বিড়াল পালা কি জায়েয? অনেকের ঘরেই দেখা যায় বিড়াল থাকে। কেউ তা ইচ্ছা করেই পালে। এটা কি বৈধ? আর কুকুর পালার কী হুকুম? কোনো প্রয়োজনে বা প্রয়োজন ছাড়া এমনিতেই কুকুর পালা কি জায়েয? বিস্তারিত জানতে চাই।
বিড়াল পালা জায়েয। হাদীস শরীফে আছে, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلاَ سَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ.
জনৈক মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেওয়া হয়। সে বিড়ালটিকে বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটিকে বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে (নিজে) জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৮২
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, কুরতুবি রাহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেধে রাখা জায়েয বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খানা-পিনা দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। -ফাতহুল বারি ৬/৪১২
এ ছাড়া আরো কিছু হাদীস রয়েছে যা থেকে বিড়াল পালা জায়েয প্রমাণিত হয়।
আর শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া কুকুর পালা মারাত্মক গুনাহের কাজ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاَ تَدْخُلُ المَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيرُ.
‘যে ঘরে কুকুর বা (প্রাণির) ছবি রয়েছে তাতে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না’। -সহীহ বুখারী,হাদীস ৫৯৪৯
আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু বা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর পালে তার প্রতিদিন দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৭৫
আর এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, ঘর-বাড়ি পাহারার প্রয়োজনেও কুকুর রাখা জায়েয।
এ সব প্রয়োজন ছাড়া কুকুর পালা জায়েয নয়। বিশেষত বর্তমানে বিজাতীয় ফ্যাশনের অনুকরণে কুকুর পালার যে রেওয়াজ হয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম।
-আলইসতিযকার ১/২০৩; ফয়যুল কাদীর ৩/৫২২; উমদাতুল কারী ১৫/১৯৮; শরহে মুসলিম, নববী ৩/১৮৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ২/৪৫৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ৫/২২৭
মহিলাদের জন্য নকল চুল ব্যবহারের হুকুম কী? শুনেছি তাদের জন্য নাকি কোনো ধরনের নকল চুল ব্যবহার করা জায়েয নয়। এ কথা কি ঠিক?
মহিলাদের জন্য কোনো মানুষের চুল পরচুলা হিসাবে ব্যবহার করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الوَاصِلَةَ وَالمُسْتَوْصِلَةَ.
আল্লাহ তাআলা লা‘নত করেন ঐ নারীর প্রতি যে (অন্য নারীকে) চুল লাগিয়ে দেয় এবং যে নারী নিজে চুল লাগায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৩৩)
অবশ্য পরচুলা যদি কোনো মানুষের চুল না হয়ে শুকর ব্যতীত কোনো পশুর হয় অথবা কৃত্রিম চুল হয় তাহলে তা ব্যবহার করা অবৈধ নয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لاَ بَأْسَ بِالْوِصَالِ إِذَا كَانَ صُوفًا.
পশম দিয়ে তৈরি পরচুলা ব্যবহার করতে সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২৫৭৪৩)
সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে সাঈদ ইবনে যুবায়ের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- لَا بَأْسَ بِالْقَرَامِلِ
‘করমাল’ ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। (হাদীস ৪১৬৮)
‘করমাল’ আরবী শব্দ। অর্থ হল রেশম বা পশমের সুতা দিয়ে তৈরি কেশগুচ্ছ যা মহিলারা চুলের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করে।
সুতরাং কেনো ধরনের নকল চুল ব্যবহার করা জায়েয নেই- এ কথা ব্যাপকভাবে বলা ঠিক নয়।
প্রকাশ থাকে যে, কৃত্রিম চুল লাগালে তখনই জায়েয হবে যখন তা শুধুই সৌন্দর্যচর্চা পর্যন্ত সীমিত থাকবে। কিন্তু এ ধরনের চুল ব্যবহার করার দ্বারা যদি প্রতারণা উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তা নাজায়েয হবে।
-রাদ্দুল মুহতার ৬/৩৭২; বাযলুল মাজহুদ ১৭/৫৮
আমি একজন হেফজখানার শিক্ষক। আমার হেফজখানায় কয়েকজন নাবালেগ বাচ্চাও পড়াশোনা করে। আমি জানতে চাই, নাবালেগ ছেলে যদি সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করে, তাহলে কি আমার উপর সেজদা ওয়াজিব হবে?
বুঝমান নাবালেগ শিশু থেকে সেজদার আয়াত শুনলে সেজদা ওয়াজিব হয়। হেফজখানার বাচ্চারা সাধারণত বুঝমানই হয়ে থাকে। সুতরাং তাদের মুখে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪৪০; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/১০৭
আমার একটি ছেলে জন্মের সতের দিন পরে মারা গেছে। এখন আমি তার আকীকা করতে চাই। এতে শরীয়তের কোনো বাধা আছে কি না?
আকীকা মূলত জীবিত সন্তানের জন্য করা মুস্তাহাব। অবশ্য কোনো কোনো ফকীহ মৃত সন্তানের জন্য করার কথাও বলেছেন তাই আপনি চাইলে আপনার মৃত সন্তানের আকীকা করতে পারবেন। তবে সন্তান মারা যাওয়ার পর তার আকীকার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব থাকে না।
-আলমাজমূ ৮/৪১২; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুয়াইতিয়্যাহ ৩০/২৭৭; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৬২
১. যাকে দেখা নাজায়েয তার ছবিও কি দেখা নাজায়েয?
২. বিভিন্ন পণ্যের গায়ে নারীদের ছবি দেয়া থাকে। এগুলোর দিকে তাকানোর হুকুম কী?
১. হাঁ, যাকে দেখা নাজায়েয তার ছবি দেখাও নাজায়েয।
২. পণ্যের গায়ে নারীদের যে সব ছবি দেয়া থাকে সেগুলোর দিকে তাকানোও গুনাহ। তাই এগুলো থেকে দৃষ্টি হেফাযতের চেষ্টা করতে হবে। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে গুনাহ হবে না। তবে এক্ষেত্রে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে। এধরনের পণ্য ঘরে এমনভাবে রাখবে যেন ছবি দৃশ্যমান না থাকে। প্রয়োজনে ছবির মুখ কালি দিয়ে মুছে দিবে, অথবা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে দিবে।
প্রকাশ থাকে যে, পণ্যের গায়ে এবং বিজ্ঞাপনে নারীর ছবি ব্যবহার করা হারাম। এতে যেমন নারীর অসম্মান হয় তেমনি এর কারণে বদনযরীর গুনাহও হয়। তেমনিভাবে পণ্যের গায়ে পুরুষের ছবি ব্যবহার করাও নাজায়েয। এসব শরীয়ত পরিপন্থী ও কুরুচিপূর্ণ কাজ থেকে সকল মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৬০
আকীকা করা মূলত কার দায়িত্ব? বাবার বর্তমানে দাদা, নানা বা অন্য কেউ যদি আকীকা করে তাহলে কি আকীকা আদায় হবে?
ছোটবেলায় কারো যদি আকীকা না হয়ে থাকে তাহলে বড় হয়ে সে কি নিজের আকীকা নিজে করতে পারবে?
সন্তানের আকীকার দায়িত্ব বাবার। বাবার সামর্থ্য না থাকলে যদি মা সামর্থ্যবান হন তবে মা সন্তানের আকীকা করবেন। অবশ্য বাবা-মা সামর্থ্যবান হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় তাদের সম্মতিতে দাদা, নানা বা যে কেউ আকীকা করলে আকীকা সহীহ হয়ে যাবে।
আকীকা সপ্তম দিনে করা উত্তম, তা না পারলে চৌদ্দতম দিনে বা একুশতম দিনে করবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَلْيَكُنْ ذَاكَ يَوْمَ السَّابِعِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فَفِي أَرْبَعَةَ عَشَرَ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فَفِي إِحْدَى وَعِشْرِينَ.
আর তা (আকীকা) যেন সপ্তম দিনে করা হয়, যদি সপ্তম দিনে করা না হয় তবে চৌদ্দতম দিনে এবং চৌদ্দতম দিনে করা না হলে একুশতম দিনে করবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯
আর এ সময়ের ভেতর যদি আকীকা করা না হয় তাহলে পরেও করা যাবে।
কারো যদি ছোটবেলায় আকীকা করা না হয়ে থাকে এবং সে বড় হয়ে নিজের আকীকা নিজে করতে চায় তাহলে সেটারও সুযোগ আছে। বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, আমি যদি জানতাম যে, আমার আকীকা করা হয়নি তাহলে আমি নিজেই আমার আকীকা করতাম। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭১)
-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২;; ফয়যুল বারী ৪/৩৩৭; তুহফাতুল মুহতাজ ১২/২৯৩; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৬১-৬২
আমার বড় ভাই একটি ছাগল যবাই করছিলেন। তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য জোরে বিসমিল্লাহ বলি। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি বিসমিল্লাহ বলেছিলেন? তিনি বললেন, তুমি তো বলেছই, তাই আমি ইচ্ছা করেই আর বলিনি। একজন বললেই তো যথেষ্ট। এখন তার যবাইকৃত এ ছাগলের গোশত কি হালাল হবে?
যবাই করার সময় যবাইকারীর বিসমিল্লাহ বলা জরুরি। যবাইকারী না বলে অন্য কেউ বললে তা যথেষ্ট হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যবাই করার সময় যেহেতু বিসমিল্লাহ বলেননি তাই ঐ ছাগলের যবাই সহীহ হয়নি। অতএব তার গোশত হালাল হবে না।
-সূরা আনআম (৬) : ১২১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৩; বাদায়েউস সনায়ে ৪/১৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩০২
এক ব্যক্তি ১০ যিলহজ্ব সকালে মুযদালিফা থেকে মিনায় যাওয়ার সময় পায়ে আঘাত পায়। এক জায়গায় হোঁচট খেয়ে পা মচকে যায়। যার কারণে ঐ দিন মিনায় গিয়ে কংকর মারা তার জন্য সম্ভব ছিল না। তাই সে ঐ দিন তার এক সঙ্গীকে দিয়ে রমি করায়। সেদিন ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরের দিন এগারো তারিখ বিকেলে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে যায় এবং ঐ দিনের রমি রাতের বেলা সে নিজেই গিয়ে আদায় করে।
প্রশ্ন হল, প্রথম দিন সে যে আরেকজনকে দিয়ে রমি করিয়েছে তা কি সহীহ হয়েছে? আর পরের দিন তো সে সুস্থ হয়ে গেছে। তাহলে কি ঐ দিনের রমি পরের দিন তাকে আবার করে নিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যেহেতু ১০ যিলহজ্ব অসুস্থ ছিল। ফলে নিজে গিয়ে কংকর মারতে সক্ষম ছিল না তাই ঐ দিন অন্যকে দিয়ে কংকর মারানো সহীহ হয়েছে। সুতরাং পরের দিন সুস্থ হলেও বিগত দিনের কংকর নিক্ষেপ করতে হবে না। আর এগারো তারিখে নিজে গিয়ে কংকর মারা ঠিক হয়েছে।
-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৫৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৬; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৮৭
আমার দুআ কুনূত মুখস্থ নেই। এখন বিতরের তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূতের সময় আমি কী করব?
আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুআ কুনূত মুখস্থ করে নিন। আর দুআ কুনূত মুখস্থ করার আগ পর্যন্ত নিম্নোক্ত দুআটি পড়তে পারেন-
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
অথবা কয়েকবার أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا বা أَسْتَغْفِرُ اللهَ পড়বেন।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২-৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৭
আমি ফুটপাতের দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করি। অনেক সময় দোকানির সাথে দরকষাকষি হয়। আমি একটি দাম বলি। সে আমার কাক্সিক্ষত দামে না দেওয়ায় সেখান থেকে আমি চলে আসি। কিন্তু দূরে আসার পর ঐ দামেই পণ্যটি কেনার জন্য দোকানি আমাকে ডাকতে থাকে। আমার প্রশ্ন হল, এরূপ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ পণ্যটি কেনা কি আমার জন্য জরুরি?
ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক পক্ষ পণ্যের মূল্য প্রস্তাব করার পর অপর পক্ষ তাতে রাজি না হলে ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তদ্রূপ এক পক্ষ মূল্য প্রস্তাবের পর অপর পক্ষ রাজি হওয়ার আগে দুজনের কেউ ঐ জায়গা থেকে চলে গেলেও ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি মূল্য প্রস্তাব করার পর দোকানি অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং আপনিও সেখান থেকে চলে এসেছেন তাই আপনার আগের প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। অতএব এক্ষেত্রে আপনার প্রস্তাবিত মূল্যে দিতে চাইলেও আপনার না নেওয়ার সুযোগ আছে। তাই না নেওয়াতে আপনার কোনো ত্রুটি হয়নি। বরং এক্ষেত্রে বিক্রেতা ঐ মূল্যে দিতে চাইলে তা নতুন প্রস্তাব হিসেবে ধর্তব্য হবে। সুতরাং পণ্যটি ক্রয় করা বা না করা উভয় এখতিয়ার আপনার থাকবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৪; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬০-৪৬১, ৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭২
আমাদের মাদরাসায় এমন অনেক সামান আছে, যেগুলো পূর্বের কোনো ছাত্র রেখে চলে গেছে। কিন্তু আর নিতে আসেনি। যেমন, ট্রাংক, লেপ-তোষক, কিতাব ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোনোটার মালিক জানা আছে। আবার কোনোটার মালিক জানা নেই। যে সকল সামানার মালিক জানা আছে তাদের সাথে মাদরাসার পক্ষ থেকে তা নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা তা নিতে আসছে না। আমার জানার বিষয় হল, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ সামানাগুলো কী করবে? মালিক জানা থাকা না থাকার বিষয়ে কি কোনো পার্থক্য হবে? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।
যে সমস্ত জিনিসপত্রের মালিক জানা আছে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাঁকে নিয়ে যেতে বলবে। যদি তারা নিতে না চায় তাদের থেকে অনুমতি নিয়ে কোনো গরিবকে দান করে দিবে।
আর যে সমস্ত সামানার মালিক জানা নেই এবং মালিকের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই সেগুলো মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গরিব ছাত্রদেরকে দান করে দিতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, একজন তালিবুল ইলম যে সময় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে শুধু সে সময়ই প্রয়োজনীয় মাল-সামানা রাখতে পারবে। মাদরাসা থেকে চলে যাওয়ার পর সেখানে তার সামানা রাখা ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা অন্যদের অসুবিধা হয়।
অবশ্য অল্প সময়ের জন্য রাখলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সযত্নে রাখবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নিজের জিনিসপত্র মাদরাসায় রেখে দেওয়া অন্যায়।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৮৬৩১; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৯
আমরা অনেক সময় দোকানে গিয়ে বলি, ‘ভাই, অমুক মালটা দেন।’ দোকানদার মাল দেওয়ার পর কখনো মূল্য জিজ্ঞাসা করে পরিশোধ করি। কখনো পরে দেওয়ার কথা বলে চলে আসি। আবার কখনো মূল্য জিজ্ঞাসা না করেই বলি যে, মূল্য পরবর্তীতে আমি দিয়ে যাব বা অমুকে দিয়ে যাবে। তো আমার জানার বিষয় হল, ভাই অমুক মালটা দেন- কথাটা আদেশসূচক হয়েছে। সুতরাং ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হবে কি না? না হলে কীভাবে বলব? শেষে মূল্য জিজ্ঞাসা না করেই পরে দেওয়ার কথা বললে মূল্যটা অস্পষ্ট থেকে যায়। তাই এই বিক্রয় শুদ্ধ হবে কি না?
দোকানে গিয়ে কেউ যখন বলে, ভাই অমুক মালটা দেন এবং বিক্রেতা তা দিয়ে দেয়। ক্রেতাও মূল্য জেনে (তা আদায় করে কিংবা বাকি রেখে) পণ্য নিয়ে নেয় তাহলে এই বেচাকেনা সহীহ। এখানে প্রথম কথাটা বাহ্যত আদেশসূচক হলেও আমাদের সমাজ ও ভাষারীতি অনুযায়ী এটা ইজাব তথা ক্রয়ের প্রস্তাব। অতএব এ নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। এছাড়া ক্রয়ের প্রস্তাব ও গ্রহণের বাক্য ছাড়াও পণ্য গ্রহণ ও মূল্য প্রদানের দ্বারা বেচাকেনা হয়ে যায়। বেচাকেনা সহীহ হওয়ার জন্য মৌখিক ঈজাব-কবুল জরুরি নয়।
পণ্যের মূল্য যদি সুনির্ধারিত হয়- যেমন বাজারে ঐ পণ্যের মূল্য নির্ধারিত আছে কিংবা পূর্ব থেকে নির্ধারিত মূল্যে সে ব্যক্তি দোকানদার থেকে ঐ পণ্যটি ক্রয় করে থাকে। তাহলে বেচাকেনার সময় নতুন করে আবার দাম না জেনে নিলেও সমস্যা নেই। আর যদি মূল্য কোনোভাবেই নির্ধারিত না থাকে তাহলে দাম জেনে নেওয়া ছাড়া বেচাকেনা সহীহ নয়। এ ধরণের ক্ষেত্রে দাম না জেনে পণ্য নিয়ে যাওয়া বৈধ হবে না।
-ফাতহুল কাদীর ৫/৪৫৮, ৪৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫১১, ৫২৯
দেখাদেখি ও বিয়ের তারিখ হওয়ার পর কি ছেলে-মেয়ে পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলতে পারবে?
বিয়ের দিন-তারিখ ধার্য হলেও বিয়ের আকদ না হওয়া পর্যন্ত ছেলেমেয়ে উভয়ে পূর্বের মতোই গায়রে মাহরাম থাকে। তাই এ সময়ে তাদের পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ করা নাজায়েয। আর এ সময়ে তারা বিনা প্রয়োজনে কথা বলা থেকেও বিরত থাকবে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৯; কেফায়াতুল মুফতী ৬/৪৮৩
আমরা শুনে আসছি যে, মাথা মাসাহর পদ্ধতি হল প্রথমে তিন আঙ্গুল সামনের দিক থেকে পিছনে নিবে। এরপর হাতের তালু পিছন থেকে সামনের দিকে আনবে। বাকি দুই আঙ্গুল দিয়ে কান মাসাহ করবে। কিন্তু এক আলেম বললেন, মাথা মাসাহর এই পদ্ধতিটি ঠিক নয়। সঠিক পদ্ধতি হল, পূর্ণ হাত সামনের দিক থেকে পিছনে নিবে এবং পুনরায় পিছন থেকে সামনে আনবে। আরেকজন আলেম বললেন, এভাবে করলে মাসাহ দুইবার হয়ে যাবে। তাই উত্তম পদ্ধতি হল, হাতের আঙ্গুলসমূহ সামনে থেকে পিছনে নেওয়া এবং হাতের তালু পিছন থেকে সামনে আনা। এখন মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন, মাথা মাসাহর সঠিক এবং উত্তম পদ্ধতি কোনটি?
মাসাহ করার সঠিক পদ্ধতি হল, উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ এবং তালু মাথার অগ্রভাগে রেখে মাথার শেষ পর্যন্ত টেনে নেওয়া। এরপর উভয় হাত পুনরায় পেছন থেকে সামনের দিকে টেনে আনা। আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. হতে বর্ণিত আছে,
بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ ثم ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ رَدَّهُمَا حتى رجع إلى المَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত মাথার অগ্রভাগ থেকে পিছন দিকে টেনে নিয়েছেন। এরপর উভয় হাত ঐ স্থান পর্যন্ত টেনে নেন, যেখান থেকে মাসাহ শুরু করেছিলেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩২
এভাবে মাসাহ করলে মাসাহ দুই বার হয়ে যায়- এ কথা ঠিক নয়। কারণ, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই উভয় কাজের পরই একবার মাসেহ সম্পন্ন হয়। আর মাসাহর শুরুতে হাতের কিছু অংশ আলাদা করে রাখতে হবে এ কথাও ঠিক নয়। কেননা ফিকহের বিভিন্ন কিতাবে এই পদ্ধতিকে ভুল বলা হয়েছে।
-মুআত্তা মুহাম্মাদ ৪৬-৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৫; ফাতহুল কাদীর ১/১৭; আসসিআয়াহ ১/১৩৩; মাআরিফুস সুনান ১/১৭৫; ফয়যুল বারী ১/২৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬
গত ডিসেম্বর প্রচলিত ভুল বিভাগে একটি ভিত্তিহীন কথা শিরোনামে লেখা হয়েছিল ‘সাত আসমানের কোনোটি লোহা দিয়ে তৈরি কোনোটি ... । লোকমুখে শোনা যায় যে, সাত আসমানের প্রথম আসমান লোহা দিয়ে তৈরি দ্বিতীয় আসমান তামা দিয়ে তৈরি ইত্যাদি। এটি একটি অলীক কল্পনামাত্র এর কোনো ভিত্তি নেই...।
অথচ কিছুদিন আগে মাজমাউয যাওয়াইদ কিতাবে এ সংক্রান্ত একটি হাদীস পেয়েছি। যাতে কোন আসমান কী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তার বর্ণনা আছে। তাই উক্ত হাদীসটির মান উল্লেখ করে সঠিক বিষয়টি জানানোর অনুরোধ রইল।
মাজমাউয যাওয়াইদ-এর যে বর্ণনাটির কথা আপনি উল্লেখ করেছেন তা এই-
عن الربيع بن أنس قال: السماء الدنيا لوح مكفوف، والثانية صخرة، والثالثة حديد، والرابعة نحاس، والخامسة فضة، والسادسة ذهب، والسابعة ياقوت.
রবী ইবনে আনাস রাহ. বলেন, প্রথম আসমান হল চির ও ফাটলহীন সুবিস্তৃত জমাট বস্তু, দ্বিতীয় আসমান পাথর, তৃতীয়টি লোহা, চতুর্থটি তামা, পঞ্চমটি রূপা, ষষ্ঠটি স্বর্ণ, সপ্তমটি ইয়াকূত পাথর।-আলমুজামুল আওসাত, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ১৩৩৬৫
এখানে প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হল, এটি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো হাদীস নয়। বরং তাবেয়ী রবী ইবনে আনাস রাহ.-এর কথা। কোনো কোনো বর্ণনায় রবী ইবনে আনাস রাহ. কথাটি কাব আলআহবারের বরাতেও বর্ণনা করেছেন। (সাআলিবী রচিত তাফসীর গ্রন্থ আলকাশফু ওয়াল বায়ান ৯/৩৫৭, মাআলিমুত তানযীল, বাগাবী ৪/৩৭০; তাফসীরে খাযেন ৭/১২৪)
রবী ইবনে আনাস রাহ. থেকে প্রচুর ইসরাঈলী বর্ণনা পাওয়া যায়, যার বিশদ বিবরণের জন্য ড. মুহাম্মাদ ইবনে আলী আলখাযীরী রচিত তাফসীরুত তাবেয়ীন দেখা যেতে পারে। আর কাব আল আহবার রাহ. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে অনেক বড় ইহুদী প-িত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পরও তিনি ইসরাঈলী বিভিন্ন কথা বর্ণনা করতেন। তাই এটি একটি ইসরাঈলী বর্ণনা। এজন্যই আবু শাহবা রাহ. ইসরাঈলিয়্যাতের বিষয়ে তার লিখিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আলইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূআত-এ বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। এবং একে ভিত্তিহীন ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (দেখুন, ২৮৩ পৃষ্ঠা)
বলাবাহুল্য যে, কোন আসমান কী দিয়ে তৈরি- এটা আমাদের জ্ঞানের উর্ধ্বের বিষয়। তাই সহীহ সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদীসে এর বিবরণ পাওয়া না গেলে এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। এজন্যই প্রসিদ্ধ মুফাসসির আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী রাহ. বলেছেন-
ما ذكر من مواد هذه السموات ... يحتاج إلى نقل صحيح.
অর্থাৎ আসমানসমূহের যে উপাদানের কথা উল্লেখ করা হয় তা প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহীহ বর্ণনা থাকা আবশ্যক। -আলবাহরুল মুহীত ১০/২২১
প্রখ্যাত মুফাসসির মাহমুদ আলূসী রাহ. রূহুল মাআনীতে উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন-
ليس بمعتبر أصلا، ولم يرد يما تضمنه من التفصيل حديث صحيح.
অর্থাৎ এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো সহীহ হাদীসে এ বিষয়ে এমন বিবরণ আসেনি।
-রূহুল মাআনী ২৮/১৪৩
কোনো ব্যক্তি যদি ফরয গোসলে নাকের ভেতর পানি প্রবেশ না করিয়ে শুধু আঙ্গুল ভিজিয়ে নাকের ভেতরটা তিনবার মুছে নেয় তাহলে তার গোসল হবে কি এবং নাকের ভেতরে পানি প্রবেশ করানো ও তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি কী?
ফরয গোসলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি। শুধু ভেজা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভেতর মুছে নেওয়া যথেষ্ট নয়। এর দ্বারা নাকে পানি পৌঁছানোর ফরয আদায় হবে না।
নাকের ভেতর পানি পৌঁছানোর উত্তম তরীকা হল, ডান হাতে পানি নিয়ে তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত টেনে নেওয়া। হাত দিয়েও পানি ভেতরে দেওয়া যেতে পারে। অতপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভেতরটা পরিষ্কার করে নেওয়া। যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে তিনবার পানি প্রবেশ করানো।
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/১০৮
পেশাব করতে গিয়ে চামড়ার মোজার উপর পেশাব লেগেছে। এখন তা ভিজা হাতে মুছে নিলে পবিত্র হয়ে যাবে কি?
না, ভিজা হাতে মুছে নিলে তা পবিত্র হবে না। পবিত্র করতে হলে মোজার উপর ভালোভাবে পানি গড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তা পবিত্র হবে।
Ñফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩১০, ৩৩৩; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫১১
দোকান থেকে কোনো কিছু কিনতে গেলে দোকানদার কখনো এ কথা বলে যে, যা দেখার এখনই দেখে নিন। পরে কোনো সমস্যার কারণে ফেরত দিতে পারবেন না। এভাবে বলার পর যদি পণ্যের মধ্যে কোনো দোষ ধরা পড়ে তাহলে কি ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার থাকবে?
বিক্রেতা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলার পর ক্রেতা যদি তা মেনে নিয়ে পণ্য ক্রয় করে তাহলে পরবর্তীতে কোনো দোষের কারণে ঐ পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।
প্রকাশ থাকে যে, বিক্রিত পণ্য ফেরত নেওয়া বড় ফযীলতপূর্ণ কাজ। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের সাথে বেচাকেনা করে তা ফিরিয়ে নেয় আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস৩৪৫৪; কিতাবুল আসল ২/৪৮৮; মাবসূত, সারাখসী ১৩/৯১; আলবাহরুর রায়েক ৬/৬৬; রদ্দুল মুহতার ৫/৪২
সুতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ কতটুকু?
সুতরা কমপক্ষে একহাত পরিমাণ হওয়া উচিত। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে (সেটা কতটুকু হবে) তিনি বললেন, হাওদার লাঠির মতো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০০
আর আতা রাহ. বলেন, হাওদার লাঠির দৈর্ঘ্য হল, এক হাত বা তার চেয়ে বেশি।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৮৬; আলমাবসূত ১/১৯০; উমদাতুল কারী ৪/২৬৭; আল বাহরুর রায়েক ২/১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪
খুতবা চলাবস্থায় খুতবা প্রদানকারী এবং শ্রোতাদের জন্য আমর বিল মারূফ এবং নাহী আনিল মুনকারের হুকুম কী? এ সময় কি তাদের উপর এ হুকুম প্রযোজ্য নয়?
খুতবা চলা অবস্থায় উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য চুপ থেকে মনোযোগসহ খুতবা শোনা ওয়াজিব। এ সময় শ্রোতাদের জন্য দ্বীনী-দুনিয়াবী কোনো ধরনের কথা বলা নাজায়েয এবং কাউকে কথাবার্তা বলতে দেখলে তাকে মৌখিকভাবে বারণ করাও নিষেধ। মুসল্লিদের জন্য এ সময়ে শরীয়তের হুকুম হল, চুপ থাকা এবং মনোযোগসহ খুতবা শোনা।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় তুমি যদি পাশের ব্যক্তিকে বল ‘চুপ থাক’ তবে তুমি তা একটি অনর্থক কাজ করলে।-সহীহ বুখারী, হাসীস ৯৩৪
সুতরাং খুতবা চলা অবস্থায় শ্রোতাদের জন্য মৌখিকভাবে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার কোনো সুযোগ নেই।
অবশ্য ফিকহবিদগণ বলেন, প্রয়োজন হলে মুখে নিষেধ না করে হাত বা মাথার ইশারা-ইঙ্গিতে পাশের ব্যক্তিকে কথাবার্তা বলা বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা যাবে। দেখুন : হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯
কেননা ইশারা-ইঙ্গিতে নিষেধ করার বিষয়টি একাধিক সাহাবা-তাবেয়ীর আমল ও আসার দ্বারা প্রমাণিত আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা., আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা, যায়েদ বিন সূহান, সুফিয়ান সাওরী, আলকামা, ইবরাহীম নাখায়ী প্রমুখ। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫২৫৯-৫২৬৩
আর খুতবা প্রদানকারী খুতবার মাঝে প্রয়োজনে লোকদেরকে কোনো দরকারি কথা বা আদেশ-নিষেধ করতে পারবেন। এটি হাদীস-আসার দ্বারা প্রমাণিত আছে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫২৫৫, ৫২৫৭
নখ, চুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর আমরা শহরের মানুষ তা কোথায় ফেলব? কেননা শহরে দাফনের জায়গা পাওয়া কঠিন। কমোডে ফেলা যাবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
নখ, চুল বা পশম ইত্যাদি কাটার পর তা মাটিচাপা দেওয়াই উত্তম। তবে শহরে বা যেখানে মাটিচাপা দেওয়ার সুযোগ নেই সেখানে বাসার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা যাবে। কিন্তু তা কমোডে না ফেলাই উচিত।
আর যেসব পশম শরীরে থাকা অবস্থায় অন্যের জন্য দেখা নাজায়েয শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর বা কাটার পরও তা দেখা নাজায়েয। তাই এ ধরনের পশম পরিষ্কার করে টয়লেটের ভেতর ফেলে দেওয়া যাবে। আর অন্য কোথাও ফেলতে চাইলে আলাদা কোনো কিছুতে ফেলা উচিত, যেন তা দেখা না যায়।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬১৭১, ২৬১৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৯, ৫/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭১
আমি বাজার থেকে এক হালি ডিম কিনে আনি। ভাঙ্গার পর ২টি ডিম পুরোপুরি নষ্ট পাই। দোকানদারের কাছে তা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলে সে ফেরত নিতে অস্বীকার করে। প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য নষ্ট ডিম ফেরত দেওয়ার অধিকার আছে কি? যদি বিক্রেতা মূল্য ফেরত দিতে অথবা ডিম পরিবর্তন করে দিতে না চায় তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?
নষ্ট ডিমের বিক্রি নাজায়েয। বিক্রেতার জন্য এর মূল্য ভোগ করা বৈধ নয়। তাই নষ্ট ডিম ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতার রয়েছে। বিক্রেতা হয়ত মূল্য ফেরত দিবে কিংবা এর পরিবর্তে ভালো ডিম দিবে। তা না করলে সে গুনাহগার হবে।
Ñআলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২৩, ১২১-১২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ৬/১৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২৫
হায়েয অবস্থায় মহিলারা সিজদার আয়াত শুনলে পবিত্র হওয়ার পর তাদেরকে কি সেই সিজদা আদায় করে নিতে হবে? আশা করি উত্তর জানাবেন।
হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই পবিত্র হওয়ার পর তাকে সেই সিজদা আদায় করতে হবে না।
Ñমাবসূত, সারাখসী ২/৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯
নবজাতক বাচ্চার চুল ৭ম দিন কাটা কী? ৭ম দিনের আগে বা পরে কাটা যাবে কি না? চুলের ওজন পরিমাণ রূপা-সোনা সদকা করার বিধান কী? আর এর মধ্যে কোনো হিকমত আছে কি? যদি এক বছর পরে আকীকা করা হয় তাহলে ঐ সময়ও কি চুল কেটে তার সমান রূপা-সোনা সদকা করতে হবে?
এই চুল কাটা এবং আকীকা উভয়টি একসাথে করতে হবে নাকি আগে পিছে করলেও হবে। অর্থাৎ ৭ম দিনে চুল কাটা হল আর ১ বছর পর আকীকা করা হল। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
সন্তান জন্মের ৭ম দিনে অভিভাবকের দায়িত্ব হল, সন্তানের আকীকা করা, মাথার চুল মুণ্ডন করা এবং তার সুন্দর নাম রাখা।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকীকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, নাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২
সপ্তম দিনে আকীকা করা, মাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে এ তিনটির কোনোটি অপরটি সাথে শর্তযুক্ত নয়। তাই কারো আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে সে যদি ৭ম দিনে আকীকা করতে না পারে তাহলেও ঐ দিন সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দিবে এবং নামও রাখবে। আকীকা করতে বিলম্ব হলেও এসব কাজে বিলম্ব করবে না।
আর হাদীস শরীফে যেহেতু সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করতে বলা হয়েছে তাই সপ্তম দিনের আগে মুণ্ডন না করাই উচিত।
মাথা মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা মুস্তাহাব।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা.-এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা রা.-কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৯
অপর এক হাদীসে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার কথাও এসেছে। -আলমুজামুল আওসাত, হাদীস ৫৫৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৬২০৪; ইলাউস সুনান ১৭/১১৯
রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার হেকমত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হল, উক্ত সদকার হেকমত সম্পর্কে হাদীস শরীফে যেহেতু কিছু বলা হয়নি তাই এর রহস্য বা হেকমত অনুসন্ধানের পিছনে না পড়াই ভালো। বান্দার কাজ হল, বিধি-বিধানের হেকমতের পিছনে না পড়ে শরীয়তের হুকুম পালন করে যাওয়া।
অবশ্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ.-এর একটি কারণ এই লিখেছেন যে, সন্তান যে চুলসহ ভূমিষ্ট হয়েছিল তা কেটে ফেলার মাধ্যমে সন্তান একটি অবস্থানে পদার্পণ করে। তাই এর শুকরিয়াস্বরূপ ঐ চুলের বিনিময়ে সদকা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/১৪৫)। আর কোনো কারণবশত বাচ্চার চুল যদি সপ্তম দিনে কাটা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সপ্তম দিনের চুলের ওযন অনুমানে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করে দিবে।
৪ ভাইয়ের ১টি শরিকানা পুকুর আছে। ১ম ভাইয়ের জায়গা আছে ঐ পুকুরে ৪ অংশ, ২য় ভাইয়ের ৩ অংশ, ৩য় ভাইয়ের ২ অংশ আর ৪র্থ ভাইয়ের ১ অংশ। ঐ পুকুরে কেউ কখনো মাছ চাষ করেনি। তবে মাছ চাষ না করা হলেও এমনিতেই কিছু মাছ পাওয়া যায়। এখন আমার প্রশ্ন হল, মাছগুলো কি সমান সমান ভাগ হবে? নাকি জায়গার অংশ অনুযায়ী হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পুকুরের ঐ মাছ প্রত্যেক শরিকের অংশ অনুপাতেই বণ্টন করতে হবে। আর মাছ ধরতে কোনো খরচ হলে তাও প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ অনুপাতে তা বহন করবে। -মাজাল্লাাহ ১০৭৩
হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. (মৃত্যু : ৫৫ হিজরী) কি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মামা ছিলেন? জানালে উপকৃত হব।
ঐতিহাসিক বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাসের ছেলে হল সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস। এ হিসেবে হযরত সাদ রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মামাতো ভাই হন। তবে জামে তিরমিযীর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ রা.-কে নিজের মামা বলেছেন। ইমাম তিরমিযী রা.সহ হাদীস ভাষ্যকারগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, বনু যুহরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতুল বংশ। হযরত সাদ রা. সেই বংশেরই লোক। এদিকে লক্ষ্য রেখেই হয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মামা বলেছেন।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৩৭৫২; ফাতহুল বারী ৬/৬১৯, ৭/১০৫
আকীকার হাদীসের মধ্যে যে রাহীনাতুন শব্দ আছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? যে আকীকা করবে না, সে কি শাফাআত থেকে মাহরূম হবে?
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটি হল-
عن سمرة بن جندب عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : كل غلام رهينة بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق ويسمى.
অর্থ : প্রতিটি সন্তান আকীকার সাথে আবদ্ধ থাকে। সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবাই করবে, তার মাথা মুণ্ডিয়ে দিবে এবং তার নাম রাখবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২০০৮৩
হাদীসে উল্লেখিত রাহীনাতুন শব্দের আভিধানিক অর্থ, আবদ্ধ, বন্ধকী বস্তু। (মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ২/৪০৭; লিসানুল আরব ৫/৩৪৮) হাদীস ভাষ্যকারগণ এক্ষেত্রে শব্দটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন- ক) পিতামাতার জন্য নাবালেগ সন্তানের সুপারিশ আকীকার সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ সন্তান যদি নাবালেগ অবস্থায় মারা যায় এবং তার আকীকা করা না হয়ে থাকে তবে সে তার পিতামাতার জন্য সুপারিশ করবে না। প্রশ্নে শাফাআত থেকে মাহরূম হবে বলে যে কথা বলা হয়েছে এর অর্থ সন্তানের শাফাআত।
খ) সন্তানের নিরাপত্তা, শারীরিক সুস্থতা ও বৃদ্ধি আকীকার সাথে সম্পৃক্ত।
গ) সন্তান লাভ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত। এর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন আকীকার সাথে আবদ্ধ। এছাড়াও রাহীনাতুনের আরো অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে।
-মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৭৭-৭৮; ফায়যুল কাদীর ৪/৪১৫; ফাতহুল বারী ৯/৫০৮; উমদাতুল কারী ২১/৮৮; আততালীকুল মুমাজজাদ ২/৬৫৭; বাযলুল মাজহূদ ১৩/৮২
জনৈক ব্যক্তি এক অবিবাহিতা নারীর সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় ফলে একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়। বিষয়টি এলাকার অনেক মানুষই জানে। সেই ব্যক্তি মারা গেলে তার অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির দাবি করে। তখন মৃতের বৈধ ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য ওয়ারিসগণ তাকে সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর সমাধান কী? জারজ সন্তান কি এক্ষেত্রে মিরাসের অধিকার লাভ করবে? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের দাবিদার উক্ত সন্তান ঐ ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না। তার বংশসূত্র তার মা থেকে প্রমাণিত হবে এবং সে তার থেকে মিরাস পাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন নারী অথবা বাদীর সথে ব্যভিচারে লিপ্ত হল (এবং তাতে সন্তান জন্ম নিল) তাহলে সেটা জারজ সন্তান। সে ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না, ব্যভিচারীও তার থেকে মিরাস পাবে না। -জামে তিরমিযী,হাদীস : ২১১৩
সুতরাং এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির মিরাসের দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২০৬৫; ইলাউস সুনান ৮/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৬৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৩৪৭
হজ্বের একটি বইয়ের মধ্যে দেখতে পাই, ফরয তাওয়াফে অতিরিক্ত ভীড় হলে আল্লাহুম্মা ওয়াক্বিয়াতান কাওয়াক্বিয়াতিল ওয়ালীদ- এ দুআ পড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলে গায়েব থেকে সাহায্য আসবে। আমি কয়েকজনকে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলতে পারেননি। দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
এ দুআটি তাওয়াফের সময় পড়ার কথা হাদীসে পাওয়া যায়নি; বরং এটি সাধারণ সময়ের একটি দুআ হিসেবে হাদীসে এসেছে। একটি যয়ীফ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআর মধ্যে বলতেন-
اللهم واقية كواقية الوليد
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেফাযত করুন যেমনি আপনি নবজাতক শিশুকে হেফাযত করেন। -আদ দুআ, তাবারানী,হাদীস ১৪৪৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৫৫০২
আল্লামা আসকারী রাহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ নবজাতকের অক্ষমতা ও দুর্বলতাবশত আল্লাহ তাআলা তাকে যেভাবে কীট-পতঙ্গ ও জীব-জন্তুর অনিষ্ট থেকে হেফাযত করেন ঠিক তেমনি আমাকে হেফাযত করুন। -ফয়যুল কাদীর ২/১২০
তাই উক্ত দুআকে তাওয়াফের ভীড় থেকে রক্ষা পাওয়ার আমল বা ওযীফা মনে করা ঠিক হবে না। তবে সাধারণ দুআ হিসেবে ঐ সময় তা পড়তে নিষেধ নেই।
অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য যেমন,বই,খাতা ইত্যাদি ক্রয়ের পর যে প্যাকেটে করে তারা পণ্য দেয় তার গায়ে বিসমিল্লাহ লেখা থাকে। এ ধরনের প্যাকেটে বিসমিল্লাহ লেখা এবং তাতে পণ্য আদান-প্রদান করার হুকুম কী?
বই, খাতা বা যে কোনো পণ্য বহনের জন্য যে প্যাকেট দেওয়া হয় তা সাধারণত হেফাযত করা হয় না। এক দুবার ব্যবহারের পর তা ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তাঘাটে যত্রতত্র তা পড়ে থাকে। এতে আল্লাহ তাআলার পবিত্র নামের অসম্মান হয়। তাই এগুলোতে আল্লাহ তাআলার নাম বা বিসমিল্লাহ ইত্যাদি লেখা অন্যায়। কেননা আল্লাহ তাআলার নামের সম্মান রক্ষা করা সকলের ঈমানী দায়িত্ব।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৬
কুরআন মজীদে বিভিন্ন স্থানে যে সাকীনাহ শব্দ এসেছে এর অর্থ কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
সাকীনার শাব্দিক অর্থ হল, রহমত, স্বস্তি-প্রশান্তি, স্থিরতা ও সংশয় দূরিভূত হওয়া।
ইমাম কুরতুবী রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, সূরা বাকারায় উল্লেখিত সাকীনাহ ব্যতীত অন্য সকল সাকীনাহ দ্বারা উদ্দেশ্য স্বস্তি ও প্রশান্তি। -তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৭৫
আর মুফাসসিরগণ বলেছেন, সূরা বাকারায় সাকীনাহ অর্থ স্থিরতা ও সংশয় দূরীভূত হওয়া। অবশ্য কেউ কেউ সকল স্থানে স্বস্তি ও প্রশান্তি অর্থ করেছেন।
-সূরা ফাতহ ৪৮ : ৪; তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৭৫, ৩/১৬২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪৫০; তাফসীরে তবারী ৬/৩৪৪; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১০/৮৯
আমি দুবাই থাকি। আমার এক প্রতিবেশী আমাকে কল করে দেশে ফেরার সময় তার জন্য একটা উন্নতমানের ভেন্ডার মেশিন আনতে বলে। আমি আসার সময় তার জন্য একটি ভেন্ডার মেশিন কিনে আমার আসবাবপত্রের সাথে সেটাও লাগেজের মধ্যে বেঁধে দেই। বাড়িতে এসে লাগেজ খুলে দেখি মেশিনের গ্লাসটা ভেঙ্গে গেছে। এখন আমার প্রতিবেশী ঐ ভেন্ডার মেশিনটি গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার জন্য শরীয়তের বিধান কী? উক্ত মেশিনের ক্ষতিপূরণ আমাকে বহন করতে হবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর জন্য মেশিনটি কেনার পর থেকে তা আপনার কাছে আমানত হিসেবে ছিল। মেশিনটি যত্নসহকারে নিয়ে আসা আপনার দায়িত্ব ছিল। অতএব আপনি যদি লাগেজের মধ্যে যত্নসহকারেই তা নিয়ে থাকেন তাহলে গ্লাসের ক্ষতিপূরণ আপনাকে দিতে হবে না। প্রতিবেশীকে মেশিনটি ত্রুটিসহই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যদি লাগেজে যেভাবে নেওয়া দরকার ছিল সেভাবে না নেওয়ার কারণে বা আপনার ত্রুটির কারণে তা ভেঙ্গে থাকে তবে এর ক্ষতিপূরণ আপনাকে বহন করতে হবে। ক্ষতিপূরণের সাথে আপনার প্রতিবেশী মেশিনটি গ্রহণ করতে বাধ্য। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও মেশিন গ্রহণ না করা বৈধ হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ১৪৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৬৭; রদ্দুল মুহতার ৭/৩৬৭
নামাযের বৈঠকে দু’ হাত কীভাবে রাখব? বসা অবস্থায় হাত হাঁটু স্পর্শ করবে নাকি করবে না?
জানিয়ে উপকৃত করবেন।
নামাযের বৈঠকে দুই হাত দুই উরুর উপর কীভাবে রাখবে এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে। যেমন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন তখন ডান হাত ডান উরুর উপর এবং বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন।... -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৮০ (১১৬)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন তখন বাম হাত বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৮০ (১১৫)
উভয় হাদীসের উপর যেন আমল হয়ে যায় এজন্য উপরোক্ত হাদীসের আলোকে ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, উভয় হাত এমনভাবে উরুর উপর রাখবে যেন হাতের আঙ্গুলগুলো হাঁটুর নিকটবর্তী থাকে।
-ইলাউস সুনান ৩/১০৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৭১; আসসিআয়াহ ২/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৮১; শরহুল মুনইয়াহ ৩২৮
সিজদা আদায়ের ক্ষেত্রে নাক আগে মাটিতে রাখবে নাকি কপাল? এ বিষয়ে হাদীস শরীফের নির্দেশনা কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
হাদীস শরীফে নাক ও কপাল দ্বারা সিজদা করার নির্দেশ এসেছে। কিন্তু নাক ও কপালের মধ্যে কোনটি আগে রাখবে-এ বিষয়ের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা হাদীস-আছারে পাওয়া যায়নি।
অবশ্য ফকীহগণ থেকে এ বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্যই আছে। কোনো কোনো ফকীহ আগে কপাল রাখা অতপর নাক রাখার কথা বলেছেন। যেমন আলাউদ্দীন সমরকান্দী রাহ. (তুহফাতুল ফুকাহা ১/১৩৪), ইমাম কাসানী রাহ. (বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯২), দামাদ আফেন্দী রাহ. (মাজমাউল আনহুর ১/১৪৭), আলেম ইবনুল আলা রাহ. (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭২), ইবনে আবেদীন শামী রাহ. (রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৮)
আবার কোনো কোনো ফকীহ আগে নাক রাখার কথা বলেছেন। যেমন ফখরুদ্দীন যায়লায়ী রাহ. (তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০২), যাইন ইবনে নুজাইম রাহ. (আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৭), উমর ইবনে নুজাইম (আননাহরুল ফায়েক ১/২১৫), আলাউদ্দীন হাসকাফী রাহ. (আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৮)
সুতরাং এ সম্পর্কে যেহেতু সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই এবং ফকীহগণ থেকেও দু ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় তাই যে কোনোটির উপর আমল করা যাবে। উভয় পদ্ধতিই সহীহ। এর কোনোটিকে ভুল বলা যাবে না।
অবশ্য আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. সিজদার মধ্যে কপাল আগে রাখার মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ইমদাদুল আহকামে এ মতের উপর ফাতাওয়াও দিয়েছেন। (ইমদাদুল আহকাম ১/৪৮৪)
হযরত থানভী রাহ.কৃত ‘কামালাতে আশরাফীয়া’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ২৪২) উল্লেখ রয়েছে-
حديث میں آيا ہے كہ اے عائشہ كسی نيك عمل كو حقير نہ سمجهنا ہر نيك عمل میں خاصيت مغفرت كی ہے، اسى طرح ہر گناہ میں خاصيت عذاب كی ہے چاہے چهوٹا ہو چاہے بڑا ہو
এ হাদীসটি কোন কিতাবে আছে? হাদীসের পূর্ণ আরবী পাঠ এবং হাদীসের মান সম্পর্কে পূর্ণ তাহকীক জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত উর্দু ইবারতের মধ্যে
كسی نيك عمل كو حقير نہ سمجهنا
‘কোনো নেক কাজকে নগণ্য মনে করো না।’ এ অংশের সমার্থক হাদীসটি হল, لا تحقرن من المعروف شيئا
পূর্ণ হাদীসটি নিম্নরূপ :
لا تحقرن من المعروف شيئا ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق
অর্থ : কোনো পুণ্যকাজকে নগণ্য ভেবো না। যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করার মতো নেক কাজ হোক। কোনো কোনো সূত্রে হাদীসটি আরো দীর্ঘভাবেও এসেছে।
হাদীসটি সহীহ মুসলিম (হাদীস : ২৬২৬), মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ২১৫১৯), সুনানে আবু দাউদ (হাদীস : ৪০৮১) ও জামে তিরমিযী (হাদীস : ১৮৩৩)-এ বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আবু যর রা. ও জাবের ইবনে সুলাইম রা.।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে হাদীসটিকে আমরা আয়েশা রা.-এর সূত্রে বর্ণিত পাইনি এবং যাদের সূত্রে উপরোক্ত কিতাবসমূহে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোতে আয়েশা রা.-কে সম্বোধন করার কথাও পাওয়া যায়নি।
অবশ্য আয়েশা রা.-কে সম্বোধন করে কাছাকাছি অর্থের যে হাদীসটি পাওয়া যায় তা হল-
يا عائشة إياك ومحقرات الذنوب فإن لها من الله طالبا
অর্থ : হে আয়েশা! ছোট ছোট গুনাহসমূহ থেকে সতর্ক থাকো। কেননা এগুলো সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
এ বর্ণনাটি সুনানে ইবনে মাজাহ (হাদীস : ৪২৪৩) ও মুসনাদে আহমদ (হাদীস : ২৫১৭৭)-এ রয়েছে। এ হাদীসটির সনদও সহীহ।
আর উর্দু ইবারতের বাকি অংশ-
ہر نيك عمل میں خاصيت مغفرت كی ہے، اسى طرح ہر گناہ میں خاصيت عذاب كی ہے چاہے چهوٹا ہو چاہے بڑا ہو
অর্থ : ‘প্রত্যেক নেক কাজে মাগফিরাতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনুরূপ প্রত্যেক গুনাহের মধ্যে আযাবের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চাই তা ছোট হোক বা বড়।’ এটি উক্ত হাদীসের অংশ নয়; বরং এটি থানভী রাহ.-এর নিজের বক্তব্য, যা তিনি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যাস্বরূপ পেশ করেছেন।
কিছুদিন আগে আমি দশটি মেহগনি গাছ বিক্রি করি। ক্রেতা গাছগুলো শেকড়সুদ্ধ কেটে নিতে চায়। এ নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়। আমি চাচ্ছি, ক্রেতা সেগুলো মাটির উপর থেকেই কেটে নিয়ে যাক। কেননা দুটো গাছ একেবারে আমার বাড়ি লাগোয়া। যেগুলো শেকড়সুদ্ধ উপড়াতে গেলে আমার বাড়ির দেয়াল ধ্বসে পড়ার প্রবল আশঙ্কা আছে।
এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত জানালে কৃতার্থ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির সাথে লাগোয়া গাছ দুটো শেকড়সহ কেটে নিলে যেহেতু মালিকের ক্ষতি হবে তাই ক্রেতার জন্য গাছ দুটো শেকড়সহ কেটে নেওয়া বৈধ হবে না। মাটির উপর থেকেই কেটে নিতে হবে।
আর অবশিষ্ট গাছগুলো আপনার এলাকার প্রচলন অনুসারে ক্রেতা কেটে নিতে পারবে। যদি শেকড়সহ নেওয়ার প্রচলন থাকে তবে ক্রেতার এ অধিকার থাকবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৩৫
কিছুদিন আগে আমি এক ব্যক্তির কাছে কিছু জমি বিক্রি করি। জমিগুলোর মধ্যে একটি জমিতে বাঁশঝাড় ছিল। বিক্রির সময় আমার নিয়ত ছিল, দু-একদিনের মধ্যেই আমি তা কেটে নিব। তবে বিক্রির সময় সেটা বলা হয়নি। এখন ক্রেতা বলছে, সে বাঁশসহ পুরো জমিটাই কিনেছে সুতরাং বাঁশগুলো তার। মূলত বাঁশগুলো কে পাবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশনা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জমি বিক্রির সময় যেহেতু বাঁশ বিক্রির কথা উল্লেখ করা হয়নি তাই বাঁশগুলোর মালিক জমি বিক্রেতাই। অতএব বিক্রেতার কর্তব্য হল, বাঁশগুলো কেটে নিয়ে ক্রেতাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া।
এ ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বাঁশগুলো দাবি করা বৈধ হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫১; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২৮৫
নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করার নিয়ম কী? লোমনাশক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে কি না? অথবা কেউ যদি কেচি দিয়ে একেবারে ছোট করে রাখে তবে কোনো অসুবিধা আছে কি? কোনো কোনো অংশ মুন্ডানো কষ্টকর হয়। বিস্তারিত জানাবেন।
এগুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে উত্তম হল, তা মুন্ডিয়ে ফেলা। আর কেউ মুন্ডাতে না পারলে কেচি দ্বারা একেবারে খাটো করারও অবকাশ রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে লোমনাশক ওষুধও ব্যবহার করা যাবে।
-ফাতহুল মুলহিম ১/৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/১০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৭
আমার ভাতিজার বাম হাতে স্বাভাবিক পাঁচটি আঙ্গুলের অতিরিক্ত একটি আঙ্গুল আছে। আমরা অপারেশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে চাচ্ছি। এতে শরীয়তের কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে পারবেন।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৮৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬০; আলমওসূআতুত তিবিবয়্যাহ আলফিকহিয়্যাহ ২৩৭