আমাদের এলাকার জামে মসজিদে আযানের পর নামাযের আনুমানিক ৫ মিনিট পূর্বে মুয়াযযিন সাহেব মাইকে
سووا صفوفكم، فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة .
এবং নামাযের ৫ মিনিট বাকি আছে বলে মুসল্লিদেরকে আহ্বান করে।
জানার বিষয় হল, জামাতের পূর্বে এরূপ বলে ডাকা যাবে কি না? সহীহ হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আযানের পর পুনরায় ঐভাবে ডাকাডাকি করা ঠিক নয়। তাছাড়া যে হাদীসটি বলে ডাকাডাকি করা হয় তা এই সময় বলাও প্রযোজ্য নয়। কেননা হাদীসটির অর্থ হল, তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা নামায কায়েম করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথা জামাত শুরু করার ঠিক আগ মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন যেন সকলে কাতার সোজা করে নেয়।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করার জন্য ঐ কথা নামাযের ইকামত হয়ে যাওয়ার পর বলতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬
এছাড়া সাহাবায়ে কেরামও কাতার সোজা করার কথা বলতেন ইকামত হয়ে যাওয়ার পর। নাফে রাহ. বলেন, উমর রা. এক ব্যক্তিকে কাতার সোজা করার জন্য পাঠাতেন। ঐ ব্যক্তি উমর রা.-এর নিকট যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সোজা হওয়ার সংবাদ না দিতেন উমর রা. ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৩৭
মালেক ইবনে আবু আমের রাহ. বলেন, যখন নামাযের ইকামত হত উসমান রা. লোকদেরকে বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করে নাও, কাঁধে কাঁধ মিলাও। কেননা কাতার সোজা করা নামাযের পূর্ণতার অংশ। এরপর তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীরে তাহরীমা বলতেন না যতক্ষণ না লোকেরা সংবাদ দিত যে, কাতার সোজা হয়েছে। তখন তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৪২
সুতরাং কাতার সোজা করার কথা তো বলা হবে জামাতের সময় হওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যেই। এ কথা বাইরের লোকদেরকে ডাকাডাকির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অনর্থক।
আর আযানের পর পুনরায় ডাকাডাকির প্রচলন গড়লে এতে আযানের গুরুত্ব কমে যাবে। সেক্ষেত্রে অনেক মানুষ আযানকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকবে।
আযানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, লোকদেরকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করা এবং জামাতের সময় অতি নিকটে তা জানানো। যেন আযান শুনে লোকজন কর্মব্যস্ততা ছেড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে হাজির হয়ে যায়।
আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় গেঞ্জিতে মশার রক্ত দেখা যায়। এমন হলে আমি সাধারণত গেঞ্জি পরিবর্তন করে নামায পড়তে যাই। কয়েকদিন আগেও মশার রক্তের কারণে গেঞ্জি পরিবর্তন করার সময় এক সাথী আমাকে বলল যে, মশার রক্ত নাকি নাপাক নয়। তার এ কথা কি সঠিক?
হাঁ, আপনার সাথী ঠিকই বলেছে। মশার রক্ত নাপাক নয়। তাই ঐ কাপড় পরে নামায পড়া যাবে।
হাসান বসরী, আতা, আবু জাফর, উরওয়া প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকে বর্ণিত আছে যে, কাপড়ে মাছি-মশার রক্ত লাগলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে গেঞ্জি পরিবর্তন করে নেওয়া বা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যে ভালো তা তো স্পষ্ট।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৩১, ২০৩২, ২০৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯
আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা।
হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। ... (সহীহ বুখারী, হাদীস ১)
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন, হাদীসে নিয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,কোনো কাজের ব্যাপারে মনের দৃঢ় ইচ্ছা। (উমদাতুল কারী ১/২৩)
তাই নামাযের নিয়তও মনে মনে করাই যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেননা শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা এটি নিষিদ্ধ নয়। তাই কেউ করলে তা নাজায়েয বা বেদআত হবে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৭-৮
জুমার দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া ও দুআ পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেওয়া জায়েয।
আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাহ. বলেন, আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে মিম্বরের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আযানে আল্লাহু আকবার বললেন তখন তিনিও আল্লাহু আকবার বলেছেন ...। এরপর আযান শেষ হলে তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিসে অর্থাৎ যখন মুয়াযযিন আযান দেন- এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি আপনারা আমাকে বলতে শুনলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪
অন্য বর্ণনায় সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৩৪২
আর খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আযানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আযানের দুআ পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আযানের দুআও পড়া যাবে।
-ফাতহুল বারী ২/৪৬০; ইলাউস সুনান ২/৮০; আসসিআয়াহ ২/৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮২; আততাজরীদ ২/৪৭৭; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২০০
আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে না। শুধু চেয়ার বা এ জাতীয় উঁচু স্থানে বসতে পারে। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। জানার বিষয় হল, এমন ব্যক্তি কীভাবে নামায আদায় করবে?
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মাটিতে বসতে না পারলেও যেহেতু সে দাঁড়াতে সক্ষম তাই সে দাঁড়িয়েই নামায শুরু করবে। এরপর সম্ভব হলে দাঁড়ানো থেকেই রুকুতে যাবে। আর সিজদার সময় চেয়ার বা এ জাতীয় কিছুতে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করবে।
উল্লেখ্য যে, দাঁড়ানো থেকে রুকু করা অধিক কষ্টকর হলে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রুকুর তুলনায় সিজদায় মাথা কিছুটা বেশি ঝুঁকাতে হবে। অবশ্য বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে দাঁড়ানো থেকে সোজা চেয়ারে বসা যদি অসম্ভব বা অধিক কষ্টকর হয় তাহলে তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়ার সুযোগ আছে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৬২
একদিন কোনো এক মসজিদে জুমার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব যখন খুতবা পড়ছিলেন তখন এক লোক পেছনের কাতার থেকে মানুষদেরকে ডিঙিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকে। ইমাম সাহেব তা দেখে খুতবা পড়া বন্ধ করে তাকে সামনের দিকে আসতে বারণ করেন এবং যেখানে আছে সেখানেই থেমে যেতে বলেন।
আমি জানি, খুতবার মাঝে কোনো কথা বলা নিষেধ। তাই আমার প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেবের উক্ত কাজটি ঠিক হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খতীব সাহেবের জন্য ঐ ব্যক্তিকে নিষেধ করা অন্যায় হয়নি; বরং তা শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ থেকে খুতবা প্রদানকালে প্রয়োজনে সৎ কাজের আদেশমূলক কোনো কথা বলা বা অন্যায় কাজ দেখলে খুতবার মাঝেই নিষেধ করা প্রমাণিত আছে।
অবশ্য খতীব ছাড়া কোনো মুসল্লির জন্য খুতবা অবস্থায় এ ধরনের কথা বলাও নিষেধ।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১১১; নাইলুল আওতার ৩/২৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৩
আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি। বর্তমানে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করি না। কোনো কারণবশত অনিচ্ছাকৃত কখনো কোনো ওয়াক্ত কাযা হয়ে গেলে পরবর্তী ওয়াক্তেই তা আদায় করে নেই। একদিন সকালে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে না পারায় ফজরের নামায পড়তে পারিনি। যোহরের নামাযের সময় হলে মসজিদে যাই। মসজিদে পৌঁছে দেখি, যোহরের জামাতের কয়েক রাকাত হয়ে গেছে। তখন ফজরের কাযা নামাযের কথা স্মরণ হয়। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার কী করণীয়। এক্ষেত্রে যদি আগে ফজরের নামায পড়ি তাহলে যোহরের জামাত শেষ হয়ে যাবে। তাই আগে ফজরের কাযা পড়ব, নাকি তখন যোহরের জামাতে শরিক হয়ে যাব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনার যেহেতু পেছনের নামায কাযা নেই তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজর পড়ার কারণে যদি যোহরের জামাত নাও পান তবুও আপনাকে আগে ফজরের কাযা নামায আদায় করতে হবে। এরপর যোহরের জামাত পেলে জামাতে শরিক হবেন। যদি জামাত না পান তাহলে যোহরের নামায একাকী পড়ে নিবেন।
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২/৫-৭; কিতাবুল আসল ১/৩০৪; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১২২
ইশার নামাযে ইমাম সাহেব সূরা তীন তিলাওয়াতের সময়
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ এরপর إِلَّا الَّذِينَ পড়া আরম্ভ করলেন। এতে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হবে? জানালে উপকৃত হব।
উক্ত আয়াত ভুলে ছুট যাওয়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ এতে অর্থের বিকৃতি ঘটেনি। সুতরাং নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩২
আমার বোন একদিন চাশতের নামায পড়ছিল। আমি তা খেয়াল না করেই ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার জামাটা কোথায়? পরে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে নামায পড়ছে। কিন্তু নামাযের ভিতরেই সে হাতের ইশারায় আমাকে বুঝাল, জামা ওয়্যারড্রবে আছে। তাই জানার বিষয় হল, এ কারণে কি তার নামায ভেঙ্গে গিয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হাত দ্বারা ইশারা করার কারণে আপনার বোনের নামায ভাঙ্গেনি। তবে কাজটি মাকরূহ হয়েছে। নামাযের মধ্যে হাত দ্বারা ইশারা করা মাকরূহ। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৫৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৮-৯
প্রশ্ন : আমি প্রতিদিন বাদ আসর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করি। জানার বিষয় হল, এ সময়ে সিজদার কোনো আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে কি? শুনেছি, আসরের পর কোনো নফল নামায পড়া নিষেধ তাহলে সিজদা করাও কি নিষিদ্ধ হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
হাঁ, আসরের পর সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে এবং সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিলাওয়াতে সিজদাও আদায় করা যাবে। কিন্তু সূর্য হলুদ হয়ে গেলে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিজদা তিলাওয়াত আদায় করা যাবে না।
আমাদের মহল্লার মসজিদ ভেঙ্গে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রথম তলা ও দ্বিতীয় তলার ছাদে ফাঁকা রাখতে হবে কি না-এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মাঝে মতানৈক্য হয়েছে। কেউ বলছে, ফাঁকা রাখতে হবে, কেউ বলছে, রাখতে হবে না। এ বিষয়ে শরীয়তের বিস্তারিত হুকুম জানালে উপকৃত হব।
একাধিক তলাবিশিষ্ট মসজিদ হলে প্রত্যেক তলায় ইমামের আওয়াজ ভালোভাবে পৌঁছার ব্যবস্থা করা জরুরি। যেন সকল তলা থেকে মুসল্লিগণ নির্বিঘ্নে ইমামের অবস্থা জানতে পারে এবং যথাযথভাবে ইমামের অনুসরণ করতে পারে। বর্তমানে মাইক বা লাউড স্পিকার দ্বারা এ প্রয়োজন অনেকটা পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু কখনো বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা মাইকে কোনো সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে অন্যান্য তলার মুসল্লিগণ ইমামের অবস্থা জানতে পারবে না। ফলে তাদের নামায নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এমন সময়ও যেন ইমামের অবস্থা উপর থেকে ভালোভাবে জানা যায় এজন্য ইমাম বরাবর প্রত্যেক তলার ছাদে কিছু অংশ ফাঁকা রাখা ভাল।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৭
একদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরের নামাযের ১ম রাকাতে উচ্চস্বরে সূরা ফাতেহার ১ম আয়াত তেলাওয়াত করেন। তারপর নিম্নস্বরেই অবশিষ্ট কেরাত পাঠ করেন। সর্বশেষে তিনি সাহু সিজদা না দিয়েই নামায শেষ করেন। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি তারা পরস্পরে ঝগড়া বিবাদেও লিপ্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত। মেহেরবানী করে সমাধান জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। ইমাম সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। কেননা নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট নামাযে সূরা ফাতিহার এক-দুই আয়াত উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনী বিষয়ে সংশয় বা মতানৈক্য দেখা দিলে বিজ্ঞ আলেম বা মুফতীর শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১; রদ্দুল মুহতার ২/৮২; ইলাউস সুনান ৭/১৯১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪১
চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর কখনো কখনো আমি ভুলে সূরা মিলিয়ে ফেলি। একারণে নামাযের কোনো অসুবিধা হবে কি? আর এক্ষেত্রে সূরা মিলানোর কারণে কি সাহু সিজদা দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
না, এক্ষেত্রে ভুলে সূরা মিলিয়ে ফেললে সাহু সিজদা দিতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করবেন না। কারণ, ফরযের শেষ দুই রাকাতে সূরা মিলানো সুন্নাহ পরিপন্থি।
-রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯; আলজাওহারাতুন নাইয়েরাহ ১/৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০
আমি এশার দুরাকাত সুন্নতের পর সাধারণত দু’চার রাকাত নফল পড়ে তারপর বিতর পড়ি। মাঝে মাঝে আবার সুন্নতের পরই বিতর পড়ে ফেলি। তো কখনো এমন হয় যে, সুন্নত পড়ে আবার নামাযে দাঁড়িয়েছি কিন্তু নফল পড়ব না বিতর পড়ব কোনোটাই মনে স্থির করিনি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? আমি কি নফল বা বিতর যে কোনো একটি স্থির করে সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করতে পারব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার আগে যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে বিতরের নিয়ত করা হয়নি তাই তা নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর বিতরের নিয়ত করলেও তা ধর্তব্য হবে না।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮২; রদ্দুল মুহতার ১/৪১৭
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?
তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। তাই তাশরীকের দিনগুলোর কাযা নামায এই সময়ের পরে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। তবে এ সময়ের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ দিনগুলোতেই কাযা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাশরীকের দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯
অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের জামাতের সময় হয়ে গেছে বা জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়া হয় না। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে কি ঐ সুন্নত পড়ে নেওয়া যাবে? পড়া গেলে যোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব নাকি পরে?
জ্বী। যোহরের পূর্বের সুন্নত ছুটে গেলে তা ফরয-পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করে নিবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত (কখনো) ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের (ফরয) পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯; মাআরিফুস সুনান ৪/১০৭
এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, না তা আবার পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১
আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। বাড়ি উত্তরবঙ্গের নাটোরে। গ্রামের বাড়ি যেতে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে বাসে উঠি। উত্তরা থেকে গাবতলী বেশ লম্বা পথ। মাঝপথে অনেক সময় নামায পড়তে হয়। বিপাকে পড়ে যাই নামায কীভাবে পড়ব। তাই জানার বিষয় হল, উত্তরা থেকে গাবতলী আসার পথে যেসব নামায পড়ব তা কি কসর পড়ব? সঠিক উত্তরটি জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও ঢাকা সিটির ভিতরে আপনাকে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে। গাবতলীর দিকে আমিনবাজার ব্রীজ বর্তমান ঢাকা সিটির শেষ সীমানা। তাই আমিনবাজার ব্রীজ অতিক্রম করার পর থেকে কসর শুরু করবেন।
-কিতাবুল আছল ১/২৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-
ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে।
খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে।
গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে।
ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না।
ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ)
এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে।
তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭
অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১
আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে গরুর গোশত কিনি। আসার সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের নামায আদায় করি। পরে দেখি, কাপড়ের নিম্নাংশে গোশতের ব্যাগ থেকে কিছু রক্ত লেগে আছে। জানতে চাই, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?
যবাইয়ের সময় বের হওয়া প্রবাহিত রক্ত নাপাক, কিন্তু গোশতের রক্ত নাপাক নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাপড়ে যদি গোশতের রক্তই লেগে থাকে তাহলে তা নাপাক হয়নি এবং আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে।
ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩১
শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় দুআ আছে। কিন্তু কোনো বইতে এই দুআগুলো পাইনি। তাই দয়া করে দুআগুলো জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তখন মুক্তাদীর জন্য رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলা উত্তম। অতপর সম্ভব হলে-
حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ দুআটিও পড়া উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তোমরা তখন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বল।
অন্য এক হাদীসে আছে, রিফাআ ইবনে রাফে রা. বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বললেন তখন পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযে ঐ বাক্য কে বলেছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম ত্রিশের অধিক ফেরেশতা উক্ত দুআর ছাওয়াব নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, কে আগে তার ছাওয়াব লিখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৯
আর দুই সিজদার মাঝে রাবিবগ ফিরলী এবং اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي পড়া উত্তম।
সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে ‘রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী’ দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২৯
আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০
ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম-মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম। আর নফল ও তাহাজ্জুদে উপরোক্ত দুআ ছাড়াও আরো কিছু দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। যেমন-রুকু থেকে উঠে নিম্নোক্ত দুআগুলো পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন-
اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءُ السَّمَاوَاتِ والْأَرْضِ، وَمَا بَيْنَهُمَا، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ
অন্য বর্ণনায় এ দুআটি পড়ার কথাও এসেছে-
اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَالْمَاءِ الْبَارِدِ اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا، كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৬
আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এ দুআটিও এসেছে-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ: اللهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৭
ফকীহগণের ভাষ্যমতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দীর্ঘ দীর্ঘ দুআগুলো সাধারণত তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পড়তেন। তাই এ দুআগুলো বিশেষভাবে নফল নামাযে পড়া উত্তম।
প্রকাশ থাকে যে, এসব দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ ইমাম জাযারী রাহ. কৃত কিতাবটি পড়া যেতে পারে। এটি দুআর একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব।
আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। সাথে মাহরাম পুরুষও এসে পড়েন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?
ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। প্রকাশ থাকে যে, অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।
-যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮
আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার কারণে পেন্ডেলে জায়গা পাইনি। তাই রাস্তায় নামায পড়ি। রাস্তা গরম হওয়ার কারণে সিজদা পাগড়ির পেঁচের উপর করেছি। আবার পাশের এক মুসল্লিকে দেখেছি যে, সে গরমের কারণে কপাল মাটিতে লাগায়নি; বরং মাথার উপরই সিজদা করেছে। এ কারণে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?
প্রচন্ড রোদের কারণে উত্তপ্ত জমিনে সিজদা করতে কষ্ট হলে পাগড়ি বা টুপির একাংশ কপালের উপর টেনে নিয়ে তার উপর সিজদা করা যাবে। এতে নামায মাকরূহ হবে না। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রচন্ড শীত বা গরমে সরাসরি মাটিতে সিজদা করতে কষ্ট হওয়ার কারণে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করা প্রমাণিত আছে। (দেখুন : সহীহ বুখারী ১/৫৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৪০০
তবে ঐ ধরনের বিশেষ ওজর ছাড়া পাগড়ি বা টুপির কোনো অংশের উপর সিজদা করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করতে দেখে তার কপালের দিকে ইশারা করে বলেন, তোমার পাগড়ি আরো উঠাও। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, তিনি পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন।-আলআওসাত ৩/৩৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০
আর কেউ যদি সিজদাতে জমিনে শুধু মাথা রাখে অর্থাৎ চুলের অংশ জমিনে রাখে কপালের কোনো অংশই জমিনে না লাগে তবে তার সিজদা আদায় হবে না। তাই তার নামাযও হবে না। কারণ সিজদার অঙ্গ কপাল, মাথা নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫-২৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০০
আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাই। তখন আমি সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষ হওয়ার পরও ফজরের অনেক সময় বাকি ছিল। তাই আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, এখন সুন্নত পড়া মাকরূহ। সূর্যোদয়ের পর পড়ে নিও। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথাটি কি সঠিক?
হাঁ, ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮২৫
তাই ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে সূর্যোদয়ের আগে পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য হেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করে নিবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১০৫৩
নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. (ফজরের সময়) মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন জামাত শুরু হয়ে গেছে। তিনি ফজরের সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে গেলেন। নামায শেষে তিনি মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অতপর সূর্যোদয় হয়ে গেলে তিনি দুই রাকাত সুন্নত কাযা করে নেন।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৭; মাআরিফুস সুনান ৪/৮৮
অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা সিজদায় চলে যায়। আবার বসা থেকে উঠার সময়ও ইমামের আগে আগেই দাঁড়িয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এরকম করাটা কি ঠিক আছে? এতে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হবে?
নামাযের প্রত্যেক রুকনেই মুকতাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। ইমামের আগে মুকতাদির রুকু বা সিজদায় চলে যাওয়া কিংবা ইমামের আগেই মুকতাদির দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমরা রুকু করবে, যখন ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪১২
সহীহ বুখারীতে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মাঝে যে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে সি কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মতো অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দিবেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭
আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো মহিলা যদি এতটা পাতলা উড়না পরে নামায পড়ে যে, উড়না পরার পরও মাথার চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে কি তার নামায হবে?
নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা ফরয। তাই উড়না এমন মোটা হতে হবে যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না। উড়না যদি এত পাতলা হয়, যা পরার পরও চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে তা মাথায় দিয়ে নামায সহীহ হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৪-৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫২-২৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩
আমরা জানি, তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়তে হয়। কিন্তু কখনো ভিড়ের কারণে নির্ধারিত স্থানে নামায পড়তে কষ্ট হয় তখন কি একসাথে কয়েকটি তাওয়াফ করার পর একত্রে সব তাওয়াফের নামায পড়ার অবকাশ আছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর বিলম্ব না করে পড়া সুন্নত। তবে অন্য তাওয়াফ শুরু করার আগে পড়ে নেওয়া ওয়াজিব। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই তাওয়াফ শেষ করতেন দুই রাকাত নামায পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৫/৫৯
আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমীর পেছনে পড়তে কষ্ট হলে অন্য স্থানেও পড়া যাবে। তাওয়াফ শেষে নামাযের মাকরূহ ওয়াক্ত হলে তখন তাওয়াফের নামায পড়বে না; বরং মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এক্ষেত্রে তাওয়াফের নামায না পড়ে একসাথে একাধিক তাওয়াফ করা যাবে। মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হলে সকল তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত নামায পড়ে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩১; গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬-১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৭৬; আলবাহরুল আমীক ২/১২৪৫-১২৪৭; ইলাউস সুনান ১০/৮৭
ক) নামাযের জামাত শুরু হওয়ার সময় ইকামত কখন দিবে এবং মুসল্লিরা নামাযের জন্য কখন দাঁড়াবে? তারা কি ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে নাকি হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার সময় দাঁড়াবে?
খ) আমাদের এলাকায় কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, মুআযযিন ইকামাত বলার সময় ইমাম সাহেব কাতারে বা মুআযযিনের স্থানে বসে থাকেন। হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর স্থানে চলে যান। আবার অনেক সময় ইকামতের সময় ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করলে তিনি নিজ স্থানে এসে প্রথমে বসে যান। অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর দাঁড়ান। এ আমলটি কেমন? এ সম্পর্কে শরীয়তের নির্দেশনা জানতে চাই।
ক) ইমাম নামাযের জন্য প্রস্ত্তত হওয়ার পরই ইকামত শুরু করা উচিত। ইমামের প্রস্ত্তত হওয়ার আগে ইকামত শুরু করা ঠিক নয়। তদ্রূপ মুসল্লিদের জন্যও আগে থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়; বরং মুসল্লিগণ ইকামত আরম্ভ হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে ইকামতের শেষ পর্যন্ত কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব নামায শুরু করতে পারেন।
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে আছে, বিলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসতে দেখে ইকামত বলা শুরু করতেন। আর অন্যরা কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। (সহীহ মুসলিম ১/২২০)
অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত বলামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৫০৭) এসব হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুক্তাদীগণ হাইয়া আলাল ফালাহ বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না; বরং ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে।
খ) ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমাম বা কোনো মুক্তাদীর দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার পর দাঁড়ানোর প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা পূর্বে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আসতে দেখলেই ইকামত শুরু হয়ে যেত এবং সাহাবায়ে কেরাম শুরুতেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা ইমামের জায়গায় পৌঁছে যেতেন। এমন ক্ষেত্রে মসজিদে প্রবেশ করে নবীজীর বা কোনো সাহাবীর বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাস সালাহ বলার সময় দাঁড়ানোর কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমামের জন্য মসজিদে এসে বসে যাওয়ার আমলটি একেবারে ভিত্তিহীন ও নবআবিষ্কৃত। আর ইকামতের পূর্ব থেকে যারা বসে আছে তাদের জন্যও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বা ‘ক্বদকামাতিস সালাহ’ বলা পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়। এটিও সুন্নত পরিপন্থী কাজ।-জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪২৭; শরহে মুসলিম, নববী ১/২২০
আমাদের এলাকার মহিলারা বলছে, নামাযের পর মোনাজাতের সময় হেজাবের ভিতর হাত রেখে মোনাজাত করলে এই মোনাজাত নাকি আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে না। আমাদের জানার বিষয় হল, আমরা মোনাজাতের সময় হাত কি হেজাবের ভিতর রাখব নাকি হেজাবের বাইরে রেখে মোনাজাত করব? এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।
মহিলাদের উক্ত বক্তব্য ঠিক নয়, তা ভিত্তিহীন কথা। মুনাজাতের সময় হাত তোলা জরুরি নয়। তদ্রূপ হেজাবের বাইরে রাখাও জরুরি নয়। তাই দুআ করার সময় হাত হিজাবের ভেতরে থাকুক বা বাইরে, মনোযোগ সহকারে দুআ করলে তা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
আমাদের মসজিদে খুতবার মিম্বারের সিঁড়ি সামনের কাতারের সিজদা দেওয়ার জায়গায় করা হয়েছে। যার কারণে সামনের কাতারের কয়েকজন মুসল্লিকে সেই সিঁড়ির উপর সিজদা করতে হয়। প্রশ্ন হল, এভাবে সিজদার জায়গা উঁচু হলে নামায সহীহ হবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে সিঁড়িতে সিজদা দেওয়া হয় তার উচ্চতা যদি আধা হাত বা তার চেয়ে কম হয় তাহলে সিঁড়িতে সিজদা দিলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যদি তার উচ্চতা আধা হাতের চেয়ে বেশি হয় তাহলে নামায সহীহ হবে না। উল্লেখ্য যে, প্রথম কাতারের জায়গা পুরো ছেড়ে দিয়ে মিম্বর বানানো উচিত। সামনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে কাঠের মিম্বার বানানোই ভালো। যেন নামাযের সময় তা সরিয়ে রাখা যায়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০; শরহুল মুনইয়াহ ২৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০৩
একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে? নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ জোরে, নাকি শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে হরফের মাখরাজ আদায় করে নিলেই যথেষ্ঠ হবে?
নিম্নস্বরে আদায়কৃত নামাযসমূহে নামাযী সূরা-কিরাত নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ আওয়াজে পাঠ করা উত্তম। তবে পাশের মুসলি পর্যন্ত আওয়াজ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কেউ যদি ঠোঁট নাড়িয়ে একেবারে নিম্ন আওয়াজে হরফের মাখরাজ যথাযথভাবে আদায় করে পড়ে তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে।
-কিতাবুল আসল ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদুরী ৭৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫৫
গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিতর নামাযে ভুলে দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যান। স্মরণ হওয়ার পর রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পাঠ করেন। তারপর পুনরায় আবার রুকু করেন এবং পরে সাহু সিজদাও দেন। জানার বিষয় হল, আমাদের এই নামায সহীহ হয়েছে কি না? এক রাকাতে দুইবার রুকু করার কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করার কারণে সকলের নামায সহীহ হয়ে গেছে। উলেখ্য, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল পুনরায় কুনূতের জন্য না উঠে যথা নিয়মে নামায পড়ে যাওয়া এবং ভুলের জন্য সাহু সিজদা দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে ইমাম যদি রুকু থেকে দুআ কুনূতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তবে পুনরায় রুকু করবে না; বরং দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় চলে যাবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই উভয় নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে তা পুনরায় পড়তে হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯
আযানের জবাব দেওয়ার ফযীলত কী? শুনেছি, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সুপারিশ বা শাফাআত করবেন। কিছুদিন আগে এক আলেম থেকে আরো একটি ফযীলত শুনলাম। তা হল, যে আযানের জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পরবর্তী ফযীলত কি ঠিক? এ সম্পর্কে কি কোনো হাদীস আছে?
উভয় ফযীলতই সহীহ। তবে শাফাআত লাভের বিষয়টি মূলত আযানের পর দুআউল ওসীলা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে- (অর্থ) জাবের রা. থেকে বর্নিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দুআ বলবে,
اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمد الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محمودا الذي وعدته
তার জন্য আমার শাফাআত অবধারিত হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬১৪)
আর সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে আযানের বাক্যগুলোর জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন মুআযযিন বলে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ... এরপর মুআযযিনের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জবাবে অন্তর থেকে তাই বলবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩৮৫
আমাদের মহল্লার কয়েকজন বৃদ্ধ মুসল্লি মসজিদে এসেই বিভিন্ন ধরনের দুনিয়াবী কথাবার্তা ও গল্প-গুজবে লিপ্ত হয়ে যান। তাদের এ কাজ আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলার বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৫৩৩)
মসজিদে গিয়ে গল্প-গুজব ও অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া মসজিদের উদ্দেশ্য ও আদাব পরিপন্থী। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য দ্বীনী কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা নাজায়েয নয়। এক্ষেত্রে মসজিদের আদব ও সম্মানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। উচ্চস্বরে বলবে না এবং অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে সে দিকেও লক্ষ্য রাখবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/৬৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৯
আমার বাড়ি মসজিদের একপাশে এবং মসজিদের আরেক পাশে বাজার। তাই আমি রাস্তা দিয়ে ঘুরে না গিয়ে মসজিদের ভেতর দিয়ে বাজারে যাই। একদিন এক ব্যক্তি বললেন, মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই। জানার বিষয় হল, আসলেই কি মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই?
মসজিদের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করা এবং রাস্তা বানানো জায়েয় নেই। এতে মসজিদের আদাব ক্ষুণ্ণ হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মসজিদকে গমনাগমনের রাস্তা বানিও না। তা নামায ও যিকিরের জন্য গ্রহণ কর। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১২/২৪২)
তাই বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করা যাবে না। একান্তই কখনো ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়ে নিবে কিংবা কোনো যিকির-তাসবীহ পাঠ করে বের হবে। যেন হাদীসের নিদের্শনার পরিপন্থী না হয়।
-মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/৪২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯
সাধারণত কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় আমরা হাত ছেড়ে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেব হাত বেঁধে রাখতে বলেন। তাই জানতে চাই, নামাযের মধ্যে কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখব, না ছেড়ে দিব? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখাই উত্তম। তবে কোনো কোনো ফকীহ হাত ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক নয়।
-শরহুল মুনইয়াহ ৩০১; ইলাউস সুনান ৬/১২২; কিফায়াতুল মুফতী ৪/৫৩৯
আসর ও ফজরের পর তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করা যাবে কি?
আসর বা ফজরের পর তাওয়াফ করলেও তাওয়াফের দুই রাকাত নামায তখন পড়বে না; বরং সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।
আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, উমর রা. ফজরের পর তাওয়াফ করলেন। এরপর যুতুয়া নামক স্থানে চলে এলেন। অতপর যখন সূর্য উদিত হল এবং উপরে উঠল তখন তিনি তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়লেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৬; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৩৯
হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. যখন ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতেন; এরপর যখন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হয়ে যেত তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত করে পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতে চাইলে কর। তবে নামায পরে পড়বে। এরপর যখন সূর্য অস্ত যাবে বা উদিত হবে তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত করে পড়ে নিবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৪; ইলাউস সুনান ১০/৮৭; শরহু মুখতাছারিত তহাবী ১/৫৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৮
গতকাল যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। সময় ছিল খুবই অল্প। যে কারণে আমি নামাযের মধ্যে মসজিদের সামনের ঘড়িতে সময় দেখি। এরপর বাকি নামায পূর্ণ করি। ঘড়ি দেখার কারণে কি আমার নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?
নামায অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঘড়ি বা অন্য কিছুর দিকে তাকানো মাকরূহ। তাই নামাযের ভেতর আপনার ঘড়ি দেখা ঠিক হয়নি। তবে ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১৮৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪
গত কিছুদিন আগে আসরের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না করে ভুলবশত দাঁড়িয়ে যান। তখন মুসল্লিরাও দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সাথে অনেকে লোকমা দেয়। লোকমা দিলে ইমাম সাহেবসহ সবাই বসে পড়েন। নামাযের পর সাহু সিজদা আদায় করে নেন। কিন্তু নামাযের পর আমাদের মাদরাসার একজন সিনিয়র উস্তায দাঁড়িয়ে বললেন, নামায হয়নি। পুনরায় আদায় করতে হবে। আরেকজন মুফতী সাহেব বললেন, নামায হয়ে গেছে, পুনরায় পড়তে হবে না। এ অবস্থায় প্রথমজনের কথা অনুযায়ী আবার নামায আদায় করা হয়। উল্লেখ্য, ইমাম কিন্তু একজনই। আর ঐ মুফতী সাহেব নামায না পড়ে বের হয়ে যান। এখন প্রশ্ন হল, প্রথম জামাত কি সহীহ হয়েছে? যদি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় জামাতের হুকুম কী হবে?
বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যিনি নামায হয়ে গেছে বলেছেন তার কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, লোকমা দিলেও বৈঠকের জন্য ফিরে না আসা; বরং যথারীতি পরবর্তী রাকাতগুলো পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘন করে কেউ বৈঠকের জন্য ফিরে আসলেও (যেমনটি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘটেছে) নামায ভঙ্গ হবে না। কোনো কোনো ফকীহ এক্ষেত্রে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলে থাকলেও এ মতের উপর ফতোয়া নয়।
আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করেছে তাই নামাযটি সহীহ হয়ে গেছে। সুতরাং দ্বিতীয়বার আদায়কৃত নামায নফল হয়েছে।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১০১; রদ্দুল মুহতার ২/৮৪
জনৈক ব্যক্তি ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ভুলে গিয়েছিল। নামায আদায়ের পর বিষয়টি স্মরণ হলে সে পুনরায় গোসল করে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, ফরয গোসলে কুলি করতে ভুলে গেলে পুনরায় কি গোসল করতে হবে?
এক্ষেত্রে শুধু কুলি করে নিলেই গোসল পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। পুনরায় গোসল করতে হবে না।
হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি ফরয গোসল করেছে। কিন্তু শরীরের কিছু অংশে পানি পৌঁছেনি। (এখন তার করণীয় কী?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শুধু ঐ অংশটুকু ধুয়ে নিবে। অতপর নামায আদায় করবে।
-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১০/২৩১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৬০৯; কিতাবুল আছল ১/৩২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০; আসসিআয়াহ ১/২৮০