পর্দা লঙ্গনকারী শিক্ষক ইমামের পিছনে নামাযের বিধান৷ এবং ইমাম কেমন হওয়া উচিত?
হল, এভাবে পর্দার বিধান লঙ্ঘনকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার বিধান কী? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
উল্লেখ্য যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট মাসআলা- মাসাইল জানেন এবং সুন্নতের অনুসারী পরহেযগার ব্যক্তিই এ পদের যোগ্য।
অতএব, মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, যথাসম্ভব উপযুক্ত ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করা,প্রকাশ্যে গুনায় লিপ্ত কিংবা শরীয়তের বিধানের প্রতি উদাসীন ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ না দেওয়া।
-রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
আমি আমার বড় ভাই আর আমার আব্বু আমরা তিনজন প্রতিবছর...
আমি আমার বড় ভাই আর আমার আব্বু আমরা তিনজন প্রতিবছর রমযানে বাসায় জামাতে তারাবীহ পড়ি। আগামী রমযান থেকে আমার বোন আর আম্মুও আমাদের সাথে শরীক হতে চাচ্ছেন। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, আম্মু আর আপু আমাদের সাথে শরীক হলে আমরা কীভাবে কাতার করে দাঁড়াব? আর মহিলাদের বাসাতে জামাতে নামায পড়া বা বাইরের জামাতে অংশগ্রহণ করা কেমন? দলীল প্রমাণসহ জানতে চাই।
ইমামের সাথে যদি একজন পুরুষ ও মহিলা থাকে, তাহলে পুরুষ ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। আর মহিলা তাদের পেছনের কাতারে দাঁড়াবে। আর যদি ইমামের সাথে দুইজন পুরুষ ও মহিলা থাকে, তাহলে দুইজন পুরুষ ইমামের পেছনের কাতারে দাঁড়াবে, আর মহিলা তাদের পেছনের কাতারে দাঁড়াবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ لَهُ، فَأَكَلَ مِنْهُ، ثُمَّ قَالَ: قُومُوا فَلِأُصَلِّ لَكُمْ قَالَ أَنَسٌ: فَقُمْتُ إِلَى حَصِيرٍ لَنَا، قَدِ اسْوَدَّ مِنْ طُولِ مَا لُبِسَ، فَنَضَحْتُهُ بِمَاءٍ، فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَصَفَفْتُ وَاليَتِيم وَرَاءَهُ، وَالعَجُوزُ مِنْ وَرَائِنَا، فَصَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ انْصَرَفَ .
উক্ত হাদীসে এসেছে যে, আনাস রা., একটি ছেলে ও একজন বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতে নামায পড়েছেন। সেখানে আনাস রা. ও ছেলেটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে দাঁড়িয়েছেন। আর বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়েছেন তাদের পেছনে।
প্রকাশ থাকে যে, মেয়েদের জন্য তারাবীর নামাযও একাকী পড়াই উত্তম। আর গায়রে মাহরাম (মাহরাম নয় এমন) কোনো পুরুষের পেছনে পর্দার ভেতরে থেকেও মহিলাদের জন্য ইকতিদা করা মাকরূহ। আর যদি জামাতে শরীক হওয়ার জন্য ঘরের বাইরে অন্য কোথাও যেতে হয় তবে তা আরো অপছন্দনীয়। কেননা বহু হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে একাকি গৃহাভ্যন্তরে নামায আদায়কে উত্তম বলেছেন এবং এভাবে নামায আদায়ে উৎসাহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
صلاةُ المرأةِ في بيتها أفضلُ من صلاتها في حُجْرَتِها، وصلاتُها في مخدَعِها أفضلُ من صلاتها في بيتها.
মহিলাদের জন্য ঘরের ভেতরে নামায পড়া উত্তম বাইরের কামরায় নামায পড়া থেকে আর গৃহাভ্যন্তরের প্রকোষ্ঠে নামাযে পড়া উত্তম ঘরে নামায পড়া থেকে। (সুনানে আবুদাউদ, হাদীস ৫৭০)
আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
خَيْرُ صَلَاةِ النِّسَاءِ فِي قَعْرِ بُيُوتِهِنَّ
মহিলাদের জন্য উত্তম নামায হল যা গৃহাভ্যন্তরে আদায় করা হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৫৭০)
তাই মহিলাগণ জামাতে নামায পড়লে কিংবা ঘরের বাইরে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করলে সাওয়াব কম হবে এবং তা মাকরুহ হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০২; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২
আমার এক বোন কুরআন মাজীদ পড়ান। আর্থিক সংকটে তাকে বিভিন্ন...
আমার এক বোন কুরআন মাজীদ পড়ান। আর্থিক সংকটে তাকে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে পড়াতে হয়। আবার সপ্তাহের ছয়দিনই পড়াতে হয়। তথা পুরো মাস তার এটাই কাজ। প্রশ্ন হল, এভাবে অসহায় মহিলার জন্য পর্দার সাথে বাইরে গিয়ে পড়ানো ঠিক কি না?
আর ঋতুর হালতেও কুরআনের সবক শোনা ও দেওয়ার জায়েয কোনো সুরত আছে কি? কারণ এই হালতেও তার বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কেউ কেউ বলে থাকে, এই হালতে পুরা আয়াত না পড়ে শব্দ শব্দ তাসবীহের নিয়তে পড়লে জায়েয। কথাটা সঠিক কি না? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
বাস্তবেই যদি ঐ মহিলার জন্য নিজের উপার্জন করা ছাড়া জীবিকার কোনো ব্যবস্থা না থাকে এবং ঘরে বসে জীবিকার ব্যবস্থা না হয় তাহলে পর্দার সাথে আশপাশের বাসায় গিয়ে নারী ও ছোট ছেলেদেরকে পড়াতে পারবে। বালেগ বা বালেগের কাছাকাছি বয়সের কোনো ছেলেকে পড়াতে পারবে না। আর কুরআন শিক্ষাদানকারীনী মহিলা ঋতুমতী থাকা অবস্থায়ও পড়া শুনতে পারবে। কিন্তু এ অবস্থায় আয়াত বা আয়াতের অংশবিশেষ বলে দেওয়া জায়েয হবে না। প্রয়োজন হলে এক দু শব্দ করে বলে দিতে পারবে। প্রকাশ থাকে যে, শিক্ষিকাগণ মাসের নির্ধারিত ঐ দিনগুলোতে ছাত্রীদেরকে শুধু মাসআলা-মাসায়িল, দুআ-নামায ইত্যাদি শিক্ষা দিতে পারেন।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮, ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯
আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান-মাহফিল ইত্যাদি কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করে থাকি।...
আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান-মাহফিল ইত্যাদি কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করে থাকি। কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম ও তা তিলাওয়াত করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। তাই সওয়াব ও বরকতের উদ্দেশ্যেই আমরা কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানাদি শুরু করে থাকি। কিন্তু আরবের কোনো কোনো আলেম বলেন, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা নাকি ঠিক নয়। কেউ কেউ এটাকে বিদআতও বলেন। তাদের বক্তব্য হল, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াতের কোনো প্রমাণ নেই। তাই তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের এ বক্তব্য কি সঠিক? এসব ক্ষেত্রে কুরআন তিলাওয়াতের কী হুকুম? দলীল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
বৈধ কোনো অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েয এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
এক হাদীসে আছে, আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন,
أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا جلسوا كان حديثهم - يعني الفقه - إلا أن يقرأ رجل سورة أو يأمر رجلا بقراءة سورة.
রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দ্বীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোনো সূরা পাঠ করার জন্য। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩২২; আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাআদ ২/৩৭৪; আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৪১৯
খতীব বাগদাদী রাহ. ‘আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ কিতাবে হাদীস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদীস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হল, মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন ... আবু নাযরা রা. বলেন,
كان أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا اجتمعوا تذاكروا العلم وقرءوا سورة.
রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তাঁরা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোনো সূরা তিলাওয়াত তরতেন। -আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪
হাফিয সামআনি রাহ. ইবনে কাসীর রাহ. ইমাম নববী রাহ. ও হাফিয সাখাবী রাহ. প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তাঁরা এর সপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। -আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতেমলা, সামআনী ১/৪৮; আলবা-ইসুল হাসীস, ইবনে কাসীর ১/১৫৩; ফাতহুল মুগীস ৩/২৫৪; তাদরীবুর রাবী ২/৫৭৩
আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলীল। যে ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের আমল প্রমাণিত আছে তা কখনো বিদআত হতে পারে না।
সুতরাং অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। এটিকে ভুল বা বিদআত বলা খুবই অন্যায় কাজ।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মাজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে। এবং নি¤েœাক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।
খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কেরাত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।
গ) শ্রোতাগণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত থাকে না। তখন তিলাওয়াত করা হয়। এতে মনোযোগসহ শোনা হয় না। তাই এটাও ঠিক নয়।
ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।
ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকা- বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন কারীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আমার আম্মা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আব্বা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন।...
আমার আম্মা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আব্বা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। সৎ মা (আব্বার দ্বিতীয় স্ত্রী)-এর পিতা ক’দিন পরপর আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আমি তাকে নানা ডাকি। তাকে মাহরাম মনে করে তার সামনে অবাধে যাওয়া-আসা করতাম। কিন্তু ক’দিন আগে আমার চাচাতো বোন বলল, সৎ মায়ের পিতার সাথে পর্দা করা জরুরি। এখন জানার বিষয় হল, তার কথা কি সঠিক?
হাঁ, সে ঠিকই বলেছে। সৎ মায়ের পিতা মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা ফরয।
Ñফাতাওয়া খায়রিয়া ১/৩৯; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১০৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১
খালেদ ফাতেমার মায়ের দুধ পান করেছে। এখন প্রশ্ন হল, খালেদের...
খালেদ ফাতেমার মায়ের দুধ পান করেছে। এখন প্রশ্ন হল, খালেদের জন্মদাতা পিতার সাথে কি ফাতেমা দেখা দিতে পারবে?
না, খালেদের পিতার সাথে ফাতেমা দেখা দিতে পারবে না। তাদের পর্দা করা জরুরি। কেননা খালেদের দুধ পান করার দ্বারা দুগ্ধদানকারীনির সাথে শুধু তারই দুধ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে খালেদের ভাই-বোন, পিতা বা তার অন্য কোনো আত্মীয়ের সাথে দুধ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০
আমাদের কলেজে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি পরীক্ষার সময় মেয়েদের...
আমাদের কলেজে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি পরীক্ষার সময় মেয়েদের সাথে বসতে হয়। কারণ আমাদের রোল অনুযায়ী সিট প্ল্যান করা হয়। এ অবস্থায় আমি কীভাবে আমার মহামূল্যবান ঈমান ঠিক রাখতে পারি?
আমাদের দেশে সরকারী/বেসরকারী বিভিন্ন মানের একাধিক বয়েজ কলেজ আছে। আপনার কর্তব্য ছিল প্রথম থেকেই বয়েজ কলেজে এডমিশন নেয়া। সেক্ষেত্রে আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত না। এখন যদি আপনার জন্য বয়েজ কলেজে ট্রান্সফার হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তাই সমীচীন হবে। যতদিন তা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যথাসম্ভব দৃষ্টিকে সংযত রাখবেন। মেয়েদের সাথে উঠাবসা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকবেন। আর কখনো ভুল হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবেন। দৃষ্টি ও মন হেফাযত রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করবেন। সময় পেলে হক্কানী আলেম ও আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে উঠাবসা করবেন এবং তাদের ওয়ায-নসীহত শুনবেন।
প্রকাশ থাকে যে, সহশিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী। এতে পর্দার হুকুম লঙ্ঘনের গুনাহ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহর আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের পরিবেশ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা মুসলমানের কর্তব্য।
-সূরা নূর : ৩০; তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৭৩; ফাতহুল বারী ২/৩৯২; আলমাবসূত, সারাখসী ১০/১৫২ ১৬/৪০; আলমাজমু ৪/৩৫০ আদিল্লাতুল হিজাব ৪৫৬-৪৭৪
আমাদের এলাকায় বিগত দুই/তিন বছর যাবত মাইকিং করে মহিলাদের জন্য...
আমাদের এলাকায় বিগত দুই/তিন বছর যাবত মাইকিং করে মহিলাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে মহিলা সম্মেলন-এর আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে কখনও কোনো পুরুষ এবং মহিলা বক্তা ওয়াজ করেন আবার কখনও শুধু মহিলা বক্তা ওয়াজ করেন। মহিলা বক্তাও পুরুষ বক্তাদের মত সুর দিয়ে মাইক ব্যবহার করে এমনভাবে ওয়াজ করেন যে, তার সুরেলা কন্ঠস্বর সম্মেলনের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে। যা পথচারী পুরুষ এবং আশপাশে অবস্থানরত পুরুষগণ অনায়াসেই শুনতে পায়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের অবস্থাও উদ্ভট। সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলা বেপর্দা অবস্থায় সম্মেলনে আসা যাওয়া করে। সম্মেলন শেষে সভাস্থল ত্যাগের সময় বেপর্দা নারীদের জটলা বেধে রাস্তা দিয়ে চলা -দিনের আলোতে সকলেরই দৃষ্টিগোচর হয়। এতে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
এধরনের সম্মেলনের আয়োজকদের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বুখারী শরীফের কিতাবুল ইলমের নিম্নে বর্ণিত বাবগুলোর হাদীস দ্বারা উক্ত সম্মেলনের পক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন।
১. باب تعليم الرجل أمته وأهله
২. باب عظة الإمام النساء وتعليمهن
৩. باب هل يجعل للنساء يوم على حدة في العلم
অতএব, মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল:
ক. উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে কোন মহিলা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মাইক ব্যবহার করে সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ-নসীহত করার হুকুম কী?
খ. বর্ণিত পদ্ধতিতে দিনের বেলায় বেপর্দা অবস্থায় মহিলাদের জন্য এ ধরনের ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণের হুকুম কী?
গ. এ ধরনের মহিলা সম্মেলন আয়োজন করার হুকুম কী?
ঘ. এ ধরনের মহিলা সম্মেলনের পক্ষে উক্ত বাবগুলো দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে কি?
কুরআন সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়গুলোর শরয়ী সমাধান বিস্তারিত দলীল প্রমাণসহ জানালে এলাকাবাসী চির কৃতজ্ঞ হবে।
ওয়ায নসীহত, দ্বীনী আলোচনা নিঃসন্দেহে মুমিনদের জন্য উপকারী। পুরুষের মত মহিলাদের মাঝেও দ্বীনী তালীম-তরবিয়ত, ওয়ায-নসীহত শরীয়তসম্মত পন্থায় ব্যাপকভাবে হওয়া দরকার। বিশেষত বর্তমানে ফেতনা -ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে তাদের মাঝে ওয়ায-নসীহত ও তালীম-তরবিয়তের প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্নের বক্তব্য অনুযায়ী মহিলাদেরকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে ডেকে এনে এভাবে সম্মেলন করা এবং মহিলা বক্তা কর্তৃক সেখানে মাইকে আলোচনা করার প্রচলিত পন্থাটি শরীয়তসম্মত নয় । এ পদ্ধতির সম্মেলন বা ওয়ায মাহফিল বর্জনীয়। কেননা,
(ক) প্রচলিত পদ্ধতির উক্ত মহিলা সম্মেলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালীম-তরবিয়ত সাহাবা- তাবেয়ীনের অনুসৃত তরীকা পরিপন্থী। দ্বীন-শেখা শেখানো, ওয়ায-নসীহতের পথ ও পন্থা শরীয়ত নির্দেশিত উপায়ে হওয়া আবশ্যক। শরীয়ত সমর্থন করে না এমন সব পন্থা বর্জন করা জরুরী।
নবীযুগের নারীরা পরবর্তী যে কোনো যুগের নারী অপেক্ষা দ্বীন শেখার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে ওয়ায নসীহত শোনার প্রবল আকাঙ্ক্ষা রাখতেন। তিনি তাদেরকে যে পন্থায় ওয়ায নসীহত করেছেন মূলত সেটাই আমাদের অনুসরণীয়। সে পদ্ধতি কী ছিল লক্ষ্য করুন।
সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে, একবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি। তিনি বললেন موعدكن بيت فلانة অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৯৪১
লক্ষ করুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের ওয়ায নসীহত করার জন্য পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে কেমন ঘরোয়া পরিবেশ ও স্থান নির্বাচন করেছেন। তাদের আবদারের প্রেক্ষিতে প্রকাশ্য স্থান যেমন মসজিদে নববী, ঈদগাহ বা ঘরের আঙ্গীনার কথা না বলে সরাসরি বলে দিলেন موعدكن بيت فلانة অমুক মহিলার গৃহে অবস্থান কর। মূলত তাঁর এ নির্দেশ মহিলাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের যে কুরআনী নির্দেশনা রয়েছে তারই অংশ।
(খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রোতাদের থেকে ব্যাপকভাবে পর্দার বিধান লংঘন হয়। যা নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু তারা যদি যথাযথভাবে পর্দা মেনেও উক্ত সম্মেলনে আসার পাবন্দী করে নেয় তথাপি এ ধারার মহিলা সম্মেলন গোড়া থেকেই শরীয়তের রুচি প্রকৃতি ও স্বভাব বিরুদ্ধ। শরীয়তের স্বভাব চাহিদা হল, মহিলাদের ইবাদত বন্দেগী থেকে শুরু করে তাদের সকল কর্মকাÐ পুরুষদের থেকে আলাদা ও অতি গোপনীয় হবে। পুরুষের জন্য যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ হুকুম সেখানে তাদেরকে গৃহাভ্যন্তরে নামায আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। মসজিদে নববীতে যেখানে এক রাকাত নামায এক হাজার রাকাত সমান, এক বর্ণনামতে পঞ্চাশ হাজার রাকাত সমান, এর সাথে আবার আল্লাহর রাসূলের মত ইমামের পেছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য তো রয়েছেই। তা সত্বেও সে সময় নারী সাহাবীদেরকে তাদের গৃহাভ্যন্তরের সর্বাধিক নির্জন স্থানে নামায পড়াকে উত্তম বলা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, প্রথম দিকে কোনো কোনো মহিলা প্রতিনিয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাযিলকৃত নতুন নতুন ওহী ও বিধি বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য,পাশাপাশি প্রিয় নবীর মত ইমামের পেছনে নামায পড়ার তীব্র আকাক্সক্ষার কারণে মসজিদে নববীর জামাতে অংশগ্রহণ করত। তিনি তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন না। তবে তার জন্য বেশ কিছু শর্ত ছিল। যেমন,
১. পূর্ণ পর্দার সাথে আসতে হবে। ২. সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। ৩. সাজসজ্জা পরিত্যাগ করতে হবে। ৪. রাতে আসবে, দিনে আসবে না। ৫. মহিলারা সবার পরে আসবে এবং নামায শেষে পুরুষদের আগে বের হয়ে যাবে।
৬. কোনো অবস্থায়ই পুরুষদের সাথে মেলা-মেশার আশঙ্কা না থাকতে হবে।
লক্ষ করুন, এত পাবন্দী এমন যুগের নারীদের ব্যাপারে ছিল যাকে ইসলামের সোনালী যুগ বলা হয়। যাদের মাঝে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল বিদ্যমান ছিলেন। অতপর তাঁর ইন্তেকালের পর সামাজিক পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনের কারণে সাহাবায়ে কেরাম মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেন এবং মহিলারাও মসজিদে আসা বন্ধ করে দেয়। উম্মাহাতুল মুমিনীন এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবীদের তাকওয়া তহারাত, খোদাভীতি যা প্রবাদতুল্য, এবং পরবর্তীযুগের নারীদের জন্য যারা হলেন আদর্শ তাঁদের ব্যাপারে যদি এমন নিষেধাজ্ঞা হয় তাহলে এমন ফেতনা-ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে প্রকাশ্যে দিবালোকে বেপর্দার সাথে দূর দুরান্ত থেকে মহিলাদের উক্ত সম্মেলনে যাতায়াত কীভাবে অনুমোদিত হতে পারে?
(গ) উক্ত মহিলা সম্মেলনে মহিলা বক্তা কর্তৃক মাইকে আলোচনা করা, সুরেলা কন্ঠে বয়ান করা,যার আওয়াজ সভাস্থলের গণ্ডি পার হয়ে কেবল আশপাশের পুরুষগণই নয়; বরং দূর দূরান্তের লোকদের কাছেও পৌঁছে যায়, তা শরীয়তের নির্দেশনার যে সুস্পষ্ট সীমালংঘন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীর প্রতি শরীয়তের বিধান ও চাহিদা হল, তার কন্ঠস্বর যেন প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষ শুনতে না পায়। এ বিধান কেবল সাধারণ ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রেও তা পূর্ণমাত্রায় লক্ষ রাখা হয়েছে। যেমন,
১. মুআযযিনের এত অধিক মর্যাদা থাকা সত্বেও নারী কন্ঠস্বর যেন বিনা প্রয়োজনে পরপুরুষ শুনতে না পায় এজন্য তাদের উপর আযানের বিধান দেয়া হয়নি।
২. উচ্চ আওয়াজ বিশিষ্ট ফরয নামাযের কেরাত তাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়ার বিধান রয়েছে।
৩. নামাযে ইমামের কোনো ভুল ত্রæটি হলে তা অবগত করানোর জন্য পুরুষ মুক্তাদীদেরকে সুবহানাল্লাহ বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একই বিষয়ে নারীদেরকে তাসফীক অর্থাৎ এক হাতের পিঠ অন্য হাতের তালুতে মেরে শব্দ করতে বলা হয়েছে। যেন পুরুষরা আওয়াজকারী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বুঝতে না পারে।
৪. হজ্বের তালবিয়া পুরুষগণ উচ্চ আওয়াজে পড়বে। কিন্তু মহিলারা পড়বে নিম্ন আওয়াজে। এধরনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিদ্যমান।
হাঁ, প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে পর্দার আড়ালে থেকে টুকটাক দরকারী কথা বলা নিষেধ নয়। তবে এক্ষেত্রেও কোমলতা, নম্রতা পরিহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হল, কন্ঠস্বরের কোমলতা পরিহারের নির্দেশ সরাসরি নবীযুগের নারীদেরকে দেয়া হয়েছে। এখন কথা হল, তাদের ব্যাপারেই যদি এমন নির্দেশ হয়ে থাকে তাহলে এ যুগের মহিলা বক্তাদের মাইকে আলোচনা করা এবং সুরেলা কন্ঠ দেয়া কতটা শরীয়ত বিরোধী কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মোটকথা প্রশ্নোক্ত মহিলা সম্মেলনে শরীয়ত নিষিদ্ধ একাধিক কর্মকাণ্ড ও আপত্তি বিদ্যমান, তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরত থাকা আবশ্যক।
আর প্রশ্নে যেসব হাদীসের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে উক্ত মহিলা সম্মেলনের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত অধ্যায়ের হাদীসগুলো দেখলেই তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
যেমন প্রথম হাদীসটি লক্ষ করুন, এ হাদীসের মূল বক্তব্য হল পুরুষগণ নিজেরা পরিবার পরিজনকে সুন্দর আদব আখলাক, তালীম তরবিয়ত শিক্ষা দিবে। এজন্য সে দ্বিগুন সওয়াবের অধিকারী হবে।
এ হাদীসে তো নিজ পরিবার পরিজনের শিক্ষা দীক্ষা, তালীম তরবিয়তের ব্যাপারে পুরুষের দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে। এবং তাদের শিক্ষা দীক্ষা ঘরোয়া পরিবেশে হবে তাও স্পষ্ট।
দ্বিতীয় হাদীসের সারকথা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলা সাহাবীদের যখন ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল তখন একবার ঈদের নামায শেষে মহিলাদেরকে ওয়ায নসীহত করেছিলেন। এ হাদীস দ্বারাও উক্ত সম্মেলনের পক্ষে প্রমান পেশ করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা তাদেরকে তো ঈদগাহে ওয়ায নসীহতের জন্য ডাকা হয়নি। তারা তো সেখানে ঈদের নামাযের জন্য এসেছিলেন।
আর তৃতীয় হাদীসের আলোচনা তো প্রথমেই করা হয়েছে যা দ্বারা এ সম্মেলনের বিপরীতটাই প্রমাণিত হয়।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনের জরুরী ইলম শিক্ষা করা নারীদের উপরও ফরয। তাদেরকে সঠিক ঈমান-আকীদা শিক্ষা দেয়া, তালীম-তরবিয়ত করা, ওয়ায-নসীহত শোনানো খুবই দরকারি। তবে এর পদ্ধতি হতে হবে অবশ্যই শরীয়তসম্মত। আর এর অনুসৃত পদ্ধতি তো তা-ই যা হাদীস শরীফে এসেছে। অর্থাৎ ঘরের পুরুষরা দ্বীন শিখে তাদের নারীদেরকে শেখাবে। এতে প্রত্যেক ঘরেই দ্বীনী তালীমের চর্চা হবে এবং ঘরে ঘরে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হবে। পুরুষদের কর্মব্যস্ততার কারণে যদি অধিক সময় না পায় তবে তাদের থেকে নারীরা শিখে ঘরের মেয়েদেরকে অনুরূপ আশপাশের মেয়েদেরকে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন মাজীদ শেখাবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শেখাবে, হক্কানী উলামায়ে কেরামের রচিত কিতাব থেকে ওয়ায-নসীহত শুনাবে। মাঝে মাঝে হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের এনে ঘরোয়াভাবে পর্দা-পুশিদার সাথে ওয়ায-নসীহত শুনবে। ইনশাআল্লাহ শরীয়তসম্মত উক্ত পদ্ধতিতে তাদের অধিক ফায়েদা হবে।
আমরা জানি, শাশুড়ির সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। প্রশ্ন হল, শাশুড়ি...
আমরা জানি, শাশুড়ির সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। প্রশ্ন হল, শাশুড়ি যদি আপন না হয় অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা হয় তাহলে কি তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েয হবে?
না, সৎ শাশুড়ি (অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা) মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা জরুরি। দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯
জনৈক ব্যক্তি সার্বিকভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত। পরিবারের সবাই দ্বীন-ধর্ম বিশেষত...
জনৈক ব্যক্তি সার্বিকভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত। পরিবারের সবাই দ্বীন-ধর্ম বিশেষত পর্দা-পুশিদার ব্যাপারে খুবই সচেতন। বর্তমানে উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। হজ্বে যেতে হলে আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট করতে হবে। এগুলোতে ছবি অত্যাবশ্যকীয়। ছবি যদিও কোনো মহিলার মাধ্যমে তোলা সম্ভব হবে কিন্তু পাসপোর্টের ছবি অনেক পরপুরুষের নজরে পড়বে। বিশেষ করে জেদ্দায় পাসপোর্টের ছবি দেখিয়ে তার বাহককে তালাশ করা হয়। মুফতী ছাহেবের খেদমতে আরজ এই যে, এসব বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর জন্য নিজে হজ্বে না গিয়ে বদলি হজ্ব করানোর সুযোগ আছে কি?
পর্দার বিধানের প্রতি যথাযথভাবে আমল করা এবং এ ব্যাপারে দৃঢ় মানসিকতা ও ঈমানী গায়রত ও জযবা প্রশংসনীয় বিষয়। একজন পর্দানশীন মুমিন নারীর জন্য তার চেহারা পরপুরুষের সম্মুখে অনাবৃত হওয়া এবং তার ছবি অন্যদের সামনে প্রদর্শিত হওয়া স্বভাবতই মনোকষ্টের কারণ। তবে পর্দা যেমন আল¬াহ তাআলার বিধান তেমনি হজ্বও তাঁরই গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। বান্দার কর্তব্য হল, সর্বদা নিজের জযবা ও আবেগের উপর আল্লাহ তাআলার হুকুমকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে নিজের যুক্তি ও আবেগকে সমর্পিত করা। এটিই প্রকৃত বন্দেগী। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার উপর যেহেতু হজ্ব ফরয এবং নিজে হজ্ব করার মতো শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য তার আছে তাই তার নিজের হজ্ব নিজেকেই গিয়ে করতে হবে। পাসপোর্টের ছবি পরপুরুষ দেখবে-এই কারণে বদলি করানো জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে বদলি করালে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, হজ্বের জন্য ছবিযুক্ত পাসপোর্ট করা এবং ছবি পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনে চেক-আপ হওয়া এসব কিছুই হজ্বের ব্যবস্থাপনাগত বিষয়। হজ্বে গমনেচ্ছু ব্যক্তির এসব বিষয়ে কিছুই করার থাকে না; বরং এখানে সে আইনগতভাবেই এসব কাজ করতে বাধ্য। তাই এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তাবে।
-আল বাহরুর রায়েক ৩/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৮
আমাদের এলাকার এক মসজিদের ইমাম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক। তিনি সেখানে...
আমাদের এলাকার এক মসজিদের ইমাম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক। তিনি সেখানে উপযুক্ত বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে পড়ান। জানার বিষয় হল,পর্দার বিধান লঙ্ঘনকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার বিধান কী? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
সহশিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি শরীয়তের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। পর্দার বয়স হয়ে যাওয়ার পর গায়রে মাহরাম মেয়েদেরকে সরাসরি পড়ানো নাজায়েয। এতে পর্দার হুকুম লঙ্ঘনের গুনাহ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহর আশঙ্কা থাকে। নিয়মিত এমন গুনাহর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট মাসআলা-মাসাইল জানেন এবং সুন্নতের অনুসারী পরহেযগার ব্যক্তিই এ পদের যোগ্য।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ঐ সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এ ধরনের ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী। তবে এমন ব্যক্তির পিছনে নামায আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, যথাসম্ভব উপযুক্ত ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করা,প্রকাশ্যে গুনাহয় লিপ্ত কিংবা শরীয়তের বিধানের প্রতি উদাসীন ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ না দেওয়া।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩
আমার খালাম্মা আমার দুধ মা। কয়েকদিন আগে তাঁর বাসায় যাই।...
আমার খালাম্মা আমার দুধ মা। কয়েকদিন আগে তাঁর বাসায় যাই। এক রুমে আমার খালু (যিনি আমার দুধ পিতা) তার ছোট ভাইয়ের সাথে বসা ছিলেন। খালু আমাকে সে রুমে ডাকলে আমি সেখানে তার ভাই থাকার কারণে প্রবেশ করিনি। তখন খালু আমাকে বলেন যে, এ তো তোমার দুধ চাচা। তার সামনে আসা তো তোমার জন্য জায়েয হবে। এ কথা শোনার পরও আমি কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া তার সাথে দেখা করা সমীচীন মনে করিনি। তাই তখন যাইনি। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি আমার দুধ চাচার সামনে যাওয়া বৈধ হবে?
পর্দার ব্যাপারে আপনার দৃঢ় মানসিকতা অত্যন্তপ্রশংসনীয়। মাসআলা যাচাই না করে তার সাথে সাক্ষাৎ না করা ঠিকই হয়েছে। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ খালুর ভাই আপনার দুধ চাচা। আর দুধ-চাচা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার সাথে আপনার দেখা দেওয়া বৈধ। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর একবার আবুল কুআইসের ভাই আফলাহ এসে তার ঘরে ঢুকতে অনুমতি চাইল। আর আবুল কুআইস ছিল হযরত আয়েশা রা.-এর দুধপিতা। হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া কিছুতেই আমি তাকে ঢোকার অনুমতি দেব না। কারণ আমাকে আবুল কুআইস দুধ পান করায়নি। আমাকে দুধ পান করিয়েছে তার স্ত্রী। হযরত আয়েশা রা. বলেন, অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবুল কুআইসের ভাই আফলাহ আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া তাকে অনুমতি দেইনি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার সামনে আসতে পারে। কারণ সে তো তোমার (দুধ) চাচা।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৫; কানযুদ দাকাইক, আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩
জনাব, নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।ক) তোমাদের সন্তানদেরকে সাত...
জনাব, নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর থেকে নামায শিক্ষা দাও এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও’ এটি হাদীস কি না? যদি হাদীসের কথা হয় তবে বিছানা আলাদা করার গুরুত্ব এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।
খ) আমি চার সন্তানের মা। আমার ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত এবং উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তারা নামায পড়ে না। এদেরকে আমি কীভাবে সৎ কাজে আদেশ করব এবং অসৎ কাজে নিষেধ করব?
গ) বর্তমানে এই অশ্লীলতার যুগে শিশুরাও যেখানে অশ্লীল ছবি দেখতে অভ্যস্ত সেখানে ছেলেমেয়েদের বালেগ হওয়ার বয়স কত এবং আলামত কী কী?
সন্তানের বিছানা পৃথক করে দেওয়া সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ-
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع
অর্থ : তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৫
এ হাদীসে সন্তানের বয়স দশ বছর হলে তার শোয়ার বিছানা পৃথক করার হুকুম এসেছে। অবশ্য একটি বর্ণনায় সাত বছর বয়সেই বিছানা পৃথক করে দেওয়ার কথা এসেছে। -মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস ৭৩৪ হাদীস ও ফিকহবিদগণ সুনানে আবু দাউদের উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে সন্তানের বয়স দশ বছর হলে তার শোয়ার বিছানা পৃথক করে দেওয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। এ বয়সে ছেলের জন্য মার সাথে এবং মেয়ের জন্য বাবার সাথে একই বিছানায় শোয়া নিষেধ। অবশ্য বাবার সাথে এক ছেলে এবং মায়ের সাথে শুধু এক মেয়ে একই বিছানায় শোয়ার অবকাশ আছে।
বিছানা পৃথক হওয়ার পদ্ধতি:
বিছানা পৃথক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেক সন্তানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে; বরং একই রুমে ভিন্ন খাট, চকি বা ভিন্ন বিছানার ব্যবস্থা করলেও চলবে। আর যদি তাদের জন্য পৃথক পৃথক বিছানার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় বরং সকলকে এক বিছানাতেই রাত্রিযাপন করতে হয় সেক্ষেত্রে এ বয়সের সন্তানদের মাঝে কোল বালিশ বা এ ধরনের কোনো কিছু দিয়ে হলেও আড়াল রাখা আবশ্যক। আর মেয়েদের বিছানা বাবা ও ছেলেদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু কোল বালিশ রাখা যথেষ্ট নয়। -আদ্দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮২
খ) সন্তানরা দ্বীনী কথা না শুনলেও পিতামাতার কর্তব্য হল তাদেরকে নামায আদায়ের কথা হেকমতের সাথে বলতে থাকা। নামায পড়ার লাভ এবং না পড়লে কী ক্ষতি ও শাস্তি রয়েছে তা শোনানো। এছাড়া শরীয়তের অন্যান্য হুকুম-আহকাম মেনে চলার প্রতিও আদেশ উপদেশ ও উৎসাহ দিতে থাকা। ইনশাআল্লাহ এতে তাদের উপকার হবে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
(তরজমা) আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে। -সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৫
এছাড়া এভাবে বলতে থাকলে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কিছুটা হলেও আদায় হয়। তাই তাদেরকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে থাকুন। পাশাপাশি নসীহতমূলক দ্বীনী কিতাবাদি থেকে পড়ে শোনান। হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের সোহবত গ্রহণের উপদেশ দিন।
মোটকথা, আপনাদের সাধ্যানুযায়ী সব ধরনের চেষ্টা আব্যাহত রাখুন এবং তাদের হেদায়াতের জন্য বেশী বেশী দুআ করতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ এতে কোনো এক সময় তাদের মাঝে দ্বীনি বুঝ সৃষ্টি হবে এবং আমলেও পরিবর্তন আসবে।
প্রকাশ থাকে যে, সন্তানদেরকে নামাযসহ দ্বীনের জরুরি বিষয়াদি, কুরআন মাজীদ ও ঈমান-আকীদার কথা শেখানো, নেক ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা, সুন্নত ও আদব আখলাক শিক্ষা দেওয়া, পিতা-মাতার দায়িত্ব। সন্তানকে দ্বীনিভাবে গড়ে তোলার জন্য শৈশবকাল থেকেই পিতা-মাতাকে যত্নবান হওয়ার প্রতি হাদীসে গুরুত্ব এসেছে। তাই সন্তানের লেখা-পড়ার বয়স হয়ে গেলে তখন থেকেই তাকে কুরআন মাজীদ শিক্ষা দিবে। আর সাত বছর বয়সে নামাযের আদেশ দিবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য জোর তাকীদ দিবে। নামাযের জন্য এ বয়সে প্রয়োজনে হালকা শাস্তিও দেওয়া যাবে। এভাবে শরীয়তের প্রত্যেকটা বিধি-বিধানের প্রতি শৈশব থেকেই যত্নবান হলে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে সন্তান ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ নিয়েই বড় হবে। এক্ষেত্রে তার বিপথগামী হওয়া বা মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। -মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস ৭৭৫৩; ফয়যুল কাদীর ১/২২৬
গ) ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বালেগ হওয়ার বয়সসীমা ও আলামত শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে। কোনো ছেলে বা মেয়ের মধ্যে বালেগ হওয়ার নির্দিষ্ট আলামত পাওয়া গেলে বা নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌঁছলেই তাকে বালেগ গণ্য করা হবে এবং তখন থেকেই শরীয়তের হুকুম-আহকাম তার উপর প্রযোজ্য হবে। ছেলেদের বালেগ হওয়ার আলামত হল: ক) স্বপ্নদোষ হওয়া। খ) বীর্যপাত হওয়া। আর মেয়েদের বালেগ হওয়ার আলামত হল: ক) স্বপ্নদোষ হওয়া। খ) হায়েয (ঋতুস্রাব) আসা। গ) গর্ভধারণ করা। বালেগ হওয়ার উপরোক্ত নির্দিষ্ট আলামত যদি কোনো ছেলে বা মেয়ের মধ্যে পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে উভয়ের বয়স যখন হিজরী বর্ষ হিসাবে পনেরো বছর পূর্ণ হবে তখন প্রত্যেককে বালেগ গণ্য করা হবে এবং পনেরো বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো আলামত পাওয়া না গেলেও সে বালেগ বলেই বিবেচিত হবে।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো ছেলে বা মেয়ের সাথে শরয়ী পর্দা করার হুকুম প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সীমাবদ্ধ নয়। যেমনটি কেউ কেউ ধারণা করে থাকে। বরং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই যখন কোনো ছেলের নারী-পুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে বোঝার বয়স হয়ে যায় তখন থেকেই তার সাথে পর্দা করতে হবে। আর মেয়েদের পর্দার বয়স শুরু হয় তার শরীরে মেয়েলী বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হওয়ার সময় থেকেই। যখন তাকে দেখলে কোনো পুরুষ আকর্ষণ অনুভব করে। পিতা-মাতার কর্তব্য হল এমন বয়সী ছেলেমেয়েদের পর্দার ব্যাপারে সচেতন থাকা।
-আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১
তিন তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলাদের জন্য কি স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত...
তিন তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলাদের জন্য কি স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি? বাবার বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী?
তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। -সূরা তালাক : ১
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না। -সূরা তালাক : ৬
উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।
আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১২/১৪৫; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৯/৩৪৭
কোনো মহিলার জন্য তার দেবর বা ভাসুর কিংবা তার স্বামীর...
কোনো মহিলার জন্য তার দেবর বা ভাসুর কিংবা তার স্বামীর ভগ্নিপতি এবং অন্যান্য গাইরে মাহরাম আত্মীয়স্বজন যেমন স্বামীর মামা, খালু, ফুফা ইত্যাদি এদের সাথে পর্দার অন্তরালে থেকে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা কিংবা খোঁজখবর নেওয়া জায়েয হবে কি?
বা ঐ সকল লোকেরা ঐ মহিলার সাথে কথাবার্তা বলতে গেলে জায়েয হবে কি না? এমনিভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর ঐ সকল আত্মীয়স্বজন যাদের সাথে পর্দা করা ফরয তাদের সাথে পর্দা করে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা বা খোঁজ-খবর নেওয়া জায়েয হবে কি? বা ঐ সকল মহিলারা ঐ পুরুষের সাথে কথা বলতে চাইলে তা জায়েয হবে কি?
পর্দার আড়াল থেকে বেগানা পুরুষের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েয। তবে বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথাবার্তা বলা যাবে না।
তদ্রূপ জরুরতবশত কথা বললেও যদি গুনাহে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রেও তাদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আর প্রয়োজনবশত কথা বলার ক্ষেত্রেও কোমলতা পরিহার করে কথা বলতে হবে।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অমত্মরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। -সূরা আহযাব : ৩২
আর পুরুষের জন্যও বিনা প্রয়োজনে কোনো বেগানা নারীর সাথে কথা বলা নিষেধ।
তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো মহিলার জন্য তার স্বামী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এবং পুরুষের জন্য তার স্ত্রী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা পর্দার আড়ালে থেকে বলতে পারবে।
-সূরা আহযাব : ৩২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৭৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ২৬৯
এক ব্যক্তি সেদিন পর্দার আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, কোনো মহিলার...
এক ব্যক্তি সেদিন পর্দার আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, কোনো মহিলার যখন ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয়ে যায় তখন আর তার সাথে পর্দার বিধান থাকে না। তাই তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয। তার এ কথা কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
বেগানা নারীর সাথে পর্দা করা ফরয। বয়স্কা মহিলার সাথেও পর পুরুষের পর্দা করা জরুরি। তবে অতিশয় বৃদ্ধা মহিলা, যাকে দেখলে পর পুরুষের কোনো আকর্ষণই সৃষ্টি হয় না- এ ধরনের বুড়ি মহিলার ক্ষেত্রে শুধু চেহারার পর্দার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। এ বয়সেও পর পুরুষের সামনে চুল ইত্যাদি পরিপূর্ণ ঢেকে রাখতে হবে। অবশ্য এগুলো ঢেকে শুধু চেহারা খোলা রাখা বৈধ।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) আর বয়স্কা বৃদ্ধা নারীগণ যাদের বিবাহের কোনো আশা নেই তারা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের (অতিরিক্ত) বস্ত্র খুলে রাখে তাহলে তাদের জন্য কোনো দোষ নেই। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। -সূরা নূর : ৬০
উল্লেখ্য, অতিশয় বুড়ি মহিলার সাথে চেহারার পর্দার বিধানের উক্ত শিথিলতা নির্দিষ্ট কোনো বয়সের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বৃদ্ধা হওয়ার পাশাপাশি চেহারার আকর্ষণ এবং গড়ন ভেঙ্গে পড়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
তাই কোনো মহিলার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেলেই তার সাথে পর পুরুষের দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয-এমন কথা ব্যাপকভাবে বলা ঠিক নয়। বরং ৬৫ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও কোনো মহিলার শারীরিক গঠন ও চেহারার আকর্ষণ যদি বাকি থাকে তাহলেও ঐ মহিলার চেহারার পর্দার হুকুম বহাল থাকবে। তার ক্ষেত্রে উক্ত ছাড় প্রযোজ্য হবে না।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৩৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৮৬-৭; তাফসীরে কুরতুবী ১২/২০৩
আমি স্ত্রীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকি। প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা বাসার...
আমি স্ত্রীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকি। প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা বাসার বাইরে থাকি। আমার এক বছরের একটি সন্তান ও চার মাসের একটি সন্তান আছে। মাঝেমাঝে এক খৃষ্টান মহিলা এসে তাদেরকে কোলে নেয় ও আদর-যত্ন করে। এভাবে মহিলাটি প্রায়ই আসে। বাসায় থাকা অবস্থায় মহিলারা সাধারণ কাপড়ে থাকে। জানতে চাই খৃষ্টান মহিলার সাথে আমার স্ত্রীর পর্দা করা কি জরুরি না?
ঐ মহিলার সাথে আপনার স্ত্রীর পর্দা করা জরুরি নয়। তবে তার সামনে শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। শরীরের আবৃত অংশ খুলবে না।
হযরত উমর রা. বলেন, যে নারী আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বজাতি ছাড়া অন্য কারো (বিধর্মী মহিলা) সম্মুখে শরীরের আবৃত অংশ প্রকাশ করা জায়েয নয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৫৫; সুনানে সায়ীদ ইবনে মানসূর-এর বরাতে।)
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭১
এক মেযের সাথে আমার গোপনে পরিচয় হয়। স্থায়ী সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার...
এক মেযের সাথে আমার গোপনে পরিচয় হয়। স্থায়ী সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আমার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবসহ একটি রেস্টুরেন্টে একত্রিত হই। আমার এক বন্ধু কাজী অফিসের পিয়ন হিসেবে একজনকে নিয়ে আসে। সে কাজী অফিস থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করার কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে আসে। এছাড়াও সরকারি দলিল-স্ট্যাম্পে একটি বিবাহ হলফনামা নিয়ে আসে। সেখানে আমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নিমিত্তে স্বাক্ষর করি এবং নিকাহনামা রেজিস্টারেও উভয়ে স্বাক্ষর করি। সেখানে চারজন পুরুষও উপস্থিত ছিল। এছাড়া বিবাহ পড়ানোর উপযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা কাজী অফিসের কেউ উপস্থিত ছিল না। উক্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ১,০০,০০১ টাকা দেনমোহরের শর্তে আমরা বিবাহ সম্পন্ন করি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কেউই ইজাব-কবুল বলিনি। পিয়ন আমাদের বললেন, আপনারা দুজন স্বামী স্ত্রী। এরপর আমরা যার যার মতো চলে আসি।
বিয়ের ২-৩ মাসের পর থেকে আমাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। ৩-৪ মাস পর এক পুরুষ শিক্ষক নিয়ে পর্দার ব্যাপারে আমার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আমি রাগ করে একপর্যায়ে বলেছিলাম, তুমি যদি কালকে, পরশু এবং এর পরের দিন তার কাছে পড় তাহলে তুমি যথাক্রমে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। পরে জানতে পারি, সে তিন দিনই পড়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, ক) আমাদের বিবাহ কি সঠিক হয়েছিল? খ) আমাদের মধ্যে তালাক হয়েছিল কি? গ) এখন আমি পারিবারিকভাবে ওকে ঘরে তুলতে বা বিয়ে করতে চাই। এজন্য আমার কী করা উচিত বা আদৌ কি তা সম্ভব?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুসারে আপনাদের মাঝে ঐ বিবাহই সংঘটিত হয়নি। কারণ প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, আপনাদের মধ্যে বিবাহের ইজাব-কবুল হয়নি। মৌখিক ইজাব-কবুল না হলে শুধু লেখালেখির দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের হলফনামা ও নিকাহনামাটি অবাস্তব। আর আপনাদের মাঝে যেহেতু বিবাহই হয়নি তাই পরবর্তীতে তালাকও পতিত হয়নি। আর আপনাদের পরস্পর এতদিন যাবত দেখা-সাক্ষাত ও মেলামেশা এবং ফোনে যোগাযোগ রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম হয়েছে। আল্লাহ তাআলার দরবারে উভয়কে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। সামনে একত্রে সুষ্ঠুভাবে ঘরসংসার করতে চাইলে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ৩/১০২; রদ্দুল মুহতার ৩/, ২২৭, ১২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩
ক) আমার এক বোন আছে। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে।...
ক) আমার এক বোন আছে। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে। আমার আপন মা মারা গেছেন। এরপর আমার বাবা আবার বিয়ে করেছেন। জানতে চাই, আমার বোনের স্বামী আমার সৎ মার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি না?
খ) আমার বোন আমার নানীর আপন ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি না? আর আমার বউ কি নানীর ভাইয়ের সাথে দেখা দিতে পারবে?
ক) না, আপনার বোনের স্বামী আপনার সৎ মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারবে না। তার সাথে পর্দা করা জরুরি।-কিফায়াতুল মুফতী ৫/৩৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/২৩৭
খ) আপনার বোন নানীর ভাইয়ের মাহরাম। তাদের দেখা সাক্ষাৎ করা জায়েয। কিন্তু আপনার স্ত্রী আপনার নানীর ভাইয়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবে না।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩
আমাদের গ্রামে এই প্রথা চালু আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি...
আমাদের গ্রামে এই প্রথা চালু আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করে বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বিচার করা হয়। এবং বিচারে তাদের জরিমানা করা হয়। এবং সেই টাকা বিচারকেরা বণ্টন করে নেয়।
আর ব্যাভিচারী উভয়ে যদি অবিবাহিত হয় তাদের বিয়ে করিয়ে দেওয়া হয়। আর বিবাহিত হলে শুধু ছেলের জরিমানা হয়।
আমার মন চায়, এই টাকাগুলো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হোক। এই সব কাজের কোনটা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
চুরি, ব্যভিচার এ ধরনের কোনো অপরাধের বিচার হিসাবে টাকা বা কোনো কিছু জরিমানা করা বৈধ নয়। দ্বিতীয়তঃ অভিযুক্তদের থেকে জরিমানা আদায় করে বিচারকদের তা নিয়ে নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। জরিমানার এ টাকা জনকল্যাণমূলক কাজেও লাগানো যাবে না। বরং এ টাকা মালিককেই ফেরত দিতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, চুরি ও ব্যাভিচারের শাস্তি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। সালিশ কর্তৃক জরিমানা আদায় করা বা তাদের পরস্পরে বিয়ে করিয়ে দেওয়া এগুলো উক্ত অপরাধের শাস্তি নয়। এছাড়া শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগের অধিকার একমাত্র আদালত বা সরকারেরই। কোনো সালিশ বা ব্যক্তি তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না। তবে চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলে চুরিকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া বা এর ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সালিশের মাধ্যমে বাধ্য করা জায়েয। এ বাবদ যা পাওয়া যাবে তা মালিককেই ফেরত দিতে হবে। আর চুরি বা ব্যাভিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তওবা ও পর্দা-পুশিদার সাথে থাকা ইত্যাদি ব্যাপারে সালিশগণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও তাদের অভিভাবকদেরকে সতর্ক করতে পারবে। সমাজে এহেন কাজের পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে গণসচেতনা গড়ে তুলবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৬১; আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭
আমার নানা বা দাদার আপন ভাই তথা চাচাত নানা-দাদার সাথে...
আমার নানা বা দাদার আপন ভাই তথা চাচাত নানা-দাদার সাথে আমার স্ত্রী দেখা দিতে পারবে কি না?
আপনার দাদা বা নানার ভাই আপনার স্ত্রীর মাহরাম নয়। সুতরাং তাদের সাথে আপনার স্ত্রীর পর্দা করা জরুরি, দেখা-সাক্ষাৎ জায়েয নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; তুহফাতুল ফুকাহা ২/১২৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৩৩৩
মেয়েদের বিয়ের প্রকৃত বয়স কী?
মেয়েদের বিয়ের প্রকৃত বয়স কী?
ছেলে- মেয়ে কারোরই বিয়ের বয়স শরীয়তে নির্ধারিত নেই। তবে ছেলে- মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরই তাদের বিবাহ দেওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছে, কোনো ব্যক্তির সন্তান হলে পিতার দায়িত্ব হল তার সুন্দর নাম রাখা, সঠিক আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া, অতঃপর সে যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তাকে বিবাহ দেওয়া।-সুনানে বায়হাকী ৮৬৬৬
তাই পিতা-মাতার দায়িত্ব হল পূর্ব থেকেই নিজ সন্তানদেরকে বিশেষত কন্যাকে যথাযথ আদব-আখলাক ও দ্বীনী শিক্ষা প্রদান করা। পাশাপাশি বিবাহ পরবর্তী সাংসারিক জীবন এবং এর দায়-দায়িত্বের ব্যাপারে তাদেরকে সর্বদিক দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলা। অতঃপর উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেলে বিবাহ দিয়ে দেওয়া। উপযুক্ত পাত্র পাওয়া গেলে বিলম্ব করা ঠিক নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে, তোমাদের কাছে যখন এমন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীনদারী ও আখলাক সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট তবে নিজ কন্যাকে তার কাছে বিবাহ দাও। যদি তা না কর তবে সেটা যমীনের বুকে বড় ফিতনা ও ফাসাদের কারণ হবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১০৮৫
প্রকাশ থাকে যে, যেমনিভাবে মেয়েকে যোগ্য পাত্রের নিকট পাত্রস্থ করা পিতা-মাতা বা অভিভাবকের দায়িত্ব তেমনি মেয়েকে শরয়ী পর্দায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আমার ফুফাতো বোন এক বছর বয়সে একদিন আমার মায়ের দুধ...
আমার ফুফাতো বোন এক বছর বয়সে একদিন আমার মায়ের দুধ পান করে। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার স্বামী আমার আম্মার সাথে সাক্ষাত করতে আসে। কিন্তু আম্মা তার সাথে দেখা দেননি। প্রশ্ন হল, তার সাথে আমার আম্মার পর্দা করা জরুরি কি না?
দুধ মেয়ের স্বামীর সাথে দেখা দেয়া জায়েয। তাই আপনার আম্মা আপনার ঐ ফুফাতো বোনের স্বামীর সাথে দেখা দিতে পারবেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৯; আলমুফাসসাল ৬/২৪২
খালা শাশুড়ির সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয আছে কি না?
খালা শাশুড়ির সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয আছে কি না?
খালা শাশুড়ি মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা জরুরি। দেখা-সাক্ষাত করা জায়েয় নয়।
-সহীহ বুখারী ২/৭৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৯; ফাতহুল কাদীর ৩/১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৮
আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। তিনি নির্দিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কারো...
আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। তিনি নির্দিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কারো সাথে ফোনে কথা বলতে ও অপরিচিত নাম্বারের কোনো ফোন রিসিভ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তা আমি কয়েকবার করে ফেলেছি। তিনি আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি অস্বীকার করি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস না করায় একপর্যায়ে বলেছি, আপনি বিশ্বাস করুন, আল্লাহর কসম, আমি এরূপ করিনি।
এখন এ মিথ্যা কসমের পাপ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাব? কসমের কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি কী জানিয়ে বাধিত করবেন।
মিথ্যা বলা কবীরা গুনাহ। আর আল্লাহর পবিত্র নাম নিয়ে মিথ্যা কসম করা আরো জঘণ্য অপরাধ। সহীহ বুখারীতে ইবনে উমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতাপিতার কথা অমান্য করা, হত্যা করা ও মিথ্যা কসম করা কবীরা গুনাহ।-সহীহ বুখারী ২/৯৮৭
এছাড়া শরীয়তসম্মত বিষয়ে স্বামীর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাও স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি সর্বাবস্থায় তার অনুগত থাকা এবং পর্দার বিধান মেনে চলা স্ত্রীর অবশ্যকর্তব্য। প্রশ্নোক্ত মিথ্যা কসমের জন্য আপনাকে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে। অবশ্য এ জন্য কোনো কাফফারা দেওয়া লাগবে না।
-সূরা বাকারা (২) : ২২৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৫৪; সহীহ বুখারী ২/৯৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৪৫১; মাবসূত, সারাখসী ৮/১২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৭০৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৪৮
চাচী-মামীর সাথে কি পর্দা করা জরুরি? কোন কোন মহিলা আত্মীয়ের...
