নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?
পুরুষের জন্য সিজদা অবস্থায় উভয় বাহু যমীন থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। বাহু যমীনে বিছিয়ে রাখা মাকরূহে তাহরীমী। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ঠিকভাবে সিজদা কর। (সিজদায় গিয়ে) তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার উভয় বাহুকে বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮২২
তবে ওজরের কারণে এমনটি করলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৩; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৪
আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি করে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলিনি। আমার তাকবীরে তাহরীমা কি আদায় হয়েছে? নাকি ঐ নামায পুণরায় পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর শেষ করে থাকেন তাহলে ঐ তাকবীরটি তাকবীরে তাহরীমা হিসেবে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে আপনার নামাযও সহীহ গণ্য হবে। আর প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে রুকুর তাকবীর না বললেও অসুবিধা নেই। কেননা রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলা জরুরি নয়।
পক্ষান্তরে আপনার তাকবীর যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয় কিংবা রুকুর নিকটবর্তী গিয়ে শেষ হয় তাহলে আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা আদায় হয়নি। আর তাকবীরে তাহরীমা ফরয। এটা ছাড়া নামায শুরুই হয় না।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮০-৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১১৯; আননারুহল ফায়েক ১/১৯৪
ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায় সুন্নত পড়া আরম্ভ করি। একপর্যায়ে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত পাঠ করেন এবং সিজদা দিয়ে দেন। এরপর আমি ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম রাকাতের রুকুতে শরিক হই। আমার প্রশ্ন হল, আমি তো সিজদার আয়াত শুনেছি। কিন্তু ইমাম সাহেবের সাথে সিজদায় শরিক হতে পারিনি। এখন আমার করণীয় কী? আলাদাভাবে ঐ সিজদা আদায় করা কি আমার উপর ওয়াজিব?
না, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে আলাদাভাবে ঐ সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে না। কেননা যে রাকাতে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করা হয়েছে সে রাকাতের রুকুতে শরিক হওয়ার কারণে ইমামের কেরাত এবং সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। তবে যে রাকাতে সিজদার আয়াত পাঠ করা হয়েছে এবং সিজদা দেওয়া হয়েছে ঐ রাকাতের রুকুতে যদি শরিক না হতেন তাহলে নামাযের পর আপনাকে পৃথকভাবে ঐ সিজদা আদায় করে নিতে হত।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫০১
অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?
অন্ধ ব্যক্তি যদি সহীহ-শুদ্ধভাবে ও যথাসময়ে আযান দিতে পারে অর্থাৎ তাকে নামাযের সময় বলে দেওয়ার মতো লোকের ব্যবস্থা থাকে তাহলে এমন লোককে মুয়াযযিন বানাতে কোনো সমস্যা নেই।
হাদীস শরীফে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুইজন মুয়াযযিন ছিলেন। বেলাল রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা.। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. ছিলেন দৃষ্টিহীন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২
দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যদি মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামের আগে চলে যায় তাহলে কি মুকতাদির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে?
মুকতাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালির আগে বেড়ে না গেলে মুকতাদির নামায ফাসেদ হবে না। অতএব দাঁড়ানো অবস্থায় পা ঠিক থাকলে মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে সিজদায় তার মাথা ইমামের আগে চলে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১
ফজরের নামাযের পর কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলাম। তিলাওয়াতের মাঝে সিজদার আয়াত এলে সঙ্গে সঙ্গে সিজদা দেইনি। তিলাওয়াত শেষ করে সিজদা আদায় করি। পরে ক্যালেন্ডার দেখে জানতে পারি যে, তেলাওয়াতটি সূর্যোদয়ের আগে হলেও সিজদাটি সূর্যোদয়ের সময় আদায় হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, আমার সিজদাটি কি আদায় হয়েছে নাকি পরে আবার তা আদায় করতে হবে?
মাকরূহ ওয়াক্তের আগে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে মাকরূহ ওয়াক্তে সিজদা দিলে তা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত সিজদাটি আদায় হয়নি। তা পুণরায় আদায় করে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/২৫০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০০; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭
আমি বর্তমানে অসুস্থ। দাঁড়িয়ে রুকু সিজদা করে নামায পড়তে পারি না। বসে ইশারায় নামায পড়ি। সুস্থতার সময় আমার কিছু নামায কাযা হয়ে গিয়েছিল। আমি জানতে চাচ্ছি যে, ঐ নামাযগুলো এখন এ অবস্থায় কাযা করলে তা আদায় হবে? জানালে উপকৃত হব।
জী, সুস্থ অবস্থার কাযা নামায অসুস্থ অবস্থায়ও আদায় করা যায়। তাই এখন যেভাবে সম্ভব সেভাবে আদায় করতে পারবেন। এতেই কাযা আদায় হয়ে যাবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৯; মারাকিল ফালাহ ২৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫
আমাদের ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রুকু করেন। একদিন ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করার সাথে সাথে আমি রুকুতে চলে যাই। তবে ইমামের সাথেই রুকু আদায় করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? আমার ঐ নামায আদায় হয়েছে কি?
ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে।
তবে ইমামের আগে রুকুতে চলে গেলেও ইমামের সাথে যেহেতু রুকু আদায় করেছেন তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইমামের আগে রুকু-সিজদা করা বা রুকু সিজদা থেকে উঠা গুনাহ। এ ব্যাপারে হাদীসে অনেক বড় ধমকি এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মাথাকে ইমামের আগে (সিজদা থেকে) উঠিয়ে নেয় তখন সে কী ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথার ন্যায় করে দিবেন! অথবা তিনি বলেছেন, তার আকৃতিকে গাধার আকৃতির ন্যায় করে দিবেন? -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯১
আবু হুরায়রা রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের আগে রুকু-সিজদা করে বা রুকু-সিজদা থেকে মাথা উঠায় তার কপাল শয়তানের হাতে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৭৫৩
অতএব এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা কর্তব্য। মুকতাদীগণ সর্বদা ইমামের তাকবীরের অনুসরণ করবে। তাহলেই এ ধরনের ভুল থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৪৮
নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক-ওদিক চলে যায়। যখন যেখানে দৃষ্টি থাকা দরকার সেখানে থাকে না। এজন্য অনেক সময় চোখ বন্ধ করে রাখি। এটা আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়। এ অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখাটাই কি আমার জন্য উত্তম? নাকি এর পরও চোখ খোলাই রাখব?
নামাযে চোখ খোলা রাখা এবং দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। নামাযে অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ রাখা সুন্নতের খেলাফ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় সে যেন চোখ বন্ধ না রাখে।-আলমুজামুল কাবীব, হাদীস ১০৯৫৬; ইলাউস সুনান ৫/১২১
সুতরাং চোখ খুলেই নামায পড়তে হবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অবশ্য কারো অবস্থা যদি এমন হয় যে, নামাযে তার দৃষ্টি খুব বেশি এদিক সেদিক চলে যায় তাহলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ রাখতে পারবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সিরীন রাহ. বলেন, নামাযে যার চোখ বেশি এদিক-সেদিক চলে যায় তাকে চোখ বন্ধ রাখার অনুমতি দেওয়া হত। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩৩০
তবে ধীরে ধীরে চোখ খোলা রেখে একাগ্রতার সঙ্গে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৪
গত রমযানে একদিন আমি বিতরের তৃতীয় রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হই এবং ইমামের সাথে দুআয়ে কুনূতও পড়ি। পরে যখন বাকি নামায একাকী আদায় করি তখন তৃতীয় রাকাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে যাই। আবার দুআয়ে কুনূত পড়তে হবে কি না? পরে না পড়েই নামায সমাপ্ত করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করাতে নামায শুদ্ধ হয়েছে কি?
আপনার নামায নিয়মমতোই আদায় হয়েছে। ইমামের সাথে দুআ কুনূত পড়লে ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত না পড়াই নিয়ম। কেননা দুআ কুনূত দুইবার পড়ার নিয়ম নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৪২১
চেয়ারে বসে টেবিলে সেজদা করে নামায পড়ার হুকুম কী জানতে চাই।
যে ব্যক্তি জমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম বা খুব কষ্ট হয় তার জন্য চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়েয। সেক্ষেত্রে সে ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করবে। রুকুর তুলনায় সিজদার জন্য কিছু বেশি ঝুঁকবে। তবে সামনে টেবিল কিংবা অন্য কোনো উঁচু বস্তু রেখে তাতে সিজদা করবে না;বরং ইশারায় সিজদা করবে। উল্লেখ্য, যে মুসল্লী যমীনে বসতে সক্ষম নয় কিন্তু দাঁড়াতে সক্ষম তাকে নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। রুকু করতে সক্ষম হলে রুকুও স্বাভাবিক নিয়মেই করবে। তারপর চেয়ারে বসে বাকি আমলগুলো আদায় করবে।
-ইলাউস সুনান ৭/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬; আননাহরুল ফাইক ১/৩৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩
আমরা জানি যে, ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য নফল নামায পড়া যায় না। আমি জানতে চাচ্ছি যে, পিছনের জীবনের কাযা নামায তখন পড়া যাবে কি না?
জী, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত কোনো নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে এ সময়ে কাযা নামায পড়া যাবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৩; কিতাবুল আছল ১/১২৬; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৫২-৬৫৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮
একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে নামায কাযা করবে? আর ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রেও কাযার হিসাব জানতে চায়।
নামায ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ছেলেদের প্রথম স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের প্রথম মাসিকের সময় থেকে। যদি ১৫ বছর পুরো হওয়ার পরও উক্ত আলামত দেখা না যায় তবে চান্দ্র বছর হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে তাহলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী ঐ সময়টি নির্ণয় করে তখন থেকে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্তের ফরয এবং বিতর নামায কাযা করবে।
আর যদি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোনো আলামত না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে নামায কাযা করবে।
আর কাযা নামায আদায় করার সময় ফজরের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবে যে, আমি অনাদায়ী প্রথম ফজর নামায আদায় করছি। যোহরের ক্ষেত্রে নিয়ত করবে, আমি অনাদায়ী প্রথম যোহর আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রথম অনাদায়ী নামাযটি আদায়ের নিয়ত করবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৮৪-৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৪, ১৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭৬, ৬/১৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১
আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। কারণ নামাযের সময় স্কুলে ক্লাস হত। এখন আমি সে সময়ের নামাযগুলো কাযা করছি। কিন্তু তখন কত ওয়াক্ত নামায পড়া হয়নি তা জানা নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে। আর আমার নামাযগুলো আদায়ের পদ্ধতি এই ছিল যে, যোহরের সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের সুন্নত না পড়ে কাযা নামায পড়েছি। এছাড়া অন্য সময় কাযা আদায় করার মতো সময় আমি বের করতে পারছি না। এদিকে আমার উপর আর অনাদায়ী নামায নেই -এমনটিও বলতে পারছি না। আবার নামায বাকি আছে- এমনটিও বলতে পারছি না। তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি কি যোহরের সুন্নত বাদ দিয়ে অনাদায়ী নামায কাযা করব, নাকি আমার নামায অনাদায়ী নেই ধরে নিয়ে যোহরের সুন্নত আদায় করব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিনা ওজরে তা নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। তাই অনাদায়ী নামায আদায়ের জন্য সুন্নত ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে কাযা নামায আদায় করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায বাদ দেওয়া যাবে না।
আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যদি প্রবল ধারণা হয় যে, আপনার অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে,কোনো অনাদায়ী নামায নেই তাহলে আর কাযা আদায় করতে হবে না। এক্ষেত্রে অনাদায়ী নামায থাকার ব্যাপারে শুধু সন্দেহ ধর্তব্য হবে না।
শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কাযা নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই এবং তা উচিতও নয়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮
আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার সময় চুল বেঁধে রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এই বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্য, না শুধু পুরুষের জন্য? জানালে খুশি হব।
নামাযে চুল বেঁধে রাখা মাকরূহ- এই বিধানটি কেবল পুরুষের জন্য। মহিলাদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা নামাযে ঢেকে রাখা ফরয। তাই তারা চুল বেঁধে নামায পড়তে পারবে। যাতে চুল ঢেকে রাখা সহজ হয় এবং এর কোনো অংশ প্রকাশ না পায়। আর তারা চুল ছেড়ে দিয়েও নামায পড়তে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এমনভাবে চুল ঢেকে রাখবে যেন ছেড়ে রাখার কারণে চুলের কোনো অংশ খুলে না যায়।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৮৫৬; নাইলুল আওতার ২/৩৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪২
ইদানীং দেখা যাচ্ছে আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র মাগরিবের আযানের ৭/৮ মিনিট আগে মসজিদে এসে দু হাত তোলে মোনাজাত করে। এর আগে কাউকে আমি এভাবে মোনাজাত করতে দেখিনি। তাদেরকে দেখে আমিও করতে শুরু করেছি। একদিন আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞাসা করল, এ সময়ে মুনাজাত করার কথা কি তুমি কোনো কিতাবে পেয়েছ, নাকি দেখে দেখে আমল করছ?
ভাবলাম, সত্যিই তো। কোনো কিতাবে তো পাইনি। তাই হুজুরের কাছে আবেদন এ ব্যাপারে দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে শায়ানে শান জাযা দান করুন। আমীন।
দুআ স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দুআর জন্য কুরআন-হাদীসে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা নেই। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ব্যাপকভাবেই দুআ করতে নির্দেশ করেছেন। যেমন কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
(তরজমা) তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। -সূরা গাফির : ৬০
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ (তরজমা) যখন কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। -সূরা বাকারা (০২) : ১৮৬
বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেন, যখন
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
আয়াতটি নাযিল হল তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল যে, আমরা কোন সময়টাতে দুআ করব তা যদি জানতে পারতাম তখন সূরা বাকারার এই আয়াতটি
وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.
নাযিল হয়। যাতে সুস্পষ্ট বলা আছে যে, বান্দা যখনই আল্লাহ তাআলাকে ডাকে, দুআ করে তখনই তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং দুআ কবুল করে থাকেন।
তাই কোনো ব্যক্তি দিনে-রাতে যে কোনো সময় এমনকি মাগরিবের আগে বা পরে অথবা অন্য কোনো নামাযের আগে-পরে দুআ-মুনাজাত করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই এবং এ সময় দুআর জন্য ভিন্ন দলিল খোঁজ করারও প্রয়োজন নেই। কেননা দুআর ব্যাপারে উপরোক্ত ব্যাপক নির্দেশনামূলক দলিলাদি মাগরিবের পূর্বে দুআ-মুনাজাত করাকেও শামিল করে।
উপরন্তু আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়টা বিশেষভাবেও আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হওয়া,তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির ও দুআতে মশগুল থাকার সময়। একাধিক আয়াত ও হাদীসে তা বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ.
(তরজমা) আর আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে সংলিপ্ত রাখুন যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধায় তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ডাকে। -সূরা কাহফ (১৮) : ২৮
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, অর্থাৎ যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল করে এবং তার বড়ত্ব বর্ণনা করে ও তার কাছে দুআ চায়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/১৩১
হাদীস শরীফে আছে, আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফযরের পর থেকে সূর্যোদোয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর-তাহমীদ করা আমার নিকট ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে দুই বা ততোধিক গোলাম আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (এরূপ করাটা) ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে চারজন গোলম আযাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। -আলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৮০২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২১৮৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৩২
অবশ্য এ কথা মনে রাখা দরকার যে, মুনাজাত করা উক্ত সময়ের কোনো নির্ধারিত আমল নয়। বরং যে কোনো সময়ে যেমন মুনাজাত করার সুযোগ রয়েছে তেমনি এ সময়ও তা করা যাবে।
কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ ধরনের নাপাকি কী পরিমাণ লাগলে নামায সহীহ হয় না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত। নাজাসাতে গলীযা যদি কাপড়ে বা শরীরে লাগে এবং তা তরল হয় (যেমন, প্রস্রাব) তাহলে সেক্ষেত্রে তা যদি দিরহামের আয়তন (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণ)-এর কম হয় অথবা নাপাকি শক্ত হলে যেমন, গোবর তা যদি দিরহামের ওজন (বর্তমান মেট্রিক হিসাবে যা ৩.০১৬৮ গ্রাম)-এর চেয়ে কম হয় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এ পরিমাণ অল্প নাপাকিও ধুয়ে নেওয়া ভালো। তাই সাধারণ অবস্থায় এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়া অনুত্তম।
আর যদি নাপাকি দিরহামের সমপরিমাণ হয় তাহলে তা ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব। এ অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই কেউ এ অবস্থায় নামায পড়লে সে নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি নাপাকি যদি দিরহাম পরিমাণ হয় তাহলে তোমার নামায পুনরায় পড়ে নাও। আর যদি দিরহামের কম হয় (এবং তুমি নামাযে থাক) তাহলে ঐ অবস্থায়ই তোমার নামায পূর্ণ করো। -কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১৪৬
সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রাহ., হাম্মাদ রাহ., যুহরী রাহ. প্রমুখ তাবেয়ী থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৯৭৮, ৩৯৭৯, ৩৯৮৩,৩৯৮৪
আর যদি নাপাকি দিরহামের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে নাপাকি ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়লে নামায হবে না।
-ইলাউস সুনান ১/৪০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮; শরহুল মুনইয়াহ ১৭১; আননাহরুল ফায়েক ১/১৪৬; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৪৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৮৭
আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আলহামদুলিল্লাহ নামাযের প্রতি পাবন্দ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এমনও আছে, যাদের কেউ তো একদমই নামায পড়ে না; বরং নামাযের সময় ক্যাম্পাসে বসে গল্প-গুজব, আড্ডা, খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে। আর তাদের কেউ নামায তো পড়ে কিন্তু জামাতে আসে না। তাদেরকে নামাযী বানানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কখনো গাশত করা হয়, কখনো হাযীরী যাচাই করা হয়।
এতে কিছুটা ফায়েদা হলেও উল্লেখযোগ্য ফায়েদা হয়নি। তাই সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কিছুদিন যাবত পরীক্ষামূলকভাবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয় যে, প্রতিষ্ঠানের মসজিদে জামাত চলাকালীন ১০/১২ জনের একটি তদারকি দল গঠন করা হয়। যারা জামাত চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ও রাস্তায় তদারকি করে। আলহামদুলিল্লাহ এ পদ্ধতিতে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তদারকী দলের লোকদের অধিকাংশ সময় মাসবুক হতে হয়। কখনো একদমই জামাত ছুটে যায়। যার কারণে কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। এখন জানার বিষয় হল, ক) প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় বিশেষ তদারকী দলের মাধ্যমে জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভিতরে মুসলিম বালেগ যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীগণের নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াতের উক্ত পদ্ধতি চালু রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
খ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজের দায়িত্ব পালনের কারণে মাসবুক হিসেবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কি না?
গ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজে কখনও কখনও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় মূল জামাতের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তদারকী কাজে নিয়োজিত সদস্যগণের আলাদাভাবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
ঘ) নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন মুসলিম বালেগ সদস্যদেরকে নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে নিযুক্ত সদস্যগণ এখলাসের সাথে নামাযের তদারকী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে তারা দাওয়াতী কাজের মর্যাদায় সওয়াবের অংশীদার হবেন, নাকি গুনাহগার হবেন?
ঈমানের পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করা কুফরীতুল্য ভয়াবহ গুনাহ। এছাড়া পুরুষের জন্য ফরয নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। তাই ছাত্রদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায়ের জন্য দাওয়াত, গাশত, হাজিরী যাচাই ও তদারকীসহ যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের আমল আখলাক ঠিক করা, শরীয়তের হুকুম আহকামের প্রতি পাবন্দ বানানো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, দায়িত্বশীলদের জরুরী কর্তব্য। বিশেষত প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায় যে সকল ছাত্র নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুমের ব্যাপারে উদাসীন বা তদারকী না করলে যাদের নামায ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে নামাযী বানানোর লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া তো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গুরুদায়িত্ব। তাই এ ধরনের ছাত্রের পেছনে আপনাদের চেষ্টা ও মেহনত অব্যাহত রাখুন।
তবে মসজিদের মূল জামাতে নামায আদায় করা যেহেতু শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, অন্যদিকে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইকামত হয়ে যাওয়ার পর জামাত চলতে থাকা অবস্থায় তদারকী করতে যাওয়া বা করতে থাকার কারণে যেহেতু তদারকী দলের জামাতে আসা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মাসবুক হতে হয়, কখনো বা পুরো জামাত ছুটে যায় তাই এসকল বিষয় থেকে দূরে থাকার জন্য তদারকী কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যে, ছাত্রদেরকে নিয়ম করে দেওয়া হবে যে ছাত্রাবাসের সকল কামরা জামাতের দশ মিনিট পূর্বে তালাবদ্ধ করে দিতে হবে এবং সকল ছাত্রকে অবশ্যই জামাতের পাঁচ মিনিট পূর্বে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে।
এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকী দল জামাতের পনেরো/ বিশ মিনিট পূর্ব থেকে কাজ শুরু করবে এবং যথাসমযে কামরা বন্ধ করে ছাত্রদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবে। এতে তদারকীর দায়িত্বও আদায় হবে এবং মসজিদের মূল জামাতে শুরু থেকেই সকলের নামায আদায় হবে।
অবশ্য উক্ত পন্থা যদি কার্যকরী না হয় এবং জামাত শুরু করার পরও তদারকী অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে তরবীয়ত ও প্রশিক্ষণমূলক এ কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে দায়িত্বশীলগণ মাসবুক হয়ে গেলে বা তাদের জামাত ছুটে গেলে এ কারণে তারা গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব শেষে তারা নিজেরা কোনো স্থানে জামাতে নামায আদায় করে নিবেন।
প্রকাশ থাকে যে, নামাযের ব্যাপারে যেসব ছাত্রের গাফলতি রয়েছে তাদেরকে তদারকী করে নামাযে নিয়ে আসার পাশাপাশি নামাযের হাকীকত, গুরুত্ব ও ফযীলত তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করাতে হবে। নামাযের ব্যাপারে গাফলতি ও শিথিলতা প্রদর্শন এবং নামায ছেড়ে দেয়ার গুনাহ ও ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বাণী শুনাতে হবে। যেন তারা কোন ধরনের তদারকী ছাড়া নিজ থেকেই নামাযের প্রতি যত্নবান হয়ে যায়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৯৩; ফাতহুল বারী ১৩/১১৩; শরহু মুসলিম, ননবী ১২/১১৩; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ১৭/২২৯, ১৭/২৬৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬২১; ফয়যুল কাদীর ২/৪১৬
আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফালাক পড়েছেন। আমি শুনেছি, এভাবে মাঝে একটি সূরা বাদ দিয়ে পড়া মাকরূহ। তাই জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি আমার ঐ দিনের নামায মাকরূহ হয়েছে?
ফরয নামাযে প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে ইচ্ছাকৃত মাঝে একটি ছোট সূরা রেখে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে পরবর্তী সূরা পড়া অনুত্তম। আর অনিচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হবে না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত এমনটি হলে অনুত্তম হয়নি। আর ইচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হলেও নামায আদায় হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, এ হুকুম কেবল ফরযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নফল নামাযে এমন হলে কোনো অসুবিধা নেই।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭
নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়? যদি ইমামের এ রকম হয়ে থাকে তবে কি তিনি মুক্তাদিরকে নিয়ে আবার নামায পড়বেন? মাসআলাটির উত্তর দ্রæত প্রদান করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা এতে নামাযের খুশু-খুযু বিঘ্নিত হয় এবং এতমিনানের সাথে নামায আদায় হয় না। এসব চাপ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ এতমিনান ও স্থীরতার সাথে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাদীস ও আসারে পেশাব-পায়খানা ও বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যখন নামায দাঁড়িয়ে যায় আর তোমাদের কারো পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন প্রথমে প্রয়োজন সেরে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য হালাল নয় কারো গৃহাভ্যন্তরে অনুমতি ব্যতীত দৃষ্টিপাত করা... এবং কেউ যেন পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে নামায না পড়ে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১
নাফে রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি পেটে বায়ুর চাপ বোধ করে। তিনি বললেন, বায়ুর চাপ বোধ করা অবস্থায় সে যেন নামায না পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮০২২
উপরোক্ত হাদীস ও আসারের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ বলেছেন, পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আরম্ভ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর স্বাভাবিক অবস্থায় নামায শুরু করার পর নামাযের ভিতরে এমন চাপ সৃষ্টি হলে নামাযের পর্যাপ্ত ওয়াক্ত বাকি থাকা সত্তে¡ও এ অবস্থায় নামায চালিয়ে যাওয়া মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে ওযু-ইস্তিঞ্জা সেরে পূর্ণ চাপমুক্ত হয়ে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাঁ, নামাযের ওয়াক্ত যদি এত স্বল্প থাকে যে, প্রয়োজন সারতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে তাহলে সম্ভব হলে এ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে।
অবশ্য পর্যাপ্ত ওয়াক্ত থাকার পরও কোনো ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী যদি এ অবস্থায় নামায পড়ে নেয় তবে এমনটি করা মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া জরুরি নয়। তবে ভবিষ্যতে এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪১, ৬৪৪
কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল,এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?
তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু’ রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪
আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?
আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।
-কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬
দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে।
কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬২-৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫
ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা জায়েয।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫
বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর উপর তলায়ও মুসল্লি দাঁড়ায়। কিন্তু উভয় তলার মাঝে কোনো ফুটো নেই। শুধু মাইকে আওয়াজ শোনা যায়। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে উপর তলার মুসল্লিদের নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
দোতলা থেকে ইমামের ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ছাদে ফুটো থাকা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মাইকে ইমামের আওয়াজ শুনে ইমামের উঠা-বসা ও অবস্থা জানা গেলেও ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামায অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলেও উপর তলার মুসল্লিগণ যথাযথভাবে যেন ইমামের ইকতিদা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া দরকার। এজন্য ইমাম বরাবর ছাদ কিছুটা ফাঁকা রাখা ভালো। আর তা না থাকলে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৬
একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ঐ মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর উপরই মোটা ও ভারী কার্পেট জাতীয় জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায় করি। নামায শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে পেশাব করেছিল, তুমি তার উপরই জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়েছ! আমি জায়নামায উল্টে দেখি, জায়নামাযের উল্টো পিঠে হালকা ভিজা ভিজা আছে। আর পেশাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাযের উপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হল, ঐ জায়নামাযে আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
মোটা জায়নামাযের এক পিঠে যদি নাপাকি লাগে আর ঐ নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত জায়নামাযের উপরের অংশে যেহেতু প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ পৌঁছেনি তাই তাতে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে।
তবে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকীর প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও যেহেতু তা কোনো কোনো ফকীহের মতে নাপাক হয়ে যায় তাই এই জায়নামায পবিত্র না করে তাতে আর নামায না পড়াই শ্রেয় হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৬
আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?
চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই ঐ পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬১, ১২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০
আমরা অনেক সময় মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গেলে দুজন মিলে জামাতে নামায পড়ি। এক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে একটু পিছনে সরে দাঁড়ায়। কয়েকদিন আগে এক হুজুরের সাথে নামায পড়ছিলাম। আমি তার থেকে একটু পিছনে সরে দাঁড়ালে তিনি আমাকে তার বরাবরে দাঁড় করালেন এবং বললেন যে, এটাই নাকি নিয়ম। তার এ কথা কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
হ্যাঁ, উক্ত কথাটি সঠিক। দুজন জামাতে নামায পড়লে নিয়ম হল, মুক্তাদি ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। আবদুল্লাহ বিন উতবা রাহ. বলেন, আমি দ্বিপ্রহরে হযরত উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি নফল নামায পড়ছিলেন। তিনি আমাকে (নামাযের জন্য) তাঁর ডান পাশে তাঁর বরাবরে দাঁড় করালেন। Ñ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮; আলআওসাত, হাদীস ১৯৫৫
ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, দুজন জামাতে নামায পড়লে মুক্তাদি কোথায় দাঁড়াবে? উত্তরে তিনি বললেন, মুক্তাদিও ইমামের ডান পাশে এভাবে দাঁড়াবে। আমি বললাম, সে কি ইমামের সাথে একেবারে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন ইমামের আগে-পিছে না হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস ৩৮৭০
এ সম্পর্কিত বর্ণনার ভিত্তিতে ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, মুক্তাদী একজন হলে ইমামের ডান পাশে ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। তবে কোনো মুক্তাদীর যদি ইমামের বরাবর দাঁড়ালে আগে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়াতে পারে। যাতে ইমামের আগে বেড়ে যাওয়ার কারণে তার নামায ফাসেদ না হয়ে যায়।
Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮, ৩৮৭০; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০১; ইলাউস সুনান ৪/২৪৬
ক) ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি না?
খ) আমার এক প্রতিবেশী হেফযখানায় পড়ে দীর্ঘ ৩ বছর যাবত। সে বলে, আমার তিন বছরের জীবনে কোনোদিন তেলাওয়াতে সিজদা আদায় করিনি। মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির করণীয় কী? যদি সিজদা আদায় করতে হয় তাহলে কীভাবে আদায় করবে?
ক) না, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এমনকি সূরা মিলালেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা সুন্নতের খেলাফ। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৭৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৩৫
খ) ছেলেটি বালেগ হওয়ার পর থেকে যতগুলো তিলাওয়াতে সিজদা ছুটেছে সেগুলো আদায় করে নিতে হবে। আর নাবালেগ অবস্থায় যেগুলো ছুটেছে সেগুলো আদায় করা জরুরি নয়। সুতরাং গত তিন বছরের মধ্যে ছেলেটি বালেগ হয়ে থাকলে বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া তিলাওয়াতে সিজদাগুলো অনুমান করে আদায় করে নিবে।
উল্লেখ্য, সিজদায়ে তিলাওয়াত একটি ওয়াজিব আমল। তা তিলাওয়াতের সাথে সাথে আদায় করে নেওয়া উচিত। বিনা ওজরে তা বিলম্ব করবে না। Ñহাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।
ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং বয়ানের জন্য আরেকটি মিম্বর এভাবে দুটি মিম্বর স্থায়ীভাবে স্থাপন করার শরয়ী হুকুম কী? এটা সুন্নাহসম্মত কি না? আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির পরামর্শে বড় একটি মসজিদে এভাবে দুটি মিম্বর স্থাপন করা হয়েছে। যদি দুটি মিম্বর বানানো ঠিক না হয় তাহলে সাধারণ সময়ের বয়ানের জন্য চেয়ার ব্যবহার করার হুকুম কী?
খ) মসজিদে খুতবার মিম্বর তিন সিঁড়ির চেয়ে বেশি করার কী হুকুম?
গ) জুমআর দিন খুতবার পূর্বে যে বয়ান হয় তার ক্ষেত্রে
إذا دخل أحدكم والإمام على المنبر فلا صلاة ولا كلام .
হাদীসটি প্রযোজ্য হবে কি না? জনৈক আলেম বলেছেন প্রযোজ্য হবে।
ক) এক মসজিদে একাধিক মিম্বর স্থাপন করা ঠিক নয়; বরং এক মসজিদে একটি মিম্বার হওয়াই নিয়মসম্মত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি মিম্বারই স্থাপন করেছেন। উক্ত মিম্বারে তিনি জুমার খুতবা দিতেন এবং লোকদেরকে অন্যান্য সময়ে দ্বীনী তালীম, ওয়ায নসীহত করতেন। খুতবার জন্য পৃথক মিম্বার এবং বয়ানের জন্য ভিন্ন মিম্বার স্থাপন করেননি।
অতএব আপনাদের মসজিদে খুতবার মিম্বার ব্যতিত অন্য মিম্বার স্থাপন করা ঠিক হয়নি।
আর স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত মিম্বার বানানো সহীহ না হলেও ওয়াজ-নসীহতের জন্য স্থানান্তরযোগ্য চেয়ার মসজিদে নেয়া যাবে এবং তাতে বসে ওয়ায নসীহত ইত্যাদি করা যাবে। কেননা মসজিদের ভেতর চেয়ারে বসে আলোচনা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৬
উত্তর : খ) মসজিদের মিম্বার তিন তাক বিশিষ্ট হওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি তিন তাক বিশিষ্ট ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি ছোট আকারের ছিল এবং তা তিন তাক বিশিষ্ট ছিল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪১৯)
সুতরাং মসজিদের মিম্বার তিন তাকের বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
উত্তর : গ) প্রশ্নোক্ত হাদীসটি (অর্থ: তোমাদের কেউ যখন এমন সময় মসজিদে আগমন করে যখন ইমাম মিম্বারে আছে তাহলে সে যেন ঐ সময় কোন নামায না পড়ে এবং কথাবার্তা না বলে) জুমার খুতবার সাথে সম্পৃক্ত। খুতবার পূর্বের ওয়ায নসীহত ও আলোচনার সাথে এটি সম্পর্কযুক্ত নয়। উক্ত নিষেধাজ্ঞা যে জুমআর খুতবার সাথে সম্পৃক্ত তা এ সম্পর্কিত অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের খুতবা প্রদান অবস্থায় পাশের ব্যক্তিকে বলল “চুপ থাক ”সে একটি অনর্থক কাজ করল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪
এছাড়া মুআত্তা ইমাম মালেক-এ সা‘লাবা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মিম্বারে বসার পরও কথাবার্তা বলতাম। অতপর যখন খুতবার জন্য আযান হত এবং উমর রা. খুতবা আরম্ভ করতেন তখন আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। -মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৩৪৩
তাই খুতবার সময়ের উক্ত বিশেষ নিষেধাজ্ঞাকে খুতবার পূর্বের বয়ানের জন্য প্রয়োগ করা ঠিক নয়। তবে যে কোনো দ্বীনী আলোচনা চলাকালে উপস্থিত শ্রোতাদের জন্য তা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং আলোচক ও শ্রোতাদের বলা-শোনায় ব্যঘাত হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা যে জরুরী তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দ্বীনী আলোচনা চলাকালীন কেউ নামায পড়লে বা ব্যক্তিগত ইবাদত করতে চাইলে মজলিস থেকে দূরে করবে। যেন মজমার আলোচনার ব্যঘাত না ঘটে।
আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে আস্তে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হয়।
আমার প্রশ্ন হল, আস্তের স্থানে কতটুকু জোরে আওয়াজে পড়লে বা জোরের স্থানে কতটুকু আস্তে আওয়াজে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী উভয়ের মাসআলাই কি এক? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিহŸা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী (নি¤œস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে, পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য, এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। আর সিররী নামাযে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একাকী নামায আদায়কারীর জন্যও আস্তে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত জোরে পড়লে সেক্ষেত্রে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।
Ñরদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১২৩
একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায় আমাকে ইমামতি করতে দেওয়া হয়। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে কোনো আলেম বা হাফেয না থাকায় বাধ্য হয়ে আমি ইমামতি করতে যাই। কুরআন মাজীদের শেষের কয়েকটি সূরা ছাড়া অন্য বড় কোনো সূরা আমার মুখস্থ নেই। আর আমি জানতাম, ফজর নামাযে কেরাত একটু লম্বা পড়া সুন্নত। তাই আমার মুখস্থ সূরাগুলো থেকে এক রাকাতে আমি ধারাবাহিকভাবে চার-পাঁচটি করে সূরা তিলাওয়াত করি। নামায শেষে কয়েকজন মুসল্লি এ নিয়ে আপত্তি করেন। তারা বলেন, এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে কাউকে তো দেখিনি। তুমি এটি ঠিক করনি।
আমি জানতে চাই, ফরয নামাযে এভাবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়ার হুকুম কী? এ কারণে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হয়েছে?
ফরয নামাযে এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা না পড়াই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক সূরার পর রুকু এবং সিজদা করে তার হক আদায় কর। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৩০
তবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়াও জায়েয আছে। কোনো কোনো সাহাবী এবং তাবেয়ী থেকে ফরয নামাযেও এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা পড়ার কথা বর্ণিত আছে, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ফরয নামাযের এক রাকাতে একত্রে দুটি সূরা পড়তেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৪
আতা রাহ. বলেন, ফরয নামাযে এক রাকাতে দুটি সূরা বা দুই রাকাতে একটি সূরা পড়লে অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৫
উল্লেখ্য, এখানে মূল বিষয় হল, মাসনূন কিরাতের প্রতি লক্ষ্য রাখা। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেহেতু উযরের কারণে এমন হয়েছে তাই তাকে অনুত্তমও বলা যায় না।
Ñফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফতহুল বারী ২/৩০৪; ইলাউস সুনান ৪/১৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭
ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
না, ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।
Ñআল মুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭
নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে পড়ি অর্থাৎ সূরা কাফিরূন আগে এবং সূরা কুরাইশ পরে পড়ি তাহলে নামায হবে কি?
নামাযের মধ্যে সূরার তারতীব রক্ষা করে পড়া মুস্তাহাব। ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামায হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে নামায মাকরূহ হবে না। সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনইয়া ৪৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬
ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে মনে করলেই হবে?
খ) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী?
গ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?
ক) কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের দৃঢ় ইচ্ছাকেই নিয়ত বলে।
সুতরাং নামায-রোযা এবং অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে সাথে মুখেও উচ্চারণ করে বলতে নিষেধ নেই। কেউ যদি ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নেয় তবে তা দোষণীয় হবে না। -উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫
খ) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছে, দুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-
১. কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। -সূরা ইউনুস : ৮৯
এ আয়াতে তোমাদের দুইজনের দুআ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫; আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১
তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যে, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।
২. একটি দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -মুজামে কাবীর তবারানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৯
সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো জানতে মাসিক আলকাউসার, শাবান-রমযান ১৪২৯; আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত ‘সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’’ প্রবন্ধটি পাঠ করুন।
গ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো মহলে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়; বরং হাদীস শরীফে নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১
কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম-মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময় বসে থাকে। মুআযযিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলে তখন দাঁড়ায়। তারা বলে ইকামতের সময় এরূপ করা সকলের জন্য মুস্তাহাব। অতএব আমার জানার বিষয় হল, এ কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত আমলটি সহীহ নয়। একাধিক হাদীসে ইকামতের শুরুতেই ইমাম-মুক্তাদী সকলে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং কাতার সোজা করার কথা বর্ণিত আছে। তবে ইমাম নামাযের জন্য না দাঁড়ানো পর্যন্ত মুসল্লিগণ দাঁড়াবে না। ইমামের আগেই মুসল্লিদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মাকরূহ।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার আগে বেলাল রা. ইকামত বলতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আসতে দেখতেন তখন তিনি ইকামত বলা শুরু করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযের জন্য আসতে দেখা গেলে ইকামত শুরু করে দেওয়া হত। আর সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৫
অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৪২
সুতরাং ইমাম মেহরাবের কাছে উপস্থিত থাকুক বা মেহরাবের দিকে আসতে থাকুক উভয় অবস্থায় ইকামতের শুরুতে মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বহু হাদীসে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নুমান বিন বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলো এভাবে সোজা করতেন যেন তিনি এই কাতার দিয়ে তীর সোজা করবেন। এভাবে এক সময় তিনি নিশ্চিত হলেন যে, আমরা কাতার সোজা করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি। এরপর একদিন তিনি নামায পড়ানোর জন্য আসলেন এবং নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে কিছুটা সামনের দিকে বেড়ে আছে। তিনি তখন বললেন, আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬
হযরত উমর রা. কয়েকজন মানুষকে শুধু এজন্যই নির্ধারিত রেখেছিলেন যে, তারা মুসল্লিদের কাতার সোজা করবেন। তারা যখন এসে জানাতেন যে, কাতার সোজা হয়েছে তখন উমর রা. নামায শুরু করতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২৪৩৭-২৪৩৯
হযরত উসমান রা.-এর নিয়মও এমনই ছিল। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫৫২
আমি একদিন একাকী মাগরিবের নামায আদায় করছিলাম। শেষ রাকাতে একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়ি। তখন প্রথম সিজদা থেকে উঠার পর দ্বিতীয় সিজদা আদায় করেছি ভেবে তাশাহহুদ পড়তে থাকি। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে আমার প্রবল ধারণা হয় যে, আমি দ্বিতীয় সিজদা করিনি। তাই তখন দ্বিতীয় সিজদা করে পুনরায় তাশাহহুদ পড়ি। এরপর সাহু সিজদাও আদায় করি।
আমার জানার বিষয় হল, এভাবে দ্বিতীয়বার তাশাহহুদ পড়া এবং সাহু সিজদা করা কি ঠিক হয়েছে? আর আমার নামায কি আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সিজদা না দিয়েই যেহেতু আপনি তাশাহহুদ পড়েছিলেন তাই দ্বিতীয় সিজদা আদায়ের পর পুনরায় তাশাহহুদ আদায় করা সঠিক হয়েছে। আর দ্বিতীয় সিজদা আদায়ে যেহেতু বিলম্ব হয়েছে তাই সাহু সিজদা আদায় করা জরুরি ছিল। অতএব সাহু সিজদার সাথে উক্ত নামায শেষ করাও সঠিক হয়েছে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১২০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৩; আসসিআয়াহ ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫০
যদি কেউ নামাযে নিশ্চিতভাবে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও ভুল হয়েছে ভেবে সাজদায়ে সাহু করে তাহলে তার নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? দয়া করে জানাবেন।
নামাযে ভুল হওয়ার সন্দেহ প্রবল হলেই কেবল সাহু সিজদা করার নিয়ম রয়েছে। নিছক সন্দেহের উপর সাহু সিজদা করা ঠিক নয়। অবশ্য ভুলের ধারণা প্রবল না হওয়া সত্ত্বেও কেউ সাহু সিজদা করলে তার নামায আদায় হয়ে যাবে, তবে মাকরূহ হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯; ইমদাদুল মুফতীন ৩১৭
কিছুদিন আগে এক অপরিচিত জায়গায় আমরা কয়েকজন যোহরের ওয়াক্তে খোলা ময়দানে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করি। নামায শেষ হলে স্থানীয় একজন বললেন, আমাদের কিবলার দিক ভুল ছিল। পরবর্তীতে পুনরায় নামায আদায় করতে চাইলে কেউ কেউ বলেছেন, নামায হয়ে গেছে। তাই আর পড়া হয়নি।
এখন আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় আমাদের নামায কি আসলেই সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উল্লেখ্য যে, কিবলার দিক নিয়ে আমরা কেউ সন্দিহান ছিলাম না। তাই যাচাই করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যাচাই করা হয়নি।
নামাযে কিবলামুখী হওয়া ফরয। আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেদিকে নামায পড়া হয়েছে সেটা যেহেতু কেবলার দিক ছিল না তাই আদায়কৃত নামায হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে। যারা নামায হয়ে গেছে বলেছে তাদের কথা সহীহ নয়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৭
ক) কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে মাগরিব নামাযের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে মসজিদের অস্থায়ী ইমাম মাইকে বয়ান আরম্ভ করেন। যা ইতিপূর্বে করা হয়নি। তাই জানতে চাই, এই সময় বয়ান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে কি?
খ) উক্ত সময় ইমাম সাহেবের বয়ানের বিষয়ে চার মাযহাবের বিধান কী? মাগরিবের নামাযে কোনো কোনো মাযহাবে আযানের পর ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায পড়ার বিধান আছে। তাই কেউ নামায পড়বে কেউ ইমামের বয়ান শুনবে। এক্ষেত্রে ইমাম সকল মাযহাবের মুসল্লি নিয়ে নামায কীভাবে পড়বেন?
ক) ওয়ায-নসীহত, দ্বীনী বয়ান ও মাসআলা-মাসাইলের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসল্লিগণকে দ্বীনী কথাবার্তা ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাইলের তালিম দেওয়া একজন ইমামের মৌলিক দায়িত্ব। তবে ওয়ায-নসীহত, বয়ান ইত্যাদির জন্য মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়টি উপযুক্ত সময় নয়। কেননা মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে স্বল্প বিরতি থাকে। যা নামাযের প্রস্তুতির জন্যই প্রয়োজন। এছাড়া এত অল্প সময়ে বয়ানে বা মাসআলার উপস্থাপনায় মুসল্লিদের কাছে অনেক বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত আযান-ইকামতের মধ্যবর্তী এ সময়টি হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী দুআ কবুলের সময়। তাই এ সময় ওয়ায করা বা মাসআলা বলার জন্য উত্তম সময় নয়। অবশ্য ইমাম চাইলে কোনো দিন প্রয়োজনে এ সময়ও কোনো বিষয় বা মাসআলা আলোচনা করতে পারেন। কেননা এ সময় অল্পস্বল্প কিছু বলা তো নিষিদ্ধ নয়। তাই কোনো দিন এ সময় আলোচনা করতে চাইলে জামাতের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আলোচনা শেষ করে দেওয়া উচিত হবে। আর সংক্ষিপ্ত এ সময়ে দুর্বোধ্য ও জটিল কোনো মাসআলা বা বিষয়ের আলোচনা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। জটিল কোনো বিষয়ের আলোচনা করা জরুরি হলে তা ভিন্ন কোনো সময়ে করবে।
খ) মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে তা জায়েয আছে। খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১২৭৮
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসারী সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ৩৯৮৪
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর,উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৯৮৫
হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩
সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেই; অন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু’ রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।
আর শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী এ সময় দু’ রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। আর অপর মত অনুযায়ী তা জায়েয। যারা মুস্তাহাব বলেন তারা এ সংক্রান্ত একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদীসটি হল-
بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء
(অর্থ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়।’-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৭
তবে ভিন্নমতের লোকজন বলেন যে,এটি শুধু জায়েয হওয়ার দলিল,মুস্তাহাব হওয়ার নয়।
এখন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের দেশের মুসল্লিগণ ব্যাপকভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারী আর সে অনুযায়ী মাগরিবের আযানের পর ফরযের পূর্বে যেহেতু নফল নামায পড়ার বিশেষ কোনো বিধানও নেই তাই ইমাম যদি একান্ত প্রয়োজনে মাগরিবের ফরযের পূর্বে কোনো আলোচনা করেন তবে তার এ আলোচনা এ সময়ের নামাযের প্রতিবন্ধক হবে না। অবশ্য কোনো মুসল্লি যদি এ সময় নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যায় তবে তার নামাযে যেন ব্যাঘাত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকলের কর্তব্য। অন্যদিকে ইমাম এ সময় কোনো আলোচনা শুরু করে দিলে তখন কারো জন্য নফলে দাঁড়ানোও উচিত নয়। -ফতহুল কাদীর ১/৩৮৮-৩৮৯; আদদুররুল মুখতার ২/১৪; মাওয়াহিবুল জালীল ২/৩৭০; আলমুগনী ২/৫৪৬