কোনো কোনো হোটেলে নাস্তা বা খানা খাওয়ার পর হাত মোছার...
কোনো কোনো হোটেলে নাস্তা বা খানা খাওয়ার পর হাত মোছার জন্য পেপারের টুকরা দেওয়া হয়। জানার বিষয় হল, পেপারের টুকরা দিয়ে হাত মোছা যাবে কি?
কাগজ ইলম ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। আর ইলমের সকল মাধ্যম অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানযোগ্য। তাই পেপারের টুকরা দিয়েও হাত মোছা ঠিক নয়। এটা আদব পরিপন্থী কাজ।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২
কিছুদিন আগে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম।...
কিছুদিন আগে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। কয়েক লোকমা খেয়েছি মাত্র; ছোট ভাই জানাল, একটু আগে একটি মুরগি এ তরকারিতে মুখ দিয়ে কয়েকটি ছোট মাছ খেয়েছে। একটু খাওয়ার পরই সেটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে আমি আর সে তরকারি খাইনি। এখন জানার বিষয় হল, সে তরকারি না খাওয়া ঠিক হয়েছে কি না? আর যে মুরগি সর্বত্র ঘুরাফেরা করে তা কোনো তরকারিতে মুখ দিলে তা খাওয়ার হুকুম কী?
যে মুরগি এমন জায়গায় ঘুরাফেরা করে যেখানে নাপাকিতে মুখ দেওয়ার সুযোগ নেই যেমন আবদ্ধ বাসা-বাড়িতে, সেটি কোনো খাবারে মুখ দিলে ঐ খাবার খাওয়া যাবে। তবে যে মুরগি বাইরে ঘুরাফেরা করে এবং নাপাকিতে মুখ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে তার ঠোঁটে বা মুখে বাহ্যত কোনো নাপাকি না থাকলেও সতর্কতামূলক বিধান হল, তার মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া মাকরূহ আর যদি ঠোঁটে নাপাকি লেগে থাকতে দেখা যায় তাহলে যাতে মুখ দিবে তা নাপাক হয়ে যাবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে মুরগি মুখ দিয়েছে তা বাইরে ছাড়া মুরগি হলে ঐ তরকারি না খেয়ে আপনি ঠিকই করেছেন।
-মাবসূত, সারাখসী ১/৪৭-৪৮; শরহুল মুনইয়া ১৬৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৮-১৯
১. কয়েকদিন আগে এক মসজিদে জুমার নামায পড়ার সময় নামাযের...
১. কয়েকদিন আগে এক মসজিদে জুমার নামায পড়ার সময় নামাযের আগে ইমাম সাহেব বললেন, কারো টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে উঠিয়ে নিন। হুযুরের কাছে জানতে চাই, টাখনুর নিচে কাপড় থাকা অবস্থায় নামায পড়লে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়?
২. কুরআন শরীফের অল্প কয়েকটি সূরা আমার মুখস্ত আছে। তাহাজ্জুদ নামাযে যদি কেরাত লম্বা করার উদ্দেশ্যে একই সূরা এক রাকাতে বারবার পড়ি তাহলে কি কোনো সমস্যা আছে?
১. টাখনুর নিচে কাপড় পরা শরীয়তে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَا أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ .
টাখনুর নিচের যে অংশ লুঙ্গী (ইত্যাদি) দ্বারা ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৮৭)
আর নামাযের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় থাকলে নামায মাকরূহ হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَنْ أَسْبَلَ إِزَارَهُ فِي صَلَاتِهِ خُيَلَاءَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي حِلٍّ وَلَا حَرَامٍ.
যে ব্যক্তি নামাযে অহঙ্কারবশতঃ নিজ কাপড় (পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে রাখে, আল্লাহ তার জন্য ‘জান্নাত’ হালাল করবেন না এবং ‘জাহান্নামও’ হারাম করবেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৩৭)
অতএব নামায ও নামাযের বাইরে সর্বাবস্থায় যেন পুরুষের কাপড় টাখনু গিরার উপরে থাকে সে ব্যাপারে যতœবান হওয়া অবশ্য-কর্তব্য। -ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৩৬
উত্তর : ২. নফল নামাযে এক রাকাতে কয়েকটি সূরাও পড়া যায়। তাই আপনার যে কয়টি সূরা মুখস্থ আছে সেগুলো দু রাকাতে মিলিয়ে পড়ে নিতে পারেন। এছাড়া নফল নামাযে একই রাকাতে একই সূরা বারবার পড়ারও সুযোগ আছে। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা অনুত্তম। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭;হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১৯৩
নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, লেখক : মাওলানা বেলায়েত হুসাইন। বইটিতে...
নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, লেখক : মাওলানা বেলায়েত হুসাইন। বইটিতে একটি হাদীস পেয়েছি-
ما أسفل من الكعبين من الإزار في النار .
সেখানে অর্থ লেখা হয়েছে, টাখনুর নিচের যেই অংশ পায়জামা বা লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকে তাহা দোযখে যাইবে।
জানার বিষয় হল, হাদীসটিতে কি শুধু পায়জামা ও লুুঙ্গি উদ্দেশ্য? কেউ যদি এমন লম্বা জুব্বা পরিধান করে যা টাখনুর নিচে গিয়ে পড়ে। তাহলে কি এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে? হাদীসটির ব্যাখ্যা বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
হাদীসের উক্ত বিধান এবং ধমকিবাণী শুধু লুঙ্গি বা পায়জামার সাথে সীমাবদ্ধ নয়; বরং জুব্বা বা যেকোনো পোশাক টাখনুর নিচে পরিধান করলেই তা এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ব্যাপক হুকুম অন্যান্য হাদীস-আসার দ্বারা প্রমাণিত।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الإسبال في الإزار والقميص والعمامة، من جر منها شيئا خيلاء لم ينظر الله إليه يوم القيامة.
লুঙ্গি, জামা, পাগড়ি এর কোনোটাকে যে অহংকারবশত (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস ২৫৩৩৭
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,
ما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في الإزار، فهو في القميص.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি/পায়জামার সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা জামার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৯২
প্রখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন,
جر القميص والإزار سواء.
জামা ঝুলিয়ে পড়া আর লুঙ্গি ঝুলিয়ে পড়া একই সমান।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫৩৩৮
এক কিতাবে পেয়েছি, গোশত, তরকারি গন্ধ হয়ে গেলে নাকি নাপাক...
এক কিতাবে পেয়েছি, গোশত, তরকারি গন্ধ হয়ে গেলে নাকি নাপাক হয়ে যায়। এ কথা কি ঠিক? আমরা তো মহিলাদের দেখেছি, তরকারি গন্ধ হয়ে গেলে খাওয়ার সোডা মিশিয়ে দিয়ে তা খেয়ে ফেলে। কারণ সোডা দিলে গন্ধটা অনুভব হয় না। দয়া করে এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে উপকৃত করবেন।
গোশত বা তরকারি গন্ধ বা বাসি হয়ে গেলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তা নাপাক হয় না। তবে খাবার যদি এতটা বাসি বা গন্ধযুক্ত হয়ে যায় যে, তা খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রে তা খাওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য সামান্য গন্ধ হলে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলে তা খেতে অসুবিধা নেই।
-গামযু উয়ুনিল বাসাইর ২/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৯
কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামায পড়লে কি নামায...
কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামায পড়লে কি নামায হবে?
জামা কাপড়ে প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকলে তা পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তবে নামায মাকরূহ হলেও তা আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়তে হবে না। আর ছবিযুক্ত জামা-গেঞ্জি পরে মসজিদে আসা আরো মারাত্মক অন্যায়। এতে মসজিদের পবিত্রতা ও আদব নষ্ট হয় এবং এ কারণে অন্য মুসল্লিদের নামাযও মাকরূহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
-কিতাবুল আছল ১/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯
মাগরিবের নামায কখন পড়া উত্তম? রমযান মাসে ইফতারের জন্য কিছুটা...
মাগরিবের নামায কখন পড়া উত্তম? রমযান মাসে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করে জামাত দাঁড়ায়Ñ এর হুকুম কী?
সাধারণ অবস্থায় সূর্যাস্তের পর মাগরীবের নামায বিলম্ব না করা মুস্তাহাব। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিব পড়তাম যখন সূর্য অস্ত যেত। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬১
রাফে ইবনে খাদীজ রা. বলেন, আমরা নবীজী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। অতপর নামায শেষে আমাদের কেউ চলে গেলে তখন সে তীর নিক্ষেপের স্থান দেখতে পেত। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৯
হাদীস ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব নামায সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে পড়তেন এবং এত আগে পড়তেন যে, নামায শেষ করার পরও চতুর্দিক আলোকিত থাকত। অন্ধকার হয়ে যেত না। আর এটিই অধিকাংশের মত। Ñউমদাতুল কারী ৫/৫৫
হাদীস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, উপরোক্ত হাদীসের দাবি হল, মাগরিব নামায ওয়াক্তের শুরুতেই আদায় করা। যেন আলো থাকতে থাকতে নামায শেষ করা যায়। Ñফাতহুল বারী ২/৫০
ফকীহগণ বলেছেন, ওয়াক্তের শুরুতেই মাগরিবের নামায পড়ে নেওয়া মুস্তাহাব। তবে সূর্যাস্তের পর নামাযের প্রস্তুতি নিতে যে পরিমাণ সময় লাগে এতটুকু পরিমাণ সময় বিলম্ব করা অনুত্তম হবে না। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ. বলেছেন, ১০ মিনিট বিলম্ব করলে মাকরূহ হবে না। Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১০৪
এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ আকাশের তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরূহ তানযীহী। আর তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হয়ে যায় এত বিলম্ব করা মাকরূহ তাহরীমী।
সুতরাং রমযানে ইফতারির প্রয়োজনে ১০-১২ মিনিট বিলম্ব করা যাবে। এতে অসুবিধা নেই। মাকরূহ হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি বিলম্ব করা ঠিক হবে না। রমযানে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করার কথা সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রমাণিত আছে।
আবু জামরা দুবায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রমযানে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ইফতার করতেন। ... তিনি বলেন,
فاذا غابت الشمس أذن، فيأكل ونأكل، فإذا فرغ أقيمت الصلاة، فيقوم فيصلي ونصلي معه.
যখন সূর্য অস্ত যেত তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আযান দিয়ে খাবার খেতেন। আমরাও তাঁর সাথে খাবার খেতাম। খাবার শেষে ইকামত দেওয়া হত। তখন তিনি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ে নিতাম।
Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯০৩৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১/২০৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৪, ১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৮; বাযলুল মাজহূদ ৩/২১৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৯;
পাগড়ি পরিধানের হুকুম কী? বিস্তারিত জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়,...