চাচী-মামীর সাথে কি পর্দা করা জরুরি? কোন কোন মহিলা আত্মীয়ের সাথে দেখা করা বৈধ আর কাদের সাথে দেখা করা বৈধ নয় বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
হ্যাঁ, চাচী-মামীর সাথে পর্দা করা জরুরি। যে সকল নারীর সাথে দেখা সাক্ষাত করা বৈধ তাদের তালিকা নিম্নে দেওয়া হল -
১. আপন মা এবং বিমাতা বা সৎমা (পিতার স্ত্রী)
২. নানী, নানীর মা এভাবে উর্ধ্বতন আত্মীয়গণ
৩. দাদী, দাদীর মা এভাবে তদুর্ধ্ব মাগণ
৪. কন্যা, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তদ্রূপ পোত্রী, প্রপোত্রী এভাবে তদনিম্ন সকল
স্তরের কন্যা।
৫. ভগ্নি (সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৬. ফুফু (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৭. খালা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৮. ভ্রাতুষ্পুত্রী (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়) অনুরূপ তাদের কন্যা ও তদনিম্ন কন্যাগণ।
৯. বোনের কন্যা (ভাগ্নি) আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় অনুরূপ তাদের কন্যা ও তদনিম্ন কন্যাবর্গ
১০. দুধ মা, দুধ বোন
১১. স্ত্রীর মাতৃবর্গ তথা স্ত্রীর মা (শাশুড়ি), নানী, তদুর্ধ্ব মাতাসমূহ। অনুরূপ স্ত্রীর দাদী ও তদুর্ধ্ব মাতাসমূহ
১২. স্ত্রীর কন্যা (পূর্বের স্বামী থেকে), কন্যার কন্যা ও তদনিম্ন সকল কন্যা
১৩. পুত্রের স্ত্রী, পৌত্রের স্ত্রী এবং তদনিম্ন স্তরের সকল পৌত্রের স্ত্রীগণ। অনুরূপ দৌহিত্রের স্ত্রী এবং তদনিম্ন
স্তরের দৌহিত্রের স্ত্রীবর্গ।
উপরোক্ত মহিলা আত্মীয়াগণ ছাড়া অন্যান্য মহিলা আত্মীয়া-অনাত্মীয়ার সাথে পর্দা করা জরুরি। যেমন চাচী, মামী, চাচাত, মামাত ও ফুফাত বোন ভাতিজার বৌ, ভাগিনার বৌ, ভাবী, শালিকা ইত্যাদি।
-সূরা নিসা (৪) : ২৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৩২, ১২৯; মাআরিফুল কুরআন ২/৩৫৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮
সুমাইয়া খালেদের মায়ের দুধ পান করে। সুমাইয়ার মা নাবীলাও জীবিত...
সুমাইয়া খালেদের মায়ের দুধ পান করে। সুমাইয়ার মা নাবীলাও জীবিত আছেন। জানার বিষয় হল, খালেদ সুমাইয়ার মা নাবীলার সাথে দেখা করতে পারবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খালেদ তার দুধ বোনের মায়ের সাথে দেখা করতে পারবে না। সুতরাং তার সাথে পর্দা করা আবশ্যক। কেননা দুধ বোনের মা তার মাহরাম নয়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৪
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ইমামতি ছাড়াও এলাকার সিনিয়র মাদরাসায় (আলিয়া)...
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ইমামতি ছাড়াও এলাকার সিনিয়র মাদরাসায় (আলিয়া) শিক্ষকতা করেন। ঐ মাদরাসায় সহশিক্ষা চালু আছে। ছেলেমেয়ে একত্রে ক্লাস করে। (তবে মেয়েরা বোরকা বা নেকাব পরে থাকে।)
আবার কিছু মুসল্লী তাকে অপছন্দ করেন। এ অবস্থায় ঐ ইমামের পিছনে ইক্তিদা করাতে শরীয়তে কোনো সমস্যা আছে কি না? থাকলে দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
মূল উত্তরের আগে ভূমিকাস্বরূপ কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।
১. সহশিক্ষা তথা নারী-পুরুষের যৌথ শিক্ষা-ব্যবস্থা ইসলাম সমর্থিত নয়। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। একসময় স্কুল-কলেজেও আলাদা ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে পাশ্চাত্যের অনুকরণে সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আলিয়া পদ্ধতির দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী।
মেয়েরা বোরকা পরা থাকলেও সহশিক্ষা ব্যবস্থা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পাঠশালায় একজন ছাত্রী শুধু নীরব শ্রোতা নয়; তাকে যেমন শিক্ষকের কথা শুনতে হয়, তেমনি পড়া শুনাতে হয় এবং প্রয়োজনে প্রশ্নও করতে হয়। এমনিভাবে তাকে লেখা দেখাতে হয়, বাড়ির কাজ দেখাতে হয়। এসব কিছুই হয়ে থাকে তার সহপাঠি বেগানা ছাত্রদের কাছে বসে এবং বেগানা পুরুষ শিক্ষকের সাথে সামনাসামনি ও সরাসরি। বলাবাহুল্য যে, এ সকল কর্মকান্ড কুরআন মজীদের মৌলিক নির্দেশনা পরিপন্থী। সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
২. শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে এর গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এক হাদীসে ইরশাদ করেছেন, ইমাম মুসল্লীদের নামাযের যিম্মাদার। (জামে তিরমিযী ১/২৯)
অন্য হাদীসে আছে, যদি তোমরা চাও, তোমাদের নামায কবুল হোক তাহলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হল তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি। (মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭)
তাই ফকীহগণ বলেন, ইমামকে হতে হবে সহীহ আকীদাসম্পন্ন, খোদাভীরু-পরহেযগার, সুন্নতের অনুসারী, বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী আলেম।
৪. মসজিদকমিটি বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হল, দ্বীনদার-পরহেযগার যোগ্য আলেমকে ইমাম বানানো। সম্পূর্ণ সততা ও নিষ্ঠার সাথে এই কর্তব্য পালন করা তাদের উপর ওয়াজিব। যদি তারা এতে অবহেলা করে তাহলে গুনাহগার হবে।
উপরোক্ত ভূমিকার পর এবার মূল জবাব এই-
যেহেতু সহশিক্ষা ইসলামে জায়েয নয় এবং একজন ইমামের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অর্থ হল শরীয়ত পরিপন্থী কাজে সহযোগিতা করা, যা কোনো মতেই কাম্য হতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, ঐ ইমামকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা। যদি তিনি এরপরও তা না ছাড়েন তাহলে একজন দ্বীনদার পরহেযগার ও উপরোক্ত গুণাবলি সম্পন্ন আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিবে।
-সূরা আহযাব : ৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৯; জামে তিরমিযী ১/২৯; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৭; ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; ইলাউস সুনান ৪/৩৫২; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬০৩; মারাকিল ফালাহ ১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩
আমাদের মসজিদটি প্রথমে ছোট্ট পরিসরে ছিল। এরপর বেশ কিছুদিন আগে...
আমাদের মসজিদটি প্রথমে ছোট্ট পরিসরে ছিল। এরপর বেশ কিছুদিন আগে তিন তলা করা হয়েছে। তিন তলায় ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমের কামরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কামরাগুলো বানানোর ব্যাপারে মসজিদ ভবন নির্মাণের সময়ই সিদ্ধান্ত ছিল। উল্লেখ্য কামরা বরাবর কখনো মসজিদ ছিল না। পুকুর ছিল। প্রশ্ন হল, উল্লেখিত কামরায় ইমামের জন্য সপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা যাবে কি না?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মসজিদ ভবন নির্মাণের সময়ই তৃতীয় তলার ঐ স্থানে যেহেতু ইমাম-মুয়াজ্জিনের কামরা বানানোর নিয়ত ছিল তাই ঐ অংশগুলো মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সুতরাং সেখানে ইমাম-মুয়াজ্জিনের একাকী বা সপরিবারে বসবাস করা বৈধ হবে। তবে সপরিবারে থাকলে পূর্ণ পর্দা-পুশিদার সাথে থাকা, মেয়েলি কণ্ঠ যেন মসজিদ থেকে শোনা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা সর্বোপরি মসজিদের আদাবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/৮৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫৩৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮; আলমুগনী ৮/২২৩; ফাতাওয়া উসমানী ২/৫২৬
আমরা লক্ষ্য করে আসছি যে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং পল্লবী...
আমরা লক্ষ্য করে আসছি যে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং পল্লবী এলাকার প্রায় শরয়ী মসজিদে মকতবের রেকর্ড করা হচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকগণ বিনিময় নিয়েই ছেলে-মেয়েদেরকে মসজিদে বসে ধর্মীয় শিক্ষা দিচ্ছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা সবকের সময়ের ভিতর মসজিদের পাখা, বাতি ইত্যাদি জিনিসপত্রও ব্যবহার করছে। শোরগোল তো আছেই। এভাবে দীর্ঘকাল ধরে মকতব চললেও স্বতন্ত্রভাবে মকতবের জন্য কোনো ঘর তৈরির ভাবনা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের মধ্যে নেই বললেই চলে। বলতে গেলে এভাবে মসজিদগুলো সাময়িকভাবে নয়; বরং এক একটা অনুমোদিত স্থায়ী মাদরাসায় পরিণত হয়েছে। অবশ্য মুসলমানদের ছেলেমেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাবোধ প্রত্যেকের ভিতর থাকা উচিত। সেটা কীভাবে কোথায় হবে সেটাও নিরুপণ করে নেওয়া উচিত।
বর্ণিত বিষয় আমাদের জিজ্ঞাস্য, এভাবে বিনিময় নিয়ে মসজিদের ভিতর কিংবা বারান্দায় বসে ছেলেমেয়েদের পড়ানো বৈধ কি না? যদি বৈধ না হয় তবে বৈধতার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত জানালে উপকৃত হব।
প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। প্রত্যেক এলাকায় এ উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থাকা আবশ্যক। যেখানে সহীহশুদ্ধভাবে দ্বীনের জরুরি বিষয় শিক্ষা দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে সেভাবে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। প্রত্যেক মসজিদের পাশে অথবা মহল্লায় মহল্লায় দ্বীনী মকতব চালু করা এজন্যই অপরিহার্য। আর সমাজের লোকজন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবলে তা কঠিন ছিল না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে অদ্যাবধি অনেক এলাকাতে এমন কোনো পৃথক ব্যবস্থা পড়ে উঠেনি, যার দ্বারা ঐ ফরয দায়িত্বটুকু পুরো হবে। এসব কারণেই প্রয়োজনের তাগিদেই মসজিদভিত্তিক মকতবগুলো চালু হয়ে গেছে। এছাড়া দ্বীনী তালীম মসজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে দ্বীনী তালীমের গোড়াপত্তন করেছেন।
অবশ্য মসজিদে বেতন ও পারিশ্রমিক নিয়ে দ্বীনী শিক্ষা চালু করতে ফিকহবিদগণ নিষেধ করেছেন। অতএব স্থায়ীভাবে মসজিদে বেতনভিত্তিক দ্বীনী শিক্ষা চালু করা যাবে না। হ্যাঁ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যতদিন প্রত্যেক এলাকায় দ্বীনী শিক্ষার জন্য পৃথক ব্যবস্থা না হবে ততদিন অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে মসজিদে তা করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, ফকীহগণ জরুরতের সময় এবং অস্থায়ীভাবে মসজিদে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দ্বীনী তালীমকে বৈধ বলেছেন।
তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল :
ক) উস্তাদ, তালিবে ইলম সকলেই মসজিদের আদাবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে। আদাব ক্ষুণ্ন হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবে।
খ) এলাকার সকল মুসলমানদের কর্তব্য হল, দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন পূরণ হয় এমন পৃথক মকতব মাদরাসা নিজ নিজ এলাকায় গড়ে তুলবে এবং মসজিদের মকতব সেখানে স্থানান্তর করবে।
গ) একেবারে অবুঝ শিশু, যারা মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারবে না তাদেরকে আসার সুযোগ দিবে না। তেমনিভাবে পর্দার বয়স হয়ে যায় এমন মেয়েদেরকেও মসজিদে আসতে দিবে না। তাদের জন্য নিজ বাড়িতে পর্দার সাথে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
ঘ) যেহেতু মসজিদভিত্তিক মকতব আমাদের দেশের বহুদিনের প্রচলন। এতে দাতা ও মুসল্লীদেরই সন্তানরা শিক্ষাগ্রহণ করে। তাই এই মকতবের জন্য মসজিদের চাটাই, বিদ্যুৎ ইত্যাদির প্রয়োজনীয় ব্যবহার দাতাদের মৌন সম্মতির দৃষ্টিতে বৈধ গণ্য হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১০, ৪/৪৫৭; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫; আননাহরুল ফায়েক ১/২৯০; রদ্দুল মুহতার ৬/৪২৮
গত কয়েক বছর পূর্বে আমরা এলাকর মহিলাদের জন্য তালীমের ব্যবস্থা...
গত কয়েক বছর পূর্বে আমরা এলাকর মহিলাদের জন্য তালীমের ব্যবস্থা করেছি। একটি আলাদা ঘরে পূর্ণ পর্দার সাথে সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও সোমবার বাদ যোহর দ্বীনি বিষয় ও মাসআলা মাসায়েল আলোচনা করা হয়। একজন মহিলা মজলিসটি পরিচালনা করেন। এতে আশপাশের মহিলারাই অংশগ্রহণ করেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূরবর্তী এলাকার স্বল্প সংখ্যক মহিলাও অভিভাবকের অনুমতিক্রমে মাহরাম ছাড়া এসে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে মাহরাম ছাড়া আসাকে কেন্দ্র করে এলাকার কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছে।
অতএব হুজুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল :
প্রশ্ন : ক) পার্শ্ববর্তী ও পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে পর্দার সাথে মহিলাদের মাহরাম ছাড়া আসাটা কেমন?
প্রশ্ন : খ) পর্দা রক্ষা করে কোনো মহিলা নিজ বাড়িতে তালীমের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না?
প্রশ্ন : গ) মহিলাদের কাছ থেকে কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাহায্য গ্রহণ করা যাবে কি না?
ক) মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত নিজ ঘরেই হওয়া চাই। তারা মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, দাদা, আপন ভাই, চাচা, মামার কাছে দ্বীন শিক্ষা করবে। হ্যাঁ, মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম না পাওয়া গেলে নিজ মহল্লার কোনো দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার মহিলার নিকট গিয়ে দ্বীন শিক্ষা করবে। তবে শর্ত হল, স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে পূর্ণ শরয়ী পর্দার সাথে আসা যাওয়া করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহল্লার মহিলারা উক্ত তালীমের মজলিসে আসতে পারেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে এভাবে তালীমে আসা সমীচীন নয়; তারা নিজেদের মহল্লায় তালীমের ব্যবস্থা করবেন এবং ঘরে বসে দ্বীনী কিতাবপত্র পাঠ করবেন।
সূরা আহযাব : ৩৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬০
খ) প্রত্যেক নর-নারীর প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষা করা ফরয। আর পূর্ণ পর্দার সাথে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা দ্বারা দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রশংসণীয় ও ছওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদীস শরীফে আছে, একদিন মহিলা সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, পুরুষদের কারণে আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। তাই আপনি আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন নির্ধারণ করুন। তিনি তাদের জন্য বিশেষভাবে এক দিনের ওয়াদা করলেন এবং বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুকের বাড়িতে একত্র হও। এরপর তিনি সেদিন তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ করলেন।
সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৩
গ) হ্যাঁ, মহিলারা দান করলে তা গ্রহণ করা যাবে। তবে স্বামীর সম্পদ থেকে তার অনুমতি ছাড়া দান করলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য কেবল ঐ পরিমাণ দান করা জায়েয যা সাধারণত স্ত্রী হিসাবে স্বামীর সম্পদ থেকে দেওয়ার অনুমতি থাকে। সাধারণ নিয়ম ও পরিমাণের চেয়ে বেশি দেওয়া বৈধ হবে না।
সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৪; আহকামুন নিসা ৫/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/৯৩; শরহু মাআনিল আছার ২/৩৭৪; ইলাউস সুনান ১৬/১৩৩
ক) আমি শৈশবে গ্রামের বাড়িতে কাচারি ঘরের হুজুরের কাছে কুরআন...
ক) আমি শৈশবে গ্রামের বাড়িতে কাচারি ঘরের হুজুরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত শিখেছিলাম। অতঃপর গত চার-পাঁচ বছর ঢাকায় সহীহ নূরানী পদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়ে উক্ত পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত করতে শিখি। এরপর হতে নামাযে ও নামাযের বাইরে নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত করি। আমি বুঝতে পারছি যে, পূর্বের পদ্ধতি অশুদ্ধ ছিল। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, পূর্বের পদ্ধতিতে আমি যে তেলাওয়াত করেছি সে বিষয়ে আমার কী করণীয়? সেভাবে পড়ার কারণে আমার নামায কি নষ্ট হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
খ) আলহামদুলিল্লাহ, আমি যথাসাধ্য পর্দার বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করি। কিন্তু গ্রামে গেলে চাচাতো বা মামাতে ভাইরা (বিশেষত যারা বয়সে ছোট) খোঁজ খবর নিতে আসে এবং কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে। আবার কখনো কখনো (বছরে হয়তো ২/১বার) তাদের কেউ কেউ ঢাকায় বেড়াতে আসে। তখনও একই অবস্থার উদ্ভব হয়। এ সকল অবস্থায় তাদের সাথে দেখা না করলে হয়তো আত্মীয়তার সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঘরে নামাযের সময় যেভাবে সতর ঢাকি সেভাবে কাপড় পরা অবস্থায় তাদের সাথে দেখা করা জায়েয কি না জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ক) নামায সহীহ এবং কবুল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জরুরি। সুতরাং অন্তত ফরয কিরাত পরিমাণ শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা ফরয। তবে যে বিশুদ্ধ কিরাত জানে না তার জন্য সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার আগ পর্যন্ত হুকুম এই যে, সে যতটুকু জানে তা দিয়েই নামায পড়তে থাকবে। আর যথাসাধ্য দ্রুত শুদ্ধ তিলাওয়াত শিখে নিবে। এক্ষেত্রে পূর্ণ শুদ্ধ হওয়া পর্যন্ত যত নামায পড়া হয়েছে তা যেহেতু তখনকার সামর্থ অনুযায়ী পড়া হয়েছে তাই তা আদায় হয়ে গিয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। পরবর্তীতে কিরাত শুদ্ধ হওয়ার পর সেগুলোর কাযা করা জরুরি নয়। তবে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। অন্যথায় গুনাহ হবে। অতএব আপনার পূর্বের নামাযগুলো আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬২
খ) চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। বিনা ওজরে বেগানা পুরুষের সামনে তা খোলা নিষেধ। আর আপনি যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের লক্ষে তার সন'ষ্টির উদ্দেশ্যেই পর্দা করছেন তাই বিষয়টি তাদেরকে বুঝিয়ে বললে আশা করি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হওয়ার মতো সমস্যা হবে না। এছাড়া প্রয়োজনে পর্দার আড়ালে থেকে (কোমলতা বর্জন করে) কুশলাদি বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবেন। আল্লাহর উপর ভরসা করে পরিপূর্ণ পর্দার চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নুসরত পাবেন।
সূরা আহযাব :৩২, ৩৩ ও ৫৯; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/৩৭২; আদিল্লাতুল হিজাব পৃ. ২৪৪; আহকামুন নযর পৃ. ২৬০
বয়স্কা মহিলাদের সাথে পর্দার হুকুম ৷
-সূরা নূর : ৬০
এছাড়া সবধরনের বেগানা নারীর সাথে পর্দা করা ফরয। যুবতী হোক বয়স্কা হোক৷ অবশ্য বয়স্কা মহিলাদের যদি শারীরিক গঠন ও চেহারার আকর্ষণ বাকি থাকে তাহলে তাদের সাথে পর পুরুষের পর্দা করা জরুরি।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৩৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৮৬-৭; তাফসীরে কুরতুবী ১২/২০৩৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় নাক, কান, চোখে ড্রপ ব্যবহার করা৷
আধুনিক ডাক্তারদের আধুনিক উন্নতমানের থিউরী অনুযায়ী কানের ভিতরে এমন কোনো রাস্তা নেই যা দিয়ে সরাসরি গলায় কোনো কিছু পৌছে ৷ অতএব কানে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে রোযা ভাঙ্গবে না ৷ অবশ্য কানের পর্দা ফাটা থাকলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ৷
আর নাকে ড্রপ ব্যবহার করলে যেহেতু সরাসরি গলায় পৌছে তাই রোযা অবস্থায় নাকে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না ৷ এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে ৷
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; আল ইসলাম ওয়াত্তীব্বুল হাদীস, পৃ: ৩২২৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
মহিলাদের হজ্বের জন্য পাসপোর্টের ছবি তোলা ও পর্দা লঙ্গনের আশংকায় বদলি হজ্ব করানো ৷
আর হজ্বের জন্য ছবি এবং ইমিগ্রেশনে চেক-আপ ইত্যাদি সব কিছুই হজ্বের ব্যবস্থাপনাগত বিষয়। হজ্ব কারি ব্যক্তির এসব বিষয়ে কিছুই করার থাকে না ৷ বরং সে আইনগতভাবেই এসব কাজ করতে বাধ্য। তাই এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তাবে। তার কোন গুনাহ হবে না ৷
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৮; আল বাহরুর রায়েক ৩/৬০ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
মহিলাদের সম্মিলিত উচ্চস্বরে যিকির করা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে কয়েকজন মিলে সালাতুত তাসবীহ পড়া ৷
(১) আমার মহল্লায় কিছু মহিলা যিকির মাহফিল করে ৷ তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে উচু আওয়াজে যিকির করে ৷ এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত ?
(২) কিছু মহিলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কয়েকজন মিলে সালাতুত তাসবীহ নামায পড়ে ৷ এটা কি বৈধ?
-সূরাহ নূর, ৩০,৩১; মিশকাত শরীফ, ১৯৭; ফাতাওয়া আলমগীরী, ৫ / ৩২৭৷
(২) ফেতনার আশংকায় মহিলাদের ফরয নামায আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয নেই ৷ আর
সালাতুত তাসবীহ হল, নফল নামায। সুতরাং মহিলাদের
জন্য সালাতুত তাসবীহ তথা নফল নামায বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদায় করা কোন ভাবেই বৈধ হবে না ৷ তাই তাদের জন্য কর্তব্য হলো সালাতুত তসবীহ নামায পড়তে হলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরে একাকী আদায় করবে ৷
-ফাতহুল ক্বদীর- ১/৩৬৩; বাহরুর রায়েক- ১/৬১৫; মারাক্বিউল ফালাহ- ৩৮৬ আদ্দুররুল মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার- ১/৫৬৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
সৎ শাশুড়ির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করা ৷
জায়েয হবে কিনা ?
-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯ আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
মহিলা মাদ্রাসায় আবাসিক থেকে পড়ালেখা করা৷
কেননা নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেছেন: মহিলা হলো গোপনীয় বস্তু, যখন সে বাহিরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি দেয়; যেন তাকে এবং তার দ্বারা অন্যদেরকে বিপথগামী করতে পারে।
মিরকাত 6/282৷
এজন্য ফুকাহাগন মহিলাদের ঘর হতে বের হতে নিষেধ করেছেন। তারা দ্বীনের প্রয়োজনীয় ইলম যেমন: নামায,রোজা ও অন্যান্য মাস’য়ালা মাহরামের কাছ থেকে জেনে নিবে।
তবে ঘরে শিখানোর মত কোন মাহরাম না থাকলে; যেমন,আজকাল অধিকাংশ অভিভাবকেরই এ অবস্থা যে, তারা তাদের পরিবাস্থদের দ্বীন শিখাবে তো দুরের কথা তারাই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে তাদের পরিবারও দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞই থাকে। এমতাবস্থায় জরুরী মাস’য়ালা শিখার জন্য প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়েরা পূর্ণ শরয়ী পর্দা করে কোন মাদ্রাসায় আবাসিক থেকে পড়ালেখা করতে পারবে। তবে নিম্মোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৷ যাতায়াতের সময় অভিভাবক সাথে থাকা।
২৷ আসা-যাওয়ার সময় সুগন্ধি যুক্ত আতর, সেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
৩৷ যেখানে পড়া-শুনা করবে সেখানে পরিপূর্ণ পর্দার
ব্যবস্থা থাকা।
৪৷ বিনা প্রয়োজনে মেয়েদের আওয়াজ পুরুষরা না শুনা।
সূরা আহযাব: ৩৩, তাফসীরে রুহুল মা'আনী ২২/২৪৮; সহীহ বোখারী ১/১৪৭; মেরকাত শরহে মেশকাত ৬/২৮২; আদ দুররুল মুখতার ৩/৩২৪; আল বাহরুর রায়েক ৪/৩৩১৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
মহিলাদের জন্য পুরুষ বক্তাদের চেহারা দেখে বয়ান শোনা৷
নয়।
কিন্তু নারীদের বেলায় দুই সূরত। যথা-
১
আকৃষ্ট হবার শংকা থাকা অবস্থায় তাকানো।
২
আকৃষ্ট হবার শংকা না হওয়া অবস্থায় তাকানো। এক্ষেত্রে প্রথম সূরতে নারীদের জন্য পর পুরুষের দিকে তাকানো জায়েজ নয়। তবে দ্বিতীয় সূরতে জায়েজ আছে। যদিও উত্তম নয়। আর বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিলের মত গুরুত্বপূর্ণ ও ভাবগাম্ভির্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারীদের বক্তার দিকে তাকিয়ে বয়ান শোনা কিছুতেই শোভন নয়। আকৃষ্ট হবার শংকা না থাকলেও মাহফিলগুলোতে প্রজেক্টর ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি দেখানো উচিত নয়। আর যদি আকৃষ্ট হবার শংকা থাকে, তাহলে এভাবে দেখে বয়ান শোনা কিছুতেই জায়েজ হবে না। [কিতাবুল ফাতওয়া-৬/১০১] আম্মাজান আয়শা রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আড়ালে থেকে হাবশীদের খেলা দেখেছিলেন। বুখারী, হাদীস নং-৫১৯০৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
প্রথম সন্তান হওয়ার ভিন্ন ফযীলত৷
নয়।
তবে প্রথম সন্তান কন্যা হওয়ার আলাদা ফযীলত আছে বলে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা দৃষ্টিগোচর হয়নি।
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑُﺸِّﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺄُﻧْﺜَﻰ ﻇَﻞَّ ﻭَﺟْﻬُﻪُ ﻣُﺴْﻮَﺩًّﺍ ﻭَﻫُﻮَ
ﻛَﻈِﻴﻢٌ l ﻳَﺘَﻮَﺍﺭَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﻣِﻦْ ﺳُﻮﺀِ ﻣَﺎ ﺑُﺸِّﺮَ ﺑِﻪِ
ﺃَﻳُﻤْﺴِﻜُﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻫُﻮﻥٍ ﺃَﻡْ ﻳَﺪُﺳُّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘُّﺮَﺍﺏِ ﺃَﻟَﺎ ﺳَﺎﺀَ ﻣَﺎ
ﻳَﺤْﻜُﻤُﻮﻥَ তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের ‘সুসংবাদ’ দেয়া হয় তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে নিজ সম্প্রদায় থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে ) হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে,নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। কত নিকৃষ্ট ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। সূরা নাহল,আয়াত : ৫৮-৫৯ হাদীসের মাঝে কন্যা সন্তান লালন পালনের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- হযরত আম্মাজান আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
ﻣَﻦِ ﺍﺑْﺘُﻠِﻲَ ﻣِﻦْ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺒَﻨَﺎﺕِ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻛُﻦَّ ﻟَﻪُ ﺳِﺘْﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে পরীক্ষা করা হয়, সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে পর্দা হবে। বুখারী, হাদীস নং-১৪১৮
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺮﻃﺒﻲ – ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ :- ﻗﻮﻟﻪ – ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠَّﻢ – ))ﺑﺸﻲﺀٍ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ :(( ﻳُﻔﻴﺪ ﺑﻌﻤﻮﻣﻪ، ﺃﻥَّ
ﺍﻟﺴِّﺘْﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻳﺤﺼﻞ ﺑﺎﻹﺣﺴﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻣِﻦ
ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ .
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﺭَﺟُﻞٍ ﺗُﺪْﺭِﻙُ ﻟَﻪُ ﺍﺑْﻨَﺘَﺎﻥ،ِ ﻓَﻴُﺤْﺴِﻦُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ
ﻣَﺎ ﺻَﺤِﺒَﺘَﺎﻩُ – ﺃَﻭْ ﺻَﺤِﺒَﻬُﻤَﺎ – ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺩْﺧَﻠَﺘَﺎﻩُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তির দু’টি কন্যা সন্তান থাকলে, সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করলে যতদিন একত্রে বসবাস করবে, তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবে।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৭০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১০৫, ৩৪১৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
মেয়ের জন্য পর্দা রক্ষা করে ভিন্ন ভাষা শিক্ষার কোর্স করা৷
করাতে, শিক্ষা গ্রহণ করতে কোন
সমস্যা নেই। অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনি
জাপানি ভাষা শিক্ষা গ্রহন করতে পারবেন৷
ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺗَﺒْﻴِﻴﻦِ ﺍﻟْﻤَﺤَﺎﺭِﻡِ : ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻓَﺮْﺽُ ﺍﻟْﻜِﻔَﺎﻳَﺔِ ﻣِﻦْ
ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ، ﻓَﻬُﻮَ ﻛُﻞُّ ﻋِﻠْﻢٍ ﻟَﺎ ﻳُﺴْﺘَﻐْﻨَﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﻓِﻲ ﻗِﻮَﺍﻡِ ﺃُﻣُﻮﺭِ
ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻛَﺎﻟﻄِّﺐِّ ﻭَﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺤْﻮِ ﻭَﺍﻟﻠُّﻐَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡِ ( ﺭﺩ
ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻣﻘﺪﻣﺔ- 1/42 ) উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
আমরা জানি, শাশুড়ির সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। প্রশ্ন হল, শাশুড়ি...
আপন না হয় অর্থাৎ স্ত্রীর সৎ মা হয় তাহলে কি তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েয হবে?
আমার আম্মা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আব্বা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন।...
(আব্বার দ্বিতীয় স্ত্রী)-এর পিতা ক’দিন পরপর আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
আমি তাকে নানা ডাকি। তাকে মাহরাম মনে করে তার সামনে অবাধে যাওয়া-আসা করতাম। কিন্তু ক’দিন আগে আমার চাচাতো বোন বলল, সৎ মায়ের পিতার সাথে পর্দা করা জরুরি। এখন জানার বিষয় হল, তার কথা কি সঠিক?
ফাতাওয়া খায়রিয়া ১/৩৯; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১০৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১
আমাদের কলেজে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি পরীক্ষার সময় মেয়েদের...
তিন তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলাদের জন্য কি স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত...
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না। -সূরা তালাক : ৬
উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।
আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।
হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১২/১৪৫; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৯/৩৪৭
আমাদের এলাকার এক মসজিদের ইমাম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক। তিনি সেখানে...
হল,পর্দার বিধান লঙ্ঘনকারী ইমামের পিছনে নামায পড়ার বিধান কী?
বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
সরাসরি পড়ানো নাজায়েয। এতে পর্দার হুকুম লঙ্ঘনের গুনাহ ছাড়াও আরো অনেক গুনাহর আশঙ্কা থাকে। নিয়মিত এমন গুনাহর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট মাসআলা- মাসাইল জানেন এবং সুন্নতের অনুসারী পরহেযগার ব্যক্তিই এ পদের যোগ্য। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ঐ সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় ইমাম
হওয়ার যোগ্য নয়। এ ধরনের ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী। তবে এমন ব্যক্তির পিছনে নামায আদায় করলেও তা
আদায় হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, যথাসম্ভব উপযুক্ত ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করা,প্রকাশ্যে গুনাহয়
লিপ্ত কিংবা শরীয়তের বিধানের প্রতি উদাসীন ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ না দেওয়া।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩
জনৈক ব্যক্তি সার্বিকভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত। পরিবারের সবাই দ্বীন-ধর্ম বিশেষত...
উক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। হজ্বে যেতে হলে আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট করতে
হবে। এগুলোতে ছবি অত্যাবশ্যকীয়। ছবি যদিও
কোনো মহিলার মাধ্যমে তোলা সম্ভব হবে কিন্তু
পাসপোর্টের ছবি অনেক পরপুরুষের নজরে পড়বে।
বিশেষ করে জেদ্দায় পাসপোর্টের ছবি দেখিয়ে তার বাহককে তালাশ করা হয়। মুফতী ছাহেবের খেদমতে
আরজ এই যে, এসব বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তির
স্ত্রীর জন্য নিজে হজ্বে না গিয়ে বদলি হজ্ব করানোর সুযোগ আছে কি?
অনাবৃত হওয়া এবং তার ছবি অন্যদের সামনে প্রদর্শিত হওয়া স্বভাবতই মনোকষ্টের কারণ। তবে পর্দা যেমন আল¬াহ তাআলার বিধান তেমনি
হজ্বও তাঁরই গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। বান্দার কর্তব্য হল, সর্বদা নিজের জযবা ও আবেগের উপর আল্লাহ তাআলার হুকুমকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে নিজের যুক্তি ও আবেগকে সমর্পিত করা। এটিই প্রকৃত বন্দেগী। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার উপর যেহেতু হজ্ব ফরয এবং নিজে হজ্ব করার মতো শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য তার আছে তাই তার নিজের হজ্ব নিজেকেই গিয়ে করতে হবে। পাসপোর্টের ছবি পরপুরুষ দেখবে-এই কারণে বদলি করানো জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে বদলি করালে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, হজ্বের জন্য ছবিযুক্ত পাসপোর্ট
করা এবং ছবি পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনে চেক-আপ
হওয়া এসব কিছুই হজ্বের ব্যবস্থাপনাগত বিষয়।
হজ্বে গমনেচ্ছু ব্যক্তির এসব বিষয়ে কিছুই করার
থাকে না; বরং এখানে সে আইনগতভাবেই এসব কাজ
করতে বাধ্য। তাই এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা
সংক্রান্ত বিষয়ের দায়ভার কর্তৃপক্ষের উপরই
বর্তাবে। -আল বাহরুর রায়েক ৩/৬০; আদ্দুররুল মুখতার
২/৫৯৮