওয়ার কাছাকাছি হয়ে গেলে যাকাত থেকে বাঁচার জন্য এমনটি করা হলে তা অন্যায় হবে। আর বাড়ী বানানোর জন্য জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমান হলে এবং বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে এর যাকাত দিতে হবে। বছর অতিক্রান্ত হওয়া পর তা খরচ করে ফেললেও ঐ যাকাত মাফ হবে না।

-বাদায়েউস সনায়ে ২/১০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার দোকানে পণ্য আছে মোট ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার।...

প্রশ্ন

আমার দোকানে পণ্য আছে মোট ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার। সাথে মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য ছোট-বড় মিলে ১৫টি সাইকেলও আছে। প্রশ্ন হল, এখন আমি কীভাবে যাকাত আদায় করব? দোকানের মোট পুঁজির সাথে সাইকেলগুলোর মূল্য যোগ করে, নাকি পৃথক পৃথকভাবে আদায় করব? দ্রম্নত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ভাড়ার বস্ত্তর মূল্যের উপর যাকাত আসে না। বরং তা থেকে অর্জিত আয় উদ্বৃত্ত থাকলে তারযাকাত দিতে হয়। তাই আপনাকে ঐ তিন লক্ষ ৮০ হাজার টাকার সাথে শুধু সাইকেলগুলো থেকেভাড়া বাবদ প্রাপ্ত আয়ের যা জমা আছে তার যাকাত দিতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

প্রতি বছর আমি লুঙ্গি, শাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে যাকাত আদায় করি।...

প্রশ্ন

প্রতি বছর আমি লুঙ্গি, শাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে যাকাত আদায় করি। এ বছরও যাকাতের নিয়তে ঢাকা ইসলামপুর থেকে ৪০০টি লুঙ্গি ও ৩০০টি শাড়ি ক্রয় করে কুড়িগ্রামগামী একটি বাসের ছাদে এগুলো উঠিয়ে দেই। বাস কর্তৃপক্ষ কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে এগুলো নামিয়ে দেয়। কিন্তু সেখানে আমার পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়ে যায়। গিয়ে দেখি, কাপড়ের গাঁটরিটি খুলে পড়ে আছে। তাতে ৬০/৭০টি লুঙ্গি, শাড়িও নেই।

প্রশ্ন হল, আমাকে এখন আবার নতুন করে ক্রয় করে যাকাত দিতে হবে, নাকি প্রথমবার যাকাতের নিয়তে ক্রয় করার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে গেছে?

উত্তর

যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির নিকট যাকাতের মাল পৌঁছে দেওয়ার আগেযাকাত আদায় হয় না। এক্ষেত্রে যাকাতের নিয়তে ক্রয় করা বা কোনো স্থানে পৃথক করে রাখাযাকাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া কাপড়গুলো যাকাতহিসেবে কর্তন হবে না। ঐ পরিমাণ যাকাত আপনাকে আদায় করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আল্লাহর রহমতে আমার ছোটখাটো একটা ব্যবসা আছে। প্রতি রমযানের শেষের...

প্রশ্ন

আল্লাহর রহমতে আমার ছোটখাটো একটা ব্যবসা আছে। প্রতি রমযানের শেষের দিকে আমি ব্যবসার বাৎসরিক হিসাব সম্পন্ন করি। কিন্তু রমযানের শুরু থেকে যাকাত দেওয়া শুরু করে দেই। এ বছর ঈদের আগের দিন হিসাব শেষে দেখলাম, আমার যে পরিমাণ যাকাত ওয়াজিব হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি আদায় করা হয়েছে।

আমি জানতে চাই, যাকাত হিসেবে অতিরিক্ত যে অংশ আমি আদায় করেছি তা কি আমি আগামী বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ বছর যে পরিমাণ যাকাত ফরয ছিল তার অতিরিক্ত যা যাকাত হিসেবে দিয়েছেনতা আপনি আগামী বছরের যাকাতের মধ্যে গণ্য করতে পারবেন।

-কিতাবুত তাজনীস ২/৩৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/২৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২২৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার বাবার ইন্তেকালের পর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে বেশ কিছু সম্পদ...

প্রশ্ন

আমার বাবার ইন্তেকালের পর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে বেশ কিছু সম্পদ আমার মালিকানায় আসে। যার সবই প্রায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। আমার স্বামী আর্থিকভাবে ততটা স্বচ্ছল নন। আমি চাচ্ছি, ব্যবসা করার জন্য তাকে মোটামুটি বড় একটা মূলধনের মালিক বানিয়ে দিতে। কিন্তু কোম্পানি থেকে আমার যে লাভ আসে তার অধিকাংশই আমার অলঙ্কারাদি ও অন্যান্য সম্পদের যাকাত হিসেবে আদায় করে দিতে হয়।

জানার বিষয় হল, আমি যাকাতের অংশসহ পুরো লভ্যাংশের টাকা আমার স্বামীকে দিতে পারব কি? না যাকাতের অংশ তাকে দেওয়া যাবে না?

উত্তর

স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। তাই আপনার স্বামী অসচ্ছল হলেও তাকেআপনি যাকাতের টাকা দিতে পারবেন না।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৯৫; মুখতাসারুল কুদূরী ১২৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত হিসাবের সময় কি স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা হিসাব থেকে বাদ...

প্রশ্ন

যাকাত হিসাবের সময় কি স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা হিসাব থেকে বাদ দিয়ে যাকাত হিসাব করা হবে, না বাদ দেওয়া হবে না? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

অনাদায়ী মোহরের টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে না। তবে যদি আপনি চলতি যাকাতবর্ষের মধ্যেই মোহর আদায় করে দেওয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ পরিমাণ টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে।

উল্লেখ্য, বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া মহর আদায়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। বরং একসাথে না পারলে ধীরে ধীরে হলেও তা আদায় করে দেওয়া উচিত।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক প্রতিবেশী, যিনি মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনের ছোট...

প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী, যিনি মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনের ছোট একটি চাকরি করেন। চাকরি ও ক্ষেতের ফসলের আয় দ্বারা তার সংসার মোটামুটি চলে। অতিরিক্ত বেশি কিছু থাকে না। এ ছাড়া তার তিনটি নারিকেল ও সুপারির বাগান রয়েছে, যেগুলোর মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা। তার দশ বছরের একটি ছেলেকে তিনি আমার কথায় মাদরাসায় পড়াতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তিনি মাদরাসার খরচাদি দিতে রাজি নন। তার কথা হল, আপনি পারলে আপনার দায়িত্বে নিয়ে পড়ান, অন্যথায় থাক। যদিও তিনি চেষ্টা করলে মোটামুটি খরচ বহন করতে পারবেন। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমি কি আমার বা অন্য কারো যাকাতের টাকা থেকে ঐ ছেলের মাদরাসার খরচ চালাতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, আপনার প্রতিবেশী যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয়। কেননা প্রশ্নে উল্লেখিত নারিকেল ও সুপারির বাগানগুলি তার প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদ। এ সম্পদের কারণে তার উপর যদিও যাকাত ফরয নয়। কিন্তু এ কারণে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। অতএব তার না-বালেগ সন্তানকেও যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না। উল্লেখ্য যে, সন্তানদেরকে প্রয়োজনীয় ও দ্বীনী শিক্ষা দেওয়া পিতার কর্তব্য। পিতার সামর্থ্য থাকলে এর খরচ বহন করা তারই দায়িত্ব। মাদরাসায় পড়লেই অন্যের খরচে পড়াতে হবে এ মানসিকতা সহীহ নয়। অবশ্য ছেলেটির পিতা খরচ দিতে সম্মত না হলে আপনারা চাইলে নফল দান দ্বারা তার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারবেন। কিন্তু যাকাতের টাকা থেকে তার পেছনে খরচ করা যাবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৭, ৩৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন ছাত্র। আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণ আছে। বর্তমানে এছাড়া...

প্রশ্ন

আমি একজন ছাত্র। আমার পাঁচ ভরি স্বর্ণ আছে। বর্তমানে এছাড়া আমার অন্য কোনো সম্পদ নেই। তবে পড়ার জন্য সংগ্রহ করা অনেক কিতাব আছে, যার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা।

প্রশ্ন হল, আমার কি এই কিতাবগুলোর যাকাত দিতে হবে? যদি আদায় করতে হয়

তাহলে কি উক্ত স্বর্ণের মূল্যের সাথে কিতাবের মূল্য যোগ করে মোট টাকার যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি শুধু কিতাবের মূল্যের যাকাত দিতে হবে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর যাকাত ফরয নয়। কারণ আপনার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত ভরি। সেখানে আপনার কাছে রয়েছে পাঁচ ভরি, যা নেসাবের চেয়ে কম। আর আপনার কিতাবাদি যেহেতু পড়ার জন্য তাই এগুলো যাকাতের হিসাবে ধর্তব্য হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/১২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ব্যবসার জন্য তিন লক্ষ...

প্রশ্ন

আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ব্যবসার জন্য তিন লক্ষ টাকা ধার নিয়েছি। পরিশোধের নিশ্চয়তাস্বরূপ তার কাছে ১৫ ভরি স্বর্ণ বন্ধক রেখেছি। দুই বছর হয়ে গেছে। এখনও আমি সেই টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তাই স্বর্ণগুলোও এখনও বন্ধক রয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, ঐ স্বর্ণগুলোর বিগত দুই বছরের যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর

বন্ধকী বস্তুর উপর যাকাত ফরয। তাই বিগত দুই বছরের যাকাত আপনাকে দিতে হবে। তবে এখনই দেওয়া আবশ্যক নয়। যখন তা ফিরিয়ে আনবেন তখন বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করলেই চলবে। আর চাইলে বন্ধক থাকা অবস্থায়ই ঐ স্বর্ণের যাকাত বছরে বছরে আদায় করে দিতে পারেন।

-কিতাবুল আছল ৩/১৭৫; মাবসূত, সারাখসী ২১/১২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এটি পরিপূর্ণভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।...

প্রশ্ন

আমি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এটি পরিপূর্ণভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখা হয়। জমা রাখা টাকার একটি ন্যূনতম পরিমাণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করা হয়ে থাকে। আমি ইচ্ছা করলে বেশি টাকাও জমা রাখতে পারি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সলে বেতনের প্রায় অর্ধেক জমা রেখেছিলাম। এতে আনুমানিক ১ লক্ষ টাকা সরকারী বাধ্যবাধকতার অতিরিক্ত জমা করেছি। এই টাকার উপর মুনাফা দেওয়া হয়। চাকরি হতে অবসর গ্রহণের সময় এই টাকা উঠানো যায়। তবে নিজ প্রয়োজনে এই টাকার ৮০% যে কোনো সময় লোন পাওয়া যায়। তবে উক্ত টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা লাগে।

এ অবস্থায় আমার জানার প্রয়োজন-

ক) এই মুনাফা নেওয়া বৈধ হবে কি?

খ) এই জমানো টাকার উপর প্রতি বছর যাকাত আদায় করতে হবে কি?

উত্তর

সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।

আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে কাটানো জায়েয নেই। কেউ কাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আপনার জন্য বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করা বৈধ হয়নি। এ কারণে আপনার সুদি চুক্তির গুনাহ হয়েছে। এখন সম্ভব হলে আপনার কর্তব্য হবে, বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত যা জমা করেছেন তার সুদসহ উঠিয়ে ফেলা এবং এই সুদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া। আর এখন উঠানো সম্ভব না হলে চাকরি শেষে যখন সব টাকা উঠাবেন তখন হলেও ঐচ্ছিক জমাকৃত অংশের সুদ সদকা করে দিতে হবে। আর নিজ বেতনের জমাকৃত অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রকাশ থাকে যে, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই তা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না।

আর আপনি স্বেচ্ছায় যে এক লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন এ টাকার যাকাত জমার বছর থেকেই দিতে হবে। এ টাকার অতিরিক্তটা যাকাতযোগ্য নয়; বরং তা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।

-মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক ভাই ছোটবেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে রূপার মেডেলসহ...

প্রশ্ন

আমার এক ভাই ছোটবেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে রূপার মেডেলসহ রূপার তৈরি আরও নানা জিনিস পুরস্কার পেয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৬৫ তোলা।

আমি জানতে চাই, এখন বালেগ হওয়ার পর কি তার উপর এগুলোর কারণে যাকাত ওয়াজিব হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, বালেগ হওয়ার পর তাকে এই রূপাগুলোর যাকাত দিতে হবে। বালেগ হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর ২.৫% করে রূপা বা তার মূল্য যাকাত দিতে হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ২/১৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্বামী অনেক বছর যাবৎ একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে...

প্রশ্ন

আমার স্বামী অনেক বছর যাবৎ একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে অবস্থানরত। তিনি বড় কোনো আয়-উপার্জন করেন না। আমি একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করি এবং আমার উপার্জনেই সংসার চলে। আমার নিজের উপর যাকাত ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার স্বামী ও সন্তানদের পক্ষ থেকেও কি আমাকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে?

উল্লেখ্য, আমার স্বামী ও সন্তানদের এ পরিমাণ সম্পদ নেই যে, তাদের উপর যাকাত বা সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়।

উত্তর

না, স্বামী ও সন্তানদের সদকায়ে ফিতর আপনাকে আদায় করতে হবে না। স্বামীর উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হোক বা না হোক স্ত্রীর জন্য তা আদায় করা আবশ্যক নয়। আর পিতার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হলে নাবালেগ সন্তানের ফিতরা পিতাকেই আদায় করতে হয়। সন্তানের মায়ের উপর এ দায়িত্ব বর্তায় না।

উল্লেখ্য, মা সামর্থ্যবান হলেও সন্তানদের সদকায়ে ফিতর দেওয়া তার উপর ওয়াজিব হয় না।

-কিতাবুল আছল ২/১৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩; আল বাহরুর রায়েক ২/২৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার উপর হজ্ব ফরয। যাব যাব করে এখনো যাওয়া হয়নি।...

প্রশ্ন

আমার উপর হজ্ব ফরয। যাব যাব করে এখনো যাওয়া হয়নি। হজ্বের উদ্দেশ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা আড়াই বছর যাবৎ ব্যাংকে জমা আছে। তো এই টাকার উপরও কি প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

জ্বি হাঁ, হজ্বের উদ্দেশ্যে জমানো টাকার উপরও প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে। বিগত দুই বছরের যাকাত না দেওয়া হলে সেটাও আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, পূর্বের বছরের যাকাত বাদ দিয়ে পরবর্তী বছরের যাকাতের হিসাব বের করা। অতএব প্রথম বছরের যাকাত পাঁচ লক্ষ টাকার উপর ১২,৫০০/-, দ্বিতীয় বছরের যাকাত ৪,৮৭,৫০০/- টাকার উপর ১২,১৮৭.৫/- ও চলতি বছরের যাকাত ৪,৭৫,৩১২.৫/- টাকার উপর ১১,৮৮২.৮১/- টাকা আদায় করতে হবে।

আর যত দ্রুত সম্ভব হজ্ব আদায় করে নিতে হবে। কেননা বিনা ওজরে হজ্ব আদায়ে বিলম্ব করা গুনাহ।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতহুল কাদীর ২/১১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯-২৬১, ৪৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একটি পুকুরে মাছ চাষ করি। পাঁচ-ছয় মাস পরপর মাছ...

প্রশ্ন

আমি একটি পুকুরে মাছ চাষ করি। পাঁচ-ছয় মাস পরপর মাছ বিক্রি করি। ঐ টাকা দিয়ে সংসার চালাই। এবং ঐ টাকা দিয়েই আবার পোনা কিনে পুকুরে ছাড়ি। যদি কিছু টাকা বেশি হয় তাহলে আরেকটা পুকুর নিই। প্রশ্ন হল, মাছ বিক্রি করার টাকাটা তো এক বছর পূর্ণ হয় না। বছর শেষ হওয়ার আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তাহলে এই টাকার উপর যাকাত আসবে কীভাবে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

টাকা যেমন যাকাতযোগ্য সম্পদ তদ্রূপ ব্যবসার মালও যাকাতযোগ্য সম্পদ। আপনার হাতে সারা বছর নেসাব পরিমাণ টাকা জমা না থাকলেও আপনার চাষের মাছ তো থাকে। চাষের মাছও যাকাতযোগ্য সম্পদ। অতএব বছর শেষে পুকুরে কী পরিমাণ মাছ আছে তা অনুমান করে নেসাবের সমমূল্যের হলে যাকাত দিতে হবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭১০৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০১৬৮; কিতাবুল আছল ২/৯৭; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৩০০-৩০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার পিতার ইন্তেকালের পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমি নগদ পনের লক্ষ...

প্রশ্ন

আমার পিতার ইন্তেকালের পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমি নগদ পনের লক্ষ টাকা ও অন্যান্য সম্পত্তি লাভ করি। এই টাকা আমার নিকট চার বছর জমা ছিল। এরপর আমার বাড়ি নির্মাণ বাবদ তা ব্যয় হয়েছে। এখন সামান্য কিছু টাকাই আমার কাছে আছে। টাকাগুলো থাকা অবস্থায় আমি সেগুলোর কোনো যাকাত আদায় করিনি। জানার বিষয় হল, বাড়ি নির্মাণ বাবদ আমার যে টাকা খরচ হয়ে গেছে সেগুলোর বিগত বছরগুলোর যাকাত কি আদায় করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, আপনাকে ঐ পনের লক্ষ টাকার বিগত চার বছরের যাকাত দিতে হবে। বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করার কারণে পিছনের বছরগুলোর যাকাত মাফ হয়ে যায়নি।

চার বছরের প্রথম বছরে আপনাকে পনের লক্ষ টাকারই যাকাত দিতে হবে। আর পরবর্তী বছরের ক্ষেত্রে পূর্বের বকেয়া যাকাত বাদ দিয়ে বাকি টাকার যাকাত দিতে হবে। সে হিসেবে প্রথম বছরের যাকাত হবে ৩৭,৫০০/- টাকা। দ্বিতীয় বছরের যাকাত হবে ৩৬,৫৬২.৫০/- টাকা। তৃতীয় বছরের যাকাত হবে ৩৫,৬৪৮.৪৩/- টাকা। চতূর্থ বছরের যাকাত হবে ৩৪,৭৫৭.২৫/-টাকা। সুতরাং ঐ চার বছরে আপনার যাকাত ওয়াজিব হয়েছে সর্বমোট ১,৪৪,৪৬৮.২৫/- টাকা। এটা এখনও আপনার উপর আবশ্যক রয়ে গেছে।

আর আপনার নিকট বর্তমানে যে টাকা আছে তা থেকে এই বকেয়া যাকাত বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নেসাব পরিমাণ হলে যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর সে টাকার বর্তমানের যাকাতও আপনাকে আদায় করতে হবে। আর যদি নেসাব পরিমাণ না থাকে তবে যাকাত ফরয হবে না।

-আলজামিউল কাবীর ১৬; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৮০-১৮১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাতের নেসাব কী? এ বছরের যাকাতের নেসাবের পরিমাণ জানতে চাই।...

প্রশ্ন

যাকাতের নেসাব কী? এ বছরের যাকাতের নেসাবের পরিমাণ জানতে চাই। স্বর্ণের যাকাত কি এক বছর পর দিতে হয়? আমার যাকাত এক বছর হওয়ার আগেই আমি কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম তা কি বৈধ হবে? আর কারো উপর নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ আছে কিন্তু তা মাত্র দুই মাস হয়েছে এমন ব্যক্তিকে কি যাকাত দেওয়া যাবে? আর আমার একটি স্বর্ণের আংটি ছিল, যা ১ বছর হওয়ার আগেই বিক্রি করেছিলাম। এখন কি সেই আংটিরও যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী (ভরি প্রতি প্রায় ৬৫০/- টাকা হিসাবে) রূপার নেসাব হয় ৩৪০০০/- টাকা। তাই কারো নিকট ঐ পরিমাণ টাকা থাকলে বা স্বর্ণ-রূপা কিংবা টাকা ও স্বর্ণ-রূপা এবং ব্যবসায়িক পণ্য মিলে নেসাব পরিমাণ থাকলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। তদ্রূপ কারো নিকট শুধু স্বর্ণ থাকলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা শুধু সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা থাকলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। এর কম থাকলে যাকাত ফরয হবে না।

নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত দিতে হবে। তাই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যে আংটি বিক্রি করা হয়েছে তার যাকাত প্রদান করতে হবে না।

আর গরিব-মিসকীনরাই হল যাকাতের প্রকৃত হকদার। তাই কারো নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে ঐ সম্পদের উপর বছর অতিক্রান্ত না হলেও তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কারণে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৯৬৬, ৯৯৪৮, আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯, ১/২৬৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩০৫, ২/২৬৬, ২/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৩, ২/৩৪৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি ঢাকায় একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করি। একদিন এক দরিদ্র লোক...

প্রশ্ন

আমি ঢাকায় একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করি। একদিন এক দরিদ্র লোক এসে চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা চাইল। খবর নিয়ে জানতে পারলাম তার বাড়ি ভোলা। এবং সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আর এদিকে আমি ইতিপূর্বে একটি কসম করে ভঙ্গ করেছি। তাই ভাবলাম, আমাকে তো দশজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাওয়াতে হবে বা এর মূল্য দিতে হবেই তাহলে এই ব্যক্তিকে দুই বেলার মূল্য ১০০ টাকা দিয়ে দেই। কিন্তু আমার কাছে মাত্র পঞ্চাশ টাকা ছিল। তাই এক বেলার নিয়তে দিয়ে দেই। পরে জনৈক আলেম বিষয়টি জানতে পেরে বললেন, এভাবে কাফফারা আদায় হবে না। একজনকে পূর্ণ দুই বেলার মূল্যই দিতে হবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ আলেম কি ঠিক বলেছেন?

উত্তর

হাঁ, তিনি ঠিকই বলেছেন। কাফফারা আদায়ের জন্য দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে দুই বেলা খাওয়াতে হবে বা দুই বেলা খাবারের মূল্য দিতে হবে। কাউকে শুধু এক বেলা খাওয়ালে বা এক বেলার মূল্য দিলে তা কসমের কাফফারার অন্তর্ভুক্ত হবে না। অবশ্য নির্দিষ্ট ঐ দরিদ্র ব্যক্তিকেই যদি আরেক বেলা খাওয়ানো বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তখন কসমের কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৭/১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১০৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমার দোকানে কয়েকজন কর্মচারী রেখেছি। তাদের সাথে চুক্তি হয়েছে...

প্রশ্ন

আমি আমার দোকানে কয়েকজন কর্মচারী রেখেছি। তাদের সাথে চুক্তি হয়েছে যে, তাদেরকে প্রত্যেক মাসে বেতন তো দেওয়া হবে। সাথে ঈদ ইত্যাদি উপলক্ষে নির্ধারিত অংকের বোনাসও দেওয়া হবে। এখন জানার বিষয় হল, আমি কি যাকাতের টাকা থেকে তাদেরকে বোনাস দিতে পারব?

উত্তর

যাকাতের টাকা দ্বারা কর্মচারীদেরকে ঈদ বোনাস দেওয়া জায়েয হবে না। কেননা বোনাস পারিশ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত। আর যাকাত সম্পূর্ণ বিনিময়হীনভাবেই দেওয়া আবশ্যক। তাই যাকাতের টাকা দিয়ে বোনাস দিলে যাকাত আদায় হবে না।

অবশ্য কর্মচারীকে তার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস দেওয়ার পর গরিব হওয়ার কারণে যাকাত থেকে কিছু দিতে চাইলে তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্তটা যাকাত বলে দেওয়াই শ্রেয় হবে। যাতে সে যাকাতের টাকাকে মালিকের অনুগ্রহ বা বোনাসের অতিরিক্ত বিভিন্ন সময় যা আশা করে সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত মনে না করে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

চলতি বছরসহ গত তিন বছর যাবৎ আমার মালিকানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত...

প্রশ্ন

চলতি বছরসহ গত তিন বছর যাবৎ আমার মালিকানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা রয়েছে। কিন্তু কোনো বছরের যাকাতই আমি আদায় করিনি। এ বছর তিন বছরের যাকাত একসাথে আদায় করতে চাচ্ছি। এখন আমি কোন বছরের যাকাত কত টাকা আদায় করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রথম বছরে ২,২০,০০০/- টাকার উপর ৫,৫০০/- টাকা যাকাত আদায় করবেন। দ্বিতীয় বছরে ৫,৫০০/- টাকা বাদ দিয়ে মোট ২,১৪,৫০০/- টাকার উপর ৫,৩৬২.৫০/- টাকা যাকাত দিবেন। আর চলতি বছরে গত দুই বছরের যাকাতের মোট ১০,৮৬২.৫০/- টাকা বিয়োগ করে ২,০৯,১৩৭.৫০/- টাকার উপর ৫,২২৮.৪৩/- টাকা যাকাত দিবেন।

উল্লেখ্য যে, যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক ফরয বিধান। তা আদায়ে বিলম্ব করা বা শিথিলতা প্রদর্শন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

-কিতাবুল আছল ২/৫৯; ফাতহুল কাদীর ২/১১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৫২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি কে? আত্মীয়কে কি যাকাত দেওয়া যায়?...

প্রশ্ন

যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি কে? আত্মীয়কে কি যাকাত দেওয়া যায়? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

যে ব্যাক্তির নিকট প্রয়োজনীয় সামান্য অর্থ সম্পদ আছে অথবা কিছুই নেই তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। তদ্রƒপভাবে যার কাছে ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য সমপরিমাণ প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ নেই তাকেও যাকাত দেওয়া যাবে। অনুরূপভাবে যার কাছে এ পরিমান সম্পদ আছে কিন্তু সে এমন ঋণগ্রস্থ যে, ঋণ পরিশোধ করে দিলে তার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ থাকে না তাকেও যাকাত দেওয়া যাবে। তবে শিল্পঋণের হুকুম এ থেকে ভিন্ন। অর্থাৎ কারো যদি ব্যক্তি মালিকানায় নেসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে এবং শিল্পঋণও থাকে তাহলে সে ব্যক্তিগত যাকাতযোগ্য সম্পদের যাকাত আদায় করবে। ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে শিল্পঋণ বাদ দিবে না।

আর ভাই বোন ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ী প্রমুখ আত্মীয় স্বজন গরীব অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে নিজের পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, প্রমুখ ঊর্ধ্বতন আত্মীয় স্বজন এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি প্রমুখ অধস্তন আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও তাদেরকে যাকাত দেওয়া জাযেয হবে না। তদ্রƒপ স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না।

প্রকাশ থাকে যে, যাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন আত্মীয়স্বজনকে যাকাত দিলে যাকাত দেওয়ার সওয়াবের পাশাপাশি আত্মিয়তার সম্পর্কের হক আদায়ের সাওয়াবও হবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮, ১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪০-২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯,৩৪৩, ৩৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন চাকুরিজীবী। পাশাপাশি আমার একটি ব্যবসাও আছে। বিগত জুন...

প্রশ্ন

আমি একজন চাকুরিজীবী। পাশাপাশি আমার একটি ব্যবসাও আছে। বিগত জুন মাস থেকে আমার যাকাত-বর্ষ শুরু হয়েছে। তখন ব্যবসার পণ্য-মূল্য ও নগদ টাকা মিলিয়ে আমার কাছে সর্বমোট চার লক্ষ টাকা ছিল। ধীরে ধীরে আামর ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। বেতনের টাকা থেকেও কিছু কিছু জমা হয়েছে। এখন যাকাত-বর্ষ পূর্ণ হওয়ার সময় ক্যাশ টাকা ও পণ্য মূল্য মিলিয়ে প্রায় আট লক্ষ টাকার সম্পদ আমার মালিকানায় আছে। জানার বিষয় হল, বছরের মাঝখানে আমার যে আয় হয়েছে সেগুলোর হিসাব কীভাবে করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে পূর্ণ আট লক্ষ টাকারই যাকাত দিতে হবে। কেননা যাকাত বর্ষের মাঝেও যা আয় হয় সব মিলে বছরের শেষ দিনে যা থাকে সবটার উপর যাকাত ফরয হয়।

Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭০৪১; মাবসূত, সারাখসী ২/১৬৫; কিতাবুল আসল ২/৮৯; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩১৯-৩২৩; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/১৪৭-১৪৮; ইলাউস সুনান ৯/৪৮-৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কয়েকটি গাড়ি আছে। যেগুলো একটি ‘‘রেন্ট এ কার’’-এর মাধ্যমে...

প্রশ্ন

আমার কয়েকটি গাড়ি আছে। যেগুলো একটি ‘‘রেন্ট এ কার’’-এর মাধ্যমে ভাড়ায় চালিত হয়। প্রতি মাসে এগুলোর ভাড়া বাবৎ আমার যে আয় হয় পরিবারের ব্যয় নির্বাহের পরও তার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমা থাকে। এভাবে অনেক টাকা জমা হলে তা দিয়ে আমি আরেকটি গাড়ি ক্রয় করি। এছাড়া কোনো গাড়ি পুরোনো হয়ে গেলে তা বিক্রি করে দেই। জানার বিষয় হল, আমার এই গাড়িগুলোর মূল্য ধরে যাকাত দিতে হবে কি না? আর নতুন গাড়ি ক্রয়ের জন্য যে টাকা জমা করি সেগুলোর ক্ষেত্রে কী বিধান?

উত্তর

রেন্ট এ কার বা ভাড়ায় চালিত গাড়ি যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আপনার ঐ গাড়িগুলোর মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে সেগুলো থেকে ভাড়া বাবৎ অর্জিত আয়ের যে অংশ প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের পর অতিরিক্ত থাকবে তা যাকাতযোগ্য সম্পদের মধ্যে গণ্য হবে। সুতরাং যাকাত-বর্ষ পূর্ণ হওয়ার সময় আপনার মালিকানায় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ বা তার বেশি যত টাকা থাকবে সবগুলোর যাকাত দিতে হবে। এমনকি গাড়ি ক্রয়ের নিয়তে জমাকৃত টাকারও বছরান্তে যাকাত দিতে হবে।

অবশ্য যাকাত-বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যদি গাড়ি কিনে ফেলেন তাহলে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।

Ñকিতাবুল আসল ২/৯৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭০৬১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন ইয়াতিম ছেলের লেখা-পড়ার খরচ বহন করি। সে এখন...

প্রশ্ন

আমি একজন ইয়াতিম ছেলের লেখা-পড়ার খরচ বহন করি। সে এখন এক হেফয খানায় পড়ে। অনেক সময় আমার সাথী সঙ্গীরা তার জন্য আমাকে যাকাতের টাকা দিয়ে থাকে। এখন জানার বিষয় হলো, আমি তো তার খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছি, এ অবস্থায় তার খরচের জন্য অন্য কারো থেকে যাকাত নেওয়া জায়েয হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছেলেটি যেহেতু যাকাত গ্রহণের যোগ্য আর তার দেখাশোনার দায়িত্ব আপনি নিয়েছেন। তাই তার জন্য নিজের যাকাত থেকে খরচ করা কিংবা অন্য থেকে যাকাত নিয়ে তার জন্য খরচ করা উভয়টিই জায়েয। আর তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে যাকাত থেকে খরচ করা যাবে নাÑ এ ধারণা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে অন্য কেউ যাকাত দিলে ছেলেটির পক্ষ থেকে আপনি তা গ্রহণ করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হলো ঐ টাকা ছেলেটির জন্যই ব্যয় করা। আর ছেলেটিকে নিজের যাকাত দিতে চাইলে তাকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ যাকাতের টাকা বা তা দ্বারা ক্রয়কৃত আসবাব পত্র তার মালিকানায় দিয়ে দিতে হবে। নিজ ঘরে খানা খাওয়ালে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। অবশ্য যাকাত থেকে তার খানার টাকা বা মাদ্রাসার অন্যান্য ফি আদায় করতে পারবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১৭৭-১৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

কী কী জিনিসের উপর যাকাত আসে? সবিস্তারে জানানোর অনুরোধ রইলো।

প্রশ্ন

কী কী জিনিসের উপর যাকাত আসে? সবিস্তারে জানানোর অনুরোধ রইলো।

উত্তর

তিন ধরনের সম্পদ যাকাতযোগ্য সম্পদ। ১. দেশী বিদেশী মুদ্রা ও টাকা-পয়সা। তা নিজের কাছে জমা থাক কিংবা ব্যাংকের কোন একাউন্টে বা বন্ড, সঞ্চয় পত্র ইত্যাদিতে থাকুক অথবা ব্যাংক গ্যারান্টি হিসাবে জমা থাক সবই যাকাতযোগ্য সম্পদ। এ ছাড়া ব্যবসার মূলধন, পণ্যের বকেয়া মূল্য এবং কাউকে দেওয়া ঋণও এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

২. সোনা-রূপা। অলঙ্কার হোক বা অন্যান্য সামগ্রী, ব্যবহৃত হোক বা অব্যবহৃত সর্বাবস্থায় তা যাকাতযোগ্য সম্পদ। (সোনা-রূপা ছাড়া অন্য কোন ধাতুর অলঙ্কার বা মূল্যবান পাথর ইত্যাদি ব্যবসার পণ্য না হলে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়।)

৩. ব্যবসার সম্পদ। ব্যবসার মালামাল ও পণ্য। ব্যবহারের নিয়ত ছাড়া কেবল বিক্রির নিয়তে কোন কিছু ক্রয় করলে তা ব্যবসার পণ্য হিসেবে গণ্য হবে, চাই তা স্থাবর সম্পত্তি হোক বা অস্থাবর কোন পণ্য এবং তা যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেমন, কেউ একটি জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করলো। তা ব্যবসা পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনিভাবে দোকান বা কারখানার বিক্রির মালামাল এবং মজুদকৃত কাঁচামাল সবই যাকাতযোগ্য সম্পদ। অবশ্য ব্যবসার উপকরণ সামগ্রী যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। যেমন, অফিস,কারখানা, মেশিনারিজ, অফিস ও কারখানার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী ও আসবাব পত্র। এছাড়া ভাড়ার জন্য বাড়ী, গাড়ী ও এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৯৯৭৪, ১০৫৫৭, ১০৫৬০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৫৪-৭০৬১; কিতাবুল আসল ২/৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭, ২৬২, ৩০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার জন্ম সাল ২৭-১১-১৯৯১। সেই হিসেবে আমার বর্তমান বয়স ২৪...

প্রশ্ন

আমার জন্ম সাল ২৭-১১-১৯৯১। সেই হিসেবে আমার বর্তমান বয়স ২৪ বছর ২ মাস। ১৩ বছর বয়সে আমি বালেগা হয়েছি। (অর্থাৎ ২০০৪-এ) ২২ বছর বয়স অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে আমি নিয়মিত নামায, রোযা, বোরকা পরা শুরু করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাকে কত বছরের নামায, রোযা কাযা করতে হবে। কেউ কেউ বলে, বালেগা হওয়ার সময় থেকে কাযার হিসাব শুরু হবে। আবার কেউ কেউ বলে, বালেগা হওয়ার পূর্বেই অনেকে নারী পুরুষের পার্থক্য বুঝতে পারে। এজন্যেই অনেকে ৯ বছর থেকে কাযার হিসাব করতে বলেন। এখন আমি সর্বমোট কয় ওয়াক্ত নামায ও কতগুলো রোযা কাযা আদায় করব? নামায রোযা ব্যতীত অন্য কোনো ইবাদাত আছে কি যা আমাকে এখন কাযা করতে হবে? কাযা নামাযের নিয়ত ও কাযা রোযার নিয়ত কিভাবে করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যেহেতু ২০০৪ সালেই প্রাপ্তবয়স্কা হয়েছেন তাই তখন থেকে যতদিন নামায পড়া হয়নি ততদিনের পাঁচ ওয়াক্ত ফরয এবং বিতর নামায হিসাব করে কাযা করতে হবে। তবে মাসিকের দিনগুলোর নামায যেহেতু মাফ তাই সেগুলোর কাযা করতে হবে না। আর বালেগা হওয়ার পর থেকে যতগুলো রমযানে রোযা রাখেননি ততদিনের রোযার কাযা করতে হবে। আর বালেগা হওয়ার পূর্বের নামায-রোযার কাযা করতে হবে না।

আর বিগত বছরগুলোতে আপনার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকলে এবং তা আদায় না করে থাকলে হিসাব করে তা আদায় করতে হবে। এছাড়া হজ্ব ফরয হয়ে থাকলে হজ্বও করে নিতে হবে।

কাযা নামাযের নিয়ত এভাবে করবেন (ফযরের ক্ষেত্রে) আমি অনাদায়ী প্রথম ফজরের নামায আদায় করছি। (যোহরের ক্ষেত্রে) আমি অনাদায়ী প্রথম যোহর নামায আদায় করছি।

এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রথম অনাদায়ী নামাযটি আদায়ের নিয়ত করবেন।

আর রোযার ক্ষেত্রেও এভাবে নিয়ত করবেন যে, আমি অনাদায়ী প্রথম ফরয রোযা আদায় করছি।

Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯৪০; সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যদি কোনো ব্যক্তির বৈধ সম্পদ এ পরিমাণ না থাকে, যার...

প্রশ্ন

যদি কোনো ব্যক্তির বৈধ সম্পদ এ পরিমাণ না থাকে, যার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়। কিন্তু তার কাছে হারাম সম্পত্তিও রয়েছে যেগুলো যোগ করলে যাকাত ওয়াজিব হয়। এমন ব্যক্তির উপর যাকাত ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর

হারাম মালের উপর যাকাত আসে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির যদি সত্যিই হালাল সম্পদ নেসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, হারাম মাল পুরোটাই মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। মালিক জানা না থাকলে গরীব-মিসকীনকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়া জরুরি। তা কোনো অবস্থায়ই নিজে ভোগ করা জায়েয হবে না।

Ñফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের একজন আত্মীয় কিছু ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার রেখে...

প্রশ্ন

আমাদের একজন আত্মীয় কিছু ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিও এতই সামান্য যে, তা দিয়ে সব ঋণ পরিশোধ হবে না। এছাড়া তার সন্তানদের পক্ষেও নিজেদের অর্থ দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এখন আমি যদি আমার যাকাতের অর্থ দিয়ে তা পরিশোধ করি তাহলে আমার যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

যাকাতের অর্থ দিয়ে কোনো মৃতের ঋণ পরিশোধ করলে যাকাত আদায় হয় না। অবশ্য মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যাকাতের উপযুক্ত হলে তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যেতে পারে। অতপর তারা চাইলে তা দ্বারা মায়্যেতের ঋণ আদায় করে দিতে পারবে।

Ñহেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমার যাকাতের টাকা তিন ভাগ করে কিছু অংশ গরীব...

প্রশ্ন

আমি আমার যাকাতের টাকা তিন ভাগ করে কিছু অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজনকে দান করি। আর কিছু অংশ ভিক্ষুকদেরকে দান করি। আর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে যাকাতের কাপড় ক্রয় করে বিতরণ করি। গরীব আত্মীয়-স্বজনদের অবস্থা তো আমি জানি। কিন্তু কাপড় বিতরণের সময় যে-ই আসে তাকে দিয়ে দেই। আলাদাভাবে খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ হয় না। ভিক্ষুকদের ক্ষেত্রেও এমন হয় যে, যে হাত পাতে তাকেই দেই। অথচ তাদের মধ্যে অনেক পেশাদার ভিক্ষুকও থাকে। তো এভাবে দিলে আমার যাকাত আদায় হবে কি? নাকি বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানা জরুরি?

উত্তর

যাকাতের অর্থ উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করা যাকাত আদায়কারীর কর্তব্য। কেউ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে প্রবল ধারণা হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।

আর ঘোষণা দিয়ে যাকাতের কাপড় বা অর্থ বিতরণ করা হলে সেক্ষেত্রে আগত লোকদের অবস্থা একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। যেন যাকাত তার হকদারদের কাছেই পৌঁছে। অবশ্য নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী কাউকে দরিদ্র মনে করে যাকাত দিয়ে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পরে ভুল প্রমাণিত হলে অর্থাৎ সে দরিদ্র ছিল নাÑএমন প্রমাণিত হলেও ঐ যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি যাকাতের উপযুক্ত নয় তার জন্য যাকাত গ্রহণ করা কোনো অবস্থায়ই বৈধ নয়। কেউ গ্রহণ করে ফেললে তার দায়িত্ব হবে মালিককে তা ফেরত দেওয়া কিংবা কোনো দরিদ্রকে সদকা করে দেওয়া।

Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৫৩০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৭-৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণ করা হয় এক লক্ষ পঞ্চাশ...

প্রশ্ন

আমার বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণ করা হয় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বিয়ের সময় আমার স্বামী পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করে দেন। বাকি এক লক্ষ টাকা চার বছর পর দিয়েছেন। এখন আমার জানার বিষয় হল, ঐ চার বছরের যাকাত আদায় করা কী আমার উপর ফরয?

উত্তর

মোহরের টাকা হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর উপর যাকাত দেওয়া ফরয হয় না। তাই ঐ এক লক্ষ টাকার উপর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক গরীব প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমি দশ হাজার টাকা...

প্রশ্ন

আমার এক গরীব প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমি দশ হাজার টাকা পাই। কয়েক বছর হয়ে গেল, কিন্তু তিনি টাকাটা দিতে পারছেন না। আমি যদি যাকাত আদায়ের নিয়তে ঐ দশ

হাজার টাকা মাফ করে দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

না, এভাবে ঋণ মাফ করার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা, যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মাল নগদে মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্ত। সুতরাং ঐ ব্যক্তি যদি বাস্তবেই যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তাহলে আপনি যাকাত বাবদ তাকে নগদ দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতে পারবেন। অতপর তার থেকে আপনার ঋণ উসুল করে নিতে পারবেন।

-কিতাবুল আছল ২/১২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০-২৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

নূরুল হক আমার প্রতিবেশী। সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিন্তু সে...

প্রশ্ন

নূরুল হক আমার প্রতিবেশী। সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিন্তু সে অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আমি তাকে যাকাতের টাকা দিলে সে লজ্জা পাবে। এখন যদি আমি তার বুঝমান ছেলেকে ঈদ-বখশিশ হিসেবে যাকাতের টাকা দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

নূরুল হক যেহেতু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তাই তার নাবালেগ বুঝমান ছেলেকে যাকাতের নিয়তে ঈদ বখশিশ হিসেবে টাকা দিলেও তা দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ফুফু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমার আব্বাও তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা...

প্রশ্ন

আমার ফুফু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমার আব্বাও তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ বছর আব্বার ইচ্ছা ছিল, আব্বার যাকাতের টাকা তাদেরকে দিবেন। কিন্তু আব্বার এক বন্ধু বললেন, আপন বোনকে তো যাকাত দেওয়া যাবে না। তাই আব্বা আর তাদেরকে যাকাত দেননি। এখন আমার জানার বিষয় হল, ঐ লোকের কথা কি ঠিক? আপন বোনকে কি যাকাত দেওয়া যায় না?

উত্তর

ঐ লোকের কথা ঠিক নয়। আপনার ফুফু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে আপনার আব্বা তাকে যাকাতের টাকা দিতে পারবেন।

যুবাইদ রাহ. বলেন, আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপন বোনকে কি যাকাত দেওয়া যায়? তিনি বললেন, হাঁ। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৬৪০

এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তারাই বেশি হকদার এবং তাদেরকে দেওয়া বেশি সওয়াব। তাবেয়ী যাহহাক রাহ. বলেন, যদি তোমার অভাবী আত্মীয়-স্বজন থাকে তবে তারাই তোমার যাকাতের বেশি হকদার।

-প্রাগুক্ত, হাদীস ১০৬৩৯; কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। সে...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। সে এই টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে মাদরাসার কুতুবখানায় ওয়াকফ করতে চায়। এর মাধ্যমে কি তার যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

কোনো প্রতিষ্ঠানে যাকাতের নিয়তে কিতাব ক্রয় করে দিলে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা, যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক। তাই ব্যক্তিকে মালিক না বানিয়ে প্রতিষ্ঠানে ওয়াকফ করলে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, মাদরাসায় দ্বীনী কিতাবাদি কিনে দেওয়া অনেক বড় সওয়াবে কাজ। এটি সদকা জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এতে দ্বীন প্রচার-প্রসার করা ও দ্বীনী কাজে সহযোগিতা করার সওয়াব হয়। এসব কাজ যাকাত-ফিতরার মাল ছাড়া নফল দান-সদকা থেকে করতে হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর এসব দ্বীনী কাজে সহায়তা করা কর্তব্য।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০২, ১২/১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৪৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২, রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে।...

প্রশ্ন

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। ঐ টাকার উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

হাঁ, এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এ থেকে আপনার মালিকানায় যা থাকবে এবং অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদসহ সবগুলোর উপর যাকাত ফরয। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫% হিসাবে যেমন,এক লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ক) যে ব্যক্তির উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত হয় আর সে কাউকে...

প্রশ্ন

ক) যে ব্যক্তির উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত হয় আর সে কাউকে কোনো কিছু হাদিয়া দেওয়ার সময় আমি এ হাদিয়াটি আমার হালাল উপার্জন হতে দিচ্ছি,Ñ এ কথা উল্লেখ না করে তাহলে কি এ হাদিয়াটি তার হালাল উপার্জন থেকে দিয়েছে এরূপ ধরে তা গ্রহণ করা এবং ব্যবহার করা যাবে?

খ) উপরোক্ত শ্রেণীর ব্যক্তিদের হাদিয়া কেউ কবুল করার পর হাদিয়া গ্রহিতা তা কিছুদিন ব্যবহার করে অথবা ব্যবহার না করেই অন্যকে আবার যদি তা হাদিয়া দিয়ে দেয় তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য এই হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর

ক) হারাম মাল থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। আর যার উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত সে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে তা হালাল মাল থেকে দিয়েছে বলে জানা গেলে তা নেওয়া বৈধ হবে। হারাম মাল থেকে দিয়েছে জানা গেলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর যদি হাদিয়া কোন মাল থেকে দিয়েছে তা জানা না যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হলে উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে। আর যদি তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল না হয়ে থাকে তাহলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। Ñমাবসূত, সারাখসী ১০/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩

খ) উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে যাদের থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা হারাম তাদের থেকে কেউ হাদিয়া গ্রহণে করে ফেললে তা নিজে ব্যবহার করতে পারবে না; বরং যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে। তা কোনো সামর্থ্যবানকে দেওয়া যাবে না। সামর্থ্যবান কাউকে দিলে সে যদি জানে যে, এটা হারাম তাহলে তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। Ñসূরা তাওবা : ৬০; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮; আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ৪/৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ঢাকায় তিন কাঠা পরিমাণ আমার একটি জমি আছে। বাড়ি বানানোর...

প্রশ্ন

ঢাকায় তিন কাঠা পরিমাণ আমার একটি জমি আছে। বাড়ি বানানোর জন্য আমি তা কিনেছিলাম পরে আমি তা ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে দেই। কোম্পানির সাথে আমার এই মর্মে চুক্তি হয়েছে, কোম্পানি ৭ তলা বিশিষ্ট একটি এপার্টম্যান্ট নির্মাণ করবে। নির্মিত ভবন ও গ্যারেজের ৫০% মালিক হব আমি আর বাকি ৫০% মালিক হবে কোম্পানি। পাশাপাশি কোম্পানি কাঠা প্রতি ৫ লক্ষ টাকা করে মোট ১৫ লক্ষ টাকা সাইনিং মানি দিবে। এই টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ইতিমধ্যে কোম্পানি দুই কিস্তিতে ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে। আর ৩য় কিস্তি গত ১৫/১২/২০১৩ তারিখে প্রদান করার কথা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। কিন্তু এত দিন অতিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও কোম্পানি সেই কিস্তি (৫ লক্ষ টাকা) পরিশোধ করেনি। টাকা পরিশোধের জন্য বারবার অবগত করা হলে কোম্পানির চেয়ারম্যান দেশের চলমান পরিস্থিতি, ব্যবসার মন্দা ইত্যাদি ওযর পেশ করে এবং অতি শীঘ্রই তা পরিশোধের ওয়াদা করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকা পরিশোধ করেনি।

আমার জানার বিষয় হল, প্রতি বছর মার্চ মাসে আমার যাকাতবর্ষ শুরু হয়। তখন আমি যাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাব করে যাকাত নির্ধারণ করে থাকি। সুতরাং বর্তমানে আমাকে কি উক্ত ৫ লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে, যা এখনো আমার হস্তগত হয়নি?

উত্তর

না, ঐ ৫ লক্ষ টাকা হস্তগত করার পূর্বে আপনাকে এর যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ টাকা হস্তগত হওয়ার পর তা আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে বিবেচিত হবে এবং এরপর থেকে এর যাকাত আদায় করতে হবে।

Ñশরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৩৪১, রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; আততাজরীদ ৩/১১৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন গৃহিণী। আমার প্রায় বারো ভরি স্বর্ণ আছে। যা...

প্রশ্ন

আমি একজন গৃহিণী। আমার প্রায় বারো ভরি স্বর্ণ আছে। যা আমার বিবাহের মোহরানা ও পিতামাতার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ পাওয়া। আর আমার স্বামীর আয় খুবই সীমিত। যা দিয়ে সংসারের খরচাদি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূর্ণ করার পরে আয়ের টাকা থেকে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আর আমাকে হাত খরচ হিসেবে যা দেওয়া হয় তাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। এদিকে আমার স্বামীর উপর বর্তমানে অনেক ঋণ আছে। ইত্যাদি কারণে আমি আমার উল্লেখিত স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে অক্ষম।

উল্লেখ্য, এই বারো ভরি স্বর্ণ যার বিবরণ উপরে উল্লেখিত হল তা আমি আমার সন্তানদের মালিক বানিয়ে দেওয়ার নিয়ত করেছি। সন্তানরা এখনো নাবালেগ রয়েছে। তাই প্রশ্ন হল, ৭.৫ ভরি স্বর্ণ আমি নিজের জন্য রেখে বাকি স্বর্ণগুলোকে এই নাবালেগ সন্তানদের মালিক বানিয়ে দিলে যাকাতের হিসাবটা আমি কীভাবে করব? বিস্তারিতভাবে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

যাকাত ইসলামের অন্যতম রোকন। পাঁচ স্তম্ভের একটি। এবং যাকাত সম্পদের হক। কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও যাকাত আদায় না করা বা আদায় না করার জন্য হীলা-বাহানা খোঁজ করা অথবা আদায় করতে গড়িমসি করা সবটাই অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আপনি যাকাত আদায়ে অসামর্থ্যরে কথা লিখেছেন। কিন্তু শরীয়ত তো সম্পদের অংশ বিশেষ দ্বারাই যাকাত দিতে বলেছে। যেমন আপনার কাছে স্বর্ণ আছে, আপনি তার ২.৫০% যাকাত হিসেবে আদায় করবেন। অন্য কোনো সম্পদ বা টাকা তো আদায় করতে হবে না। হাঁ, আপনি চাইলে সোনার বদলে সমমূল্যের টাকাও দিতে পারেন।

তাই নিজের কাছে ১২ ভরি সোনা থাকার পরও অসামর্থ্যরে প্রশ্ন আসে না।

উল্লেখ্য যে, নাবালেগ সন্তানদের কিছু স্বর্ণ দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বাস্তবেই যদি তাদেরকে ঐ পরিমাণ একেবারেই দিয়ে দেন এবং এরপর আপনার কাছে যদি ৭.৫ তোলা স্বর্ণ থাকে তবে তখনও আপনার উপর যাকাত ফরয হবে। তবে যদি ৭.৫ তোলার কম স্বর্ণ থাকে এবং অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে (যার দ্বারা আপনার যাকাতের নেসাব পূর্ণ হতে পারে) তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি নেসাবের মালিক না থাকার কারণে আপনার উপর যাকাত ফরয হবে না।

কিন্তু যাকাত থেকে বাঁচার জন্য বাহানা হিসেবে এমনটি করা যাবে না। সন্তানদেরকে বাস্তবেই মালিক বানিয়ে দিলে তারা মালিক হয়ে যাবে। তখন আর তাতে আপনার কোনো অধিকার থাকবে না। কিন্তু শুধু যাকাতের ভয়ে নামেমাত্র মালিকানা দিলে যাকাত মাফ হবে না।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৬৭; কিতাবুল আছল ২/৯১; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৮৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার দোকানে ব্যবসার পণ্য আছে প্রায় দশ...

প্রশ্ন

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার দোকানে ব্যবসার পণ্য আছে প্রায় দশ লক্ষ টাকার। আমি যথাসম্ভব নগদেই বিক্রি করে থাকি। কিন্তু ব্যবসার খাতিরে অনেক সময় বাকিও দিতে হয়। এভাবে মানুষের কাছে আমার প্রায় সত্তর-আশি হাজার টাকা বাকি আছে। আমার প্রশ্ন হল, যাকাতবর্ষ শেষ হলে ঐ বাকি টাকারও কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

হাঁ, মানুষের নিকট পাওনা টাকাও যাকাতযোগ্য সম্পদ। তবে বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার পূর্বে তার যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়। তাই আপনি চাইলে টাকাগুলো হস্তগত হওয়ার পরও যাকাত আদায় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পিছনের বছরগুলোর হিসাব করে সেগুলোর যাকাত দিতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭-২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

গত মুহাররমের ৭ তারিখে আমার এক আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল...

প্রশ্ন

গত মুহাররমের ৭ তারিখে আমার এক আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। তার উপর যাকাত ফরয ছিল। তার যাকাত-বর্ষের তারিখ ছিল ১ মুহাররম। প্রতি বছর তিনি হিসাব করেই যাকাত আদায় করতেন। কিন্তু এবার আর সে সুযোগ তার হয়নি এবং তিনি এ ব্যাপারে কোনো অসিয়ত করেননি।

এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানার বিষয় হল, তাদেরকে কি মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি তার যাকাতের টাকাও অন্যান্য সম্পদের মতো মীরাছ হিসেবে বণ্টিত হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি যেহেতু তার যাকাত আদায়ের অসিয়ত করেননি তাই তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করা জায়েয হবে না; বরং তার পরিত্যক্ত পুরো সম্পদই মীরাছ হিসেবে ধর্তব্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তির বালেগ ওয়ারিশগণ নিজেদের অংশ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত দিয়ে দিলে তারা সওয়াবের অধিকারী হবে এবং মৃত ব্যক্তিও এর দ্বারা উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। আর এক্ষেত্রে যদি সকল ওয়ারিশ বালেগ হয় এবং তারা প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কাজটি করতে চায় তাহলে ইজমালি সম্পদ থেকেও কাজটি সমাধা করতে পারবে।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৫, ১৮৬; দুরারুল হুককাম ১/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে।...

প্রশ্ন

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। এখন আমার উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

হাঁ, এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐ এক লক্ষ টাকার উপর যাকাত ফরয হবে। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫০% হিসাবে এক লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪-১৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯;

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার নিকট নগদ কোনো টাকা নেই। কেবল বিয়ের সময় মহর...

প্রশ্ন

আমার নিকট নগদ কোনো টাকা নেই। কেবল বিয়ের সময় মহর এবং উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া তিন ভরি স্বর্ণ আছে। আর আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি পাথর সেট আছে। এটি অনেক দামি পাথর দ্বারা তৈরি, যার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া যাকাতযোগ্য আর কোনো সম্পদ আমার নেই। হুজুরের নিকট জানতে চাই যে, এ অবস্থায় আমার উপর যাকাত ফরয কি না?

