আমার মাঝেমধ্যে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। মসজিদে গিয়ে...
আমার মাঝেমধ্যে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। মসজিদে গিয়ে দেখি ফজরের জামাত বেশ আগেই শুরু হয়ে গেছে। তখন জামাতে শরিক হয়ে যাই। সুন্নত আর পড়ার সুযোগ হয় না। জানতে চাই, আমাকে কি পরে এ সুন্নত কাযা করতে হবে?
ফজরের সুন্নত অন্যান্য সুন্নতে মুআক্কাদা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেষ্টা করতে হবে যেনজামাত
শুরু হওয়ার আগেই তা আদায় করা যায়। কখনো ছুটে গেলে ঐদিন সূর্য ভালোভাবে উদিতহওয়ার পর
তা পড়ে নেওয়া উত্তম।
হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ _ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ _ نَامَ عَنْ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ، فَقَضَاهُمَا بَعْدَ مَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ
একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের কারণে ফজরের দু রাকাত সুন্নত পড়তেপারেননি। ফলে সূর্যোদয়ের পর তিনি তা আদায় করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৫
যদি ঐ দিন যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে পড়া না হয় তাহলে এরপর আর তা পড়ার নিয়ম নেই।
-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৪-২৩৫
কোনো কোনো সময় যোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়ার মতো...
কোনো কোনো সময় যোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়ার মতো সময় থাকে না। এক্ষেত্রে আমি যোহরের আগে দুই রাকাত হলেও পড়ে নিই। আর বাকি দুই রাকাত যোহরের পরে আদায় করি। জানার বিষয় হল, এভাবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়লেও কি যোহরের সুন্নত আদায় হয়ে যায়?
যোহরের আগে চার রাকাত পড়ার মতো সময় না থাকলে সম্ভব হলে দুই রাকাত পড়ে নিবেন। তবে যোহরের পূর্বের চার রাকাতই যেহেতু সুন্নতে মুআক্কাদা তাই কখনো যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতপড়তে না পারলে যোহরের পর দুই রাকাত সুন্নত পড়ে পূর্বের চার রাকাত সুন্নত আদায় করে নেওয়া উচিত। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের আগে চার রাকাত পড়তে না পারলে, তা যোহরের পর পড়ে নিতেন।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩২; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২-১৩
ইস্তেঞ্জায় যাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়া কি সুন্নত? দলিলসহ জানালে উপকৃত...
ইস্তেঞ্জায় যাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়া কি সুন্নত? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের আগে যে দুআটি পড়া হয়, কোনো কোনো বর্ণনায় এর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ার কথাও আছে। তাই দুআটি এভাবে পড়া উত্তমÑ
بسم الله، اللهم إني أعوذ بك من الخبث والخبائث
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/১০৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩২; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬
ক) হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলার হুকুম কী?...
ক) হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলার হুকুম কী? মুস্তাহাব, সুন্নত নাকি ওয়াজিব? যদি আলহামদুলিল্লাাহ না বলে তাহলে কি গুনাহ হবে?
(খ) হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ উচ্চস্বরে বলবে, নাকি আস্তে বলবে?
-জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর শেষে সংযুক্ত), হাদীস ১৯৬৮০; আলআযকার, নববী ৪৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৭; রদ্দুল মুহতার ৬/১১৪
(ক ও খ) হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য الحمد لله বলা মুস্তাহাব। কোনো ওজর ছাড়া তা ছেড়ে দেওয়া অনুচিত। কেউ ছেড়ে দিলে যদিও গুনাহ হবে না, তবে এর ফযিলত থেকে মাহরূম হবে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাাম ইরশাদ করেছেন, হাঁচিদাতা যেন الحمد لله বলে। আর তার (মুসলিম) ভাই জবাবে যেন يرحمك الله বলে। তখন হাঁচিদাতা যেন প্রত্যুত্তরে বলে يهديكم الله ويصلح بالكم। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৪
আর হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ উচ্চস্বরে বলবে। এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর বর্ণনা করেন, হাঁচিদাতার জন্য উচ্চস্বরে الحمد لله বলা উচিত। যাতে করে তার আশপাশের লোকেরা শুনতে পায়। আর হাঁচিদাতা যখন الحمد لله বলবে তখন শ্রোতাদের করণীয় হল তার জবাবে يرحمك الله বলা।
-জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর শেষে সংযুক্ত), হাদীস ১৯৬৮০; আলআযকার, নববী ৪৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৭; রদ্দুল মুহতার ৬/১১৪
খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম?...
খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম? আমাদের এলাকায় এক লোক নতুন মুসলমান হয়েছে। তার বয়স ৩৫। তার খতনার বিধান কী? অনেকে ছেলের খতনা করিয়ে লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ায় এটা কেমন? এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে কী? অনুগ্রহ করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নত) পাঁচটি : খতনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৯৭
শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে।
ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। -আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস : ১২৫২
খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।
আর খতনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।
-ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬
মোজার উপর কতটুকু মাসেহ করা ফরয? মাসেহের পদ্ধতি বিস্তারিত জানালে...
মোজার উপর কতটুকু মাসেহ করা ফরয? মাসেহের পদ্ধতি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মোজার উপর হাতের তিন আঙ্গুল পরিমাণ মাসেহ করা ফরয।
আর মাসেহর সুন্নত পদ্ধতি হল, প্রথমে উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পানিতে ভিজিয়ে নিবে। এরপর ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ ডান মোজার উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর এবং বাম হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ বাম মোজার উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর সামান্য ফাঁকা করে রাখবে। অতপর উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পায়ের নলা পর্যন্ত টেনে নিবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে...
সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে যায়। তিনি দু সপ্তাহ ছুটিতে ছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি মসজিদে আসেন এবং না দাঁড়িয়ে মিম্বরে বসেই খুতবা দেন। অথচ সেই স্থানে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার মতো আলেম বিদ্যমান ছিলেন। এ অবস্থায় খতিব সাহেবের জন্য কি বসে খুতবা দেওয়া ঠিক হয়েছে? বসে খুতবা দেওয়ার হুকুম কি? দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া কি জরুরি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া সুন্নত। বিনা ওজরে বসে খুতবা দেওয়া মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে জুমআর খুতবা দিতেন এবং উভয় খুতবার মাঝে সামান্য পরিমাণ সময় বসতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৬১
অবশ্য ওজরের কারণে বসে খুতবা দেওয়ার অবকাশ আছে। হযরত মুআবিয়া রা. শেষ বয়সে বসে খুতবা দিয়েছেন বলে প্রমাণিত আছে। তাই উপরোক্ত ওজরের কারণে খতিবের জন্য বসে খুতবা দেওয়া নাজায়েয হয়নি।
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক; ৫২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৭
দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা কি গুনাহ? কোনো পরিস্থিতিতে অপারগ...
দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা কি গুনাহ? কোনো পরিস্থিতিতে অপারগ হয়ে দাঁড়িয়ে খেলে বা পান করলে কি গুনাহ হবে?
বসে পানাহার করা সুন্নত এবং তা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র অভ্যাস। কোনো ওজর ছাড়া দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে দাঁড়িয়ে পানাহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
সহীহ মুসলিমে আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনাকারী) কাতাদা বলেন, আমরা আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়া কেমন? তিনি বললেন, এটা তো আরো মন্দ কাজ।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২০২৪
অপর একটি বর্ণনায় আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে বললেন, বমি করে ফেলে দাও। সে বলল, কেন? তিনি বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে তোমার সাথে বিড়াল পান করবে? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়েও মন্দ কেউ? অর্থাৎ শয়তান তোমার সাথে পান করেছে।-শরহু মুশকিলুল আছার, ২১০২; ফাতহুল বারী ১০/৮৫
আমাদের গ্রামে লক্ষ্য করেছি যে, কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার...
আমাদের গ্রামে লক্ষ্য করেছি যে, কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং শুধু তার মুখমন্ডলকে কিবলামুখী করা হয়। উক্ত পদ্ধতি কি সুন্নাহসম্মত? যদি না হয় তাহলে সুন্নত নিয়ম কোনটি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সুন্নত নিয়ম হল, ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো। যেন মুখ ও সীনা কিবলার দিকে থাকে। এজন্য কবর এমনভাবে বানাবে যেন মাইয়্যেতকে সহজেই কিবলামুখী করা যায়। কিন্তু চিৎ করে রেখে শুধু চেহারা কিবলামুখী করে রাখলে সুন্নত আদায় হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৭৫; মাজমূআ রাসাইলে লাখনবী ২/২৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৩
হেলান দিয়ে পানাহারের ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি? দলিলের আলোকে জানালে...
হেলান দিয়ে পানাহারের ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি? দলিলের আলোকে জানালে খুশি হব।
খানা পিনার সময় হেলান না দেওয়া সুন্নত। স্বাভাবিকভাবে বসে খেতে পারে এমন সুস্থ ব্যক্তির জন্য হেলান দিয়ে বা কিছুতে ঠেস দিয়ে পানাহার করা অনুত্তম। হাদীস শরীফে আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৯৮)
অন্য একটি হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বাভাবিক অবস্থায় কখনো হেলান দিয়ে আহার করতে দেখা যায়নি। (সুনানে আবু দাউদ ৪/২৮৭)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আল্লাহ তাআলার গোলাম। আমি সেভাবেই আহার করি যেভাবে একজন গোলাম আহার করে এবং আহারের জন্য সেভাবেই বসি যেভাবে একজন গোলাম বসে। (কিতাবুয যুহদ পৃ. ১১)
অবশ্য অসুস্থতা বা দুর্বলতার কারণে হেলান দিয়ে পানাহার করার অবকাশ রয়েছে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুর্বলতার কারণে হেলান দিয়ে আহার করেছেন এ কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে খেজুর পেশ করা হল তখন আমি তাকে ক্ষুধায় দুর্বল হওয়ার কারণে হেলান দিয়ে আহার করতে দেখেছি।
(শামায়েলে তিরমিযী, পৃ. ১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫২৯০); ফাতহুল বারী ৯/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫৬; উমদাতুল কারী ২১/৪৪
আমি একজন নও মুসলিম। কিছুদিন আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।...
আমি একজন নও মুসলিম। কিছুদিন আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমার বয়স ২২ বছর। আমার খতনা করা লাগবে কি না? আর খতনা করা লাগলে খতনাকারীর সামনে সতর খোলা জায়েয হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
খতনা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি ইসলামের একটি শিআর তথা প্রতীক। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি বিষয় ফিতরাত তথা ইসলামের স্বভাবজাত বিধানাবলির
অন্তর্ভুক্ত। (তার একটি হল) খতনা করা।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৮৮৯
সুতরাং আপনার জন্য খতনা করা আবশ্যক। আর এ উদ্দেশ্যে সতরের যতটুকু অনাবৃত করার প্রয়োজন তাও জায়েয হবে। এতে গুনাহ হবে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭১৫, ৪/৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৭
আমি তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত আঙ্গুল মিলানো অবস্থায় কান পর্যন্ত...
আমি তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত আঙ্গুল মিলানো অবস্থায় কান পর্যন্ত উঠাই। কিন্তু আমাকে একজন বললেন, তাকবীরে তাহরীমার সময় আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে ফাঁকা রাখতে হয়। তার কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানোর সময় হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ফাঁকা রাখা সুন্নত। এ সময় আঙ্গুল মিলিয়ে রাখার বিধান নেই।
-মাবসূত ১/১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৫; শরহুল মুনইয়াহ ৩০০
জনৈক ব্যক্তি তাওয়াফের মধ্যবর্তী এক চক্করে ইসতিলাম করা ছেড়ে দেয়।...
জনৈক ব্যক্তি তাওয়াফের মধ্যবর্তী এক চক্করে ইসতিলাম করা ছেড়ে দেয়। জানার বিষয় হল, তার তাওয়াফ সহীহ হয়েছে কি না? সহীহ হলেও তার উপর কোনো দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছে কি?
ওই ব্যক্তির তাওয়াফ আদায় হয়ে গেছে। দম বা সদকা কিছুই ওয়াজিব হয়নি। কারণ তাওয়াফের শুরু এবং শেষে ইসতিলাম করা সুন্নত। আর মধ্যবর্তী চক্করসমূহের শুরুতে ইসতিলাম মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ছেড়ে দেওয়ার কারণে দম বা সদকা কোনো কিছু ওয়াজিব হয় না।
-গুনইয়াতুন নাসিক ১১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৯৬; মানাসিক ১৬৭
বিয়ের পর খেজুর ছিটানো কি সুন্নত? মসজিদে বিয়ে হলে এক্ষেত্রেকি...
বিয়ের পর খেজুর ছিটানো কি সুন্নত? মসজিদে বিয়ে হলে এক্ষেত্রে
কি হুকুম?
বিয়ের আকদের পর খেজুর বা মিষ্টান্ন বিতরণ করার কথা কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় এবং তা ছিটিয়ে দেওয়ারও অবকাশ আছে। যদিও ছিটিয়ে দেওয়ার আলাদা কোনো ফযীলত বা ছওয়াব নেই।
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. এবং প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত শা’বী রাহ. বিয়ের আকদের মজলিসে খেজুর বা মিষ্টান্ন জাতীয় জিনিস ছিটানোর অনুমতি দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/৯৮-১০০)
উল্লেখ্য, এ সংক্রান্ত আরো কিছু রেওয়ায়েত আছে, যেগুলো মুনকার, যা দলিলযোগ্য নয়। আর মসজিদে বিয়ে হলে খেজুর ছিটিয়ে না দেওয়াই উচিত। কেননা, এতে ক্ষেত্র বিশেষে হৈ চৈ, কাড়াকাড়ির কারণে মসজিদের আদব ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং মসজিদ ময়লাও হয়ে যেতে পারে।
-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ২/৩০-১; মুসনাদে আহমদ ৪/৩৫, হাদীস : ১৮৯৭৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়াহ ৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫৬; আলআওসাত ৮/৭৫৫; রওযাতুত তালিবীন ৭/৩৪২
যদি ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে...
যদি ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে ভুলে যান তাহলে কি তাকে সাহু সিজদা করতে হবে?
না, এ কারণে সাহু সিজদা করতে হবে না। ইমামের জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর বলা সুন্নত। আর সুন্নাত ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১০৬-১০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০৩
আমার মহল্লার মসজিদের খতীব সাহেবের পায়ে প্রচন্ড ব্যাথার কারণে দাঁড়াতে...
আমার মহল্লার মসজিদের খতীব সাহেবের পায়ে প্রচন্ড ব্যাথার কারণে দাঁড়াতে সক্ষম না বিধায় বসে খুতবা দিয়েছেন। অথচ উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্যে এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে সক্ষম। জানার বিষয় হল, ওজরবশত বসে খুতবা দিলে খুতবা আদায় হবে কি?
জুমআর খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। অবশ্য কোনো ওজরের কারণে দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে খুতবা দেওয়ার অবকাশ আছে। হযরত ওসমান রা. ও হযরত মুআবিয়া রা. থেকে শেষ বয়সে বসে খুতবা দেওয়া প্রমাণিত আছে। কিন্তু ওজর ব্যতীত বসে খুতবা দেওয়া সুন্নত পরিপন্থী ও মাকরূহ।
-সহীহ মুসলিম ১/২৮৩-৮৪; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/১৮৭-১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতহুল কাদীর ২/২৯-৩০; শরহুল মুনইয়া ৫৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৬
মুরগী জবাই করার সময় আল্লাহু আকবার বলা এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকে...
মুরগী জবাই করার সময় আল্লাহু আকবার বলা এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকে দাঁড়ানো জরুরি কি না? এই শর্ত না মানলে মুরগী খাওয়া যাবে কি?
পশু-পাখি যবাইয়ের সময় যবাইকারীর জন্য আল্লাহ তাআলার নাম বলা জরুরি। হাদীস শরীফে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলার কথা উল্লেখ আছে। যদি যবাইয়ের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ তাআলার নাম না বলে তাহলে উক্ত পশু খাওয়া জায়েয হবে না।
-সূরা আনআম : ১২১; সহীহ বুখারী ২/৮২৭; ইলাউস সুনান ১৭/৫৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৫; ফাতহুল কাদীর ৮/৪০৯
আর জবাইয়ের সময় পশুর মাথা কিবলামুখী করে বাম কাতে শোয়ানো মুস্তাহাব, জরুরি নয়। অবশ্য ডান কাতে শোয়ালেও জবাই সহীহ হয়ে যাবে। জবাইকারীর কিবলামুখী হওয়া সুন্নত। জবাই সহীহ হওয়ার জন্য এটিও শর্ত নয়।
-শরহু মুসলিম,নববী ১৩/১২১; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৩/৫৬৩; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৪;বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮৮; মাজমাউল আনহুর ৪/১৫৯; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১৪৮
আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পরপরই তার জন্য দুআ...
আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পরপরই তার জন্য দুআ করা হয়। কেউ কেউ তা বৈধ মনে করেন আবার কেউ অবৈধ তথা বেদআত মনে করেন। কোন মতটি সঠিক তা জানতে চাই। এর সপক্ষে কোনো হাদীস থাকলে তাও জানতে ইচ্ছুক?
মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করার পর কিবলামুখী হয়ে তার জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। এটি একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এক হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘(তাবুক যুদ্ধে) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন রা.কে কবরে শায়িত করলেন এবং দাফনের পর কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে তাঁর জন্য দুআ করলেন। (দুআতে) তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তুমিও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও।’
(হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৪/৬৭৩; আসসিরাতুন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে হিশাম ২/৫২৭; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)
অন্য হাদীসে আছে, হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা কর এবং সে যেন কবরের সওয়ালের জওয়াব সঠিকভাবে দিতে পারে এজন্য দুআ কর। কেননা এখনি তাকে সওয়াল করা হবে।’ (সুনানে আবু দাদউ, হাদীস : ৩২২১)
এসব হাদীসের আলোকে ফকীহগণ দাফনের পর দুআ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। সুতরাং একে অবৈধ বা বিদআত বলা ঠিক নয়।
বযলুল মাজহূদ ১৪/১৯০; ইলাউস সুনান ৮/৩৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭
আমাদের দেশে রজবের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে শবে মেরাজ পালন...
আমাদের দেশে রজবের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে শবে মেরাজ পালন করা হয়। বইপুস্তুকেও ২৭ তারিখকেই মেরাজ রজনী বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইদানীং কিছু মৌলভী সাহেব থেকে এ ব্যাপারে কিছু সংশয়ের কথা শুনলাম। বাস্তব বিষয়টি কি?
মেরাজের ঘটনা রজবের ২৭ তারিখে হয়েছিল-একথা প্রমাণিত নয়। এই তারিখটি শুধু এমন একটি রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়, যার সনদ সহীহ নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা এটি প্রমাণিত নয়। মেরাজ কখন হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সনদে শুধু এটুকু পাওয়া যায় যে, তা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু কোন দিন, মাস বা তারিখে সংঘটিত হয়েছে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিছুই নেই। তাই এই তারিখকে মেরাজ-রজনী হিসাবে ধরে নেওয়া যেমন ভুল তেমনি তা উদযাপন করাও ভুল। সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন কেউ কখনো মেরাজ রজনী উদযাপন করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এটি একটি কুসংস্কারও বিদআত।
আলমাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ও শরহুল মাওয়াহিব ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ২/৪৭১; লাতায়িফুল মাআরিফ পৃ. ১৩৪
পাঞ্জাবীর হাতার দৈর্ঘ্য কোন পর্যন্ত রাখা সুন্নত? এ ব্যাপারে রাসূলে...
পাঞ্জাবীর হাতার দৈর্ঘ্য কোন পর্যন্ত রাখা সুন্নত? এ ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল বরাতসহ জানাবেন।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামার হাতা সম্পর্কে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। কিছু বর্ণনায় কব্জি পর্যন্ত আর কিছু বর্ণনায় আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হাতা লম্বা রাখার কথা এসেছে। সুতরাং কব্জির সমান বা এর চেয়ে কিছু লম্বা করলে সুন্নতের উপর আমল হয়ে যাবে। তবে আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে লম্বা রাখা সুন্নত নিয়ম নয়। কারণ শু‘আবুল ঈমান বায়হাকীর এক হাদীসে আছে, হযরত আলী রা. এমন লম্বা হাতা আঙ্গুল সমান করে কেটে ফেলেছিলেন।
আলমাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ ২/৪২৭, ৪৩৬; আশশামায়িলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ পৃ. ১৫৫.১৫৭; আলমাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ আলাশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ পৃ. ১৫৬; জামেউল ওসায়েল ১/১০৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৫/১৫৪, ১৫৫, ১৭১; বাযলুল মাজহূদ ১৬/৪০৭, ৩৫৩; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৪৫,২৪৭; ফাতাওয়া রশীদিয়াহ পৃ. ৫৭৩
আমাদের এলাকায় একটি মাযার আছে। সেখানে কিছু সাধক আছেন যারা...
আমাদের এলাকায় একটি মাযার আছে। সেখানে কিছু সাধক আছেন যারা মাঝে মধ্যে বড় উদ্ভট কথাবার্তা বলে থাকেন। হক্কানী লোকদের ব্যাপারেও উদ্ভট মন্তব্য করে থাকেন।
একদিন বললেন, মেরাজে গিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নব্বই হাজার কালাম লাভ করেন। এর মধ্যে ত্রিশ হাজার কালাম জাহেরী আর বাকী ষাট হাজার বাতেনী। এসব কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে একমাত্র আলী রা.কে বলে গেছেন। তাঁর নিকট থেকে ক্রমান্বয়ে সূফী, ফকীর ও দরবেশদের নিকট ষাট হাজার কালাম রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম অজ্ঞ। ফলে তারা ফকীর-দরবেশদের কিছু বিষয়াদি নিয়ে আপত্তি করেন। এ কথাগুলো সঠিক? বাস্তবেই কি ষাট হাজার কালাম বাতেনী আছে?
এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও সুস্পষ্ট কুফর। এতে আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করাহয় যে, তিনি মানুষকে দু’প্রকার শরীয়ত দান করেছেন। একটি ত্রিশ হাজার কালামবিশিষ্ট। আর অপরটি ষাট হাজার কালামবিশিষ্ট শরীয়ত। আর উভয় শরীয়ত পরস্পর বিরোধী। এক শরীয়তে এক বস' হালাল হলে অন্য শরীয়তে তা হারাম। এরূপ পরস্পর বিরোধী কাজ সৃষ্টির পক্ষেও নিকৃষ্ট। তাহলে আল্লাহ তাআলার শানে এমন কথা বলা কতটা ধৃষ্টতা!
দ্বিতীয়ত এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপরও অপবাদ দেওয়া হয় যে, তিনি অধিকাংশ মৌলিক কথা যা সকল মুসলমানের জানা জরুরি ছিল তা তিনি তাদের কাছে পৌঁছাননি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এমন কথা বলা ঈমান পরিপন্থী।
তৃতীয়ত দ্বীনের বিশেষ কিছু কথা শুধু হযরত আলী রা.কে বলেছেন অন্য কাউকে বলেননি-এটা মূলত সাবায়ী চক্রের আকীদা। যাদের কাফের হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এই ভ্রান্ত আকীদা তারা হযরত আলী রা.-এর জীবদ্দশাতেই প্রচার করেছিল। তখন হযরত আলী রা. এ কথা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন।
সুনানে নাসায়ীতে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি হযরত আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি লোকের অগোচরে আপনাকে কিছু বলে গেছেন? একথা শোনে ক্রোধে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের অগোচরে আমাকে কিছুই বলে যাননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলে গেছেন। তখন আমরা ছিলাম ঘরের ভেতর। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে লা’নত করে আল্লাহ তাআলা তাকে লা’নত করেন। যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দেয় আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি জমিনের চিহ্ন এদিক-সেদিক করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। (সুনানে নাসায়ী ২/১৮৩, ১৮৪)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ঐ কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কুফরী কথা। এ আকীদা অবশ্যই বর্জন করা জরুরি।
আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করার দুই দিন পর...
আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করার দুই দিন পর ইন্তিকাল করেছে। তার আকীকা করিনি। কেউ কেউ আকীকা করার পরামর্শ দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, এই সন্তানেরও কি আকীকা করা সুন্নত?
ঐ সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করা লাগবে না। কারণ সন্তানের বয়স ৭ দিন পূর্ণ হলে আকীকার সময় হয়। এর আগে নয়। অবশ্য অভিভাবক চাইলে এমন সন্তানেরও আকীকা করতে পারেন।
জামে তিরমিযী ১/২৭৮; আলইসতিযকার ১৫/৩৭৫; ফাতহুল বারী ৯/৫০৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৯৭; ইরশাদুস সারী ১২/২২৫
আমি একজন উলূমুল হাদীস অধ্যয়নরত ছাত্র। আমি কিছু দ্বীনী কিতাবে...
আমি একজন উলূমুল হাদীস অধ্যয়নরত ছাত্র। আমি কিছু দ্বীনী কিতাবে নখ কাটার তারতীবের মধ্যে সুন্নত আছে বলে পেয়েছি। এরপর উক্ত বিষয়ে আমি নিজে তাহকীক করি। কিন্তু কোনো স্পষ্ট হাদীস বা আছার পাইনি। এ সম্পর্কে কোনো দলীল-প্রমাণ থাকলে কিংবা উক্ত বিষয় সুন্নত কী না জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
হুফফায ও নুক্কাদে হাদীস যেহেতু দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই প্রমাণিত নেই; তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এ বিষয়ে যা কিছু লোকমুখে প্রসিদ্ধ আছে বা যা কিছু সনদ ও হাওয়ালাবিহীন আছে সবই ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত গবেষণার প্রয়োজন নেই। অতএব নখ কাটার কোনো মাসনুন তরীকা থাকলে তা শুধু এই যে, এ কাজটি ডানদিক থেকে শুরু করবে। হাদীস শরীফে এসেছে-
كان النبي صلى الله عليه وسلم يعجبه التيمن في تنعله وترجله وطهوره وفي شانه كله
সহীহ বুখারী ১/২৯; মুসনাদে আহমদ ১৭/৬২২; সুনানে বায়হাকী ১/৮৬; শরহুল মুহাযযাব ১/৩৩৯; ফাতহুল বারী ১০/৩৫৭; উমদাতুল কারী ২২/৪৫; ফাতহুল মুলহিম ১/৪১৯; আলমাসনূ’ ফী মারেফাতিল হাদীসিল মাওযূ’ পৃ. ১৩০; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৫
অযুর মধ্যে ঘন দাড়ি ধৌত করতে হবে নাকি মাসহ করলেও...
অযুর মধ্যে ঘন দাড়ি ধৌত করতে হবে নাকি মাসহ করলেও চলবে? যদি ধোওয়াই ফরয হয় তাহলে কী পরিমাণ ধৌত করতে হবে? আর যদি মাসহ করতে হয় তাহলেও কী পরিমাণ?
উল্লেখ্য, ‘বেকায়া’ কিতাবে আছে ‘দাড়ির এক চতুর্থাংশ মাসহ করা ফরয’ কথাটি কি ঠিক?
অযুতে ঘন দাড়ি ধোয়ার নিয়ম হল, চেহারার সীমার ভিতরের পুরো দাড়ির উপরিভাগ ধৌত করা ফরয। এ অংশ মাসহ করা যথেষ্ট নয়।
আর চেহারার সীমার বাইরের দাড়ি ধোয়া লাগবে না। এ অংশ মাসহ করা সুন্নত। প্রশ্নে বেকায়া কিতাবের যে মতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। হানাফী মাযহাবের একাধিক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে যেমন ফাতাওয়া শামী ১/১১৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬ ও শরহে বেকায়ার সুপ্রসিদ্ধ শরহ আসসিআয়ায় ১/৯৬-৯৮ ইত্যাদিতে এমতটিকে অগ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে। আরো দেখুন : ফাতহুল কাদীর ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৭; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৬
উটের পিঠের মত কবর উঁচু করে রাখা ৷
দেখেছেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৯০, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৬৪৮৪৷
এই হাদীসের ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কবরকে উটের কুঁচের মত কিছুটা উঁচু রাখা সুন্নত৷ তাছাড়া একটু উচু থাকলে কবর হিসেবে জায়গাটি চিহ্নিতও থাকে ৷ পানিও জমে থাকে না যদ্বরুন তাড়াতাড়ি কবর নষ্ট হয় না৷
তবে সমান রাখাও জায়েজ। কেউ চাইলে সমান রাখতে পারবে৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষনবাড়িয়া৷
01756473393
পুরুষের চুল রাখার সুন্নত তরিকা৷ মেয়েদের চুল কাটা৷
(খ) মহিলারা কি চুল কাটতে পারবে? নাকি যত লম্বাই হোক রাখতে হবে? জানাবেন প্লীজ৷
এক.
উভয় কাঁধ বরাবর।
দুই.
ঘাড়ের মাঝামাঝি।
তিন.
উভয় কানের লতি পর্যন্ত। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩-৪১৮৭৷
রাসূলুুল্লাহ (সা.) এহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুণ্ডাননি। এ সময় তিনি মাথা মুণ্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর
প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য ইমাম তাহতাবী (রহ:) বলেন, মাথা ন্যাড়া করাও সুন্নাত ।
আর কিছু অংশ মুণ্ডানো ও কিছু রেখে দেয়া নিষেধ মুণ্ডাতে ইচ্ছে না করলে চুল ছোট রাখা যেতে পারে।
আলেমগণ তিন তরিকায় বাবরী রাখাকে সুন্নাত আর মাথার চুল ছোট করে রাখা বা মুণ্ডানোকে জায়েয বলেন। এছাড়া সামনে বা পেছনে লম্বা রাখা অথবা ডানপাশে বা বামপাশে ছোট-বড় করে রাখাকে জায়েয মনে করেন না। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল, চুলের যে কাটিং ভিন্ন কোন জাতি সত্তার অনুকরণে হবে, তাই নাজায়েযের মধ্যে শামিল হবে।
মাহমুদিয়া – ২৭/৪৬০, মিশকাত- ৩৮১, ২৩২, ৩৮০
(খ) মেয়েদের জন্য চুল মুণ্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সেমতে কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়েয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই।
তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম?...
আমি জানতে চাই যে, শরিয়তে মহিলাদের চুল রাখার সুন্নত পদ্ধতি...
[তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮]
সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে...
: ৮৬১
অবশ্য ওজরের কারণে বসে খুতবা দেওয়ার অবকাশ আছে। হযরত মুআবিয়া রা. শেষ বয়সে বসে খুতবা দিয়েছেন বলে প্রমাণিত আছে। তাই উপরোক্ত ওজরের কারণে খতিবের জন্য বসে খুতবা দেওয়া নাজায়েয হয়নি। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক; ৫২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৭
মোজার উপর কতটুকু মাসেহ করা ফরয? মাসেহের পদ্ধতি বিস্তারিত জানালে...
এরপর ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ ডান মোজার উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর এবং বাম হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ বাম মোজার
উপর পায়ের আঙ্গুল বরাবর সামান্য ফাঁকা করে রাখবে। অতপর উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো পায়ের নলা পর্যন্ত টেনে নিবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৩; শরহুল মুনইয়া ১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭২