আমাদের এলাকায় মসজিদে ঈদের জামাত হয়। গত ঈদে নামাযের আগে...
আমাদের এলাকায় মসজিদে ঈদের জামাত হয়। গত ঈদে নামাযের আগে প্রচণ্ড বৃষ্টি আরম্ভ হয়। তখন আমরা সবাই মসজিদে অবস্থান নেই। এছাড়া অবস্থানের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। এদিকে ঈদের নামাযের সময় ঘনিয়ে এলে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে কাতার করি। কিন্তু ভিড়ের কারণে পেছনের কাতারের কয়েকজন মুসল্লী অন্যের পিঠের উপর সিজদা করে নামায আদায় করে।
জানতে চাচ্ছি, আমাদের এভাবে নামায আদায় করা কি সহীহ হয়েছে? নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের নামায সহীহ হয়েছে। ভীড়ের কারণে সিজদার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে পিঠের উপরও সিজদা করে নামায আদায় করা জায়েয আছে। এটি সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল দ্বারাও প্রমাণিত।
হযরত উমর রা. বলেন,
مَنْ زَحَمَهُ النَّاسُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ حَتَّى لَا يَسْتَطِيعَ أَنْ يَسْجُدَ عَلَى الْأَرْضِ فَلْيَسْجُدْ عَلَى ظَهْرِ رَجُلٍ .
জুমার দিনে ভীড়ের কারণে যে ব্যক্তি জমিনের উপর সিজদা করতে সক্ষম নয়, সে যেন অপর ব্যক্তির পিঠের উপর সিজদা করে। (আলমুহাল্লা ৩/২৯৮)
হাসান বসরী রাহ. বলেন,
إذَا اشْتَدَّ الزِّحَامُ فَإِنْ شِئْت فَاسْجُدْ عَلَى ظَهْرِ أَخِيك.
যখন ভীড় অধিক হয় তখন তুমি চাইলে তোমার ভাইয়ের পিঠের উপর সিজদা করতে পার। (আলমুহাল্লা ২/২৯৮)
-কিতাবুল আছল ১/১৭৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০
আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমা ও ঈদের সময়...
আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমা ও ঈদের সময় খতীব সাহেবের জন্য ডান-বাম দিকে চেহারা ফিরিয়ে খুতবা দেওয়া সুন্নত তরীকা নয়। সুন্নত তরীকা হল সামনের মুসল্লিদের দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া। জানার বিষয় হল, ঐ আলেমের কথা কি ঠিক?
হাঁ, ঐ আলেম ঠিক বলেছেন। খুতবার সময় ডানে বামে চেহারা না
ঘুরিয়ে সামনের দিকে ফিরে খুতবাদেওয়া সুন্নত।
-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/১৭৮; কিতাবুল উম্ম ১/২৩০; মাআরিফুস সুনান ৪/৩৬৫; উমদাতুল কারী ৬/২২১; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৯
আমি একজন ইমাম। গত শুক্রবার জুমার নামায পড়াতে গিয়ে ভুলে...
আমি একজন ইমাম। গত শুক্রবার জুমার নামায পড়াতে গিয়ে ভুলে একটি ওয়াজিব ছুটে যায়। শুনেছি, জুমার নামাযে ভুলে ওয়াজিব ছুটে গেলে নাকি সাহু সিজদা না দিলেও হয়। তাই আমি সাহু সিজদা করিনি। মাসআলাটি কি ঠিক? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জুমার নামাযেও ভুলে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা করা জরুরি। ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন,ঈদ, জুমা, ফরয ও নফল নামায সব ক্ষেত্রেই সাহুর একই হুকুম। (কিতাবুল আছল ১/৩২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০১)
মুতাকাদ্দিমীন ফকীগণের মতও এটিই। অবশ্য পরবর্তী কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, জুমা ও ঈদে যদি বেশি বড় জামাত হয় এবং ইমাম সিজদা সাহু করলে মুসল্লিদের ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে
তবে তখন সাহু সিজদা না করার সুযোগ আছে। সুতরাং জুমা ও ঈদের নামাযেও সাহু সিজদা করলে যদি মুসল্লিদের মাঝে কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা না থাকে তবে সাহু সিজদা করাই নিয়ম। বিশেষ করে যদি প্রকাশ্য ভুল হয় তাহলে সাহু সিজদা না করলে বরং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকে। তাই এমন ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করাই জরুরি। তবে যাই হোক প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায সহীহ হয়ে গেছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৯২
গতবার ঈদের নামাযে আমাদের ইমাম ছাহেব অতিরিক্ত তাকবীর বলার সময়...
গতবার ঈদের নামাযে আমাদের ইমাম ছাহেব অতিরিক্ত তাকবীর বলার সময় হাত উঠাননি। নামায শেষে অনেক মুসল্লি বলেন, ঈদের তাকবীরে হাত না উঠালে নামায শুদ্ধ হয় না। আবার অনেকে বলেন, সাহু সিজদা করলে নামায শুদ্ধ হয়ে যেত।
জানতে চাই, ঈদের তাকবীরে হাত উঠানোর বিধান কী? না উঠালে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে? সিজদা না করার কারণে কি আমাদের নামায ভুল হয়েছে?
ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর বলার সময় হাত উঠানো সুন্নত। ওয়াজিব নয়। তাই কেউ হাত না উঠালেও তার নামায হয়ে যাবে। এ কারণে সাহু সিজদা করতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৮৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকি, ১৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৪
গত ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাযের আগে এক ব্যক্তিকে মসজিদে...
গত ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাযের আগে এক ব্যক্তিকে মসজিদে নামায পড়তে দেখলাম। নামায শেষে তাকে বললাম, আপনি কি নফল নামায পড়লেন? সে বলল, হাঁ। আমি বললাম, ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে কোনো নফল নামায পড়া যায় না। তখন সে বলল, ঈদের দিন ঈদগাহে নফল পড়া নিষেধ। কিন্তু অন্য যে কোনো জায়গায় নফল পড়া যায়। প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির কথা কি সঠিক?
না, লোকটির বক্তব্য ঠিক নয়। ঈদের নামাযের পূর্বে যে কোনো স্থানে নফল নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত ঈদের নামায পড়লেন। ঈদের নামাযের আগে এবং পরে কোনো নামায পড়েননি। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৪
ইবনে সিরীন রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও হুযাইফা রা. ঈদের নামাযের পূর্বে যাদেরকে নফল পড়তে দেখতেন, তাদেরকে নামায পড়তে নিষেধ করতেন। Ñআল মুজামুল কাবীর তবারানী, হাদীস ৯৫২৪
আর ঈদের নামাযের পর শুধু ঈদগাহে নফল পড়া মাকরূহ। ঈদগাহ ছাড়া অন্যত্র নফল পড়া জায়েয। ইমাম শাবী রাহ. বলেন, ইবনে মাসউদ রা. ঈদের নামাযের পর বাড়িতে এসে চার রাকাত নামায পড়তেন।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৫০২; মুআত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ ১/৬১১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২৯৩; ফাতহুল কাদীর ২/৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬৯-১০৩
মাঝেমধ্যে কোনো কোনো মুসল্লিকে নামায শেষে পাশের জনের সাথে মুসাফাহা...
মাঝেমধ্যে কোনো কোনো মুসল্লিকে নামায শেষে পাশের জনের সাথে মুসাফাহা করতে দেখা যায়। আবার অনেককে দেখা যায়, ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা-মুআনাকা করেন। শুনেছি, এগুলো নাকি বিদআত। এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানালে উপকৃত হব।
মুসাফাহা-মুআনাকা সাক্ষাতের সময়ের একটি সুন্নত। এটি নামাযের পর করণীয় কোনো আমল নয়। নামাযের পর পরস্পরে মুসাফাহা-মুআনাকা করা সাহাবা-তাবেয়ীন ও সালাফে সালেহীন থেকে প্রমাণিত নেই।
সুতরাং কেউ যদি নামাযের পর মুসাফাহা-মুআনাকাকে এ সময়ের করণীয় আমল কিংবা সুন্নত মনে করে পালন করে তবে তা বিদআত হবে। অবশ্য কেউ যদি নামাযের পর কোনো ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের কারণে পাশের ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করে তবে তা সঠিক হবে এবং সুন্নত হিসেবেই ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে এটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮১; আসসিআয়াহ ২/২৬৪, ২৬৫
ইমাম সাহেব ঈদের নামাযের পর খুতবা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে...
ইমাম সাহেব ঈদের নামাযের পর খুতবা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে তাকবীর পড়েন। তখন মুসল্লিগণও ইমামের সাথে সাথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, ঈদের খুতবার সময় মুসল্লিগণের উচ্চস্বরে বা আস্তে তাকবীর বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?
ঈদের খুতবা চলাবস্থায় মুসল্লিদের জন্য সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় কোনো ধরনের কথাবার্তা বলা অথবা তাকবীর বা অন্য কোনো তাসবীহ পাঠ করা জায়েয নেই। ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেছি, আরাফা বা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দিবে এবং মুক্তাদিগণ ইমামের কথা বুঝতে পারে তখন মুক্তাদিগণ কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বলেছেন, না। কোনো ঈদের (খুতবার) সময় কথা বলবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮২
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি স্থানে (অর্থাৎ খুতবায়) চুপ থাকা ওয়াজিব : জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও ইসতিসকার (খুতবার) সময়।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩; কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/ ৬১৯
আমাদের গ্রামে অনেক বড় একটি ঈদের মাঠ আছে। সাথে একটি...
আমাদের গ্রামে অনেক বড় একটি ঈদের মাঠ আছে। সাথে একটি পুকুরও আছে। ঈদের দিন ছাড়া অন্য সময় সেগুলো এমনিতেই পড়ে থাকায় নিষেধ করা সত্ত্বেও অনেক মানুষ মাঠে গরু চরায়। ছেলেরাও তাতে নিয়মিত খেলাধুলা করে। আবার প্রায়ই দেখা যায়, সকাল বেলা কিছু মানুষ মাঠের পুকুর ঘাটে এসে তাদের গাড়ি ধৌত করে। এ কারণে মাঠের ঐ অংশ সব সময় কাদাযুক্ত হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, এ সকল বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? ঈদের মাঠকে এ ধরনের কোনো কাজে ব্যবহার করা কি বৈধ হবে?
ওয়াকফকৃত ঈদগাহ মর্যাদাপূর্ণ ও পবিত্র স্থান। এর পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। এতে খেলাধুলা করা, গরু-ছাগল চরানো, গাড়ি ধোয়া ইত্যাদি ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা ঈদগাহের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এবং গরু-ছাগল চরালে তা অপবিত্রও হয়ে যায়। তাছাড়া এটি যেহেতু ঈদের নামাযের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাই সেখানে উপরোক্ত কাজগুলো করা ওয়াকফের উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থী। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও ঈদগাহে এ ধরনের কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সাহেব জুমার খুতবা দেওয়ার সময়...
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সাহেব জুমার খুতবা দেওয়ার সময় মুসল্লিরা বসে বসে গল্প করে। আবার অনেককে দেখা যায়, যখন ইমাম সাহেব খুতবায়
إن اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
আয়াতটি পড়েন তখন তারা উচ্চস্বরে দরূদ পাঠ করে। আর আমাদের মসজিদে ছোটকাল থেকেই লক্ষ্য করছি যে, ঈদের নামাযের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীরে তাশরীক বলেন তখন সকল মুসলিস্ন একসঙ্গে উচ্চস্বরে ইমাম সাহেবের সাথে সাথে তাকবীর বলতে থাকেন। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।
জুমা ও ঈদের খুতবা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের কথা বলা, কাজ করা নিষিদ্ধ। এমনকি তাসবীহ-তাহলীল পড়াও নিষিদ্ধ।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু যার রা. বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় সূরা বারাআত পাঠ করলেন। তখন আমি উবাই ইবনে কাআব (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এ সূরাটি কখন অবতীর্ণ হয়েছে? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি চেহারা মলিন করলেন এবং চুপ থাকলেন। এভাবে পরপর তিনবার প্রশ্ন করার পরও তিনি আমাকে কোনো উত্তর দিলেন না। জুমার নামায শেষ হওয়ার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে বার বার প্রশ্ন করার পরও কোনো উত্তর দিলেন না কেন? তখন উবাই রা. বললেন, (খুতবা চলাকালে প্রশ্ন করার কারণে) আপনি জুমার কোনো সওয়াব পাননি। আপনার অনর্থক কথা বলা হয়েছে। তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে উবাই রা.-এর এ কথা জানালাম। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উবাই ঠিকই বলেছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ ইবনে খুযাইমা ২/৮৭৪, হাদীস : ১৮০৭
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব ও যুহরী রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে কোনো নামায পড়া যাবে না। আর খুতবা শুরু করলে কোনো কথা বলা যাবে না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৩-১০৪
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি যদি ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় পাশের ব্যক্তিকে কথা বলতে নিষেধ কর তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৫১
এ সকল হাদীস ও আসারের আলোকে ফকীহগণ খুতবা অবস্থায় মুকতাদীর জন্য কোনো কথা বলা এবং কোনো তাসবীহ পড়াকে নিষিদ্ধ বলেছেন। তাই খুতবা চলাকালে মুকতাদীর জন্য দরূদ শরীফ বা তাকবীরে তাশরীক বলা থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক।
-তাফসীরে তবারী ৬/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৭৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬০
এক ব্যক্তি ঈদের নামাযের প্রথম রাকাত পায়নি। দ্বিতীয় রাকাত শুরু...
এক ব্যক্তি ঈদের নামাযের প্রথম রাকাত পায়নি। দ্বিতীয় রাকাত শুরু থেকেই পেয়েছে। এখন সে বাকি এক রাকাত কীভাবে পড়বে? তখন কি অতিরিক্ত তাকবীর বলতে হবে?
ঐ ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায়ের সময় প্রথমে সূরা কেরাত পড়বে, এরপর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীরের পর হাত না বেঁধে ছেড়ে দিবে। এরপর রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে।
-কিতাবুল আছল ১/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মসজিদে পড়াটা কেমন?...
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মসজিদে পড়াটা কেমন? এ ব্যাপারে শরীয়তের দিকনির্দেশনা কী? দয়া করে জানাবেন।
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া সুন্নত। ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিনা ওজরে মসজিদে পড়া মাকরূহ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামায ঈদগাহেই পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামায পড়ার জন্য ঈদগাহে গমন করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৫৬)
অবশ্য বৃষ্টির কারণে বা অন্য কোনো ওযরে যেমন জায়গা সংকুলান না হওয়া বা ঈদগাহ না থাকার কারণে মসজিদে ঈদের জামাত করা মাকরূহ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার ঈদের দিন বৃষ্টি শুরু হল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায পড়েছেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১৬০; ফাতহুল বারী ২/৫২২; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৭; উমদাতুল কারী ৬/২৮২; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্ব ২/২৮৯
আমার চাচা সাধারণত রমযানের শুরুতেই ফিতরা আদায় করে থাকেন। ইদানীং...
আমার চাচা সাধারণত রমযানের শুরুতেই ফিতরা আদায় করে থাকেন। ইদানীং কয়েক বছর ধরে তিনি রমযানের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দিচ্ছেন। আমি জানতে চাই, সদকাতুল ফিতর রমযানের শুরুতে অথবা রমযানের পূর্বেই আদায় করা যাবে কি?
সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫০৯
অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বেও ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬
আর নাফে রাহ. থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ তিনদিন পূর্বে ফিতরা উসূলকারীর নিকট সদকাতুল ফিতর পাঠিয়ে দিতেন।-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৩১৬
সুতরাং সদকাতুল ফিতর রমযানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরীব লোকদের জন্য ঈদের সময়ের প্রয়োজন পূরণেও সহায়তা হয়।
আর রমযানের পূর্বে ফিতরা আদায় করলেও অধিকাংশ ফকীহগণের মতে তা আদায় হয়ে যায়। সুতরাং আপনার চাচার সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারে যেহেতু মতানৈক্য রয়েছে তাই সামনে থেকে সদকায়ে ফিতর রমযানেই আদায় করবেন।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪২
আমাদের এলাকায় ঈদের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলেন তখন...
আমাদের এলাকায় ঈদের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলেন তখন সকল মুসল্লি উচ্চস্বরে ইমামের সাথে সাথে তাকবীর বলতে থাকে। খুতবা চলাকালীন মুক্তাদীদের এভাবে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা কতটুকু শরীয়তসম্মত? জানিয়ে বাধিত করবেন।
খুতবা চলাকালীন চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা ও কাজকর্ম নাজায়েয। এমনকি যিকির-আযকার, তাসবিহ-তাহলীল পড়াও নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের খুতবার সময় তুমি যদি (কাউকে) বল, চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী ১/১২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১১০৫)
ইবনে জুরাইজ রা. থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, আরাফার দিন অথবা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন কি লোকেরা আল্লাহ তাআলার যিকির করতে পারবে অথচ সে খুতবা শুনতে পারছে? তিনি বললেন, না। কোন ঈদেই (খুতবা চলাকালীন) কথা বলবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩, হাদীস : ৫৬৪০)
সুতরাং ঈদের খুতবা চলাকালীন মুসল্লীগণ তাকবীর বলবে না। বরং নিরব থেকে খুতবা শ্রবণ করবে।
-কিতাবুল আস্ল ১/৩৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৪
এ বছর ঈদের সময় আমি বাসের কাউন্টারে টিকিট আনতে গেলে...
এ বছর ঈদের সময় আমি বাসের কাউন্টারে টিকিট আনতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হল টিকিট নেই। একটু দূরে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি আমাকে বলল, টিকিট লাগবে? আমি বললা, হ্যাঁ, লাগবে। লোকটি আমাকে ৪০০ টাকার টিকিট ৫৫০/- টাকায় দিতে সম্মত হলো। আমি নিরুপায় হয়ে তার কাছ থেকে টিকিটটা কিনে নিলাম। এ অবস্থায় আমার জন্য কি তা কেনা ঠিক হয়েছে?
আর বাস বা ট্রেনের টিকিট ক্রয় করে তা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করা জায়েয আছে কি?
বাস বা ট্রেনের টিকিট ক্রয় করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা নাজায়েয। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় এদের থেকে কেনাও ঠিক নয়। তবে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার জন্য তা ক্রয় করা বৈধ হয়েছে।
এছাড়া অন্যের কাছে বেশি দামে বিক্রির নিয়তে কাউন্টার থেকে আগেভাগে টিকিট কিনে নেওয়া চরম অনৈতিকতা। জেনেশুনে এমন ব্যক্তিদের নিকট টিকিট বিক্রি করা কর্তৃপক্ষের জন্যও নাজায়েয।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬০, ২৩৭৫৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১
গত ঈদুল ফিতরের দিন এক ব্যক্তিকে মসজিদে নফল নামায পড়তে...
গত ঈদুল ফিতরের দিন এক ব্যক্তিকে মসজিদে নফল নামায পড়তে দেখলাম। নামায শেষে তাকে বললাম, ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে কোনো নফল নামায পড়া যায় না। তখন সে বলল, ঈদের দিনে ঈদগাহে নফল নামায পড়া নিষেধ। কিন্তু অন্য জায়গায় নফল নামায পড়া যায়। প্রশ্ন হল ঐ ব্যক্তির বক্তব্য কি সঠিক?
ঐ ব্যক্তির কথাটি ঠিক নয়। ঈদের নামাযের আগে ঈদগাহে এবং অন্যত্রও নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে ঈদের নামাযের পর ঈদগাহের বাইরে নফল নামায পড়া যাবে।
আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযের আগে কোনো নফল নামায পড়তেন না। ঈদের পর বাড়িতে ফিরে এসে দুই রাকাত নামায পড়তেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬০; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩
ঈদগাহের মাঠে খেলাধুলা, পিটি ইত্যাদির হুকুম কী?
ঈদগাহের মাঠে খেলাধুলা, পিটি ইত্যাদির হুকুম কী?
ঈদগাহ যদি ওয়াকফিয়া হয় তাহলে তার যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা জরুরি। তাতে খেলাধুলা ও পিটি ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা ঈদগাহের ওয়াকফ মূলত নামাযের জন্যই করা হয়। তাই এতে প্রশ্নোক্ত কাজগুলো করা একে তো ওয়াকফের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, দ্বিতীয়ত এগুলো ঈদগাহের আদবেরও পরিপন্থী।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; ফাতাওয়ান নাওয়াযিল ৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬
ঈদগাহের মাঠে খেলাধুলা, পিটি ইত্যাদির হুকুম কী?
ঈদগাহের মাঠে খেলাধুলা, পিটি ইত্যাদির হুকুম কী?
ঈদগাহ যদি ওয়াকফিয়া হয় তাহলে তার যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা জরুরি। তাতে খেলাধুলা ও পিটি ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা ঈদগাহের ওয়াকফ মূলত নামাযের জন্যই করা হয়।। তাই এতে প্রশ্নোক্ত কাজগুলো করা একে তো ওয়াকফের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, দ্বিতীয়ত এগুলো ঈদগাহের আদবেরও পরিপন্থী।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; ফাতাওয়ান নাওয়াযিল ৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬
এক ব্যক্তি সৌদি আরব থাকে। তার পরিবার-পরিজন সকলে দেশেই থাকে।...
এক ব্যক্তি সৌদি আরব থাকে। তার পরিবার-পরিজন সকলে দেশেই থাকে। ঈদুল ফিতরের সময় সে তার পিতাকে বলে দিয়েছে, তিনি যেন দেশেই তার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দেন।
এখন প্রশ্ন হল, দেশে যদি তার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় তাহলে কোন দেশের মূল্য ধরে তা আদায় করবে? সৌদি আরবের মূল্য হিসেবে, না এদেশের মূল্য হিসেবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
সৌদি আরবে অবস্থানরত ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেশে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে সৌদি আরবের হিসেবে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। যেমন এ বছর সৌদি আরবে ন্যূনতম সদকায়ে ফিতরের মূল্য যদি হয়ে থাকে আট শত টাকা, তাহলে সৌদি প্রবাসীর পক্ষ থেকে এ দেশে সদকায়ে ফিতর আট শত টাকা করতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৫
গত ঈদুল ফিতরে আমি আমার বড় বোনকে নিয়ে হাসপাতালে থাকার...
গত ঈদুল ফিতরে আমি আমার বড় বোনকে নিয়ে হাসপাতালে থাকার দরুণ ঈদের কয়েকদিন পর সদকাতুল ফিতর আদায় করি। এমতাবস্থায় আমার সদকাতুল ফিতর কি আদায় হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে করণীয় কী? সদকাতুল ফিতর আদায়ের উত্তম সময় কোনটি? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার সদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে গেছে। কেননা ঈদের আগে আদায় করতে না পারলে ঈদের পরে আদায় করার বিধান আছে।
উল্লেখ্য, ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ করেছেন।-সহীহ বুখারী ১/২০৪; সহীহ মুসলিম ১/৩১৮
আরো উল্লেখ্য যে, ঈদের দিন আসার আগেও গরীবের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ রেখে সদকাতুল ফিতর আদায় করার সুযোগ আছে। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এক দু দিন আগে আদায় করাও প্রমাণিত। যেমন সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সদাকাতুল ফিতর ঈদের এক দিন বা দুদিন আগেই দিয়ে দিতেন।
-সহীহ বুখারী ১/২০৫; কিতাবুল আছল ২/২৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬৭
ঈদের খুতবার সময় কথাবার্তা বলা কি জায়েয আছে? না এক্ষেত্রে...
ঈদের খুতবার সময় কথাবার্তা বলা কি জায়েয আছে? না এক্ষেত্রে চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা জরুরি?
ঈদের খুতবাও চুপ থেকে শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় কোনো কথাবার্তা বলা নাজায়েয। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চার ক্ষেত্রে চুপ থাকা ওয়াজিব : জুমআ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও সালাতুল ইসতিসকার (খুতবার) সময়।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২৮২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪/২১১; ইলাউস সুনান ৮/১৪৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ২৮২
মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, তাকবীরে তাশরীক যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয...
মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, তাকবীরে তাশরীক যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর পড়তে হয় তেমনি ঈদের জামাতের পরও পড়তে হয়। মাসআলাটি সঠিক কি না জানালে খুশি হব।
ঈদের জামাতের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া জায়েয আছে। তবে এ সময় তা পড়া ওয়াজিব নয়।
-মারাকিল ফালাহ ২৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১০৪; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৮০; কেফায়াতুল মুফতী ৩/৩০৫; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৬/১৮১
ঈদের খুতবায় অনেককে প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার, দ্বিতীয় খুতবার...
ঈদের খুতবায় অনেককে প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার, দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭বার এবং খুতবা শেষে ১৪ বার তাকবীর বলতে লক্ষ্য করা যায়। জানার বিষয় হল, এভাবে তাকবীর বলার হুকুম কী? এটি কি হাদীস বা আছার দ্বারা প্রমাণিত? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
ঈদের নামাযের প্রথম খুতবার শুরুতে নয়বার ও দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাতবার ধারাবাহিকভাবে‘আল্লাহু আকবার’ বলা মুস্তাহাব। এটি বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ ইবনে মাসউদ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে। আর খুতবাহ শেষে ১৪ বার তাকবীর বলার কথা হাদীস বা আছারে পাওয়া যায়নি। ফিকহের কোনো কোনো কিতাবে এভাবে ১৪বার তাকবীর বলার কথা উল্লেখ আছে। তবে উভয় ঈদের খুতবায়ই ব্যাপকভাবে বেশি বেশি তাকবীর বলা সাহাবী ও তাবেয়ীদের আছার দ্বারা প্রমাণিত।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২৯০; সুনানে বাইহাকী ৩/২৯৯; মাআরিফাতুস সুনান ওয়াল আছার ৩/৪৯; আলআওসাত ৪/৩২৮; কিতাবুল উ্মম,শাফেয়ী ১/২৭৩; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/২৭৭; আলবয়ান ওয়াততাহসীল ১/৩০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/১৬১-১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৫
আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমআ ও ঈদের খুতবা...
আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমআ ও ঈদের খুতবা পাঠের সময় খতীব সাহেবের ডান-বামে তাকিয়ে খুতবা পাঠ করা সুন্নত তরীকা নয়। সুন্নত তরীকা হল, মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা পাঠ করা। জানতে চাই, ঐ আলেমের বক্তব্য সঠিক কি না?
হ্যাঁ, ঐ আলেমের কথা ঠিক। খুতবার সময় মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া সুন্নত। বিনা প্রয়োজনে বক্তাদের মতো ডানে-বামে চেহারা ঘোরানো ঠিক নয়।
জামে তিরমিযী ১/৬৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/৮৮; উমাদাতুল কারী ৬/২২১; শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৯৯; মাআরিফুস সুনান ৪/৩৬৫; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/১৭৮; খুতবাতুল জুমআ ওয়া আহকামুহাল ফিকহিয়্যা পৃ. ২৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; রওযাতুত তালিবীন ২/৩২
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি...
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি কবরস্তানের জন্য এক বিঘা জমি ওয়াকফ করেন। বর্তমানে তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু এলাকার কিছু লোক কবরস্তানের জন্য ওয়াকফকৃত এক বিঘা জমি থেকে একটি অংশ কবরস্তানের জন্য রেখে অবশিষ্ট জায়গায় একটি মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মাণ করে সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও ঈদের নামায পড়ে আসছে। আমার জানার বিষয় এই যে, ওয়াকফকারী তো এই এক বিঘা জমি কবরস্তানের জন্য ওয়াকফ করেছেন। এই জায়গায় মসজিদ ও ঈদগাহ তৈরি করা জায়েয হয়েছে কি? এবং যারা এতদিন সেখানে নামায পড়ে আসছেন তাদের নামাযের কী হুকুম? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারী যেহেতু উক্ত এক বিঘা জমি কবরস্তানের জন্যই ওয়াকফ করেছেন তাই ঐ জমি কবরস্তান হিসাবে রাখা জরুরি। ঐ জমিতে মসজিদ বা ঈদগাহ বানানো জায়েয হয়নি। তাই বর্তমান যে জায়গায় মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে তা খালি করে দিতে হবে। তবে এতদিন যারা ঐ জমিতে নামায পড়ে এসেছেন তাদের নামায আদায় হয়ে গেছে। ঐ নামাযগুলো পুনরায় পড়তে হবে না।
আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪০; তানকীহুল হামিদিয়া ১/১২৬; আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ২/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩৩
১৮৭৩. প্রশ্ন : ক) যদি কোনো ব্যক্তি ঈদের নামায নিজে...
১৮৭৩. প্রশ্ন : ক) যদি কোনো ব্যক্তি ঈদের নামায নিজে আদায় করার পর ঈদের নামাযের দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করেন তাহলে তার উক্ত ইমামতি বৈধ হবে কি না?
১৮৭৪. প্রশ্ন : খ) যারা তার পিছনে ইক্তেদা করে ঈদের নামায আদায় করবেন তাদের নামায সহীহ হবে কি না?
১৮৭৫. প্রশ্ন : গ) ঈদের নামাযের প্রথম জামাতের মুক্তাদি দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করতে পারবে কি না-প্রশ্ন করা হলে এক আলেম সাহেব বৈধ বলে ফতোয়া প্রদান করেন। এ ফতোয়া সঠিক কি না?
শরীয়তের দৃষ্টিতে ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবাদির উদ্ধৃতি সহকারে উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : ক ও খ) যে ব্যক্তি একবার নামায আদায় করেছে তার জন্য দ্বিতীয় জামাতের ইমাম হওয়ার সুযোগ নেই। শরীয়তে ঈদের নামায একবার, দুইবার নয়। যে ব্যক্তি একবার নামায পড়েছে তার জন্য দ্বিতীয় নামায ঈদের নামায নয়; বরং তা নফল নামায হবে। আর নফল আদায়কারী ইমামের পিছনে, ঈদের নামায আদায়কারী মুসল্লির ইক্তেদা করা বৈধ নয়।
উক্ত মাসআলায় যদিও বিভিন্ন ফিকহী মাযহাবে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু দলীলের বিচারে উল্লেখিত সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য এবং অধিকাংশ ফকীহ এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
সহীহ বুখারীর এক হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমাম বানানো হয় তাঁর অনুসরণের জন্য অতএব তোমরা ভিন্নতা অবলম্বন করবে না।’-সহীহ বুখারী ১/১০
জানা কথা, ঈদের নামাযের মুক্তাদীগণ নফল আদায়কারী ইমামের ইক্তেদা করলে ইমামের অনুসরণ হয় না; বরং ইমাম মুক্তাদীর নামায ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।
অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত কাতাদাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও হাসান বসরী রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি যোহরের জামাত মনে করে আসরের নামায আদায়রত জামাতে শরীক হল এবং নামাযের পর সে জানতে পারল, তারা আসর আদায় করেছে, উক্ত ব্যক্তি আসর ও যোহর উভয় নামায পুনরায় পড়বে।’-মুসন্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ইমাম যখন ঈদের নামায পড়বেন, তিনি অতিরিক্ত তাকবীরের সাথে পড়াবেন। অথচ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো নফল নামাযে ঈদের নামাযের মতো অতিরিক্ত তাকবীর নেই।
বিশেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ জীবনে কখনো আদায়কৃত ঈদের নামায পুনরায় পড়াননি। কোনো সাহাবীকে এমন করতে আদেশও করেননি বা কোনো সাহাবী এমন করেছেন তার প্রমাণ নেই; বরং হাদীস শরীফে এক নামায একাধিকবার পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোনো নামায একদিনে একাধিকবার পড়ো না।-আবু দাউদ ১/৮৫
উত্তর : গ) সম্ভবত তিনি অন্য কোনো মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি। এর প্রথম কারণ হল, যে মত অনুযায়ী তিনি ফতোয়া দিয়েছেন তা দলীলের বিচারে দুর্বল।
দ্বিতীয় কারণ হল এতদাঞ্চলে ফিকহে হানাফী অনুযায়ী কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করা হয়। তাই শরীয়তসম্মত প্রয়োজন ছাড়া বিপরীত ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা দ্বীনী মাসলাহাতের পরিপন্থী।-আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’ ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল মাসালিক ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
আততামহীদ ২৪/৩৬৭; আলমাজমূ’ ৪/১৬৯; ফাতহুল বারী ২/২২৬; কিতাবুল উম্ম ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৬; যাখীরা ২/২৪২; আলমুনতাকা, ইবনে তায়মিয়া ১/৬৩২; তাসহীলুল মাসালিক ২/৪৯৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৫২৪
গত ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের শহরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। ফলে...
গত ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের শহরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। ফলে মুসল্লীগণ ঈদগাহে না গিয়ে নামাযের জন্য জামে মসজিদে একত্রিত হয়। কিন' সে সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে ঈদের নামায মসজিদে পড়া ঠিক নয়; বরং বৃষ্টির কারণে ঈদগাহে পড়া সম্ভব না হলে দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়তে হবে।
মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল বৃষ্টির কারণে কি ঈদের নামায জামে মসজিদে পড়া বৈধ? প্রথম দিন মসজিদে পড়ে নেওয়া উত্তম হবে না দ্বিতীয় দিন ঈদগাহে পড়া উত্তম হবে?
স্বাভাবিক অবস্থায় ঈদের নামায ঈদগাহে পড়াই সুন্নত। তবে ওজরের কারণে মসজিদে আদায় করতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির কারণে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করেছেন বলে হাদীস শরীফে আছে। তাই ১ম দিন মসজিদে ঈদের নামায না পড়ে দ্বিতীয় দিনের জন্য বিলম্বিত করা জায়েয হবে না।
সুনানে আবু দাউদ ১/১৬৪; ইলাউস সুনান ৮/১১৩; বযলুল মাজহুদ ৬/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১১৪; কিতাবুল উম্ম ১/২৮৬; কিতাবুল মাজমূ’ ৫/৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬
আমি ঈদগাহে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে কেরাত পড়ছেন।...
আমি ঈদগাহে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে কেরাত পড়ছেন। এ অবস'ায় আমি নামাযে শরিক হয়েছি। আমার জানার বিষয় হল, ঈদের নামাযের তাকবীরগুলো আমি কখন আদায় করব?
উক্ত অবস'ায় আপনি তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করার পরপরই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করে নিবেন।
আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৯২-৯৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৩
এক ব্যক্তি বালেগ হওয়ার পর থেকে তিন বছর যাবৎ ঈদের...
এক ব্যক্তি বালেগ হওয়ার পর থেকে তিন বছর যাবৎ ঈদের নামায ব্যতিত অন্য কোনো নামায পড়েনি। এখন সে দ্বীনী বুঝ আসার পর নামায পড়া আরম্ভ করেছে। আর বিগত জীবনের নামাযগুলো কাযা করতে চায়। তবে কিভাবে পড়বে জানে না। অনুগ্রহ করে জানাবেন বিগত জীবনের নামায আদায় করার জন্য নিয়ত করবে কিভাবে?
ঐ ব্যক্তি বিগত দিনের কাযা নামাযগুলোর জন্য এভাবে নিয়ত করবে, আমার জীবনের অনাদায়ী প্রথম ফজর আদায় করছি। পরবর্তী ফজরও প্রথম অনাদায়ী ফজরের নিয়তে আদায় করবে। যোহর, আসর ইত্যাদি ওয়াক্তও একই নিয়মে পড়বে। অর্থাৎ অনাদায়ী প্রথম যোহর পড়ছি, অনাদায়ী প্রথম আসর পড়ছি ইত্যাদি।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯১; মাজমাউল আনহুর ১/২১৬; রদ্দুল মুহতার ২/৭৬
ঈদের নামাযে ছানা কখন পড়বে? চার তাকবীরের পরে নাকি প্রথম...
ঈদের নামাযে ছানা কখন পড়বে? চার তাকবীরের পরে নাকি প্রথম তাকবীরের পরে? জনৈক আলেম বলেছেন, অতিরিক্ত তাকবীরের পরে পড়বে। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ঈদের নামাযেও তাকবীরে তাহরীমার পরে অতিরিক্ত তাকবীরের আগেই ছানা পাঠ করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮০; তাহতাবী আলামারাকী পৃ. ২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭২
ছেলে বাচ্চাদের হাতে মেহেদী লাগানো বিধান ৷
-ফতওয়া খানিয়া আলা হামিশি হিন্দিয়া ৩/৪১৩; রদ্দুর মুহতার ৯/৫২২; ফতওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
"ঈদ মোবারাক" বলার শরয়ী বিধান৷
সবসময় ব্যাবহার করা, বা "ঈদ মোবারাক" শব্দটি দিয়েই মোবারাকবাদ জানাতে হবে এমন মনে করা ঠিক নয়। তা মাকরুহ হবে, কেউ কেউ বিদাআত বলেছেন। তাই সতর্ক থাকা উচিত ৷
ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎﻭﻣﻨﻜﻢ ، ﻋﻴﺪﻛﻢ ﻣﺒﺎﺭﻙ, عيد سعيد
উচ্চারন: তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম, ঈদুকুম মোবারাক, ঈদুন সাঈদুন ৷
এ ধরনের শব্দ দিয়ে মোবারাকবাদ জানানো যাবে ৷
মোবারাকবাদের স্বপক্ষে সাহেবে হুলিয়া সহিহ সনদে অনেক আসারে সাহাবা এনেছেন। যার দ্বারা বুঝা যায় তা সাহাবাগন থেকে প্রমানিত ৷ তাই তা মুস্তাহাব ৷
-ফতহুল বারী২/৪৪৬;রদ্দুল মুহতার, ১/৭৭৭, ফতওয়ায়ে রহিমিয়া ১/২৮১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
ঈদের নামাযের প্রথম তিন তাকবীর ছুটে গেলে বা রাকাত ছুটে গেলে করনীয়৷
ক)
ইমাম সাহেবকে প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় পাওয়া গেলে তখন কী
করবে?
খ)
আর এক রাকাত ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কোন নিয়মে আদায় করবে?
গ)
ইমাম সাহেবকে তাশাহহুদে পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ঈদের নামায পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে কি? হলে এক্ষেত্রে সালামের পর দু রাকাত কীভাবে আদায় করবে?
01756473393
ঈদ উপলক্ষে একে অপরকে "ঈদ মোবারাক" বলা৷
অপরকে ঈদ মোবারক বলে, তা কতটুকু শরীয়তসম্মত?
তবে মোবারাকবাদ জানানোরজন্য শব্দ নির্ধারন করা, একই শব্দসর্বদা ব্যাবহার করা, বা "ঈদ মোবারাক" শব্দটি দিয়েই মোবারাকবাদ জানাতে হবে
এমন মনে করা ঠিক নয়। মাকরুহ হবে, কেউ বিদাআত বলেছেন।
মোবারাকবাদের স্বপক্ষে হুলিয়াতুল আউলিয়ায় সহিহ সনদে অনেক আসারে সাহাবা উল্যেখ আছে।
ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪﻣﻨﺎﻭﻣﻨﻜﻢ، ﻋﻴﺪﻛﻢ ﻣﺒﺎﺭﻙ, عيد سعيد এ জাতিয় শব্দ দিয়ে মোবারাকবাদ জানানো জায়েয৷
ফতওয়ায়ে শামী ১/৭৭৭, ফতওয়ায়ে রহিমিয়া ১/২৮১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756573393
ঈদের নামাযের পর প্রচলিত মুসাফাহা মুআনাকা৷
তাই প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ঈদের নামাযের পর যে মুসাফাহা, মুআনাকা করা হয়, তা শরিয়ত সম্মত নয়। ইহা মাকরুহ ও বিদাআত। তবে কারো সাথে ঈদের নামাযের পর প্রথম সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা মুআনাকা করা জায়েয। কিন্তু বিদাআতের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় না করা উচিত।
ফতওয়ায়ে শামী ৫/৩৩৬; ইমদাদুল ফতোয়া ১/৭০৮; আহসানুল ফতোয়া ২/৩৫৪৷
উত্তপ প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
ঈদের খুতবায় তাকবীর৷
দ্বিতীয় খুতবার শেষে ১৪ বার তাকবীর বলার কথা
হাদীস- আসারে পাওয়া যায়নি। এলাউস সুনান ৮/১৬১ -আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২৭৭; মাজমূ ৫/২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫০; এলাউস সুনান ৮/১৬১৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
ঈদের নামাযে ছানা কখন পড়বে? চার তাকবীরের পরে নাকি প্রথম...
মাঝেমধ্যে কোনো কোনো মুসল্লিকে নামায শেষে পাশের জনের সাথে মুসাফাহা...
হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮১; আসসিআয়াহ ২/২৬৪,
২৬৫
ইমাম সাহেব ঈদের নামাযের পর খুতবা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে...
কেমন?
সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব।
এ সময় কোনো ধরনের কথাবার্তা বলা অথবা তাকবীর বা অন্য কোনো তাসবীহ পাঠ করা জায়েয নেই। ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেছি, আরাফা বা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দিবে এবং মুক্তাদিগণ ইমামের কথা বুঝতে পারে তখন মুক্তাদিগণ কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বলেছেন, না। কোনো ঈদের (খুতবার) সময় কথা বলবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক
৩/২৮২
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি স্থানে (অর্থাৎ খুতবায়) চুপ থাকা ওয়াজিব : জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও ইসতিসকার (খুতবার)
সময়।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩; কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/ ৬১৯
আমাদের মসজিদে উভয় ঈদের নামাযের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়...
- মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা 5863; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯;
আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬;
ঈদের প্রথম খুতবার শুরুতে লাগাতার ৯ বার এবং দ্বিতীয় খুতবার...
আকবার, আল্লাহু আকবার বলবে, না পূর্ণ তকবীরে তাশরীকই পড়বে? দলিল- প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এভাবে লাগাতার নয় বার তাকবীর বলা এবং দ্বিতীয় খুতবার শুরু করার আগে সাতবার
তাকবীর বলা মুস্তাহাব। উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ রাহ. ও ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া রাহ. থেকে এটি বর্ণিত আছে। (আলআওসাত
৪/৩২৮; কিতাবুল উম ১/২৭৩) দ্বিতীয় খুতবার শেষে ১৪ বার তাকবীর বলার কথা হাদীস- আসারে পাওয়া যায়নি।
(এলাউস সুনান ৮/১৬১) -আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২৭৭;
মাজমূ ৫/২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫০; এলাউস সুনান ৮/১৬১
ইমাম সাহেব ঈদের নামাযের পর খুতবা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে...
কেমন?
সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব।
এ সময় কোনো ধরনের কথাবার্তা বলা অথবা তাকবীর বা অন্য কোনো তাসবীহ পাঠ করা জায়েয নেই। ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেছি, আরাফা বা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দিবে এবং মুক্তাদিগণ ইমামের কথা বুঝতে পারে তখন মুক্তাদিগণ কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বলেছেন, না। কোনো ঈদের (খুতবার) সময় কথা বলবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক
৩/২৮২
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি স্থানে (অর্থাৎ খুতবায়) চুপ থাকা ওয়াজিব : জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও ইসতিসকার (খুতবার)
সময়।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩; কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/ ৬১৯
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সাহেব জুমার খুতবা দেওয়ার সময়...
ﺇﻥ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺘَﻪُ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻳَﺎ
ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠِّﻤُﻮﺍ
ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ আয়াতটি পড়েন তখন তারা উচ্চস্বরে দরূদ পাঠ করে। আর আমাদের মসজিদে ছোটকাল থেকেই লক্ষ্য করছি যে, ঈদের নামাযের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীরে তাশরীক বলেন তখন সকল মুসলিস্ন একসঙ্গে উচ্চস্বরে ইমাম সাহেবের সাথে সাথে তাকবীর বলতে থাকেন। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।
১৮০৭
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব ও যুহরী রাহ. বলেন, ইমাম খুতবার জন্য বের হলে কোনো নামায পড়া যাবে না। আর খুতবা শুরু করলে কোনো কথা বলা যাবে না।- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/১০৩-
১০৪
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি যদি ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় পাশের ব্যক্তিকে কথা বলতে নিষেধ কর তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৫১ এ সকল হাদীস ও আসারের আলোকে ফকীহগণ খুতবা অবস্থায় মুকতাদীর জন্য কোনো কথা বলা এবং কোনো তাসবীহ পড়াকে নিষিদ্ধ বলেছেন। তাই খুতবা চলাকালে মুকতাদীর জন্য দরূদ শরীফ বা তাকবীরে তাশরীক বলা থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। -তাফসীরে তবারী ৬/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৭৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬০