আমার বাবাকে তার এক বন্ধু একটি ওয়ালম্যাট গিফট করেছে। তাতে কিছু প্রাণীর ছবিও আছে। একজন দেখে বললেন, এভাবে স্পষ্ট প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা জায়েয হবে না। আপনি প্রাণীর চোখগুলো কেটে দিন। বাবা তাই করলেন; সবগুলো প্রাণীর চোখ কেটে দিয়ে ওয়ালম্যাটটি ঘরে টাঙিয়ে দিলেন।
কিছুদিন আগে একজন আঙ্কেল বললেন, তিনি একজন আলেমের কাছে শুনেছেন যে, শুধু চোখ কাটলেই হবে না বরং পুরো চেহারা মুছে দিতে হবে। অন্যথায় ঐ ছবি টাঙিয়ে রাখা জায়েয হবে না।
হুযুরের কাছে এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
কোনো প্রাণীর দৃশ্যমান ছবি টাঙানো বা দৃশ্যমান রাখা নাজায়েয। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ.
ফেরেশতাগণ এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি আছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১১২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবের রা. বলেন,
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصُّورَةِ فِي البَيْتِ، وَنَهَى عَنْ أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছবি রাখতে ও ছবি অঙ্কন করতে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৭৪৯)
আর প্রাণীর ছবির মূলই হল তার মাথার অংশ। যা দ্বারা প্রাণীর পূর্ণ রূপ ও পরিচয় স্পষ্ট হয়।
ইকরিমা রাহ. বলেন,
إِنَّمَا الصُّورَةُ الرَّأْسُ ، فَإِذَا قُطِعَ فَلاَ بَأْسَ.
ছবির মূল হল মাথা। মাথা যদি কেটে দেয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২৫৮০৮)
তাই মাথার অংশ কেটে বা মুছে দিলে তা আর ছবির হুকুমে থাকে না। কিন্তু মাথা ও চেহারা না মুছে শুধু চোখ মুছে দিলে প্রাণীর আকৃতি ও পরিচয় বাকি থাকে। তাই তা ছবির হুকুমেই থাকে।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ. বলেন, প্রাণীর মূর্তি বা ছবির যদি মাথা কাটা থাকে তাহলে এমন ছবি ঘরে রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে না। চাই মাথা গোড়া থেকেই কেটে ফেলা হোক বা না কেটে পুরো মাথা একদম মুছে ফেলা হোক। কেননা স্বাভাবিকভাবে মাথা ছাড়া প্রাণীর উপাসনা করা হয় না। আর পুরো মাথার শর্ত করা হয়েছে। কেননা শুধু ভ্রু মুছে দেয়া বা চোখ কেটে দেয়া যথেষ্ট নয়। কেননা এসব ছাড়াও প্রাণীর উপাসনা হয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ আলেমের কথাই সঠিক যিনি বলেছেন, ছবির শুধু চোখ কেটে দিলে সেটা টাঙানো বেধ হয়ে যাবে না; বরং পুরো চেহারা মুছে দিতে হবে।
-জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/২৫৩
আমি আজ এশার নামাযে প্রথম রাকাতে ভুলে ৩ বার সেজদা করেছি। পরে সাহু সেজদা দিয়ে নামায শেষ করেছি। আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?
এক রাকাতে ভুলে ৩ বার সেজদা করার কারণে আপনার উপর সাহু সেজদা করা আবশ্যক হয়েছিল। আপনি যেহেতু তা আদায় করেছেন, তাই উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।
-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ৩৫২৪; কিতাবুল আছল ১/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০১
আমি আজ আসর নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে দু’বার তাশাহহুদ পড়ে ফেলি। পরে সাহু সেজদা না দিয়েই নামায শেষ করি। এখন আমি জানতে চাই, আমার নামায কি আদায় হয়ে গেছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে? আরও জানতে চাই, এভাবে নামাযের শেষ বৈঠকে অথবা প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে কী করণীয়?
নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না। তাই আপনি সাহু সেজদা না করে ঠিকই করেছেন। আর ফরয ওয়াজিব এবং সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী পৃ.২৫১, রদ্দুল মুহতার ১/৫১০
হুযুর, আজ ফজর নামাযে প্রথম রাকাতে আমি ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। ইমাম সাহেব কখন রুকু ও সেজদা করলেন আমি তা টের পাইনি। হঠাৎ চোখ খুলে দেখি, তিনি সেজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় রাকাত শুরু করছেন। তখন আমি তার সাথে দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হয়ে নামায শেষে ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায় করেছি। আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে? নাকি তা পুনরায় পড়তে হবে?
আপনার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। তবে তা নিয়মসম্মত হয়নি। কারণ নামাযের শুরু থেকে উপস্থিত থাকার পর ঘুমের কারণে কিছু অংশ ছুটে গেলে নিয়ম হল, যে অংশ ছুটে গেছে, তা আগে আদায় করে নেয়া। তারপর ইমামের অনুসরণ করা।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৩
আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি মসজিদ আছে। যার নাম দেয়া হয়েছে রুস্তুমিয়া জামে সমজিদ। যা জমিদাতার নাম, এখন কিছু মানুষ বলছে এটা আল্লাহ তাআলার ঘর। আর আল্লাহর ঘর দুনিয়ার কোনো মানুষের নামে রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তাহলে ঐ মসজিদে নামায সহীহ হবে না। এ নিয়ে মসজিদে খুব ফেৎনা শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, মসজিদ মানুষের নামে নামকরণ করা জায়েয আছে কি না? দলিলসহ জানালে এই ফেৎনা নিরসন হবে।
সাহাব, তাবেয়ী বা কোনো আল্লাহর ওলীর নামে মসজিদের নামকরণ করা জায়েয। যেমন সমজিদে আবু বকর রা., মসজিদে বেলাল রা., ইত্যাদি। তবে মসজিদের জায়গা বা মসজিদে অর্থ দান করে দাতার নামে মসজিদের নামকরণ করা উচিত নয়। কারণ এতে এখলাস নষ্ট হওয়া ও রিয়া তথা লোক দেখানোর আশঙ্কা থাকে। আর যদি এমনটি লোক দেখানো বা রিয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে তবে তো কাজটি সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। এবং দানের সওয়াবও নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য এভাবে কোনো মসজিদের নাম রাখা হলেও তা মসজিদ বলেই গণ্য হবে এবং সেখানে নামাযসহ সকল ইবাদাত বন্দেগী করা যাবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪২০; ফাতহুল বারী ১/৬১৪; উমদাতুল কারী ৪/১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২৫
আমি মাঝেমধ্যে ফরয নামায একাকী পড়ার সময় তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে ভুলক্রমে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে ফেলি। এতে করে আমার নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি?
ফরযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা না মিলানোই সুন্নত। তাই ইচ্ছাকৃত সূরা মিলাবে না। ভুলে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই। এ কারণে সাহু সিজদা আসবে না।
উল্লেখ্য, মনোযোগ সহকারে নামায পড়া উচিত। নামাযে প্রায় ভুল হওয়া উদাসীনতার লক্ষণ। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া কর্তব্য।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫১১
কয়েক দিন আগের কথা। বিতরের নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় আমি সন্দেহে পড়ে যাই যে, দ্বিতীয় রাকাতে আছি না তৃতীয় রাকাতে? কোনোটাই স্থির করতে পারছিলাম না। তখন ঐ রাকাতকে দ্বিতীয় রাকাত ধরেই নামায শেষ করেছি। তাই ঐ রাকাতে কুনূত না পড়ে পরের রাকাতে পড়েছি। এবং শেষ বৈঠকে সাহু সেজদা করেছি। এতে আমার নামায সহীহ হয়েছে কি ?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোন্টি শেষ রাকাত সে বিষয়ে আপনি যেহেতু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, তাই আপনার জন্য উভয় রাকাতেই কুনূত পড়া উচিত ছিল। এবং প্রত্যেক রাকাতের পর বৈঠক করা কর্তব্য ছিল। এক্ষেত্রে যে কোনো রাকাতই শেষ রাকাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আপনি যেহেতু সাহু সেজদা করেছেন তাই আপনার নমায সহীহ হয়ে গেছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪২১; রদ্দুল মুহতার ২/৯৪
সেদিন এক ব্যক্তির মুখে শুনলাম, রমযান মাসে নাকি এমন একটি নামায আছে, যা আদায় করলে সারা জীবনের সকল কাযা নামায মাফ হয়ে যায়। হুযুরের কাছে জানতে চাই, সেটি কোন্ নামায? তা আদায়ের কী পদ্ধতি?
‘রমাযানে বিশেষ নামায পড়লে সারা জীবনের কাযা নামায মাফ হয়ে যায়’ এমন কথা সহীহ নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। কুরআন-হাদীসের কোথাও এমন কথা নেই। এ সম্পর্কে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয় তা বানোয়াট ও জাল। মোল্লা আলী ক্বারী রাহ. ঐ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বাতিল কথা। কেননা এটা উম্মাহ্র ঐক্যমত্যের পরিপন্থী। এমন কোনো ইবাদত নেই, যার দ্বারা অনেক বছরের কাযা মাফ হয়ে যায়। (আলমাওযুআতুল কুবরা, পৃষ্ঠা ২৪২) বরং অনেক হাদীসে সুস্পষ্ঠভাবে এসেছে যে, কারো কোনো নামায ছুটে গেলে তার কর্তব্য হল তা কাযা করা। যত ওয়াক্ত নামায ছুটবে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য আলাদা কাযা আদায় করতে হবে। এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا، لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ.
কারো যদি ভুলে কোনো নামায ছুটে যায় তাহলে যখন স্মরণ হবে তখন যেন সে তা আদায় করে নেয়। এর থেকে দায়মুক্তির ভিন্ন কোন কাফফারা নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭
অতএব এক নামায দ্বারাই জীবনের সকল কাযা মাফ হয়ে যাবে এমন ধারণা ভ্রান্ত ও হাদীস পরিপন্থী। এমন ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
সেদিন বিতর নামায পড়ছিলাম। ৩য় রাকাতে দুআয়ে কুনূত না পড়েই রুকুর জন্য ঝুঁকে যাই। হাঁটুতে হাত লাগে না এত সামান্য ঝুঁকেছিমাত্র তখনই দুআর কথা স্মরণ হয়। তাই দাঁড়িয়ে দুআয়ে কুনূত পড়ি। এরপর সিজদায়ে সাহু ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?
জী হাঁ, আপনার নামায সহীহ হয়েছে। কারণ আপনি যেহেতু রুকুতে চলে যাননি; বরং সামান্যঝুঁকেই উঠে গেছেন তাই আপনার দাঁড়িয়ে যাওয়া নিয়মসম্মতই হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সিজদায়েসাহুও ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করা ঠিক হয়েছে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪৭
মহিলাদের মাসিকের সময় আইয়ামে তাশরীকে তাকবীরে তাশরীক কীভাবে পড়বে? নামায না থাকলেও তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?
মাসিকের সময় যেহেতু নামায নেই তাই এ সময় তাদেরকে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।তাকবীরে তাশরীকটা মূলত নামাযের সাথে সম্পৃক্ত।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪
আলকাউসারের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, নামাযের জন্য মৌখিক নিয়্যত করা জরুরি নয়। মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট। কিন্তু ফরয ওয়াজিব সুন্নত ও নফল এগুলোর ক্ষেত্রে কীভাবে নিয়ত করতে হবে তা কোনো প্রশ্নোত্তরে পাইনি। এ সব ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করা কি যথেষ্ট না কি ফরয-ওয়াজিব নিয়ত করতে হবে। আর কাযা নামায আদায়ের সময় কাযা কথা কি উল্লেখ করতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
নিয়ত দিলে দিলে করাই যথেষ্ট। মৌখিক নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তবে কোন নামায পড়ছেন তানির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে। যেমন, ফজরের ফরয নামায পড়ছি, যোহরের ফরয নামাযপড়ছি। এভাবে কোন ফরয নামায তা নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করতে হবে।
আর বিতর নামায পড়ছি এমন বললেই হবে। তদ্রূপ ফজর, যোহর, মাগরিব ও ইশার সুন্নতেওনির্দিষ্ট নিয়ত করা ভালো। আর হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল নামাযগুলোর ক্ষেত্রেও ঐ নামাযেরনিয়ত করা উত্তম। যদিও শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। এছাড়াঅন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি বা নফল নামায পড়ছি এমন নিয়ত করবে।
আর কাযা আদায়ের ক্ষেত্রেও অমুক দিনের যোহর পড়ছি, অমুক দিনের আসর পড়ছি- এভাবেনিয়ত করলেও চলবে।
-আলইখতিয়ার ১/১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২০৫
আমাদের মসজিদে একদিন ইশার জামাতে ইমাম সাহেব চার রাকাত পর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুসল্লিরা লোকমা দিলেও তিনি ফিরে আসেননি। অতপর পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে বৈঠক করেন এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করেন। সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করার কারণে মুসল্লিরা মনে করেছে নামায হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে সন্দেহ ছিল। ঐ সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করার মতো পাইনি। পরে জানতে পারলাম যে, আমাদের নামায হয়নি। আসলেই কি আমাদের ঐ নামায হয়নি? কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেবকে বললে তিনি বললেন, সাহু সিজদার কারণে নামায সহীহ হয়ে গেছে। এ কথা কি ঠিক? যদি না হয়ে থাকে তবে ঐ দিনের ইশা, সুন্নত ও বিতর সবাইকে কি কাযা করতে হবে?
আপনাদের উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। চার রাকাতের পর না বসে পঞ্চম রাকাত পূর্ণ করারদ্বারা অর্থাৎ ঐ রাকাতের সিজদা করার দ্বারাই ঐ ইশার নামায বাতিল হয়ে গেছে। তাই পরবর্তীতেসাহু সিজদা করলেও উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। কারণ নামাযের মধ্যে কোনো ওয়াজিবেত্রুটি হলে সাহু সিজদা করে নিলে ঐ নামায সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু ফরয ছুটে গেলে সাহু সিজদাদ্বারা সে ক্ষতি পূরণ হয় না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চার রাকাত পর শেষ বৈঠক করা ফরয ছিল তা করাহয়নি। সুতরাং এ ভুল সাহু সিজদা দ্বারা পূর্ণ হবে না। অতএব ঐ দিনের ইশার নামায আবারপড়তে হবে। তবে সুন্নত ও বিতর পড়তে হবে না। কেননা সুন্নতের কাযা নেই। আর বিতর নামাযসহীহ হয়েছে। তাই তা আর পড়তে হবে না।
-শরহুল মুনইয়াহ ২৮৯-২৯০; মুখতাসারুল কুদূরী ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬১
মাঝেমধ্যে আমি নামাযের কোনো রাকাতে একটি সিজদা করে অপর সিজদাটি করতে ভুলে যাই। এখন জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?
নামাযের কোনো রাকাত থেকে যদি একটি সিজদা ছুটে যায় তাহলে নামাযের মধ্যে যখনই স্মরণ হবেসিজদাটি আদায় করে নিবেন এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবেন।
-শরহুল মুনইয়াহ ২৯৭; কিতাবুল আছল ১/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬২
মাঝেমধ্যে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে আমি দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকু করে ফেলি। এখন আমি জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?
বিতর নামাযে দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে গেলে দুআ কুনূতের জন্য ফিরে আসবে না।বরং বাকি নামায স্বাভাবিকভাবে পড়ে সাহু সিজদা করবে। অবশ্য কেউ যদি রুকু থেকে ফিরে এসেদুআ কুনূত পড়ে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। যদিও এমনটি করা অনিয়ম। এক্ষেত্রে তাকে পুনরায়রুকু করতে হবে না। আর পুনরায় দুআ কুনূত পড়া হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় সাহু সিজদাকরতে হবে। কেননা বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়া ওয়াজিব। আর দুআ কুনূত না পড়েরুকুতে চলে গেলে কুনূত পড়ার সময় শেষ হয়ে যায় এবং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে সাহুসিজদা করা আবশ্যক হয়ে যায়। তাই রুকু থেকে ফিরে এসে কুনূত পড়া নিয়মসম্মতনয়।
-কিতাবুল আসল ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯-১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২;
আমি একদিন একাকী নামায পড়ার সময় রুকুতে গিয়ে ভুলে কিরাত পড়তে শুরু করি। দুয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হওয়ামাত্র রুকুর তাসবীহ পড়ে যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা করে কি আমি ঠিক করেছি?
হাঁ, সাহু সিজদা করে ঠিক করেছেন। কেননা রুকুতে ঐ পরিমাণ কেরাত পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৮১; হালাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪
আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত নামাযের প্রথম বৈঠকে বসে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়তে শুরু করি। কয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হতেই তাশাহহুদ পড়ে নেই এবং যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? এবং সাহু সিজদা করার দ্বারা কি আমার নামায হয়ে গেছে?
জী হাঁ, উক্ত ভুলের কারণে তাশাহহুদ পড়তে বিলম্ব হওয়ায় সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে।
তাইআপনার সাহু সিজদা করা ঠিক হয়েছে এবং নামায শুদ্ধ হয়েছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪
ফাতাওয়া রাহীমিয়া ও মাসিক আলকাউসারে বর্ণিত প্রশ্নের উত্তরের মাঝে পারস্পরিক বৈপরীত্য বোধ করছি। তাই ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নিম্নে উভয় প্রশ্ন ও উত্তর উল্লেখ করছি। ফাতাওয়া রাহীমিয়ায় (৫/২১৯) আছে-
صورت مسئولہ میں جب يقین ہے کہ دو رکعت صبح صادق کے بعد ادا کی گئی ہے تو یہ دو رکعت سنت فجر کے قائم مقام ہو گئی یعنی سنت فجر پڑہنے کی ضرورت نہیں .
আর মাসিক আলকাউসার জানুয়ারি ২০১৬ (পৃষ্ঠা : ৩৫)-এ আছে-
‘৩৫৫১ প্রশ্ন : কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?
উত্তর : তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে।’
ফাতাওয়া রাহীমিয়া ও মাসিক আলকাউসারের উত্তরের মাঝে কোনো বৈপরীত্য নেই। কারণ দুই জায়গার প্রশ্নও ভিন্ন,উত্তরও ভিন্ন। ফাতাওয়া রাহীমিয়ার প্রশ্ন ছিল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে তাহাজ্জুদের সময় আছে মনে করে নামায পড়েছিল। পরে নিশ্চিত হয়েছে যে, তার উভয় রাকাত এমনকি নামাযের শুরু-শেষ সুবহে সাদিকের পরে হয়েছে। তাই তার ঐ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে ধর্তব্য করা হয়েছে। আর আলকাউসারের প্রশ্ন ছিল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে নিশ্চিতভাবে তাহাজ্জুদের সময় থাকতেই নামায শুরু করেছে অতপর সুবহে সাদিকের আগে এক রাকাত হয়েছে। আর দ্বিতীয় রাকাত সুবহে সাদিকের পর শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ তার প্রথম রাকাত নিশ্চিতভাবে সুবহে সাদিকের আগে হয়েছে। আর ফজরের সুন্নতের ওয়াক্ত হল সুবহে সাদিকের পর। তা শুরুই করতে হবে সুবহে সাদিকের পর। তাই এক্ষেত্রে এ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে ধর্তব্য হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪
গতকাল এশার নামাযের পর আমি দু রাকাত নফল নামায শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটি জরুরি কাজের কথা মনে পড়ায় আমি নামায ছেড়ে দিয়ে ঐ কাজে চলে যাই। আমি ভেবেছিলাম, নফল নামায যেহেতু জরুরি নয় তাই শুরু করার পর ছেড়ে দিলে সমস্যা নেই। কিন্তু মা বললেন, ঐ নামায এখন কাযা করতে হবে। জানতে চাই, আমি এখন কী করব?
নফল নামায শুরু করার পর তা পূর্ণ করা জরুরি। শরয়ী ওজর ছাড়া নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলা গুনাহ। আর সর্বাবস্থায় নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে তার কাযা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَا تُبْطِلُوْۤا اَعْمَالَكُمْ
এই আয়াতের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, নফল ইবাদত শুরু করার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। তা বাতিল করা জায়েয নেই। বাতিল করলে তার কাযা করা ওয়াজিব।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৯৩; তাফসীরে মাযহারী ৮/৩৬৭; বাদায়েউস সনায়ে ২/৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯
জামাতের নামাযে মাঝে মাঝে প্রথম বৈঠকে আমি তাশাহহুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় আমি কী করব? তাশাহহুদ শেষ করব? নাকি তাশাহহুদ শেষ না করেই ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?
ইমাম মুকতাদি সকলের জন্য তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই প্রথম বৈঠকে মুকতাদির তাশাহহুদ শেষ হওয়ার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবে। অবশ্য কখনো যদি মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়িয়ে যায় তবে তা নিয়মসম্মত না হলেও নামায হয়ে যাবে। কিন্তু মাকরূহ হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬
আমাদের ইমাম সাহেব ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে বেশ দেরি করেন। আমি মাঝেমধ্যে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাসূরাও পড়ে ফেলি। জানার বিষয় হল, ইমামের পেছনে থেকে আমার উক্ত ভুলের কারণে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
না, সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কারণ ইমামের পেছনে মুকতাদির কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৬০-৪৫৬২; কিতাবুল আছল ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৯, ১০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮২
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গত কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে রুকু না করেই সিজদায় চলে যান। পেছন থেকে তাকবীর বললেও তিনি উঠেননি। ফলে সবাই তার সাথে সিজদায় শরিক হয়ে যায়। পরে তিনি দ্বিতীয় রাকাতে দুটি রুকু করেন এবং চতুর্থ রাকাতের পর সাহু সিজদা করে নামায শেষ করেন। জানার বিষয় হল, আমাদের ঐ নামায কি সহীহ হয়েছে?
উক্ত নামায আদায় হয়নি। কারণ প্রত্যেক রাকাতেই রুকু করা ফরয। রুকু না করে সিজদা করলে ঐ সিজদা সহীহ হয় না। ফলে উক্ত রাকাতই অনাদায়ী থেকে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে তিনি যেহেতু সিজদার আগে রুকু করেননি তাই প্রথম রাকাত আদায় হয়নি। অতএব নামায হয়েছে মূলত তিন রাকাত।
আর দ্বিতীয় রাকাতে একটি রুকু অতিরিক্ত করা হলেও তা দ্বারা কোনো ফায়েদা হয়নি। কেননা দ্বিতীয় রাকাতের রুকু ও পরবর্তী সিজদা মিলে এক রাকাত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি আরো এক রাকাত পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করতেন তাহলে নামায আদায় হয়ে যেত। অতএব এখন ইমাম-মুক্তাদি সকলকে উক্ত নামাযের কাযা করে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ইমাম সাহেবের কর্তব্য ছিল, মুসল্লিদের লোকমার সময়ই সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে রুকু করা এবং পুনরায় সিজদা আদায় করা। এরপর নামায শেষে সাহু সিজদা করে নেয়া। এমনটি করলেও ঐ নামায আদায় হয়ে যেত। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন হত না।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১২; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৮; কিতাবুল আছল ১/২০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬১
একবার আমরা কয়েকজন একটি কামরায় জামাতে নামায পড়ি। ইমাম ও আরো তিনজন খাটের উপর দাঁড়ায়। জায়গা না থাকায় বাকিরা নীচে দাঁড়ায়। জানতে চাই, যারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদের নামাযের কী হুকুম? আদায় হয়ে গেছে, নাকি কাযা করতে হবে?
হাঁ, যারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদেরও নামায সহীহ হয়েছে। ইমামের একাকী উঁচু স্থানে দাঁড়ানো মাকরূহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের সাথে কিছু মুসল্লি দাঁড়িয়ে ঠিকই করেছেন। অন্যথায় ইমাম খাটে আর সকল মুসল্লি নীচে দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হত।
-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬১; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫০৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৩৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৬
কারো যদি আইয়ামে তাশরীকের কোনো নামায কাযা হয়ে যায় এবং সে ঐ নামায আইয়ামে তাশরীকের ভেতর বা আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে কি তাকে ঐ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে?
আইয়ামে তাশরীকের কাযা নামায যদি এই আইয়ামে তাশরীকের ভেতরই পড়ে নেয় তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর যদি আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়বে না।
-মাবসূত, সারাখসী ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯
আমি মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা শেষ করে ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। তারপর যথারীতি নামায পড়ে সাহু সিজদা দেই। আমার ঐ নামায কি হয়ে গেছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে? এভাবে নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা ভুলে দুইবার পড়লে করণীয় কী?
ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতের কোনো রাকাতে পরপর দুবার সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা দেওয়া আবশ্যক হবে। কারণ প্রথম দু রাকাতে সূরা ফাতেহার পরই সূরা মিলানো ওয়াজিব। তাই একবার সূরা ফাতিহা পড়ার পর ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়লে সূরা মিলানোর ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হয়। এ কারণে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা করে ঠিকই করেছেন। তাই ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৬; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০
আমার আব্বু সুস্থ-সবল। তিনি দাঁড়িয়ে নমায পড়তেও সক্ষম। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত নামায তিনি দাঁড়িয়েই আদায় করেন। তবে নফল নামায আব্বু সাধারণত বসে আদায় করেন। জানতে চাই, ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করার কী বিধান?
সুস্থ ও শক্তি-সামর্থ্য থাকলে নফল নমায দাঁড়িয়ে আদায় করাই উত্তম। অবশ্য কোনো ওজর না থাকলেও নফল নামায বসে আদায় করাও জায়েয আছে। তবে দাঁড়িয়ে আদায় করলে যে সওয়াব হবে ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করলে তার অর্ধেক সওয়াব হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসে নমায আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا، فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ القَائِمِ.
যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে তবে তাই উত্তম। আর যদি বসে নামায আদায় করে তবে দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব পাবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৫
প্রকাশ থাকে যে, ফরয-ওয়াজিব নামায ওজর ছাড়া বসে আদায় করা জায়েয নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬
আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। আমার বাসার কাছেই বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। নামাযের সময় সবগুলো মসজিদে প্রায় একই সময় আযান শুরু হয়। কখনো বা কোনো মসজিদে অন্যান্য মসজিদগুলোর ১৫/২০ মিনিট আগেই আযান দেওয়া হয়। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমাকে কোন্ মসজিদের আযানের জওয়াব দিতে হবে?
একই সময়ে সব মসজিদে আযান শুরু হলে নিজ এলাকার মসজিদের আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। আর যদি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আযান শুরু হয় তবে সর্বপ্রথম যে আযান শুনবেন তার জবাব দেওয়া উত্তম।
অবশ্য যে কোনো এক মসজিদের আযানের জবাব দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
-শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; আসসিআয়াহ ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৭, ৪০০
কয়েকদিন পূর্বে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব এশার নামাযে সাহু সিজদা করেন। নামাযের পর কয়েকজন মুসল্লি সাহু সিজদার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বৈঠককে শেষ বৈঠক মনে করে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফের অর্ধেক পড়ে ফেলি। পরে স্মরণ হওয়ামাত্র দাঁড়িয়ে যাই। এই ভুলের কারণে সাহু সিজদা করেছি। তখন কেউ কেউ বলল, দরূদ তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুআ। তা ভুলে পড়লেও সওয়াবের কাজ। এতে আবার সাহু সিজদা দিতে হবে কেন? জানতে চাই, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কার কথা ঠিক? যদি মুসল্লিদের কথা ঠিক হয় তাহলে উক্ত নামাযের কী হুকুম?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠকে ভুলে দরূদ শরীফ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে মূলত ভুলের কারণে। ভুলবশত দরূদ পড়ার কারণে পরবর্তী রাকাতে দাঁড়াতে বিলম্ব হয়েছে। কেননা তাশাহহুদের পরপরই তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব।
জেনে রাখা দরকার যে, প্রথম বৈঠক দরূদের স্থান নয়। আর এ কথাও মনে রাখা আবশ্যক যে, দরূদ শরীফ পড়া সওয়াবের কাজ তাই বলে যে কোনো স্থানে পড়লেও সওয়াব হবে এ ধারণা ঠিক নয়। যেমন কেউ যদি সওয়াবের কাজ মনে করে কেরাতের স্থলে দরূদ পড়তে থাকে সেক্ষেত্রে সকলেরই জানা যে,তার নামায আদায় হবে না।
নামায আদায় করতে হবে ঠিক যেভাবে হাদীস ও ফিকহে উল্লেখ আছে। মনগড়া পদ্ধতিতে করলে তা বিদআত হবে।
-বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮১
ক) যে সকল ফরয নামাযে সশব্দে কেরাত পড়া হয় তা যদি কখনো একা আদায় করা হয় তাহলেও কি সশব্দেই কেরাত পড়া হবে না নিঃশব্দে পড়তে হবে?
খ) নফল নামাযে আস্তেই কেরাত পড়তে হবে, নাকি শব্দ করেও পড়া যাবে?
ক) যে সকল ফরয নামাযে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া হয় তা যদি একা আদায় করা হয় তাহলে তাতে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া জরুরি নয়। নিম্ন স্বরে ও উচ্চ স্বরে দুভাবেই কেরাত পড়া যাবে। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম।
খ) রাতের নফল নামাযে কেরাতের নিয়মও একই। অর্থাৎ উচ্চস্বরে ও নিম্নস্বরে দুভাবেই পড়া যায়। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর দিনের নফল নামাযে নিম্ন স্বরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। ভুলে দিনের নফলে জোরে কেরাত পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। আর ইচ্ছাকৃত পড়লে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৬৯১, ৩৬৯৪; মাবসূত, সারাখসী ১/১৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৩
ফরয নামাযের ৩য় রাকাতে কেরাত পড়লে এই নামাযের হুকুম কী? নামায ভেঙ্গে যাবে, নাকি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
ফরয নামাযের ৩য়, ৪র্থ রাকাতে সূরা মিলালে নামায নষ্ট হবে না এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। তবে ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়াই সুন্নত। ইচ্ছাকৃত ফরযের শেষ দুই রাকাতে সূরা মিলানো সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর এবং আসরের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়তেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১
এছাড়া বহু সাহাবা-তাবেয়ী থেকেও ফরযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্তাব রা., আলী রা., আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., আয়েশা রা., জাবের রা., আবু দারদা রা., মুজাহিদ রাহ., ইবনে সিরীন ও হাসান বসরী রাহ. প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীগণ।
অতএব ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে কেবল সূরা ফাতেহাই পড়বে। ইচ্ছাকৃত অন্য সূরা পড়বে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৪৩-৩৭৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯
আমি একদিন নফল নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার উপরের সূরা নাছ্র পড়ে ফেলি। জানতে চাই, এভাবে করাতে আমার উক্ত নামায মাকরূহ হয়েছে কি?
না, আপনার ঐ নামায মাকরূহ হয়নি। নফলে সূরার তরতীব ভঙ্গ হওয়া তেমন দোষণীয় নয়। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা মাকরূহ।
-শরহুল মুনইয়াহ ৪৯৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮
সিজদার সময় আমার দুই পা মাঝে মাঝে উঠে যায়। আমার ভাই বলেছে, এতে আমার নামায নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমি জানতে চাই, সিজদার সময় যদি আমার দুই পা উঠে যায়, তাহলে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে?
সিজদার পুরো সময় দুই পায়ের কোনো অংশ কিছু সময়ের জন্যও যদি যমিনে লেগে না থাকে তাহলে সিজদা হবে না। কিন্তু যদি সিজদার সময় কোনো এক পা অল্প সময়ের জন্য মাটিতে লাগানো থাকে তাহলে সিজদা সহীহ হয়ে যাবে এবং নামাযও হয়ে যাবে। তবে সিজদা অবস্থায় উভয় পা যমিনে লাগিয়ে রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন সিজদার সময় উভয় পা যমিনে লেগে থাকে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৭,৫০০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২২৩
যে ঘরে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি টাঙানো থাকে সে ঘরে নামায পড়ার হুকুম কী? একজন আলেম বলেছেন, এমন ঘরে নামায পড়া মাকরূহ। তবে কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে যদি ছবি ঢেকে দেওয়া হয় তাহলে মাকরূহ হবে না। এখন আমি তাই করছি। নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে কিছু দিয়ে ছবিটি ঢেকে দেই। এতে কোনো অসুবিধা নেই তো? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকে তাতে নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য নামাযের সময় ছবি ঢাকা থাকলে নামায মাকরূহ হবে না।
আর একথা মনে রাখা দরকার যে, ঘরে-বাইরে কোনো প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা কিংবা প্রদর্শনী হয় এভাবে খোলা রাখা নাজায়েয। এ কারণে ঐ স্থানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতারা এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে কোনো কুকুর রয়েছে এবং এমন ঘরেও না, যাতে কোনো (প্রাণীর) ছবি রয়েছে। -সহীহ বুখারী,হাদীস ৩৩২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১০৬
তাই আপনার কর্তব্য হলো, মানুষ বা জীবজন্তুর যত ছবি ঘরে টাঙানো আছে তা নামিয়ে ফেলা এবং তা নষ্ট করে ফেলা।
প্রকাশ থাকে যে, বিনা প্রয়োজনে ছবি উঠানো নাজায়েয। হাদীস শরীফে ছবি উঠানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ধমকি এসেছে।
-মাবসূত, সারাখসী ১/২১১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮
অনেককে দেখি, বিতির নামাযের পর বসে বসে দু’ রাকাত নামায পড়ে। কাউকে কাউকে আবার এ নামাযকে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করতে শুনেছি।
জানার বিষয় হল, এটা আসলে কী নামায? এ নামায কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের পর বসে দু’ রাকাত নামায পড়েছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৩৮
ইমাম নববী রাহ. তাঁর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেন যে, বিতিরের পর দু’ রাকাত নামায নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত পড়েননি। বরং এ আমল মূলত বিতিরের পরও নফল পড়া জায়েয আছে এবং নফল নামায বসে পড়া জায়েয আছে- তা বোঝানোর জন্য কখনো এরূপ করেছেন।
তা না হয় সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বিভিন্ন সাহাবী থেকে এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ নামায হত বিতির নামায এবং তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও আদেশ করতেন- বিতিরকে তোমরা রাতের সর্বশেষ নামায বানাও। (শরহে মুসলিম, নববী ৬/২১)
সুতরাং রাতে সর্বশেষে বিতির নামায পড়াই সুন্নাহসম্মত। অবশ্য কেউ যদি বিতিরের পরও নফল পড়ে তাহলে সেটা জায়েয হবে তবে সেটা নিয়মিত আমল বানানো ঠিক হবে না।
একদিন যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলবশত তিনটি সিজদাহ করে ফেলেছি। নামাযের শেষে সাহু সিজদাও করেছি। পরে মনে হল, সাহু সিজদা তো ওয়াজিব হয় কোনো ওয়াজিব পালনে ত্রুটি হলে। সিজদা আদায় যেহেতু ফরয তাই এতে ত্রুটির কারণে হয়ত আমার নামায ভেঙ্গে গেছে। আমার ধারণা কি সঠিক? আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?
ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা নামাযে কোনো রোকন অতিরিক্ত আদায় করলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। কারণ এতে পরবর্তী রোকন আদায়ে বিলম্ব হয়। নামায ভেঙ্গে যায় না। তাই সাহু সিজদা দ্বারা আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
হযরত আতা রাহ. বলেন,
وَإِنِ اسْتَيْقَنْتَ أَنَّكَ قَدْ سَجَدْتَ فِي رَكْعَةٍ ثَلَاثَ سَجَدَاتٍ فَلَا تُعِدْ، وَاسْجُدْ سَجْدَتَيِ السَّهْوِ.
যদি তুমি নিশ্চিত হও যে, কোনো রাকাতে তিনটি সিজদা করেছ তবে নামায পুনরায় পড়বে না; বরং সাহু সিজদা করে নিবে।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৫২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; কিতাবুল আছল ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১
আমাদের বাসা ও মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। মসজিদের বারান্দায় একটি সাউন্ডবক্স লাগানো। জুমার দিন ফজরের নামাযে ইমাম সাহেব সূরা সাজদাহ তিলাওয়াত করেন। যা আমাদের বাসা থেকে স্পষ্টভাবে শোনা যায় এবং বাসার সবাই সিজদার আয়াতটি সম্পর্কে অবগত।
প্রশ্ন হল, বাসায় মাস্তুরাত যারা আছেন উক্ত সিজদার আয়াত শোনার দ্বারা তাদের উপরও কি সিজদা করা ওয়াজিব হবে?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাসা থেকে যারা সিজদার আয়াত শুনেছে তাদেরও সিজদা করা ওয়াজিব। কেননা নামাযরত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে বাইরের শ্রোতার উপরও সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই শ্রবণকারীকে একাকী ঐ সিজদা করে নিতে হবে। অবশ্য ঐ সময় যদি শ্রোতা নিজে পৃথকভাবে নামাযে থাকে তবে নামায শেষ করে সিজদা করবে।
আর কাজ-কর্মে ব্যস্ততার দরুণ যদি সিজদার আয়াতটি খেয়াল না করে থাকে তবে সিজদা ওয়াজিব হবে না। অনুরূপভাবে শ্রবণকারী ঋতুমতী হলেও তার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে না।
-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০
তলহা নামায পড়ছিল। তখন সে সামনে একটি বোর্ডে কিছু লেখা দেখে নামাযের ভেতরেই মনে মনে সেই লেখাটি পড়ে ফেলে। এভাবে নামাযের ভেতরে কোনো লেখা দেখে সেটা মনে মনে পড়লে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে? তালহার নামায কি নষ্ট হয়ে গেছে? তাকে কি পুনরায় নামায পড়তে হবে?
তালহা যেহেতু বোর্ডের লেখাটি মনে মনে পড়েছে তাই তার নামায নষ্ট হয়নি। তবে মাকরূহ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনটি করা থেকে বিরত থাকবে। অবশ্য তার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪
কিছুদিন পূর্বে আমি ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতের বৈঠকে ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করি। সূরা ফাতিহা পড়ে শেষ করার পর মনে হয় আমি বৈঠকে আছি। তখন তাশাহহুদ পড়ি এবং সাহু সিজদা দেই। এখন আমি জানতে চাই, নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে কি?
হাঁ, নামাযের প্রথম বা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের স্থানে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। তাই আপনার সাহু সিজদা দেওয়া ঠিক হয়েছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কুরআন শরীফ পুরোপুরি সহীহভাবে পড়তে পারেন না। বিশেষভাবে ع ও ح এর উচ্চারণ সঠিক হয় না। ع হামযার মতো এবং ح ه ـ এর মতো হয়ে যায়। তবে দায়িত্বশীলগণ চাইলে পুরোপুরি সহীহ পড়েন এমন ইমাম নিযুক্ত করতে পারেন। এ অবস্থায় বর্তমান ইমামের পেছনে আমাদের নামায সহীহ হবে কি না? আর এ ধরনের ব্যক্তিদের ইমামতির হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
ع , ح সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে না পারলে নামায মাকরূহ হওয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই যে এমন ভুল পড়ে তাকে ইমাম হিসেবে রাখা জায়েয হবে না। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানে এমন কাউকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করা।
-শরহুল মুনয়াহ ৪৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৬৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৯
আমি এক সেনা কর্মকর্তা। কখনো কখনো আমাদেরকে বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রান্সফার করা হয়। ১৪দিন পরপর আমাদের জন্য খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হয়। দেখা যায়, ১০-১২ দিন যেতেই খাওয়ার পানি ছাড়া আমাদের আর কোনো পানি অবশিষ্ট থাকে না। আশেপাশে কোনো জনবসতিও নেই। চতুর্দিকে মাইল দুয়েক খুঁজেও পানির সন্ধান পাই না। এ অবস্থায় আমরা কি তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারব?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি পানি দুই হাজার গজ অর্থাৎ প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো দূরে থাকে তাহলে আপনারা তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবেন।
-কিতাবুল আছল ১/৯১; মাবসূত, সাারাখসী ১/১১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৪২