আমার একজন খালা গত তিন বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেন।...
আমার একজন খালা গত তিন বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেন। এরপর থেকে তিনি আর পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। মাঝেমধ্যে আপন-জনদেরকেও চিনতে তার বেগ পেতে হত। নামাযের সময় হলে কেউ মনে করিয়ে দিলে অজু করে এসে নামাযে দাঁড়াতেন। তবে কয় রাকাত পড়ছেন, সিজদা কয়টি করছেন মনে রাখতে পারতেন না। অর্থাৎ শুদ্ধভাবে কখনও নামায পড়তে পারতেন না। এ অবস্থায় তিন বছর যাওয়ার পর গত কিছুদিন আগে তিনি এন্তেকাল করেন। জানতে চাচ্ছি, তার উক্ত দীর্ঘ সময়ের নামাযগুলোর হুকুম কী? এ নামাযগুলোর ফিদয়া দিতে হবে কি?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার খালার ব্রেন স্ট্রোকের পর তিনি যেহেতু পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি বরং একেবারে অস্বাভাবিক ছিলেন তাই তার ঐ সময়ের নামাযের জন্য আপনাদের কিছুই দিতে হবে না। কারণ, এমন অবস্থায় নামায ফরয থাকে না।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০০
আমি একজন মুয়াযযিন। মসজিদের নির্দিষ্ট কোনো খাদেম না থাকায় প্রায়ই...
আমি একজন মুয়াযযিন। মসজিদের নির্দিষ্ট কোনো খাদেম না থাকায় প্রায়ই মসজিদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে দেখা যায়, কোনো কোনো সময় আযানের পূর্বে অযু করার সুযোগ হয় না। তাই অযু ছাড়াই আযান দিতে হয়।
হুযুরের নিকট জানতে চাই, অযু ছাড়া আযান দেওয়ার হুকুম কী?
অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। একাধিক হাদীস-আছারে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তবে আযান সহীহ হওয়ার জন্য অযু শর্ত নয়। অযু ছাড়া আযান দিলেও আযান সহীহ হয়ে যাবে।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,
لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ.
অযু ছাড়া আযান দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২২০২
তবে অযু ছাড়া আযান দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/৩৯৭; কিতাবুল আছল ১/১১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩
আমাদের মসজিদের অযুখানাটি খুবই ছোট ও সংকীর্ণ। নামাযের সময় খুব...
আমাদের মসজিদের অযুখানাটি খুবই ছোট ও সংকীর্ণ। নামাযের সময় খুব ভীড় হয়। এদিকে মসজিদ সংলগ্ন একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। আমরা চাচ্ছি, কবরস্থানের উপর ছাদ দিয়ে অযুখানা নির্মাণ করতে।
জানতে চাই, পারিবারিক কবরস্থানের উপর অযুখানা নির্মাণের কোনো সুযোগ আছে কি?
পারিবারিক কবরস্থানের উপরও ছাদ বা তলা বৃদ্ধি করে অযুখানা বানানো জায়েয হবে না। কেননা কবরের উপর ছাদ দেওয়া বা ভবন নির্মাণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে সুস্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য কবরস্থানটি যদি ওয়াকফিয়া না হয়; বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় আর কবরস্থানের যে অংশের উপর অযুখানা বানাতে চাচ্ছে সেখানে কোনো কবর না থাকে বা সেখানের কবর পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে জায়গার মালিকের অনুমতিক্রমে কবরকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে অযুখানা বানানো যাবে।
আর কবরস্থান ওয়াকফকৃত হলে সেখানে কোথাও -চাই কবর থাক বা না থাক- অযুখানা বানানো জায়েয হবে না।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; উমদাতুল কারী ৪/১৭৪, ১৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭
আমি একদিন বাসায় অযু করি। পানির লাইনে পানি কম থাকায়...
আমি একদিন বাসায় অযু করি। পানির লাইনে পানি কম থাকায় পুরো অযু শেষ করতে পারিনি। পা ধোয়ার আগেই পানি শেষ হয়ে যায়। এর দশ/বারো মিনিট পর পানি আসে। তখন আমি শুধু পা ধুয়ে নিই। ততক্ষণে আমার হাত মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি যে এভাবে অযু করেছি তা কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পা ধুতে বিলম্ব হলেও আপনার অযু হয়ে গেছে। তবে অযুর ক্ষেত্রে সুন্নত হল, এক অঙ্গ শোকানোর আগেই পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করা। তাই বিনা ওজরে এমনটি করা যাবে না। ওজর বশত এমনটি হলে কোনো সমস্যা নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮
একদিন আমার ছোট ভাই চাকু দিয়ে ফল কাটার সময় হাত...
একদিন আমার ছোট ভাই চাকু দিয়ে ফল কাটার সময় হাত কেটে ফেলে। রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। এভাবে দু’ তিনবার করার পর সেভলন লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় কি ওর অযু ভেঙেছে?
হাঁ, তার অযু ভেঙ্গে গেছে। কেননা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলার কারণে গড়িয়ে না পড়লেও তার পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।
-ফাতাওয়া খনিয়া ১/৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫
একদিন আমি একটি বড় গামলা নিচে রেখে অযু করি। পরে...
একদিন আমি একটি বড় গামলা নিচে রেখে অযু করি। পরে আমার ছোট ভাই এসে সেই গামলার পানি দিয়ে অযু করে। তার সেই অযু সঠিক হয়েছে কি? সেই অযু দ্বারা যে নামায আদায় করেছে তা পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
আপনার ভাইয়ের অযু হয়নি। কেননা অযুতে ব্যবহৃত পানি দ্বারা পুনরায় অযু করা যায় না। সুতরাং তার অযু যেহেতু হয়নি তাই ঐ অযু দ্বারা যে নামায পড়েছে তাও আদায় হয়নি। পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/২০; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৮৬
একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত...
একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত অযু করতে শুরু করি। তখন আমার হাতে ২টি আংটি ছিল। তাড়াহুড়োর কারণে সেগুলো খুলতে মনে ছিল না। সেগুলোসহই স্বাভাবিকভাবে অযু করি। পরে মনে হলে সন্দেহে পড়ে যাই যে, আমার অযু হয়েছে কি না। তবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ায় নামায পুনরায় পড়িনি। আমার উক্ত অযু ও নামায হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আংটি দুটি যদি এত ঢিলেঢালা হয় যে, খোলা বা নাড়াচাড়া করা ছাড়াই উভয় আংটির স্থান ভিজে যায় তাহলে অযু হয়ে গেছে। আর যদি কোনো এক আংটি বা উভয়টি এত সংকীর্ণ হয় যে, নাড়াচাড়া করা ছাড়া পানি ভেতরে যায় না তাহলে অযু হয়নি। এমনটি হয়ে থাকলে আপনাকে ঐ নামায আবার পড়ে নিতে হবে। হযরত আবু তামীম জায়শানী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. যখন অযু করতেন আংটি নাড়াচাড়া করতেন। আবু তামীমও তা করতেন। ইবনে হুবায়রাও তা করতেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১/৩৭১ (৪৫৬); মাবসূত, সারাখসী ১/১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৪২৮
রাশেদ একদিন কল ছেড়ে অযু করছিল। অযুর পানিগুলো একটি বালতিতে...
রাশেদ একদিন কল ছেড়ে অযু করছিল। অযুর পানিগুলো একটি বালতিতে জমা হচ্ছিল। অযু শেষ হতেই ট্যাংকের পানিও শেষ হয়ে যায়। তার কাপড়ের একটি অংশে নাপাকি লেগে ছিল। এখন কি সে বালতির জমা পানি দিয়ে উক্ত কাপড় পবিত্র করতে পারবে?
হাঁ, বালতির ঐ জমা পানি দিয়ে কাপড় পবিত্র করা যাবে। কারণ অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাকি দূর করা জায়েয। কিন্তু এ পানি দ্বারা অযু-গোসল করা জায়েয নয়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আলবাহরুর রায়েক ১/৯৬; মারাকিল ফালাহ ৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৯
এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে অযু করে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেছে।...
এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে অযু করে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেছে। পরক্ষণেই তার মনে হয়েছে সে মাথা মাসাহ করেনি। এখন সে কী করবে? উল্লেখ্য যে, স্মরণ হওয়ার পরও তার হাত-মুখ, দাঁড়ি ইত্যাদি অযুর অঙ্গগুলো ভেজা ছিল। হাতের অবশিষ্ট ভেজা দিয়ে বা অন্য অঙ্গ থেকে হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করে নিলে কি সঠিক হত?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি নামায ছেড়ে দিবে। অতপর নতুন পানি দ্বারা হাত ভিজিয়ে শুধু মাসাহ করে নিবে। এরপর নামাযে শরিক হবে। দাঁড়ি বা অন্য কোনো অঙ্গ ভিজা থাকলেও তা দ্বারা হাত ভিজিয়ে মাসাহ করলে মাসাহ সহীহ হবে না। উল্লেখ্য অযু করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা সমীচীন নয়। মনোযোগ দিয়ে অযু করা উচিত। যেন কোনো অঙ্গ বাদ না পড়ে।
-কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬২; ৬৩ আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৯৯
আমি একটি মসজিদের মুয়াযযিন। সাধারণত আযানের আগেই আমি নামাযের প্রস্তুতি...
আমি একটি মসজিদের মুয়াযযিন। সাধারণত আযানের আগেই আমি নামাযের প্রস্তুতি সেরে নেই। তবে কখনো এমন হয় যে, অযু করার আগেই আযানের সময় হয়ে যায়। তাই জানতে চাই, অযু না থাকা অবস্থায় আযান দেওয়ার হুকুম কী? এটা কি গুনাহ।?
অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। তাই যথাসম্ভব অযুসহ আযান দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে অযু না থাকা অবস্থায় আযান দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে এবং গুনাহ হবে না।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২০১; নাসবুর রায়াহ ১/২৯২; আততালখীসুল হাবীর ১/৫০৯; হেদায়া ১/২১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২
আসরের নামায শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি মসজিদের অযুখানায় অযু শেষে...
আসরের নামায শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি মসজিদের অযুখানায় অযু শেষে মনে মনে এই নিয়ত করি, এখন গিয়ে ইমামের পিছনে আসর নামায পড়ব। মসজিদে প্রবেশ করা মাত্রই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। আমি প্রায় দৌড়ে গিয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে শরিক হই। তবে তাড়াহুড়োর কারণে তাকবীর বলার আগ মুহূর্তে নামাযের নিয়ত করতে পারিনি। জানতে চাই, আমার ঐ নামায সহীহ হয়েছে কি না?
অন্তরের সংকল্পই হল নিয়ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৌখিক নিয়ত না করলেও আপনি যেহেতু আসরের নামাযের উদ্দেশ্যেই তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে গিয়েছেন তাই আপনার ঐ নামায হয়ে গেছে। নামায শুরুর আগে মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়। অন্তরের সংকল্পই যথেষ্ট।
প্রকাশ থাকে যে, নামাযের জন্য যাওয়ার সময় ধীরস্থির ও গাম্ভীর্যের সাথে যাওয়া সুন্নত। নামায দাঁড়িয়ে গেলেও তাড়াহুড়ো করে বা দৌড়ে যাওয়া ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা ইকামত শোন তখন হেঁটে হেঁটে নামাযের দিকে আস, গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতার সাথে। দৌড়ে এসো না। যতটুকু নামায পাবে তা পড়। আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নাও।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১০; আতাতজনীস ১/৪১৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১;
আমাদের দেশে বাজারে প্রচলিত এক প্রকার মেহেদী পাওয়া যায়। যা...
আমাদের দেশে বাজারে প্রচলিত এক প্রকার মেহেদী পাওয়া যায়। যা গোল্ড মেহেদী নামে পরিচিত। উক্ত মেহেদীতে এমন এক প্রকার মেডিসিন দেওয়া হয়, যার দ্বারা মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরোপুরি রঙ হয়ে যায় এবং যখন উক্ত মেহেদী উঠানো হয় তখন শরীর থেকে আলাদা আবরণের মতো উঠে আসে।
এখন প্রশ্ন হল, উক্ত মেহেদী লাগানোর পর অযু করলে অযু হবে কি?
গোল্ড মেহেদী বা টিউব মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয। এবং এগুলো ব্যবহার করে প্রলেপ উঠিয়ে ফেলার পর অযু-গোসল সবই সহীহ হবে। কেননা এ মেহেদী লাগানোর পর শরীরে যে রঙ অবশিষ্ট থাকে যার কোনো কোনোটিতে পরবর্তীতে আবরণের মতো উঠে তা আমাদের জানামতে চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই এগুলো ব্যবহার করতে সমস্যা নেই।
Ñশরহুল মুনয়া ৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪
আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ। অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ...
আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ। অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করি। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যান্ডেজের উপর মোজা পরলে কি তার উপর মাসাহ করা যাবে?
হাঁ, ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে এবং অন্য পা ধুয়ে চামড়া জাতীয় মোজা পরা হলে পরবর্তী অযুর সময় থেকে উক্ত মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। মাসাহর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে উভয় মোজা খুলে পুণরায় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে নিবে এবং অপর পা ধুয়ে নিবে।
-শরহুয যিয়াদাত ১/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫৭; কিতাবুল আসল ১/৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ১২৩
আমার সন্দেহের রোগ আছে। অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই...
আমার সন্দেহের রোগ আছে। অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই মনে হয় যেন মাথা মাসাহ করিনি। এই সন্দেহ হওয়ার কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করি। তাছাড়া কোনোক্রমেই স্বস্তি পাই না। আমি জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী এবং এই সন্দেহের রোগ দূর করার উপায় কী?
আপনার কর্তব্য, অযু করার সময় মনোযোগ সহকারে অযু করা। অতপর অযু শেষ হওয়ার পরে মাথা মাসাহ না করার ব্যাপারে যতই সন্দেহ হোক সেদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কখনো সন্দেহের ভিত্তিতে পুনরায় মাথা মাসাহও না করা। এই সন্দেহ নিশ্চয়ই শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা। কিছুদিন এভাবে করলে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো...
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো নিষেধ। তাই গোসলের সময় গলার উপরে ধোয়া তার জন্য সম্ভব নয়। তেমনি অযুর সময়ও সে চেহারা ধুতে পারবে না। এখন তার গোসল ফরয হলে সে কীভাবে গোসল করবে এবং এ অবস্থায় সে কীভাবে অযু করবে?
ঐ ব্যক্তির যতদিন চোখে পানি লাগানো নিষেধ থাকে ততদিন যেহেতু চেহারা ও মাথা ধুতে পারছে না তাই এ অবস্থায় গোসলের জন্য সে গলা ও ঘাড়সহ নিচের দিকে পুরো শরীর ধৌত করবে। আর চেহারা ও কানসহ পুরো মাথা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে।
আর অযুর সময় পুরো চেহারা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে। এছাড়া বাকি অযু যথানিয়মে করবে। অর্থাৎ হাত, পা ধুবে এবং মাথা মাসাহ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের রোগীর জন্য ভেজা হাত দ্বারা ব্যান্ডেজের উপর বা চোখের অংশে মাসাহ করাটা যদি ক্ষতিকর হয় তবে সেক্ষেত্রে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও চলবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮
আমি একদিন জামাতে নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার...
আমি একদিন জামাতে নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ না বলে আল্লাহু আকবার বলে ফেলেন। এতে আমার মুখ দিয়ে হাসি বের হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও চেপে রাখতে পারিনি। নামায শেষে আমার পাশের এক ভাই বললেন, নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই অযু করে আবার নামায পড়ে নাও। আমার জানার বিষয় হল, ঐ ভাইয়ের কথাটা কি ঠিক?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার হাসির আওয়াজ যদি পাশের লোক ছাড়াও অন্যরা শুনে থাকে তবে আপনার অযু নষ্ট হয়ে গেছে। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে শব্দ করে হাসবে সে নতুন করে অযু করবে এবং পুনরায় নামায আদায় করবে। -কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৪০
আর যদি হাসির শব্দ শুধু ডান-বামের লোক শুনে, অন্যরা না শুনে তাহলে আপনার অযু ভাঙ্গেনি। তবে এতটুকু আওয়াজে হাসার কারণে নামায ভেঙ্গে গেছে। তা আবার পড়ে নিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/৪৫-৪৬; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৩৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৩৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৯৭ ইলাউস সুনান ১/১৫৮
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম...
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পানিও আছে। এ অবস্থায় শুধু তায়াম্মুম করবে নাকি অযুও করতে হবে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি গোসলের পরিবর্তে শুধু তায়াম্মুম করবে। অযু করবে না। কারণ এক্ষেত্রে তায়াম্মুমই অযু-গোসল উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। তবে গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন পবিত্রতার জন্য তাকে অযুই করতে হবে। তায়াম্মুম করলে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/২৩২
কয়েকদিন হল, আমার সর্দি লেগেছে। একপর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত...
কয়েকদিন হল, আমার সর্দি লেগেছে। একপর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সর্দির সাথে জমাট রক্তও বের হয়। এতে আমার অযু ভাঙ্গবে কি?
এভাবে জমাট রক্ত বের হওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হয় না। অবশ্য সর্দির সাথে তরল রক্ত গড়িয়ে পড়া পরিমাণ বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯, ১৩৪
অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি...
অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি এ অংশ পুরোপুরি না ধোয় তাহলে কি তার অযু সহীহ হবে?
অযুতে থুতনির নিচের অংশ ধোয়া লাগবে না। ঐ অংশ না ধুলেও অযু হয়ে যাবে।
Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১; আস সেআয়া ১/৪৬
রোগের কারণে জনৈক ব্যক্তির পেশাবের রাস্তার সাথে ক্যাথেটার (এক প্রকার...
রোগের কারণে জনৈক ব্যক্তির পেশাবের রাস্তার সাথে ক্যাথেটার (এক প্রকার নল) লাগিয়ে পেশাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তা দিয়ে সর্বক্ষণ পেশাব ঝরতে থাকে। তাই প্রশ্ন হল, ক) ঐ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের উপায় কী?
খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি কি খালি করে নেওয়া জরুরি? যদি খালি করে নেওয়া হয় তবুও প্রতি মিনিটে তাতে ফোঁটায় ফোঁটায় পেশাব জমা হবে। এর ফলে কি নামায আদায়ে কোনো সমস্যা হবে? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত তা লাগানো থাকলে ঐ ব্যক্তি মাজুর গণ্য হবে। তাই ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে সে প্রতি ওয়াক্তে অযু করবে এবং ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় পেশাব ছাড়া অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া না গেলে যতক্ষণ ওয়াক্ত বাকি থাকবে ঐ অযু দিয়ে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামায আদায় করতে পারবে। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে পেশাব ঝরার কারণে অযু ভাঙ্গবে না। তবে অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
উত্তর : খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি খালি করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ওজরের কারণে ঐ ব্যাগসহ নামায আদায় করা জায়েয।
-মাবসূত, সারাখসী ২/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৫; মারাকিল ফালাহ ৮০, ৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৫, ১/২১৭
আমাদের এক সহপাঠী উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন এবং সিজদার...
আমাদের এক সহপাঠী উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন এবং সিজদার আয়াত এলেও উচ্চস্বরে পড়েন। অথচ সে সময় আমরা অনেকেই অযু অবস্থায় থাকি না কিংবা অযু অবস্থায় থাকলেও সিজদা আদায় করতে ভুলে যাই। তাই আমরা তাকে অনুচ্চস্বরে সিজদার আয়াত পড়তে বলি। কিন্তু সে আমাদের কথায় কর্ণপাত করে না; বরং বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দিয়ে থাকে। মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, বর্ণিত অবস্থায় তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আস্তে পড়ার বিধান আছে কি? আশা করি উত্তর জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত অনুচ্চস্বরেই তিলাওয়াত করা উচিত। কেননা উপস্থিত লোকজন সিজদা আদায়ে প্রস্তুত না থাকলে কিংবা ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে সিজদার আয়াত উচ্চস্বরে না পড়া উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৫
নামায চলাকালীন অনিচ্ছাকৃত মূত্র ফোঁটা নির্গত হলে কি নামায বাতিল...
নামায চলাকালীন অনিচ্ছাকৃত মূত্র ফোঁটা নির্গত হলে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে?
নামাযে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে এবং নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অযু করে নতুনভাবে নামায পড়তে হবে। তবে নিশ্চিতভাবে প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলেই কেবল অযু নষ্ট হবে,শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে নামায ছাড়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১; শরহুল মুনইয়া ১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৪
এক ব্যক্তির কাছে শুনলাম, গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করা...
এক ব্যক্তির কাছে শুনলাম, গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই। বিষয়টি কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাপাক অবস্থায় কবর যিয়ারত না করাই শ্রেয়। একান্ত কখনো গোসল করতে বিলম্ব হলে যিয়ারতের আগে অন্তত অযু করে নিবে। অবশ্য গোসল ফরয অবস্থায়ও কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ নয়। তবে কেউ এ অবস্থায় যিয়ারতে গেলে কুরআন মাজীদের কোনো আয়াত পড়তে পারবে না। মৃতের জন্য দুআ-দরূদ পড়তে পারবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/১৫১
জামাতে নামায আদায় করার সময় কারো অযু ছুটে গেলে নিয়ত...
জামাতে নামায আদায় করার সময় কারো অযু ছুটে গেলে নিয়ত ছেড়ে দিয়ে রুকু-সিজদায় ইমামের অনুসরণ করা হয় তাহলে তা জায়েয হবে কি?
একটি কিতাবে তা জায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব বলছেন, এটা জায়েয হবে না। সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।
জামাতে নামায পড়া অবস্থায় কোনো ব্যক্তির অযু ছুটে গেলে সম্ভব হলে তৎক্ষণাৎ অযুর জন্য বের হয়ে যাবে। ইমামের নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। সাহাবা-তাবেয়ীদের একাধিক আছার দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত।
যেমন আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাযরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, সে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫০)
সালমান ফারেসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কারো যদি নামাযে অযু ছুটে যায় তাহলে সে যেন বের হয়ে অযু করে আসে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫৪)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নাক থেকে নামায অবস্থায় রক্ত বের হলে তিনি ফিরে গিয়ে অযু করে আসতেন। (মুআত্তা মালেক, হাদীস : ৫০)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, নামায অবস্থায় যে ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হবে অথবা অযু ছুটে যাবে সে (মসজিদ থেকে) বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (কিতাবুল আছার ১/১৬২)
সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এ ধরনের আরো বর্ণনা রয়েছে। এ সকল বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে অযু ছুটে গেলে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে।
অবশ্য মসজিদে মুসল্লী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে কাতারের মাঝখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও অযু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জা, সংকোচ বা অন্য কোনো কারণে বিনা অযুতে ইমামের সাথে রুকু সিজদা করতে থাকা ঠিক হবে না। কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে এমনটি করার কথা পাওয়া যায়নি। প্রশ্নোক্ত কিতাবের ঐ বক্তব্য ঠিক নয়।
আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন...
আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত এবং আরো কিছু আয়াত ও ছোট ছোট কয়েকটি সূরা টাইপ করে লেমিনেটিং করে রেখেছি। সকাল-সন্ধ্যা এগুলো পাঠ করি। অনেক সময় দেখা যায়, পাঠকালে অযু থাকে না। তাই জানার বিষয় হল, বিনা ওযুতে উক্ত লেমিনেটিং করা কাগজ বা তার লেখা স্পর্শ করা জায়েয হবে কি?
কাগজটি লেমিনেটিং করা হলেও অযু ছাড়া লিখিত আয়াত বা সূরার উপর সরাসরি হাত লাগানো জায়েয হবে না। তবে এটি যেহেতু কুরআন শরীফ নয় তাই কাগজের যে অংশে আয়াত লেখা নেই তা স্পর্শ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, লিখিত অংশের উপর যেন হাত না লাগে। কিন্তু উক্ত কাগজে যেহেতু শুধু আয়াতই লিখা রয়েছে তাই সাদা অংশও অযু ছাড়া স্পর্শ না করা উচিত।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩, ২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭
এক লোক গত মাসে উমরায় গিয়েছিল। তার জানা ছিল না...
এক লোক গত মাসে উমরায় গিয়েছিল। তার জানা ছিল না যে, তাওয়াফের জন্য অযু জরুরি। তাই সে অযু ছাড়াই উমরার তাওয়াফ করেছে এবং উমারা সম্পন্ন করার পর সে আরো কিছু নফল তাওয়াফও করেছে। যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি অযু ছাড়া করেছে। এখন সে দেশে চলে এসেছে। তার এখন কী করণীয়? তাকে কি এজন্য কোনো জরিমানা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অযু ছাড়া উমরার তাওয়াফ করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছে। এজন্য হেরেমের সীমানায় তাকে একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করতে হবে। আর যে কয়টি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করেছে এগুলোর প্রত্যেক চক্করের জন্য একটি করে সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। সুতরাং সে যদি দুটি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করে থাকে তবে সাতটি করে মোট চৌদ্দটি সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। এ সদকা হেরেমের এলাকায় করা উত্তম। হেরেমের বাইরে করলেও আদায় হয়ে যাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৫২
ছোটবেলায় মকতবে অযু ভঙ্গের কারণসমূহ শিখেছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা হল,...
ছোটবেলায় মকতবে অযু ভঙ্গের কারণসমূহ শিখেছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা হল, হেলান দিয়ে ঘুমানো। এখন অনেক মুসল্লি ভাইকে দেখি যে, তারা ফজরের নামাযের আগে মসজিদের দেওয়ালে বা খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমাতে থাকে। যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন তারা পুনরায় অযু করা ছাড়াই নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের উক্ত নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে বিষয়টি একটু স্পষ্ট করবেন।
হেলান দিয়ে ঘুমালে সর্বাবস্থায় অযু ভেঙ্গে যায়-বিষয়টি এমন নয়; বরং কেউ যদি এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তার কোমরের নিম্নাংশ জমিন থেকে পৃথক হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে অযু ভেঙ্গে যাবে। আর যদি আসন গেড়ে বা জমিনের সাথে ভালোভাবে লেগে বসে বসে ঘুমায় তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও অযু নষ্ট হবে না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৫৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৯৮-৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৪১
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোতে ফরয নামায আদায় করার পর অনেক সময়...
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোতে ফরয নামায আদায় করার পর অনেক সময় আমি তাকবীর বলতে ভুলে যাই। পরে কখনো নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকতেই স্মরণ হয়। আবার কখনো ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর অন্য নামাযের সময় স্মরণ হয়। তখন সাথে সাথে তাকবীর পড়ে নেই।
জানতে চাই, পরবর্তীতে স্মরণ হওয়ার পর তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিলে ওয়াজিব আদায় হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয নামায আদায় করার পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।
নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক না বলে (ক) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে
(খ) অথবা নামায ফাসেদকারী কোনো কথা বা কাজ করলে
(গ) অথবা অযু নষ্ট হয়ে যায় এমন কোনো কাজ করলে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সময় বাকি থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর নামাযের পর উপরোল্লিখিত কোনো কাজ না করলে বিলম্বে হলেও তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিতে পারবে এবং এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭-১৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫ ফাতহুল কাদীর ২/৫০
আমাদের এলাকায় অনেকে পাট ক্ষেত করে। পাট গাছ কাটার পর...
আমাদের এলাকায় অনেকে পাট ক্ষেত করে। পাট গাছ কাটার পর এর থেকে পাট ওঠানোর জন্য এগুলো কোনো খাল বা পুকুরের পানিতে অনেকদিন রাখা হয়। তখন এগুলো পচে পানির রংও পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পানি কিছুটা দুর্গন্ধও হয়ে যায়। প্রশ্ন হল, ঐ পানি দ্বারা কি অযু-গোসল করা যাবে?
হ্যাঁ, পাটগাছ পচানোর কারণে পানির রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেলেও এর দ্বারা অযু-গোসল তথা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে। এক্ষেত্রে পানির তরলতা যতক্ষণ পর্যন্ত বাকি থাকবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১; রদ্দুল মুহতার ১/১৮১
কিছুদিন আগে মসজিদে যাওয়ার পথে কাঁটাতারের আঘাতে আমার হাতের বেশ...
কিছুদিন আগে মসজিদে যাওয়ার পথে কাঁটাতারের আঘাতে আমার হাতের বেশ কিছু অংশের চামড়া ছিলে যায়। ফলে তা থেকে রক্ত গড়িয়ে না পড়লেও ছিলে যাওয়া অংশটি রক্তে লাল হয়ে থাকে। রক্ত গড়িয়ে না পড়ায় আমি ঐ অবস্থাতেই নামায পড়ি। কিন্তু নামাযের মাঝে ঐ অংশটির সাথে ঘষা লাগার কারণে আমার জামায় রক্তের হালকা দাগ লেগে যায়। আমার জানার বিষয় হল এভাবে নামায পড়া কি আমার জন্য শুদ্ধ হয়েছে? যখমের রক্ত যা গড়িয়ে পড়ার মতো নয় তা জামায় লাগলে কি জামা নাপাক হয়ে যাবে? এবং এ কারণে কি অযু ভেঙ্গে যাবে?
যখমের রক্ত গড়িয়ে না পড়লে অযু ভাঙ্গে না এবং এই রক্ত কাপড়ে লাগলে কাপড়ও নাপাক হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ রক্ত বাস্তবেই যদি গড়িয়ে পড়ার মতো না হয় তবে এ কারণে অযুও ভাঙ্গেনি এবং জামার হাতায় লাগার কারণে তা অপবিত্রও হয়নি। এক্ষেত্রে আপনার ঐ নামায শুদ্ধভাবেই আদায় হয়েছে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; আসসিআয়াহ ১/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯
কিছুদিন আগে আমি অযু করার পর হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে মাটিতে...
কিছুদিন আগে আমি অযু করার পর হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি দ্রুত গিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষে পাশের এক ভাই আমাকে বললেন, আপনার নামায তো হয়নি। কারণ অজ্ঞান হলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই আপনি অযু করে আবার নামায পড়ে নিন। এখন জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? জ্ঞান হারানোর কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়?
জ্বী হ্যাঁ, অল্প সময়ের জন্য বেহুঁশ বা অচেতন হয়ে পড়লেও অযু ভেঙ্গে যায়। ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। তাই এমনটি হলে জ্ঞান ফিরার পর নতুনভাবে অযু করতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/১৪৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৩
একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক...
একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক কাপড় ধৌত করি। জানার বিষয় হল, অযুর ব্যবহৃত পানি কি পাক না নাপাক? আর পাক হলে তা দ্বারা কি নাপাক ধৌত করা যাবে?
অযুর ব্যবহৃত পানি নাপাক নয়। এই পানি দ্বারা নাপাক কাপড় বা নাপাক বস্ত্ত ধোয়া এবং পাক করা জায়েয। তবে এই পানি দ্বারা অযু করা কিংবা ফরয গোসল করা যাবে না; করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০১; মারাকিল ফালাহ ৮৭
এক ব্যক্তি অযু করার পর তার মুখের ব্রণ গলে যায়...
এক ব্যক্তি অযু করার পর তার মুখের ব্রণ গলে যায় এবং তা থেকে সামান্য পানি বের হলে সে তা মুছে নেয়। প্রশ্ন হল এই পানি বের হওয়ার কারণে কি তার অযু ভেঙ্গে গেছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্রণের পানি যদি গড়িয়ে না পড়ে এবং যে পানি মুছে নিয়েছে তা সেখানে থাকলেও গড়িয়ে পড়ত না তাহলে ঐ ব্যক্তির অযু নষ্ট হয়নি। কিন্তু যদি পানি বা রক্ত গড়িয়ে পড়ে কিংবা না মুছলে তা গড়িয়ে পড়ত তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে।
-আলজামেউস সগীর, পৃষ্ঠা : ৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১
আমি চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করি। অনেক সময় অযু থাকতেই...
আমি চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করি। অনেক সময় অযু থাকতেই মাসাহর মুদ্দত শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমার জন্য পুনরায় অযু করতে হবে, নাকি শুধু মোজা খুলে পা ধুয়ে নিলেই চলবে?
অযু থাকা অবস্থায় মাসহের মুদ্দত (সময়সীমা) শেষ হলে মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিলেই চলবে। পুনরায় অযু করতে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৭২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/২১১; কিতাবুল আছল ১/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭৬
অযু-গোসলের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাপড় দ্বারা শরীর...
অযু-গোসলের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন? কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু-গোসলের পর কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি। কথাটি কতটুকু সঠিক? দলিলপ্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন। আবার কখনো মোছেননি। উভয় ধরনের আমলই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত আছে।
অযু ও গোসলের পর তিনি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন এ সম্পর্কিত দু’ একটি হাদীস নিম্নে পেশ করা হল।
সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করেন। এরপর তিনি তার গায়ের পশমী জুববা উল্টে নিয়ে চেহারা মুছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৮)
প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ সুনানে ইবনে মাজাহর অযু ও গোসলের পর রুমাল ব্যবহার করা নামক অধ্যায়ে এসেছে, কায়েছ বিন সাআদ রা. বলেন, আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন। আমরা তাঁর জন্য পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি গোসল করলেন। তখন আমরা তাঁকে হলুদ রঙ্গের একটি চাদর এনে দিলাম। তিনি সেটি গায়ে জড়িয়ে নিলেন। (ফলে সেটি শরীরের পানি মোছার জন্য রুমালের কাজ দিল)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১৪৩)
অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি এমন হাদীসও আছে। যেমন, উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফরয গোসল করছিলেন তখন (শরীর মোছার জন্য) একটি কাপড় এনে দিলাম। তিনি তা ফেরত দিলেন এবং শরীরের পানি (হাত দ্বারা) ঝাড়তে লাগলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৭৪)
তবে এ হাদীস দ্বারা যেমনিভাবে না মোছা প্রমাণিত হয় তেমনিভাবে মোছার বিষয়টিও বোঝা যায়। যেমন তাইমী রাহ. উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছতেন এ হাদীসটি তার একটি দলিল। কেননা যদি গোসলের পর শরীর একেবারেই না মুছতেন তাহলে মায়মুনা রা. শরীর মোছার জন্য রুমাল এনে দিতেন না। (ফাতহুল বারী ১/৪৩২)
আল্লামা শাববীর আহমদ উছমানী রাহ. সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফযলুল বারীতে এবং আল্লামা তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম ইনআমুল বারীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, গোসলের পর শরীর মোছার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় ব্যবহার অন্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে।
আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ.-ও এমনটি বলেছেন।
মোটকথা উভয় ধরনের আমলই প্রমাণিত আছে। তাই নির্দিষ্টভাবে কোনো একটিকে সঠিক ও সুন্নত বলা এবং অন্যটিকে সুন্নত পরিপন্থী বলা যাবে না। বরং হাদীসের দৃষ্টিতে উভয় ধরনের আমলের সুযোগ আছে।
-আসসিআয়াহ ১/১৯১; রিসালাতুল কালামিল জালীল ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিলমিন্দীল ৫/৩৭০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫-১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৩; শরহু মুসলিম নববী ১/১৪৭
একদিন বিকেলে পান খাওয়ার সময় বাম হাতের কনুইয়ের নিচে একটু...
একদিন বিকেলে পান খাওয়ার সময় বাম হাতের কনুইয়ের নিচে একটু সামান্য চুন লেগে যায়, যা তখন আমার চোখে পড়েনি। এরপর আমি ইস্তেঞ্জা-অযু করে মাগরিবের নামায আদায় করি। নামায শেষে বাসায় যাওয়ার পর হাতের চুন চোখে পড়ে। এখন জানার বিষয় হল, হাতে চুন থাকা অবস্থায় অযু করলে কি তা সহীহ হবে? আর আমার আদায়কৃত মাগরিবের নামাযের কী হুকুম হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
চুন মাটি জাতীয় পদার্থ, যা সহজেই পানিকে শোষণ করে নেয় ও ভিজে যায়। তাই শরীরের কোথাও চুন লেগে থাকলেও চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক হয় না।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার অযু এবং নামায উভয়টি সহীহ হয়েছে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৮
অসুস্থতার কারণে আমি গোসল করতে পারি না। কিন্তু অযু করতে...
অসুস্থতার কারণে আমি গোসল করতে পারি না। কিন্তু অযু করতে পারি। প্রশ্ন হল, আমি কি ফরয গোসলের পরিবর্তে অযু করতে পারব? নাকি তায়াম্মুম করব।
ফরয গোসল করতে সক্ষম না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন। এক্ষেত্রে অযু করার প্রয়োজন নেই। কেননা এক্ষেত্রে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং অযুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি পড়তে পারবেন। অবশ্য এরপর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে।
-কিতাবুল আস্ল ১/১০৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২
আমি একজন কলেজছাত্রী। আমি নিয়মিত নামায আদায় করার ও ইসলামি...
আমি একজন কলেজছাত্রী। আমি নিয়মিত নামায আদায় করার ও ইসলামি বই-পুস্তক পড়ার চেষ্টা করি। কয়েকদিন আগে একটি কিতাবে পড়েছি, নেলপলিশ লাগালে অযু হয় না। আর অযু না হলে নামাযও হয় না। অথচ আমি নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করে অনেক নামায আদায় করেছি। জানতে চাই, উক্ত কথাটি কি সঠিক? সঠিক হলে আমার অতীতের নামাযের হুকুম কী?
নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করলে অযু হয় না। কেননা নেলপলিশ লাগালে নখের উপর আবরণ পড়ে যায়। ফলে নখে পানি পৌঁছে না। আর অযু না হলে নামাযও হয় না। সুতরাং নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করে যত ওয়াক্ত ফরয ও ওয়াজিব নামায পড়েছেন সেসব নামাযের কাযা করে নিতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৮৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৭০; আলবাহরুর রায়েক ১/৪৭; আলমাওসূআহ ৪৩/৩৪৪
আমি ইস্তেঞ্জা থেকে ফারেগ হওয়ার পর অথবা অযু না থাকা...
আমি ইস্তেঞ্জা থেকে ফারেগ হওয়ার পর অথবা অযু না থাকা অবস্থায়ই কখনো কখনো আযান শুরু হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল, আযানের উত্তর দিতে হলে অযুর প্রয়োজন আছে কি?
আযানের জওয়াব দেওয়ার জন্য অযু জরুরি নয়। অযু না থাকলেও আযানের জওয়াব দেওয়া যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; মারাকিল ফালাহ ১১০
মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে বিলম্বে উঠার কারণে অযু ছাড়া আযান...
মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে বিলম্বে উঠার কারণে অযু ছাড়া আযান দিয়ে দেই। জানতে চাই, অযু ছাড়া আযান দিলে কি সহীহ হবে?
বিনা অযুতে আযান দিলে আযান সহীহ হয়ে যাবে। তবে অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। অযুর সাথে আযান দেওয়ার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, অযু অবস্থাতেই যেন আযান দেওয়া হয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০১
অবশ্য সময় কম থাকলে বা কোনো অসুবিধা হলে বিনা অযুতেও আযান দেওয়া যাবে। ইবরাহীম নাখায়ী, কাতাদা, হাসান বসরী, আতা রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীন থেকে বিনা অযুতেও আযান দেওয়ার অনুমতি বর্ণিত আছে।
-সহীহ বুখারী ১/৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৩৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; কিতাবুল মাবসূত, সারাখসী ১/১৩১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩
অযু বা গোসলের পর যদি সতর খুলে যায় তাহলে কি...
অযু বা গোসলের পর যদি সতর খুলে যায় তাহলে কি অযু ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় কি অযু করতে হবে?
না, সতর খুলে গেলে অযু ভাঙ্গবে না। তবে কখনো সতর খুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা ঢেকে নিতে হবে।
আমি অযু অবস্থায় চামড়ার মোজা পরিধান করেছি। তার উপর আবার...
আমি অযু অবস্থায় চামড়ার মোজা পরিধান করেছি। তার উপর আবার কাপড়ের মোজা পরেছি। এখন মাসেহ করার সময় কি সেই কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করলেই চলবে, নাকি কাপড়ের মোজা খুলে সরাসরি চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
চামড়ার মোজার উপর পরিহিত কাপড়ের মোজায় মাসেহ করা জায়েয হবে না। বরং কাপড়ের মোজা খুলে সরাসরি চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করতে হবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮২; শরহুল মুনইয়াহ ১১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫২
অযু থাকা অবস্থায় আমার হাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে...
অযু থাকা অবস্থায় আমার হাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়। রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য আমি ক্ষতস্থানে স্যাভলন ক্রীম লাগিয়ে দিলে রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার রক্ত বের হতে দেখে খুব পুরু করে স্যাভলন ক্রীম লাগিয়ে দিই। এতে করে ঐ রক্ত স্যাভলন ক্রীমের সাথে মিশে সম্পূর্ণ ক্রীমকে লালচে বর্ণের করে ফেলে এবং ক্রীমের উপরও কিছু রক্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু কোনো রক্ত গড়িয়ে পড়েনি। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে কি আমার অযু ভেঙ্গে গেছে?
ক্ষতস্থান থেকে যদি এ পরিমাণ রক্ত বের হয় যা কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে গড়িয়ে পড়ত তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্নের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, যদি পুরু করে ক্রীম না লাগানো হত তাহলে রক্ত ক্ষতস্থানকে অতিক্রম করে গড়িয়ে পড়ত। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আপনার অযু ভেঙ্গে গেছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৯৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪
গত কয়েক দিন আগে মায়ের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাড়িতে যাই।...
গত কয়েক দিন আগে মায়ের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাড়িতে যাই। দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমআর নামাযের সময় হয়ে যাওয়ার কারণে দ্রুত মসজিদে চলে যাই। মসজিদে গিয়ে দেখি অযুখানায় পানি নেই। আশপাশেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে জুমআর নামায শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি অযুর পানির জন্য একটু দূরে চলে যাই। অযু শেষ করে এসে দেখি, নামায শেষ হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হল, তখন কি আমার জন্য তায়াম্মুম করে জুমআর নামাযে শরিক হওয়া বৈধ ছিল?
অযু করার কারণে জুমআ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি অযু করে সঠিক কাজই করেছেন। এমন ক্ষেত্রে অযু করে এসে জুমআর জামাত পাওয়া গেলে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। জামাত না পেলে যোহর আদায় করতে হবে।
-হেদায়া ১/৫৪-৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১
মুসলমানেরই এ কথা জানা যে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের...
মুসলমানেরই এ কথা জানা যে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। এবং হাদীসের আলোকে আমরা এও জানি যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ব্যতীত অপূর্ণ ও বরকতশূন্য। এখন আমার জানার বিষয় হল, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ও কাজ আছে, যার গুরুত্ব ও প্রয়োজন সাময়িক। যথা-দাওয়াতনামা, পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর এসবের কোনো গুরুত্ব থাকে না বিধায় তা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। এমনকি অনেক সময় পদপিষ্টও হয়। অতএব এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আরবী ভাষায় বা বাংলা উচ্চারণে লেখা যাবে কি?
খ) যেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখার বিধান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ অথবা বিসমিহী তাআলা লিখলে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর সওয়াব অর্জিত হবে কি না? এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের আলোকে, ফুকাহায়ে কেরাম ও মুফতী সাহেবদের অভিমত প্রমাণাদিসহ জানালে কুরআন মজীদের মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হব এবং বিশেষভাবে উপকৃত হব।
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। এর মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। এর হুকুম কুরআন মজীদের অন্যান্য আয়াতের মতোই। তাই অযু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না। বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের স্থানে ব্যবহার করাও জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন না থাকার দরুণ পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকার আশঙ্কা থাকে এমনকি অনেক সময় পদপিষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চাই তা আরবীতে লেখা হোক বা বাংলা উচ্চারণে।
একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৪৬২৩, ৪৬২২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৫; আদ্দুরর"ল মুখতার ১/৬৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৩; তাফসীরে তবারী ১/৭৮
খ) চিঠিপত্র ও গুর"ত্বপূর্ণ লিখনির শুর"তে পুরো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা সুন্নত। আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ আমল (অর্থাৎ খায়র"ল কুরূন থেকে অদ্যাবধি উম্মতের অবি""ছন্ন কর্মধারা) দ্বারা এটি প্রমাণিত। কুরআন মজীদে হযরত সুলায়মান আ.-এর চিঠির আলোচনা এসেছে, যাতে বিসমিল্লাহি দ্বারা শুর" করার কথা উল্লেখ রয়েছে।-সূরা নামল : ৩০
সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ও হযরত মারওয়ান ইবনে হাকাম রা. থেকে বর্ণিত, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্রের শুর"তে মুশরিকদের মুখপাত্র সুহাইল ইবনে আমর আপত্তি করে বলল, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ক? আমরা তা জানি না। আরবের প্রথা অনুযায়ী বিসমিকাল্লাহুম্মা লেখ। তদুত্তরে
সাহাবায়ে কেরামও বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ছাড়া সন্ধিপত্র লিখব না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৭৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৩৮২৭
সুতরাং চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ লিখনির শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা সুন্নত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ যেমন ৭৮৬ লিখলে ঐ সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহ-এর সওয়াবও পাওয়া যাবে না। আর বিসমিহী তাআলা লিখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফযীলত তো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখার সুন্নাত আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ লিখবে না; বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে নিলে চলবে।-শরহু মুসলিম, নববী ২/৯৮; শরহুল মুনইয়াহ প" : ২; রদ্দুল মুহতার ১/৯; আততাকরীর ওয়াত তাহবীর ১/৪; মাআরিফুস সুনান ১/২; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৪; ফাতাওয়া উছমানী ১/১৬৩
আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হই। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা...
আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হই। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা জখম হয়। হাতের জখম সবসময় ব্যান্ডেজ করা থাকে। তাই অযুর সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করি। নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর পর হাতের ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করার কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করার পর ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ব্যান্ডেজ লাগালে অযু বা মাসেহ কিছুই নষ্ট হয় না। তবে এত্রে নতুন ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে নেওয়া উত্তম। হ্যাঁ, ক্ষত ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যান্ডেজ খোলা হলে পূর্বের মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পূর্বের অযু বহাল রাখতে হলে মাসেহের স্থান ধুয়ে নিতে হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০
ঢাকার এক মসজিদের অযুখানায় লেখা আছে, যে ব্যক্তি অযুর শুরুতে...
ঢাকার এক মসজিদের অযুখানায় লেখা আছে, যে ব্যক্তি অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে, অযু ভঙ্গের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা তার আমলনামায় সওয়াব লিখতে থাকবে। (তারগীব) এই সহীহ ও দলিলভিত্তিক কি না? এছাড়া শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার অন্য কোনো হাদীস আছে কি না? দয়া করে জানাবেন।
অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা অথবা আল্লাহ তাআলার নামের কোনো যিকির দ্বারা অযু শুরু করাসুন্নত ও ফযীলতের কাজ। একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস রা.-এর সূত্রে নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নামে অযু শুরু কর। (সহীহ ইবনে খুযাইমা,হাদীস : ১৪৪)
হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে নির্ভরযোগ্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তির নামায হবে না, যার অযু নেই। আর ঐ ব্যক্তিরঅযু হবে না (অর্থাৎ অযুর সওয়াব পাবে না), যে অযুর শুরতে আল্লাহর নাম পাঠ করবে না।(মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস : ৫৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫)
হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত আরেকটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা বিসমিল্লাহিররাহমানির রাহীম দ্বারা শুরু করা হয়নি তা অসম্পূর্ণ।-জামে সগীর, সুয়ূতী, হাদীস : ৬২৮৪
কোনো কোনো বর্ণনায় বিসমিল্লাহ-এর পরিবর্তে ‘বিযিকরিল্লাহ’ আর কোনো বর্ণনায় ‘বিহামদিল্লাহ’শব্দ এসেছে। তাই ফকীহগণ ও মুহাদ্দিসগণ এ সংক্রান্ত সকল হাদীসের সমন্বয়ে এ কথা বলেছেনযে, বিসমিল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো যিকির দ্বারা শুরু করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং এরফযীলতও অর্জিত হবে।
আর প্রশ্নোল্লেখিত বর্ণনাটি মুজামে সগীর, তবারানী নামক গ্রন্থে (১/৭৩) সাহাবী হযরত আবুহুরায়রা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। কিন্তু এর সনদ নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ এর বর্ণনাকারীদেরমধ্যে ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ নামে একজন ব্যক্তি রয়েছেন, তার সম্পর্কে হাফেয ইবনে আদী(মৃত : ৩৬৩ হি.), হাফেয যাহাবী (মৃত্যু : ৭৪৮ হি.) এবং হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (মৃত্যু : ৮৫২ হি.) বলেছেন, তার থেকে অনেক মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য রেওয়ায়েত বর্ণিতহয়েছে। দেখুন : আলকামিল ফিযযুয়াফা ১/২৬২; মীযানুল ই’তিদাল ১/৯১; লিসানুল মীযান ১/৯৮
এছাড়াও উক্ত সনদে আরেকজন বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদের উস্তাদ আলী ইবনে সাবিতআছে, যাকে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. মাজহুল অর্থাৎ অজ্ঞাত বলেছেন। দেখুন :নাতাইজুল আফকার ১/১৬৮
এ প্রেক্ষিতে হাদীস বিশরাদগণ এই বর্ণনাটিকে মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য আখ্যাদিয়েছেন।
-মুজামুস সগীর, তবারানী ১/৭৩; মীযানুল ইতিদাল ১/৯১; নাতাইজুল আফকার, হাদীস : ১৬৩; নায়লুল আওতার ১/১৩৪; আলমাসনূ’ পৃষ্ঠা : ২০৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫; মাআরিফুস সুনান ১/৪; শরহুন নববী ২/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১০৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮
শুনেছি, ব্যবহৃত পানি দ্বারা অযু বা গোসল করার অনুমতি নেই।...
শুনেছি, ব্যবহৃত পানি দ্বারা অযু বা গোসল করার অনুমতি নেই। কিছুদিন আগে ফরয গোসল করার সময় আমার গা বেয়ে পানির বেশ কিছু ছিটা বালতিতে পড়ে । পানির স্বল্পতার কারণে ঐ পানি দিয়েই গোসল সম্পন্ন করি। ঐ পানি দ্বারা আমার গোসল হয়েছে কি না?
উল্লেখ্য, গোসলের সময় শরীর এবং কাপড়ের কোথাও বাহ্যিক কোনো নাপাকি ছিল না।
আপনার ঐদিনের গোসল সহীহ হয়েছে। কেননা ফরয গোসলের সময় শরীরে বাহ্যিক নাপাকিলেগে না থাকলে শরীর থেকে পানির ছিটা বালতি, ড্রাম বা এ ধরনের ছোট পাত্রে পড়লেও সে পানিদিয়ে অযু-গোসল করা যাবে। এ কারণে ঐ পানি অযু-গোসলের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েযাবে না। বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম যুহরী রাহ.কে জনৈক ব্যক্তির (গোসলের হুকুম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকরা হয়, যার গোসল করার সময় গা বেয়ে পানির ছিটা পাত্রে পড়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন,এতে ক্ষতির কিছু নেই।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/৯২, হাদীস : ৩১১
প্রকাশ থাকে যে, গোসলের পূর্বে শরীর এবং কাপড় থেকে বাহ্যিক নাপাকি দূর না করে গোসলকরলে যদি নাপাক স্থান থেকে পানি ছিটে বালতির পানিতে পড়ে তবে ঐ পানি নাপাক হয়েযাবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/১০৪
আমাদের এলাকায় পানির খুব সঙ্কট। তাই আমরা বাসা-বাড়িতে টেপ কলে...
আমাদের এলাকায় পানির খুব সঙ্কট। তাই আমরা বাসা-বাড়িতে টেপ কলে অযু করলে ব্যবহৃত পানি নিচে রাখা পাত্রে জমা হয়। বাহ্যত তাতে কোনো ময়লা বা নাপাকি দেখা যায় না। অযুর আগে হাত-পায়েও কোনো নাপাকি থাকে না। তাই এ পানি কি গাড়ি ধোয়া, ঘরের মেঝে মোছার কাজে ব্যবহার করা যাবে, না তা নাপাক ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
অযুতে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র নয়। তাই এ পানি প্রশ্নে উল্লেখিত কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। আর তা পানাহারের কাজে ব্যবহার করা মাকরূহ।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৪; আসসিআয়াহ ১/৪০০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৭৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০০
আমি একবার ভুলে অযুর মধ্যে হাত ধোয়ার পর পা ধুয়ে...
আমি একবার ভুলে অযুর মধ্যে হাত ধোয়ার পর পা ধুয়ে ফেলি। এরপর মাথা মাসাহ করি। জানতে চাই, আমার অযু সহীহ হয়েছে কি? অযুর মধ্যে ক্রমানুসরণ কি জরুরি? তা ছুটে গেলে অযু সহীহ হবে কি?
হ্যাঁ, আপনার অযু হয়ে গেছে। অযুর অঙ্গগুলো ধোয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মুখ, এরপর হাত ধোয়া অতপর মাথা মাসাহ করা এবং সবশেষে পা ধোয়া-এভাবে তরতীবের সাথে অযু করা সুন্নত। এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। তবে কখনো এ তারতীব ছুটে গেলে অযু শুদ্ধ হয়ে যাবে। পুনরায় অযু করা লাগবে না।
-মুসনাদে আহমদ ১/৫৯, হাদীস : ৪২১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৬; কিতাবুল আছল ১/৩০; মাবসূত, সারাখসী ১/৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮
আমি আপেল ইত্যাদি খাওয়ার সময় কামড় দেওয়ার জায়গায় অতি সামান্য...
আমি আপেল ইত্যাদি খাওয়ার সময় কামড় দেওয়ার জায়গায় অতি সামান্য রক্ত লক্ষ করি। কিন্তু থুথু ফেললে তেমন কিছু দেখি না। কিংবা সামান্য একটু চিহ্ন দেখতে পাই। এই কারণে আমার অযু ভঙ্গ হয় কি না? জানালে উপকৃত হব।
আপেল বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো খাবারে যে সামান্য রক্ত দেখতে পেয়েছেন তা যেহেতু অতি সামান্য তাই এ কারণে অযু নষ্ট হয়নি। আর থুথুর সঙ্গে যে সামান্য রক্তের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন ঐ সামান্য পরিমাণ রক্তও অযু ভঙ্গের কারণ নয়। কেননা, থুথুর চেয়ে রক্ত বেশি হলে কিংবা অন্তত সমান সমান হলেই কেবল অযু নষ্ট হয়। এ পরিমাণ রক্ত বের হলে থুথু টকটকে লাল বা লালচে বর্ণ ধারণ করবে। আর এর কম হলে থুথু হলদে বা প্রায় সাদা থাকবে এ অবস্থায় অযু ভাঙ্গবে না। তবে আপেলের যে জায়গায় রক্ত লেগেছে তা খাবেন না; বরং ফেলে দিবেন।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৯৩; কিতাবুল আছল ১/৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৮; শরহুল মুনইয়াহ ১৩২
আমরা জানি, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে গেলে অযু করে এসে...
আমরা জানি, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে গেলে অযু করে এসে সাত চক্করের অবশিষ্ট চক্কর দিলেই তাওয়াফ পূর্ণ হয়ে যায়। পুনরায় পুরো সাত চক্কর দিতে হয় না। সেদিন একজন বললেন, তাওয়াফ শুরুর প্রথম তিন চক্করের মধ্যে অযু চলে গেলে অযু করে এসে পুরো সাত চক্কর দিতে হবে। মাসআলা কী জানাতে অনুরোধ করছি।
তাওয়াফের তিন চক্কর বা এর কম আদায়ের পর অযু নষ্ট হয়ে গেলে অযু করে এসে পুনরায় শুরু থেকে সাত চক্কর পূর্ণ করা মুস্তাহাব। তবে এক্ষেত্রে অযু করে আসার পর অবশিষ্ট চক্করগুলো করে নিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।
আর তাওয়াফের চার চক্কর বা এর বেশি আদায়ের পর অযু নষ্ট হলে উত্তম হল, অযু করে এসে পুনরায় প্রথম থেকে চক্কর শুরু না করে শুধু অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করা। তবে এক্ষেত্রেও কেউ যদি পুনরায় প্রথম থেকে সাত চক্করই পূর্ণ করে তাহলে সেটিও সহীহ হবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি বিষয়টিকে মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করে থাকে তাহলে তার কথা ঠিক আছে।
-সহীহ বুখারী ১/২২০; ফাতহুল বারী ৩/৫৬৫; কিতাবুল আসল ২/৪০৩; মাবসূত, সারাখসী ৪/৪৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; আলবাহরুল আমীক ২/১১৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১২৭
জনৈক ব্যক্তি বলেছে, কুরআন তেলাওয়াতের সময় অযু নষ্ট হয়ে গেলে...
জনৈক ব্যক্তি বলেছে, কুরআন তেলাওয়াতের সময় অযু নষ্ট হয়ে গেলে মুখ বা ঠোঁটের দ্বারা কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টানো যায় এবং এর দ্বারা অযু ছাড়া কুরআন ধরার গুনাহ হয় না। জানতে চাই, তার কথাটি কি ঠিক?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। অযু ছাড়া যেমনিভাবে হাত দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করা যায় না, তেমনিভাবে বিনা অযুতে মুখ, ঠোঁট, জিহবা দিয়েও কুরআন মজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয।
-সুনানে দারেমী ২/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১/২০৩; আলমুতহাফ ফী আহামিল মুসহাফ ৪৪৬
একদিন অযু করার সময় মাথা মাসেহ করতে ভুলে যাই। নামায...
একদিন অযু করার সময় মাথা মাসেহ করতে ভুলে যাই। নামায শেষে মনে হয়েছে মাসাহ করিনি। এখন ঐ নামায কি পুনরায় পড়তে হবে?
হ্যাঁ, ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে। মাথা মাসেহ করা ফরয তাই মাথা মাসেহ না করার কারণে তার অযুই হয়নি। বিখ্যাত তাবেয়ী আতা রাহ. বলেন, তুমি যদি ভুলে মাথা মাসেহ করা ছাড়াই নামায পড়ে ফেল অতপর নামায শেষে স্মরণ হয় তাহলে মাথা মাসাহ করে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নাও।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/১৫; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৫
আমি ইশার নামায পড়ার জন্য অযু করেছি। মসজিদে যাব। ইতিমধ্যে...
আমি ইশার নামায পড়ার জন্য অযু করেছি। মসজিদে যাব। ইতিমধ্যে আমার বাবা বললেন, তোমার রক্তের গ্রুপ কী? আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, এখনি রক্ত পরীক্ষা কর। আমি বাসা থেকে বের হয়ে গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য রক্ত দিয়েছি। অতপর মসজিদে গিয়ে নতুন করে অযু করা ছাড়াই ইশার নামায আদায় করেছি। নামাযের পর আমার এক বন্ধুর সাথে আলাপ হলে সে বলল, তোমার নামায হয়নি। কারণ ইনজেকশন দিয়ে রক্ত নিলে অযু ভেঙ্গে যায়। জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক?
হ্যাঁ, আপনার ওই বন্ধুর কথা ঠিক। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করলেও অযু ভেঙ্গে যায়। গড়িয়ে পড়তে পারে এতটুকু পরিমাণ রক্ত বের হলে বা বের করলে অযু থাকে না। অতএব আপনাকে ঐ দিনের ইশা ও বিতর নামাযগুলোর কাযা পড়ে নিতে হবে।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/১৪৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৫
এক ব্যক্তি পেশাব ঝরার রোগে আক্রান্ত। তাই তিনি পেশাবের রাস্তায়...
এক ব্যক্তি পেশাব ঝরার রোগে আক্রান্ত। তাই তিনি পেশাবের রাস্তায় টিস্যু গুঁজে রাখেন। কিছু সময় পর টিস্যু খুললে দেখা যায়, সেটির ভিতরের অংশ কিছুটা ভিজা।
এমতাবস্থায় তার নামাযের হুকুম কী? এবং সে কোনো সময় ইমামতি করলে তার পিছনে সুস্থ লোকদের ইকতিদা সহীহ হবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি পেশাবের রাস্তায় গুঁজে রাখা টিস্যুর ভিতরের অংশটুকু শুধু ভিজে, বাইরের অংশে তরলতা না পৌঁছে; বরং শুষ্ক থাকে তাহলে যতক্ষণ ঐ টিস্যু সেখানে লাগানো থাকবে ততক্ষণ ঐ কারণে লোকটির অযু ভঙ্গ হবে না। এ অবস্থায় তার নিজের নামায পড়া এবং অন্যের ইমামতি করা সহীহ হবে। তবে টিস্যু খুলে ফেললে বা সেটি পড়ে গেলে অযু ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে তাকে নতুন করে অযু করে নামায পড়তে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ১২৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৮-১৪৯
কয়েকদিন হল আমার সর্দি লেগেছে। এক পর্যায়ে সর্দি ঘন ও...
কয়েকদিন হল আমার সর্দি লেগেছে। এক পর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘণ ও শক্ত সর্দির সাথে জমাট রক্ত বের হয়। এতে আমার অযু ভাঙ্গবে কি না?
নাক দিয়ে জমাট রক্ত বের হলে অযু ভাঙ্গে না। সুতরাং সর্দির সাথে জমাট রক্ত বের হলেও অযু নষ্ট হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/২০৩; ১/১৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/১২৭; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯
একজন বলল যে, নখ বড় থাকলে অযু সহীহ হয় না।...
একজন বলল যে, নখ বড় থাকলে অযু সহীহ হয় না। এ কথা কি ঠিক?
না, এ কথা ঠিক নয়। কেননা নখ বড় থাকা সত্ত্বেও যদি নখের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায় তাহলে অযু সহীহ হয়ে যাবে। তবে নখ বড় হওয়ার কারণে তাতে আটা বা ময়লা জমে থাকার কারণে যদি নখের গোড়ায় পানি না পৌঁছে তাহলে অযু সহীহ হবে না। উল্লেখ্য, নখ বড় রাখা সুন্নতের খেলাফ। তাই নিয়মিত নখ কেটে ছোট করে রাখতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; ফাতহুল কাদীর ১/১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৯০; মারাকিল ফালাহ ৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩
আমরা অনেক সময় আমাদের উস্তাদ এবং মুরববীদের খেদমত করতে...
আমরা অনেক সময় আমাদের উস্তাদ এবং মুরববীদের খেদমত করতে চাই। এ উদ্দেশ্যে অযুর সময় তাঁদেরকে পানি ঢেলে দেই। অযু তাঁরা নিজ হাতে করেন। কিন্তু কোনো কোনো সময় তাঁরা অযুর ক্ষেত্রে এতটুকু খেদমত নিতেও পছন্দ করেন না; বরং স্পষ্টভাবে নিষেধ করেন।
জানার বিষয় হল, কোনো ওজর না থাকলে অযুর মধ্যে অন্যের দ্বারা শুধু পানি ঢালার সহযোগিতা নেওয়া কি অনুচিত? শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কি অপছন্দনীয়? হাদীস-আছার ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির বরাতসহ বিষয়টির সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কোনো ওজর না থাকলেও অন্যের দ্বারা শুধু অযুর পানি ঢেলে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা নেওয়া জায়েয। এটি মাকরূহ নয়। একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্ন সময় অযুর পানি ঢেলে দেওয়া হত আর তিনি নিজে অযু করতেন। তদ্রূপ অনেক সাহাবী-তাবেয়ী থেকেও অযুর ক্ষেত্রে এ ধরনের সহযোগিতা নেওয়ার কথা হাদীসের কিতাবে আছে।
-সহীহ বুখারী ১/৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ ২৩; সুনানে নাসাঈ ১/১২; সহীহ মুসলিম ১/১৩৩, ৪১৬; ইলাউস সুনান ১/১৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়অ ১/১১২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৭; শরহুল মুনইয়াহ ৩১
একদিন রাত্রে আমার স্বপ্নদোষ হয়। ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে...
একদিন রাত্রে আমার স্বপ্নদোষ হয়। ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে দেখি, সূর্যোদয়ের মাত্র বিশ মিনিট বাকি আছে। তাড়াতাড়ি পুকুর ঘাটে গোসল করতে গিয়ে দেখি, আমার খুব ঘনিষ্ট আত্মীয়দের মধ্যে দু’ একজন ঘাটে কাজ করছেন, যাদের সামনে গোসল করা খুব লজ্জার ব্যাপার। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম, কি করা যায়, অন্য কোথায় গোসল করা যায়। কিন্তু ভাবতে ভাবতে সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। মাত্র ৫/৭ মিনিট বাকি আছে। তাই গোসল না করে অযু ও তায়াম্মুম করে নামায আদায় করি।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার তায়াম্মুম করা সহীহ হয়নি। কারণ পানি থাকা অবস্থায় লোকলজ্জার কারণে তায়াম্মুম করা সহীহ নয়। সুতরাং তায়াম্মুম করে আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়নি। ঐ নামায কাযা করে নিতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩০) উল্লেখ্য, এ ধরনের ক্ষেত্রে লজ্জা পাওয়া বাঞ্চনীয় নয়। আর স্বভাবগত লজ্জার অজুহাতে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করা যায় না।
অযুতে মাথা মাসেহর সময় কান মাসেহ করার হুকুম কী? এ...
অযুতে মাথা মাসেহর সময় কান মাসেহ করার হুকুম কী? এ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস আছে কি জানিয়ে বাধিত করবেন।
অযুতে কান মাসেহ করা সুন্নত। মাথা মাসেহর পর ভেজা হাত দিয়ে কান মাসেহ করে নিবে। এজন্য নতুন পানি নিবে না। কান মাসেহ করা সম্পর্কে জামে তিরমিযীতে একটি হাদীস আছে। রুবাইয়ি বিনতে মুয়াওয়িয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করতে দেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার সম্মুখ ভাগ ও পিছন ভাগ এবং মাথার উভয় পার্শ্ব ও কান একবার মাসেহ করেছেন। (জামে তিরমিযী ১/৭)
ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটিকে হাসানুন সহীহ বলেছেন। এছাড়া কান যে মাথার অংশ এ সম্পর্কেও হাদীস-আছার রয়েছে।
দেখুন : ইলাউস সুনান ১/৮৫; আসসিআয়াহ ১/১৩৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১/২৯৫
যদি কেউ ওয়াকফিয়া মসজিদ অন্যত্র নিয়ে সে স্থানে মসজিদের অযুখানা,...
যদি কেউ ওয়াকফিয়া মসজিদ অন্যত্র নিয়ে সে স্থানে মসজিদের অযুখানা, বাথরুম বা অন্য কিছু করার সংকল্প করে তাহলে এর হুকুম কী?
কোনো স্থানে একবার মসজিদ বানানো হলে তা সর্বদা মসজিদ হিসাবে বহাল রাখা জরুরি। ঐ জায়গা মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। তাই পূর্ব থেকে মসজিদ আছে এমন স্থানে অযুখানা-বাথরুম বা অন্য কিছু করা জায়েয হবে না; বরং তা মসজিদ হিসাবেই সংরক্ষণ করতে হবে।
আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮
আমাদের এলাকার জনৈক মুরব্বী ওযুতে হাত কনুই থেকে ধোয়া শুরু...
আমাদের এলাকার জনৈক মুরব্বী ওযুতে হাত কনুই থেকে ধোয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, এভাবে ধোয়া সুন্নত। কিন্তু আমরা মক্তবে যেভাবে শিখেছি এতে তার কথা উল্টো মনে হয়। হাত ধোয়ার সুন্নত নিয়ম কি এমনই? সঠিক সমাধান জানালে উপকৃত হব।
ঐ মুরব্বীর কথা ঠিক নয়। অযুতে হাত ধোয়ার সুন্নত নিয়ম হল, আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে কনুইয়ের দিকে ধৌত করা। কনুই এর দিক থেকে ধোয়া শুরু করা সুন্নত নিয়ম নয়।
সহীহ বুখারী ১/২৮; সহীহ মুসলিম ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩
বিনা অযুতে আযান দেওয়া কি অশুদ্ধ? আযানের জন্য অযু কি...
বিনা অযুতে আযান দেওয়া কি অশুদ্ধ? আযানের জন্য অযু কি শর্ত?
আযানের জন্য অযু শর্ত নয়। অযু অবস্থায় আযান দেওয়া সুন্নত। বিভিন্ন হাদীসে অযু অবস্থায় আযান দেওয়ার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। তাই বিনা অযুতে আযান দেওয়া অনুত্তম। তবে আযান শুদ্ধ হয়ে যাবে।
সহীহ বুখারী ১/৮৮; জামে তিরমিযী ১/২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩৩৬; ইলানউস সুনান ২/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২
খ) অনেক সময় ঘরে সুন্নত দু’ রাকাত পড়ি। এভাবে তাহিয়াতুল...
খ) অনেক সময় ঘরে সুন্নত দু’ রাকাত পড়ি। এভাবে তাহিয়াতুল অযু দু’ রাকাত ঘরেই পড়ব কি না?
গ) সুন্নত পড়ে মসজিদে গিয়ে দু’ রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ব কি না? জামাতের সময় এখন ৮-১০ মিনিট বাকি আছে। নাকি বসে দুআ, দুরূদ পড়ব?
ঘ) মসজিদে ঢুকে যে দু’ রাকাত নামায পড়ার কথা বলা আছে ফজরের সময় তার হুকুম কী?
ফজরের সময় হওয়ার পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন- ফজরের সুন্নত ব্যতিত যে কোনো নফল নামায পড়া মাকরূহ। চাই তা ঘরে পড়া হোক কিংবা মসজিদে। অতএব ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর তাহিয়াতুল অযু বা দুখুলুল মসজিদ পড়বে না। এ সময় তাসবীহ-তাহলীল, দরূদ শরীফ ইত্যাদি পড়বে।
পড়বে।-সুনানে আবু দাউদ ১/১৮১; হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ১/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪
অনেককে দেখা যায়, অযু শুরু করার পূর্বে প্রথমে পায়ে পানি...
অনেককে দেখা যায়, অযু শুরু করার পূর্বে প্রথমে পায়ে পানি ঢেলে নেয়। এরপর অযু করে। বিশেষভাবে শীতকালে এমনটি অধিক দেখা যায়। এক্ষেত্রে যুক্তি হল, পা আগে ভিজিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে ধোয়ার সময় পায়ের প্রত্যেক স'ানে পানি পৌঁছানো সহজ হয়। আমার জানার বিষয় হল, এর দ্বারা অযুতে তারতীবের সুন্নত বিনষ্ট হবে কি না? তাছাড়া এটা ইসরাফের অন-র্ভুক্ত হবে কি না?
পায়ের শুষ্কতা, ফাটা ইত্যাদির কারণে অযুর সময় আগে পা ভিজিয়ে নেওয়া কিংবা পায়ে পানি ছিটিয়ে দেওয়া দোষনীয় নয়; বরং উত্তমরূপে পা ধোয়ার জন্য সহায়ক। তাই এতে ইসরাফ হবে না।আর যেহেতু অযুর নিয়তে তা করা হয় না; বরং পরবর্তীতে সাধারণ নিয়মে মাথা মাসেহ করার পর পা ধোয়া হয়ে থাকে তাই পূর্বে পা ভেজানোর কারণে অযুর ধারাবাহিকতাও নষ্ট হবে না।
না।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯; হাশিয়া তহতাবী আলাদ্দুর ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৫৬
আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হয়েছি। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা...
আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হয়েছি। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা যখম হয়েছে। হাতের যখম সব সময় ব্যান্ডেজ করা থাকে। তাই অযুর সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করি। এক ঘন্টা পর পর ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হয়। জানতে চাই, ব্যান্ডেজ খোলার কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়? জানিয়ে বাধিত করবেন।
যখম ভালো হওয়ার আগে ব্যান্ডেজ খুলে গেলে বা খোলা হলে অযু বা মাসাহ কিছুই নষ্ট হয় না। তবে এক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ পরিবর্তনের পর পুনরায় মাসাহ করে নেওয়া উত্তম। হ্যাঁ, ক্ষত ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যান্ডেজ খুলে গেলে বা খোলা হলে পূর্বের মাসাহ বাতিল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ক্ষতস'ান ধুয়ে নিলেই পূর্বের অযু বহাল বলে গণ্য হবে।
হবে।-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৮৬; হাশিয়া তহতাবী আলাদ্দুর ১/১৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/২৭৯-২৮০; আলমাজমূ’ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩২৭
আমি অযু বা গোসল করে নামাযের প্রস'তি নিয়ে কোনো এক...
আমি অযু বা গোসল করে নামাযের প্রস'তি নিয়ে কোনো এক নির্দিষ্ট নামাযের উদ্দেশ্যে মুছল্লায় বা মসজিদে যাই। কিন' অনেক সময় চিন-ামগ্নতা বশত ঠিক তাকবীরে তাহরীমার মুহূর্তে নতুন করে নিয়ত না করেই নামায শুরু করে দেই এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নামায শেষ করি। এখন জানতে চাই, আমার এই নামাযের কী হুকুম? অর্থাৎ আগের নিয়তই এই নামাযের জন্য যথেষ্ট হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নিয়ত ও তাকবীরে তাহরীমার মাঝে নামায পরিপন'ী কোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে থাকলে পূর্বের নিয়তই যথেষ্ট। তবে এ ক্ষেত্রেও তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুনরায় নিয়ত করে নেওয়া উত্তম।
আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৭; মাবসূত সারাখসী ১/১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১; আসসিয়াআহ ২/৯৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৬-৪১৭
ক) গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে...
ক) গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম। কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় কি শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়লেই যথেষ্ট হবে নাকি তায়াম্মুমের সাথে অযুও করতে হবে?
খ) জনৈক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা বা শক্ত শক্ত অনুভব করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই এবং এটা কি বীর্য না অন্য কিছু তাও বুঝতে পারছে না। আমার প্রশ্ন হল,উল্লেখিত অবস্থায় কি ঐ ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরয?
ক) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়বে, অযু করবে না। তায়াম্মুমের সাথে অযু করার বিধান নেই।
উল্লেখ্য, গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পরে ঐ ব্যক্তি থেকে অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করা জরুরি। কেননা সে অযু করতে সক্ষম।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩, ৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৩০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪
খ) ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা পেলে কিংবা বীর্যের আলামত পেলে স্বপ্নের কথা স্মরণ না হলেও গোসল করা ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য গোসল করা ফরয। হাদীস শরীফে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠার পর ভিজা অনুভব করে, কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, তাকে গোসল করতে হবে। আর ঐ ব্যক্তি যার স্বপ্নের কথা স্মরণ আছে কিন্তু সে কাপড়ে বা শরীরে কোনো ভিজা পায়নি তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, না, তার জন্য গোসল করা জরুরি নয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৮-১৪৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬৯; ফাতহুল কাদীর ১/৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৩০-২৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩
আমাদের বাড়িতে বালতিতে পানি রাখা থাকে। সাধারণত আমি বালতি থেকে...
আমাদের বাড়িতে বালতিতে পানি রাখা থাকে। সাধারণত আমি বালতি থেকে বদনা বা মগ দিয়ে পানি নিয়ে অযু করি। মাঝেমধ্যে তাড়াহুড়ার কারণে বা পাত্র না পাওয়ার কারণে বালতিতে ডান হাত (কব্জি পর্যন্ত) ডুবিয়ে পানি নিয়ে অযুর জন্য হাত ধুই। একদিন আমাকে এভাবে অযু করতে দেখে আমার এক আত্মীয় বললেন, পানিতে হাত ডুবানোর কারণে তো পানি মুস্তামাল ও ব্যবহৃত হয়ে গেল। সুতরাং সেই পানি দ্বারা তো আর অযু হবে না। প্রশ্ন হল, আমি এভাবে অযু করে যে নামাযগুলো আদায় করেছি সেগুলো দোহরাতে হবে কিনা। জানিয়ে বাধিত করবেন।
পানি নেওয়ার জন্য কোনো পাত্রে হাত ঢুকালেই তা ব্যবহৃত হয়ে যায় না। তাই এক্ষেত্রে আপনার ঐ সকল অযু ও নামায সহীহ হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রথমে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে পানি নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া ভালো।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; রদ্দুল মুহতার ১/১১২
আমার এক সহপাঠী অযুতে চেহারা ধোয়ার সময় চোখ বন্ধ করে...
আমার এক সহপাঠী অযুতে চেহারা ধোয়ার সময় চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমি তাকে বললাম, চোখ বন্ধ রাখলে তো চোখের ভিতরে পানি প্রবেশ করে না। তাই আপনার অযু হবে না। সে বলল, চোখের ভিতরে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
অযু-গোসলে চোখের ভেতরের অংশ ধোয়ার হুকুম নেই। তবে চোখের পাতার উপরের সর্বত্র পানি পৌঁছানো জরুরি। তাই অযুর সময় চোখ বেশি এঁটে বন্ধ করবে না। কেননা, এতে পাতার ভাঁজে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪; রদ্দুল মুহতার ১/৯৭
আমার ছোট ছেলে ঘরের মেঝেতে প্রস্রাব করে। স্থানটি একটি ভেজা...
আমার ছোট ছেলে ঘরের মেঝেতে প্রস্রাব করে। স্থানটি একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ভালো করে দুই বার মুছে নেয়ার পর ফ্যানের বাতাসে মেঝেটি শুকিয়ে যায়। এতে পেশাবের গন্ধও ছিল না। অতঃপর নামাযের জন্য অযু করার পর অসতর্কতাবশত পেশাবের স্থানটিতে ভেজা পা পড়ে যায়। এ অবস্থায় পা না ধুয়েই নামায পড়ে নিয়েছি। আমার নামায কি সহীহ হয়েছে? পা ধোয়া কি জরুরি ছিল?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায সহীহ হয়েছে। ভেজা পায়ে ঐ জায়গায় চলাচলের দরুণ আপনার পা নাপাক হয়নি। কারণ মেঝেটি মোছার পর তা শুকিয়ে যাওয়া ও নাপাকীর প্রভাব নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার দ্বারা তা পাক হয়ে গেছে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/৪৩১; নাসবুর রায়া ১/২৭৭; ইলাউস সুনান ১/৩৯৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২
শীতকালে অনেককে দেখা যায় অযুর পূর্বে প্রথমে পা ভিজিয়ে নেয়।...
শীতকালে অনেককে দেখা যায় অযুর পূর্বে প্রথমে পা ভিজিয়ে নেয়। এটা কেমন?
শীতকালে শুষ্কতার কারণে চামড়ার ভাঁজে সহজে পানি পৌঁছে না। পা ভিজিয়ে নিলে ধোয়া সহজ হয়। তাই সতর্কতামূলক আগে পা ভিজিয়ে নেওয়া বা পানি ছিটিয়ে দেওয়া ভালো। এতে দোষের কিছু নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯; ইলাউস সুনান ১/১৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩১
আমাদের এলাকার জনৈক মুরববী অযুতে হাত কনুই থেকে ধোয়া শুরু...
আমাদের এলাকার জনৈক মুরববী অযুতে হাত কনুই থেকে ধোয়া শুরু করেন। হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম কি? সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হব।
অযুতে হাত ধোয়ার সুন্নত নিয়ম হল, আঙ্গুলের দিক থেকে ধোয়া। কনুই এর দিক থেকে ধোয়া সুন্নত নিয়ম নয়।
-সহীহ বুখারী ১/২৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৪
আমি একটি পাঞ্জাবি ধোয়ার জন্য বালতির পানিতে ভিজিয়ে রাখি। কিছুক্ষণ...
আমি একটি পাঞ্জাবি ধোয়ার জন্য বালতির পানিতে ভিজিয়ে রাখি। কিছুক্ষণ পর বলতি থেকে উঠিয়ে তা ধুয়েই নিই। একটু পর আমার অনুপস্থিতিতে আমার এক সহপাঠি এসে বালতির ঐ পানি দ্বারা অযু করে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, তার নামায কি আদায় হয়েছে? উল্লেখ্য, ঐ পাঞ্জাবিটা অপবিত্র ছিল না।
ব্যবহৃত পাক কাপড় পানিতে ভিজানোর দ্বারা ঐ পানি ব্যবহৃত পানির হুকুমে হয় না বা নাপাকও হয় না। তাই ঐ ব্যক্তির অযু হয়ে গেছে এবং ঐ অযু দ্বারা আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে।
-সহীহ মুসলিম ১/৩৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৫০; উমদাতুল ফিকহ ১/২৪৫
অযুর পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া কী? এতে কি কোনো ফযীলত...
অযুর পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া কী? এতে কি কোনো ফযীলত আছে? অনেককে আবার কালেমায়ে শাহাদাত পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকাতে দেখা যায়। এটার হুকুমও জানতে চাই।
অযুর পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-অর্থ : ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’ বলবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম ১/১২২)
অন্য এক বর্ণনায় কালেমায়ে শাহাদাত পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর কথাও আছে। তাই সম্ভব হলে এর উপর আমল করাও ভালো।
-সুনানে আবু দাউদ ১/২৩; মুসনাদে আহমদ ১/২৭৪; সুনানে তিরমিযী ১/১৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/২৩৬, ১৫/৪২৩
বাজারে যে নূরানী হাফেজী কুরআন মজীদ পাওয়া যায় তার উপরে...
বাজারে যে নূরানী হাফেজী কুরআন মজীদ পাওয়া যায় তার উপরে প্লাস্টিকের কভার থাকে। বিনা অযুতে কি এই কভারের উপর দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করা যাবে?
না, অযু ছাড়া এই কভারের উপর স্পর্শ করা যাবে না।
-রদ্দুল মুহতার ১/১৭৩-১৭৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ১৪৬
শীতকালে আমার হাত-পা ফেটে যায়। তাই শীতকাল এলে হাত-পায়ে বেশি...
শীতকালে আমার হাত-পা ফেটে যায়। তাই শীতকাল এলে হাত-পায়ে বেশি করে তেল বা লোশন মাখতে হয়। জানার বিষয় হল, অযু করার সময় যেহেতু পানি তেল লোশনের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই এতে কি অযু শুদ্ধ হবে?
হ্যাঁ, তেল বা লোশন ব্যবহারের পর তৈলাক্ত অঙ্গসমূহে স্বাভাবিকভাবে পানি পৌঁছালেই অযু হয়ে যাবে। তৈলাক্ততা দূর করে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৭০
আমার বন্ধু খালেদ অযু করে বাসে আরোহন করে সায়েদাবাদের উদ্দেশ্যে।...
আমার বন্ধু খালেদ অযু করে বাসে আরোহন করে সায়েদাবাদের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর ঝিমুনি আসলে সে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় দশ মিনিট ঘুমানোর পর জাগ্রত হয় এবং একটু পরই গন্তব্যস্থলে নেমে মাগরিবের নামায পূর্বের অযুতেই আদায় করে। তার নামায কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিটে বসে ঘুমানো অবস্থায় লোকটির কোমরের নিচের অংশ সিটের সাথে ভালোভাবে এঁটে লেগে থাকলে তার অযু নষ্ট হয়নি বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে ঐ অযু দিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। তবে এধরনের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পুনরায় অযু করে নেওয়া ভালো। আর যদি ঘুমন্ত অবস্থায় সিট থেকে কোমরের নীচের অংশ পৃথক হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে অযু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯
নামাযে পেশাবের ফোঁটা নির্গত হয়েছে বলে মনে হলে করনীয় ৷
-শরহুল মুনইয়া ১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করা ৷
-রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
কুরআনের আয়াত বিশিষ্ট লেমিনেটিং করা কাগজে স্পর্শ করা ৷
-আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩, হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুররিল মুখতার ১/১৫১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
ফরজ গোসলে নাকের নরম জায়গায় পানি না পৌছিয়ে ভিজা আঙ্গুল দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া ৷
আর নাকের ভিতরে পানি পৌছানোর পদ্ধতি হল, প্রথমে নাকে পানি পৌঁছাবে। এরপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা পরিষ্কার করে নিবে যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে তিনবার পানি প্রবেশ করাবে।
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫১ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
অযুতে থুতনির নিচের অংশ ধৌত করার বিধান ৷
-আস সেআয়া ১/৪৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জমিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
অযুতে হাত পায়ের আঙ্গুল খিলাল করার বিধান ও নিয়ম ৷
পায়ের আঙ্গুল খিলাল করার নিয়ম হল, খিলাল করবে বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে এবং শুরু করবে ডান পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে । খিলালের সময় পায়ের উপর দিক দিয়ে আঙ্গুল প্রবেশ করাবে তারপর আঙুলের গোড়া থেকে উপরের দিকে টেনে নিয়ে আসবে ৷
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; জামে তিরমিযী ১/১৬ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ খুলে গেলে বা খুলা হলে অযুর হুকুম!
তবে ক্ষত ভালো হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যান্ডেজ খুলে গেলে বা খোলা হলে পূর্বের মাসাহ বাতিল হয়ে যাবে ৷ এক্ষেত্রে ক্ষতস্থান ধুয়ে নিলেই পূর্বের অযু বহাল থাকবে৷
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৮৬; রদ্দুল মুহতার ১/২৭৯ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
বালতির ভিতরে হাত ডুবিয়ে অযু করা ৷
মাঝেমধ্যে তাড়াহুড়ার কারণে বালতিতে হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে অযু করি । একদিন আমাকে এভাবে অযু
করতে দেখে একজন বললেন, পানিতে হাত ডুবানোর কারণে পানি নাকি ব্যবহৃত হয়ে গেছে। আর ব্যবহৃত পানি দ্বারা অযু হয় না। তাই জানার বিষয় হলো, তার কথা কি ঠিক? আর আমি এভাবে অযু করে যে নামায পড়েছি তা পুনরায় পড়তে হবে কিনা। জানিয়ে বাধিত করবেন।
সহীহ হয়েছে। কিন্তু যদি অযু করে বালতির ভিতরে-ই পানি ফেলে থাকেন ৷ তাহলে উক্ত পানি ব্যবহৃত হয়ে গেছে ৷ এবং এক্ষেত্রে আপনার ঐ সকল অযু ও নামায
সহীহ হয়নি ৷ পুনরায় পড়তে হবে ৷
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮০; রদ্দুল মুহতার ১/১১২৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
মেয়েদের জন্য মেহেদী লিপষ্টিক ও নেল পালিশ ব্যবহার করা ৷
অতএব মেয়েদের সুন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেহেদী ব্যবহার করা জায়েজ। কারন মেহেদী হাতকে রঙ্গিন করে ৷
কিন্তু চামড়ায় পানি প্রবেশ করতে বাঁধা দেয় না।
তবে লিপষ্টিক ও নেলপলিশ চামড়ায় পানি প্রবেশ করতে বাঁধা প্রদান করে বিধায় যেসব মহিলাদের উপর নামায ফরজ তাদের জন্য এসব জিনিষ ব্যবহার করা বৈধ নয়৷ তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আর যাদের উপর নামায ফরজ নয় যেমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে ৷ বা পিড়িয়ড ইত্যাদির কারনে যে সময় নামায পড়া মেয়েদের উপর ফরজ নয় সেই সময় লিপষ্টিক, নেল পালিশ ব্যবহার করা বৈধ৷ তবে দু'টি শর্তে যথা:
১৷ পিড়িয়ড ইত্যাদির সময় শেষ হওয়ার আগে তা মুছে যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকা ৷
২৷ এগুলোতে কোন প্রকার নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকা৷
আর নামাযের বিষয়টির সম্পর্ক অযুর সাথে ৷ মেয়েদী ব্যবহার করার কারনে অযু সহীহ হয়ে যায় ৷ তাই নামায সহীহ হবে ৷ কিন্তু লিপষ্টিক নিল পালিশ ব্যবহার করলে পানি চামড়ায় পৌছতে বাঁধা প্রদান করে বিধায় অযু না হওয়ার কারনে নামায সহীহ হবে না ৷
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393
ফজরের সময় তাহিয়াতুল অযু ও দুখুলুল মসজিদ নামায পড়া ৷
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৮১; ফাতহুল কাদীর ১/২৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393
গোসল ফরজ অবস্থায় করনীয় বর্জনীয়৷
এছাড়া জিকির-আযকার করা, দরুদ শরীফ পড়া, ওযীফা পড়া, বিভিন্ন দোয়া পড়া, ঘরের কাজ করা, পানাহার ইত্যকার কোনো কাজই নিষেধ নয়।
বহু হাদীসে এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে মদিনার কোন এক পথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখা হল। আবু হুরায়রা (রা.) তখন জানাবাতের গোসল ফরজ অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে নাপাক মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবু হুরায়রা (রা.) গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাৎ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস৷করলেন, আবু হুরায়রা ! কোথায় ছিলে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আমি জানাবাতের অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করি নি। নবীজী বললেন,
ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺇﻥ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﻻ ﻳﻨﺠﺲ সুবাহানাল্লাহ্! মু’মিন নাপাক হয় না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৯৷
তবে একেবারে নিষেধ না হলেও উল্লেখিত কাজগুলোর আগে গোপনাঙ্গ ধুয়ে নেয়া ও অজু করে করে নেয়ার কথা একাধিক হাদীসে এসেছে।
যেমন-
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জানাবাতের গোসল ফরজ অবস্থায় পানাহার কিংবা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে নামাজের অজুর মত অজু করে নিতেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০৫
উল্লেখ্য, ফরজ গোসল বিলম্বিত হওয়ার কারণে যদি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে আপনাকে গুনাহগার হবেন। আপনার তীব্র লজ্জা এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য
কোনো ওজর নয়; যার কারণে নামায আদায়ে এ বিলম্ব করা যেতে পারে। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
অযুর শুরুতে পা ধোয়ে নেওয়া ৷
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯; হাশিয়া৷তহতাবী আলাদ্দুর ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৫৬৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার পর খোলা হলে করনীয়৷
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৮৬৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
অযুর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া৷
01756473393
দাড়ি ঘন হলে অযুতে করনীয়৷
পরিমাণ?
উল্লেখ্য, ‘বেকায়া’ কিতাবে আছে ‘দাড়ির এক চতুর্থাংশ মাসহ করা ফরয’ কথাটি কি ঠিক?
01756473393
পাত্রে হাত ঢুকিয়ে অযু করলে পানি ব্যবহৃত হয় কিনা?
পানি নিয়ে অযু করি। মাঝেমধ্যে তাড়াহুড়ার
কারণে বা পাত্র না পাওয়ার কারণে বালতিতে ডান
হাত (কব্জি পর্যন্ত) ডুবিয়ে পানি নিয়ে অযুর
জন্য হাত ধুই। একদিন আমাকে এভাবে অযু করতে দেখে আমার এক আত্মীয় বললেন, পানিতে হাত ডুবানোর কারণে তো পানি মুস্তামাল ও ব্যবহৃত হয়ে গেল। সুতরাং সেই পানি দ্বারা তো আর অযু হবে না। প্রশ্ন হল, আমি এভাবে অযু করে যে নামাযগুলো আদায় করেছি সেগুলো দোহরাতে হবে কিনা। জানিয়ে বাধিত
করবেন।
নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া
ভালো।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫;
রদ্দুল মুহতার ১/১১২৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
অসুস্থ ব্যক্তির গোসল ফরজ হলে করনীয়৷
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩, ৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০; আলমুহীতুল
বুরহানী ১/৩৩০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
পোষ্টার ব্যানারে বিসমিল্লাহ লেখা বা তার পরিবর্তে ৭৮৬ লেখা৷
গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা
অপরিহার্য। এবং হাদীসের আলোকে আমরা এও জানি যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ব্যতীত অপূর্ণ ও বরকতশূন্য। এখন আমার জানার বিষয় হল, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ও কাজ আছে, যার
গুরুত্ব ও প্রয়োজন সাময়িক। যথা-দাওয়াতনামা,
পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি। নির্ধারিত সময় পার
হওয়ার পর এসবের কোনো গুরুত্ব থাকে না বিধায় তা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। এমনকি অনেক সময় পদপিষ্টও হয়। অতএব
এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আরবী ভাষায় বা বাংলা উচ্চারণে লেখা যাবে
কি?
খ)
যেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখার বিধান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ অথবা বিসমিহী তাআলা লিখলে
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর সওয়াব অর্জিত
হবে কি না? এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের আলোকে, ফুকাহায়ে কেরাম ও মুফতী সাহেবদের অভিমত প্রমাণাদিসহ জানালে কুরআন মজীদের মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হব এবং বিশেষভাবে উপকৃত হব।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন
মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। এর মর্যাদা ও
সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। এর হুকুম
কুরআন মজীদের অন্যান্য আয়াতের
মতোই। তাই অযু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না।
বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের স্থানে ব্যবহার করাও জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো
প্রয়োজন না থাকার দরুণ পথে-ঘাটে ও নর্দমায়
পড়ে থাকার আশঙ্কা থাকে এমনকি অনেক সময়
পদপিষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহীম লেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চাই তা আরবীতে লেখা হোক বা বাংলা উচ্চারণে। একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৪৬২৩, ৪৬২২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩৷
(খ)
চিঠিপত্র ও গুর"ত্বপূর্ণ লিখনির শুর "তে পুরো
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা সুন্নত।
আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ
আমল (অর্থাৎ খায়র "ল কুরূন থেকে অদ্যাবধি
উম্মতের অবি ""ছন্ন কর্মধারা) দ্বারা এটি প্রমাণিত।
কুরআন মজীদে হযরত সুলায়মান আ.-এর চিঠির আলোচনা এসেছে, যাতে বিসমিল্লাহি দ্বারা
শুর " করার কথা উল্লেখ রয়েছে।-সূরা নামল : ৩০
সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত মিসওয়ার
ইবনে মাখরামা রা. ও হযরত মারওয়ান ইবনে হাকাম
রা. থেকে বর্ণিত, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সন্ধিপত্রের শুর "তে মুশরিকদের মুখপাত্র সুহাইল ইবনে আমর আপত্তি করে বলল,
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ক? আমরা তা জানি না।
আরবের প্রথা অনুযায়ী বিসমিকাল্লাহুম্মা লেখ।
তদুত্তরে সাহাবায়ে কেরামও বললেন, আল্লাহর শপথ!
আমরা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ছাড়া সন্ধিপত্র
লিখব না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস৷
সুতরাং চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ লিখনির শুরুতে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা সুন্নত। এর
পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ যেমন ৭৮৬
লিখলে ঐ সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহ-
এর সওয়াবও পাওয়া যাবে না। আর বিসমিহী তাআলা
লিখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফযীলত
তো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির
রহীম লেখার সুন্নাত আদায় হবে না। প্রকাশ থাকে যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ লিখবে না; বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে নিলে চলবে।
-শরহু মুসলিম, নববী ২/৯৮; শরহুল মুনইয়াহ প " : ২; রদ্দুল মুহতার
১/৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
গাড়ীর সিটে বসে ঘুমালে অযু ভাঙ্গে কিনা?
এক্ষেত্রে ঐ অযু দিয়ে মাগরিবের নামায আদায়
করা সহীহ হয়েছে। তবে এধরনের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পুনরায় অযু করে নেওয়া ভালো। আর যদি ঘুমন্ত অবস্থায় সিট থেকে কোমরের নীচের অংশ পৃথক হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে অযু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
কুরআন শরীফের কভারের উপর অযু বিহিন স্পর্শ করা৷
পৃ. ১৪৬৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
তৈলাক্ত অঙ্গের উপর দিয়ে পানি পৌছালে অযু হবে কিনা?
01756473393
পাক কাপড় ভিজানো পানি দিয়ে অযু করে নামায পড়া৷
ছিল না।
01756473393
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো...
গোসলের সময় গলার উপরে ধোয়া তার জন্য সম্ভব নয়। তেমনি অযুর সময়ও সে চেহারা ধুতে পারবে না। এখন তার গোসল ফরয হলে সে কীভাবে গোসল করবে এবং এ অবস্থায় সে কীভাবে অযু করবে?
মাসাহ করবে। এছাড়া বাকি অযু যথানিয়মে করবে।
অর্থাৎ হাত, পা ধুবে এবং মাথা মাসাহ করবে। প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের রোগীর জন্য ভেজা হাত দ্বারা ব্যান্ডেজের উপর বা চোখের অংশে মাসাহ করাটা যদি ক্ষতিকর হয় তবে সেক্ষেত্রে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও
চলবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম...
কয়েকদিন হল, আমার সর্দি লেগেছে। একপর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত...
সর্দির সাথে জমাট রক্তও বের হয়। এতে আমার অযু ভাঙ্গবে কি?
আমি একদিন জামাতে নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার...
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো...
করবে।
আর অযুর সময় পুরো চেহারা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে। এছাড়া বাকি অযু যথানিয়মে করবে। অর্থাৎ হাত, পা ধুবে এবং মাথা মাসাহ
করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের রোগীর জন্য ভেজা হাত দ্বারা ব্যান্ডেজের উপর বা চোখের অংশে মাসাহ করাটা যদি ক্ষতিকর হয় তবে সেক্ষেত্রে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও চলবে। -আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮
আমার সন্দেহের রোগ আছে। অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই...
কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করি। তাছাড়া কোনোক্রমেই স্বস্তি পাই না। আমি জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী এবং এই সন্দেহের রোগ দূর করার উপায় কী?
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো...
-আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮৩
আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ। অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ...
যাবে?
নিবে।
-শরহুয যিয়াদাত ১/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫৭; কিতাবুল আসল ১/৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ১২৩
আমাদের এক সহপাঠী উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন এবং সিজদার...
আয়াত অনুচ্চস্বরেই তিলাওয়াত করা উচিত। কেননা উপস্থিত লোকজন সিজদা আদায়ে প্রস্তুত না থাকলে কিংবা ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে
সিজদার আয়াত উচ্চস্বরে না পড়া
উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৫
আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন...
কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত এবং আরো কিছু আয়াত ও
ছোট ছোট কয়েকটি সূরা টাইপ
করে লেমিনেটিং করে রেখেছি। সকাল-সন্ধ্যা এগুলো পাঠ করি। অনেক সময় দেখা যায়, পাঠকালে অযু থাকে না। তাই জানার বিষয় হল,
বিনা ওযুতে উক্তলেমিনেটিং করা কাগজ বা তার লেখা স্পর্শ করা জায়েয হবে কি?
ছাড়া লিখিত আয়াত বা সূরার উপর সরাসরি হাত লাগানো জায়েয হবে না।
তবে এটি যেহেতু কুরআন শরীফ নয় তাই
কাগজের যে অংশে আয়াত লেখা নেই তা স্পর্শ করা জায়েয হবে।
এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, লিখিত অংশের উপর যেন হাত না লাগে।
কিন্তু উক্ত কাগজে যেহেতু শুধু আয়াতই লিখা রয়েছে তাই সাদা অংশও অযু ছাড়া স্পর্শ না করা উচিত।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩, ২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭
শীতকালে অনেককে দেখা যায় অযুর পূর্বে প্রথমে পা ভিজিয়ে নেয়।...
অযুতে হাত পায়ের আঙ্গুল খিলাল করার বিধান কী? পায়ের আঙ্গুল...
অসুস্থতার কারণে আমি গোসল করতে পারি না। কিন্তু অযু করতে...
-কিতাবুল আস্ল ১/১০৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২
অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি...
নামায চলাকালীন অনিচ্ছাকৃত মূত্র ফোঁটা নির্গত হলে কি নামায বাতিল...
নতুনভাবে নামায পড়তে হবে। তবে নিশ্চিতভাবে প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলেই কেবল অযু নষ্ট হবে,শুধু সন্দেহের উপর
ভিত্তি করে নামায ছাড়া যাবে না। -আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১; শরহুল মুনইয়া ১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৪
জামাতে নামায আদায় করার সময় কারো অযু ছুটে গেলে নিয়ত...
হবে কি?
একটি কিতাবে তা জায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব বলছেন, এটা জায়েয হবে না। সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।
কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে অযু
ছুটে গেলে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে। অবশ্য মসজিদে মুসল্লী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে কাতারের মাঝখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও অযু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জা, সংকোচ বা অন্য কোনো কারণে বিনা অযুতে ইমামের সাথে রুকু সিজদা করতে থাকা ঠিক হবে না। কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে এমনটি করার কথা পাওয়া যায়নি। প্রশ্নোক্ত কিতাবের ঐ বক্তব্য ঠিক নয়।
এক ব্যক্তির কাছে শুনলাম, গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করা...
করবেন।
আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন...
আমি কিছুদিন পূর্বে গুরুতর আহত হই। এতে হাতসহ বিভিন্ন জায়গা...
এক লোক গত মাসে উমরায় গিয়েছিল। তার জানা ছিল না...
ছাড়া করেছে এগুলোর প্রত্যেক চক্করের জন্য
একটি করে সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। সুতরাং সে যদি দুটি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করে থাকে তবে সাতটি করে মোট চৌদ্দটি সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। এ সদকা হেরেমের এলাকায় করা উত্তম। হেরেমের বাইরে করলেও আদায় হয়ে যাবে। -আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৫২