উত্তর

ব্যবহৃত পাথর দামি হলেও তার উপর যাকাত আসে না। তাই আপনার উক্ত পাথর সেটের উপর যাকাত আসবে না। সুতরাং আপনার নিকট যদি বাস্তবেই তিন ভরি স্বর্ণ ছাড়া যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ (তথা নগদ টাকা, রূপা বা ব্যবসার পণ্য) না থাকে তাহলে শুধু ঐ স্বর্ণের কারণে আপনার উপর যাকাত ফরয হবে না। কেননা শুধু স্বর্ণের উপর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মালিক হতে হবে। এরচেয়ে কম স্বর্ণ থাকলে এবং যাকাতযোগ্য অন্য

কোনো সম্পদ (যেমন, নগদ টাকা, রূপা বা ব্যবসার পণ্য) না থাকলে যাকাত ফরয হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৯৬৬, ১০১৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬, ২/২২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৮, ১/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩; দুরারুল হুককাম ফী শরহি গুরারিল আহকাম ১/১৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন চাকরিজীবী। গত বছরের শুরুর দিকে আমার কাছে যাকাতের...

প্রশ্ন

আমি একজন চাকরিজীবী। গত বছরের শুরুর দিকে আমার কাছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ ছিল। দু’তিন মাস পর আমার ছেলে গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে। তখন তার চিকিৎসার পিছনে আমার সব টাকা খরচ হয়ে যায়। আরো কিছু টাকা ঋণও করতে হয়। পরবর্তীতে আবার আল্লাহর রহমতে নেসাবের চেয়েও বেশি টাকা-পয়সার মালিক হয়ে যাই।

শুনেছি, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নাকি বছরের শুরু আর শেষে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা যথেষ্ট। পুরো বছর থাকা জরুরি নয়। তাহলে উক্ত অবস্থায় বছরের শুরু-শেষ নেসাবের মালিক হওয়ার কারণেই কি আমার উপর যাকাত ফরয হয়ে গেছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নিকট তখন যদি টাকা-পয়সা ছাড়া যাকাতযোগ্য আর কোনো সম্পদ না থেকে থাকে তাহলে আপনার উপর গত বছরের যাকাত ফরয হয়নি। কারণ বছরের মাঝে কিছু সময় আপনার কাছে যাকাতযোগ্য কোনো সম্পদই ছিল না। অথচ যাকাত ফরয হওয়ার জন্য বছরের শুরু-শেষ নেসাবের মালিক হওয়ার সাথে সাথে পুরো বছর অল্প হলেও প্রয়োজন অতিরিক্ত যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকা জরুরি। বছরের মাঝখানে কখনো যাকাতযোগ্য সম্পদ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে ঐ বছরের হিসাবও বাদ হয়ে যায়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে গত বছরের যাকাত দিতে হবে না। এক্ষেত্রে আপনি যখন থেকে পুনরায় নেসাবের মালিক হয়েছেন তখন থেকে নতুন করে যাকাতবর্ষ গণনা শুরু করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৮১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা...

প্রশ্ন

আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা সেটি ভাড়া দেই। আমাদের ঐ বাড়ির উপর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

না, ঐ বাড়ির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া বছর শেষে নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি ও আমার স্ত্রী উভয়েই নেসাবের মালিক। আমার শ্বশুর অনেক...

প্রশ্ন

আমি ও আমার স্ত্রী উভয়েই নেসাবের মালিক। আমার শ্বশুর অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। কিন্তু তার সৎ ভাইয়েরা জালিয়াতি করে সব সম্পদ লুটে নেয়। পরবর্তীতে মামলা মোকদ্দমা করেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো সম্পদই তার অবশিষ্ট নেই। পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক বাকি ৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। বড় ছেলে স্বল্প বেতনে শিক্ষকতা করে এবং মাত্র এক হাজার টাকা পরিবারে খরচ হিসেবে দেয়। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের অবস্থা ভাল। আমার শ্বশুরের আত্মীয়স্বজন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তারা আমার শ্বশুর বাড়িতে নির্দিষ্ট সময় বিশেষ করে দুই ঈদে তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। সাহায্যের ধরন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তাদেরকে যাকাতের টাকা দ্বারা সাহায্য করা হয়।

আমার জানার বিষয় হল, আমরা যেহেতু উভয়েই নেসাবের মালিক তাই আমাদের জন্য শ্বশুর বাড়ির খাবার-দাবার কি বৈধ? সেখান থেকে আমাদেরকে কোনো কিছু দিলে তা নেওয়া যাবে কি? যদি না হয় তাহলে আমরা যদি সেখানে বেড়াতে যাই তখন আমাদের করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয। তারা যাকাত হস্তগত করার পর এ থেকে আপনাদেরকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে কিংবা দাওয়াত করে খাওয়ালে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তি যাকাত হস্তগত করার পর তা তার নিজস্ব মাল হয়ে যায়। তা যাকাতের মালের হুকুমে থাকে না। অতএব তারা নিজেদের অন্যান্য সম্পদের মতো এই টাকা থেকেও ধনী-গরিব যে কাউকে দাওয়াত দিতে পারবে এবং ধনীদের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫০৯৭; ফাতহুল বারী ৫/২৪৩; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৩; উমদাতুল কারী ৯/৯২; বাযলুল মাজহূদ ৮/১৯৮; আলইসতিযকার ৫/৭৪; মানাসিক ৩৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার খালাম্মার গয়নাগাটিসহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদ আছে...

প্রশ্ন

আমার খালাম্মার গয়নাগাটিসহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদ আছে এবং সেই সাথে আরো এক লক্ষ টাকা মোহর বাবদ খালুর কাছে পাওনা আছে। আমার প্রশ্ন হল, খালাম্মা যখন যাকাত আদায় করবেন তখন কি মোহরের ঐ এক লক্ষ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

না, আপনার খালাম্মা মহরের যে এক লক্ষ টাকা এখনো পাননি সে টাকার যাকাত তাকে এখন আদায় করতে হবে না। মহরের টাকা হসত্মগত হওয়ার পূর্বে ঐ টাকার উপর যাকাত আসে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির তিন মেয়ে দুই ছেলে। তাদের মধ্যে এক ছেলে...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির তিন মেয়ে দুই ছেলে। তাদের মধ্যে এক ছেলে পড়াশোনা করে। ছেলে হল বালেগ। আমার প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির নগদ ২ লক্ষ টাকা আছে। সে জানে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। টাকাগুলো ২ বছর তার অধীনে আছে। সে যাকাতের টাকাগুলো তার ঐ ছেলের পিছনে খরচ করতে চাচ্ছে। এটা কী বৈধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

সন্তানাদিকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। সন্তান বালেগ হলেও সে পিতামাতার যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। তাই সন্তানকে যাকাতের টাকা দিলে বা তার পড়ালেখার পেছনে এ টাকা খরচ করলে যাকাত আদায় হবে না।

-আল মুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক বোন তার স্বামী থেকে মহর হিসাবে দেড় লক্ষ...

প্রশ্ন

আমার এক বোন তার স্বামী থেকে মহর হিসাবে দেড় লক্ষ টাকা পাবে। কিন্তু তার স্বামী গরীব হওয়ার কারণে মহর আদায় করতে পারছে না। জানার বিষয় হল, আমার ঐ বোনকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয হবে?

উত্তর

আপনার ঐ বোনের নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো সম্পদ কিংবা সোনা-রূপার অলংকারাদী নেসাব পরিমাণ না থাকলে তাকে যাকাত দেয়া জায়েয হবে এবং এক্ষেত্রে তাকে যাকাত দেওয়ার কারণে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি আত্মীয়কে সহায়তা করারও সওয়াব হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার আববা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাড়িতে অবসরে আছেন। পরিবারের সকল...

প্রশ্ন

আমার আববা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাড়িতে অবসরে আছেন। পরিবারের সকল খরচ আমি বহন করি। আমার ব্যবসায় আববা বা পরিবারের কেউ শরিক নেই। পরিবারের জরুরি খরচ আববার হাতে দেই। আমার ছোট প্রাপ্তবয়ষ্ক দুই ভাই লেখাপড়া করে। জানার বিষয় হল, আমার ঐ দুই ভাইকে তাদের লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন কিতাবাদি ও অন্যান্য যাবতীয় খরচের জন্য কি যাকাতের টাকা দিতে পারব? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরিবারের খরচের পাশাপাশি ছোট ভাইদের জরুরি খরচ বহন করাও আপনার দায়িত্ব। তাই জরুরি খরচ যাকাত থেকে গণ্য করতে পারবেন না। তবে জরুরি খরচ থেকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দরিদ্র ভাইদেরকে প্রদান করলে তা যাকাতের নিয়তে দিতে পারবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক বছর আগে আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একাউন্টে ১৫...

প্রশ্ন

এক বছর আগে আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা আছে। সে টাকা এখনো ব্যাংকেই আছে। ওয়ারিশদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। তাই কাউকে টাকা না দেওয়ার জন্য ব্যাংকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন মাস আগে একজন ব্যাংক থেকে টাকা আনতে গেলে তারা অসম্মতি জানায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ব্যাংক নিজেই ওয়ারিশদের মধ্যে তাদের প্রাপ্য অংশ বণ্টন করে দিবে।

জানার বিষয় হল, ঐ টাকার যে অংশ আমি পাব তার কারণে কি আমার উপর বিগত বছরের যাকাত ওয়াজিব হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে যেহেতু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা বণ্টন করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তাই এ পরিস্থিতিতে টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তার উপর যাকাত আসবে না এবং বিগত বছরেরও যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ টাকা হাতে আসার পর থেকে তা যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৫০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময়...

প্রশ্ন

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময় ২৫ রমযান বা তারপর দু একদিনের মধ্যেই যাকাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এ বছর একজন দরিদ্র লোককে রমযানের আগেই যাকাত দিয়ে দিয়েছি। প্রশ্ন হল, যাকাতের বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

হ্যাঁ, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার অগ্রিম যাকাত দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৬৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি চাল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি চাল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ ব্যবসা। গত বছর সে ব্যবসায় বড় ধরনের লস খায়। যার কারণে সে অনেক ঋণী হয়ে পড়ে এবং অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করার মতো তার কাছে কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা দেখে তার এক ভাই তাকে সহায়তা করার জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে। উদ্দেশ্য হল, ডিপেজিট থেকে যে মুনাফা আসবে তার পুরোটাই তাকে দিয়ে দিবে। প্রশ্ন হল উক্ত উদ্দেশ্যে তার এ ডিপোজিট খোলা জায়েয হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টটি সুদভিত্তিক। এই একাউন্টের আয় সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের একাউন্ট করলে একে তো সুদী চুক্তি করার গুনাহ হবে। আর অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সুদ গ্রহণেরও গুনাহ হবে। এ টাকা নিজে ভোগ না করলেও যেহেতু মূল চুক্তিটি সুদী। তাই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে সহায়তা করার উদ্দেশ্যেও এই একাউন্ট খোলা জায়েয হবে না।

সতুরাং ঋণগ্রস্ত বা দুস্থ-অসহায়কে সহায়তা করার জন্যও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। বরং শরীয়তসম্মত কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেমন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সুদমুক্ত কর্জে হাসান দেওয়া, দান-সদকা করা, যাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে সহায়তা করা ইত্যাদি।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৩৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

কোন্ কোন্ আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যায়? নানী ও খালাকে কি...

প্রশ্ন

কোন্ কোন্ আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যায়? নানী ও খালাকে কি যাকাত দিতে পারব?

উত্তর

নানীকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তদ্রূপ নানা, দাদা-দাদী, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানাদি ও তাদের অধস্তনকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এরা দরিদ্র হলে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে এমনি সহায়তা করা কর্তব্য।

এছাড়া খালাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে এবং এ ধরনের আত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া অধিক উত্তম।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৫৪৪; কিতাবুল আছল ২/১২৪; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে মহর বাবদ তিন ভরি স্বর্ণ...

প্রশ্ন

বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে মহর বাবদ তিন ভরি স্বর্ণ পেয়েছি। পিত্রালয় থেকে পেয়েছি আরো এক ভরি স্বর্ণ। বর্তমানে এই চার ভরি স্বর্ণ ছাড়া আমার নিকট রূপা, নগদ টাকা-পয়সা কিংবা ব্যবসায়ী পণ্য কোনোটাই নেই। এই চার ভরি স্বর্ণের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে কি আমাকে রূপার নেসাব ধার্য করে উক্ত স্বর্ণের মূল্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত ভরি। স্বর্ণের সাথে যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকলে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকা জরুরি। এছাড়া যাকাত ফরয হবে না। সুতরাং আপনার নিকট যেহেতু স্বর্ণের পূর্ণ নেসাব নেই আর যাকাতযোগ্য অন্য সম্পদও নেই তাই আপনাকে ঐ চার ভরি স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে না। এক্ষেত্রে চার ভরি স্বর্ণের মূল্য রূপার নেসাবের সমপরিমাণ হলেও যাকাত ফরয হবে না। মূল্য তখন ধর্তব্য হবে যখন স্বর্ণের সাথে রূপা বা নগদ টাকা অথবা ব্যবসার পণ্য থাকে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৭-১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমার যাকাতের অর্থ দিয়ে তিনটি ছাত্রের মাসিক খরচ বহন...

প্রশ্ন

আমি আমার যাকাতের অর্থ দিয়ে তিনটি ছাত্রের মাসিক খরচ বহন করি। তাদের প্রত্যেককে মাসে ২৫০০/- টাকা করে দেই। তিনজনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক তবে দুজন বুঝমান, তাদের টাকা আমি তাদের হাতেই দিয়ে দেই। আর একজন হল ছোট বাচ্চা ৬/৭ বছর বয়স। তার টাকা আমি তার হুজুরের কাছে দিয়ে আসি। হুজুর প্রয়োজন মতো তার জন্য খরচ করে। জানতে চাই, এভাবে যাকাতের অর্থ প্রদান করা কি বৈধ হচ্ছে? এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বুঝমান দুজনকে সরাসরি যাকাতের অর্থ দিয়ে দেয়া ঠিক আছে। তাদের হাতে পৌঁছার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। আর ছোট শিশুটির শিক্ষক যদি তার দেখাশোনার দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর হাতে টাকা দিয়ে দিলেই আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে অবুঝ শিশুর হাতে সরাসরি যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। কেননা তাকে সরাসরি যাকাত দিলে আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, নাবালেগকে যাকাত দেওয়া তখনই বৈধ যখন তার পিতা যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতহুল কাদীর ২/২১০; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক...

প্রশ্ন

আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে রমযানে যাকাত আদায় করা হয়নি। তিন মাস যাওয়ার পর পনের মাসের একত্রে যাকাত আদায় করেছি। রমযান পর্যন্ত যাকাতযোগ্য সম্পদের ব্যালেন্স ছিল প্রায় আশি লক্ষ টাকা। তিন মাস পর কোটি টাকা হয়েছে। তাই কোটি টাকার যাকাত আদায় করেছি। আমার এ আদায় কি ঠিক হয়েছে? এখন এ বছরের তিন মাসের যাকাত দিলাম। তাহলে কি আগামী রমযানে বাকি নয় মাসের যাকাত দিলে চলবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এক কোটির মধ্যে আশি লক্ষ টাকার যাকাত গত বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর বিশ লক্ষ টাকার যাকাত অগ্রিম আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। সুতরাং আগামি রমযানে যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসাব করে সেখান থেকে বিশ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পরই যাকাত ফরয হয়। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা অগ্রিম গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে বর্ষ শেষে যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্ত্রীর স্বর্ণালংকার আছে এবং ব্যাংকে কিছু টাকাও জমা আছে।...

প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর স্বর্ণালংকার আছে এবং ব্যাংকে কিছু টাকাও জমা আছে। আমার জন্য কি তার যাকাত দেওয়া জরুরি? আসলে স্ত্রীর যাকাত কার উপর ফরয? আমি যদি তার যাকাত আদায় করে দেই এতে কি আমার সওয়াব হবে?

উত্তর

স্ত্রীর সম্পদের যাকাত স্ত্রীর উপর ফরয। এটি আদায়ের দায়িত্বও তার। তবে স্বামী যদি তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেয় তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে এবং স্বামী এ কারণে সওয়াব পাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার নিকট দুই লক্ষ টাকা আছে। সে টাকার উপর দশ...

প্রশ্ন

আমার নিকট দুই লক্ষ টাকা আছে। সে টাকার উপর দশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। দশ মাসের মাথায় আমার আববা মৃত্যুবরণ করেন। তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে মীরাস হিসেবে আমি এক লক্ষ টাকা পাই। জানার বিষয় হল, বছর শেষ হলে আমার ঐ দুই লক্ষ টাকার সাথে মীরাস সূত্রে পাওয়া টাকার উপরও কি যাকাত আসবে, নাকি উভয়ের আলাদা আলাদা হিসাব হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বছর শেষে ঐ এক লক্ষ টাকাসহ পুরো তিন লক্ষ টাকা থাকলে পুরোটার যাকাত দিতে হবে। কেননা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নিকট যাকাতবর্ষের ভেতর যাকাতযোগ্য যত সম্পদ জমা হবে বছর শেষে যা থাকবে মূল নেসাবের সাথে সেগুলোরও যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে মূল নেসাবের উপর বছরপূর্ণ হওয়াই যথেষ্ট। সকল সম্পদের উপর বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের বিশজনের একটা সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে টাকা জমা...

প্রশ্ন

আমাদের বিশজনের একটা সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে টাকা জমা করি। বর্তমানে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হয়েছে। তবে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকের প্রায় আট হাজার টাকা করে জমা হয়েছে। আমাদের এই টাকার উপর কি যাকাত ওয়াজিব হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সমিতির শুধু ঐ টাকার কারণে পৃথকভাবে কারো উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না এবং সমিতির সমষ্টিগত সম্পদের উপরও যাকাত আসবে না। তবে কোনো সদস্যের নিকট যদি সমিতির টাকাসহ যাকাতযোগ্য আরো সম্পদ থাকে এবং উভয়টি মিলে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

-সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮-২১৯; সহীহ বুখারী ১/১৯৫; কিতাবুল আছল ২/৬৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৫৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকার মহর অনাদায়ী আছে। যা পরবর্তী...

প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকার মহর অনাদায়ী আছে। যা পরবর্তী সময় আদায় করার কথা। আমি সুযোগমতো তা আদায় করব। এখন প্রতি বছর যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই পঞ্চাশ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি সম্পদের যাকাত আদায় করব? নাকি তা বাদ দেওয়া যাবে না? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার স্ত্রীর মহরের টাকা যেহেতু নগদে আদায় করছেন না তাই তা বর্তমানে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না। এখন আপনাকে পুরো সম্পদেরই যাকাত দিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটির লোকজন খাদেমকে মুক্ত করার জন্য মুসল্লিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।

জানার বিষয় হল, আমি যদি যাকাতের টাকা দেই তবে কি আমার যাকাত আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, টাকা সংগ্রহের বিষয়টি মসজিদ কমিটি খাদেমের সাথে আলোচনা করেনি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহের এ বিষয়টি যেহেতু খাদেম থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি তাই এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করলে যাকাত আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, খাদেম যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তবে তার অনুমতি সাপেক্ষে এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি বর্তমানে দুই তলা একটি বিল্ডিং এর মালিক। এই বাড়ি...

প্রশ্ন

আমি বর্তমানে দুই তলা একটি বিল্ডিং এর মালিক। এই বাড়ি নির্মাণের সময় ব্যাংক থেকে ২৭ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। আবার চাকুরি শেষে ১৬ লক্ষ টাকা পেয়ে সেই টাকা এই ব্যাংকেই ফিক্সড ডিপোজিট করেছি। ডিপোজিটের লভ্যাংশ থেকে ২৭ লক্ষ টাকার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। ঋণ শেষ হতে আরো ১২ বছর সময় লাগবে। ১২ বছর পর ১৬ লক্ষ টাকা আবার নিজের অধীনে এসে যাবে। এছাড়া আরো ৩ লক্ষ টাকা বর্তমানে বিল্ডিংয়ের বাবদ ঋণ আছে। আমার নিকট বর্তমানে স্বর্ণ আছে ৭ ভরি। মাসিক আয়-ব্যয় সমান। মাসিক আয় থেকে আবার মাসিক ডিপিএস-এ জমা দেওয়া হয় ৫,০০০/-। আর ডিপিএস-এ জমা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এই ডিপিএস থেকে অন্য একজন লোন নিয়েছে ৬০ হাজার টাকা। যেই ব্যক্তি লোন নিয়েছে সে ব্যক্তিই লোন পরিশোধ করছে। এমন অবস্থায় আমার উপর যাকাত ফরয হবে কি না? কিতাবের দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

বি. দ্র. : একটি ফ্ল্যাটে আমি থাকি। আর বাকি তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। মূলত ভাড়ার অংশ করার জন্যই ঋণ করতে হয়েছে। শুধু এক ফ্ল্যাট করলে ঋণ করতে হত না।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ সকল সম্পদের যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা ১৬ লক্ষ টাকা, ৭ ভরি স্বর্ণ এবং ডিপিএস-এর ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে।

বাড়ি বাবদ আপনার যে ঋণ আছে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে কর্তন যাবে না। কারণ একে তো এই ঋণ প্রবৃদ্ধির জন্য করা হয়েছে। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত ঋণের বিপরীতে সম্পদও মজুদ আছে। তাই এ ঋণের কারণে যাকাত মওকুফ হবে না। আর ফিক্সড ডিপোজিট করলে টাকা যদিও নিজের হাতে নেই, কিন্তু নিজ প্রয়োজনে ও হেফাযতেই রাখা আছে। সুতরাং মূল জমার যাকাত দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট এবং ডিপিএস সুদী একাউন্ট। সুদ জঘন্যতম হারাম। এর ভয়াবহতা সরাসরি কুরআন মজীদেই উল্লেখ হয়েছে। তাই এসব সুদী হিসাব দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এসব হিসাব থেকে অতিরিক্ত যা পাওয়া যাবে তা সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দিতে হবে।

-আলমাআঈরুশ শরইয়াহ পৃষ্ঠা : ৫৭৩, ৫৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২১৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এ বছর আমি হজ্ব করেছি। আমরা দুজন সাথী আরাফা থেকে...

প্রশ্ন

এ বছর আমি হজ্ব করেছি। আমরা দুজন সাথী আরাফা থেকে আসরের পরই রওনা হয়ে যাই। মাগরিবের আগেই মুযদালিফার সীমানার ভিতরে পৌঁছে গেছি। একজন হুজুর বললেন, আমাদের উপর দম ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে টাকা না থাকার কারণে দম দেইনি। সফর মাসে আমার চাচা যিনি সৌদী আরব থাকেন তিনি যাবেন। তাকে দমের টাকা দিলে কি চলবে? তিনি কি হজ্বের মাস আসার আগেই দম যবাই করতে পারবেন? আর এর গোশত কি চাচারা খেতে পারবেন? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার চাচার মাধ্যমে দম আদায় করতে পারবেন। আর তা হজ্বের মাস আসার আগেও যবাই করা যাবে। কেননা দম ওয়াজিব হলে ঐ বছরের ১০ থেকে ১২ যিলহজ্বের মধ্যে আদায় করা উত্তম। তবে এরপর বছরের অন্য সময়ও জরিমানা দম আদায় করা জায়েয। আর দমের পশু যবাই করতে হবে হারামের এলাকাতেই। হারামের বাইরে যবাই করলে তা দ্বারা দম আদায় হবে না। দমের গোশত সদকা করা জরুরি। এটা ফকীর-মিসকীনের হক। চাচা যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হন তবে তিনিও আপনার দমের গোশত খেতে পারবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৭২; মানাসিক ৩৯৩-৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের একটি ঔষধ ফ্যাক্টরি আছে। আমার আববা বছরান্তে যাকাত প্রদান...

প্রশ্ন

আমাদের একটি ঔষধ ফ্যাক্টরি আছে। আমার আববা বছরান্তে যাকাত প্রদান করে থাকেন। একজন আলেম বলেছেন, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ঔষধ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে না। জানতে চাই, ঐ হুজুর কি ঠিক বলেছেন?

উত্তর

জ্বী! ঐ আলেম ঠিকই বলেছেন। ঔষধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কল-কারখানা ও যন্ত্রপাতির যাকাত দিতে হবে না। তবে ঔষধ তৈরির জন্য কাঁচামাল, প্রস্ত্ততকৃত ঔষধ এবং আয়ের উপর যাকাত দিতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/১২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৬৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

একজন সাধারণ সরকারী চাকুরিজীবীর নিজের প্রয়োজন অতিরিক্ত তেমন কোনো অর্থ...

প্রশ্ন

একজন সাধারণ সরকারী চাকুরিজীবীর নিজের প্রয়োজন অতিরিক্ত তেমন কোনো অর্থ নেই। কিন্তু সরকারী চাকুরিজীবী হিসেবে তো প্রভিডেন্ট ফান্ডে তার একটা বড় অংক জমা হয়, যা সে রিটায়ার্ডের পরে পাবে। লোকটির বেতনের টাকা দিয়ে চলা খুব মুশকিল। কিছু ঋণ আছে। এখন সে ঋণ আদায় ও খরচের জন্য যাকাত নিতে পারবে কি? এ ব্যক্তিকে যাকাত দিতে কোনো অসুবিধা আছে কি? প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি? প্রকাশ থাকে যে, সরকার বাধ্যতামূলকভাবে যতটুকু কেটে রাখে ততটুকুই সে জমা করে এর বেশি জমা করে না।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। সরকারী বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যেহেতু চাকুরি অবস্থায় চাকুরিজীবীর হস্তগতই হয় না এবং এতে তার মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয় না তাই এই ফান্ড থাকা সত্ত্বেও লোকটি দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত হলে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। এই ফান্ডের টাকা তার যাকাত গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল মুফতীন পৃষ্ঠা : ৩৯৪; ইমদাদুল আহকাম ২/১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির নিজের কোনো অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু পিতার ইন্তিকালের কারণে...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির নিজের কোনো অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু পিতার ইন্তিকালের কারণে মিরাসের একটি বড় অংশ সে পাবে। যদিও এখনও তা বণ্টন করা হয়নি। ঐ বক্তিকে কি যাকাত দেওয়া যাবে?

উত্তর

মিরাস বণ্টন না হলেও উত্তরাধিকার সম্পদের মালিক ওয়ারিশগণ। তাই লোকটি পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে যা পাবে তা যদি নেসাব পরিমাণ হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয় তবে এ কারণে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না।

তাকে যাকাত দিলে আদায়ও হবে না। অবশ্য উত্তরাধিকার সম্পত্তি যদি নেসাব পরিমাণ বা প্রয়োজন অতিরিক্ত না হয় অথবা তার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত এমন কোনো সম্পদও না থাকে যার সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তবে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা : ১০৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ইসলামী অনুষ্ঠান ও গবেষণার জন্য একটি জনপ্রিয় টিভি-চ্যানেল বাংলাদেশে তাদের...

প্রশ্ন

ইসলামী অনুষ্ঠান ও গবেষণার জন্য একটি জনপ্রিয় টিভি-চ্যানেল বাংলাদেশে তাদের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দর্শক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে তারা আর্থিক অনুদানের আহবান জানিয়েছেন। এ বাবদ তারা যাকাতের টাকাও গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাই, কোনো ইসলামী টিভি চ্যানেল কি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে? তাদেরকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি?

উত্তর

টিভি চ্যানেলের জন্য যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। কারণ যাকাত গরীব-মিসকীনের হক। যাকাত আদায়ের খাত শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। নির্ধারিত খাতের বাইরে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না।

আর প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রটি শরীয়ত নির্ধারিত খাতসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই কোনো চ্যানেলকে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েয হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক বইয়ে পেয়েছি, কোনো মহিলার যদি শুধু দুই ভরি স্বর্ণ...

প্রশ্ন

এক বইয়ে পেয়েছি, কোনো মহিলার যদি শুধু দুই ভরি স্বর্ণ থাকে (যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার অধিক) তবে সে নেসাবের মালিক হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু সেই মহিলার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অল্প টাকাও থাকে তবে সেই টাকা দুই ভরি স্বর্ণের মূল্যের সাথে যোগ হয়ে নেসাব পূর্ণ হবে। সেই হিসেবে বছরান্তে যদি ওই মহিলার কাছে দুই ভরি স্বর্ণের সাথে অল্প টাকাও অতিরিক্ত থাকে তবে তাকে পুরো মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। মাসআলাটি কি সহীহ?

যদি উপরোক্ত মাসআলাটি সঠিক হয়। তবে ঈদের সময় মহিলারা হাদিয়া হিসেবে যে টাকা পায় এবং সেই টাকা জমিয়ে না রেখে খরচ করার নিয়ত থাকে, তবে কি সেটা ‘‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত ’’ টাকা হিসেবে স্বর্ণের মূল্যের সাথে যুক্ত হয়ে ‘নেসাব’ হিসেবে ধর্তব্য হবে? এবং বছরান্তে তার যাকাত দিতে হবে? বিস্তারিত উদাহরণসহ জানালে খুবই উপকৃত হব।

উত্তর

কিতাবের প্রশ্নোক্ত মাসআলাটি সঠিক। দুই ভরি স্বর্ণের সাথে কিছু টাকা থাকলেও স্বর্ণের মূল্য হিসাব করে তা নেসাব পরিমাণ হলে বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার যাকাত দিতে হবে। সুতরাং ঈদের কিংবা অন্য সময়ের জমানো উপহারের টাকা থাকলে তা স্বর্ণের মূল্যের সাথে যাকাতের মধ্যে হিসাবযোগ্য। এমনকি এসব উপহারের টাকা কোনো প্রয়োজনে রেখে দিলেও বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার যাকাত দিতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৬২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৫; ফাতহুল কাদীর ২/১৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৩; আততাজরীদ ৩/১৩১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আযাদের বয়স সাত বছর। সে গত বছর উত্তরাধিকার সূত্রে নগদ...

প্রশ্ন

আযাদের বয়স সাত বছর। সে গত বছর উত্তরাধিকার সূত্রে নগদ দুই লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। প্রশ্ন হল, তার উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে কি?

উত্তর

না, আযাদ যেহেতু নাবালেগ তাই সম্পদ থাকলেও তার উপর যাকাত ফরয নয়। কেননা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়াও শর্ত।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১২৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার বোনের নিকট দশ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। গত তিন বছর...

প্রশ্ন

আমার বোনের নিকট দশ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। গত তিন বছর সেগুলোর যাকাত দেওয়া হয়নি। এখন তিনি তা আদায় করতে চাচ্ছেন। আমার জানার বিষয় হল, গত তিন বছরের যাকাত কিভাবে আদায় করবেন? বর্তমান মূল্য হিসাবে? না কি প্রত্যেক বছরের স্বর্ণের যে মূল্য ছিল সে হিসাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বিগত বছরগুলোর যাকাত যখন আদায় করা হবে তখনকার স্বর্ণের বাজার মূল্য হিসাবেই যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিগত বছরের মূল্য ধরা যাবে না। তাই এখন যাকাত আদায় করলে স্বর্ণের বর্তমান মূল্য হিসাবেই আদায় করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২২১; রদ্দুল মুহতার ২/২৮৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে...

প্রশ্ন

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাই। সাথে তার জন্য আমার যাকাতের টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাই। তন্মধ্যে যাকাতের নিয়তে এক হাজার টাকার কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যাই। আর বাকি চার হাজার টাকা তাকে প্রদান করি। জানার বিষয় হল, আমার পুরো পাঁচ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

অসুস্থ লোকটি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলে আপনার পুরো পাঁচ হাজারই যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে নগদ টাকা প্রদান করলে যেভাবে যাকাত আদায় হয় তেমনিভাবে যাকাতের নিয়তে কোনো পণ্য কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে কোনো পণ্য দ্বারা যাকাত আদায় করার চেয়ে নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। গত মাসে আমার যাকাত বর্ষ পূর্ণ...

প্রশ্ন

আমি একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। গত মাসে আমার যাকাত বর্ষ পূর্ণ হয়েছে। বছরান্তে আমি ব্যবসার নীট লাভ এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হিসাব করে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করি। এক্ষেত্রে স্টক কাঁচামালের হিসাব করিনি। কিন্তু একজন আলেম আমাকে বললেন, আপনার ব্যবসার কাঁচামালেরও যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, আমার ব্যবসার কাঁচামালগুলো হচ্ছে সুতা, রং, স্টীকার, প্যাকেটিং সামগ্রী ইত্যাদি। আমার জানার বিষয় হল, আমাকে কি এসব কাঁচামালেরও যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

হ্যাঁ, বছরান্তে যাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পদের সাথে ঐ সব মজুদ কাঁচামালেরও যাকাত দিতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; ফাতহুল কাদীর ২/১২১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের এক গরীব প্রতিবেশী বিদ্যুতের সাইট লাইন ব্যবহারের দায়ে আটক...

প্রশ্ন

আমাদের এক গরীব প্রতিবেশী বিদ্যুতের সাইট লাইন ব্যবহারের দায়ে আটক হন। পরে তার এবং তার পরিবারের অনুরোধে আমার পিতা তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এবং নিজের যাকাতের টাকা থেকে ঐ ব্যক্তির অনুমতিক্রমে তার জরিমানাসহ বিদ্যুত অফিসের বিল পরিশোধ করেন। এমতাবস্থায় আমার পিতার যাকাত আদায় হয়েছে কি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির অনুমতিক্রমে তার বিল পরিশোধ করে দেওয়ার দ্বারা আপনার পিতার যাকাত আদায় হয়ে গেছে।

-মুসনাদে আহমদ ৩৪/২০৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৫৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; কিতাবুল আসল ২/১১; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের এলাকায় একজন গরীব মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার স্বামী...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একজন গরীব মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার স্বামী ভালো চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমি আমার যাকাতের টাকা দিয়ে তার অবগতি ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পরিশোধ করি। এর দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি রোগী বা তার স্বামীর অনুমতি ছাড়াই ঐ বিল পরিশোধ করে থাকেন তবে এ টাকা দেওয়ার দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হয়নি। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার পাওনা পরিশোধ করে দিলে যাকাত আদায় হয় না। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রোগীর কোনো গরীব আত্মীয়, যে যাকাত গ্রহণ করতে পারে তার অনুমতি নিয়ে যদি তার পক্ষ থেকে বিল পরিশোধ করে দিতেন তাহলেও যাকাত আদায় হয়ে যেত। এক্ষেত্রে যার অনুমতি নেওয়া হয়েছে তাকে যাকাত দেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; হেদায়া ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তিনি বছরের বিভিন্ন সময়ে এবং প্রতি...

প্রশ্ন

আমার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তিনি বছরের বিভিন্ন সময়ে এবং প্রতি ঈদে আমাকে দামী দামী অনেক কাপড় চোপড় কিনে দেন। তাছাড়া অনেকে থ্রীপীছ, শাড়ি ইত্যাদি গিফট করে থাকে। ফলে কাপড়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন তো দুই আলমারিতেও জায়গা হয় না। অথচ সেগুলোর মাঝে মাত্র কয়েক সেট নিয়মিত ব্যবহার হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কাপড়গুলোর উপর যাকাত আসবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

না, ঐ কপড়গুলোর যাকাত দিতে হবে না। কেননা তা ব্যবহারের কাপড়। ব্যবহারের কাপড়চোপড় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও মূল্যবান হলেও তার উপর যাকাত আসে না। কিন্তু স্বর্ণ, রূপার অলংকার ব্যবহারের জন্য হলেও তার যাকাত দিতে হয়।

উল্লেখ থাকে যে, ঐ কাপড়গুলোর উপর যাকাত না আসলেও তা থেকে নফল সাদকা করা যায়। কেননা হাদীস শরীফে ব্যবহৃত কাপড় সদকা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের কাপড় সদকা করার ফযীলতও অনেক। যেমন

উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরিধান করে

الحمد لله الذي كساني ما أواري به عورتي وأتجمل به في حياتي

এ দুআটি পড়বে অতঃপর পুরাতন কাপড়টি সদকা করে দিবে সে আল্লাহ তাআলার হেফাযত ও নিরাপত্তায় থাকবে এবং জীবনে ও মরণে আল্লাহ তাআলার পথে থাকবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৬০)

কিতাবুল আছল ২/৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ফুফুর চারজন ছোট ছোট সন্তান আছে। তার স্বামী একজন...

প্রশ্ন

আমার ফুফুর চারজন ছোট ছোট সন্তান আছে। তার স্বামী একজন শ্রমিক। তিনি সারাদিন মজদুরি করে যে অর্থ পান তা দিয়ে তাদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয় না। আর ভিটেমাটি ছাড়া তাদের অন্য কোনো সম্পদ নেই এবং আমার ফুফুর ব্যক্তিগতভাবে কোনো অলংকার বা নগদ টাকা-পয়সাও নেই। প্রশ্ন হল, আমি আমার যাকাতের টাকা উক্ত ফুফুকে দিতে পারব কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, আপনি ঐ ফুফুকে যাকাত দিতে পারবেন। তাঁকে যাকাত দিলে যাকাত আদায়ের সওয়াব হবে এবং আত্মীয়তার হক আদায়েরও সওয়াব হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ৩৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের দুটি কবুতর ছিল। হঠাৎ একটি কবুতর হারিয়ে যায়। কিছুদিন...

প্রশ্ন

আমাদের দুটি কবুতর ছিল। হঠাৎ একটি কবুতর হারিয়ে যায়। কিছুদিন পর যে কবুতরটি ছিল তার সাথে বাইরের অন্য একটি কবুতর এসে মিলিত হল। এরপর বাইরের কবুতরটি ডিম পেড়ে অনেকগুলো বাচ্চা ফুটিয়েছে। আমরা ঐ বাচ্চাগুলোর কিছু খেয়েছি, কিছু বিক্রি করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, এ দুটি কবুতরের একটি আমাদের, অন্যটি কার- তা জানা যায়নি। এমন অবস্থায় বাচ্চাগুলি খাওয়া বা বিক্রি করা কি ঠিক হয়েছে? যদি ঠিক না হয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? ঐ কবুতর এবং তার অবশিষ্ট বাচ্চাগুলিই বা কী করব?

বিস্তারিত জানালে খুশি হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবুতরটির মালিক পাওয়া গেলে ঐ কবুতর এবং তার অবশিষ্ট বাচ্চাগুলো মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর যা খাওয়া বা বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোর মূল্যও তাকে দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু যদি মালিক না পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতেও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, আর আপনারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরীব হয়ে থাকেন তাহলে নিজেরাই ঐ কবুতর এবং অবশিষ্ট বাচ্চাগুলো রেখে দিতে পারবেন। আর যা খেয়েছেন বা বিক্রি করেছেন, তার মূল্যও সদকা করতে হবে না।

কিন্তু যদি আপনারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র না হয়ে থাকেন তাহলে ঐগুলো মালিকের পক্ষ থেকে সদকা করে দিতে হবে। আর যা বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোর মূল্যও সদকা করে দিতে হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ১১/১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৪২২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৯৬; ফাতহুল কাদীর ৫/২৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির ঢাকা শহরে বেশ কিছু জমি আছে। যার বর্তমান...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির ঢাকা শহরে বেশ কিছু জমি আছে। যার বর্তমান মূল্য কয়েক কোটি টাকা। ঐ জমিগুলো ক্রয় করার সময় তার বিক্রি করা উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তিনি সম্পত্তি গড়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করেছিলেন। অবশ্য পাশাপাশি এই নিয়তও ছিল যে, কখনো ভালো দাম পাওয়া গেলে বিক্রি করে দিবেন। তার ঐ জমিগুলোর উপর যাকাত আসবে কি না? জানালে খুশি হব।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যেহেতু জমিগুলো মূলত সম্পদ গড়ার উদ্দেশ্যেই ক্রয় করেছে, বিক্রি তার মূল উদ্দেশ্য ছিল না তাই উক্ত জমির উপর তাকে যাকাত দিতে হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩; কিতাবুল আছল ২/৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ভগ্নিপতির অস্বচ্ছলতার কারণে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নিয়ে বোন অনেক কষ্টে জীবন...

প্রশ্ন

আমার ভগ্নিপতির অস্বচ্ছলতার কারণে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নিয়ে বোন অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি ভগ্নিপতির মানসিক সমস্যা। এ কারণে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় আমি কি আমার বোনকে যাকাতের টাকা দিতে পারব? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বোন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাকেও যাকাত দেওয়া যায়। তাই আপনার বোনের নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ কোনো সম্পদ (যেমন-টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলঙ্কার কিংবা প্রয়োজন অতিরিক্ত মূল্যবান অন্যান্য সম্পদ) না থাকলে তাকে যাকাত দিতে পারবেন। বরং এমন গরীব নিকটাত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া উত্তমও বটে। কিন্তু যদি তার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ কোনো সম্পদ থাকে তাহলে যাকাত দেওয়া যাবে না। বরং সেক্ষেত্রে তাদেরকে নফল দান-সদকা দ্বারা সহায়তা করবেন।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭১৭১; কিতাবুল আছল ২/১৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্ত্রীর উপর তার নিজস্ব স্বর্ণালংকারের কারণে যাকাত ফরয। আমাদের...

প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর উপর তার নিজস্ব স্বর্ণালংকারের কারণে যাকাত ফরয। আমাদের বিবাহ হয়েছে প্রায় এক বছর হল। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী আমাকে বলছে যে, আমার অলংকারের যাকাত কিন্তু তুমি আদায় করবে।

আমার প্রশ্ন হল, স্ত্রীর অলংকারের যাকাত কার উপর ফরয? স্ত্রীর সম্পদের যাকাত আদায় করা কি স্বামীর দায়িত্ব?

উত্তর

স্ত্রীর অলংকারের যাকাত আদায় করা স্ত্রীর উপরই ফরয। যাকাত সম্পদের মালিকের উপরই ফরয হয়। অবশ্য স্বামী যদি স্ত্রীর অনুরোধে বা অনুমতিক্রমে খুশি মনে স্ত্রীর যাকাত আদায় করে দেয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে। এবং স্বামী সওয়াবের ভাগী হবে। বরং সামর্থ্যবান স্বামীর জন্য অর্থের সাথে জড়িত ফরযগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সহযোগিতা করাই বাঞ্ছনীয়।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৭০, ৮/২৩০; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/১০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক ভাতিজা মাদরাসায় পড়ে। গত রমযানে আমার যাকাত বাবদ...

প্রশ্ন

আমার এক ভাতিজা মাদরাসায় পড়ে। গত রমযানে আমার যাকাত বাবদ পাঁচ হাজার টাকা তাকে দিয়ে বললাম, তুমি এ টাকাটা তোমাদের মাদরাসার যাকাত ফান্ডে আমার নামে জমা করে দিও। কিন্তু ঘটনাক্রমে মাদরাসায় যাওয়ার পথে টাকাসহ তার ব্যাগটা গাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। সে বিষয়টি আমাকে পরপরই জানায়। সামনে কয়েক মাস পর আবার রমযান মাস আসছে। আমি রমযানে যাকাত আদায় করি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গত বছরের ঐ যাকাত কি আমার আদায় হয়েছে? নাকি তা পুনরায় আদায় করতে হবে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রতিনিধির নিকট থেকে যাকাতের টাকা হারিয়ে যাওয়ার কারণে যাকাত আদায় হয়নি। সুতরাং আপনাকে পুনরায় ঐ যাকাত আদায় করতে হবে। হাম্মাদ রাহ.কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কারো মাধ্যমে নিজের যাকাতের অর্থ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করল। কিন্তু ঐ ব্যক্তির নিকট যাকাতের অর্থ পৌঁছার আগেই তা নষ্ট হয়ে গেল। তার সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি ঐ ব্যক্তির মতো যে তার পাওনাদারের নিকট ঋণের অর্থ পাঠাল কিন্তু ঐ অর্থ তার কাছে পৌঁছার আগেই তা নষ্ট হয়ে গেল। (তো এক্ষেত্রে যেমনিভাবে এ ব্যক্তির ঋণ আদায় হয়নি। তেমনিভাবে ঐ লোকের যাকাতও আদায় হবে না।)

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১২; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার যাকাতের টাকা স্ত্রীর কাছে একসাথে দিয়ে বলে দেই যে,...

প্রশ্ন

আমার যাকাতের টাকা স্ত্রীর কাছে একসাথে দিয়ে বলে দেই যে, যারা বাসায় এসে যাকাত চায় বা কোনো অসহায় লোক আসে তাদেরকে এই টাকা থেকে দিবে। সে এই টাকাগুলো ভিন্ন ব্যাগে সংরক্ষণ করে। এবং সেখান থেকে ফকির মিসকীনকে দিতে থাকে। কিন্তু সে দেওয়ার সময় প্রায়ই যাকাতের নিয়ত করতে ভুলে যায়।

এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে গরিবকে দেওয়ার সময় আমার স্ত্রীর জন্য যাকাতের নিয়ত করতে হবে? যদি সে নিয়ত ছাড়াই যাকাতের এই টাকা দিয়ে দেয় তাহলে তা আদায় হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা স্ত্রীর কাছে যাকাতের টাকা দেওয়ার সময় যেহেতু আপনি যাকাতের নিয়তেই দিয়ে থাকেন এবং স্ত্রীও তা পৃথকভাবে রেখে মিসকীনকে দেয় তাই এক্ষেত্রে ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার সময় স্ত্রী নিয়ত না করলেও সমস্যা নেই। যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০-১৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের অনেকগুলো হাঁস আছে। গত বর্ষায় অন্যের একটি হাঁস আমাদের...

প্রশ্ন

আমাদের অনেকগুলো হাঁস আছে। গত বর্ষায় অন্যের একটি হাঁস আমাদের হাঁসের সাথে চলে আসে। অনেক খোঁজার পরও হাঁসটির মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখন ঐ হাঁসটি ডিম দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, ঐ হাঁস ও ডিমের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?

উত্তর

বাস্তবেই যদি হাঁসটির মালিক পাওয়া না যায় তাহলে ঐ হাঁস ও ডিমগুলো কোনো গরীবকে সদকা করে দিতে হবে। আর যদি আপনারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিজেরাও তা ভোগ করতে পারবেন। তবে উভয় অবস্থাতেই পরবর্তীতে যদি মালিকের সন্ধান পাওয়া যায় এবং সে সদকার বিষয়টি মেনে না নেয়; বরং হাঁস ও ডিম দাবি করে তাহলে তাকে এগুলোর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।

-আসসুনানুল কুবরা ৬/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার নিকট নগদ বিশ হাজার টাকা আছে। পাশাপাশি পৈত্রিক সূত্রে...

প্রশ্ন

আমার নিকট নগদ বিশ হাজার টাকা আছে। পাশাপাশি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি আছে, যার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে কি? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

উত্তর

যদি আপনার নিকট প্রশ্নোক্ত টাকা ছাড়া অন্য কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে তবে আপনার উপর যাকাত ফরয হয়নি। কেননা পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমির মূল্যের উপর যাকাত ফরয নয়। আর নগদ যে বিশ হাজার টাকা আছে তাও বর্তমান বাজারে যাকাতের নেসাব পরিমাণ নয়। তাই সেই টাকারও যাকাত দেওয়া লাগবে না।

-খিযানাতুল ফিকহ ৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৪, ২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

তিন বছর পূর্বে জনৈক দালালের সাথে আমার এই মর্মে চুক্তি...

প্রশ্ন

তিন বছর পূর্বে জনৈক দালালের সাথে আমার এই মর্মে চুক্তি হয়, তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমার জন্য মালোশিয়ায় একটি চাকুরির ব্যবস্থা করে দিবে। আর এই চুক্তির ভিত্তিতে আমি তাকে ২৫০০০/- টাকা প্রদান করি। কিন্তু এ পর্যন্ত সে আমার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করেনি। তাই আমি তাকে বললাম আমার বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তুমি আমার টাকা দিয়ে দাও। সে এতেও গড়িমসি করে অবশেষে কিছুদিন পূর্বে ঐ ২৫০০০/- টাকা ফেরত দেয়। জানার বিষয় হল, ঐ টাকা যে তিন বছর দালালের নিকট ছিল সে বছরগুলোর কি যাকাত আমাকে আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে বিগত বছরগুলোর জন্য ঐ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে না। কেননা এতদিন ঐ টাকাগুলোর উপর আপনার মালিকানা ছিল না, ঐ টাকাগুলো আপনি বিদেশ যাওয়া খরচ বাবদ লোকটিকে অগ্রিম প্রদান করেছিলেন। অবশ্য ঐ টাকাগুলো হস্তগত হওয়ার পর তাকে সামনের জন্য যাকাতের হিসাবে ধরে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৯; ফাতহুল কাদীর ২/১২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক গরিব প্রতিবেশীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। অথচ তিনি...

প্রশ্ন

আমার এক গরিব প্রতিবেশীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। অথচ তিনি একাই উপার্জন করেন। গত রমযানে তার ঘরে একদিন চাল ছিল না। তখন আমি সাড়ে তিন সের চাল দুজনের পক্ষ থেকে ছদকায়ে ফিতরের নিয়তে তাকে দেই। প্রশ্ন হল, এতে কি আমার ছদকায়ে ফিতর আদায় হয়েছে?

উত্তর

সদকা ফিতর এমন ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে যে যাকাত গ্রহণ করতে পারে। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়ে থাকে তবে তাকে সদকা ফিতর দেওয়া ঠিক হয়েছে। আর ছদকায়ে ফিতর আদায়ের নিয়ম হল, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কমপক্ষে ১.৬৫ কেজি গম অথবা তার মূল্য আদায় করা। অবশ্য ঐ সমমূল্যের প্রয়োজনীয় কোন পণ্য দিলেও ছদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

বর্তমানে যেহেতু চালের মূল্য গমের মূল্য থেকে কিছুটা বেশি তাই সাড়ে তিন কেজি চাল দেয়ায় উভয়ের ফিতরা আদায় হয়ে গেছে।

-সহীহ বুখারী ১/২০৪; সহীহ মুসলিম ১/৩১৭; সুনানে আবু দাউদ ১/২২৯; আলমাবসূত, মুহাম্মাদ ২/২৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫২২; ফাহমুর রিয়াজী, শাববীর আহমদ কাকাখেল

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত ইংরেজি মাস হিসেবে, না চন্দ্র মাস হিসেবে, নাকি বাংলা...

প্রশ্ন

যাকাত ইংরেজি মাস হিসেবে, না চন্দ্র মাস হিসেবে, নাকি বাংলা মাস হিসেবে দিতে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

যাকাত চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী আদায় করা জরুরি। বাংলা বা ইংরেজি বর্ষের হিসাব এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যনয়। কারো যদি চন্দ্রবর্ষের হিসাব রাখতে অসুবিধা হয় তবে প্রত্যেক ইংরেজি বর্ষের ১১ দিন পূর্বেইচন্দ্রবর্ষ পূরণ হয়েছে বলে ধরে নিবে এবং সে অনুযায়ী যাকাত আদায় করবে এবং পরের বছরেরহিসাব ঐ ১১ দিন পূর্ব থেকেই শুরু করবে। কারণ হিজরী সন ইংরেজি সন থেকে ১১দিন কম হয়েথাকে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৫; আলমুহাল্লা ৪/৭৫; আততাওকীতুল হাওলী ফিয যাকাত ২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ব্যবসা করার জন্য যে মাল ক্রয় করা হয় তার যাকাত...

প্রশ্ন

ব্যবসা করার জন্য যে মাল ক্রয় করা হয় তার যাকাত দিতে হবে কি না? ক্রয়কৃত মাল সারা বছরব্যাপী মজুত থাকবে না। তবে সারা বছরব্যাপী মাল ক্রয়-বিক্রয় চলতে থাকবে।

উত্তর

ব্যবসাপণ্য যাকাতযোগ্য সম্পদ। ব্যবসায়ীর যে দিন যাকাত-বর্ষ পূর্ণ হবে সেদিন তার নিকট বিক্রয়েরজন্য যেসব মালামাল থাকবে সেগুলোর মূল্য হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে মালামালকমবেশি যাই থাকুক তা ধর্তব্য নয়।

-মুখতাছারুত তাহাবী ৫০; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যদি একই দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণ-রূপার বিভিন্ন দর প্রচলিত থাকে...

প্রশ্ন

যদি একই দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণ-রূপার বিভিন্ন দর প্রচলিত থাকে তাহলে টাকা-পয়াসা ও ব্যবসার সম্পদের যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন স্থানের দর ধর্তব্য হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আমাদের দেশে রূপার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক কোনো একক দর নির্ধারিত থাকে না। তাই যদিদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দরে রূপার লেনদেন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতদাতার সম্পদ যে স্থানেরয়েছে সে স্থানের কাঁচা রূপার দর অনুযায়ী নিসাব নির্ধারণ করতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৬; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯; আলফিকহুল ইসলামী ও আদিল্লাতুহু ২/৭৬০; মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শারইয়াহ ৭/৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমাদের দেশের এক অসহায় ব্যক্তিকে মুসলিম মনে করে যাকাতের...

প্রশ্ন

আমি আমাদের দেশের এক অসহায় ব্যক্তিকে মুসলিম মনে করে যাকাতের কিছু অর্থ দিয়েছি। পরে জানতে পারলাম যে, সে অমুসলিম। এখন জানার বিষয় হল, আমার যাকাত কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় তা আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার যাকাত আদায় হয়ে গেছে। কেননা কাউকে যাকাতের উপযুক্ত মুসলমান মনে করে যাকাত দেওয়ার পর পরর্বতীতে লোকটি অমুসলিম বলে প্রকাশ পেলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। ঐ যাকাত পুনরায় আদায় করতে হয় না। কিন্তু জেনেশুনে কোনো অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। জেনে শুনে দিলে যাকাত আদায় হবে না।

-হিদায়া ১/২০৭; ইনায়াহ ২/২১৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রতি বছর দুই-তিন লক্ষ টাকা যাকাত দিয়ে থাকি।...

প্রশ্ন

আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রতি বছর দুই-তিন লক্ষ টাকা যাকাত দিয়ে থাকি। আমি কি যাকাতের টাকা মসজিদ নির্মাণ বা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে যেমন-সেতু নির্মাণ, নদী খনন, রাস্তা মেরামত, নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি কাজে ব্যয় করতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

যাকাতের টাকা দরিদ্রের হক। তাদেরকে এ টাকার নিরঙ্কুশ মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। কাউকে মালিক না বানিয়ে জনকল্যাণমূলক খাতে খরচ করলে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সুতরাং মসজিদ নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, নদী খনন, রাস্তা মেরামত, নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

-সূরা বাকারা (২) : ৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২০; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৩০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৩৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক লোকের কাছে আমার কিছু টাকা পাওনা আছে। তবে তা...

প্রশ্ন

এক লোকের কাছে আমার কিছু টাকা পাওনা আছে। তবে তা পাওয়ার তেমন আশা নেই। জানতে পেরেছি, লোকটি গরীব। যাকাতগ্রহণের উপযুক্ত। এখন ঐ টাকা যদি যাকাত আদায়ের নিয়তে ক্ষমা করে দিই তাহলে আমার যাকাত আদায় হবে কি না।

উত্তর

না, এভাবে আপনার যাকাত আদায় হবে না। কেননা যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হল, যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে দেওয়ার সময়ই যাকাতের নিয়ত করা। প্রথমে অন্য নিয়তে দিয়ে পরে তা যাকাত হিসেবে ধরে নিলে এতে যাকাত আদায় হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে যাকাত দিতে হলে সরাসরি তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করতে হবে। এরপর তার থেকে নিজের পাওনা উসূল করে নিতে পারবেন।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৭০-২৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি মোহর বাবদ ৪ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য...

প্রশ্ন

আমি মোহর বাবদ ৪ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এছাড়া যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ আমার নেই। আমার স্বামী তার বেতন থেকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য ১০০০/-টাকা দিয়ে থাকেন, যা আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় হয়ে যায়। মাস শেষে আর কোনো টাকা অবশিষ্ট থাকে না। প্রশ্ন হল, আমাকে কি ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

আপনার কাছে যেহেতু ঐ স্বর্ণালংকার ব্যতীত রূপা, টাকা-পয়সা বা ব্যবসার সম্পদ নেই এবং আপনার মালিকানাধীন স্বর্ণও নেসাব পরিমাণ নয় তাই আপনাকে ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে না।

-মাবসূত সারাখসী ২/১৯০, ১৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬-১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

রশীদ আহমদ নগদ এক কোটি টাকার মালিক। এখন সে ব্যবসায়...

প্রশ্ন

রশীদ আহমদ নগদ এক কোটি টাকার মালিক। এখন সে ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা লোন নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার মেশিনারিজ এবং ৫০ লক্ষ টাকার কাঁচামাল কিনেছে। যখন তার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে তখন তার কাছে নগদ এক কোটি টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার মেশিনারিজ ও ৫০ লক্ষ টাকার তৈরি মাল এবং ৩০ লক্ষ টাকার কাঁচামাল ছিল। জানার বিষয় হলর, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় রশীদ আহমদ উক্ত সম্পদের মোট কত টাকার যাকাত আদায় করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী রশীদ আহমদের সম্পদের মধ্যে যাকাতযোগ্য সম্পদ হল নগদ এক কোটি টাকা এবং ৫০ লক্ষ টাকার তৈরি মাল ও ৩০ লক্ষ টাকার কাঁচামালসহ মোট এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। সে ঋণ নিয়ে যে ৫০ লক্ষ টাকার কাঁচা মাল কিনেছে তা এসব যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকার শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। আর ঋণের যে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে মেশিনারিজ কিনেছে সে টাকা উন্নয়নধর্মী ঋণ হওয়ায় যাকাতযোগ্য টাকা থেকে বাদ যাবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; আবহাছু ফিকহিয়্যাহ ফী কাযায়ায যাকাতিল মুআসিরা ১/৩১৭-৮, ৩২১; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৪৬; যাকাতুদ দুয়ূন ৬০; জাদীদ ফিকহী মাকালাত ৩/৫৫-৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার স্ত্রীর কাছে আমার শ্বশুরের দেওয়া ১ ভরি স্বর্ণ আছে।...

প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর কাছে আমার শ্বশুরের দেওয়া ১ ভরি স্বর্ণ আছে। এছাড়া তার কাছে নগদ টাকা বা যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ নেই। জানতে চাই, আমার যাকাত হিসাব করার সময় ঐ ১ ভরি স্বর্ণের দাম ধরতে হবে কি না।

উত্তর

আপনার যাকাত শুধু আপনার নিজস্ব মালিকানাধীন সম্পদের উপর আসবে। স্ত্রীর স্বর্ণ এবং তার মালিকানাধীন অন্য কোনো সম্পদ আপনার যাকাতের হিসাবে ধর্তব্য হবে না। আর তার স্বর্ণও যেহেতু যাকাতের নেসাব পরিমাণ নয় তাই তাকেও ঐ স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে হবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; হেদায়া ২/১১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; ফাতহুল কাদীর ২/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৮৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

বর্তমানে স্বর্ণের ক্রয়মূল্য ৬৪ হাজার টাকা আর বিক্রয়মূল্য ৪০ হাজার...

প্রশ্ন

বর্তমানে স্বর্ণের ক্রয়মূল্য ৬৪ হাজার টাকা আর বিক্রয়মূল্য ৪০ হাজার টাকা। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমার স্বর্ণের যাকাত প্রদান করব ক্রয়মূল্যে নাকি বিক্রয়মূল্যে? বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিজের মালিকানাধীন স্বর্ণ-রূপার বর্তমান বাজার দর ধর্তব্য। অর্থাৎ নিজের অলংকারাদি বিক্রি করলে যত টাকা পাওয়া যাবে তার যাকাত আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, ভালো মানের স্বর্ণের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যে এত বেশি তফাৎ হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত।

-কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবায়েদ কাসিম ইবনে সাল্লাম পৃ. ৫২১; আবহাছুন ফিকহিয়্যাহ ১/৪২-১৪৩; ফিকহী মাকালাত ৩/১৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কারা যাকাত পাবে...

প্রশ্ন

যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কারা যাকাত পাবে না। জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

যাকাতদাতার সরাসরি উর্ধ্বতন যেমন-পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি উপরের দিকে ও অধস্তন যেমন-পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রী, দোহিত্র-দোহিত্রী, এভাবে নীচের দিকের কেউ যাকাত নিতে পারবে না। এবং স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না। এ ছাড়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন যেমন, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, মামা-মামি, খালা-খালু, ফুফা-ফুফু ইত্যাদি যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত দরিদ্র হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।

-সুনানে বায়হাকী ৭/২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৬-২০৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত-সদকাতুল ফিতরজনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে।...

প্রশ্ন

যাকাত-সদকাতুল ফিতর

জনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। সে এ টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে মাদরাসার কুতুবখানায় ওয়াকফ করতে চায়। আর কুতুবখানার কিতাব পড়ে যে কেউ-ই উপকৃত হতে পারে, কিন্তু কিতাব কেউ অন্যত্র নিতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল, যাকাতের টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে কুতুবখানায় ওয়াকফ করলে যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হল যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে তার মালিক বানিয়ে দেওয়া।

আর কিতাব ক্রয় করে কুতুবখানায় ওয়াকফ করলে যেহেতু এ শর্তটি পাওয়া যায় না তাই এভাবে কিতাব কিনে দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না।

অবশ্য যাকাতদাতা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ছাত্রদেরকে যাকাতের নিয়তে কিতাব দিয়ে দিলে এবং মালিক বানিয়ে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

-সূরা তাওবা : ৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৩৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/২০৭-২০৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২,২৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কয়েকটি মাইক্রোবাস আছে। এগুলো ভাড়ায় খাটাই। জানতে চাই, বছর...

প্রশ্ন

আমার কয়েকটি মাইক্রোবাস আছে। এগুলো ভাড়ায় খাটাই। জানতে চাই, বছর শেষে ঐ গাড়িগুলোর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

না। ঐ গাড়ির যাকাত দিতে হবে না। কেননা এগুলো যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, যে সকল আসবাবপত্র বিক্রির জন্য কেনা হয় শুধু সেগুলোতেই যাকাত ফরয হয়। অন্যান্য আসবাবপত্রে যাকাত ফরয হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১০৫৬০) তবে ভাড়া বাবদ যে অর্থ আসে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি হজ্বে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে ৩ লক্ষ টাকা জমা করেছি।...

প্রশ্ন

আমি হজ্বে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে ৩ লক্ষ টাকা জমা করেছি। ভিসার কাগজপত্রে সমস্যার কারণে এ বছর হজ্বে যাওয়া হয়নি। আগামী বছর যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার জানার বিষয় হল, বছর অতিবাহিত হলে হজ্বে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে জমাকৃত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হ্যাঁ, বছর অতিবাহিত হলে উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হবে। হজ্বের উদ্দেশ্যে জমা করা হলেও যেহেতু তা খরচ হয়নি এবং পুরো বছর জমা ছিল তাই ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে।

উল্লেখ্য, যদি টাকাগুলো কোনো হজ্ব এজেন্সিকে খরচ বাবদ অগ্রিম দিয়ে দেওয়া হত সেক্ষেত্রে এ টাকার যাকাত দিতে হত না।

সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬১-২৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার উপর দুই হাজার টাকা যাকাত আসে। এখন আমার হাতে...

প্রশ্ন

আমার উপর দুই হাজার টাকা যাকাত আসে। এখন আমার হাতে নগদ টাকা নেই। তবে আমার দোকানে কিছু কাপড় আছে যেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য দুই হাজার টাকা হবে। এখন জানতে চাই, এগুলো দ্বারা যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

যাকাত নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করা উচিত। যেন যাকাত গ্রহণকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যয় করতে পারে। অবশ্য নতুন কাপড় এবং দরিদ্রের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দ্বারাও যাকাত আদায় করা জায়েয।

-ইলাউস সুনান ৯/৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬২৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির সম্পদ অনেক বেশি তাই সে অনুমান করে যাকাত...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির সম্পদ অনেক বেশি তাই সে অনুমান করে যাকাত আদায় করে। যে পরিমাণ যাকাত আসবে বলে মনে হয় সব সময় এর বেশি আদায় করে থাকে, কম আদয় করে না। কিন্তু সে কখনোই সম্পদের সঠিক হিসাব বের করে না। জানার বিষয় হল, এভাবে অনুমান করে যাকাত দিলে এবং কিছু বেশি দিয়ে দিলে তা আদায় হবে কি?

উত্তর

উত্তর : সকল সম্পদের যাকাত যেন নিশ্চিতভাবে আদায় হয় এজন্য যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সকল সম্পদের হিসাব করা জরুরি। পুরো হিসাব না করে শুধু অনুমানের ভিত্তিতে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। কেননা অনুমান করে দিলে কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং ফরয আদায়ের বিষয়টি অনিশ্চিত থেকে যায়। তবে এভাবে আদায় করার দ্বারা বাস্তবেই যদি যাকাতযোগ্য সকল সম্পদের শতকরা আড়াইভাগ বা এর চেয়ে বেশি আদায় হয়ে যায় তবে তো যাকাত আদায় না করার গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু যদি অনুমান করে দেওয়ার কারণে এক টাকাও যাকাত কম আদায় হয় তাহলে ঐ পরিমাণ সম্পদের যাকাত তার যিম্মায় থেকে যাবে এবং পরিপূর্ণ যাকাত আদায় না করার গুনাহ হবে।

অতএব ঐ ব্যক্তির অনুমান করে যাকাত আদায় করা বৈধ হয়নি। সামনে থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করেই যাকাত দিতে হবে। আর বিগত বছরগুলোর যাকাতের যথাযথ হিসাব বের করতে চেষ্টা করবে। অনিয়ম এবং ফরয আদায়ে শৈথিল্যের কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবে।

-শরহু মাআনিল আছার ১/৩৪৯; নুখাবুল আফকার ৫/১৮৮; ফিকহী মাকালাত ৩/১৪৩-১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির মুদীখানার দোকান আছে। তার এই ব্যবসার যাকাত এসেছে...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তির মুদীখানার দোকান আছে। তার এই ব্যবসার যাকাত এসেছে ১০ হাজার টাকা। সে এক গরীব লোকের নিকট ৫ হাজার টাকা পাবে। এখন যদি ঋণগ্রহিতাকে ঐ টাকাগুলো মাফ করে দেয় তাহলে ঐ ব্যক্তির যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

না। এভাবে পাওনা টাকা মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না। এক্ষেত্রে করণীয় হল, ঋণী ব্যক্তি যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তাহলে তাকে প্রথমে যাকাতের টাকা দিয়ে দিবে। এরপর তার থেকে নিজের ঋণ উসূল করে নিবে। এ পন্থায় নিজের যাকাতও আদায় হয়ে যায় আবার ঋণও উসূল হয়ে যায়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২০৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

হামীম বিয়ের সময় মহর দেয়নি। এখনো মহর বকেয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে...

প্রশ্ন

হামীম বিয়ের সময় মহর দেয়নি। এখনো মহর বকেয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে স্ত্রীর সাথে তার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। এখন স্ত্রীকে তার প্রাপ্য মোহর আদায় করে দিতে হবে। আর এদিকে তার যাকাত বর্ষ দুই দিন পর শেষ হবে। মোহর আদায় করে দিলে তার সম্পদ যাকাতের নেসাবের চেয়ে কম হয়ে যাবে। প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় তার উপর কি যাকাত ফরয হবে?

উত্তর

বাস্তবেই যদি মোহর আদায় করলে হামীমের নিকট বছর শেষে নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তবে তার উপর যাকাত ফরয নয়। কেননা, বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণে হামীমের উপর নগদে মোহর আদায় করা অপরিহার্য হয়ে গেছে। এখন তার কর্তব্য হল অবিলম্বে দেন মোহর আদায় করে দেওয়া।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তি যাকাতের টাকা থেকে একটি কাপড় ক্রয় করে তার...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি যাকাতের টাকা থেকে একটি কাপড় ক্রয় করে তার সৎ মাকে দিয়েছে। জানতে চাই যে, সৎ মাকে যাকাত দেওয়া জায়েয কি না এবং দিলে যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, সৎ মা যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হন তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। যাকাত ও অন্যান্য ওয়াজিব সদকা দরিদ্র আত্মীয়দেরকে দেওয়া অধিক সওয়াবের কাজ।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ক) এক এলাকায় ফসলী জমি ভাগে দেওয়ার একটি পদ্ধতি চালু...

প্রশ্ন

ক) এক এলাকায় ফসলী জমি ভাগে দেওয়ার একটি পদ্ধতি চালু আছে। তা এই যে, জমির মালিক কৃষককে ১০ কাঠা জমি চাষ করতে দিলে এক মওসুমে মালিককে ১৫ মণ ধান দিতে হবে। আর জমিটি কৃষক নিজের খরচে চাষ করবে।

এভাবে জমি ভাগে দেওয়া জায়েয হবে কি না? উল্লেখ্য, ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকের ইচ্ছা। যে কোনো ক্ষেতের ধান সে দিতে পারে। নির্ধারিত কোনো ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত থাকে না।

খ) জনৈক প্রাইভেটকার ব্যবসায়ী ৮ লক্ষ টাকা মূল্যে একটি প্রাইভেটকার বিক্রি করেছেন। ক্রেতা নগদ ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আর চুক্তি করেছেন যে, বাকি ৪ লাখ টাকা ৬ মাস পর পর ১ লাখ টাকা করে দিয়ে ২ বছরে পরিশোধ করবে। প্রশ্ন হল, এ ব্যবসায়ীকে বাকি ৪ লাখ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি না।

গ) আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি ধানের ব্যবসা করেন। তিনি নগদ ও বাকিতে ধান বিক্রি করে থাকেন। বাকিতে বিক্রির একটি পদ্ধতি হল, তিনি জ্যৈষ্ঠ মাসে ক্রেতাকে ৫ মণ ধান দিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, কার্তিক মাসে এ ধরনের ধানের যা মূল্য হবে তা পরিশোধ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ধান বিক্রি করা জায়েয হবে কি না?

ঘ) অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান হওয়ার পর যে স্রাব নির্গত হয় তা নেফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে কি না?

উত্তর

ক) প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে চাষের জন্য জমি দেওয়া জায়েয। এই লেনদেনটি হচ্ছে জমি ভাড়া বা লিজ দেওয়া, ভাগে দেওয়া নয়। এক্ষেত্রে জমির মালিককে যে ১৫ মণ ধান দেওয়ার কথা হয়েছে তা জমির ভাড়া। ভাড়া যেমন টাকা হতে পারে তেমনি কোনো পণ্যও হতে পারে। পণ্য দ্বারা ভাড়া আদায় করলে কোন ধরনের পণ্য এবং তার পরিমাণ কি তা চুক্তির সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। কিন্তু এ জমির বা কোনো নির্দিষ্ট জমির ফসল থেকে দেওয়ার শর্ত করলে তা জায়েয হবে না। বরং কোন প্রকারের ধান দিবে তা নির্ধারিত করতে হবে।-হেদায়া ৪/৩০৬, ২৯৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪, ৬০; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৫১-৪৫৩, ৪৬৪, ৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৫৪, ২৫৮

খ) হ্যাঁ, ঐ ব্যবসায়ীকে গাড়ির বাকি মূল্য ৪ লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে। বছর শেষে ইচ্ছা করলে অন্যান্য সম্পদের যাকাত আদায় করার সময় ঐ ৪ লক্ষ টাকার যাকাতও আদায় করে দিতে পারবে। অথবা প্রতি কিস্তি হস্তগত হওয়ার পর ঐ কিস্তির বর্তমান ও বিগত বছরের যাকাতও আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, ব্যবসার সম্পদ এমনিতেই যাকাতযোগ্য। তাই কারটি যদি বিক্রি না হয়ে দোকানে পড়েও থাকত তবুও তার যাকাত দিতে হত।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৮৪, ৪৮৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০-৯১; মাবসূত সারাখসী ২/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৫

গ) বাকি ক্রয়-বিক্রয়ের একটি শর্ত হল, বেচা-কেনার সময়ই পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত করে নেওয়া। অন্যথায় লেনদেন নাজায়েয হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত লেনদেনে বিক্রয়ের সময় ধানের মূল্য যেহেতু নির্দিষ্ট করা হয় না তাই এ পদ্ধতিতে বেচাকেনা জায়েয হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; হেদায়া ৩/২০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯; মাজাল্লাহ ২৩৭-২৩৯; শরহুল মাজাল্লাহ ২/১৫৮-১৫৯

ঘ) হ্যাঁ, অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান হওয়ার পরও রক্তস্রাব চালু হলে তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে এক ব্যক্তি যাকাতের নেসাবের চেয়ে অধিক...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে এক ব্যক্তি যাকাতের নেসাবের চেয়ে অধিক টাকা-পয়সা ঋণ নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার কথা থাকলেও সে আদায় করেনি। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকারও করেনি, আবার সে গরীবও নয়। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত সম্পদের উপর যাকাত ফরয হবে কি না? আর যদি ঋণ গ্রহীতা তা পরিশোধ করে দেয় তাহলে বিগত বছরগুলোর অনাদায়ী যাকাত আদায় করতে হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঋণদাতাকে উক্ত সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। তবে ঋণ উসুল হওয়ার আগে ঐ টাকার যাকাত আদায় করা জরুরি নয়। পাওনা হস্তগত হওয়ার পর যাকাত আদায় করলেই চলবে। তবে কোনো যাকাতবর্ষ পার হয়ে যাওয়ার পর হস্তগত হলে অনাদায়ী বছরেরও যাকাত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, প্রথম বছরের যাকাত গোটা সম্পদ থেকে আদায় করবে। দ্বিতীয় বছরে প্রথম বছরের যাকাতের পরিমাণ বাদ দিয়ে অবশিষ্টকে মূল সম্পদ ধরে যাকাত আদায় করবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৪-১৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৫; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

(ক) আমার আম্মা আমার মরহুম পিতার মীরাসসূত্রে বাড়ির জমির ১১...

প্রশ্ন

(ক) আমার আম্মা আমার মরহুম পিতার মীরাসসূত্রে বাড়ির জমির ১১ কড়া (২২ শতাংশ) জমির মালিক হয়েছেন। জায়গাটির বর্তমান মূল্য ৬-৭ লক্ষ টাকা। এছাড়া আম্মার আর কোনো সম্পদ, অলংকারাদি বা নগদ অর্থ নেই। আম্মার ভরণ-পোষণ আমরা ছেলেরাই করি। উপরোক্ত জায়গাটি বর্তমানে খালি পড়ে আছে। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। জানার বিষয় এই যে, আমার আম্মার উপর কি হজ্ব করা ফরয?

(খ) আমি আমার পিতার মীরাসসূত্রে ৫ কাঠা জমির মালিক হয়েছি। জমিটি আমি ৯ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। চুক্তি হয়েছিল, ৫ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু ৪ মাসে ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধের পর বাকি টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। এক বছরেরও বেশি সময় দিচ্ছি-দিব বলে পার করে দেয়।

এখন জিজ্ঞাসার বিষয় হল, আমাকে উক্ত বকেয়া ৩ লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে কি না? দিলে কখন আদায় করব? উসূল হওয়ার পর বিগত সময়ের যাকাত দিতে হবে কি?

উত্তর

(ক) প্রশ্নপত্রের বিবরণ ও মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী আপনার আম্মার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। কারণ মীরাসসূত্রে পাওয়া জমিটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত, তার বসবাস ও ভরণ-পোষণে লাগছে না। আর সেটির মূল্যও হজ্ব আদায়ের জন্য। সুতরাং আপনার আম্মাকে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।

(খ) প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে জমির মূল্য বাবদ বকেয়া ৩ লক্ষ টাকা হাতে পাওয়ার আগে তার উপর যাকাত ফরয নয়। হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হলে তার যাকাত দিতে হবে। তবে আপনি যদি পূর্ব থেকে যাকাতের নেসাবের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার যাকাত-বর্ষ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলিয়ে ঐ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ঐ টাকার উপর আলাদাভাবে এক বছর অতিবাহিত হওয়া লাগবে না।

(ক) বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারী ৪৪; আলমাসালিক ১/২৬৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৭ (খ) শরহু মুখতাছারিত তাহাবী ২/৩৪১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আততাজরীদ ৩/১২৬২; তুহফাতুল ফুকাহা ১/২৯৪; ফাতাওয়া দারুল উলূম ৬/১৩৫; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫২৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার উপর যাকাত ফরয হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর যথাযথভাবে...

প্রশ্ন

আমার উপর যাকাত ফরয হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর যথাযথভাবে তা আদায় করে আসছি। কিন্তু আমার জানা ছিল না যে, স্বর্ণালংকারেরও যাকাত দিতে হয়। অথচ আমার কাছে প্রায় আট ভরি স্বর্ণের অলংকার আছে। এখন কীভাবে এ অলংকারগুলোর যাকাত আদায় করব? প্রতি বছরই তো স্বর্ণের মূল্য পরিবর্তন হচ্ছে। এখন কোন মূল্য হিসেবে তা আদায় করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ অলংকারের বর্তমান বাজারদর ধরেই পিছনের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা, প্রতি বছর ঐ অলংকারের শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করা আপনার উপর ফরয ছিল। তা যেহেতু আদায় করা হয়নি তাই এখন এ পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা তার বর্তমান বাজার দর আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায়ের সময় প্রত্যেক বছরের যাকাত বাদ দিয়ে যে সম্পদ/অলংকার থাকবে তা পরবর্তী বছরের যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে বিবেচিত হবে। যেমন কারো কাছে ৪০ ভরি অলংকার আছে। সে দুই বছর যাকাত দেয়নি। এক্ষেত্রে তাকে প্রথম বছরের জন্য ১ ভরি স্বর্ণ বা তার মূল্য যাকাত দিতে হবে। আর দ্বিতীয় বছরের যাকাতযোগ্য সম্পদ ৩৯ ভরি। তাই এ থেকে যাকাত দিতে হবে ০.৯৭৫ ভরি স্বর্ণ বা তার মূল্য।

বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; ফাতহুল কাদীর ২/১১৮; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫১৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখলে যাকাত দিতে হবে কি?

প্রশ্ন

ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখলে যাকাত দিতে হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, যেকোনো ব্যাংকে টাকা রাখা হোক জমা টাকার যাকাত দিতে হবে।

হবে।-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকা ২ বছর যাবত আছে।...

প্রশ্ন

আমার কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকা ২ বছর যাবত আছে। তবে তার যাকাত আদায় করা হয়নি। জানতে চাই, দ্বিতীয় বছর কত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে, সাড়ে সাতানব্বই হাজার টাকার, নাকি পুরো ১লক্ষ টাকার?

উত্তর

আপনি দ্বিতীয় বছরে সাড়ে সাতানব্বই হাজার টাকার যাকাত আদায় করবেন। উল্লেখ্য, ওযর ব্যতীত যাকাত আদায়ে এমন বিলম্ব করা ঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ১২/১১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২-১৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী রা.-এর জানাযা কে পড়িয়েছিলেন? তিনি কার...

প্রশ্ন

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী রা.-এর জানাযা কে পড়িয়েছিলেন? তিনি কার হাতে শাহাদাত বরণ করেন? তিনি তার পুত্রদ্বয়কে যে নসীহত করেছিলেন তা কী ছিল? সঠিকভাবে উল্লেখ করে বাধিত করবেন।

উত্তর

হযরত আলী রা. ৪০ হিজরী ১৭ রমযান আবদুর রহমান বিন মুলজিম খারেজীর আক্রমণের শিকার হন। অতঃপর তিন দিন পর শাহাদাত বরণ করেন। তার জানাযা হযরত হাসান রা. পড়িয়েছেন। তিনি হযরত হাসান ও হুসাইন রা.কে যে গুরুত্বপূর্ণ ওসীয়ত করেছিলেন তা হল নিম্নরূপ

অর্থ, আল্লাহকে ভয় করা, নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, ক্রোধ সংবরণ করা, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, অজ্ঞ ও জাহেল লোকদের সাথে বুদ্ধিমত্তার সাথে চলা, দ্বীনী বুঝ সৃষ্টি করা। দ্বীনের প্রতিটি মাসআলার উপর অটল ও অবিচল হয়ে আমল করা। কুরআন মজীদের হেফাযত করা, ভালোর আদেশ এবং মন্দের প্রতি বাধা প্রদান করা, অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।

আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৫/৪৩৭; তবাকাতে সা’দ ৩/২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪০৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি একজনের কাছে ১০০/-টাকা পেতাম। সে টাকাটা নিয়েছিল আমাকে একটি...

প্রশ্ন

আমি একজনের কাছে ১০০/-টাকা পেতাম। সে টাকাটা নিয়েছিল আমাকে একটি জিনিস কিনে দিবে বলে। কিন্তু সে তা কিনে দেয়নি। টাকা চাইলে সে একাধিকবার তারিখ করেও তা পরিশোধ করেনি। এখন আমার বিষয় হল, আমি কি সে টাকা যাকাত হিসেবে ধরতে পারব? উল্লেখ্য যে, সে যাকাত গ্রহণের যোগ্য।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ১০০/-টাকা যাকাত হিসাবে গণনা করা যাবে না; বরং আপনার উপর ফরয হওয়া যাকাতের সমুদয় অর্থ পৃথকভাবে আদায় করা ফরয। তবে উক্ত দেনাদারকে যাকাতের অর্থ দেওয়ার পর তা থেকে নিজের পাওনা উসুল করা যাবে।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমাদের মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রতি বছর সকল ছাত্রদেরকে এক সেট করে...

প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রতি বছর সকল ছাত্রদেরকে এক সেট করে কাপড় দিয়ে থাকে। এ বাবদ যত টাকা ব্যয় হয় তার পুরোটা যাকাত ফাণ্ড থেকে বহন করা হয়। জানতে চাই যেসব ছাত্র আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা কি সে কাপড় গ্রহণ করতে পারবে?

উত্তর

যাকাত গরীব-মিসকীনদের হক। এমন গরীব, যার কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই আর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হলে সে নিজে অথবা তার অভিভাবক মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় তাহলে যাকাত গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাদরাসার যেসব ছাত্র ব্যক্তিগতভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কিংবা যেসব নাবালেগের পিতা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক তাদের জন্য উক্ত কাপড় গ্রহণ করা জায়েয হবে না।

না।-সূরা তওবা : ৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১২৮; তাফসীরে কুরতুবী ৮/১৬৭; সহীহ বুখারী ১/১৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি আমার অফিসের গরীব শ্রমিকদের জন্য পরিচিত লোকজনের নিকট থেকে...

প্রশ্ন

আমি আমার অফিসের গরীব শ্রমিকদের জন্য পরিচিত লোকজনের নিকট থেকে যাকাতের টাকা এনে তাদের দিয়ে থাকি। এটা তাদের বেতন ও শ্রমের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। একজন গরীব শ্রমিক আমার কাছ থেকে কিছু ঋণ নিয়েছিল, কিন্তু সে তা পরিশোধ করতে পারছিল না। আমি তাকে বললাম, তোমাকে কিছু যাকাতের টাকা দিব। তা দিয়ে তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিও। সে ঐ টাকা দিয়ে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে। জানার বিষয় এই যে, শ্রমিকের সাথে এ ধরনের কথার কারণে কি যাকাত আদায়ে কোনো অসুবিধা হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাকাত আদায় হয়ে গেছে। ঐ শ্রমিকের সঙ্গে ঋণ আদায়ের বিষয়ে পূর্ব আলোচনা করার কারণে যাকাত আদায়ে কোনো সমস্যা হয়নি।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৩৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২১/৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তি ধনী মানুষ। তার উপর যাকাতও ফরয। কিন্তু তার...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি ধনী মানুষ। তার উপর যাকাতও ফরয। কিন্তু তার স্ত্রীর কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। স্বামীর কাছ থেকে যে পরিমাণ মহর পেয়েছিল তা খরচ হয়ে গেছে। জানার বিষয় এই যে, ঐ মহিলাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলাকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে তার ভরণ-পোষণ ও জরুরি ব্যয় যদি স্বামী যথাযথভাবে দিয়ে থাকে তাহলে তাকে যাকাত না দিয়ে প্রয়োজন আছে এমন কোনো দরিদ্রকে দেওয়াই শ্রেয়।

মাবসূত সারাখসী ৩/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; হেদায়া ২/২০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; ফাতহুল কাদীর ২/২১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪২৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৯৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তির নিকট যাকাতযোগ্য ৬০,০০০/- টাকা রয়েছে। পাশাপাশি তার মালিকানায়...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির নিকট যাকাতযোগ্য ৬০,০০০/- টাকা রয়েছে। পাশাপাশি তার মালিকানায় পাঁচ ভরি স্বর্ণও আছে। সে শুধু টাকার যাকাত আদায় করবে, নাকি স্বর্ণের যাকাতও আদায় করতে হবে? মেহেরবানী করে ফিকহের কিতাবের উদ্ধৃতিসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির নিকট ৬০,০০০/- টাকা থাকায় সে এমনিতেই যাকাতের নেসাবের অধিকারী। আর যাকাতের নেসাবধারী ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ, রূপা ও ব্যবসার সম্পদ যে পরিমাণেই থাকুক তার যাকাত দিতে হয়। তাই ঐ ব্যক্তিকে তার মালিকানাধীন ৫ ভরি স্বর্ণেরও যাকাত দিতে হবে।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৩০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈকা বিধবা মহিলার কয়েকজন নাবালেগ সন্তান আছে। তাদের তিনি নিয়ে...

প্রশ্ন

জনৈকা বিধবা মহিলার কয়েকজন নাবালেগ সন্তান আছে। তাদের তিনি নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তার সাংসারিক খরচাদির কোনো ব্যস্থা নেই। তার ভাইরা তাকে সহযোগিতা করে। ভাইরা তার দূরাবস্থা দেখে তাকে যাকাতের টাকা থেকে দিয়ে আসছে। বড় ভাই একথা জানার পর অন্য ভাইদেরকে বললেন, তোমরা যে যাকাত দিচ্ছ তার কোনো টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি আছে কি না জান? তখন ভাইরা বলল, আরে না, সে গয়নাগাটি কোথায় পাবে? আমরা কোনোদিন তাকে গয়নাগাটি পরতে দেখিনি। আর তার সংসারই চলে না। সেখানে তার কাছে জমা টাকা থাকবে কি করে? পরে বোনকে জিজ্ঞাসা করে দেখা গেল তার কাছে ১ তোলা দুই আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন আছে। আর ৬ হাজার টাকা আছে। এখন জানতে চাই, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি না? যদি যাকাত দেওয়া না যায় তাহলে এত দিন যা দেওয়া হয়েছে তার হুকুম কি? যাকাতদাতাদের যাকাত আদায় হয়েছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

স্বর্ণের ঐ চেইনের মূল্য এবং ৬ হাজার টাকা মিলে নেসাবের (সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের) চেয়ে বেশি হয়ে যায়। আর এ পরিমাণ সম্পদশালী ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যায় না। তাই উক্ত সম্পদ থাকা অবস্থায় তার জন্য যাকাত গ্রহণ করা কোনো ক্রমেই বৈধ নয়। তবে প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ভাইগণ এতদিন যেহেতু তাকে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত মনে করেই যাকাত দিয়েছে তাই তাদের বিগত দিনের যাকাত আদায় হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যেন এ ধরনের ভুল না হয়।

বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তি তার ছেলেকে বললেন, আমার নিকট এখন জমা টাকা...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি তার ছেলেকে বললেন, আমার নিকট এখন জমা টাকা নেই। তুমি তোমার টাকা দ্বারা আমার যাকাত আদায় করে দাও। পরে তোমাকে দিয়ে দিব। ছেলে পিতার যাকাত আদায় করে দিল। এখন জানার বিষয় এই যে, ছেলে নিজের টাকা দ্বারা পিতার যাকাত আদায় করার দ্বারা পিতার যাকাত আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

জ্বী, পিতার যাকাত আদায় হয়েছে। কেননা, এক্ষেত্রে ছেলে থেকে টাকা ঋণ নিয়ে তা দ্বারা যাকাত আদায় করা হয়েছে। আর ঋণের টাকা দিয়েও যাকাত আদায় করা যায়।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমরা সম্পদের উপর এক মাস পূর্বে যাকাতের বছর পূর্ণ হয়েছে।...

প্রশ্ন

আমরা সম্পদের উপর এক মাস পূর্বে যাকাতের বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তখন যাকাত আদায় করিনি। মাসখানেকের মতো দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে আরো কিছু টাকা আমার মালিকানায় এসেছে। জানার বিষয় হল, এই টাকার যাকাতও কি পূর্বের টাকার সাথে এখনই আদায় করতে হবে? না তার উপর বছর পূর্ণ হতে হবে?

উত্তর

যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর আপনি যে টাকার মালিক হয়েছেন তার যাকাত এখন ফরয নয়; পুনরায় বছর পূর্ণ হলে তখন যে স্থিতি থাকবে তার যাকাত দিতে হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৭; মাবসূত সারাখসী ২/১৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

একজন লোকের উপর যাকাত ওয়াজিব। তার এক ছেলে মাদরাসায় পড়ে...

প্রশ্ন

একজন লোকের উপর যাকাত ওয়াজিব। তার এক ছেলে মাদরাসায় পড়ে এবং সে বালেগ। তার মাদরাসার পড়াশোনার খরচ কি তার বাবা যাকাতের টাকা থেকে দিতে পারবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বালেগ সন্তান যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলেও পিতা-মাতার যাকাত তাকে দেওয়া জায়েয নয়। পিতা নিজের যাকাতের অর্থ থেকে তাকে পড়ার খরচ দিলে যাকাত আদায় হবে না।

আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমরা জানি, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে এদের কাউকে যাকাত দেওয়া যায় না।...

প্রশ্ন

আমরা জানি, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে এদের কাউকে যাকাত দেওয়া যায় না। প্রশ্ন হল, সৎ মাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, সৎ মা আর্থিকভাবে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে এ পরিমাণ টাকা আছে, যার উপর যাকাত ফরয...

প্রশ্ন

আমার কাছে এ পরিমাণ টাকা আছে, যার উপর যাকাত ফরয হয়। অপর দিকে যাকাত গ্রহণের যোগ্য এক ব্যক্তির কাছে অনেক টাকা ঋণ পাই। তার কাছে টাকা চাইলে বলে, আজ নয় কাল দেব, কাল নয় পরশু। আমার জানার বিষয় হল, আমার কাছে বিদ্যমান টাকার উপর যে পরিমাণ যাকাত ফরয হয়েছে তা যদি আমি যাকাত আদায়ের নিয়তে ঐ ঋণের টাকা হতে মাফ করে দেই তবে আমার যাকাত আদায় হবে কি? অথবা ঐ ঋণের টাকার উপর যে পরিমাণ যাকাত ফরয হয়েছে তা যদি আমি ঐ ঋণের টাকা হতে যাকাতের নিয়তে মাফ করে দেই তবে আমার যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

ঋণ মাফ করে দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হয় না। তাই ঋণের পুরোটা বা আংশিক যাকাতের নিয়তে ছেড়ে দিলে যাকাত আদায় হবে না। তবে ঋণ গ্রহীতাকে যাকাতের টাকা নগদ দান করার পর তার থেকে আপনার পাওনা উসূল করে নিতে পারেন। এতে আপনার যাকাতও আদায় হবে এবং তার ঋণমুক্তির ব্যাপারে সহযোগিতাও করা হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; হাশিয়া শালবী ১/২৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; রদ্দুল মুহতার ৩/১৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার এক প্রতিবেশী যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমি তাকে যাকাত দিতে...

প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমি তাকে যাকাত দিতে চাই। কিন' যাকাত বলে দিতে লজ্জা হয়। এখন আমি যদি যাকাতের টাকা যাকাতের কথা উল্লেখ না করে যাকাতের নিয়তে তাকে প্রদান করি তবে আমার যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। যাকাত আদায়ের জন্য গ্রহীতাকে যাকাত দেওয়া হচ্ছে একথা বলা জরুরি নয়। যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে যাকাতের কথা উল্লেখ না করেও যাকাতের টাকা দেওয়া যায়।

আলবাহরুর রায়েক ২/২১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৬৬; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৯০; মাজমাউল আনহুর ১/২৯০; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

জনৈক ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হওয়ার ব্যাপারে আমার সন্দেহ হয়েছিল,...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হওয়ার ব্যাপারে আমার সন্দেহ হয়েছিল, পরবর্তীতে প্রবল ধারণা হয়েছিল যে, সে আর্থিক দিক থেকে যাকাত গ্রহণের যোগ্য তাই আমি তাকে যাকাত দিয়েছি। কিন' পরে প্রকাশ পেল যে, আসলে সে যাকাত গ্রহণের যোগ্য ছিল না। এখন জানার বিষয় হল, আমার এই যাকাত আদায় হবে কি না, নাকি পুনরায় এই যাকাত দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনি যেহেতু প্রবল ধারণা অনুযায়ী যাকাত গ্রহণের যোগ্য মনে করেই তাকে যাকাত দিয়েছেন তাই আপনার যাকাত আদায় হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে ভুল বুঝা গেলেও তা পুনরায় আদায় করতে হবে না। সামনে থেকে যাকাত দেওয়ার পূর্বে যথাসম্ভব ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন।

সহীহ বুখারী ১/১৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯-১৯০; হিদায়া (ফাতহুল কাদীর) ২/২১৪-২১৫; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

সৎ দাদী (তথা আপনা দাদী নয়) কে যাকাত ও ফেতরা...

প্রশ্ন

সৎ দাদী (তথা আপনা দাদী নয়) কে যাকাত ও ফেতরা দেওয়া জায়েয হবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, সৎ দাদীকে যাকাত-ফেৎরা দেওয়া যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

বিবাহে আমার মোহর ধার্য করা হয়েছিল দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার...

প্রশ্ন

বিবাহে আমার মোহর ধার্য করা হয়েছিল দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বিবাহ হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। মোহর বাবদ কোনো টাকা আমাকে আমার স্বামী দেয়নি। প্রশ্ন হল, মোহরের টাকা হাতে না আসলেও বছর অতিবাহিত হওয়ার কারণে ধার্যকৃত মোহরের উপর যাকাত ফরয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

না, মোহর হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এর যাকাত দিতে হবে না; বরং হস্তগত হওয়ার পরই তা যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে।

-কিতাবুল আসল ২/৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার...

প্রশ্ন

মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার টিফিন ক্যারিয়ারের বক্সে খানা দিয়ে আসছি। প্রশ্ন হল, এ পদ্ধতিতে আমার যাকাত প্রদান করা সহীহ কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

হ্যাঁ, এ পদ্ধতিতে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খাবারের মূল্য যথাযথভাবে হিসাব করতে হবে, বেশি ধরা যাবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ২৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

এক বছর পূর্বে জনৈক ব্যক্তি আমার থেকে নেসাব পরিমাণ টাকা...

প্রশ্ন

এক বছর পূর্বে জনৈক ব্যক্তি আমার থেকে নেসাব পরিমাণ টাকা ধার নেয়। এক বছর পর এক পঞ্চমাংশ টাকা পরিশোধ করেছে। এ টাকা ব্যতীত আমার কাছে অন্য কোনো টাকা জমা নেই। জানার বিষয় হল, এখন কি উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার ঐ টাকার মেয়াদ এক বছর অতিক্রম হওয়ায় এর উপর যাকাত ফরয হয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে এখনই পুরো ঋণের টাকার যাকাত আদায় করে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে যতটুকু হস্তগত হয়েছে এখন শুধু সে অংশের যাকাত প্রদান করতে পারেন। এরপর অবশিষ্ট টাকা যখন হস্তগত হবে তখন সেগুলোর বিগত দিনের যাকাতও আদায় করতে হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০, ৩০৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ছোট দুটি মেয়ে আছে। একজনের বয়স চার বছর। আরেকজনের...

প্রশ্ন

আমার ছোট দুটি মেয়ে আছে। একজনের বয়স চার বছর। আরেকজনের বয়স ছয় বছর। মোট আট ভরি স্বর্ণ দিয়ে দুই মেয়ের জন্য আমি দুটি গলার হার এবং দুই জোড়া কানের দুল তৈরি করেছি। তারা যেহেতু এখনো ছোট তাই তাদেরকে হস্তান্তর করিনি। বর্তমানে সেগুলো আমার কাছেই আছে। তবে আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে বলে রেখেছি যে, অলঙ্কারগুলোর মালিক দুই মেয়ে। অন্য কেউ নয়। জানতে চাই,

হস্তান্তর না করার কারণে এগুলো কি আমার মালিকানায় রয়ে গেছে? আমার কি এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অলঙ্কারগুলোর মালিক আপনার দুই মেয়েই। কেননা পিতা তার নাবালেগ সন্তানকে শুধু মৌখিকভাবে কোনো কিছু দিলেই সন্তান ঐ বস্ত্তর মালিক হয়ে যায়। এর জন্য নাবালেগদের হস্তগত করা আবশ্যক নয়। অতএব আপনাকে এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে না। আর এখন ঐ মেয়েরাও যেহেতু নাবালেগ তাই তাদের উপরও এখন সেগুলোর যাকাত আদায় করা ফরয নয়। তবে তারা যখন বালেগ হবে তখন অলঙ্কারগুলো যদি অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে নিয়মানুযায়ী মেয়েরা এর যাকাত আদায় করবে।

-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ৩২২; আসসুনানুল কুবরা ৬/১৭০; জামিউ আহকামিস সিগার ১/৪৯, ২৫০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; আলবমাবসূত, সারাখসী ১২/৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ছোট ভাই বিদেশ থাকে। সে বাড়ি নির্মাণের জন্য ত্রিশ...

প্রশ্ন

আমার ছোট ভাই বিদেশ থাকে। সে বাড়ি নির্মাণের জন্য ত্রিশ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু যে জমিতে বাড়ি নির্মাণের কথা ছিল তা নিয়ে তখন মামলা চলছিল। তাই নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া যায়নি। এদিকে মামলা নিষ্পত্তি হতে এক বছর লেগে গেল। এখন এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত টাকাগুলো বাড়ি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হলেও এর উপর বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে তার যাকাত আদায় করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৯৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা জমা আছে। তার কিছু সুদও...

প্রশ্ন

আমার ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা জমা আছে। তার কিছু সুদও আছে। প্রতি বছর যাকাত আদায় করার সময় পেরেশান হয়ে যাই এই ভেবে যে, মূল টাকার সাথে সুদী টাকার যাকাত দিব কি না? কিন্তু কোনো মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা না করে প্রতি বছরই মূল টাকার যাকাতের সাথে সুদী টাকারও যাকাত দিতাম। এক বন্ধু আমকে বলল, সুদের উপর তো যাকাত ফরয হয় না। এখন আমি মুফতী সাহেবের কাছে সঠিক বিষয়টি জানতে চাই।

উত্তর

আপনার ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত মূল টাকার আড়াই পার্সেন্ট যাকাত দিবেন। আর সুদী টাকা পুরোটাই ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া হারামের বোঝা থেকে নিষ্কৃতির জন্য সদকা করে দিবেন।

উল্লেখ্য, যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত, যা একমাত্র হালাল সম্পদের উপর আসে এবং তা হালাল সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র হালাল বস্ত্তই কবুল করেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৪১০

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হারাম সম্পদ থেকে সদকা কবুল করা হয় না।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২২৪; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ১১২; ফাতহুল বারী ৩/৩২৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

একব্যক্তি দরিদ্র লোককে যাকাতের নিয়ত ছাড়া এমনি সদকা করেছে। পরক্ষণেই...

প্রশ্ন

একব্যক্তি দরিদ্র লোককে যাকাতের নিয়ত ছাড়া এমনি সদকা করেছে। পরক্ষণেই লোকটির হাতে টাকা থাকতেই সে তা যাকাত হিসাবে দেওয়ার নিয়ত করল। এর দ্বারা তার যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

লোকটি ঐ টাকা খরচ করার আগেই দাতা যদি প্রদত্ত টাকা যাকাত হিসেবে নিয়ত করে তবে তা যাকাত হিসাবে গণ্য হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৯০; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমার পিতা বার্ধক্যের দরুণ রোযা রাখার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। জানতে...

প্রশ্ন

আমার পিতা বার্ধক্যের দরুণ রোযা রাখার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। জানতে চাই, তার ফিদয়া আদায় করতে হবে কি না? আমার পিতার উপর যাকাত ফরয নয়। তিনি খুব একটা স্বচ্ছল নন। এ অবস্থায় কি তাকে ফিদয়া আদায় করতে হবে? এক রোযার ফিদয়া একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েয হবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, তাকে রমযানের প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে ফিদয়া আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ্য নেই তারা একজন মিসকীনের খানা সমপরিমাণ ফিদয়া দিবে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৪)

এমন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয না হলেও ফিদয়া দিতে হবে। কারণ ফিদয়া দেওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি নয়। আর এক রোযার ফিদয়া একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া যায়। তবে একজনকে দেওয়া উত্তম।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪২৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: জাকাত

আমি ইটের ব্যবসা করি। ইটের ভাটা আছে। জানতে চাই, ভাটার...

প্রশ্ন

আমি ইটের ব্যবসা করি। ইটের ভাটা আছে। জানতে চাই, ভাটার যাকাত আদায় করব কীভাবে? কিছু ইট কাঁচা কিছু ইট ভাটায় পুড়ছে আর কিছু পরিপূর্ণ ইট। আবার মাটিও কিনে রাখি। লাকড়ি ও কয়লার স্টক থাকে। এগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে কি না? দিলে কী উপায়ে।

উত্তর

কাঁচা, পাকা ইট এবং যে ইট পুড়ছে এগুলোর যাকাত দিতে হবে। তদ্রূপ ইট তৈরির জন্য যে মাটির মজুদ রাখা হয়েছে তারও যাকাত দিতে হবে। এসব কিছু পাইকারী বিক্রি করে দিলে যে দাম পাওয়া যায় সে হিসেবে যাকাত দিবে।

আর ভাটার জ্বালানী হিসাবে যে কয়লা বা লাকড়ির স্টক থাকবে তার যাকাত দিতে হবে না।

-হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২, ১৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৪৩৯; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৪৫
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: জাকাত

যাকাত গ্রহিতাকে যাকাতের কথা না জানিয়ে যাকাতের টাকা দিলে যাকাত আদায় হবে কি?

প্রশ্ন
আমার এক দরিদ্র পরিচিত লোক অসুস্থ ৷ তাকে আমি দেখতে যাই। সাথে তার জন্য আমার যাকাতের টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যাই। এবং যাকাতের কথা উল্লেখ না করে টাকাটা তাকে প্রদান করি। সে মনে করেছে এমনি তাকে দিয়েছি ৷ জানার বিষয় হল, টাকাটা যে যাকাতের, একথা না বলে দেয়ার কারণে আমার ১০ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে কি?
উত্তর
যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা দেয়ার সময় যাকাতের কথা না জানিয়ে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়, যদি যাকাত দাতা দেয়ার সময় যাকাতের নিয়তে দিয়ে থাকে ৷ সুতরাং প্রশ্নে বর্নিত অসুস্থ লোকটি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলে আপনার ১০ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯৪৪
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: জাকাত

শাড়ী, লুঙ্গি বা অন্য কোনো পন্য দ্বারা যাকাত প্রদান করা ৷

প্রশ্ন
হযরত একটি প্রশ্ন! বর্তমানে রমযান আসলে দেখা যায়, যাকাতের শাড়ী লুঙ্গি ইত্যাদি বিতরন করা হয় ৷ আমরা জানি যাকাত মু্ল্য হিসাব করে নগদ টাকা দ্বারা আদায় করতে হয় ৷ তাই জানতে চাই, নগদ টাকা ছাড়া শাড়ী, লুঙ্গী বা অন্য কোনো পন্য দ্বারা যাকাত আদায় করলে কি যাকাত আদায় হবে? দলিল সহ জানালে উপকৃত হবো৷
উত্তর
যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে নগদ টাকা প্রদান করলে যেভাবে যাকাত আদায় হয় তেমনিভাবে যাকাতের নিয়তে অন্য কোনো পণ্য কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। অতএব শাড়ী, লুঙ্গী বা অন্য কোনো পন্য দ্বারা যাকাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে ৷ তবে কোনো পণ্য দ্বারা যাকাত আদায় করার চেয়ে নগদ টাকা দ্বারা আদায় করাই উত্তম। কারণ এতে দরিদ্র ব্যক্তি যেকোনো প্রয়োজন পুরন করতে সক্ষম হয়৷
-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯৪১
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: জাকাত

অগ্রীম যাকাত প্রদানের বিধান ৷

প্রশ্ন
হযরত! আমার যাকাতের বছর পুর্ন হবে আরো দেড় মাস পর ৷ আমি যদি এ রমযানে রমযানে সম্পদ হিসাব করে যাকাতের বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যাকাত দিয়ে দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে ? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য অগ্রীম যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বছর পুর্ন হওয়ার আগে আপনার সম্পদ হিসাব করে এ রমযানে অগ্রিম যাকাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে ৷
-জামে তিরমিযী, হাদীস: ৬৭৮;খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১;ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪;রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯৩১
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: জাকাত

সদাকাতুল ফিতর কখন, কার উপর ওয়াজিব হয়?

প্রশ্ন
হুজুর সদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে কিছু জানার ছিল৷
১৷ কার উপর কি পরিমান মাল থাকলে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব?
২৷ সদাকাতুল ফিতর আদায়ের সময় কখন? রমযানে আদায় করলে হবে কি না?
৩৷ কি ধরনের মাল থাকলে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়? যাকাতের মত নির্দিষ্ট মাল নাকি যেকোনো মাল নেসাব পরিমান থাকলেই সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক?
বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো৷
উত্তর
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পর প্রয়োজন অতিরিক্ত যেকোনো ধরনের মালের মালিক হলে, এবং তা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমুল্যের হলে ব্যক্তির উপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব ৷ সদাকাকুল ফিতর আবশ্যক হওয়ার জন্য যাকাতের মত নির্দিষ্ট মাল থাকা জরুরী নয় ৷ কারো যদি প্রয়োজন অতিরিক্ত ঘর, বাড়ি, জমি, ফ্রীজ, খাট এমন কি পরিধানের জামাও থাকে আর তার মু্ল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমুল্যের হয় ৷ তাহলে তার উপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে ৷ যদিও সদাকাতুল ফিতর ঈদুল ফিতরের দিন ওয়াজিব হয় তথাপিও রমযানে আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে ৷
-হেদায়া, ১/১৮৫; রদ্দুল মুহতার,৩/৯৯; নুরুল ইযাহ,৯১; ফতওয়ায়ে দারুল উলুম,৬/৩৩৬৷
উত্তর প্রদানে মুফতীঃ মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯৩০
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: জাকাত

কার উপর কি পরিমান সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়?

প্রশ্ন
হযরত! একটি প্রশ্ন, কার উপর যাকাত ফরজ? কি পরিমান ও কেমন মাল থাকলে যাকাত দিতে হয়? এবং কি পরিমান যাকাত দিতে হয়৷ স্ববিস্তারে জানতে চাই ৷
উত্তর
প্রাপ্র বয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মালিক হলে বা নিত্য প্রয়োজনীয় খরচের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মুল্যের সমপরিমান ক্যাশ টাকা বা ব্যবসায়িক পন্যের মালিক হলে, এক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে ৷
যাকাত যুগ্য সমস্ত সম্পদের চল্লিশ ভাগে এক ভাগ যাকাত আদায় করা আবশ্যক ৷
উল্লেখ্য যে, কারো নিকট শুধু স্বর্ন থাকলে তা সাড়ে সাত ভরির কম হলে অথবা শুধু রুপা থাকলে এবং তা সাড়ে বায়ান্ন ভরির কম হলে যাকাত দিতে হবে না ৷ আর যদি স্বর্নের সাথে রুপা বা টাকা অথবা ব্যবসায়িক পন্য থাকে তাহলে সবকিছুর সমষ্টির মুল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমুল্যের হলেই যাকাত আবশ্যক হয়ে যাবে৷
-আল হেদায়া ১/১৯৬; আল মাবসূত লিস সারাখসী,২/১৯১; তাতারখানিয়া, ২/২৩৭; রদ্দুল মুহতার, ৩/২২৯; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৭৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৩৪
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ব্যাংকে জমানো টাকার সাথে সুদী টাকার যাকাত ৷

প্রশ্ন
আমার ব্যাংক একাউন্টে জমানো টাকার সাথে সুদী টাকাও আছে ৷ যাকাত দেয়ার সময় সম্পুর্ন টাকার ই যাকাত দিয়ে থাকি ৷ এক বন্ধু বলল সুদী টাকার যাকাত নেই ৷ তাই মুফতী সাহেবের নিকট এ বিষয়ে সঠিক সমাধান চাই ৷ এবং এ ক্ষেত্রে আমার করনীয় কি জানতে চাই ৷
উত্তর
যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত, যা একমাত্র হালাল সম্পদের উপর আসে এবং তা হালাল সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হয়। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র হালাল বস্তু ই কবুল করেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৪১০
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমানো মূল টাকার ২.৫% টাকার যাকাত দিবেন।
আর সুদী টাকা হারাম হওয়ার কারনে পুরোটাই ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেয়া আবশ্যক ।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২২৪; ফাতহুল বারী ৩/৩২৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৪৪৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৩২
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: জাকাত

ঘর নির্মানের জন্য জমানো টাকায় যাকাত ৷

প্রশ্ন
আমার বড় ভাই দুবাই থাকে। ঘর নির্মাণের ৭/৮ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। আমার বাবার একাউন্টে জমা আছে ৷কিন্তু এদিকে বাড়ি বন্টন করতে দেড়ি হওয়ায় ঘরের কাজ ধরতেও দেড়ি হচ্ছে । এখন জানার বিষয় এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?
উত্তর
প্রশ্নে বর্ণিত সুরতে ব্যাংকে জমানো টাকাগুলো ঘর নির্মাণের জন্য হলেও এর উপর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার যাকাত আদায় করতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৩১
তারিখ: ৪-এপ্রিল-২০১৭
বিষয়: জাকাত

নাবালেগ মেয়ের স্বর্নের যাকাত পিতার উপর ফরজ কি না?

প্রশ্ন
আমার তিন মেয়ে। সবাই এখনো ছোট ৷ একজনের বয়স ৭ ৷ আরেকজনের ৫ আরেকজনের ৩ ৷ তারা প্রত্যেককে আমি পাঁচ ভরি পরিমান স্বর্নের অলঙ্কার বানিয়ে দিয়েছি ৷ তবে তারা ছোট বিধায় সেগুলো আমার কাছেই থাকে ৷ জানার বিষয় হলো, তারা নাবালেগ হওয়ার কারনে এগুলো কি আমার মালিকানায় রয়ে গেছে? আমার কি এগুলোর
যাকাত আদায় করতে হবে?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সুরতে অলঙ্কারগুলোর মালিক আপনার মেয়েরাই। কারন পিতা তার নাবালেগ সন্তানকে শুধু মৌখিকভাবে কোনো কিছু দিলেই সন্তান তার মালিক হয়ে যায়। এর জন্য নাবালেগদের হস্তগত করা জরুরী
নয়। অতএব আপনাকে এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে না। এবং মেয়েরাও যেহেতু এখনো নাবালেগ, তাই তাদের উপরও সেগুলোর যাকাত আদায় করা ফরয নয়। তবে তারা বালেগ হওয়ার পর প্রত্যেকজনের অলঙ্কারগুলো যদি অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে মেয়েরা প্রত্যেকেই পৃথকভাবে এর যাকাত আদায় করবে।
-মুয়াত্তায়ে মালেক, হাদীস: ৩২২; ফাতওয়ায়ে খানিয়া ৩/২৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৪৪
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

স্ত্রীর মোহরের টাকায় যাকাত৷

প্রশ্ন
বিবাহে আমার মোহর ধার্য করা হয়েছিল দুই
লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বিবাহ হয়েছে প্রায় ২
বছর আগে। মোহর বাবদ কোনো টাকা আমাকে আমার স্বামী দেয়নি। প্রশ্ন হল, মোহরের টাকা হাতে না আসলেও বছর অতিবাহিত হওয়ার কারণে ধার্যকৃত মোহরের উপর যাকাত ফরয হবে কি না? জানালে উপকৃত
হব।
উত্তর
না, মোহর হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে
এর যাকাত দিতে হবে না; বরং হস্তগত হওয়ার পরই
তা যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে।
-কিতাবুল আসল ২/৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৪৩
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

এতিম ছাত্রকে খানা দিয়ে যাকাত প্রদান করা৷

প্রশ্ন
মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার টিফিন
ক্যারিয়ারের বক্সে খানা দিয়ে আসছি। প্রশ্ন
হল, এ পদ্ধতিতে আমার যাকাত প্রদান করা সহীহ কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর
হ্যাঁ, এ পদ্ধতিতে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খাবারের মূল্য যথাযথভাবে হিসাব করতে হবে, বেশি ধরা যাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ২৮৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৪২
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

ধার দেয়া টাকার যাকাত৷

প্রশ্ন
এক বছর পূর্বে জনৈক ব্যক্তি আমার থেকে নেসাব পরিমাণ টাকা ধার নেয়। এক বছর পর এক পঞ্চমাংশ টাকা পরিশোধ করেছে। এ টাকা ব্যতীত আমার কাছে অন্য কোনো টাকা জমা নেই। জানার বিষয় হল, এখন কি উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয?
উত্তর
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার ঐ টাকার মেয়াদ এক বছর অতিক্রম হওয়ায় এর উপর যাকাত ফরয হয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে এখনই পুরো ঋণের টাকার যাকাত আদায় করে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে যতটুকু হস্তগত হয়েছে এখন শুধু সে অংশের যাকাত প্রদান করতে পারেন। এরপর অবশিষ্ট টাকা যখন হস্তগত হবে তখন সেগুলোর বিগত দিনের যাকাতও আদায় করতে হবে। -মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০, ৩০৫৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৩৪
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

সৎ দাদীকে যাকাত ফেতরা দেওয়া৷

প্রশ্ন
সৎ দাদী (তথা আপনা দাদী নয়) কে যাকাত ও ফেতরা দেওয়া জায়েয হবে
কি না?
উত্তর
হ্যাঁ, সৎ দাদীকে যাকাত-ফেৎরা দেওয়া
যাবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭০৫
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

হিজড়াদের জন্য ইসলামের বিধি-বিধান৷

প্রশ্ন
হুজুর,হিজড়ারাও এক ধরণের মানুষ। কিন্তু ওদেরও কি আমাদের মত বিচার হবে? ওদের উপরও কি ইসলামী বিধি-বিধান আছে? আমাদের নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওদের ব্যপারে কী বলেছেন? আমাদের আচরণ ওদের সাথে কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর
আমাদের সমাজব্যবস্থা জোর করে হিজড়াদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। সামাজিক সম্মান,শিক্ষা,কর্ম,বাসস্থান ইত্যাদির নূন্যতম অধিকার এ সমাজ থেকে ওদের দেয়া হয় না। সত্যিকারার্থে ওরা
প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিবন্ধীদের দেয়া সুযোগ-সুবিধাটুকুও ওদের দেয়া হয় না। আমাদের এ অবক্ষয়ের জন্য দায়ী আমাদের কুসংস্কার ও ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব। অথচ ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী হিজড়াগণ সাধারণ মানুষের মতই তাদের পূর্ণ অধিকার লাভ করবে। লেখা-পড়া, শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরী- বাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, উত্তরাধিকার, সম্পদের মালিকানা; ধর্ম কর্ম, সামাজিক ও উন্নয়ন কাজের সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য অধিকার ইসলাম স্বীকার করেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে তারা আলাদা কোনো লিঙ্গ নয়; বরং ইসলাম আধুনিক- বিজ্ঞানের মতই তাদেরকেও
নারী ও পুরুষের অন্তর্ভুক্ত করেছে। যার কারণে ইসলাম তাদের ব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ করার প্রয়োজন মনে করে নি। এ ব্যাপারে ইসলাম একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেটা হল, দেখতে হবে হিজড়ার প্রস্রাব করার অঙ্গটি কেমন? সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? না নারীদের মত গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? গোপনাঙ্গ যাদের মত হবে হুকুম তাদের মতই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালী হয়, তাহলে পুরুষ। যদি নারীর মত হয়, তাহলে নারী। আর যদি কোনোটিই বোঝা না যায়, তাহলে তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। সেই হিসেবেই তাদের উপর শরয়ী বিধান আরোপিত হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে– হযরত আলী রা. রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রসূত বাচ্চা যে পুরুষ নারী তা জানা যায় না তার বিধান কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন যে, সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১২৯৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩০৪০৩৷
এ হাদীসে স্পষ্ট যে,পৌরুষপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ পুরুষদের বিধান প্রযোজ্য হবে। নারীত্বপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ নারীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। আর দুইয়ের মাঝামাঝি হিজড়াদের জন্য সুস্থ নারীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। সুতরাং ঈমান, ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত এমনকি বিয়ে- শাদীসহ সকল ইসলামী বিধিবিধান তাদের উপর নারী ও পুরুষ হিসেবেই বর্তাবে।
অনুরূপভাবে হালাল হারাম, ন্যায় অন্যায় ও জান্নাত জাহান্নামও তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
হাওয়াশী আল আশবাহ ওয়ান৷নাযায়ির-ইবনু নুজাঈম, ছায়্যিদ আহমাদ হামুভী; ফাতাওয়া আবদুল হাই লাক্ষৌনভী, পৃ ৪০১; ফাতাওয়ায়ে অযীযী,৷শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী, পৃ ৫৩৯৷
অতএব, তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
বদলাতে হবে। তারাও মানুষ। আমাদের মতই মানুষ। তবে যেমন অনেক মানুষের শারিরিক ত্রুটি থাকে। এটিও তাদের তেমনি একটি ত্রুটি। এ ত্রুটির কারণে তারা মনুষ্যত্ব থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতই তারা আরো বেশি স্নেহ, মমতা ও ভালবাসা পাবার অধিকার রাখে। তাদের ঘৃণা নয়, ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে সম্মানের সাথে বাঁচতে দেয়া
উচিত। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক গোনাহের কাজ।যেকোনো মুসলমানকে গালি দেয়া, তাচ্ছিল্য করা যেমন কবিরা গোনাহ, তেমনি তাদের গালি দেয়া, তাচ্ছিল্য করাও কবিরা গোনাহ।
উল্লেখ্য, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, হিজড়া হলো মনোদৈহিক বৈকল্য বা শরীরবৃত্তিয় ও মনোজাগতিক বিকাশের অপূর্ণতা। এটি হরমোনঘটিত একটি সমস্যা। শরীরের যে হরমোনের কারণে একজন মানুষ পুরুষ বা নারী বৈশিষ্টের অধিকারী হয়,৷সে হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকাই এর প্রধান কারণ। সুতরাং অত্যাধুনিক হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে এবং ক্ষেত্রবিশেষ শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে এর পুরোপুরি স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞ উলামায়ে
কিরামের সুচিন্তিত মতামত, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সরকারের সিদ্ধান্ত, প্রশাসনের সদিচ্ছা ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬২৭
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

বাবার কাছে থাকা নাবালেগ ছোট মেয়ের স্বর্ন-রুপার উপর যাকাত৷

প্রশ্ন
আমার ছোট দুটি মেয়ে আছে। একজনের বয়স চার বছর। আরেকজনের বয়স ছয় বছর। মোট আট ভরি স্বর্ণ দিয়ে দুই মেয়ের জন্য আমি দুটি গলার হার এবং দুই জোড়া কানের দুল তৈরি করেছি। তারা যেহেতু এখনো ছোট তাই তাদেরকে হস্তান্তর করিনি। বর্তমানে সেগুলো আমার কাছেই আছে। তবে আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে বলে রেখেছি যে, অলঙ্কারগুলোর মালিক দুই মেয়ে। অন্য কেউ নয়। জানতে চাই, হস্তান্তর না করার কারণে এগুলো কি আমার মালিকানায় রয়ে গেছে? আমার কি এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অলঙ্কারগুলোর মালিক আপনার দুই মেয়েই। কেননা পিতা তার নাবালেগ সন্তানকে শুধু মৌখিকভাবে কোনো কিছু দিলেই সন্তান ঐ বস্তুর মালিক হয়ে যায়। এর জন্য নাবালেগদের হস্তগত করা আবশ্যক নয়। অতএব আপনাকে এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে না। আর এখন ঐ মেয়েরাও যেহেতু নাবালেগ তাই তাদের উপরও এখন সেগুলোর যাকাত আদায় করা ফরয নয়। তবে তারা যখন বালেগ হবে তখন অলঙ্কারগুলো যদি অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে নিয়মানুযায়ী মেয়েরা এর যাকাত আদায়
করবে।
-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ৩২২, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৪,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬২১
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

বাড়ি নির্মানের জন্য জমানো টাকায় যাকাত৷

প্রশ্ন
আমার ছোট ভাই বিদেশ থাকে। সে বাড়ি নির্মাণের জন্য ত্রিশ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু যে জমিতে বাড়ি নির্মাণের কথা ছিল তা নিয়ে তখন মামলা চলছিল। তাই নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া যায়নি। এদিকে মামলা নিষ্পত্তি হতে এক বছর লেগে গেল। এখন এই টাকার যাকাত দিতে হবে কি? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর
প্রশ্নে বর্ণিত টাকাগুলো বাড়ি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হলেও এর উপর বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে তার যাকাত আদায় করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬১৯
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

ব্যাংকে জমানো টাকা ও তার সুদের উপর যাকাত৷

প্রশ্ন
আমার ব্যাংক একাউন্টে কিছু টাকা জমা আছে। তার কিছু সুদও আছে। প্রতি বছর যাকাত আদায় করার সময় পেরেশান হয়ে যাই এই ভেবে যে, মূল টাকার সাথে সুদী টাকার যাকাত দিব কি না? কিন্তু কোনো মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা না করে প্রতি বছরই মূল টাকার যাকাতের সাথে সুদী টাকারও যাকাত দিতাম। এক বন্ধু আমকে বলল, সুদের উপর তো যাকাত ফরয হয় না। এখন আমি মুফতী সাহেবের কাছে সঠিক বিষয়টি জানতে চাই।
উত্তর
আপনার ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত মূল টাকার আড়াই পার্সেন্ট যাকাত দিবেন। আর সুদী টাকা পুরোটাই ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া হারামের বোঝা থেকে নিষ্কৃতির জন্য সদকা করে দিবেন। উল্লেখ্য, যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত, যা একমাত্র হালাল সম্পদের উপর আসে এবং তা হালাল সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র হালাল বস্ত্তই কবুল করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৪১০ অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হারাম সম্পদ থেকে সদকা কবুল করা হয় না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২২৪; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ১১২; ফাতহুল বারী ৩/৩২৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৪৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫২৯
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

তাবলীগের ছয় উসুল পুর্নদ্বীন কিনা!

প্রশ্ন
তাবলীগ জামাত বিরোধী অনেক ভাই প্রায়ই একটি অভিযোগ করে থাকেন যে, তাবলীগ জামাআতের ছয় উসুলে পূর্ণ ইসলাম নেই। তাই এ মেহনত করা জায়েজ নয়।
উত্তর
এ অভিযোগটি একটি অজ্ঞতার পরিচয়বাহী ও হিংসাত্মক অভিযোগ। যার কোন ভিত্তি নেই। তাবলীগের ছয় উসুলের মাঝে পূর্ণ ইসলাম আছে একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন নাকি? তারাতো সর্বদা একথার দাওয়াত দেন যে, ছয় উসূলের উপর চললে পূর্ণ দ্বীনের উপর চলা সহজ হয়। একথা কোন তাবলীগী ভাই বলেন না যে ছয় উসূলই পূর্ণ দ্বীন। সাথে সাথে তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত শুধু একথার উপর দেয়া হয় না যে, শুধুমাত্র ছয় উসূল মানতে হবে, বরং দাওয়াত দেয়া হয় পূর্ণ শরীয়তের পাবন্দ হতে হবে। তাই নয় কি? সুতরাং এ দাবি করা যে, যেহেতু ছয় উসূলে পূর্ণ দ্বীন নেই, তাই তাবলীগী ভাইয়েরা অপূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দিকে আহবান করে। কারণ ছয় উসুলের দাওয়াতের মাধ্যমে পূর্ণ দ্বীনের দিকেই আহবান
করা হয়।
যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ছয়টি বিষয়ের অনুসরণ করলে বান্দা সফলকাম হয়ে যাবে মর্মে সূরায়ে মু’মিনূন এ ঘোষণা করেন-
‎ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ‏( 1 ‏) ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺻَﻼﺗِﻬِﻢْ
‎ﺧَﺎﺷِﻌُﻮﻥَ ‏( 2 ‏) ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ ‏( 3 ‏)
‎ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﻠﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻓَﺎﻋِﻠُﻮﻥَ ‏( 4 ‏) ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﻔُﺮُﻭﺟِﻬِﻢْ
‎ﺣَﺎﻓِﻈُﻮﻥَ ‏( 5 ‏) ﺍﻟﻰ ﺍﺧﺮ - ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻷَﻣَﺎﻧَﺎﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻋَﻬْﺪِﻫِﻢْ
‎ﺭَﺍﻋُﻮﻥَ ‏( 8 ‏) ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻠَﻮَﺍﺗِﻬِﻢْ ﻳُﺤَﺎﻓِﻈُﻮﻥَ ‏( 9 ‏)
‎ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻮَﺍﺭِﺛُﻮﻥَ ‏( 10 ‏) ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮِﺛُﻮﻥَ ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱَ ﻫُﻢْ
‎ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ‏( 11 ) ১-নিশ্চয় সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ। ২-যারা তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। ৩-যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। ৪- যারা যাকাত সম্পাদনকারী। ৫-যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। ৮- এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। ৯-এবং যারা নিজেদের নামাযের পরিপূর্ণ রক্ষাবেক্ষণ করে। ১০ এরাই হল সেই ওয়ারিশ। ১১-যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তারাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে সর্বদা থাকবে। {সূরা মুমিনুন-১-১১} এ আয়াতে সমূহে লক্ষ করুন-ছয়টি কাজ করলে আল্লাহ তায়ালা সফলকাম হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সেই সাথে জান্নাতী হওয়ার ঘোষণেও দিয়েছেন। অথচ এ ছয় কাজে রোযার কথা নেই। নেই হজ্বের কথাও। তাহলে কি আল্লাহর বলা সফলকাম হওয়ার জন্য রোযা রাখার প্রয়োজন নেই? নেই হজ্ব ফরজ হলে হজ্ব আদায়েরও। এ দু’টি গুরত্বপূর্ণ ফরজ ছাড়াই কি ব্যক্তি জান্নাতী হয়ে যেতে পারে?
কিভাবে?
এর জবাব যেমন-এ ছয়টির মাঝেই পূর্ণ দ্বীন শামিল। তেমনি তাবলীগের ছয় উসূলের দাওয়াতের দ্বারাও পূর্ণ দ্বীনের উপর আমলের দিকেই আহবান করা হয়। যা কিছুতেই দ্বীনকে সীমাবদ্ধ করা নয়, যেমন আল্লাহ তায়ালা সীমাবদ্ধ করেন নি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৩৮
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

(ক) যে ব্যক্তির উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত হয় আর সে কাউকে...

প্রশ্ন
(ক)
যে ব্যক্তির উপার্জন হালাল-হারাম
মিশ্রিত হয় আর সে কাউকে কোনো
কিছু হাদিয়া দেওয়ার সময় আমি এ
হাদিয়াটি আমার হালাল উপার্জন
হতে দিচ্ছি , এ কথা উল্লেখ না করে
তাহলে কি এ হাদিয়াটি তার হালাল
উপার্জন থেকে দিয়েছে এরূপ ধরে তা
গ্রহণ করা এবং ব্যবহার করা যাবে?
(খ)
উপরোক্ত শ্রেণীর ব্যক্তিদের হাদিয়া কেউ কবুল করার পর হাদিয়া গ্রহিতা তা কিছুদিন ব্যবহার করে অথবা ব্যবহার না করেই অন্যকে আবার যদি তা হাদিয়া দিয়ে দেয় তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য এই হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর
(ক) হারাম মাল থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। আর যার উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত সে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে তা হালাল মাল থেকে দিয়েছে বলে জানা গেলে তা নেওয়া বৈধ হবে। হারাম মাল থেকে দিয়েছে জানা গেলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর যদি হাদিয়া কোন মাল থেকে দিয়েছে তা জানা না যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হলে উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে। আর যদি তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল না হয়ে থাকে তাহলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে
না।
মাবসূত, সারাখসী ১০/১৯৭ ; খুলাসাতুল ফাতাওয়া
৪/৩৪৮ ; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০৷ (খ) উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে যাদের থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা হারাম তাদের থেকে কেউ হাদিয়া গ্রহণে করে ফেললে তা নিজে ব্যবহার করতে পারবে না ; বরং যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে। তা কোনো সামর্থ্যবানকে দেওয়া যাবে না। সামর্থ্যবান কাউকে দিলে সে যদি জানে যে , এটা হারাম তাহলে তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয
হবে না।
সূরা তাওবা : ৬০ ; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪১৮
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: জাকাত

একজন সাধারণ সরকারী চাকুরিজীবীর নিজের প্রয়োজন অতিরিক্ত তেমন কোনো অর্থ...

প্রশ্ন
একজন সাধারণ সরকারী চাকুরিজীবীর নিজের প্রয়োজন অতিরিক্ত তেমন
কোনো অর্থ নেই। কিন্তু সরকারী
চাকুরিজীবী হিসেবে তো প্রভিডেন্ট
ফান্ডে তার একটা বড় অংক জমা হয়, যা
সে রিটায়ার্ডের পরে পাবে। লোকটির
বেতনের টাকা দিয়ে চলা খুব মুশকিল।
কিছু ঋণ আছে। এখন সে ঋণ আদায় ও
খরচের জন্য যাকাত নিতে পারবে কি?
এ ব্যক্তিকে যাকাত দিতে কোনো
অসুবিধা আছে কি? প্রভিডেন্ট
ফান্ডের অর্থ এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব
ফেলবে কি? প্রকাশ থাকে যে, সরকার
বাধ্যতামূলকভাবে যতটুকু কেটে রাখে
ততটুকুই সে জমা করে এর বেশি জমা
করে না।
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। সরকারী বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যেহেতু চাকুরি অবস্থায় চাকুরিজীবীর হস্তগতই হয় না এবং এতে তার মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয় না তাই এই ফান্ড থাকা সত্ত্বেও লোকটি দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত হলে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। এই ফান্ডের টাকা তার যাকাত গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক হবে না। -আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল মুফতীন পৃষ্ঠা : ৩৯৪; ইমদাদুল আহকাম ২/১৬৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১২৮
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, আমি যদি এ...

প্রশ্ন
মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, আমি যদি এ বছরের যাকাতের সাথে সাথে আগামী দুই তিন বছরের যাকাত একসাথে অগ্রিম আদায় করে দেই, তাহলে কি আমার অগ্রীম যাকাত আদায় হবে?
উত্তর

ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ যাকাত মূলত আদায় করতে হয়,
বছরান্তে হাতে থাকা সম্পদের উপর ভিত্তি করে। যত সম্পদ থাকবে, তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হয়। তবে যাকাত আবশ্যক হবার পর, অগ্রীম দুই এক বছরের যাকাতের টাকা যাকাতের নিয়তের সাথে আদায়
করলেও তা আদায় হবে। তবে আগামী বছর আসলে হিসেবে করে দেখতে হবে, কত টাকা যাকাত এসেছিল? আর কত অগ্রীম আদায় করা হয়েছে? যদি দেখা যায়, যাকাত বাবদ আরো টাকা দিতে হবে, তাহলে আরো যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি দেখা যায়, অতিরিক্ত আদায়
করেছে, তাহলে তা পরবর্তী বছরের যাকাতের সাথে এ্যাড করেনিতে পারবে।
‎( ﻭَﻟَﻮْ ﻋَﺠَّﻞَ ﺫُﻭ ﻧِﺼَﺎﺏٍ ) ﺯَﻛَﺎﺗَﻪُ (ﻟِﺴِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻭْ
‎ﻟِﻨُﺼُﺐٍ ﺻَﺢَّ ) ﻟِﻮُﺟُﻮﺩِ ﺍﻟﺴَّﺒَﺐِ، (ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ
‎ﻣﻊ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ، ﻣﻄﻠﺐ ‎ﺍﺳﺘﺤﻼﻝ ﺍﻟﻤﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻘﻄﻌﻴﺔ ﻛﻔﺮ ﺑﺎﺏ ﺯﻛﺎﺓ ‎ﺍﻟﻐﻨﻢ- 2/293 ) ‎ﻭﻟﻮ ﻣﺮ ﺑﺄﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﺼﺪﻗﺎﺕ، ﻓﺄﺧﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ ‎ﻛﺜﻴﺮﺍً ﻣﻤﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻇﻨﺎً ﻣﻨﻬﻢ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻴﻪ ﻟﻤﺎ ‎ﺃﻥ ﻣﺎﻟﻪ ﺃﻛﺜﺮ ﻳﺤﺘﺴﺐ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻟﻠﺴﻨﺔ ‎ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ؛ ( ﺍﻟﻤﺤﻴﻂ ﺍﻟﺒﺮﻫﺎﻧﻰ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ، ‎ﺍﻟﻔﺼﻞ ﺍﻟﺘﺎﺳﻊ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﺍﻟﻤﺘﻌﻠﻘﺔ ‎ﺑﻤﻌﻄﻰ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ- 3/226 ، ﻃﺤﻄﺎﻭﻯ ﻋﻠﻰ ‎ﻣﺮﺍﻗﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ 588- ‎ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১২৬
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে...

প্রশ্ন
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে দেখা যায়-
ক) যে কোনো একটি সূরার শুরুতে বড় আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া
সুন্নত।
খ) সূরা ইখলাস তিনবার পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া মুস্তাহাব। অনুগ্রহপূর্বক এই দুই মাসআলার
বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ফয়সালা জানানোর অনুরোধ রইল।
উত্তর
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, যা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার
জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মুসল্লিদেরকে পরিপূর্ণ খতম শোনাতে চাইলে যে
কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ কারণে মুসল্লিদের খতম
অপূর্ণ থেকে যাবে। আর ইমামের জন্য সব নামাযেই সূরা ফাতিহা এবং সকল সূরার শুরুতে অনুচ্চস্বরে
বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব।
-আসসিআয়াহ ২/১৭০; ইহকামুল কানত্বরা ফী আহকামিল বাসমালাহ ১/৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৮;
মাজমুআতুল ফাতাওয়া, লাখনভী রাহ. ১/৩১৫
খ) কুরআন মজীদ খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। সাহাবা-
তাবেয়ীন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ফিকহবিদগণ এই আমলকে অপছন্দ
করেছেন। সুতরাং তারাবীতে কুরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এ
থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার ন্যায় যথানিয়মে একবারই পড়বে।
-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৫০৯; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫১০

একটি আকুল আবেদন!
অনুগ্রহপুর্বক সকলেই পড়ুন ও শেয়ার করুন৷
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনদের প্রতি আকুল আবেদন, টাকা পয়সা স্বর্ন অলংকার ধন সম্পদ সবই আল্লাহর দান৷ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দান করেন, যার কাছ থেকে ইচ্ছা নিয়ে যান৷ তাই অবশ্যই সম্পদশালীদের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করা উচিৎ৷ অভাবীদের প্রতি দৃষ্টি রাখা, অভাব মুচন, আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করা উচিৎ৷
বিশেষ করে সম্পদ দাতা মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার সম্পদে যা ফরজ করেছেন, যাকাত, ফিতরা তা অবশ্যই সঠিক ভাবে আদায় করা উচিৎ৷ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হিসাব করে নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে সতর্কতামুলক বেশি দেয়া উচিৎ৷
এবং এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখা উচিৎ যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ৷ নামায যেমন ফরজ যাকাত তেমনি ফরজ৷
তাই যাকাত যেকোন মানুষকে দিয়ে দিলেই আদায় হবে না৷ বরং উপযুক্ত ব্যাক্তির কাছে পৌছাতে হবে৷
এবং যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে লোক দেখানো যেন না হয়, অন্যথায় অনেক টাকা যাকাত দিতে পারেন কিন্তু কোন সাওয়াব পাওয়া যাবে না৷
নবীজী সাঃ বলেছেন তোমরা তোমাদের সম্পদ এমনভাবে দান করো যেন ডান হাতে দান করলে বাম হাত টের না পায়৷
তাই সবদিকে সতর্ক অবলম্বন করা উচিৎ৷ আর সর্বদিকে সতর্কতা অবলম্বন করেই আপনার যাকাত ফিতরার টাকা যেন সঠিকভাবে সঠিক স্থানে সঠিক পাত্রে ব্যবহৃিত হয়, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, গুরাবা ফান্ড, লিল্লাহ বর্ডিং বিশিষ্ট মাদ্রাসায় প্রদান করুন৷ এর দ্বারা গরীব অসহায় ছাত্রদের অভাব মুচনের পাশাপাশি ইলমেরও খেদমত হয়ে যাবে৷
আমাদের মাদ্রাসায়ও গুরাবা ফান্ড রয়েছে৷ যেখানে শুধু যাকাত ফিতরার টাকা জমা করে উপযুক্ত খাতে সঠিক পাত্রে ব্যবহার করা হয়৷ আলহামদুলিল্লাহ৷
তাই কোন আগ্রহি ভাই ও বোন যদি আমাদের মাদ্রাসায় আপনার যাকাত ফিতরার টাকা দিতে আগ্রহী হোন নিম্নে বর্নিত একাউন্ট বা বিকাশ নাম্বারে প্রেরনের পর অবশ্যই যোগাযোগ নাম্বারে টাকার পরিমান ও বাবত জানাবেন৷
একাউন্ড নং ৩৬০৬৮ আল আরাফা ব্যাংক ৷ বিকাশ নম্বার 01717971791 যোগাযোগ নাম্বার 01756473393
আল্লাহ সকলকে সহীহ বুঝে আমল করে উভয় জগতে ধন্য হওয়ার তৌফিক দান করুন ৷ সকলেকে সঠিক প্রতিদান দান করুন৷ আমিন৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১২৪
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক...

প্রশ্ন
আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে রমযানে যাকাত আদায় করা হয়নি। তিন মাস যাওয়ার পর পনের মাসের একত্রে যাকাত আদায় করেছি। রমযান পর্যন্ত যাকাতযোগ্য সম্পদের ব্যালেন্স ছিল প্রায় আশি লক্ষ টাকা। তিন মাস পর কোটি টাকা হয়েছে। তাই কোটি টাকার যাকাত আদায় করেছি। আমার এ আদায় কি ঠিক হয়েছে? এখন এ বছরের তিন মাসের যাকাত দিলাম। তাহলে কি আগামী রমযানে বাকি নয় মাসের যাকাত দিলে চলবে?
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এক কোটির মধ্যে আশি লক্ষ টাকার যাকাত গত বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর বিশ লক্ষ টাকার যাকাত অগ্রিম আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। সুতরাং আগামি রমযানে যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসাব করে সেখান থেকে বিশ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পরই যাকাত ফরয হয়। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা অগ্রিম গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে বর্ষ শেষে যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১১৭
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে...

প্রশ্ন
আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
তাকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাই।
সাথে তার জন্য আমার যাকাতের
টাকা থেকে পাঁচ হাজার
টাকা নিয়ে যাই। তন্মধ্যে যাকাতের নিয়তে এক হাজার টাকার কিছু জিনিস
কিনে নিয়ে যাই। আর বাকি চার
হাজার টাকা তাকে প্রদান করি।
জানার বিষয় হল, আমার পুরো পাঁচ
হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায়
হয়েছে কি?
উত্তর
অসুস্থ লোকটি যাকাত গ্রহণের যোগ্য
হলে আপনার পুরো পাঁচ হাজারই যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে নগদ
টাকা প্রদান করলে যেভাবে যাকাত আদায় হয় তেমনিভাবে যাকাতের
নিয়তে কোনো পণ্য কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে কোনো পণ্য দ্বারা যাকাত আদায় করার চেয়ে নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১১৫
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময়...

প্রশ্ন
রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময় ২৫ রমযান বা তারপর দু একদিনের মধ্যেই যাকাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এ বছর একজন দরিদ্র লোককে রমযানের আগেই যাকাত দিয়ে দিয়েছি। প্রশ্ন হল, যাকাতের বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
হ্যাঁ, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার অগ্রিম যাকাত দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৬৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১১৩
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমি মোহর বাবদ ৪ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য...

প্রশ্ন
আমি মোহর বাবদ ৪ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় আড়াই
লক্ষ টাকা। এছাড়া যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ আমার নেই। আমার স্বামী তার বেতন থেকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য ১০০০/-টাকা দিয়ে থাকেন, যা আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় হয়ে যায়। মাস শেষে আর কোনো টাকা অবশিষ্ট থাকে না। প্রশ্ন হল, আমাকে কি ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে?
উত্তর
আপনার কাছে যেহেতু ঐ স্বর্ণালংকার ব্যতীত রূপা, টাকা-পয়সা বা ব্যবসার সম্পদ নেই এবং
আপনার মালিকানাধীন স্বর্ণও নেসাব পরিমাণ নয় তাই আপনাকে ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে না।
-মাবসূত সারাখসী ২/১৯০, ১৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আলমুহীতুল
বুরহানী ৩/১৫৬-১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০১
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে।...

প্রশ্ন
আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। ঐ টাকার
উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
হাঁ, এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এ থেকে আপনার মালিকানায় যা থাকবে এবং অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদসহ সবগুলোর উপর যাকাত ফরয। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫% হিসাবে যেমন,এক লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা। -আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া
১/২৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯; রদ্দুল মুহতার
২/৩০০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭০৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: জাকাত

নূরুল হক আমার প্রতিবেশী। সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিন্তু সে...

প্রশ্ন
নূরুল হক আমার প্রতিবেশী। সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিন্তু সে অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আমি তাকে যাকাতের টাকা দিলে সে লজ্জা পাবে। এখন যদি আমি তার বুঝমান ছেলেকে ঈদ-বখশিশ হিসেবে যাকাতের টাকা দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?
উত্তর
নূরুল হক যেহেতু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তাই তার নাবালেগ বুঝমান ছেলেকে যাকাতের নিয়তে ঈদ বখশিশ হিসেবে টাকা দিলেও তা দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৩১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭০৬
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: জাকাত

আমার এক গরীব প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমি দশ হাজার টাকা...

প্রশ্ন
আমার এক গরীব প্রতিবেশীর
কাছ থেকে আমি দশ হাজার টাকা পাই। কয়েক বছর হয়ে গেল, কিন্তু তিনি টাকাটা দিতে পারছেন না। আমি যদি যাকাত আদায়ের নিয়তে ঐ দশ
হাজার টাকা মাফ করে দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে?
উত্তর
না, এভাবে ঋণ মাফ করার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা, যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মাল নগদে মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্ত। সুতরাং ঐ ব্যক্তি যদি
বাস্তবেই যাকাত গ্রহণের যোগ্য
হয় তাহলে আপনি যাকাত বাবদ তাকে নগদ দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতে পারবেন। অতপর তার থেকে আপনার ঋণ উসুল করে নিতে পারবেন।
-কিতাবুল আছল ২/১২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০-২৭১

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০৩৬
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময়...

প্রশ্ন
রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ
হয়। আমি সবসময় ২৫ রমযান বা তারপর দু একদিনের
মধ্যেই যাকাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এ বছর একজন দরিদ্র লোককে রমযানের আগেই যাকাত
দিয়ে দিয়েছি। প্রশ্ন হল, যাকাতের বছর পূর্ণ
হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
হ্যাঁ, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য বছর
পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার অগ্রিম যাকাত দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ৬৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১;
ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০৩৪
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক...

প্রশ্ন
আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর
ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে রমযানে যাকাত আদায় করা
হয়নি। তিন মাস যাওয়ার পর পনের মাসের একত্রে
যাকাত আদায় করেছি। রমযান পর্যন্ত যাকাতযোগ্য
সম্পদের ব্যালেন্স ছিল প্রায় আশি লক্ষ টাকা। তিন
মাস পর কোটি টাকা হয়েছে। তাই কোটি টাকার যাকাত আদায় করেছি। আমার এ আদায় কি ঠিক হয়েছে? এখন এ বছরের তিন মাসের যাকাত
দিলাম।
তাহলে কি আগামী রমযানে বাকি নয় মাসের যাকাত
দিলে চলবে?
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এক কোটির মধ্যে
আশি লক্ষ টাকার যাকাত গত বছরের যাকাত হিসেবে
গণ্য হবে। আর বিশ লক্ষ টাকার যাকাত অগ্রিম আদায়
হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। সুতরাং আগামি রমযানে যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসাব করে
সেখান থেকে বিশ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে বাকিটার
যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পরই যাকাত ফরয
হয়। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা
অগ্রিম গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে বর্ষ শেষে যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০১৬
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে...

প্রশ্ন
আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাই। সাথে তার জন্য আমার যাকাতের টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাই। তন্মধ্যে যাকাতের নিয়তে এক হাজার টাকার কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যাই। আর বাকি চার হাজার টাকা তাকে প্রদান করি। জানার বিষয় হল, আমার পুরো পাঁচ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে কি?
উত্তর
অসুস্থ লোকটি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলে আপনার পুরো পাঁচ হাজারই যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে নগদ টাকা প্রদান করলে যেভাবে যাকাত আদায় হয় তেমনিভাবে যাকাতের নিয়তে কোনো পণ্য কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে কোনো পণ্য দ্বারা যাকাত আদায় করার চেয়ে নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়। -বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০১৩
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

গত মুহাররমের ৭ তারিখে আমার এক আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল...

প্রশ্ন
গত মুহাররমের ৭ তারিখে আমার এক আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। তার উপর যাকাত ফরয ছিল। তার যাকাত- বর্ষের তারিখ ছিল ১ মুহাররম। প্রতি বছর তিনি হিসাব করেই যাকাত আদায় করতেন। কিন্তু এবার আর সে সুযোগ তার হয়নি এবং তিনি এ ব্যাপারে কোনো অসিয়ত করেননি। এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানার বিষয় হল, তাদেরকে কি মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত আদায় করতে হবে, নাকি তার যাকাতের টাকাও অন্যান্য সম্পদের মতো মীরাছ হিসেবে বণ্টিত হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি যেহেতু তার যাকাত আদায়ের অসিয়ত করেননি তাই তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করা জায়েয হবে না; বরং তার পরিত্যক্ত পুরো সম্পদই মীরাছ হিসেবে ধর্তব্য হবে। অবশ্য ঐ ব্যক্তির বালেগ ওয়ারিশগণ নিজেদের অংশ থেকে তার অনাদায়ী যাকাত দিয়ে দিলে তারা সওয়াবের অধিকারী হবে এবং মৃত ব্যক্তিও এর দ্বারা উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। আর এক্ষেত্রে যদি সকল ওয়ারিশ বালেগ হয় এবং তারা প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কাজটি করতে চায় তাহলে ইজমালি সম্পদ থেকেও কাজটি সমাধা করতে পারবে। -শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৫, ১৮৬; দুরারুল হুককাম ১/১৭৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০১০
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকার মহর অনাদায়ী আছে। যা পরবর্তী...

প্রশ্ন
আমার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকার মহর অনাদায়ী আছে। যা পরবর্তী সময় আদায় করার কথা। আমি সুযোগমতো তা আদায় করব। এখন প্রতি বছর যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই পঞ্চাশ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি সম্পদের যাকাত আদায় করব? নাকি তা বাদ দেওয়া যাবে না? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
আপনার স্ত্রীর মহরের টাকা যেহেতু নগদে আদায় করছেন না তাই তা বর্তমানে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না। এখন আপনাকে পুরো সম্পদেরই যাকাত দিতে হবে। -আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০৯
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমাদের বিশজনের একটা সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে টাকা জমা...

প্রশ্ন
আমাদের বিশজনের একটা সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে টাকা জমা করি। বর্তমানে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হয়েছে। তবে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকের প্রায় আট হাজার টাকা করে জমা হয়েছে। আমাদের এই টাকার উপর কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সমিতির শুধু
ঐ টাকার কারণে পৃথকভাবে কারো উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না এবং সমিতির সমষ্টিগত সম্পদের উপরও যাকাত আসবে না। তবে কোনো সদস্যের নিকট যদি সমিতির টাকাসহ যাকাতযোগ্য আরো সম্পদ থাকে এবং উভয়টি মিলে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর
যাকাত ফরয হবে। -সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮-২১৯;
সহীহ
বুখারী ১/১৯৫; কিতাবুল আছল
২/৬৭;
আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৫৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৬৫
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

এক ব্যক্তির তিন মেয়ে দুই ছেলে। তাদের মধ্যে এক ছেলে...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তির তিন মেয়ে দুই ছেলে। তাদের মধ্যে এক ছেলে পড়াশোনা করে। ছেলে হল বালেগ। আমার প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির নগদ ২ লক্ষ টাকা আছে। সে জানে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। টাকাগুলো ২ বছর তার অধীনে আছে। সে যাকাতের টাকাগুলো তার ঐ ছেলের পিছনে খরচ করতে চাচ্ছে। এটা কী বৈধ হবে? জানিয়ে বাধিত
করবেন।
উত্তর
সন্তানাদিকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। সন্তান বালেগ হলেও সে পিতামাতার যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। তাই সন্তানকে যাকাতের টাকা দিলে বা তার পড়ালেখার পেছনে এ টাকা খরচ করলে যাকাত আদায় হবে
না।
-আল মুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৬৪
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা...

প্রশ্ন
আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা সেটি ভাড়া দেই। আমাদের ঐ বাড়ির উপর কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর
না, ঐ বাড়ির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া বছর শেষে নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; হাশিয়াতুত
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৬৩
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমি ও আমার স্ত্রী উভয়েই নেসাবের মালিক। আমার শ্বশুর অনেক...

প্রশ্ন
আমি ও আমার স্ত্রী উভয়েই নেসাবের মালিক। আমার শ্বশুর অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। কিন্তু তার সৎ ভাইয়েরা জালিয়াতি করে সব সম্পদ লুটে নেয়। পরবর্তীতে মামলা মোকদ্দমা করেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো সম্পদই তার অবশিষ্ট নেই। পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক বাকি ৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। বড় ছেলে স্বল্প বেতনে শিক্ষকতা করে এবং মাত্র এক হাজার টাকা পরিবারে খরচ হিসেবে দেয়। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের অবস্থা ভাল। আমার শ্বশুরের আত্মীয়স্বজন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তারা আমার শ্বশুর বাড়িতে নির্দিষ্ট সময় বিশেষ করে দুই ঈদে তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। সাহায্যের ধরন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তাদেরকে যাকাতের টাকা দ্বারা সাহায্য করা হয়। আমার জানার বিষয় হল, আমরা যেহেতু উভয়েই নেসাবের মালিক তাই আমাদের জন্য শ্বশুর বাড়ির খাবার-দাবার কি বৈধ? সেখান থেকে আমাদেরকে কোনো কিছু দিলে তা নেওয়া যাবে কি? যদি না হয় তাহলে আমরা যদি সেখানে বেড়াতে যাই তখন আমাদের করণীয় কী?
উত্তর
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয। তারা যাকাত হস্তগত করার পর এ থেকে আপনাদেরকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে কিংবা দাওয়াত করে খাওয়ালে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তি যাকাত হস্তগত করার পর তা তার নিজস্ব মাল হয়ে যায়। তা যাকাতের মালের হুকুমে থাকে না। অতএব তারা নিজেদের অন্যান্য সম্পদের মতো এই টাকা থেকেও ধনী-গরিব যে কাউকে দাওয়াত দিতে পারবে এবং ধনীদের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫০৯৭; ফাতহুল বারী ৫/২৪৩; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৩; উমদাতুল কারী ৯/৯২; বাযলুল মাজহূদ ৮/১৯৮; আলইসতিযকার ৫/৭৪; মানাসিক
৩৯৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৪
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমার নিকট নগদ কোনো টাকা নেই। কেবল বিয়ের সময় মহর...

প্রশ্ন
আমার নিকট নগদ কোনো টাকা নেই। কেবল বিয়ের সময় মহর এবং উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া তিন ভরি স্বর্ণ আছে। আর আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি পাথর সেট আছে। এটি অনেক দামি পাথর দ্বারা তৈরি, যার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া যাকাতযোগ্য আর কোনো সম্পদ আমার নেই। হুজুরের নিকট জানতে চাই যে, এ অবস্থায় আমার উপর যাকাত ফরয কি
না?
উত্তর
ব্যবহৃত পাথর দামি হলেও তার উপর যাকাত আসে না। তাই আপনার উক্ত পাথর সেটের উপর যাকাত আসবে না। সুতরাং আপনার নিকট যদি বাস্তবেই তিন ভরি স্বর্ণ ছাড়া যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ (তথা নগদ টাকা, রূপা বা ব্যবসার পণ্য) না থাকে তাহলে শুধু ঐ স্বর্ণের কারণে আপনার উপর যাকাত ফরয হবে না। কেননা শুধু স্বর্ণের উপর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মালিক হতে হবে। এরচেয়ে কম স্বর্ণ থাকলে এবং যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ (যেমন, নগদ টাকা, রূপা বা ব্যবসার পণ্য) না থাকলে যাকাত ফরয হবে
না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৯৬৬, ১০১৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬, ২/২২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৮, ১/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩; দুরারুল হুককাম ফী শরহি গুরারিল আহকাম
১/১৭৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৩
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমি একজন চাকরিজীবী। গত বছরের শুরুর দিকে আমার কাছে যাকাতের...

প্রশ্ন
আমি একজন চাকরিজীবী। গত বছরের শুরুর দিকে আমার কাছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ ছিল। দু’তিন মাস পর আমার ছেলে গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে। তখন তার চিকিৎসার পিছনে আমার সব টাকা খরচ হয়ে যায়। আরো কিছু টাকা ঋণও করতে হয়। পরবর্তীতে আবার আল্লাহর রহমতে নেসাবের চেয়েও বেশি টাকা-পয়সার মালিক হয়ে যাই। শুনেছি, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নাকি বছরের শুরু আর শেষে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা যথেষ্ট। পুরো বছর থাকা জরুরি নয়। তাহলে উক্ত অবস্থায় বছরের শুরু-শেষ নেসাবের মালিক হওয়ার কারণেই কি আমার উপর যাকাত ফরয হয়ে গেছে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নিকট তখন যদি টাকা-পয়সা ছাড়া যাকাতযোগ্য আর কোনো সম্পদ না থেকে থাকে তাহলে আপনার উপর গত বছরের যাকাত ফরয হয়নি। কারণ বছরের মাঝে কিছু সময় আপনার কাছে যাকাতযোগ্য কোনো সম্পদই ছিল না। অথচ যাকাত ফরয হওয়ার জন্য বছরের শুরু-শেষ নেসাবের মালিক হওয়ার সাথে সাথে পুরো বছর অল্প হলেও প্রয়োজন অতিরিক্ত যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকা জরুরি। বছরের মাঝখানে কখনো
যাকাতযোগ্য সম্পদ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে ঐ
বছরের হিসাবও বাদ হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে গত বছরের যাকাত দিতে হবে না। এক্ষেত্রে আপনি যখন থেকে পুনরায় নেসাবের মালিক হয়েছেন তখন থেকে নতুন করে যাকাতবর্ষ গণনা শুরু করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৮১

নবীজি সাঃ এর রমযানের প্রস্তুতি।
রজব মাজ থেকেই রাসুল সাঃ রমযানের প্রস্তুতি গ্রহন করতেন।
প্রস্তুতি দুই ভাবে নেওয়া।
(১) রজব মাস থেকে মাঝে মাঝে তুলনামুলক বেশি রোজা রেখে অভ্যস্ত হওয়া।
(২) রজব মাস থেকে অন্যান্য আমল যেমন নফল নামায কোরান তিলাওয়াত ইত্যাদি বেশি বেশী করে অভ্যস্ত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহন করা।
এবং সময়ে সময়ে এই দোয়াটি পড়া ﺍﻟﻠﻬﻢَّ ﺑﺎﺭِﻙْ ﻟﻨﺎ ﻓﻲ ﺭَﺟَﺐَ
‎ﻭﺷَﻌْﺒﺎﻥَ . ﻭﺑَﻠِّﻐْﻨﺎ ﺭﻣَﻀَﺎﻥَ উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা‘বান। ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।
অনেককে দেখা যায় এই হাদীসের বিভিন্ন ফযীলত বর্ননা করে, যেমন একশ জনকে দোয়াটি পৌছালে, বা আকশবার দোয়াটি পড়লে একশ বছরের গোনাহ মাফ হবে, বা একশ রাকাত নামাযের ছাওয়াব হবে ইত্যাদি। এগুলো মিথ্যা বানোয়াট।
তাই এ ধরনের কাজ ও বিশ্বাস থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
কারন ইসলাম বড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনটাকেই সমর্থন করে না।
আল্লাহ ছহীহ বুঝে আমল করে উভয় জাহানে ধন্য হওয়ার তৌফীক দান করুন। আমীন।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৩৩
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

কোন অমুসলিমকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কিনা? দিলে যাকাত আদায়...

প্রশ্ন
কোন অমুসলিমকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কিনা? দিলে যাকাত আদায় হবে কিনা?
উত্তর
না, অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া যাবে না। যদি কেউ দেয়, তাহলে তার যাকাত আদায় হবে না। পুনরায় যাকাত আদায় করতে হবে।
দলিলঃ সুরা তাওবা আয়াত নং ৬০; নাসায়ী শরীফ ৩/৪৯; বাহরুর রায়েক ২/২৬৬; জাওহারাতুন নায়িরা ১/৪৯৮.
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১২
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে।...

প্রশ্ন
আমার কাছে এক লক্ষ টাকা আছে, যা আমার খোরপোষের বাইরে। এখন আমার উপর কি যাকাত ফরয হবে? আর ফরয হলে
কত টাকা আদায় করতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
হাঁ, এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐ এক লক্ষ টাকার উপর যাকাত ফরয হবে। আর যাকাত দিতে হবে ২.৫০% হিসাবে এক
লক্ষ টাকায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা। -আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪-১৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া
১/২৪৯;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫৫৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমার আববা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাড়িতে অবসরে আছেন। পরিবারের সকল...

প্রশ্ন
আমার আববা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাড়িতে অবসরে আছেন। পরিবারের সকল খরচ আমি বহন করি। আমার ব্যবসায় আববা বা পরিবারের কেউ শরিক নেই। পরিবারের জরুরি খরচ আববার হাতে দেই। আমার ছোট প্রাপ্তবয়ষ্ক দুই ভাই লেখাপড়া করে। জানার বিষয় হল, আমার ঐ দুই ভাইকে তাদের লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন কিতাবাদি ও অন্যান্য যাবতীয় খরচের জন্য কি যাকাতের টাকা দিতে পারব? জানালে উপকৃত
হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরিবারের খরচের পাশাপাশি ছোট ভাইদের জরুরি খরচ বহন করাও আপনার দায়িত্ব। তাই জরুরি খরচ যাকাত থেকে গণ্য করতে পারবেন না। তবে জরুরি খরচ থেকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দরিদ্র ভাইদেরকে প্রদান করলে তা যাকাতের নিয়তে দিতে পারবেন। -আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫৩১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: জাকাত

মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার...

প্রশ্ন
মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার টিফিন ক্যারিয়ারের বক্সে খানা দিয়ে আসছি। প্রশ্ন হল, এ পদ্ধতিতে আমার যাকাত প্রদান করা সহীহ কি না? জানালে কৃতজ্ঞ
থাকব।
উত্তর
হ্যাঁ, এ পদ্ধতিতে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খাবারের মূল্য যথাযথভাবে হিসাব করতে হবে, বেশি ধরা যাবে না। -আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ২৮
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০৫
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: জাকাত

আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা...

প্রশ্ন
আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের
একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা সেটি ভাড়া দেই।
আমাদের ঐ বাড়ির উপর কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর
না, ঐ বাড়ির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না।
তবে ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া বছর শেষে নেসাব
পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী
আলাদ্দুর ১/৩৯২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৩১
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময়...

প্রশ্ন
রমযানের ২৫ তারিখে আমার যাকাতের বছর পূর্ণ হয়। আমি সবসময় ২৫ রমযান বা তারপর দু একদিনের মধ্যেই যাকাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এ বছর একজন দরিদ্র লোককে রমযানের আগেই যাকাত দিয়ে দিয়েছি। প্রশ্ন হল, যাকাতের বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা আদায় হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
হ্যাঁ, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার অগ্রিম যাকাত দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ৬৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩২৪
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

এক বছর আগে আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একাউন্টে ১৫...

প্রশ্ন
এক বছর আগে আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা আছে। সে টাকা এখনো ব্যাংকেই আছে। ওয়ারিশদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। তাই কাউকে টাকা না দেওয়ার জন্য ব্যাংকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিন মাস আগে একজন ব্যাংক থেকে টাকা আনতে গেলে তারা অসম্মতি জানায় এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ব্যাংক নিজেই ওয়ারিশদের মধ্যে তাদের প্রাপ্য অংশ বণ্টন করে দিবে। জানার বিষয় হল, ঐ টাকার যে অংশ আমি পাব তার কারণে কি আমার উপর বিগত বছরের যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে যেহেতু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা বণ্টন করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তাই এ পরিস্থিতিতে টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তার উপর যাকাত আসবে না এবং বিগত বছরেরও যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ টাকা হাতে আসার পর থেকে তা যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত
হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৫০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৬৬
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

কোন্ কোন্ আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যায়? নানী ও খালাকে কি...

প্রশ্ন
কোন্ কোন্ আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যায়? নানী ও খালাকে কি যাকাত দিতে পারব?
উত্তর
নানীকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তদ্রূপ নানা, দাদা-দাদী, পিতা-মাতা, স্বামী- স্ত্রী এবং সন্তানাদি ও তাদের
অধস্তনকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এরা দরিদ্র
হলে সামর্থ্য
অনুযায়ী তাদেরকে এমনি সহায়তা করা কর্তব্য।
এছাড়া খালাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে এবং এ ধরনের আত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া অধিক
উত্তম।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৫৪৪; কিতাবুল আছল ২/১২৪; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৬২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে...

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটির লোকজন খাদেমকে মুক্ত করার জন্য মুসল্লিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ
করছে।
জানার বিষয় হল, আমি যদি যাকাতের টাকা দেই তবে কি আমার যাকাত আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, টাকা সংগ্রহের বিষয়টি মসজিদ কমিটি খাদেমের সাথে আলোচনা করেনি।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহের এ বিষয়টি যেহেতু খাদেম থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি তাই এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করলে যাকাত আদায়
হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, খাদেম যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তবে তার অনুমতি সাপেক্ষে এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে। -আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার
২/৩৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৫৯
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি চাল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ...

প্রশ্ন
আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি চাল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ ব্যবসা। গত বছর সে ব্যবসায় বড় ধরনের লস খায়। যার কারণে সে অনেক ঋণী হয়ে পড়ে এবং অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করার মতো তার কাছে কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা দেখে তার এক ভাই তাকে সহায়তা করার জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে। উদ্দেশ্য হল, ডিপেজিট থেকে যে মুনাফা আসবে তার পুরোটাই তাকে দিয়ে দিবে। প্রশ্ন হল উক্ত উদ্দেশ্যে তার এ ডিপোজিট খোলা জায়েয হয়েছে কি?
উত্তর
প্রশ্নে বর্ণিত ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টটি সুদভিত্তিক। এই একাউন্টের আয় সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের একাউন্ট করলে একে তো সুদী চুক্তি করার গুনাহ হবে। আর অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সুদ গ্রহণেরও গুনাহ হবে। এ টাকা নিজে ভোগ না করলেও যেহেতু মূল চুক্তিটি সুদী। তাই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে সহায়তা করার উদ্দেশ্যেও এই একাউন্ট খোলা জায়েয হবে না। সতুরাং ঋণগ্রস্ত বা দুস্থ- অসহায়কে সহায়তা করার জন্যও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। বরং শরীয়তসম্মত কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেমন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সুদমুক্ত কর্জে হাসান দেওয়া, দান- সদকা করা, যাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে সহায়তা করা ইত্যাদি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৩৪২

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৪২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

কেউ যদি জাকাত দেয়ার সময় বলে তোমাকে হাদিয়া দিলাম তাহলে...

প্রশ্ন
কেউ যদি জাকাত দেয়ার সময় বলে তোমাকে হাদিয়া দিলাম তাহলে তার জাকাত আদায় হবে কি?
উত্তর
যদি জাকাতের নিয়তে দিয়ে থাকে তাহলে আদায় হয়ে যাবে। কেননা জাকাত আদায় হয়ার ক্ষেত্রে নিয়তই ধর্তব্য হয়।
সুত্রঃবাহরুর রায়েক ২/৩৭০, আলমগীরি ১/১৮১, শামী ৩/৩৫১।

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০২৯
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: জাকাত

আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে...

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটির লোকজন খাদেমকে মুক্ত করার জন্য মুসল্লিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ
করছে।
জানার বিষয় হল, আমি যদি যাকাতের টাকা দেই তবে কি আমার যাকাত আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, টাকা সংগ্রহের বিষয়টি মসজিদ কমিটি খাদেমের সাথে আলোচনা করেনি।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহের এ বিষয়টি যেহেতু খাদেম থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি তাই এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করলে যাকাত আদায়
হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, খাদেম যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তবে তার অনুমতি সাপেক্ষে এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে। -আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার
২/৩৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন