ফতোয়া: আজান-নামাজ

ফতোয়া নং: ৭৩৩১
তারিখ: ১৯-ডিসেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বৈঠকে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়ে ফেললে করনীয় ৷

প্রশ্ন
হযরত আমি জানতে চাই, ফরজ নামাযের শেষ বৈঠকে অথবা প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে কী করণীয়? এমতাবস্থায় সাহু সেজদা দিতে হবে কি? নাকি নামায এমনি সহিহ হয়ে যাবে?
উত্তর
যেকোনো নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না। এমনিতেই নামায সহিহ হয়ে যায় ৷ তবে ফরয ওয়াজিব এবং সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়। এক্ষেত্রে সাহু সেজদা না দিয়ে থাকলে নামাযটি পুনরায় পড়তে হবে ৷
-রদ্দুল মুহতার ১/৫১০আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৭৩২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বাবাকে তার এক বন্ধু একটি ওয়ালম্যাট গিফট করেছে। তাতে...

প্রশ্ন

আমার বাবাকে তার এক বন্ধু একটি ওয়ালম্যাট গিফট করেছে। তাতে কিছু প্রাণীর ছবিও আছে। একজন দেখে বললেন, এভাবে স্পষ্ট প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা জায়েয হবে না। আপনি প্রাণীর চোখগুলো কেটে দিন। বাবা তাই করলেন; সবগুলো প্রাণীর চোখ কেটে দিয়ে ওয়ালম্যাটটি ঘরে টাঙিয়ে দিলেন।

কিছুদিন আগে একজন আঙ্কেল বললেন, তিনি একজন আলেমের কাছে শুনেছেন যে, শুধু চোখ কাটলেই হবে না বরং পুরো চেহারা মুছে দিতে হবে। অন্যথায় ঐ ছবি টাঙিয়ে রাখা জায়েয হবে না।

হুযুরের কাছে এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

উত্তর

কোনো প্রাণীর দৃশ্যমান ছবি টাঙানো বা দৃশ্যমান রাখা নাজায়েয। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ تَمَاثِيلُ أَوْ تَصَاوِيرُ.

ফেরেশতাগণ এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি আছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১১২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবের রা. বলেন,

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصُّورَةِ فِي البَيْتِ، وَنَهَى عَنْ أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছবি রাখতে ও ছবি অঙ্কন করতে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৭৪৯)

আর প্রাণীর ছবির মূলই হল তার মাথার অংশ। যা দ্বারা প্রাণীর পূর্ণ রূপ ও পরিচয় স্পষ্ট হয়।

ইকরিমা রাহ. বলেন,

إِنَّمَا الصُّورَةُ الرَّأْسُ ، فَإِذَا قُطِعَ فَلاَ بَأْسَ.

ছবির মূল হল মাথা। মাথা যদি কেটে দেয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২৫৮০৮)

তাই মাথার অংশ কেটে বা মুছে দিলে তা আর ছবির হুকুমে থাকে না। কিন্তু মাথা ও চেহারা না মুছে শুধু চোখ মুছে দিলে প্রাণীর আকৃতি ও পরিচয় বাকি থাকে। তাই তা ছবির হুকুমেই থাকে।

ইবনে আবেদীন শামী রাহ. বলেন, প্রাণীর মূর্তি বা ছবির যদি মাথা কাটা থাকে তাহলে এমন ছবি ঘরে রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে না। চাই মাথা গোড়া থেকেই কেটে ফেলা হোক বা না কেটে পুরো মাথা একদম মুছে ফেলা হোক। কেননা স্বাভাবিকভাবে মাথা ছাড়া প্রাণীর উপাসনা করা হয় না। আর পুরো মাথার শর্ত করা হয়েছে। কেননা শুধু ভ্রু মুছে দেয়া বা চোখ কেটে দেয়া যথেষ্ট নয়। কেননা এসব ছাড়াও প্রাণীর উপাসনা হয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ আলেমের কথাই সঠিক যিনি বলেছেন, ছবির শুধু চোখ কেটে দিলে সেটা টাঙানো বেধ হয়ে যাবে না; বরং পুরো চেহারা মুছে দিতে হবে।

-জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/২৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি আজ এশার নামাযে প্রথম রাকাতে ভুলে ৩ বার সেজদা...

প্রশ্ন

আমি আজ এশার নামাযে প্রথম রাকাতে ভুলে ৩ বার সেজদা করেছি। পরে সাহু সেজদা দিয়ে নামায শেষ করেছি। আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

এক রাকাতে ভুলে ৩ বার সেজদা করার কারণে আপনার উপর সাহু সেজদা করা আবশ্যক হয়েছিল। আপনি যেহেতু তা আদায় করেছেন, তাই উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ৩৫২৪; কিতাবুল আছল ১/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি আজ আসর নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে দু’বার তাশাহহুদ পড়ে...

প্রশ্ন

আমি আজ আসর নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে দু’বার তাশাহহুদ পড়ে ফেলি। পরে সাহু সেজদা না দিয়েই নামায শেষ করি। এখন আমি জানতে চাই, আমার নামায কি আদায় হয়ে গেছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে? আরও জানতে চাই, এভাবে নামাযের শেষ বৈঠকে অথবা প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে কী করণীয়?

উত্তর

নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না। তাই আপনি সাহু সেজদা না করে ঠিকই করেছেন। আর ফরয ওয়াজিব এবং সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে ভুলে একাধিকবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী পৃ.২৫১, রদ্দুল মুহতার ১/৫১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

হুযুর, আজ ফজর নামাযে প্রথম রাকাতে আমি ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে...

প্রশ্ন

হুযুর, আজ ফজর নামাযে প্রথম রাকাতে আমি ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। ইমাম সাহেব কখন রুকু ও সেজদা করলেন আমি তা টের পাইনি। হঠাৎ চোখ খুলে দেখি, তিনি সেজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় রাকাত শুরু করছেন। তখন আমি তার সাথে দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হয়ে নামায শেষে ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায় করেছি। আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে? নাকি তা পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

আপনার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। তবে তা নিয়মসম্মত হয়নি। কারণ নামাযের শুরু থেকে উপস্থিত থাকার পর ঘুমের কারণে কিছু অংশ ছুটে গেলে নিয়ম হল, যে অংশ ছুটে গেছে, তা আগে আদায় করে নেয়া। তারপর ইমামের অনুসরণ করা।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি মসজিদ আছে। যার নাম দেয়া হয়েছে...

প্রশ্ন

আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি মসজিদ আছে। যার নাম দেয়া হয়েছে রুস্তুমিয়া জামে সমজিদ। যা জমিদাতার নাম, এখন কিছু মানুষ বলছে এটা আল্লাহ তাআলার ঘর। আর আল্লাহর ঘর দুনিয়ার কোনো মানুষের নামে রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তাহলে ঐ মসজিদে নামায সহীহ হবে না। এ নিয়ে মসজিদে খুব ফেৎনা শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, মসজিদ মানুষের নামে নামকরণ করা জায়েয আছে কি না? দলিলসহ জানালে এই ফেৎনা নিরসন হবে।

উত্তর

সাহাব, তাবেয়ী বা কোনো আল্লাহর ওলীর নামে মসজিদের নামকরণ করা জায়েয। যেমন সমজিদে আবু বকর রা., মসজিদে বেলাল রা., ইত্যাদি। তবে মসজিদের জায়গা বা মসজিদে অর্থ দান করে দাতার নামে মসজিদের নামকরণ করা উচিত নয়। কারণ এতে এখলাস নষ্ট হওয়া ও রিয়া তথা লোক দেখানোর আশঙ্কা থাকে। আর যদি এমনটি লোক দেখানো বা রিয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়ে থাকে তবে তো কাজটি সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। এবং দানের সওয়াবও নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য এভাবে কোনো মসজিদের নাম রাখা হলেও তা মসজিদ বলেই গণ্য হবে এবং সেখানে নামাযসহ সকল ইবাদাত বন্দেগী করা যাবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪২০; ফাতহুল বারী ১/৬১৪; উমদাতুল কারী ৪/১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাঝেমধ্যে ফরয নামায একাকী পড়ার সময় তৃতীয় ও চতুর্থ...

প্রশ্ন

আমি মাঝেমধ্যে ফরয নামায একাকী পড়ার সময় তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে ভুলক্রমে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে ফেলি। এতে করে আমার নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি?

উত্তর

ফরযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা না মিলানোই সুন্নত। তাই ইচ্ছাকৃত সূরা মিলাবে না। ভুলে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই। এ কারণে সাহু সিজদা আসবে না।

উল্লেখ্য, মনোযোগ সহকারে নামায পড়া উচিত। নামাযে প্রায় ভুল হওয়া উদাসীনতার লক্ষণ। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া কর্তব্য।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কয়েক দিন আগের কথা। বিতরের নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় আমি সন্দেহে...

প্রশ্ন

কয়েক দিন আগের কথা। বিতরের নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় আমি সন্দেহে পড়ে যাই যে, দ্বিতীয় রাকাতে আছি না তৃতীয় রাকাতে? কোনোটাই স্থির করতে পারছিলাম না। তখন ঐ রাকাতকে দ্বিতীয় রাকাত ধরেই নামায শেষ করেছি। তাই ঐ রাকাতে কুনূত না পড়ে পরের রাকাতে পড়েছি। এবং শেষ বৈঠকে সাহু সেজদা করেছি। এতে আমার নামায সহীহ হয়েছে কি ?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোন্টি শেষ রাকাত সে বিষয়ে আপনি যেহেতু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, তাই আপনার জন্য উভয় রাকাতেই কুনূত পড়া উচিত ছিল। এবং প্রত্যেক রাকাতের পর বৈঠক করা কর্তব্য ছিল। এক্ষেত্রে যে কোনো রাকাতই শেষ রাকাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আপনি যেহেতু সাহু সেজদা করেছেন তাই আপনার নমায সহীহ হয়ে গেছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪২১; রদ্দুল মুহতার ২/৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সেদিন এক ব্যক্তির মুখে শুনলাম, রমযান মাসে নাকি এমন একটি...

প্রশ্ন

সেদিন এক ব্যক্তির মুখে শুনলাম, রমযান মাসে নাকি এমন একটি নামায আছে, যা আদায় করলে সারা জীবনের সকল কাযা নামায মাফ হয়ে যায়। হুযুরের কাছে জানতে চাই, সেটি কোন্ নামায? তা আদায়ের কী পদ্ধতি?

উত্তর

‘রমাযানে বিশেষ নামায পড়লে সারা জীবনের কাযা নামায মাফ হয়ে যায়’ এমন কথা সহীহ নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। কুরআন-হাদীসের কোথাও এমন কথা নেই। এ সম্পর্কে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয় তা বানোয়াট ও জাল। মোল্লা আলী ক্বারী রাহ. ঐ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বাতিল কথা। কেননা এটা উম্মাহ্র ঐক্যমত্যের পরিপন্থী। এমন কোনো ইবাদত নেই, যার দ্বারা অনেক বছরের কাযা মাফ হয়ে যায়। (আলমাওযুআতুল কুবরা, পৃষ্ঠা ২৪২) বরং অনেক হাদীসে সুস্পষ্ঠভাবে এসেছে যে, কারো কোনো নামায ছুটে গেলে তার কর্তব্য হল তা কাযা করা। যত ওয়াক্ত নামায ছুটবে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য আলাদা কাযা আদায় করতে হবে। এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا، لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ.

কারো যদি ভুলে কোনো নামায ছুটে যায় তাহলে যখন স্মরণ হবে তখন যেন সে তা আদায় করে নেয়। এর থেকে দায়মুক্তির ভিন্ন কোন কাফফারা নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭

অতএব এক নামায দ্বারাই জীবনের সকল কাযা মাফ হয়ে যাবে এমন ধারণা ভ্রান্ত ও হাদীস পরিপন্থী। এমন ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সেদিন বিতর নামায পড়ছিলাম। ৩য় রাকাতে দুআয়ে কুনূত না পড়েই...

প্রশ্ন

সেদিন বিতর নামায পড়ছিলাম। ৩য় রাকাতে দুআয়ে কুনূত না পড়েই রুকুর জন্য ঝুঁকে যাই। হাঁটুতে হাত লাগে না এত সামান্য ঝুঁকেছিমাত্র তখনই দুআর কথা স্মরণ হয়। তাই দাঁড়িয়ে দুআয়ে কুনূত পড়ি। এরপর সিজদায়ে সাহু ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

জী হাঁ, আপনার নামায সহীহ হয়েছে। কারণ আপনি যেহেতু রুকুতে চলে যাননি; বরং সামান্যঝুঁকেই উঠে গেছেন তাই আপনার দাঁড়িয়ে যাওয়া নিয়মসম্মতই হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সিজদায়েসাহুও ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করা ঠিক হয়েছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলাদের মাসিকের সময় আইয়ামে তাশরীকে তাকবীরে তাশরীক কীভাবে পড়বে? নামায...

প্রশ্ন

মহিলাদের মাসিকের সময় আইয়ামে তাশরীকে তাকবীরে তাশরীক কীভাবে পড়বে? নামায না থাকলেও তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?

উত্তর

মাসিকের সময় যেহেতু নামায নেই তাই এ সময় তাদেরকে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।তাকবীরে তাশরীকটা মূলত নামাযের সাথে সম্পৃক্ত।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আলকাউসারের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, নামাযের জন্য মৌখিক...

প্রশ্ন

আলকাউসারের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, নামাযের জন্য মৌখিক নিয়্যত করা জরুরি নয়। মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট। কিন্তু ফরয ওয়াজিব সুন্নত ও নফল এগুলোর ক্ষেত্রে কীভাবে নিয়ত করতে হবে তা কোনো প্রশ্নোত্তরে পাইনি। এ সব ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করা কি যথেষ্ট না কি ফরয-ওয়াজিব নিয়ত করতে হবে। আর কাযা নামায আদায়ের সময় কাযা কথা কি উল্লেখ করতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

নিয়ত দিলে দিলে করাই যথেষ্ট। মৌখিক নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তবে কোন নামায পড়ছেন তানির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে। যেমন, ফজরের ফরয নামায পড়ছি, যোহরের ফরয নামাযপড়ছি। এভাবে কোন ফরয নামায তা নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করতে হবে।

আর বিতর নামায পড়ছি এমন বললেই হবে। তদ্রূপ ফজর, যোহর, মাগরিব ও ইশার সুন্নতেওনির্দিষ্ট নিয়ত করা ভালো। আর হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল নামাযগুলোর ক্ষেত্রেও ঐ নামাযেরনিয়ত করা উত্তম। যদিও শুধু নামায পড়ছি এমন নিয়ত করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। এছাড়াঅন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে শুধু নামায পড়ছি বা নফল নামায পড়ছি এমন নিয়ত করবে।

আর কাযা আদায়ের ক্ষেত্রেও অমুক দিনের যোহর পড়ছি, অমুক দিনের আসর পড়ছি- এভাবেনিয়ত করলেও চলবে।

-আলইখতিয়ার ১/১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২০৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদে একদিন ইশার জামাতে ইমাম সাহেব চার রাকাত পর...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে একদিন ইশার জামাতে ইমাম সাহেব চার রাকাত পর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুসল্লিরা লোকমা দিলেও তিনি ফিরে আসেননি। অতপর পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে বৈঠক করেন এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করেন। সাহু সিজদার সাথে নামায শেষ করার কারণে মুসল্লিরা মনে করেছে নামায হয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে সন্দেহ ছিল। ঐ সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করার মতো পাইনি। পরে জানতে পারলাম যে, আমাদের নামায হয়নি। আসলেই কি আমাদের ঐ নামায হয়নি? কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেবকে বললে তিনি বললেন, সাহু সিজদার কারণে নামায সহীহ হয়ে গেছে। এ কথা কি ঠিক? যদি না হয়ে থাকে তবে ঐ দিনের ইশা, সুন্নত ও বিতর সবাইকে কি কাযা করতে হবে?

উত্তর

আপনাদের উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। চার রাকাতের পর না বসে পঞ্চম রাকাত পূর্ণ করারদ্বারা অর্থাৎ ঐ রাকাতের সিজদা করার দ্বারাই ঐ ইশার নামায বাতিল হয়ে গেছে। তাই পরবর্তীতেসাহু সিজদা করলেও উক্ত ইশার নামায আদায় হয়নি। কারণ নামাযের মধ্যে কোনো ওয়াজিবেত্রুটি হলে সাহু সিজদা করে নিলে ঐ নামায সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু ফরয ছুটে গেলে সাহু সিজদাদ্বারা সে ক্ষতি পূরণ হয় না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চার রাকাত পর শেষ বৈঠক করা ফরয ছিল তা করাহয়নি। সুতরাং এ ভুল সাহু সিজদা দ্বারা পূর্ণ হবে না। অতএব ঐ দিনের ইশার নামায আবারপড়তে হবে। তবে সুন্নত ও বিতর পড়তে হবে না। কেননা সুন্নতের কাযা নেই। আর বিতর নামাযসহীহ হয়েছে। তাই তা আর পড়তে হবে না।

-শরহুল মুনইয়াহ ২৮৯-২৯০; মুখতাসারুল কুদূরী ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মাঝেমধ্যে আমি নামাযের কোনো রাকাতে একটি সিজদা করে অপর সিজদাটি...

প্রশ্ন

মাঝেমধ্যে আমি নামাযের কোনো রাকাতে একটি সিজদা করে অপর সিজদাটি করতে ভুলে যাই। এখন জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?

উত্তর

নামাযের কোনো রাকাত থেকে যদি একটি সিজদা ছুটে যায় তাহলে নামাযের মধ্যে যখনই স্মরণ হবেসিজদাটি আদায় করে নিবেন এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবেন।

-শরহুল মুনইয়াহ ২৯৭; কিতাবুল আছল ১/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মাঝেমধ্যে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে আমি দুআ কুনূত না পড়ে...

প্রশ্ন

মাঝেমধ্যে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে আমি দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকু করে ফেলি। এখন আমি জানতে চাই, এমন হলে আমার কী করণীয়?

উত্তর

বিতর নামাযে দুআ কুনূত না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে গেলে দুআ কুনূতের জন্য ফিরে আসবে না।বরং বাকি নামায স্বাভাবিকভাবে পড়ে সাহু সিজদা করবে। অবশ্য কেউ যদি রুকু থেকে ফিরে এসেদুআ কুনূত পড়ে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। যদিও এমনটি করা অনিয়ম। এক্ষেত্রে তাকে পুনরায়রুকু করতে হবে না। আর পুনরায় দুআ কুনূত পড়া হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় সাহু সিজদাকরতে হবে। কেননা বিতর নামাযে রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়া ওয়াজিব। আর দুআ কুনূত না পড়েরুকুতে চলে গেলে কুনূত পড়ার সময় শেষ হয়ে যায় এবং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে সাহুসিজদা করা আবশ্যক হয়ে যায়। তাই রুকু থেকে ফিরে এসে কুনূত পড়া নিয়মসম্মতনয়।

-কিতাবুল আসল ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯-১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২;

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন একাকী নামায পড়ার সময় রুকুতে গিয়ে ভুলে কিরাত...

প্রশ্ন

আমি একদিন একাকী নামায পড়ার সময় রুকুতে গিয়ে ভুলে কিরাত পড়তে শুরু করি। দুয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হওয়ামাত্র রুকুর তাসবীহ পড়ে যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা করে কি আমি ঠিক করেছি?

উত্তর

হাঁ, সাহু সিজদা করে ঠিক করেছেন। কেননা রুকুতে ঐ পরিমাণ কেরাত পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৮১; হালাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত নামাযের প্রথম বৈঠকে...

প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত নামাযের প্রথম বৈঠকে বসে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়তে শুরু করি। কয়েক আয়াত পড়ার পর মনে হতেই তাশাহহুদ পড়ে নেই এবং যথানিয়মে বাকি নামায শেষে সাহু সিজদা করি। জানার বিষয় হল, উক্ত ভুলের কারণে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? এবং সাহু সিজদা করার দ্বারা কি আমার নামায হয়ে গেছে?

উত্তর

জী হাঁ, উক্ত ভুলের কারণে তাশাহহুদ পড়তে বিলম্ব হওয়ায় সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে।

তাইআপনার সাহু সিজদা করা ঠিক হয়েছে এবং নামায শুদ্ধ হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফাতাওয়া রাহীমিয়া ও মাসিক আলকাউসারে বর্ণিত প্রশ্নের উত্তরের মাঝে পারস্পরিক...

প্রশ্ন

ফাতাওয়া রাহীমিয়া ও মাসিক আলকাউসারে বর্ণিত প্রশ্নের উত্তরের মাঝে পারস্পরিক বৈপরীত্য বোধ করছি। তাই ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নিম্নে উভয় প্রশ্ন ও উত্তর উল্লেখ করছি। ফাতাওয়া রাহীমিয়ায় (৫/২১৯) আছে-

صورت مسئولہ میں جب يقین ہے کہ دو رکعت صبح صادق کے بعد ادا کی گئی ہے تو یہ دو رکعت سنت فجر کے قائم مقام ہو گئی یعنی سنت فجر پڑہنے کی ضرورت نہیں .

আর মাসিক আলকাউসার জানুয়ারি ২০১৬ (পৃষ্ঠা : ৩৫)-এ আছে-

‘৩৫৫১ প্রশ্ন : কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?

উত্তর : তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে।’

উত্তর

ফাতাওয়া রাহীমিয়া ও মাসিক আলকাউসারের উত্তরের মাঝে কোনো বৈপরীত্য নেই। কারণ দুই জায়গার প্রশ্নও ভিন্ন,উত্তরও ভিন্ন। ফাতাওয়া রাহীমিয়ার প্রশ্ন ছিল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে তাহাজ্জুদের সময় আছে মনে করে নামায পড়েছিল। পরে নিশ্চিত হয়েছে যে, তার উভয় রাকাত এমনকি নামাযের শুরু-শেষ সুবহে সাদিকের পরে হয়েছে। তাই তার ঐ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে ধর্তব্য করা হয়েছে। আর আলকাউসারের প্রশ্ন ছিল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে, যে নিশ্চিতভাবে তাহাজ্জুদের সময় থাকতেই নামায শুরু করেছে অতপর সুবহে সাদিকের আগে এক রাকাত হয়েছে। আর দ্বিতীয় রাকাত সুবহে সাদিকের পর শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ তার প্রথম রাকাত নিশ্চিতভাবে সুবহে সাদিকের আগে হয়েছে। আর ফজরের সুন্নতের ওয়াক্ত হল সুবহে সাদিকের পর। তা শুরুই করতে হবে সুবহে সাদিকের পর। তাই এক্ষেত্রে এ দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে ধর্তব্য হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গতকাল এশার নামাযের পর আমি দু রাকাত নফল নামায শুরু...

প্রশ্ন

গতকাল এশার নামাযের পর আমি দু রাকাত নফল নামায শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটি জরুরি কাজের কথা মনে পড়ায় আমি নামায ছেড়ে দিয়ে ঐ কাজে চলে যাই। আমি ভেবেছিলাম, নফল নামায যেহেতু জরুরি নয় তাই শুরু করার পর ছেড়ে দিলে সমস্যা নেই। কিন্তু মা বললেন, ঐ নামায এখন কাযা করতে হবে। জানতে চাই, আমি এখন কী করব?

উত্তর

নফল নামায শুরু করার পর তা পূর্ণ করা জরুরি। শরয়ী ওজর ছাড়া নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলা গুনাহ। আর সর্বাবস্থায় নফল নামায শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে তার কাযা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ لَا تُبْطِلُوْۤا اَعْمَالَكُمْ

এই আয়াতের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, নফল ইবাদত শুরু করার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। তা বাতিল করা জায়েয নেই। বাতিল করলে তার কাযা করা ওয়াজিব।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৯৩; তাফসীরে মাযহারী ৮/৩৬৭; বাদায়েউস সনায়ে ২/৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জামাতের নামাযে মাঝে মাঝে প্রথম বৈঠকে আমি তাশাহহুদ শেষ করার...

প্রশ্ন

জামাতের নামাযে মাঝে মাঝে প্রথম বৈঠকে আমি তাশাহহুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় আমি কী করব? তাশাহহুদ শেষ করব? নাকি তাশাহহুদ শেষ না করেই ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?

উত্তর

ইমাম মুকতাদি সকলের জন্য তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই প্রথম বৈঠকে মুকতাদির তাশাহহুদ শেষ হওয়ার আগে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবে। অবশ্য কখনো যদি মুকতাদি তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়িয়ে যায় তবে তা নিয়মসম্মত না হলেও নামায হয়ে যাবে। কিন্তু মাকরূহ হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের ইমাম সাহেব ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে বেশ দেরি করেন।...

প্রশ্ন

আমাদের ইমাম সাহেব ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে বেশ দেরি করেন। আমি মাঝেমধ্যে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাসূরাও পড়ে ফেলি। জানার বিষয় হল, ইমামের পেছনে থেকে আমার উক্ত ভুলের কারণে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কারণ ইমামের পেছনে মুকতাদির কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৬০-৪৫৬২; কিতাবুল আছল ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৯, ১০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গত কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের প্রথম...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব গত কয়েকদিন আগে আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে রুকু না করেই সিজদায় চলে যান। পেছন থেকে তাকবীর বললেও তিনি উঠেননি। ফলে সবাই তার সাথে সিজদায় শরিক হয়ে যায়। পরে তিনি দ্বিতীয় রাকাতে দুটি রুকু করেন এবং চতুর্থ রাকাতের পর সাহু সিজদা করে নামায শেষ করেন। জানার বিষয় হল, আমাদের ঐ নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

উক্ত নামায আদায় হয়নি। কারণ প্রত্যেক রাকাতেই রুকু করা ফরয। রুকু না করে সিজদা করলে ঐ সিজদা সহীহ হয় না। ফলে উক্ত রাকাতই অনাদায়ী থেকে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে তিনি যেহেতু সিজদার আগে রুকু করেননি তাই প্রথম রাকাত আদায় হয়নি। অতএব নামায হয়েছে মূলত তিন রাকাত।

আর দ্বিতীয় রাকাতে একটি রুকু অতিরিক্ত করা হলেও তা দ্বারা কোনো ফায়েদা হয়নি। কেননা দ্বিতীয় রাকাতের রুকু ও পরবর্তী সিজদা মিলে এক রাকাত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি আরো এক রাকাত পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করতেন তাহলে নামায আদায় হয়ে যেত। অতএব এখন ইমাম-মুক্তাদি সকলকে উক্ত নামাযের কাযা করে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, ইমাম সাহেবের কর্তব্য ছিল, মুসল্লিদের লোকমার সময়ই সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে রুকু করা এবং পুনরায় সিজদা আদায় করা। এরপর নামায শেষে সাহু সিজদা করে নেয়া। এমনটি করলেও ঐ নামায আদায় হয়ে যেত। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন হত না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১২; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৮; কিতাবুল আছল ১/২০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একবার আমরা কয়েকজন একটি কামরায় জামাতে নামায পড়ি। ইমাম ও...

প্রশ্ন

একবার আমরা কয়েকজন একটি কামরায় জামাতে নামায পড়ি। ইমাম ও আরো তিনজন খাটের উপর দাঁড়ায়। জায়গা না থাকায় বাকিরা নীচে দাঁড়ায়। জানতে চাই, যারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদের নামাযের কী হুকুম? আদায় হয়ে গেছে, নাকি কাযা করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, যারা নীচে দাঁড়িয়েছে তাদেরও নামায সহীহ হয়েছে। ইমামের একাকী উঁচু স্থানে দাঁড়ানো মাকরূহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের সাথে কিছু মুসল্লি দাঁড়িয়ে ঠিকই করেছেন। অন্যথায় ইমাম খাটে আর সকল মুসল্লি নীচে দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হত।

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬১; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫০৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৩৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কারো যদি আইয়ামে তাশরীকের কোনো নামায কাযা হয়ে যায় এবং...

প্রশ্ন

কারো যদি আইয়ামে তাশরীকের কোনো নামায কাযা হয়ে যায় এবং সে ঐ নামায আইয়ামে তাশরীকের ভেতর বা আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে কি তাকে ঐ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে?

উত্তর

আইয়ামে তাশরীকের কাযা নামায যদি এই আইয়ামে তাশরীকের ভেতরই পড়ে নেয় তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর যদি আইয়ামে তাশরীক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তবে এক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়বে না।

-মাবসূত, সারাখসী ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা শেষ করে ভুলবশত...

প্রশ্ন

আমি মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা শেষ করে ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। তারপর যথারীতি নামায পড়ে সাহু সিজদা দেই। আমার ঐ নামায কি হয়ে গেছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে? এভাবে নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা ভুলে দুইবার পড়লে করণীয় কী?

উত্তর

ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতের কোনো রাকাতে পরপর দুবার সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা দেওয়া আবশ্যক হবে। কারণ প্রথম দু রাকাতে সূরা ফাতেহার পরই সূরা মিলানো ওয়াজিব। তাই একবার সূরা ফাতিহা পড়ার পর ভুলবশত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়লে সূরা মিলানোর ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হয়। এ কারণে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা করে ঠিকই করেছেন। তাই ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৬; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার আব্বু সুস্থ-সবল। তিনি দাঁড়িয়ে নমায পড়তেও সক্ষম। ফরয, ওয়াজিব...

প্রশ্ন

আমার আব্বু সুস্থ-সবল। তিনি দাঁড়িয়ে নমায পড়তেও সক্ষম। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত নামায তিনি দাঁড়িয়েই আদায় করেন। তবে নফল নামায আব্বু সাধারণত বসে আদায় করেন। জানতে চাই, ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করার কী বিধান?

উত্তর

সুস্থ ও শক্তি-সামর্থ্য থাকলে নফল নমায দাঁড়িয়ে আদায় করাই উত্তম। অবশ্য কোনো ওজর না থাকলেও নফল নামায বসে আদায় করাও জায়েয আছে। তবে দাঁড়িয়ে আদায় করলে যে সওয়াব হবে ওজর ছাড়া নফল নামায বসে আদায় করলে তার অর্ধেক সওয়াব হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসে নমায আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

إِنْ صَلَّى قَائِمًا فَهُوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا، فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ القَائِمِ.

যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে তবে তাই উত্তম। আর যদি বসে নামায আদায় করে তবে দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব পাবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৫

প্রকাশ থাকে যে, ফরয-ওয়াজিব নামায ওজর ছাড়া বসে আদায় করা জায়েয নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। আমার বাসার কাছেই বেশ কয়েকটি মসজিদ...

প্রশ্ন

আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। আমার বাসার কাছেই বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। নামাযের সময় সবগুলো মসজিদে প্রায় একই সময় আযান শুরু হয়। কখনো বা কোনো মসজিদে অন্যান্য মসজিদগুলোর ১৫/২০ মিনিট আগেই আযান দেওয়া হয়। আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমাকে কোন্ মসজিদের আযানের জওয়াব দিতে হবে?

উত্তর

একই সময়ে সব মসজিদে আযান শুরু হলে নিজ এলাকার মসজিদের আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। আর যদি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আযান শুরু হয় তবে সর্বপ্রথম যে আযান শুনবেন তার জবাব দেওয়া উত্তম।

অবশ্য যে কোনো এক মসজিদের আযানের জবাব দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

-শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; আসসিআয়াহ ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৭, ৪০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কয়েকদিন পূর্বে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব এশার নামাযে সাহু সিজদা...

প্রশ্ন

কয়েকদিন পূর্বে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব এশার নামাযে সাহু সিজদা করেন। নামাযের পর কয়েকজন মুসল্লি সাহু সিজদার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বৈঠককে শেষ বৈঠক মনে করে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফের অর্ধেক পড়ে ফেলি। পরে স্মরণ হওয়ামাত্র দাঁড়িয়ে যাই। এই ভুলের কারণে সাহু সিজদা করেছি। তখন কেউ কেউ বলল, দরূদ তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুআ। তা ভুলে পড়লেও সওয়াবের কাজ। এতে আবার সাহু সিজদা দিতে হবে কেন? জানতে চাই, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কার কথা ঠিক? যদি মুসল্লিদের কথা ঠিক হয় তাহলে উক্ত নামাযের কী হুকুম?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠকে ভুলে দরূদ শরীফ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে মূলত ভুলের কারণে। ভুলবশত দরূদ পড়ার কারণে পরবর্তী রাকাতে দাঁড়াতে বিলম্ব হয়েছে। কেননা তাশাহহুদের পরপরই তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব।

জেনে রাখা দরকার যে, প্রথম বৈঠক দরূদের স্থান নয়। আর এ কথাও মনে রাখা আবশ্যক যে, দরূদ শরীফ পড়া সওয়াবের কাজ তাই বলে যে কোনো স্থানে পড়লেও সওয়াব হবে এ ধারণা ঠিক নয়। যেমন কেউ যদি সওয়াবের কাজ মনে করে কেরাতের স্থলে দরূদ পড়তে থাকে সেক্ষেত্রে সকলেরই জানা যে,তার নামায আদায় হবে না।

নামায আদায় করতে হবে ঠিক যেভাবে হাদীস ও ফিকহে উল্লেখ আছে। মনগড়া পদ্ধতিতে করলে তা বিদআত হবে।

-বাদায়েউস সনায়ে ১/৪০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) যে সকল ফরয নামাযে সশব্দে কেরাত পড়া হয় তা...

প্রশ্ন

ক) যে সকল ফরয নামাযে সশব্দে কেরাত পড়া হয় তা যদি কখনো একা আদায় করা হয় তাহলেও কি সশব্দেই কেরাত পড়া হবে না নিঃশব্দে পড়তে হবে?

খ) নফল নামাযে আস্তেই কেরাত পড়তে হবে, নাকি শব্দ করেও পড়া যাবে?

উত্তর

ক) যে সকল ফরয নামাযে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া হয় তা যদি একা আদায় করা হয় তাহলে তাতে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া জরুরি নয়। নিম্ন স্বরে ও উচ্চ স্বরে দুভাবেই কেরাত পড়া যাবে। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম।

খ) রাতের নফল নামাযে কেরাতের নিয়মও একই। অর্থাৎ উচ্চস্বরে ও নিম্নস্বরে দুভাবেই পড়া যায়। তবে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর দিনের নফল নামাযে নিম্ন স্বরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। ভুলে দিনের নফলে জোরে কেরাত পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। আর ইচ্ছাকৃত পড়লে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৬৯১, ৩৬৯৪; মাবসূত, সারাখসী ১/১৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের ৩য় রাকাতে কেরাত পড়লে এই নামাযের হুকুম কী?...

প্রশ্ন

ফরয নামাযের ৩য় রাকাতে কেরাত পড়লে এই নামাযের হুকুম কী? নামায ভেঙ্গে যাবে, নাকি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ফরয নামাযের ৩য়, ৪র্থ রাকাতে সূরা মিলালে নামায নষ্ট হবে না এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। তবে ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়াই সুন্নত। ইচ্ছাকৃত ফরযের শেষ দুই রাকাতে সূরা মিলানো সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর এবং আসরের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়তেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১

এছাড়া বহু সাহাবা-তাবেয়ী থেকেও ফরযের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্তাব রা., আলী রা., আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., আয়েশা রা., জাবের রা., আবু দারদা রা., মুজাহিদ রাহ., ইবনে সিরীন ও হাসান বসরী রাহ. প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীগণ।

অতএব ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে কেবল সূরা ফাতেহাই পড়বে। ইচ্ছাকৃত অন্য সূরা পড়বে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৪৩-৩৭৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন নফল নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয়...

প্রশ্ন

আমি একদিন নফল নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার উপরের সূরা নাছ্র পড়ে ফেলি। জানতে চাই, এভাবে করাতে আমার উক্ত নামায মাকরূহ হয়েছে কি?

উত্তর

না, আপনার ঐ নামায মাকরূহ হয়নি। নফলে সূরার তরতীব ভঙ্গ হওয়া তেমন দোষণীয় নয়। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা মাকরূহ।

-শরহুল মুনইয়াহ ৪৯৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সিজদার সময় আমার দুই পা মাঝে মাঝে উঠে যায়। আমার...

প্রশ্ন

সিজদার সময় আমার দুই পা মাঝে মাঝে উঠে যায়। আমার ভাই বলেছে, এতে আমার নামায নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমি জানতে চাই, সিজদার সময় যদি আমার দুই পা উঠে যায়, তাহলে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে?

উত্তর

সিজদার পুরো সময় দুই পায়ের কোনো অংশ কিছু সময়ের জন্যও যদি যমিনে লেগে না থাকে তাহলে সিজদা হবে না। কিন্তু যদি সিজদার সময় কোনো এক পা অল্প সময়ের জন্য মাটিতে লাগানো থাকে তাহলে সিজদা সহীহ হয়ে যাবে এবং নামাযও হয়ে যাবে। তবে সিজদা অবস্থায় উভয় পা যমিনে লাগিয়ে রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন সিজদার সময় উভয় পা যমিনে লেগে থাকে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৭,৫০০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যে ঘরে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি টাঙানো থাকে...

প্রশ্ন

যে ঘরে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি টাঙানো থাকে সে ঘরে নামায পড়ার হুকুম কী? একজন আলেম বলেছেন, এমন ঘরে নামায পড়া মাকরূহ। তবে কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে যদি ছবি ঢেকে দেওয়া হয় তাহলে মাকরূহ হবে না। এখন আমি তাই করছি। নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে কিছু দিয়ে ছবিটি ঢেকে দেই। এতে কোনো অসুবিধা নেই তো? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো।

উত্তর

যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকে তাতে নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য নামাযের সময় ছবি ঢাকা থাকলে নামায মাকরূহ হবে না।

আর একথা মনে রাখা দরকার যে, ঘরে-বাইরে কোনো প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা কিংবা প্রদর্শনী হয় এভাবে খোলা রাখা নাজায়েয। এ কারণে ঐ স্থানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতারা এমন ঘরে প্রবেশ করে না যাতে কোনো কুকুর রয়েছে এবং এমন ঘরেও না, যাতে কোনো (প্রাণীর) ছবি রয়েছে। -সহীহ বুখারী,হাদীস ৩৩২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১০৬

তাই আপনার কর্তব্য হলো, মানুষ বা জীবজন্তুর যত ছবি ঘরে টাঙানো আছে তা নামিয়ে ফেলা এবং তা নষ্ট করে ফেলা।

প্রকাশ থাকে যে, বিনা প্রয়োজনে ছবি উঠানো নাজায়েয। হাদীস শরীফে ছবি উঠানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ধমকি এসেছে।

-মাবসূত, সারাখসী ১/২১১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেককে দেখি, বিতির নামাযের পর বসে বসে দু’ রাকাত নামায...

প্রশ্ন

অনেককে দেখি, বিতির নামাযের পর বসে বসে দু’ রাকাত নামায পড়ে। কাউকে কাউকে আবার এ নামাযকে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করতে শুনেছি।

জানার বিষয় হল, এটা আসলে কী নামায? এ নামায কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

উত্তর

সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের পর বসে দু’ রাকাত নামায পড়েছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৩৮

ইমাম নববী রাহ. তাঁর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেন যে, বিতিরের পর দু’ রাকাত নামায নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত পড়েননি। বরং এ আমল মূলত বিতিরের পরও নফল পড়া জায়েয আছে এবং নফল নামায বসে পড়া জায়েয আছে- তা বোঝানোর জন্য কখনো এরূপ করেছেন।

তা না হয় সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বিভিন্ন সাহাবী থেকে এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ নামায হত বিতির নামায এবং তিনি সাহাবায়ে কেরামকেও আদেশ করতেন- বিতিরকে তোমরা রাতের সর্বশেষ নামায বানাও। (শরহে মুসলিম, নববী ৬/২১)

সুতরাং রাতে সর্বশেষে বিতির নামায পড়াই সুন্নাহসম্মত। অবশ্য কেউ যদি বিতিরের পরও নফল পড়ে তাহলে সেটা জায়েয হবে তবে সেটা নিয়মিত আমল বানানো ঠিক হবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলবশত তিনটি সিজদাহ করে ফেলেছি।...

প্রশ্ন

একদিন যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলবশত তিনটি সিজদাহ করে ফেলেছি। নামাযের শেষে সাহু সিজদাও করেছি। পরে মনে হল, সাহু সিজদা তো ওয়াজিব হয় কোনো ওয়াজিব পালনে ত্রুটি হলে। সিজদা আদায় যেহেতু ফরয তাই এতে ত্রুটির কারণে হয়ত আমার নামায ভেঙ্গে গেছে। আমার ধারণা কি সঠিক? আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?

উত্তর

ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা নামাযে কোনো রোকন অতিরিক্ত আদায় করলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। কারণ এতে পরবর্তী রোকন আদায়ে বিলম্ব হয়। নামায ভেঙ্গে যায় না। তাই সাহু সিজদা দ্বারা আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

হযরত আতা রাহ. বলেন,

وَإِنِ اسْتَيْقَنْتَ أَنَّكَ قَدْ سَجَدْتَ فِي رَكْعَةٍ ثَلَاثَ سَجَدَاتٍ فَلَا تُعِدْ، وَاسْجُدْ سَجْدَتَيِ السَّهْوِ.

যদি তুমি নিশ্চিত হও যে, কোনো রাকাতে তিনটি সিজদা করেছ তবে নামায পুনরায় পড়বে না; বরং সাহু সিজদা করে নিবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৫২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; কিতাবুল আছল ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের বাসা ও মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। মসজিদের বারান্দায় একটি সাউন্ডবক্স...

প্রশ্ন

আমাদের বাসা ও মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। মসজিদের বারান্দায় একটি সাউন্ডবক্স লাগানো। জুমার দিন ফজরের নামাযে ইমাম সাহেব সূরা সাজদাহ তিলাওয়াত করেন। যা আমাদের বাসা থেকে স্পষ্টভাবে শোনা যায় এবং বাসার সবাই সিজদার আয়াতটি সম্পর্কে অবগত।

প্রশ্ন হল, বাসায় মাস্তুরাত যারা আছেন উক্ত সিজদার আয়াত শোনার দ্বারা তাদের উপরও কি সিজদা করা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাসা থেকে যারা সিজদার আয়াত শুনেছে তাদেরও সিজদা করা ওয়াজিব। কেননা নামাযরত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে বাইরের শ্রোতার উপরও সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই শ্রবণকারীকে একাকী ঐ সিজদা করে নিতে হবে। অবশ্য ঐ সময় যদি শ্রোতা নিজে পৃথকভাবে নামাযে থাকে তবে নামায শেষ করে সিজদা করবে।

আর কাজ-কর্মে ব্যস্ততার দরুণ যদি সিজদার আয়াতটি খেয়াল না করে থাকে তবে সিজদা ওয়াজিব হবে না। অনুরূপভাবে শ্রবণকারী ঋতুমতী হলেও তার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে না।

-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

তলহা নামায পড়ছিল। তখন সে সামনে একটি বোর্ডে কিছু লেখা...

প্রশ্ন

তলহা নামায পড়ছিল। তখন সে সামনে একটি বোর্ডে কিছু লেখা দেখে নামাযের ভেতরেই মনে মনে সেই লেখাটি পড়ে ফেলে। এভাবে নামাযের ভেতরে কোনো লেখা দেখে সেটা মনে মনে পড়লে কি নামায নষ্ট হয়ে যাবে? তালহার নামায কি নষ্ট হয়ে গেছে? তাকে কি পুনরায় নামায পড়তে হবে?

উত্তর

তালহা যেহেতু বোর্ডের লেখাটি মনে মনে পড়েছে তাই তার নামায নষ্ট হয়নি। তবে মাকরূহ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনটি করা থেকে বিরত থাকবে। অবশ্য তার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন পূর্বে আমি ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতের বৈঠকে ভুলবশত...

প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমি ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতের বৈঠকে ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করি। সূরা ফাতিহা পড়ে শেষ করার পর মনে হয় আমি বৈঠকে আছি। তখন তাশাহহুদ পড়ি এবং সাহু সিজদা দেই। এখন আমি জানতে চাই, নামাযের শেষ বৈঠকে ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে কি?

উত্তর

হাঁ, নামাযের প্রথম বা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের স্থানে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। তাই আপনার সাহু সিজদা দেওয়া ঠিক হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কুরআন শরীফ পুরোপুরি সহীহভাবে পড়তে পারেন...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কুরআন শরীফ পুরোপুরি সহীহভাবে পড়তে পারেন না। বিশেষভাবে ع ও ح এর উচ্চারণ সঠিক হয় না। ع হামযার মতো এবং ح ه ـ এর মতো হয়ে যায়। তবে দায়িত্বশীলগণ চাইলে পুরোপুরি সহীহ পড়েন এমন ইমাম নিযুক্ত করতে পারেন। এ অবস্থায় বর্তমান ইমামের পেছনে আমাদের নামায সহীহ হবে কি না? আর এ ধরনের ব্যক্তিদের ইমামতির হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ع , ح সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে না পারলে নামায মাকরূহ হওয়া এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই যে এমন ভুল পড়ে তাকে ইমাম হিসেবে রাখা জায়েয হবে না। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানে এমন কাউকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করা।

-শরহুল মুনয়াহ ৪৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৬৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি এক সেনা কর্মকর্তা। কখনো কখনো আমাদেরকে বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে...

প্রশ্ন

আমি এক সেনা কর্মকর্তা। কখনো কখনো আমাদেরকে বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রান্সফার করা হয়। ১৪দিন পরপর আমাদের জন্য খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হয়। দেখা যায়, ১০-১২ দিন যেতেই খাওয়ার পানি ছাড়া আমাদের আর কোনো পানি অবশিষ্ট থাকে না। আশেপাশে কোনো জনবসতিও নেই। চতুর্দিকে মাইল দুয়েক খুঁজেও পানির সন্ধান পাই না। এ অবস্থায় আমরা কি তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারব?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি পানি দুই হাজার গজ অর্থাৎ প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো দূরে থাকে তাহলে আপনারা তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবেন।

-কিতাবুল আছল ১/৯১; মাবসূত, সাারাখসী ১/১১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাঝে মাঝে ভুলে নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে...

প্রশ্ন

আমি মাঝে মাঝে ভুলে নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেলি। এখন পরের রাকাতে আমি কোত্থেকে পড়ব? আমার নামায কি এ কারণে নষ্ট হয়ে যাবে?

উত্তর

এক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা নাসই পড়া ভালো। আর এ কারণে আপনার নামায নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত ফরয নামাযে একই সূরা বারবার পড়া মাকরূহ তানযিহী। অতএব বারবার এমনটি না হওয়া উচিত।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন ইশার নামাযে প্রথম বৈঠক না...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন ইশার নামাযে প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যান। মুসল্লিরা লোকমা দিলে তিনি দাঁড়ানো থেকে তাশাহহুদের জন্য বসে যান এবং নামায শেষে সাহু সিজদা দেন। নামায শেষে একজন মুসল্লি বললেন যে, নামায হয়নি। ইমাম সাহেব তাই পুনরায় নামায দোহরান।

আমার প্রশ্ন হল, ঐ মুসল্লি কি ঠিক বলেছিল? ইমাম সাহেবের নামায দোহরানো কি সঠিক হয়েছে? এ ভুলের ক্ষেত্রে করণীয় কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

উক্ত মুসল্লির কথা ঠিক নয়। নামাযটি দোহরানোর প্রয়োজন ছিল না। কারণ প্রথম বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, তাশাহহুদের জন্য আর ফিরে না আসা। বরং যথানিয়মে বাকি নামায আদায় করে শেষে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করা। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘন করে কেউ তাশাহহুদের জন্য ফিরে এলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তার নামায নষ্ট হবে না। বরং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করে নিলেই নামায আদায় হয়ে যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১০১, ১০২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৩-৮৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একটি বইয়ে পড়েছি, বিতরের নামাযে দুআ কুনূতের পর দরূদ...

প্রশ্ন

আমি একটি বইয়ে পড়েছি, বিতরের নামাযে দুআ কুনূতের পর দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং ঐ সময়ে দরূদ শরীফ পড়লে শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়তে হবে না। জানতে চাই, ঐ বইয়ের এ কথাটি কি ঠিক?

উত্তর

বিতরের নামাযে দুআ কুনূতের পর দরূদ শরীফ পড়া ভালো। তবে এ সময়ে দরূদ পড়লে শেষ বৈঠকে দরূদ পড়া লাগবে না- এ কথা ঠিক নয়; বরং শেষ বৈঠকে দরূদ পড়া পৃথকভাবে সুন্নতে মুআক্কাদা। দুআ কুনূতের পর দরূদ শরীফ পড়া হোক বা না হোক শেষ বৈঠকে দরূদ পড়তেই হবে।

-শরহুল মুনইয়া ৪২২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৬৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কেউ যদি যিলহজ্বের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ অর্থাৎ তাশরীকের...

প্রশ্ন

কেউ যদি যিলহজ্বের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ অর্থাৎ তাশরীকের দিনসমূহে কাযা নামায পড়ে তা ঐ পাঁচ দিনের কাযা হোক বা পূর্বের হোক তাহলে তাকে কি নামায শেষে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে?

উত্তর

আইয়ামে তাশরীকের পাঁচ দিনের মধ্যে কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে তা যদি এ পাঁচ দিনের মধ্যেই আদায় করা হয় তাহলে এ কাযা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে। কিন্তু পূর্বের কোনো কাযা নামায আইয়ামে তাশরীকে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক বলবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১১-৫১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একবার আমার গোসল ফরয হলে খুব তাড়াহুড়া করে গোসল করি।...

প্রশ্ন

একবার আমার গোসল ফরয হলে খুব তাড়াহুড়া করে গোসল করি। তখন নাকে পানি দিতে ভুলে যাই। এরপর যোহরের ফরয নামায আদায় করি। পরে যখন মনে পড়েছে তখন পুনরায় গোসল করে আবার নামায আদায় করি।

জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় সঠিক নিয়ম কী? এবং আমি যেভাবে করেছি তা কি যথার্থ হয়েছে?

উত্তর

এক্ষেত্রে শুধু নাকে পানি দিয়ে নিলেই গোসল সম্পন্ন হয়ে যেত। পুনরায় গোসল করার দরকার ছিল না। তবে গোসল করে পুনরায় নামায পড়ার দ্বারা তা আদায় হয়ে গেছে।

-কিতাবুল আছার, হাদীস ৫৯; কিতাবুল আছল ১/৩২; মাবসূত, সারাখসী ১/৬২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৩৩৮; ইলাউস সুনান ১/২০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৪১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আজকাল অনেকে এমনভাবে বাড়ি বানায় যে, বাড়ির নিচে নাপাকির ট্যাংকি...

প্রশ্ন

আজকাল অনেকে এমনভাবে বাড়ি বানায় যে, বাড়ির নিচে নাপাকির ট্যাংকি থাকে। আমার প্রশ্ন হল, ঐ বাড়ির প্রথম ফ্লোরে নামায পড়া জায়েয হবে কি?

উত্তর

যেহেতু নাপাকির রং, গন্ধ ইত্যাদি কোনো আলামতই এক্ষেত্রে প্রকাশ হয় না তাই তার উপর নামায পড়া জায়েয।

-শরহুল মুনইয়াহ ২০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি আসরের নামায ওয়াক্তের ভেতর পড়তে পারেনি। মাগরিবের সময়...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি আসরের নামায ওয়াক্তের ভেতর পড়তে পারেনি। মাগরিবের সময় এক মসজিদে জামাতের সাথে মাগরিবের নামায পড়ে নেয়। তখন তার আসরের নামাযের কথা স্মরণ ছিল। কিন্তু যেহেতু মাগরিবের জামাত দাঁড়িয়ে যায় তাই আসরের কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও সে মাগরিবের জামাতে শরিক হয়ে যায়। আর অতীতেরও তার কোনো নামায কাযা নেই। এখন ঐ ব্যক্তির কী করণীয়? সে কি এখন আসরের কাযা আদায় করে নিবে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আসরের কাযা নামাযের কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ঐ ব্যক্তির মাগরিবের জামাতে শরিক হওয়া এবং তা পড়া সহীহ হয়নি। তাই এখন তার করণীয় হল, আসরের কাযা নামাযটি পড়ে উক্ত মাগরিবের নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া। কেননা যার পেছনের কোনো নামায কাযা নেই তার যদি কোনো ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে যায় তবে তার জন্য পরবর্তী ওয়াক্তের নামায পড়ার আগে ঐ কাযা নামায আদায় করা জরুরি। কাযা আদায় করতে গিয়ে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও তাকে আগে কাযাই আদায় করতে হবে। কিন্তু সময় স্বল্পতার দরুণ কাযা আদায় করতে গিয়ে যদি পরবর্তী ওয়াক্তের ফরয ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তখন ওয়াক্তের নামায আগে পড়ে নিতে হবে।

হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَذَكَرَهَا مَعَ الْإِمَامِ فَلْيُصَلِّهِ مَعَهُ ثُمَّ لِيُصَلِّ الَّتِي نَسِيَ ثُمَّ لِيُصَلِّ الْأُخْرَى بَعْدَ ذَلِكَ.

যে ব্যক্তি কোনো ওয়াক্তের নামায (ওয়াক্তের ভেতর) পড়তে ভুলে গেছে অতপর ইমামের পেছনে (পরবর্তী ওয়াক্তের) নামায পড়ার সময় তার ঐ নামাযের কথা স্মরণ হয় সে যেন ইমামের সাথে নামাযটি পড়ে নেয়। এরপর যে নামাযটি পড়তে ভুলে গিয়েছিল তা আদায় করে। অতপর ইমামের সাথে যে নামাযটি পড়েছে তা আবার পড়ে নেয়। -শরহু মাআনিল আসার, তহাবী, হাদীস ২৬৮৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২২৫৪

এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর ইমাম তহাবী রাহ. বলেন, ইমামের সাথে যে নামাযটি পড়েছে তা আমাদের নিকট নফল হিসেবে গণ্য হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭-৩৫০; আল বাহরুর রায়েক ২/৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৩৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার জামায় একদিন কিছু রক্ত লাগে। তখন জামাটি আমি পানি...

প্রশ্ন

আমার জামায় একদিন কিছু রক্ত লাগে। তখন জামাটি আমি পানি দিয়ে কয়েকবার ভালোভাবে ধুয়েছি। কিন্তু রক্তের লাল দাগ জামা থেকে পুরোপুরি দূর করতে পারিনি। আর তখন আমার সাথে অন্য কোনো জামা না থাকায় ঐ জামা পরেই আমি কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়েছি। এখন প্রশ্ন হল, আমি ঐ জামা নিয়ে যে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়েছি তা কি আদায় হয়েছে না তা আবার পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু রক্ত লাগার পর কাপড়টি ভালোভাবে ধুয়ে নিয়েছেন এবং রক্ত দূর হয়ে গেছে। তাই এরপর রক্তের দাগ থেকে গেলেও সমস্যা নেই। তা পাক হয়ে গেছে। এ জামা পরে যে নামাযগুলো পড়েছেন তাও আদায় হয়েছে। পুনরায় আদায় করা লাগবে না।

-আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ২/২৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪২; আল বাহরুর রায়েক ১/২৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর...

প্রশ্ন

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।

-যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে লম্বা কেরাত পড়ার সময় শুরুতে বড় এক আয়াত পরিমাণ...

প্রশ্ন

নামাযে লম্বা কেরাত পড়ার সময় শুরুতে বড় এক আয়াত পরিমাণ বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ পড়ার পর যদি পরবর্তী অংশে এমন কেনো ভুল পড়ে, যার কারণে অর্থ একেবারে পাল্টে যায় তাহলে নামায ভঙ্গ হবে কি না? আমার এ প্রশ্নটি হওয়ার কারণ হল, সে তো নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পড়ে ফেলেছে। আরেকটা জানার বিষয়, এক্ষেত্রে নফল ও ফরযের মধ্যে পার্থক্য আছে কি না?

উত্তর

নামাযে যতটুকু কেরাত পড়া হবে এর কোনো অংশে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে নামায ভেঙ্গে যাবে। চাই ঐ ভুল নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ কেরাত পড়ার ভেতরে হোক বা পরে হোক। নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পড়ার পর ভুল হলে নামায ভাঙ্গে না- এ ধারণা ঠিক নয়; বরং যে ভুলের কারণে অর্থে চরমভাবে বিকৃতি ঘটে যেমন, কুফরী অর্থ হয়ে যায় বা কুরআনের একেবারে উল্টো অর্থ হয় সেক্ষেত্রে যে অংশেই ভুল হোক নামায ভেঙ্গে যাবে। আর ভুলের ক্ষেত্রে ফরয ও নফল নামাযের হুকুম একই। নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে ফরয নফল সব নামাযই নষ্ট হয়ে যাবে।

-শরহুল মুনইয়াহ ৪৭৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার...

প্রশ্ন

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দিই। কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুল করে যোহরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন আমরা যথারীতি আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দিই। নামায শেষে একজন আলেম বললেন, হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং সুবহানাল্লাহ বলাই উচিত। ঐ আলেমের কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, ঐ আলেম ঠিক বলেছেন। ইমামের কোনো ভুল হলে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়া সুন্নত। কেননা একাধিক হাদীসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

من رابه شيء في صلاته، فليسبح.

নামাযে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন সুবহানাল্লাহ বলে। -সহীহ বুখারী ১/১৬৫

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে) দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দিয়েছেন। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১১৭৮

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ বলা উচিত।

-শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; আল মুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে...

প্রশ্ন

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি নামাযের ইকামত হচ্ছে বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামাতের কতটুকু অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি সুন্নত পড়ব? দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাকি ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لا تدعوا ركعتي الفجر، وإن طردتكم الخيل.

তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়। -মুসনাদে আহমদ,হাদীস ৯২৫৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন। -শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ১/২৫৬

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ই, যা উপরে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো খুঁটির আড়ালে সুন্নত পড়বে।

খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।

-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মাবসূত, সারাখসী ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন নামাযের পর মসজিদে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় এক...

প্রশ্ন

আমি একদিন নামাযের পর মসজিদে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আমার পেছনে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। আমি তার সামনে থেকে উঠে চলে আসি। তখন এক মুসল্লি আমাকে বললেন, আপনি নামাযির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে গুনাহ করেছেন। কেননা মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। অথচ আমি জানতাম, মুসল্লির সামনে বসে থাকলে কোনো এক দিকে সরে যেতে অসুবিধা নেই। দয়া করে সঠিক মাসআলাটি জানাবেন।

উত্তর

নামাযির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। কিন্তু সামনে অবস্থানকারীর জন্য পাশে সরে যাওয়া বা সেখান থেকে চলে আসা নিষিদ্ধ নয়। তাই আপনার জন্য সামনে থেকে সরে আসা নাজায়েয হয়নি। ঐ মুসল্লির কথা ঠিক নয়। হাদীস শরীফে অতিক্রম করা বড় গুনাহ বলা হয়েছে।

সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে শুয়ে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন। তখন হযরত আয়েশা রা. তাঁর সামনে থেকে এক পাশে উঠে চলে যেতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১২

তবে মসজিদে মুসল্লির সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিশেষ জরুরত ছাড়া চলে না আসাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষত লোকটি সরে গেলে নামাযির সামনে দিয়ে অন্যদের যাতায়াতের আশঙ্কা থাকলে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১২; ইমদাদুল আহকাম ১/৮০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন ফজরের আযানের সময় الصلاة خير من النوم ভুলক্রমে বাদ...

প্রশ্ন

একদিন ফজরের আযানের সময় الصلاة خير من النوم ভুলক্রমে বাদ দিয়ে الله أكبر দুইবার বলে ফেলি। এরপর সাথে সাথে ছুটে যাওয়া বাক্যের কথা মনে পড়লে তা বলি এবং পুনরায় সেখান থেকে পরের বাক্যগুলো বলে আযান শেষ করি। প্রশ্ন হল, ঐ আযান কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ছুটে যাওয়া বাক্যসহ বাকি বাক্যগুলো যেহেতু বলেছেন তাই আপনার উক্ত আযান সহীহ হয়েছে। আযান দেওয়ার সময় আযানের কোনো বাক্য ছুটে গেলে করণীয় হল, মনে পড়ার সাথে সাথে ছুটে যাওয়া বাক্যটি বলা এবং এরপর পরবর্তী বাক্যগুলো যথানিয়মে বলে আযান সম্পন্ন করা।

-কিতাবুল আছল ১/১১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মাসবুক ব্যক্তি, যার এক রাকাত নামায ছুটে গিয়েছে সে ইমামের...

প্রশ্ন

মাসবুক ব্যক্তি, যার এক রাকাত নামায ছুটে গিয়েছে সে ইমামের প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে নাকি পড়বে না?

উত্তর

হাঁ, যে মাসবুকের এক রাকাত ছুটে গেছে তার জন্যও ইমামের অনুসরণে প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া ওয়াজিব। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে,যার নামাযের কিছু অংশ ছুটে গেছে অর্থাৎ মাসবুক কি ইমামের প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বে? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ।

-কিতাবুল আসার ১/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৬৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

লঞ্চ, ফেরী ইত্যাদিতে জুমার নামায পড়ার বিধান কী? যদি জুমার...

প্রশ্ন

লঞ্চ, ফেরী ইত্যাদিতে জুমার নামায পড়ার বিধান কী? যদি জুমার নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায় তাহলে সেখানে জুমার নামায পড়ে নিলে তা আদায় হবে কি? যদি না হয় তবে কোন কারণে আদায় হবে না এবং কি কি শর্ত পাওয়া গেলে আদায় হবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

নৌকা, ফেরী, লঞ্চ ইত্যাদি চলমান অবস্থায় তাতে জুমা আদায় করা সহীহ নয়। কারণ জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হল, যে জায়গায় জুমা প্রতিষ্ঠা করা হবে সেটি শহর হতে হবে অথবা এমন গ্রাম হতে হবে, যেখানে শহরের সুযোগ-সুবিধা থাকে। যেমন, নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র পাওয়া যায় এমন বাজার থাকে, রাস্তা-ঘাটের সুব্যবস্থা থাকে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাও থাকে ইত্যাদি।

লঞ্চ, ফেরী চলমান অবস্থায় নদীতে যেহেতু এসব শর্ত বিদ্যমান নেই তাই চলন্ত অবস্থায় এগুলোতে জুমা প্রতিষ্ঠা করা জায়েয হবে না। করলে তা সহীহ হবে না।

অবশ্য জলযান যদি পাড়ের সাথে নোঙর করা থাকে তাহলে তখন তা উক্ত পাড়ের হুকুমে হবে। পাড় যদি এমন স্থানে হয় যেখানে জুমার নামায সহীহ হয় তাহলে পাড়ের সাথে নোঙর করা জলযানেও জুমা পড়া সহীহ হবে। আর যদি পাড় সংলগ্ন এলাকায় জুমার শর্ত না পাওয়া যাওয়ার কারণে সেখানে জুমা না হয় তাহলে ঐ পাড়ে বা সেখানে নোঙর করা জলযানেও জুমা সহীহ হবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

হায়েয অবস্থায় মহিলারা আযানের জবাব দিতে পারবে কি?

প্রশ্ন

হায়েয অবস্থায় মহিলারা আযানের জবাব দিতে পারবে কি?

উত্তর

মহিলাদের জন্যও আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। তাই হায়েয অবস্থায়ও মহিলারা আযানের জবাব দিবে। এ অবস্থায় আযানের জবাব দিতে কোনো অসুবিধা নেই।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কখনো দেখা যায়, নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর নামায আদায়ের...

প্রশ্ন

কখনো দেখা যায়, নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর নামায আদায়ের পূর্বেই হায়েয আরম্ভ হয়। জানতে চাই, পরবর্তীতে ঐ ওয়াক্তের নামায কি কাযা করা জরুরি?

উত্তর

নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর নামায আদায়ের পূর্বে ওয়াক্তের মধ্যেই হায়েয আরম্ভ হলে এই ওয়াক্তের নামাযও মাফ হয়ে যায়। অতএব পরবর্তীতে এই ওয়াক্তের নামায কাযা করা লাগবে না।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৩১৩; মাবসূত, সারাখসী ২/১৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮৩; মাজমাউল আনহুর ১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যদি কেউ এমন অবস্থায় নামাযের জামাতে শরিক হয় যখন ইমাম...

প্রশ্ন

যদি কেউ এমন অবস্থায় নামাযের জামাতে শরিক হয় যখন ইমাম সাহেব কেরাত পড়ছেন অথবা রুকুতে চলে গেছেন, তখন সে কি সানা পড়বে নাকি ছেড়ে দিবে?

উত্তর

ইমাম সাহেব শব্দ করে কেরাত পড়ার সময় কেউ নামাযে শরিক হলে কিংবা রুকু অবস্থায় শরিক হলে সে সানা পড়বে না। আর আস্তে কেরাত পড়া অবস্থায় নামাযে শরিক হলে সানা পড়তে পারবে।

Ñআত তাজনীস ২/৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমাম সাহেবকে দেখি, ফরয নামাযের পর নিজ জায়গা থেকে একটু...

প্রশ্ন

ইমাম সাহেবকে দেখি, ফরয নামাযের পর নিজ জায়গা থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে সুন্নত পড়েন। আমার জানার বিষয় হল, ফরয নামাযের পর নিজ জায়গা থেকে সরে অন্যত্র সুন্নত পড়ার হুকুম কী? এই হুকুম কি শুধু ইমাম সাহেবের জন্য প্রযোজ্য, নাকি মুসল্লিগণও অন্যত্র সুন্নত পড়বে?

উত্তর

যোহর, মাগরিব ও ইশার নামাযের পর ইমাম যদি মসজিদের ভেতরই সুন্নত বা নফল পড়তে চান, তাহলে ফরয নামাযের জায়গা থেকে ডানে বা বামে সরে সুন্নত পড়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, ইমাম যে স্থানে ফরয পড়েছে সেখানেই তার জন্য (সুন্নত-নফল) নামায পড়াকে তিনি অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬০৭৮

আর আশপাশে জায়গা থাকলে মুসল্লিদের জন্যও সামান্য আগ-পিছ করে দাঁড়ানো উত্তম। তবে ফরযের জায়গায় দাঁড়িয়ে সুন্নত পড়লেও কোনো গুনাহ হবে না।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬০৬৬-৬০৬৮; কিতাবুল আসল ১/১৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২৬; আততাজনীস ২/৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি যোহরের নামাযে প্রথম বৈঠকে শরিক হই। শরিক হয়ে তাশাহহুদ...

প্রশ্ন

আমি যোহরের নামাযে প্রথম বৈঠকে শরিক হই। শরিক হয়ে তাশাহহুদ পড়া শুরু করি। তখনই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। এখন জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমি কি তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াব, না ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাশাহহুদ পূর্ণ করেই দাঁড়ানো উচিত। কেননা ইমামের পেছনে প্রথম বা দ্বিতীয় বৈঠকে শরিক হলে তাশাহহুদ পড়ে নেওয়াই নিয়ম। তাই ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেও মুক্তাদি তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াবে।

Ñরদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬; এমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩৩৯; এমদাদুল আহকাম ১/৫৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি জামাতের সাথে নামায আদায় করছিল। দাঁড়ানো অবস্থায় তার...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি জামাতের সাথে নামায আদায় করছিল। দাঁড়ানো অবস্থায় তার ঘুম এসে যায়। এদিকে ইমাম সাহেব রুকু শেষ করে সিজদায় চলে গিয়েছিল। তখন সে জেগে উঠে এবং নিজে নিজে রুকু করে ইমামের সাথে সিজদায় শরিক হয়। জানার বিষয় হল, তার এ নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

হাঁ, ঐ ব্যক্তির নামায সহীহ হয়েছে। ইমামের সাথে নামায শুরু করার পর ঘুম বা অন্য কোনো ওযরে মাঝখানে কোনো রোকন ছুটে গেলে তা নিজে নিজে আদায় করে ইমামের সাথে শরিক হতে হয়। এটিই নিয়ম। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির একাকী রুকু করে ইমামের সাথে শরিক হওয়া নিয়মসম্মতই হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের মধ্যে অবহেলা বা অলসতা খুবই অপছন্দনীয় বিষয়। নামায আদায় করতে হয় অত্যন্ত খুশুখুযু ও মনোযোগের সঙ্গে। আর নামাযে ঘুমিয়ে পড়া উদাসীনতার লক্ষণ। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

Ñকিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৪-৫৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার এক আত্মীয় এক সপ্তাহ যাবৎ অসুস্থ ছিল। একেবারে মুমূর্ষু...

প্রশ্ন

আমার এক আত্মীয় এক সপ্তাহ যাবৎ অসুস্থ ছিল। একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। কোনো ক্রমেই নামায পড়া সম্ভব ছিল না। এমনকি মাথার ইশারায়ও নামায পড়া সম্ভব ছিল না। তাই নামায পড়তে পারেনি। তবে পুরো সময় হুঁশ-জ্ঞান ছিল। আমার প্রশ্ন হল, অসুস্থ ব্যক্তির যদি হুঁশ-জ্ঞান বাকি থাকে কিন্তু মাথার ইশারায়ও নামায পড়তে না পারে তাহলে তার নামাযের হুকুম কী? আমার ঐ আত্মীয়কে বিগত দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে কি না?

উত্তর

অসুস্থতার কারণে রুকু-সিজদার জন্য মাথা দ্বারা ইশারা করে নামায পড়ার ক্ষমতাও যদি না থাকে এবং এ অবস্থায় একদিন একরাতের চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে এ সময়ে ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা করতে হবে না। অবশ্য যদি একদিন এক রাত বা এর আগেই মাথা দ্বারা ইশারা করে নামায পড়ার মতো শক্তি ফিরে পায় তাহলে উক্ত সময়ে ছুটে যাওয়া নামাযসমূহ কাযা করে নিতে হবে।

Ñআদ্দুররুল মুখতার ২/৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৭; মারাকিল ফালাহ ২৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার অনেক নামায কাযা আছে। আমি যদি রাতের বেলা প্রতিদিন...

প্রশ্ন

আমার অনেক নামায কাযা আছে। আমি যদি রাতের বেলা প্রতিদিন বিগত একদিনের নামায আদায় করতে চাই সেটা ঠিক হবে কি? আর কাযা নামায আদায়ের নিয়ম কী হবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, রাতে পুরো দিনের কাযা নামাযও আদায় করা যাবে। কেননা কাযা নামায আদায়ের কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই। দিনের কাযা নামায রাতেও পড়া যায়। আর কাযা নামায বেশি হলে এভাবে নিয়ত করতে পারেন যে, আমি সর্বপ্রথম অনাদায়ী ফজরের কাযা আদায় করছি অথবা সর্বশেষ অনাদায়ী ফজরের কাযা আদায় করছি। প্রতিদিনই এভাবে নিয়ত করবেন। অনুরূপভাবে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও বিতরের ক্ষেত্রে নিয়ত করবেন।

Ñফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১, ১২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮২; রদ্দুল মুহতার ২/৬৬, ৭৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমামের পিছনে নামায পড়া অবস্থায় প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর...

প্রশ্ন

ইমামের পিছনে নামায পড়া অবস্থায় প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর মুক্তাদি যদি ভুলে দরূদ শরীফ পড়ে ফেলে তাহলে তার করণীয় কী? তার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কেননা মুক্তাদির ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

উল্লেখ্য, খুশুখুযু ও একাগ্রতার সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারে যতœবান হতে হবে।

Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৬০; কিতাবুল আসল ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার আগে أعوذ بالله من...

প্রশ্ন

নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার আগে أعوذ بالله من الشيطان الرجيم ও بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ উভয়টা পড়বে, নাকি শুধু بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ পড়বে? আর সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়ার আগে কিبِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ পড়বে?

উত্তর

ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী নামাযের শুধু প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার আগে أعوذ بالله من الشيطان الرجيم পড়বে। অন্য কোনো রাকাতে পড়বে না। আর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার আগে بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ পড়া এবং সূরা ফাতিহার পর অন্য কোনো সূরার শুরু থেকে পড়লেও بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ পড়া মুস্তাহাব। তবে সূরার মাঝ থেকে পড়লেبِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ না পড়লেও চলবে।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫২; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একবার একাকি যোহরের নামায পড়ছিলাম। প্রথম বৈঠকে ভুলে সূরা...

প্রশ্ন

আমি একবার একাকি যোহরের নামায পড়ছিলাম। প্রথম বৈঠকে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি। এরপর আত্তাহিয়্যাতুর কথা স্মরণ হলে আত্তাহিয়্যাতু পড়ি এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করি। এখন প্রশ্ন হল, আমার ঐ ভুলের কারণে সাহু সিজদা দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না?

উত্তর

হাঁ, ঐ ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। তাই সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের নিয়তের বিধান কী? ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় কীভাবে...

প্রশ্ন

নামাযের নিয়তের বিধান কী? ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় কীভাবে নিয়ত করব আর একাকী নামায পড়ার সময় কীভাবে নিয়ত করব? অনেক সময় এমন হয় যে, পূর্ণ নামায শেষ করি বটে, কিন্তু অন্তরে কোনো কিছুই থাকে না। অর্থাৎ কোন নামায পড়ছি বা ইমামের পিছনে পড়ছি এগুলো কিছুই অন্তরে আসে না। তবে নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেই যে, আমি তো নামাযের জন্যই মসজিদে এসেছি। সুতরাং নির্দিষ্টভাবে নিয়তের দরকার কী? আমার এই ধারণা কি সঠিক?

উত্তর

কোন ওয়াক্তের নামায আদায় করা হচ্ছে এই নিয়ত অন্তরে থাকা ফরয। এছাড়া জামাতের নামাযে ইমামের পিছনে নামায পড়ছি এই নিয়তও জরুরি। তবে এই কথাগুলো মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। অন্তরে থাকাই যথেষ্ট। কিন্তু কোন ওয়াক্তের নামায পড়া হচ্ছে তা যদি অন্তরেও না থাকে তাহলে ঐ নামায হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের শুরুতে নিয়ত থাকার পর পরবর্তীতে খেয়াল ছুটে গেলেও নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

Ñমাবসূত, সারাখসী ১/১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮০-৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের গ্রামের মসজিদে জুমার দিন মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয় না।...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের মসজিদে জুমার দিন মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয় না। ফলে মসজিদের পূর্ব দিকের খোলা জায়গায় অনেক মুসল্লিকে নামায পড়তে হয়। এদিকে আমাদের মসজিদে নামাযের জন্য এখনও মাইকের ব্যবস্থা করা হয়নি। যার ফলে ঐ খোলা জায়গার পেছন দিকে বসলে জুমার খুতবা শোনা যায় না। আমার জানার বিষয় হল, খুতবা যেহেতু শোনা যাচ্ছে না, তাহলে কি আমি ঐ সময় কোনো যিকর বা তাসবীহ আদায় করতে পারব?

উত্তর

খুতবা অবস্থায় সকল মুসল্লির কর্তব্য হল, মনোযোগ সহকারে শোনা এবং চুপ থাকা। খুতবা শোনা না গেলেও চুপ থাকা জরুরি। খুতবা শোনা না গেলেও এ অবস্থায় দুআ-দরূদ পড়া বা যিকর করা যাবে না।

হযরত উসমান রা. বলেন, যে খুতবা শুনতে পাচ্ছে না, কিন্তু চুপ করে আছে সে চুপ করে খুতবা শ্রবণকারীর মতোই সওয়াব পাবে। Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৫৩৭২

আবদুল্লাহ ইবনে মুসলিম ইবনে ইয়াসার রাহ. তার পিতার ব্যাপারে বলেন, খুতবা চলাকালীন তিনি তাসবীহ পাঠ করতেন না এবং দুআও করতেন না।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৩২০; মাবসূত, সারাখসী ২/২৮; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৩৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন আগে আমাদের মহল্লায় একটি নতুন মসজিদ হয়েছে। সভাপতি সাহেবের...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের মহল্লায় একটি নতুন মসজিদ হয়েছে। সভাপতি সাহেবের আদেশে আমাদের ইমাম সাহেব নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখেন। কিন্তু কিছু কিছু মুসল্লির দাবি হল, মসজিদ বন্ধ রাখা যাবে না। সব সময় মসজিদ খোলা রাখতে হবে। কারণ মসজিদ বন্ধ রাখার অর্থ হল, মানুষকে ইবাদত থেকে বাধা দেওয়া। জানার বিষয় হল, নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখা কি জায়েয?

উত্তর

মসজিদের মালামাল ও আসবাবপত্র হেফাযতের উদ্দেশ্যে নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখা জায়েয। এবং তা ইবাদতে বাধা দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য নামাযের আগে পরে যতক্ষণ মুসল্লিগণ ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে এমন একটা লম্বা সময় পর্যন্ত মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। এজন্য বিশ্বস্ত খাদেম নিয়োগের মাধ্যমে মসজিদের মালামাল হেফাযতের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর মসজিদের সাথে জায়গা থাকলে সেখানে বারান্দা বানানো যেতে পারে। যেন মসজিদ বন্ধ থাকলেও বারান্দা খোলা থাকে। এতে মসজিদের মালামালের হেফাযতও হবে আবার মুসল্লীগণ যে কোনো সময় ইবাদত-বন্দেগীও করতে পারবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১৯; শরহুল মুনইয়াহ ৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ঈদের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর বলার আগে...

প্রশ্ন

ঈদের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর বলার আগে কিরাত পড়ে ফেললে বা রুকুও করে ফেললে এক্ষেত্রে করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলানোর আগে স্মরণ হলে সাথে সাথে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে এবং পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়বে।

আর যদি অন্য সূরা মিলানোর পর স্মরণ হয় তাহলে কিরাত শেষ করে রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। এরপর রুকু করবে এবং উভয় অবস্থায়ই নির্ধারিত সময় তাকবীর আদায় না করার কারণে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।

আর যদি রুকুতে চলে যাওয়ার পর তাকবীরের কথা স্মরণ হয় তাহলে তখন আর তাকবীর বলবে না; বরং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।

-হালবাতুল মুজাল্লী শরহু মুনইয়াতুল মুসল্লী ২/৫৫০; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখতে হবে কি না?

প্রশ্ন

নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখতে হবে কি না?

উত্তর

হাঁ, মহিলাদের জন্য নামাযে কান ঢেকে রাখা আবশ্যক। কেননা, নামাযে মহিলাদের কান সতরের অন্তর্ভুক্ত। তাই নামাযের মধ্যে কোনো কানের চার ভাগের একভাগ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ২১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭১; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৮, ৪০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের নামাযের সময় আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নত পড়ছিলাম। ইমাম...

প্রশ্ন

ফজরের নামাযের সময় আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নত পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার পর সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা পড়েন। সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা আদায় করেন। আমি ইমাম সাহেবের সঙ্গে সিজদার আয়াতে শরিক হতে পারিনি। তবে ঐ রাকাতেই রুকুর আগে শরিক হয়েছি। জানার বিষয় হল, আমার কি পরবর্তীতে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে?

উত্তর

না, পরবর্তীতে আপনাকে ঐ সিজদা আদায় করতে হবে না। কারণ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ইমামের সাথে ঐ রাকাতেই শরিক হওয়ার কারণে কিরাত ও তিলাওয়াতে সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে।

-শরহুল মুনইয়াহ ৫০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামায যদি কেউ একা...

প্রশ্ন

আমরা জানি, মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামায যদি কেউ একা একা পড়ে তাহলে তার উচ্চস্বরে কেরাত পড়ারও অবকাশ আছে। আস্তে আস্তে পড়ারও অবকাশ আছে। তো জোরে কিরাত পড়ার সময় তাকবীর এবং তাসমীও (سمع الله لمن حمده) কি জোরে বলবে?

উত্তর

মাগরিব, ইশা ও ফজরে একাকী নামায আদায়কারী উচ্চস্বরে কিরাত পড়লেও তাকবীর ও তাসমী আস্তেই পড়বে। জোরে পড়বে না। কারণ একাকী নামায আদায়কারীর জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর বলার কোনো প্রয়োজন নেই।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গত সপ্তাহে আমরা পাঁচজন জুমার নামাযের জন্য বের হতে বিলম্ব...

প্রশ্ন

গত সপ্তাহে আমরা পাঁচজন জুমার নামাযের জন্য বের হতে বিলম্ব হয়ে যায়। গেটে এসে দেখি, গেট বন্ধ। ঐ সময়ে বের হওয়ার মতো আমাদের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই আমরা ছাত্রাবাসের ভিতরেই খুতবা পড়ে জুমা আদায় করি। জানার বিষয় হল, আমাদের জুমা আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? জুমা আদায়ের জন্য মসজিদ হওয়া কি শর্ত?

উত্তর

হাঁ, আপনাদের জুআ আদায় করা সহীহ হয়েছে। মসজিদ ছাড়াও জুমা পড়া সহীহ। অবশ্য বিনা ওজরে মসজিদের জুমা ত্যাগ করা গুনাহ। প্রকাশ থাকে যে, জুমার প্রথম আযানের পর পরই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে (জুমার) নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও। -সূরা জুম‘আ (৬২) ৯

আযানের পর অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের বিলম্ব করা ঠিক হয়নি।

-শরহুল মুনইয়াহ ৫৫১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গতকাল আসরের নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে আশহাদু...

প্রশ্ন

গতকাল আসরের নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ছুটে যায়। এজন্য আমি সাহু সিজদা করেছি। জানার বিষয় হল, ঐ অংশটুকু ছুটে যাওয়ার কারণে আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? যদি ওয়াজিব না হয় তাহলে আমি সাহু সিজদা করার কারণে আমার নামায হয়েছে কি না?

উত্তর

হাঁ, ঐ অংশ ছুটে যাওয়ার কারণে আপনার জিম্মায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। তাশাহহুদের সামান্য অংশ ছুটে গেলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমি আযান দেওয়ার সময় أشهد أن لا إله إلا...

প্রশ্ন

একদিন আমি আযান দেওয়ার সময় أشهد أن لا إله إلا الله বলার আগে أشهد أن محمدا رسول الله বলে ফেলি। কিন্তু ভুল বুঝতে পেরে তা ঠিক করে পড়ে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে দোহরানোর কারণে আযান শুদ্ধ হয়েছে কি?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে أشهد أن لا إله إلا الله থেকে আবার দোহরিয়ে বলা নিয়মসম্মতই হয়েছে। এর দ্বারা ঐ আযান শুদ্ধ হয়ে গেছে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৪৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় এমন হয় যে, ইমাম সাহেব তাশাহহুদ শেষ করে...

প্রশ্ন

অনেক সময় এমন হয় যে, ইমাম সাহেব তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়িয়ে গেছেন। কিন্তু আমার এখনো শেষ হয়নি। এখন আমার করণীয় কী? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াব, নাকি তাশাহহুদ অপূর্ণ রেখেই ইমাম সাহেবের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?

উত্তর

তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুকতাদি সকলের উপর ওয়াজিব। তাই মুকতাদীর তাশাহহুদ শেষ না হলে তার কর্তব্য হল, তাশাহহুদ পূর্ণ করা। এক্ষেত্রে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেও মুকতাদি দাঁড়াবে না; বরং তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ইমাম সাহেবের পিছনে ফজরের নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকুতে...

প্রশ্ন

আমি ইমাম সাহেবের পিছনে ফজরের নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকুতে গেলে আমিও তার সাথে রুকুতে যাই। কিন্তু ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে পড়েছেন মনে করে দাঁড়িয়ে যাই। উঠে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতেই আছেন। তখন আমি আবার রুকু করে ইমামের সাথে শরিক হই। নামাযের পর এক ভাই বললেন, আপনার কর্তব্য ছিল ইমাম

সাহেব রুকু থেকে উঠা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা। দ্বিতীয়বার শরিক হওয়ার কারণে আপনার রুকু দুটি হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক?

উত্তর

না, ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য পুনরায় রুকুতে যাওয়া ঠিকই হয়েছে। কারণ ইমাম রুকু বা সিজদা থেকে উঠে পড়েছে মনে করে মুক্তাদী উঠে পড়লে তখন মুক্তাদীর জন্য ইমামের অনুসরণে পুনরায় রুকু বা সিজদায় ইমামের সাথে শরিক হওয়াই নিয়ম। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে বা বসে অপেক্ষা করতে হবে- এ কথা ঠিক নয়। আর এ পরিস্থিতিতে পুণরায় শরিক হওয়ার দ্বারা দুই রুকু হয়ে যায়- এ কথাও ঠিক নয়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অসুস্থ অবস্থায় আমি একদিন মাগরিবের পর ঘুমিয়ে পড়ি। এতে আমার...

প্রশ্ন

অসুস্থ অবস্থায় আমি একদিন মাগরিবের পর ঘুমিয়ে পড়ি। এতে আমার ইশার নামায কাযা হয়ে যায়। এখন ঐ দিনের ইশা কাযা করার সময় বিতরের নামাযও কি কাযা করা লাগবে?

উত্তর

হাঁ, বিতর নামাযেরও কাযা পড়তে হবে। কেননা বিতর নামায ওয়াজিব। আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বিতরের নামাযের কথা ভুলে যায় বা বিতর পড়া ব্যতীত ঘুমিয়ে পড়ে সে যেন স্মরণ হওয়ামাত্রই বা ঘুম থেকে উঠামাত্রই বিতর পড়ে নেয়।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১১২৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬০৮; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৮; আততাজনীস ২/৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি...

প্রশ্ন

নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?

উত্তর

পুরুষের জন্য সিজদা অবস্থায় উভয় বাহু যমীন থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। বাহু যমীনে বিছিয়ে রাখা মাকরূহে তাহরীমী। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ঠিকভাবে সিজদা কর। (সিজদায় গিয়ে) তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার উভয় বাহুকে বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮২২

তবে ওজরের কারণে এমনটি করলে নামাযের ক্ষতি হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৩; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি...

প্রশ্ন

আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি করে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলিনি। আমার তাকবীরে তাহরীমা কি আদায় হয়েছে? নাকি ঐ নামায পুণরায় পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর শেষ করে থাকেন তাহলে ঐ তাকবীরটি তাকবীরে তাহরীমা হিসেবে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে আপনার নামাযও সহীহ গণ্য হবে। আর প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে রুকুর তাকবীর না বললেও অসুবিধা নেই। কেননা রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলা জরুরি নয়।

পক্ষান্তরে আপনার তাকবীর যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয় কিংবা রুকুর নিকটবর্তী গিয়ে শেষ হয় তাহলে আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা আদায় হয়নি। আর তাকবীরে তাহরীমা ফরয। এটা ছাড়া নামায শুরুই হয় না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮০-৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১১৯; আননারুহল ফায়েক ১/১৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায়...

প্রশ্ন

ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায় সুন্নত পড়া আরম্ভ করি। একপর্যায়ে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত পাঠ করেন এবং সিজদা দিয়ে দেন। এরপর আমি ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম রাকাতের রুকুতে শরিক হই। আমার প্রশ্ন হল, আমি তো সিজদার আয়াত শুনেছি। কিন্তু ইমাম সাহেবের সাথে সিজদায় শরিক হতে পারিনি। এখন আমার করণীয় কী? আলাদাভাবে ঐ সিজদা আদায় করা কি আমার উপর ওয়াজিব?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে আলাদাভাবে ঐ সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে না। কেননা যে রাকাতে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করা হয়েছে সে রাকাতের রুকুতে শরিক হওয়ার কারণে ইমামের কেরাত এবং সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। তবে যে রাকাতে সিজদার আয়াত পাঠ করা হয়েছে এবং সিজদা দেওয়া হয়েছে ঐ রাকাতের রুকুতে যদি শরিক না হতেন তাহলে নামাযের পর আপনাকে পৃথকভাবে ঐ সিজদা আদায় করে নিতে হত।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?

প্রশ্ন

অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?

উত্তর

অন্ধ ব্যক্তি যদি সহীহ-শুদ্ধভাবে ও যথাসময়ে আযান দিতে পারে অর্থাৎ তাকে নামাযের সময় বলে দেওয়ার মতো লোকের ব্যবস্থা থাকে তাহলে এমন লোককে মুয়াযযিন বানাতে কোনো সমস্যা নেই।

হাদীস শরীফে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুইজন মুয়াযযিন ছিলেন। বেলাল রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা.। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. ছিলেন দৃষ্টিহীন।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের...

প্রশ্ন

দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যদি মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামের আগে চলে যায় তাহলে কি মুকতাদির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে?

উত্তর

মুকতাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালির আগে বেড়ে না গেলে মুকতাদির নামায ফাসেদ হবে না। অতএব দাঁড়ানো অবস্থায় পা ঠিক থাকলে মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে সিজদায় তার মাথা ইমামের আগে চলে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের নামাযের পর কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলাম। তিলাওয়াতের মাঝে সিজদার...

প্রশ্ন

ফজরের নামাযের পর কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলাম। তিলাওয়াতের মাঝে সিজদার আয়াত এলে সঙ্গে সঙ্গে সিজদা দেইনি। তিলাওয়াত শেষ করে সিজদা আদায় করি। পরে ক্যালেন্ডার দেখে জানতে পারি যে, তেলাওয়াতটি সূর্যোদয়ের আগে হলেও সিজদাটি সূর্যোদয়ের সময় আদায় হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, আমার সিজদাটি কি আদায় হয়েছে নাকি পরে আবার তা আদায় করতে হবে?

উত্তর

মাকরূহ ওয়াক্তের আগে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে মাকরূহ ওয়াক্তে সিজদা দিলে তা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত সিজদাটি আদায় হয়নি। তা পুণরায় আদায় করে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৫০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০০; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি বর্তমানে অসুস্থ। দাঁড়িয়ে রুকু সিজদা করে নামায পড়তে পারি...

প্রশ্ন

আমি বর্তমানে অসুস্থ। দাঁড়িয়ে রুকু সিজদা করে নামায পড়তে পারি না। বসে ইশারায় নামায পড়ি। সুস্থতার সময় আমার কিছু নামায কাযা হয়ে গিয়েছিল। আমি জানতে চাচ্ছি যে, ঐ নামাযগুলো এখন এ অবস্থায় কাযা করলে তা আদায় হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

জী, সুস্থ অবস্থার কাযা নামায অসুস্থ অবস্থায়ও আদায় করা যায়। তাই এখন যেভাবে সম্ভব সেভাবে আদায় করতে পারবেন। এতেই কাযা আদায় হয়ে যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৯; মারাকিল ফালাহ ২৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর...

প্রশ্ন

আমাদের ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রুকু করেন। একদিন ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করার সাথে সাথে আমি রুকুতে চলে যাই। তবে ইমামের সাথেই রুকু আদায় করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? আমার ঐ নামায আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে।

তবে ইমামের আগে রুকুতে চলে গেলেও ইমামের সাথে যেহেতু রুকু আদায় করেছেন তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

প্রকাশ থাকে যে, ইমামের আগে রুকু-সিজদা করা বা রুকু সিজদা থেকে উঠা গুনাহ। এ ব্যাপারে হাদীসে অনেক বড় ধমকি এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মাথাকে ইমামের আগে (সিজদা থেকে) উঠিয়ে নেয় তখন সে কী ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথার ন্যায় করে দিবেন! অথবা তিনি বলেছেন, তার আকৃতিকে গাধার আকৃতির ন্যায় করে দিবেন? -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯১

আবু হুরায়রা রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের আগে রুকু-সিজদা করে বা রুকু-সিজদা থেকে মাথা উঠায় তার কপাল শয়তানের হাতে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৭৫৩

অতএব এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা কর্তব্য। মুকতাদীগণ সর্বদা ইমামের তাকবীরের অনুসরণ করবে। তাহলেই এ ধরনের ভুল থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৪৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক-ওদিক চলে যায়।...

প্রশ্ন

নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক-ওদিক চলে যায়। যখন যেখানে দৃষ্টি থাকা দরকার সেখানে থাকে না। এজন্য অনেক সময় চোখ বন্ধ করে রাখি। এটা আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়। এ অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখাটাই কি আমার জন্য উত্তম? নাকি এর পরও চোখ খোলাই রাখব?

উত্তর

নামাযে চোখ খোলা রাখা এবং দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। নামাযে অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ রাখা সুন্নতের খেলাফ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় সে যেন চোখ বন্ধ না রাখে।-আলমুজামুল কাবীব, হাদীস ১০৯৫৬; ইলাউস সুনান ৫/১২১

সুতরাং চোখ খুলেই নামায পড়তে হবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

অবশ্য কারো অবস্থা যদি এমন হয় যে, নামাযে তার দৃষ্টি খুব বেশি এদিক সেদিক চলে যায় তাহলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ রাখতে পারবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সিরীন রাহ. বলেন, নামাযে যার চোখ বেশি এদিক-সেদিক চলে যায় তাকে চোখ বন্ধ রাখার অনুমতি দেওয়া হত। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩৩০

তবে ধীরে ধীরে চোখ খোলা রেখে একাগ্রতার সঙ্গে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গত রমযানে একদিন আমি বিতরের তৃতীয় রাকাতে ইমামের সাথে শরিক...

প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন আমি বিতরের তৃতীয় রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হই এবং ইমামের সাথে দুআয়ে কুনূতও পড়ি। পরে যখন বাকি নামায একাকী আদায় করি তখন তৃতীয় রাকাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে যাই। আবার দুআয়ে কুনূত পড়তে হবে কি না? পরে না পড়েই নামায সমাপ্ত করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করাতে নামায শুদ্ধ হয়েছে কি?

উত্তর

আপনার নামায নিয়মমতোই আদায় হয়েছে। ইমামের সাথে দুআ কুনূত পড়লে ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত না পড়াই নিয়ম। কেননা দুআ কুনূত দুইবার পড়ার নিয়ম নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৪২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

চেয়ারে বসে টেবিলে সেজদা করে নামায পড়ার হুকুম কী জানতে...

প্রশ্ন

চেয়ারে বসে টেবিলে সেজদা করে নামায পড়ার হুকুম কী জানতে চাই।

উত্তর

যে ব্যক্তি জমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম বা খুব কষ্ট হয় তার জন্য চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়েয। সেক্ষেত্রে সে ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করবে। রুকুর তুলনায় সিজদার জন্য কিছু বেশি ঝুঁকবে। তবে সামনে টেবিল কিংবা অন্য কোনো উঁচু বস্তু রেখে তাতে সিজদা করবে না;বরং ইশারায় সিজদা করবে। উল্লেখ্য, যে মুসল্লী যমীনে বসতে সক্ষম নয় কিন্তু দাঁড়াতে সক্ষম তাকে নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। রুকু করতে সক্ষম হলে রুকুও স্বাভাবিক নিয়মেই করবে। তারপর চেয়ারে বসে বাকি আমলগুলো আদায় করবে।

-ইলাউস সুনান ৭/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬; আননাহরুল ফাইক ১/৩৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি যে, ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর ফজরের সুন্নত...

প্রশ্ন

আমরা জানি যে, ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য নফল নামায পড়া যায় না। আমি জানতে চাচ্ছি যে, পিছনের জীবনের কাযা নামায তখন পড়া যাবে কি না?

উত্তর

জী, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত কোনো নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে এ সময়ে কাযা নামায পড়া যাবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৩; কিতাবুল আছল ১/১২৬; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৫২-৬৫৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে...

প্রশ্ন

একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে নামায কাযা করবে? আর ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রেও কাযার হিসাব জানতে চায়।

উত্তর

নামায ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ছেলেদের প্রথম স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের প্রথম মাসিকের সময় থেকে। যদি ১৫ বছর পুরো হওয়ার পরও উক্ত আলামত দেখা না যায় তবে চান্দ্র বছর হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে তাহলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী ঐ সময়টি নির্ণয় করে তখন থেকে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্তের ফরয এবং বিতর নামায কাযা করবে।

আর যদি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোনো আলামত না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে নামায কাযা করবে।

আর কাযা নামায আদায় করার সময় ফজরের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবে যে, আমি অনাদায়ী প্রথম ফজর নামায আদায় করছি। যোহরের ক্ষেত্রে নিয়ত করবে, আমি অনাদায়ী প্রথম যোহর আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রথম অনাদায়ী নামাযটি আদায়ের নিয়ত করবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৮৪-৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৪, ১৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭৬, ৬/১৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে...

প্রশ্ন

আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। কারণ নামাযের সময় স্কুলে ক্লাস হত। এখন আমি সে সময়ের নামাযগুলো কাযা করছি। কিন্তু তখন কত ওয়াক্ত নামায পড়া হয়নি তা জানা নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে। আর আমার নামাযগুলো আদায়ের পদ্ধতি এই ছিল যে, যোহরের সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের সুন্নত না পড়ে কাযা নামায পড়েছি। এছাড়া অন্য সময় কাযা আদায় করার মতো সময় আমি বের করতে পারছি না। এদিকে আমার উপর আর অনাদায়ী নামায নেই -এমনটিও বলতে পারছি না। আবার নামায বাকি আছে- এমনটিও বলতে পারছি না। তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি কি যোহরের সুন্নত বাদ দিয়ে অনাদায়ী নামায কাযা করব, নাকি আমার নামায অনাদায়ী নেই ধরে নিয়ে যোহরের সুন্নত আদায় করব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিনা ওজরে তা নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। তাই অনাদায়ী নামায আদায়ের জন্য সুন্নত ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে কাযা নামায আদায় করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায বাদ দেওয়া যাবে না।

আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যদি প্রবল ধারণা হয় যে, আপনার অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে,কোনো অনাদায়ী নামায নেই তাহলে আর কাযা আদায় করতে হবে না। এক্ষেত্রে অনাদায়ী নামায থাকার ব্যাপারে শুধু সন্দেহ ধর্তব্য হবে না।

শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কাযা নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই এবং তা উচিতও নয়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার...

প্রশ্ন

আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার সময় চুল বেঁধে রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এই বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্য, না শুধু পুরুষের জন্য? জানালে খুশি হব।

উত্তর

নামাযে চুল বেঁধে রাখা মাকরূহ- এই বিধানটি কেবল পুরুষের জন্য। মহিলাদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা নামাযে ঢেকে রাখা ফরয। তাই তারা চুল বেঁধে নামায পড়তে পারবে। যাতে চুল ঢেকে রাখা সহজ হয় এবং এর কোনো অংশ প্রকাশ না পায়। আর তারা চুল ছেড়ে দিয়েও নামায পড়তে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এমনভাবে চুল ঢেকে রাখবে যেন ছেড়ে রাখার কারণে চুলের কোনো অংশ খুলে না যায়।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৮৫৬; নাইলুল আওতার ২/৩৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইদানীং দেখা যাচ্ছে আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র মাগরিবের আযানের ৭/৮...

প্রশ্ন

ইদানীং দেখা যাচ্ছে আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র মাগরিবের আযানের ৭/৮ মিনিট আগে মসজিদে এসে দু হাত তোলে মোনাজাত করে। এর আগে কাউকে আমি এভাবে মোনাজাত করতে দেখিনি। তাদেরকে দেখে আমিও করতে শুরু করেছি। একদিন আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞাসা করল, এ সময়ে মুনাজাত করার কথা কি তুমি কোনো কিতাবে পেয়েছ, নাকি দেখে দেখে আমল করছ?

ভাবলাম, সত্যিই তো। কোনো কিতাবে তো পাইনি। তাই হুজুরের কাছে আবেদন এ ব্যাপারে দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে শায়ানে শান জাযা দান করুন। আমীন।

উত্তর

দুআ স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দুআর জন্য কুরআন-হাদীসে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা নেই। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ব্যাপকভাবেই দুআ করতে নির্দেশ করেছেন। যেমন কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,

ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ

(তরজমা) তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। -সূরা গাফির : ৬০

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ (তরজমা) যখন কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। -সূরা বাকারা (০২) : ১৮৬

বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেন, যখন

ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ

আয়াতটি নাযিল হল তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল যে, আমরা কোন সময়টাতে দুআ করব তা যদি জানতে পারতাম তখন সূরা বাকারার এই আয়াতটি

وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.

নাযিল হয়। যাতে সুস্পষ্ট বলা আছে যে, বান্দা যখনই আল্লাহ তাআলাকে ডাকে, দুআ করে তখনই তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং দুআ কবুল করে থাকেন।

তাই কোনো ব্যক্তি দিনে-রাতে যে কোনো সময় এমনকি মাগরিবের আগে বা পরে অথবা অন্য কোনো নামাযের আগে-পরে দুআ-মুনাজাত করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই এবং এ সময় দুআর জন্য ভিন্ন দলিল খোঁজ করারও প্রয়োজন নেই। কেননা দুআর ব্যাপারে উপরোক্ত ব্যাপক নির্দেশনামূলক দলিলাদি মাগরিবের পূর্বে দুআ-মুনাজাত করাকেও শামিল করে।

উপরন্তু আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়টা বিশেষভাবেও আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হওয়া,তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির ও দুআতে মশগুল থাকার সময়। একাধিক আয়াত ও হাদীসে তা বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ.

(তরজমা) আর আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে সংলিপ্ত রাখুন যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধায় তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ডাকে। -সূরা কাহফ (১৮) : ২৮

উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, অর্থাৎ যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল করে এবং তার বড়ত্ব বর্ণনা করে ও তার কাছে দুআ চায়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/১৩১

হাদীস শরীফে আছে, আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফযরের পর থেকে সূর্যোদোয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর-তাহমীদ করা আমার নিকট ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে দুই বা ততোধিক গোলাম আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (এরূপ করাটা) ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে চারজন গোলম আযাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। -আলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৮০২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২১৮৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৩২

অবশ্য এ কথা মনে রাখা দরকার যে, মুনাজাত করা উক্ত সময়ের কোনো নির্ধারিত আমল নয়। বরং যে কোনো সময়ে যেমন মুনাজাত করার সুযোগ রয়েছে তেমনি এ সময়ও তা করা যাবে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৯৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ...

প্রশ্ন

কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ ধরনের নাপাকি কী পরিমাণ লাগলে নামায সহীহ হয় না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত। নাজাসাতে গলীযা যদি কাপড়ে বা শরীরে লাগে এবং তা তরল হয় (যেমন, প্রস্রাব) তাহলে সেক্ষেত্রে তা যদি দিরহামের আয়তন (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণ)-এর কম হয় অথবা নাপাকি শক্ত হলে যেমন, গোবর তা যদি দিরহামের ওজন (বর্তমান মেট্রিক হিসাবে যা ৩.০১৬৮ গ্রাম)-এর চেয়ে কম হয় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এ পরিমাণ অল্প নাপাকিও ধুয়ে নেওয়া ভালো। তাই সাধারণ অবস্থায় এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়া অনুত্তম।

আর যদি নাপাকি দিরহামের সমপরিমাণ হয় তাহলে তা ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব। এ অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই কেউ এ অবস্থায় নামায পড়লে সে নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি নাপাকি যদি দিরহাম পরিমাণ হয় তাহলে তোমার নামায পুনরায় পড়ে নাও। আর যদি দিরহামের কম হয় (এবং তুমি নামাযে থাক) তাহলে ঐ অবস্থায়ই তোমার নামায পূর্ণ করো। -কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১৪৬

সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রাহ., হাম্মাদ রাহ., যুহরী রাহ. প্রমুখ তাবেয়ী থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৯৭৮, ৩৯৭৯, ৩৯৮৩,৩৯৮৪

আর যদি নাপাকি দিরহামের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে নাপাকি ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়লে নামায হবে না।

-ইলাউস সুনান ১/৪০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮; শরহুল মুনইয়াহ ১৭১; আননাহরুল ফায়েক ১/১৪৬; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৪৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী...

প্রশ্ন

আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আলহামদুলিল্লাহ নামাযের প্রতি পাবন্দ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এমনও আছে, যাদের কেউ তো একদমই নামায পড়ে না; বরং নামাযের সময় ক্যাম্পাসে বসে গল্প-গুজব, আড্ডা, খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে। আর তাদের কেউ নামায তো পড়ে কিন্তু জামাতে আসে না। তাদেরকে নামাযী বানানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কখনো গাশত করা হয়, কখনো হাযীরী যাচাই করা হয়।

এতে কিছুটা ফায়েদা হলেও উল্লেখযোগ্য ফায়েদা হয়নি। তাই সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কিছুদিন যাবত পরীক্ষামূলকভাবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয় যে, প্রতিষ্ঠানের মসজিদে জামাত চলাকালীন ১০/১২ জনের একটি তদারকি দল গঠন করা হয়। যারা জামাত চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ও রাস্তায় তদারকি করে। আলহামদুলিল্লাহ এ পদ্ধতিতে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তদারকী দলের লোকদের অধিকাংশ সময় মাসবুক হতে হয়। কখনো একদমই জামাত ছুটে যায়। যার কারণে কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। এখন জানার বিষয় হল, ক) প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় বিশেষ তদারকী দলের মাধ্যমে জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভিতরে মুসলিম বালেগ যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীগণের নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াতের উক্ত পদ্ধতি চালু রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?

খ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজের দায়িত্ব পালনের কারণে মাসবুক হিসেবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কি না?

গ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজে কখনও কখনও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় মূল জামাতের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তদারকী কাজে নিয়োজিত সদস্যগণের আলাদাভাবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?

ঘ) নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন মুসলিম বালেগ সদস্যদেরকে নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে নিযুক্ত সদস্যগণ এখলাসের সাথে নামাযের তদারকী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে তারা দাওয়াতী কাজের মর্যাদায় সওয়াবের অংশীদার হবেন, নাকি গুনাহগার হবেন?

উত্তর

ঈমানের পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করা কুফরীতুল্য ভয়াবহ গুনাহ। এছাড়া পুরুষের জন্য ফরয নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। তাই ছাত্রদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায়ের জন্য দাওয়াত, গাশত, হাজিরী যাচাই ও তদারকীসহ যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের আমল আখলাক ঠিক করা, শরীয়তের হুকুম আহকামের প্রতি পাবন্দ বানানো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, দায়িত্বশীলদের জরুরী কর্তব্য। বিশেষত প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায় যে সকল ছাত্র নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুমের ব্যাপারে উদাসীন বা তদারকী না করলে যাদের নামায ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে নামাযী বানানোর লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া তো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গুরুদায়িত্ব। তাই এ ধরনের ছাত্রের পেছনে আপনাদের চেষ্টা ও মেহনত অব্যাহত রাখুন।

তবে মসজিদের মূল জামাতে নামায আদায় করা যেহেতু শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, অন্যদিকে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইকামত হয়ে যাওয়ার পর জামাত চলতে থাকা অবস্থায় তদারকী করতে যাওয়া বা করতে থাকার কারণে যেহেতু তদারকী দলের জামাতে আসা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মাসবুক হতে হয়, কখনো বা পুরো জামাত ছুটে যায় তাই এসকল বিষয় থেকে দূরে থাকার জন্য তদারকী কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যে, ছাত্রদেরকে নিয়ম করে দেওয়া হবে যে ছাত্রাবাসের সকল কামরা জামাতের দশ মিনিট পূর্বে তালাবদ্ধ করে দিতে হবে এবং সকল ছাত্রকে অবশ্যই জামাতের পাঁচ মিনিট পূর্বে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে।

এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকী দল জামাতের পনেরো/ বিশ মিনিট পূর্ব থেকে কাজ শুরু করবে এবং যথাসমযে কামরা বন্ধ করে ছাত্রদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবে। এতে তদারকীর দায়িত্বও আদায় হবে এবং মসজিদের মূল জামাতে শুরু থেকেই সকলের নামায আদায় হবে।

অবশ্য উক্ত পন্থা যদি কার্যকরী না হয় এবং জামাত শুরু করার পরও তদারকী অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে তরবীয়ত ও প্রশিক্ষণমূলক এ কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে দায়িত্বশীলগণ মাসবুক হয়ে গেলে বা তাদের জামাত ছুটে গেলে এ কারণে তারা গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব শেষে তারা নিজেরা কোনো স্থানে জামাতে নামায আদায় করে নিবেন।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের ব্যাপারে যেসব ছাত্রের গাফলতি রয়েছে তাদেরকে তদারকী করে নামাযে নিয়ে আসার পাশাপাশি নামাযের হাকীকত, গুরুত্ব ও ফযীলত তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করাতে হবে। নামাযের ব্যাপারে গাফলতি ও শিথিলতা প্রদর্শন এবং নামায ছেড়ে দেয়ার গুনাহ ও ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বাণী শুনাতে হবে। যেন তারা কোন ধরনের তদারকী ছাড়া নিজ থেকেই নামাযের প্রতি যত্নবান হয়ে যায়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৯৩; ফাতহুল বারী ১৩/১১৩; শরহু মুসলিম, ননবী ১২/১১৩; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ১৭/২২৯, ১৭/২৬৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬২১; ফয়যুল কাদীর ২/৪১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব...

প্রশ্ন

আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফালাক পড়েছেন। আমি শুনেছি, এভাবে মাঝে একটি সূরা বাদ দিয়ে পড়া মাকরূহ। তাই জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি আমার ঐ দিনের নামায মাকরূহ হয়েছে?

উত্তর

ফরয নামাযে প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে ইচ্ছাকৃত মাঝে একটি ছোট সূরা রেখে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে পরবর্তী সূরা পড়া অনুত্তম। আর অনিচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হবে না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত এমনটি হলে অনুত্তম হয়নি। আর ইচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হলেও নামায আদায় হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য যে, এ হুকুম কেবল ফরযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নফল নামাযে এমন হলে কোনো অসুবিধা নেই।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়?...

প্রশ্ন

নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়? যদি ইমামের এ রকম হয়ে থাকে তবে কি তিনি মুক্তাদিরকে নিয়ে আবার নামায পড়বেন? মাসআলাটির উত্তর দ্রæত প্রদান করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

উত্তর

পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা এতে নামাযের খুশু-খুযু বিঘ্নিত হয় এবং এতমিনানের সাথে নামায আদায় হয় না। এসব চাপ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ এতমিনান ও স্থীরতার সাথে নামায আদায় করা কর্তব্য।

হাদীস ও আসারে পেশাব-পায়খানা ও বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যখন নামায দাঁড়িয়ে যায় আর তোমাদের কারো পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন প্রথমে প্রয়োজন সেরে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২

ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য হালাল নয় কারো গৃহাভ্যন্তরে অনুমতি ব্যতীত দৃষ্টিপাত করা... এবং কেউ যেন পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে নামায না পড়ে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১

নাফে রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি পেটে বায়ুর চাপ বোধ করে। তিনি বললেন, বায়ুর চাপ বোধ করা অবস্থায় সে যেন নামায না পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮০২২

উপরোক্ত হাদীস ও আসারের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ বলেছেন, পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আরম্ভ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর স্বাভাবিক অবস্থায় নামায শুরু করার পর নামাযের ভিতরে এমন চাপ সৃষ্টি হলে নামাযের পর্যাপ্ত ওয়াক্ত বাকি থাকা সত্তে¡ও এ অবস্থায় নামায চালিয়ে যাওয়া মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে ওযু-ইস্তিঞ্জা সেরে পূর্ণ চাপমুক্ত হয়ে নামায আদায় করা কর্তব্য।

হাঁ, নামাযের ওয়াক্ত যদি এত স্বল্প থাকে যে, প্রয়োজন সারতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে তাহলে সম্ভব হলে এ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে।

অবশ্য পর্যাপ্ত ওয়াক্ত থাকার পরও কোনো ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী যদি এ অবস্থায় নামায পড়ে নেয় তবে এমনটি করা মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া জরুরি নয়। তবে ভবিষ্যতে এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪১, ৬৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক...

প্রশ্ন

কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল,এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?

উত্তর

তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু’ রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি।...

প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?

উত্তর

আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।

-কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে...

প্রশ্ন

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে।

কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬২-৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা...

প্রশ্ন

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা জায়েয।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর...

প্রশ্ন

বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর উপর তলায়ও মুসল্লি দাঁড়ায়। কিন্তু উভয় তলার মাঝে কোনো ফুটো নেই। শুধু মাইকে আওয়াজ শোনা যায়। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে উপর তলার মুসল্লিদের নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

দোতলা থেকে ইমামের ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ছাদে ফুটো থাকা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মাইকে ইমামের আওয়াজ শুনে ইমামের উঠা-বসা ও অবস্থা জানা গেলেও ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামায অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলেও উপর তলার মুসল্লিগণ যথাযথভাবে যেন ইমামের ইকতিদা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া দরকার। এজন্য ইমাম বরাবর ছাদ কিছুটা ফাঁকা রাখা ভালো। আর তা না থাকলে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উচিত।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা...

প্রশ্ন

একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ঐ মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর উপরই মোটা ও ভারী কার্পেট জাতীয় জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায় করি। নামায শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে পেশাব করেছিল, তুমি তার উপরই জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়েছ! আমি জায়নামায উল্টে দেখি, জায়নামাযের উল্টো পিঠে হালকা ভিজা ভিজা আছে। আর পেশাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাযের উপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হল, ঐ জায়নামাযে আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

মোটা জায়নামাযের এক পিঠে যদি নাপাকি লাগে আর ঐ নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত জায়নামাযের উপরের অংশে যেহেতু প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ পৌঁছেনি তাই তাতে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে।

তবে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকীর প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও যেহেতু তা কোনো কোনো ফকীহের মতে নাপাক হয়ে যায় তাই এই জায়নামায পবিত্র না করে তাতে আর নামায না পড়াই শ্রেয় হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের...

প্রশ্ন

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই ঐ পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬১, ১২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা অনেক সময় মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গেলে দুজন মিলে...

প্রশ্ন

আমরা অনেক সময় মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গেলে দুজন মিলে জামাতে নামায পড়ি। এক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে একটু পিছনে সরে দাঁড়ায়। কয়েকদিন আগে এক হুজুরের সাথে নামায পড়ছিলাম। আমি তার থেকে একটু পিছনে সরে দাঁড়ালে তিনি আমাকে তার বরাবরে দাঁড় করালেন এবং বললেন যে, এটাই নাকি নিয়ম। তার এ কথা কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, উক্ত কথাটি সঠিক। দুজন জামাতে নামায পড়লে নিয়ম হল, মুক্তাদি ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। আবদুল্লাহ বিন উতবা রাহ. বলেন, আমি দ্বিপ্রহরে হযরত উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি নফল নামায পড়ছিলেন। তিনি আমাকে (নামাযের জন্য) তাঁর ডান পাশে তাঁর বরাবরে দাঁড় করালেন। Ñ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮; আলআওসাত, হাদীস ১৯৫৫

ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, দুজন জামাতে নামায পড়লে মুক্তাদি কোথায় দাঁড়াবে? উত্তরে তিনি বললেন, মুক্তাদিও ইমামের ডান পাশে এভাবে দাঁড়াবে। আমি বললাম, সে কি ইমামের সাথে একেবারে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন ইমামের আগে-পিছে না হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস ৩৮৭০

এ সম্পর্কিত বর্ণনার ভিত্তিতে ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, মুক্তাদী একজন হলে ইমামের ডান পাশে ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। তবে কোনো মুক্তাদীর যদি ইমামের বরাবর দাঁড়ালে আগে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়াতে পারে। যাতে ইমামের আগে বেড়ে যাওয়ার কারণে তার নামায ফাসেদ না হয়ে যায়।

Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮, ৩৮৭০; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০১; ইলাউস সুনান ৪/২৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৪১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে...

প্রশ্ন

ক) ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি না?

খ) আমার এক প্রতিবেশী হেফযখানায় পড়ে দীর্ঘ ৩ বছর যাবত। সে বলে, আমার তিন বছরের জীবনে কোনোদিন তেলাওয়াতে সিজদা আদায় করিনি। মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির করণীয় কী? যদি সিজদা আদায় করতে হয় তাহলে কীভাবে আদায় করবে?

উত্তর

ক) না, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এমনকি সূরা মিলালেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা সুন্নতের খেলাফ। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৭৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৩৫

খ) ছেলেটি বালেগ হওয়ার পর থেকে যতগুলো তিলাওয়াতে সিজদা ছুটেছে সেগুলো আদায় করে নিতে হবে। আর নাবালেগ অবস্থায় যেগুলো ছুটেছে সেগুলো আদায় করা জরুরি নয়। সুতরাং গত তিন বছরের মধ্যে ছেলেটি বালেগ হয়ে থাকলে বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া তিলাওয়াতে সিজদাগুলো অনুমান করে আদায় করে নিবে।

উল্লেখ্য, সিজদায়ে তিলাওয়াত একটি ওয়াজিব আমল। তা তিলাওয়াতের সাথে সাথে আদায় করে নেওয়া উচিত। বিনা ওজরে তা বিলম্ব করবে না। Ñহাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং...

প্রশ্ন

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।

ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং বয়ানের জন্য আরেকটি মিম্বর এভাবে দুটি মিম্বর স্থায়ীভাবে স্থাপন করার শরয়ী হুকুম কী? এটা সুন্নাহসম্মত কি না? আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির পরামর্শে বড় একটি মসজিদে এভাবে দুটি মিম্বর স্থাপন করা হয়েছে। যদি দুটি মিম্বর বানানো ঠিক না হয় তাহলে সাধারণ সময়ের বয়ানের জন্য চেয়ার ব্যবহার করার হুকুম কী?

খ) মসজিদে খুতবার মিম্বর তিন সিঁড়ির চেয়ে বেশি করার কী হুকুম?

গ) জুমআর দিন খুতবার পূর্বে যে বয়ান হয় তার ক্ষেত্রে

إذا دخل أحدكم والإمام على المنبر فلا صلاة ولا كلام .

হাদীসটি প্রযোজ্য হবে কি না? জনৈক আলেম বলেছেন প্রযোজ্য হবে।

উত্তর

ক) এক মসজিদে একাধিক মিম্বর স্থাপন করা ঠিক নয়; বরং এক মসজিদে একটি মিম্বার হওয়াই নিয়মসম্মত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি মিম্বারই স্থাপন করেছেন। উক্ত মিম্বারে তিনি জুমার খুতবা দিতেন এবং লোকদেরকে অন্যান্য সময়ে দ্বীনী তালীম, ওয়ায নসীহত করতেন। খুতবার জন্য পৃথক মিম্বার এবং বয়ানের জন্য ভিন্ন মিম্বার স্থাপন করেননি।

অতএব আপনাদের মসজিদে খুতবার মিম্বার ব্যতিত অন্য মিম্বার স্থাপন করা ঠিক হয়নি।

আর স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত মিম্বার বানানো সহীহ না হলেও ওয়াজ-নসীহতের জন্য স্থানান্তরযোগ্য চেয়ার মসজিদে নেয়া যাবে এবং তাতে বসে ওয়ায নসীহত ইত্যাদি করা যাবে। কেননা মসজিদের ভেতর চেয়ারে বসে আলোচনা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৬

উত্তর : খ) মসজিদের মিম্বার তিন তাক বিশিষ্ট হওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি তিন তাক বিশিষ্ট ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি ছোট আকারের ছিল এবং তা তিন তাক বিশিষ্ট ছিল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪১৯)

সুতরাং মসজিদের মিম্বার তিন তাকের বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

উত্তর : গ) প্রশ্নোক্ত হাদীসটি (অর্থ: তোমাদের কেউ যখন এমন সময় মসজিদে আগমন করে যখন ইমাম মিম্বারে আছে তাহলে সে যেন ঐ সময় কোন নামায না পড়ে এবং কথাবার্তা না বলে) জুমার খুতবার সাথে সম্পৃক্ত। খুতবার পূর্বের ওয়ায নসীহত ও আলোচনার সাথে এটি সম্পর্কযুক্ত নয়। উক্ত নিষেধাজ্ঞা যে জুমআর খুতবার সাথে সম্পৃক্ত তা এ সম্পর্কিত অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের খুতবা প্রদান অবস্থায় পাশের ব্যক্তিকে বলল “চুপ থাক ”সে একটি অনর্থক কাজ করল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪

এছাড়া মুআত্তা ইমাম মালেক-এ সা‘লাবা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মিম্বারে বসার পরও কথাবার্তা বলতাম। অতপর যখন খুতবার জন্য আযান হত এবং উমর রা. খুতবা আরম্ভ করতেন তখন আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। -মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৩৪৩

তাই খুতবার সময়ের উক্ত বিশেষ নিষেধাজ্ঞাকে খুতবার পূর্বের বয়ানের জন্য প্রয়োগ করা ঠিক নয়। তবে যে কোনো দ্বীনী আলোচনা চলাকালে উপস্থিত শ্রোতাদের জন্য তা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং আলোচক ও শ্রোতাদের বলা-শোনায় ব্যঘাত হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা যে জরুরী তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দ্বীনী আলোচনা চলাকালীন কেউ নামায পড়লে বা ব্যক্তিগত ইবাদত করতে চাইলে মজলিস থেকে দূরে করবে। যেন মজমার আলোচনার ব্যঘাত না ঘটে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে...

প্রশ্ন

আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে আস্তে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হয়।

আমার প্রশ্ন হল, আস্তের স্থানে কতটুকু জোরে আওয়াজে পড়লে বা জোরের স্থানে কতটুকু আস্তে আওয়াজে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী উভয়ের মাসআলাই কি এক? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিহŸা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী (নি¤œস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে, পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

উল্লেখ্য, এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। আর সিররী নামাযে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একাকী নামায আদায়কারীর জন্যও আস্তে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত জোরে পড়লে সেক্ষেত্রে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।

Ñরদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায়...

প্রশ্ন

একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায় আমাকে ইমামতি করতে দেওয়া হয়। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে কোনো আলেম বা হাফেয না থাকায় বাধ্য হয়ে আমি ইমামতি করতে যাই। কুরআন মাজীদের শেষের কয়েকটি সূরা ছাড়া অন্য বড় কোনো সূরা আমার মুখস্থ নেই। আর আমি জানতাম, ফজর নামাযে কেরাত একটু লম্বা পড়া সুন্নত। তাই আমার মুখস্থ সূরাগুলো থেকে এক রাকাতে আমি ধারাবাহিকভাবে চার-পাঁচটি করে সূরা তিলাওয়াত করি। নামায শেষে কয়েকজন মুসল্লি এ নিয়ে আপত্তি করেন। তারা বলেন, এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে কাউকে তো দেখিনি। তুমি এটি ঠিক করনি।

আমি জানতে চাই, ফরয নামাযে এভাবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়ার হুকুম কী? এ কারণে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হয়েছে?

উত্তর

ফরয নামাযে এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা না পড়াই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক সূরার পর রুকু এবং সিজদা করে তার হক আদায় কর। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৩০

তবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়াও জায়েয আছে। কোনো কোনো সাহাবী এবং তাবেয়ী থেকে ফরয নামাযেও এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা পড়ার কথা বর্ণিত আছে, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ফরয নামাযের এক রাকাতে একত্রে দুটি সূরা পড়তেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৪

আতা রাহ. বলেন, ফরয নামাযে এক রাকাতে দুটি সূরা বা দুই রাকাতে একটি সূরা পড়লে অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৫

উল্লেখ্য, এখানে মূল বিষয় হল, মাসনূন কিরাতের প্রতি লক্ষ্য রাখা। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেহেতু উযরের কারণে এমন হয়েছে তাই তাকে অনুত্তমও বলা যায় না।

Ñফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফতহুল বারী ২/৩০৪; ইলাউস সুনান ৪/১৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে...

প্রশ্ন

ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।

Ñআল মুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে...

প্রশ্ন

নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে পড়ি অর্থাৎ সূরা কাফিরূন আগে এবং সূরা কুরাইশ পরে পড়ি তাহলে নামায হবে কি?

উত্তর

নামাযের মধ্যে সূরার তারতীব রক্ষা করে পড়া মুস্তাহাব। ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামায হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে নামায মাকরূহ হবে না। সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনইয়া ৪৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে...

প্রশ্ন

ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে মনে করলেই হবে?

খ) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী?

গ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?

উত্তর

ক) কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের দৃঢ় ইচ্ছাকেই নিয়ত বলে।

সুতরাং নামায-রোযা এবং অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে সাথে মুখেও উচ্চারণ করে বলতে নিষেধ নেই। কেউ যদি ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নেয় তবে তা দোষণীয় হবে না। -উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫

খ) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছে, দুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-

১. কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। -সূরা ইউনুস : ৮৯

এ আয়াতে তোমাদের দুইজনের দুআ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫; আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১

তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যে, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।

২. একটি দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -মুজামে কাবীর তবারানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৯

সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো জানতে মাসিক আলকাউসার, শাবান-রমযান ১৪২৯; আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত ‘সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’’ প্রবন্ধটি পাঠ করুন।

গ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো মহলে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়; বরং হাদীস শরীফে নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম-মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময়...

প্রশ্ন

কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায় ইমাম-মুসল্লিগণ ইকামত শুরু হওয়ার সময় বসে থাকে। মুআযযিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলে তখন দাঁড়ায়। তারা বলে ইকামতের সময় এরূপ করা সকলের জন্য মুস্তাহাব। অতএব আমার জানার বিষয় হল, এ কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত আমলটি সহীহ নয়। একাধিক হাদীসে ইকামতের শুরুতেই ইমাম-মুক্তাদী সকলে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং কাতার সোজা করার কথা বর্ণিত আছে। তবে ইমাম নামাযের জন্য না দাঁড়ানো পর্যন্ত মুসল্লিগণ দাঁড়াবে না। ইমামের আগেই মুসল্লিদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা মাকরূহ।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার আগে বেলাল রা. ইকামত বলতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আসতে দেখতেন তখন তিনি ইকামত বলা শুরু করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৬

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযের জন্য আসতে দেখা গেলে ইকামত শুরু করে দেওয়া হত। আর সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৫

অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৪২

সুতরাং ইমাম মেহরাবের কাছে উপস্থিত থাকুক বা মেহরাবের দিকে আসতে থাকুক উভয় অবস্থায় ইকামতের শুরুতে মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ কাতার সোজা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। বহু হাদীসে এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

নুমান বিন বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলো এভাবে সোজা করতেন যেন তিনি এই কাতার দিয়ে তীর সোজা করবেন। এভাবে এক সময় তিনি নিশ্চিত হলেন যে, আমরা কাতার সোজা করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিয়েছি। এরপর একদিন তিনি নামায পড়ানোর জন্য আসলেন এবং নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করবেন এমন সময় লক্ষ্য করলেন এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে কিছুটা সামনের দিকে বেড়ে আছে। তিনি তখন বললেন, আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬

হযরত উমর রা. কয়েকজন মানুষকে শুধু এজন্যই নির্ধারিত রেখেছিলেন যে, তারা মুসল্লিদের কাতার সোজা করবেন। তারা যখন এসে জানাতেন যে, কাতার সোজা হয়েছে তখন উমর রা. নামায শুরু করতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২৪৩৭-২৪৩৯

হযরত উসমান রা.-এর নিয়মও এমনই ছিল। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন একাকী মাগরিবের নামায আদায় করছিলাম। শেষ রাকাতে একটু...

প্রশ্ন

আমি একদিন একাকী মাগরিবের নামায আদায় করছিলাম। শেষ রাকাতে একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়ি। তখন প্রথম সিজদা থেকে উঠার পর দ্বিতীয় সিজদা আদায় করেছি ভেবে তাশাহহুদ পড়তে থাকি। কিন্তু তাশাহহুদ শেষে আমার প্রবল ধারণা হয় যে, আমি দ্বিতীয় সিজদা করিনি। তাই তখন দ্বিতীয় সিজদা করে পুনরায় তাশাহহুদ পড়ি। এরপর সাহু সিজদাও আদায় করি।

আমার জানার বিষয় হল, এভাবে দ্বিতীয়বার তাশাহহুদ পড়া এবং সাহু সিজদা করা কি ঠিক হয়েছে? আর আমার নামায কি আদায় হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সিজদা না দিয়েই যেহেতু আপনি তাশাহহুদ পড়েছিলেন তাই দ্বিতীয় সিজদা আদায়ের পর পুনরায় তাশাহহুদ আদায় করা সঠিক হয়েছে। আর দ্বিতীয় সিজদা আদায়ে যেহেতু বিলম্ব হয়েছে তাই সাহু সিজদা আদায় করা জরুরি ছিল। অতএব সাহু সিজদার সাথে উক্ত নামায শেষ করাও সঠিক হয়েছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১২০; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৩; আসসিআয়াহ ২/১৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যদি কেউ নামাযে নিশ্চিতভাবে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও ভুল হয়েছে...

প্রশ্ন

যদি কেউ নামাযে নিশ্চিতভাবে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও ভুল হয়েছে ভেবে সাজদায়ে সাহু করে তাহলে তার নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

নামাযে ভুল হওয়ার সন্দেহ প্রবল হলেই কেবল সাহু সিজদা করার নিয়ম রয়েছে। নিছক সন্দেহের উপর সাহু সিজদা করা ঠিক নয়। অবশ্য ভুলের ধারণা প্রবল না হওয়া সত্ত্বেও কেউ সাহু সিজদা করলে তার নামায আদায় হয়ে যাবে, তবে মাকরূহ হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯; ইমদাদুল মুফতীন ৩১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন আগে এক অপরিচিত জায়গায় আমরা কয়েকজন যোহরের ওয়াক্তে খোলা...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে এক অপরিচিত জায়গায় আমরা কয়েকজন যোহরের ওয়াক্তে খোলা ময়দানে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করি। নামায শেষ হলে স্থানীয় একজন বললেন, আমাদের কিবলার দিক ভুল ছিল। পরবর্তীতে পুনরায় নামায আদায় করতে চাইলে কেউ কেউ বলেছেন, নামায হয়ে গেছে। তাই আর পড়া হয়নি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় আমাদের নামায কি আসলেই সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উল্লেখ্য যে, কিবলার দিক নিয়ে আমরা কেউ সন্দিহান ছিলাম না। তাই যাচাই করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যাচাই করা হয়নি।

উত্তর

নামাযে কিবলামুখী হওয়া ফরয। আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেদিকে নামায পড়া হয়েছে সেটা যেহেতু কেবলার দিক ছিল না তাই আদায়কৃত নামায হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে। যারা নামায হয়ে গেছে বলেছে তাদের কথা সহীহ নয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে মাগরিব নামাযের আযান ও ইকামতের...

প্রশ্ন

ক) কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে মাগরিব নামাযের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে মসজিদের অস্থায়ী ইমাম মাইকে বয়ান আরম্ভ করেন। যা ইতিপূর্বে করা হয়নি। তাই জানতে চাই, এই সময় বয়ান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে কি?

খ) উক্ত সময় ইমাম সাহেবের বয়ানের বিষয়ে চার মাযহাবের বিধান কী? মাগরিবের নামাযে কোনো কোনো মাযহাবে আযানের পর ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায পড়ার বিধান আছে। তাই কেউ নামায পড়বে কেউ ইমামের বয়ান শুনবে। এক্ষেত্রে ইমাম সকল মাযহাবের মুসল্লি নিয়ে নামায কীভাবে পড়বেন?

উত্তর

ক) ওয়ায-নসীহত, দ্বীনী বয়ান ও মাসআলা-মাসাইলের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসল্লিগণকে দ্বীনী কথাবার্তা ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাইলের তালিম দেওয়া একজন ইমামের মৌলিক দায়িত্ব। তবে ওয়ায-নসীহত, বয়ান ইত্যাদির জন্য মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়টি উপযুক্ত সময় নয়। কেননা মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে স্বল্প বিরতি থাকে। যা নামাযের প্রস্তুতির জন্যই প্রয়োজন। এছাড়া এত অল্প সময়ে বয়ানে বা মাসআলার উপস্থাপনায় মুসল্লিদের কাছে অনেক বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত আযান-ইকামতের মধ্যবর্তী এ সময়টি হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী দুআ কবুলের সময়। তাই এ সময় ওয়ায করা বা মাসআলা বলার জন্য উত্তম সময় নয়। অবশ্য ইমাম চাইলে কোনো দিন প্রয়োজনে এ সময়ও কোনো বিষয় বা মাসআলা আলোচনা করতে পারেন। কেননা এ সময় অল্পস্বল্প কিছু বলা তো নিষিদ্ধ নয়। তাই কোনো দিন এ সময় আলোচনা করতে চাইলে জামাতের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আলোচনা শেষ করে দেওয়া উচিত হবে। আর সংক্ষিপ্ত এ সময়ে দুর্বোধ্য ও জটিল কোনো মাসআলা বা বিষয়ের আলোচনা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। জটিল কোনো বিষয়ের আলোচনা করা জরুরি হলে তা ভিন্ন কোনো সময়ে করবে।

খ) মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে তা জায়েয আছে। খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না।

যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১২৭৮

মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসারী সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ৩৯৮৪

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর,উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৯৮৫

হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩

সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেই; অন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু’ রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।

আর শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী এ সময় দু’ রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। আর অপর মত অনুযায়ী তা জায়েয। যারা মুস্তাহাব বলেন তারা এ সংক্রান্ত একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদীসটি হল-

بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء

(অর্থ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়।’-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৭

তবে ভিন্নমতের লোকজন বলেন যে,এটি শুধু জায়েয হওয়ার দলিল,মুস্তাহাব হওয়ার নয়।

এখন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের দেশের মুসল্লিগণ ব্যাপকভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারী আর সে অনুযায়ী মাগরিবের আযানের পর ফরযের পূর্বে যেহেতু নফল নামায পড়ার বিশেষ কোনো বিধানও নেই তাই ইমাম যদি একান্ত প্রয়োজনে মাগরিবের ফরযের পূর্বে কোনো আলোচনা করেন তবে তার এ আলোচনা এ সময়ের নামাযের প্রতিবন্ধক হবে না। অবশ্য কোনো মুসল্লি যদি এ সময় নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যায় তবে তার নামাযে যেন ব্যাঘাত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকলের কর্তব্য। অন্যদিকে ইমাম এ সময় কোনো আলোচনা শুরু করে দিলে তখন কারো জন্য নফলে দাঁড়ানোও উচিত নয়। -ফতহুল কাদীর ১/৩৮৮-৩৮৯; আদদুররুল মুখতার ২/১৪; মাওয়াহিবুল জালীল ২/৩৭০; আলমুগনী ২/৫৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার জামে মসজিদে আযানের পর নামাযের আনুমানিক ৫ মিনিট...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার জামে মসজিদে আযানের পর নামাযের আনুমানিক ৫ মিনিট পূর্বে মুয়াযযিন সাহেব মাইকে

سووا صفوفكم، فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة .

এবং নামাযের ৫ মিনিট বাকি আছে বলে মুসল্লিদেরকে আহ্বান করে।

জানার বিষয় হল, জামাতের পূর্বে এরূপ বলে ডাকা যাবে কি না? সহীহ হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আযানের পর পুনরায় ঐভাবে ডাকাডাকি করা ঠিক নয়। তাছাড়া যে হাদীসটি বলে ডাকাডাকি করা হয় তা এই সময় বলাও প্রযোজ্য নয়। কেননা হাদীসটির অর্থ হল, তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা নামায কায়েম করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথা জামাত শুরু করার ঠিক আগ মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন যেন সকলে কাতার সোজা করে নেয়।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করার জন্য ঐ কথা নামাযের ইকামত হয়ে যাওয়ার পর বলতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৬

এছাড়া সাহাবায়ে কেরামও কাতার সোজা করার কথা বলতেন ইকামত হয়ে যাওয়ার পর। নাফে রাহ. বলেন, উমর রা. এক ব্যক্তিকে কাতার সোজা করার জন্য পাঠাতেন। ঐ ব্যক্তি উমর রা.-এর নিকট যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সোজা হওয়ার সংবাদ না দিতেন উমর রা. ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৩৭

মালেক ইবনে আবু আমের রাহ. বলেন, যখন নামাযের ইকামত হত উসমান রা. লোকদেরকে বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করে নাও, কাঁধে কাঁধ মিলাও। কেননা কাতার সোজা করা নামাযের পূর্ণতার অংশ। এরপর তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীরে তাহরীমা বলতেন না যতক্ষণ না লোকেরা সংবাদ দিত যে, কাতার সোজা হয়েছে। তখন তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৪২

সুতরাং কাতার সোজা করার কথা তো বলা হবে জামাতের সময় হওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যেই। এ কথা বাইরের লোকদেরকে ডাকাডাকির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অনর্থক।

আর আযানের পর পুনরায় ডাকাডাকির প্রচলন গড়লে এতে আযানের গুরুত্ব কমে যাবে। সেক্ষেত্রে অনেক মানুষ আযানকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকবে।

আযানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, লোকদেরকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করা এবং জামাতের সময় অতি নিকটে তা জানানো। যেন আযান শুনে লোকজন কর্মব্যস্ততা ছেড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে হাজির হয়ে যায়।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময়...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় গেঞ্জিতে মশার রক্ত দেখা যায়। এমন হলে আমি সাধারণত গেঞ্জি পরিবর্তন করে নামায পড়তে যাই। কয়েকদিন আগেও মশার রক্তের কারণে গেঞ্জি পরিবর্তন করার সময় এক সাথী আমাকে বলল যে, মশার রক্ত নাকি নাপাক নয়। তার এ কথা কি সঠিক?

উত্তর

হাঁ, আপনার সাথী ঠিকই বলেছে। মশার রক্ত নাপাক নয়। তাই ঐ কাপড় পরে নামায পড়া যাবে।

হাসান বসরী, আতা, আবু জাফর, উরওয়া প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকে বর্ণিত আছে যে, কাপড়ে মাছি-মশার রক্ত লাগলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে গেঞ্জি পরিবর্তন করে নেওয়া বা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যে ভালো তা তো স্পষ্ট।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৩১, ২০৩২, ২০৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার...

প্রশ্ন

আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা।

হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। ... (সহীহ বুখারী, হাদীস ১)

সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন, হাদীসে নিয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,কোনো কাজের ব্যাপারে মনের দৃঢ় ইচ্ছা। (উমদাতুল কারী ১/২৩)

তাই নামাযের নিয়তও মনে মনে করাই যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেননা শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা এটি নিষিদ্ধ নয়। তাই কেউ করলে তা নাজায়েয বা বেদআত হবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৭-৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৫৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জুমার দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া ও দুআ পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের...

প্রশ্ন

জুমার দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া ও দুআ পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেওয়া জায়েয।

আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাহ. বলেন, আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে মিম্বরের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আযানে আল্লাহু আকবার বললেন তখন তিনিও আল্লাহু আকবার বলেছেন ...। এরপর আযান শেষ হলে তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিসে অর্থাৎ যখন মুয়াযযিন আযান দেন- এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি আপনারা আমাকে বলতে শুনলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪

অন্য বর্ণনায় সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৩৪২

আর খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আযানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আযানের দুআ পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আযানের দুআও পড়া যাবে।

-ফাতহুল বারী ২/৪৬০; ইলাউস সুনান ২/৮০; আসসিআয়াহ ২/৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮২; আততাজরীদ ২/৪৭৭; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে না। শুধু চেয়ার বা এ জাতীয় উঁচু স্থানে বসতে পারে। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। জানার বিষয় হল, এমন ব্যক্তি কীভাবে নামায আদায় করবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মাটিতে বসতে না পারলেও যেহেতু সে দাঁড়াতে সক্ষম তাই সে দাঁড়িয়েই নামায শুরু করবে। এরপর সম্ভব হলে দাঁড়ানো থেকেই রুকুতে যাবে। আর সিজদার সময় চেয়ার বা এ জাতীয় কিছুতে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করবে।

উল্লেখ্য যে, দাঁড়ানো থেকে রুকু করা অধিক কষ্টকর হলে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রুকুর তুলনায় সিজদায় মাথা কিছুটা বেশি ঝুঁকাতে হবে। অবশ্য বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে দাঁড়ানো থেকে সোজা চেয়ারে বসা যদি অসম্ভব বা অধিক কষ্টকর হয় তাহলে তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়ার সুযোগ আছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন কোনো এক মসজিদে জুমার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব যখন...

প্রশ্ন

একদিন কোনো এক মসজিদে জুমার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব যখন খুতবা পড়ছিলেন তখন এক লোক পেছনের কাতার থেকে মানুষদেরকে ডিঙিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকে। ইমাম সাহেব তা দেখে খুতবা পড়া বন্ধ করে তাকে সামনের দিকে আসতে বারণ করেন এবং যেখানে আছে সেখানেই থেমে যেতে বলেন।

আমি জানি, খুতবার মাঝে কোনো কথা বলা নিষেধ। তাই আমার প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেবের উক্ত কাজটি ঠিক হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খতীব সাহেবের জন্য ঐ ব্যক্তিকে নিষেধ করা অন্যায় হয়নি; বরং তা শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ থেকে খুতবা প্রদানকালে প্রয়োজনে সৎ কাজের আদেশমূলক কোনো কথা বলা বা অন্যায় কাজ দেখলে খুতবার মাঝেই নিষেধ করা প্রমাণিত আছে।

অবশ্য খতীব ছাড়া কোনো মুসল্লির জন্য খুতবা অবস্থায় এ ধরনের কথা বলাও নিষেধ।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১১১; নাইলুল আওতার ৩/২৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি।...

প্রশ্ন

আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি। বর্তমানে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করি না। কোনো কারণবশত অনিচ্ছাকৃত কখনো কোনো ওয়াক্ত কাযা হয়ে গেলে পরবর্তী ওয়াক্তেই তা আদায় করে নেই। একদিন সকালে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে না পারায় ফজরের নামায পড়তে পারিনি। যোহরের নামাযের সময় হলে মসজিদে যাই। মসজিদে পৌঁছে দেখি, যোহরের জামাতের কয়েক রাকাত হয়ে গেছে। তখন ফজরের কাযা নামাযের কথা স্মরণ হয়। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার কী করণীয়। এক্ষেত্রে যদি আগে ফজরের নামায পড়ি তাহলে যোহরের জামাত শেষ হয়ে যাবে। তাই আগে ফজরের কাযা পড়ব, নাকি তখন যোহরের জামাতে শরিক হয়ে যাব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

আপনার যেহেতু পেছনের নামায কাযা নেই তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজর পড়ার কারণে যদি যোহরের জামাত নাও পান তবুও আপনাকে আগে ফজরের কাযা নামায আদায় করতে হবে। এরপর যোহরের জামাত পেলে জামাতে শরিক হবেন। যদি জামাত না পান তাহলে যোহরের নামায একাকী পড়ে নিবেন।

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২/৫-৭; কিতাবুল আসল ১/৩০৪; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫০৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইশার নামাযে ইমাম সাহেব সূরা তীন তিলাওয়াতের সময়لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ...

প্রশ্ন

ইশার নামাযে ইমাম সাহেব সূরা তীন তিলাওয়াতের সময়

لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ এরপর إِلَّا الَّذِينَ পড়া আরম্ভ করলেন। এতে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

উক্ত আয়াত ভুলে ছুট যাওয়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ এতে অর্থের বিকৃতি ঘটেনি। সুতরাং নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বোন একদিন চাশতের নামায পড়ছিল। আমি তা খেয়াল না...

প্রশ্ন

আমার বোন একদিন চাশতের নামায পড়ছিল। আমি তা খেয়াল না করেই ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার জামাটা কোথায়? পরে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে নামায পড়ছে। কিন্তু নামাযের ভিতরেই সে হাতের ইশারায় আমাকে বুঝাল, জামা ওয়্যারড্রবে আছে। তাই জানার বিষয় হল, এ কারণে কি তার নামায ভেঙ্গে গিয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হাত দ্বারা ইশারা করার কারণে আপনার বোনের নামায ভাঙ্গেনি। তবে কাজটি মাকরূহ হয়েছে। নামাযের মধ্যে হাত দ্বারা ইশারা করা মাকরূহ। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৫৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৮-৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

প্রশ্ন : আমি প্রতিদিন বাদ আসর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করি।...

প্রশ্ন

প্রশ্ন : আমি প্রতিদিন বাদ আসর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করি। জানার বিষয় হল, এ সময়ে সিজদার কোনো আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে কি? শুনেছি, আসরের পর কোনো নফল নামায পড়া নিষেধ তাহলে সিজদা করাও কি নিষিদ্ধ হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, আসরের পর সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে এবং সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিলাওয়াতে সিজদাও আদায় করা যাবে। কিন্তু সূর্য হলুদ হয়ে গেলে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিজদা তিলাওয়াত আদায় করা যাবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মহল্লার মসজিদ ভেঙ্গে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রথম...

প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদ ভেঙ্গে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রথম তলা ও দ্বিতীয় তলার ছাদে ফাঁকা রাখতে হবে কি না-এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মাঝে মতানৈক্য হয়েছে। কেউ বলছে, ফাঁকা রাখতে হবে, কেউ বলছে, রাখতে হবে না। এ বিষয়ে শরীয়তের বিস্তারিত হুকুম জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

একাধিক তলাবিশিষ্ট মসজিদ হলে প্রত্যেক তলায় ইমামের আওয়াজ ভালোভাবে পৌঁছার ব্যবস্থা করা জরুরি। যেন সকল তলা থেকে মুসল্লিগণ নির্বিঘ্নে ইমামের অবস্থা জানতে পারে এবং যথাযথভাবে ইমামের অনুসরণ করতে পারে। বর্তমানে মাইক বা লাউড স্পিকার দ্বারা এ প্রয়োজন অনেকটা পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু কখনো বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা মাইকে কোনো সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে অন্যান্য তলার মুসল্লিগণ ইমামের অবস্থা জানতে পারবে না। ফলে তাদের নামায নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এমন সময়ও যেন ইমামের অবস্থা উপর থেকে ভালোভাবে জানা যায় এজন্য ইমাম বরাবর প্রত্যেক তলার ছাদে কিছু অংশ ফাঁকা রাখা ভাল।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরের নামাযের ১ম রাকাতে উচ্চস্বরে...

প্রশ্ন

একদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরের নামাযের ১ম রাকাতে উচ্চস্বরে সূরা ফাতেহার ১ম আয়াত তেলাওয়াত করেন। তারপর নিম্নস্বরেই অবশিষ্ট কেরাত পাঠ করেন। সর্বশেষে তিনি সাহু সিজদা না দিয়েই নামায শেষ করেন। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি তারা পরস্পরে ঝগড়া বিবাদেও লিপ্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত। মেহেরবানী করে সমাধান জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। ইমাম সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। কেননা নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট নামাযে সূরা ফাতিহার এক-দুই আয়াত উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনী বিষয়ে সংশয় বা মতানৈক্য দেখা দিলে বিজ্ঞ আলেম বা মুফতীর শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১; রদ্দুল মুহতার ২/৮২; ইলাউস সুনান ৭/১৯১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর...

প্রশ্ন

চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর কখনো কখনো আমি ভুলে সূরা মিলিয়ে ফেলি। একারণে নামাযের কোনো অসুবিধা হবে কি? আর এক্ষেত্রে সূরা মিলানোর কারণে কি সাহু সিজদা দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

না, এক্ষেত্রে ভুলে সূরা মিলিয়ে ফেললে সাহু সিজদা দিতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করবেন না। কারণ, ফরযের শেষ দুই রাকাতে সূরা মিলানো সুন্নাহ পরিপন্থি।

-রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯; আলজাওহারাতুন নাইয়েরাহ ১/৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি এশার দুরাকাত সুন্নতের পর সাধারণত দু’চার রাকাত নফল পড়ে...

প্রশ্ন

আমি এশার দুরাকাত সুন্নতের পর সাধারণত দু’চার রাকাত নফল পড়ে তারপর বিতর পড়ি। মাঝে মাঝে আবার সুন্নতের পরই বিতর পড়ে ফেলি। তো কখনো এমন হয় যে, সুন্নত পড়ে আবার নামাযে দাঁড়িয়েছি কিন্তু নফল পড়ব না বিতর পড়ব কোনোটাই মনে স্থির করিনি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? আমি কি নফল বা বিতর যে কোনো একটি স্থির করে সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করতে পারব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার আগে যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে বিতরের নিয়ত করা হয়নি তাই তা নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর বিতরের নিয়ত করলেও তা ধর্তব্য হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮২; রদ্দুল মুহতার ১/৪১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা...

প্রশ্ন

তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?

উত্তর

তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। তাই তাশরীকের দিনগুলোর কাযা নামায এই সময়ের পরে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। তবে এ সময়ের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ দিনগুলোতেই কাযা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাশরীকের দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের...

প্রশ্ন

অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের জামাতের সময় হয়ে গেছে বা জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়া হয় না। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে কি ঐ সুন্নত পড়ে নেওয়া যাবে? পড়া গেলে যোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব নাকি পরে?

উত্তর

জ্বী। যোহরের পূর্বের সুন্নত ছুটে গেলে তা ফরয-পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করে নিবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত (কখনো) ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের (ফরয) পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন।

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯; মাআরিফুস সুনান ৪/১০৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, না তা আবার পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। বাড়ি উত্তরবঙ্গের নাটোরে। গ্রামের বাড়ি যেতে...

প্রশ্ন

আমি ঢাকার উত্তরায় থাকি। বাড়ি উত্তরবঙ্গের নাটোরে। গ্রামের বাড়ি যেতে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে বাসে উঠি। উত্তরা থেকে গাবতলী বেশ লম্বা পথ। মাঝপথে অনেক সময় নামায পড়তে হয়। বিপাকে পড়ে যাই নামায কীভাবে পড়ব। তাই জানার বিষয় হল, উত্তরা থেকে গাবতলী আসার পথে যেসব নামায পড়ব তা কি কসর পড়ব? সঠিক উত্তরটি জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও ঢাকা সিটির ভিতরে আপনাকে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে। গাবতলীর দিকে আমিনবাজার ব্রীজ বর্তমান ঢাকা সিটির শেষ সীমানা। তাই আমিনবাজার ব্রীজ অতিক্রম করার পর থেকে কসর শুরু করবেন।

-কিতাবুল আছল ১/২৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-ক)...

প্রশ্ন

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-

ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে।

খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে।

গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে।

ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না।

ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ)

এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে।

তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭

অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১

আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে গরুর গোশত কিনি। আসার সময়...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে গরুর গোশত কিনি। আসার সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের নামায আদায় করি। পরে দেখি, কাপড়ের নিম্নাংশে গোশতের ব্যাগ থেকে কিছু রক্ত লেগে আছে। জানতে চাই, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

যবাইয়ের সময় বের হওয়া প্রবাহিত রক্ত নাপাক, কিন্তু গোশতের রক্ত নাপাক নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাপড়ে যদি গোশতের রক্তই লেগে থাকে তাহলে তা নাপাক হয়নি এবং আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে।

ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা...

প্রশ্ন

শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় দুআ আছে। কিন্তু কোনো বইতে এই দুআগুলো পাইনি। তাই দয়া করে দুআগুলো জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তখন মুক্তাদীর জন্য رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলা উত্তম। অতপর সম্ভব হলে-

حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ দুআটিও পড়া উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলবে তোমরা তখন رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বল।

অন্য এক হাদীসে আছে, রিফাআ ইবনে রাফে রা. বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বললেন তখন পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযে ঐ বাক্য কে বলেছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম ত্রিশের অধিক ফেরেশতা উক্ত দুআর ছাওয়াব নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, কে আগে তার ছাওয়াব লিখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৯

আর দুই সিজদার মাঝে রাবিবগ ফিরলী এবং اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي পড়া উত্তম।

সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে ‘রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী’ দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২৯

আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০

ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম-মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম। আর নফল ও তাহাজ্জুদে উপরোক্ত দুআ ছাড়াও আরো কিছু দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। যেমন-রুকু থেকে উঠে নিম্নোক্ত দুআগুলো পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন-

اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءُ السَّمَاوَاتِ والْأَرْضِ، وَمَا بَيْنَهُمَا، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ

অন্য বর্ণনায় এ দুআটি পড়ার কথাও এসেছে-

اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاءِ، وَمِلْءُ الْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ اللهُمَّ طَهِّرْنِي بِالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَالْمَاءِ الْبَارِدِ اللهُمَّ طَهِّرْنِي مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا، كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْوَسَخِ

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৬

আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এ দুআটিও এসেছে-

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ: اللهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৭

ফকীহগণের ভাষ্যমতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দীর্ঘ দীর্ঘ দুআগুলো সাধারণত তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পড়তেন। তাই এ দুআগুলো বিশেষভাবে নফল নামাযে পড়া উত্তম।

প্রকাশ থাকে যে, এসব দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ ইমাম জাযারী রাহ. কৃত কিতাবটি পড়া যেতে পারে। এটি দুআর একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর...

প্রশ্ন

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। সাথে মাহরাম পুরুষও এসে পড়েন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। প্রকাশ থাকে যে, অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।

-যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার...

প্রশ্ন

আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার কারণে পেন্ডেলে জায়গা পাইনি। তাই রাস্তায় নামায পড়ি। রাস্তা গরম হওয়ার কারণে সিজদা পাগড়ির পেঁচের উপর করেছি। আবার পাশের এক মুসল্লিকে দেখেছি যে, সে গরমের কারণে কপাল মাটিতে লাগায়নি; বরং মাথার উপরই সিজদা করেছে। এ কারণে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?

উত্তর

প্রচন্ড রোদের কারণে উত্তপ্ত জমিনে সিজদা করতে কষ্ট হলে পাগড়ি বা টুপির একাংশ কপালের উপর টেনে নিয়ে তার উপর সিজদা করা যাবে। এতে নামায মাকরূহ হবে না। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রচন্ড শীত বা গরমে সরাসরি মাটিতে সিজদা করতে কষ্ট হওয়ার কারণে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করা প্রমাণিত আছে। (দেখুন : সহীহ বুখারী ১/৫৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৪০০

তবে ঐ ধরনের বিশেষ ওজর ছাড়া পাগড়ি বা টুপির কোনো অংশের উপর সিজদা করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করতে দেখে তার কপালের দিকে ইশারা করে বলেন, তোমার পাগড়ি আরো উঠাও। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, তিনি পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন।-আলআওসাত ৩/৩৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০

আর কেউ যদি সিজদাতে জমিনে শুধু মাথা রাখে অর্থাৎ চুলের অংশ জমিনে রাখে কপালের কোনো অংশই জমিনে না লাগে তবে তার সিজদা আদায় হবে না। তাই তার নামাযও হবে না। কারণ সিজদার অঙ্গ কপাল, মাথা নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫-২৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয়...

প্রশ্ন

আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাই। তখন আমি সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষ হওয়ার পরও ফজরের অনেক সময় বাকি ছিল। তাই আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, এখন সুন্নত পড়া মাকরূহ। সূর্যোদয়ের পর পড়ে নিও। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

হাঁ, ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮২৫

তাই ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে সূর্যোদয়ের আগে পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য হেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করে নিবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১০৫৩

নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. (ফজরের সময়) মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন জামাত শুরু হয়ে গেছে। তিনি ফজরের সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে গেলেন। নামায শেষে তিনি মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অতপর সূর্যোদয় হয়ে গেলে তিনি দুই রাকাত সুন্নত কাযা করে নেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৭; মাআরিফুস সুনান ৪/৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা...

প্রশ্ন

অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা সিজদায় চলে যায়। আবার বসা থেকে উঠার সময়ও ইমামের আগে আগেই দাঁড়িয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এরকম করাটা কি ঠিক আছে? এতে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হবে?

উত্তর

নামাযের প্রত্যেক রুকনেই মুকতাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। ইমামের আগে মুকতাদির রুকু বা সিজদায় চলে যাওয়া কিংবা ইমামের আগেই মুকতাদির দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমরা রুকু করবে, যখন ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪১২

সহীহ বুখারীতে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মাঝে যে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে সি কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মতো অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দিবেন।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো...

প্রশ্ন

আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো মহিলা যদি এতটা পাতলা উড়না পরে নামায পড়ে যে, উড়না পরার পরও মাথার চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে কি তার নামায হবে?

উত্তর

নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা ফরয। তাই উড়না এমন মোটা হতে হবে যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না। উড়না যদি এত পাতলা হয়, যা পরার পরও চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে তা মাথায় দিয়ে নামায সহীহ হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৪-৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫২-২৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়তে হয়। কিন্তু...

প্রশ্ন

আমরা জানি, তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়তে হয়। কিন্তু কখনো ভিড়ের কারণে নির্ধারিত স্থানে নামায পড়তে কষ্ট হয় তখন কি একসাথে কয়েকটি তাওয়াফ করার পর একত্রে সব তাওয়াফের নামায পড়ার অবকাশ আছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর বিলম্ব না করে পড়া সুন্নত। তবে অন্য তাওয়াফ শুরু করার আগে পড়ে নেওয়া ওয়াজিব। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই তাওয়াফ শেষ করতেন দুই রাকাত নামায পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৫/৫৯

আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমীর পেছনে পড়তে কষ্ট হলে অন্য স্থানেও পড়া যাবে। তাওয়াফ শেষে নামাযের মাকরূহ ওয়াক্ত হলে তখন তাওয়াফের নামায পড়বে না; বরং মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এক্ষেত্রে তাওয়াফের নামায না পড়ে একসাথে একাধিক তাওয়াফ করা যাবে। মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হলে সকল তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত নামায পড়ে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩১; গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬-১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৭৬; আলবাহরুল আমীক ২/১২৪৫-১২৪৭; ইলাউস সুনান ১০/৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) নামাযের জামাত শুরু হওয়ার সময় ইকামত কখন দিবে এবং...

প্রশ্ন

ক) নামাযের জামাত শুরু হওয়ার সময় ইকামত কখন দিবে এবং মুসল্লিরা নামাযের জন্য কখন দাঁড়াবে? তারা কি ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে নাকি হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার সময় দাঁড়াবে?

খ) আমাদের এলাকায় কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, মুআযযিন ইকামাত বলার সময় ইমাম সাহেব কাতারে বা মুআযযিনের স্থানে বসে থাকেন। হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর স্থানে চলে যান। আবার অনেক সময় ইকামতের সময় ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করলে তিনি নিজ স্থানে এসে প্রথমে বসে যান। অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর দাঁড়ান। এ আমলটি কেমন? এ সম্পর্কে শরীয়তের নির্দেশনা জানতে চাই।

উত্তর

ক) ইমাম নামাযের জন্য প্রস্ত্তত হওয়ার পরই ইকামত শুরু করা উচিত। ইমামের প্রস্ত্তত হওয়ার আগে ইকামত শুরু করা ঠিক নয়। তদ্রূপ মুসল্লিদের জন্যও আগে থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়; বরং মুসল্লিগণ ইকামত আরম্ভ হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে ইকামতের শেষ পর্যন্ত কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব নামায শুরু করতে পারেন।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে আছে, বিলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসতে দেখে ইকামত বলা শুরু করতেন। আর অন্যরা কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। (সহীহ মুসলিম ১/২২০)

অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত বলামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৫০৭) এসব হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুক্তাদীগণ হাইয়া আলাল ফালাহ বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না; বরং ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে।

খ) ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমাম বা কোনো মুক্তাদীর দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার পর দাঁড়ানোর প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা পূর্বে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আসতে দেখলেই ইকামত শুরু হয়ে যেত এবং সাহাবায়ে কেরাম শুরুতেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা ইমামের জায়গায় পৌঁছে যেতেন। এমন ক্ষেত্রে মসজিদে প্রবেশ করে নবীজীর বা কোনো সাহাবীর বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাস সালাহ বলার সময় দাঁড়ানোর কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।

সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমামের জন্য মসজিদে এসে বসে যাওয়ার আমলটি একেবারে ভিত্তিহীন ও নবআবিষ্কৃত। আর ইকামতের পূর্ব থেকে যারা বসে আছে তাদের জন্যও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বা ‘ক্বদকামাতিস সালাহ’ বলা পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়। এটিও সুন্নত পরিপন্থী কাজ।-জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪২৭; শরহে মুসলিম, নববী ১/২২০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার মহিলারা বলছে, নামাযের পর মোনাজাতের সময় হেজাবের ভিতর...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মহিলারা বলছে, নামাযের পর মোনাজাতের সময় হেজাবের ভিতর হাত রেখে মোনাজাত করলে এই মোনাজাত নাকি আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে না। আমাদের জানার বিষয় হল, আমরা মোনাজাতের সময় হাত কি হেজাবের ভিতর রাখব নাকি হেজাবের বাইরে রেখে মোনাজাত করব? এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মহিলাদের উক্ত বক্তব্য ঠিক নয়, তা ভিত্তিহীন কথা। মুনাজাতের সময় হাত তোলা জরুরি নয়। তদ্রূপ হেজাবের বাইরে রাখাও জরুরি নয়। তাই দুআ করার সময় হাত হিজাবের ভেতরে থাকুক বা বাইরে, মনোযোগ সহকারে দুআ করলে তা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদে খুতবার মিম্বারের সিঁড়ি সামনের কাতারের সিজদা দেওয়ার জায়গায়...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে খুতবার মিম্বারের সিঁড়ি সামনের কাতারের সিজদা দেওয়ার জায়গায় করা হয়েছে। যার কারণে সামনের কাতারের কয়েকজন মুসল্লিকে সেই সিঁড়ির উপর সিজদা করতে হয়। প্রশ্ন হল, এভাবে সিজদার জায়গা উঁচু হলে নামায সহীহ হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে সিঁড়িতে সিজদা দেওয়া হয় তার উচ্চতা যদি আধা হাত বা তার চেয়ে কম হয় তাহলে সিঁড়িতে সিজদা দিলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যদি তার উচ্চতা আধা হাতের চেয়ে বেশি হয় তাহলে নামায সহীহ হবে না। উল্লেখ্য যে, প্রথম কাতারের জায়গা পুরো ছেড়ে দিয়ে মিম্বর বানানো উচিত। সামনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে কাঠের মিম্বার বানানোই ভালো। যেন নামাযের সময় তা সরিয়ে রাখা যায়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০; শরহুল মুনইয়াহ ২৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে?...

প্রশ্ন

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে? নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ জোরে, নাকি শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে হরফের মাখরাজ আদায় করে নিলেই যথেষ্ঠ হবে?

উত্তর

নিম্নস্বরে আদায়কৃত নামাযসমূহে নামাযী সূরা-কিরাত নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ আওয়াজে পাঠ করা উত্তম। তবে পাশের মুসলি পর্যন্ত আওয়াজ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কেউ যদি ঠোঁট নাড়িয়ে একেবারে নিম্ন আওয়াজে হরফের মাখরাজ যথাযথভাবে আদায় করে পড়ে তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আসল ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদুরী ৭৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৯৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিতর নামাযে ভুলে দুআ...

প্রশ্ন

গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিতর নামাযে ভুলে দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যান। স্মরণ হওয়ার পর রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পাঠ করেন। তারপর পুনরায় আবার রুকু করেন এবং পরে সাহু সিজদাও দেন। জানার বিষয় হল, আমাদের এই নামায সহীহ হয়েছে কি না? এক রাকাতে দুইবার রুকু করার কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করার কারণে সকলের নামায সহীহ হয়ে গেছে। উলেখ্য, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল পুনরায় কুনূতের জন্য না উঠে যথা নিয়মে নামায পড়ে যাওয়া এবং ভুলের জন্য সাহু সিজদা দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে ইমাম যদি রুকু থেকে দুআ কুনূতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তবে পুনরায় রুকু করবে না; বরং দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় চলে যাবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই উভয় নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আযানের জবাব দেওয়ার ফযীলত কী? শুনেছি, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি...

প্রশ্ন

আযানের জবাব দেওয়ার ফযীলত কী? শুনেছি, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সুপারিশ বা শাফাআত করবেন। কিছুদিন আগে এক আলেম থেকে আরো একটি ফযীলত শুনলাম। তা হল, যে আযানের জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পরবর্তী ফযীলত কি ঠিক? এ সম্পর্কে কি কোনো হাদীস আছে?

উত্তর

উভয় ফযীলতই সহীহ। তবে শাফাআত লাভের বিষয়টি মূলত আযানের পর দুআউল ওসীলা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে- (অর্থ) জাবের রা. থেকে বর্নিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দুআ বলবে,

اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمد الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محمودا الذي وعدته

তার জন্য আমার শাফাআত অবধারিত হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬১৪)

আর সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে আযানের বাক্যগুলোর জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন মুআযযিন বলে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ... এরপর মুআযযিনের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জবাবে অন্তর থেকে তাই বলবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মহল্লার কয়েকজন বৃদ্ধ মুসল্লি মসজিদে এসেই বিভিন্ন ধরনের দুনিয়াবী...

প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার কয়েকজন বৃদ্ধ মুসল্লি মসজিদে এসেই বিভিন্ন ধরনের দুনিয়াবী কথাবার্তা ও গল্প-গুজবে লিপ্ত হয়ে যান। তাদের এ কাজ আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলার বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৫৩৩)

মসজিদে গিয়ে গল্প-গুজব ও অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া মসজিদের উদ্দেশ্য ও আদাব পরিপন্থী। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য দ্বীনী কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা নাজায়েয নয়। এক্ষেত্রে মসজিদের আদব ও সম্মানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। উচ্চস্বরে বলবে না এবং অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে সে দিকেও লক্ষ্য রাখবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বাড়ি মসজিদের একপাশে এবং মসজিদের আরেক পাশে বাজার। তাই...

প্রশ্ন

আমার বাড়ি মসজিদের একপাশে এবং মসজিদের আরেক পাশে বাজার। তাই আমি রাস্তা দিয়ে ঘুরে না গিয়ে মসজিদের ভেতর দিয়ে বাজারে যাই। একদিন এক ব্যক্তি বললেন, মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই। জানার বিষয় হল, আসলেই কি মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই?

উত্তর

মসজিদের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করা এবং রাস্তা বানানো জায়েয় নেই। এতে মসজিদের আদাব ক্ষুণ্ণ হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মসজিদকে গমনাগমনের রাস্তা বানিও না। তা নামায ও যিকিরের জন্য গ্রহণ কর। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১২/২৪২)

তাই বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করা যাবে না। একান্তই কখনো ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়ে নিবে কিংবা কোনো যিকির-তাসবীহ পাঠ করে বের হবে। যেন হাদীসের নিদের্শনার পরিপন্থী না হয়।

-মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/৪২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সাধারণত কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় আমরা হাত ছেড়ে দিয়ে থাকি।...

প্রশ্ন

সাধারণত কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় আমরা হাত ছেড়ে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেব হাত বেঁধে রাখতে বলেন। তাই জানতে চাই, নামাযের মধ্যে কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখব, না ছেড়ে দিব? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখাই উত্তম। তবে কোনো কোনো ফকীহ হাত ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক নয়।

-শরহুল মুনইয়াহ ৩০১; ইলাউস সুনান ৬/১২২; কিফায়াতুল মুফতী ৪/৫৩৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আসর ও ফজরের পর তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায়...

প্রশ্ন

আসর ও ফজরের পর তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করা যাবে কি?

উত্তর

আসর বা ফজরের পর তাওয়াফ করলেও তাওয়াফের দুই রাকাত নামায তখন পড়বে না; বরং সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।

আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, উমর রা. ফজরের পর তাওয়াফ করলেন। এরপর যুতুয়া নামক স্থানে চলে এলেন। অতপর যখন সূর্য উদিত হল এবং উপরে উঠল তখন তিনি তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়লেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৬; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৩৯

হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. যখন ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতেন; এরপর যখন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হয়ে যেত তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত করে পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২২

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতে চাইলে কর। তবে নামায পরে পড়বে। এরপর যখন সূর্য অস্ত যাবে বা উদিত হবে তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত করে পড়ে নিবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৪; ইলাউস সুনান ১০/৮৭; শরহু মুখতাছারিত তহাবী ১/৫৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গতকাল যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। সময় ছিল খুবই...

প্রশ্ন

গতকাল যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। সময় ছিল খুবই অল্প। যে কারণে আমি নামাযের মধ্যে মসজিদের সামনের ঘড়িতে সময় দেখি। এরপর বাকি নামায পূর্ণ করি। ঘড়ি দেখার কারণে কি আমার নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?

উত্তর

নামায অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঘড়ি বা অন্য কিছুর দিকে তাকানো মাকরূহ। তাই নামাযের ভেতর আপনার ঘড়ি দেখা ঠিক হয়নি। তবে ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১৮৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৬৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গত কিছুদিন আগে আসরের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না...

প্রশ্ন

গত কিছুদিন আগে আসরের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না করে ভুলবশত দাঁড়িয়ে যান। তখন মুসল্লিরাও দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সাথে অনেকে লোকমা দেয়। লোকমা দিলে ইমাম সাহেবসহ সবাই বসে পড়েন। নামাযের পর সাহু সিজদা আদায় করে নেন। কিন্তু নামাযের পর আমাদের মাদরাসার একজন সিনিয়র উস্তায দাঁড়িয়ে বললেন, নামায হয়নি। পুনরায় আদায় করতে হবে। আরেকজন মুফতী সাহেব বললেন, নামায হয়ে গেছে, পুনরায় পড়তে হবে না। এ অবস্থায় প্রথমজনের কথা অনুযায়ী আবার নামায আদায় করা হয়। উল্লেখ্য, ইমাম কিন্তু একজনই। আর ঐ মুফতী সাহেব নামায না পড়ে বের হয়ে যান। এখন প্রশ্ন হল, প্রথম জামাত কি সহীহ হয়েছে? যদি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় জামাতের হুকুম কী হবে?

বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যিনি নামায হয়ে গেছে বলেছেন তার কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, লোকমা দিলেও বৈঠকের জন্য ফিরে না আসা; বরং যথারীতি পরবর্তী রাকাতগুলো পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘন করে কেউ বৈঠকের জন্য ফিরে আসলেও (যেমনটি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘটেছে) নামায ভঙ্গ হবে না। কোনো কোনো ফকীহ এক্ষেত্রে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলে থাকলেও এ মতের উপর ফতোয়া নয়।

আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করেছে তাই নামাযটি সহীহ হয়ে গেছে। সুতরাং দ্বিতীয়বার আদায়কৃত নামায নফল হয়েছে।

-ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১০১; রদ্দুল মুহতার ২/৮৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ভুলে গিয়েছিল। নামায...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ভুলে গিয়েছিল। নামায আদায়ের পর বিষয়টি স্মরণ হলে সে পুনরায় গোসল করে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, ফরয গোসলে কুলি করতে ভুলে গেলে পুনরায় কি গোসল করতে হবে?

উত্তর

এক্ষেত্রে শুধু কুলি করে নিলেই গোসল পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। পুনরায় গোসল করতে হবে না।

হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি ফরয গোসল করেছে। কিন্তু শরীরের কিছু অংশে পানি পৌঁছেনি। (এখন তার করণীয় কী?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শুধু ঐ অংশটুকু ধুয়ে নিবে। অতপর নামায আদায় করবে।

-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১০/২৩১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৬০৯; কিতাবুল আছল ১/৩২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০; আসসিআয়াহ ১/২৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বয়স বিশ বছর। বালেগ হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক...

প্রশ্ন

আমার বয়স বিশ বছর। বালেগ হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়েছি। অধিকাংশ সময়ই পড়া হয়নি। এজন্য আমি অনুতপ্ত। এখন আমি ছুটে যাওয়া নামাযগুলো আদায় করতে চাই। তাই জানার বিষয় হল, অনাদায়ী নামাযগুলো আমি কীভাবে আদায় করব? ফজরের সময় ফজরের কাযা, যোহরের সময় যোহরের কাযা এভাবে আদায় করব, নাকি যোহরের সময় ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, ইশার নামাযও কাযা করতে পারব? আর ঐ কাযা নামাযগুলোর নিয়ত কীভাবে করব? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

কাযা নামায আদায়ের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। নিষিদ্ধ তিন ওয়াক্ত (সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়) ব্যতিত অন্য যে কোনো সময়ই যে কোনো কাযা নামায আদায় করা যায়। তাই আপনি এক নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে অন্য যে কোনো ওয়াক্তের কাযা নামায আদায় করতে পারবেন। যেমন ফজরের ওয়াক্তে যোহরেরও কাযা আদায় করতে পারবেন।

আর কাযা নামায আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন যে, আমার জীবনের অনাদায়ী প্রথম যোহর নামায আদায় করছি। অথবা এভাবে নিয়ত করবেন যে, ছুটে যাওয়া বা অনাদায়ী সর্বশেষ যোহর নামায আদায় করছি। প্রতিবার কাযা আদায়ের সময় মনে ম নে এভাবে নিয়ত করবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৭৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৪৯৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় নামাযের রাকাত নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। চেষ্টা করেও...

প্রশ্ন

অনেক সময় নামাযের রাকাত নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। চেষ্টা করেও স্মরণ করতে পারি না কত রাকাত পড়েছি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর

নামাযের রাকাত-সংখ্যা নিয়ে সংশয়ে পড়লে করণীয় হল, যে সংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হবে সেটাকে ধরে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দেওয়া লাগবে না। পক্ষান্তরে রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে যদি কোনো ধারণাই প্রবল না হয় তাহলে সম্ভাব্য সংখ্যার মাঝে কম সংখ্যাটি ধরবে। অতপর ঐ হিসাবে অবশিষ্ট নাময পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের শেষে বৈঠক করে তাশাহহুদ পড়বে এবং শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।

উল্লেখ্য যে, নামাযের মধ্যে এ ধরনের সংশয় মনোযোগের অভাবে হয়ে থাকে। তাই খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এজন্য কোনো আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গের সোহবতে যাওয়া ও তার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

-কিতাবুল আছল ১/২২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন যোহরের নামাযের প্রথম বৈঠকে আমি ইমামের সাথে শরিক হই।...

প্রশ্ন

একদিন যোহরের নামাযের প্রথম বৈঠকে আমি ইমামের সাথে শরিক হই। এরপর আমি তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু আমি তার সাথে না দাঁড়িয়ে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াই। এ কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? মূলত এক্ষেত্রে নিয়ম কী? ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া না তাশাহহুদ পূর্ণ করে তারপর দাঁড়ানো? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়ানোই ঠিক হয়েছে। কারণ তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুক্তাদী সকলের উপরই পৃথক পৃথক ওয়াজিব। তাই মুক্তাদির তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেও মুক্তাদী তাশাহহুদ পূর্ণ করেই দাঁড়াবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/১২, ৪৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়াহ

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি যোহর নামাযের পূর্বের চার রাকাত সুন্নতের প্রথম বৈঠকে...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি যোহর নামাযের পূর্বের চার রাকাত সুন্নতের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দরূদ শরীফের ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ’ পর্যন্ত পড়েছে। এ কারণে কি তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে?

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে বিলম্ব না করে তাশাহহুদের পরপরই দাঁড়িয়ে যাওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু তা না করে ভুলে দরূদ শরীফের এ পরিমাণ পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার, হা©র্শয়াতুত তহতাবী ১/২২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪০১; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে?...

প্রশ্ন

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে? নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ জোরে, নাকি শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে হরফের মাখরাজ আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর

নিম্নস্বরে আদায়কৃত নামাযসমূহে নামাযী সূরা-কিরাত নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ আওয়াজে পাঠ করা উত্তম। তবে পাশের মুসল্লি পর্যন্ত আওয়াজ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কেউ যদি ঠোঁট নাড়িয়ে একেবারে নিম্ন আওয়াজে হরফের মাখরাজ যথাযথভাবে আদায় করে পড়ে তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আসল ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদুরী ৭৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গেছেন। আমি...

প্রশ্ন

একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গেছেন। আমি নামাযে শরিক হওয়ার আগেই তিনি রুকু থেকে উঠে সিজদায় চলে যান। আমি তখন নামাযে শরিক না হয়ে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করতে থাকি। এরপর দ্বিতীয় রাকাতে শরিক হই। জানার বিষয় হল, আমার এ কাজটা কি ঠিক হয়েছে? আর এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ইমাম নামাযের যে অবস্থায় থাকুক মুক্তাদীর জন্য তৎক্ষণাৎ নামাযে শরিক হয়ে যাওয়া সুন্নত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে তাকিদ এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে রুকু, সিজদা কিংবা কিয়াম অবস্থায় পায় সে যেন সে অবস্থাতেই আমার সাথে শরিক হয়ে যায়।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৬১৬

তাই ইমাম সিজদায় থাকলে সিজদাতেই শরিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নামাযে শরিক না হয়ে পরবর্তী রাকাতের জন্য অপেক্ষা করা মাকরূহ।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫০৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার জামার নিচের অংশে এক শিশুর পেশাব লেগেছিল। তখন জামাটি...

প্রশ্ন

আমার জামার নিচের অংশে এক শিশুর পেশাব লেগেছিল। তখন জামাটি ধোয়া হয়নি। পরে ভেজা স্থান শুকিয়ে যায় এবং কোন জায়গায় পেশাব লেগেছিল তাও ভুলে যাই। এখন জামাটি নিয়ে নামায পড়তে চাইলে তা কীভাবে পবিত্র করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নাপাকির স্থান যেহেতু নিশ্চিতভাবে জানা নেই। তাই জামাটির নিচের অংশের যতটুকুতে পেশাব লেগেছে বলে সন্দেহ হয় পুরোটাই ধুতে হবে, যেন নাপাকির স্থান নিশ্চিতভাবে ধোয়া হয়ে যায়।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৭৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সূরা-কেরাত শুদ্ধ নয়। মাদরাসার ছাত্র হিসেবে...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সূরা-কেরাত শুদ্ধ নয়। মাদরাসার ছাত্র হিসেবে আমি তা বুঝতে পারি। তাই এ ব্যাপারে তাকে একদিন বললে তিনি আমাকে নামায পড়াতে দেন। কিন্তু গোপনে মুসল্লিদের কাছে তার ঐ অযোগ্যতার কথা অস্বীকার করেন। আর আমি তাদেরকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও তারা ইমাম সাহেবকেই প্রাধান্য দেয় এবং আমার কথাকে গ্রাহ্য করে না। এখন আমি ঐ ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে আমার নামায অশুদ্ধ হবে এ ভয়ে আমি মসজিদে না গিয়ে বাড়িতেই একাকী নামায পড়ি। প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার বাড়িতে একাকী নামায পড়া সহীহ হচ্ছে কি? যদি না হয় তাহলে কী করণীয়? দলিল-প্রমাণ ও উপদেশসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

ইমামের তিলাওয়াত কী পরিমাণ অশুদ্ধ প্রশ্নে তা উল্লেখ করা হয়নি। সিফাত ও তাজবীদ ও মাখরাজের সামান্য ভুলের কারণে নামায নষ্ট হয় না। ভুলের কারণে কুফরী অর্থ হয়ে গেলে বা চরমভাবে অর্থের বিকৃতি ঘটলে তখনই নামায ফাসেদ হয়।

আর নিয়মিত মসজিদের জামাত ত্যাগ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রশ্নোক্ত মসজিদে না পড়লে পার্শ্ববর্তী অন্য মসজিদে গিয়ে নামায পড়া উচিত। আর প্রশ্নোক্ত ইমামের পিছনে আপনার নামায পড়া-না পড়ার সিদ্ধান্ত নিজ থেকে না নিয়ে কোনো বিজ্ঞ আলেমকে ইমামের কিরাত শুনিয়ে তার থেকে পরামর্শ নেওয়া কর্তব্য।

জেনে রাখা দরকার, মসজিদের জামাত ত্যাগকারীর উপর হাদীসে কঠোর ধমকী এসেছে। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা আদৌ ঠিক নয়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সাহেবে তারতীব ব্যক্তি-অর্থাৎ যার যিম্মায় কোনো অনাদায়ী কাযা নামায নেই...

প্রশ্ন

সাহেবে তারতীব ব্যক্তি-অর্থাৎ যার যিম্মায় কোনো অনাদায়ী কাযা নামায নেই বা থাকলেও তা ছয় ওয়াক্তের কম আছে-তার জন্য কি এমন ব্যক্তির পিছনে ইক্তেদা করা সহীহ হবে, যার যিম্মায় অনেক কাযা নামায রয়ে গেছে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

যার যিম্মায় অনেক নামায কাযা আছে সে ব্যক্তি ইমামতির যোগ্য হলে তাকেও ইমাম বানানো জায়েয আছে। আর তার পেছনে সাহেবে তারতীব ও অন্যদের নামায আদায় করাও সহীহ হবে। কিন্তু নিজের যিম্মায় অনেক নামায কাযা রেখে দিয়ে উদাসীন থাকা মুমিনের শান নয়; বরং তার কর্তব্য হল, যথাশীঘ্র সেগুলোর কাযা আদায় করে নেওয়া এবং আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করা।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৪, ৩৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৪১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন মিলে শবগুজারির জন্য মারকায মসজিদে গিয়েছিলাম।...

প্রশ্ন

আমরা গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন মিলে শবগুজারির জন্য মারকায মসজিদে গিয়েছিলাম। মসজিদের ২য় তলায় বিছানাপত্র রেখে বিশ্রাম করছিলাম। এমন সময় মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। ২য় তলায় সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা ছিল। তাই নিচ তলায় জায়গা থাকা সত্ত্বেও আমরা কয়েকজন উপরেই দাঁড়িয়ে ইমামের সাথে নামায আদায় করি। প্রশ্ন হল, এভাবে নামায পড়ার কারণে আমাদের নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তলায় যারা দাঁড়িয়েছে তাদের নামাযও আদায় হয়ে গেছে। তবে নিচ তলায় কাতার পুরা না করে দোতলায় দাঁড়ানো মাকরূহ হয়েছে।

ইমাম নিচ তলায় দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে মুসল্লিদের কর্তব্য হল, প্রথমে নিচ তলার কাতার পূর্ণ করা। নিচ তলায় কাতার পূর্ণ হওয়ার পরই উপর তলায় কাতার করা যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর।

-সহীহ মুসলিম ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; শরহুল মুনইয়া ৫২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি যে, হানাফী মাযহাব মতে ইমামের জন্য ইমামতির নিয়ত...

প্রশ্ন

আমরা জানি যে, হানাফী মাযহাব মতে ইমামের জন্য ইমামতির নিয়ত লাগে না। ইমামতির নিয়ত না করলেও তার পেছনে নামায আদায় করা সহীহ আছে। কিন্তু সেদিন এক আলেম বললেন, হানাফী মাযহাবের মুকতাদি অন্য মাযহাবের ইমামের পিছনে ইকতিদা করলে মুক্তাদির ইকতিদা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের ইমামতিরও নিয়ত করতে হবে। তার এ কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত কিরূপ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। অন্য মাযহাবের কোনো ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্যও ইমামতির নিয়ত জরুরি নয়। ইমাম যদি ইমামতির নিয়ত না-ও করে তবুও সর্বাবস্থায় মুকতাদির ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে ইমামতির নিয়ত করে নেওয়া ভালো।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৩৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার এক ওয়ায়েয বললেন, কোনো ব্যক্তি যদি মসজিদে প্রবেশ...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক ওয়ায়েয বললেন, কোনো ব্যক্তি যদি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযের জন্য অপেক্ষা করা অবস্থায় এ দুআটি পড়ে তাহলে তার অপেক্ষার সময়টি নামাযের মধ্যে গণ্য হবে। দুআটি হল

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

কিন্তু ইতিপূর্বে বিভিন্ন আলেমের মুখ থেকে শুনেছি যে, মসজিদে শুধু নামাযের জন্য অপেক্ষা করলেই অপেক্ষার সময়টি নামাযের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। সেখানে তো কোনো দুআ পড়ার কথা নেই।

বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ওয়ায়েযের কথাটি ঠিক নয়। বরং এ ব্যাপারে আপনি আলেমগণ থেকে যা শুনেছেন তাই সঠিক। অর্থাৎ মসজিদে এসে বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে নামাযের জন্য অপেক্ষা করলেই নামাযের সওয়াব হতে থাকে। এর জন্য উক্ত দুআ পাঠ করার শর্ত নেই। কেননা হাদীস শরীফে কোনো প্রকার দুআ পড়ার শর্ত ছাড়াই ঐ ফযীলতের কথা এসেছে। যেমন : সাহল বিন সাদ রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি মসজিদে এসে নামাযের অপেক্ষা করবে (ঐ সময়টি) সে নামাযে আছে বলে গণ্য হবে।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৭৩৩

আর শুধু এ অপেক্ষার দ্বারাই উক্ত ফযীলত লাভ হলেও এর অর্থ এ নয় যে, ঐ সময় কোন যিকির-আযকার বা দুআ-দরূদ পড়া যাবে না; বরং চুপ-চাপ বসে না থেকে যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল পড়া উচিত। বিশেষত সুন্নাত আদায়ের পর হাদীস শরীফে যে সকল দুআ-দরূদ পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে তা পড়া উত্তম হবে। যেমন : একটি বর্ণনায় এসেছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত আদায়ের পর নিম্নোক্ত দুআটি তিনবার পড়তেন। সম্ভব হলে তখন সেটি পড়বেন দুআটি এই :

اَللّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيْلَ وَمُحَمَّدٍ صَلّىٰ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.

মুস্তাদরাক হাকেম ৬৬৬৯

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নে উল্লেখিত দুআটি একটি মাসনুন দুআ, যা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় পড়তেন। আর এ দুআ পড়ার ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি এটি পাঠ করবে শয়তান তার ব্যাপারে ঘোষণা দেয় যে, এ ব্যক্তি গোটা দিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একজন মাছ বিক্রেতা। খরীদদারদের প্রয়োজনে অনেক সময় মাছ কেটে...

প্রশ্ন

আমি একজন মাছ বিক্রেতা। খরীদদারদের প্রয়োজনে অনেক সময় মাছ কেটে দিতে হয়। সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও কখনো কখনো মাছের রক্ত লুঙ্গিতে লেগে যায়। নামায পড়ার আগে যথাসম্ভব ধুয়ে নিই। কিন্তু মাঝে মধ্যে নামাযের পর দেখি লুঙ্গিতে রক্ত লেগে আছে। এখন কি আমাকে ঐ নামাযগুলো পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

মাছের রক্ত নাপাক নয়। তাই তা কাপড়ে লেগে থাকা অবস্থায় যে নামাযগুলো পড়েছেন সেগুলো আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫-১৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একবার আমি মসজিদে আসরের নামাযের জামাত না পাওয়ায় একা একা...

প্রশ্ন

একবার আমি মসজিদে আসরের নামাযের জামাত না পাওয়ায় একা একা নামায পড়ছিলাম। আমার নামায দ্বিতীয় রাকাত শেষ হয়ে তৃতীয় রাকাত চলছে। এরই মধ্যে একজন মুসল্লি আমার পেছনে ইকতেদা করেন। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে উঁচু আওয়াজে তাকবীর শুরু করি। আমার নামায শেষে তিনি তার বাকী নামায আদায় করে নেন। এ অবস্থায় আমার ও উক্ত মুসল্লির নামায হয়েছে কি?

আমি আরো জানতে চাই যে, একাকী নামায শুরু করার পর কারো জন্য তার পেছনে ইকতিদা করা সহীহ আছে কি এবং এর কোনো দলিল-প্রমাণ আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনাদের উভয়ের নামাযই সহীহ হয়েছে। কোনো ব্যক্তি একাকী নামায শুরু করার পর তার পিছনে ইক্তিদা করা সহীহ আছে। এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

আয়েশা রা. বলেন, একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাঁর কামরায় নামায পড়ছিলেন। তাঁর কামরার দেয়াল ছিল নিচু। ফলে সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযরত দেখতে পান এবং তাঁর পিছনে ইক্তিদা করে নামাযে দাঁড়িয়ে যান। সকাল বেলা বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় রাতেও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়ালেন এবং সাহাবীগণ তাঁর ইক্তিদা করলেন।

-সহীহ বুখারী ১/১০১; ইলাউস সুনান ৪/৩৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কেউ যদি ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে সাল্লাল্লাহু...

প্রশ্ন

কেউ যদি ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়ে তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি?

উত্তর

না, শুধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কেননা এতে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; মাজমাউল আনহুর ১/২২১; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যোহর অথবা জুমআর পূর্বের সুন্নত এবং ফজর নামাযের পূর্বের সুন্নত...

প্রশ্ন

যোহর অথবা জুমআর পূর্বের সুন্নত এবং ফজর নামাযের পূর্বের সুন্নত যদি কখনো ছুটে যায় তাহলে তা পরবর্তীতে আদায় করতে হবে কি? আর আদায় করলে সুন্নত হবে না নফল হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

যোহর ও জুমআর আগের সুন্নত ছুটে গেলে ফরযের পরে ওয়াক্তের মধ্যেই তা আদায় করে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ফরযের পরের সুন্নত প্রথমে আদায় করবে এরপর পূর্বের ছুটে যাওয়া সুন্নত আদায় করবে। আর ওয়াক্তের মধ্যে আদায় করলে তা সুন্নত হিসেবেই আদায় হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের পূর্বের চার রাকাত আদায় করতে না পারলে যোহরের পরে তা আদায় করতেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪২৬)

আর ফজরের সুন্নত ফরযের আগে আদায় করতে না পারলে ঐদিন সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে তা পড়ে নিবে। আর সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তা আদায় করলে নফল হিসাবে গণ্য হবে।

-ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০২; এলাউস সুনান ৭/১৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কখনো এমন হয় যে আমি যোহরের নামাযের নিয়তে জায়নামাযে দাঁড়াই।...

প্রশ্ন

কখনো এমন হয় যে আমি যোহরের নামাযের নিয়তে জায়নামাযে দাঁড়াই। কিন্তু তাকবীরে তাহরিমার সময় মুখে চলে আসে, মাগরিব বা ইশা। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? ঐ নিয়তেই নামায শেষ করব নাকি নতুন করে আবার নিয়ত করতে হবে?

উত্তর

নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্পের নাম। তাই যোহরের নামাযের সময় অন্তরে যদি যোহরের কথাই থাকে কিন্তু মুখে ভুলবশত অন্য ওয়াক্তের কথা চলে আসে তাতে অসুবিধা হবে না। এক্ষেত্রে যোহর নামাযই আদায় হবে। কিন্তু যদি মুখে ভুল উচ্চারিত হয় আর অন্তরে কিছুই স্থির না থাকে বা মুখে যা উচ্চারণ করছে সংকল্পেও তা থাকে তবে মুখেরটাই ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে ওয়াক্তের ফরয আদায় হবে না। তাই তা পুনরায় আদায় করতে হবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৪১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার ছেলের বয়স আড়াই বছর। সারাক্ষণ কোলে কোলেই থাকতে চায়।...

প্রশ্ন

আমার ছেলের বয়স আড়াই বছর। সারাক্ষণ কোলে কোলেই থাকতে চায়। আমি নামাযে দাঁড়ালে সে কোলে ওঠার জন্য কাপড় ধরে টানাটানি করে। এতে কখনো আমার হাত কনুই পর্যন্ত এমনকি কখনো বাহুও অনাবৃত হয়ে যায়। হাতের কব্জি পর্যন্ত পুরো হাত যেহেতেু নামাযে ঢেকে রাখা জরুরি, তাই তা খুলে গেলে আমি নামায ছেড়ে দেই। এখন বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো ছাড়া আমার নামাযে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হাত অনাবৃত হওয়ার সাথে সাথে তা আবার ঢেকে নিবেন। তৎক্ষণাৎ ঢেকে নিলে নামায নষ্ট হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের মধ্যে শরীরের যেসব অঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরি এগুলোর কোনো একটির এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি খুলে গেলে এবং তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় তা খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তিন তাসবীহর চেয়ে কম সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৮; ফাতহুল কাদীর ১/২২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার দাদীর বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি বছর। আলহামদুলিল্লাহ তিনি এখনও স্বাভাবিক...

প্রশ্ন

আমার দাদীর বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি বছর। আলহামদুলিল্লাহ তিনি এখনও স্বাভাবিক চলাফেরা ও ইবাদত বন্দেগী করতে পারেন। গত কয়েক মাস আগে একবার খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন কয়েকদিন তাঁর যবান বন্ধ ছিল। মুখে কোনো শব্দ উচ্চারিত হত না। তবে হুঁশ-জ্ঞান ছিল। তাই তিনি ওই অবস্থায়ও নামায আদায় করেছেন। কিন্তু কিরাত, দুআ ইত্যাদি পড়তে পারেননি। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

প্রশ্ন হল, তার ওই কদিনের নামায কি আদায় হয়েছে? না তাকে পুনরায় ওই নামাযগুলো পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার দাদীর অসুস্থতার দিনগুলোর নামায আদায় হয়ে গেছে। তাকে পুনরায় ওই নামাযগুলো পড়তে হবে না। কেননা কিরাত পড়া যদিও ফরয কিন্তু কেউ অসুস্থতার কারণে কিরাত পড়তে না পারলে মাযুর গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কিরাত ছাড়াই তার নামায আদায় হয়ে যাবে। যেমনিভাবে রুকু-সিজদা করতে পারে না-এমন অসুস্থ ব্যক্তি ইশারায় নামায পড়লে তার এ নামায আদায় হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা কাযা করতে হয় না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১১৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একবার নৌকায় ভ্রমণ করছিলাম। মাঝপথে যোহরের নামাযের সময় হয়ে...

প্রশ্ন

আমি একবার নৌকায় ভ্রমণ করছিলাম। মাঝপথে যোহরের নামাযের সময় হয়ে যায়। ঢেউয়ের কারণে নৌকাটি অস্বাভাবিক নড়াচড়া করছিল। ফলে দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমি বসে রুকু-সিজদাসহ নামায আদায় করেছি। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, উক্ত নামায যথানিয়মেই আদায় হয়েছে। কেননা ওযরের কারণে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারলে বসে আদায় করা জায়েয আছে।

-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৭১; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার খালা ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। এখন তার জ্ঞান-বোধ কিছুটা কমে...

প্রশ্ন

আমার খালা ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। এখন তার জ্ঞান-বোধ কিছুটা কমে গেছে। তিনি প্রায়ই নামাযে উল্টা পাল্টা করে ফেলেন। তবে নামাযের সময় কেউ তার পাশে থেকে পড়ার ও করার কাজগুলো স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি ঠিকমতো নামায পড়তে পারেন।

প্রশ্ন হল, নামাযের বাইরে থেকে কেউ বলে বলে নামায পড়ালে খালার নামায সহীহ হবে কি?

উত্তর

আপনার খালা যেহেতু নিজে নিজে নামায পড়লে ঠিকমতো পড়তে পারেন না, তাই এ অবস্থায় তার পাশে থেকে নামাযের রুকু, সিজদা ও কিরাত ইত্যাদির কথা বলে বলে নামায পড়ালে তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য নামাযের সময় এ রকম বলে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে তিনি যেভাবেই পড়বেন আদায় হয়ে যাবে। জাহম রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা.-এর নামাযের সময় তার পিছনে এক লোক বসত। সে তার নামাযের আমলগুলিকে স্মরণ করিয়ে দিত।

রুকাইন রাহ. বলেন, আমি একবার আসমা রা.-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধা। তিনি নামায পড়ছিলেন আর একজন মহিলা তাকে বলছিল, রুকু করুন, সিজদা করুন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাগরিব নামাযের প্রতম রাকাতে সূরা হুমাযাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে...

প্রশ্ন

আমি মাগরিব নামাযের প্রতম রাকাতে সূরা হুমাযাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা তাকাসুর পড়ি। পরে মনে পড়ে, আমার প্রথম রাকাতে সূরা তাকাসুর পড়া উচিত ছিল। ফলে সাহু সিজদা করে নেই। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা করার প্রয়োজন ছিল না। কেননা নামাযের মধ্যে সূরা আগে-পরে হয়ে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

অবশ্য ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব উল্টো করে পড়া অনুচিত। যা হোক, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করা ঠিক না হলেও আপনার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; আততাজনীস ১/৪৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে পবিত্র হওয়ার পর তাদেরকে...

প্রশ্ন

মহিলারা হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে পবিত্র হওয়ার পর তাদেরকে সিজদা দিতে হবে কি?

উত্তর

হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না। তাই পবিত্র হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে না।

বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ঋতুমতী মহিলা সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা করবে না। সে তো সিজদার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা ফরয নামাযই আদায় করছে না।

অনুরূপ বক্তব্য সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ., আতা রাহ. ও হাসান বসরী রাহ. থেকেও বর্ণিত আছে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; রায়েক ২/১১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একজন মেয়েলোকের বিগত মাসে ৮ দিন করে হায়েয হয়েছিল। এ...

প্রশ্ন

একজন মেয়েলোকের বিগত মাসে ৮ দিন করে হায়েয হয়েছিল। এ মাসে তার চার দিন হওয়ার পর দুই দিন হয়নি। এরপর আবার হয়েছে। জানার বিষয় হল, ৫ম ও ৬ষ্ঠ দিন তার কী করণীয় ছিল? সে কি অপেক্ষা করবে, নাকি গোসল করে নামায পড়া শুরু করবে?

উত্তর

উক্ত ক্ষেত্রে স্রাব বন্ধ হওয়ার পর গোসল করে ওয়াক্তের নামায পড়ে নিবে। কারণ স্বাভাবিক অভ্যাসের দিনগুলোর মধ্যেও কখনো স্রাব বন্ধ হয়ে গেলে ওয়াক্তের মধ্যে গোসল করে নামায পড়ে নেওয়াই কর্তব্য। কেননা এ পরিস্থিতিতে পরবর্তীতে আর রক্ত না এসে পূর্ণভাবে পবিত্র হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তার জন্য ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করা জরুরি। অবশ্য সে যেহেতু সপ্তম দিনে আবার রক্ত দেখেছে তাই মাঝের বিরতির দুই দিন হায়েয হিসাবেই গণ্য হবে। সুতরাং মহিলাটি যদি ঐ দুই দিন নামায না পড়ে থাকে তবে যেহেতু তা মূলত হায়েযের দিন ছিল এ কারণে তা কাযাও করতে হবে না।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বয়স তেইশ বছর। আমি নিয়মিত নামায পড়ি। কিন্তু মাঝে...

প্রশ্ন

আমার বয়স তেইশ বছর। আমি নিয়মিত নামায পড়ি। কিন্তু মাঝে মাঝে নামায কাযা হয়ে গেলে তা আর পড়া হয় না। এভাবে আমার প্রায় ৫০ ওয়াক্ত কাযা নামায জমে গেছে। এখন আমি এ সকল কাযা নামায আদায় করতে চাই। জানতে চাই, এই নামাযগুলো আদায়ের ক্ষেত্রেও কি আমাকে তারতীব রক্ষা করতে হবে? কিন্তু বাস্তবতা হল, কোন ওয়াক্ত আগে কোন ওয়াক্ত পরে তা নির্ধারণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার কাযা নামাযের সংখ্যা যেহেতু ছয় ওয়াক্তের বেশি তাই সেগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মাঝে তারতীব রক্ষা করতে হবে না। তাই আপনি ছুটে যাওয়া নামাযগুলো তারতীব রক্ষা করা ছাড়াই সুবিধামতো আদায় করে নিতে পারবেন। আর আপনার কাযা নামাযগুলো পড়া শেষ না হলেও চলমান ওয়াক্তিয়া নামায যথাসময়ে পড়তে থাকবেন।

উল্লেখ্য, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পাশাপাশি বিতর নামায ছুটে থাকলে তাও কাযা করতে হবে। আর কাযা আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করতে পারেন যে, আমার যিম্মায় থেকে যাওয়া নামাযের মধ্যে সর্বপ্রথম ফজরের ফরয নামায আদায় করছি বা সর্বপ্রথম যোহরের ফরয নামায আদায় করছি।

প্রকাশ থাকে যে, যথাসময়ে নামায আদায় না করা মারাত্মক গুনাহ। তাই কোনো অবস্থায় নামায কাযা না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কখনো কাযা হয়ে গেলে দ্রুত আদায় করে নিতে হবে। আর বিগত দিনের কাযার জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের গ্রামে একটি ওয়াকফিয়া মসজিদ আছে। মুসল্লী কম বিধায় কোনো...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে একটি ওয়াকফিয়া মসজিদ আছে। মুসল্লী কম বিধায় কোনো কোনো ওয়াক্তের আযান ও জামাত হয় না। তাই ছুটিতে আমি বাড়ি গেলে একটু দূরে অবস্থিত জুমআ মসজিদে নামায পড়ি। কিন্তু সেখানকার ইমাম সাহেব আমাকে মহল্লার মসজিদে নামায পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। এ অবস্থায় আমার জন্য কোন মসজিদে নামায পড়া অধিক উত্তম হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

উক্ত ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্য মসজিদে না গিয়ে মহল্লার ঐ মসজিদেই আপনার নামায পড়া উচিত। কেননা মহল্লার মসজিদ আবাদ করা মহল্লাবাসীর দায়িত্ব। তাই আপনি নিজেও সেখানে নামায পড়বেন এবং আশপাশের লোকজনকে ঐ মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে এবং মসজিদটি আবাদ রাখতে উদ্বুদ্ধ করবেন।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৮; শরহুল মুনইয়া ৬১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার ছেলের বয়স আড়াই বছর। সারাক্ষণ কোলে কোলেই থাকতে চায়।...

প্রশ্ন

আমার ছেলের বয়স আড়াই বছর। সারাক্ষণ কোলে কোলেই থাকতে চায়। আমি নামাযে দাঁড়ালে সে কোলে ওঠার জন্য কাপড় ধরে টানাটানি করে। এতে কখনো আমার হাত কনুই পর্যন্ত এমনকি কখনো বাহুও খুলে যায়। হাতের কব্জি পর্যন্ত পুরো হাত যেহেতেু নামাযে ঢেকে রাখা জরুরি, তাই তা খুলে গেলে আমি নামায ছেড়ে দেই। এখন বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো ছাড়া আমার নামাযে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হাত খুলে যাওয়ার সাথে সাথে তা আবার ঢেকে নিবেন। তৎক্ষণাৎ ঢেকে নিলে নামায নষ্ট হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের মধ্যে শরীরের যেসব অঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরি এগুলোর কোনো একটির এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি খুলে গেলে এবং তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় তা খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তিন তাসবীহর চেয়ে কম সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৮; ফাতহুল কাদীর ১/২২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের আগে ও পরে যে সুন্নত আছে তা আদায়ের...

প্রশ্ন

ফরয নামাযের আগে ও পরে যে সুন্নত আছে তা আদায়ের সময় আমি যদি পেছনের কাযা নামায এবং এই ওয়াক্তের সুন্নত আদায়ের জন্য একসাথে নিয়ত করি তাহলে সুন্নত ও কাযা দুটোই আদায় হবে কি না?

উত্তর

একসাথে কাযা ও সুন্নতের নিয়তে নামায শুরু করলে শুধু কাযাই আদায় হবে। সুন্নত আদায় হবে না। তাই সুন্নতের সাথে কাযার নিয়ত করা যাবে না। সুন্নত পৃথকভাবে আদায় করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮১; রদ্দুল মুহতার ২/১৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৪৩৮; উমদাতুল ফিকহ ১/৩৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

গত ইদুল ফিতরের নামাযে আমি ইমামতি করেছিলাম। নামাযের পর অন্যজনকে...

প্রশ্ন

গত ইদুল ফিতরের নামাযে আমি ইমামতি করেছিলাম। নামাযের পর অন্যজনকে দিয়ে খুতবা পড়িয়ে নেই। যিনি আমাদের চেয়ে বয়সে ও ইলমে বড়। তিনি যখন খুতবা পাঠ করতে উঠলেন তখন অন্য একজন বাধা দিলেন এবং বললেন, এভাবে একজন নামায পড়াবে আর অন্যজন খুতবা পাঠ করবে তা জায়েয নেই।

তাই প্রশ্ন হল, এরূপ করাটা সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

যিনি নামায পড়াবেন তারই খুতবা দেওয়া উত্তম। বিনা ওজরে এর ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। কিন্তু কেউ করলে তা নাজায়েয হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিনা ওজরে তা করে থাকলে অনুত্তম হয়েছে। ইলম ও আমলে বড় ব্যক্তিকে খুতবার জন্য দিতে চাইলে প্রথম থেকেই দিবে। যেন তিনি নামাযও পড়ান এবং খুতবাও পেশ করেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬২; মাজমাউল আনহুর ১/২৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই...

প্রশ্ন

আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে ভুলে দাঁড়িয়ে যাই এবং পঞ্চম রাকাত পড়ার পর আমার স্মরণ হয়। তারপর আমি আরো এক রাকাত বাড়িয়ে ষষ্ঠ রাকাত পূর্ণ করি এবং সাহু সিজদা আদায় করি। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার যোহরের নামায আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যোহর নামায আদায় হয়ে গেছে। চার রাকাতের পর তাশাহহুদ পরিমাণ বসার কারণে প্রথম চার রাকাত যোহরের ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে। আর বাকি দুই রাকাত নফল হিসেবে আদায় হয়েছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ুই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের...

প্রশ্ন

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ুই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নেই। আমার জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা চড়ুই পাখির বিষ্ঠা অপবিত্র নয়। তবে পরিচ্ছন্নতার জন্য তা ধুয়ে নামায পড়া ভালো।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৬১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাগরিব নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ভুলক্রমে সূরা...

প্রশ্ন

আমি মাগরিব নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ভুলক্রমে সূরা নাস পড়ে ফেলি। পরে দ্বিতীয় রাকাতেও সে সূরাই পাঠ করি। কিন্তু সাহু সিজদা আদায় করিনি।

প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি? ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে কখনো সূরা নাস পড়ে ফেললে দ্বিতীয় রাকাতে আমার করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত নামায যথানিয়মেই আদায় হয়েছে। কেননা প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা নাস পাঠ করা উচিত। তবে ইচ্ছাকৃত ফরযের উভয় রাকাতে একই সূরা পাঠ করা অনুত্তম। অবশ্য এ ভুলের কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় না।

-আততাজনীস ১/৪৬৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, দুজন মিলে জামাতে নামায পড়লে মুকতাদি ইমামের ডান...

প্রশ্ন

আমরা জানি, দুজন মিলে জামাতে নামায পড়লে মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় তৃতীয় ব্যক্তি আসলে তার কী করণীয়? সে ইমামের বাম পাশে দাঁড়াবে নাকি পিছনের কাতারে দাঁড়াবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দুজন মিলে জামাতে নামায পড়া অবস্থায় তৃতীয় কেউ আসলে তার জন্য উত্তম হল, পিছনের কাতারে দাঁড়ানো। আর ইমামের ডান পাশের মুসল্লির উচিত নামায অবস্থায় কিবলামুখী থেকেই পেছনের কাতারে চলে আসা। কিন্তু ডান পাশের মুসল্লি যদি পেছনের কাতারে না আসে এবং এমন মনে হয় যে সে এ অবস্থার কারণীয় সম্পর্কে জানে না তাহলে এক্ষেত্রে ডান পাশের মুসল্লিকে পেছনে আসতে বাধ্য করবে না। কেননা এতে তার নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বরং সেক্ষেত্রে নিজেই ইমামের বাম পাশে দাঁড়িয়ে যাবে। আর এ অবস্থায় সামনে জায়গা থাকলে ইমামের জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়া ভালো।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩০১০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় যোহরের নামাযের আগে সময় না থাকায় সুন্নত পড়তে...

প্রশ্ন

অনেক সময় যোহরের নামাযের আগে সময় না থাকায় সুন্নত পড়তে পারি না এবং সুন্নত পড়া ছাড়াই জামাতে শরিক হই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় ঐ ছুটে যাওয়া সুন্নত কোন সময় আদায় করব? পরবর্তী দু রাকাতের আগে না পরে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে যোহরের পরে দু’ রাকাত সুন্নত আদায়ের পর তা পড়বে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত কখনো ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের পরে দু’ রাকাত সুন্নতের পর আদায় করতেন।

-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৩৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; আলবহারুর রায়েক ২/৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় আমরা আমাদের আশেপাশের একাধিক মসজিদের আযান শুনে থাকি।...

প্রশ্ন

অনেক সময় আমরা আমাদের আশেপাশের একাধিক মসজিদের আযান শুনে থাকি। এক্ষেত্রে কি আমাদের সবগুলো আযানের উত্তর দিতে হবে? না শুধু আমাদের মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিলেই চলবে? বিষয়টির সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

পর্যায়ক্রমে একাধিক আযান শুরু হলে প্রথমটির উত্তর দিবে। অবশ্য কেউ চাইলে প্রত্যেকটির উত্তরও দিতে পারে। আর যদি সবগুলো আযান প্রায় একই সাথে শুরু হয় তাহলে নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিবে।

-শরহুল মুনইয়া ৩৭৯; ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১১০; আসসিআয়াহ ২/৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৩৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ঘরে পড়া সুন্নত, না মসজিদে...

প্রশ্ন

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ঘরে পড়া সুন্নত, না মসজিদে পড়া সুন্নত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করতেন? মসজিদে পড়ার কোনো প্রমাণ আছে কি? অনুগ্রহপূর্বক উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফজরের সুন্নতসহ সকল সুন্নত ও নফল নামায ঘরে আদায় করা উত্তম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ... তোমরা ঘরে নামায আদায় কর। কেননা ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য নামায ঘরে আদায় করাই উত্তম।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭৮১

আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত সাধারণত ঘরেই আদায় করতেন।

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত আদায় করে প্রয়োজন হলে আমার সাথে কথা বলতেন। অন্যথায় ফরয আদায় করার জন্য মসজিদে চলে যেতেন।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪১৮

অবশ্য সাহাবা ও তাবেঈন থেকে ফজরের সুন্নত মসজিদে আদায় করাও প্রমাণিত আছে। তাই মসজিদেও সুন্নত আদায় করা যাবে।

এক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলেন যখন ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেন। তিনি (প্রথমে) ফজরের দু’ রাকাত

সুন্নত আদায় করলেন।-শরহু মাআনিল আছার ১/২৫৫

আবু উসমান আনসারী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. মসজিদে এমন সময় এলেন যখন ইমাম ফজরের নামায পড়াচ্ছেন। আর তিনি তখনো ফজরের সুন্নত পড়েননি। তিনি প্রথমে পেছনে ফজরের সুন্নত আদায় করলেন। অতপর জামাতে শরিক হলেন।-শরহু মাআনিল আছার ১/২৫৬

অন্য বর্ণনায় আছে, বিশিষ্ট তাবেয়ী সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহ. মসজিদে এমন সময় এলেন যখন ইমাম ফজর নামায পড়াচ্ছেন। তিনি মসজিদের দরজার সামনে সুন্নত পড়লেন অতপর জামাতে শরিক হলেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৬৪৭৪; বাযলুল মাজহূদ ৬/৩৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯২১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা নামায আদায়ের সময় চুল খোঁপা করে রাখলে নামাযের কোনো...

প্রশ্ন

মহিলারা নামায আদায়ের সময় চুল খোঁপা করে রাখলে নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি? যদি সমস্যা হয় তাহলে চুল কিভাবে রাখতে হবে?

উত্তর

মহিলাদের জন্য নামাযের সময় চুল খোঁপা করে রাখতে কোনো বাধা নেই। কেননা মহিলাদের জন্য শরীয়তের বিধান হল, তারা নামায আদায়ের সময় পরিপূর্ণভাবে চুল ঢেকে রাখবে। নামায অবস্থায় তারা চুল ছেড়ে বা বেঁধে-যেকোনোভাবে রাখতে পারেন। তবে চুল ছাড়া থাকলে অসতর্কতাবশত কখনো তা খুলে যেতে পারে। তাই নামাযে চুল খোঁপা করে রাখাই ভালো।

-শরহুল মুনইয়া ২১২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি যে, আযানের মধ্যে ‘হাইয়াআলাস সালাহ’ এবং ‘হাইয়াআলাল ফালাহ’...

প্রশ্ন

আমরা জানি যে, আযানের মধ্যে ‘হাইয়াআলাস সালাহ’ এবং ‘হাইয়াআলাল ফালাহ’ বলার সময় ডানে-বামে চেহারা ফিরাতে হয়। আর তা এজন্য যে, যাতে সবাই আওয়াজ শুনতে পায়। বর্তমান সময়ে সাধারণত সকল মসজিদেই মাইক ব্যবহার করা হয়। আমি জানতে চাই যে, মাইকে আযান দেওয়ার সময়ও কি ডানে বামে চেহারা ফিরাতে হবে?

উত্তর

হ্যাঁ, মাইকে আযান দিলেও ‘হাইয়াআলাস সালাহ’ এবং ‘হাইয়াআলাল ফালাহ’ বলার সময় ডানে-বায়ে চেহারা ফিরানো উত্তম। কেননা, চেহারা ফিরানোর মধ্যে অন্যদের আওয়াজ শোনা বা না শোনার বিষয়টি ছাড়াও অন্য কোনো হেকমতও থাকতে পারে। তাই মাইকে আযান দিলেও এই সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে ডানে বামে চেহারা ফিরানো উচিত।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন রমযান মাসে বিতির নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত না...

প্রশ্ন

আমি একদিন রমযান মাসে বিতির নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। পরে পিছন থেকে মুক্তাদিরা লোকমা দিলে রুকু থেকে উঠে দুআয়ে কুনূত পড়ি এবং আবার রুকু করি। পরবর্তীতে সিজদা সাহু না দিয়েই নামায সমাপ্ত করি। এই অবস্থায় নামায সহীহ হয়েছে কি?

উল্লেখ্য, ভুলে রুকুতে যাওয়ার পর এক তাসবীহ পরিমাণ সময়ও বিলম্ব হয়নি; বরং রুকুতে যাওয়ার সাথে সাথেই আবার ফিরে আসি এজন্য সাহু সিজদা দেইনি। আর আমার যতটুকু মনে হয়েছিল আমার পিছনের মুক্তাদিগণও কেউ রুকুতে যায়নি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার দ্বারাই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য রুকুতে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হওয়া শর্ত নয়। কিন্তু যেহেতু সাহু সিজদা করা হয়নি তাই সকলকেই ঐদিনের বিতর নামায কাযা করে নিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার পর স্মরণ হলে দুআ কুনূতের জন্য রুকু থেকে ফিরে আসা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হল দুআয়ে কুনূতের জন্য ফিরে না এসে যথানিয়মে ঐ রাকাত পূর্ণ করে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ২/৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলা বলেছেন যে, তাকবীরে তাশরীক একবার...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলা বলেছেন যে, তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তিনবার বলা মুস্তাহাব। কিন্তু অন্য এক আলিমকে বলতে শুনেছি, তিনবার বলা সুন্নত পরিপন্থী, বিদআত। জানার বিষয় হল, মূলত তাকবীরে তাশরীক তিনবার বলা সুন্নত, না মুস্তাহাব? সাহাবায়ে কেরাম কতবার তাকবীর বলতেন? তাদের থেকে তিন তাকবীর বলা প্রমাণিত আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্ব আসরসহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকীবরে তাশরীক তথা-

الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد.

বলা ওয়াজিব। এই তাকবীর তিনবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা. কীভাবে তাশরীকের দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন তা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবীরের কথা উল্লেখ নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮, ৫৬৯৯; আলআওসাত, হাদীস : ২১৯৮, ২২০০

তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাযের পর উক্ত তাকবীর বলতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৬

অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে তাকবীরে তাশরীকের সাথে অন্য কিছু মিলিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন হযরত ইবনে উমর রা. তাকবীরে তাশরীকের আগে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন।-আলআওসাত, হাদীস : ২২০১

আর পূর্ণ তাকবীরে তাশরীক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়।

-আলআওসাত, হাদীস : ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ইমাম সাহেব ওয়াক্তিয়া নামাযের জামাতে একাধিক সূরা পড়েন। যেমন-ফজরের...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব ওয়াক্তিয়া নামাযের জামাতে একাধিক সূরা পড়েন। যেমন-ফজরের জামাতে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা বুরুজ পড়েন অতপর সূরা ত্বরিক পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম রাকাতের ন্যায় সূরা ফাতিহার পর সূরা দুহা এবং সূরা আলাম নাশরাহ পড়েন।

উল্লেখ্য যে, একাধিক সূরা পড়ার মাঝে আস্তে বিসমিল্লাহ পড়েন। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে জামাতের নামাযে বা একাকী নামায একাধিক সূরা পড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত কি না বিস্তারিত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

ফরয ও অন্যান্য নামাযের এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়া জায়েয আছে। তবে ফরয নামাযেএকাধিক সূরা না পড়াই উত্তম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল এমনইছিল। তিনি যেসব সূরা পড়তেন হাদীসের কিতাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তিনি ফরয নামাযেএকেক রাকাতে অনেক বড় বড় সূরাও পড়েছেন। কিন্তু একই রাকাতে একাধিক সূরা পড়তেন না।সাহাবী-তাবেয়ীগণের আমলও এমনই ছিল। যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, আমি এক রাকাতে দুটি সূরা মিলানো পছন্দ করি না। যদিও আমাকে অতি মূল্যবান লাল উটদেওয়া হয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৭২৮

উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে সূরা তাকবীর, সূরা তূর এবংএ জাতীয় সুরা পড়তেন।

এছাড়া সূরা ইয়াসীন, সূরা মুমিনুন, সূরা রুম ও অন্যান্য সূরা ফজরের নামাযে পড়ার কথাও হাদীসশরীফে এসেছে।

-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার...

প্রশ্ন

নামাযে ইমাম সাহেব যদি ভুল করেন তাহলে আমরা আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুল করে যোহরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন আমরা যথারীতি আল্লাহু আকবার বলে লোকমা দেই। নামায শেষে একজন আলেম বললেন, হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা আছে। আল্লাহু আকবার বলে নয়। সুতরাং সুবহানাল্লাহ বলাই উচিত। ঐ আলেমের কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ আলেম ঠিক বলেছেন। ইমামের কোনো ভুল হলে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়া সুন্নত।কেননা একাধিক হাদীসে সুবহানাল্লাহ বলে লোকমা দেওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। রাসূলে কারীমসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাযে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেন সুবহানাল্লাহবলে।-সহীহ বুখারী ১/১৬৫

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে)দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান। তখন সাহাবায়ে কেরাম সুবহানাল্লাহ বলে লোকমাদিয়েছেন।-সুনানে নাসায়ী ১/১৩২

সুতরাং কোনো ভুলের ব্যাপারে ইমামকে সতর্ক করতে চাইলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহবলা উচিত।

-শরহু মাআনিল আছার ১/২৯৪; নুখাবুল আফকার ৪/৩৬৯; আলমাবসূত ১/২০০; মুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; শরহুল মুনইয়া ৪৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

হাদীস শরীফে এসেছে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে জামাতে নামায...

প্রশ্ন

হাদীস শরীফে এসেছে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে জামাতে নামায আদায় করলে দুটি মুক্তির সনদপত্র লেখা হয়। একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর একটি হল নেফাক থেকে মুক্তি।

জানার বিষয় হল, তাকবীরে উলার সময় কতটুকু, ইমামের সাথে সাথেই তাকবীরে তাহরীমা বলতে হবে নাকি প্রথম রাকাত পেলেই তাকবীরে উলা পেয়েছে বলে ধরা হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

তাকবীরে উলা সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ :

من صلى أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولى كتب له براءتان : براءة من النار، وبراءة من النفاق

অর্থ : যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামায আদায় করবে এবং সে প্রথম তাকবীরও পাবে তার জন্যদুটি মুক্তির পরওয়ানা লেখা হবে। (এক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (দুই) নেফাক থেকে মুক্তি।-সুনানেতিরমিযী ১/৩৩; আততারগীব ১/২৬৩

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমামের প্রথম তাকবীর বলার সাথে সাথে তাকবীর বলে নামায শুরুকরলে তাকবীরে উলা পাবে। সুতরাং ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথেই নামাযে শরিক হওয়ারচেষ্টা করতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, সূরা ফাতেহা শেষ হওয়ার আগে জামাতে শরিক হতে পারলেওকোনো কোনো ফকীহ তাকবীরে উলার সওয়াব হাসিল হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, ইমামকে রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়া যায়। ইমামকে রুকু...

প্রশ্ন

আমরা জানি, ইমামকে রুকুতে পেলে রাকাত পাওয়া যায়। ইমামকে রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় বা সিজদারত বা বসা অবস্থায় পেলে সেই রাকাত পাওয়া যায় না। এ সকল অবস্থায় রাকাত পাওয়া না গেলেও ইমামের সাথে তখনি জামাতে শরিক হতে হবে নাকি ইমামের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করতে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ইমামের সাথে রুকু না পেলেও ইমামকে নামাযের যে অবস্থাতেই পাওয়া যাবে অপেক্ষা না করেতখনই জামাতে শরিক হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إذا وجدتم الإمام فقوموا أو قاعدا فاقعدوا أو راكعا فاركعوا أو ساجدا فاسجدوا.

তোমরা ইমামকে নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় পেলে দাঁড়িয়ে যাবে। বৈঠক অবস্থায় পেলে বসে পড়বে।আর রুকু অবস্থায় পেলে রুকুতে চলে যাবে। আর সিজদায় পেলে সিজদায় শরিক হয়েযাবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৫৯; আলমাতালিবুল আলিয়া, হাদীস : ৪৭৯; উমদাতুল কারী ৫/১৫২; ফাতহুল বারী ২/১৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১;

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় আমার এমন হয় যে, ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে...

প্রশ্ন

অনেক সময় আমার এমন হয় যে, ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পরিবর্তে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। পরে স্মরণ হলে তাশাহহুদ পড়ি। এ অবস্থায় কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৩৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একজন বললেন, যদি ফরয বা ওয়াজিব নামায কাযা হয়ে যায়...

প্রশ্ন

একজন বললেন, যদি ফরয বা ওয়াজিব নামায কাযা হয়ে যায় তবে তা তওবা করলেও মাফ হবে না। আদায় করা জরুরি। কেননা যে কাজের কারণে গুনাহ লেখা হয় তা তাওবার দ্বারা মাফ হবে ঠিক কিন্তু যে কাজের জন্য আযাব লেখা হয় সেটা তওবা দ্বারা মাফ হয় না। যেমন নামায না পড়লে লেখা হয় আযাব, গুনাহ নয়। সুতরাং নামায পুনরায় পড়া ছাড়া শবে কদর পেলেও পরিত্রাণ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উপরোক্ত কথাগুলো কুরআন-হাদীসসম্মত কি না। সঠিক বিষয় জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফরয বা ওয়াজিব নামায ছুটে গেলে, তা পরবর্তীতে কাযা করে নেওয়া জরুরি। শুধু তাওবা করে নেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রশ্নের এ কথাটি সঠিক। কিন্তু প্রশ্নে এর কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কাযা নামায আদায় করা জরুরি এ বিষয়টি একাধিক সহীহ হাদীস এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬২; ইলাউস সুনান ৭/১৪১, ১৪৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে কি হাতঘড়ি বা দেওয়ালঘড়ি দেখা যাবে? আর ঘড়ি...

প্রশ্ন

নামাযের মধ্যে কি হাতঘড়ি বা দেওয়ালঘড়ি দেখা যাবে? আর ঘড়ি কোন হাতে পরা ভালো? আমি তো ডান হাতে পরি, অনেক মানুষ আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলেছি, ডান হাতে পরা সুন্নত।

উত্তর

নামাযে অনিচ্ছাকৃত ঘড়িতে দৃষ্টি পড়লে তাতে নামাযের ক্ষতি হবে না। তবে নামাযে ইচ্ছাকৃত ঘড়ি বা অন্য কিছুর দিকে তাকানো মাকরূহ। আর প্রয়োজনে ঘড়ি রাখা মুবাহ। কেউ তা হাতে রাখতে চাইলে যেকোনো হাতেই রাখতে পারে। ডান হাতে ঘড়ি পরা সুন্নত-এ ধারণা ঠিক নয়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৪; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ২৪/৩৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে কীভাবে মন স্থির রাখা যায়। খুশু-খুযুর গুরুত্ব কী? খুশু-খুযুর...

প্রশ্ন

নামাযে কীভাবে মন স্থির রাখা যায়। খুশু-খুযুর গুরুত্ব কী? খুশু-খুযুর সাথে নামায পড়ার উপায় কী? বিস্তারিত জানালে খুব উপকৃত হব।

উত্তর

নামাযে খুশু-খুযু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন-হাদীসে এ সম্পর্কে অনেক তাকীদ করা হয়েছে। খুশু-খুযুর দুটি অংশ রয়েছে : এক. নামাযে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। দুই. মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা। এ দুটি বৈশিষ্ট্যের সাথে যে নামায আদায় করা হয় তাকে খুশু-খুযুযুক্ত নামায বলে। এ দুটি বৈশিষ্ট্য কীভাবে অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

এক. বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। যেমন হাত, পা এবং শরীরকে নামাযের বাইরের কোনো কাজে ব্যবহার না করা। অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকা। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি (অঙ্গের) উপর সিজদা করে এবং নামাযে চুল বা কাপড় না গুটায়।-সুনানে আবু দাউদ ২/১৪, হাদীস : ৮৮৬

নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন মনে হত একটি কাঠ মাটিতে গেড়ে দেওয়া হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৩২২

প্রখ্যাত তাবেয়ী আ’মাশ রাহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তাকে দেখে মনে হত যেন একটি পড়ে থাকা কাপড়।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৩০৩

তদ্রূপ এদিক সেদিক না তাকানো; নামায অবস্থায় যখন যেখানে দৃষ্টি রাখা নিয়ম সেখানে দৃষ্টি রাখাও বাহ্যিক খুশু-খুযুর অন্তর্ভুক্ত।

আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাযে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটা হল শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামায থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৫১

বিশিষ্ট সাহাবী আবু যর রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাযের সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ (রহমতের) দৃষ্টি রাখেন যতক্ষণ নামাযী অন্য কোনো দিকে দৃষ্টি না দেয়। যখন সে অন্য দিকে চেহারা ফেরায় তখন আল্লাহ তাআলা তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৫০৮

দুই. নামাযে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা।

ক) এমন মনোভাব নিয়ে নামায আদায় করা যে, এটিই তার জীবনের শেষ নামায।

বিশিষ্ট সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষিপ্তভাবে দ্বীনের কিছু কথা বলে দিন। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন নামায পড় তখন জীবনের শেষ নামায আদায়কারীর মতো নামায পড়।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৭১

খ) পুরো নামায এ অনুভূতি নিয়ে আদায় করা যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন, আমি তার সামনে দন্ডায়মান।

প্রসিদ্ধ হাদীসে-জিবরীলে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর তুমি যদি আল্লাহকে না-ও দেখ তবে আল্লাহ তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮

গ) সাথে সাথে এ খেয়াল করবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং তাঁর সাথে কথা বলছি। কেননা নামায হল আল্লাহ তাআলার সাথে একান্তে কথোপকথন করা।

সহীহ বুখারীতে এসেছে, সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে আল্লাহর সাথে একান্তে কথা বলে; যতক্ষণ সে তার নামাযের জায়গায় থাকে।-সহীহ বুখারী,

হাদীস : ৪১৬

উপরে বর্ণিত পন্থাগুলো অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার কাছে একাগ্রতা অর্জনের জন্য নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় দুআও করতে হবে।

মনোযোগ রাখার আরেকটি সহজ পন্থা হল, নামাযের কিরাত ও আযকারের দিকে মনোযোগ রাখা। অর্থ বুঝলে অর্থের দিকেও ধ্যান রাখা। কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যদিকে খেয়াল চলে গেলে ক্ষতি নেই। তবে স্মরণ হওয়ামাত্র পুনরায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে। স্মরণ হওয়ার পরও অন্য কিছু খেয়াল করতে থাকা বা ইচ্ছাকৃত অন্য কিছুর খেয়াল আনা নিষিদ্ধ। তাই এ থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে নামায পড়লে ইনশাআল্লাহ তা খুশু-খুযু বিশিষ্ট নামায বলে গণ্য হবে।

উল্লেখ্য যে, সাহাবা-তাবেয়ীন ও বুযুর্গানে দ্বীনের নামাযের বিবরণ পাঠ করাও খুশু-খুযু হাসিলের ক্ষেত্রে সহায়ক। তবে তাদের যেসব ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের খুশু-খুযুর বিবরণ পাওয়া যায় সেসব ঘটনা পাঠ করে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ খুশু-খুযুর বিভিন্ন পর্যায় আছে এবং চেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে ধীরে ধীরে উচ্চ পর্যায়ের খুশু-খুযুও হাসিল হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঐ পর্যায়ের খুশু-খুযু অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমীন।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/২৫২; তাফসীরে কুরতুবী ১/২৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একটি হাদীসে দেখলাম, নামাযে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু...

প্রশ্ন

একটি হাদীসে দেখলাম, নামাযে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এটি হল ইখতিলাস। জানতে চাই, ইখতিলাস শব্দের অর্থ কী এবং এর দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত হাদীসটি সহীহ বুখারীতে আছে (১/১০৪, হাদীস : ৭৫১)। পূর্ণ হাদীসটি হল-

عن عائشة رضي الله تعالى عنها قالت : سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الالتفات في الصلاة، فقال هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد.

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য...

প্রশ্ন

ফরয নামাযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা সূরার অংশ বিশেষ পড়লে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে কি না? এ প্রশ্নের জবাব আলেমদের নিকট থেকে দুভাবে পেয়েছি। রুকুতে যেতে বিলম্ব হয়েছে বিধায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে-কেউ এমন কথা বলেন। আর কেউ বলেন, ওয়াজিব হবে না। কোনটি সঠিক? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ফরযের শেষ দুই রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলালেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার কথাটি ঠিক নয়। এবং ওয়াজিব হওয়ার পেছনে যে কারণ বলা হয়েছে তাও যথার্থ নয়। কেননা ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পরপরই রুকু না করে বিলম্ব করলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৮; শরহুল মুনইয়া ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বড় ভাই একজন ভালো হাফেয। সে রীতিমতো দৈনিক সকাল-বিকাল...

প্রশ্ন

আমার বড় ভাই একজন ভালো হাফেয। সে রীতিমতো দৈনিক সকাল-বিকাল কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে। কিন্তু সে সকালে কুরআন মজীদ তিলাওয়াতের সময় কখনো কুরআন মজীদের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। কখনো কখনো কুরআন মজীদ খোলা রেখে কথা বলতে দেখা যায়। এ কাজগুলো কেমন অপরাধ? মুফতী সাহেবের নিকট কুরআন তিলাওয়াতের এ সম্পর্কিত আদাব জানতে চাই।

উত্তর

কুরআন মজীদ আল্লাহ তাআলার কালাম। কুরআন মজীদ তিলাওয়াতের বেশ কিছু আদব রয়েছে। প্রত্যেক তিলাওয়াতকারীর কর্তব্য হল সে আদবগুলো অনুসরণ করা। তন্মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আদব এই-

ক) মন-মস্তিষ্ক সজাগ অবস্থায় পূর্ণ আগ্রহভরে তিলাওয়াত করা।

খ) ঘুমের চাপ থাকা অবস্থায় তিলাওয়াত না করা।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাতে নামায পড়তে দাঁড়ায় এবং (ঘুমের কারণে) কুরআন তার জিহবায় জড়িয়ে যায়, সে নিজেও জানে না সে কী পড়ছে, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭৮৭)

গ) কুরআন মজীদের উপর মাথা বা অন্য কোনো অঙ্গ দ্বারা ভর না দেওয়া।

ঘ) তিলাওয়াত চলাকালে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকা।

হযরত নাফে রাহ. বলেন, হযরত ইবনে উমর রা. যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন তিলাওয়াত থেকে ফারেগ হওয়া পর্যন্ত কারো সাথে কথা বলতেন না।

-সহীহ বুখারী ২/৬৪৯; আততিযকার ফী আফজালিল আযকার পৃ. ১৯১; আততিবইয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন ১১১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৭; তাফসীরে কুরতুবী ১/২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) আমি শুনেছি, তিলাওয়াতের কারণে যত সিজদাই ওয়াজিব হোক চৌদ্দটি...

প্রশ্ন

ক) আমি শুনেছি, তিলাওয়াতের কারণে যত সিজদাই ওয়াজিব হোক চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে সবগুলো সিজদা আদায় হয়ে যাবে। জানার বিষয় হল, কথাটি ঠিক কি না?

প্রশ্ন : খ) অনেক সময় দেখা যায়, নামাযে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর আলাদা সিজদা না করে নামাযের সিজদার মাধ্যমেই তা আদায় করে নেন, কিন্তু অনেক মুকতাদি সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে নামাযের সিজদার সাথে তিলাওয়াতের সিজদার নিয়ত করে না। জানার বিষয় হল, এভাবে মুকতাদির তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হবে কি? তাদের জন্য কি নিয়ত করার হুকুম নেই?

উত্তর

ক) পুরো কুরআন মজীদে তিলাওয়াতে সিজদার আয়াত মোট চৌদ্দটি। সুতরাং পুরো কুরআন মজীদ খতম করার পর চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে এক খতমের সকল সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রশ্নোক্ত কথা দ্বারা যদি এটা উদ্দেশ্য হয় যে, একাধিক খতম করে কিংবা সারা জীবন যত তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে সবগুলোর জন্য চৌদ্দটি সিজদা আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে-তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং যতগুলো সিজদার আয়াত যতবার তিলাওয়াত করা হয়েছে সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সিজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সিজদা ওয়াজিব হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত বিলম্ব না করে সিজদার আয়াতের পরেই আদায় করা উচিত।-শরহুল মুনইয়া ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮

খ) নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর যদি আরো দু আয়াতের বেশি তিলাওয়াত করার পূর্বেই নামাযের রুকু-সিজদা করা হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে ইমাম-মুকতাদি সকলের তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য ভিন্নভাবে নিয়ত করা শর্ত নয়। এমনকি সিজদার আয়াত পড়া হয়েছে বা সিজদা ওয়াজিব হয়েছে একথা মুকতাদিগণ না বুঝলেও তাদের সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে সর্বক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য নামাযেই পৃথকভাবে সিজদা করা উত্তম।

আর যদি সিজদার আয়াতের পর দুই আয়াতের বেশি পড়া হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতের সিজদাটি আদায়ের সুযোগ থাকবে না। সেক্ষেত্রে তিলাওয়াতের জন্য নামাযেই ভিন্নভাবে সিজদা করতে হবে।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বেশিরভাগ আন্তনগর ট্রেনে বেশিরভাগ নামাযের কক্ষ আছে। তবে ট্রেন চলা...

প্রশ্ন

বেশিরভাগ আন্তনগর ট্রেনে বেশিরভাগ নামাযের কক্ষ আছে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া কঠিন হয়। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বা পড়েও যাই। আবার নামায অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা মুশকিল হয়। এমতাবস্থায় কিভাবে নামায আদায় করব জানা প্রয়োজন।

উত্তর

সম্ভব হলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয। তাই ট্রেনেও ভ্রমণকালে যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে কিছু ধরেও দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে বসে নামায পড়তে পারবে।

আর ট্রেনেও নামায শুরু করার সময় কেবলার দিক নিশ্চিত করে সেদিকে ফিরে নামায পড়তে হবে। অতপর নামায অবস্থায় ট্রেন ঘুরে যাওয়ার কারণে কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে নামাযী তা বুঝামাত্র কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও নামাযে কিবলার দিকে না ঘুরলে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। তবে শুরুতে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে না পারার কারণে যদি ঐভাবেই নামায শেষ করে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য যে, চলন্ত ট্রেনে ঐ সময় নামাযে দাঁড়ানো উচিত যখন ট্রেনটি একদিকে চলতে থাকে তাহলে নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তন করতে হবে না।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৬ বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯১; রদ্দুল মুহতার ২/১০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন হল আমি নামায শুরু করেছি। আমি নামাযে এভাবে সিজদা...

প্রশ্ন

কিছুদিন হল আমি নামায শুরু করেছি। আমি নামাযে এভাবে সিজদা করি যে, বাহুর সাথে পাঁজর এবং উরুর সাথে পেট মিলিয়ে রাখি। কিন্তু একজন মাওলানা সাহেব বললেন, সিজদার মধ্যে বাহু পাঁজর থেকে এবং পেট উরু থেকে পৃথক রাখতে হবে। এখন জানতে চাই, মাওলানা সাহেবের কথা কতটুকু সঠিক?

উত্তর

মাওলানা সাহেব যথার্থই বলেছেন। পুরুষের জন্য সিজদার মধ্যে বাহুকে পাঁজর থেকে এবং পেটকে উরু থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। হযরত

মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর উভয় বাহুকে পৃথক রাখতেন, এমনকি যদি কোনো ছাগলছানা তাঁর বাহুর নিচ দিয়ে গমন করার ইচ্ছা করত তাও সম্ভব হত।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৫; মাবসূত ১/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি এক রাকাতে ভুলে তিনটি সিজদা করে এবং সাহু...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি এক রাকাতে ভুলে তিনটি সিজদা করে এবং সাহু সিজদা না করেই নামায শেষ করে। এমতাবস্থায় তার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সিজদা করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সাহু সিজদা না করার কারণে তাকে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৩১৯, হাদীস : ৩৫২৪; কিতাবুল আছল ১/২৪২; মাবসূত, সারাখসী ১/২২৮-২২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার এক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছে এবং আমি একামত ছাড়াই...

প্রশ্ন

আমার এক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছে এবং আমি একামত ছাড়াই কাযা করি। কিন্তু একজন আলেমের কাছে শুনলাম, কাযা নামাযের জন্যও ইকামত দিতে হবে। উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? তাহলে কি আমাকে পুনরায় কাযা আদায় করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

কাযা নামাযের জন্যও আযান ও ইকামত দেওয়া সুন্নত। তবে আযান ইকামত না দেওয়ার কারণে বিগত দিনের কাযা নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

উল্লেখ্য একাকী কাযা আদায় করলে নিম্নস্বরে আযান ও ইকামত দিবে। এমনিভাবে যদি কোনো মসজিদে কাযা নামায আদায় করা হয় তাহলে জামাতে পড়লেও উঁচু আওয়াজে আযান ইকামত দেওয়া যাবে না; বরং শুধু জামাতের লোকজন শুনতে পায় এবং অন্যদের বিঘ্ন না ঘটে এতটুকু উঁচু শব্দ করতে পারবে।

-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৯৯৭; সুনানে নাসায়ী ১/৭৬-৭৭; কিতাবুল আছল ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি নামাযে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত এরপর হাটু রাখি।...

প্রশ্ন

আমি নামাযে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত এরপর হাটু রাখি। এরপর ইমাম সাহেবের কাছে শুনেছি যে, সিজদায় প্রথমে হাটু এরপর হাত রাখতে হবে। এখন জানতে চাচ্ছি, এর মধ্যে কোন মতটি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ইমাম সাহেবের কথাই সঠিক। সিজদায় যাওয়ার সময় নিয়ম হল, জমিনে প্রথমে হাটু রাখা এরপর হাত রাখা। হাদীস শরীফে আছে, হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাতের পূর্বে হাটু রাখতে এবং সিজদা থেকে উঠার সময় হাটুর পূর্বে হাত জমিন থেকে উঠাতে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ ১/১২২)

অবশ্য বৃদ্ধ বা মাজুর যাদের এভাবে সিজদা করতে কষ্ট হয় তারা চাইলে জমিনে আগে হাত রাখতে পারবেন।

-জামে তিরমিযী ১/৩৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৭১৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯১; শরহুল মুনইয়া ৩২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার নামাযে মেহরাবের কাছে দাঁড়ান আর...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার নামাযে মেহরাবের কাছে দাঁড়ান আর ওয়াক্তিয়া নামাযগুলোতে মেহরাব ছেড়ে এক কাতার পিছনে দাঁড়ান। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেব ওয়াক্তিয়া নামাযে মেহরাব ছেড়ে এক কাতার পিছনে দাঁড়ানো জায়েয কি না। আর জায়েয হলেও তা অনুত্তম হবে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ইমাম সাহেবের জন্য মেহরাবে দাঁড়ানো সুন্নত। বিনা ওজরে মেহরাব বরাবর পিছনে কাতারের ঠিক মাঝখানে দাড়ালে অনুত্তম হবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২১১; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৩০/৩৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মহল্লার মসজিদটি ছোট। জুমআর দিন মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয়...

প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদটি ছোট। জুমআর দিন মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হয় না। আর মসজিদের উত্তর পাশে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত একটি পুকুর আছে। এখন কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐ পুকুর ভরাট করে মসজিদ ঐ দিকে সম্প্রসারিত করে তিন তলা বিশিষ্ট করে নির্মাণ করবে। তবে সম্প্রসারিত অংশে নিচ তলার কিছু জায়গায় ইমাম সাহেবের জন্য ফ্যামিলি কোয়ার্টার বানাবে। আর উপর তলাগুলোর শতভাগই নামাযের জন্য নির্ধারিত থাকবে। জানার বিষয় হল, মসজিদের বর্ণিত অংশে ইমাম সাহেবের জন্য ফ্যামিলি কোয়ার্টার বানানো বৈধ হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যে অংশে পুকুর রয়েছে সেটা সেহেতু এখনো মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়নি; বরং নতুনভাবে তাতে মসজিদ সম্প্রসারিত হচ্ছে তাই এ অংশের নিচ তলায় ইমাম সাহেবের জন্য ফ্যামিলি কোয়ার্টার বানানো জায়েয হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৩৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, নামাযে মহিলাদের হাতের তালু ও পিঠ কোনোটিই সতরের...

প্রশ্ন

আমরা জানি, নামাযে মহিলাদের হাতের তালু ও পিঠ কোনোটিই সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্য অনেক সময় হাত অনাবৃত রেখেও নামায পড়তাম। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে আমাদের গ্রামের এক মহিলা বলল যে, হাতের পিঠ নাকি সতর। তার কথা কি ঠিক? এব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী মহিলাদের হাতের তালু ও পিঠ নামাযে ঢেকে রাখা জরুরি নয়। বরং খোলা রাখার অবকাশ আছে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত মহিলার কথাটি সঠিক নয়।

-আসসিআয়াহ ২/৭২; শরহুল মুনইয়া ২১১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯-২৭০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৩১; মিনহাতুল খালেক ১/২৬৯-২৭০; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৫-৪০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কোনো মাসবুক যদি ইমাম সাহেবকে রুকুতে পায় অতপর মাসবুক ইমামের...

প্রশ্ন

কোনো মাসবুক যদি ইমাম সাহেবকে রুকুতে পায় অতপর মাসবুক ইমামের সাথে মাত্র একবার রুকুর তাসবীহ পড়তে পেরেছে, দ্বিতীয় তাসবীহ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেছেন তাহলে মাসবুকের নামাযের হুকুম কি?

উত্তর

ইমামকে স্বল্প সময়ের জন্য রুকুতে পেলেই রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হয়। ইমামের সাথে রুকুর তাসবীহ পড়া জরুরি নয়; তবে এক্ষেত্রে ইমামকে রুকু অবস্থায় পাওয়ার পর ইমাম উঠে গেলেও সে একবার তাসবীহ পড়ে উঠবে। কেননা রুকুতে এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা ওয়াজিব। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ঐ রাকাত পেয়েছে এবং তার নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছে।

হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে ইমাম (রুকু থেকে) মাথা উঠানোর পূর্বে রুকুতে শামিল হল সে (ঐ) রাকাত পেয়ে গেল।

-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৭৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৪৭; রদ্দুল মুহতার ২/৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৩৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকায় একটি প্রচলন আছে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি প্রচলন আছে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আযান দেওয়া হয়। অনেকে এর পিছনে এই যুক্তি পেশ করে যে, আযান শুনলে শয়তান পলায়ন করে তাই মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের সময় শয়তান যাতে মৃত ব্যক্তিকে কুমন্ত্রণা না দিতে পারে সেজন্য আযান দিয়ে শয়তানকে বিতাড়িত করা হয়। জানার বিষয় হল, এই প্রচলনটি কি শরীয়তসম্মত? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দাফনের পর কবরে আযান দেওয়ার প্রচলনটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন কারো থেকেই এ ধরনের আমল বা বক্তব্য প্রমাণিত নয়। সুতরাং এ কাজটি কু-রসম ও বিদআত। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এই দ্বীনের মাঝে কোনো নতুন বিষয় আবিষ্কার করবে, যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়- তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ বুখারী ১/৩৭১)

উল্লেখ্য যে, কোনো আমলের জন্য মনগড়া যুক্তি পেশ করা তা বৈধ হওয়া প্রমাণ করে না; বরং কোনো আমল প্রমাণের জন্য শরীয়তের যথাযথ দলীল-প্রমাণ থাকা জরুরি।

-সহীহ বুখারী ১/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৫, ২/২৩৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় নামায পড়ার সময় সেজদায় মাথা থেকে টুপি পড়ে...

প্রশ্ন

অনেক সময় নামায পড়ার সময় সেজদায় মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়। যার কারণে নিজের কাছে খুবই অস্বস্তি বোধ হয়। এর থেকে বাঁচার জন্য সেজদা থেকে উঠার সময় যদি টুপি তুলে মাথায় দেই তাহলে এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?

উত্তর

নামায অবস্থায় মাথা থেকে পড়ে যাওয়া টুপি সেজদা থেকে উঠা কিংবা বসা অবস্থায় এক হাত দিয়ে মাথায় তুলে নিলে নামাযের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং এমনটি করাই উত্তম। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এতে নামায ফাসেদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তাই আপনি যদি এক হাত দিয়ে মাথায় টুপি তুলে দেন তবে আপনার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

-সহীহ বুখারী ১/১৫৭; শরহুল মুনইয়া ৪৪২-৪৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৮৫৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সওমএকটি বইয়ে পড়েছি, বালেগ হওয়ার কোনো আলামত প্রকাশ না পেলেও...

প্রশ্ন

সওম

একটি বইয়ে পড়েছি, বালেগ হওয়ার কোনো আলামত প্রকাশ না পেলেও ছেলে-মেয়েদের বয়স ১৫ বছর হলে তাদের উপর নামায-রোযা ফরয হয়ে যায়। এ কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

হ্যাঁ, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার বাহ্যিক নিদর্শন প্রকাশ না পেলেও চন্দ্রবর্ষ হিসেবে ছেলে বা মেয়ের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হলেই শরীয়তের দৃষ্টিতে সে বালেগ। সুতরাং তখন থেকেই তার জন্য নামায-রোযাসহ শরীয়তের অন্যান্য বিধিবিধান আরোপিত হবে।

-সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আযানের মতো ইকামতেরও কি জবাব দিতে হয়? এ বিষয়ে কোনো...

প্রশ্ন

আযানের মতো ইকামতেরও কি জবাব দিতে হয়? এ বিষয়ে কোনো হাদীস আছে কি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হ্যাঁ, ইকামতেরও মৌখিক জবাব দেওয়া সুন্নত। সাহাবী আবু উমামা রা. বলেন, বিলাল রা. ইকামত শুরু করলেন। যখন তিনি ‘কাদ কামাতিস সালাহ’ উচ্চারণ করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন-‘আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা।’ আর বাকি শব্দগুলোতে আযানের মতোই বললেন।

সুনানে আবু দাউদ ১/৭৮; বযলুল মাজহূদ ৪/৯৩; ইলাউস সুনান ২/১২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪০০; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/৮৭; শরহুল মুহাযযাব ৩/১৩০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা আলেমদের নিকট শুনেছি যে, মাগরিবের নামাযে কিসারে মুফাসসাল থেকে...

প্রশ্ন

আমরা আলেমদের নিকট শুনেছি যে, মাগরিবের নামাযে কিসারে মুফাসসাল থেকে পড়া সুন্নত। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব এর বাইরে থেকে অনেক লম্বা কিরাত পড়েন। মাগরিবে এমন লম্বা কিরাত পড়া কি ঠিক?

উত্তর

ইমামের জন্য মাগরিব নামাযে ছোট কিরাত পড়া হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, ‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব নামাযে কিসারে

মুফাসসাল পড়তেন।’ (শরহু মাআনিল আছার ১/১৫৭; ইলাউস সুনান ৪/৩৫)

অন্য রেওয়ায়েতে হযরত উমর রা. আবু মুসা আশআরী রা.কে মাগরিবের নামাযে কিসারে মুফাসসাল থেকে পড়তে বলেছেন। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৫৭; ইলাউস সুনান ৪/৩২)

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হযরত আবু আবদুল্লাহ মুনাবিহী রাহ. বলেন, আমি আবু বকর রা.-এর খেলাফতকালে একবার মদীনায় এলাম। তাঁর পিছনে মাগরিব আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা ও কিসারে

মুফাসসাল থেকে একটি করে সূরা পড়লেন। (মুয়াত্তা, ইমাম মালেক পৃ. ২৭; ইলাউস সুনান ৪/৩৯)

যাহহাক ইবনে উসমান রাহ. বলেন, আমি উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.কে মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল পড়তে দেখেছি। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৪)

সূরা বাইয়িনাহ থেকে নাস পর্যন্ত সূরাসমূহকে কিসারে মুফাসসাল বলে।

সুতরাং মাগরিব নামাযে কেসারে মুফাসসাল থেকে পড়া উত্তম। অবশ্য রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো মাগরিব নামাযে সূরা তুর, সূরা মুরসালাত ও এ জাতীয় বড় সূরা পড়েছেন এ কথাও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই মাঝেমধ্যে কিসারে মুফাসসালের বাইরে এবং কিসারে মুফাসসালের পরিমাণের চেয়ে বেশি পড়লে তা সুন্নতের খেলাফ হবে না। তবে ইমামের উচিত মুফাসসালাতের বাইরে পড়লে মুসল্লীদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে পড়া এবং কেরাত বেশি লম্বা না করা। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নামাযে ইমামতি করবে তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত করে। কারণ তাদের (মুক্তাদীদের) মধ্যে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোকও থাকে। আর যখন একাকী নামায পড়ে তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারে।’ (সহীহ বুখারী ১/৯৭)

তাই সাধারণ অবস্থায় ইমামের জন্য কেরাতের মাসনূন পরিমাণের চেয়ে দীর্ঘ করা উচিত নয়।

শরহু মাআনিল আছার ১/৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ. ২৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৪; নাসবুর রায়াহ ২/৫; আসসিআয়াহ ২/২৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৮১; ফাতহুল কাদীর ১/২৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

রুকু-সিজদায় তিনবারের চেয়ে কম তাসবীহ পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে...

প্রশ্ন

রুকু-সিজদায় তিনবারের চেয়ে কম তাসবীহ পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?

উত্তর

রুকু-সিজদায় কমপক্ষে তিন তিনবার তাসবীহ পড়া সুন্নত। ইচ্ছা করে তিনবারের কম পড়া অনুচিত। তবে তাতেও নামায আদায় হয়ে যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রুকু করে তখন সে যেন তিনবার সুবাহানা রাবিবয়াল আযীম বলে এবং যখন সিজদা করে তখন যেন তিনবার সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা বলে। যখন সে এভাবে চরবে তখন তার রুকু ও সিজদা পূর্ণ হ বে। আর এটি হল তাসবীহ আদায়ের সর্বম্নি পরিমাণ।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৫২, হাদীস : ২৫৯০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৪৯, হাদীস : ২৫৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০৩; মাবসূত, সারাখসী ১/২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ৪৪; শরহুল মুনইয়াহ ২৮২, ৩১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন এশার নামাযে সামনের কাতার পুরা না হওয়া সত্ত্বেও...

প্রশ্ন

আমি একদিন এশার নামাযে সামনের কাতার পুরা না হওয়া সত্ত্বেও পিছনের কাতারে পাখার নিচে দাঁড়াই। পরে আমার সংশয় জেগেছে, আমার নামায হয়েছে কি না। আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

আপনার নামায হয়ে গেছে। তবে সামনের কাতার পুরা না করে পিছনে দাঁড়ানো মাকরূহ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, কাতারের নিয়ম হল, আগে সামনের কাতার পূর্ণ করা। তারপর পিছনে কাতার করা। হযরত আনাস রা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আগে সামনের কাতার পূর্ণ কর। এরপর তার সাথে মিলিত কাতার। যেন অসম্পূর্ণ কাতারটি থাকে সবার শেষে।

-সুনান আবু দাউদ ১/৯৮; বাযলুল মাজহূদ ৪/৩৫১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪৫; মাবসূত, সারাখসী ১/১৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আছরের নামাযে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাতে না বসে ভুলে তৃতীয়...

প্রশ্ন

আছরের নামাযে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাতে না বসে ভুলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন। তৃতীয় রাকাতের কেরাত শুরু করার পূর্বে দ্বিতীয় রাকাতে না বসার কথা মনে পড়ে যায়, ফলে আবার বসে যান। দাঁড়ানো থেকে এভাবে বসে যাওয়ার কারণে নামায ফাসেদ হয়েছে কি? ফাসেদ না হলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। আর এক্ষেত্রে দাঁড়ানো থেকে বৈঠকে ফিরে আসার কারণে নামায ফাসেদ হয়নি। তবে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর প্রথম বৈঠকের জন্য ফিরে আসাটা ঠিক হয়নি। ইমাম সাহেব যদি সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করে থাকেন তবে নামায শুদ্ধ হয়েছে। অন্যথায় ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৩-৮৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ২৫৩; মাবসূত, সারাখসী ১/২২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬২৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন জামাতের সাথে নামায আদয় করছিলাম। তাতে ইমাম সাহেব...

প্রশ্ন

আমি একদিন জামাতের সাথে নামায আদয় করছিলাম। তাতে ইমাম সাহেব কখন তাশাহহুদ শেষে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়েছেন বুঝতে পারিনি। হঠাৎ শুনলাম নামাযের বাহির থেকে এক লোক বলছে, ইমাম দাঁড়িয়ে গেছেন। তাকিয়ে দেখি, সত্যিই সামনের কাতারের মুসল্লিরা দাঁড়ানো। তখন আমিও কালবিলম্ব না করে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বাকি নামায ইমামের সাথে র্পূণ করলাম। জানার বিষয় হল, নামাযের বাহিরের লোকের কথায় সচেতন হওয়ার কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি?

উত্তর

আপনার ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামাযের বাইরের লোকের কথায় সচেতন হওয়ার কারণে নামাযের ক্ষতি হয়নি।

-হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭১, ১/৬২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ইমাম সাহেব ইশার নামাযে প্রথম রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতিহায়اهدنا...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব ইশার নামাযে প্রথম রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতিহায়

اهدنا الصراط المستقيم

পর্যন্ত আস্তে পড়েন। স্মরণ হওয়ার পর পুনরায় সূরা ফাতিহা শুরু থেকে জোরে পড়েন এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সাহু সিজদা করেন। জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় নামাযের কি হুকুম?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সাহু সিজদা দেওয়ার কারণে ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে। তবে যেখানে স্মরণ হয়েছে সেখান থেকে স্বশব্দে পড়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে সূরা ফাতিহা শুরু থেকে পড়া অনুত্তম হয়েছে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৫৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬৭; হেদায়া ১/১৫৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২২; আততাজরীদ ২/৭০৭; শরহুল মুনইয়া ৪৫৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি ফজর নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতিহার এক...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি ফজর নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতিহার এক আয়াত পড়েনি এবং সাহু সিজদাও করেনি। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

নামাযে পূর্ণ সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। সূরা ফাতিহার এক আয়াতও ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সাহু সিজদা না দেওয়ার কারণে নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া আবশ্যক।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৮; আসসিআয়াহ ২/১২৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩২৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৩৫; মিনহাতুল খালেক আলা হামিশিল বাহর ২/৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইমাম সাহেবকে সিজদার...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইমাম সাহেবকে সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনেছে। এ কারণে পথচারীর উপর সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি? ঐ ব্যক্তি যদি নামাযে শরিক হতে চায় তখনই বা তার কী করণীয়?

উত্তর

ঐ ব্যক্তির উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সুতরাং সে সিজদার আয়াত শোনার পর যদি জামাতে শরিক না হয় তাহলে তাকে সিজদাটি একাকী আদায় করে নিতে হবে। আর যদি জামাতে শরিক হয় এবং ইমামের সাথে তিলাওয়াতে সিজদাটি পেয়ে যায় তবে তো আদায় হয়ে গেল। যদি তিলাওয়াতের সিজদাটি না পায়, কিন্তু ঐ রাকাতের রুকু ইমামের সাথে পেয়ে যায় তাহলে তাকে তিলাওয়াতের সিজদাটি আর আদায় করতে হবে না। রাকাত পাওয়ার কারণে সিজদাও আদায় হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে। অবশ্য যদি ইমামের সাথে ঐ রাকাতের রুকু না পায় তাহলে নামাযের পর পৃথকভাবে সিজদাটি আদায় করে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩; মাবসূত, সারাখসী ২/১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; শরহুল মুনইয়া ৫০০; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মাগরিবের নামায আদায়কালে মোসাম্মত আয়েশা বেগমের কাছে তার ছেলে চাবি...

প্রশ্ন

মাগরিবের নামায আদায়কালে মোসাম্মত আয়েশা বেগমের কাছে তার ছেলে চাবি চাইলে নামাযের হালতে কিবলামুখী হয়েই মাথা নেড়ে ইশারা করে চাবির স্থান দেখিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, এতে কি তার নামায নষ্ট হয়ে গেছে?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মাথা নেড়ে ইশারা করার দ্বারা তার নামায ফাসেদ হয়নি। তবে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া নামাযে ইশারা করা অনুচিত। আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নামাযীকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করাটা অন্যায়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৬৯; শরহুল মুনইয়া ৪৪৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের জানামতে কেউ যদি বিগত জীবনে দীর্ঘকাল বেনামাযী থাকার পর...

প্রশ্ন

আমাদের জানামতে কেউ যদি বিগত জীবনে দীর্ঘকাল বেনামাযী থাকার পর আল্লাহর ইচ্ছায় সুমতি হয়ে নামায শুরু করে তবে নিয়মিত নামাযের পাশাপাশি জীবনের উমরী কাযা আদায় করতে হবে। কিন্তু আলিফ পাবলিকেশন্স (২/৩ প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার) থেকে প্রকাশিত ‘সালাতে রাসূল’ শীর্ষক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে-‘কাযায়ে উমরী ভিত্তিহীন। তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা বিগত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেন। উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ বেশি বেশি করে পড়া উচিত। কারণ সহীহ হাদীসে আছে, ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূরণ করা হবে।-আবু দাউদ’

সুতরাং মুফতী সাহেবের নিকট এ বিষয়ে শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান জানতে চাই।

উত্তর

শরীয়তে ঈমানের পরই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শনের একটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরয। কখনো কোনো ওয়াক্তের ফরয নামায ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামায না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস, আছারে সাহাবা ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত।

হাদীস শরীফে এসেছে-

من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها

যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬)

উক্ত হাদীসে نسي শব্দটি লক্ষ্যণীয়। আরবী ভাষায় এটি যেমনিভাবে ‘ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় তদ্রূপ কোনো কাজ অবহেলা করে ছেড়ে দেওয়ার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ( দেখুন : আলইসিতিযকার ১/৩০০)

অতএব কাযা আদায়ের বিধানটি শুধু ঘুম ও বিস্মৃতি এই দুই অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং অবহেলাবশত ছেড়ে দিলেও কাযা জরুরি।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬)

অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর কাফফারা হল যখন তার নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬১৪)

উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো নামায সময়মতো আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা অপরিহার্য। নামাযটি ভুলক্রমে কাযা হোক, নিদ্রার কারণে হোক অথবা গাফলতি বা অবহেলার কারণে হোক- সর্বাবস্থায় কাযা আদায় করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল হল, ইজমায়ে উম্মত। চার মাযহাবে চার ইমামসহ প্রায় সকল মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয় ক্ষেত্রের একই বিধান।-আলইসতিযকার ১/৩০২

কুয়েতের ইসলামী বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফাতাওয়াও এটিই।

(দেখুন : মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া আশশারইয়্যাহ ১/২০৪)

সুতরাং উমরী কাযা ভিত্তিহীন, কাযা আদায় না করে শুধু তাওবাই যথেষ্ট-প্রশ্নের এসব কথা সহীহ নয়। তদ্রূপ একথাও সহীহ নয় যে, উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ আদায় করা উচিত। এর স্বপক্ষে যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাও ঠিক নয়। কারণ সুনানে আবু দাউদে প্রশ্নোক্ত হাদীসটির মূল পাঠ হল-

إن أول ما يحاسب الناس به يوم القيامة من أعمالهم الصلاة، قال يقول ربنا عز وجل لملائكته وهو أعلم انظروها في صلاة عبدي أتمها أم نقصها؟ فإن كانت تامة كتبت له تامة وإن كان انتقص منها شيئا قال انظروا هل لعبدي من تطوع؟ فإن كان له تطوع قال أتموا لعبدي فريضة من تطوعه

কেয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে, নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে? যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ করে দাও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪)

উক্ত হাদীসে ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’-যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে-এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়। (ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ৩/১১; আলফাতহুর রববানী ১/১৮২; বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : মাসিক আলকাউসারের উদ্বোধনী সংখ্যা (ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃষ্ঠা : ১৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ইমাম সাহেব ফজরের নামাযে সূরা কিয়ামারولو القى معاذيرةএর স্থলেولو...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব ফজরের নামাযে সূরা কিয়ামার

ولو القى معاذيرة

এর স্থলে

ولو القى مأذيرة

পড়েছেন। অর্থাৎ আইনের স্থলে হামযা পড়েছে। জানিয়ে বাধিত করবেন যে, তার নামায কী হয়েছে?

উত্তর

উক্ত ভুলের কারণে অর্থের এমন বিকৃতি ঘটেনি, যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায়। তাই তার নামায আদায় হয়ে গেছে।

-শরুহুল মুনইয়া ৪৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের বাড়িতে ছোট একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। তাতে আমরা জুমার...

প্রশ্ন

আমাদের বাড়িতে ছোট একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। তাতে আমরা জুমার নামায ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতাম। জুমার নামায পাশের বড় মসজিদে গিয়ে আদায় করতাম। কিছু দিন পর কয়েকজন মুসল্লী এখানে জুমার নামাযও পড়া শুরু করে। অথচ এখানে মুসল্লি খুব কম। কারণ ওয়াক্তিয়া নামাযেই এই মসজিদের মুসল্লী কম হয়। আবার জুমআর দিন অনেক মুসল্লী বড় মসজিদে চলে যায়। তাই আমরা সকলে সমবেত হয়ে ছোট মসজিদে জুমআ বন্ধ করে আগের মতো বড় মসজিদে গিয়ে জুমআর নামায আদায় করতে চাই।

আমরা কি তা করতে পারি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

এলাকার ছোট ছোট মসজিদগুলোতে জুমআ না পড়ে সকল লোক বড় মসজিদে একত্র হয়ে জুমআ আদায় করা উত্তম। এলাকার ছোট বড় সব মসজিদে জুমআ পড়তে হবে-এটা জরুরি নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ছোট মসজিদে জুমআর জামাত বন্ধ করে পার্শ্ববর্তী বড় জামে মসজিদে গিয়ে জুমআ আদায় করাই বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে বড় জামাতে পড়ার কারণে বেশি ছওয়াব হবে। অবশ্য সেখানে না গিয়ে এ ছোট মসজিদে জুমআ পড়ে নিলেও জুমআ আদায় হয়ে যাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৬; আলইখতিয়ার ১/৮৯; শরহুল মুনইয়া ৫৫১; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪৩৯; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/১০৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের দুআ মাছুরা আরবীতে না পড়ে বাংলায় এর অর্থটা পড়া...

প্রশ্ন

নামাযের দুআ মাছুরা আরবীতে না পড়ে বাংলায় এর অর্থটা পড়া যাবে কি এবং এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?

উত্তর

নামাযের সকল দুআ ও যিকির আরবীতে পড়া জরুরি। অন্য ভাষায় পড়া মাকরূহ তাহরিমী। তাই নামাযে দুআ মাছুরার বাংলা অর্থ পড়া যাবে না; আরবী দুআই পড়তে হবে। বড় দুআ পড়তে না পারলে ছোট কোনো দুআ পড়বে। আর সম্ভব হলে নির্ধারিত দুআ মাছুরাটি মুখস্থ করে নিবে।

-কিতাবুল আসল ১/১৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫২১, ১/৪৮৩; আহকামুন নাফাইস ফী আদাইল আযকার বিলিসানিল ফারিস (মাজমুআতু রাসায়িলিল লাখনভী ৪/৩৩৬) পৃ. ৩৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি ফরয নামাযে তিন আয়াত শুদ্ধ করে পড়ার পর...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি ফরয নামাযে তিন আয়াত শুদ্ধ করে পড়ার পর এমন ভুল কিরাত পড়েছে, যা নামায নষ্ট করে দেয়। অতপর পরক্ষণে সে উক্ত ভুল কিরাত শুদ্ধ করে পড়ে নিয়েছে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির নামায শুদ্ধ হয়েছে নাকি হয়নি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যদি ঐ রাকাতে রুকুর পূর্বে ভুল পঠিত কিরাত শুদ্ধ করে পড়ে থাকে, তাহলে তার নামায আদায় হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, তিন আয়াত পরিমাণ পড়ার আগে বা পরে ভুল হওয়ার হুকুম একই। অর্থ বিকৃত হয়ে যায় এমন ভুল নামাযের যে পর্যায়েই হোক নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮২; হাশিয়াতুশ শারওয়ানী ২/২০৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/১৭৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব ভুলবশত তিনটি সিজদা করেন।...

প্রশ্ন

যোহরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব ভুলবশত তিনটি সিজদা করেন। তৃতীয় সিজদার সময় কিছু মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করেছে। আর কিছু অনুসরণ করেনি। অতপর ইমাম সাহেব সাহু সিজদা করা ব্যতীত নামায শেষ করেন। জানার বিষয় হল, উক্ত নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে ইমাম ও সকল মুসল্লির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে সকলের জন্য নামাযটি পুনরায় পড়া ওয়াজিব ছিল।&

উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে সকল মুকতাদি অতিরিক্ত সিজদায় ইমামের অনুসরণ করেনি তারা ঠিকই করেছেন। এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ না করাই নিয়ম। তবে তারা ভুল না করলেও ইমামের ভুলের কারণে তাদের উপরও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। অতএব এখন তাদেরকেও ঐ নামায কাযা করে নিতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৯২; রদ্দুল মুহতার ২/৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি যোহরের চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি যোহরের চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় সিজদা করতে ভুলে যায়। তৃতীয় রাকাতে রুকুর পর স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে নেয়। এরপর যথা নিয়মে বাকি নামায শেষ করে। তবে কোনো সাহু সিজদা করেনি। আমার জানার বিষয় হল, ওই ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি? হলে সেই নামাযের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সিজদা যথাসময়ে আদায় না করার কারণে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু সে যেহেতু সাহু সিজদা করেনি তাই উক্ত নামাযটি পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।

-শরহুল মুনইয়াহ ২৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেককে ফরয নামাযের পর মাথায় হাত রেখে يا...

প্রশ্ন

অনেককে ফরয নামাযের পর মাথায় হাত রেখে يا قوي পড়তে দেখা যায়। জানতে চাই, এ আমলের কথা নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে আছে কি?

উত্তর

হাদীস, আছার ও আদইয়া-আযকারের কিতাবসমূহে আমরা প্রশ্নোক্ত আমলের কথা পাইন। এটি কোনো বুযুর্গের পরীক্ষিত আমল হয়ে যাবে। তাই একে মাসনুন মনে করা ঠিক নয়।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নং আয়াতে ‘মাকামে মাহমুদ’ দ্বারা কী...

প্রশ্ন

সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নং আয়াতে ‘মাকামে মাহমুদ’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? আযানের দুআয়ও শব্দটি আছে। এর দ্বারা কি জান্নাতের বিশেষ কোনো স্তর বোঝানো হয়েছে?

উত্তর

‘মাকামে মাহমুদ’ দ্বারা শাফায়াতে কুবরা (বড় সুপারিশ) উদ্দেশ্য। একাধিক হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী হাশরের দিন হাশরবাসীর জন্য সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৭১৮, ৭৫১০; ফাতহুল বারী ৮/২৫২, ১১/৪৩৫) সর্বপ্রথম শাফাআতের এই মর্যাদা অন্য কোনো নবী প্রাপ্ত হবেন না। আল্লাহ প্রদত্ত সুপারিশের এ অধিকারকেই আয়াত ও হাদীসে মাকামে মাহমুদ বলা হয়েছে। এর দ্বারা জান্নাতের বিশেষ কোনো স্তর বোঝানো হয়নি।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার এক বন্ধু তার কামরায় ফরয নামায পড়ছিল। আমি বাইরে...

প্রশ্ন

আমার এক বন্ধু তার কামরায় ফরয নামায পড়ছিল। আমি বাইরে থেকে এসে দরজায় আওয়াজ করি। সে নামযারত অবস্থায় এক কাতার পরিমাণ হেঁটে এসে এক হাতে এক দফায় দরজা খুলে নিজ জায়গায় চলে গিয়ে নামায পুরো করে। একজন আলেম বলেছেন, তার নামায সহীহ হয়েছে। সত্যিই কি সহীহ হয়েছে? উল্লেখ্য, আমার ঐ বন্ধু পশ্চিম দিক থেকে সরেনি। কারণ তার রুমের দরজা পশ্চিম দিকে ছিল।

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি নামায পরিপন্থী অন্য কিছু না করে থাকলে শুধু ঐভাবে দরজা খোলা দ্বারা তার নামায নষ্ট হয়নি। কারণ সে এক হাত ব্যবহার করে এক দফায় দরজা খুলেছে। অতএব ওই আলেম সাহেবের কথা সঠিক। তবে কোনো ওজর ছাড়া নামাযে এ ধরনের সামান্য কাজেও লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৮৫, ৫৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৪৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি ফরয নামাযে রত বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি ফরয নামাযে রত বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে হাতের ইশারায় অথবা মাথা নেড়ে উত্তর দিল। এ অবস্থায় তার নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

নামায অবস্থায় এক হাত অথবা মাথা দ্বারা ইশারা করে উত্তর দিলে নামায নষ্ট হয় না। তবে নামাযের হালতে এভাবে ইশারায় উত্তর দেওয়াও ঠিক নয়। কুরআন মজীদ এবং হাদীস শরীফে নামাযে খুশু-খুযুর প্রতি খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নামাযের হালতে কারো কথার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা এবং ইচ্ছাকৃত হাত বা মাথা নাড়ানো থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

কুরআন মজীদে নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখে এবং এদিক-সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে তাদেরকে মুমিন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত হাদীস শরীফে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামাযরত ব্যক্তি যতক্ষণ এদিক সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করে ততক্ষণ আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার প্রতি থাকে। আর যখন সে অন্য দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তখন আল্লাহর (বিশেষ) রহমত তার থেকে সরে যায়। (সুনানে আবু দাউদ ১/১৩১)

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রাহ. এক ব্যক্তিকে নামাযরত অবস্থায় দাঁড়িতে হাত বুলাতে দেখে বললেন, তার অন্তরে যদি খুশু থাকত তবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির থাকত। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৬৬, হাদীস : ৩৩০৮)

প্রকাশ থাকে যে, নামাযরত ব্যক্তির মনোযোগ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা অন্যায়। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং জবাব দিতে বাধ্য করা গুনাহর কাজ। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

-সুনানে আবু দাউদ ১/১৩১-১৩৩; তাসফীরে ইবনে কাসীর ৪/৪৪৫; জামে তিরমিযী ১/৪৮, ৫০, ৫১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৫৩৩-৫৩৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৮-৯; নুখাবুল আফকার ৪/৪০৯-৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বিভিন্ন মসজিদে ফজর বা অন্য নামাযের সময় নামাযের পাঁচ/দশ মিনিট...

প্রশ্ন

বিভিন্ন মসজিদে ফজর বা অন্য নামাযের সময় নামাযের পাঁচ/দশ মিনিট আগে মসজিদের মাইক থেকে নামাযের আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে বা এ জাতীয় অন্য কিছু বলে মুসল্লীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জামাতের কথা আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

আমাদের এলাকায় এ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। মুফতী সাহেবের সমীপে আমার প্রশ্ন হল, এটা কী শরীয়তসম্মত?জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

নামাযের জামাতের প্রতি মুসল্লীদেরকে আহবানের জন্য শরীয়ত আযানের বিধান দিয়েছে। সুতরাং অবগতি এবং প্রস্ত্ততির জন্য আযানকেই যথেষ্ট মনে করা উচিত। তাই আযানের পর নামাযের জন্য নিয়মিত মাইকে ডাকাডাকি করা বা ঘোষণা দেওয়া সমীচীন নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে আযানের পর পুনরায় ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিলে তা জায়েয আছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই এ ধরনের ডাকাডাকিকে নিয়মে পরিণত করা যাবে না। এতে আযানের মাহাত্ম ও গুরুত্ব কমে যাবে এবং নিজ থেকে শরীয়তে নুতন নিয়ম সংযোজন করা হবে, যা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।

-জামে তিরমিযী ১/২৮; আলমাবসূত সারাখসী ১/১৩১; ফাতহুল কাদীর ১/২১৪; আযযখীরাহ ২/৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬০-২৬১; কিফায়াতুল মুফতী ৩/৫৪; ইমদাদুল মুফতীন ২৬৯; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি এক হেফযখানার খেদমতে আছি। আমাদের মাদরাসাটি মসজিদের একেবারে নিকটে...

প্রশ্ন

আমি এক হেফযখানার খেদমতে আছি। আমাদের মাদরাসাটি মসজিদের একেবারে নিকটে অবস্থিত। আজান হলে স্পষ্ট শোনা যায়। জানার বিষয় হল, সবক চলাকালে যখন মসজিদে আযান হয় তখন ছাত্রদের তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জওয়াব দেওয়া জরুরি কি না।

উত্তর

সাধারণ অবস্থায় তেলাওয়াতের সময় আযান শুনলে, তেলাওয়াত মওকুফ করে আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম। কিন্তু যারা কুরআন মজীদ শেখা বা শেখানোয় ব্যস্ত থাকে তারা তাদের পড়াশেনা অব্যাহত রাখতে পারে। এ অবস্থায় তাদের আযানের জওয়াব না দেওয়ারও অবকাশ রয়েছে। সকল ছাত্রের পড়া বন্ধ করে আযানের জওয়াব দেওয়ানোর প্রয়োজন নেই।

-আসসিআয়াহ ২/৫১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বিতরের নামাযে দুআয়ে কুনূত পড়ার আগে হাত তুলে আবার হাত...

প্রশ্ন

বিতরের নামাযে দুআয়ে কুনূত পড়ার আগে হাত তুলে আবার হাত বাঁধতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, বাঁধা থেকে হাত উঠাব, না হাত ছেড়ে দিয়ে পুনরায় হাত বাঁধার জন্য হাত উঠাব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দুআ কুনূতের তাকবীরের জন্য হাত উঠানোর সময় হাত ছেড়ে দিয়ে তারপর উঠানোর কোনো নিয়ম আছে বলে আমাদের জানা নেই। তাই সরাসরি হাত উঠাবে, হাত ছাড়বে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন আমি ফজর নামাযের কেরাত পড়ার সময় ভুলেان الله يحب...

প্রশ্ন

কিছুদিন আমি ফজর নামাযের কেরাত পড়ার সময় ভুলে

ان الله يحب المحسنين

এর স্থলে

ان الله لا يحب المسلمين

পড়েছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি? না হয়ে থাকলে এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা ঘরে একা একা নামায পড়ার সময় ইকামত বলবে কি...

প্রশ্ন

মহিলারা ঘরে একা একা নামায পড়ার সময় ইকামত বলবে কি না?

উত্তর

মহিলাদের জন্য আযান-ইকামতের বিধান নেই। তাদের আযান-ইকামত দেওয়া মাকরূহ। তারা আযান-ইকামত ছাড়া নামায আদায় করবে।

সুনানে বায়হাকী ১/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৮; ফাতহুল কাদীর ১/২১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩; ফাতাওয়া শামী ১/৩৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট জানতে চাই।...

প্রশ্ন

সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট জানতে চাই। আর এর উপকারিতাও জানতে চাই। শুনেছি, এই সূরার আমল করলে যাদুটোনা বা অন্যের অনিষ্ট থেকে হেফাযতে থাকা যায়।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত সূরা দুটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বা শানে নুযূল হল, হুদাইবিয়ার ঘটনার পর লাবীদ ইবনে আসাম এবং তার কন্যারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি কিছুটা কষ্ট অনুভব করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যাদুকরের নাম এবং কোথায়, কিভাবে যাদু করা হয়েছে এ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। চিরুনী ও চুলের সাহায্যে যাদু করা হয়, যা যারওয়ান কূপের তলদেশে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। এই অসুস্থতার সময় প্রশ্নোক্ত সূরাদ্বয় নাযিল হয়েছে। সূরা দুটি নাযিল হওয়ার পর ফেরেশতাদের বিবরণ অনুযায়ী ওই কূপ থেকে তা তুলে আনা হয়। অতপর ওই সূরা দুটি পড়ে গিরা খুললে তৎক্ষণাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ হয়ে উঠেন।

এই সূরা দুটি পড়লে অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাযতে থাকা যায়। হাদীস শরীফৈ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তা পড়ার গুরুত্ব এসেছে। এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।

জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৯০৩; সুনানে আবু দাউদ,হাদীস : ১৫২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৯২৬৬; সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৯১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জানাযার নামায পড়িয়ে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয?

প্রশ্ন

জানাযার নামায পড়িয়ে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয?

উত্তর

জানাযার নামাযের ইমামতি করে বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪;আলইখতিয়ার লিতালীলিল মুখতার ২/৬২; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যোহরের নামায কোনো কারণবশত একাকী আদায় করছিলাম। দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত...

প্রশ্ন

যোহরের নামায কোনো কারণবশত একাকী আদায় করছিলাম। দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাইনি। তাই তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা পড়ে নিয়েছি। যেহেতু আমি দ্বিতীয় রাকাতের ক্ষতি তৃতীয় রাকাতে পূরণ করে নিয়েছি তাই সিজদায়ে সাহু করিনি। কাজটি কি সঠিক হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতে সূরা না পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। তৃতীয় রাকাতে সূরা পড়ার দ্বারা ঐ ক্ষতি পূর্ণ হয়নি। ক্ষতিপূরণের জন্য সাহু সিজদা জরুরি ছিল। যেহেতু আপনি সাহু সিজদা করেননি তাই ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।

মারাকিল ফালাহ ১৩৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার জায়নামাযের উপরের অংশে এক কোণে বাচ্চার পেশাব লেগে প্রায়...

প্রশ্ন

আমার জায়নামাযের উপরের অংশে এক কোণে বাচ্চার পেশাব লেগে প্রায় অর্ধ হাত ছড়িয়ে যায়। নামাযের ওয়াক্ত হলে ওই জায়নামায বিছিয়েই নামায আদায় করি। যেহেতু পেশাব এক কোণে ছিল তাই নামায পড়ার সময় শরীর ও কাপড়ের কোনো অংশ নাপাক স্থানটিতে পড়েনি। জানতে চাই, আমার নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী নামাযের হালতে শরীরের কোনো অংশ যেহেতু নাপাক জায়গায় লাগেনি তাই নামায সহীহ হয়ে গেছে। অবশ্য এ ধরনের আংশিক নাপাক জায়নামাযেও নামায পড়া ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৮;শরহুল মুনইয়াহ ২০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্য আমার প্রায়ই হাই আসে। এ অবস্থায় আমার করণীয়...

প্রশ্ন

নামাযের মধ্য আমার প্রায়ই হাই আসে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী, জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাদীস শরীফে আছে, ‘হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।’ (সহীহ বুখারী ১/৬৪৬) তাই নামাযে হাই আসলে যথাসাধ্য তা দমন করার চেষ্টা করবে। একান্তই দমন করা সম্ভব না হলে হাত বাঁধা অবস্থায় হাই এলে ডান হাতের পিঠ মুখের উপর রাখবে। এছাড়া অন্য অবস্থায় বাম হাত রাখবে।

আলবাহরুর রায়েক ২/২৫;শরহুল মুনইয়া ৩৪৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের পরিবারের পূর্বপুরুষ (আমার মার ফুফা আমাদের নানা) ৮০ বছর...

প্রশ্ন

আমাদের পরিবারের পূর্বপুরুষ (আমার মার ফুফা আমাদের নানা) ৮০ বছর পূর্বে একটি মসজিদের জন্য মৌখিকভাবে জায়গা দান করেন, সে জায়গায় একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়। মসজিদঘরের দক্ষিণ পাশে মসজিদের জায়গার একটি অংশে দাতার মেয়ে, নাতনি ও আমার দাদির কবর হয়। পরবর্তীকালে তার ওয়ারিশ যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন (আমার বাবা) তিনি মসজিদের নামে একটি দলিল করে দেন। এরপর মসজিদ বড় করার প্রয়োজন হলে কবরগুলো ঠিক রেখে দক্ষিণে একতলা বিল্ডিং করা হয় এবং পূর্বের জায়গায় একটি হিফযখানা তৈরি করা হয়। হিফযখানার একটি অংশের নিচে কবরগুলো চলে আসে। স্থানীয় আলেমরা বলেছিলেন, হেফযখানা কবরের উপর হলে কেনো অসুবিধা নেই। বর্তমানে মসজিদকমিটি সেই হিফযখানা উঠিয়ে দিয়ে সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করছেন। তাদের কাছে মাসআলা হল ২৫ বছরের পুরনো কবরের উপর মসজিদ করা যাবে।

আসলে কুরআন্তহাদীসের আলাকে কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না এবং সেখানে নামায পড়া ঠিক হবে কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ এবং প্রশ্নকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ওই ১৫ শতাংশ জায়গার পুরোটাই মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত এবং এতে বিদ্যমান কবরগুলো বেশ পুরনো তাই বর্তমানে ওই জায়গায় মসজিদ সমপ্রসারণ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে যদি সেখানে কবরের কোনো চিহ্ন থাকে তাহলে তা সমান করে দিতে হবে। মসজিদের ভিতরে কবরের কোনো চিহ্ন রাখা যাবে না। আর কবরবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কর্তব্য হবে এতে বাধা না দেওয়া।

ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩২; মাজমাউল আনহুর ২/৫৮১;আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৫, ২/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫১-৩৫২,২/২৩৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর কোনো মেয়ের হায়েয...

প্রশ্ন

ক) নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর কোনো মেয়ের হায়েয শুরু হলে তাকে ঐ ওয়াক্তের নামায কাযা করতে হবে কি?

খ) আরেক মেয়ে ইশার শুধু ফরয ও সুন্নত নামায আদায় করেছে। আর বিতরের নামায শেষ রাতে উঠে পড়বে মনে করে ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু ফজরের আযানে তার ঘুম ভাঙ্গে। উঠে দেখে তার হায়েয শুরু হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হল, ঐ বিতরের নামায কাযা করতে হবে কি না?

উত্তর

ক) না, যে ওয়াক্তে মাসিক শুরু হয়েছে ঐ ওয়াক্তের কাযা করতে হবে না।

খ) হ্যাঁ, পবিত্র হওয়ার পর ঐ রাতের বিতর কাযা করে নিতে হবে।

মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, আছার : ১২৯০; উসূলুস সারাখসী ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

দ্বীনী আলোচনার পূর্বে বিসমিল্লাহ এবং জুমার খুতবার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়া...

প্রশ্ন

দ্বীনী আলোচনার পূর্বে বিসমিল্লাহ এবং জুমার খুতবার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়া কেমন?

উত্তর

যেকোনো ভালো কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা যায়। তবে দু’এক জায়গা এর ব্যতিক্রম। যেমন-দ্বীনী আলোচনা এবং খুতবার পূর্বে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়াটা হাদীস শরীফ এবং সাহাবা, তাবেয়ীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত নয়; বরং এক্ষেত্রে সুন্নত নিয়ম হল, হামদ ও সালাতের মাধ্যমে শুরু করা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম দ্বীনী আলোচনা হামদ ও সালাতের মাধ্যমে শুরু করতেন। তাই ভালো কাজ বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করতে হয় এই মূলনীতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; বরং ওয়াজ আল্লাহর হামদ দ্বারা শুরু করা, আযান এবং নামায আল্লাহু আকবার বলে শুরু করাই নিয়ম। এক্ষেত্রেও ব্যাপক নিয়ম অনুসরণ করে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া ঠিক হবে না। ফকীহ ইবনে নুজায়েম রাহ. আলবাহরুর রায়েক কিতাবে (২/১৪৯) ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, খুতবার পূর্বে আস্তে করে আউযুবিল্লাহ পড়া উচিত। তবে এ বিষয়ে হাদীসের দলীল পাওয়া যায়নি। তাই এক্ষেত্রে হামদ ও সালাত দ্বারা শুরু করা উচিত।

সুনানে ইবনে মাজাহ ১/১৩৬; সহীহ ইবনে হিব্বান ১/১৭৩; মুসনাদে আহমদ ২/৩৫৯;সুনানে নাসাঈ পৃ. ৪৯৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৮৪৯; ইতহাফুস সাদাত ৩/৪৬৭; মুসলিম ১/২৮৩;যাদুল ১/৪৩১; দালাইলুন নবুওয়াহ ২/৫২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৪৮;আততারগীব ওয়াততারহীব ৩/২৩৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/১৭৮; ইলাউস সুনান ৮/৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৬; আলমুহাল্লা ৩/২৬২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) শীতকালে কিছু মুসল্লীকে দেখা যায়, নামাযের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায়...

প্রশ্ন

ক) শীতকালে কিছু মুসল্লীকে দেখা যায়, নামাযের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় গায়ের চাদর পড়ে গেলে এমনভাবে চাদর পরেন যে, সিনা কেবলার দিক থেকে ফিরে যায়। তাদের নামাযের হুকুম কী? কতুটুকু ফিরার কারণে নামা ভেঙ্গে যাবে? প্রমাণসহ জানতে চাই।

খ) একজন মুসল্লী দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন। হঠাৎ তার পায়ে একটি মশা কামড় দেয়। সহ্য করতে না পেরে তিনি দাঁড়ানো থেকে ঝুঁকে মশাটি মেরেছেন। এতে কি তার নামায ভেঙ্গে গেছে? অনুগ্রহ করে দলিলসহ সঠিক সমাধান দিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।

উত্তর

ক) নামাযের হালতে সিনা কিবলার দিক থেকে সামান্য ফিরে গেলে নামায ফাসেদ হয় না। আর নামাযী ব্যক্তি যদি সঠিকভাবে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে চাদর ঠিক করতে গিয়ে সীনা যে পরিমাণ ঘুরে তা সাধারণত খুব সামান্য হয়ে থাকে। এর দ্বারা নামায ফাসেদ হবে না।

কিন্তু যদি চাদর ঠিক করতে গিয়ে সীনা কিবলা থেকে এত বেশি ঘুরে যায় যে, সীনা কিবলা থেকে ৪৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশি উত্তর বা দক্ষিণ দিকে চলে আসে তাহলে এ অবস্থায় তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। এর চেয়ে কম সময় হলে নামায নষ্ট হবে না।

উল্লেখ্য যে, নামায শুরু করার পূর্বেই গায়ের চাদর এমনভাবে পরে নেওয়া উচিত যেন তা নামাযের মধ্যে পড়ে না যায়।-রদ্দুল মুহতার ১/৬২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৭৭;আলফাতাওয়াল খাইরিয়্যাহ ১/১৮

খ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ লোকাটির নামায নষ্ট হয়নি। তবে দাঁড়ানো থেকে এভাবে ঝুঁকে পড়া ঠিক নয়। ইচ্ছা করলে অন্যভাবেও মশাটি তাড়ানো যেত।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/১৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৫; ইলাউস সুনান ৫/১৫১-১৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর...

প্রশ্ন

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। সাথে মাহরাম পুরুষও এসে পড়েন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। প্রকাশ থাকে যে, অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায...

প্রশ্ন

শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কি না-এ প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। এক ধরনের চটি বই পুস্তিকায় বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখাও থাকে। বিশেষ বিশেষ সূরা দিয়ে নামায পড়া বা নির্ধারিত রাকাত নামায বিশেষ সূরা দ্বারা আদায় করা ইত্যাদি। প্রশ্ন এই যে, হাদীস শরীফে এ দুই রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কি? থাকলে তা জানতে চাই।

তদ্রূপ কেউ কেউ এ রাতগুলোতে জামাতের সঙ্গে নফল নামায পড়তে চায়। এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান কী?

উত্তর

এ দু’রাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। তবে নফল নামায দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা কোনো কোনো হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়।

বিভিন্ন বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা।

বলাবাহুল্য যে, যে কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত।

শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও১ নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯

তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, কোনো ব্যক্তি একাকী ফরয নামায আদায়কালে অন্য কেউ...

প্রশ্ন

আমরা জানি, কোনো ব্যক্তি একাকী ফরয নামায আদায়কালে অন্য কেউ তার ইকতিদা করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, জামাত শেষ হওয়ার পর কোনো মাসবুকের পেছনে ইকতিদা করা সহীহ হবে কি না?

উত্তর

না, মাসবুকের পেছনে ইকতিদা করা জায়েয নয়। অতএব তার ইকতিদা করলে ইকতিদাকারীর নামায সহীহ হবে না।-ছদহুল হামামা ফি শুরূতিল ইমামাহ, শায়খ আবদুল গনী নাবুলুসী পৃ. ৯২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মহল্লায় একটি মকতব আছে। যেখানে সকাল বেলা কুরআন শিখানো...

প্রশ্ন

আমাদের মহল্লায় একটি মকতব আছে। যেখানে সকাল বেলা কুরআন শিখানো হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া হয়। মূলত জায়গাটা ওয়াকফ করা হয়েছে মকতবের জন্য। বর্তমানে মুসল্লিরা সেটাকে জুমআর মসজিদ করতে চায়। জুমআর মসজিদের কথা শুনে মসজিদের পূর্ব পশ্চিম পাশের জায়গার মালিক তাও ওয়াকফ করতে আগ্রহী হয়েছেন। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় মকতবের জায়গাসহ পুরোটার উপর কি জুমআর মসজিদ বানানো যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারী যেহেতু জায়গাটি মকতবের জন্য ওয়াকফ করেছে তাই সেখানে মসজিদ বানানো জায়েয হবে না; বরং ওয়াকফের শর্তানুযায়ী এ স্থান মকতব ও মাদরাসার জন্য নির্ধারিত থাকবে। মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন হলে পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করে সেখানে তা বানানো যাবে।

পার্শ্ববর্তী জায়গার মালিক যেহেতু মসজিদের জন্য ওয়াকফ করতে ইচ্ছুক তাই তাদের থেকে জায়গা নিয়ে সেখানে মসজিদ বানানো যাবে।

আলআশবাহ ওয়ান নাযায়ের ২/২২৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২৩৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের দেশে শীতকালে অনেকে মাথায় রুমাল পরে থাকে। সাধারণত তারা...

প্রশ্ন

আমাদের দেশে শীতকালে অনেকে মাথায় রুমাল পরে থাকে। সাধারণত তারা রুমালটিকে তিন কোণ করে এক কোণ পেছনে পিঠের উপর ফেলে রাখে। অবশিষ্ট দুই কোণ দুই কাঁধের উপর দিয়ে সামনে বুকের উপর ঝুলিয়ে দিয়ে ডানের কোণটিকে ঘুরিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে রাখে। আর বামের কোণটিকে এমনিতেই ঝুলন্ত রাখে। রুকু-সিজদার সময় তা সম্মুখে ঝুলতে থাকে।

প্রশ্ন হল, এভাবে নামাযে রুমালের একটি কোণ না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত রেখে দিলে নামায কি মাকরূহ হবে?

উত্তর

না। নামায অবস্থায় প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে রুমালের এক কোণ সম্মুখে ঝুললে এর দ্বারা নামায মাকরূহ হবে না। তবে উত্তম হল নামায অবস্থায় দুই প্রান্তকে কাঁধের সাথে পেঁচিয়ে রাখা। কেননা, তা নামাযীর সম্মুখে ঝুলতে থাকলে তার নামাযের একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ১/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১৯২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৮১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কি আছারে সাহাবা দ্বারা...

প্রশ্ন

জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কি আছারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত?

উত্তর

হ্যাঁ, জুমার পূর্বের চার রাকাত আছার দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল

১. আবু উবাইদ বর্ণনা করেন যে, হযরত আবদুল্লাহ জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। (ইবনে আবী শায়বা ৫৪০২)

২. বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রাহ. বলেন, ‘তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার আগে চার রাকাত সুন্নাত নামায পড়তেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫৪০৫)

সাহাবায়ে কেরামের এই আমল জুমার পূর্ব চার রাকাত নামায সুন্নত প্রমাণিত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কারণ এই আমল তারা নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেয়েছেন। এছাড়া যোহরের পূর্বে চার রাকাত নামায পড়ার যে কারণ হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ ‘সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের সময়টা এমন যে, তখন আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়।’ তা জুমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

তারাবীর দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে যে পৃষ্ঠা থেকে পড়া...

প্রশ্ন

তারাবীর দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে যে পৃষ্ঠা থেকে পড়া হয়েছে দ্বিতীয় রাকাতে কি তার পূর্বের পৃষ্ঠা থেকে পড়া যাবে? যেমন-কেউ প্রথম রাকাতে কোনো পারার তৃতীয় পৃষ্ঠা পড়ল। দ্বিতীয় রাকাতে চতুর্থ পৃষ্ঠা পড়ার পূর্বে প্রথম পৃষ্ঠার ছুটে যাওয়া একটি আয়াত পড়ে নিল। তারতীবের এ সামান্য ত্রুটির কারণে কি নামাযে কোনো সমস্যা হবে?

উত্তর

তারাবীর নামাযে এভাবে পেছন থেকে পড়ার অবকাশ আছে। এতে নামাযের ক্ষতি হবে না। খতম পুরা করার জন্য ছুটে যাওয়া আয়াত এভাবে পড়া যেতে পারে। তবে ছুটে যাওয়া আয়াত পড়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য পরবর্তী আয়াতগুলো পড়ে নেওয়া ভালো।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮, ১/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৮, ২/২৫৪; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৪০৭, ৪৯৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন আসরের নামাযে ইমামতি করছিলাম। চতুর্থ রাকাতের জন্য না...

প্রশ্ন

আমি একদিন আসরের নামাযে ইমামতি করছিলাম। চতুর্থ রাকাতের জন্য না দাঁড়িয়ে ভুলে বসে পড়ি। কিন' তখনি পিছন থেকে লোকমা শুনে উঠে পড়ি। বসা অবস্থায় কিছু পড়ার সুযোগ হয়নি। এরপর সাহু সিজদা ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?

উত্তর

হ্যাঁ, নামাযটি সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কেননা, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ঐ বৈঠকে অধিক সময় তথা এক রুকন পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। আর এক্ষেত্রে এক রুকন পরিমাণ বিলম্ব না হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৪; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/২১২; শরহুল মুহাযযাব ৩/৪১৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২২৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৯; মুগনিল মুহতাজ ১/২৩৮; আলালমারাকী পৃ. ২৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) ফরয নামাযের পর মোনাজাতের আগে বা মোনাজাত ব্যতীত আয়াতুল...

প্রশ্ন

ক) ফরয নামাযের পর মোনাজাতের আগে বা মোনাজাত ব্যতীত আয়াতুল কুরসী, তাসবীহ ইত্যাদি পড়া যাবে?

খ) ফরয নামাযের পর সাধারণত উচ্চ স্বরে মোনাজাত করা হয়। তখন পিছনে মাসবুক ব্যক্তিরা ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করে। এই সময় কি উচ্চস্বরে মোনাজাত করা জায়েয আছে? আর উচ্চ স্বরে মোনাজাত করার হুকুম কী?

উত্তর

(ক) যে সমস্ত নামাযের পর সুন্নত নেই যেমন ফজর ও আসর-এদুই নামাযের পর তাসবীহ, আয়াতুল কুরসী বা অন্যান্য দুআ মোনাজাতের আগে বা পরে যে কোনো সময় পড়া যাবে।

আর যে সব নামাযের পর সুন্নত আছে অর্থাৎ যোহর, মাগরিব ও ইশা এসব ওয়াক্তে আয়াতুল কুরসী ও তাসবীহ সুন্নতের পর পড়া উচিত। এসব ওয়াক্তে ফরয আদায়ের পর বেশি অপেক্ষা না করে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া উত্তম।

সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৫৬; ইলাউস সুনান ৩/১৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৫০

খ) মোনাজাত উচ্চ আওয়াজে বা নিম্ন আওয়াজে উভয় পদ্ধতিতেই করা জায়েয। তবে উচ্চ আওয়াজের কারণে কোনো নামাযীর নামাযে বিঘ্ন ঘটার আশংকা হলে তখন উচ্চ আওয়াজে মুনাজাত করা জায়েয নয়। সুতরাং পিছনে মাসবুক বা অন্য নামাযী থাকলে উচু আওয়াজে মুনাজাত করবে না।

সহীহ বুখারী ১/১১৬; ফাতহুল বারী ২/৩৭৯; ফায়যুল বারী ২/৩১৫; শরহুল আশবাহ হামাবী ৪/৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বগুড়া সদর উপজেলার অন্তর্গত গোকুল মধ্যপাড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে জনৈক...

প্রশ্ন

বগুড়া সদর উপজেলার অন্তর্গত গোকুল মধ্যপাড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে জনৈক ব্যক্তি একটি টেক্সটাইল মিল স্থাপন করেন। মিলের শ্রমিকদের নামাযের জন্য তিনি মিল সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এলাকার মুসল্লিরাও সেখানে নামায আদায় করেন। মসজিদের খেদমতের দায়িত্ব মিল মালিক কর্তৃপক্ষ বহন করতেন।

পরবর্তীতে মিলে মন্দা দেখা দিলে মিল মালিক জনগণের উপর দায়িত্ব প্রদান করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি অত্র এলাকার জনগণ মাসিক চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে মসজিদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন।

বর্তমানে মসজিদটির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে, মিল ও মসজিদ নির্মাণের পূর্বে মালিক সমুদয় সম্পত্তি সোনালী ব্যাংকের নিকট মর্গেজ রাখেন। যা বর্তমানে অনাদায়ী হিসাবে আদালতে ডিক্রি জারি মোকাদ্দমা চলছে। মসজিদ সংস্কারের জন্য ইতিপূর্বে মালিকের সাথে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ওয়াকফ করে দেওয়ার ব্যাপারে। তিনি জানালেন, যেহেতু সমস্ত সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট মর্গেজ আছে সেহেতু তিনি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করে দিলেন মর্মে এলাকার মুসল্লিদের সামনে স্বীকার করেন। তিনি আরও জানালেন যে, পরবর্তীতে আমি বা আমার কোনো ওয়ারিশ এই মসজিদের দাবি করতে পারব না। মসজিদটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করতে এলাকার জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন। কিন্তু লিখিতভাবে ওয়াকফ না থাকায় সবার মনে যেসব বিষয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা হল :

১. অত্র মসজিদের মুসল্লীদের নামায জায়েয হয়েছে কি না?

২. লিখিতভাবে ওয়াফকফের প্রয়োজন আছে কি না?

৩. মর্গেজকৃত জমিতে মসজিদটির পুননির্মাণ কাজ করা জায়েয হবে কি না?

৪. মসজিদের নাম পূর্বে গোকুল টেক্সটাইল মিল জামে মসজিদ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে ‘গোকুল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ’ রাখা যাবে কি না?

৫. যদি কোনো আইনী জটিলতার কারণে মসজিদ পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার সম্ভব না্ হয় তাহলে ঐ মসজিদের জায়গার পরিবর্তে আশেপাশেই অন্য কোথাও নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন করছি।

উত্তর

মর্গেজকৃত জমির ওয়াফক কার্যকর হয় না; বরং ঝুলন্ত থাকে। তাই প্রশ্নোল্লিখিত মসজিদটি এখনো শরয়ী মসজিদ হিসাবে পরিগণিত হয়নি। তবে মর্গেজ ছুটে গেলে দাতার কথা মতো তা ওয়াকফিয়া সম্পত্তি হয়ে যাবে। বর্তমানে যেহেতু এটি বন্ধকি সম্পত্তি এবং প্রশ্নকারীর বক্তব্য অনুযায়ী মসজিদের জন্য ব্যাংক থেকে ক্রয়ের চেষ্টা করার পরও তা সম্ভব হয়নি তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐ জায়গায় মসজিদের পুনর্নির্মাণ জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর কর্তব্য হল, ঐ জায়গার আশেপাশে মসজিদের জন্য জমি ক্রয় করে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা। আর এই নতুন মসজিদের নাম গোকুল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ রাখা যাবে।

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্গেজের জায়গায় আদায়কৃত সকল নামায সহীহ হয়েছে।

আরো উল্লেখ্য যে, জমির মালিকের জন্য নৈতিক দায়িত্ব হল উক্ত জায়গা ব্যাংক থেকে অবমুক্ত করে ওয়াকফ কার্যকর করা।

জামে তিরমিযী ২/১১৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৩৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযীর সামনে সুতরা স্থাপন না করলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া...

প্রশ্ন

নামাযীর সামনে সুতরা স্থাপন না করলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া নিষেধ। এখন কেউ যদি একজন নামাযী ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করার পর তা টান দিয়ে অন্য নামাযী ব্যক্তির সামনে দেয় তবে বিধান কী?

উত্তর

বিশেষ প্রয়োজনে ঐভাবে অতিক্রম করা জায়েয হবে। তবে এতে নামাযীর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। তাই বিনা প্রয়োজনে এমন করবে না।

উল্লেখ্য, নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অন্যান্য মুসল্লি বা সাধারণ মানুষের চলাচলের সম্ভাবনা থাকলে নামায শুরুর আগে সুতরা সামনে রেখে নামাযে দাঁড়ানো সুন্নত।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির দাড়ি নাড়ানো অভ্যাস। প্রায় সময় সে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির দাড়ি নাড়ানো অভ্যাস। প্রায় সময় সে দাড়ি নাড়াচাড়া করে। নামাযের মধ্যেও মাঝে মধ্যে অভ্যাসগত কারণে দাড়িতে চলে যায়। অবশ্য তিনি এ জন্য এক হাতই ব্যবহার করে থাকেন। জানতে চাই, এ কারণে তার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি? আর তার জন্য কী করণীয়?

উত্তর

নামাযে খুশ-খুযু তথা নামাযের প্রতি পূর্ণ নিবিষ্টচিত্ত থাকা জরুরি। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) মুমিনগণ সফলকাম, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্র।’ (সূরা মুমিনুন : ১-২)

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামায অবস্থায় দাড়ি নিয়ে খেলা করতে দেখে ইরশাদ করেন-যদি তার অন-র নিবিষ্ট থাকত তবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও নিবিষ্ট হত। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৬৩)

সুতরাং নামায অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হাত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। নামায অবস্থায় অযথা দাড়িতে হাত দেওয়া মাকরূহ। তাই এ অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি।

সূরা মুমিনুন : ১-২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৫; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৪৫ ও ৪৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯ ও ২/১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সূরা জুমআর ৯ নং আয়াতে জুমার আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ...

প্রশ্ন

সূরা জুমআর ৯ নং আয়াতে জুমার আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে। এখানে কোন আযান উদ্দেশ্যে প্রথম আযান নাকি দ্বিতীয় আযান? যদি প্রথম আযান উদ্দেশ্য হয় তাহলে প্রশ্ন হল, অনেক এলাকায় প্রথম আযান হয় সোয়া বারোটায় আর খুতবার আযান হয় একটায় বা সোয়া একটায়। তাহলে কি এ সময়ের ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই গোনাহগার হবে?

উত্তর

জুমআর আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) ‘হে মুমিনগণ, জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমআ : ৯)

উক্ত আয়াতে আহ্বান বলতে মৌলিকভাবে দ্বিতীয় আযান (খুতবার আযান) উদ্দেশ্য হলেও। শব্দের ব্যাপকতার মাঝে জুমআর প্রথম আযানও অন্তর্ভুক্ত। তাই তাফসীরবিদ ও ফিকহবিদগণের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী প্রথম আযানের পরও জুমআর প্রস্তুতিমূলক কাজ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উক্ত আয়াতের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। অতএব তা নাজায়েয ও গুনাহের কাজ।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/১২০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২০৫; আদ্দুররুল মানছুর ২/২১৯; বয়ানুল কুরআন ৩/৫৪৭; তাফসীরে মাযহারী ১০/২৮১; তাফসীরে শায়খুল হিন্দ পৃ. ৭১৮; আহকামুল কুরআন, ইমাম ইসমাঈল ইবনে ইসহাক ২৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৬১; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ ১৮৫; ইলাউস সুনান ৮/৮৬; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩২৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

প্রত্যেক ফরয নামাযের পর মাথায় হাত দিয়ে যে দুআ পড়া...

প্রশ্ন

প্রত্যেক ফরয নামাযের পর মাথায় হাত দিয়ে যে দুআ পড়া হয় সেটি কোন দুআ? তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কি না জানতে চাই।

উত্তর

একটি দুর্বল বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে তাঁর ডান হাত মাথায় বুলাতেন এবং নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন

بسم الله الذي لا إله الا هو الرحمن، اللهم اذهب عني الهم والحزن

বর্ণনাটির সনদ যেহেতু অনেক বেশি দুর্বল নয় আর বিষয়টিও নামাযের পর যিকির ও দুআর, যা মৌলিকভাবে অনেক দলীল দ্বারা প্রমাণিত তাই এর উপর আমল করার অবকাশ রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীসে নামাযের পর দুআটি পড়ার কথা এসেছে। শুধু ফরয নামাযের পর পড়ার কথা আসেনি। অতএব ফরয, নফল সব নামাযের পরই তা পড়া যাবে।

তবারানী, আওসাত ৪/১২৬, হাদীস ৩২০২; মাজমাউয যাওয়াইদ, হায়ছামী ১০/১৪৪; তারীখে বাগদাদ ১২/৪৮০; নাতাইজুল আফকার ২/২০৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার এক লোক বলে, বিতর নামাযে আমরা যে দুআয়ে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক বলে, বিতর নামাযে আমরা যে দুআয়ে কুনূত পড়ে থাকি (আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা) তা নাকি ভিত্তিহীন, হাদীস ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। হাদীসের দুআ হল, আল্লাহুম্মাহদিনা ফীমান হাদাইতা ...। এ বিষয়ের হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে সঠিক সমাধান জানতে চাই।

উত্তর

ঐ লোকের কথা ঠিক নয়। আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ...’ এ দুআটি সহীহ হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিবরীলে আমীন এসে কুনূত হিসাবে উক্ত দুআটি শিখিয়েছেন।-সুনানে কুবরা ২/২১০; মারাসীলে আবু দাউদ পৃ. ৮; ইলাউস সুনান ৬/১০৭

হযরত উমর রা. বিতরের কুনূতে রুকুর পূর্বে উক্ত দুআটি পড়তেন।-কিয়ামুল লায়ল পৃ. ৩০০

হযরত আবু আবদুর রহমান বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে কুনূতের দুআয় আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ... দুআটি পড়ার তালীম দিয়েছেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা (নতুন সংস্করণ) ৪/৫১৮

হযরত সুফিয়ান রাহ. বলেন, পূর্বসূরীগণ কুনূতের দুআয় আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ...’ দুআটি পড়তেন।-আদ্দুররুল মানছুর ৬/৪২২

হযরত যুবায়ের ইবনে আদী রাহ. বলেন, হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বিতরের কুনূতে উক্ত দুআটি পড়তে পছন্দ করতেন।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/১২১

অতএব দুআটি সুপ্রমাণিত। এ বিষয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি করা অন্যায়।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনশ্রুতি আছে যে, হযরত বেলাল রা. আযানে ‘আশহাদু’-এর শীনকে ছীন-এর...

প্রশ্ন

জনশ্রুতি আছে যে, হযরত বেলাল রা. আযানে ‘আশহাদু’-এর শীনকে ছীন-এর মতো উচ্চারণ করতেন। তাই তাকে একবার আযান দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। তিনি ফজরের আযান না দেওয়ার কারণে নাকি সেদিন সূর্য উদিত হয়নি। একথা কি ঠিক? একাধিক বক্তাকে এমন বলতে শুনেছি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ঘটনা সত্য নয়। আল্লামা ইবনে কাসীর, মোল্লা আলী কারী, হাফেয সাখাভী প্রমুখ মনীষীগণ একে সম্পূর্ণভিত্তিহীন বলেছেন।

আলমাওযূআতুল কুবরা পৃ. ৪১, ৭৫; আলমাসনূ ১১৩; আলমাকাসিদুল হাসানা ৩৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি চাকুরিজীবী। অনেক সময় কাজের ঝামেলা থাকে। তখন আমার উচ্চপদস্থ...

প্রশ্ন

আমি চাকুরিজীবী। অনেক সময় কাজের ঝামেলা থাকে। তখন আমার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার কারণে অফিস কক্ষে একাকী নামায আদায় করি।

জানিয়ে বাধিত করবেন যে, এক্ষেত্রে আমি কি আযান-ইকামত দিয়ে নামায পড়তে পারব? না আযান-ইকামত ছাড়া পড়ব? শরয়ী সমাধান কী?

উত্তর

মসজিদের বাইরে একাকী নামায পড়ার সময় নিচু শব্দে আযান ও ইকামত দিয়ে নামায পড়া মুস্তাহাব। আর আযান-ইকামত না দিলেও নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ এলাকার মসজিদের আযান-ইকামত এলাকাবাসীর নামাযের জন্য যথেষ্ট।

মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/৫১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; আলমাবসূত সারাখসী ১/১৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৫২৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার গলায় বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। নামাযে কিরাত পড়ার...

প্রশ্ন

আমার গলায় বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। নামাযে কিরাত পড়ার সময় কয়েক শব্দ পর পর কেশে গলা পরিষ্কার করে নিতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, এত বেশি কাশার কারণে নামায নষ্ট হয় কি না? আর নামায নষ্ট না হলে আমি ইমামতি করলে কোনো সমস্যা আছে কি? দয়া করে জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

কেরাত সঠিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য ইচ্ছা করে কাশলেও নামায নষ্ট হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অধিক কাশার কারণে নামায নষ্ট হবে না। তবে যে ব্যক্তির নিয়মিত এমন সমস্যা হয় তার জন্য ইমামতি করা উচিত নয়। কেননা এতে মুসল্লীদের নামাযে একাগ্রতা নষ্ট হতে পারে।

সুনানে নাসায়ী ৩/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে ফাতেহা না পড়ে ভুলে সূরার...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে ফাতেহা না পড়ে ভুলে সূরার ৩-৪ আয়াত পড়ে ফেলেছে। এ সময় তার স্মরণ হয়েছে যে, ফাতেহা পড়া হয়নি। এখন তার কী করণীয়? এ ভুলের জন্য কি সিজদায়ে সাহু দিতে হবে?

উত্তর

এক্ষেত্রে স্মরণ হওয়ামাত্র সে সূরা ফাতেহা পড়বে। তারপর সূরা মিলাবে এবং এ ভুলের জন্য সিজদায়ে সাহু করবে।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; আসসিআয়াহ ২/১৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযীর সামনে সুতরা স্থাপন না করলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া...

প্রশ্ন

নামাযীর সামনে সুতরা স্থাপন না করলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া নিষেধ। এখন কেউ যদি একজন নামাযী ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করার পর তা টান দিয়ে অন্য নামাযী ব্যক্তির সামনে দেয় তবে বিধান কী?

উত্তর

বিশেষ প্রয়োজনে ঐভাবে অতিক্রম করা জায়েয হবে। তবে এতে নামাযীর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। তাই বিনা প্রয়োজনে এমন করবে না।

উল্লেখ্য, নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অন্যান্য মুসল্লি বা সাধারণ মানুষের চলাচলের সম্ভাবনা থাকলে নামায শুরুর আগে সুতরা সামনে রেখে নামাযে দাঁড়ানো সুন্নত।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বর্তমানে রেডিও টেলিভিশনে যে আযান শোনা যায় তার জওয়াব দিতে...

প্রশ্ন

বর্তমানে রেডিও টেলিভিশনে যে আযান শোনা যায় তার জওয়াব দিতে হবে কি না?

উত্তর

হাদীস শরীফে আযানের উত্তর দেওয়ার যে নির্দেশ এসেছে তা সরাসরি মুআযযিন থেকে শোনা আযানের ব্যাপারে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা মুআযযিনকে বলতে শুনবে তখন তোমরাও তার অনুরূপ বল। তাই রেকর্ডকৃত আযান প্রচারিত হলে তার জবাব দেওয়া মাসনূন বলে বিবেচিত হবে না।

সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭৩; ফাতহুল কাদীর ১/২১৬, ২১৭; আলফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ পৃ. ১৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

উমরা পালন করার সময় তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায তওয়াফের...

প্রশ্ন

উমরা পালন করার সময় তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায তওয়াফের পর পর না পড়ে সায়ীর পর পড়লে দম ওয়াজিব হবে কি? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে তাওয়াফের পর পরই পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল এমনই ছিল। বিনা ওজরে উক্ত দুই রাকাতকে বিলম্বে পড়া বা সায়ীর পর পড়া সুন্নত পরিপন্থী। তবে এ কারণে দম ওয়াজিব হবে না।

সহীহ বুখারী ১/২২০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮/১৫৮; ইলাউস সুনান ১০/৮৭, ৮৫; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ১৫৫; আলকুরা লিকাছিদি উম্মিল কুরা পৃ. ৩৫৫; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সাধারণত আযানের পর শুধু দুআ পড়া হয়। দরূদ পড়া হয়...

প্রশ্ন

সাধারণত আযানের পর শুধু দুআ পড়া হয়। দরূদ পড়া হয় না। তাই আমরা ঐভাবে আমল করতাম। একদিন এক আলোচনা মজলিসে আমার ভাই বলল যে, আযানের পর দরূদ পড়তে হয় এরপর দুআ। জানার বিষয় যে, কোনটি সঠিক? বরাতসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আযানের পর দুআর পূর্বে দরূদ পড়ার কথা হাদীসে আছে। সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, (অর্থ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা.-এর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আযানের সময় মুয়াযযিন যা বলে উত্তরে তোমরা তা বল। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে তার উপর আল্লাহ তাআলা ১০টি রহমত অবতীর্ণ করেন। এরপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য ‘ওছিলা’ লাভের দুআ কর। কারণ ওছিলা হল জান্নাতের এক সুউচ্চ মর্যাদা, যা শুধু একজনই পাবে। আমি আশা করি সে ব্যক্তি আমি হব। যে ব্যক্তি আমার জন্য ওছিলা’ লাভের দুআ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’- সহীহ মুসলিম ১/১৬৬

সুতরাং আযানের দুআর আগে দরূদ পড়ার আমলটিই সঠিক।

সুনানে আবু দাউদ ১/৭৭; শরহুত তাহযীব ৩/১২৪; শরহুন নুকায়া ১/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কবলাল জুমআর চার রাকআত নামায জুমআর পরে আদায় করা যাবে...

প্রশ্ন

কবলাল জুমআর চার রাকআত নামায জুমআর পরে আদায় করা যাবে কি না? যদি আদায় করে তবে কি বলে নিয়ত করবে?

উত্তর

হ্যাঁ, জুমআর আগের চার রাকাত সুন্নত ছুটে গেলে তা জুমআর পরে আদায় করা যাবে। ‘পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়ছি’ এমন নিয়তই যথেষ্ট হবে।

শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার ব্যস্ততার কারণে কখনো দ্রুত নামায পড়তে গিয়ে রুকু সিজদায়...

প্রশ্ন

আমার ব্যস্ততার কারণে কখনো দ্রুত নামায পড়তে গিয়ে রুকু সিজদায় তাসবীহ তিনবার পড়া হয় না; বরং কম হয়ে যায়। এতে নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? আবার কখনো জামাতে নামায পড়তে গিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হই। তখন দেখা যায় একবার বা দু’বার তাসবীহ পড়তেই ইমাম উঠে যান। তখন কী করণীয়?

উত্তর

রুকু সিজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়া সুন্নত। ইচ্ছাকৃত তিনবারের কম তাসবীহ পড়া সুন্নত পরিপন্থী। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর ঐ ব্যক্তি, যে নামাযে চুরি করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, নামাযে কীভাবে চুরি করে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযের রুকু, সিজদা ঠিকভাবে আদায় না করা (ই হচ্ছে নামায চুরি করা) - মুসনাদে আহমদ ৩/৫৬। সুতরাং একাকী নামাযে এবং জামাতে উভয় ক্ষেত্রে অন-ত: তিনবার তাসবীহ পড়বে। তবে তিনবার পড়ার পূর্বেই যদি ইমাম উঠে যান তাহলে ইমামের অনুসরণের জন্য মুক্তাদীও উঠে যাবে। কারণ ইমামের অনুসরণ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইমামের সাথে যতবার তাসবীহ পড়া যায় তাই যথেষ্ট। তিনবার পুরো করা লাগবে না।

মুসনাদে আহমদ ৩/৫৬; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৪ ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হওয়া : ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার মসজিদে কয়েকদিন আগে একটি মাহফিল হয়েছিল। আসর বাদ...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদে কয়েকদিন আগে একটি মাহফিল হয়েছিল। আসর বাদ মোয়াযযিন সাহেব ঘোষণা দিলেন, আজ ইশার জামাত রাত সাড়ে আটটায় পড়া হবে। রাত আটটা বিশ মিনিটে জনৈক ওয়ায়েজ বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় ঘড়ি ছিল না। দায়েমী মুসল্লীগণ যখন হাজির হয়ে যেতেন তখন ইকামত দেওয়া হত। আজ এই মাহফিল উপলক্ষে এ সুন্নতকে যিন্দা করার জন্য আমরা এখন জামাত শুরু করে দিব। যেহেতু মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেছে তাই ৮ টা ২০ মিনিটে ইকামত হয়ে গেল। মসজিদের দোতলা, তিন তলা তখনও খালি ছিল। জামাত ৮টা ৩০ মিনিটে হবে এ ঘোষণার কারণে যারা নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়েছে তারা অনেকে জামাত পায়নি। অনেকে মাসবুক হয়েছে। এখন জানতে চাই, দশ মিনিট আগে ইকামত দেওয়ায় সুন্নতে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিন্দা হল, নাকি ৮ টা ৩০ মিনিটে জামাত শুরু হওয়া উচিত ছিল? যদি ঘড়ির সময় অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় জামাত শুরু করা বেদআত হয়ে থাকে তাহলে প্রত্যেক মসজিদে নামাযের সময়সুচি ঝুলিয়ে রেখে ঘড়ির সময় হিসাবে জামাত শুরু করা কি উচিত হচ্ছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইশার জামাত পূর্ব ঘোষিত সময়েই শুরু করা উচিত ছিল। কেননা, একে তো পূর্ব ঘোষিত সময়ের আগে জামাত শুরু করার কারণে অনেকেই জামাতে শরিক হতে পারেনি। আর নির্ধারিত সময়ে নামায শুরুর ঘোষণা একটি ওয়াদা। আর বিনা ওযরে ওয়াদা লঙ্ঘন করা গুনাহ।

উল্লেখ্য, নামাযের নির্ধারিত সময়সুচি অনুযায়ী নামায পড়া উচিত। ওয়াজ নসীহতের কারণে সময়সুচি হঠাৎ করে পরিবর্তন করা ঠিক নয়। কেননা এতে অনেক নিয়মিত মুসল্লীর জামাত ছুটে যাওয়ার বা কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর যুগে ঘড়ি ছিল না এ যুক্তি দেখিয়ে তখন জামাতের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল না-এ কথা বলা ঠিক নয়। কেননা তখনও বিভিন্ন আলমত লক্ষ্য করে জামাতের সময় নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী আযান ও জামাত শুরু হওয়ার বিবরণ বহু হাদীসে রয়েছে। তাই ঘড়ির সময় অনুযায়ী নামাযের সময়সূচি নির্ধারণ করা সুন্নত পরিপন্থী বা বিদআত বলা যায় না।

ফাতহুল বারী ২/৫১; উমদাতুল কারী ৫/৬২; ফয়যুল বারী ২/১২৯; বুলুগুল আমানী ১/২৯১; মাআরিফুস সুনান ১/৭৫; আউনুল মা’বুদ ২/১৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯২; ফাতাওয়া উসমানী ১/৩৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মহল্লার মসজিদটি বেশ বড়। জুমআর নামায ছাড়া অন্য কোনো...

প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদটি বেশ বড়। জুমআর নামায ছাড়া অন্য কোনো ওয়াক্তে মুসল্লী দ্বারা মসজিদ পূর্ণ হয় না। বিদ্যুৎ না থাকলে তাতে গরমের কারণে নামায পড়তে কষ্ট হয়। এ অবস্থায় গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য ইমাম সাহেব মেহরাব না দাঁড়িয়ে এক কাতার বা দুই কাতার ছেড়ে দাঁড়াতে পারবে কি না? কেউ কেউ এটিকে মাকরূহ বলেন। সঠিক মাসআলা জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

নামাযে ইমামের জন্য মেহরাবে দাঁড়ানো নিয়ম। বিনা ওজরে মেহরাব ছেড়ে দাঁড়ানো অনুচিত। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অল্প-স্বল্প গরমের কারণে ইমামের জন্য মেহরাব ছেড়ে দাঁড়ানো ঠিক হবে না।

তবে যদি গরম এত বেশি হয় যে, মুসল্লীদের নামাযে একাগ্রতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ইমামের জন্য মেহরাব ছেড়ে ঐ বরাবর পেছনে দাঁড়ানো জায়েয হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ইমামের ডানে-বামে কাতার সমান থাকে।

সুনানে আবু দাউদ ১/৯৯; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৬৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/৩০৭; মাকালাতে কাওছারী পৃ. ১৪৫-১৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে কোনো সুতরা না থাকে এবং এ...

প্রশ্ন

যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে কোনো সুতরা না থাকে এবং এ অবস্থায় কেউ অজ্ঞাতসারে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে তার করণীয় কী? সে কি তাকে বাঁধা দিবে, নাকি দিবে না? এক্ষেত্রে কোনটি উত্তম? আর বাঁধা দিলে কীভাবে দিবে?

উত্তর

নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাতের ইশারা কিংবা তাসবীহ জোরে পড়ে সতর্ক করা জায়েয আছে। তবে নামাযীর জন্য এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াই শ্রেয়।

উল্লেখ্য, নামাযীর সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে সুতরা সামনে রাখা সুন্নত।

সুনানে আবু দাউদ ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২০১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; মাজমাউল আনহুর ১/১৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৩৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আজ থেকে প্রায় আট-নয় বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় একটি পাঞ্জেগানা...

প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় আট-নয় বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এর জন্য কোনো স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় অস্থায়ীভাবে একটি ঘরে এক দুই মাস পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার পর একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা হয়। জায়গাটি এক বৃদ্ধা মহিলার ছিল। তিনি এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার ও সাবাহী (প্রভাতী) মকতব পড়ানোর জন্য স্থায়ী অনুমতি দিয়ে দেন। ফলে এলাকাবাসী এই জায়গা ও দক্ষিণ পাশ থেকে (অন্য মালিকানাধীন) আরো কিছু জায়গা নিয়ে এখানে একটি ঘর করেন এবং নির্দিষ্ট একজন হুজুরের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও সাবাহী মকতব চলতে থাকে। কিছুদিন পর বৃদ্ধার জায়গাটিকে সাবাহী মকতবের নামে ওয়াকফ করে লিখিত আকারে দলীল করে দেন।

কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা ও মুসল্লী বৃদ্ধির কারণে সামাজিকভাবে এখানে একটি জামে মসজিদ করা অতি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশপাশে কোথাও আলাদাভাবে জামে মসজিদ করার মতো উপযোগী জায়গা না থাকায় এলাকাবাসী পাঞ্জেগানা মসজিদ-মকতবের নামে ওয়াকফকৃত উক্ত জায়গা এবং দক্ষিণ পাশে আরো এই পরিমাণ জায়গা (এটির মালিক ঐ জায়গা মসজিদের নামে ওয়াকফ করতে প্রস্তুত) সহ এখানে একটি জামে মসজিদ করতে চাচ্ছে। তারা সাবাহী মকতবের জন্য মসজিদের বারান্দাকে নির্দিষ্ট করে দিবে।

জানার বিষয় হল, বৃদ্ধা মহিলা কর্তৃক লিখিত আকারে মকতবের নামে ওয়াকফকৃত উক্ত পাঞ্জেগানা মসজিদ ও মকতবের জায়গা মসজিদের সীমানায় নিয়ে এলাকাবাসীর প্রয়োজনে

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনারা যেভাবে উক্ত পাঞ্জেগানা মসজিদ ও সাবাহী মকতবের জায়গাসহ নতুন জায়গা মিলিয়ে জামে মসজিদ বানাতে চাচ্ছেন তা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মসজিদের বারান্দা সাবাহী মকতবের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। তা সর্বদা সাবাহী মকতবের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তা লিখিত আকারে রাখতে হবে। যেন পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কোনো জটিলতা না হয়। অবশ্য মকতবের সময় ছাড়া অন্য সময় বারান্দাটি মসজিদের কাজে ব্যবহার করা যাবে।

উল্লেখ্য যে, দানকারিনী মহিলা যেহেতু লিখিতভাবে ওয়াকফ করার পূর্বেই জায়গাটি মসজিদ ও মকতবের জন্য যৌথভাবে দান করেছিলেন তাই পরবর্তীতে শুধু মকতবের নামে ওয়াকফ করলেও তা মসজিদ ও মকতব উভয়ের জন্য ওয়াকফ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে মকতবের একক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৭৮-৩৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৭; ফাতহুর কাদীর ৫/৪৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কোনো ধরনের দুআ করা জায়েয আছে...

প্রশ্ন

নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কোনো ধরনের দুআ করা জায়েয আছে কি না? এক আলেমের মুখে শুনেছি, নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় বাংলাতেও দুআ করা জায়েয আছে। তার এ কথা কতটুকু সঠিক?

উত্তর

নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুআসমূহ পড়া যাবে। তবে নফল হোক কিংবা অন্য কোনো নামাযে অনারবী ভাষায় দুআ করা নিষিদ্ধ।

সুনানে আবু দাউদ ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২১; আননাহরুল ফায়েক ১/২২৪; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর পৃ. ১/২২৯; আসসিআয়াহ ২/২৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি নামাযের জামাতে রুকুতে এমন সময় শামিল হল যে,...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি নামাযের জামাতে রুকুতে এমন সময় শামিল হল যে, একবারও পূর্ণভাবে রুকুর তাসবীহ পড়তে পারেনি। এ অবস্থায় সে রুকু ও রাকাত পেয়েছে বলে ধরা হবে কি না? নাকি একবার পূর্ণ তাসবীহ পড়ার সুযোগ পেলে রাকাত পাওয়া গণ্য করা হবে?

উত্তর

রাকাত পাওয়ার জন্য রুকু পাওয়া জরুরি। আর রুকু পাওয়ার জন্য এক মুহূর্ত হলেও ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হতে হবে। ইমামের সাথে রুকুর তাসবীহ পাওয়া জরুরি নয়। কিন্তু যদি ইমামকে রুকু অবস্থায় অল্প সময়ের জন্যও না পাওয়া যায় তাহলে এ রাকাত পায়নি বলে বিবেচিত হবে।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ২৫৩৭-২৫৩৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০; ফাতহুল কাদীর ১/৪২০; মাজমাউল আনহুর ১/২১২; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ঘরবাড়িতে মহিলারা যখন নামায পড়ে তখন সেখানে অধিকাংশ সময় মাহরাম...

প্রশ্ন

ঘরবাড়িতে মহিলারা যখন নামায পড়ে তখন সেখানে অধিকাংশ সময় মাহরাম আত্মীয় স্বজন ছাড়া অন্য কেউ থাকে না। তখনও কি তাদের উপর পুরো শরীর ঢেকে নামায পড়া জরুরি?

উত্তর

মহিলাদের চেহারা, কব্জি পর্যন্ত দুই হাত ও গিরা পর্যন্ত দুই পা ব্যতীত অবশিষ্ট সম্পূর্ণ শরীর নামাযে সর্বাবস্থায় ঢেকে রাখা জরুরি। এটা নামায অবস্থার সতর। একা ঘরে নামায পড়লেও এভাবে ঢেকে নামায পড়তে হবে। আর উভয় পা খোলা রাখা জায়েয, কিন্তু তাও ঢেকে রাখা উত্তম।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪; ইলাউস সুনান ২/১৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৬; মাজমাউল আনহুর ১/১২২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২০৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি আসরের নামায পড়ছিলাম। ভুলে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা শেষ...

প্রশ্ন

আমি আসরের নামায পড়ছিলাম। ভুলে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা শেষ করে সূরা মিলিয়েছি এবং সাহু সিজদা করেছি এই মনে করে যে, আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। পরে জানতে পারি যে, আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। এখন আমার নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

বিনা কারণে সাহু সিজদা দেওয়াটা মাকরূহ হয়েছে। তবে নামায আদায় হয়ে গেছে। ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ইমাম সাহেব চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলে আলহামদু...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলে আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন পর্যন্ত উচ্চস্বরে পড়ে ফেলেন। এতে কি তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে? কতটুকু উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়?

উত্তর

চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে কেরাত আস্তে- পড়া ওয়াজিব। একাকি পড়া হোক কিংবা জামাতে। অতএব তাতে ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত পরিমাণ জোরে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। প্রশ্নোক্ত নামাযে যেহেতু মাত্র ছোট একটি আয়াত উচ্চস্বরে পড়া হয়েছে তাই এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়নি।

আলবাহরুর রায়েক ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের গ্রামের মসজিদের ইমাম একদিন বিতর নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের মসজিদের ইমাম একদিন বিতর নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গিয়েছিলেন। মুকতাদীরা পিছন থেকে আল্লাহু আকবার বলে লুকমা দিলে তিনি রুকু থেকে ফিরে আসেন এবং দুআ কুনূত পড়েন। অতঃপর আবার রুকু করেন এবং সাহু সিজদা করে নামায শেষ করেন। প্রশ্ন হল, তার এ নামায সহীহ হয়েছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করার দ্বারা নামায সহীহ হয়ে গেছে। তবে রুকু থেকে ফিরে আসা নিয়ম পরিপন্থী হয়েছে। দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে দুআ কুনূতের জন্য রুকু ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে না; বরং নামায শেষে সাহু সিজদা করে নিবে। আর যদি দুআ কুনূত পড়ার জন্য রুকু থেকে উঠে দাঁড়ায় তবে তা নিয়মের খেলাফ হলেও নামায হয়ে যাবে। অবশ্য এ অবস্থাতেও সাহু সিজদা দিতে হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমাম সাহেব যখন খুতবা দিতে বের হন তখন থেকেই কথা...

প্রশ্ন

ইমাম সাহেব যখন খুতবা দিতে বের হন তখন থেকেই কথা বলা ও নামায পড়া নিষেধ। কিন' বর্তমানে ইমাম অনেক আগেই আসেন এবং খুতবার আগে বয়ান হয়। এ অবস'ায় যখন বয়ান চলে তখন কি কথা বা নফল নামায নাজায়েয হবে? বিস-ারিত দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাদীসে ইমামের বের হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, খুতবার জন্য আসা। এজন্য খুতবার হুকুম দ্বিতীয় আযান থেকেই শুরু হবে, এর আগে নয়। তবুও যেহেতু দ্বীনী বয়ানের মাধ্যমে শরীয়তের অনেক বিষয় জানা যায়। তাই বয়ান চলাকালীন ব্যক্তিগত আমলে ব্যস- না থেকে বয়ান শোনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ২৮২; আততা’লীকুল মুমাজ্জাদ ১/৬০৩; ফাতহুল কাদীর ২/৩৭; আলকওলুর রাজেহ ১/১৪৪; মাবসূত সারাখসী ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; ইমামের বের হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য : হাশিয়া দুরার আলালগুরার ১/৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪০৮; মনোযোগের সাথে ওয়াজ শ্রবণ করা : আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৬৩; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/১৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক কিতাবে দেখতে পেলাম যে, রফে ইয়াদাইনের আমল প্রাথমিক অবস'ায়...

প্রশ্ন

এক কিতাবে দেখতে পেলাম যে, রফে ইয়াদাইনের আমল প্রাথমিক অবস'ায় জারি ছিল। পরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানসূখ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ রাফে ইয়াদাইন এখন মানসূখ। কিন' প্রশ্ন হল, রাফে ইয়াদাইনের হাদীস লেখার সময় ইমাম বুখারী রাহ. কি ঐ মানসূখ হাদীস জানতেন না? ইমাম শাফেয়ী রাহ. নিজ মাযহাবে এর প্রচলন করে গেছেন। তিনিও কি ঐ মানসূখের খবর জানতেন না? যদি জানতেন তবে রাফে ইয়াদাইন করার কি যুক্তি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

নামাযের তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাকি কিছু তাকবীরের মধ্যে রাফে ইয়াদাইন করা না করা উভয়টিই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রাফে ইয়াদাইন করেছেন, কখনো করেননি। সাহাবা, তাবেয়ীন ও পরবর্তীদের মধ্যে উভয় পদ্ধতিরই অনুসারী ছিলেন। এরই সুত্র ধরে শাফেয়ী, হাম্বলী মাযহাবে রাফে ইয়াদাইনের পদ্ধতি এসেছে। অপরদিকে হানাফী, মালেকী মাযহাবে রাফে ইয়াদাইন না করার মতটি গ্রহণ করা হয়েছে। স্ব স্ব স'ানে উভয় মতই শরীয়ত স্বীকৃত। কেননা দুটোরই উৎস সুন্নাহ। তবে বিভিন্ন আলামতের ভিত্তিতে ইজতিহাদের আলোকে কোনো ফকীহ কোনো একটিকে উত্তম ও অগ্রগণ্য মনে করেন। আর অন্যটিকে মনে করেন বৈধ ও অনুত্তম। আবার অন্য ফকীহ এর বিপরীত মত পোষণ করেন। বিশুদ্ধ মত হল, এর কোনোটিই মানসূখ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একটিকে মানসূখ ঘোষণা দেননি। কতক ফকীহ যারা রাফে ইয়াদাইনের আমলকে মানসূখ বলেছেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মুস-াহাব বা উত্তম হওয়াটা রহিত হয়েছে। মূল আমলের বৈধতা রহিত হয়নি।

বলাবাহুল্য যে, এটি হল বিভিন্ন আলামতের ভিত্তিতে ইজতিহাদের আলোকে একদল ফকীহর মত। অন্যান্য ফকীহদের মতও এরূপ হওয়া জরুরি নয়। অন্যরা একে মানসূখ (পূর্ববর্ণিত অর্থে) মনে নাও করতে পারেন।

আর বাস-বে কোনো হাদীস মানসূখ হলে তা হাদীসের কিতাবে আনা যাবে না এ ধারণাও ঠিক নয়। অনেক হাদীসের হুকুম মানসূখ হওয়া সত্ত্বেও হাদীস সংকলকগণ নিজ নিজ সংকলনগ্রনে' তা উল্লেখ করেছেন। এতে অনেক ফায়দা রয়েছে। একটি উল্লেখযোগ্য ফায়দা হল, পূর্ববর্তীরা মানসূখ হাদীসটি উল্লেখ করার কারণেই পরবর্তীদের জন্য জানার সুযোগ হয়েছে যে, এর হুকুম মানসূখ। এ বিষয়ে বিস-ারিত জানতে চাইলে সদ্য প্রকাশিত বই ‘নবীজীর নামাযা’ ড. শায়খ মুহাম্মাদ ফায়সাল কৃত পৃ. ১৮০-১৮৮ পর্যন- পড়-ন

পড়-ন।-মাআরিফুস সুনান ২/৪৫৮; ফয়যুল বারী ২/২৫৮; নাসবুর রায়াহ ১/৩৯২; ফাতহুল মুলহিম ২/১১, ১৪; ইলাউস সুনান ৩/৮০, ৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের স'লে ভুলবশত সূরা...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের স'লে ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলে। পরে মনে হলে তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ পড়ে সাহু সিজদা ছাড়া নামায শেষ করে। তার নামায কি আদায় হয়েছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

উক্ত ভুলের কারণে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। যেহেতু তা করা হয়নি তাই নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।

আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়া পৃ. ২৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে। দু’ এক মসজিদে ফজরের আযান...

প্রশ্ন

ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে। দু’ এক মসজিদে ফজরের আযান হয়েছে এবং ১০-১৫ মিনিট এ আযান বিভিন্ন মসজিদে চলছে। এ অবস'ায় নামাযের প্রস'তি নিব এবং জরুরত সারব না আযানের জবাব দিব? উল্লেখ্য, আযানের জবাব দিয়ে এসব করতে গেলে জামাত না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উত্তর

আযানের জবাব দেওয়া মুস-াহাব। যে কোনো মসজিদের আযানের জবাব দিলেই মুস-াহাব আদায় হয়ে যায়। তবে একই জায়গায় একাধিক মসজিদের আযান শুনা গেলে, প্রথম আযানের উত্তর দিবেন। পরবর্তী আযানগুলোর উত্তর দেওয়া লাগবে না। এমনকি সেটা নিজ মহল্লার মসজিদের আযান হলেও তার উত্তর দেওয়া লাগবে না। আর যদি সব কটি আযান এক সঙ্গে শুরু হয় তাহলে নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিবেন। ইসি-ঞ্জার প্রয়োজন হলে আযানের জবাবের অপেক্ষা না করেও প্রয়োজন পুরা করতে পারবেন। আযানের জবাবের জন্য ইসি-ঞ্জায় যেতে বিলম্ব করার দরকার নেই।

নেই।-ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৯;আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৬; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি একাকী নামায পড়ার নিয়তে নামায শুরু করার পর...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি একাকী নামায পড়ার নিয়তে নামায শুরু করার পর এক ব্যক্তি এসে তার পিছনে ইকতিদা করে ও তার সাথে নামায শেষ করে। প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তি ইমামতির নিয়ত না করলে মুকতাদির নামায সহীহ হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, ইমামতির নিয়ত না করলেও ঐ মুকতাদীর নামায সহীহ হয়েছে। কারণ ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ইমামতির নিয়ত জরুরি নয়।

নয়।-শরহুল মুনইয়া পৃ. ২৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১২১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার আম্মার দাঁড়িয়ে নামায পড়ার শক্তি নেই। তবে বসে নামায...

প্রশ্ন

আমার আম্মার দাঁড়িয়ে নামায পড়ার শক্তি নেই। তবে বসে নামায আদায় করতে পারেন। তাঁর জন্য বসে ফরয নামায আদায় করা সহীহ হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, দাঁড়িয়ে আদায় করা সম্ভব না হলে ফরয নামাযও বসে আদায় করা জায়েয।

জায়েয।-সহীহ বুখারী ১/১৫০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/১১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার দাদী খুবই অসুস'। বসেও নামায পড়তে পারেন না। এখন...

প্রশ্ন

আমার দাদী খুবই অসুস'। বসেও নামায পড়তে পারেন না। এখন তিনি কীভাবে নামায পড়বেন শায়িত অবস'ায় কি নামায পড়া যায়, পড়া গেলে এর নিয়ম কী? সবিস-রে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস'ায় আপনার দাদী শুয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে আদায় করবেন। তবে রুকুর তুলনায় সিজদার জন্য মাথা বেশি ঝুঁকাতে হবে। শায়িত অবস'ায় নামায পড়ার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে।

১. পা পশ্চিম দিকে, মাথা পূর্ব দিক দিয়ে চিত হয়ে শয়ন করবে। সম্ভব হলে পিঠ ও মাথার নিচে বালিশ ইত্যাদি কিছু দিয়ে উঁচু করে নিবে যেন সিনা ও চেহারা কিবলামুখী হয়ে থাকে। পা পশ্চিম দিকে বিছিয়েও দিতে পারে তবে সম্ভব হলে হাঁটু ভাজ করে রাখবে। শায়িত অবস'ায় নামায আদায়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিই অগ্রগণ্য।

২. মাথা উত্তর দিকে এবং পা দক্ষিণ দিকে রেখে শুবে। এভাবে ডান কাতে শুয়ে সিনা ও চেহারা কিবলার দিক করে রাখবে।

৩. মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে করে শুবে। এভাবে বাম কাত হয়ে শুয়ে চেহারা ও সিনা কিবলার দিকে রাখবে।

উল্লেখ্য, এ সকল পদ্ধতির কোনোটি সম্ভব না হলে যেভাবে শোয়া সম্ভব সেভাবে শুয়ে মাথা নেড়ে রুকু-সিজদা করবে। এসকল ক্ষেত্রে সিজদার জন্য রুকুর চেয়ে মাথা কিছুটা বেশি ঝুকাবে। মাথা নাড়ার ক্ষমতা থাকা পর্যন- নামায আদায় করতে হবে।

হবে।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৪৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৭; হিদায়া ১/১৬১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৩; মাবসূত সারাখসী ১/২১৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০১; হাশিয়াতু তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি দীর্ঘ দশ/বার দিন অসুস' ছিলাম। মাথা দ্বারা ইশারা করেও...

প্রশ্ন

আমি দীর্ঘ দশ/বার দিন অসুস' ছিলাম। মাথা দ্বারা ইশারা করেও নামায আদায় করতে সক্ষম ছিলাম না। কিন' আমার হুঁশ বাকি ছিল। আমার জানার বিষয় হল, উক্ত দিনগুলোতে ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা করতে হবে কি না? উল্লেখ্য, হিদায়া গ্রনে'র প্রথম খণ্ডের ১৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, এ অবস'ায় ছুটে যাওয়া নামায কাযা করতে হবে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা জরুরি নয়। তবে কাযা করে নেওয়া ভালো। হেদায়া গ্রনে'র ঐ উক্তিটি গ্রহণযোগ্য মত নয়। কেননা, ফাতাওয়ার প্রসিদ্ধ কিতাবাদির পাশাপাশি স্বয়ং হিদায়ার লেখকও তার কিতাব ‘আততাজনীস ওয়াল মাযীদ’-এ কাযা জরুরি না হওয়ার ফতোয়া প্রদান করেছেন। নিম্নে এ সংক্রান- হাওয়ালাসমূহ পেশ করা হল।

আলমু’জামুল আওসাত তবরানী ৫/১১; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০১; ইলাউস সুনান ৭/২০০; হাশিয়াতু তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন আমাদের মসজিদে একাকী নামায পড়ছিলাম। কিছুক্ষণ পর এক...

প্রশ্ন

আমি একদিন আমাদের মসজিদে একাকী নামায পড়ছিলাম। কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি আমার পার্শ্বে বসে উচ্চ স্বরে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত শুরু করে এবং একপর্যায়ে সে আয়াতে সিজদা তিলাওয়াত করে যা আমি নামাযরত অবস'ায় শুনতে পাই। কিন' আমি সিজদা না করে নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, উক্ত আয়াতে সিজদা শ্রবণ করার কারণে আমার উপর কি সিজদা ওয়াজিব হয়েছে? ওয়াজিব হলে কখন আদায় করব। নামাযের মধ্যে আদায় করা কি কর্তব্য ছিল?

উত্তর

আপনি নামাযের মধ্যে ঐ সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। নামাযরত অবস'ায় অন্য ব্যক্তি থেকে আয়াতে সিজদা শুনলেও সিজদা ওয়াজিব হয়। তবে তা আদায় করতে হয় নামাযের পর। নামাযের মধ্যে আদায় করা যায় না। কেউ আদায় করলেও তা আদায় হবে না। সিজদাটি পরবর্তীতে আদায় করে নিতে হবে।

তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৫০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১২১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; হাশিয়া তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সময় আছে মনে করে তাহাজ্জুদের নিয়তে দুই...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সময় আছে মনে করে তাহাজ্জুদের নিয়তে দুই রাকাত নামায শুরু করে। নামায শেষে সময় দেখলে বুঝতে পারে যে, তার নামায শুরু করার আগেই তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে গেছে। তার এই দুই রাকাত নামায তাহাজ্জুদ হবে, নাকি ফযরের সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে? ফযরের সুন্নত কি নতুন করে পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস'ায় ঐ দুই রাকাত নামায ফযরের সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে। নতুন করে সুন্নত পড়তে হবে না।

আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৮; আসসিয়াআহ ২/১০২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৭; হাশিয়া তহতাবী আলাদ্দুর ১/১৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হল, মসজিদে বসে ইজতিমায়ীভাবে উচ্চস্বরে যিকির...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হল, মসজিদে বসে ইজতিমায়ীভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম আছে কি না। তিনি বললেন, আছে। কিন্তু তার কথায় কিছুটা জটিলতা অনুভব হল। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মসজিদে বসে সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

একাকী যিকির করা বা কয়েকজন একত্রিত হয়ে উঁচু আওয়াজে যিকির করা উভয়টিই শরীয়তে অনুমোদিত। তা মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার প্রতি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে থাকি। সে যদি একাকী আমার যিকির করে তাহলে আমি গোপনে তাকে স্মরণ করি। সে কোনো মজলিসে আমার যিকির করলে আমি তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৪০৫

ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, জামাতে যিকির করলে আওয়াজ তো হবেই।-আলহাবী লিলফাতাওয়া ২/১২৯

তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা :

১. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া।

২. কোনো ব্যক্তির নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো।

৩. কোনো ব্যক্তির বিশ্রামে সমস্যা না হওয়া।

৪. আওয়াজ স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত উঁচু আওয়াজে না হওয়া এবং মাইক ব্যবহার না করা।

৫. সাধারণভাবে এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। যিকিরের শব্দ উচ্চারণে লাহনে জলী থেকে বেঁচে থাকা। যদি উল্লেখিত শর্তাবলি পাওয়া যায় তবে ইজতিমায়ী যিকির করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যদি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তসমূহ বা তা থেকে কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে কাজটি শরীয়তসম্মত হবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক যিকিরের মজলিসে উল্লেখিত শর্তগুলোর অনেক কিছুই লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়, যা সংশোধনযোগ্য।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬৬০; সিবাহাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, আবদুল হাই লাখনৌভী পৃ. ৩৮; নতীজাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, (আলহাবী লিল ফাতাওয়া ২/১২৮) ইমাম সুয়ূতী; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে...

প্রশ্ন

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি নামাযের ইকামত হচ্ছে বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামাতের কতটুকু অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি সুন্নত পড়ব? দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাকি ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।-মুসনাদে আহমদ ২/৪০৫

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন।-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ১/২৫৬

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ই, যা উপরে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো পিলারের আড়ালে সুন্নত পড়বে।

খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।

-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মাবসূত, সারাখসী ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নফল নামায বসে পড়ার হুকুম কি?

প্রশ্ন

নফল নামায বসে পড়ার হুকুম কি?

উত্তর

নফল নামায কোনো ওজর ছাড়াও বসে পড়া জায়েয। তবে বসে পড়লে দাঁড়িয়ে পড়ার তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এতে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হবে।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৮৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২১; ফাতহুল কাদীর ১/৪০০; আলবাহরুর রায়েক ২/৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। জ্বরের তীব্রতায়...

প্রশ্ন

আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। জ্বরের তীব্রতায় কয়েক ওয়াক্ত নামায বসে আদায় করেছি। মাঝে একদিন শরীর হালকা লাগছিল তাই দাঁড়িয়ে নামায শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ক্লান্তি ও চোখে অন্ধকার বোধ করায় অর্ধেক নামায বসে আদায় করি। এভাবে আমার নামায আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর বাকি নামায বসে পড়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। কেননা দাঁড়িয়ে নামায পড়া অধিক কষ্টকর হলে বসে নামায পড়া জায়েয। এমনকি নামাযের মাঝে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে গেলেও অবশিষ্ট নামায বসে আদায় করা জায়েয।

-সহীহ বুখারী ১/১৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; মাবসূত, সারাখসী ১/২১৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

যোহর ও আসরের নামায কাযা হয়েছে। মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার...

প্রশ্ন

যোহর ও আসরের নামায কাযা হয়েছে। মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার ২/৩ মিনিট বাকি আছে। এক্ষেত্রে কোন ওয়াক্তের নামায আগে আদায় করবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি মাগরিব শেষ হতে মাত্র দুই তিন মিনিটই বাকি থাকে তাহলে মাগরিবের ফরয নামাযটি আগে আদায় করে নিবে। যেন মাগরিবের নামাযও কাযা না হয়ে যায়। এরপর যোহর ও আসরের কাযা নামাযগুলো পড়বে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৮২; শরহুল মুনয়াহ ৫৩০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে আমাদের অফিসেই জামাতের সাথে নামায আদায় করতে...

প্রশ্ন

মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে আমাদের অফিসেই জামাতের সাথে নামায আদায় করতে হয়। জানার বিষয় হল, আযান না দিয়ে অফিসে জামাতের সাথে নামায আদায় করা সহীহ হবে কি?

উত্তর

বাসা বা অফিসে জামাতের জন্য মহল্লার মসজিদের আযানই যথেষ্ট। তাই অফিসে আযান না দিয়েও জামাতে নামায পড়া যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও আযান দেওয়া মুস্তাহাব।

উল্লেখ্য, ছাতার ব্যবস্থা থাকলে সাধারণ বৃষ্টির কারণে মসজিদের জামাত ত্যাগ করা উচিত নয়। কেবল প্রবল বর্ষণের ক্ষেত্রেই মসজিদের জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৩৫৯; মাবসূত, সারাখসী ১/১৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক লোক আছে, যারা নামায পড়ে, নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি...

প্রশ্ন

অনেক লোক আছে, যারা নামায পড়ে, নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে এবং তাওহীদে বিশ্বাসী, তথাপি তারা মনে করে, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট দূর করা ও কল্যাণ সাধনের ক্ষেত্রে পীর-বুযুর্গদের অনেক ক্ষমতা আছে। তাই তারা সরাসরি মৃত ও জীবিত পীরের নিকট প্রার্থনা করে, সাহায্য চায় এবং তাদের কাছে মুক্তি চায়। অথচ আমরা জানি, এ ধরনের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। সঠিক বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীন। তিনি ব্যতীত অন্য কারো এ ধরনের কোনো ক্ষমতা নেই। এর উপর ঈমান ও বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। তাই বিপদ-আপদ বা দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া বা কল্যাণ-অকল্যাণে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনের কর্তব্য হল, একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া। এগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে চাওয়া শিরক। কোনো পীর-বুযুর্গের নিকট বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য এ মর্মে প্রার্থনা করা যে, আপনি আমাকে অমুক বিপদ থেকে উদ্ধার করেন বা অমুক বিষয়ে সাহায্য করেন-এটা সম্পূর্ণ শিরকি ও কুফরী কাজ।

উপায়-উপকরণের উর্ধ্বের কোনো বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক ফিল ইসতিআনা, যা اياك نستعين এর অঙ্গীকার পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন।

তবে যদি জীবিত কোনো হক্কানী পীর-বুযুর্গ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নিকট এ মর্মে দুআ চাওয়া হয় যে, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করেন যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করে দেন এবং এক্ষেত্রে দুআপ্রার্থীর এ বিশ্বাস থাকে যে, তিনি আল্লাহর মাহবুব ও নৈকট্যভাজন বান্দা হিসেবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবুল করবেন। তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং এটি হাদীস ও সাহাবীগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।-ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম ৬০-৬২

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাক, আমি তোমাদের দুআ কবুল করব।-সূরা মুমিন : ৬০

অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, বলে দাও, আমি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কোনো ক্ষতি করার এখতিয়ার রাখি না এবং কোনো উপকার করারও না।-সূরা জিন : ২১

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো কষ্ট দেন তবে এমন কেউ নেই তিনি ছাড়া, যে তা দূর করবে আর তিনি যদি তোমার কোনো মঙ্গলের ইচ্ছা করেন তবে এমন কেউ নেই, যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। তিনি অতিক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।-সূরা ইউনুস : ১০৭

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যদি ( কোনো কিছু) চাও তবে আল্লাহর নিকট চাও। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা কর তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো, যদি সকল মানুষ সংঘবদ্ধভাবে তোমার উপকার করতে চায় তবে তারা ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৬৬৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৬/১২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি মাগরিবের ফরযের মধ্যে এক রাকাতে সূরা কুরাইশ ও...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি মাগরিবের ফরযের মধ্যে এক রাকাতে সূরা কুরাইশ ও সূরা মাউন পড়েছে এবং মাঝে বিসমিল্লাহও পড়েছে। এভাবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়লে কোনো সমস্যা আছে কি না?

উত্তর

একই রাকাতে পর পর দুই বা ততোধিক সূরা পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা না করাই ভালো।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৩৭; তাতারখানিয়া ১/৪৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাছ ও দ্বিতীয়...

প্রশ্ন

আমি একদিন মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাছ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফীল পড়েছি। আমার নামায সহীহ হয়েছে কি? না হলে কী করতে হবে?

উত্তর

আপনার নামায সহীহ হয়েছে। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃতভাবে সূরার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ করা অনুত্তম। অবশ্য ভুলবশত হলে ক্ষতি নেই।

-শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৯৪; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; আলমুগনী ২/১৬৯; ইলাউস সুনান ৪/১৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি বিতর নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের পরে ভুলবশত বৈঠক করেনি।...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি বিতর নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের পরে ভুলবশত বৈঠক করেনি। আবার তৃতীয় রাকাতে দোয়ায়ে কুনূতও পড়তে ভুলে যায় এবং শেষে সাহু সিজদা করেছে। জানতে চাই, তার বিতর নামায সহীহ হয়েছে কি না? তা কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

ঐ বিতর নামায সহীহ হয়েছে। পুনরায় পড়া লাগবে না। কারণ ভুলে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলেও সবগুলোর জন্য একটি সাহু সিজদাই যথেষ্ট। এক নামাযে একাধিক সাহু সিজদা দেওয়ার বিধান নেই।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭-২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৪৭ ও ১/৭৪১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০ ও ২/৯২,৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৫-৬৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/৪৩৭; আলমাবসূত সারাখসী ১/২২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর চুপ...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর চুপ থেকে ভাবতে লাগল যে, কোন সূরা পড়বে। ভাবতে ভাবতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় কেটে গেল। তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি? সাহু সিজদা না দিয়ে থাকলে তার করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিন তাসবীহ পরিমাণ চুপ থাকার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সুতরাং সাহু সিজদা না দিয়ে থাকলে ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৩ ও ১/৪৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন একদিন ফজরের নামাযের সময় হয়েছে ভেবে আযান...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন একদিন ফজরের নামাযের সময় হয়েছে ভেবে আযান দিয়ে দেয়। পরবর্তীতেও স্থির করা যায়নি যে, আযান সময়মতো দেওয়া হয়েছে না পরে। তবে আগে হয়েছে বলেই প্রবল ধারণা। এরপর আমরা ফজরের ওয়াক্তের মধ্যে ঐ আযান দ্বারা নামায আদায় করি। আমাদের নামায সহীহ হয়েছে কি না?

উত্তর

ওয়াক্তের পূর্বে আযান দিলে আযান সহীহ হয় না। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের আযান হয়নি। এক্ষেত্রে ওয়াক্ত হওয়ার পর আবার আযান দেওয়া উচিত ছিল। আযান না দেওয়ার কারণে মাকরূহ হয়েছে। অবশ্য আযান ছাড়া ফরয নামায পড়লেও যেহেতু নামায হয়ে যায় তাই আপনাদের ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮১; মাবসূত সারাখসী ১/১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বাড়ি কুমিল্লা। সেখানে আববা, আম্মাসহ পরিবারের অন্যরা থাকে। আমি...

প্রশ্ন

আমার বাড়ি কুমিল্লা। সেখানে আববা, আম্মাসহ পরিবারের অন্যরা থাকে। আমি ঢাকায় মাদরাসায় পড়ি। সেখানে আমার থাকা-খাওয়ার পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে। যেহেতু ঢাকায় পনেরো দিনের বেশি থাকা হয় তাই ‘ওয়াতনে ইকামত’ হিসাবে পূর্ণ নামায পড়ি। মাঝেমধ্যে কিছু দিনের জন্য কুমিল্লায় যাওয়া হয় এবং কয়েক দিন সেখানে থাকি। জানার বিষয় হল, কুমিল্লায় যাওয়ার কারণে ঢাকার ওয়াতনে ইকামত বাতিল হয়ে যায় কি না? আর পনেরো দিনের কম থাকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসা হলে নামায কসর করব কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কুমিল্লায় সাময়িক সময়ের জন্য যাওয়ার কারণে ঢাকার ‘ওয়াতনে ইকামত’ বাতিল হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা পরিপূর্ণ ত্যাগ করার নিয়তে মালপত্র নিয়ে যাওয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াতনে ইকামত হিসেবে বহাল থাকবে।

আর ঢাকা যেহেতু ওয়াতনে ইকামত হিসাবে বহাল থাকছে তাই এখানে পনেরো দিনের কম থাকার উদ্দেশ্যে আসা হলেও পুরো নামায পড়তে হবে। কসর করা যাবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮০; মাজমাউল আনহুর ১/২৪৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি বাস থেকে পড়ে কপালে খুব আঘাত পেয়েছে, তাই...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি বাস থেকে পড়ে কপালে খুব আঘাত পেয়েছে, তাই সে কপালের উপর সিজদা করতে সক্ষম নয়। সে নাকের উপর সিজদা করে। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির নাকের উপর সিজদা করার কারণে তার নামায হয়েছে কি না?

উত্তর

সিজদায় কপাল এবং নাক রাখা জরুরি। কোনো ওযরের কারণে সিজদায় কপাল জমিনে রাখা সম্ভব না হলে শুধু নাক দ্বারা সিজদা করা জায়েয। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যেহেতু কপাল রাখতে সক্ষম নয় তাই তার জন্য শুধু নাকের উপর সিজদা করা জায়েয হয়েছে এবং তার নামায সহীহ হয়েছে।

-আলমাবসূত সারাখসী ১/২১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ২৮৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার খতীব খুতবা ছাড়াই জুমার নামায পড়িয়েছেন। জানতে চাই,এ...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার খতীব খুতবা ছাড়াই জুমার নামায পড়িয়েছেন। জানতে চাই,এ জুমার নামায আদায় হয়েছে কি না এবং জুমার দিন খুতবা পড়ার কী হুকুম?

উত্তর

জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা অন্যতম শর্ত। খুতবা ব্যতীত জুমার নামায আদায় হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জুমার নামায আদায় হয়নি। সকলকে ঐ দিনের যোহরের নামায কাযা করে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮২; মাজমাউল আনহুর ১/২৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলার আলোচনায় বললেন, নামাযে কেরাতের তারতীব ঠিক...

প্রশ্ন

মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলার আলোচনায় বললেন, নামাযে কেরাতের তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব। আমরা জানি যে, ওয়াজিব তরক করলে সাহু সিজদা করতে হয়। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হবে কি না? যদি সাহু সিজদা করতে না হয় তাহলে নামাযে সূরার তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব হল কীভাবে? বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

নামাযে সূরাসমূহের তারতীব ঠিক রাখা উত্তম। নামাযে সূরার তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব হওয়ার কথা ঠিক নয়। হ্যাঁ, এটা ইলমে তাজবীদের মাসআলা হতে পারে। কিন্তু এটি নামাযের ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই ফরয-ওয়াজিব নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা মাকরূহ তানযীহী। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেলে মাকরূহ হবে না। সুতরাং এর কারণে সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৫৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৯৪; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন পূর্বে আমি ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে দুদিন পর্যন্ত ফরয-ওয়াজিব...

প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমি ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে দুদিন পর্যন্ত ফরয-ওয়াজিব নামায ব্যতিত কোনো সুন্নত নামায আদায় করতে পারিনি। এখন আমি সুস্থ, কিন্তু সুন্নত পরিত্যাগের কারণে খুব খারাপ লাগছে। জানতে চাই, এর ক্ষতিপূরণের কোনো উপায় আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছুটে যাওয়া সুন্নত নামাযগুলো আদায় করতে হবে না। আর অসুস্থতার সময় সুন্নত না পড়ার কারণে কোনো গুনাহ হবে না; বরং হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী সুস্থতার সময় যত আমল করা হত অসুস্থতার কারণে উক্ত আমল ছুটে গেলেও আল্লাহ তাআলা সুস্থতার আমলের পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। তাই এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

-সহীহ বুখারী ১/৪২০; ফাতহুল বারী ৬/১৫৯; উমদাতুল কারী ১৪/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে জায়নামাযে দাড়িয়ে...

প্রশ্ন

আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে জায়নামাযে দাড়িয়ে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ...’ দুআটি পড়তে হয়। একে জায়নামাযের দুআ বলে। এ সম্পর্কে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই দুআটি পড়া ঠিক নয়। জানার বিষয় হল, বইয়ের কথা ঠিক নাকি ইমাম সাহেবের কথা ঠিক? সঠিক সমাধান দিয়ে সঠিক আমলের সুযোগ দিবেন।

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত দুআটি জায়নামাযে দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে পড়াটা প্রমাণিত নয়। হাঁ, হাদীস শরীফে নফল নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর পড়ার কথা রয়েছে। এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে ফিকাহবিদগণ নফল নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর সানার পূর্বে এ দুআ পড়াকে উত্তম বলেছেন।

-সুনানে নাসাঈ ১/১০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

পুরুষের মতো কি মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত? হাদীসে মহিলাদের...

প্রশ্ন

পুরুষের মতো কি মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত? হাদীসে মহিলাদের মিসওয়াক করা সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় কি?

উত্তর

মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের উপর প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করা জরুরি করে দিতাম। (সহীহ বুখারী ১/১২২)

সুনানে আবু দাউদের ১/৮ এক বর্ণনায় আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.-এর মিসওয়াক করার কথা উল্লেখ আছে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে ছিলাম। এ সময় আমার দুই...

প্রশ্ন

আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে ছিলাম। এ সময় আমার দুই বছরের ছোট ছেলেটি কোলে এসে বসে পড়ে এবং এ অবস্থায় পেশাব করে দেয়। কিন্তু তার পরনে যেহেতু পেম্পারস ছিল তাই পেশাব পেম্পারসের ভিতরই থেকে যায়। তাই আমার গায়ে মোটেও পেশাব লাগেনি। এ অবস্থায় আমার নামাযটি কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হ্যাঁ, সহীহ হয়েছে। ঐ শিশুর অপবিত্রতার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব তিনটি সেজদা করে।...

প্রশ্ন

একদিন আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব তিনটি সেজদা করে। কিছু মুকতাদী তৃতীয় সেজদায় ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। আর কিছু মুকতাদী অনুসরণ করেননি। ইমাম সাহেব নামায শেষে সেজদায়ে সাহুও করেননি। এখন তাদের নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

ইমাম সাহেব অতিরিক্ত সেজদা করার কারণে ইমাম এবং সকল মুকতাদীর উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু সেজদায়ে সাহু না করার কারণে ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্য নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি। উল্লেখ্য এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ না করাই নিয়ম। কিন্তু অনুসরণ না করলেও ইমামের ভুলের কারণে সকলের উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫২৮, ৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি রমযান মাসে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে রুকুতে ইমামের...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি রমযান মাসে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হয়েছে। সে দুআ কুনূত পড়ার সুযোগ পায়নি। প্রশ্ন হল, তার ছুটে যাওয়া রাকাতদ্বয় আদায়ের সময় তাকে দুআ কুনূত পড়তে হবে কি না?

উত্তর

ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় তাকে আর দুআ কুনূত পড়তে হবে না। কারণ তৃতীয় রাকাতের রুকু পাওয়ার কারণে সে দুআ কুনূত পেয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

-হাশিয়াতুত্ত্বাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২ বছর যাবত আযান দিচ্ছেন। মুসল্লীরা তাঁকে মুয়াযযিনের মতো মনে করেন। তিনি আল্লাহু আকবার এর হামযাকে এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করেন এবং আকবার এর ‘বা’ কেও এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে থাকেন। আমরা তাঁকে এ সংক্রান্ত মাসআলা শুনিয়েছি এবং অনেকবার আযান মশকও করিয়েছি। কিন্তু তিনি সহীহভাবে আযান দিতে পারেন না। জানতে চাই, এভাবে আযান দিলে কোনো সমস্যা হবে কি না। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আযানে আল্লাহু আকবার এর ‘হামযা’ অথবা ‘বা’ কে টেনে বা মদ করে পড়লে আযান মাকরূহ হবে। এমন অশুদ্ধ উচ্চারণকারীর আযান দেওয়া ঠিক নয়। আযানের জন্য এমন লোক নির্বাচন করতে হবে, যিনি শুদ্ধভাবে সুন্নত তরীকায় আযান দিতে পারেন।

-সুনানে আবু দাউদ ১/৮৭; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; আসসিআয়াহ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৪৩
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

শবে কদরের আমল কি? বিশেষ পদ্ধতির কোনো আমল আছে কি?

প্রশ্ন
শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কিনা? মকসুদুল মুমিনীন সহ অনেক বই পুস্তিকায় বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখা আছে। বিশেষ বিশেষ সূরা দিয়ে নামায পড়া বা নির্ধারিত রাকাত নামায বিশেষ সূরা দ্বারা আদায় করা ইত্যাদি। আসলে কি হাদীস শরীফে এ রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে? থাকলে তা জানতে চাই। এবং রাতের আমল কি? জানতে চাই৷
উত্তর
বিভিন্ন বই-পুস্তকে শবে কদরের নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত পড়তে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা পড়তে হবে, এতবার পড়তে হবে, এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া বানোয়াট পন্থা। আর কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত।
এ রাতের আমল হল, বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নয়। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় নামায আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে ইচ্ছা হয় পড়বে। তেমনি কুরআন তেলাওয়াত, যিকির- আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। এসব আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। তবে নফল নামায দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা কোনো কোনো হাদীস দ্বারা প্রমানিত।
-মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯; ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯৪০
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

সালাতুত তসবীহ নামাযের প্রমান, ফযিলত, ও পড়ার নিয়ম ৷

প্রশ্ন
হুজুর! রমযান আসলে দেখা যায় অনেকেই সালাতুত তসবীব নামায পড়ে ৷ আসলে এ নামাযে কথা হাদীসে আছে কি না? থাকলে তার হুকুম কি? এনামাযের ফযিলত কি? এবং পড়া সঠিক নিয়ম কি? যদি বিস্তারিত বলতেন!
উত্তর
সালাতুত তসবীহ নামায হল নফল ৷ পারলে দৈনিক একবার নয়ত প্রতি জুমায় একবার, নয়ত প্রতি মাসে একবার, নয়ত জীবনে একবার পড়া উচিত ৷ উক্ত নামায সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত ৷ কারণ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত ৷ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেছেন, হে আব্বাস! হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আপনাকে দান করব না? আপনার কাছে আসব না? আমি কি আপনার নিকট দশটি ভাল গুন বর্ননা করব না? যা করলে আল্লাহ আপনার আগে পিছনে, নতুন পুরাতন, ইচ্ছায় অনিচ্ছায়, ছোট বড়, প্রকাশ্যে গোপনে কৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন? আর সে দশটি ভাল গুন হল, আপনি চার রাকাত নামায পড়বেন ৷ প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা ও অন্য সূরা পড়বেন৷ প্রথম রাকাতে যখন কেরাত শেষ করবেন তখন দাড়ানো অবস্থায় ১৫ বার পড়বেন,
سبحان الله والحمد لله و لا اله الا الله و الله اكبر
( উচ্চারন: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার)
এর পর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় ১০ বার পড়বেন৷ এরপর রুকু হতে দাড়াবেন ৷ দাঁড়িয়ে ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন ৷( প্রথম) সিজদায় ১০ বার পড়বেন । এরপর সিজদা হতে উঠে ( বসা অবস্থায়) ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন ৷ ( দ্বিতীয় ) সিজদায় ১০ বার পড়বেন । (দ্বিতীয় ) সিজদা হতে উঠে বসা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এহল, এক রাকাতে ৭৫ বার। এভাবে আপনি চার রাকাতেই পড়বেন ৷ যদি আপনি প্রতিদিন পারেন তাহলে করুন,না হয় প্রতি জুময়ায় একবার,নতুবা প্রতিমাসে একবার, আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে জীবনে একবার ৷
-আবু দাউদ শরীফ, হাদীস: ১২৯৭; ইবনে মাজাহ,হাদীস: ১৩৮৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস: ১২১৬৷
সালাতুত তসবীহ এর হাদীসে বর্নিত উক্ত নিয়মটি ই সর্বোত্তম ৷ সুতরাং এ নিয়মেই পড়া উচিত ৷ অবশ্য কেরাতের পুর্বে ১৫ বার তাসবীহ পড়ার নিয়মে পড়লেও নামায আদায় হয়ে যাবে ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯১৮
তারিখ: ১১-জুলাই-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

আসর নামাযে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া ও সিজদায়ে তিলাওয়াতের পর সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলা ৷

প্রশ্ন
হযরত একটু যদি জানাতেন.....
উত্তর
১ নং প্রশ্নঃ
ইমাম সাহেব যদি অাসরের নামাজে সূরা ফাতিহা জেহের শুরু করেন এবং দু তিন অায়াত পড়ে ফেলেন অতপর মুক্তাদি লোকমা দিলে সিররি শুরু করেন তাহলে হুকুম কি?
যদি সাজদায়ে সাহু করেন তাহলে কি হুকুম? ২ নং প্রশ্নঃ
তারাবির নামাজে সিজদায়ে তেলায়াতের পর যদি সূরা ফাতিহা পড়ে তাহলে হুকুম কি?
অার শুরু করার পর মাঝখানে মনে অাসলে হুকুম কি?
যদি দ্রুত জানাতেন খুব ভালো হত!!
( এ বিষয়ে অামাদের মসজিদে তুমুল বিতর্ক চলছে )
১নং উত্তরঃ
প্রশ্নে বর্নিত সূরতে ইমাম সাহেব আসরের নামাযে সূরা ফাতেহার দু আয়াত পড়েছেন নাকি তিন আয়াত পড়েছেন তা নিশ্চিত করুন ৷ যদি তিন আয়াত বা তার চেয়ে বেশি উচ্চস্বরে পড়ে থাকেন তাহলে সাহু সেজদা আবশ্যক হয়েছে ৷ যদি সাহু সেজদা দিয়ে থাকেন তাহলে নামায হয়েছে নতুবা নামায হয়নি, উক্ত নামায পুনরায় পড়তে হবে ৷ আর যদি তিন আয়াতের চেয়ে কম পড়ে থাকেন তাহলে সাহু সেজদা আবশ্যক হয় নি ৷ সাহু সেজদা ব্যতিত-ই নামায হয়ে যাবে৷
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১; ইলাউস সুনান ৭/১৯১; রদ্দুল মুহতার ২/৮২ ৷
২নং উত্তরঃ
সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা ছোট তিন আয়াত পরিমান মিলানোর পর ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে সূরা মিলানোর আগেই পর পর দুবার সূরা ফাতিহা পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু সুরা মিলানোর পর সূরা ফাতেহা পড়েছে তাই সাহু সেজদা আবশ্যক হয়নি ৷ যখনি স্বরন হবে তখনি নিজ কেরাত থেকে পড়া শুরু করবে ৷
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯১; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯০১
তারিখ: ২৭-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখা আবশ্যক কি না?

প্রশ্ন
হুজুর এখন প্রচন্ড গরমে নামাযের সময় হিজাব পড়তে অনেক কষ্ট হয় ৷ কানগুলো ঢাকা থাকার দরুন আরো বেশি কষ্ট লাগে ৷ তাই জানতে চাই নামাযে মহিলাদের জন্য কান খোলা রাখলে কোন সমস্যা হবে কি না?
উত্তর
নামাযে মহিলাদের কান সতরের অন্তর্ভুক্ত, অতএব মহিলাদের জন্য নামাযে কান ঢেকে রাখা আবশ্যক। তাই নামাযের মধ্যে কোনো কানের চার ভাগের একভাগ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। একটু কষ্টের কারণে একটি আবশ্যকীয় বিধান লঙ্গন করা যাবে না ৷
-শরহুল মুনইয়াহ ২১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪;ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৮৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯০০
তারিখ: ২৭-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে তাশাহহুদের কিছু অংশ ছুটে গেলে করনীয়৷

প্রশ্ন
বরাবর, মুফতী মেরাজ তাহসীন সাহেব! আমার একটি প্রশ্ন হল, আজ আমার মাগরীবের নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে "আসসালামু আলাইকা" ছুটে যায়। এজন্য আমি সাহু সিজদা করেছি। জানার বিষয় হল, ঐ অংশটুকু ছুটে যাওয়ার কারণে আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল কি না? আমার নামায হয়েছে কি না?
উত্তর
তাশাহহুদের সামান্য অংশ ছুটে গেলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ অংশটুকু ছুটে যাওয়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। তাই আপনি সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন। এবং আপনার নামায সহিহ হয়েছে ৷
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; আদ্দুররুল
মুখতার ১/৪৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৯৮
তারিখ: ২৭-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

বিতর নামায ছুটে গেলে কাযা পড়তে হবে কি?

প্রশ্ন
হুজুর আমরা জানি দৈনিক পাচ ওয়াক্ত নামায আমাদের উপর ফরজ ৷ কখনো কোন ওয়াক্তের নামায ছুটে গেলে তা কাযা আদায় করতে হয় ৷ এবং কাযা আদায়ের সময় শুধু ফরজটি আদায় করতে হয় ৷ আমার জানার বিষয় হল, বিতরের নামাযও কি কাযা করা লাগবে?
উত্তর
জ্বী, হ্যাঁ, বিতর নামাযেরও কাযা পড়তে হবে। কারণ বিতর নামায ওয়াজিব। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবীজী সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি বিতরের নামাযের কথা ভুলে যায় বা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে যেন স্মরণ হওয়ামাত্রই বা ঘুম থেকে উঠামাত্রই বিতর পড়ে নেয়।
অতএব কখনো বিতর ছুটে গেলে তারও কাযা পড়তে হবে ৷
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৮৯
তারিখ: ২০-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ট্রেনে নামায আদায়ের বিধান ৷

প্রশ্ন
অনেক ট্রেনে নামাযের কক্ষ থাকে । আবার অনেকগুলোতে থাকে না ৷ অনেক সময় ভিরের কারণে নামাযের কক্ষে পৌছাও সম্ভব হয় না ৷ ফলে সীটে নামায পড়তে হয় ৷ কিন্তু ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া কঠিন হয়। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় । নামায অবস্থায় ট্রেনে কেবলা ঠিক রাখাও মুশকিল হয়। এমতাবস্থায় কিভাবে নামায আদায় করব?
উত্তর
ট্রেনেও ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয। তাই যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে৷ প্রয়োজনে কিছু ধরেও দাঁড়াতে পারবে। তথাপিও যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বসে নামায পড়তে পারবে। তবে ট্রেনেও নামায শুরু করার সময় কেবলার দিক ঠিক করে সেদিকে ফিরে নামায পড়তে হবে। এবং পরে নামায অবস্থায় ট্রেন ঘুরে যাওয়ার কারণে কিবলা পরিবর্তন হয়ে গেলে নামাযীও কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। যদি কিবলা পরিবর্তন হওয়ার পর নামাযী কিবলার দিকে না ঘুরে তাহলে তার ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে। কিন্তু শুরুতে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তনের বিষয়টি যদি জানতে না পারে ৷ এবং ঐভাবেই নামায শেষ করে তাহলে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৮৬
তারিখ: ২০-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সুতরা কেমন হতে হবে? রুমাল বা জায়নামাযকে সুতরা হিসেবে ব্যবহার করা ৷

প্রশ্ন
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব! আমি জানতে চাই, নামাযী ব্যক্তির সামনে যে, সুতরা ব্যবহার করা হয় তা কতটুকু লম্বা ও কতটুকু মোটা হতে হয়? কিছু মানুষকে দেখা যায়, তারা হাতে থাকা জায়নামায বা রুমালকে সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে মুসল্লির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে যান ৷ এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো ৷
উত্তর
রাসূল সাঃ বলেছেন যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে হাওদার পিছনের লাঠির সমান কিছু থাকে, তাহলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে কোন সমস্যা নেই ৷
-সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৮৫; তিরমিযি হাদীস নং: ৩৩৫ ৷
উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহাগন বলেন সুতরা হতে হবে অন্তত এক হাত লম্বা ও এক আঙ্গুল পরিমান মোটা ৷ সুতরাং সুতরা যদি এক হাত লম্বা ও এক আঙ্গুল পরিমান মোটা হয়, তাহলে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে পারবে ৷ তখন অতিক্রম কারীর কোনো গুনাহ হবে না ৷ অতএব হাতের রুমাল বা জায়নামায সুতরা হিসেবে গন্য হবে না ৷ এবং এ ধরনের সুতরার মাধ্যমে সুতরা আদায় হবে না। এমতাবস্থায় অতিক্রম কারী গুনাহগার হবে ৷
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৭০
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

মশার রক্ত মিশ্রিত কাপড় পরে নামায পড়া ৷

প্রশ্ন
ইদানিং মশা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় মশা মারার পর কাপড়ে মশার রক্ত লেগে যায়। রক্ত ধৌত না করে বা কাপড় না পাল্টিয়েই প্রায় সময় নামায পড়ি ৷ জানার বিষয় হলো, আমার ঐসব নামায হয়েছে কিনা? মশার রক্ত নাপাক কিনা?
উত্তর
মশার রক্ত নাপাক নয়। তাই ঐ কাপড় পরে নামায পড়ার কারণে আপনার ঐসব নামায সহিহ হয়েছে । তবে এক্ষেত্রে কাপড় পরিবর্তন করে নেওয়া বা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম ।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩২ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৬৫
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

জোহর ও জুমার নামাযের পুর্বের চার রাকাত সুন্নত নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ পড়া ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমি প্রায় সময় জোহরের চার রকাত সুন্নত পড়তে গিয়ে অনেক সময় প্রথম বৈঠকে দরুদ শরীফ পড়ে ফেলি ৷ তাই জানার বিষয় হলো, জোহর নামাযের ফরজের পুর্বে যে চার রাকাত সুন্নত আছে উক্ত সুন্নত নামাযে কি দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দরূদ শরীফ পড়ে ফেললে নামাযে কোন সমস্যা হবে কি না ?
উত্তর
জোরহ ও জুমার ফরজের আগের চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকের সময় আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দরূদ শরীফ পড়া যাবে না ৷ বরং ফরজ নামাযের মত শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাড়িয়ে সানা না পড়ে প্রথম দুই রাকাতের মত বাকি দুই রাকাত সূরা ক্বেরাত সহ আদায় করবে ৷
যদি দরুদ শরীফ পড়ে ফেলে তাহলে ফরজ নামাযের মত শেষে সেজাদায়ে সাহু দিতে হবে ৷ অন্যথায় নামায হবে না ৷
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৫৬; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১১৩ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৬২
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

চার রাকাত বিশিষ্ট নফল নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ পড়া ৷

প্রশ্ন
এশার নামাযের ফরজের পুর্বে যে চার রাকাত সুন্নত আছে উক্ত সুন্নত নামাযে কি দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দরূদ শরীফ পড়তে হবে ? জানালে ভাল হতো।
উত্তর
এশার ফরজের আগের চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদাসহ সকল চার রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও নফল নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকের সময় আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাসূরাও পড়বে, তারপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে সানা, আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়ে প্রথম দুই রাকাতের মত শেষ দুই রাকাত পড়বে। কিন্তু যদি মাঝখানের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর কিছুই না পড়ে ৷ এবং দাড়িয়ে জোহরের ফরজের মত চার নামায শেষ করে তাহলেও নামায সহিহ হয়ে যাবে ৷ তবে অনুত্তম হবে ৷
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৫৬; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১১৩ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৫৫
তারিখ: ২১-মে-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে করনীয় ৷

প্রশ্ন
ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে কখনো সূরা নাস পড়ে
ফেললে দ্বিতীয় রাকাতে আমার করণীয় কী?
উত্তর
প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা নাস পাঠ করবে । তবে ইচ্ছাকৃত ফরযের উভয় রাকাতে একই সূরা পাঠ করা অনুত্তম। অবশ্য এ ভুলের কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় না।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৫০
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে ভুলে তাশাহহুদের স্থলে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেললে করনীয় ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমি আজ মাগরীবের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের জায়গায় ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়ে
ফেলি। পরে মনে হলে তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ পড়ে নামায শেষ করে। সাহু সেজদা দেয়নি ৷ জানতে চাই, আমার নামায কি আদায় হয়েছে? নাকি পুনরায় পড়তে
হবে?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সুরতে তাশাহহুদের স্থলে সূরা ফাতেহা পড়ার কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। যেহেতু আপনি সাহু সেজদা দেননি, তাই নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।
-ফাতহুল কাদীর ১/৩০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; আলবাহরুর রায়েক: ১/২৯৬; শরহুল মুনইয়া পৃ. ২৯৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৪০
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নাবালেগ ছেলের আযান, ইকামতের বিধান ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব! আমাদের মসজিদে মাদরাসার ছাত্ররা সবসময় আযান দেয় ৷ ১৩ বছরের একটি ছেলে আছে ৷ সেও প্রায় সময় আযান দেয় ৷ কয়েকজন লোক বলল, সে বালেগ হয় নি বিধায় তার আযান নাকি হবে না ৷ সে আযান দিলে পুনরায় আযান দিতে হবে ৷ তাই আপনার নিকট এ বিষয়ে সঠিক সমাধান চাই ৷
উত্তর
আযান ইকামত সহিহ হওয়ার জন্য আযানদাতার বালেগ হওয়া শর্ত নয় ৷ সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ১৩ বছরের ছেলেটি বুঝমান হলে বিশেষ করে পাক-নাপাক সম্বন্ধে জ্ঞান রাখলে আযান, ইকামত সহিহ হবে ৷ উক্ত আযান পুনরায় দিতে হবে না ৷
উল্লেখ্য যে, নাবালেগের আযান সহিহ হলেও বালেগ পুরুষ দ্বারা আযান , ইকামত দেয়া উত্তম ৷
-ফতাওয়ায়ে শামী ২/৬০; তাতারখানিয়া ১/৫২০;
হিন্দিয়া ১/৩৪; ফতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ৯/১৫৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮২৬
তারিখ: ৪-এপ্রিল-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক না নাপাক?

প্রশ্ন
আমি রাস্তা দিয়ে হাটার সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নিই। তাই জানার বিষয় হল, চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক নাকি নাপাক? এবং আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর
চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তাই তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনার উক্ত পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা
সহীহ হয়েছে। পুনরায় পড়তে হবে না ৷ ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮২৫
তারিখ: ৪-এপ্রিল-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

দাড়িয়ে নামায পড়া কষ্টকর হলে নামাযের ভিতরে বসে যাওয়া ৷

প্রশ্ন
আমার দাদা বার্ধক্যের দরুন শরীর দুর্বল হয়ে গেছে । সবসময় দাড়িয়ে নামায পড়তে পারে না ৷ কখনো বসে কখনো দাড়িয়ে নামায আদায় করে ৷ মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দুর্বলতা বোধ করায় অর্ধেক নামায বসে আদায় করে। জানার বিষয় হলো, এভাবে নামায পড়লে আমার দাদার নামায আদায় হয় কি না?
উত্তর
দাঁড়িয়ে নামায পড়া অধিক কষ্টকর হলে বসে নামায পড়া জায়েয। এবং নামাযের মাঝে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে গেলেও অবশিষ্ট নামায বসে আদায় করা জায়েয। অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনার দাদা দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর বাকি নামায বসে পড়ার কারণে
নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। নামায সহীহ হয় যাবে ৷
-সহীহ বুখারী ১/১৫০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; মাবসূত, সারাখসী ১/২১৮৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮১৬
তারিখ: ১২-মার্চ-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সুরা ফাতেহার পর তিন তসবীহ পরিমান চুপ থাকা৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব, আমি জোহরের নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর চুপ থেকে ভাবতে লাগলাম যে, কোন সূরা পড়ব। ভাবতে গিয়ে প্রায় তিন তাসবীহ পরিমাণ
সময়ের বেশি সময় কেটে গেল। জানার বিষয় হলো, এমতাবস্থায় আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি? সাহু সিজদা না দিলে নামায হবে কি না?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সূরতে যেহেতু আপনি সুরা ফাতেহার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ চুপ থেকেছেন, তাই আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। অতএব যদি আপনি সাহু সিজদা না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উক্ত নামায হয়নি ৷ তাই পুনরায় পড়তে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৩ খুলাসাতুল ফাতাওয়া
১/১৭৩; আলমগীরী ১/১৩১৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮১৫
তারিখ: ১২-মার্চ-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

এক-ই নামাযে একাধিক ওয়াজিব ছুটলে করনীয় ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমি গতকাল বিতর নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের পরে ভুলে বৈঠক করিনি। আবার তৃতীয় রাকাতে দোয়ায়ে কুনূতও পড়তে ভুলে যায় এবং শেষে সাহু সিজদা করেছি ৷ জানার বিষয় হলো, আমার বিতর নামায সহীহ হয়েছে কি না? নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনার বিতর নামায সহীহ হয়েছে। পুনরায় পড়তে হবে না। কারণ ভুলে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলেও সবগুলোর জন্য একটি সাহু সিজদাই যথেষ্ট হয় । এক নামাযে একাধিক সাহু সিজদা দেওয়ার বিধান নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০;আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮১২
তারিখ: ১২-মার্চ-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরজ নামাযের একই রাকাতে একাধিক সূরা পড়া ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমি গতকাল ফজর নামাযে এক রাকাতে সূরা হুমাযাহ ও সূরা ফীল পড়েছি এবং মাঝে বিসমিল্লাহও পড়েছি। জানার বিষয় হলো, এভাবে ফরজ নামাযের একই রাকাতে একাধিক সূরা পড়লে কোনো সমস্যা আছে কি না? এবং আমার নামায হয়েছে কি না?
উত্তর
ফরজ নামাযের একই রাকাতে ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিক সূরা পড়া অনুত্তম ৷ তবে এভাবে একই রাকাতে পর পর দুই বা ততোধিক সূরা পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হয় না ৷ অতএব আপনার নামায হয়ে গেছে ৷
-রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬ ; আননাহরুল ফায়েক ১/২৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮১১
তারিখ: ২১-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

খুতবা ছাড়া জুমার নামায পড়া ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব আজ আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার নামাযের সময় খুতবার বই খুজে কোথাও না পেয়ে খুতবা পড়া ছাড়াই জুমার নামায পড়িয়েছেন। তাই জানার বিষয় হলো,আমাদের আজকের জুমার নামায আদায় হয়েছে কি না ? না হইলে করনীয় কি?
উত্তর
খুতবা জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। তাই খুতবা ছাড়া জুমার নামায আদায় হয় না। অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনাদের জুমার নামায আদায় হয়নি। তাই আপনাদের করনীয় হলো, উক্ত দিনের যোহরের নামায কাযা করে নিতে হবে।
- ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৯ মাজমাউল আনহুর ১/২৫৫৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮০৯
তারিখ: ২১-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অস্থায়ী বাসস্থানে পনের দিনের কম থাকার নিয়তে আসলে, নামায পুর্ন পড়বে নাকি কসর পড়বে?

প্রশ্ন
আমার বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া। আব্বা আম্মা সহ সকলেই সেখানে থাকে। আমি ঢাকায় আবাসিক থেকে মাদরাসায় পড়ি। যেহেতু ঢাকায় পনেরো দিনের বেশি থাকা হয় তাই ‘ওয়াতনে ইকামত’ হিসাবে পূর্ণ নামায পড়ি। কিছু দিন আগে বাড়ি যাওয়া হয় । বাড়ি থেকে আম্মাকে ঢাকায় এক হাসপাতালে নিয়ে যাই ৷ হাসপাতল থেকে পুনরায় বাড়ি ফিরে যাই৷ মাদরাসায় যাওয়া হয় নি৷ জানার বিষয় হল, বাড়িতে যাওয়ার
কারণে ঢাকার ওয়াতনে ইকামত বাতিল হয়ে যায় কি না? আর এমতাবস্থায় পনেরো দিনের কম থাকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসা হলে নামায কসর করব নাকি পুরো পড়বো?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত ক্ষেত্রে আপনি বাড়িতে যাওয়ার কারণে ঢাকার ‘ওয়াতনে ইকামত’ বাতিল হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা পরিপূর্ণ ত্যাগ করার নিয়তে বেডিংপত্র নিয়ে যাওয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা ওয়াতনে ইকামত হিসেবে বহাল থাকবে। আর ঢাকা যেহেতু ওয়াতনে ইকামত হিসাবে বহাল থাকছে তাই এখানে পনেরো দিনের কম থাকার উদ্দেশ্যে আসা হলেও পুরো নামায পড়তে হবে। কসর করা যাবে না। অতএব আপনি কয়েকদিনের জন্য হাসপাতাসে আসার কারনে পুর্ন নামায পড়বেন ৷
-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬; মাজমাউল আনহুর ১/২৪৩৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮০৭
তারিখ: ২১-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ওয়াক্ত আসার পুর্বের আযান দিয়ে নামায পড়া ৷

প্রশ্ন
আমি একদিন মাগরীবের নামাযের সময় হয়েছে ভেবে আযান দিয়ে দেই। তখন বুঝতে পারি নি। আযানের পর বুঝতে পারলাম যে, ওয়াক্তের আগে আযান হয়েছে৷ কিন্তু দ্বিতীয়বার আর আযান দেয়া হয়নি ৷ এরপর আমরা মাগরীবের ওয়াক্তের মধ্যে ঐ আযান দ্বারা নামায আদায় করি। আমাদের নামায সহীহ হয়েছে কি না?
উত্তর
ওয়াক্তের পূর্বে আযান দিলে আযান সহীহ হয় না। অতএব প্রশ্নের বর্নিত সুরতে আপনার আযান হয়নি। মাগরীবের ওয়াক্ত হওয়ার পর আবার আযান দেওয়া
উচিত ছিল। আযান না দেওয়ার কারণে মাকরূহ হয়েছে। তবে ওয়াক্ত আসার পর আযান ছাড়া নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যায়৷ অতএব আপনাদের ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।
- মাবসূত সারাখসী ১/১৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৮৫৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮০৩
তারিখ: ১৪-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

ওযরের কারনে শুধু নাকের উপর সেজদা করা ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব আমি কিছুদিন আগে মটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে কপালে খুব আঘাত পেয়েছি, কপালের উপর সিজদা করতে পারি না। তাই নাকের উপর সিজদা করি ৷ জানতে চাই, ঐ আমি কি নাকের উপর সিজদা করার কারণে আমার নামায হবে কি না?
উত্তর
সিজদায় কপাল এবং নাক রাখা জরুরি। কোন কারণে সিজদায় কপাল জমিনে রাখা সম্ভব না হলে শুধু নাক দ্বারা সিজদা করা জায়েয। অতএব আপনি যেহেতু সেজদায় কপাল রাখতে সক্ষম নয় তাই আপনার জন্য শুধু নাকের উপর সিজদা করা জায়েয হবে এবং নাকের উপর সেজদা করলে নামায সহীহ হবে ।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫; আলমাবসূত সারাখসী ১/২১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৩৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮০০
তারিখ: ৮-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীর পিছনে নামাযের ইক্তিদা করা৷ 

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদের আগের ইমাম সাহেব চলে যাওয়ার পর এমন একজন ইমাম আনছে যার কুরআন
তেলয়াত খুব অশুদ্ধ ৷ তাই জানতে চাই, এই ইমামের পিছনে নামায হবে কি? যদি না হয় তাহলে আমি কি জামাত বাদ দিয়ে একা বাড়িতে নামায পড়ব ? আমাদের বাড়ির পাশে কোন মসজিদ নাই ৷ অনেক দূরে আছে ৷
উত্তর
কুরআনে কারীম শুদ্ধ করে পড়তে পারে এমন ব্যক্তি অশুদ্ধ তিলাওয়াত কারী ইমামের পিছনে নামায পড়লে তার নামায হয় না। অতএব যদি আপনাদের মসজিদের ইমামের তিলাওয়াত অশুদ্ধ ও আপনার তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় তাহলে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়লে আপনার নামায হবে না ৷ নামায আবার দোহরিয়ে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, আপনাদের উচিত উক্ত ইমামকে পরিবর্তন করে শুদ্ধ তিলাওয়াতকারী কোন ইমামকে রাখা, অথবা উক্ত ইমামকে তিলাওয়াত শুদ্ধ করে আসার তাগিদ দেয়া। যদি তা সম্ভব না হয়, আপনি আশপাশের অন্য কোন মসজিদে জামাতে নামায আদায় করবেন ৷ তাও সম্ভব না হলে জামাতের সওয়াব পেতে উক্ত ইমামের ইক্তিদা করার পর, আবার নামাযটি দোহরিয়ে নিবেন।
-আল হিদায়া-১/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৫২;
আলবাহরুর রায়েক-১/৬৩০-৬৩১ ফাতাওয়া শামী- ২/৩২৪ ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/১৪৩-১৪৪ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৯৫
তারিখ: ৮-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

শরীয়তে উমরী কাযা আদায় করার বিধান ৷

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কিছু লোক বলে উমরি কাযা বলতে কিছু নেই৷ এগুলো ভিত্তিহীন ৷ তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা অতীত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেন। অতীতের নামাযের গুনাহও মাফ করে দেন৷ উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ বেশি বেশি করে পড়া উচিত। কারণ সহীহ হাদীসে আছে, ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূরণ করা হবে।- আবু দাউদ’৷
মুফতী সাহেবের নিকট এ বিষয়ে শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান জানতে চাই।
উত্তর
ইসলামে ঈমানের পরই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ ও নিদর্শন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরয। কখনো কোনো ওয়াক্তের ফরয নামায ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামায না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস,
আছার ও ইজমায় দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-
ﻣﻦ ﻧﺴﻲ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﻧﺎﻡ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻬﺎ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮﻫﺎ
যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।
সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬
উক্ত হাদীসে ﻧﺴﻲ শব্দটি লক্ষ্যণীয়। আরবী ভাষায় এটি যেমনিভাবে ‘ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় তদ্রূপ কোনো কাজ অবহেলা করে ছেড়ে দেওয়ার অর্থেও
ব্যবহৃত হয়।
অতএব কাযা আদায়ের বিধানটি শুধু ঘুম ও বিস্মৃতি এই দুই অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং অবহেলাবশত ছেড়ে দিলেও কাযা জরুরি।
অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর কাফফারা হল যখন তার নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া।
সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬১৪
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬৷
এসব হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো নামায সময়মতো আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা
অপরিহার্য। নামাযটি ভুলক্রমে কাযা হোক, নিদ্রার কারণে হোক অথবা গাফলতি বা অবহেলার কারণে হোক- সর্বাবস্থায় কাযা আদায় করতে হবে।
এ বিষয়ে ইজমায়ে উম্মত একটি গুরুত্বপুর্ন দলিল। চার মাযহাবে চার ইমামসহ প্রায় সকল মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয় ক্ষেত্রের একই বিধান।
-আল ইসতিযকার ১/৩০২
কুয়েতের ইসলামী বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফাতাওয়াও এটিই।
মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া আশশারইয়্যাহ ১/২০৪
সুতরাং উমরী কাযা ভিত্তিহীন, কাযা আদায় না করে শুধু তাওবাই যথেষ্ট এসব কথা মোটেও সহীহ নয়, সম্পুর্ন ভিত্তিহীন মনগড়া । একথাও সহীহ নয় যে, উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ আদায় করা উচিত। বরং নফল নামাযের চেয়ে উমরী কাযা পড়া উত্তম ৷
তাদের স্বপক্ষে যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাও ঠিক নয়। কারণ সুনানে আবু দাউদের হাদীসটির মূল হল-
ﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﻳﺤﺎﺳﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻣﻦ ﺃﻋﻤﺎﻟﻬﻢ
ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻗﺎﻝ ﻳﻘﻮﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻟﻤﻼﺋﻜﺘﻪ ﻭﻫﻮ ﺃﻋﻠﻢ ﺍﻧﻈﺮﻭﻫﺎ
ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﻋﺒﺪﻱ ﺃﺗﻤﻬﺎ ﺃﻡ ﻧﻘﺼﻬﺎ؟ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺎﻣﺔ ﻛﺘﺒﺖ ﻟﻪ
ﺗﺎﻣﺔ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻧﺘﻘﺺ ﻣﻨﻬﺎ ﺷﻴﺌﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻈﺮﻭﺍ ﻫﻞ ﻟﻌﺒﺪﻱ ﻣﻦ
ﺗﻄﻮﻉ؟ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺗﻄﻮﻉ ﻗﺎﻝ ﺃﺗﻤﻮﺍ ﻟﻌﺒﺪﻱ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻣﻦ
ﺗﻄﻮﻋﻪ
কেয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে, নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে? যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ
তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ
করে দাও। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪ ৷
উক্ত হাদীসে ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’- যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে-এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়।
ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৯৪
তারিখ: ২-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অজ্ঞাতসারে অতিক্রম করা ও এক্ষেত্রে নামাযীর করনীয় ৷

প্রশ্ন
গতকাল আমি অজ্ঞাতসারে এক নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে ফেলি ৷ নামাযী ব্যক্তিও কোন শব্দ করে নি ৷ শুনেছিলাম নামাযের সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে জোরে তাসবীহ পড়ে বা হাত দিয়ে ইশারা করে যেন নামাযী সতর্ক করে ৷ তাই জানার বিষয় হলো, যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে কোনো সুতরা না থাকে এবং এ অবস্থায় কেউ অজ্ঞাতসারে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে গুনাহ হবে কিনা? নামাযী ব্যক্তির এক্ষেত্রে করণীয় কী? সে কি তাকে বাঁধা দিবে, নাকি দিবে না? জানিয়ে উপকৃত করবেন ৷
উত্তর
নামাযি ব্যক্তির সামনে দিয়ে জেনে বুঝে অতিক্রম করা গুনাহের কাজ ৷ অজ্ঞাতসারে অতিক্রম করে ফেললে গুনাহ হবে না ৷ তবে নামাযী ব্যক্তি তার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে হাতের ইশারা কিংবা তাসবীহ জোরে পড়ে সতর্ক করা জায়েয আছে। কোন সাওয়াবের কাজ নয় ৷ তাই নামাযীর জন্য এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াই উত্তম । নামাযীর সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে সামনে সুতরা রাখবে ৷ সুতরা রাখা সুন্নত।
সুনানে আবু দাউদ ১/১০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৮৩
তারিখ: ২৮--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

বিদয়াতী ইমামের পিছনে নামায পড়ার বিধান ৷

প্রশ্ন
হুজুর, আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিদায়াতী৷ যিনি নবীজিকে হাজির নাজির আলিমু গায়েব ইত্যাদি আকিদা পোষন কারী ৷ উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়ার হুকুম কি? জানিয়ে বাধিত করবেন ৷
উত্তর
বিদয়াতী দুই প্রকার। যথা:
২৷ এমন বিদয়তী যার আক্বিদা বিশ্বাস কুফর পর্যন্ত পৌঁছায়। যেমন-নবীজী সাঃ কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা, আলিমুল গায়েব বিশ্বাস করা, ভাল-মন্দ ফায়সালা করার মালিক বিশ্বাস করা।
এমন বিদয়াতির পিছনে নামায পড়া জায়েজ নয়। ইক্তিদা করলেও নামায হবেনা। উক্ত নামায পুনরায় পড়া জরুরী ৷
২৷ এমন বেদয়াতি যার কাজকর্ম কবিরাহ গোনাহ পর্যন্ত
পৌঁছায়। যেমন এক মুষ্টির আগে দাড়ি কাটা, উরস করা, প্রচলিত মিলাদ কিয়াম করা, বেপর্দায় মেয়েদের পড়ানো, কবরে আজান দেয়া ইত্যাদি। তাহলে উক্ত ব্যক্তির পিছনে ইক্তিদা করা মাকরুহে তাহরিমী। পড়লে নামায হবে। কিন্তু নামায মাকরুহে তাহরিমী হবে। নামাযটি পুর্ন সহীহরুপে আদায়ার্থে পুনরায় পড়ে নেয়া চায়৷ এধরনের ব্যক্তির পিছনে নামায না পড়াই উত্তম হবে।
অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনাদের ইমামের পিছনে নামায সহিহ হবে না ৷ উক্ত ইমামকে তৌবা করে সঠিক পথে ফিরে না আসলে পরিবর্তন করা জরুরী ৷
-বাদায়েউস সানায়ে’-১/৩৮৭;ফাতওয়ায়ে শামী-২/২৯৯; ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮৪; আল বাহরুর রায়েক-১/৬১০৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৮২
তারিখ: ২৮--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সেজদা অবস্থায় বাংলাতে দোয়া করা ৷

প্রশ্ন
হুজুর একটি হাদীস পড়েছিলাম সিজদা অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা অতি দ্রুত কবুল করেন৷ আমার জানার বিষয় হলো, সকল নামাযের সেজদায় কি দোয়া করা যাবে? এক আলেমের মুখে শুনেছি, নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় বাংলাতেও দোয়া করা জায়েয আছে। তার এ কথা কতটুকু সঠিক?
উত্তর
ফরজ নামাযে সিজদায় দোয়া না করা উত্তম ৷ নফল নামাযে সিজদা অবস্থায় কুরআন-হাদীসে বর্ণিত
দোয়াসমূহ পড়া যাবে। তবে নফল হোক কিংবা অন্য কোনো নামাযে অনারবী ভাষায় দুআ করা নিষিদ্ধ।
সুনানে আবু দাউদ ১/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২১; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর পৃ. ১/২২৯; মাহমুদিয়া ১২/৮৬৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৭৩
তারিখ: ২৩--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা নিজ ঘরে একা নামায পড়াকালীন সতর ঢাকার বিধান ৷

প্রশ্ন
মহিলারা নিজ ঘরে একা নামায পড়লে যেখানে কোন পুরুষ প্রবেশের সম্ভাবনা নেই, মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুর্ন শরীর ঢেকে নামায পড়তে হবে? নাকি কিছু অঙ্গ খোলা রাখা যাবে ?
উত্তর
মহিলারা তাদের চেহারা, দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ও দুই পা গিরা পর্যন্ত ব্যতীত বাকি সম্পূর্ণ শরীর নামাযের পুর্ন সময় ঢেকে রাখা জরুরি। এটা তাদের নামাযের সতর ৷ তাই যদিও একা এমন ঘরে নামায পড়ে যেখানে কোন পুরুষ প্রবেশের সম্ভাবনা নেই তবু উক্ত সতর ফরজ ৷ উভয় পা খোলা রাখা জায়েয হলেও তা ঢেকে রাখাই উত্তম।
ইলাউস সুনান ২/১৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৬; মাজমাউল আনহুর ১/১২২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৬৫
তারিখ: ১২--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আযানের সময় বাথরুমের জরুরত হলে করনীয়৷

প্রশ্ন
অনেক সময় এমন হয় যে আযান শুরু হয়েছে ঠিক ঐ সময় বাথরুমের জরুরত হয়৷ এবং পর পর সব মসজিদেই আযান শুরু হতে থাকে৷ এ অবস্থায় নামাযের প্রস্তুতি নিব এবং জরুরত সারব নাকি আযানের জবাব দিব ? সব মসজিদের আযানের জবাব দিয়ে এসব করতে গেলে জামাত না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উত্তর
আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। যে কোনো মসজিদের আযানের জবাব দিলেই মুস্তাহাব আদায় হয়ে যায়। প্রত্যেক মসজিদের আযানের জবাব দিতে হবে না৷ তবে একই জায়গায় একাধিক মসজিদের আযান শুনা গেলে, প্রথম আযানের উত্তর দিবেন। পরবর্তী আযানগুলোর উত্তর দেওয়া লাগবে না। এমনকি সেটা নিজ মহল্লার মসজিদের আযান হলেও তার উত্তর দেওয়া লাগবে না। আর যদি সব কটি আযান এক সঙ্গে শুরু হয় তাহলে নিজ মহল্লার মসজিদের আযানের উত্তর দিবেন। ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে আযানের জবাবের অপেক্ষা না করেও প্রয়োজন পুরা করতে পারবেন। আযানের জবাবের জন্য ইস্তিঞ্জায় যেতে বিলম্ব করার দরকার নেই।
- আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৯; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১১০৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৬০
তারিখ: ১২--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে তাশাহুদের পরিবর্তে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলা৷

প্রশ্ন
হুজুর, আমি গতকাল যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের জায়গায় ভুলবশত সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি৷ পরে স্বরন হওয়ার পর পুনরায় তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ পড়ে সাহু সিজদা ছাড়া নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, আমার নামায কি আদায় হয়েছে? নাকি পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। যেহেতু তা করেন নি তাই নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।
শরহুল মুনইয়া পৃ. ২৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৫৫
তারিখ: ৬--২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমামতির নিয়ত ব্যতিত মুক্তাদির নামাযের হুকুম৷

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি একাকী জোহরের ফরজ নামায পড়া শুরু করল, আরেক ব্যক্তি এসে তার পিছনে ইকতিদা করে তার সাথে নামায শেষ করে। প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তি ইমামতির নিয়ত না করলে মুকতাদির নামায সহীহ হবে কি?
উত্তর
জ্বী, ইমামতির নিয়ত না করলেও মুক্তাদি ইমামের এক্তেদার নিয়ত করলেই মুকতাদীর নামায সহীহ হয়৷ অতএব প্রশ্নে বর্নিত উক্ত মুক্তাকির নামায সহীহ হয়েছে৷ কারণ ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ইমামতির নিয়ত জরুরি নয়।
-শরহুল মুনইয়া পৃ. ২৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; হাশিয়া তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১২১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২৪৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৩৭
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদে ইজতেমায়ীভাবে উচ্চস্বরে যিকির করা৷

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হল, মসজিদে বসে ইজতিমায়ীভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম আছে কি না। তিনি বললেন, আছে। কিন্তু তার কথায় কিছুটা জটিলতা অনুভব হল। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মসজিদে বসে সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
একাকী যিকির করা বা কয়েকজন একত্রিত হয়ে উঁচু আওয়াজে যিকির করা উভয়টিই শরীয়তে অনুমোদিত। তা মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার প্রতি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে থাকি। সে যদি একাকী আমার যিকির করে তাহলে আমি গোপনে তাকে স্মরণ করি। সে কোনো মজলিসে আমার যিকির করলে আমি তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৪০৫৷ ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, জামাতে যিকির করলে আওয়াজ তো হবেই।-আলহাবী লিলফাতাওয়া ২/১২৯৷ তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা : ১. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত
হওয়া।
২. কোনো ব্যক্তির নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো। ৩. কোনো ব্যক্তির বিশ্রামে সমস্যা না
হওয়া।
৪. আওয়াজ স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত উঁচু আওয়াজে না হওয়া এবং মাইক ব্যবহার না করা। ৫. সাধারণভাবে এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। যিকিরের শব্দ উচ্চারণে লাহনে জলী থেকে বেঁচে থাকা। যদি উল্লেখিত শর্তাবলি পাওয়া যায় তবে ইজতিমায়ী যিকির করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যদি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তসমূহ বা তা থেকে কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে কাজটি শরীয়তসম্মত হবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক যিকিরের মজলিসে উল্লেখিত শর্তগুলোর অনেক কিছুই লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়, যা সংশোধনযোগ্য। -রদ্দুল মুহতার ১/৬৬০; সিবাহাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, আবদুল হাই লাখনৌভী পৃ. ৩৮; নতীজাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, (আলহাবী লিল ফাতাওয়া ২/১২৮) ইমাম সুয়ূতী; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১৫১৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭১৪
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আজানের আগে আস্সালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়ারাসূল্লাহ বলা৷

প্রশ্ন
আজানের আগে দরূদ যেমন আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ বা গজল ইত্যাদি বলা জায়েজ আছে কি?
উত্তর
আযানের অংশ মনে করে আযানের আগে দরূদ পড়া বা অন্য কোন জিকির করা বিদআত। যদিও দরূদ ও জিকির মৌলিকভাবে সওয়াব ও প্রশংসনীয় কাজ৷ আক্বিদা ঠিক রেখে এমনিতে কখনো কখনো করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু একে অভ্যাসে পরিণত করা বৈধ নয়। কারণ আযানের আগে দরূদ পড়া বা জিকির আজকার করা বা কোন ঘোষণা দেয়ার প্রমাণ সম্বলিত কোন হাদিস বা সাহাবায়ে কিরাম এবং সালাফে সালেহীন এর কোন আমল প্রমাণিত নয়। তাই একে অভ্যাসে পরিণত করে করাটা সুষ্পষ্ট বিদআত হবে৷ সুতরাং তা পরিত্যাজ্য। মানুষকে সজাগ সচেতন করার ইচ্ছে হলে আজানই যথেষ্ট। কারণ আযানই হল ই’লান বা ঘোষণা যে, নামাযের সময় হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে নতুন করে কিছু বাড়ানোরতো কোন দরকার নেই।
সহীহ বুখারি হাদীস নং ২৫৫০; আল ফাতওয়াল কুবরা আল ফিক্বহিয়্যাহ-১/১৩১; ফাতওয়ায়ে উসমানী-১/১১১৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭০৩
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাজের প্রথম দুই রাকাতে একই সূরা পড়া৷

প্রশ্ন
জোহর বা আসরের ফরজ নামাজে যদি সূরা ফাতেহার সাথে দুই রাকাতে একই সূরা পড়া হয়,তাহলে কি সাহু সাজদা দিতে হবে? যদি সাহু সাজদা দিতে হয়
তাহলে নিয়ম কী?
উত্তর
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাযের উভয় রাকাতে একই সূরা পড়া অনুত্তম৷ কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত এমনটি করতেন না। তবে একবারের ঘটনা হাদীস শরীফে এভাবে এসেছে, মুআয ইবনু আবব্দুল্লাহ আল- জুহানী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের এক ব্যক্তি তাকে জানান যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফজরের নামাযের উভয় রাকাতে সূরা “ইজা যুলযিলাতিল আরধ” পড়তে শুনেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানি না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুলবশত এরূপ করেছিলেন না ইচ্ছাকৃতভাবে৷
আবুদাঊদ হা/৮১৬
যার কারণে ফকীহগণ বলেন, ইচ্ছাকৃত ফরযের উভয় রাকাতে একই সূরা পাঠ করা অনুত্তম হলেও এ ভুলের কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় না।
ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৭২
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আল্লাহ তাআলাকে খোদা বলা৷

প্রশ্ন
মুফতি সাহেব
আসসালামু আলাইকুম .
আমাদের দেশে কিছু লোক বলছেন
খোদা হাফেজ ব্যবহার না করে
আল্লাহ হাফেজ বলতে হবে৷ খোদা হাফেজ
বললে নাকি না জায়েজ হবে ৷
আপনার কাছ থেকে এর স্পষ্ট সমাধান
আশা করছি৷
উত্তর
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ৷ খোদা হাফেজ না বলে আল্লাহ হাফেজ বলাটা উত্তম। কিন্তু না জায়েজ বা বেদআত নয়। যারা খোদা বলাকে বেদআত
বা না জায়েজ বলেন, তাদের বক্তব্যটি বিশুদ্ধ নয়।
কারণ আল্লাহ তাআলাকে অন্য ভাষায় এমন শব্দে ডাকা জায়েজ, যে শব্দে আর কাউকে ডাকা হয় না। সেই সাথে এটা অন্য কোন ধর্মের ধর্মীয় কোন নাম নয়। আল ইয়াওয়াক্বীত ওয়াল জাওয়াহীর-৭৮, ফাতওয়া আলমগীরী-৬/৪৪৬৷ এ মূলনীতির আলোকে খোদা শব্দটি আল্লাহ তাআলার নাম হিসেবে বাংলা, উর্দু, হিন্দিতে অনুবাদ হিসেবে বলাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ খোদা শব্দটি
ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের কোন ধর্মীয়
শব্দ নয়। সেই সাথে এর দ্বারা আমরা কেবল
আল্লাহকেই বুঝে থাকি। অন্য কোন সত্বাকে বুঝি না। পক্ষান্তরে বিষ্ণু অর্থ রব, এবং ব্রাহ্মণ অর্থ সৃষ্টিকর্তা হলেও এটা ইসলামি কোন শব্দ নয়। সেই
সাথে এ শব্দ দু’টি হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিক। তাই
এ শব্দে আল্লাহকে ডাকা জায়েজ নয়। পক্ষান্তরে খোদা শব্দটি। এটা নিরেট ইসলামি শব্দ। এর দ্বারা অন্য কোন ধর্মকে বুঝায় না। বুঝায় না আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্বাকেও। তাই খোদা বলে আল্লাহকে বুঝাতে কোন সমস্যা নেই। প্রথম দলিল ও তার খন্ডন যারা খোদা বলা না জায়েজ বলে থাকেন তাদের দলিল
হল-আল্লাহ আরবী শব্দ, তাই একে বাংলা উর্দুতে অনুবাদ করে খোদা বলা জায়েজ হবে না। এর জবাব হল-যদি আরবী আল্লাহ শব্দকে অনুবাদ করে খোদা বলা না জায়েজ হয়, তাহলে আরবী সালাত
শব্দকে বাংলা উর্দু-ফার্সিতে নামায বলা কিভাবে জায়েজ? আরবী সওম শব্দকে বাংলা উর্দতে
রোযা বলা জায়েজ কিভাবে? যদি এসব জায়েজ হয়, তাহলে আল্লাহ শব্দের অনুবাদ খোদা বলাও জায়েজ। দ্বিতীয় দলিল ও তার খন্ডন তাদের আরেকটি দলিল হল-আল্লাহ শব্দের কোন বহুবচন নেই। নেই আল্লাহ সত্বারও কোন বহুবচন। অথচ খোদা শব্দটির
বহুবচন হল খোদাওন্দ। তাই খোদা বলার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বহুবচন সাব্যস্ত করা
হচ্ছে, তাই আল্লাহ শব্দের অনুবাদ খোদা শব্দ
দিয়ে করা জায়েজ নয়। এ যুক্তিটিও একটি অগ্রহণীয় যুক্তি। কারণ যদি তাই হয়, তাহলে রব শব্দ
দিয়ে আল্লাহকে ডাকা জায়েজ হবে না। কারণ “রব” শব্দের বহুবচন “আরবাব” আছে।
আল্লাহ তাআলাকে রহীম শব্দেও ডাকা জায়েজ হবে না, কারণ রহীম শব্দের বহুবচন “রুহামা” আছে, তেমনি
আল্লাহ তাআলাকে ইলাহ ডাকাও জায়েজ হবে না, কারণ “ইলাহ” এর বহুবচন “আলিহাহ” আছে। এসব কথা বলা যেমন বোকামীসূলভ বক্তব্য হবে তেমনি খোদা শব্দের বহুবচন খোদাওয়ান্দ হওয়ায়, তা আল্লাহ শব্দের অনুবাদ হিসেবে হারাম হওয়ার ফাতওয়া দেয়াও বোকামী বৈ কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্য সত্য
হিসেবে বুঝার, ও মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে বুঝার
তৌফিক দান করুন। আমীন। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৬৫
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা৷

প্রশ্ন
মসজিদে কি দুনিয়াবী কথা বলা হারাম?
উত্তর
মসজিদ হল, নামায, জিকির, তিলাওয়াত তথা ইবাদতের স্থান। দুনিয়াবী আলাপ আলোচনার স্থান নয়। তাই দুনিয়াবী কথাবার্তার জন্য মসজিদে গমণ বৈধ নয়। কিন্তু যদি মসজিদে ইবাদতের জন্য প্রবেশ করে, তারপর প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথা বলে, তাহলে সেটি যদি কারো ইবাদতের বিঘ্ন না ঘটায় এবং অশ্লীল না হয়, তাহলে জায়েজ আছে।
‎ﻭَﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺡ؛ُ ﻭَﻗَﻴَّﺪَﻩُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻈَّﻬِﻴﺮِﻳَّﺔِ ﺑِﺄَﻥْ ﻳَﺠْﻠِﺲَ
‎ﻟِﺄَﺟْﻠِﻪِ
‎ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ ﺍﻟﺸﺎﻣﻰ ﺭﺡ : ‏(ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﺑِﺄَﻥْ ﻳَﺠْﻠِﺲَ
‎ﻟِﺄَﺟْﻠِﻪِ ‏) ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺣِﻴﻨَﺌِﺬٍ ﻟَﺎ ﻳُﺒَﺎﺡُ ﺑِﺎﻟِﺎﺗِّﻔَﺎﻕِ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻣَﺎ
‎ﺑُﻨِﻲَ ﻟِﺄُﻣُﻮﺭِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ . ﻭَﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﺠَﻠَّﺎﺑِﻲ : ﺍﻟْﻜَﻠَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺡُ
‎ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻳَﺠُﻮﺯُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﺄَﻭْﻟَﻰ
‎ﺃَﻥْ ﻳَﺸْﺘَﻐِﻞَ ﺑِﺬَﻛَﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ، ‏( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ
‎ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻣﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﻓﻴﻬﺎ، ﻓﺮﻭﻉ
‎ﺍﻓﻀﻞ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ، ﻣﻄﻠﺐ : ﻓﻰ ﺍﻟﻐﺮﺱ ﻓﻰ ‎ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ - 2/436 হযরত আনাস রা.থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
‎ﺇِﻥَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪَ ﻟَﺎ ﺗَﺼْﻠُﺢُ ﻟِﺸَﻲْﺀٍ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﻮْﻝِ، ﻭَﻟَﺎ
‎ﺍﻟْﻘَﺬَﺭِ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻫِﻲَ ﻟِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻭَﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ
‎ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ অর্থাৎ মসজিদ প্রসাব,নাপাকী ও আবর্জনার উপযুক্ত নয়। বরং মসজিদ হল আল্লাহ তাআলার যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য। মুসলিম শরীফ হাদীস নং-২৮৫৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৫৪
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সূরার ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা৷

প্রশ্ন
আমি একদিন মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাছ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফীল পড়েছি। আমার নামায সহীহ হয়েছে কি? না হলে কী করতে হবে?
উত্তর
আপনার নামায সহীহ হয়েছে। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃতভাবে সূরার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ করা অনুত্তম। অবশ্য ভুলবশত হলে ক্ষতি নেই। -শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৯৪; ফাতহুল কাদীর
১/২৯৯;ইলাউস সুনান ৪/১৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪৯
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে রফউল ইয়াদাইন৷

প্রশ্ন
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায় কিছু মানুষ রুকতে যাওয়ার সময় উঠার সময় সেজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠায়৷ একজন কে জিঙ্গেস করলে তিনি বলে সহীহ হাদিসে আছে৷ হাত না উঠালে নাকি নামায হবে না৷ জানার বিষয় হলো, তার কথা কি সঠিক? নামাযে এভাবে হাত উঠাতে হবে? না উঠালে কি নামায হবে না? স্ববিস্তারে সহীহ হাদীসের আলোকে জানাবেন৷
উত্তর
রুকু সেজদার সময় হাত উঠানোর হাদীস আছে৷ কিন্তু তা ছিল ইসলামের শুরু যুগে৷ পরবর্তিতে তা রহিত হয়ে গেছে৷ তাই তাকবীরে তাহরিমা ব্যতিত অন্যত্রে হাত উঠাতে হবে না৷ অতএব হাত না উঠালে নামায হবে না, এমন কথা বলা কিছুতেই সঠিক নয়৷ অসংখ্য সাহাবা তাবেয়ী থেকে বর্নিত আছে রাসুল সাঃ শেষ জামানায় রফয়ে ইয়াদাইন করতে না৷ সাহাবা তাবেয়ীদের আমলও এমনি ছিল৷ যেমন:
হাত না ওঠানোর রেওয়াআত সমুহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়াআত হচ্ছে আলকামা রহঃ এর সুত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা এর হাদিসটি। হাদিসটি নিন্মরুপঃ
‎ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻻَ ﺃُﺻَﻠِّﻰ ﺑِﻜُﻢْ ﺻَﻼَﺓَ
‎ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ
‎ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺮَّﺓ ً ‏( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
‎ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 748- )
১। “হযরত আলকামা রহঃ বলেন, হযরত ইবনে মাসুদ রা বলেছেন আমি তোমাদেরকে রাসুল সা এর নামাজ পরে দেখাব কি? একথা বলে তিনি নামাজ পরলেন এবং তাকবিরে তাহরিমা বেতিত কোথাও রফুল ইয়াদাইন করেননি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা),
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১} ইমাম তিরমিযি রহঃ বলেছেন হাদিসটি হাসান। হাফিয ইবনে হাযার রহঃ একে সহিহ বলেছেন।
দারে কুতনি,ইবনে কাত্তান রহঃ হাদিস্তিকে সহিহ
বলেছেন। (দারে কুতনি) আর গায়রে মুকাল্লেদ্দের ইমাম ইবনে হাযম রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।(আলমুহাল্লা খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৮৮)
২।
‎ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ
‎ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻣِﻦْ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُ
‎‏( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ
‎ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 750- ) হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ
আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ] এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয় যে, হাদিসটিকে দাউদ রহঃ সহিহ নয় বলেছেন।
এর জবাব হল দাউদ রহঃ এই হাদিসটিকে তিনটি সুত্রে
বর্ণনা করেছেন। প্রথম দুটি সুত্রে হাদিসটি
নির্ভর করে ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদের উপর।
আরেকটি সুত্রে এটি নির্ভরশীল আব্দুর রহমান
ইবনে আবু লায়লার উপর। ইমাম আবু দাউদ প্রথম
দুই সুত্রের হাদিস সম্বন্ধে নিরব ছিলেন শুধুমাত্র
যেটি আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়ালা থেকে বর্ণিত সেটিকে সহিহ নয় বলেছেন কেননা
তিনি দুর্বল।সুতরাং প্রথম দুই সুত্র অনুযায়ী হাদিসটি
সহিহ।(দরসে তিরমিযি ২/৪২)
আবার মুল পাণ্ডুলিপিতে আবু দাউদ এর এই উক্তি
নেই। শুধুমাত্র মুজতবায়ি নোসখায় এই
মন্তব্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে
সন্দেহ থেকেই যায় যে এটি দাউদ রহঃ এর উক্তি কিনা।(ইযাহুল মুসলিম ২/১২৪)
৩। ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺗﺮﻓﻊ
‎ﺍﻻﻳﺪﻯ ﻓﻰ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﻃﻦ، ﺍﻓﺘﺘﺎﺡ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺍﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭ
‎ﺍﻟﺼﻔﺎ ﻭﺍﻟﻤﺮﻭﺓ ﻭﺍﻟﻤﻮﻗﻔﻴﻦ ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﺤﺠﺮ، ‏(ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ
‎ﺷﻴﺒﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2465- )
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ
বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে, ১- নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে। ৪-মারওয়া
পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-
হাজরে আসওয়াদের সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২০৭২,মাযমাউয জাওয়াএদ ২/১০৩,সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}
ইমাম তাবরানি মারফু সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা
করেছেন ইমাম নাসায়ি থেকে। ইমাম নাসায়ি থেকে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি কোন অগ্রহনযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন না, না কোন অনিরভরযোগ্য রাবি থেকে তা বর্ণনা করেন। সুতরাং হাদিসটি গ্রহন যোগ্য।
৪। হাফিয ইবনে হাযার আস্কালানি রহঃ ‘আদ দিরায়া ফি
তাখরিযি আহাদিসিল হিদায়া’ তে হযরত আব্বাদ ইবনে
যুবায়ের রহঃ এর মারফু রেওয়াআত বর্ণনা করেন,
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওআ সাল্লাম যখন
নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে
হস্তদয় উঠাতেন।অতঃপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত
আর হস্তদয় উত্তলন করতেন না।‘ শাহ সাহেব রহঃ বলেছেন এর সমস্ত রাবি
নির্ভরযোগ্য।কিন্তু যুবায়ের রহঃ তাবীঈ। হাদিসটি
মুরসাল। মুরসাল হাদিস আমাদের ও জুমহুরের মতে প্রমান।
৫। ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ
‎ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺃﻓﺘﺘﺢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺭﻓﻊ
‎ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺮﻛﻊ ﻭﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻳﺮﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ
‎ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻓﻼ ﻳﺮﻓﻊ ﻭﻻ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﺠﺪﺗﻴﻦ ‏(ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪﻯ،
‎ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺭﻗﻢ
‎ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 614- )
অনুবাদ-হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪} ৬।আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।রাবি জুবাইর ইবনে
আদি রহঃ বলেনঃ এবং আমি ইব্রাহিম রহঃ এবং শাবি রহঃ
কেও অনুরুপ করতে দেকেছি। ’ (তাহাবী: ১/১৬৪), ( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])
তাহাবি রহঃ বলেনঃ এটা সহিহ হাদিস। যেহেতু এর
ভিত্তি হাসান ইবনে আইয়াশ রহঃ এর উপর এবং তিনি
নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য ও হুজ্জত রাবি।ইয়াহইয়া
ইবনে মইন রহঃ তাকে নিরভরযজ্ঞ বলেছেন। (তাহাবী: ১/১৬৪),( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯
[ইফাবা])
আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী। ৭। হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে
বায়হাকী : ২/৮০, তাহাবি ১/৪২৬ হাদিস নং ১২৫৯,৬০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের। (নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩ এছাড়াও, ইবনে ইসহাক রহঃ বলেনঃ ‘ইবনে মাসউদ রা এবং হযরত আলী রা এর শিস্যগন কেবল তাকবিরে তাহরিমা বেতিত হাত উত্তলন করতেন না’। আবি শাইবা এর সনদ সহিহ বলেছেন। (মুসান্নাফে আবি শাইবা) ৮।আসওয়াদ রহ. বলেছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না। (জামউল মাসানীদ)
৯।ইব্রাহিম রহঃ বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা
সালাতের শুরু বেতিত কোথাও হাত তুলতেন না। (তাহাবি ১/৪২৯ হাদিস নং ১২৬৮) ৯।মুজাহিদ রহ. বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায
পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময়
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। (তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীআল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ (আল-জাওহারুন নাকী)
যারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা এর হাদিস দ্বারা দলিল
পেশ করেন,তাদের সেই হাদিস এর পরিপন্থী আমল তিনি নিজেই করেছেন, এটা শুধু তখনই
সম্ভব যখন তার কাছে রফুল ইয়াদাইন রহিত প্রমানিত
হয়।
ইবনে উমার রা থেকে রফুল ইয়াদাইন বিষয়ে যেসব হাদিস আছে তা অস্পষ্ট।কেননা তার থেকে বিভিন্ন রেওয়ায়াত পাওয়া যায়।
বায়হাকি রহঃ খিলাফিয়াতে মালিক রহঃ এর সুত্রে বর্ণনা
করেন,ইবনে উমার রা বলেন, রাসুল সা প্রথম
তাকবির বেতিত রফুল ইয়াদাইন করতেন না।(নসবুর
রায়াহ ১/২১০)
এছাড়া ইমাম মালিক রহঃ আলমুদানাওয়াতুল কুবরা
গ্রন্থে ইবনে উমার রা থেকে মারফু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেখানে রফুল ইয়াদাইনের কথা নেই।
এছারা সহিহ বুখারি ১/১০২ এ চার স্থানে ইবনে উমার
রা থেকে ,উভয় সিজদার মাঝখানেও(আবু দাউদ
১/১০৮ সুনানে নাসায়ি ১/১৭২০, সিজদায় যাওয়ার সময়,
( নাসায়ি ১/১৬৫),প্রতিবার উচু নিচু হয়ার ক্ষেত্রে
(ইবনে মাজাহ) রফুল ইয়াদাইন এর বিবরন পাওয়া যায়।
ইমামগন জথা শাফি রহঃ তিন স্থানে গ্রহন করেছেন, অর্থাৎ তিনি রহিতের দিকেই গেছেন, কেননা সিজদা সিজদায় যাওয়ার সময়, ও
সিজদা থেকে ওঠার সময় রফুল ইয়াদাইন তিনি রহিত
মনে করেন। গভির ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আস্তে আস্তে নামাজ প্রশান্তির ও স্থিরতার দিকেই গেছে। প্রথমে নামজে কথা বলা জায়েজ ছিল পরবর্তীতে রহিত,এদিক অদিক তাকান জায়েজ ছিল তাও রহিত হয়ে যায়, এভাবে প্রথম দিকে
প্রচুর পরিমান রফুল ইয়াদাইন জায়েজ ছিল তারপর তা
হ্রাস করা হয় এবং পাচ স্থানে তা বিধিবদ্ধ হয়ে যায়,
তারপর চার, তারপর শুধু তাকবিরের সময় তা অবশিষ্ট
থেকে যায়। এর উদ্দেশ্য নামাযে স্থিরতা ও ধিরতা আনয়ন। কেননা কুরআন বলছেঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ধিরস্থিরভাবে নামাযে দাড়াও’ ১০।ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য
কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না (জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
১১।মুগিরা রহঃ বলেনঃআমি একবার ইব্রাহিম রহঃ কে
অয়ায়িল রা এর হাদিস সম্পর্কে বললাম তিনি নবি করিম
সা কে দেখেছেন তিনি সালাতের শুরুতে এবং
রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উথাবার সময় হাত
তুলতেন। ইব্রাহিম রহঃ বল্লেন,অয়ায়িল রা তাকে
একবার এরূপ করতে দেখে থাকেন তাহলে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা তাকে পঞ্চাশ বার এরূপ
না করতে দেখেছেন।(তাহাবি ১/৪২৫ ইফাবা) এখানে অয়ায়িল ইবনে হুযর রা এর হাদিসের উত্তর দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ব্যাপারে অনেকে বলেন,তাহলে
বুখারি রহঃ কি ভুল বলল। তিনি তো রফুল ইয়াদাইন
নিয়ে একটি বইই লিখল।
এর উত্তরে বলা হবে,তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন,মুফতি
বা ফকিহ নন।ইমাম আবু হাফস কাবির রহঃ তাকে ইজতিহাদ করতে নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু তিনি ফতোয়া দিলেন, যে শিশুর দুধপান কালিন সময়ে সে যদি কোন বকরির দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে বুখারার আলেমরা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।এ ব্যাপারে
দেখুন ফাতহুল কাদিরঃ ৩/৩২০ –কিতাবুর রিযা তারিখুল
খামিস ২/৩৮২ আল্লামা ইবনে হাযার মক্কি শাফী রহ আল
খাইরাতুন হিসানে ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইমাম বুখারি রহ
আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস ছিলেন , কিন্তু ফিকহের
ব্যাপারে তিনি অবশ্যই দুর্বল ছিলেন। বস্তুত
প্রতিটি শাস্ত্রের জন্যই আলাদা আলাদা মনিষী
ছিলেন।
তাই তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে অনুসরনযোগ্য
নন।
এছারাও তিনি শাফি মাজহাবের ছিলেন।[দ্রষ্টব্য-
তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১,আল ইনসাফ=৬৭,,আবজাদুল উলুম—
৮১০ }
শাফি মাঝহাবে যেহেতু রফুল ইয়াদাইন রয়েছে সেহেতু তিনি এর পক্ষে বাহাস করতেই
পারেন।
রফউল ইয়াদাইন নিয়ে সাহাবিদের যুগ থেকেই
মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই ইখতিলাফ ছিল
ইখতিলাফে মুবাহ। অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন নিয়ে
ইখতিলাফ জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে নয় বরং উত্তম অনুত্তম নিয়ে। ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. জোরে আমিন বলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই
নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে
করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন
করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
‎ﻭﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻌﻨﻒ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﻓﻌﻠﻪ ﻭﻻ
‎ﻣﻦ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺮﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺗﺮﻛﻪ
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)
বক্তব্বের শেষে তিনি বললেন যে, রফউল ইয়াদাইন যেমন ইখতিলাফে মুবাহ তেমনি আমিন জোরে বা আস্তে বলার বেপারটিও ইখতিলাফে মুবাহ। এ নিয়ে কোন পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না।
ইমাম হুমাম রহঃ বলেনঃ তুমুল তর্ক বাহাসের পর
প্রমান সিদ্ধ কথা এই যে উভয় রেওয়াআতি রাসুল সা থেকে প্রমানিত।সুতরাং বইপরিত্তের ক্ষেত্রে, প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পরবে।(ফাতহুল কাদির ১/২৭০) আনোয়ার কাস্মিরি শাহ বলেনঃ উভয়ক্ষেত্রেই নিরবিছিন্ন ভাবে আমল হয়ে আসছে সাহাবি, তাবীঈ ও তাবে তাবীঈ দের যুগ থেকেই তবে মতপারথক্ক হল কোনটি উত্তম(নাইলুল ফাকাদাইন) সাঈদ ইবনে জুবাইর রা রফে ইয়াদাইনের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রফে ইয়াদাইনের
উদ্দেশ্য নিছক মানুশের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করা।(নাইলুল ফারকাদাইন) সাহাবি রা এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত
ছিলেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন
সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা
করেছেন-
হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি
সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন
পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু
নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
স্বয়ং রাসুল সা এর প্রিয় নাতি হাসান রা এর উক্তি
থেকেই বঝা যায় রফউল ইয়াদাইন করা বা না করা নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা সাহাবি
রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ ব্যাপারে ইখতিলাফে জড়াননি।
কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদিস ভাইরা ছাড়াও অনেকে এরকম রএছেন তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন, এটা সাহাবীদের আমলের পরিপন্থী। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪৮
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলে করনীয়৷

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি বিতর নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের পরে ভুলবশত বৈঠক করেনি। আবার তৃতীয় রাকাতে দোয়ায়ে কুনূতও পড়তে ভুলে যায় এবং শেষে সাহু সিজদা করেছে। জানতে চাই, তার বিতর নামায সহীহ হয়েছে কি না? তা কি পুনরায় আদায় করতে হবে?
উত্তর
ঐ বিতর নামায সহীহ হয়েছে। পুনরায় পড়া লাগবে না। কারণ ভুলে একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলেও সবগুলোর জন্য একটি সাহু সিজদাই যথেষ্ট। এক নামাযে একাধিক সাহু সিজদা দেওয়ার বিধান নেই। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭-২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৪৭ ও ১/৭৪১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০ ও ২/৯২,৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৫-৬৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪৭
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সুরা ফাতেহার পর তিন তসবীহ পরিমান চুপ থাকলে করনীয়৷

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি আসরের নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর চুপ থেকে ভাবতে লাগল যে, কোন সূরা পড়বে। ভাবতে ভাবতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় কেটে গেল। তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি? সাহু সিজদা না দিয়ে থাকলে তার করণীয় কী?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিন তাসবীহ পরিমাণ চুপ থাকার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সুতরাং সাহু সিজদা না দিয়ে থাকলে ঐ নামায পুনরায় পড়তে
হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; শরহুল
মুনইয়াহ পৃ. ৪৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৩৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪৬
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমাম সাহু সেজদার জন্য সালাম ফিরানোর সময় মাসবুক দাড়িয়ে গেলে করনীয়৷

প্রশ্ন
আমি একবার জামাতে নামায আদায় করতে গিয়ে মাসবুক হলাম। ইমাম সাহেব নামায শেষে এক দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিলেন। কিন্তু তিনি যে সাহু সিজদা দিবেন এটা বুঝতে না পারার কারণে তার সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বাকি নামায আদায় করতে লাগলাম। পরে তার সিজদা দেওয়া দেখেও আমি আর সিজদা দেইনি। তবে নামায শেষে সাহু সিজদা দিয়েছি। আমার নামায হয়েছে কি? এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী ছিল?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায শেষে সাহু সিজদা করার কারণে আপনার নামায আদায় হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে (অর্থাৎ ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাড়ানোর পর যখন ইমামকে সাহু সিজদা করতে দেখলেন তখন) আপনার উচিত ছিল ফিরে এসে ইমামের সাথে সিজদা করা এবং ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট নামায যথানিয়মে আদায় করা। উল্লেখ্য, ইমামের উভয় দিকে সালাম ফিরানো শেষ হওয়ার পর মাসবুক ছুটে যাওয়া রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। এটাই উত্তম নিয়ম। -কিতাবুল আসল ১/২৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৬৩; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪২
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

পীর-বুযুর্গের নিকট বিপদ-আপদ দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পার্থনা করা৷

প্রশ্ন
অনেক লোক আছে, যারা নামায পড়ে, নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে এবং তাওহীদে বিশ্বাসী, তথাপি তারা মনে করে, বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট দূর করা ও কল্যাণ সাধনের ক্ষেত্রে পীর-বুযুর্গদের অনেক ক্ষমতা আছে। তাই তারা সরাসরি মৃত ও জীবিত পীরের নিকট প্রার্থনা করে, সাহায্য চায় এবং তাদের কাছে মুক্তি চায়। অথচ আমরা জানি, এ ধরনের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। সঠিক বিষয়টি জানিয়ে বাধিত
করবেন।
উত্তর
কল্যাণ-অকল্যাণ, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার,
দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী
একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীন। তিনি ব্যতীত
অন্য কারো এ ধরনের কোনো ক্ষমতা নেই। এর উপর ঈমান ও বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক
মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। তাই বিপদ-আপদ বা
দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া বা কল্যাণ-
অকল্যাণে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনের
কর্তব্য হল, একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর কাছেই
সাহায্য চাওয়া। এগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য
কারো কাছে চাওয়া শিরক। কোনো পীর- বুযুর্গের নিকট বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য এ মর্মে প্রার্থনা করা যে, আপনি আমাকে অমুক বিপদ থেকে উদ্ধার করেন বা
অমুক বিষয়ে সাহায্য করেন-এটা সম্পূর্ণ শিরকি ও
কুফরী কাজ। উপায়-উপকরণের উর্ধ্বের কোনো বিষয়ে
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া
শিরক ফিল ইসতিআনা, যা ﺍﻳﺎﻙ ﻧﺴﺘﻌﻴﻦ এর অঙ্গীকার পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাযত করুন। তবে যদি জীবিত কোনো হক্কানী পীর-
বুযুর্গ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নিকট এ মর্মে
দুআ চাওয়া হয় যে, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করেন যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিপদ- আপদ থেকে উদ্ধার করে দেন এবং এক্ষেত্রে দুআপ্রার্থীর এ বিশ্বাস থাকে
যে, তিনি আল্লাহর মাহবুব ও নৈকট্যভাজন বান্দা
হিসেবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবুল করবেন। তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং এটি হাদীস ও
সাহাবীগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।-ফাতাওয়া
উলামাইল বালাদিল হারাম ৬০-৬২ -জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৬৬৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৬/১২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩৭৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৩৪
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

বাসা বা অফিসে জামাতে নামায পড়লে আযান দেওয়া৷

প্রশ্ন
মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে আমাদের অফিসেই জামাতের সাথে নামায আদায় করতে হয়। জানার বিষয় হল, আযান না দিয়ে অফিসে জামাতের সাথে নামায আদায় করা সহীহ হবে
কি?
উত্তর
বাসা বা অফিসে জামাতের জন্য মহল্লার মসজিদের আযানই যথেষ্ট। তাই অফিসে আযান না দিয়েও জামাতে নামায পড়া যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও আযান দেওয়া মুস্তাহাব। উল্লেখ্য, ছাতার ব্যবস্থা থাকলে সাধারণ বৃষ্টির কারণে মসজিদের জামাত ত্যাগ করা উচিত নয়। কেবল প্রবল বর্ষণের ক্ষেত্রেই মসজিদের জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৩৫৯; মাবসূত, সারাখসী ১/১৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৩২
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর বাকি নামায বসে পড়া৷

প্রশ্ন
আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। জ্বরের তীব্রতায় কয়েক ওয়াক্ত নামায বসে আদায় করেছি। মাঝে একদিন শরীর হালকা লাগছিল তাই দাঁড়িয়ে নামায শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ক্লান্তি ও চোখে অন্ধকার বোধ করায় অর্ধেক নামায বসে আদায় করি। এভাবে আমার নামায আদায় হয়েছে কি?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নামায শুরু
করার পর বাকি নামায বসে পড়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। কেননা দাঁড়িয়ে নামায পড়া অধিক কষ্টকর হলে বসে নামায পড়া জায়েয। এমনকি নামাযের মাঝে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে গেলেও অবশিষ্ট নামায বসে আদায় করা জায়েয। -সহীহ বুখারী ১/১৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; মাবসূত, সারাখসী ১/২১৮; বাদায়েউস সানায়ে
১/২৮৮৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম, আখাউড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬২৯
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের ফযীলত সংক্রান্ত ভিত্তিহীন কিছু বিষয়৷

প্রশ্ন
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-
ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে।
খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে।
গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে।
ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না।
ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ) এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে।
জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অস্তিত্ব নেই। তাই হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়৷ ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে।
তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।
মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭৷
অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।
-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১
আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।
মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬০৩
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের জামাত শুরু হওয়ার পর সুন্নত৷

প্রশ্ন
আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি নামাযের ইকামত হচ্ছে বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামাতের কতটুকু অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি সুন্নত পড়ব? দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাকি ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস
শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।-মুসনাদে আহমদ ২/৪০৫ সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে। প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ই, যা উপরে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা- ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো পিলারের আড়ালে সুন্নত
পড়বে।
খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে
যাবে।
-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৫১
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

তাকবীরে তাশরীক৷

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলা বলেছেন যে, তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তিনবার বলা মুস্তাহাব। কিন্তু অন্য এক আলিমকে বলতে শুনেছি, তিনবার বলা সুন্নত পরিপন্থী, বিদআত। জানার বিষয় হল, মূলত তাকবীরে তাশরীক তিনবার বলা সুন্নত, না মুস্তাহাব? সাহাবায়ে কেরাম কতবার তাকবীর বলতেন? তাদের থেকে তিন তাকবীর বলা প্রমাণিত আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্ব আসরসহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকীবরে তাশরীক তথা-
‎ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ
‎ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ . বলা ওয়াজিব। এই তাকবীর তিনবার বলা
সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম
রা. কীভাবে তাশরীকের দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন তা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবীরের কথা উল্লেখ নেই।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮, ৫৬৯৯, তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাযের পর উক্ত তাকবীর বলতেন।- মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :
৫৬৯৬
অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে তাকবীরে তাশরীকের সাথে অন্য কিছু মিলিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন হযরত ইবনে উমর রা. তাকবীরে তাশরীকের আগে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন।-আলআওসাত, হাদীস :
২২০১
আর পূর্ণ তাকবীরে তাশরীক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৪২
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা নামাযের সময় চুল খোঁপা করে রাখা৷

প্রশ্ন
মহিলারা নামায আদায়ের সময় চুল খোঁপা করে রাখলে নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি? যদি সমস্যা হয় তাহলে চুল কিভাবে রাখতে হবে?
উত্তর
মহিলাদের জন্য নামাযের সময় চুল খোঁপা করে রাখতে কোনো বাধা নেই। কেননা মহিলাদের জন্য শরীয়তের বিধান হল, তারা নামায আদায়ের সময় পরিপূর্ণভাবে চুল ঢেকে রাখবে। নামায অবস্থায় তারা চুল ছেড়ে বা বেঁধে-যেকোনোভাবে রাখতে পারেন। তবে চুল ছাড়া থাকলে অসতর্কতাবশত কখনো তা খুলে যেতে পারে। তাই নামাযে চুল খোঁপা করে রাখাই ভালো।
-শরহুল মুনইয়া ২১২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৫;
আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭০৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৪১
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মাইকে আযান দেয়ার সময় হাইয়াআলাস সালাহ ও হাইয়াআলাল ফালাহ বলার সময় ডানে-বামে চেহারা ফিরানো৷

প্রশ্ন
আমরা জানি যে, আযানের মধ্যে ‘ হাইয়াআলাস সালাহ ’ এবং ‘ হাইয়াআলাল ফালাহ ’ বলার সময় ডানে- বামে চেহারা ফিরাতে হয়। আর তা এজন্য যে, যাতে সবাই আওয়াজ শুনতে পায়। বর্তমান সময়ে সাধারণত সকল মসজিদেই মাইক ব্যবহার করা হয়। আমি জানতে চাই যে, মাইকে আযান দেওয়ার সময়ও কি ডানে বামে চেহারা ফিরাতে হবে?
উত্তর
হ্যাঁ, মাইকে আযান দিলেও ‘ হাইয়াআলাস সালাহ ’ এবং ‘ হাইয়াআলাল ফালাহ’ বলার সময় ডানে-বায়ে চেহারা ফিরানো উত্তম। কেননা, চেহারা ফিরানোর মধ্যে অন্যদের আওয়াজ শোনা বা না শোনার বিষয়টি ছাড়াও অন্য কোনো হেকমতও থাকতে পারে। তাই মাইকে আযান দিলেও এই সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে ডানে বামে চেহারা ফিরানো উচিত। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৪০
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের তাকবীরে "আল্লাহ" এর প্রথম আলিফ লম্বা করে পড়া৷

প্রশ্ন
আজ এক মসজিদে আছরের নামায পড়তে গিয়েছিলাম৷ ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরিমার সময় "আল্লাহ" এর প্রথম আলিফ লম্বা করে পড়ল৷ অতপর নামায হয়েছে কিনা এ নিয়ে কিছু লোকের মাঝে মতানক্য
সৃষ্টি হয়ে গেছে৷ মুফতি সাহেবের নিকট জানতে
চাই, নামাযের তাকবীরে "আল্লাহ" এর প্রথম আলিফ লম্বা করে পড়লে নামায হবে কিনা?
উত্তর
নামাযের তাকবীরে "আল্লাহ" এর প্রথম আলিফ
লম্বা করে পড়লে নামায হয় না৷ অতএব প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনাদের আছরের নামায কারো হয়নি৷ পুনরায় পড়া জরুরী৷
দলিলঃ
গুনিয়াতুল মুস্তামলি পৃঃ ২২৭, ( নুমানিয়া)
‎لو ادخل المد في الف لفظة الله كما يدخل في قوله تعالي الله اذن لكم وشبهها تفسد صلاته ان حصل في اثنائها عند اكثر المشائخ ولا يصير شارعا به في ابتدائها ويكفر لو تعمده لانه استفهام ومقتضاة الشك في كبريائه تعالي
হাশিয়াতুত তাহত্বাবী আলাল মারাকী পৃঃ ২৭৯ ( রশিদিয়া); আদ দুররুল মুখতার ১/৪৮০ (সাঈদ); নাহরুল ফায়েক ১/২১২ (রশিদিয়া)৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৩০
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

চেয়ারে বসে নামায সংক্রান্ত আরো কিছু বিধিবিধান৷

প্রশ্ন
(ক) যে ব্যক্তি জমিনে বসতে অক্ষম কিন্তু কিয়াম করতে পারে তার জন্য দাড়িয়ে ইশারা করে নামায পড়া উত্তম? নাকি চেয়ারে বসে ইশারা করে নামায আদায় করা উত্তম?
(খ)চেয়ারে বসা দাড়ানোর হুকুমে নাকি বসার হুকুমে?
(গ) চেয়ার কোথায় রাখা হবে?
উত্তর
(ক) দাড়িয়ে কেরাত পড়ে রুকুর পর নিচে বসতে না পারলে দাড়িয়ে ইশারায় সিজদা করার তুলনায় চেয়ারে বসে ইশারা করে সিজদা আদায় করা উত্তম৷ কেননা চেয়ারে বসা জমিনে বসার নিকটবর্তী৷
(খ) চেয়ারে বসা বসার হুকুমের অন্তর্ভোক্ত৷
(গ) হাদীসে কাতার সোজা করার অনেক গুরুত্ব এসেছে৷ তাই তা পালন করা জরুরী৷ এতএব চেয়ার এভাবে রাখবে যেন মা'যুর ব্যক্তির দেহ অন্যান্য সুস্থ মুছল্লীদের দেহের সাথে বরাবর থাকে৷ সুতরাং মা'যুর ব্যক্তি যদি নামাযে দাড়ানোর সময় দাড়িয়ে নামায দাড়িয়ে পড়তে পারে, শুধু সিজদার সময় চেয়ারে বসে, তাহলে কাতার সোজা করার জন্য চেয়ারের সামনের পায়া কাতারের দাগের পিছনের কিনারায় রেখে বসা উচিত, যেন কিয়াম করার সময় মা'যুর ব্যক্তির কাধ অন্যান্যদের কধের বরাবর হয়৷ কিন্তু এতে পিছনের কাতার সোজা করতে সমস্যা হলে চেয়ারের পিছনের পায়া কাতারের দাগ বরাবর রেখে বসা উত্তম৷
প্রথম পদ্ধতির উপর আমল করার সহজ পদ্ধতি হলে, সকল মা'যুর ব্যক্তি এক পাশে নামায আদায় করবে৷ ফলে কাতার সোজা না হওয়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে৷
আর যদি মা'যুর ব্যক্তি শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায আদায় করে, সে ক্ষেত্রে চেয়ারের পিছনের পায়া কাতারের দাগের উপর রাখবে৷ যেন তার কাধ অন্যান্য মুছল্লীদের কাঁদের বরাবর হয়৷
দলিলঃ
সহীহ বুখারী হাঃ ৭২৩, আবু দাউদ হাঃ ৬৬৪, তিরমিযি হাঃ ২২৭, আদ দুররুল মুখতার ১/৫৬৭, ২/৫৪৭, রদ্দুল মুহতার ২/১৩২, ৫৬৭, বাদায়েয়ুস সানায়ে ১/ ৪১৩,৪১৪,মওসুয়াতুল ফিকহিয়া ৩৪/১০৭, ইলাউস সুনান ৭/২০১, মাবসুত ২/১২৫৷
বিঃদ্রঃ পুর্বের পোষ্টটি না পড়ে থাকলে আগে সেটা পড়ে নিন৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫২৩
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আযানে আল্লাহু আকবার এর "হামযা" অথবা বা কে লম্বা করে পড়া৷

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২ বছর যাবত আযান দিচ্ছেন। মুসল্লীরা তাঁকে মুয়াযযিনের মতো মনে করেন। তিনি আল্লাহু আকবার এর হামযাকে এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করেন এবং আকবার এর ‘বা’ কেও এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে থাকেন। আমরা তাঁকে এ সংক্রান্ত মাসআলা শুনিয়েছি এবং অনেকবার আযান মশকও
করিয়েছি। কিন্তু তিনি সহীহভাবে আযান দিতে
পারেন না। জানতে চাই, এভাবে আযান দিলে কোনো সমস্যা হবে কি না। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
আযানে আল্লাহু আকবার এর ‘হামযা’ অথবা ‘বা’ কে
টেনে বা মদ করে পড়লে আযান মাকরূহ
হবে। এমন অশুদ্ধ উচ্চারণকারীর আযান দেওয়া
ঠিক নয়। আযানের জন্য এমন লোক নির্বাচন করতে হবে, যিনি শুদ্ধভাবে সুন্নত তরীকায় আযান দিতে পারেন।
-সুনানে আবু দাউদ ১/৮৭; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫১৭
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

এক রাকাতে তিন সেজদা করলে করনীয়৷

প্রশ্ন
একদিন আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব তিনটি সেজদা করে। কিছু মুকতাদী তৃতীয় সেজদায় ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। আর কিছু মুকতাদী অনুসরণ করেননি। ইমাম সাহেব নামায শেষে সেজদায়ে সাহুও করেননি। এখন তাদের নামাযের হুকুম
কী?
উত্তর
ইমাম সাহেব অতিরিক্ত সেজদা করার কারণে ইমাম এবং সকল মুকতাদীর উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু সেজদায়ে সাহু না করার কারণে ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্য নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি। উল্লেখ্য এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ না করাই নিয়ম। কিন্তু অনুসরণ না করলেও ইমামের ভুলের কারণে সকলের উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫২৮, ৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৭৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫১৫
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ছেলে মেয়ে বালেগ হবার বয়সসীমা৷ 

প্রশ্ন
উমরী কাযা নির্ধারনে বালেগ বৎসর ধার্য করা জরুরী। ইসলামী শরীয়া হিসাব অনুযায়ী একজন পুরুষকে কত বৎসর বয়সে বালেগ ধরা হবে? আমি বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন বয়স পেয়েছি। কেউ উল্লেখ করেছেন ১০ বৎসর, কেউ ১২ আবার কেউ বলেছেন সর্বপ্রথম বীর্যস্খলন থেকে তার নামায ফরজ হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন হিসাবটা সঠিক? জানালে উপকৃত হব । জাযাকাল্লাহু
খইরান ।
উত্তর
ছেলে বা মেয়ের বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার মূল নিদর্শন বীর্যস্খলন হওয়া। এটির প্রকাশক অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন ১) ছেলে মেয়েদের সেটি স্বপ্নদোষের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। ২ ) ছেলেদের দাড়ি গোফ উঠা আর মেয়েদের স্তন বড় হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। ৩ ) মেয়েদের হায়েজ আসা, গর্ভধারণ করা ইত্যাদির মাধ্যমেও বালেগ হওয়া সাব্যস্ত হয়।
‎ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻎَ ﺍﻟْﺄَﻃْﻔَﺎﻝُ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﺍﻟْﺤُﻠُﻢَ ‏[ ٢٤ : ٥٩ ]
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োঃপ্রাপ্ত হয়, [সূরা আননূর-৫৯] এইতো গেল নিদর্শন হিসেবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করা। যা নির্ধারণ করা খুবই সহজ। কিন্তু কথা হল, যদি নিদর্শন বুঝা না যায়,তাহলে বয়স হিসেবে কিভাবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করবে? বয়সের ভিত্তিতে বালেগ ও নাবালেগ নির্ধারণে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতভেদ হয়ে গেছে। আসলে এটি নির্ণয় করা একটু দূঃরহ ব্যাপারও। কারণ সমাজ, পরিবেশ এবং রাষ্ট্রের আবহওয়ার ভিন্নতার কারণে মানুষের শারীরিক গঠনে, আচরণে ভিন্নতা দেখা দেয়। সেই হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া না হওয়ার বিষয়টিও যেহেতু শরীরের সাথে অনেকটা সম্পর্কিত, তাই এটির বয়সসীমা নির্ধারণও বেশ দুঃসাধ্য
বিষয়।
এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বালেগ হবার বয়স নির্ধারণে মতভেদ হয়ে গেছে। যেমন- ক) সতের বছর। খ) পনের বছর। ইত্যাদি। তবে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, বালেগ হবার উপরোক্ত আলামতগুলো যদি কোন ছেলে বা মেয়ের মাঝে প্রকাশিত না হয়, তাহলে সন্তানের বয়স পনের বছর হলেই উক্ত ছেলে মেয়ে বালেগ হয়েছে বলে ধর্তব্য
হবে।
‎ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻧﻪ ﻋُﺮِﺽ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ
‎ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﻡ ﺃُﺣﺪٍ ﻭﻟﻪ ﺃﺭﺑﻊ ﻋﺸﺮﺓ ﺳﻨﺔ
‎ﻓﻠﻢ ﻳُﺠِﺰْﻩ، ﻭﻋُﺮِﺽ ﻋﻠﻴﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺨﻨﺪﻕ ﻭﻟﻪ ﺧﻤﺲ ﻋﺸﺮﺓ
‎ﺳﻨﺔ ﻓﺄﺟﺎﺯﻩ . ইবনে উমর রাঃ উহুদের জিহাদে অংশ নেবার অনুমতি চাইলেন, তখন তার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। রাসূল সাঃ তাকে অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু খন্দকের জিহাদের অংশ নিতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। [আলআহাদ ওয়ালমাছানী, হাদীস নং-৭৪৬] বুঝা গেল, শরীয়তের মুকাল্লাফ হতে হলে আর কোন আলামত না থাকলে বয়স হিসেবে কমপক্ষে পনের বছর হতে
হয়।
আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১;আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩;তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১, - সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫১৪
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম ব্যবহার করার হুকুম৷

প্রশ্ন
আমি যতটুকু জানি যে, অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার নাজায়েজ, এটা নাকি নাপাক। কিন্তু আমি একজনের নিকট শুনেছি যে, আল্লামা তাকি উসমানী সাহেব ফতোয়া দিয়েছেন যে
অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি পাক। এটা ব্যবহার
জায়েজ। সুতরাং আমার প্রশ্ন হল যে অ্যালকোহল যুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার কি জায়েজ ? আর তা শরীরে ব্যবহার করা অবস্থায় নামাজ আদায় করা যাবে কি?
উত্তর
অ্যালকোহেলযুক্ত যে সকল সুগন্ধি বা
পারফিউম পাওয়া যায় তা ব্যবাহার না করাই উত্তম
ও শ্রেয়। অ্যালকোহেলযুক্ত সুগন্ধি ব্যাবহার করা জায়েজ আছে কিনা তা জানার জন্য আগে মদ বা অ্যালকোহেলের বিধান জানা জরুরী। সংক্ষেপে তা পেশ
করা হল-
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে, মদ বা এ্যালকোহেল হল, যা আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরী হয়। এটি যখন ভালভাবে জ্বাল দেওয়া হয় তখন তা মদ হয়। মোটকথা যে মদ বা অ্যালকোহোলের উপাদান আঙ্গুর সেটাই কেবল মদ। এটি নাপাক। এটি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার অল্প বা বেশি নেশা হোক বা না হোক সবই হারাম। এ ব্যাপারে সবাই একমত। আরেক হল, এমন মদ যার উপাদান- খেজুর বা কিসমিস। এটিও হারাম, নাপাক। অল্প হোক বেশি হোক পান হারাম। তবে এর নিষিদ্ধতা প্রথমটার মত মযবুত নয়। তাই এ ধরনের মদ্যপায়ীর উপর ইসলামী হদ (শাস্তি) কার্যকর হয় না। এই কারণে তা বৈধ উদ্দেশ্যে বিক্রয় জায়েয। যেমন মেডিসিনের ব্যবহারের জন্য উক্ত প্রকার এ্যালকোহেল ক্রয়-বিক্রয় করা। তবে ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর মতে এটিও বিক্রি জায়েয নয়। হারাম। তৃতীয় প্রকার অ্যালকোহেল হল-যার উপাদান উপরোক্ত বস্তু ছাড়া অন্য কিছু। যেমন গম, যব বা অন্য কোন শষ্য, মধু ইত্যাদি। এসব অ্যালকোহেলের বিধান হল, নেশা উদ্রেক করে না -এ পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ। নেশা উদ্রেক করে এ পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ না। এটি ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবু ইউসুফ রহ. উভয়ের মত। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম ইসলামিক স্কলার শাইখুল ইসলাম মুফতী ত্বাকী দা.বা. এ বিষয়ে যা লিখেছেন তার সার সংক্ষেপ হল- “বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অ্যালকোহেল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বহু শিল্প কারখানা এ্যালকোহেলের ব্যবহার করা ছাড়া চলা সম্ভব নয়।এক কথায় বর্তমান সময়ে বহু মানুষ এর সাথে জড়িত। এবং এর প্রচন্ড প্রয়োজনয়ীতা রয়েছে। এখন আমাদের দেখার বিষয়, যদি এসব অ্যালকোহেল আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরী না হয় তবে তা বৈধ কাজে ব্যবহার করা ইমাম আবু হানীফা রহ.এর মতে
বৈধ।
‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা ’(খ.১,পৃ.৫৪৪,প্রকাশকাল ১৯৫০খৃ.)-এ- বর্তমান বিশ্বে অ্যালকোহেল কীসের থেকে তৈরী হয় এর একটি তালিকা দেয়া হয়েছে, সে তালিকায় আছে, মধু, শষ্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। তবে তাতে কোথাও আঙ্গুর বা খেজুরের কথা নেই। সার কথা, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতানুযায়ী বাজারে প্রচলিত অ্যালকোহেল যদি খেজুর ও আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত না হয় তবে তা বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার বৈধ হবে। নেশার উদ্রেক হয় না এ পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে। আর এটিই স্বাভাবিক সত্য যে, বর্তমানে অধিকাংশ অ্যালকোহেল আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরী হয়না। সুতরাং এসব বৈধ উদ্দেশ্যে ক্রয়- বিক্রয় করা যাবে। তদ্রুপ
ঔষধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে।
অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে।” (দেখুন তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮,৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ূ ১/২৯৮) উল্লেখ্য যে, যদি কোন অ্যালকোহেলের ব্যাপারে প্রমাণিত হয় যে, তা আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরী তাহলে তা ব্যাবহার করা যাবে না। তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮,৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ূ ১/২৯৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫০৯
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মাসবুক ব্যক্তির ছুটে যাওয়া রাকাত সানা দিয়ে শুরু করা৷

প্রশ্ন
আমার অনেক সময় জামাতে এক দুই রাকাত ছুটে যায়। জানার বিষয় হল, ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করার সময় শুরুতে সূরা ফাতেহা পাঠ করব নাকি সানা পড়ে তারপর সূরা ফাতিহা পড়ব?
উত্তর
ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় সানা দিয়ে শুরু করা উত্তম। তাই সানা দিয়ে শুরু করা চাই৷ তবে সানা না পড়লেও নামায হয়ে যাবে৷
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫০৮
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

বাচ্চা পেম্পারস পরিহিত অবস্থা নামাযীর কোলে পেশাব করলে করনীয়৷

প্রশ্ন
আমি যোহরের নামাযের শেষ বৈঠকে ছিলাম। এ সময় আমার দুই বছরের ছোট ছেলেটি কোলে এসে বসে পড়ে এবং এ অবস্থায় পেশাব করে দেয়। কিন্তু তার পরনে যেহেতু পেম্পারস ছিল তাই পেশাব পেম্পারসের ভিতরই থেকে যায়। তাই আমার গায়ে মোটেও পেশাব লাগেনি। এ অবস্থায় আমার নামাযটি কি সহীহ হয়েছে?
উত্তর
হ্যাঁ, সহীহ হয়েছে। ঐ শিশুর অপবিত্রতার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫০৭
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

জায়নামাযে দাড়িয়ে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু পড়া৷

প্রশ্ন
আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে জায়নামাযে দাড়িয়ে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ...’ দুআটি পড়তে হয়। একে জায়নামাযের দুআ বলে। এ সম্পর্কে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই দুআটি পড়া ঠিক নয়। জানার বিষয় হল, বইয়ের কথা ঠিক নাকি ইমাম সাহেবের কথা ঠিক? সঠিক সমাধান দিয়ে সঠিক আমলের সুযোগ দিবেন।
উত্তর
প্রশ্নে বর্ণিত দুআটি জায়নামাযে দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে পড়াটা প্রমাণিত নয়। হাঁ, হাদীস শরীফে নফল নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর পড়ার কথা রয়েছে। এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে ফিকাহবিদগণ নফল নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর সানার পূর্বে এ দুআ পড়াকে উত্তম বলেছেন। -সুনানে নাসাঈ ১/১০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৭১৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫০৫
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলাদের মিসওয়াক করার বিধান৷

প্রশ্ন
পুরুষের মতো কি মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত? হাদীসে মহিলাদের মিসওয়াক করা সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় কি?
উত্তর
মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের উপর প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করা জরুরি করে দিতাম। (সহীহ বুখারী ১/১২২) উক্ত হাদীসে উম্মত শব্দ এসেছে যা পুরুষ মহিলা সবাইকে শামিল করে৷ সুনানে আবু দাউদের ১/৮ এক বর্ণনায় আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.-এর মিসওয়াক করার কথা উল্লেখ আছে। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫০৩
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মহিলারা হায়েয অবস্থায় আযানের উত্তর দেওয়া৷

প্রশ্ন
হায়েয অবস্থায় মহিলারা আযানের জবাব দিতে পারবে কি?
উত্তর
মহিলাদের জন্যও আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। তাই হায়েয অবস্থায়ও মহিলারা আযানের জবাব দিবে। এ অবস্থায় আযানের জবাব দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৫৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে...

প্রশ্ন
নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে পড়ি অর্থাৎ সূরা
কাফিরূন আগে এবং সূরা কুরাইশ পরে
পড়ি তাহলে নামায হবে কি?
উত্তর
নামাযের মধ্যে সূরার তারতীব রক্ষা করে পড়া মুস্তাহাব। ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামায হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে নামায মাকরূহ হবে না। সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনইয়া ৪৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৫১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি , নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের...

প্রশ্ন
আমরা জানি , নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে
আস্তে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হয়।
আমার প্রশ্ন হল , আস্তের স্থানে কতটুকু
জোরে আওয়াজে পড়লে বা জোরের
স্থানে কতটুকু আস্তে আওয়াজে পড়লে
সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। ইমাম ও
একাকী নামায আদায়কারী উভয়ের
মাসআলাই কি এক ? বিস্তারিত দলিল-
প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিহ্বা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী (নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে , পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য , এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। আর সিররী নামাযে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একাকী নামায আদায়কারীর জন্যও আস্তে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত জোরে পড়লে সেক্ষেত্রে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে
হবে।
রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬;
আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১২৩৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৫০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) নামাযে ইমাম রুকুতে থাকলে আগত মুক্তাদির করণীয় কী ?...

প্রশ্ন
ক)
নামাযে ইমাম রুকুতে থাকলে আগত
মুক্তাদির করণীয় কী ? এ সময় মুক্তাদি
হাত বাঁধবে কি ?
খ) ইমামের শেষ বৈঠকে মাসবুকের
করণীয় কী ? মাসবুক কি কিছু পড়বে ?
বিস্তারিত জানালে খুব উপকার হত।
উত্তর
ক)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরিক হবে। অতপর আবার তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর হাত বাঁধবে না এবং সানাও পড়বে না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা , হাদীস ২৫২৮ ; ফাতাওয়ায়ে খানিয়া
১/৮৮ ; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭ ; শরহুল মুনয়াহ
৩০১৷
খ)
মাসবুক ব্যক্তি ইমামের শেষ বেঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে এবং কিছুটা ধীর গতিতে পড়বে। যাতে ইমাম সালাম ফেরানো পর্যন্ত তাশাহহুদ পড়া চলতে থাকে। আর যদি ইমামের সালামের আগে তাশাহহুদ শেষ হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে বাকি সময় তাশাহহুদের শেষে যে কালিমায়ে শাহাদাত আছে তা বার বার পড়তে থাকবে।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৩০৯১; ফাতওয়া খানিয়া
১/১০৩; ইমদাদুল মুফতীন ২৯৬;আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৪৯
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায়...

প্রশ্ন
একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায়
আমাকে ইমামতি করতে দেওয়া হয়।
উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে কোনো
আলেম বা হাফেয না থাকায় বাধ্য হয়ে
আমি ইমামতি করতে যাই। কুরআন
মাজীদের শেষের কয়েকটি সূরা ছাড়া
অন্য বড় কোনো সূরা আমার মুখস্থ নেই।
আর আমি জানতাম , ফজর নামাযে
কেরাত একটু লম্বা পড়া সুন্নত। তাই
আমার মুখস্থ সূরাগুলো থেকে এক
রাকাতে আমি ধারাবাহিকভাবে চার-
পাঁচটি করে সূরা তিলাওয়াত করি।
নামায শেষে কয়েকজন মুসল্লি এ নিয়ে
আপত্তি করেন। তারা বলেন , এক
রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে কাউকে
তো দেখিনি। তুমি এটি ঠিক করনি।
আমি জানতে চাই , ফরয নামাযে এভাবে
এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়ার হুকুম
কী ? এ কারণে কি নামাযের কোনো
অসুবিধা হয়েছে?
উত্তর
ফরয নামাযে এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা না পড়াই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন , প্রত্যেক সূরার পর রুকু এবং সিজদা করে তার হক আদায় কর। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা , হাদীস ৩৭৩০ তবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়াও জায়েয আছে। কোনো কোনো সাহাবী এবং তাবেয়ী থেকে ফরয নামাযেও এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা
পড়ার কথা বর্ণিত আছে , যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে , তিনি
ফরয নামাযের এক রাকাতে একত্রে দুটি সূরা পড়তেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা , হাদীস ৩৭১৪ আতা রাহ. বলেন , ফরয নামাযে এক রাকাতে দুটি সূরা বা দুই রাকাতে একটি সূরা পড়লে অসুবিধা নেই। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা , হাদীস ৩৭১৫৷ উল্লেখ্য , এখানে মূল বিষয় হল, মাসনূন কিরাতের প্রতি লক্ষ্য রাখা। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেহেতু উযরের কারণে এমন হয়েছে তাই তাকে অনুত্তমও বলা যায় না। ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফতহুল বারী ২/৩০৪; ইলাউস সুনান ৪/১৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪৪৮
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে...

প্রশ্ন
ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
উত্তর
না , ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। আল মুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১৫৪
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন আগে আমাদের মহল্লায় একটি নতুন মসজিদ হয়েছে। সভাপতি সাহেবের...

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমাদের মহল্লায় একটি নতুন মসজিদ হয়েছে। সভাপতি
সাহেবের আদেশে আমাদের ইমাম সাহেব নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময়
মসজিদ বন্ধ রাখেন। কিন্তু কিছু কিছু মুসল্লির দাবি হল, মসজিদ বন্ধ রাখা
যাবে না। সব সময় মসজিদ খোলা রাখতে হবে। কারণ মসজিদ বন্ধ রাখার অর্থ
হল, মানুষকে ইবাদত থেকে বাধা দেওয়া। জানার বিষয় হল, নামাযের সময়
ব্যতীত অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখা কি জায়েয?
উত্তর
মসজিদের মালামাল ও আসবাবপত্র হেফাযতের উদ্দেশ্যে নামাযের সময় ব্যতীত
অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখা জায়েয। এবং তা ইবাদতে বাধা দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত
নয়। অবশ্য নামাযের আগে পরে যতক্ষণ মুসল্লিগণ ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে
এমন একটা লম্বা সময় পর্যন্ত মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। এজন্য
বিশ্বস্ত খাদেম নিয়োগের মাধ্যমে মসজিদের মালামাল হেফাযতের ব্যবস্থা
নিতে হবে। আর মসজিদের সাথে জায়গা থাকলে সেখানে বারান্দা বানানো
যেতে পারে। যেন মসজিদ বন্ধ থাকলেও বারান্দা খোলা থাকে। এতে মসজিদের
মালামালের হেফাযতও হবে আবার মুসল্লীগণ যে কোনো সময় ইবাদত-বন্দেগীও
করতে পারবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১৯; শরহুল মুনইয়াহ ৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩;
ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১৪৬
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায...

প্রশ্ন
শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কিনা?এক ধরনের চটি বই পুস্তিকায় বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখাও থাকে। বিশেষ বিশেষ সূরা দিয়ে নামায পড়া বা নির্ধারিত রাকাত নামায বিশেষ সূরা দ্বারা আদায় করা ইত্যাদি। প্রশ্ন এই যে, হাদীস শরীফে এ দুই রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কি? থাকলে তা জানতে চাই। তদ্রূপ কেউ কেউ এ
রাতগুলোতে জামাতের সঙ্গে নফল নামায পড়তে চায়। এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান
কী?
উত্তর
এ দু’রাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং
যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ
কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির- আযকার, দুআ-ইস্তেগফার
ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। তবে নফল নামায
দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা কোনো
কোনো হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়।
বিভিন্ন বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-
কানূন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার
পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। বলাবাহুল্য যে,
যে কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত
থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল
করা উচিত। শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে
একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই
মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে
এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর
রেওয়াজ ছিল না। তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।
ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ.
২১৯৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১২৫
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) আমি শুনেছি, তিলাওয়াতের কারণে যত সিজদাই ওয়াজিব হোক চৌদ্দটি...

প্রশ্ন
ক) আমি শুনেছি, তিলাওয়াতের কারণে যত সিজদাই ওয়াজিব হোক চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে সবগুলো
সিজদা আদায় হয়ে যাবে। জানার বিষয় হল, কথাটি ঠিক কি না?
প্রশ্ন : 
খ) অনেক সময় দেখা যায়, নামাযে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর আলাদা সিজদা না
করে নামাযের সিজদার মাধ্যমেই তা আদায় করে নেন, কিন্তু অনেক মুকতাদি সিজদার আয়াত
তিলাওয়াতের বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে নামাযের সিজদার সাথে তিলাওয়াতের সিজদার নিয়ত করে না।
জানার বিষয় হল, এভাবে মুকতাদির তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হবে কি? তাদের জন্য কি নিয়ত করার হুকুম
নেই?
উত্তর
ক) পুরো কুরআন মজীদে তিলাওয়াতে সিজদার আয়াত মোট চৌদ্দটি। সুতরাং পুরো কুরআন মজীদ খতম
করার পর চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে এক খতমের সকল সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রশ্নোক্ত কথা দ্বারা যদি এটা উদ্দেশ্য হয় যে, একাধিক খতম করে কিংবা সারা জীবন যত তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে
সবগুলোর জন্য চৌদ্দটি সিজদা আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে-তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং যতগুলো সিজদার আয়াত যতবার তিলাওয়াত করা হয়েছে সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সিজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সিজদা ওয়াজিব হবে।
প্রকাশ থাকে যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত বিলম্ব না করে সিজদার আয়াতের পরেই আদায় করা উচিত।
-শরহুল মুনইয়া ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮
খ) নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর যদি আরো দু আয়াতের বেশি তিলাওয়াত করার পূর্বেই নামাযের
রুকু-সিজদা করা হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে ইমাম-মুকতাদি সকলের তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হয়ে
যাবে। এক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য ভিন্নভাবে নিয়ত করা শর্ত নয়। এমনকি সিজদার আয়াত পড়া
হয়েছে বা সিজদা ওয়াজিব হয়েছে একথা মুকতাদিগণ না বুঝলেও তাদের সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে
সর্বক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য নামাযেই পৃথকভাবে সিজদা করা উত্তম।
আর যদি সিজদার আয়াতের পর দুই আয়াতের বেশি পড়া হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতের
সিজদাটি আদায়ের সুযোগ থাকবে না। সেক্ষেত্রে তিলাওয়াতের জন্য নামাযেই ভিন্নভাবে সিজদা করতে
হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১১১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০৮
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা...

প্রশ্ন
একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট
দিয়েই ঐ মেঝে হালকাভাবে মুছে
দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর উপরই
মোটা ও ভারী কার্পেট জাতীয়
জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায়
করি। নামায শেষে ভাইয়া বললেন, ও
তো ওখানে পেশাব করেছিল, তুমি তার
উপরই জায়নামায বিছিয়ে নামায
পড়েছ! আমি জায়নামায উল্টে দেখি,
জায়নামাযের উল্টো পিঠে হালকা
ভিজা ভিজা আছে। আর পেশাবের গন্ধ
মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাযের
উপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হল, ঐ
জায়নামাযে আমার নামায কি শুদ্ধ
হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
মোটা জায়নামাযের এক পিঠে যদি নাপাকি লাগে আর ঐ নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত জায়নামাযের উপরের অংশে যেহেতু প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ পৌঁছেনি তাই তাতে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে। তবে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকীর প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও যেহেতু তা কোনো কোনো ফকীহের মতে নাপাক হয়ে যায় তাই এই জায়নামায পবিত্র না করে তাতে আর নামায না পড়াই শ্রেয় হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার
১/৬২৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০৭
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের...

প্রশ্ন
আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর
এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে
যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে
নামায আদায় করে নিই। জানার বিষয়
হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে,
না পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর
চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই ঐ পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬১, ১২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০৬
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি।...

প্রশ্ন
আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক
সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই
ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা
দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ
নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার
পড়ে নিতে হবে?
উত্তর
আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো একটি ভুলে
ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায়
করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে।
-কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০৪
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে...

প্রশ্ন
দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে
তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন
করবে। কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬২-৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪১০৩
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা...

প্রশ্ন
ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে
সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত
জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
হাঁ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা জায়েয।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৮২
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

পুরুষের মতো কি মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত? হাদীসে মহিলাদের...

প্রশ্ন
পুরুষের মতো কি মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত? হাদীসে মহিলাদের মিসওয়াক করা সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় কি?
উত্তর
মহিলাদের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের উপর প্রত্যেক নামাযে মিসওয়াক করা জরুরি করে দিতাম। (সহীহ বুখারী ১/১২২) সুনানে আবু দাউদের ১/৮ এক বর্ণনায় আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.-এর মিসওয়াক করার কথা উল্লেখ আছে।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭৪
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়?...

প্রশ্ন
নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়? যদি ইমামের এ রকম হয়ে থাকে তবে
কি তিনি মুক্তাদিরকে নিয়ে আবার নামায পড়বেন? মাসআলাটির উত্তর দ্রæত প্রদান করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
উত্তর
পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা এতে নামাযের খুশু-খুযু বিঘ্নিত হয় এবং এতমিনানের সাথে নামায আদায় হয়
না। এসব চাপ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ এতমিনান ও স্থীরতার সাথে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাদীস ও আসারে পেশাব-পায়খানা ও বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আদায় করতে
নিষেধ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
যখন নামায দাঁড়িয়ে যায় আর তোমাদের কারো পেশাব-
পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন প্রথমে প্রয়োজন সেরে নেয়। -জামে তিরমিযী,
হাদীস ১৪২
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য হালাল নয় কারো গৃহাভ্যন্তরে অনুমতি ব্যতীত দৃষ্টিপাত করা... এবং কেউ যেন পেশাব-পায়খানার চাপ
নিয়ে নামায না পড়ে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১
নাফে রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি পেটে বায়ুর চাপ বোধ করে। তিনি বললেন, বায়ুর চাপ বোধ করা অবস্থায় সে যেন নামায না পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে
আবী শাইবা, হাদীস ৮০২২
উপরোক্ত হাদীস ও আসারের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ বলেছেন, পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর
চাপ নিয়ে নামায আরম্ভ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর স্বাভাবিক অবস্থায়
নামায শুরু করার পর নামাযের ভিতরে এমন চাপ সৃষ্টি হলে নামাযের পর্যাপ্ত ওয়াক্ত বাকি থাকা সত্তে¡ও এ অবস্থায় নামায চালিয়ে যাওয়া মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে ওযু-ইস্তিঞ্জা সেরে পূর্ণ চাপমুক্ত হয়ে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাঁ, নামাযের ওয়াক্ত যদি এত স্বল্প থাকে যে, প্রয়োজন সারতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে
তাহলে সম্ভব হলে এ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে। অবশ্য পর্যাপ্ত ওয়াক্ত থাকার পরও কোনো ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী যদি এ অবস্থায় নামায
পড়ে নেয় তবে এমনটি করা মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে
যাবে। পুনরায় পড়া জরুরি নয়। তবে ভবিষ্যতে এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪১, ৬৪৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক...

প্রশ্ন
কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল,এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?
উত্তর
তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু’ রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭২
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

কখনো কখনো আমি মাসবুক হই। কিন্তু ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর...

প্রশ্ন
কখনো কখনো আমি মাসবুক হই। কিন্তু ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর যখন বাকি নামায আদায় করতে দাঁড়াই
তখন কখনো কখনো মনে থাকে না যে, ইমামের সাথে কয় রাকাত পেয়েছি আর কয় রাকাত ছুটেছে। সেক্ষেত্রে আমার পাশের ব্যক্তি যে
আমার সাথেই নামাযে শরিক হয়েছে তাকে দেখে নামায
আদায় করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করলেও কি নামায হয়ে যায়?
উত্তর
হাঁ, নিজের ছুটে যাওয়া
রাকাতের (সংখ্যা) স্মরণ না থাকলে পাশের মুসল্লির
নামাযের প্রতি খেয়াল করে নিজে নিজে সে অনুযায়ী নামায পড়লেও হয়ে যাবে।
তবে নামায একাগ্রতার সাথে আদায় করা উচিত। বারবার এমনটি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব...

প্রশ্ন
আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফালাক পড়েছেন। আমি শুনেছি, এভাবে মাঝে একটি সূরা বাদ দিয়ে পড়া মাকরূহ। তাই জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি আমার ঐ দিনের নামায মাকরূহ হয়েছে?
উত্তর
ফরয নামাযে প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে ইচ্ছাকৃত মাঝে একটি ছোট সূরা রেখে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে পরবর্তী সূরা পড়া অনুত্তম। আর অনিচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হবে না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত এমনটি হলে অনুত্তম হয়নি। আর ইচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হলেও নামায আদায় হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, এ হুকুম কেবল ফরযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নফল নামাযে এমন হলে কোনো অসুবিধা নেই। খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

কখনো আমি নামাযে মাসবুক হই। নামায শেষে ভুলক্রমে ইমামের সাথে...

প্রশ্ন
কখনো আমি নামাযে মাসবুক হই। নামায শেষে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। পরে অন্যদের দেখে মনে হয়। জানতে চাই, এক্ষেত্রে কি আমার নামায ভেঙ্গে যাবে? নামায না ভাঙ্গলে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
উত্তর
এক্ষেত্রে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর কারণে নামায ভঙ্গ হবে না। তবে এ অবস্থায় দেখতে হবে
যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের সাথেই হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের পরে হয় তাহলে অবশিষ্ট নামায শেষে আপনাকে সিজদায়ে সাহু করে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২;
ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৬৪
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ...

প্রশ্ন
কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ ধরনের নাপাকি কী পরিমাণ লাগলে নামায সহীহ হয় না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর
রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত। নাজাসাতে গলীযা যদি কাপড়ে বা শরীরে লাগে এবং তা তরল হয় (যেমন, প্রস্রাব) তাহলে সেক্ষেত্রে তা যদি দিরহামের আয়তন (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণ)-এর কম হয় অথবা নাপাকি শক্ত হলে যেমন, গোবর তা যদি দিরহামের ওজন (বর্তমান মেট্রিক হিসাবে যা ৩.০১৬৮ গ্রাম)-এর চেয়ে কম হয় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এ পরিমাণ অল্প নাপাকিও ধুয়ে নেওয়া ভালো। তাই সাধারণ অবস্থায় এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়া অনুত্তম। আর যদি নাপাকি দিরহামের সমপরিমাণ হয় তাহলে তা ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব। এ অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই কেউ এ অবস্থায় নামায পড়লে সে নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি নাপাকি দিরহামের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে নাপাকি ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়লে নামায হবে না। -ইলাউস সুনান ১/৪০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৬১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে...

প্রশ্ন
একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে নামায কাযা করবে? আর ছেলে ও মেয়েদের
ক্ষেত্রেও কাযার হিসাব জানতে চায়।
উত্তর
নামায ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ছেলেদের প্রথম স্বপ্নদোষ ও
মেয়েদের প্রথম মাসিকের সময় থেকে। যদি ১৫ বছর পুরো হওয়ার পরও উক্ত আলামত দেখা না যায় তবে চান্দ্র বছর হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে ছেলে- মেয়ে উভয়ে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হবে। তাই
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি প্রাপ্ত বয়স্ক
হয়ে থাকে তাহলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী ঐ সময়টি নির্ণয় করে তখন থেকে প্রতিদিনের পাঁচ
ওয়াক্তের ফরয এবং বিতর নামায কাযা করবে। আর যদি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোনো আলামত না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে নামায কাযা করবে। আর কাযা নামায আদায় করার সময় ফজরের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবে যে, আমি অনাদায়ী প্রথম ফজর নামায আদায় করছি। যোহরের ক্ষেত্রে নিয়ত করবে, আমি
অনাদায়ী প্রথম যোহর আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রথম অনাদায়ী নামাযটি আদায়ের নিয়ত করবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৮৪-৮৫;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৬০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে...

প্রশ্ন
আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। কারণ নামাযের সময়
স্কুলে ক্লাস হত। এখন আমি সে সময়ের নামাযগুলো কাযা করছি। কিন্তু তখন কত ওয়াক্ত নামায পড়া হয়নি তা জানা নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে। আর আমার নামাযগুলো আদায়ের পদ্ধতি এই ছিল যে, যোহরের সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের সুন্নত না পড়ে কাযা নামায পড়েছি। এছাড়া অন্য সময় কাযা আদায় করার মতো সময় আমি বের
করতে পারছি না। এদিকে
আমার উপর আর অনাদায়ী নামায নেই -এমনটিও বলতে
পারছি না। আবার নামায
বাকি আছে- এমনটিও বলতে পারছি না। তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি কি
যোহরের সুন্নত বাদ দিয়ে অনাদায়ী নামায কাযা করব, নাকি আমার নামায অনাদায়ী নেই ধরে নিয়ে যোহরের সুন্নত আদায় করব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিনা ওজরে তা নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। তাই অনাদায়ী নামায আদায়ের জন্য সুন্নত ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা- ইস্তিগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে কাযা নামায আদায় করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায বাদ দেওয়া যাবে না। আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যদি প্রবল ধারণা হয় যে, আপনার অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে,কোনো অনাদায়ী নামায নেই তাহলে আর কাযা আদায় করতে হবে না। এক্ষেত্রে অনাদায়ী নামায থাকার ব্যাপারে শুধু সন্দেহ ধর্তব্য হবে না। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কাযা নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই এবং তা উচিতও নয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২;

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার...

প্রশ্ন
আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার সময় চুল বেঁধে রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এই বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্য, না শুধু পুরুষের জন্য? জানালে খুশি হব।
উত্তর
নামাযে চুল বেঁধে রাখা মাকরূহ- এই বিধানটি কেবল পুরুষের জন্য। মহিলাদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা নামাযে ঢেকে রাখা ফরয। তাই তারা চুল বেঁধে নামায পড়তে পারবে। যাতে চুল ঢেকে রাখা সহজ হয় এবং এর কোনো অংশ প্রকাশ না পায়। আর তারা চুল ছেড়ে দিয়েও নামায পড়তে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এমনভাবে চুল ঢেকে রাখবে যেন ছেড়ে রাখার কারণে চুলের কোনো অংশ খুলে না
যায়।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৮৫৬; নাইলুল আওতার ২/৩৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক- ওদিক চলে...

প্রশ্ন
নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক-
ওদিক চলে যায়। যখন যেখানে দৃষ্টি থাকা দরকার সেখানে থাকে না। এজন্য অনেক সময় চোখ বন্ধ করে রাখি। এটা আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতেও
সহায়ক হয়। এ অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখাটাই কি আমার জন্য উত্তম? নাকি এর পরও চোখ খোলাই রাখব?
উত্তর
নামাযে চোখ খোলা রাখা এবং দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। নামাযে অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ রাখা সুন্নতের খেলাফ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭) অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় সে যেন চোখ বন্ধ না
রাখে।-আলমুজামুল কাবীব, হাদীস ১০৯৫৬; ইলাউস সুনান ৫/১২১ সুতরাং চোখ খুলেই নামায পড়তে হবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অবশ্য কারো অবস্থা যদি এমন হয় যে, নামাযে তার দৃষ্টি খুব বেশি এদিক সেদিক চলে যায় তাহলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ রাখতে পারবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সিরীন রাহ. বলেন, নামাযে যার চোখ বেশি এদিক-সেদিক চলে যায় তাকে চোখ বন্ধ রাখার অনুমতি দেওয়া হত। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩৩০ তবে ধীরে ধীরে চোখ খোলা রেখে একাগ্রতার সঙ্গে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায়...

প্রশ্ন
ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায় সুন্নত পড়া আরম্ভ করি। একপর্যায়ে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত পাঠ করেন এবং সিজদা দিয়ে দেন। এরপর আমি ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম রাকাতের রুকুতে শরিক হই। আমার প্রশ্ন হল, আমি তো সিজদার আয়াত শুনেছি। কিন্তু ইমাম সাহেবের সাথে সিজদায় শরিক হতে পারিনি। এখন আমার করণীয় কী? আলাদাভাবে ঐ সিজদা আদায় করা কি আমার উপর ওয়াজিব?
উত্তর
না, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে আলাদাভাবে ঐ সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে না। কেননা যে রাকাতে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করা হয়েছে সে রাকাতের রুকুতে শরিক হওয়ার কারণে ইমামের কেরাত এবং সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। তবে যে রাকাতে সিজদার আয়াত পাঠ করা হয়েছে এবং সিজদা দেওয়া হয়েছে ঐ রাকাতের রুকুতে যদি শরিক না হতেন তাহলে নামাযের পর আপনাকে পৃথকভাবে ঐ সিজদা আদায় করে নিতে হত। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫০১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৬
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?

প্রশ্ন
অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?
উত্তর
অন্ধ ব্যক্তি যদি সহীহ-শুদ্ধভাবে ও যথাসময়ে আযান দিতে পারে
অর্থাৎ তাকে নামাযের সময় বলে দেওয়ার মতো লোকের
ব্যবস্থা থাকে তাহলে এমন লোককে মুয়াযযিন বানাতে কোনো সমস্যা নেই। হাদীস শরীফে এসেছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুইজন মুয়াযযিন
ছিলেন। বেলাল রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা.। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. ছিলেন দৃষ্টিহীন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার
১/৩৯২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৪
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের...

প্রশ্ন
দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন
মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যদি
মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামের আগে চলে যায় তাহলে কি মুকতাদির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে?
উত্তর
মুকতাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালির আগে বেড়ে না গেলে
মুকতাদির নামায ফাসেদ হবে না। অতএব দাঁড়ানো অবস্থায় পা ঠিক থাকলে মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে সিজদায় তার মাথা ইমামের আগে চলে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের...

প্রশ্ন
দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যদি মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামের আগে চলে যায় তাহলে কি মুকতাদির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে?
উত্তর
মুকতাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালির আগে বেড়ে না গেলে মুকতাদির নামায ফাসেদ হবে না। অতএব দাঁড়ানো অবস্থায় পা ঠিক থাকলে মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে সিজদায় তার মাথা ইমামের আগে চলে গেলেও কোনো সমস্যা হবে
না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

শেষ বৈঠকে মুকতাদীর দরূদ শরীফ বা দুআ মাসূর শেষ হওয়ার...

প্রশ্ন
শেষ বৈঠকে মুকতাদীর দরূদ শরীফ বা দুআ মাসূর শেষ হওয়ার আগেই যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরায় তাহলে মুকতাদীর করণীয় কী? দুআ-দরূদ শেষ করে সালাম ফিরাবে নাকি শেষ করার পূর্বেই ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুকতাদীর দরূদ শরীফ ও
দুআ মাসূর শেষ না হলেও ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরাবে। কেননা, দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর পড়া সুন্নত আর ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে ইমাম সাহেবের উচিত একটু ধীর গতিতে পড়া যাতে মুসল্লিরা দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর শেষ করতে পারে। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি...

প্রশ্ন
আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি করে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলিনি। আমার তাকবীরে তাহরীমা কি আদায় হয়েছে? নাকি ঐ নামায পুণরায় পড়তে
হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর শেষ করে থাকেন তাহলে ঐ তাকবীরটি তাকবীরে তাহরীমা হিসেবে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে আপনার নামাযও সহীহ গণ্য হবে। আর প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে রুকুর তাকবীর না বললেও অসুবিধা নেই। কেননা রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলা জরুরি নয়। পক্ষান্তরে আপনার তাকবীর যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয় কিংবা রুকুর নিকটবর্তী গিয়ে শেষ হয় তাহলে আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা আদায় হয়নি। আর তাকবীরে তাহরীমা ফরয। এটা ছাড়া নামায শুরুই হয় না। -ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮০-৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১১৯; আননারুহল ফায়েক ১/১৯৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর...

প্রশ্ন
বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর উপর তলায়ও মুসল্লি দাঁড়ায়। কিন্তু উভয় তলার মাঝে কোনো ফুটো নেই। শুধু মাইকে আওয়াজ শোনা যায়। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে উপর তলার মুসল্লিদের নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
দোতলা থেকে ইমামের ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ছাদে ফুটো থাকা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মাইকে ইমামের আওয়াজ শুনে ইমামের উঠা- বসা ও অবস্থা জানা গেলেও ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামায অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলেও উপর তলার মুসল্লিগণ যথাযথভাবে যেন ইমামের ইকতিদা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া দরকার। এজন্য ইমাম বরাবর ছাদ কিছুটা ফাঁকা রাখা ভালো। আর তা না থাকলে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উচিত। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৬
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা...

প্রশ্ন
ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
হাঁ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা
জায়েয। তবে ফজরের সুন্নত ব্যতিত অন্য কোন নফল পড়া যাবে না৷
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৫
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে...

প্রশ্ন
দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে। কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে
হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি।...

প্রশ্ন
আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?
উত্তর
আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে। -কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪২
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের...

প্রশ্ন
অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের জামাতের সময় হয়ে গেছে বা জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়া হয় না। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে কি ঐ সুন্নত পড়ে নেওয়া যাবে? পড়া গেলে যোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব নাকি পরে?
উত্তর
জ্বী। যোহরের পূর্বের সুন্নত ছুটে গেলে তা ফরয-পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করে নিবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত (কখনো) ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের (ফরয) পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯; মাআরিফুস সুনান ৪/১০৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-...

প্রশ্ন
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে- ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে। গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে। ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না। ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ) এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই
হাদীস
হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে। তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭ অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১ আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫ সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর- নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৩৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ট্রেনে নামায আদায়ের বিধান৷

প্রশ্ন
বেশিরভাগ আন্তনগর ট্রেনে নামাযের কক্ষ আছে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া কঠিন হয়। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বা পড়েও যাই। আবার নামায অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা মুশকিল হয়। এমতাবস্থায় কিভাবে নামায আদায় করব জানা প্রয়োজন।
উত্তর
সম্ভব হলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।তাই ট্রেনেও ভ্রমণকালে যথাসম্ভব' দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে কিছু ধরেও দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে বসে নামায পড়তে পারবে। আর ট্রেনেও নামায শুরু করার সময় কেবলার দিক নিশ্চিত করে সেদিকে ফিরে নামায পড়তে হবে। অতপর নামায অবস্থায় ট্রেন ঘুরে যাওয়ার কারণে কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে নামাযী তা বুঝামাত্র কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও নামাযে কিবলার দিকে না ঘুরলে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। তবে শুরুতে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর নামাযের ভিতর কিবলা
পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে না পারার কারণে যদি ঐভাবেই নামায শেষ করে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, চলন্ত ট্রেনে ঐ সময় নামাযে দাঁড়ানো উচিত যখন ট্রেনটি একদিকে চলতে থাকে তাহলে নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তন করতে হবে না।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি এক মসজিদের ইমাম। ফজর ও আসরের নামাযের সালাম ফিরানোর...

প্রশ্ন
আমি এক মসজিদের ইমাম। ফজর ও আসরের নামাযের সালাম ফিরানোর পর কখনো দেখি, আমার বরাবর পেছনের কাতারে মাসবুক ব্যক্তি নামায পড়ছে। এ অবস্থায় আমার জন্য মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা জায়েয হবে কি না?
উত্তর
মাসবুক যদি দ্বিতীয় কাতারে বা আরো পিছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে আর তার সামনে কেউ থাকে তবে ইমাম ঐ বরাবর মুখ করে বসতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু মাসবুকের সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা মাকরূহ হবে। কেননা নামাযির সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা বা দাঁড়ানো মাকরূহ তাহরীমী। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২৩; শরহুল মুনইয়াহ ৩৪১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭১-১৭২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২৬
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

অসুস্থ অবস্থায় আমি একদিন মাগরিবের পর ঘুমিয়ে পড়ি। এতে আমার...

প্রশ্ন
অসুস্থ অবস্থায় আমি একদিন মাগরিবের পর ঘুমিয়ে পড়ি। এতে আমার ইশার নামায কাযা হয়ে যায়। এখন ঐ দিনের ইশা কাযা করার সময় বিতরের নামাযও কি কাযা করা
লাগবে?
উত্তর
হাঁ, বিতর নামাযেরও কাযা পড়তে হবে। কেননা বিতর নামায ওয়াজিব। আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বিতরের নামাযের কথা ভুলে যায় বা বিতর পড়া ব্যতীত ঘুমিয়ে পড়ে সে যেন স্মরণ হওয়ামাত্রই বা ঘুম থেকে উঠামাত্রই বিতর পড়ে
নেয়।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১১২৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬০৮; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৮; আততাজনীস ২/৯৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২৫
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি...

প্রশ্ন
নামাযে সিজদা অবস্থায় উভয় হাত যমীনের উপর বিছিয়ে দিলে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?
উত্তর
পুরুষের জন্য সিজদা অবস্থায় উভয় বাহু যমীন থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। বাহু যমীনে বিছিয়ে রাখা মাকরূহে তাহরীমী। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ঠিকভাবে সিজদা কর। (সিজদায় গিয়ে) তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার উভয় বাহুকে বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮২২ তবে ওজরের কারণে এমনটি করলে নামাযের ক্ষতি হবে না। -আলবাহরুর রায়েক ২/২৩; কিতাবুল হুজ্জাহ
১/১৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৫; হাশিয়াতুত
তহতাবী আলাল মারাকী ১৯২; রদ্দুল মুহতার
১/৬৪৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২৪
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

গত সপ্তাহে আমরা পাঁচজন জুমার নামাযের জন্য বের হতে বিলম্ব...

প্রশ্ন
গত সপ্তাহে আমরা পাঁচজন জুমার নামাযের জন্য বের হতে বিলম্ব হয়ে যায়। গেটে এসে দেখি, গেট বন্ধ। ঐ সময়ে বের হওয়ার মতো আমাদের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই আমরা ছাত্রাবাসের ভিতরেই খুতবা পড়ে জুমা আদায় করি। জানার বিষয় হল, আমাদের জুমা আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? জুমা আদায়ের জন্য মসজিদ হওয়া
কি শর্ত?
উত্তর
হাঁ, আপনাদের জুআ আদায় করা সহীহ হয়েছে। মসজিদ ছাড়াও জুমা পড়া সহীহ। অবশ্য বিনা ওজরে মসজিদের জুমা ত্যাগ করা গুনাহ। প্রকাশ থাকে যে, জুমার প্রথম আযানের পর পরই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে (জুমার) নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও। -সূরা জুম‘আ (৬২) ৯ আযানের পর অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া জায়েয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের বিলম্ব করা ঠিক
হয়নি।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫৫১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

গতকাল আসরের নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে আশহাদু...

প্রশ্ন
গতকাল আসরের নামাযে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় ভুলে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ছুটে যায়। এজন্য আমি সাহু সিজদা করেছি। জানার বিষয় হল, ঐ অংশটুকু ছুটে যাওয়ার কারণে আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল? যদি ওয়াজিব না হয় তাহলে আমি সাহু সিজদা করার কারণে আমার নামায হয়েছে কি না?
উত্তর
হাঁ, ঐ অংশ ছুটে যাওয়ার কারণে আপনার জিম্মায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। তাশাহহুদের সামান্য অংশ ছুটে গেলেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া
১/১২৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; ফাতহুল কাদীর
১/৪৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৯; আদ্দুররুল
মুখতার ১/৪৬৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২২
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমি আযান দেওয়ার সময় ‎ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ...

প্রশ্ন
একদিন আমি আযান দেওয়ার সময় ‎ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ বলার আগে ‎ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ বলে ফেলি। কিন্তু ভুল বুঝতে পেরে তা ঠিক করে পড়ে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে দোহরানোর কারণে আযান শুদ্ধ হয়েছে কি?
উত্তর
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ﺃﺷﻬﺪ ‎ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ থেকে আবার দোহরিয়ে বলা নিয়মসম্মতই হয়েছে। এর দ্বারা ঐ আযান শুদ্ধ হয়ে গেছে। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯;
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬;
শরহুল মুনইয়াহ ৩৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮;
রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় এমন হয় যে, ইমাম সাহেব তাশাহহুদ শেষ করে...

প্রশ্ন
অনেক সময় এমন হয় যে, ইমাম সাহেব তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়িয়ে গেছেন। কিন্তু আমার এখনো শেষ হয়নি। এখন আমার করণীয় কী? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াব, নাকি তাশাহহুদ অপূর্ণ রেখেই ইমাম সাহেবের সাথে দাঁড়িয়ে যাব?
উত্তর
তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুকতাদি সকলের উপর ওয়াজিব। তাই মুকতাদীর তাশাহহুদ শেষ না হলে তার কর্তব্য হল, তাশাহহুদ পূর্ণ করা। এক্ষেত্রে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেও মুকতাদি দাঁড়াবে না; বরং তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬;
শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭২০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ইমাম সাহেবের পিছনে ফজরের নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকুতে...

প্রশ্ন
আমি ইমাম সাহেবের পিছনে ফজরের নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকুতে গেলে আমিও তার সাথে রুকুতে যাই। কিন্তু ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে পড়েছেন মনে করে দাঁড়িয়ে যাই। উঠে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতেই আছেন। তখন আমি আবার রুকু করে ইমামের সাথে শরিক হই। নামাযের পর এক ভাই বললেন, আপনার কর্তব্য ছিল ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা। দ্বিতীয়বার শরিক হওয়ার কারণে আপনার রুকু দুটি হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক?
উত্তর
না, ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য পুনরায় রুকুতে যাওয়া ঠিকই হয়েছে। কারণ ইমাম রুকু বা সিজদা থেকে উঠে পড়েছে মনে করে মুক্তাদী উঠে পড়লে তখন মুক্তাদীর জন্য ইমামের অনুসরণে পুনরায় রুকু বা সিজদায় ইমামের সাথে শরিক হওয়াই নিয়ম। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে বা বসে অপেক্ষা করতে হবে- এ কথা ঠিক নয়। আর এ পরিস্থিতিতে পুণরায় শরিক হওয়ার দ্বারা দুই রুকু হয়ে যায়- এ কথাও ঠিক নয়। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখতে হবে কি না?

প্রশ্ন
নামাযে মহিলাদের জন্য কান ঢেকে রাখতে হবে কি না?
উত্তর
হাঁ, মহিলাদের জন্য নামাযে কান ঢেকে রাখা আবশ্যক। কেননা, নামাযে মহিলাদের কান সতরের অন্তর্ভুক্ত। তাই নামাযের মধ্যে কোনো কানের চার ভাগের একভাগ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ২১৪;
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭১; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৮, ৪০৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামায যদি কেউ একা...

প্রশ্ন
আমরা জানি, মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামায যদি কেউ একা একা পড়ে তাহলে তার উচ্চস্বরে কেরাত পড়ারও অবকাশ আছে। আস্তে আস্তে পড়ারও অবকাশ আছে। তো জোরে কিরাত পড়ার সময় তাকবীর এবং তাসমীও ( ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ) কি জোরে
বলবে?
উত্তর
মাগরিব, ইশা ও ফজরে একাকী নামায আদায়কারী উচ্চস্বরে কিরাত পড়লেও তাকবীর ও তাসমী আস্তেই পড়বে। জোরে পড়বে না। কারণ একাকী নামায আদায়কারীর জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর বলার কোনো প্রয়োজন নেই। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৬
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের নামাযের সময় আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নত পড়ছিলাম। ইমাম...

প্রশ্ন
ফজরের নামাযের সময় আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নত
পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার পর সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা
পড়েন। সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা আদায় করেন। আমি ইমাম সাহেবের সঙ্গে সিজদার আয়াতে শরিক হতে পারিনি। তবে ঐ রাকাতেই রুকুর আগে শরিক হয়েছি। জানার বিষয় হল, আমার কি পরবর্তীতে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে?
উত্তর
না, পরবর্তীতে আপনাকে ঐ সিজদা আদায় করতে হবে না। কারণ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ইমামের সাথে ঐ রাকাতেই শরিক হওয়ার কারণে কিরাত ও তিলাওয়াতে সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল
মারাকী ২৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৫
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

গত রমযানে একদিন আমি বিতর নামায পড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে দুআয়ে...

প্রশ্ন
গত রমযানে একদিন আমি বিতর নামায পড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। মুসল্লিরা সাথে সাথে পেছন থেকে লোকমা দিলে আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দুআয়ে কুনূত পড়ি এবং নামায শেষে সাহু সিজদা দেই। সালামের পর মুসল্লিদের কেউ কেউ বলল, সাহু সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ আমাদের দুআয়ে কুনূত ছুটেনি এবং রুকুতে গিয়েও তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তাদের কথা কি ঠিক? আমার জন্য কি সিজদায়ে সাহু করা ঠিক হয়েছে?
উত্তর
প্রশ্নোক্তক্ষেত্রে আপনার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ঠিকই হয়েছে। সিজদায়ে সাহুর প্রয়োজন ছিল না- প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। কেননা দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণেই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়ে গেছে। তাই রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পড়লেও সাহু সিজদা দিতে হবে। রুকুতে তিন তাসবীহ বিলম্ব হয়েছে কি না তা এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় নয়। কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল, কুনূতের জন্য আর না দাঁড়ানো। তাই এক্ষেত্রে মুক্তাদিগণ ইমামকে দাঁড়াতে বাধ্য করবে না। বরং যথানিয়মে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করে শেষে সিজদায়ে সাহু
করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৯-১০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৪
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর কখনো আমি সিজদায়ে সাহু...

প্রশ্ন
নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর কখনো আমি সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে যাই এবং সালাম ফিরিয়ে ফেলি। সালাম ফিরানোর পর মনে পড়ে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি?
উত্তর
সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর ভুলবশত সিজদা না করে সালাম ফিরিয়ে ফেললে কর্তব্য হল, সালামের পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে সিজদায়ে সাহুর কথা মনে পড়ার সাথে সাথে সিজদা করে নিবে এবং যথানিয়মে তাশাহহুদ দুরূদ ও দুআ মাসূরা পড়ে নামায শেষ করবে। তবে সালাম ফিরানোর পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করলে যেমন কথা বলে ফেললে সাহু সিজদা করার সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আদায়কৃত নামায পুণরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫১২; কিতাবুল আসল ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২৪, ৩২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৯১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন মাগরীবের নামাযের ইমামতি করতে গিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে ভুলে...

প্রশ্ন
আমি একদিন মাগরীবের নামাযের ইমামতি করতে গিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে ভুলে সুরা ফাতেহার এক আয়াত ছেড়ে দেই৷ তা পুনরায় আর পড়ি নি৷ অতপর শেষে সাহু সেজদা আদায় করি৷ জানার বিষয় হলো, আমার নামায হয়েছে কিনা? এবং তিন আয়াতের কম ভুলে ছেড়ে দিলে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় কিনা?
উত্তর
ফরজ নামাযে প্রথম দুই রাতাত ও অন্যান্য নামাযের সকল রাকাতে পুর্ন সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব৷ অতএব সুরা একটি শব্দ ছেড়ে দিলেও সাহু সেজদা দেয়া ওয়াজিব৷
আর প্রশ্নে বর্নিত সুরতে আপনি যেহেতু সাহু সেজদা করেছেন, তাই আপনার নামায় হয়েছে৷
- ফতাওয়ায়ে শামী 1/446; আহসানুল ফতাওয়া 4/ 170৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৭৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে...

প্রশ্ন
নামাযের মধ্যে যদি আগের সূরা পরে এবং পরের সূরা আগে পড়ি অর্থাৎ সূরা কাফিরূন আগে এবং সূরা কুরাইশ পরে পড়ি তাহলে নামায হবে কি?
উত্তর
নামাযের মধ্যে সূরার তারতীব রক্ষা করে পড়া মুস্তাহাব। ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামায হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে নামায মাকরূহ হবে না। সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; শরহুল মুনইয়া ৪৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৭২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে...

প্রশ্ন
ক) মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা কি জরুরি? না মনে মনে করলেই হবে?
খ) সম্মিলিত মুনাজাত করার বিধান কী? গ) জায়নামাযের দুআ পড়া যাবে কি?
উত্তর
ক) কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের দৃঢ় ইচ্ছাকেই নিয়ত
বলে। সুতরাং নামায-রোযা এবং অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই নিয়ত হিসেবে যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে
সাথে মুখেও উচ্চারণ করে
বলতে নিষেধ নেই। কেউ যদি ইচ্ছার দৃঢ়তার জন্য মুখেও উচ্চারণ করে নেয় তবে তা দোষণীয়
হবে না।
-উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার
১/৪১৫
খ) দুআ অনেক বড় ইবাদত। হাদীস শরীফে এসেছে, দুআই ইবাদত। এই দুআ যেমন একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। সম্মিলিত দুআ সংক্রান্ত এক দুটি দলিল নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল-
১. কুরআন মাজীদে ইরশাদ
হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।
-সূরা ইউনুস : ৮৯
এ আয়াতে তোমাদের দুইজনের দুআ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ.-এর দুআ বুঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ী ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা দুজনের দুআ বলেছেন।
-তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৬৬৫; আদ্দুররুল মানসূর ৩/৩৪১
তো এটা তাদের দুজনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরি শুনিয়েছেন যে, তোমাদের
দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে। ২. একটি দীর্ঘ হাদীসে
সাহাবীয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আল ফিহরী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন
কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে
সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন। -মুজামে কাবীর তবারানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৯
সম্মিলিত দুআ বিষয়ে আরো জানতে মাসিক আলকাউসার, শাবান-
রমযান ১৪২৯; আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব লিখিত ‘সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর’’ প্রবন্ধটি পাঠ
করুন।
গ) জায়নামাযের কোনো দুআ নেই। কোনো কোনো
মহলে ইন্নি ওয়াজ্জাহতু দুআটি জায়নামাযের দুআ নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাযের দুআ নয়; বরং হাদীস শরীফ নামায শুরু করার পর ছানা হিসেবে এ দুআ পড়ার কথা আছে।
'-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০; রদ্দুল মুহতার
১/৪৮৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৪৮
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২ বছর যাবত আযান দিচ্ছেন। মুসল্লীরা তাঁকে মুয়াযযিনের মতো মনে করেন। তিনি আল্লাহু আকবার এর হামযাকে এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করেন এবং আকবার এর ‘বা’ কেও এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে থাকেন। আমরা তাঁকে এ সংক্রান্ত মাসআলা শুনিয়েছি এবং অনেকবার আযান মশকও করিয়েছি। কিন্তু তিনি সহীহভাবে আযান দিতে পারেন না। জানতে চাই, এভাবে আযান দিলে কোনো সমস্যা হবে কি না। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত
করবেন।
উত্তর
আযানে আল্লাহু আকবার এর ‘হামযা’ অথবা ‘বা’ কে টেনে বা মদ করে পড়লে আযান মাকরূহ হবে। এমন অশুদ্ধ উচ্চারণকারীর আযান দেওয়া ঠিক নয়। আযানের জন্য এমন লোক নির্বাচন করতে হবে, যিনি শুদ্ধভাবে সুন্নত তরীকায় আযান দিতে পারেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/৮৭; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; আসসিআয়াহ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার
১/৩৮৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৪১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে...

প্রশ্ন
আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে আস্তে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হয়। আমার প্রশ্ন হল, আস্তের স্থানে কতটুকু জোরে আওয়াজে পড়লে বা জোরের স্থানে কতটুকু আস্তে আওয়াজে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী উভয়ের মাসআলাই কি এক? বিস্তারিত দলিল- প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিব্বা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী (নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে, পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য, এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। আর সিররী নামাযে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একাকী নামায আদায়কারীর জন্যও আস্তে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত জোরে পড়লে সেক্ষেত্রে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ
১২৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৪০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে...

প্রশ্ন
ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
উত্তর
না, ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। আল মুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৩২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব তিনটি সেজদা করে।...

প্রশ্ন
একদিন আসরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব তিনটি সেজদা করে। কিছু মুকতাদী তৃতীয় সেজদায় ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। আর কিছু মুকতাদী অনুসরণ করেননি। ইমাম সাহেব নামায শেষে সেজদায়ে সাহুও করেননি। এখন তাদের নামাযের হুকুম কী?
উত্তর
ইমাম সাহেব অতিরিক্ত সেজদা করার কারণে ইমাম এবং সকল মুকতাদীর উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু সেজদায়ে সাহু না করার কারণে ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্য নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি। উল্লেখ্য এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণ না করাই নিয়ম। কিন্তু অনুসরণ না করলেও ইমামের ভুলের কারণে সকলের উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫২৮, ৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৩০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

ট্রেনে নামায আদায়ের বিধান৷

প্রশ্ন
বেশিরভাগ আন্তনগর ট্রেনে নামাযের কক্ষ আছে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া কঠিন হয়। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বা পড়েও যাই। আবার নামায অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা মুশকিল হয়। এমতাবস্থায় কিভাবে নামায আদায় করব জানা প্রয়োজন।
উত্তর
সম্ভব হলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।তাই ট্রেনেও ভ্রমণকালে যথাসম্ভব' দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে কিছু ধরেও দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে বসে নামায পড়তে পারবে। আর ট্রেনেও নামায শুরু করার সময় কেবলার দিক নিশ্চিত করে সেদিকে ফিরে নামায পড়তে হবে। অতপর নামায অবস্থায় ট্রেন ঘুরে যাওয়ার কারণে কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে নামাযী তা বুঝামাত্র কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও নামাযে কিবলার দিকে না ঘুরলে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। তবে শুরুতে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর নামাযের ভিতর কিবলা
পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে না পারার কারণে যদি ঐভাবেই নামায শেষ করে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, চলন্ত ট্রেনে ঐ সময় নামাযে দাঁড়ানো উচিত যখন ট্রেনটি একদিকে চলতে থাকে তাহলে নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তন করতে হবে না।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৮১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২২৭
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলার আলোচনায় বললেন, নামাযে কেরাতের তারতীব ঠিক...

প্রশ্ন
মসজিদের ইমাম সাহেব মাসআলার আলোচনায় বললেন, নামাযে কেরাতের তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব। আমরা জানি যে, ওয়াজিব তরক করলে সাহু সিজদা করতে হয়। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হবে কি না? যদি সাহু সিজদা করতে না হয় তাহলে নামাযে সূরার তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব হল কীভাবে? বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর
নামাযে সূরাসমূহের তারতীব ঠিক রাখা উত্তম। নামাযে সূরার তারতীব ঠিক রাখা ওয়াজিব হওয়ার কথা ঠিক নয়। হ্যাঁ, এটা ইলমে তাজবীদের মাসআলা হতে পারে। কিন্তু এটি নামাযের ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই ফরয- ওয়াজিব নামাযে ইচ্ছাকৃত সূরার তারতীব ভঙ্গ করা মাকরূহ তানযীহী। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেলে মাকরূহ হবে না। সুতরাং এর কারণে সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৫৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৯৪; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলালমারাকী ১৯৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২২৪
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

কিছুদিন হল আমি নামায শুরু করেছি। আমি নামাযে এভাবে সিজদা...

প্রশ্ন
কিছুদিন হল আমি নামায শুরু করেছি। আমি নামাযে এভাবে সিজদা করি যে, বাহুর সাথে পাঁজর এবং উরুর সাথে পেট মিলিয়ে রাখি। কিন্তু একজন মাওলানা সাহেব বললেন, সিজদার মধ্যে বাহু পাঁজর থেকে এবং পেট উরু থেকে পৃথক রাখতে হবে। এখন জানতে চাই, মাওলানা সাহেবের কথা কতটুকু সঠিক?
উত্তর
মাওলানা সাহেব যথার্থই বলেছেন। পুরুষের জন্য সিজদার মধ্যে বাহুকে পাঁজর থেকে এবং পেটকে উরু থেকে পৃথক রাখা সুন্নত। হযরত মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর উভয় বাহুকে পৃথক রাখতেন, এমনকি যদি কোনো ছাগলছানা তাঁর বাহুর নিচ দিয়ে গমন করার ইচ্ছা করত তাও সম্ভব হত।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস :৮৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া
১/৭৫; মাবসূত ১/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১২৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৬৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০৭
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা...

প্রশ্ন
একদিন আমার ভাতিজা ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দেয়। ওর মা পরনের প্যান্ট দিয়েই ঐ মেঝে হালকাভাবে মুছে দেয়। আমি খেয়াল না করে ওর উপরই মোটা ও ভারী কার্পেট জাতীয় জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায় করি। নামায শেষে ভাইয়া বললেন, ও তো ওখানে পেশাব করেছিল, তুমি তার উপরই জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়েছ! আমি জায়নামায উল্টে দেখি, জায়নামাযের উল্টো পিঠে হালকা ভিজা ভিজা আছে। আর পেশাবের গন্ধ মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু জায়নামাযের উপর পিঠে কোনো গন্ধ নেই। প্রশ্ন হল, ঐ জায়নামাযে আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
মোটা জায়নামাযের এক পিঠে যদি নাপাকি লাগে আর ঐ নাপাকি বা তার প্রভাব (রং, গন্ধ) কাপড়ের অপর পিঠে না পৌঁছে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী অপর পিঠের পবিত্রতা বহাল থাকবে। নিচের অংশের অপবিত্রতার কারণে তা নাপাক গণ্য হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত জায়নামাযের উপরের অংশে যেহেতু প্রস্রাবের আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ পৌঁছেনি তাই তাতে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে। তবে মোটা কাপড়ের এক পিঠের নাপাকীর প্রভাব অন্য পিঠে প্রকাশ না পেলেও যেহেতু তা কোনো কোনো ফকীহের মতে নাপাক হয়ে যায় তাই এই জায়নামায পবিত্র না করে তাতে আর নামায না পড়াই শ্রেয় হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০৬
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের...

প্রশ্ন
আমি মসজিদে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চড়ূই পাখির বিষ্ঠা আমার শরীরের উপর এসে পড়ে। ফলে পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টিস্যু দিয়ে তা মুছে নামায আদায় করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?
উত্তর
চড়ূই পাখির বিষ্ঠা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই ঐ পাঞ্জাবি নিয়ে নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৬১, ১২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০;
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া
১/১০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০৫
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি।...

প্রশ্ন
আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় আমি সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?
উত্তর
আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ নামাযের উভয় সিজদাই ফরয। এর কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়। বরং এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করবে। অতপর বাকী নামায যথানিয়মে পূর্ণ করবে এবং নামায শেষে সাহু সিজদা করবে। -কিতাবুল আসল ১/২০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩, ২২৬

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে...

প্রশ্ন
দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে তখন কী করণীয়? মনে পড়লে বসে পড়বে কি না? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
ফরয নামাযের শেষ রাকাতে বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ হওয়ামাত্র বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায সম্পন্ন করবে। কিন্তু অতিরিক্ত রাকাতের সিজদা করে ফেললে নামাযটি আর ফরয থাকবে না। তাই দুই রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এমনটি হলে সেক্ষেত্রে নিয়ম হল, ৩য় রাকাতে বৈঠক না করে আরো এক রাকাত পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পুরো চার রাকাতই নফল গণ্য হবে। আর তাকে ফরয নামায পুণরায় পড়ে নিতে
হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২২; ইলাউস সুনান ৭/১৭৪;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা...

প্রশ্ন
ফজরের দুই রাকাত ফরযের পূর্বে সুন্নতের আগে বা পরে কাযা নামায পড়া যাবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
হাঁ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরও ফযরের সুন্নতের আগে বা পরে উভয় সময়ই কাযা নামায আদায় করা জায়েয। -আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২০১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর...

প্রশ্ন
বহুতল ভবনের নিচ তলায় ইমাম মুসল্লিসহ আছেন। আর এর বরাবর উপর তলায়ও মুসল্লি দাঁড়ায়। কিন্তু উভয় তলার মাঝে কোনো ফুটো নেই। শুধু মাইকে আওয়াজ শোনা যায়। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে উপর তলার মুসল্লিদের নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
দোতলা থেকে ইমামের ইকতিদা সহীহ হওয়ার জন্য ছাদে ফুটো থাকা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মাইকে ইমামের আওয়াজ শুনে ইমামের উঠা- বসা ও অবস্থা জানা গেলেও ইকতিদা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামায অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে মাইকের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলেও উপর তলার মুসল্লিগণ যথাযথভাবে যেন ইমামের ইকতিদা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া দরকার। এজন্য ইমাম বরাবর ছাদ কিছুটা ফাঁকা রাখা ভালো। আর তা না থাকলে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উচিত। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০৪০
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিতর নামাযে ভুলে দুআ...

প্রশ্ন
গত রমযানে আমাদের মসজিদের ইমাম
সাহেব
বিতর নামাযে ভুলে দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যান। স্মরণ হওয়ার পর
রুকু
থেকে উঠে দুআ কুনূত পাঠ করেন। তারপর পুনরায় আবার রুকু করেন এবং পরে সাহু সিজদাও দেন। জানার বিষয় হল, আমাদের
এই
নামায সহীহ হয়েছে কি না? এক রাকাতে
দুইবার
রুকু করার কারণে কোনো সমস্যা হয়েছে
কি?
জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিয়ে
নামায
শেষ করার কারণে সকলের নামায সহীহ হয়ে গেছে। উলেখ্য, দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল পুনরায় কুনূতের জন্য না উঠে যথা নিয়মে নামায পড়ে যাওয়া এবং ভুলের জন্য সাহু সিজদা দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে ইমাম যদি
রুকু
থেকে দুআ কুনূতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তবে পুনরায় রুকু করবে না; বরং দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় চলে
যাবে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই উভয় নিয়মের লঙ্ঘন
হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে তা পুনরায় পড়তে হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার
২/৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০৮
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে...

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে না। শুধু চেয়ার বা এ জাতীয় উঁচু স্থানে বসতে পারে। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। জানার বিষয় হল, এমন ব্যক্তি কীভাবে নামায আদায় করবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মাটিতে বসতে না পারলেও যেহেতু সে দাঁড়াতে সক্ষম তাই সে দাঁড়িয়েই নামায শুরু করবে। এরপর সম্ভব হলে দাঁড়ানো থেকেই রুকুতে যাবে। আর সিজদার সময় চেয়ার বা এ জাতীয় কিছুতে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করবে। উল্লেখ্য যে, দাঁড়ানো থেকে রুকু করা অধিক কষ্টকর হলে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রুকুর তুলনায় সিজদায় মাথা কিছুটা বেশি ঝুঁকাতে হবে। অবশ্য বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে দাঁড়ানো থেকে সোজা চেয়ারে বসা যদি অসম্ভব বা অধিক কষ্টকর হয় তাহলে তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়ার সুযোগ আছে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৬২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০৭
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, না তা আবার পড়তে হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির
উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০;
হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০৫
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

জনৈক ব্যক্তি এক নামাযে মাসবূক হল এবং শেষ বৈঠকে ইমামের...

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি এক নামাযে মাসবূক হল এবং শেষ বৈঠকে ইমামের পিছনে ভুলবশত তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেলল। উক্ত ব্যক্তির উপর নামায শেষে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না?
উত্তর
মাসরূক ব্যক্তি ইমামের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেললে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত তাশাহহুদের অতিরিক্ত না পড়াই ভালো। এক্ষেত্রে তাশাহহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। যেন তাশাহহুদ শেষ হতে হতে সালামের সময় হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০২
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-...

প্রশ্ন
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে- ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার
রুজির
বরকত কমে যাবে। গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে। ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে
না।
ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায
পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে
যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ) এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে।
জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো
অন্যকোনোভাবে
প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না?
দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ
গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই।
হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব
নেই। তাই হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার
করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে।
তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন
মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায
ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত
নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত
নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭
অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার
যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১
আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল
ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস :৪৫
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর- নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের
প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত
নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৭০
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি।...

প্রশ্ন
আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি। বর্তমানে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করি না। কোনো কারণবশত অনিচ্ছাকৃত কখনো কোনো ওয়াক্ত কাযা হয়ে গেলে পরবর্তী ওয়াক্তেই তা আদায় করে নেই। একদিন সকালে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে না পারায় ফজরের নামায পড়তে পারিনি। যোহরের নামাযের সময় হলে মসজিদে যাই। মসজিদে পৌঁছে দেখি, যোহরের জামাতের কয়েক রাকাত হয়ে গেছে। তখন ফজরের কাযা নামাযের কথা স্মরণ হয়। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার কী করণীয়। এক্ষেত্রে যদি আগে ফজরের নামায পড়ি তাহলে যোহরের জামাত শেষ হয়ে যাবে। তাই আগে ফজরের কাযা পড়ব, নাকি তখন যোহরের জামাতে শরিক হয়ে যাব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
আপনার যেহেতু পেছনের নামায কাযা নেই তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজর পড়ার কারণে যদি যোহরের জামাত নাও পান তবুও আপনাকে আগে ফজরের কাযা নামায আদায় করতে হবে। এরপর যোহরের জামাত পেলে জামাতে শরিক হবেন। যদি জামাত না পান তাহলে যোহরের নামায একাকী পড়ে নিবেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২/৫-৭; কিতাবুল আসল ১/৩০৪; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১২২

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৯
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার...

প্রশ্ন
আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা। হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। ... (সহীহ বুখারী, হাদীস ১) সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন, হাদীসে নিয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,কোনো কাজের ব্যাপারে মনের দৃঢ় ইচ্ছা। (উমদাতুল কারী ১/২৩) তাই নামাযের নিয়তও মনে মনে করাই যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেননা শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা এটি নিষিদ্ধ নয়। তাই কেউ করলে তা নাজায়েয বা বেদআত হবে
না।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৭-৮
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৮
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

নামাযের বৈঠকে দু’ হাত কীভাবে রাখব? বসা অবস্থায় হাত হাঁটু...

প্রশ্ন
নামাযের বৈঠকে দু’ হাত কীভাবে রাখব? বসা অবস্থায় হাত হাঁটু স্পর্শ করবে নাকি করবে না? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
নামাযের বৈঠকে দুই হাত দুই উরুর উপর কীভাবে রাখবে এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে। যেমন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন তখন ডান হাত ডান উরুর উপর এবং বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন।... -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৮০
(১১৬)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে আরেক
বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন তখন বাম হাত বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৮০ (১১৫) উভয় হাদীসের উপর যেন আমল হয়ে যায় এজন্য উপরোক্ত হাদীসের আলোকে ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, উভয় হাত এমনভাবে উরুর উপর রাখবে যেন হাতের আঙ্গুলগুলো হাঁটুর নিকটবর্তী থাকে। -ইলাউস সুনান ৩/১০৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৭১; আসসিআয়াহ ২/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৮১; শরহুল মুনইয়াহ
৩২৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৭
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

জুমার দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া ও দুআ পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের...

প্রশ্ন
জুমার দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া ও দুআ পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী জুমার দ্বিতীয় আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেওয়া জায়েয। আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাহ. বলেন, আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.- কে মিম্বরের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি, মুয়াযযিন যখন আযানে আল্লাহু আকবার বললেন তখন তিনিও আল্লাহু আকবার বলেছেন ...। এরপর আযান শেষ হলে তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিসে অর্থাৎ যখন মুয়াযযিন আযান দেন- এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি আপনারা আমাকে বলতে শুনলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯১৪ অন্য বর্ণনায় সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না আর ইমাম খুতবা শুরু করলে কথা বলা যাবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৩৪২ আর খুতবার সময় যেহেতু চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ওয়াজিব তাই আযানের পরপরই ইমাম খুতবা শুরু করে দিলে আযানের দুআ পড়া যাবে না। কিন্তু যদি ইমাম খুতবার জন্য দাঁড়াতে বিলম্ব করেন তবে এ সময় আযানের দুআও পড়া যাবে। -ফাতহুল বারী ২/৪৬০; ইলাউস সুনান ২/৮০; আসসিআয়াহ ২/৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮২; আততাজরীদ ২/৪৭৭; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২০০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৬
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে...

প্রশ্ন
আমাদের মসজিদে এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে কোনোভাবেই মাটিতে বসতে পারে না। শুধু চেয়ার বা এ জাতীয় উঁচু স্থানে বসতে পারে। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। জানার বিষয় হল, এমন ব্যক্তি কীভাবে নামায আদায় করবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মাটিতে বসতে না পারলেও যেহেতু সে দাঁড়াতে সক্ষম তাই সে দাঁড়িয়েই নামায শুরু করবে। এরপর সম্ভব হলে দাঁড়ানো থেকেই রুকুতে যাবে। আর সিজদার সময় চেয়ার বা এ জাতীয় কিছুতে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করবে। উল্লেখ্য যে, দাঁড়ানো থেকে রুকু করা অধিক কষ্টকর হলে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে
রুকু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রুকুর তুলনায়
সিজদায় মাথা কিছুটা বেশি ঝুঁকাতে হবে। অবশ্য বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে দাঁড়ানো থেকে সোজা চেয়ারে বসা যদি অসম্ভব বা অধিক কষ্টকর হয় তাহলে তার জন্য শুরু থেকেই চেয়ারে বসে নামায পড়ার সুযোগ আছে। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৬২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৪৫
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন কোনো এক মসজিদে জুমার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব যখন...

প্রশ্ন
একদিন কোনো এক মসজিদে জুমার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব যখন খুতবা পড়ছিলেন তখন এক লোক পেছনের কাতার থেকে মানুষদেরকে ডিঙিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকে। ইমাম সাহেব তা দেখে খুতবা পড়া বন্ধ করে তাকে সামনের দিকে আসতে বারণ করেন এবং যেখানে আছে সেখানেই থেমে যেতে
বলেন।
আমি জানি, খুতবার মাঝে কোনো কথা বলা নিষেধ। তাই আমার প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেবের উক্ত কাজটি ঠিক হয়েছে কি?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খতীব সাহেবের জন্য ঐ ব্যক্তিকে নিষেধ করা অন্যায় হয়নি; বরং তা শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ থেকে খুতবা প্রদানকালে প্রয়োজনে সৎ কাজের আদেশমূলক কোনো কথা বলা বা অন্যায় কাজ দেখলে খুতবার মাঝেই নিষেধ করা প্রমাণিত আছে।
অবশ্য খতীব ছাড়া কোনো মুসল্লির জন্য খুতবা
অবস্থায় এ ধরনের কথা বলাও নিষেধ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১১১; নাইলুল আওতার ৩/২৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৭৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮২১
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময়...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় মশা খুব বেশি। ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় গেঞ্জিতে মশার রক্ত দেখা যায়। এমন হলে আমি সাধারণত গেঞ্জি পরিবর্তন করে নামায পড়তে যাই। কয়েকদিন আগেও মশার রক্তের কারণে
গেঞ্জি পরিবর্তন করার সময় এক সাথী আমাকে
বলল যে, মশার রক্ত নাকি নাপাক নয়। তার এ কথা কি সঠিক?
উত্তর
হাঁ, আপনার সাথী ঠিকই বলেছে। মশার রক্ত নাপাক নয়। তাই ঐ কাপড় পরে নামায পড়া যাবে। হাসান বসরী, আতা, আবু জাফর, উরওয়া প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকে বর্ণিত আছে যে, কাপড়ে মাছি- মশার রক্ত লাগলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে গেঞ্জি পরিবর্তন করে নেওয়া বা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যে ভালো তা তো স্পষ্ট।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৩১, ২০৩২, ২০৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১৯
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। ভুলে দ্বিতীয়...

প্রশ্ন
আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত
সুন্নত পড়ছিলাম। ভুলে দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকের পর সালাম ফিরিয়ে
ফেলি। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? আমাকে কি বাকি দু’রাকাত কাযা করতে হবে?
উত্তর
ভুলে সালাম ফিরিয়ে দিলে নামায ভঙ্গ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে সাহু সিজদা
করত চার রাকাত পূর্ণ করে নিতে পারতেন। কিন্তু আপনি যেহেতু তা পূর্ণ করেননি তাই যে দু’রাকাত পড়া হয়েছে তা আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বাকি দুই রাকাত কাযা
পড়তে হবে না। অবশ্য যোহরের পূর্বে চার
রাকাত সুন্নত যেহেতু আদায় হয়নি তাই জামাতের আগে সময় থাকলে তা পড়ে নিতে
হবে। আর জামাতের আগে সময় না থাকলে জামাত শেষে দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের পর পূর্বের চার রাকাত পড়ে নিবে।
-কিতাবুল আছল ১/১৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭-৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩২, ২/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯০; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১৮
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি জানি যে, হানাফী মাযহাবে ফজরের নামায ফর্সা হওয়ার পর...

প্রশ্ন
আমি জানি যে, হানাফী মাযহাবে ফজরের নামায ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা উত্তম। তাই আমাদের মসজিদেও দেরি করে ফজরের নামায শুরু হয়ে থাকে। কখনও কখনও সালাম ফেরানোর পর দেখি, সূর্য উদয়ের সময় একেবারেই নিকটবর্তী।
এত বিলম্ব করে পড়া কি ঠিক? কতটুকু আগে জামাত শুরু করা উচিত। এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা
প্রদান করলে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
সুবহে সাদিকের পর যখন অন্ধকার দূর হয়ে চারদিক ফর্সা হয় তখন ফজরের জামাত আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে আদায় কর। কেননা তা অধিক সওয়াবের কাজ। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫৪
সুতরাং ফজরের জামাত ফর্সা হওয়ার পরই শুরু করা উত্তম। তবে এতটা বিলম্বে শুরু করবে না যে
জামাত শেষ করতেই সূর্যোদয় নিকটবর্তী হয়ে
যায়। বরং এমন সময় শুরু করবে যেন কোনো
কারণবশত যদি নামায নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সুন্নত-কেরাতসহ আবার স্বাভাবিকভাবে নামায
আদায় করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের
অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে জামাত শুরু করা উচিত। এর বেশি বিলম্ব করা ঠিক নয়।
-কিতাবুল আছল ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮; ফাতহুল কাদীর ১/১৯৯; শরহুল মুনইয়াহ
২৩২
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১৭
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার
স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের
কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে,
না তা আবার পড়তে হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না
করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। -ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১৪
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

রমযানে বিতরের জামাতে কেউ মাসবুক হলে কী করণীয়? বিস্তারিত জানালে...

প্রশ্ন
রমযানে বিতরের জামাতে কেউ মাসবুক হলে কী করণীয়? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
কোনো ব্যক্তি যদি বিতর নামাযের দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে শরিক হয় তাহলে ইমামের সাথেই দুআ কুনূত পড়ে নিবে। এরপর ছুটে যাওয়া নামায স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করবে। অর্থাৎ অন্য নামাযে মাসবুক হলে
যেভাবে আদায় করতে হয় সেভাবেই আদায়
করবে। আর যদি তৃতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তাহলে ঐ রাকাতের দুআ কুনূত পেয়েছে বলে
ধর্তব্য হবে। তাই এক্ষেত্রেও পরবর্তীতে আর দুআ কুনূত পড়বে না। আর যদি শেষ রাকাতের রুকু না পায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সাধারণ
নিয়মে তিন রাকাত পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত পড়বে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনইয়া ৪২১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫৫৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

বেশ কিছুদিন আগে একদিন আসরের নামাযে আমি ও আমার আববু...

প্রশ্ন
বেশ কিছুদিন আগে একদিন আসরের নামাযে আমি ও আমার আববু একসাথে মাসবুক হই। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর বাকি নামায পড়তে যখন দাঁড়ালাম তখন নামায কত রাকাত পেয়েছি, কত রাকাত পড়তে হবে তা আমি ভুলে যাই। আববু আর আমি যেহেতু একই সাথে মাসবুক হয়েছি তাই তখন আববুকে দেখে দেখে বাকি নামায পূর্ণ করলাম। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?
উত্তর
জী, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে। কেননা ছুটে যাওয়া রাকাত সংখ্যা মনে না থাকলে পাশেরজনের প্রতি লক্ষ্য করে নিজের নামায স্মরণ করা এবং সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করা জায়েয আছে। এভাবে নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যায়। তাই আপনার নামাযও আদায় হয়ে গেছে। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫২৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরের নামাযের ১ম রাকাতে উচ্চস্বরে...

প্রশ্ন
একদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরের নামাযের ১ম রাকাতে উচ্চস্বরে সূরা ফাতেহার ১ম আয়াত তেলাওয়াত করেন। তারপর নিম্নস্বরেই অবশিষ্ট কেরাত পাঠ করেন। সর্বশেষে তিনি সাহু সিজদা না দিয়েই নামায শেষ করেন। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি তারা পরস্পরে ঝগড়া বিবাদেও লিপ্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক বেশি চিন্তিত। মেহেরবানী করে সমাধান জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। ইমাম সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। কেননা নিম্নস্বরে কেরাত বিশিষ্ট নামাযে সূরা ফাতিহার এক-দুই আয়াত উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনী বিষয়ে সংশয় বা মতানৈক্য দেখা দিলে বিজ্ঞ আলেম বা মুফতীর শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৫১; রদ্দুল মুহতার ২/৮২; ইলাউস সুনান ৭/১৯১;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫২৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

হুজুরের কাছে একটি মাসআলা জানতে চাই, অনেক সময় আমি নামাযে...

প্রশ্ন
হুজুরের কাছে একটি মাসআলা জানতে চাই, অনেক সময় আমি নামাযে মাসবুক হই, ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর আগমুহূর্তে গিয়ে জামাতে শরীক হই তখন আমি তাশাহহুদ শেষ না করে উঠে যাই। জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমার জন্য কী করা উচিত? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াবো নাকি তাশাহহুদ শেষ না করে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাবো?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দিলেও আপনি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবেন। অবশ্য তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়ালেও নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়। -রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬; তাতারখানিয়া ২/১৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

প্রশ্ন : আমি প্রতিদিন বাদ আসর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করি।...

প্রশ্ন
প্রশ্ন : আমি প্রতিদিন বাদ আসর কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করি। জানার বিষয় হল, এ সময়ে সিজদার কোনো আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে কি? শুনেছি, আসরের পর কোনো নফল নামায পড়া নিষেধ তাহলে সিজদা করাও কি নিষিদ্ধ হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
হাঁ, আসরের পর সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে এবং সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিলাওয়াতে সিজদাও আদায় করা যাবে। কিন্তু সূর্য হলুদ হয়ে গেলে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিজদা তিলাওয়াত আদায় করা যাবে না। -শরহুল মুনয়া পৃ. ২৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৩-৩৭৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বোন একদিন চাশতের নামায পড়ছিল। আমি তা খেয়াল না...

প্রশ্ন
আমার বোন একদিন চাশতের নামায পড়ছিল। আমি
তা খেয়াল না করেই ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার
জামাটা কোথায়? পরে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে
নামায পড়ছে। কিন্তু নামাযের ভিতরেই সে হাতের
ইশারায় আমাকে বুঝাল, জামা ওয়্যারড্রবে আছে।
তাই জানার বিষয় হল, এ কারণে কি তার নামায ভেঙ্গে গিয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হাত দ্বারা ইশারা করার
কারণে আপনার বোনের নামায ভাঙ্গেনি। তবে
কাজটি মাকরূহ হয়েছে। নামাযের মধ্যে হাত দ্বারা
ইশারা করা মাকরূহ। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া
এমনটি করবে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৫৮৮;
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক
১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৮-৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০৭
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি এশার দুরাকাত সুন্নতের পর সাধারণত দু’চার রাকাত নফল পড়ে...

প্রশ্ন
আমি এশার দুরাকাত সুন্নতের পর সাধারণত দু’চার রাকাত নফল পড়ে তারপর বিতর পড়ি। মাঝে মাঝে আবার সুন্নতের পরই বিতর পড়ে ফেলি। তো কখনো এমন হয় যে, সুন্নত পড়ে আবার নামাযে দাঁড়িয়েছি কিন্তু নফল পড়ব না বিতর পড়ব কোনোটাই মনে স্থির করিনি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? আমি কি নফল বা বিতর যে কোনো একটি স্থির করে সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করতে পারব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার আগে যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে বিতরের নিয়ত করা হয়নি তাই তা নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর বিতরের নিয়ত করলেও তা ধর্তব্য হবে না। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮২; রদ্দুল মুহতার ১/৪১৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার...

প্রশ্ন
আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি উচ্চস্বরে নামাযের নিয়ত করার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা। হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। ... (সহীহ বুখারী, হাদীস ১) সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন, হাদীসে নিয়ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,কোনো কাজের ব্যাপারে মনের দৃঢ় ইচ্ছা। (উমদাতুল কারী ১/২৩) তাই নামাযের নিয়তও মনে মনে করাই যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেননা শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা এটি নিষিদ্ধ নয়। তাই কেউ করলে তা নাজায়েয বা বেদআত হবে
না।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ১২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৭-৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৫০১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৫
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার ছোট ভাই মাদরাসায় পড়ে। একদিন ও একাকী বাসায় মাগরিবের...

প্রশ্ন
আমার ছোট ভাই মাদরাসায় পড়ে। একদিন ও একাকী বাসায় মাগরিবের নামায পড়ছিল। তাকে দেখে আমিও তার সাথে নামাযে শরিক হই। কিন্তু আমি নামাযে দাঁড়ানোর পরও সে আগের মতোই আস্তে আস্তে সূরা কিরাত পাঠ করে নামায শেষ করে। সালাম ফেরানোর পর তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমি তো তোমার ইমামতির নিয়ত করিনি। হুযুরের কাছে জানতে চাই, সে যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই ঐ দিনের মাগরিবের নামায কি আদায় হয়েছে?
উত্তর
মুক্তাদির নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের
ইমামতির নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তাই সে ইমামতির নিয়ত না করলেও আপনার নামায
সহীহ হয়েছে। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার
ছোট ভাই যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই তার উপর মাগরিবের নামাযে কেরাত
জোরে পড়া ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে
আপনার ছোট ভাইয়ের নিম্নস্বরে কেরাত পড়াটা ভুল হয়নি এবং এ কারণে ইমাম মুক্তাদী কারো নামাযে ত্রম্নটিও হয়নি। অবশ্য সে যদি আপনার ইক্তিদাকে লক্ষ্য করে ইমামতির নিয়ত করত তবে তখন জোরে কিরাত পড়া আবশ্যক হত। -শরহুল মুনইয়া ২৫১, ৬১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া
১/১৬৭

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৫১
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত প্রথম সিজদা করার পর...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত প্রথম সিজদা করার পর মাত্র ছয় ইঞ্চি উপরে মাথা তুলে দ্বিতীয় সিজদা করত। এখন সে বৃদ্ধ। জানতে চাই, তার এত বছরের আদায়কৃত নামাযের হুকুম কী? আর এখন তার করণীয় কী?
উত্তর
দুই সিজদার মাঝে সোজা স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে যথেষ্ট তাকীদ এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ল। অতপর এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, ফিরে যাও। আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। সে পুনরায় নামায পড়ার পর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। (তিনবার এরূপ হল)। সে বলল, যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার শপথ, আমি এর চেয়ে উত্তম তরীকায় নামায পড়তে জানি না। তাই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে, অতপর কুরআনের যতটুকু তিলাওয়াত করা তোমার জন্য সম্ভব ততটুকু তিলাওয়াত কর। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু কর। অতপর সোজা স্থির হয়ে দাঁড়াও। অতপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, এরপর ধীরস্থির হয়ে বস, তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, তোমার পুরো নামায এভাবেই আদায় কর।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৯৩ উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম দুই সিজদার মাঝে স্থির হয়ে বসাকে ওয়াজিব বলেছেন। এ ওয়াজিব তরক করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদার জন্য ছয় ইঞ্চি পরিমাণ উঠার দ্বারা তার দ্বিতীয় সিজদার ফরয আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু সোজা হয়ে ধীরস্থিরভাবে বসার ওয়াজিব তরক করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে। এখন তার কর্তব্য হচ্ছে, বিগত সময়ের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করা এবং এখন থেকে পরিপূর্ণ তরীকা মতো নামায আদায় করা। -আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৮৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৩; আলইখতিয়ার লিতালীলিল মুখতার ১/১৭৯; শরহুল মুনইয়াহ ৩২২-৩২৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৪৯
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি যখন নামাযে মাসবুক হই তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম...

প্রশ্ন
আমি যখন নামাযে মাসবুক হই তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শুরু করলেই বাকি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। আর অনেককে দেখি, ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শেষ করলে তারপর দাঁড়ায়। প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেব প্রথম সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় সালাম শুরু করার আগে যদি দাঁড়িয়ে যাই তাহলে আমার নামায হবে কি?
উত্তর
হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও আপনার নামায হয়ে যাবে। তবে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর পরই দাঁড়ানো উত্তম। কেননা ইমাম সাহু সিজদা দিবেন না-এ কথা নিশ্চিত হওয়ার পর মাসবুকের জন্য দাঁড়ানো ভালো। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২২৫-২২৬; মারাকিল ফালাহ ২৫২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৮
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৪৭
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পিছনে না...

প্রশ্ন
যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পিছনে না পায় তাহলে অনেককে দেখা যায়, সালাম ফিরানোর পর এক রাকাত পড়ে বৈঠক করে। আবার অনেকে দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে এবং পরবর্তীতে বাকি নামায যথানিয়মে আদায় করে। এভাবে উভয় সুরতে নামায আদায়ের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া নামাযের মধ্যে প্রথম রাকাত পড়ে বৈঠক করাই সহীহ। দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করার ব্যপারে একটি মত থাকলেও প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অবশ্য এক্ষেত্রে কেউ যদি দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে তাহলে দ্বিতীয় মত অনুসারে তার নামায আদায় হয়ে যাবে এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯০; রদ্দুল মুহতার
১/৫৯৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩২৯
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা...

প্রশ্ন
শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় দুআ আছে। কিন্তু কোনো বইতে এই দুআগুলো পাইনি। তাই দয়া করে দুআগুলো জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম যখন ﺳَﻤِﻊَ ‎ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বলবে তখন মুক্তাদীর
জন্য ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ বলা উত্তম। অতপর
সম্ভব হলে-
‎ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ ﻓِﻴْﻪِ দুআটিও
পড়া উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বলবে তোমরা তখন ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ বল। অন্য এক হাদীসে আছে, রিফাআ ইবনে রাফে রা. বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে যখন ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ‎ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বললেন তখন পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল
‎ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ
‎ﻓِﻴْﻪِ নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযে ঐ বাক্য কে বলেছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম ত্রিশের অধিক ফেরেশতা উক্ত দুআর ছাওয়াব নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, কে আগে তার ছাওয়াব লিখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৯ আর দুই সিজদার মাঝে রাবিবগ
ফিরলী এবং ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ
‎ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ পড়া উত্তম। সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে ‘রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী’ দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।- সুনানে নাসায়ী ১/২৯ আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন-
‎ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ
‎ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০ ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম- মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম। আর নফল ও তাহাজ্জুদে উপরোক্ত দুআ ছাড়াও আরো কিছু দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। যেমন-রুকু থেকে উঠে নিম্নোক্ত দুআগুলো পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন-
‎ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ، ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ
‎ﻭﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ
‎ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺑَﻌْﺪُ অন্য বর্ণনায় এ দুআটি পড়ার কথাও
এসেছে-
‎ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ
‎ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ
‎ﺑَﻌْﺪُ ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻃَﻬِّﺮْﻧِﻲ ﺑِﺎﻟﺜَّﻠْﺞِ ﻭَﺍﻟْﺒَﺮَﺩِ،
‎ﻭَﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﺩِ ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻃَﻬِّﺮْﻧِﻲ ﻣِﻦَ
‎ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ ﻭَﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ، ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻨَﻘَّﻰ ﺍﻟﺜَّﻮْﺏُ
‎ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺳَﺦِ -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৬ আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এ দুআটিও এসেছে- ‎ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ‎ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ
‎ﺑَﻌْﺪُ، ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺠْﺪِ، ﺃَﺣَﻖُّ ﻣَﺎ ﻗَﺎﻝَ
‎ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ، ﻭَﻛُﻠُّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﻋَﺒْﺪٌ: ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻟَﺎ ﻣَﺎﻧِﻊَ ﻟِﻤَﺎ
‎ﺃَﻋْﻄَﻴْﺖَ، ﻭَﻟَﺎ ﻣُﻌْﻄِﻲَ ﻟِﻤَﺎ ﻣَﻨَﻌْﺖَ، ﻭَﻟَﺎ
‎ﻳَﻨْﻔَﻊُ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﺪِّ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﺠَﺪُّ -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৭ ফকীহগণের ভাষ্যমতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দীর্ঘ দীর্ঘ দুআগুলো সাধারণত তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পড়তেন। তাই এ দুআগুলো বিশেষভাবে নফল নামাযে পড়া উত্তম। প্রকাশ থাকে যে, এসব দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ ইমাম জাযারী রাহ. কৃত কিতাবটি পড়া যেতে পারে। এটি দুআর একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩১৪
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-...

প্রশ্ন
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে- ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে। গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে। ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না। ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ) এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই
হাদীস
হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে। তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭ অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১ আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫ সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর- নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩০৬
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে-...

প্রশ্ন
মসজিদের দেয়ালে অনেক সময় নিচের বাক্যগুলো হাদীস হিসেবে লেখা থাকে- ক) যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। খ) যে ব্যক্তি যোহরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার রুজির বরকত কমে যাবে। গ) যে ব্যক্তি আসরের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার শরীরের শক্তি কমে যাবে। ঘ) যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার সন্তানাদি তার উপকারে আসবে না। ঙ) যে ব্যক্তি ইশার নামায পড়বে না বা ছেড়ে দিবে তার নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে। (বাবুস সালাত, মেশকাত আলমাসাবীহ) এ ধরনের উদ্ধৃতিসহ বা উদ্ধৃতি ছাড়াও দেয়ালে লেখা হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, বাক্যগুলো হাদীস কি না? হাদীস হলে এর মান কী? হাদীস না হলে কথাগুলো অন্যকোনোভাবে প্রমাণিত কি না? বা এর অর্থ ও বিষয়বস্তু সঠিক কি না, আর তা বর্ণনাযোগ্য কী না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাগুলো হাদীস নয়, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হলেও বাসত্মবে তাতে এ বর্ণনাটি নেই। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো গ্রন্থেও এর অসিত্মত্ব নেই। তাই
হাদীস
হিসেবে এটি বর্ণনা করা বা প্রচার করা জায়েয নয়। ভিত্তিহীন ঐ কথাগুলো হাদীস হিসেবে প্রচার করলে গুনাহ হবে। তবে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করা কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে ভয়াবহ ধমকি এসেছে। একটি হাদীসে ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করাকে কুফরতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করল সে কুফরি করল।- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০০৭ অপর একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দিল তার থেকে আল্লাহতাআলার যিম্মা উঠে গেল।-সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস : ৩০১ আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৫ সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নর- নারীকে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযও যেন ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩০৩
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা...

প্রশ্ন
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে কি?
উত্তর
তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। তাই তাশরীকের দিনগুলোর কাযা নামায এই সময়ের পরে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। তবে এ সময়ের ছুটে যাওয়া নামায যদি এ দিনগুলোতেই কাযা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। আর অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাশরীকের দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে না। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩০২
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের...

প্রশ্ন
অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে দেখি যোহরের নামাযের জামাতের সময় হয়ে গেছে বা জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায় যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়া হয় না। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে কি ঐ সুন্নত পড়ে নেওয়া যাবে? পড়া গেলে যোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নতের আগে পড়ব নাকি পরে?
উত্তর
জ্বী। যোহরের পূর্বের সুন্নত ছুটে গেলে তা ফরয-পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করে নিবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যোহরের পূর্বের চার রাকাত (কখনো) ছুটে গেলে তিনি তা যোহরের (ফরয) পরবর্তী দুই রাকাতের পর আদায় করতেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯; মাআরিফুস সুনান ৪/১০৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩০১
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি একাকী যোহর নামায পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহার স্থানে ভুলে তাশাহহুদ পড়া শুরু করে দেয়। তাশাহহুদ পড়া শেষ হওয়ার পর তার এ ভুলের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্র সূরা ফাতেহা পড়া শুরু করে। কিন্তু নামায শেষে সে সাহু সিজদা করেনি। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামায কি সহীহ হয়েছে, না তা আবার পড়তে হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা না করার কারণে এ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। -ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৭১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা...

প্রশ্ন
অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা সিজদায় চলে যায়। আবার বসা থেকে উঠার সময়ও ইমামের আগে আগেই দাঁড়িয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এরকম করাটা কি ঠিক আছে? এতে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হবে?
উত্তর
নামাযের প্রত্যেক রুকনেই মুকতাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। ইমামের আগে মুকতাদির রুকু বা সিজদায় চলে যাওয়া কিংবা ইমামের আগেই মুকতাদির
দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমরা রুকু করবে, যখন ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে।- সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪১২
সহীহ বুখারীতে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মাঝে যে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে সি কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মতো অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দিবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৭০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো...

প্রশ্ন
আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো মহিলা যদি এতটা পাতলা উড়না পরে নামায পড়ে যে, উড়না পরার পরও মাথার চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে কি তার নামায হবে?
উত্তর
নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা ফরয। তাই উড়না এমন মোটা হতে হবে যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না। উড়না যদি এত পাতলা হয়, যা পরার পরও চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে তা মাথায় দিয়ে নামায সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৪-৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫২-২৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৬৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

অনেক সময় নামাযের রাকাত নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। চেষ্টা করেও...

প্রশ্ন
অনেক সময় নামাযের রাকাত নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। চেষ্টা করেও স্মরণ করতে পারি না কত রাকাত পড়েছি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর
নামাযের রাকাত- সংখ্যা নিয়ে সংশয়ে পড়লে করণীয় হল, যে সংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হবে সেটাকে ধরে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দেওয়া লাগবে না। পক্ষান্তরে রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে যদি কোনো ধারণাই প্রবল না হয় তাহলে সম্ভাব্য সংখ্যার মাঝে কম সংখ্যাটি ধরবে। অতপর ঐ হিসাবে অবশিষ্ট নাময পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের শেষে বৈঠক করে তাশাহহুদ
পড়বে এবং শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা দিয়ে নামায
শেষ করবে। উল্লেখ্য যে, নামাযের মধ্যে এ ধরনের সংশয় মনোযোগের অভাবে হয়ে থাকে। তাই খুশু-খুযুর
সাথে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
এজন্য কোনো আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গের সোহবতে যাওয়া ও তার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। -কিতাবুল আছল ১/২২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৩



প্রশ্নঃ- ঝাড়ফুক, তাবিজ, কবজের শরঈ বিধান কি? ¤ঝাড়ফুক, তাবিজ, কবজ দিয়ে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয আছে? উত্তরঃ- ঝাড়ফুক তাবিজ কবজ চার শর্তে জায়েয আছে; (১) কুফুরী কালাম না হওয়া। (২) লেখাগুলো অস্পষ্ট না হওয়া। (৩) কোন নাজায়েয কাজের জন্য না হওয়া। (৪) এমন আক্বীদা না থাকা যে, তাবিজের মধ্যে ই ভালো করার ক্ষমতা রয়েছে। কারন ভালো করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। ¤উল্যেখিত শর্ত অনুযায়ী ঝাড়ফুক, তাবিজ, কবজ দিয়ে বিনিময় নেওয়া জায়েয আছে। দলিলঃ- মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৫৬৭, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা- হাদিস নং ২৪০১৩, ফতোয়ায়ে শামী - ৬/৩৬৩. (সাইদ)

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৫২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

এক ব্যক্তি মসজিদে ২ কাতার ফাকা রেখে ইমামের ইক্তেদা করেছে...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি মসজিদে ২ কাতার ফাকা রেখে ইমামের ইক্তেদা করেছে তার নামাজ হয়েছে কি?
উত্তর
হ্যাঁ। তার নামাজ হয়ে গেছে। তবে মাকরুহ হয়েছে। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে মাঝে কোন মহিলা থাকলে নামাজ হবেনা।
সুত্রঃ বাদায়ে-১/৩৬২, শামি-২/৩৩১-৩২, আলমগিরি-১/৮৭, বাহর-১/৬৩৫, রহিমিয়া-৪/২০৫।

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৪৫
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি মাগরিবের নামাজ জামাতের সহিত এক রাকাত পেয়েছি আর দুই...

প্রশ্ন
আমি মাগরিবের নামাজ জামাতের সহিত এক রাকাত পেয়েছি আর দুই রাকাতের মাসবুক হয়েছি। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর বাকি দুই রাকাতের মাঝে না বসে নামাজ শেষ করে ফেলেছি, সাহু সাজদাও দেয় নাই। মুফতি সাহেবের নিকট জানতে চাই, আমার নামাজ কি হয়েছে? নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে ??
উত্তর
হ্যা, আপনার নামাজ হয়ে গেছে। তবে উচিত ছিল দুই রাকাতের মাঝে বসে তাশাহুদ পড়ে নেয়া। এই ভুলে কারনে সাহু সাজদা আবশ্যক হয় না।
দলিলঃ-
ফতোয়ায়ে শামী ২/২০৩. বাহরুর রায়েক ১/২১৭ ফতহুল কাদির ১/৪০১.

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৪৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

মাসবুক ব্যাক্তি ইমামের সাথে যদি শুধু ডান দিকে ভুলে সালাম...

প্রশ্ন
মাসবুক ব্যাক্তি ইমামের সাথে যদি শুধু ডান দিকে ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে কি সেজদায়ে সাহু দিতে হবে?
উত্তর
যদি ইমামের সালামের সাথে সাথেই বা আগে মাসবুক ব্যাক্তি ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে সাহু সাজদা দিতে হবে না। যদি পরে ফিরায় তাহলে সাহু সাজদা দিতে হবে। আর সাধারনত এমনি হয়ে থাকে।
কিন্তু যদি ইচ্চাকৃতভাবে সালাম ফিরায় তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
দলিলঃ-
ফতোয়ায়ে শামী ২/৫৪২. বাহরুর রায়েক ২/৭৬. আলমগিরী ১/৯১.

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৩৭
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার...

প্রশ্ন
আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার কারণে পেন্ডেলে জায়গা পাইনি। তাই রাস্তায় নামায পড়ি। রাস্তা গরম হওয়ার কারণে সিজদা পাগড়ির পেঁচের উপর করেছি। আবার পাশের এক মুসল্লিকে দেখেছি যে, সে গরমের কারণে কপাল মাটিতে লাগায়নি; বরং মাথার উপরই সিজদা করেছে। এ কারণে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?
উত্তর
প্রচন্ড রোদের কারণে উত্তপ্ত জমিনে সিজদা করতে কষ্ট হলে পাগড়ি বা টুপির একাংশ কপালের উপর টেনে নিয়ে তার উপর সিজদা করা যাবে। এতে নামায মাকরূহ হবে না। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রচন্ড শীত বা গরমে সরাসরি মাটিতে সিজদা করতে কষ্ট হওয়ার কারণে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করা প্রমাণিত আছে। (দেখুন : সহীহ বুখারী ১/৫৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৪০০ তবে ঐ ধরনের বিশেষ ওজর ছাড়া পাগড়ি বা টুপির কোনো অংশের উপর সিজদা করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করতে দেখে তার কপালের দিকে ইশারা করে বলেন, তোমার পাগড়ি আরো উঠাও। - মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, তিনি পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন।- আলআওসাত ৩/৩৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০ আর কেউ যদি সিজদাতে জমিনে শুধু মাথা রাখে অর্থাৎ চুলের অংশ জমিনে রাখে কপালের কোনো অংশই জমিনে না লাগে তবে তার সিজদা আদায় হবে না। তাই তার নামাযও হবে না। কারণ সিজদার অঙ্গ কপাল, মাথা নয়। -আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫-২৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার
১/৫০০

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৩৫
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয়...

প্রশ্ন
আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাই। তখন আমি সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষ হওয়ার পরও ফজরের অনেক সময় বাকি ছিল। তাই আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, এখন সুন্নত পড়া মাকরূহ। সূর্যোদয়ের পর পড়ে নিও। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথাটি কি সঠিক?
উত্তর
হাঁ, ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮২৫ তাই ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে সূর্যোদয়ের আগে পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য হেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করে নিবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়।- জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১০৫৩ নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. (ফজরের সময়) মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন জামাত শুরু হয়ে গেছে। তিনি ফজরের সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে গেলেন। নামায শেষে তিনি মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অতপর সূর্যোদয় হয়ে গেলে তিনি দুই রাকাত সুন্নত কাযা করে নেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৭; মাআরিফুস সুনান ৪/৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৩০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর...

প্রশ্ন
আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। সাথে মাহরাম পুরুষও এসে পড়েন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব
হবে?
উত্তর
ভিড়ের
ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। প্রকাশ
থাকে যে,
অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা। -যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০২৭
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

একদিন যোহরের নামাযের প্রথম বৈঠকে আমি ইমামের সাথে শরিক হই।...

প্রশ্ন
একদিন যোহরের নামাযের প্রথম বৈঠকে আমি ইমামের সাথে শরিক হই। এরপর আমি তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু আমি তার সাথে না দাঁড়িয়ে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াই। এ কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? মূলত এক্ষেত্রে নিয়ম কী? ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া না তাশাহহুদ পূর্ণ করে তারপর দাঁড়ানো? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়ানোই ঠিক হয়েছে। কারণ তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুক্তাদী সকলের উপরই পৃথক পৃথক ওয়াজিব। তাই মুক্তাদির তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেও মুক্তাদী তাশাহহুদ পূর্ণ করেই দাঁড়াবে। -রদ্দুল মুহতার ২/১২, ৪৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৬;

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০২১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: আজান-নামাজ

আমার বয়স বিশ বছর। বালেগ হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক...

প্রশ্ন
আমার বয়স বিশ বছর। বালেগ হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়েছি। অধিকাংশ সময়ই পড়া হয়নি। এজন্য আমি অনুতপ্ত। এখন আমি ছুটে যাওয়া নামাযগুলো আদায় করতে চাই। তাই জানার বিষয় হল, অনাদায়ী নামাযগুলো আমি কীভাবে আদায় করব? ফজরের সময় ফজরের কাযা, যোহরের সময় যোহরের কাযা এভাবে আদায় করব, নাকি যোহরের সময় ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, ইশার নামাযও কাযা করতে পারব? আর ঐ কাযা নামাযগুলোর নিয়ত কীভাবে করব? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
কাযা নামায আদায়ের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। নিষিদ্ধ তিন ওয়াক্ত (সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়) ব্যতিত অন্য যে কোনো সময়ই যে কোনো কাযা নামায আদায় করা যায়।
তাই আপনি এক নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে অন্য যে কোনো ওয়াক্তের
কাযা নামায আদায় করতে পারবেন। যেমন ফজরের ওয়াক্তে যোহরেরও
কাযা আদায় করতে পারবেন। আর কাযা নামায আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন যে,আমার জীবনের অনাদায়ী প্রথম যোহর নামায আদায় করছি।অথবা এভাবে নিয়ত করবেন যে, ছুটে যাওয়া বা অনাদায়ী সর্বশেষ যোহর নামায আদায় করছি। -আলবাহরুর রায়েক ২/৮০;

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন