আমাদের গ্রামে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে। এবং...
আমাদের গ্রামে মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে। এবং কবর দেওয়া বাবদ মৃতের অভিভাবকেরা আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে ২০০/৩০০/৫০০ টাকা করে দান করেছেন। এখন মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু মৃতের অভিভাবকেরা কবরের উপর মসজিদ করতে বাধা দিচ্ছে। এখন মুফতী সাহেবের নিকট প্রশ্ন হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় কবর দেওয়া ঠিক হয়নি। মসজিদের জায়গার মালিক মসজিদ নিজে। এর ব্যবহারের অধিকার শুধুমাত্র মসজিদেরই। এখন যদি মসজিদ সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কবর দেয়া জায়গার প্রয়োজন হয় তাহলে কবরের স্থান সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। এতে কারো বাধা দেয়া জায়েয হবে না। সেক্ষেত্রে কোনো ওয়ারিশ যদি তাদের কবরকে নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে চায় তবে তা পারবে। আর মৃত লোকদের অভিভাবকগণ যদি প্রশ্নোক্ত টাকা কবরের জায়গার বিনিময় হিসেবে দিয়ে থাকে তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সে টাকা তাদেরকে ফেরত দিয়ে দিবে। আর যদি অনুদান হিসেবে দিয়ে থাকে তবে তা ফেরত নেওয়া তাদের জন্য বৈধ হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৫০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৯৯
কেউ মারা গেলে মাদরাসা থেকে ছাত্রদের এনে কুরআন খতম করিয়ে...
কেউ মারা গেলে মাদরাসা থেকে ছাত্রদের এনে কুরআন খতম করিয়ে টাকা দেওয়া হয়। এটি কি জায়েয?
ঈসালে সওয়ারেব উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করিয়ে বিনিময় দেয়া নেয়া নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, আব্দুর রহমান বিন শিবল রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ، وَلَا تَغْلُوا فِيهِ، وَلَا تَجْفُوا عَنْهُ، وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوا بِهِ.
তোমরা কুরআন পড়। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। এবং কুরাআনের বিনিময়ে কিছু ভক্ষণ করো না। এবং এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করো না।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫২৯
আরেক বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ،وَاسْأَلُوا اللهَ بِهِ؛فَإِنَّ مِنْ بَعْدِكُمْ قَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ بِهِ.
‘তোমরা কুরআন পড়ো এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে চাবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯৯১৭
অন্য আরেক বর্ণনায় এসেছে তাবেয়ী যাযান রাহ. বলেন,
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ يَأْكُلُ بِهِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَوَجْهُهُ عَظْمٌ لَيْسَ عَلَيْهِ لَحْمٌ.
যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে মানুষ থেকে এর বিনিময় গ্রহণ করে সে যখন হাশরের মাঠে উঠবে তখন তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না। শুধু হাড্ডি থাকবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২৪
তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় দিয়ে কুরআন খতম করালে বিনিময় দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের গুনাহ হবে। এবং এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো সওয়াব হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪১; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬
অতীতে আমি অন্যের গাছের ডাব, পুকুরের মাছ ইত্যাদি চুরি করে...
অতীতে আমি অন্যের গাছের ডাব, পুকুরের মাছ ইত্যাদি চুরি করে খেয়েছি। আল্লাহর মেহেরবানীতে আমার ভেতর দ্বীনী বুঝ এসেছে। তাই জানতে চাচ্ছি, আমি চুরির এই গুনাহ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি এবং ঐ পাওনাগুলোর ব্যাপারে কী করতে পারি?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার কর্তব্য হল, ঐ সকল ফলমূল ও মাছ ইত্যাদির আনুমানিক ন্যায্য মূল্য সেগুলোর মালিককে পৌঁছে দেওয়া। মালিক জীবিত না থাকলে তার ওয়ারিশদেরকে দিতে হবে। আর যদি মালিক বা তার ওয়ারিশ জানা না থাকে তাহলে ঐ টাকা মালিকের পক্ষ থেকে ফকীর-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে ।
আর সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৫৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৩, ৬/১৮৩; আলইখতিয়ার ২/৫৬৪
আমার মা আমার ভাইয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা এক মহিলার...
আমার মা আমার ভাইয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা এক মহিলার কাছে রেখেছেন। যখন রাখেন তখন আমাকে সাক্ষী করেছিলেন। মা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। যার কাছে রেখেছিলেন সে মহিলা ঐ টাকা কাকে দিবে। এ টাকা আমার ভাইয়েরই প্রাপ্য? নাকি এটা মীরাস হিসেবে গণ্য হবে এবং সকল ওয়ারিস তাদের হিস্যা অনুযায়ী পাবে?
এখানে উল্লেখ্য যে, আমার ভাই এই টাকার ব্যাপারে কিছুই জানত না।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার মা এই টাকা যেহেতু সরাসরি আপনার ভাইকে দেননি তাই এ টাকাআপনার ভাই একা পাবে না। এ টাকা মীরাস হিসেবে গণ্য হবে।
-শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৩/৩৪৪; আলইখতিয়ার ২/৫৩৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৫৯০
আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। ঢাকার একটি মাকতাবা থেকে আমি ফোনে ফাতহুল...
আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। ঢাকার একটি মাকতাবা থেকে আমি ফোনে ফাতহুল বারী কিতাবটি ক্রয় করেছিলাম। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তারা কিতাবটি আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরিবহণ খরচ আমি বহন করেছি। কিতাবটি দেখার পর তার ছাপা ও আনুষঙ্গিক আরো কিছু জিনিস আমার পছন্দ হয়নি। তাই আমি তা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছি। কিন্তু তারা তাতে রাজি হচ্ছে না। জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে কিতাবটি ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার আমার আছে কি? আর ফিরিয়ে দিলে তার ফিরতি পরিবহণ খরচ কি আমাকেই বহন করতে হবে?
আপনি যেহেতু কিতাবটি না দেখেই ক্রয় করেছেন তাই দেখার পর চাইলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার আপনার রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
من اشْترى شَيْئا وَلم يره فَهُوَ بِالْخِيَارِ إِذا رَآهُ .
কেউ যদি না দেখে কোনো কিছু ক্রয় করে তাহলে দেখার পর তা (রাখা না রাখার) অধিকার তার রয়েছে। -কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৭২৪
তাই মাকতাবা কর্তৃপক্ষের জন্য কিতাবটি ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানানোর সুযোগ নেই। তাদের দায়িত্ব হল তা ফেরত নিয়ে আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া। তবে কিতাবটি আনা নেওয়ার উভয় খরচই আপনাকে বহন করতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২০৩৩৮-২০৩৪১; শরহু মাআনিল আসার ২/১৮৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৯৪, জামেউল ফুসুলাইন ১/৩৩৬
আমাদের পাশের মসজিদে আইপিএস লাগানোর জন্য আমি আমার বিভিন্ন বন্ধুদের...
আমাদের পাশের মসজিদে আইপিএস লাগানোর জন্য আমি আমার বিভিন্ন বন্ধুদের থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা সংগ্রহ করি। আইপিএস লাগানোর পর আমার কাছে আরো তিন হাজার টাকা রয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, ঐ তিন হাজার টাকা আমি অন্য মসজিদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারব কি না?
আপনার বন্ধুরা যেহেতু আপনাদের মসজিদে আইপিএস কিনে দেওয়ার জন্য টাকাগুলো দিয়েছে তাই আইপিএস কেনার পর অবশিষ্ট টাকাটাও ঐ মসজিদেরই প্রাপ্য। তবে এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুদেরকে বিষয়টি অবহিত করা দরকার। যদি তারা অবশিষ্ট টাকা ফেরত চায় অথবা অন্য কোথাও দিতে বলে তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
-আলইসআফ ১৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫০
ছোট বাচ্চার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার? বাবার যদি সামর্থ্য না থাকে...
ছোট বাচ্চার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার? বাবার যদি সামর্থ্য না থাকে বা যদি বাবা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বাচ্চার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কে বহন করবে?
বাবা বেঁচে থাকলে বাবার উপরই শিশুর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। বাবা নিজের সম্পদ বা আয় থেকে সন্তানের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবেন।
যদি বাবার সামর্থ্য না থাকে আর মা সামর্থ্যবান হন তাহলে শিশুটির মা তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবেন। মায়ের সামর্থ্য না থাকলে তার দাদা এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নিকটাত্মীয়গণ তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে।
বাবা উপস্থিত থাকাকালীন তার সামর্থ্য না থাকার কারণে মা বা অন্য কেউ যদি শিশুর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে এবং পূর্ব থেকে বলে নেয় তাহলে তাদের খরচকৃত টাকা বাবার উপর ঋণ হিসেবে থাকবে। পরবর্তীতে বাবার সামর্থ্য হলে তার থেকে ঐ খরচকৃত টাকা নিতে পারবে।
আর যদি শিশুর বাবা না থাকে এবং তার মা অথবা দাদা থাকে তাহলে মা বা দাদা তার ভরণ-পোষণের স্বতন্ত্র দায়িত্বশীল। সুতরাং সাধ্যমতো তারাই শিশুর খরচ বহন করবে।
উল্লেখ্য, কোনো শিশুর যদি নিজস্ব সম্পদ থাকে তাহলে তার অভিভাবক বাবা-মা বা অন্যরা শিশুর সম্পদ থেকেই তার জন্য খরচ করতে পারবে। বিশেষত বাবা-মা যদি অসচ্ছল থাকে তাহলে শিশুর সম্পদ থেকে তার জন্য খরচ করতে কোনো অসুবিধা নেই।
-রদ্দুল মুহতার ৩/৬১৩, ৬২৪; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৪/২১৭; আলইখতিয়ার ৩/২৮
আমি একজনের কাছে একটি গরু বর্গা দিলাম এ শর্তে যে,...
আমি একজনের কাছে একটি গরু বর্গা দিলাম এ শর্তে যে, পালার পর যে দামে বিক্রি করা হবে তা থেকে আমার মূল টাকা নিয়ে নিব। এরপর যা থাকবে তা থেকে অর্ধেক আমার আর অর্ধেক যে পালবে তার। এভাবে বর্গা দেওয়া জায়েয কি না? অনেকে বলে জায়েয আবার অনেকে বলে জায়েয নেই। যদি জায়েয না হয় তাহলে করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত গরু বর্গা পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। তাই উক্ত পন্থায় কেউ গরু বর্গা দিয়ে থাকলে তাতে যদি লাভ আসে বা বর্গা দেওয়া গরু বাচ্চা দেয় তাহলে তা মূল মালিকেরই হবে। আর যে গরু পালবে সে শুধু গরুর খরচ এবং তার পারিশ্রমিক পাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৫
একবার আমি বাসে বসা ছিলাম। একজন হকার কিছু কাচের শো...
একবার আমি বাসে বসা ছিলাম। একজন হকার কিছু কাচের শো পিস নিয়ে আমাদের বাসে উঠল। সে বলছিল, প্রতি শো-পিসের দাম ২০ টাকা। যে কেউ হাতে নিয়ে দেখতে পারেন, কিনতে হবে না। যাত্রীদের অনেকে হাতে নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ বাস জোরে ব্রেক করলে এক যাত্রীর হাত থেকে একটি শো-পিস পড়ে ভেঙ্গে যায়। এখন হকার উক্ত যাত্রীর কাছে মূল্য দাবি করে ও তার অস্বীকৃতি সত্ত্বেও তাকে মূল্য আদায় করতে বাধ্য করে। আমার জানার বিষয় হল, ভাঙ্গা শো-পিসটির মূল্য আদায় করা কি উক্ত যাত্রীর জন্য জরুরি ছিল? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বিবরণ দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট যে, শো-পিসটি পছন্দ হয় কি না- এ জন্যই ঐ যাত্রী তা হাতে নিয়েছিল। আর ব্রেক করার কারণে তা ভেঙ্গে গেছে। এখানে বাহ্যত যাত্রীর ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় না। তাই এক্ষেত্রে জোরপূর্বক তার থেকে জরিমানা আদায় করা অন্যায় হয়েছে। অবশ্য যাত্রীর ত্রুটির কারণে যদি ভেঙ্গে থাকে তাহলে তার থেকে জরিমানা আদায় করা জায়েয।
-ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১০-১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৭৩-৫৭৪
আমাদের এলাকায় একটি বড় পুকুর আছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এক...
আমাদের এলাকায় একটি বড় পুকুর আছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর এক দু বার তাতে মাছ শিকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে টিকেট ছেড়ে থাকে। টিকেট সংগ্রহকারীগণ নির্ধারিত দিনে বড়শি দিয়ে ঐ পুকুর থেকে মাছ শিকার করেন। যে যা শিকার করতে পারে সেটা তার। জানার বিষয় হল, এই পদ্ধতিটি কি শরীয়তসম্মত?
মাছ শিকারের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে কে কতটুকু মাছ পাবে তা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। বরং একেবারে না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। যা ধোঁকা ও শরীয়ত নিষিদ্ধ ‘আলগারারে’র অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া জুয়ার সাথেও এর সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ এতে কে কী পরিমাণ মাছ ধরতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কেউ হয়ত পাবেই না। অথচ টাকা দিয়েছে সবাই। এই টাকা হয়ত পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। আবার এমনও হতে পারে যে, কেউ অনেক বেশি মাছ পেয়ে যাবে। যেহেতু এই অনিশ্চয়তা মূল লেনদেনের সাথেই জড়িত তাই তা নাজায়েয। মুসলমানদের জন্য তা পরিহার করা কর্তব্য।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫১৩; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৯৪; আদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; আননাহরুল ফায়েক ৩/৪১৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৬
আমাদের এক আত্মীয় মারা যাওয়ার পর তার ঘরের লোকেরা তার...
আমাদের এক আত্মীয় মারা যাওয়ার পর তার ঘরের লোকেরা তার নখ কেটে দেয়। এভাবে তাদের জন্য মৃতব্যক্তির নখ কাটা জায়েয হয়েছে কি? এমনিভাবে মৃতব্যক্তির গোঁফ চুল ইত্যাদি কাটা জায়েয আছে কি?
মৃত ব্যক্তির গোঁফ, চুল, নখ ইত্যাদি কাটা জায়েয নয়। ইবনে সিরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,لَا يُؤْخَذُ مِنْ شَعْرِ الْمَيِّتِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ
মৃতব্যক্তির চুল ও নখ কাটা যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬২২৮)
তাই মৃত লোকটির নখ টাকা ঠিক হয়নি।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯
আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসি।...
আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসি। ডিমগুলো ভাঙ্গার পর দেখা গেল, দু’টি ডিম নষ্ট, খাওয়ার উপযোগী নয়। জানার বিষয় হল, নষ্ট দু’টি ডিমের টাকা দোকানির কাছ থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে কি?
উল্লেখ্য, বাসায় আনার সাথে সাথে ডিমগুলো ভাঙ্গা হয়েছে।
হাঁ, নষ্ট ডিমের টাকা দোকানি থেকে ফেরত নেওয়া জায়েয হবে। কেননা এই ডিমের বিক্রিই শুদ্ধ হয়নি।
-কিতাবুল আছল ২/৫০০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/৫৪-৫৫; রদ্দুল মুহতার ৫/২৬
আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় খবর পেলাম, আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি...
আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় খবর পেলাম, আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে তখন আমি আমার ছোট ভাইকে বললাম, আমাদের বাড়ির পাশের জমিটি ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে তুমি আমাদের দুইজনের জন্য জমিটি কিনে ফেল। আমার অংশের টাকা আমি মাস শেষে পাঠিয়ে দেব। সে এতে রাজি হয় এবং মাস শেষে আমি টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন বাড়িতে এসে দেখি, সে পুরো জমিটা নিজের জন্য কিনেছে এবং তার নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে এবং ১৪ লক্ষ টাকা সে নিজ থেকে দিয়েছে। আমি যে টাকা পাঠিয়েছি সে তা গ্রহণ করেনি। জানার বিষয় হল, আমি কি এখন আমার অংশ দাবি করতে পারব এবং আমার ভাই কি আমাকে ঐ জমির অর্ধেক দিতে বাধ্য থাকবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু আপনি আপনার ভাইকে ঐ জমির একাংশ আপনার জন্য কেনার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সে এ দায়িত্ব গ্রহণও করেছে। তাই আপনার ভাইয়ের জন্য ঐ জমিটি পুরোটা নিজের নামে কেনা ও রেজিস্ট্রি করা বৈধ হয়নি। এখন তার কর্তব্য হল, ঐ জমির অর্ধেক ক্রয়মূল্যে আপনাকে দিয়ে দেওয়া।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮০; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৪/৪৬৫
আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জমি ওয়াকফ করা হয়। তাতে...
আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জমি ওয়াকফ করা হয়। তাতে এখনও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশেই একটি মসজিদ আছে। মাদরাসার জমিতে যে সকল ফলমূল হয় তা বিক্রি করে এর মূল্য মসজিদের জন্য ব্যয় করা হয়। এখন প্রশ্ন হল, মাদরাসার জমিতে উৎপাদিত ফসলাদির মূল্য মসজিদের কাজে লাগানো জায়েয কি না? জানালে উপকৃত হব।
মাদরাসার জমিতে উৎপাদিত ফসলাদি মাদরাসার সম্পদ। তা বিক্রি করে মাদরাসার কাজেই ব্যয় করতে হবে এবং মাদরাসার জন্যই তা সংরক্ষণ করতে হবে। এই টাকা মসজিদের কাজে ব্যয় করা জায়েয হবে না।
Ñফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৬১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; দুরারুল হুককাম ২/৩৬
একদিন আমার বাসায় টমেটোর প্রয়োজন ছিল। বাসায় জরুরি কাজ থাকায়...
একদিন আমার বাসায় টমেটোর প্রয়োজন ছিল। বাসায় জরুরি কাজ থাকায় বাজারে না গিয়ে পাশের বাসা থেকে এক কেজি টমেটো ধার নেই। ঐ সময় টমেটোর কেজি ছিল আশি টাকা। এক সপ্তাহ পরে দাম কমে পঞ্চাশ টাকায় নেমে আসে। আমার জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি পঞ্চাশ টাকার এক কেজি টমেটো দিয়ে দিলেই চলবে নাকি আশি টাকা বা আশি টাকার টমেটো ফেরত দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে ধরনের টমেটো আপনি নিয়েছিলেন ঐ ধরনের এক কেজি টমেটো দেওয়াই কর্তব্য। আশি টাকা অথবা বর্তমানে আশি টাকার যতটুকু টমেটো পাওয়া যায় তা দেওয়া লাগবে না। ঋণদাতা আশি টাকার টমেটো দাবি করলে তা নাজায়েয হবে। তবে আপনি চাইলে নিজ থেকে কিছু বাড়িয়ে দিতে পারেন।
- ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬১; মাবসূত, সারাখসী ১৪/২৯; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১৮৩-১৮৪
একজন ক্রেতা পণ্য বাকিতে ক্রয় করেছে। কিন্তু ভুলবশত মেমো করা...
একজন ক্রেতা পণ্য বাকিতে ক্রয় করেছে। কিন্তু ভুলবশত মেমো করা হয়নি। লম্বা সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে টাকার পরিমাণ ভুলে গেছে। এ অবস্থায় করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে আলোচনা করে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সমঝোতামূলক একটি মূল্য নির্ধারণ করে নিবে। অতপর তা পরিশোধ করে দিবে আর তা যেহেতু বাস্তবমূল্য থেকে কম বা বেশি হতে পারে তাই একে অপরকে দায়ী করে রাখবে না; বরং মাফ করে দিবে।
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত উপলক্ষ্যে দুআ অনুষ্ঠান করার পর এর বিনিময়ে...
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত উপলক্ষ্যে দুআ অনুষ্ঠান করার পর এর বিনিময়ে টাকা গ্রহণ করা জায়েয আছে কি না?
দুআ স্বতন্ত্র ইবাদত। নুমান ইবনে বশীর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই দুআই হল ইবাদত। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৩৫২; সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২৯৬৯
আর ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। সুতরাং মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা যাবে না।
প্রকাশ থাকে যে, মৃতদের জন্য দুআ করা সওয়াবের কাজ। তবে এটি হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত ও বিনিময়হীনভাবে।
-ফাতহুল বারী ১১/৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৫; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮
আমাদের এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে এভাবে টাকা জমা করে যে,...
আমাদের এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে এভাবে টাকা জমা করে যে, ১৮ জন যুবক প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমা করে। যার ফলে প্রতিদিন ১৮০ টাকা জমা হয়। এভাবে ১০ দিন অতিবাহিত হলে মোট ১৮০০ টাকা জমা হয়। অতপর ১০ম দিনে সকলের নাম পৃথক পৃথক কাগজে লিখে একটি বাক্সের ভিতর ফেলা হয়। সেখান থেকে কোনো একজন একটি কাগজ উত্তোলন করে। সে কাগজে যার নাম উঠে সে এই ১৮০০ টাকা পায়। এভাবে ১০ দিন অন্তর অন্তর মোট ১৮টি খেলা হয়। যার ফলে সকলেই ১৮০০ টাকা করে পায়। যে ব্যক্তি একবার ১৮০০ টাকা পাবে সে আর কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই তাকে শেষ খেলার পূর্ব পর্যন্ত ১০ টাকা করে প্রতিদিনই জমা করতে হবে।
জানার বিষয় হচ্ছে, তাদের এ খেলা জায়েয হবে কি? যদি জায়েয না হয় তবে জায়েয পদ্ধতি কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী নিজেদের টাকা এভাবে একত্র করে তা উক্ত পদ্ধতিতে একেক জনের জন্য নেওয়া জায়েয। কেননা এক্ষেত্রে সকলের সম্মতিতে একজনকে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং এতে বেশি প্রদানেরও শর্ত নেই। এছাড়া এতে অবৈধতার অন্য কোনো কারণও নেই। তাই প্রশ্নোক্ত লেনদেন জায়েয।
-ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/৭
জনৈক মুরব্বির তিনটি সন্তান। তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তার...
জনৈক মুরব্বির তিনটি সন্তান। তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সমস্ত সম্পদ নিজ সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার সন্তানরা আর তাকে দেখাশুনা করছে না এবং তার খরচাদিও দেয় না। জানতে চাই, তিনি কি তার প্রয়োজনীয় খরচাদি সন্তানদের সম্পদ থেকে নিয়ে নিতে পারবেন? জানালে উপকৃত হব।
পিতা-মাতা যদি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হন এবং সন্তানরা সামর্থ্যবান হয় তাহলে পিতা-মাতার প্রয়োজনীয় খরচাদি দেওয়া সন্তানের উপর আবশ্যক। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও সন্তানদের জন্য কর্তব্য হল, পিতার প্রয়োজনীয় খরচ দেওয়া। তারা যদি এ খরচ না দেয় তবে পিতা নিত্য প্রয়োজনীয় খরচাদি তাদের সম্পদ থেকে নিতে পারবেন। অবশ্য প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচ, বিলাসিতা ও দান-সদকার জন্য এভাবে টাকা নিতে পারবেন না।
হাদীস শরীফে এসেছে, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে নিতে চান। রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তো তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সর্বোত্তম আহার হল নিজেদের উপার্জন থেকে। আর সন্তানদের সম্পদ তোমাদের উপার্জনের অংশ। তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে আহার কর। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬৭৮
উল্লেখ্য যে, পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা এবং তাদেরকে কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়ার প্রতি কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে জোর তাগিদ করা হয়েছে। আর তাদের দেখাশোনা করা, ভরণ-পোষণ দেওয়া সদাচরণেরই অন্তর্ভুক্ত। পিতামাতা যখন বৃদ্ধ বয়সে উপণীত হন তখন তাদের খেদমত করা, তাদের দেখাশোনা করা তো একান্ত অপরিহার্য। বিশেষত এ বয়সে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা অত্যন্ত ঘৃণিত ও চরম অন্যায়। কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁর ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তবে তুমি তাদের উফ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। আর করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা ঝুঁকিয়ে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন। যেমন তাঁরা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন। Ñসূরা বানী ইসরাইল (১৭) : ২৩-২৪
মাতাপিতার সাথে সদাচরণ করা জান্নাত লাভের উপায় বলা হয়েছে। তাদের খেদমত করে যে ব্যক্তি জান্নাত লাভ করতে পারে না তার জন্য বদ দুআ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। জিজ্ঞাসা করা হল, কোন সে ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ বয়সে তার পিতামাতা একজনকে বা উভয়কে পেল, তারপরও জান্নাত লাভ করতে পারল না। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৫১
অন্য হাদীসে এসেছে, পিতার সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পিতার অসন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৩৯; বাযলুল মাজহূদ ১৫/২১০; মাবসূত, সারাখসী ৫/২২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬২২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৯৭
দুই বছর আগে এক ব্যক্তিকে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ...
দুই বছর আগে এক ব্যক্তিকে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। এর মধ্যে সে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করেনি। পূর্বে তার কাছে বাকি টাকা পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই আমি তাকে বাকি টাকা মনে মনে মাফ করে দিয়েছিলাম। তাকে কোনো কিছু বলিনি। এখন তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আছে।
প্রশ্ন হল, আমি যেহেতু তাকে মনে মনে মাফ করে দিয়েছি এখন আমার জন্য তার থেকে বাকি টাকা চাওয়া এবং নেওয়া জায়েয হবে কি?
শুধু মনে মনে ঋণ মাফ করে দিলে তা মাফ হয়ে যায় না; বরং ঋণগ্রহিতাকে মাফের কথা জানালে এবং সে গ্রহণ করলে তখন মাফ হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণগ্রহিতা থেকে বাকি টাকা চাওয়া এবং নেওয়া জায়েয হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৮২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫
আমি এক বন্ধু থেকে পনের দিনের জন্য একটি বই নিজে...
আমি এক বন্ধু থেকে পনের দিনের জন্য একটি বই নিজে পড়ার জন্য নিয়েছিলাম। বইটি আমার জন্য খুবই দরকারি ছিল। ঐ বই আমি এক সপ্তাহের মধ্যে পড়ে শেষ করে ফেলি। আমার অপর এক বন্ধু ঐ বইটি আমার কাছে পড়ার জন্য চায়। এখনো যেহেতু তা ফেরত দিতে সপ্তাহ বাকি আছে তাই আমি তাকে ৪/৫ দিনের জন্য পড়তে দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার রুমে আগুন লেগে বইটি পুড়ে যায়।
প্রশ্ন হল, এখন আমাকে কি ঐ বইয়ের জরিমানা দিতে হবে?
হ্যাঁ, আপনাকে ঐ বইয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা আপনার বন্ধুর স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া অন্যকে পড়তে দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি আমানতপরিপন্থী হয়েছে। আর এরপর যেহেতু তা নষ্ট হয়েছে তাই আপনাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯০; শরহুল মাজাল্লা ৩/৩২১
আমি একজন ছাত্র। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মাঝে সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের...
আমি একজন ছাত্র। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মাঝে সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সকল অনুষ্ঠানে যারা বিজয়ী হয় তাদেরকে পুরস্কারও দেওয়া হয়। এজন্য বছরের শুরুতেই সকল সদস্য থেকে চাঁদা নেওয়া হয়।
আমার প্রশ্ন হল, বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য সকল সদস্য থেকে এভাবে টাকা নেওয়া কি জায়েয হবে?
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের থেকে টাকা নিয়ে বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া জায়েয নয়। এটা এক প্রকারের কিমার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বক্তৃতা অনুষ্ঠানের বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের থেকে চাঁদা উঠানো জায়েয হবে না; বরং এক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য ভিন্ন ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে প্রতিযোগীদের কেউ যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ঐ ফান্ডে অনুদান দিতে আগ্রহী হয় তবে তার থেকে নেওয়া যাবে। আর অনুষ্ঠানটি যেহেতু সকলের জন্য প্রশিক্ষণমূলক তাই এর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য খরচাদি সংশিশ্লষ্ট সকলের থেকে নেওয়া জায়েয হবে।
-ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০২; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/১৫৬, ২/১৫৮; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুয়াইতিয়্যাহ ১৫/৮০
২০০৬ সালে আমি দেশের বাইরে কর্মরত ছিলাম। বাবা ফোনে জানালেন,...
২০০৬ সালে আমি দেশের বাইরে কর্মরত ছিলাম। বাবা ফোনে জানালেন, টঙ্গীতে ৬ কাঠার ভালো একটি জমি বিক্রি হবে তুই রাখবি নাকি? আমি লাগাতার তিন মাস টাকা পাঠালাম জমিটা আমার নামে কেনার জন্য। বাবা আমাকে জানালেন, তোর জন্য ঐ জমিটা কিনেছি।
গত বছর ২০১৩ সালে আমি দেশে এসে যখন বাবার কাছে ঐ জমির দলিলপত্র চাই তখন বাবা বলেন, ঐ জমি তো আমার নামে দলিল করে নিয়েছি। তো সেটা আমারই থাক। তোকে তোর টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছি- এই বলে আমি তখন যত টাকা দিয়েছিলাম বাবা ততটাকা আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন। অথচ ঐ জমির দাম এই সাত বছরে তিন গুণের মতো বেড়েছে।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত জমি বাবা নিজের নামে দলিল করে নেওয়ার কারণে সেটা কি বাবার হয়ে যাবে? যদি তাই হয় তাহলে আমি এখন ৭ বছর পূর্বে জমির যে মূল্য ছিল সেটাই পাব, নাকি জমির বর্তমান মূল্য? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ জমির প্রকৃত মালিক আপনিই। আপনার বাবা আপনার পক্ষ থেকে ক্রয়ের প্রতিনিধিমাত্র। তাই জমিটি তার নামে দলিল করা অন্যায় হয়েছে। নিজের নামে দলিল করলেও তিনি এ জমির মালিক নন। সুতরাং এখন আপনার বাবার কর্তব্য হল, নিজ খরচে ঐ জমি আপনার নামে দলিল করে দেওয়া।
অবশ্য আপনি চাইলে ঐ জমি আপনার বাবার নিকট বিক্রিও করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে জমির বর্তমান মূল্য দাবি করাও আপনার জন্য জায়েয। কিন্তু জোরপূর্বক জমির ক্রয়মূল্য ফিরিয়ে দেওয়া তার জন্য জায়েয হবে না।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৪৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৭
আমাদের মহল্লায় শীতের মৌসুমে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এ বছর মহল্লার...
আমাদের মহল্লায় শীতের মৌসুমে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এ বছর মহল্লার কিছু যুবক ছেলে টুর্নামেন্ট ছেড়েছে। মোট ২৪টি দলে ৪৮ জন খেলোয়াড় থাকবে। সবার থেকে ৫০০/- টাকা করে চাঁদা করা হয়েছে। ২০০/- টাকা খেলার খরচ বাবদ, আর বাকি টাকা দিয়ে বিজয়ী দুই দলকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে খেলাধুলা শরীয়তে বৈধ কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সকল প্রতিযোগী থেকে চাঁদা নিয়ে তা থেকে বিজয়ী দলকে পুরস্কার দেওয়া নাজায়েয। এটি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই এভাবে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা বৈধ হবে না। এছাড়া ইসলামে শরীর চর্চা ও খেলাধূলার যে সীমারেখা রয়েছে তা বর্তমানের এসব টুর্ণামেন্টে ঠিক থাকে না। যেমন, টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণকারী দল ও দর্শকবৃন্দ নামায থেকে উদাসীন থাকে। টুর্ণামেন্টকে কেন্দ্র করে মূল্যবান সময় ও বিপুল অর্থের অপচয় হয়। এছাড়া আরো বিভিন্ন গর্হিত কাজ এতে হয়ে থাকে। তাই এ জাতীয় টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা শরীয়তসম্মত নয়। অবশ্য খেলাধূলা ও শরীর চর্চার বৈধ সীমারেখার ভেতরে থেকে এবং উপরোক্ত ত্রুটিসমূহ থেকে বিরত থেকে শরীর চর্চার নিয়তে ব্যাডমিন্টন খেলা জায়েয।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৪; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/৪৩৬
সুদের টাকা দিয়ে মাদরাসা বা মসজিদের টয়লেট নির্মাণ বা পুননির্মাণ...
সুদের টাকা দিয়ে মাদরাসা বা মসজিদের টয়লেট নির্মাণ বা পুননির্মাণ করা জায়েয হবে কি?
সুদের টাকা মূল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। যদি মালিক জানা না থাকে বা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ঐ টাকা সদকা করা ওয়াজিব। সেক্ষেত্রে ঐ টাকা কোনো গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। এ টাকা মসজিদ-মাদরাসার টয়লেটের কাজেও না লাগানো উচিত।
-শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৭১
আমাদের ত্রিশজনের একটা সংগঠন আছে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যকে...
আমাদের ত্রিশজনের একটা সংগঠন আছে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যকে মাসে একশত টাকা করে জমা করতে হয়। কেউ লাগাতার তিন মাস টাকা আদায় না করলে তাকে বিশ টাকা আর পাঁচ মাস আদায় না করলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিতে হয়। আর এ টাকাগুলো সংগঠনের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা হয়। সংগঠনের এ পদ্ধতি কি শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
না, সংগঠনের উক্ত জরিমানা পদ্ধতি শরীয়তসম্মত নয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা আদায় না করার কারণে জরিমানা আরোপ করা জায়েয নেই।
সুতরাং যাদের থেকে জরিমানা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে তা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে এমন নিয়ম করা যেতে পারে যে, কিস্তি আদায়ে বিলম্ব করলে বিলম্বিত সময়ের মুনাফা সে পাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৬১-৬২, ৬/৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৫
ভাইবোনসহ আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট পাঁচজন। সকলের সদাকাতুল ফিতর...
ভাইবোনসহ আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট পাঁচজন। সকলের সদাকাতুল ফিতর আমাদের পিতা নিজেই আদায় করে থাকেন। তিনি ফিতরার টাকাগুলো প্রত্যেক ফকীরকে ১৫/২০ টাকা হারে ভাগ করে দেন। হুজুরের নিকট আমার প্রশ্ন হল, এভাবে এক ফিতরা কয়েকজনকে ভাগ করে দেওয়া যাবে কি? নাকি এক সদাকাতুল ফিতরের পুরোটা এক ফকীরকে দেওয়া জরুরি?
একটি ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া জায়েয। তাই একেকজনকে ১৫/২০ টাকা করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। তবে একটি ফিতরা একজনকে দেওয়া উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৯৫
এখন ঢাকা শহরে নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এর...
এখন ঢাকা শহরে নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে অনেকে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থাপনের দিকে ঝুঁকছে। আমার একটি নতুন বাড়িতেও বহুদিন ধরে সংযোগ পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমি কি কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে সংযোগ নিতে পারব? এভাবে সংযোগ নিলে তা ব্যবহার করা কি জায়েয হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমোদন ছাড়া গ্যাস সংযোগ নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া গ্যাস ব্যবহার করা চুরির শামিল। তাছাড়া এতে ঘুষ, মিথ্যা, ধোঁকা ইত্যাদির গুনাহ তো আছেই। তাই অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের এলাকায় একটি লন্ড্রি দোকান আছে। সেখানে খুব ভিড় হয়।...
আমাদের এলাকায় একটি লন্ড্রি দোকান আছে। সেখানে খুব ভিড় হয়। কেউ কেউ দোকানের শোকেস থেকে ইস্ত্রিকৃত জামা নিজ হাতে বের করে নিয়ে আসে। দোকানদার খেয়াল করে না, কে সে কার জামা নিচ্ছে। কেউ চাইলে অন্যের জামা নিয়ে নিতে পারবে। এই রমযানের পরে আমার দুই সেট জামা সেখান থেকে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি সেট একদমই নতুন ছিল। দুই সপ্তাহ পর পুরাতন সেটটা পাওয়া গেছে। কিন্তু নতুন সেটটি আর পাওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি দোকানদার থেকে এর জরিমানা নিতে পারব?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকানদার থেকে হারানো জামার জরিমানা নেওয়া জায়েয। কেননা তার অবহেলার কারণেই তা হারিয়েছে। যে কাউকে দোকানের ভিতর ঢুকে জামা বের করতে দেওয়াটাই এক প্রকার অসতর্কতা। আর অসতর্কতাবশত দোকানদার থেকে কিছু হারিয়ে গেলে তার জরিমানা নেওয়া বৈধ।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া ১১৪, মাদ্দাহ : ৬১১; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৭২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৮২, ২৮৩; আদ্দররুল মুখতার ৬/৬৬, ৬৭
আমাদের মহল্লার মসজিদের সীমানায় কিছু আম গাছ আছে। আমের মৌসুমে...
আমাদের মহল্লার মসজিদের সীমানায় কিছু আম গাছ আছে। আমের মৌসুমে অনেক আম হয়। মসজিদের কিছু মুসলিস্ন মাঝেমধ্যেই আম পেড়ে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হল, এই গাছগুলো থেকে আম পেড়ে নেওয়া কি বৈধ?
মসজিদের গাছের ফলমূল মসজিদেরই সম্পদ। বিনামূল্যে তা পেড়ে নেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হল, গাছের ফলগুলো বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা করা এবং মসজিদের প্রয়োজনে তা ব্যয় করা। তাই মুসলিস্নদের কেউ নিতে চাইলে ন্যায্য মূল্য দিয়ে নিতে পারবে। বিগত দিনে যারা বিনামূল্যে আম নিয়েছে তাদের কর্তব্য হল এর ন্যায্য মূল্য মসজিদের ফান্ডে আদায় করে দেওয়া।
-কিতাবুল ইসআফ ২২; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২
আমি একদিন স্বাভাবিক গতিতে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি মুরগি...
আমি একদিন স্বাভাবিক গতিতে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি মুরগি এসে আমার মটর সাইকেলের সামনে পড়ে যায়। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করা সত্ত্বেও মটর সাইকেল থামাতে সক্ষম হইনি। ফলে মুরগিটি চাকার নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। কিছুক্ষণ পর মুরগির মালিক এসে আমার নিকট মুরগির জরিমানা তলব করে। আমি জরিমানা দিতে অস্বীকার করি। কারণ, আমার কোনো ত্রুটি ছিল না। আরো লোক জড়ো হল। তারা আমাকে জরিমানা দিতে বাধ্য করে। ফলে আমি বাধ্য হয়ে জরিমানা দেই। প্রশ্ন হল, আমার উপর কি আসলে জরিমানা ওয়াজিব হয়েছিল? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নের বর্ণনা যদি সঠিক হয় অর্থাৎ আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী স্বাভাবিক গতিতেই মটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন আর হঠাৎ করে মুরগিটি এর নিচে পড়ে যায়। আর আপনি চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাহলে এক্ষেত্রে আপনার উপর ঐ মুরগির জরিমানা দেওয়া জরুরি নয়। তাই এক্ষেত্রে তাদের জন্য জরিমানা আদায় করা বৈধ হয়নি। কিন্তু আপনার অনিয়ম বা অসতর্কতার কারণে যদি মুরগিটি মারা যায় তাহলে জরিমানা আদায় করা জায়েয হয়েছে।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, খ- : ২, সংখ্যা : ৮/১৯৮-১৯৯; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/২৯৯
বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন মহর কত? আর মহরে ফাতেমী...
বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন মহর কত? আর মহরে ফাতেমী কত? এক দিরহামের পরিমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
বিবাহের সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম। অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা বা ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা। আর মহরে ফাতেমী হল ৫০০ দিরহাম। অর্থাৎ ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রূপা। এক দিরহামের ওজন হল ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমানে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১২০০/- টাকা হলে ১০ দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় ৩,১৫০/- টাকা। আর মহরে ফাতেমীর মূল্য হয় ১,৫৭,৫০০/- টাকা।
-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৩৯৮
আমার মামা এক ব্যক্তির নিকট পাঁচ হাজার টাকা আমানত রাখেন।...
আমার মামা এক ব্যক্তির নিকট পাঁচ হাজার টাকা আমানত রাখেন। সে তা যথাযথভাবে হেফাযত করে। কিন্তু কয়েকদিন পর তা চুরি হয়ে যায়। চোর আলমারির লক ভেঙ্গে টাকাগুলো নিয়ে গেছে। এরপর লোকটি মামাকে বিষয়টি জানিয়ে বলে, যেহেতু টাকাগুলো আমার কাছ থেকে চুরি হয়েছে তাই আমি তোমাকে প্রত্যেক মাসে অল্প অল্প করে তা পরিশোধ করে দিব। এরপর লোকটি তিন মাসে ২৫০০/- টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু এখন সে আর টাকা দিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, তার জন্য কি বাকি টাকা পরিশোধ করা জরুরি? আমানতদাতা কি তার নিকট বাকি টাকা দাবি করতে পারবে?
আমানতের অর্থ যথাযথ সংরক্ষণের পর তা চুরি হয়ে গেলে আমানতগ্রহীতাকে এর জরিমানা দিতে হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া জরুরি ছিল না এবং আপনার মামার জন্যও চাপ প্রয়োগ করে তার থেকে ঐ টাকা নেওয়া জায়েয হবে না। আর লোকটি যে ২৫০০/- টাকা পরিশোধ করেছে। দেখতে হবে সে ঐ টাকা কী বুঝে দিয়েছে? যদি মনে করে যে, ঐ টাকা আদায় করা শরীয়তের দৃষ্টিতে তার জন্য আবশ্যকীয় ছিল তবে সেক্ষেত্রে তাকে ঐ টাকা ফেরত দিতে হবে। আর যদি সঠিক মাসআলা জানার পরও সে সতঃস্ফূর্তভাবেই টাকাগুলো দিয়ে থাকে তবে তা খরচ করা আপনার মামার জন্য জায়েয হবে। আর অবশিষ্ট টাকা সে দিতে না চাইলে তার থেকে চাওয়া বা চাপ দিয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩১৪; বেনায়া ১২/৪৩৪-৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬৪
আমাদের এলাকায় একজন দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে...
আমাদের এলাকায় একজন দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে ঋণ নিলে তা আদায়ের সময় ঋণের পরিমাণের চেয়ে একটু বেশি আদায় করে থাকেন। জানার বিষয় হল, ঋণের চেয়ে বেশি আদায় করা জায়েয আছে কি না?
ঋণ বা করযে হাসানা পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু বাড়িয়ে দেওয়া উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই লোক, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৩৯০
তবে এটি ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন ঋণের চেয়ে বেশি দেওয়া-নেওয়ার কোনো শর্ত অথবা প্রচলন না থাকে। যদি এ দুটির কোনো একটি উপস্থিত থাকে তাহলে অতিরিক্ত গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২২৬৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২; আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২
আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। আমি ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস...
আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। আমি ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রত্যেক মেয়েকে পঞ্চাশ হাজার এবং ছেলেকে ১ লক্ষ টাকা করে দিচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার জীবদ্দশায় এভাবে ছেলেকে মেয়েদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়া শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? যদি ছেলেকে মেয়ের সমান সমান দিতে হয় সেক্ষেত্রে ছেলের বউকেও সমপরিমাণ টাকা দিতে পারব কি?
আপনি ছেলে মেয়েদের যে টাকা দিয়ে আসছেন তা কি তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিচ্ছেন নাকি উপঢৌকন ও হাদিয়াস্বরূপ দিচ্ছেন এ বিষয়টি প্রশ্নে উল্লেখ করেননি।
যদি উক্ত টাকা তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের প্রয়োজন অনুপাতে কমবেশি করে প্রদান করতে কোনো অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তাদের প্রয়োজনই মুখ্য থাকবে। তাই এক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রশ্ন আসবে না। কিন্তু যদি তাদেরকে উপহার বা হাদিয়া হিসেবে দিয়ে থাকেন তাহলে জীবদ্দশায় সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ছেলে-মেয়েকে সমান সমান দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মীরাসের নীতি অর্থাৎ ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়ার নীতি প্রযোজ্য হবে না।
অবশ্য সন্তানদের কারো দ্বীনদারী, উন্নত আখলাক বা বাসত্মব প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য করে কিংবা মা-বাবার খেদমত ইত্যাদির কারণে কিছু বেশি দিতে চাইলে সেটারও সুযোগ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া হাদিয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য করা ঠিক নয়। কেননা হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার কি আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯)
সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর। (সহীহ বুখারী ১/৩৫২)
সুতরাং হাদিয়া বা উপহার দিতে চাইলে আপনার ছেলে-মেয়েদের মাঝেও সমতা রক্ষা করে দেওয়াই সমীচীন হবে। অবশ্য ছেলেকে বেশি দেওয়ার পিছনে যদি যথাযথ কারণ থাকে সেক্ষেত্রে তাকে মেয়েদের থেকে বেশি দিতে পারবেন।
আর পুত্রবধূকে দেওয়ার দ্বারা যদি ছেলেকেই বেশি দেওয়া উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তাও যথাযথ কারণ ছাড়া করা উচিত হবে না।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭
বর্তমানে বিয়েশাদিতে আলোকসজ্জা ও গেইট করা হয়। এ সম্পর্কে কারো...
বর্তমানে বিয়েশাদিতে আলোকসজ্জা ও গেইট করা হয়। এ সম্পর্কে কারো কারো বক্তব্য হল, আলোকসজ্জা যদি বিয়ের এলানের নিয়তে হয় আর বরপক্ষ থেকে গেইটের জন্য কোনো টাকা না নেওয়া হয় তবে তা জায়েয, অন্যথায় নাজায়েয।
অতএব এ বিষয়ে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
বিয়ের এলান ও প্রচারণার উদ্দেশ্যেও আলোকসজ্জা করা ও গেইট লাগানো ঠিক নয়। এটি অপচয় ও সম্পূর্ণ রেওয়াজসর্বস্ব কাজ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আলোকসজ্জা শুধু বিদ্যুতের অপচয়ই নয়; বরং অন্যের হক নষ্ট করারও শামিল। তাই এসব থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকা কর্তব্য।
আর গেইটের জন্য বরপক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করে টাকা নেওয়া আরো গর্হিত কাজ। সুতরাং এসব কুরূসুম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
ভাইবোন মিলে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। সকলের সদকাতুল ফিতর...
ভাইবোন মিলে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। সকলের সদকাতুল ফিতর আমাদের পিতা আদায় করে দেন। তিনি প্রত্যেক ফকীরকে ১৫/২০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এভাবে আদায় করলে কি ফিতরা আদায় হবে? নাকি একজন ফকীরকে এক সদকাতুল ফিতর পুরোটা দিতে হবে?
একটি সদকা ফিতর একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া জায়েয। তাই ১৫/২০ টাকা করে ফিতরা দেওয়া সহীহ। তবে একটি ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়ার চেয়ে একজনকে দেওয়াই উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭
আমার বড় ভাই বিদেশে থাকেন। দেশে আমাদের আত্মীয়স্বজন আছে। তিনি...
আমার বড় ভাই বিদেশে থাকেন। দেশে আমাদের আত্মীয়স্বজন আছে। তিনি চাচ্ছেন তার সদকায়ে ফিতর এ দেশে আদায় করতে। প্রশ্ন হল, এখানে তার সদকায়ে ফিতর আদায় করলে কত টাকা দিতে হবে? আমাদের সদকা ফিতর আমরা যত টাকা আদায় করি ততটাকাই দিবে নাকি তিনি যে দেশে আছেন সে দেশের ফিতরা হিসাবে বাংলাদেশী যত টাকা আসে ততটাকা দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাইয়ের সদকায়ে ফিতর বাংলাদেশে আদায় করলেও তিনি যে দেশে থাকেন সে দেশের সদকায়ে ফিতর হিসাবেই আদায় করতে হবে। যেমন তিনি যদি সৌদি আরবে থাকেন আর সেখানকার হিসাবে ফিৎরার মূল্য হয় বিশ রিয়াল, তবে এখানে আদায় করলে বিশ রিয়াল বা তার মূল্য প্রায় চারশত টাকা আদায় করতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ২/২১৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫০; গমযু উয়ূনিল বাছাইর ২/৭৬; ইমদাদুল আহকাম ২/৪০
এ. কে. ট্রাভেলস কোম্পানির বাসের টিকেট ক্রয়ের পর কোনো কারণে...
এ. কে. ট্রাভেলস কোম্পানির বাসের টিকেট ক্রয়ের পর কোনো কারণে যাত্রার কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগে টিকেট ফেরত দিলে কর্তৃপক্ষ তা ফেরত নেয়। তবে শতকরা ১০/- টাকা করে কেটে রাখে। জানতে চাই, এভাবে টাকা কেটে রাখা বৈধ কি না?
বাস কর্তৃপক্ষের জন্য বিক্রিত টিকেট ফেরত না নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। তবে ফেরত নিলে টাকা কেটে রাখা যাবে না। অবশ্য টিকেট দেওয়া- নেওয়ার জন্য যা খরচ হয়েছে সার্ভিস চার্জ হিসেবে তা কেটে রাখতে পারবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১২৪
আমরা শুনেছি, কুইজ প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে বিজয়ীদের...
আমরা শুনেছি, কুইজ প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে তা দিয়ে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া অবৈধ। তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য ফী গ্রহণ করা হয় আর এই ফীর একটি অংশ দ্বারা মেধাবী ছাত্রদের পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা জায়েয কি না? জায়েয হলে উভয়ের মাঝে পার্থক্য কী? দয়া করে কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানাবেন।
পরীক্ষার জন্য ফী গ্রহণ করা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য টাকা নেওয়ার হুকুম এক নয়। কেননা পরীক্ষার ফী পরীক্ষা সংক্রান্ত খরচ এবং এর ব্যবস্থাপনার জন্য কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকেন। এই টাকার মালিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান অন্যান্য খরচের মতো চাইলে এ টাকা দিয়ে মেধাবী ছাত্রদেরকে পুরস্কারও দিতে পারে। কিন্তু কুইজ প্রতিযোগীদের থেকে ফরমের ন্যায্য মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত নিলে কর্তৃপক্ষ তার মালিক হবে না। সুতরাং প্রতিযোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তা দ্বারা পুরস্কার দেওয়াও বৈধ হবে না। বরং তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পুরস্কার দেওয়া এক ধরনের কিমার।
-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ২/২৩২
ক) একজন পিতার কয়েকজন সন্তান আছে। তার মধ্যে ২ জন...
ক) একজন পিতার কয়েকজন সন্তান আছে। তার মধ্যে ২ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে এক ছেলে পিতার অবাধ্য ও ফাসেক প্রকৃতির। সে প্রায় সময় মদ-জুয়াতে লিপ্ত থাকে এবং টাকা-পয়সা নষ্ট করে। এক্ষেত্রে পিতা জীবদ্দশায় সমুদয় সম্পদ বণ্টন করতে চাইলে এই নাফরমান ছেলেকে নিজের সম্পদ হতে একেবারে বঞ্চিত করা যাবে কি?
এমদাদুল মুফতীন (২/৮৬৭)-এ ৯৫৩ প্রশ্নের উত্তরে আছে যে, ওয়ারিস যদি নাফরমান ও ফাসেক হয় তাহলে তাকে সম্পদ থেকে মাহরূম করা জায়েয আছে, নচেৎ জায়েয নেই। এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত দলিল প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
কোনো সন্তান যদি মদ-জুয়া, ব্যভিচারের মতো জঘণ্য গুনাহর কাজে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং এসবের পেছনে টাকা-পয়সা নষ্ট করে বেড়ায় এবং এ ব্যাপারে পিতামাতার আদেশ-নিষেধ না মানে; বরং তার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রবল আশঙ্কা হয় যে, তাকে অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি দিলে সে গুনাহর ভেতর আরো জড়িয়ে পড়বে এবং সম্পদ নষ্ট করে ফেলবে তাহলে এক্ষেত্রে পিতামাতা এ ছেলেকে কোনো সম্পদ না দিয়ে তার অন্যান্য সৎ-চরিত্রবান সন্তানদেরকে সকল সম্পদ জীবদ্দশায় বণ্টন করে দিতে পারবেন।
ইমদাদুল মুফতীনের উক্ত মাসআলাতে এ কথাই বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, কোনো সন্তান যদি মাতাপিতার অবাধ্য হয় তাহলে শুধু এ কারণে তাকে সম্পদ থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া ঠিক হবে না।
তদ্রূপ কোনো সন্তান যদি শরীয়তের আহকামের প্রতি যত্নবান না হয়, কিন্তু সাধারণত গুনাহর পিছনে ব্যাপকভাবে সম্পদ নষ্ট করে না, তাহলে এ
সন্তানকেও সম্পদ থেকে একেবারে মাহরুম করে দেওয়া যাবে না। এদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত না করে তাদের ইসলাহের ফিকির করবে, তাদের হেদায়েতের জন্য দুআ করবে, আলেম-ওলামার পরিবেশে নিয়ে যাবে।-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া মুহাম্মাদিয়া ২০/৪৮৯
প্রশ্ন : খ) বিনা কারণে পিতামাতা যদি নিজের সন্তানদের সম্পদ হতে বঞ্চিত করে তার জন্য গুনাহগার হবে কি না?
এক্ষেত্রে ঐ কিতাবের ৯৫৭ নং প্রশ্নের উত্তরে আছে, এক্ষেত্রে সে শক্ত গুনাহগার হবে। এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
من قطع ميراث وارثه قطع الله ميراثه من الجنة
যদি সন্তানের নাফরমানির কারণে তাকে বঞ্চিত করে দেয় তবে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন। উক্ত হাদীস এবং এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত হওয়ালাসহ জানতে চাই।
উত্তর : সন্তানকে যথাযথ কারণ ছাড়া সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে পিতামাতা শক্ত গুনাহগার হবে। আর প্রশ্নোক্ত হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহয় কিতাবুল অসায়েতে আনাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু আল্লামা বুসিরী রাহ. উপরোক্ত হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন।
অবশ্য এ অর্থেরই একটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় উল্লেখ হয়েছে। তা হল আরবী (অর্থ) যে ব্যক্তি কারো মীরাসকে নষ্ট করবে যা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নির্ধারণ করেছেন, তাহলে আল্লাহ তাআলাও তাকে তার মিরাস জান্নাত থেকে মাহরূম করে দিবেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩১৬৮৮
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা এই হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৭০৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৫
এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার কেবলমাত্র আপন বোনের ছেলে ও...
এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার কেবলমাত্র আপন বোনের ছেলে ও মেয়ে জীবিত আছে। এছাড়া নিকটাত্মীয় অন্য কেউ নেই। এখন তার সম্পদ কীভাবে বণ্টন করা হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতের সম্পদ থেকে মৃতের কাফন-দাফনের খরচ প্রয়োজন হলে তা দিবে এবং তার কোনো ঋণ থাকলে তাও আদায় করবে। আর সে কোনো বৈধ অসিয়ত করে থাকলে ঋণ আদায়ের পর অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে তা পুরো করতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সকল সম্পদ মৃতের বোনের ছেলে মেয়েদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। ছেলে দুই ভাগ আর মেয়ে এক ভাগ পাবে।
-আসসিরাজী ৬, ৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯৫
একদিন মসজিদে আমার পাশে জুতা রেখে জামাতে দাঁড়িয়েছি। এরই মধ্যে...
একদিন মসজিদে আমার পাশে জুতা রেখে জামাতে দাঁড়িয়েছি। এরই মধ্যে দেখি যে, আমার নতুন জুতা যা প্রায় আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি তা একজন নিয়ে যাচ্ছে।
আমি এটা দেখতে পেয়ে নামাযের নিয়ত ছেড়ে দেই এবং চোর থেকে জুতা উদ্ধার করি। এরপর আবার নামাযে শরিক হই। এখন জানতে চাই জুতার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হয়েছে, নাকি আমি গুনাহগার হয়েছি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে জুতা উদ্ধার করা নাজায়েয হয়নি। মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিস হেফাজতের জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে। একাধিক তাবেঈ থেকে বর্ণিত আছে যে, নামায অবস্থায় তাদের আরোহী চলে যাচ্ছিল তখন তারা নামায ছেড়ে দিয়ে আরোহী হেফাজত করেছেন। আর কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, এক দিরহাম অর্থাৎ ৩.০৬১৪ গ্রাম রূপা সমপরিমাণ সম্পদ হেফাযতের জন্যও নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে। যা বর্তমান মূল্য হিসাবে প্রায় ৩১৫ টাকা হয়।
এছাড়া নামাযে দাঁড়ানোর আগেই জুতা/মালপত্র হেফাযতে রাখা উচিত; যেন নামায অবস্থায় এ কারণে মনোযোগ নষ্ট না হয়।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২৬১; শরহুল মুনইয়া ৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১
আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। যিনি অন্ধ ও দরিদ্র। তাকে...
আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। যিনি অন্ধ ও দরিদ্র। তাকে পাঁচশ টাকা দেওয়ার জন্য আমি তার বাড়িতে যাই। কিন্তু লোকটি তার আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে যাওয়ায় তা আর দেওয়া হয়নি। ঐ টাকা এখনো আমার কাছে আছে। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি এ টাকা নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারব? নাকি অন্য ফকীরকে দিয়ে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঐ পাঁচশ টাকার মালিক আপনিই। শুধু নিয়তের কারণে তা দান করে দেওয়া জরুরি হয়ে যায়নি। তাই ঐ টাকা নিজ প্রয়োজনেও খরচ করতে পারবেন। আবার ইচ্ছা করলে দানও করতে পারবেন।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪০৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৫০৩
আমার এক বন্ধুকে আমি আমার মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য দেই।...
আমার এক বন্ধুকে আমি আমার মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য দেই। সে এক দোকানের সামনে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে গাড়িটি চুরি হয়ে যায়। আমার দাবির কারণে বন্ধু আমাকে এর আর্থিক জরিমানা প্রদান করে। এখন আমার জানার বিষয় হল, সে যে জরিমানা আমাকে দিয়েছে তা কি আমার জন্য বৈধ হবে। অনুগ্রহ করে জানাবেন।
প্রশ্নের কথায় মনে হচ্ছে মোটর সাইকেলটি ঐ বন্ধুর অবহেলার কারণেই চুরি হয়েছে। যদি এমনটিই হয়ে থাকে তবে তার থেকে জরিমানা আদায় করা আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। আর যদি এটি হেফাযতের ক্ষেত্রে তার কোনো ত্রুটি না থাকে; বরং সে তা যথাযথ হেফাযত করা সত্ত্বেও চুরি হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা জায়েয হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রেও আপনার বন্ধু যদি নিজ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু দেয় তবে তা গ্রহণ করা আপনার জন্য জায়েয।
-শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬৬
আমার চাচা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। একজন আলেম তাকে বলেছেন,...
আমার চাচা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। একজন আলেম তাকে বলেছেন, তিনি যে বিষয়ের ক্লাস নিয়ে থাকেন ঐ বিষয়ে ঐ ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো জায়েয নেই।
এতে ঘুষের আশঙ্কা রয়েছে।
আমার জানার বিষয় হল, তিনি কি সঠিক বলেছেন? যদি তিনি ইনসাফ করতে পারেন তবুও কি হারাম হবে?
আপনার চাচা যদি ক্লাসে যেভাবে পড়ানোর কথা সেভাবেই হক আদায় করে পড়িয়ে থাকেন, আর এরপরও ছাত্রের দুর্বলতার কারণে কিংবা সাবজেক্ট কঠিন হওয়ার কারণে বাস্তবেই প্রাইভেট পড়ানোর প্রয়োজন থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি নিজের ছাত্রদেরকেও প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। তবে প্রাইভেট পড়ার কারণে ঐ ছাত্রকে ক্লাসে বা পরীক্ষায় অতিরিক্ত কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না। বরং পরীক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী অন্য ছাত্রদের মতোই আচরণ করতে হবে।
কিন্তু তিনি যদি ক্লাসেই যথাযথভাবে না পড়ানোর কারণে ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হয় কিংবা প্রাইভেট পড়লে ক্লাসে বা পরীক্ষায় অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, নাম্বার বেশি দেওয়া হয় বা প্রশ্নের পড়া আগেই দাগিয়ে দেওয়া হয় ইত্যাদি তবে প্রাইভেট পড়ানো জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা নেওয়া ঘুষ হবে। তাই নিজের স্কুলের ছাত্রদেরকে প্রাইভেট না পড়ানোই অধিক নিরাপদ। বিশেষত যে ছাত্রদের ক্লাস তিনি নিজেই নিয়ে থাকেন তাদেরকে প্রাইভেট না পড়ানোই ভালো। পড়াতে চাইলে উপরোক্ত শর্তের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আর সরকারীভাবে প্রাইভেট পড়ানো যদি নিষেধ থাকে তবে পড়ানো যাবে না।
-হাশিয়াতুত তহতাবীল আলাদ্দুর ৩/১৭৭; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২২/২২০; আহকামুল মালিল হারাম ৫২
গত বছর আমাদের কাফেলার এক ব্যক্তি ভুলে উমরার সায়ী না...
গত বছর আমাদের কাফেলার এক ব্যক্তি ভুলে উমরার সায়ী না করে মাথা মুন্ডিয়ে হালাল হয়ে যায়। স্মরণ হওয়ামাত্রই হেরেমে গিয়ে সায়ী করে নেয়। জানতে চাই, তার এই উমরা কি সহীহ হয়েছে? আর যদি না হয় তাহলে তার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি যেহেতু পরবর্তীতে সায়ী আদায় করে নিয়েছে তাই তার উমরাহ সহীহ হয়ে গেছে। তবে সায়ীর পূর্বে মাথা মুন্ডানোর কারণে তার উপর একটি জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। এই জরিমানা দম হেরেমের এলাকাতেই আদায় করতে হবে।
-গুনইয়াতুন নাসিক ১৩২, ২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮; মানাসিক মোল্লা আলী কারী ১৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২৯; কিতাবুল আছল ২/৪৩৪
কয়েকজন ছাত্রের অভিভাবক প্রায়ই আমার কাছে টাকা আমানত রাখে। তাদের...
কয়েকজন ছাত্রের অভিভাবক প্রায়ই আমার কাছে টাকা আমানত রাখে। তাদের টাকা অন্য টাকার সাথে মিলে যায়। তাই আমি তাদের থেকে এভাবে রাখার অনুমতি নিয়ে নিই। কয়েকদিন আগে আমার কিছু টাকাসহ তাদের আমানতের টাকাগুলো তালাবদ্ধ আলমারি থেকে হারিয়ে যায়। আমানত হেফাযতে আমি কোনো ত্রুটি করিনি। এখন টাকাগুলো ফেরত দেওয়া কি আমার জন্য জরুরি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যদি সকল মালিকের অনুমতিক্রমেই আমানতের টাকাগুলো একত্রে যথাযথভাবে হেফাযত করে থাকেন, আর সতর্কতার সাথে রাখা সত্ত্বেও তা হারিয়ে যায় তাহালে ঐ টাকাগুলোর জরিমানা আদায় করতে হবে না।
-মাজাল্লা ১৫১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৭৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৭১
আমার খালা একজন এতীম দরিদ্র মেয়েকে নিজের কাছে রেখে লালনপালন...
আমার খালা একজন এতীম দরিদ্র মেয়েকে নিজের কাছে রেখে লালনপালন করছেন এবং তিনিই তার সব ব্যয়ভার বহন করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। মেয়েটির বয়স এখন ১৫ বছর। মেয়েটির জন্য অনেকেই খালার কাছে টাকা দিয়েছে। সব জমে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা হয়ে গেছে। টাকাগুলো এখন খালার কাছেই আছে। এই মুহূর্তে তাকে টাকাগুলো দিলে সে আজেবাজে খরচ করতে পারে। তাই খালা টাকাগুলো আরো কয়েক বছর পর তার হাতে দিতে চান, যেন সে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়েটির জন্য দেওয়া টাকাগুলো আপনার খালার কাছে আমানত। দাতারা এটাকাগুলো মেয়েটির হাতে না দিয়ে আপনার খালার হাতে এজন্যই দিয়েছে যেন উপযুক্ত সময়ে মেয়েটির তা কাজে আসে। তাই আপনার খালার জন্য উচিত হবে ঐ টাকাগুলো এখনই তার হাতে না দিয়ে উপযুক্ত সময়ে তাঁকে দিয়ে দেওয়া। যেন সে যথাসময়ে টাকাগুলো কাজে লাগাতে পারে।
-সুরা নিসা : ৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৬৩; আহকামুল কুরআন, থানভী ২/১১৬; আহকামুল কুরআন, কুরতুবী ৫/২৬; রূহুল মাআনী ৪/২০৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৬৮২ ���
এক ব্যক্তি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য আমাকে বারবার অনুরোধ...
এক ব্যক্তি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য আমাকে বারবার অনুরোধ করেছে। সে বলছে, এ বাবদ আমাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিবে। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার। এই চাকুরিই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এছাড়া তার অন্য কোনো হালাল উপার্জন নেই। আমি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়ালে সে তার ঐ আয় থেকেই বেতন দিবে। এখন আমি জেনেশুনে তার ঐ আয় থেকে বেতন নিতে পারব কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি ঐ ব্যক্তির অন্য কোনো হালাল উপার্জন না থাকে তবে তার ছেলেকে পড়ানোর বিনিময়েও তার থেকে বেতন গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কেননা ছাত্র পড়ানোর পেশা যদিও বৈধ কিন্তু এক্ষেত্রে বেতন যে টাকা থেকে দেওয়া হচ্ছে তা হারাম হওয়ার বিষয়টি আপনার জানা আছে। সুতরাং জেনেশুনে হারাম অর্থ থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ হবে না।
-আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ৩/২৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; ইতরুল হিদায়া ৬৮
কিছু দিন আগে আমার একটি ছেলে হয়েছে। ছেলের বড় মামা...
কিছু দিন আগে আমার একটি ছেলে হয়েছে। ছেলের বড় মামা দেখতে আসেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ভাগিনার জন্য তো কিছুই নিয়ে আসিনি। এই ২,০০০/- টাকা তাকে দিলাম। আপনার পছন্দমত তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিবেন। এখন এ টাকা আমাদের সাংসারিক কাজে খরচ করতে পারব কি না?
না, ঐ টাকা সংসারের কাজে খরচ করা যাবে না। কেননা সে টাকা ঐ সন্তানেরই। তার প্রয়োজনেই তা খরচ করতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৪০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯৬
আমি একটি জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার। মসজিদের যাবতীয় ফান্ডের টাকা আমার...
আমি একটি জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার। মসজিদের যাবতীয় ফান্ডের টাকা আমার দায়িত্বেই থাকে। সম্প্রতি মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করবে। সে লক্ষ্যে মসজিদের একটি নির্মাণ ফান্ড করা হয়েছে এবং ইসলামী ব্যাংকে একটি একাউণ্ট খুলে সেখানেই উক্ত ফান্ডের টাকাগুলো রাখা হয়েছে। এখন জানার বিষয় হল, ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মুনাফার টাকা মসজিদ নির্মাণ কাজে ব্যয় করা শরীয়তসম্মত হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর অনেক বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং সেগুলোর প্রয়োগ এখনো পরিপূর্ণ শরীয়ত সম্মত হয় না, তাই তাদের থেকে প্রাপ্ত মুনাফা মসজিদে ব্যয় করা ঠিক হবে না।
আমার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। তাকে দেখার জন্য অনেকেই আসে...
আমার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। তাকে দেখার জন্য অনেকেই আসে এবং অনেকেই তাকে টাকা-পয়সা হাদিয়া দিয়ে থাকে। মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি কি ঐ টাকা আমার পুত্রের জন্য খরচ করতে পারব? বিস্তারিত দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
যে সন্তানকে ঐ টাকা দেওয়া হয়েছে তার প্রয়োজনে খরচ করতে পারবেন। কিন্তু তাকে দেওয়া টাকা সংসারের অন্য কারো জন্য খরচ করা যাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৪১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬০
কিছুদিন আগে আমার এক পরিচিত লোক নিজের ব্যবহারের জন্য দশ...
কিছুদিন আগে আমার এক পরিচিত লোক নিজের ব্যবহারের জন্য দশ গজ কাপড় ক্রয় করে। হঠাৎ তার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সে আমাকে বলে, আমি কাপড়গুলো গজপ্রতি একশ টাকা করে ক্রয় করেছি। এখন এই মূল্যেই তা বিক্রি করে দিব। তুমি তা কিনে নাও। তখন আমি তার থেকে কাপড়গুলো ঐ মূল্যে কিনে নিই। কয়েকদিন পর দেখা গেল, বাজারে ঐ কাপড় বিক্রি হচ্ছে পঞ্চাশ টাকা গজে। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল, আমি পঞ্চাশ টাকা করেই ক্রয় করেছি। এখন প্রশ্ন হল, সে মিথ্যা বলে আমার থেকে যে পাঁচশত টাকা বেশি নিয়েছে আমি তা উসূল করতে পারব কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বিবরণ সঠিক হলে আপনি বিক্রেতা থেকে ঐ পাঁচশ টাকা ফেরত নিতে পারবেন। সে যেহেতু ঐ টাকা মিথ্যা কথা বলে নিয়েছে তাই তার জন্য তা হালাল নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৬/১১০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ৫/১৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৬৭
আমি আকীকার জন্য এক লোক থেকে ৪৮,০০০/- টাকায় বাকিতে একটি...
আমি আকীকার জন্য এক লোক থেকে ৪৮,০০০/- টাকায় বাকিতে একটি গরু ক্রয় করেছি। গরুটি জবাই করার কিছু দিন পর মূল্য পরিশোধ করার সময় বিক্রেতাকে বললাম, আপনার গরু ক্রয় করে আমার লস হয়েছে। এর কয়েক দিন পর গরুর বাজার খুব সস্তা ছিল। এমন গরু ২৫,০০০/- থেকে ৩০,০০০/- টাকা দিয়েই কেনা যেত। অতপর তিনি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গরুর পূর্ব নির্ধারিত মূল্য থেকে এক হাজার টাকা কম রাখেন। এ ছাড় গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হবে কি? আমি কি তা নিজের প্রয়োজনে খরচ করতে পারব, না সদকা করে দিতে হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মূল্য আদায়ের সময় বিক্রেতা যেহেতু স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এক হাজার টাকা ছেড়ে দিয়েছে তাই তা গ্রহণ করা আপনার জন্য জায়েয। আর এই টাকা নিজ কাজেও খরচ করতে পারবেন; সদকা করা জরুরি নয়।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৫১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৪৭
আমার নিকট একটি মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জায়গা আছে। এবং সেই...
আমার নিকট একটি মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জায়গা আছে। এবং সেই স্থানে কিছু ফলদার গাছ আছে। জায়গা দানকারীর সেই ফলদার গাছের ফল খাওয়া জায়েয আছে কি না?
মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জায়গার গাছের মালিক মাদরাসা। ঐ গাছের ফলও মাদরাসার। ওয়াকফকারী বা অন্য কারো জন্য বিনা মূল্যে তা নেওয়া জায়েয হবে না। নিতে চাইলে ন্যায্য মূল্যে কিনে নিতে হবে এবং বিক্রিলব্ধ টাকা মাদরাসার ফান্ডে জমা করতে হবে। যা মাদরাসার প্রয়োজনে ব্যয় করা হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০
আমাদের এলাকায় ফেরিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে।...
আমাদের এলাকায় ফেরিওয়ালারা বাড়ি বাড়ি এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। বিনিময় হিসাবে টাকার পাশাপাশি অনেকেই মহিলাদের ছেঁড়া ও জটপাকানো চুলও নেয়। যেগুলো মহিলারা মাথা আঁচড়ানোর পর চিরুনীর সাথে উঠে আসে। জানতে চাই, কিছু নিয়ে বিনিময় হিসাবে মহিলাদের মাথার চুল দেওয়া যাবে কি?
না, নারী-পুরুষের চুল বিনিময় হিসাবে দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। কেননা মানুষের চুল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
বিনিময়যোগ্য নয়। তার বেচাকেনা নাজায়েয।
-আলজামিউস সগীর ৩২৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৩৩
আমি একজন চাকুরিজীবী। দীর্ঘদিন আমি ঘুষের লেনদেন করেছি। বলা যায়,...
আমি একজন চাকুরিজীবী। দীর্ঘদিন আমি ঘুষের লেনদেন করেছি। বলা যায়, আমার সমুদয় সম্পদের এক তৃতীয়াংশই এ জাতীয় অর্থে গড়া। এখন আমার বিগত জীবনের অসৎ উপার্জন থেকে তওবা করতে চাই। এ অবস্থায় করণীয় কী? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সম্পদের যে পরিমাণ অংশ অবৈধ বলে প্রবল ধারণা হয় ততটুকু অংশ তার প্রকৃত মালিকদের পক্ষ হতে গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। আর বিগত দিনের অবৈধ উপার্জনের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
উল্লেখ্য, যাদের থেকে উৎকোচ নেওয়া হয়েছে তাদেরকে বা ওয়ারিশ কাউকে যদি পাওয়া যায় তবে তাদের টাকা সদকা না করে মালিককে দিয়ে দিতে হবে।
-শরহুল মাজাল্লাহ ৬/৪১; আলবাহরুর রায়েক ৬/২৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১১/৮০; রদ্দুল মুহতার ৪/২৮৩; আলমওসূআ ৩৪/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৯
আমাদের এলাকায় একটি ওয়াকফিয়া বড় কবরস্থান আছে। তাতে অনেক ফলের...
আমাদের এলাকায় একটি ওয়াকফিয়া বড় কবরস্থান আছে। তাতে অনেক ফলের গাছ আছে। ফল বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হয়। কবরস্থানের জন্য ব্যাংকে একটা একাউন্ট খোলা হয়েছে। যাতে ঐ টাকা প্রতি বছর জমা রাখা হয়। এভাবে অনেক টাকা জমা হয়েছে। উক্ত কবরস্থানের জন্য বর্তমানে এই টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই টাকাগুলো এলাকার মসজিদের প্রয়োজনে ব্যয় করা যাবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কবরস্থানের ঐ টাকাগুলো মসজিদে ব্যয় করা যাবে না। বরং তা কবরস্থানের কাজেই ব্যয় করতে হবে। আর জমানো টাকা ভবিষ্যতেও এ কবরস্থানের জরুরত না হলে নিকটবর্তী কোনো কবরস্থানের প্রয়োজনে তা ব্যয় করা যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২/৫৩৮
আমার ফুফাত ভাইয়ের একটি লাইব্রেরি আছে। তাতে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র...
আমার ফুফাত ভাইয়ের একটি লাইব্রেরি আছে। তাতে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ও লেখাপড়ার সামগ্রী বিক্রি করা হয়। ফুফাত ভাই প্রয়োজনে কোথাও গেলে আমাকে দোকানে রেখে যান। এবং কোনটা কত বিক্রি করব তা বলে যান। আমিও তার বলা দামেই বিক্রি করি। কিন্তু আমি ইচ্ছা করলে ক্রেতার সাথে দরদাম করে কিছু পণ্য আর একটু বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারি।
এখন আমি যদি তার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা নিজে রেখে দেই তাহলে এটা কি নাজায়েয হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ফুফাত ভাই যে দামে বিক্রি করতে বলবে সে দামে বিক্রি করাই আপনার কর্তব্য। তথাপি কখনো কোনো পণ্য যদি বেশি মূল্যে বিক্রি করেন তবে পুরো টাকাই তাকে দিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত মূল্য নিজের জন্য রেখে দেওয়া জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৭৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১২/৩৭৩
আমাদের মসজিদের চতুর্দিকের বেড়াগুলো ছিল টিনের। এবার মসজিদ কমিটি সাইডে...
আমাদের মসজিদের চতুর্দিকের বেড়াগুলো ছিল টিনের। এবার মসজিদ কমিটি সাইডে ওয়াল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের কাছ থেকে নগদ টাকা, ইট, সিমেন্ট ইত্যাদি উঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোটামুটি ক্যাশ জমা হয়েছে। কিছুদিন পর মসজিদের কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। কয়েক মাস থেকে মসজিদের জেনারেল ফান্ডে কোনো টাকা নেই। তাই ইমাম-মুয়াযযিনের কয়েক মাসের বেতন বাকি হয়ে গেছে। জানতে চাই, মসজিদ নির্মাণের জন্য উঠানো টাকা থেকে কি ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন দেওয়া যাবে?
মসজিদের নির্মাণ কাজের কথা বলে উঠানো টাকা নির্মাণ কাজেই ব্যয় করতে হবে। ঐ টাকা দ্বারা ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন দেওয়া জায়েয হবে না।
উল্লেখ্য, ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন পরিশোধ করার জন্য মুসল্লিদেরকে সাধারণ ফান্ডে দান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেন এ খাত থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া যায়।
-ইলামুস সাজিদ ৪০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬১
রাশেদ ৫০০/- টাকার বিনিময়ে একটি ঘড়ি কিনেছে। কিন্তু বাসায় এসে...
রাশেদ ৫০০/- টাকার বিনিময়ে একটি ঘড়ি কিনেছে। কিন্তু বাসায় এসে জানতে পারল যে, বাসায় এখন ঘড়ির প্রয়োজন নেই। তাই সে ঘড়িটি ফেরত দিতে চাচ্ছে, কিন্তু সে যখন দোকানদারকে ঘড়িটি ফেরত দেওয়ার কথা জানাল তখন দোকানদার বলল যে, আমাদের দোকানে বিক্রিত মাল ফেরত নেওয়া হয় না। তখন সে দোকানদারকে বলল, আপনি ৫০ টাকা কম দিন এবং ঘড়িটি রেখে দিন। দোকানদার ঘড়িটি রেখে তাকে ৪৫০/-টাকা দিয়ে দিল। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত বেচাকেনা সহীহ হয়েছে কি?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ৫০/- টাকা কমে ঐ লেনদেন করা জায়েয হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দোকানদারের জন্য উত্তম কাজ হত পুরো মূল্যই ফেরত দেওয়া। হাদীস শরীফে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি অনুতপ্ত ক্রেতার সাথে ইকালা করবে অর্থাৎ পূর্বের বিক্রির সমমূল্যে পণ্য ফেরত নিবে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করে দিবেন।
-সুনানে আবু দাউদ ২/৪৯০; আসসুনানুল কুবরা, ইমাম বায়হাকী ৬/৫১
এক প্রতিবেশী আমার কাছে টাকা দিয়েছিলেন একটি চার্জ লাইট কিনে...
এক প্রতিবেশী আমার কাছে টাকা দিয়েছিলেন একটি চার্জ লাইট কিনে আনার জন্য। লাইটটি ক্রয় করে ব্যাগের মধ্যে রেখে সতর্কতার সাথে নিয়ে আসার পথে অনিচ্ছাকৃতভাবে হঠাৎ হাত থেকে ব্যাগটি পড়ে যায়। এতে লাইটটির একটি অংশ ফেটে যায়। তিনি লাইটের ফাটা দেখে বললেন, ফাটা লাইট নিব না। ভালো লাইট দিতে হবে কিংবা আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। এখন আমার করণীয় কী?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার ইচ্ছাকৃত অবহেলা ছাড়াই যদি লাইটটি পড়ে ফেটে গিয়ে থাকে তাহলে ঐ প্রতিবেশীকে ভালো লাইট দেওয়া কিংবা এর টাকা ফেরত দেওয়া জরুরি নয়। লাইটটি যেভাবে আছে সেভাবেই তার নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনার নিকট ভিন্ন লাইট দাবি করা বা মূল টাকা ফেরত চাওয়া তার জন্য জায়েয নয়।
-হেদায়া ৩/১৮২-১৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা : ১৪৬৩
আমি কিছুদিন পূর্বে একটি দোকান থেকে ২০০/- টাকা মূল্যে একটি...
আমি কিছুদিন পূর্বে একটি দোকান থেকে ২০০/- টাকা মূল্যে একটি দেয়াল ঘড়ি ক্রয় করি এবং তা বাসায় নিয়ে যাই। একদিন পর ঐ দোকানদার ঘড়ির মূল্য বাবদ আরো ১০০/- টাকা দাবি করল। সে আমাকে ম্যামো দেখিয়ে বলল, এটা ক্রয় করতেই ২৭০/-টাকা খরচ পড়েছে। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আরো ১০০/- টাকা দেওয়া আমার জন্য জরুরি কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দোকানদারকে অতিরিক্ত ১০০/- টাকা দিতে বাধ্য নন। তবে বেচা-কেনার ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ভুল বা অসাবধানতাবশত কিছু বলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে শরীয়তের শিক্ষা হল অন্য পক্ষ যেন তাকে এ বিষয়ে ছাড় দেয়। তাই বিক্রেতার কথা যদি সত্য হয় তাহলে আপনার নৈতিক দায়িত্ব হবে তাকে ন্যায্য মূল্য দিয়ে দেওয়া। যাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩২৮২; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৩৫৬; হেদায়া ৩/২০
আমি সায়েমের কাছে কিছু টাকা-পয়সা আমানত রাখার জন্য তার বাড়িতে...
আমি সায়েমের কাছে কিছু টাকা-পয়সা আমানত রাখার জন্য তার বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি, সে বাড়ির সামনে গাছের নিচে বসে আছে। আমি টাকার থলেটি তাকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসি। কিছুক্ষণ পর সে ফোন করে বলল, আমি তো তোমার টাকার থলেটি আমার পাশের চেয়ারে রেখেছিলাম কিন্তু ভুলে সেখানেই ফেলে রেখে চলে এসেছি। পরবর্তীতে তালাশ করে তা আর পাইনি। আমি জানতে চাই, উল্লেখিত অবস্থায় এ টাকাগুলোর হুকুম কী? আমি কি তার থেকে জরিমানা নিতে পারব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আমানত গ্রহীতা অর্থাৎ সায়েমের পক্ষ থেকে যেহেতু আমানত সংরক্ষণের ব্যাপারে ত্রুটি হয়েছে তাই সে উক্ত টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বাধ্য। অতএব আপনি চাইলে ঐ টাকাগুলো আদায় করে নিতে পারবেন।
-রদ্দুল মুহতার ৫/৬৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২৯৩; মাজাল্লাতলু আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ৭৮২
একদিন আমাদের ক্লাসের এক সহপাঠির সঙ্গে বিজ্ঞান স্যারের পাঠদান নিয়ে...
একদিন আমাদের ক্লাসের এক সহপাঠির সঙ্গে বিজ্ঞান স্যারের পাঠদান নিয়ে তর্ক হয়। আমি বলেছি, (একটি বিষয়ে) স্যার এমন বলেছেন। আর সে আমার বিপরীত বলছে। একপর্যায়ে সে বলল, আগামীকাল স্যারকে জিজ্ঞাসা করব। যদি আমার কথা ঠিক হয় তাহলে তুমি আমাকে ২০০/- টাকা দিবে। আর যদি তোমার কথা ঠিক হয় তাহলে আমি তোমাকে ২০০/- টাকা দিব। আমি তার কথা মেনে নিয়েছি এবং আরেক সহপাঠির নিকট দুজনই ২০০/- টাকা করে জমা দিয়েছি। পরদিন স্যারকে জিজ্ঞাসা করা হল এবং আমার কথা সঠিক হল। কথামতো টাকাটাও আমি পেয়েছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার জন্য ঐ টাকা নেওয়া কি ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার জন্য ঐ টাকা নেওয়া জায়েয হয়নি। ঐ টাকা মালিককে ফেরত দিতে হবে। কারণ দুজনের মধ্যে যার কথা সঠিক হবে, অন্যজন তাকে টাকা দিবে-এমন শর্ত করা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর শরীয়তে জুয়া হারাম। তাতে লিপ্ত হওয়া কবীরা গুনাহ। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হে মুমিনগণ! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর এসব নিকৃষ্ট শয়তানী কর্মকান্ড। এগুলো থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়েদা (৫) : ৯০)
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-(তরজমা) তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, উভয়টার মধ্যেই মহাপাপ রয়েছে। (সূরা বাকারা (২) : ২১৯
হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের জন্য মদ ও জুয়াকে হারাম করেছেন। (মুসনাদে আহমদ ২/১৬৫, হাদীস : ৬৫৪৭)
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জুয়ার লেনদেনের গুনাহে জড়িত হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে সংশ্লিষ্টদের তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
-সুরা বাকারা : ২১৯; সূরা মায়েদা : ৯০-৯১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৪, ৩৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৩, ৫/৩৮৫
আমি প্রায় ১৫/২০ বছর পূর্বে ঢাকার চিটাগাং রোডে মাদানী নগর...
আমি প্রায় ১৫/২০ বছর পূর্বে ঢাকার চিটাগাং রোডে মাদানী নগর মাদরাসার কাছে তিন কাঠা জমি কিনেছিলাম। কিনার পূর্বে জমির উপর দিয়ে ওয়াপদার ৩৩,০০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার ছিল এবং এখনও আছে। কিনার পরে আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, এই রকম উচ্চ ভোল্টের তারের নিচে বাড়ি-ঘর করা বিপদজনক এবং বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সর্বোচ্চ দোতলা পর্যন্ত করা যেতে পারে। এরকম চিন্তা করে আমি কিনার বেশ কয়েক বছর পরে অন্য একজনের কাছে জমি বিক্রি করি। ক্রয়-বিক্রয় উভয়টা একই দালালের মাধ্যমে করি। দালাল আমাকে বলেছিল, জমিটা কেন বিক্রি করছি তা যেন ক্রেতাকে না বলি। তাই ক্রেতা জিজ্ঞাসা করলে বলেছিলাম এমনিই বিক্রি করছি। জমি আমি ১ লক্ষ টাকায় কিনেছিলাম এবং কয়েক বছর পর বিক্রির সময় তখনকার বাজার দর হিসেবে মোট ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করি। এমতাবস্থায় আমি যে আশঙ্কা ও অসুবিধার কথা চিন্তা করে জমি বিক্রি করেছি ক্রেতাও তো তা ক্রয় করে একই আশঙ্কা ও অসুবিধায় পতিত হল।
উপরোক্ত অবস্থায় আমার প্রশ্ন হল, ক্রেতা আমার কাছ থেকে জমি কেনার কারণে উপরোক্ত যে সমস্যার সম্মুখিন হয়েছে সেজন্য তাকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কি না? যদি দিতে হয় তাহলে মোট কত টাকা দিতে হবে? এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে আমি দালালকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ক্রেতা জমি কেনার আগে জমির অবস্থানস্থলে গিয়ে জমি ও তার উপরের উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তার দেখেছে এবং তারপর কিনেছে। দালাল বলেছে, জমিটা বিক্রি করার সময় তখনকার বাজার দর হিসেবে জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ১ লক্ষ টাকা। এবং পার্শ্ববর্তী তার ছাড়া জমির দাম ছিল প্রতি কাঠা সোয়া লক্ষ টাকা। বর্তমানে ঐ জমির দাম প্রতি কাঠা আট লক্ষ টাকা। আর পার্শ্ববর্তী তার ছাড়া জমির দাম কাঠা প্রতি দশ লক্ষ টাকা।
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ক্রেতা জমির উপর বিদ্যুতের লাইন নিজে দেখেই ক্রয় করেছে তাই আপনার ঐ বিক্রি ত্রুটিযুক্ত হয়নি। আপনাকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। অবশ্য আপনি তাকে বিষয়টি খোলাখুলি জানিয়ে দিলে ভালো হত।
-জামিউল ফুসূলাইন ১/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৬৬
আমরা একটি সমিতি করেছি। সকল সদস্য নির্ধারিত তারিখেই সমিতির মাসিক...
আমরা একটি সমিতি করেছি। সকল সদস্য নির্ধারিত তারিখেই সমিতির মাসিক চাঁদা আদায় করে দেয়। এর জন্য এ নিয়ম করেছি যে, নির্ধারিত তারিখের ভেতর চাঁদা আদায় না করলে বিলম্ব মাশুল বা জরিমানা দিতে হবে। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের এ পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত কি না? এ টাকা সমিতির সকল সদস্যের কল্যাণে ব্যয় করা যাবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
সমিতির মাসিক/বার্ষিক চাঁদা নির্ধারিত তারিখে আদায় না করার কারণে বিলম্ব মাশুল হিসেবে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা বৈধ নয়। সমিতির কাজে ঐ টাকা ব্যয় করা যাবে না; বরং এভাবে কারো থেকে টাকা গ্রহন করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। উল্লেখ্য, সকল সদস্য যথাসময়ে যেন সমিতির মাসিক চাঁদা আদায় করে দেয় এর জন্য এভাবে শর্ত করা যেতে পারে যে, প্রতি মাসে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা আদায় না করলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। (সেক্ষেত্রে ঐ সদস্যকে লাভসহ তার মূলধন ফেরত দিতে হবে।) অথবা এ নিয়ম করা যেতে পারে যে, কোনো চাঁদা বিলম্বে আদায় করলে বিলম্বকালীন সময়ের ঐ পরিমান টাকার লাভ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হবে।
-শরহু মাআনিল আছার ২/৮২; নুখাবুল আফকার ৮/৫৭; ইলাউস সুনান ১১/৬৮৮; ফাতহুল কাদীর ৫/১১২; রদ্দুল মুহতার ৪/৬১
জনৈক ব্যক্তি মীরাছ সূত্রে একটি জমির মালিক হয়েছে। জমিটির মূল্য...
জনৈক ব্যক্তি মীরাছ সূত্রে একটি জমির মালিক হয়েছে। জমিটির মূল্য এক লক্ষ টাকা। ঐ জমিটি সে আবাদ করে না এবং ঐ জমি ছাড়া সদকা-ফিতর ওয়াজিব হয় পরিমাণ অন্য কোনো প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদও তার নেই। কিন্তু ঐ ব্যক্তির এক লক্ষ টাকা ঋণ আছে, যা সাংসারিক প্রয়োজনে নিয়েছে। এখন ঐ ব্যক্তির উপর সদকা-ফিতর ওয়াজিব হবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর সদকা-ফিতর ওয়াজিব নয়। কারণ তার কাছে এক লক্ষ টাকা মূল্যের জমি থাকলেও ঐ পরিমাণ ঋণও তার আছে। ঋণ আদায় করে দিলে তার নিকট ফিতরার নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকছে না। তাই লোকটিকে ফিতরা আদায় করতে হবে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০০
আমার এক বন্ধু তার জন্য একটি বই সংগ্রহ করার জন্য...
আমার এক বন্ধু তার জন্য একটি বই সংগ্রহ করার জন্য আমাকে কিছু টাকা দিয়েছে। বইটি তার জন্য ক্রয় করে আনার সময় পথিমধ্যে অন্য কোনো বন্ধু যদি তা নিতে চায় তাহলে আমি তাকে দিতে পারব কি না?
যে ব্যক্তি আপনাকে বইটি কেনার দায়িত্ব দিয়েছে যদি আপনি তার জন্যই বইটি কিনে থাকেন তাহলে তা তারই বই। এক্ষেত্রে তার অনুমতি ছাড়া বইটি অন্য কাউকে দেওয়া জায়েয হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৬৭-৬৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৭/২৪৩; শরহুল মাজাল্লা ৪/৪৬৯
আমার একটি দোকান আছে। আমি বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ক্রয় করে...
আমার একটি দোকান আছে। আমি বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ক্রয় করে খুচরা মূল্যে বিক্রি করি। ইদানীং একটি শ্যাম্পু কোম্পানি দুই শত টাকার এক বোতল শ্যাম্পু ক্রয় করলে একটি ডোভ সাবান ফ্রি দেয়। বোতলের গায়ে একটি স্টিকারে সাবান ফ্রি লেখা থাকে। সাবানটির মূল্য ৫০/-টাকা। আমি স্টিকার উঠিয়ে শ্যাম্পুটি বিক্রি করি ২০০/-টাকায়। আর সাবানটি বিক্রি করি ৫০/-টাকায়। আমার জন্য উক্ত কাজটি বৈধ হচ্ছে কি না?
কাজটি অবৈধ। কারণ কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য ঠিক রেখে ক্রেতার অগোচরে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া বা অংশবিশেষ রেখে দেওয়া প্রতারণার শামিল। প্রতারণার মাধ্যমে মূল্যেও বৃদ্ধি ঘটছে। ৫০০ মি.লি. শ্যাম্পুর বোতল থেকে ১০০ মি. লি. কমিয়ে দিয়ে গায়ের মূল্যে বিক্রি করা যেমন স্পষ্ট প্রতারণা তেমনি সাবান ফ্রির স্টিকার উঠিয়ে সাবান রেখে দিয়ে শ্যাম্পুর গায়ের মূল্যে বিক্রি করাও প্রতারণা। অতএব এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
-রদ্দুল মুহতার ৬/২২-২৩, ৫/১৪৫; আলগারার ওয়া আছারুহু ফিল উকূদ ৫৯; আলমুসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ৯/৫১
জনৈক ব্যক্তি এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক লক্ষ টাকা মূল্যের একটি...
জনৈক ব্যক্তি এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক লক্ষ টাকা মূল্যের একটি জমি জামানত রেখে দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল। এখন সে জমিটি বিক্রি করতে চাচ্ছে এবং তার পরিবর্তে এক লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার জামানত রাখতে চাচ্ছে। তার জন্য শরীয়তে এই সুযোগ আছে কি?
হ্যাঁ, উক্ত প্রতিষ্ঠান মেনে নিলে জমির পরিবর্তে স্বর্ণালংকার জামানত রাখতে পারবে।
- হেদায়া ৪/৫৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫২৪; জামেউর রুমুয ২/১৯৩; মাজাল্লাহ, পৃ. ১৩৫, মাদ্দাহ : ৭১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৬২; মাজমাউল আনহুর ৪/২৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/১৮৯
আমাদের এলাকায় কবরস্থানের পাশে ছোট একটি কুঁড়েঘর বানিয়ে এক দরবেশ...
আমাদের এলাকায় কবরস্থানের পাশে ছোট একটি কুঁড়েঘর বানিয়ে এক দরবেশ বসবাস করেন। তিনি প্রতি দিন সেখানে বসে বসে মৃতদের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম দেন। মৃতের আত্মীয়-স্বজন তার কাছে এসে খতমের কথা বললে তার চাহিদা অনুযায়ী হাদিয়া দিতে হয়। জানতে চাই, এভাবে কুরআন খতম করে বিনিময় নেওয়া কি জায়েয?
মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু তা হতে হবে শরীয়তের তরীকা মোতাবেক। যেমন নিজেরা কুরআন মজীদ পড়ে মৃতের জন্য সওয়াব পৌঁছানো যায়। অন্যকে দিয়েও করানো যায়, কিন্তু এ জন্য কোনো পারিশ্রমিক বা হাদিয়ার আদান্তপ্রদান বৈধ নয়।
আপনাদের কবরস্থানের দরবেশ সাহেবের ঐ কাজ সম্পূর্ণ শরীয়তবিরোধী। মৃতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে,দুআ-দরূদ পড়ে হাদিয়ার নামেও টাকা নেওয়া যাবে না। নিলে হারাম হবে। এতে মৃতের কোনো উপকার হয় না। কোনো সওয়াবও পৌঁছে না।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৭
রাশেদ তার বোনের কাছে ২৮০০/- টাকা পেত। কিন্তু বোন সে...
রাশেদ তার বোনের কাছে ২৮০০/- টাকা পেত। কিন্তু বোন সে টাকা দিতে অস্বীকার করে। তাই রাশেদ তার দায়িত্বে থাকা বোনের ২৪টি শেয়ারের ৭টি বিক্রি করে ২৮০০/-টাকা উসুল করে নেয়। বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দেয়। বোন যখন বিষয়টি জানতে পারে তখন সে দাবি করে যে, ২৮০০/-টাকা রেখে সেই সাত শেয়ারের বর্তমান দাম অনুযায়ী সব টাকা ফেরত দিতে হবে।
উল্লেখ্য, যখন শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে তখন প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল ৪২০০/-টাকা। বর্তমানে যার মূল্য ৭৮০০/-টাকা। এখন রাশেদ কি বর্তমান মূল্য অনুযায়ী সব টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে নাকি তার হাতে যে অবশিষ্ট টাকা আছে তা দিয়ে দিলেই দায়মুক্ত হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যদি বাস্তবেই ঐ মহিলা তার ভাইয়ের পাওনা দিতে অস্বীকার করে থাকে তাহলে রাশেদের জন্য বোনের শেয়ার বিক্রি করে নিজের পাওনা নিয়ে নেওয়া বৈধ হয়েছে। সুতরাং বিক্রিত মূল্য থেকে নিজের পাওনা রেখে অবশিষ্ট অংশ বোনকে ফেরত দিলেই সে দায়মুক্ত হবে। এক্ষেত্রে শেয়ারের বর্তমান মূল্য দিতে বাধ্য নয়।
-আননুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ৪৫২; রদ্দুল মুহতার ৬/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/১৩৫
ক) তিওয়ালে মুফাসসাল, আওসাতে মুফাসসাল ও কিসারে মুফাসসাল দ্বারা কি...
ক) তিওয়ালে মুফাসসাল, আওসাতে মুফাসসাল ও কিসারে মুফাসসাল দ্বারা কি কিরাতের পরিমাণ বোঝানো হয়েছে নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে এই সূরাগুলি পাঠ করা সুন্নত বোঝানো হয়েছে। একজন মুফতী সাহেব বলেছেন, এই সূরাগুলি পাঠ করা সুন্নত, একথা বোঝানো হয়নি; বরং কিরাতের পরিমাণ বোঝানো হয়েছে।
খ) কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি দুই হাজার ভর্তি-ফরম বিক্রি হয়, আর প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্য হয় যে, তারা ৯০/১০০ ছাত্র ভর্তি করবেন। তাহলে দুই হাজার ফরম বিক্রি করা জায়েয হবে কি? আর প্রতিটি ফরম কি ১০০ টাকা করে বিক্রি করা জায়েয হবে ?
ক) ফজর ও যোহর নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল (অর্থাৎ সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত), আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাসসাল (অর্থাৎ সূরা বুরুজ থেকে সূরা লাম ইয়াকুন পর্যন্ত), আর মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল (অর্থাৎ সূরা লাম ইয়াকুন থেকে সূরা নাস পর্যন্ত) অংশ থেকে পড়া সুন্নত। মাসনুন কেরাত বলতে মুফাসসালাতের নির্ধারিত এই সূরাসমূহ এবং এর পরিমাণ দুটোই উদ্দেশ্য। তাই মাসনুন কেরাত অনুসরণ করতে হলে অধিকাংশ সময় মুফাসসালাতের সূরাগুলো থেকে পূর্ণ সূরা পড়া উচিত। তবে কখনো ঐ পরিমাণকে ঠিক রেখে কুরআন মজীদের অন্য স্থান থেকে কিরাত পড়লেও তা অনুত্তম বা সুন্নত পরিপন্থী বলা যাবে না। কারণ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকেও মাঝে মধ্যে মুফাসসালাতের বাইরে থেকে পড়া প্রমাণিত আছে। তবে অধিকাংশ সময় মুফাসসালাত থেকেই পড়া সুন্নত। সুতরাং মুফাসসালাত বলতে শুধু পরিমাণ বোঝানা হয়েছে, নির্দিষ্ট সূরা থেকে পড়া বোঝানো হয়নি-প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। এছাড়া মুফাসসালাতের সূরা ও পরিমাণ কোনোটি ঠিক না রেখে কিরাত পড়লে সে নামাযও আদায় হয়ে যাবে।
-জামে তিরমিযী ১/৪১; ইলাউস সুনান ৪/৩২; আসসিআয়া ২/১৮৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪০-৪১
খ) যদি ভর্তির আবেদরকারী বেশি হয় এবং তাদের সকলকে ভর্তি ফরম দেওয়ার উদ্দেশ্য এই হয়ে থাকে যে, তাদের থেকে যাচাই করে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করা হবে তবে যতজন ছাত্র ভর্তি করা হবে এর চেয়ে বেশি ফরম বিতরণ ও বিক্রি জায়েয। কারণ এক্ষেত্রে ফরম দেওয়ার অর্থ হয় ফরম-গ্রহিতাকে ভর্তির জন্য যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া। কিন্তু উপরোক্ত উদ্দেশ্য ছাড়া নিছক অর্থ লাভের জন্য ফরম বিক্রি করা জায়েয হবে না। আর ফরমের মূল্য হতে হবে এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক খরচাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে।
অনেক কোম্পানি এমন আছে, যারা তাদের পণ্যের সাথে রুমাল, কলম...
অনেক কোম্পানি এমন আছে, যারা তাদের পণ্যের সাথে রুমাল, কলম ইত্যাদি ফ্রি দিয়ে থাকে। আমি এমন একটি কোম্পানির একটি লুঙ্গি কিনেছিলাম, যারা লুঙ্গির সাথে রুমাল ফ্রি দিয়ে থাকে। কিন' আমি যখন খরিদ করি তখন লুঙ্গির সঙ্গে রুমাল ছিল না। তাই রুমালের মূল্য বাবদ কিছু টাকা কম দিয়ে লুঙ্গিটি কিনে আনি। জানার বিষয় এই যে, বিক্রেতাকে রুমালের টাকা না দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, রুমাল বাবদ কিছু টাকা কম দেওয়া বৈধ হয়েছে। কারণ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মূলত লুঙ্গি এবং রুমাল উভয়টিই আপনার ক্রয়কৃত পণ্য। তাই রুমাল না পাওয়ার কারণে সে বাবদ মূল্য কম দেওয়া জায়েয।
আলবাহরুর রায়েক ৬/১২০; হেদায়া ৩/৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৮৪; মাজমাউল আনহুর ৩/১১৬
একবার বাসে বসা ছিলাম। একজন হকার কিছু কাচের শো-পিস নিয়ে...
একবার বাসে বসা ছিলাম। একজন হকার কিছু কাচের শো-পিস নিয়ে আমাদের বাসে উঠল। সে বলছিল, প্রত্যেকটির দাম দশ টাকা। যে কেউ হাতে নিয়ে দেখতে পারেন, কিনতে হবে না। যাত্রীদের অনেকেই হাতে নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ বাস জোরে ব্রেক করলে এক যাত্রীর হাত থেকে একটি শো-পিস পড়ে ভেঙ্গে যায়। তখন হকার উক্ত যাত্রীর কাছে মূল্য দাবি করে এবং উক্ত যাত্রীর অস্বীকৃতি সত্ত্বেও তাকে মূল্য দিতে বাধ্য করে। আমার জানার বিষয় হল, ভাঙ্গা শো-পিসটির মূল্য দেওয়া উক্ত যাত্রীর জন্য জরুরি ছিল কি না? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়া ঐ শো-পিসটির জরিমানা দেওয়া জরুরি ছিল না। কারণ প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার পিছনে তার ত্রুটি ছিল না।
ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৭৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১
আমি কম্পিউটারের কিছু প্রোগ্রাম শেখার জন্য এক সেন্টারে ৩ মাসের...
আমি কম্পিউটারের কিছু প্রোগ্রাম শেখার জন্য এক সেন্টারে ৩ মাসের জন্য ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি প্রোগ্রামগুলো শেখা শুরু করি। কিন্তু দশ দিন যাওয়ার পর আমার কাছে আর তা ভালো লাগেনি। তাই সেখানকার প্রধানকে বলেছি যে, আমি শুধু দশ দিনের প্রোগ্রাম ফি দিব। সে এতে রাজি হয়েছে। জানালে কৃতজ্ঞ থাকব যে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী আমার প্রস্তাব কি ঠিক হয়েছে? নাকি পুরা ৩ মাসের ফি দিতে হবে?
সেন্টার-প্রধান যেহেতু দশ দিনের ফি নিতে রাজি হয়েছেন তাই আপনি ঐ দিনগুলোর ফি দিলে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবেন।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৩; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ২/৫৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪
এক প্রতিবেশী আমার কাছ থেকে এক কেজি পোলাওয়ের চাল ধার...
এক প্রতিবেশী আমার কাছ থেকে এক কেজি পোলাওয়ের চাল ধার নিয়েছে, যা নব্বই টাকায় কেনা হয়েছিল। কয়েকদিন পর ঐ প্রতিবেশী আমাকে বললেন, আমাদের তো বাজার থেকে চাল আনার লোক নেই। আপনারাই তা নিয়ে আসুন। আমি টাকা দিয়ে দিব। বর্তমানে ঐ চালের মূল্য একশ টাকা। প্রশ্ন হল, আমার পাওনা চালের পরিবর্তে টাকা নিতে পারব কি না এবং ক্রয়মূল্য থেকে অতিরিক্ত নেওয়া যাবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নো্ক্ত ক্ষেত্রে চাল নিলে এক কেজিই নিতে হবে। বেশি নিতে পারবেন না। আর মূল্য নিলে ১ কেজির বর্তমান মূল্য হিসাবে নিতে পারবেন। বর্তমান মূল্য পূর্বের মূল্য থেকে বেশি হলেও বর্তমান মূল্য নিতে পারবেন। তবে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া জায়েয হবে না।
ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৭-৫১৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ ১/১৭৪-১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬১
আমাদের বাড়ির পাশে একটি বড় বাজার আছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ...
আমাদের বাড়ির পাশে একটি বড় বাজার আছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এ বাজারে আসে। অনেকেই সাইকেলে করে বাজারে আসেন এবং এক ব্যক্তির দোকানে হেফাযতের জন্য রাখেন। দোকানের মালিক এর জন্য সময় অনুপাতে নির্ধারিত ফি নিয়ে থাকে। যেমন ঘন্টা প্রতি ১/২ টাকা। জানতে চাই, সাইকেল জমা রেখে এভাবে ফি গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না?
হ্যাঁ, সাইকেল হেফাযতের জন্য ঘন্টা হিসাবে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ হবে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ মাদ্দা : ৭৭৭; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ৩/২৪২; শরহুল মাজাল্লাহ, সীলম বায ১/৪৩১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬৪
আমার ছোট ছেলের কিছু টাকা আমার নিকট আছে। যা একটি...
আমার ছোট ছেলের কিছু টাকা আমার নিকট আছে। যা একটি একাউন্টে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার বয়স ৪। এ মুহূর্তে তার টাকার কোনো জরুরত নেই। কেননা তার সব খরচ আমাদের উপর। এক্ষেত্রে আমার জিজ্ঞাসা হল, আমি তার টাকা ঋণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারব কি?
নাবালেগ সন্তানের টাকা পিতার জন্য ঋণ হিসেবে ব্যবহার করা বৈধ। তাই আপনি ঐ ছেলের টাকা ঋণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
-ফয়যুল কাদীর ৩/৫০; ফাতহুল কাদীর ৬/৪০৫; জামিউ আহকামিস সীগার ১/২৭৮; আলবিনায়াহ ১১/২৭৭
সৌদি আরব থাকাকালীন আমি এক বাঙ্গালী থেকে এক হাজার রিয়াল...
সৌদি আরব থাকাকালীন আমি এক বাঙ্গালী থেকে এক হাজার রিয়াল কর্জ নিয়েছিলাম। এখন বাংলাদেশে আসার পর তা আদায় করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, রিয়ালের কোন দিনের মূল্য ধরে তা পরিশোধ করব? ঋণ গ্রহণের দিনের হিসেবে? নাকি ঋণ আদায়ের দিনের হিসাবে?
আপনি যেহেতু রিয়াল কর্জ নিয়েছিলেন সেহেতু নিয়ম তো হল তাকে রিয়ালই দিবেন। হ্যাঁ, সে যদি রিয়ালের পরিবর্তে টাকা নিতে সম্মত হয় তাহলে টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে। তবে যে দিন ঋণ আদায় করবেন সেই দিনের রিয়ালের বাজার দর হিসাবে আদায় করতে হবে। গ্রহণের দিনের হিসাবে নয়।
-বযলুল মাজহূদ ১৫/১২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ ১/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৪
মসজিদে দানকৃত বা মসজিদের চাঁদার টাকায় ক্রয়কৃত ফ্যান, মাইক ইত্যাদির হুকুম ৷
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪১৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪১৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রান ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
বাবার হারাম কামাই সন্তানের জন্য গ্রহন করা ৷
-ইহয়াউ উলুমিদ দ্বীন ২/১৪৭, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩৪২; ফতাওয়ায়ে শামী ৬/২৪৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
নারি পুরুষের নামাযে অভিন্ন মর্মে ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী আহলে হাদীসদের মনগড়া দলিলের জবাব৷
নেই।
উপরোক্ত বক্তব্যে লা-মাযহাবী বন্ধুটি তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। যথা-
১৷
বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হাদীস “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো, সেভাবে নামায পড়” দ্বারা পুরুষ ও নারীকে একই হুকুমে রেখে সকল আদায় পদ্ধতি এক প্রমাণের কিয়াস করেছেন।
২৷
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মতই নামায শিক্ষা দিয়েছেন।
৩৷
নারী পুরুষদের নামাযের আদায় পদ্ধতির ভিন্নতা সম্পর্কিত সকল বর্ণনাই জাল নয় জঈফ।
৪৷
ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর বক্তব্য এনেছেন যে, নারীরা নামাযে তাই করবে, যা একজন পুরুষ করে থাকে, বক্তব্য দ্বারা পুরুষ ও নারীর নামাযের আদায় পদ্ধতি একই সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন। উপরোক্ত তিনটি বিষয় আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করছি। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ। ১ম পয়েন্টের জবাব লা-মাযহাবী মতবাদের মূল ভিত্তিই হল, প্রতারণা ও ধোঁকা। কুরআন ও হাদীসের উপর তাদের মতবাদের ভিত্তি নয়। এর অনেক প্রমাণ আমরা আগে দিয়েছি। এবার আপনাদের চোখের সামনে আরো একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ উপস্থিত। একটি হাদীসের আংশিক উপস্থিত করে নিজের পক্ষ থেকে কিয়াসী হুকুম আরোপ করা সহীহ হাদীসের অনুসারীর কাজ নয় একথা আশা করি গণ্ড মুর্খ ব্যক্তিই বুঝবেন। আমরা প্রথমে উক্ত হাদীসটি পূর্ণ দেখে নেইঃ
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺤُﻮَﻳْﺮِﺙِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺷَﺒَﺒَﺔٌ ﻣُﺘَﻘَﺎﺭِﺑُﻮﻥَ، ﻓَﺄَﻗَﻤْﻨَﺎ
ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻈَﻦَّ ﺃَﻧَّﺎ ﺍﺷْﺘَﻘْﻨَﺎ ﺃَﻫْﻠَﻨَﺎ، ﻭَﺳَﺄَﻟَﻨَﺎ
ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺮَﻛْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻨَﺎ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﻧَﺎﻩُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﻓِﻴﻘًﺎ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺭْﺟِﻌُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢ،ْ ﻓَﻌَﻠِّﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﻣُﺮُﻭﻫُﻢْ،
ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮَﺕِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ،
ﻓَﻠْﻴُﺆَﺫِّﻥْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ، ﺛُﻢَّ ﻟِﻴَﺆُﻣَّﻜُﻢْ ﺃَﻛْﺒَﺮُﻛُﻢْ »
আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা কয়জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে আসলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তাঁর কাছে আমরা থাকলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তা তাঁকে জানালাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ার্দ্র। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, সৎ কাজের আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে।[বুখারী, হাদীস নং-৬০০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০) উক্ত হাদীসে খেয়াল করুন!
১
কতিপয় যুবক সাহাবী এসেছেন। তাদের সবাই যুবক। তাদের মাঝে কোন নারী ছিল না।
২
বাড়িতে গিয়ে স্বীয় এলাকাবাসীকে কুরআন শিক্ষা সৎ কাজের আদেশের নির্দেশনা দিলেন। এরপর তোমরা বলে পরপর তিনটি নির্দেশনা দিলেন। যথা-
১
আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে তোমরা নামায পড়বে।
২
নামাযের সময় হলে তোমাদের মাঝে একজন ইমাম হবে।
৩
নামাযের জন্য তোমাদের মাঝের একজন ইমাম হবে। এক নাম্বার বুঝার বিষয় হল, আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশটি নারীদের দেনইনি। দিয়েছেন পুরুষদের। তাহলে এ হাদীসটিকে নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা কত বড় জুলুম ও অবিচার ভাবা যায়? দ্বিতীয়ত হাদীসটির শেষ দিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ ও অন্যান্য যুবক সাহাবীগণকে তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন “তোমরা” ও “তোমাদের” বলে বলে। এখন আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুরা উক্ত তিন নির্দেশের মাঝে প্রথম নির্দেশ তথা “তোমরা আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়বে” উক্ত বাক্যের তোমরা দ্বারা মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। বলছেন যে, তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ শামিল। সুতরাং মালিক হুয়াইরিস রাঃ এবং তার পরিবারের মহিলা সদস্যরাও যেন পুরুষদের মত একই আদায় পদ্ধতিতে নামায আদায় করে। এ হাদীসটির এ অংশটিই হল, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক দাবিদারদের সর্বোচ্চ দলীল। অথচ উক্ত হাদীসের অংশের কোথাও নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক হবার কথাটি নেই। এটি তাদের
কিয়াস।
যে কিয়াস সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত
কিয়াস।
আপনারা খেয়াল করুন, যদি প্রথম নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যায়, তাহলে পরের দুই নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝেও নিশ্চয় নারী পুরুষ শামিল হবেন। এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ হাদীসতো একই। নির্দেশতো একই সাহাবীগণকে দেয়া হচ্ছে। তো পরের দুই তোমরা শব্দসহ নির্দেশ
কি?
এক হল, তোমাদের মাঝে একজন আজান দিবে। আর দ্বিতীয় হলে তোমাদের মাঝে যে বড় সে ইমাম
হবে।
তাহলে প্রথম তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হবার দাবী করলে স্বাভাবিকভাবেই পরের দুই তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যাবে। সেই হিসেবে লা-মাযহাবী বন্ধুদের মসজিদের মুআজ্জিন হওয়া প্রয়োজন তাদের বিবিদের। আর ইমাম সাহেব বানানো প্রয়োজন তাদের নানী বা দাদীদের। কারণ এখানের তোমরা এর মাঝেওতো নারী পুরুষ সমান হবে। বাহ! লা-মাযহাবী মতবাদ জিন্দাবাদ। এটা কোন ধরণের প্রতারণা যে, হাদীসের একাংশ পড়া হবে। আর বাকি দুই অংশকে বর্ণনা করা হবে না। এটা হাদীস নিয়ে মশকরা ও ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কী হতে
পারে?
এখানে এসে আমাদের লা-মাযহাবী দোস্তরা বলেন যে, না, না, আজান ও ইমামতীর মাঝে নারী ও পুরুষের মাঝে পার্থক্য আছে। নারীরা আজান ও ইমামতী করবে না। কিন্তু কেন ভাই? হাদীসতো একই। কিতাবতো একই। একই হাদীস দিয়ে নামাযের আদায় পদ্ধতি পুরুষ ও নারীর এক হওয়া প্রমাণিত হলে, একই হাদীসের বাকি অংশ দিয়ে কেন আজান ও ইমামতীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ এক হবে না? এটা কী ধরণের প্রতারণা? সুতরাং পরিস্কার বুঝা গেল, উক্ত হাদীস দিয়ে লা-মাযহাবী বন্ধুরা নারী ও পুরুষের নামায পদ্ধতি এক বলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। অথচ হাদীসের উপর তারা নিজেরাই আমল করে না। আর এখানে নারী ও পুরুষ এক হবার কোন প্রমাণের চিহ্নও নেই। পুরোটাই লা-মাযহাবী বন্ধুদের ধাপ্পাবাজী। ২য় পয়েন্টের জবাব এটি পরিস্কার মিথ্যাচার। হাদীসের জখিরার কোথাও এমন কোন মুনকার হাদীসও কেউ দেখাতে পারবে না, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মত নামায আদায় পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন বলে প্রমাণ আছে। এটি পরিস্কার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যারোপ। নাউজুবিল্লাহি মিন
জালিক।
আল্লাহ তাআলা এমন মিথ্যুকদের থেকে হিফাযত করুন। ৩য় পয়েন্টের জবাব আল্লাহ ও নবীর কথা ছাড়া কারো কথা যার কাছে দলীল নয় তিনি কুরআনের কোন আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে হাদীসকে জাল জঈফের ফাতওয়া প্রদান করেছেন? এরকম শবজান্তা শমসের খেতাব তাকে কে
দিল?
হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এমন কথা কেউ বলতে পারে না যে, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি সম্পর্কিত কোন হাদীস বিশুদ্ধ হিসেবে বর্ণিত হয়নি। বরং হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিই এমন মুর্খতাসূলভ কথা বলতে পারে। আমরা সামনে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদীস ও আসারে সাহাবা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। ৪র্থ পয়েন্টের জবাব আল্লাহকে ভয় করুন। ইন্নালিল্লাহ। এমন জঘন্য মিথ্যা কেবল লা- মাযহাবী নামক প্রতারক ভাইরাই বলতে পারেন। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলিঃ কোন লা-মাযহাবী মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা থেকে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর উপরোক্ত উক্তি তথা “নারীরা নামাযে তাই করবে যা একজন পুরুষে করে থাকে” দেখাতে পারবে না। প্রশ্নকারীকে অনুরোধ করবোঃ আপনি উক্ত লা-মাযহাবী বন্ধুটিকে বলুনঃ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার প্রথম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠার উক্ত হাদীসটি দেখাতে। ওরা উল্টে লটকে যেতে রাজি হবে, বিষ খেতে রাজি হবে কিন্তু উক্ত কিতাব নিয়ে আপনার সামনে এসে উক্ত হাদীস দেখাতে পারবে না। কারণ শুধু প্রথম খন্ডে কেন? পুরো মুসান্নাফের কোথাও উক্ত হাদীসের কোন অস্তিত্বই নেই। লা-মাযহাবী গায়র মুকাল্লিদ মতবাদ যে ধোঁকা ও প্রতারণা ও জালিয়াতির মতবাদ তা তাদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো সাফ ও পরিস্কার হয়ে গেল। হাদীসের কিতাবের নাম, খন্ড ও পৃষ্ঠা নাম্বার লিখে এমন মিথ্যা? ইন্নালিল্লাহ। এসব লোকদের কি কবরের ভয় নেই। নামায কি জন্য পড়ে? টাকা পয়সা কামানোর জন্য না আখেরাতের জন্য? যদি আখেরাতের জন্য পড়ে থাকে, তাহলে সেই নামাযের আদায় পদ্ধতি প্রমাণের জন্য হাদীসের নামে মিথ্যাচার
কেন?
এমন মিথ্যা কথা ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর নামে, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা কিতাবের উদ্ধৃত করা হল। যে কথার অস্তিত্ব নেই, তা প্রমাণের জঘন্য চেষ্টা করা হল, অথচ ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে যে বিশুদ্ধ বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে তা আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুদের আড়াল রয়ে গেল কেন? দেখুন ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা গ্রন্থে কী এসেছে?
2795- ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻷَﺣْﻮَﺹِِ ، ﻋَﻦْ ﻣُﻐِﻴﺮَﺓَ ، ﻋَﻦْ
ﺇﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪَﺕِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓَﻠْﺘَﻀُﻢَّ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ،
ﻭَﻟْﺘَﻀَﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ . ( ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﻛﺘﺎﺏ
ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2795- ) হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন- মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫) 5071 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻭﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻣﻨﺼﻮﺭ
ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ
ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১) কিতাবে যে হাদীস আছে, সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া, আর যা নেই, তা উক্ত কিতাবের নামে, বড় ইমামের নামে চালিয়ে দেয়া অন্তত সহীহ হাদীস অনুসারীর কাজ নয়, তা বুঝতে আশা করি আল্লামা হতে হবে না। নারী ও পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। এ মর্মে আমার আগের একটি পোস্টে বিস্তারিত শেয়ার করা হয়েছে৷ দেখে নিন৷
হালাল ও হারাম মিশ্রিত সম্পদে উত্তরাধিকার হবার বিধান৷
ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﻟﻴﺲ ﻫﻮ ﻧﻔﺲ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺍﻡ ﻷﻧﻪ ﻣﻠﻜﻪ ﺑﺎﻟﺨﻠﻂ
ﻭﺍﻧﻤﺎ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺍﻟﺘﺼﺮﻑ ﻓﻴﻪ ﻗﺒﻞ ﺍﺩﺍﺀ ﺑﺪﻟﻪ ..… ﻧﻌﻢ ﻻ
ﻳﺒﺎﺡ ﺍﻻﻧﺘﻔﺎﻉ ﺑﻪ ﻗﺒﻞ ﺃﺩﺍﺀ ﺍﻟﺒﺪﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻣﻦ
ﺍﻟﻤﺬﻫﺐ، ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺍﻟﻄﺤﻄﺎﻭﻯ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ - 4/192 . ﻭﻓﻰ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ - ﺝ 349/ ( ﻃﺒﻊ ﻣﻜﺘﺒﺔ ﺭﺷﻴﺪﻳﺔ )
ﻭﺍﻟﺴﺒﻴﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻌﺎﺻﻰ ﺭﺩﻫﺎ ﻭﺫﻟﻚ ﻫﻬﻨﺎ ﺑﺮﺩ ﺍﻟﻤﺄﺧﻮﺫ
ﺍﻥ ﺗﻤﻜﻦ ﻣﻦ ﺭﺩﻩ ﺑﺎﻥ ﻋﺮﻑ ﺻﺎﺣﺒﻪ .… ﺍﻟﺦ . ﻭﻓﻰ ﺭﺩ
ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - 5/99 ( ﻃﺒﻊ ﺳﻌﻴﺪ ) ﻭﺍﻟﺤﺎﺻﻞ ﺃﻧﻪ ﺍﻥ ﻋﻠﻢ
ﺃﺭﺑﺎﺏ ﺍﻷﻣﻮﺍﻝ ﻭﺟﺐ ﺭﺩﻩ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﺍﻻ ﻓﺎﻥ ﻋﻠﻢ ﻋﻴﻦ
ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﻪ ﻭﻳﺘﺼﺪﻕ ﺑﻪ ﺑﻨﻴﺔ ﺻﺎﺣﺒﻪ … ﻭﺑﻌﺪ
ﺍﺳﻄﺮ …… ﻭﻣﻔﺎﺩﻩ ﺍﻟﺤﺮﻣﺔ ﻭﺍﻥ ﻟﻢ ﻳﻌﻠﻢ ﺃﺭﺑﺎﺑﻪ
ﻭﻳﻨﺒﻐﻰ ﺗﻘﻴﻴﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻋﻴﻦ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻟﻴﻮﺍﻓﻖ ﻣﺎ
ﻧﻘﻠﻨﺎﻩ ﺍﺫ ﻟﻮ ﺍﺧﺘﻠﻂ ﺑﺤﻴﺚ ﻻ ﻳﺘﻤﻴﺰ ﻟﻤﻠﻜﻪ ﻣﻠﻜﺎ ﺧﺒﻴﺜﺎ
ﻟﻜﻦ ﻻ ﻳﺤﻞ ﻟﻪ ﺍﻟﺘﺼﺮﻑ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺆﺩ ﺑﺪﻟﻪ ﺍﻟﺦ ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ- 6/182 ( ﺳﻌﻴﺪ ) ﻭﻳﺠﺐ ﺭﺩ ﻋﻴﻦ
ﺍﻟﻤﻐﺼﻮﺏ ﻓﻰ ﻣﻜﺎﻥ ﻏﺼﺒﻪ ﻭﻳﺒﺮﺃ ﺑﺮﺩﻫﺎ ﻭﻟﻮ ﺑﻐﻴﺮ
ﻋﻠﻢ ﺍﻟﻤﺎﻟﻚ ..… ﺃﻭ ﻳﺠﺐ ﺭﺩ ﻣﺜﻠﻪ ﺍﻥ ﻫﻠﻚ ﻭﻫﻮ ﻣﺜﻠﻰ ،
ﻭﻓﻰ ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - 6/385 - ﻭﻳﺮﺩﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺃﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﺍﻥ
ﻋﺮﻓﻮﻫﻢ ﻭﺍﻻ ﺗﺼﺪﻗﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻻﻥ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻜﺴﺐ ﺍﻟﺨﺒﻴﺚ
ﺍﻟﺘﺼﺪﻕ ﺍﺫﺍ ﺗﻌﺬﺭ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺻﺎﺣﺒﻪ ، উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
রিয়াল বা বিদেশী মুদ্রা ঋন নিয়ে তার পরিবর্তে টাকা দেয়া৷
01756473393
একদিন আমার বাসায় টমেটোর প্রয়োজন ছিল। বাসায় জরুরি কাজ থাকায়...
বাজারে না গিয়ে পাশের বাসা থেকে এক কেজি টমেটো ধার নেই। ঐ সময়
টমেটোর কেজি ছিল আশি টাকা। এক সপ্তাহ পরে দাম কমে পঞ্চাশ টাকায় নেমে আসে। আমার জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি পঞ্চাশ টাকার এক কেজি টমেটো দিয়ে দিলেই চলবে নাকি আশি টাকা বা আশি টাকার টমেটো ফেরত দিতে হবে?
টমেটো দেওয়াই কর্তব্য। আশি টাকা অথবা বর্তমানে আশি টাকার যতটুকু টমেটো
পাওয়া যায় তা দেওয়া লাগবে না। ঋণদাতা আশি টাকার টমেটো দাবি করলে তা
নাজায়েয হবে। তবে আপনি চাইলে নিজ থেকে কিছু বাড়িয়ে দিতে পারেন।
- ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬১; মাবসূত, সারাখসী ১৪/২৯; বুহুস ফী
কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১৮৩-১৮৪
আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। যিনি অন্ধ ও দরিদ্র। তাকে...
টাকা দেওয়ার জন্য আমি তার বাড়িতে যাই। কিন্তু লোকটি তার আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে যাওয়ায় তা আর দেওয়া হয়নি। ঐ টাকা এখনো আমার কাছে আছে। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি এ টাকা নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারব? নাকি অন্য ফকীরকে দিয়ে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
করতে পারবেন। আবার ইচ্ছা করলে দানও করতে পারবেন।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪০৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৫০৩
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত উপলক্ষ্যে দুআ অনুষ্ঠান করার পর এর বিনিময়ে...
না?
আমাদের এলাকায় একজন দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে...
দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে ঋণ নিলে তা আদায়ের সময় ঋণের পরিমাণের চেয়ে একটু বেশি
আদায় করে থাকেন। জানার বিষয় হল, ঋণের চেয়ে বেশি আদায় করা জায়েয আছে কি না?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই লোক, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।-
সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৩৯০
তবে এটি ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন ঋণের চেয়ে বেশি দেওয়া-নেওয়ার কোনো শর্ত অথবা প্রচলন না থাকে। যদি এ দুটির কোনো একটি উপস্থিত থাকে তাহলে অতিরিক্ত গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২২৬৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া
৩/২০২;
আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২
আমি একজন ছাত্র। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মাঝে সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের...
আয়োজন করা হয়। এ সকল অনুষ্ঠানে যারা বিজয়ী হয় তাদেরকে পুরস্কারও দেওয়া
হয়। এজন্য বছরের শুরুতেই সকল সদস্য থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। আমার প্রশ্ন হল, বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য সকল
সদস্য থেকে এভাবে টাকা নেওয়া কি জায়েয হবে?
এটা এক প্রকারের কিমার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বক্তৃতা অনুষ্ঠানের বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের থেকে চাঁদা উঠানো জায়েয হবে না; বরং এক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য ভিন্ন ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে প্রতিযোগীদের কেউ যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ঐ ফান্ডে অনুদান দিতে আগ্রহী হয় তবে তার থেকে নেওয়া যাবে। আর অনুষ্ঠানটি যেহেতু সকলের জন্য প্রশিক্ষণমূলক
তাই এর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য খরচাদি সংশিশ্লষ্ট সকলের থেকে নেওয়া জায়েয হবে। -ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০২; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/১৫৬, ২/১৫৮; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুয়াইতিয়্যাহ ১৫/৮০
আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। যিনি অন্ধ ও দরিদ্র। তাকে...
আমাদের মহল্লায় শীতের মৌসুমে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এ বছর মহল্লার...
হবে।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে খেলাধুলা শরীয়তে বৈধ কি?
৪/৪৩৬
আমাদের ত্রিশজনের একটা সংগঠন আছে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যকে...
লাগাতার তিন মাস টাকা আদায় না করলে তাকে বিশ টাকা
আর পাঁচ মাস আদায় না করলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা
দিতে হয়। আর এ টাকাগুলো সংগঠনের
প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা হয়। সংগঠনের এ
পদ্ধতি কি শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
নয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা আদায় না করার কারণে
জরিমানা আরোপ করা জায়েয নেই। সুতরাং যাদের থেকে জরিমানা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে তা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে এমন নিয়ম করা যেতে পারে যে, কিস্তি আদায়ে বিলম্ব করলে বিলম্বিত সময়ের মুনাফা সে পাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৬৭;
রদ্দুল মুহতার ৪/৬১-৬২, ৬/৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ
১/২৬৫
আমি একদিন স্বাভাবিক গতিতে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি মুরগি...
হয়েছে।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, খ- : ২, সংখ্যা : ৮/১৯৮-১৯৯; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/২৯৯
আমাদের মহল্লার মসজিদের সীমানায় কিছু আম গাছ আছে। আমের মৌসুমে...
সম্পদ।
বিনামূল্যে তা পেড়ে নেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়। কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হল, গাছের ফলগুলো বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা করা এবং মসজিদের প্রয়োজনে তা ব্যয় করা। তাই মুসলিস্নদের কেউ নিতে চাইলে ন্যায্য মূল্য দিয়ে নিতে পারবে। বিগত দিনে যারা বিনামূল্যে আম নিয়েছে তাদের কর্তব্য হল এর ন্যায্য মূল্য মসজিদের ফান্ডে আদায় করে দেওয়া। -কিতাবুল ইসআফ ২২; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২
আমাদের এলাকায় একটি লন্ড্রি দোকান আছে। সেখানে খুব ভিড় হয়।...
আমার ছোট ছেলের কিছু টাকা আমার নিকট আছে। যা একটি...
এখন ঢাকা শহরে নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এর...
আমাদের এলাকায় একটি লন্ড্রি দোকান আছে। সেখানে খুব ভিড় হয়।...
আমি একদিন স্বাভাবিক গতিতে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি মুরগি...
আমাদের মহল্লার মসজিদের সীমানায় কিছু আম গাছ আছে। আমের মৌসুমে...
বর্তমানে বিয়েশাদিতে আলোকসজ্জা ও গেইট করা হয়। এ সম্পর্কে কারো...
নয়। এটি অপচয় ও সম্পূর্ণ রেওয়াজসর্বস্ব
কাজ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আলোকসজ্জা শুধু বিদ্যুতের অপচয়ই নয়; বরং অন্যের হক নষ্ট করারও শামিল। তাই এসব থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকা কর্তব্য। আর গেইটের জন্য বরপক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করে টাকা নেওয়া আরো গর্হিত কাজ। সুতরাং এসব কুরূসুম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আমার মামা এক ব্যক্তির নিকট পাঁচ হাজার টাকা আমানত রাখেন।...
এরপর
লোকটি মামাকে বিষয়টি জানিয়ে বলে, যেহেতু টাকাগুলো আমার কাছ থেকে চুরি হয়েছে তাই আমি তোমাকে প্রত্যেক মাসে অল্প অল্প করে তা পরিশোধ করে দিব। এরপর লোকটি তিন মাসে ২৫০০/- টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু এখন সে আর টাকা দিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, তার জন্য কি বাকি টাকা পরিশোধ করা জরুরি? আমানতদাতা কি তার
নিকট
বাকি টাকা দাবি করতে পারবে?
৫/৬৬৪
আমাদের এলাকায় একজন দানশীল লোক আছেন। তিনি কখনো কারো থেকে...
এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার কেবলমাত্র আপন বোনের ছেলে ও...
করা হবে?