পাগড়ি পরিধানের হুকুম কী? বিস্তারিত জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, শুধু ফরয নামাযের সময় পাগড়ি পরিধান করে। এজন্য যে, পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করলে ১ রাকাতে সত্তর রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়। এবং অনেককে এটাও বলতে শোনা যায় যে, যদি ইমাম সাহেব পাগড়ি বেঁধে নামায পড়ান তাহলে ইমাম ও মুক্তাদিরা নামাযে সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবেন। আমার জানার বিষয় হল, তাদের কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হব। তাছাড়া একটি বইয়ে দেখতে পেলাম, পাগড়ি পরে নামায আদায় করলে সত্তর গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। আবার আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে পঁচিশ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। এরপর উক্ত বইয়ে লেখা হয়েছে যে, এ হাদীসগুলো দুর্বল হলেও বেশি দুর্বল নয় আর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করতে কোনো অসুবিধা নেই। উক্ত বইয়ের বক্তব্য কি সঠিক?
পাগড়ি মাসনূন পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যে সকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও তার অন্তর্ভুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। সাহাবা-তাবেয়ীনও নামাযে এবং নামাযের বাইরে ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন বহু হাদীস ও আসারে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত আছে। পাগড়ি তাদের নিকট পছন্দনীয় পোশাক ছিল। তাঁরা অন্যান্য পোশাকের ন্যায় তা ব্যবহার করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অনুসরণে পাগড়ি ব্যবহার করলে অবশ্যই সওয়াব হবে।
আর পাগড়ি নামাযের বিশেষ পোশাক নয়; বরং নামাযে এবং নামাযের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে পরিধানযোগ্য একটি পোশাক। সাহাবা-তাবেয়ীন শুধু নামাযের সাথে এটাকে সীমাবদ্ধ করতেন না। তাই শুধু নামাযের সময় ব্যবহার করা, অন্য সময় ব্যবহার না করা সালাফের রীতি পরিপন্থী।
আর পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করলে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায় এ সংক্রান্ত যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে তা সহীহ নয়। এটি একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এটি একটি মিথ্যা ও বাতিল কথা। -শরহু জামেইত তিরমিযী, ইবনে রজব রাহ. ২/৮৩১
ইমাম সাখাবী রাহ. পাগড়ি বেঁধে নামায আদায় করার ফযীলত সম্পর্কিত যে তিনটি বর্ণনা প্রমাণিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন তন্মধ্যে এ বর্ণনাটিও রয়েছে। -আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৩৪৬
অনুরূপ পাগড়ি বিশিষ্ট দু’রাকাত নামায পাগড়িহীন পঁচিশ রাকাতের সমান এবং পাগড়ি বিশিষ্ট একটি জুমআ পাগড়ি বিহীন সত্তর জুমআর সমান- যে বর্ণনা রয়েছে সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. এ বর্ণনাটিকে মওযূ অর্থাৎ জাল বলেছেন। -লিসানুল মীযান ৩/২৪৪
হাফেয সাখাবী রাহ. এ বর্ণনাটিকেও প্রমাণিত নয় বলেছেন। -আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৩৪৬
হাফেয সুয়ূতী রাহ. যাইলুল লাআলিল মাসনূআতে (১/৪২৭) ইবনে হাজার রাহ.-এর উক্ত কথা উদ্ধৃত করেছেন।
এ সম্পর্কে আরো দেখুন : তাযকিরাতুল মাওযূআত ১/১৫৫; আলআসারুল মারফুআ ১/২৩২; আলমাসনূ ১/১১৮
সুতরাং এ ধরনের বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাকে আমলযোগ্য যয়ীফ বলা ঠিক নয়। হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ ইমামগণের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিপরীতে এমন কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রকাশ থাকে যে, আমলের ফযীলত বিষয়ে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য- এটি মুহাদ্দিসগণের একটি স্বীকৃত কথা। তবে এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। অন্মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হল, বর্ণনাটি মাতরুক বা মুনকার পর্যায়ের না হতে হবে। তাই ব্যাপকভাবে যে কোনো যয়ীফ হাদীসই আমলযোগ্য বলা ঠিক নয়।
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার জন্য শর্ত হল, ক) সনদের দুর্বলতা বেশি না হতে হবে। এটি সর্বসম্মত বিষয়। সুতরাং যয়ীফ হাদীসের শ্রেণী থেকে ঐ বর্ণনা বের হয়ে যাবে, যার মধ্যে কোনো রাবী মিথ্যুক রয়েছে বা মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত কিংবা তিনি বেশি ভুল করেন।
খ) ঐ আমল শরীয়তের কোনো না কোনো মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটি সুপ্রমাণিত এমন আকীদা পোষণ না করতে হবে। -আলকওলুল বাদী ১৯৫
ইবনে হাজার রাহ.-এর এই তিন শর্তের কথা হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব দুরারুল হুক্কাম ১/১২;আদ্দুররুল মুখতার এবং রদ্দুল মুহতারেও উল্লেখ রয়েছে।
আল্লামা হাসকাফী রাহ. যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করার উক্ত শর্তসমূহ উেল্লখ করার পর বলেন, মওযূ হাদীসের উপর তো কোনো অবস্থাতেই আমল করা জায়েয নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৮
অতএব পাগড়ি পরিধান করে নামায আদায় করলে সত্তর গুণ, পঁচিশ গুণ সওয়াব পাওয়া সংক্রান্ত যে বর্ণনা রয়েছে সেগুলো তো হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ ইমাম ও মুহাদ্দিসীনে কেরামের সুস্পষ্ট ভাষ্যমতে মওযূ ও বাতিল বর্ণনা। এসব বর্ণনাকে ভিত্তি করে অধিক ফযীলত পাওয়ার আশায় পাগড়িকে শুধু নামাযের সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়।
আর ইমাম পাগড়ি বেঁধে নামায পড়ালে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবে- প্রশ্নের এ কথার সপক্ষে কোনো হাদীস বা আসার পাওয়া যায় না। তাই নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি ছাড়া এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাগুলো বিশ্বাস না করে পাগড়িকে নিয়মিত পোশাকের অংশ বানানো যে উত্তম কাজ তা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পাগড়ি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পোশাক এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটি নামাযের সময়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।
কাপড়ে রাস্তার কাদা লাগলে কাপড় কি নাপাক হয়ে যাবে?
কাপড়ে রাস্তার কাদা লাগলে কাপড় কি নাপাক হয়ে যাবে?
সাধারণ অবস্থায় রাস্তার কাদা পাক। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হবে না। তবে যদি কাদায় নাপাকি দেখা যায় কিংবা নাপাকির গন্ধ অথবা রং প্রকাশ পায় তবে তা নাপাক। এটি কাপড়ে লাগলে ঐ জায়গা ধুয়ে নিতে হবে।
-আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ১/১৯৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/২৩; ফাতহুল কাদীর ১/১৮৬; আততাজনীস ১/২৫৯
আমি একটি বায়িং হাউজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার পদে কর্মরত। বিভিন্ন গার্মেন্টস...
আমি একটি বায়িং হাউজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার পদে কর্মরত। বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে তৈরি পোশাক ইনস্পেকশনের কাজে যেতে হয়। মাঝেমধ্যেই গার্মেন্টেস মালিকগণ উপহার বা গিফট হিসেবে আমাকে বিভিন্ন খাম দেয়। তাতে ভালো অংকের টাকা থাকে। এক্ষেত্রে তাদের গোপন উদ্দেশ্য হল, আমি যেন খুব যাচাই বাছাই না করেই ইনস্পেকশন রিপোর্ট ওকে করে দিই। প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য এ উপহার নেওয়া কি বৈধ? যদি বৈধ না হয় তাহলে আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত টাকা উপহার বলে দেওয়া হলেও তা মূলত ঘুষ। এ টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। -সূরা বাকারা ১৮৮
হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতা উভয়ের প্রতি অভিসম্পাৎ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৩৩৭
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাদের থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে তাদেরকে ঐ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যাদের সন্ধান পাওয়া যাবে না তাদের টাকা সদকা করে দিতে হবে। আর নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বদা যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং বিগত দিনের জন্য ইসিত্মগফার করতে হবে।
-সূরা বাকারা ১৮৮; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২৭; শরহুল মাজাল্লাহ ৬/১৪; মাআরিফুল কুরআন, মুফতী শফী রাহ. ৫/৩৯৭; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়েত ২২/২২২
মান্যবর মুফতী সাহেব, আমার একটি পাঞ্জাবী টেইলার্সের দোকান আছে। লোকেরা...
মান্যবর মুফতী সাহেব, আমার একটি পাঞ্জাবী টেইলার্সের দোকান আছে। লোকেরা কাপড় ও মাপ দিয়ে যায়। বানানো হলে মজুরী দিয়ে পোশাক নিয়ে যায়। জানার বিষয় হল, অনেকে অর্ডার দিয়ে পরে আর পোশাক নিতে আসে না। কেউ কেউ এক বছর পরে নিতে এসেছে- এমনও হয়েছে। এভাবে আমার টেইলার্সে কিছু জামা প্রস্তুত হয়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে অর্ডার রসিদে স্পষ্ট লেখা আছে ‘ডেলিভারির তারিখের দুইমাস বা ষাট দিনের মধ্যে জামা না নিলে পরে যদি তা হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’
যেহেতু প্রত্যেকটি প্রস্তুতকৃত জামার মজুরী কারিগরকে পরিশোধ করা দায়িত্ব তাই এসকল কাপড় বিক্রি করে আমার জন্য মজুরী আদায় করার কোনো সুযোগ আছে কি না? পরে অর্ডারকারী আসলে আমার কী করণীয়? আমার অবস্থা বিবেচনা পূর্বক করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ চাই।
প্রশ্নের বর্ণনা যনুযায়ী ডেলিভারি তারিখের পর দুই মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও যে সব কাপড়ের মালিক আসেনি এবং চেষ্টা করেও মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি সেসব কাপড় আপনি বিক্রি করে দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার নির্ধারিত মজুরী রেখে অবশিষ্ট টাকা মালিকের পাওনা হিসাবে আপনার নিকট জমা রাখবেন এবং এর হিসাব কোনো খাতায় লিখে রাখবেন। পরবর্তীতে মালিক আসলে তাকে এ টাকা দিয়ে দিবেন। আর যদি কোনোভাবেই মালিকের সন্ধান পাওয়া না যায় তবে ঐ টাকা সদকা করে দিবেন।
আর ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য অর্ডার দাতার নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার অবশ্যই লিখে রাখবেন। সাথে অর্ডার রশিদে মালিক থেকে এ ব্যাপারে স্বাক্ষরও নিয়ে রাখতে পারেন যে, নির্ধারিত মেয়াদের ভিতর কাপড় না নিলে মেয়াদের পর কর্তৃপক্ষ তা বিক্রি করে দেওয়ার অধিকার রাখবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১১/৩; রদ্দুল মুহতার ৪/২৭৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৫১; আল বাহরুর রায়েক ৫/১৫৩
আমি এক মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক। এ বিভাগের প্রায় সব...
আমি এক মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক। এ বিভাগের প্রায় সব ছাত্রই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তারা নিজেদের জন্য বাসা থেকে বিভিন্ন খাবার ও টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। তারা সেই খাবার আমাকে দিতে চায় এবং তাদের টাকা দিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিস কিনে এনে আমাকে দেয়।
জানার বিষয় হল, আমার জন্য তাদের দেওয়া খাবার ও অন্যান্য জিনিস গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয নেই। তাদের হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। অবশ্য নাবালেগের অভিভাবকগণ যদি আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু পাঠায় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/১১০; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৭; জামিউ আহকামিস সিগার ১/২১১
অনেককে দেখা যায়, তারা প্যান্টের সাথে গেঞ্জি কিংবা শর্ট শার্ট...
অনেককে দেখা যায়, তারা প্যান্টের সাথে গেঞ্জি কিংবা শর্ট শার্ট পরে এবং ঐ পোশাকে নামায আদায় করে। আর ঐ পোশাকে নামায পড়লে রুকু-সিজদার সময় সাধারণত কোমরের নিচের অংশ থেকে কাপড় সরে যায়। আমার প্রশ্ন হল, ঐভাবে নামায পড়লে কি তা সহীহ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটুকু সতরের অন্তর্ভুক্ত। যা ঢেকে রাখা ফরয। নামায অবস্থায় সতরের কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। তাই নাভি বরাবর পেছন দিক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত জায়গার এক চতুর্থাংশ এ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। আর এমন পোশাকে নামায পড়লে পেছনের মুসল্লিদের খুশু-খুযুও নষ্ট হয়। এছাড়া প্রশ্নোক্ত পোশাক মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব পোশাক নয়। তাই এ ধরনের পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকাই উচিত।
প্রকাশ থাকে যে, সকল মুসলমানের জন্য শরীয়তসম্মত পোশাক পরিধান করা আবশ্যক এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের যে নীতিমালা আছে তা মেনে চলা জরুরি। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও বিজাতীয় অনুকরণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে হাদীস শরীফে তাকিদ এসেছে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪০২৭; মিরকাত ৮/২২২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৪, ৪০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৯
দুধ, চিনি ইত্যাদির সাথে অনেক সময় পিঁপড়া থাকে। দুধ বা...
দুধ, চিনি ইত্যাদির সাথে অনেক সময় পিঁপড়া থাকে। দুধ বা চিনির সাথে দু একটা পিঁপড়াও মুখের ভিতরে চলে যায়। জানতে চাই, চিনি বা দুধের সাথে থাকা ঐ পিঁপড়া খাওয়া যাবে কি? এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
না, এসব পিঁপড়াও খাওয়া বৈধ নয়। কোনো খাদ্যের মধ্যে পিঁপড়া থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে বেছে ফেলে দিয়ে ঐ খাবার খাওয়া যাবে। জেনেশুনে একটি পিঁপড়াও খাওয়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৮৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৬
আমাদের স্কুলের এক স্যারকে বলতে শুনলাম যে, প্লেটের মাঝখান থেকে...
আমাদের স্কুলের এক স্যারকে বলতে শুনলাম যে, প্লেটের মাঝখান থেকে খাবার খাবে না। খেলে খাবারের বরকত থকে না। তার এ কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনাদের স্যারের কথাটি সঠিক। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বরকত খাবারের মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। অতএব তোমরা খাবারের এক পাশ থেকে খাওয়া শুরু করবে। মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করবে না।
(জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৮০৫)
শীতকালে আমাদের এলাকায় কানটুপি পাওয়া যায়। যা পরিধান করলে সাধারণত...
শীতকালে আমাদের এলাকায় কানটুপি পাওয়া যায়। যা পরিধান করলে সাধারণত কপাল ঢেকে যায়। প্রশ্ন হল, কানটুপি পরে কপাল ঢাকা অবস্থায় সিজদা করলে সিজদা আদায় হবে কি?
টুপি ইত্যাদি দ্বারা কপাল আবৃত অবস্থায় সিজদা করা অনুত্তম। নাফে রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. পাগড়ীর পেঁচ (কপাল থেকে) না সরিয়ে তার উপর সিজদা করা অপছন্দ করতেন। (আলআওসাত ৩/৩৪৩) ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন, (সিজদার সময়) কপাল খুলে রাখা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয় (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৭৭৬) তাই নামাযের আগে এ ধরনের টুপি কপাল থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত। অবশ্য এভাবে সিজদা করলেও তা সহীহ হবে এবং নামায আদায় হয়ে যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০০; শরহুল মুনইয়াহ ২৮৬-২৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯
আমাদের এলাকায় নিয়ম আছে যে, বাচ্চার খতনা করার কিছুদিন পর...
আমাদের এলাকায় নিয়ম আছে যে, বাচ্চার খতনা করার কিছুদিন পর তার পিতা-মাতা বা অভিভাবক তাদের নিকটাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত করে। তাতে বড় আকারে খাবারের আয়োজন করা হয় এবং আমন্ত্রিত মেহমানগণ বিভিন্ন ধরনের উপহার-উপঢৌকন দিয়ে থাকে।
জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে খতনা উপলক্ষে এ ধরনের দাওয়াতের আয়োজন করার বিধান কী? এবং এমন দাওয়াতে অংশগ্রহণ করার হুকুম কী?
খতনা উপলক্ষে দাওয়াতের আয়োজন করা একটি মুবাহ কাজ মাত্র। এটি সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। এ উপলক্ষে দাওয়াত করার মধ্যে বিশেষ কোনো ফযীলতও নেই।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, একবার হযরত উসমান ইবনে আবুল আছ রা.কে খতনার একটি দাওয়াতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তাতে শরীক হতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় আমরা খতনা উপলক্ষে (কোথাও) যেতাম না এবং সে জন্য আমাদেরকে দাওয়াতও করা হত না। (মুসনাদে আহমদ ৪/২১৭)
তবে কোনো কোনো সাহাবী খতনা উপলক্ষে কখনো খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এমন বর্ণনাও আছে।
তাবেয়ী নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাচ্চাদের খতনা উপলক্ষে খাবার খাওয়াতেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পুত্র সালেম রাহ. বলেন, আমার বাবা আমার এবং নুআইম ইবনে আবদুল্লাহর খতনা করলেন। তিনি এ উপলক্ষে একটি ভেড়া জবাই করলেন। আর আমরা এর গোশত কেটে কেটে বাচ্চাদেরকে দিতে থাকলাম। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৯/৩৪১)
সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খতনা উপলক্ষে দাওয়াতের আয়োজন করা সাধারণ দাওয়াতের মতো মুবাহ মাত্র। অতএব এতে শরীয়ত গর্হিত কোনো কিছু না হলে এ আয়োজন করা এবং তাতে শরীক হওয়া জায়েয। তবে একে রসমে পরিণত করা যাবে না। আর যদি এ দাওয়াতকে বিশেষ সওয়াবের কাজ মনে করা হয় কিংবা এতে শরীয়ত গর্হিত কোনো কাজ থাকে তাহলে এ আয়োজন করা এবং এতে শরীক হওয়া নাজায়েয।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৯/৩৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৬; আলমুগনী ১০/২০৭; আলইসতিযকার ১৬/৩৫১
আমরা জানি, খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত এবং হাদীস...
আমরা জানি, খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত এবং হাদীস শরীফে বিসমিল্লাহ পড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ এই ইবারতে কোনো দুআ হাদীস শরীফে কিংবা সাহাবা-তাবেয়ীনের আছারে বর্ণিত আছে কি না?
খানা খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ পড়ার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসে এসেছে-‘তোমরা বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ বলে খাবার গ্রহণ কর।’ (মুসতাদরাকে হাকেম ৫/১৪৬, হাকেম ও হাফেয যাহাবী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
আর ‘আলা’ শব্দটি যুক্ত করে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ’ এভাবে দুআটি উল্লেখ করেছেন ইবনুল জাযারী রাহ. তার আলহিসনুল হাসীন গ্রন্থে (পৃ. ২৫৫)। তিনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন আলমুসতাদরাক-এর। কিন্তু আমাদের কাছে আলমুসতাদরাক-এর যে সংস্করণটি রয়েছে তাতে ‘আলা’ শব্দটি নেই। বরং শুধু বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ রয়েছে।
অবশ্য কেউ যদি আলা শব্দটি যুক্ত করে বিসমিল্লাহি ওয়া আলাবারাকাতিল্লাহ পড়ে তাহলে সমস্যা নেই। কেননা এতে অর্থগত কোনো পরিবর্তন হয় না এবং ভাষার দিক থেকে আলা এর ব্যবহারকে ভুলও বলা যায় না।
এক্ষেত্রে অর্থ হয়, আল্লাহর নামে ও তাঁর বরকতের উপর ভরসা করে খানা শুরু করছি।
আমাদের এলাকায় প্রচলন রয়েছে যে, কেউ মারা গেলে তার বাড়িতে...
আমাদের এলাকায় প্রচলন রয়েছে যে, কেউ মারা গেলে তার বাড়িতে তিনদিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না। এ সময় আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী তার বাড়িতে খাবার পৌঁছিয়ে দেয়। মানুষ এটাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আসলেই কি মৃতের পরিবারের জন্য তিন দিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো নিষেধ? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনাদের এলাকার প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেউ মারা গেলে সে বাড়িতে তিনদিন পর্যন্ত চুলা জ্বালানো যাবে না-এ ধারণা ভুল। তবে প্রথম দিন মৃতের পরিবারের জন্য অন্যদের কর্তৃক খাবার ব্যবস্থা করার কথা হাদীসে এসেছে।
জাফর রা. শহীদ হওয়ার পর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার প্রস্ত্তত কর। কেননা তারা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে যা তাদেরকে (খাবার প্রস্ত্তত করা থেকে) বিরত রাখবে।
-জামে তিরমিযী ২/৩১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০
নিচের বিষয়গুলোর সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।ক) মৃত ব্যক্তির রূহের...
নিচের বিষয়গুলোর সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য দুআ করে খাওয়া ও টাকা গ্রহণ করা
যাবে কি?
খ) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য এক-দুটি সূরা যেমন-সূরা ইয়াসীন, সূরা মূলক ইত্যাদি তেলাওয়াত করে দুআ করে খাওয়া ও টাকা গ্রহণ করা যাবে কি?
গ) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য কুরআন খতম করে দুআ করে টাকা গ্রহণ করা ও খাওয়া যাবে কি?
ঘ) দুনিয়াবাী উদ্দেশ্যে, যেমন-রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করা, ঘরে বরকতের জন্য দুআ করে খাওয়া ও টাকা গ্রহণ করা যাবে কি?
ঙ) দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে এক-দুটি সূরা তেলাওয়াত করে দুআ করে খাওয়া ও টাকা গ্রহণ করা যাবে কি?
চ) দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে কুরআন খতমের পর দুআ করে খাওয়া ও টাকা নেওয়া যাবে কি? উপরোক্ত সূরতগুলোর মধ্যে কোন সূরতে টাকা গ্রহণ করা ও খাওয়া জায়েয হবে আর কোনটিতে জায়েয হবে না?
মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের জন্য কুরআন মজীদ খতম করে বা কুরআন মজীদের কোনো সূরা তিলাওয়াত করে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করো না এবং এর দ্বারা আয় বৃদ্ধির চিন্তা করো না।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৫২৯
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড় এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের পর এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে এর বিনিময় মানুষের কাছে চাবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৯১৭
আরেক বর্ণনায় আছে, তাবেয়ী যাযান রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে মানুষের থেকে তার বিনিময় গ্রহণ করে সে যখন হাশরের মাঠে উঠবে তখন তার চেহারায় গোশত থাকবে না। শুধু হাড্ডি থাকবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৮২৪
(আরো দেখুন : মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৯৪৪৪; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩০৬৩৪; ফাতহুল বারী ৮/৭১৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/৩৪৭; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৫৩)
অবশ্য কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে, যেমন-রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করা, বিপদ-আপদ দূর হওয়া বা ঘরে বরকতের জন্য কোনো সূরা তিলাওয়াত করে বা কুরআন মজীদ খতম করে বিনিময় নেওয়ার অবকাশ আছে। সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, সাহাবীদের একটি জামাত জলাশয়ে বসবাসকারী একটি গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ গোত্রের এক ব্যক্তিকে বিচ্ছু দংশন করেছিল। তাদের একজন এসে সাহাবীদেরকে বলল, আপনাদের মাধ্যে কি কোনো ঝাড়-ফুঁককারী আছেন? আমাদের গোত্রের এক লোককে বিচ্ছু দংশন করেছে। তখন সাহাবীগণের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন। এরপর কিছু বকরি দানের বিনিময়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন (এবং ফুঁক দিলেন) ফলে লোকটি আরোগ্য লাভ করল। এরপর তিনি যখন বকরিগুলো নিয়ে অন্যান্য সাহাবীদের নিকট এলেন তারা কাজটি অপছন্দ করলেন এবং বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের উপর বিনিময় গ্রহণ করছেন!
অবশেষে তারা মদীনায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর বিনিময় গ্রহণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিলেন এবং বললেন, তোমরা যে সকল জিনিসের বিনিময় গ্রহণ কর তন্মধ্যে আল্লাহ তাআলার কিতাব সবচেয়ে উপযুক্ত (অর্থাৎ যখন এর দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হয়)।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৩৭ (আরো দেখুন : শরহু মাআনিল আছার ২/২৪৬; উমদাতুল কারী ১২/৯৫, ২১/২৬৪; শিফাউল আলীল, পৃষ্ঠা : ১৫৭)
কিন্তু এ কাজকে পেশা বানানো কিছুতেই সমীচীন নয়। আর দুআ করে কোনো ধরনের বিনিময় আদান-প্রদান বৈধ নয়। চাই তা যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন। (ফাতহুল বারী ১১/৯৭)
উল্লেখ্য যে, যদি শুধু দুআ ও খমতকারীদের জন্যই খাবারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে এবং নাজায়েয হবে। আর যদি ব্যাপকভাবে দাওয়াতের আয়োজন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে না এবং অন্যদের মতো খতম পড়ুয়ারাও খেতে পারবেন।
-মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৩৩৪; ইমদাদুল আহকাম ১/২১২; কিফায়াতুল মুফতী ২/৪১
এক ওয়াযে শুনেছি, আয়াতুল কুরসীর ব্যাপারে শয়তান নিজেই নাকি বলেছে,...
এক ওয়াযে শুনেছি, আয়াতুল কুরসীর ব্যাপারে শয়তান নিজেই নাকি বলেছে, শোয়ার আগে এটি পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারে না। একথা কি হাদীসে আছে? থাকলে তা কি সহীহ হাদীস?
হ্যাঁ, সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত। এ সংক্রান্ত পূর্ণ হাদীসটি হল, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সদকাতুল ফিতরের মাল পাহারা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করলেন। হঠাৎ এক রাতে দেখলাম, অপরিচিত এক লোক সদকাতুল ফিতরের মাল (খাদ্যশস্য) থেকে অঞ্জলিভরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, তোমাকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে তুলে দিব। লোকটি বলল, দেখুন, আমি অভাবগ্রস্ত। একটি পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার উপর। আমাকে ছেড়ে দিন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! গতকাল রাতে তোমার বন্দীর কী হল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, প্রচন্ডভাবে সে অভাবগ্রস্ত। তার পরিবারও রয়েছে। তখন তার প্রতি আমার দয়া হল তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। আবারো সে আসবে। আমি তখন নিশ্চিত হলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু বলেছেন সে আসবে তাহলে সে অবশ্যই আসবে। তাই আমি দ্বিতীয় রাতে ওঁৎপেতে থাকলাম। ঠিকই সে দ্বিতীয় রাতে এসে অঞ্জলিভরে খাবার নিতে লাগল। আমি তাকে আবারো ধরলাম। এবং বললাম, তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে তুলে দিব। সে আবারো একই কথা বলল। আমিও তাকে পূর্বের ন্যায় ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে পূর্বের ন্যায় বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। আবারো সে আসবে। এভাবে তৃতীয়বার যখন ধরা পড়ল তখন আমি বললাম, এ নিয়ে তিনবার হল। প্রতিবারই তুমি বলেছ আর আসবে না, কিন্তু তুমি আবারো এসেছ। আজ আর তোমাকে ছাড়ব না। তখন সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে আমি কিছু কালিমা শিখিয়ে দিব, যা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে উপকৃত করবেন। আমি তার কথায় রাজি হয়ে বললাম, সেই কালিমাগুলো কী? সে বলল, আপনি রাতে যখন ঘুমাতে যাবেন তখন শোয়ার আগে আয়াতুল কুরসী পড়বেন। তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাযতকারী আপনার জন্য নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান সকাল পর্যন্ত আপনার নিকট আসতে পারবে না। এরপর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে বললেন, সে চরম মিথ্যাবাদী। তবে এই কথাটা সত্য বলেছে। তুমি কি জান, গত তিন রাতে কার সাথে কথা বলেছ? আবু হুরায়রা রা. বললেন, না। আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ছিল শয়তান।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৩১১
শ্রদ্ধাভাজন মুফতী সাহেবের নিকট বিনীত আরজ এই যে, নিম্নোল্লেখিত মাসআলার...
শ্রদ্ধাভাজন মুফতী সাহেবের নিকট বিনীত আরজ এই যে, নিম্নোল্লেখিত মাসআলার সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাকে বাধিত করবেন। ফিদয়া আদায় করার ক্ষেত্রে মিসকীনকে খানা না খাইয়ে এর মূল্য সদকা করে দিতে চাইলে কাউকে মালিক বনানো কি জরুরি? কোনো কারণবশত খানা খাওয়াতে না পারলে এর মূল্য অন্যান্য নফল সদকার মতো মসজিদে দেওয়া, মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ বা জনকল্যাণমূলক অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে কি না?
না খাইয়ে অর্থ দিয়ে ফিদয়া দিতে চাইলে দু বেলা খাবারের ন্যায্য মূল্য কোনো মিসকীনকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে এর মূল্য দিতে চাইলে উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক।
আর যেহেতু ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক, তাই ফিদয়ার মূল্য মসজিদে দেওয়া, মাদরাসার বিল্ডিং মেরামত করা বা অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৬০-২৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮
আমি একদিন পুকুরে গোসল করছিলাম। গোসল করার সময় লুঙ্গি সামান্য...
আমি একদিন পুকুরে গোসল করছিলাম। গোসল করার সময় লুঙ্গি সামান্য নিচু হলে শুধু নাভি দৃষ্টিগোচর হয়। এতে আমার পাশে থাকা এক চাচা বললেন, নাভি সতর, তা দেখলে হারামের গুনাহ হবে। আমি বললাম, আমি জানি নাভি সতর নয়। তার প্রতি দৃষ্টি পড়লে গুনাহ হবে না। সে বলল, সারা জীবন শুনে এলাম নাভির প্রতি দৃষ্টি পড়লে গুনাহ হয়। জানিয়ে বাধিত করবেন তার কথা কি সঠিক?
নাভি সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। আপনার চাচার বক্তব্যটি সঠিক নয়। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। সুতরাং যদি কোনো পুরুষের শুধু নাভি খুলে যায় এবং নাভি সংলগ্ন নিচের অংশ ঢাকা থাকে তাহলে এতে সতর খোলার গুনাহ হবে না।
হযরত আমর ইবনে শুআইব রাহ. তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৩২৩৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৭; সুনানে দারা কুতনী ১/৩২০
প্রকাশ থাকে যে, নাভি সতর না হলেও তা ঢেকে থাকে এভাবে পোষাক পরিধান করা উচিত। কেননা, নাভি সংলগ্ন নিচের অংশ সতর। নাভি খুলে গেলে নিচের অংশও কিছুটা খুলে যাওয়া স্বাভাবিক।
হযরত আবুল আলা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রা. দেহের নিম্নাংশের পরিধেয় পোশাক নাভির উপর পরিধান করতেন।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৩২৪৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৭৫৬; হেদায়া ১/৯২; নসবুর রায়া ১/২৯৬-৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২; ১৮/৯০; আলমুগনী ২/২৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৪, ৬/৩৬৬
আমার এক বন্ধু খালি মাথায় হাম্মামে যাচ্ছিলেন। আমি তা লক্ষ...
আমার এক বন্ধু খালি মাথায় হাম্মামে যাচ্ছিলেন। আমি তা লক্ষ করে তার টুপিটি তার হাতে তুলে দিলাম। তিনি টুপি হাতে নিয়ে হেসে বললেন, টুপি মাথায় হাম্মামে যাওয়ার বিধান কী? এ ব্যাপারে কোনো হাদীস বা আছার আছে কি? আমি তখন সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারিনি। মাসআলাটির দলীলসহ সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
টুপি বা কোনো কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে হাম্মামে যাওয়া উত্তম। একটি মুরসাল বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাম্মামে (ইস্তিঞ্জাখানায়) প্রবেশের সময় জুতা পরিধান করতেন এবং মাথা ঢেকে নিতেন।’ (আস সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ১/৯৬)
খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর আমলও এমনই ছিল।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৪৪; শরহুল মুহাযযাব ২/১০৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১/২২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ৩১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৫; ইলাউস সুনান ১/৪৪৯
হাশরের ময়দানে সবাই উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাকে...
হাশরের ময়দানে সবাই উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম আ.কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৬
আমাদের দেশে অনেক লোককে দেখা যায়, আবা পরিধান করে, যা...
আমাদের দেশে অনেক লোককে দেখা যায়, আবা পরিধান করে, যা টাখনুর নিচে ঝুলে থাকে। আমরা জানি, টাখনুর নিচে কাপড় পরা নিষেধ। আবাও কি এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত?
হ্যাঁ, আবা এবং সকল ধরনের পোষাক পুরুষের জন্য টাখনু গিরার নিচে ঝুলিয়ে পরা নাজায়েয। কেননা হাদীস শরীফে লুঙ্গি, জামা, পাগড়ি এবং চাদরকে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরতে নিষেধ করা হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ ২/২৫৪; তবারানী ৮/২৩২)
অন্য হাদীসে আছে, টাখনুর নিচে যতটুকু ঝুলিয়ে পরবে তা জাহান্নামে যাবে।
(সুনানে আবু দাউদ ৫৬৬)-সহীহ বুখারী ২/৮৬১; ফাতহুল বারী ১০/২৬৮; সুনানে নাসাঈ ২/২৫৪; আওনুল মাবুদ ১১/১০৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১২০; তবারানী ৮/২৩২
আজকের আধুনিক সময়ে যদিও ঘড়ির প্রয়োজন কমে গেছে তবুও প্রায়...
আজকের আধুনিক সময়ে যদিও ঘড়ির প্রয়োজন কমে গেছে তবুও প্রায় সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অনেকেই বলে যে, পুরুষদের ঘড়ি বাম হাতে পরতে হয়। আর মেয়েদের পরতে হয় ডান হাতে। আবার দু তিনজন হুজুর থেকে শুনেছি, পুরুষরা ঘড়ি ডান হাতে পরবে। তারা মেয়েদের কথা উল্লেখ করেননি। এখন কার কথা অনুসরণ করব? দলিলসহ জানতে চাই।
পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকে নিজ নিজ সুবিধামত যেকোনো হাতে ঘড়ি পরতে পারবে। এ বিষয়ে শরীয়তে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। পুরুষ-মহিলার ঘড়ি পরিধানের নিয়ম ভিন্ন হওয়ার যে কথা প্রশ্নে বলা হয়েছে এর কোনো ভিত্তি নেই।
ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৩০১
জুমআর প্রথম আযানের পর আমরা অনেকেই খানাপিনা, গোসল, কাপড় ইস্ত্রি,...
জুমআর প্রথম আযানের পর আমরা অনেকেই খানাপিনা, গোসল, কাপড় ইস্ত্রি, কাপড় ধোয়া, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কাজ করে থাকি। জানতে চাই, আযানের পর এ সমস্ত কাজ করা ঠিক কি না?
জুমআর প্রথম আযানের পর অন্য কোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে মসজিদে যাওয়ার প্রস্ত্ততি নেওয়া এবং মসজিদের দিকে রওনা হওয়া জরুরি। এ সময় গল্পগুজব করা, কাপড় ধোয়া, কাপড় ইস্ত্রি করা, এমনকি ঘরে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা অর্থাৎ জুমআর প্রস্ত্ততিমূলক কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা মাকরূহে তাহরীমী। অবশ্য নামাযের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ যেমন-অযু, গোসল, কাপড় পরিধান ইত্যাদির সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে জুমআর দুই আযানের মাঝে যে লম্বা সময়ের ব্যবধান রাখার যে প্রচলন রয়েছে তা সংশোধন করা উচিত। দুই আযানের মাঝে অধিক বিরতি না দিয়ে দুই আযানকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসা কর্তব্য।
সহীহ বুখারী, হাদীস : ৮৭৮; ফাতহুল বারী ২/৪১৯; তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৭০; আহকামুল কুরআন, থানভী ৪/৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৬; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৮০
আমরা অনেক সময় বাজার থেকে নতুন কাপড় কিনে এনে না...
আমরা অনেক সময় বাজার থেকে নতুন কাপড় কিনে এনে না ধুয়ে পরিধান করি এবং তা পরে নামাযও পড়ি। অথচ নতুন কাপড় সুতা থেকে শুরু করে পূর্ণ কাপড় হওয়া পর্যন্ত অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। যেখানে পবিত্রতা-অপবিত্রতার প্রতি খেয়াল রাখা হয় না। জানার বিষয় হল, নতুন কাপড় না ধুয়ে তা পরিধান করে নামায পড়া সহীহ হবে কি?
এ ধরনের পরিধেয় বস্ত্র নতুন হলেও নাপাক হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত না হলে তা পাক ধরা হবে। নিছক সন্দেহ বা মনের ধারণার ভিত্তিতে তা নাপাক বলা যাবে না। নতুন কাপড়ে যেহেতু নাপাক লাগার কোনো আলামত পাওয়া যায় না তাই মূলত তা পবিত্র। হ্যাঁ, কোনো কাপড়ে নাপাকি লাগা নিশ্চিত হলে কিংবা প্রবল ধারণা হলে সেটি অপবিত্র বলে গণ্য হবে। অতএব নতুন কাপড় না ধুয়ে পরিধান করা ও তা গায়ে দিয়ে নামায পড়া জায়েয। তবে ধুয়ে পরাই ভালো।
মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/৩৬২
একটি বড় গোসলখানায় আমরা কয়েকজন একসাথে গোসল করছিলাম। এক ভাই...
একটি বড় গোসলখানায় আমরা কয়েকজন একসাথে গোসল করছিলাম। এক ভাই শুধু সাদা একটা লুঙ্গি পরে গোসল করছিলেন। উপর গামছা বা অন্য কিছু ছিল না। ফলে লুঙ্গি ভিজে শরীরের সাথে লেগে থাকার কারণে শরীরের রং স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। আমি বললাম, ভাই আপনার তো ফরয তরক হচ্ছে। সে বলল কেন? আমি তো লুঙ্গি পরে আছি। আমি বললাম, লুঙ্গি পরে থাকলেও স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। যাহোক তার সাথে এ নিয়ে কিছু বিতর্কও হল। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় কি সতর ঢাকার ফরয আদায় হবে? এবং কার সামনে এরূপ ঘটলে তার তার জন্য কি হুকুম?
যে কাপড় পরিধান করার পরও শরীরের রং দেখা যায় সে কাপড় দ্বারা সতর ঢাকার হক আদায় হয় না। তদ্রূপ লুঙ্গি ইত্যাদি ভিজলে যদি শরীরের রং ও আকার-আকৃতি কাপড়ের উপর থেকে বুঝা যায় তাহলে লোকজনের সামনে সে কাপড় পরে গোসল করলে তার উপর অন্য কোনো কাপড় যেমন গামছা, তোয়ালে ইত্যাদি পরে নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সতর না ঢাকার গুনাহ হবে। আর এ অবস্থায় কারো দৃষ্টি পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া কর্তব্য।
আলমুনতাকা, কাযী আবুল ওলীদ সুলাইমান বাজী ১০/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৫, ৩৬৬
আমাদের এলাকায় প্রচলন যে, আযান-ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার...
আমাদের এলাকায় প্রচলন যে, আযান-ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় তর্জনীতে চুমু খেয়ে চোখে বুলিয়ে দেওয়া। হযরত আবু বকর রা. নাকি এই আমল করতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, যে ব্যক্তি তা করবে তার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। জানতে চাই এই হাদীসটি সহীহ কি না?
প্রশ্নোক্ত আমলটি এবং এ সম্পর্কিত বর্ণনা মূলত ‘মুসনাদে দাইলামী’তে রয়েছে। প্রখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও জাল বলেছেন। হাফেয সাখাভী রাহ. বলেন, এটি প্রমাণিত নয়। (আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৪৫০-৪৫৯)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. বলেন, মুআজ্জিনের শাহাদাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাতগুলো রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই বানোয়াট। (তাইসীরুল মাকাল হাদীস : ১২৩; রাহে সুন্নাত ২৪৩)
আল্লামা লখনভী রাহ. বলেন, সত্যি কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস বা সাহাবীর কোনো আছর বা আমল বর্ণিত হয়নি। যে তা দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী। আর এটি একটি নিকৃষ্টতম বিদআত। শরীয়তের কিতাবসমূহে যার কোনো ভিত্তি নেই। (আসসিয়ায়াহ ২/৪৬)
আরো দেখুন : আলমাসনূ ১৬৮-১৭০; তাযকিরাতুল মাওজূআত ৩৪; কাশফুল খাফা ২/২০৬-২০৭; প্রচলিত জাল হাদীস
গায়রে মাহরাম মহিলার ঝুটা খাওয়া পুরুষের জন্য জায়েয কি না?...
গায়রে মাহরাম মহিলার ঝুটা খাওয়া পুরুষের জন্য জায়েয কি না? এর হুকুম কী? তদ্রূপ পুরুষের ঝুটা গায়রে মাহরাম মহিলার খাওয়ার হুকুম কী?
গায়রে মাহরাম পুরুষ বা মহিলার ঝুটাও পাক। তবে কেউ গায়রে মাহরামের অবশিষ্ট খাবার বা পানীয় গ্রহণে স্বাদ বা আকর্ষণ বোধ করলে তার জন্য মাকরূহ হবে। আর আকর্ষণ না হলে, স্বাদ নেওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে মাকরূহ হবে না।
ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২২২; আলবাহরুর রায়েক ১/১২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩
আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসি।...
আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসি। ডিমগুলো ভাঙ্গার পর দেখা গেল, দুইটি ডিম নষ্ট, খাওয়ার উপযোগী নয়। জানার বিষয় হল, নষ্ট দুটি ডিমের টাকা দোকানির কাছ থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে কি না? উল্লেখ্য, বাসায় আনার সঙ্গে সঙ্গেই ডিমগুলো ভাঙ্গা হয়েছে।
হ্যাঁ, নষ্ট ডিমের টাকা দোকানি থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২৫; হেদায়া ৩/৪৩; ফাতহুল কাদীর ৬/১৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/৫৪; রদ্দুল মুহতার ৫/২৫
কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় কাজ চলাকালীন অবস্থায় কুরআন মজীদের...
কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় কাজ চলাকালীন অবস্থায় কুরআন মজীদের উপর ময়লা পড়ার আশঙ্কায় একটা ট্রাংকে রেখে তা খাটের নিচে রেখে দেওয়া হয়েছিল। আর আমরা উক্ত খাটের উপর ঘুমিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য উক্ত কাজটি করা কি ঠিক হয়েছে?
পবিত্র কাপড় বা এমন কিছু দিয়ে আবৃত করে টেবিল, আলমারি বা উপরে কোথাও রাখলে তা আরো ভালো হত। তবে ট্রাংকে করে ঐভাবে রাখার কারণে কোনো গুনাহ হয়নি।
ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১০৫
এক ব্যক্তি শহরে থাকে। গ্রামে তার অনেক জমি রয়েছে। তা...
এক ব্যক্তি শহরে থাকে। গ্রামে তার অনেক জমি রয়েছে। তা থেকে কিছু জমি সে এক দরিদ্রকে এক বছরের জন্য চাষ করে খাওয়ার জন্য দেয়। কিন্তু কিছু দিন পর জমির মালিক জমি বিক্রি করে দেয়। এদিকে ঐ জমিতে দরিদ্র ব্যক্তি ধান ক্ষেত করেছে যাতে এখনো ধান হয়নি। এখন ক্রেতা চাচ্ছে ধান ক্ষেত উঠিয়ে দিতে এবং তা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য চাষীকে চাপ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় কি জমি ক্রেতা ধান ক্ষেত উঠিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় মালিক যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ ব্যক্তিকে চাষ করতে দিয়েছে তাই এখন ফসল উঠিয়ে নিয়ে জমি খালি করে দিতে বাধ্য করলে বিক্রেতার জন্য চাষীকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৩; ফাতহুল কাদীর ৭/৪৭৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/১৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৩৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮২
ভাতের মাড় যদি কোনো সুতি কাপড় বা অন্য কোনো কাপড়ে...
ভাতের মাড় যদি কোনো সুতি কাপড় বা অন্য কোনো কাপড়ে দেওয়া হয় তাহলে সে কাপড় পরে নামায পড়া জায়েয হবে কি না? ভাতের মাড় কি পাক?
জ্বী, ভাতের মাড় পাক। তা কোনো কাপড়ে দেওয়া হলে তা পরে নামায পড়তে কোনো অসুবিধা নেই।
এক খতীব সাহেবকে জুমআর বয়ানে বলতে শুনেছি যে, মোজার উপর...
এক খতীব সাহেবকে জুমআর বয়ানে বলতে শুনেছি যে, মোজার উপর মাসেহ বৈধ হওয়ার জন্য তা চামড়ার হওয়া জরুরি নয়। বরং আমাদের দেশে প্রচলিত সব ধরনের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয। চাই তা সুতার হোক বা পশমের হোক বা অন্য কোনো কিছুর হোক। জানতে চাই, তার এ কথা কতটুকু সঠিক?
খতীব সাহেবের ঐ কথা ঠিক নয়। চামড়ার মোজার উপর মাসেহ জায়েয আছে। কিন্তু চামড়া ছাড়া সুতা বা পশমের তৈরি যেসব মোজা সচরাচর পাওয়া যায় এর উপর মাসেহ সহীহ নয়। তবে সুতা বা পশমের মোজায় নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর মাসেহ জায়েয হবে। শর্তগুলো হচ্ছে
ক) মোজা এমন মোটা ও পুরু হওয়া যে, জুতা ছাড়া শুধু মোজা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা যায়। এতে মোজা ফেটে যায় না এবং নষ্টও হয় না।
খ) পায়ের সাথে কোনো জিনিস দ্বারা বাঁধা ছাড়াই তা লেগে থাকে এবং তা পরিধান করে হাঁটা যায়।
গ) মোজা এমন মোটা যে, তা পানি চোষে না এবং তা ভেদ করে পানি পা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
ঘ) তা পরিধান করার পর মোজার উপর থেকে ভিতরের অংশ দেখা যায় না। সচরাচর ব্যবহৃত সুতা বা পশমের মোজায় যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না তাই এর উপর মাসেহ জায়েয হবে না।
জামে তিরমিযী ১/১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮২; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪৩-৩৪৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৮; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ১২০; মাজমাউল আনহুর ১/৭৫; আননাহরুল ফায়েক ১/১২৩
আমার এক আত্মীয়ের ছোট বাচ্চা আছে, যার বয়স এক বছর...
আমার এক আত্মীয়ের ছোট বাচ্চা আছে, যার বয়স এক বছর আট মাস। সে এখনো অন্যান্য খাবার মুখে নিতে চায় না। বুকের দুধের উপরই অনেকটা নির্ভরশীল। প্রশ্ন হল, সর্বোচ্চ কতদিন তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে?
শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়সীমা হল, জন্ম থেকে চান্দ্র মাস হিসাবে দু’বছর। এরপর শিশুকে বুকের দুধ পান করানো জায়েয নয়। কুরআন, হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের বর্ণনামতে এটাই প্রমাণিত ও অনুসরণীয়। তাই উক্ত শিশুকেও দু’ বছর পর্যন- বুকের দুধ পান করানো যাবে। এরপর জায়েয হবে না।
না।-সহীহ বুখারী ২/৭৬৪; জামে তিরমিযী ১১৫২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৯/২৯৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; হিদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৩/৪২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২০৯
বাচ্চা দুধ পান করা অবস'ায় অনেক সময় মায়ের কোলে বমি...
বাচ্চা দুধ পান করা অবস'ায় অনেক সময় মায়ের কোলে বমি করে দেয়। আবার কখনো দুধ পান করার পর বমি করে দেয়। বমির পরিমাণ কখনো বেশি হয় কখনো কম। প্রশ্ন এই যে, এই কাপড় পরিধান করে নামায পড়া যাবে কি?
দুধের শিশুর বমিও বড়দের মতো একই হুকুমের অন-র্ভুক্ত। অর্থাৎ মুখ ভর্তি বমি হলে তা নাপাক। আর মুখ ভর্তি না হলে নাপাক নয়। উল্লেখ্য, দুধ পান করার পরক্ষণে বমি করলেও উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে। হ্যাঁ, খাবার গিলে ফেলার আগেই মুখ থেকে বের করে দিলে এর কারণে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না।
হাশিয়াতু তহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৪৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪; আসসিয়াআহ ১/২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৭
একব্যক্তি কাপড়ের মোজার উপর চামড়ার মোজা পরিধান করে তার উপর...
একব্যক্তি কাপড়ের মোজার উপর চামড়ার মোজা পরিধান করে তার উপর মাসহ করে। তার মাসহ কি সঠিক হয়েছে?
হ্যাঁ, কাপড়ের মোজার উপর চামড়ার মোজা পরিধান করলেও মাসহ করা জায়েয। অবশ্য চামড়ার মোজা পায়ের সাথে এঁটে থাকতে হবে এবং এতে অন্যান্য শর্তও থাকতে হবে।
-শরহুল মুনয়া পৃ. ১১২; রদ্দুল মুহতার ১/২৬৯
আমাদের ঘরে ব্যাঙের উপদ্রব একটু বেশি। একদিন মেঝেতে পড়ে থাকা...
আমাদের ঘরে ব্যাঙের উপদ্রব একটু বেশি। একদিন মেঝেতে পড়ে থাকা আমার গেঞ্জির মধ্যে একটি ব্যাঙ প্রস্রাব করে দেয় এবং প্রায় পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর আমি তা না ধুয়ে পরিধান করে আসরের নামায আদায় করি। আমার নামায কি আদায় হয়েছে?
ডাঙ্গায় বসবাসকারী ব্যাঙের প্রস্রাব ‘নাজাসাতে গলীজা’। তাই প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী গেঞ্জিটি নাপাক হয়ে গেছে। অতএব ঐ গেঞ্জি পরিধান করে যে নামায পড়া হয়েছে তা সহীহ হয়নি। ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি।
-আননাহরুল ফায়েক ১/১৪৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৪৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৭৫
রাস্তার কাদা-মাটি কাপড় বা শরীরে নিয়ে নামায পড়া ৷
আর যদি কাদায় বা পানিতে স্পষ্ট নাপাকি দেখা যায়, তাহলে তা নাপাক হিসেবে গন্য হবে ৷ এবং না ধুয়ে তা নিয়ে নামায পড়লে নামায হবে না ৷
-হেদায়া-১/৭৬; রদ্দুল মুহতার, ১/৫৩০; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪৩; ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-৫/১২৮৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
কাপাড়ে রাস্তার কাদা লাগলে উক্ত কাপড় পরে নামায পড়া ৷
কাপড় কি নাপাক হয়ে যাবে কি না? কাদাযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায হবে কি না? জানালে উপকৃত হবো৷
-আলআশবাহ: ১/১৯৯; ফাতহুল কাদীর: ১/১৮৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া: ৪/২৩ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
টয়লেটে যাবার সময় মাথায় কাপড় রাখা ৷
খুলাসাতুল আহকাম,হাদীস নং-৩২৩ ৷
হযরত হাবীব বিন সালেহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন, তখন জুতা পরিধান করতেন, এবং মাথা ঢেকে নিতেন।
সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৫৬।
অতএব মাথা খুলে রেখে বাথরুমে যাওয়া অনুত্তম ও সুন্নত পরিপন্থী ৷ তাই প্রশ্নে বর্নিত উক্ত ব্যক্তির কথা সঠিক ৷ খালি মাথায় বাথরুমে যাওয়া ঠিক নয় ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
শিশুকে বোকের দুধ পান করানোর সময়সীমা ৷
শিশুকে বুকের দুধ পান করানো জায়েয নয়। তাই আপনার বাচ্চাকেও দু’ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করানো যাবে ৷ এবং এর ভিতরে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে ৷ যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরও যদি দুই বছরে অন্যান্য খাবারে অভ্যস্ত না হয় ৷ তাহলে সর্বোচ্চআড়াই বছর পর্যন্ত বোকের দুধ পান করানো যাবে ৷ এরপর আর কোন ভাবেই বোকের দুধ পান করানো জায়েয হবে না ৷
-সহীহ বুখারী ২/৭৬৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২০৯৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
কাদিয়ানীদের পণ্য ক্রয় করা সেভেন আপ ইত্যাদি কোমল পানীয় পান করা ৷
পেপসি সেভেন আপ ইত্যাদি পানীয় বস্তু যদি হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদি বস্তু দিয়ে বানানোর বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া যায় অথবা যদি ইত্যাদি হারাম বস্তু এমনভাবে রিফাইন করে তৈরি করা হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তাহলে উক্ত বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ আছে। আর যদি সেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তাহলে উক্ত হারাম বস্তু যাতে মিশ্রিত করা হবে, তা ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় কিছুই জায়েজ হবে না।
উল্লেখ্য যে, আমাদের জানা মতে, এসব পানীয় বস্তুর মাঝে কোন নাপাক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না৷ বরং সোডাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, আর যদি কোন নাপাক দ্রব্য ব্যবহার হয়েও থাকে, তাহলেও তা এমনভাবে রিফাইন হয়ে যায় যে, এসবের কোন নামগন্ধও আর বাকি থাকে না, তাই এসব পণ্য ব্যবহারে শরয়ী কোন বাঁধা নেই। তবে পরবর্তিতে হারাম বস্তু দিয়ে তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত হলে এবং তার মৌলিকত্ব বাকি থাকলে হারাম হিসেবেই গন্য হবে ৷
হিন্দিয়া ৫/৩৪৮, ৪১০; নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২; মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৮৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
আরবী লেখাযুক্ত জুতা পরিধান করা ৷
তাহতাবী আলাল মারাকী পৃঃ ১১৮; ফাতাওয়াযে হিন্দিয়া ৫/৩২২ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
মেশিনে উৎপাদিত ডিম ও মুরগী খাওয়া ৷
ফতওয়ায়ে শামী ১/২২১ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393
বই খাতা কলম ইত্যাদি হাত থেকে পড়ে গেলে উঠিয়ে চুমু খাওয়া ও মুরুব্বিদের গায়ে পা লাগলে চুমু খাওয়া ৷
সেজদা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে করা জায়েজ নয়।
মুরব্বীদের গায়ে পা লাগলে চুমু খাওয়া মূলত সম্মান দেখানোর জন্য হয় । এটা করাতেও কোন সমস্যা নাই। তবে এক্ষেত্রেও ঝুঁকে চুমু খাওয়া হারাম।
উল্লেখ্য যে, চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে জরুরী মনে করা বা শরয়ী বিধান মনে করা বিদআত। এমনিতে করতে কোন সমস্যা নেই ৷
রাদ্দুল মুহতার-৫/২৪৬, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৫৯, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-৭/১৪৭৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
বীর্য পাক না নাপাক৷
আমার বিন মাইমুন রহঃ সুলাইমান বিন ইয়াসার রাঃ কে বীর্য লাগা কাপড়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন, “আমি রাসূল সাঃ এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম তারপর তিনি নামাযের জন্য বের হতেন এমতাবস্থায় যে,কাপড়ে পানির ছাপ লেগে থাকতো।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১, ২২৯
ইমাম বুখারি রঃ উক্ত হাদীসকে বীর্য নাপাক হওয়ার অনুচ্ছেদে এনে তাঁর মত বীর্য নাপাক হওয়া-ই প্রমান করেছেন ৷ ইমাম বুখারীর বিরোধীতা করে বীর্যকে কিছু লোক দলীল ছাড়াই পাক বলে থাকে ৷
রাসূল সাঃ এটা সিক্ত থাকলে ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় কাপড়ে লাগলে তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর শুকিয়ে গেলে খুটিয়ে তুলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাক হলে ধৌত করার নির্দেশনা দিলেন কেন? আর নবীজী সাঃ এর কাপড়ে যে বীর্য লেগে শুকিয়ে গিয়েছিল, তা তিনি খুটিয়ে তুলে ফেলাটাই প্রমাণ করে তা নাপাক ৷ পাক থাকলে খুটে ফেলে দেয়ার দরকার কি? যেমন কাপড়ে যদি আটা লেগে শুকিয়ে যায়, তাহলে তা খুটিয়ে ফেলে দিলে তা একেবারেই উঠে যায়, এমনি বীর্যও শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে তা তুলে ফেললে তার কোন কিছু আর বাকি থাকত না, তাই নবীজী সাঃ খুটিয়ে তুলে ফেলার পর তা না ধুয়েই নামায পড়েছেন। বীর্য পাক এজন্য নয়।
এছাড়া অন্যান্য হাদীসে এসেছে-
আম্মার বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথাঃ পায়খানা, প্রশ্রাব,
বমি, রক্ত, বীর্য। সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৫৮৷
হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ বলেন- বীর্য সিক্ত থাকলে তা ধুয়ে ফেল, আর শুকিয়ে গেলে তা খুটিয়ে তুলে ফেল।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৯৩৩
সুতরাং বুঝা গেল যে, বীর্য নাপাক। তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে খুটিয়ে তুলে ফেললে আর কোন চিহ্ন বাকি না থাকলে পাক হয়ে যাবে । আর সিক্ত হলে ধৌত করতে হবে ৷ কাপড়ে বীর্য লেগে থাকলে কাপড় ধৌত করতে হবে ৷ উক্ত কাপড়সহ নামায পড়লে নামায সহিহ হবে না।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
দুধের শিশুর বমির হুকুম৷
তবে খাবার গিলে ফেলার আগেই মুখ থেকে বের করে দিলে এর কারণে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না।
-ফাতহুল কাদীর ১/১৭৯; হাশিয়াতু তহতাবী আলালমারাকী পৃষ্ঠা ৪৯৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
সন্তান জন্মের পর করণীয়৷
১৷ সন্তান জন্মের পর পিতা-মাতার উপর কর্তব্য হল, তাকে প্রথমেই ভাল করে গোসল দিবে। প্রথমে লবন পানি দিয়ে তারপর খালেস পানি দিয়ে, তাহলে
ফোড়া, গোটা ইত্যাদি অনেক রোগ থেকে শিশু মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। শরীরে বেশি ময়লা থাকলে কয়েকদিন পর্যন্ত লবন পানি দিয়ে গোসল করাবে, ময়লা বেশি না হলে শুধু খালেস পানি দিয়ে গোসল করাবে।
২৷ ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর নাক, কান, গলা, মাথা ভালভাবে পরিস্কার করবে। অপরিচ্ছন্নতা থেকে শিশুর বহু রোগ জন্ম নেয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন।
৩৷ সম্ভব হলে শিশুকে প্রথম দুধ পান করানোর আগে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে নিয়ে সামান্য খেজুর চিবিয়ে
শিশুর মুখে দিবে। এটাকেই তাহনীক বলে। এটা করা মুস্তাহাব।
৪৷ জন্ম নেবার পর শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিবে মৃদু আওয়াজে।
৫৷ শিশু জন্ম নেবার সাত দিনের মাথায় মাথার চুল ফেলে চুল পরিমাপ করে সে ওজন পরিমাণ স্বর্ণ বা রোপা বা তার মূল্য দান করা মুস্তাহাব।
৬৷ সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিন ছেলে হলে দু’টি বকরী বা গরু-মহিষের ৭ ভাগের দুই ভাগ, আর মেয়ে হলে একটি বকরী বা গরু-মহীষের ৭ ভাগের একভাগ আক্বিকা হিসেবে জবাই করা এ মুস্তাহাব। আক্বিকার পশুর হাড্ডি ভাঙ্গবে না। আত্বীয় স্বজনকে খাওয়াবে গোস্ত, এবং গরীব দুঃখীদের খাওয়াবে। নিজেরাও খাবে। সেদিন ই ছেলেটির সুন্দর নাম রাখা মুস্তাহাব । ৭দিনের মাথায় আক্বিকা দিতে না পারলে ১৪দিনের মাথায়, না হলে ২১ দিনের মাথায় আক্বিকা দিবে। অথবা বালেগ হওয়ার আগে যেকোন সময় জন্মের সাত দিন হিসেব করে সাত দিনের মাথায় আক্বিকা দেয়া উত্তম। জরুরী নয়।
বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকলে তাকে গোসল দেয়া আবশ্যক নয়। তবে যৌক্তিক কোন কারণ না থাকলে ময়লাসহ রাখা উচিত নয়। কারণ ময়লা ও নাপাক ব্যক্তির কাছে ফেরেস্তা আসে না।
হযরত হুসাইন রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়।
মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৭৮০, মুসান্নাফে
আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৭৯৮৫৷
হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে আমি তাকে রাসূল সাঃ এর
কাছে নিয়ে এলাম, তখন রাসূল সাঃ তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৭৩৯, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৮৮৷
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক বালকের পক্ষ থেকে আক্বিকা হল বন্ধক স্বরূপ, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করবে, এবং তার মাথা মুন্ডাবে, এবং তার নাম রাখবে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৪৭৷
উম্মে কুরযিল কা’বিয়্যাহ রাঃ বলেন- আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দু’টি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী আক্বিকা দিবে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৩৬, সুনানে তিরমিযী,
হাদীস নং-১৫১৩৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
পড়ার অনুপযোগি পুরাতন কুরআন শরীফের হুকুম৷
কুরআন শরীফ পুড়াবে না। কারন এর দ্বারা কুরআনকে অসম্মান করা হয়। কুরআন শরীফের অসম্মান হয় এমন কোন কাজ করা জায়েজ নেই
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩২৩; ফতওয়ায়ে শামী ৫/২৭১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা রুপার আংটি ব্যবহার৷
এছাড়া পুরুষের জন্য দুই শর্তে আংটির ব্যবহার করা জায়েয।
১৷
রৌপ্যের আংটি ব্যবহার করবে।
২৷
পাঁচ মাশা (৪.৮৬ গ্রাম) থেকে কম হতে হবে।
আহসানুল ফাতওয়া খণ্ড : ৮, পৃ. ৬৯-৭০/রদ্দে মুখতার, খণ্ড : ৫, পৃ. ২২৯৷
আর যেসব ধাতু কাফিরদের সঙ্গে কিংবা তাদের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ যেমন শিশা, পিতল, কাঁসা ও লোহার আংটি ব্যবহার করা মুসলমানদের জন্য মাকরূহ।
ইসলাম বনাম বিজাতির অনুকরণ, হাকিমুল উম্মত ক্বারী তৈয়্যব সাহেব (রহ.) পৃ.৷১৭১-১৭)।
তবে অসুস্থতার কারণে বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অন্য ধাতুর আংটি ব্যবহার করা যাবে। আমাদের প্রিয় নবী(সা.) রাষ্ট্রীয় দাপ্তরিক কাজে সীলমোহর হিসেবে রুপার আংটি ব্যবহার করতেন।
স্বর্ণের আংটি বা সোনার অন্য যে কোন অলংকার ব্যবহার পুরুষের জন্য একেবারে হারাম। আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন,
ﺃُﺣِﻞَّ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮُ ﻟِﺈِﻧَﺎﺙِ ﺃُﻣَّﺘِﻲ، ﻭَﺣُﺮِّﻡَ
ﻋَﻠَﻰ ﺫُﻛُﻮﺭِﻫَﺎ
“আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং পুরুষদেরজন্য হারাম করেছেন।”
সুনান নাসাঈ হাদীস নং-৫২৬৫৷
মুসলমানের জন্য টাই পরিধান করা ৷
তবে অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট না হলেও এটি শূলের প্রতীক হিসাবে এতটাই জনশ্রুতি আছে যে,তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। যদি সত্য হয় তাহলে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত
ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।
সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯
কিন্তু যেহেতু বিষয়টি অকাট্য তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় ; উপরন্তু বিধর্মীদের সাদৃশ্যতা গ্রহনের ইচ্ছা ব্যতিরেকেই এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে হারাম তো বলা যাবেনা তবে সন্দেহযুক্ত বিধায় মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য।
ফাতাওয়া মাহমুদিয়া১২/৪০৮
হযরত নু'মান ইবনে বাশীর (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: হালাল বা বৈধ সুস্পষ্ট এবং হারাম বা অবৈধও স্পষ্ঠ আর এ দু’এর মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর বেশীরভাগ লোকই সেগুলো সম্পর্কে সঠিক পরিচয় জানে না। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সন্দেহজনক জিনিসিগুলোকে পরিহার করলো সে তার দ্বীন ও মান-সম্মানকে পবিত্র রাখলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়লো সে হারামের মধ্যে পড়ে গেল। (বুখারী,মুসলিম)
প্রয়োজনে
01756473393
হাফ-হাতা শার্ট অথবা গেঞ্জী পরে নামায আদায় করা৷
তানজিহী।
এ মূলনীতির আলোকে ফকিহগণ বলেন, যেহেতু বুজুর্গানেদ্বীনের মজলিস বা অন্য সম্মানিত
মজলিসে হাফ-হাতা শার্ট বা গেঞ্জী পরিধান করে যাওয়াকে অপছন্দ করা হয়, তাই এরকম কাপড় পরিধান করে একাকী কিংবা জামাতে নামায পড়া খেলাফে সুন্নত তথা মাকরূহে তানজিহী হবে। অন্য কোন কাপড় না থাকলে মাকরূহ হবে না।
ফাতাওয়া উসমানী ১/৪২৩, কিফায়াতুলমুফতী ৩/৪২৮, ইমদাদুলআহকাম ১/৫৬১,৫৬৩ খুলাসাতুলফাতাওয়া ১/৫৮৷
প্রয়োজনে
01756473393
টুপি ছাড়া নামাজ পড়া৷
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, নামাজ আদায় করার
ক্ষেত্রে পোশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঢেকে নামাজ আদায় করতেন, আমাদেরও তাই করা উচিত। সাহাবায়েকেরামও তাবিঈগণও এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। যেমন-
হাসান ইবনে আলী রা. সম্পর্কে এসেছে, তিনি নামাজের সময় র্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরতেন। একদিন কেউ তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তাই আমি আমার প্রভুর জন্য সুন্দর পোশাক পরি।
রুহুল মাআনি ৪/৩৪৯৷
হাসান বসরি রহ. বলেন, তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম গরমের কারণে পাগড়ি বা টুপির ওপর সিজদা করতেন।
বোখারি ১/৮৬ যুহাইর (রহ.) বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু
ইসহাক সাবিয়ীকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন।
তাবাকাতে ইবনে সাদ ৬/৩১৪৷
তাই নামাজে টুপি পরা সুন্নত এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়া মাকরুহ, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
ফাতাওয়া কাজিখান : ১/১৩৫৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
ব্যাঙ, গুইসাপ, কুঁচে বা কাঁকড়া ইত্যাদি খাওয়া বা বিক্রি করার হুকুম৷
01756473393
কুকুর বা শেয়ালের কামড়ে আহত মুরগী খাওয়া৷
ﺍﻥ ﺳﺒﻌﺎ ﻟﻮ ﺍﺧﺬ ﻗﻄﻌﻪ ﻣﻦ ﻟﺤﻢ ﺍﻟﺒﻬﻴﻤﺔ ﻓﺎﻛﻠﻬﺎ ﻓﺬﻛﺎﻫﺎ
ﺻﺎﺣﺒﻬﺎ ﺍﻥ ﺫﺍﻟﻚ ﺟﺎﺋﺰ ﻣﺒﺎﺡ ﺍﻻﻛﻞ ﺍﻟﺦ (ﺍﺣﻜﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﻟﻠﺠﺼﺎﺹ - 2/305 ﺳﻮﺭﺓ ﻣﺎﺋﺪﺓ ﺗﺤﺖ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺣﺮﻣﺖ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﻤﻴﺘﺔ ﺍﻟﺪﻡ ﺍﻵﻳﺔ 3-، ﺗﻔﺴﻴﺮ ﻣﻈﻬﺮﻯ - 3/21، ﺭﻭﺡ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ - 2/341 উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
ড্রেসিং করা মুরগীর গোস্ত খাওয়া৷
আর আমাদের দেশে সাধারণত ড্রেসিংকৃত মুরগীর নাড়িভুরি বের না করে গরম পানিতে রাখার কারনে মুরগীর গোস্তের সাথে নাড়িভুরির নাপাক মিশে মুরগী নাপাক হয়ে যায়৷ তাই তা খাওয়া বৈধ নয়৷
وإن كانت مما يطبخ كاللحم والحنطة فإن أصابتها نجاسة وطبخت بها فلا تطهر . بعد الغليان أبدا على المفتى به لأن أجزاءها تكون قد تشربت النجاسة حينئذ ومن ذلك الدجاجة إذا غليت قبل شق بطنها فإنها لا تطهر أبدا لتشرب أجزائها النجاسة فيجب شق بطنها وإخراج ما فيها وتطهيرها بالغسل قبل غلبها (الفقه على المذاهب الأربعة – الجزيري- كتاب الطهارات، مبحث فيما تزال به النجاسة وكيفية إزالتها-1/25)
وايضا فى رد المحتار-1/544 وفى الفتاوى التاتارخانية-1/185 উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
ব্যাঙের প্রস্রাব পাক না নাপাক?
দেয় এবং প্রায় পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ ছড়িয়ে
পড়ে। অতঃপর আমি তা না ধুয়ে পরিধান করে
আসরের নামায আদায় করি। আমার নামায কি আদায়
হয়েছে?
গলীজা’। তাই প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী গেঞ্জিটি নাপাক হয়ে গেছে। অতএব ঐ গেঞ্জি পরিধান করে যে নামায পড়া হয়েছে
তা সহীহ হয়নি। ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া
জরুরি।
-আননাহরুল ফায়েক ১/১৪৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৪৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৭৫৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
প্রানীর ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামায পড়া৷
-কিতাবুল আছল ১/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
শ্রদ্ধাভাজন মুফতী সাহেবের নিকট বিনীত আরজ এই যে, নিম্নোল্লেখিত মাসআলার...
ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া
১/১৮৮'
কাপড়ে রাস্তার কাদা লাগলে কাপড় কি নাপাক হয়ে যাবে?
হবে।
-আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ১/১৯৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/২৩; ফাতহুল কাদীর ১/১৮৬; আততাজনীস ১/২৫৯
আমি একটি বায়িং হাউজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার পদে কর্মরত। বিভিন্ন গার্মেন্টস...
পদে কর্মরত। বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে
তৈরি পোশাক ইনস্পেকশনের কাজে যেতে হয়।
মাঝেমধ্যেই গার্মেন্টেস মালিকগণ উপহার বা গিফট
হিসেবে আমাকে বিভিন্ন খাম দেয়। তাতে ভালো অংকের টাকা থাকে। এক্ষেত্রে তাদের গোপন
উদ্দেশ্য হল, আমি যেন খুব যাচাই বাছাই না করেই
ইনস্পেকশন রিপোর্ট ওকে করে দিই। প্রশ্ন হল,
শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য এ উপহার নেওয়া
কি বৈধ? যদি বৈধ না হয় তাহলে আমার করণীয়
কী?
সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা অন্যায়ভাবে একে
অপরের সম্পদ ভোগ করো না। -সূরা বাকারা ১৮৮
হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতা উভয়ের প্রতি
অভিসম্পাৎ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস :
১৩৩৭
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাদের থেকে ঘুষ
নেওয়া হয়েছে তাদেরকে ঐ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।
আর যাদের সন্ধান পাওয়া যাবে না তাদের টাকা সদকা করে দিতে হবে। আর নিজের উপর অর্পিত
দায়িত্ব সর্বদা যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং
বিগত দিনের জন্য ইসিত্মগফার করতে হবে। -সূরা বাকারা ১৮৮; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২৭; শরহুল মাজাল্লাহ ৬/১৪; মাআরিফুল কুরআন, মুফতী শফী রাহ. ৫/৩৯৭; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়েত ২২/২২২
অনেককে দেখা যায়,তারা প্যান্টের সাথে গেঞ্জি কিংবা শর্ট শার্ট পরে...
সরে যায়।আমার প্রশ্ন হল,ঐভাবে নামায পড়লে কি তা সহীহ হবে?জানিয়ে বাধিত করবেন।
সতরের কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যায়।তাই নাভি বরাবর পেছন দিক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত জায়গার এক
চতুর্থাংশ এ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
আর এমন পোশাকে নামায পড়লে পেছনের মুসল্লিদের খুশু-খুযুও নষ্ট হয়।এছাড়া প্রশ্নোক্ত পোশাক মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব পোশাক নয়।তাই এ
ধরনের পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকাই উচিত।প্রকাশ থাকে যে,সকল মুসলমানের জন্য শরীয়তসম্মত পোশাক পরিধান করা আবশ্যক এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের
যে নীতিমালা আছে তা মেনে চলা জরুরি।পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও বিজাতীয় অনুকরণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে হাদীস শরীফে তাকিদ এসেছে।
-সুনানে আবু দাউদ হাদীস :৪০২৭ মিরকাত৮/২২২
আমি এক মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক। এ বিভাগের প্রায় সব...
১/২১১
আমি এক মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক। এ বিভাগের প্রায় সব...
১/২১১
অনেককে দেখা যায়, তারা প্যান্টের সাথে গেঞ্জি কিংবা শর্ট শার্ট...
শার্ট প্যান্ট পরিধান করা কি হারাম? শার্ট প্যান্ট পড়ে নামাজ...
জূব্বা সেলোয়ার লুঙ্গি এগুলো কি সুন্নতি পোষাক?
উল্যেখ যে, কেউ যদি সাদৃশ্যের নিয়তে পরিধান করে অথবা প্যান্ট টাখনুর নিছে পৌছে যায়, তাহলে অবৈধ হবে। ন্ম
শার্ট যদি ফোল হাতা হয় এবং প্যান্ট টাখনুর উপরে থাকে ও ঢিলেঢালা হয় তাহলে নামাজ সহিহ হবে। অন্যথায় মাকরুহ হবে। তবে সুন্নতি পোষাক পরিধান করে নামাজ পড়া উত্তম।
দলিল;
ওমদাতুল কারি ৭/৪৫১, বাহরুর রায়েক ২/১৮, ফথুল মুলহিম৪/৮৭.
@জুব্বা স্লোয়ার লুংী এগুলো সুন্নতি পোষাক। রাসূল সা; এধরনের পোষাক পরিধান করেছেন অথবা পছন্দ করেছেন।
দলিল; আবু দাউদ হাদিস নং ৪০৯০, দারুল মা,আদ ১/১৩২, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ২৭/৪০৩
আমাদের দেশে মুরগী ড্রেসিং করার সময় ভুড়ি বের না করে...
দলিলঃ-
ফতোয়ায়ে শামী ১/৩২৪ ফথুল কাদির ১/২১১ বাহরুর রায়েক ১/৪১৫