ফতোয়া: মৃত্যু-জানাজা

ফতোয়া নং: ৭৩৩০
তারিখ: ১৯-ডিসেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

লাশ উল্টো তথা দক্ষিনমুখী করে জানাযার নামায পড়ার হুকুম৷

প্রশ্ন
বরাবর মাননীয় মুফতী সাহেব! বিষয়: জানাযার নামায প্রসঙ্গে৷
হযরত গতকাল আমাদের এলাকায় একটি জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। নামাযের সময় লাশটিকে ভুলবশত উত্তরমুখী করে না রেখে দক্ষিণমুখী করে রাখা হয়েছিল। এভাবেই নামায পড়া হয় ৷ পরে আর নামায পড়া হয়নি। জানতে চাই, উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে কি?
উত্তর
জানাযার নামায সহিহ হওয়ার জন্য শর্ত হল, লাশ ইমামের সামনে থাকা ৷ আর উত্তরমুখী করে রাখা সুন্নত ৷ অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশ যেহেতু ইমামের সামনেই ছিল তাই উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে লাশ উল্টো করে রাখার করণে সুন্নাতের খেলাফ হয়েছে।
-শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৮৮;আলমুহীতুল বুরহানী৩/১০২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৭৩২৯
তারিখ: ১৯-ডিসেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর জানাযা ও কাফন- দাফনের বিধান৷

প্রশ্ন
জনৈক মহিলার গর্ভে সন্তান মারা যাওয়ার পর সিজারে মৃত বাচ্চাটিকে বের করা হয় ৷ জানার বিষয় হল, উক্ত বাচ্চার জানাযা, কাফন-দাফন ইত্যাদি করতে হবে কি না? তার ব্যপারে শরীয়তের বিধান কি? স্ববিস্তারে জানালে উপকৃত হব ৷
উত্তর
মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলে নিয়ম হল, তার নাম রেখে গোসল দিয়ে একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দেওয়া। মৃত ভূমিষ্ট শিশুর জানাযা পড়ার নিয়ম নেই।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত বাচ্চার জানাযা ও কাফন দিতে হবে না ৷ একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিবে৷
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং,১১৭২৪; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৭৩০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত দুই মাস আগে আমার এক আন্টি মারা যান। জানাযা...

প্রশ্ন

গত দুই মাস আগে আমার এক আন্টি মারা যান। জানাযা হয় আন্টির বাসা থেকে ৫/৭ মিনিটের দূরত্বে এক মসজিদে। আন্টির বান্ধবীরাসহ অন্যান্য অনেক মহিলা আন্টির জানাযায় শরীক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন উপস্থিত এক মুরুব্বীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রথমে জানতে চান ওখানে মহিলাদের নামাযের আলাদা ব্যবস্থা আছে কি না? মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে একথা তাঁকে জানানো হলে তিনি বলেন, তাহলে মহিলারা জানাযায় যেতে পারবে। তখন মহিলারা জানাযায় শরীক হয়। মহিলাদের অধিকাংশই ছিল বেপর্দা।

আমার তখন ঐ মুরুব্বীর কথায় একটু সন্দেহ হয় কিন্তু নিশ্চিত না হওয়ায় কিছু বলা থেকে বিরত থাকি। হুযুরের কাছে জানতে চাই মহিলাদের জন্য জানাযায় শরীক হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?

উত্তর

মহিলাদের জন্য জানাযার নামাযে বের হওয়া জায়েয নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবা তাবেয়ীন থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে। তাবেয়ী যার ইবনে আব্দুল্লাহ রাহ. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّبِعُ جِنَازَةً، فَإِذَا بَامْرَأَةٍ عَجُوزٍ تَتَّبِعُهَا، فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى عُرِفَ الْغَضَبُ فِي وَجْهِهِ، فَأَمَرَ بِهَا فَرُدَّتْ، ثُمَّ وُضِعَ السَّرِيرَ، فَلَمْ يُكَبِّرْ عَلَيْهَا حَتَّى قَالُوا: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَقَدْ تَوَارَتْ بِأَخْصَاصِ الْمَدِينَةِ قَالَ: ثُمَّ كَبَّرَ عَلَيْهَا

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সাথে ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন একজন বৃদ্ধ মহিলাও জানাযার সাথে সাথে আসছে। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রোধান্বিত হলেন এবং তার মুখম-লে ক্রোধের ছাপ ফুটে উঠল। তখন তার নির্দেশে ঐ বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে দেয়া হল। এরপর খাটিয়া রাখা হল কিন্তু তিনি জানাযা শুরু করলেন না। যখন লোকেরা বলল, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে হক (সত্য)সহ প্রেরণ করেছেন ঐ মহিলা শহরের বাড়িঘরের আড়াল হয়ে গেছে, তখন তিনি জানাযার তাকবীর বললেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬২৯০)

উম্মে আতিয়্যা রা.-এর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন-

وَنَهَانَا أَن نَخْرُجَ فِي جَنَازَةٍ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানাযায় বের হতে নিষেধ করেছেন। (আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২৫/৪৫)

আমর ইবনে কায়স রাহ. বলেন,

كُنَّا فِي جِنَازَةٍ وَفِيهَا أَبُو أُمَامَةَ فَرَأَى نِسْوَةً فِي الْجِنَازَةِ فَطَرَدهُنَّ .

আমরা এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। আবু উমামাও সেখানে ছিলেন। তিনি দেখলেন জানাযায় কিছু মহিলাও এসেছে। তখন তিনি তাদের সরিয়ে দিলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১১৪০৮)

মুহাম্মাদ ইবনুল মুনতাশির রাহ. বলেন,

كَانَ مَسْرُوقٌ لاَ يُصَلِّي عَلَى جِنَازَةٍ مَعَهَا امْرَأَةٌ.

মাসরূক রাহ. ঐ জানাযা পড়তেন না, যে জানাযায় কোনো মহিলা উপস্থিত আছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১১৪০৩)

শা‘বি রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, মহিলারা কি জানাযার নামায পড়বে? উত্তরে তিনি বললেন,

لَا تُصَلِّي عَلَيْهَا طَوَاهِرَ وَلَا حَائِضًا

না, মহিলা জানাযার নামায পড়বে না, চাই সে পবিত্র হোক কিংবা ঋতুমতি। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬২৯৭)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোল্লেখিত হাদীস এবং সাহাবা-তাবেয়ীনের আছারগুলো থেকে এক থা স্পষ্ট যে, মহিলাদের জন্য জানাযার উদ্দেশ্যে বের হওয়া জায়েয নয়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য জানাযায় অংশগ্রহণ করা ঠিক হয়নি। অবশ্য মহিলারা ঘরে থেকেই মৃতের জন্য ঈসালে সাওয়াব ও মাগফিরাতের দুআ করতে পারে।

প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনী বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটির না জেনে মাসআলা বলা অন্যায় হয়েছে।

-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬০৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭৩০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কোনো মুসলমানকে দাফন করার জন্য কোন তরীকায় কীভাবে কতুটুকু কবর...

প্রশ্ন

কোনো মুসলমানকে দাফন করার জন্য কোন তরীকায় কীভাবে কতুটুকু কবর খনন করবে? কবর খননের সুন্নত তরীকা কী, জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

যেসব জায়গার মাটি শক্ত ও মজবুত সেসব জায়গায় লাহদ (বোগলী) কবর খনন করা সুন্নত। সেটা হল-স্বাভাবিকভাবে চার কোণা করে মাটি খোড়ার পর নীচে পশ্চিম (কিবলার) দিক দিয়ে একটি গর্ত করবে এবং পশ্চিম দিকের ঐ গর্তের মধ্যে লাশ রাখবে।

আর যেসব জায়গার মাটি নরম, লাহদ কবর করলে মাটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা আছে, সেসব জায়গায় সিন্দুক কবর করবে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে চার কোণা করে মাটি খোড়ার পর নীচের দিকে গিয়ে মাঝ বরাবর একটি গর্ত করবে এবং সেখানে লাশ রাখবে।

আর কবরের গভীরতা সর্বনিম্ন নাভি পর্যন্ত থেকে সর্বোচ্চ একজন মধ্যম গড়নের ব্যক্তি দু’হাত উপরে তুলে দাঁড়ালে যতটুকু লম্বা হয় ততটুকুর মধ্যে রাখবে। তবে উপরের পরিমাণের মধ্যে যে এলাকায় যেটা প্রচলন সে এলাকায় সে পরিমাণই গভীর করা উচিত।

আর কবরের দের্ঘ্য হবে মৃতের দৈর্ঘ্য সমান এবং প্রস্থ হবে দৈর্ঘ্যরে অর্ধেক বা তারচেয়ে কিছুটা কম।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭৮৩, ১১৭৮৪, ১২১৭৭ হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৯৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মুহতারাম, আমার বাবা এবং বড় ভাই একসাথে ঢাকা যাওয়ার পথে...

প্রশ্ন

মুহতারাম, আমার বাবা এবং বড় ভাই একসাথে ঢাকা যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় উভয়েই ইন্তেকাল করেন। আমরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করি। আমার বড় ভাইয়ের একজন ছেলে ও তিনজন মেয়ে রয়েছে। জানার বিষয় হল, আমার বড় ভাই কি আমার বাবার সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কোন অংশ পাবে। যা আমরা তার সন্তানদের মাঝে বণ্টন করে দিতে পারি? কেননা এমন তো হতে পারে বাবার মৃত্যু ভাইয়ের মৃত্যুর আগেই হয়েছে। তাছাড়া এক ভাই বললেন, বর্তমানে মেডিকেল টেষ্ট করার মাধ্যমে মৃত্যুর সময়কাল জানা যায়।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কার মৃত্যু আগে হয়েছে তা সুনিশ্চিতভাবে জানা নেই তাই এক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান হল কেউ কারো থেকে মীরাছ পাবে না। অতএব আপনার ঐ মৃত ভাই বাবা থেকে মীরাছ পাবে না।

এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ لَا يُوَرِّثُ الْمَيِّتَ مِنَ الْمَيِّتِ إِذَا لَمْ يُعْرَفْ أَيُّهُمَا مَاتَ قَبْلَ صَاحِبِهِ .

আতা রহ. বলেন, দুই ওয়ারিশের কে আগে মারা গেছে তা জানা না গেলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উভয়ের মাঝে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ বণ্টন করতেন না। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৮০৭৬

আর মেডিকেল টেস্ট এখন পর্যন্ত ঐ মানে পৌঁছায়নি যার মাধ্যমে এ ধরনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। কোনো কোনো সময় একই রোগের টেস্ট পৃথক পৃথক ল্যাবে করালে ফলাফলে ভিন্নতাও দেখা যায়। তাই এর উপর ভিত্তি করে কার মৃত্যু আগে হয়েছে তা নিশ্চত হওয়া যায় না।

উল্লেখ্য যে, আপনার মৃত ভাই যদিও বাবার মীরাস পাবে না কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিশগণ মিলে তার স্ত্রী-সন্তানদেরকে সম্পদের হিস্যা দিতে পারবে। এবং এভাবে দিলে তা উত্তম কাজ হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩০/২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৯১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি মাদরাসার জন্য একটি জায়গা ওয়াকফ করেছেন।...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি মাদরাসার জন্য একটি জায়গা ওয়াকফ করেছেন। ঐ জায়গায় অনেকগুলো কাঠগাছ আছে। ওয়াকফের সময় ঐ গাছগুলো ওয়াকফ থেকে বাদ দেওয়ার কথা কিছু বলেনি। ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর এখন তার ওয়ারিসরা ঐ জায়গা থেকে বিভিন্ন সময় গাছ কেটে নিয়ে যায়। আর বলে যে, গাছের মালিক আমরা। তাদের জন্য কি এটা জায়েয হচ্ছে?

উত্তর

কোনো জায়গা ওয়াক্ফ করার সময় ঐ জায়গার গাছগুলো ওয়াকফ থেকে বাদ দেওয়া না হলে জায়গার সাথে গাছও ওয়াক্ফ হয়ে যায়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ওয়াকফের সময় গাছগুলো বাদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি তাই ঐ গাছগুলো ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। গাছগুলোর মালিক এখন মাদরাসা। ওয়ারিসদের প্রশ্নোক্ত দাবি ঠিক নয়। তাদের জন্য মাদরাসার গাছগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা জায়েয হবে না।

-আলইসআফ পৃ. ১৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একদিন জানাযার পর দাদাকে দেখলাম, মাইয়েতের কোনো আত্মীয়ের ফরমায়েশে ছোট্ট...

প্রশ্ন

একদিন জানাযার পর দাদাকে দেখলাম, মাইয়েতের কোনো আত্মীয়ের ফরমায়েশে ছোট্ট একটি কাপড়ের টুকরোতে মাটির টুকরা দিয়ে

لا إله إلا الله محمد رسول الله، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله লিখে মায়্যিতের কাফনে এঁটে দিলেন।

হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? আদৌ এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?

উত্তর

মৃতের সাথে বা কাফনে কালিমা শাহাদাত, কোনো আয়াত বা যিকির লেখা নাজায়েয। এটি গলদ রুসম ও বিদআত। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। এছাড়া লাশ গলে গেলে যিকর ও কালিমার অংশে ঐ নাপাকী লেগে যেতে পারে। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৪৬; আলফাতাওয়াল ফিকহিয়্যা আলকুবরা ২/১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সে ঢাকায়...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সে ঢাকায় থাকত। মৃত্যুর পরে তার জানাযা ও দাফনের জন্য তাকে গ্রামে নিয়ে আসা হয়। সবাই মনে করেছিল, ঢাকা থেকে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে আনা হয়েছে। তাই তারা তার গোসল না করিয়ে জানাযা পড়ে ফেলে। হঠাৎ তার এক আত্মীয় বলল, তাকে তো ঢাকা থেকে গোসল করিয়ে আনা হয়নি। তখন এ ব্যাপারে ইমাম সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এখন মাইয়েতকে গোসল করিয়ে পুনরায় তার জানাযা পড়তে হবে। পরে তাই করা হয়েছে। এখন জানতে চাই, ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক? আমাদের জন্য কি ঐ ব্যক্তির জানাযা পুনরায় পড়া আবশ্যক ছিল? এমনটি হলে কী করণীয়?

উত্তর

হাঁ, ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ছাড়া তার জানাযা পড়া সহীহ নয়। তাই গোসল দেওয়ার পূর্বে কোনো মাইয়েতের জানাযা পড়া হলে তা আদায় হবে না। সে ক্ষেত্রে গোসল দেওয়ার পর পুনরায় তার জানাযা পড়তে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৩৬০; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৭৩, আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৭; বাদায়েউস সনায়ে ২/৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় এক মহিলার জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। ভুলে লাশকে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক মহিলার জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। ভুলে লাশকে ইমামের সামনে উল্টো তথা দক্ষিণমুখী করে মাথা রাখা হয়। লাশের উপর চাদর থাকায় বিষয়টি বুঝা যায়নি। এভাবেই নামায আদায় করা হয়। জানতে চাই, উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশ উল্টো করে রাখার করণে সুন্নাতের খেলাফ হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে লাশ যেহেতু ইমামের সামনেই ছিল তাই উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য যে, জানাযা নামায শুরু করার আগে ইমামের কর্তব্য হল, লাশ সঠিকভাবে সুন্নত তরীকায় রাখা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী৩/১০২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার এক আত্মীয়ের একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারা ঐ...

প্রশ্ন

আমার এক আত্মীয়ের একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারা ঐ বাচ্চাকে গোসল দিয়ে কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিয়েছে। ঐ বাচ্চার জানাযার নামায পড়েনি। তাদের কাজটি কি সঠিক হয়েছে? না তাদের ঐ বাচ্চার জানাযার নামায পড়া উচিত ছিল?

উত্তর

হাঁ, শিশুটির জানাযা না পড়ে তাকে দাফন করে দেওয়া ঠিকই হয়েছে। কেননা, মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে নিয়ম হল, তার নাম রাখা ও গোসল দেওয়া। তারপর একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দেওয়া। মৃত ভূমিষ্ট শিশুর জানাযা পড়ার নিয়ম নেই।

জাবের রা. বলেন,

إذَا اسْتَهَلَّ صُلِّيَ عَلَيْهِ وَوُرِّثَ فَإِذَا لَمْ يَسْتَهِلَّ لَمْ يُصَلَّ عَلَيْهِ ، وَلَمْ يُوَرَّثْ.

শিশু যদি (ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর) কাঁদে (অর্থাৎ জীবিত জন্ম হয়, এরপর সে মারা যায়) তবে তার জানাযা পড়া হবে ...। আর যদি সে না কাঁদে (অর্থাৎ মৃত জন্ম হয়) তবে তার জানাযা পড়া হবে না...। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭২৪)

-বাদায়েউস সনায়ে ২/২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৬৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার পাঁচ বছরের একটা ছোট্ট ছেলে ছিল। তার নাম ছিল...

প্রশ্ন

আমার পাঁচ বছরের একটা ছোট্ট ছেলে ছিল। তার নাম ছিল সালমান। সে পরিবারের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। প্রায় সারাদিন সে আমার সাথেই থাকত। আমি তাকে অনেক বেশি মুহাব্বত করতাম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা হঠাৎ করে সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। দাফন কাফন হয়েছে আজ চার পাঁচ দিন। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই আমি ও তার আম্মু স্বপ্নে দেখি, সে বলছে, আব্বু আমি জীবিত। তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। এখন আমরা সন্দেহে পড়ে গেছি, আসলে সে জীবিত না মৃত। এখন হুযুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমি কি তার কবর খনন করে দেখে নিতে পারব আসলে জীবিত না মৃত? শরীয়ত কি আমাকে এটার অনুমতি দেয়?

উত্তর

শুধু স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে কবরস্থ সন্তানের মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দেহ করা ঠিক নয়। এবং এজন্য কবর খোলাও জায়েয হবে না। অধিক মুহাব্বতের কারণেই হয়ত আপনারা ঐ স্বপ্ন বারবার দেখছেন। তাই এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে এই মুছিবতের উত্তম প্রতিদান দিন এবং শিশু সন্তান মারা গেলে মা-বাবা ধৈর্য ধারণ করার পর তাদেরকে যে জান্নাতে বড় মর্যাদা দেয়ার কথা হাদীসে রয়েছে তা আপনাদের নসীব করুন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের হাসপাতালের পাশেই মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন বড় মাঠ। হাসপাতালে প্রায়ই...

প্রশ্ন

আমাদের হাসপাতালের পাশেই মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন বড় মাঠ। হাসপাতালে প্রায়ই দু চার জন করে মারা যায়। ওয়ারিসগণ মসজিদ সংলগ্ন মাঠেই জানাযার এন্তেজাম করে। একাধিক জানাযা উপস্থিত হলে সময় স্বল্পতার করণে মাঝেমধ্যে একত্রে জানাযার নামায আদায় করা হয়। কিন্তু প্রতিবারেই মায়্যেতকে কীভাবে রাখতে হবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। বিভিন্নজন বিভিন্ন মত দেয়। আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি না। জানার বিষয় হল, একাধিক জানাযার ক্ষেত্রে মায়্যেতকে রাখার সঠিক পদ্ধতিটা কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

একত্রে একাধিক লাশের জানাযা আদায় করতে চাইলে লাশগুলোকে ইমামের বরাবর সামনে কিবলার দিকে সারিবদ্ধভাবে রাখাই উত্তম।

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে সকল লাশ যদি পুরুষ হয় তাহলে মর্যাদা ও বয়সের দিক থেকে যারা বড় হবে তাদেরকে ইমামের নিকটে রাখা হবে। আর পুরুষের সাথে যদি নারী ও শিশুর লাশও থাকে তাহলে ইমামের সামনে প্রথমে পুরুষের লাশ, তারপর শিশু অতপর নারীদেরকে রাখা হবে।

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ كَانَ إذَا صَلَّى عَلَى جِنَازَةِ رِجَالٍ وَنِسَاءٍ جَعَلَ الرِّجَالَ مِمَّا يَلِيهِ وَالنِّسَاءَ خَلْفَ ذَلِكَ مِمَّا يَلِي الْقِبْلَةَ.

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যখন একাধিক মায়্যেতের জানাযা পড়াতেন আর নারী-পুরুষ একসাথে থাকত তখন তিনি আগে পুরুষের লাশ তার সামনে রেখে নারীদের লাশ তার পরে রাখতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৬৮২

প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তে এক মৃতের জন্য একবারই জানাযা পড়ার হুকুম এসেছে। এক মৃতের একাধিক জানাযা পড়া ঠিক নয়।

-কিতাবুল আসার ১/২৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১১৬৮৯; কিতাবুল আসল ১/৩৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭; মাবসূত, সারাখসী ২/৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার নানা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন।...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার নানা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি ছিল পাবনা। সেখানে তার ঘরবাড়ি এবং জায়গা-সম্পত্তি আছে। গ্রামে তিনি একটি মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেগুলোর মুতাওয়াল্লি তিনিই ছিলেন। তাই কিছুদিন পরপরই সেখানে যেতেন। কয়েক দিন করে থাকতেন। মাদরাসাই ছিল তার সারা জীবনের স্বপ্ন এবং তার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। তার খুব তামান্না ছিল, উক্ত মাদরাসা-মসজিদের কাছেই তার কবর হবে। সন্তানদেরকে এ কথা বলেছেনও বিভিন্ন সময়। কিছুদিন আগে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তখন তার দাফনের বিষয় নিয়ে মতভেদ হয়। গ্রামের লোকদের দ্বীনী মুরুবিক্ষ হওয়ায় তাদের চাওয়া ছিল তাকে গ্রামে দাফন করা হোক। এ ছাড়া বাবার কবর সেখানে থাকলে স্বভাবতই সন্তানদের মাদরাসার প্রতি বিশেষ মনোযোগ থাকার বিষয়টিও বিবেচনায় আনেন কেউ কেউ। আর তার নিজের তামান্না উপেক্ষা করাটাও সন্তানদের কাছে কষ্টকর হয়। তাই তাকে পাবনাতে নিয়েই দাফন করা হয়। কিন্তু আমি জানতাম, লাশ এত দূর নিয়ে দাফন করা মাকরূহে তাহরীমী ও নাজায়েয। এখন জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় তাকে গ্রামে নিয়ে দাফন করাটা শরীয়তের দৃষ্টিতে উচিত ছিল কি না? আর এটি মাকরূহে তাহরীমী বা নাজায়েয কাজ হয়েছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মৃত ব্যক্তি যেখানে ইন্তেকাল করে তাকে সে এলাকার নিকটবর্তী কবরস্থানে দাফন করা উত্তম। বিনাকারণে বেশি দূরে নিয়ে দাফন করা অনুত্তম। দূরে নিয়ে যাওয়ার ফলে যদি দাফনে অধিক বিলম্ব নাহয় এবং লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে দূরে নিয়ে দাফন করা নাজায়েয হবেনা।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশ স্থানান্তরের কারণে যদি উপরোক্ত সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলেস্থানান্তর নাজায়েয হয়নি।

-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক, ৮০; আততাজনীস ২/২৮১-২৮২; শরহু সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ১/১৬৪; মারাকিল ফালাহ ৩৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৬; আলইসতিযকার ২/৫৮৩-৫৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কয়েক দিন আগে আমার বড় মামা মারা গিয়েছেন। গোসল দেওয়ার...

প্রশ্ন

কয়েক দিন আগে আমার বড় মামা মারা গিয়েছেন। গোসল দেওয়ার পর জানাযার নামাযের বেশ আগেই তার লাশ মসজিদের সামনে রাখা হয়। আমার এক মামাতো ভাই মাদরাসার কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে এলেন। কফিনের কাছে তাদেরকে তিলাওয়াত করতে বসালেন। আমার মনে একটু খটকা লাগল। কোথায় যেন শুনেছি, মৃত ব্যক্তির পাশে বসে তিলাওয়াত করা উচিত নয়। তবে স্পষ্ট কিছু মনে নেই। তাই সঠিক বিষয়টি জানতে চাই।

উত্তর

গোসল দেওয়ার পর লাশের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয। কিন্তু গোসল দেওয়ার আগেমৃত ব্যক্তির নিকটে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাইয়্যেতের গোসলের পরেযেহেতু তার কাছে তিলাওয়াত করা হয়েছে তাই এতে দোষের কিছু হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, মাইয়্যেতের গোসলের আগে দূরে কোথাও যেমন অন্য ঘরে মৃতের ঈসালেসওয়াবের নিয়তে কুরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক দিন খোঁজাখুজির পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। একদিন হঠাৎ তার কর্তিত মস্তক নদীতে পাওয়া যায়। এ অবস্থায় এটির গোসল, নামায এবং দাফন-কাফন কীভাবে করতে হবে?

উত্তর

মৃত ব্যক্তির শুধু মাথা বা হাত-পা কিংবা কর্তিত অল্প অংশ পাওয়া গেলে এর গোসল, জানাযা কিছুই দিতে হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত মস্তকটি পবিত্র কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করে দিবে। উক্ত মাথার গোসল দেওয়া বা জানাযা পড়া যাবে না।

প্রকাশ থাকে যে, মৃতদেহের মস্তকসহ অর্ধেক পাওয়া গেলে কিংবা মাথা ছাড়া অর্ধেকের বেশি পাওয়া গেলে পূর্ণ লাশের হুকুমে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে তার গোসল ও জানাযা সবকিছুই নিয়ম মাফিক করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৩৪১; ফাতহুল কাদীর ২/৭৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬১২; শরহুল মুনইয়াহ ৫৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একদিন যোহরের নামাযের উদ্দেশ্যে আমরা কয়েকজন মসজিদে যাচ্ছিলাম। মসজিদ সংলগ্ন...

প্রশ্ন

একদিন যোহরের নামাযের উদ্দেশ্যে আমরা কয়েকজন মসজিদে যাচ্ছিলাম। মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে দেখলাম জানাযার নামায হচ্ছে। তখন আমরা জানাযা নামাযে শরীক হই। কিন্তু নমাযে কোনো এক কারণে আমাদের একজন আওয়াজ করে হেসে উঠল। এরপর আমরা একত্রে যোহরের নামায আদায় করেছি।

জানার বিষয় হল, ঐ মুসল্লির জানাযা নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? নামাযে উচ্চস্বরে হাসার কারণে তার অযু ভেঙ্গেছে কি? নতুন অযু ছাড়া তার যোহরের নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

জানাযা নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে নামায ভেঙ্গে যায়। তবে অযু ভাঙ্গে না। তাই প্রশ্নোক্ত মুসল্লির জানাযা নামায শুদ্ধ হয়নি। তবে এ কারণে তার অযু ভাঙ্গেনি। তাই ঐ অযু দ্বারা তার পরবর্তী নামায পড়া সহীহ হয়েছে।

জানাযা নামাযে হাসা খুবই দুঃখজনক অন্যায় কাজ। এ সময় তো মৃত্যুকে স্মরণ করার সময়। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

এক দুর্ঘটনায় আমাদের গ্রামের এক পরিবারের চার ভাই একসাথে মারা...

প্রশ্ন

এক দুর্ঘটনায় আমাদের গ্রামের এক পরিবারের চার ভাই একসাথে মারা যায়। আমি প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা জানাযা নামায আদায় করি। বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই যে, একাধিক জানাযা উপস্থিত হলে জানাযা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রত্যেক মাইয়েতের জন্য পৃথক পৃথক জানাযা পড়া উত্তম হয়েছে। কেননা একাধিক লাশ উপস্থিত হলে সেক্ষেত্রেও প্রত্যেকের জন্য আলাদা জানাযা পড়াই উত্তম। তবে সকলের জানাযা একত্রে পড়াও জায়েয আছে।

-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত শুক্রবার আমার বড় ভাই মারা গিয়েছেন। আমি এবং অন্য...

প্রশ্ন

গত শুক্রবার আমার বড় ভাই মারা গিয়েছেন। আমি এবং অন্য দুজন কবরে নামলাম। স্বাভাবিকভাবে লাশ কবরে রেখে বাঁশও রেখে দিয়েছি। এমন সময় একজন মাওলানা সাহেব এসে বললেন, লাশ কিবলামুখী করা হয়েছে তো? বললাম, না। এ বিষয়টি যে সুন্নত তা তখন আমরা জানতাম না। এরপর মাওলানা সাহেব নিজেই বাঁশ সরিয়ে মুর্দাকে পুরোপুরি ডান দিকে কাত করে দিলেন। পরবর্তীতে কেউ কেউ আপত্তি করল যে, মুর্দাকে কিবলামুখী করার জন্য মাওলানা সাহেব যে বাঁশ সরালেন তা ঠিক হয়নি। কিবলামুখী করা তো ফরয নয়। আবার কেউ কেউ বললেন, শুধু চেহারা ডান দিকে করা উচিত। পুরো শরীর নয়। জানার বিষয় হল, এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাওলানা সাহেব ঠিকই করেছেন। মাইয়েতকে কবরে ডান কাতে সিনা কিবলামুখী করে দেওয়া সুন্নত। শুধু চেহারা ডান দিকে ফিরিয়ে দেওয়া যথেষ্ট নয়। আর এ কাজের জন্য বাঁশ সরাতেও কোনো সমস্যা নেই। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, তোমরা মাইয়েতকে কিবলামুখী করে দাও। সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য হল, মুর্দাকে ডান কাত করে দেওয়া।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬০৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে দেখা যায়, অনেক লোক জুতা খুলে তার উপর...

প্রশ্ন

জানাযার নামাযে দেখা যায়, অনেক লোক জুতা খুলে তার উপর দাঁড়ায়। অনেকে মাটিতে দাঁড়ায়। আবার অনেকে জুতাসহই নামায পড়ে নেয়।

জানতে চাই, এভাবে জুতা পরে নামায পড়া জায়েয আছে কি? এক্ষেত্রে সঠিক পন্থা কী?

উত্তর

জায়গা পাক হওয়া জানাযা নামাযের জন্যও শর্ত। তাই নামাযি ব্যক্তির জুতা ও পায়ের নিচের মাটি উভয়টি যদি পবিত্র হয় তবে জুতা পরেও জানাযা নামায পড়া জায়েয আছে। আর দাঁড়ানোর স্থান পবিত্র হলে জুতা খুলেও দাঁড়াতে পারবে। আর দাঁড়ানোর স্থান অথবা জুতার নিচে অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জুতা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। কেননা জুতার উপর অংশ সাধারণত পাকই থাকে।

প্রকাশ থাকে যে, জুতার নিচের অংশ যেহেতু অপবিত্র হওয়ার আশংকাই বেশি তাই মসজিদের বাইরে জানাযার নামায পড়লে জুতা পায়ে দিয়ে নামায না পড়াই উচিত। এক্ষেত্রে সতর্কতা হল, জুতা খুলে তার উপর দাঁড়ানো।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২; শরহুল মুনইয়াহ ২০৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় জানাযার নামাযে আমার এক বন্ধুকে দেখলাম,...

প্রশ্ন

গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় জানাযার নামাযে আমার এক বন্ধুকে দেখলাম, তাড়াহুড়ো করে এসে তায়াম্মুম করে জানাযার কাতারে দাঁড়িয়ে গেল। পরে আমি তাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, জানাযার নামায অযু ছাড়া তায়াম্মুম করেও পড়া যায়। আমি জানতে চাই, তার কথা কি ঠিক? জানাযার নামায কি অযু ছাড়া তায়াম্মুম করে পড়া যায়?

উত্তর

তার ঐ কথা ঠিক নয়। বরং জানাযা নামাযের জন্যও অযু জরুরি। তবে অযু করতে গেলে যদি জানাযা নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অযু করতে গেলে যদি তোমার জানাযার নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তুমি তায়াম্মুম করে নামায পড়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৫৮৬)

-কিতাবুল আছল ১/৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৮; বাদায়েউস সনায়ে ১/১৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৪১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে ফজরের নামাযের আগ মুহূর্তে একটি জানাযা...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে ফজরের নামাযের আগ মুহূর্তে একটি জানাযা এসে উপস্থিত হয়। কথা ছিল, নামাযের পরপরই জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আনুষঙ্গিক কিছু কারণে বিলম্ব হয়। এমনকি সূর্যোদয়ের সময় হয়ে যায়। তখন জানাযার জন্য সবই প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও ঘোষণা করা হয় যে, এখন সূর্যোদয় হচ্ছে। জানাযা আরও দশ মিনিট পর অনুষ্ঠিত হবে। জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে আরও ১০ মিনিট বিলম্ব করার প্রয়োজন কি ছিল? অথচ আমরা জানি, জানাযা উপস্থিত হলে দেরি করতে নেই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ১০ মিনিট বিলম্ব করে সূর্যোদয়ের পর জানাযার নামায আদায় করা ঠিকই হয়েছে। কারণ আগ থেকে জানাযা প্রস্তুত থাকলে সূর্যোদয়ের সময় জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী।

সুতরাং এক্ষেত্রে বিলম্ব করাটা জরুরতবশত ও শরয়ী কারণেই হয়েছে। তাই তা অন্যায় হয়নি।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৩১; ফাতহুল মুলহিম ২/৩৭০; কিতাবুল আছল ১/১২৮; ইলাউস সুনান ৮/৩৫৮; ফাতহুল কাদীর ১/২০৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার মহল্লার এক মহিলার ইন্তেকালের পর স্বামী তাকে দেখতে আসলে...

প্রশ্ন

আমার মহল্লার এক মহিলার ইন্তেকালের পর স্বামী তাকে দেখতে আসলে লোকজন তাকে দেখতে দেয়নি এবং তারা বলে, স্বামীর জন্য তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা জায়েয নেই। জানতে চাই, স্ত্রীর ইন্তেকালের পর স্বামী স্ত্রীর চেহারা দেখতে পারে কি না? তেমনিভাবে স্বামীর ইন্তেকালের পর স্ত্রী তার চেহারা দেখতে পারবে কি?

উত্তর

মৃত স্ত্রীর চেহারা স্বামী দেখতে পারবে। তদ্রূপ মৃত স্বামীর চেহারাও স্ত্রী দেখতে পারবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটিকে তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখতে না দেওয়া অন্যায় হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন পূর্বে আমার এক মামাতো ভাইয়ের জন্ম হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার...

প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমার এক মামাতো ভাইয়ের জন্ম হয়েছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ই সে মারা যায়। তার জানাযা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এলাকার মুরব্বীগণ বলেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় মারা গেলে জানাযা দিতে হয় না। তারপরও ইমাম সাহেব জানাযা পড়ান। প্রশ্ন হল, ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চা মারা গেলে তার জানাযার নামায পড়তে হবে কি?

উত্তর

ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুর দেহের অধিকাংশ বের হওয়ার পর তার মাঝে যদি নড়াচড়া, কান্না, চোখের পলকপাত অথবা জীবিত ভূমিষ্ঠ হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায় তবে তার জানাযা পড়তে হবে। আর যদি অধিকাংশ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রাণের কোনো আলামত না থাকে তাহলে ঐ শিশুর জানাযা পড়ার বিধান নেই।

জাবের ইবনে আবদুল্লহ রা. বলেন,

إِذَا اسْتُهِلَّ الصَّبِيُّ وُرِّثَ وَصُلِّيَ عَلَيْهِ

শিশুর কান্নার শব্দ পাওয়া গেলে সে ওয়ারিস হবে এবং তার জানাযা পড়তে হবে। -সুনানে বাইহাকী, হাদীস ৬৭৮২

উল্লেখ্য, দেহের অধিকাংশ বলতে মাথার দিক আগে বের হলে বুক পর্যন্ত আর পায়ের দিক থেকে হলে নাভী পর্যন্ত উদ্দেশ্য।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭১৮, ১১৭২৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮০; রদ্দুল মুহতার ২/২২৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) জুমার দিন খুতবার পূর্বে বাংলায় বয়ান চলাকালে যিকির-আযকার বা...

প্রশ্ন

ক) জুমার দিন খুতবার পূর্বে বাংলায় বয়ান চলাকালে যিকির-আযকার বা কথাবার্তা বলা যাবে কি? নাকি খুতবার ন্যায় তাও চুপ করে শোনা ওয়াজিব?

খ) আমাদের এলাকায় এ কথা প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে যদি কবরে কেবলার দিক ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে শোয়ানো হয় এটা তার ঈমানবিহীন মৃত্যুর আলামত। এ কথা কি সঠিক?

উত্তর

ক) জুমার নামাযের পূর্বে আরবীতে যে খুতবা হয় তা শ্রবণ করা সকলের উপর ওয়াজিব। আর খুতবাপূর্ব বাংলায় যে বয়ান হয় তা জুমআর অংশ নয়। তা শ্রবণ করা ওয়াজিব নয়। তবে যেহেতু এটি দ্বীনী আলোচনা তাই এ সময় কথা বলা বা ব্যক্তিগত কাজ করা দ্বীনী মজলিসের আদবের পরিপন্থী। অতএব মুসল্লিদের উচিত, ঐ সময় ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা কাজে মশগুল না হয়ে দ্বীনী আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৬৩

খ) না, ঐ কথা ঠিক নয়। তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে কিবলামুখী করে কবরে শোয়ানো সুন্নত। এভাবে সুন্নত নিয়মে দাফন করা জীবিতদের দায়িত্ব। কোনো মৃতের যদি সুন্নত নিয়মে দাফন না হয় তাহলে কাজটি ঠিক না হলেও এটাকে কোনোভাবেই ঈমানবিহীন মৃত্যুর আলামত বলা ঠিক নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৬৭; এলাউস সুনান ৮/৩০৭;ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত বছর রযমানের ঈদের নামাযের শেষ খুতবার আগেই জানাযার নামায...

প্রশ্ন

গত বছর রযমানের ঈদের নামাযের শেষ খুতবার আগেই জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করেন। জানার বিষয় হল, খুতবার আগে জানাযা আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? নাকি খুতবার পরে জানাযা আদায় করা উচিত?

উত্তর

খুতবা ঈদের নামাযেরই অংশবিশেষ। তাই খুতবার পরেই জানাযার নামায আদায় করা উচিত। হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ., যফর আহমাদ উসমানী রাহ. বলেন, বিশৃঙ্খলা ও ছত্রভঙ্গের কারণে যেমনিভাবে আগে ঈদ ও জুমআ পড়ে জানাযা পড়ার কথা ফকীহগণ বলেন। একই কারণে ঈদের খুতবার পরেই জানাযা পড়া উচিত। অন্যথায় অনেকেই খুতবা না শুনেই চলে যাবে। এছাড়া খুতবা তো ঈদের সাথেই সংশ্লিষ্ট। তবে খুতবার পূর্বে জানাযার নামায পড়া হলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

-ইমদাদুল আহকাম ১/৮৩৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৫০৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার মা গত ১০ আগস্ট ২০১৫ ট্রেন দুর্ঘটায় ইন্তেকাল করেন।...

প্রশ্ন

আমার মা গত ১০ আগস্ট ২০১৫ ট্রেন দুর্ঘটায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ওয়ারিশদের জন্য ৬ শতক জমি রেখে গেছেন। তাঁর ওয়ারিশগণ হল- ১. স্বামী ২. এক পুত্র ও ৩. দুই কন্যা। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বণ্টন কীভাবে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃতের স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় সম্পদ থেকে প্রথমে তার কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) পরিশোধ করবে। অতপর তার কোনো ঋণ থাকলে তা আদায় করবে। এরপর তার কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে পূর্ণ করবে।

এরপর অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। এক্ষেত্রে মৃতের স্বামী সমুদয় সম্পদের এক চতুর্থাংশ পাবে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَ لَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ اَزْوَاجُكُمْ اِنْ لَّمْ یَكُنْ لَّهُنَّ وَلَدٌ فَاِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْۢ بَعْدِ وَصِیَّةٍ یُّوْصِیْنَ بِهَاۤ اَوْ دَیْنٍ.

তোমাদের স্ত্রীগণ যেসব (সম্পত্তি) রেখে যাবে তার অর্ধেক হল তোমাদের প্রাপ্য। যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। কিন্তু যদি তাদের কোনো সন্তান বর্তমান থাকে তাহলে তারা যা কিছু ছেড়ে যাবে তার চার ভাগের এক ভাগ তোমাদের প্রাপ্য। অবশ্য যদি তারা অসিয়ত করে গিয়ে থাকে অথবা কোনো ঋণ রেখে গিয়ে থাকে তাহলে তা পরিশোধ করার পর এই ব্যবস্থা। -সূরা নিসা (৪) : ১২

আর স্বামীর অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ তার ছেলেমেয়েগণ ‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান’ হিসেবে লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

یُوْصِیْكُمُ اللهُ فِیْۤ اَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَیَیْنِ.

আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। -সূরা নিসা (৪) : ১১

সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃতের সমুদয় সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নবর্ণিত শতকরা হারে বণ্টিত হবে-

১। মৃতের স্বামী - শতকরা ২৫ ভাগ

২। মৃতের পুত্র - শতকরা ৩৭.৫ ভাগ

৩। মৃতের বড় মেয়ে - শতকরা ১৮.৭৫ ভাগ

৪। মৃতের ছোট মেয়ে - শতকরা ১৮.৭৫ ভাগ

উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনার মায়ের শুধু ৬ শতাংশ সম্পত্তিই বণ্টনযোগ্য থাকে তবে তা থেকে আপনার বাবা অর্থাৎ মরহুমার স্বামী পাবেন ১৫০ অযুতাংশ এবং তার ছেলে পাবে ২২৫ অযুতাংশ। আর মরহুমার উভয় মেয়ের প্রত্যেকে পাবে ১১২.৫ অযুতাংশ করে।

-তাফসীরে কুরতুবী ৫/৫১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৮০, ২/৮২; তাফসীরে তবারী ৩/৬২৪, ৩/৬১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩০২, ৩০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/২৬২, ২০/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০, /৭৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আগে কেউ যদি অসিয়ত করে যায় যে, আমার জানাযা অমুক...

প্রশ্ন

আগে কেউ যদি অসিয়ত করে যায় যে, আমার জানাযা অমুক পড়াবে তাহলে কি শুধু অসিয়তের কারণে সে ব্যক্তি জানাযার নামায পড়ানোর বেশি হকদার হয়ে যাবে? দয়া করে উত্তর জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

জানাযার নামায পড়ানোর হকদার মৃতের ওলিগণ। তারা চাইলে মৃত ব্যক্তি যার ব্যাপারে জানাযা পড়ানোর অসিয়ত করেছে তাকে দিয়েও জানাযা পড়াতে পারবে। কোনো কোনো সাহাবা-তাবেয়ী নিজের জানাযা পড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কাউকে অসিয়ত করে গেছেন এবং পরবর্তীতে তার ওলিরা তা পূর্ণও করেছেন। তবে ওলিরা চাইলে অসিয়তকৃত ব্যক্তি ছাড়া অন্যকে দিয়ে কিংবা নিজেরাও জানাযা পড়াতে পারবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৫৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; শরহুল মুনইয়াহ ৬০৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৭/২২৯-২৩০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ানোর ক্ষেত্রে কে বেশি হকদার? মৃতের ওলি...

প্রশ্ন

মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ানোর ক্ষেত্রে কে বেশি হকদার? মৃতের ওলি না মহল্লার ইমাম? জনৈক আলেম বলেছেন, মসজিদের ইমামই নাকি বেশি হকদার। কথাটা কতটুকু ঠিক? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযে মৃতের ওলি এবং মহল্লার ইমাম উভয়ে যদি উপস্থিত থাকেন এবং ইমাম ইলম-আমলে মৃতের ওলিদের থেকে বেশি যোগ্য হন তাহলে ইমামই জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

يُصَلِّي عَلَيْهَا أَئِمَّةُ الْمَسَاجِدِ.

জানাযার নামায পড়াবে মসজিদের ইমামগণ। তিনি আরো বলেন,

تَرْضَوْنَ بِهِمْ فِي صَلَاتِكُمُ الْمَكْتُوبَاتِ، وَلَا تَرْضَوْنَ بِهِمْ عَلَى الْمَوْتَى.

তোমরা তাদের পেছনে ফরয নামায পড়তে রাজি। কিন্তু জানাযা পড়তে রাজি না (এটা কেমন কথা)! -কিতাবুল আসার, হাদীস ২৩৭

আরেক বর্ণনায় এসেছে, তাবেয়ী সালেম রাহ., তাউস রাহ., কায়েস রাহ., মুজাহিদ রাহ. এবং আতা রাহ. তারা সকলেই ইমাম সাহেবকে জানাযা পড়াতে আগে বাড়িয়ে দিতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৪৩২

অবশ্য মৃতের ওলিরা যদি মহল্লার ইমাম থেকে বেশি যোগ্য ও বড় আলেম হন তাহলে ওলিরাই বেশি হকদার।

-কিতাবুল আছল ১/৩৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) মহিলা মায়্যেতকে কবরে রাখার সময় কবর ঢাকার হুকুম কী?খ)...

প্রশ্ন

ক) মহিলা মায়্যেতকে কবরে রাখার সময় কবর ঢাকার হুকুম কী?

খ) এই মায়্যেতকে যদি খাটিয়া না ঢেকে জানাযার নামায আদায় করা হয় তাহলে নামায হবে কি না?

গ) আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, কোনো ব্যক্তি মারা গেলে পরিবারের সকল মহিলাদের গোসল করতে হয়। এটা ইসলাম সমর্থন করে কি না?

উত্তর

ক) মহিলা মায়্যেতকে কবরে রাখার সময় কাপড় ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম।

আবু ইসহাক রাহ. বলেন, আমি হারিস রাহ.-এর জানাযায় উপস্থিত হলাম। লোকজন তার কবর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযিদ কাপড়টি টেনে সরিয়ে দেন এবং বলেন, তিনি তো পুরুষ।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৭৮৫

খ) মহিলা মায়্যেতের খাটিয়াও আলাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম। যাতে বেগানা পুরুষের দৃষ্টি লাশের উপর না পড়ে। অবশ্য খাটিয়া ঢাকা না হলেও জানাযার নামায আদায় হয়ে যাবে।

গ) কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সকল মহিলাদের গোসল করতে হবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১২৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩;আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪৮৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলাম...

প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে সবাই আলহামদু লিল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমার বাবা-মা এবং অন্যান্য আত্মীয়, যারা অমুসলিম অবস্থায় মারা গেছে, তাদের জন্য খুবই দুঃখ ও আফসোস হয়। পরকালে তাদের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতাম। এ ব্যাপারে ইমাম সাহেবের সাথে আলোচনা করলে তিনি বললেন, তাদের জন্য এভাবে দুআ করা জায়েয হবে না। তাই জানার বিষয় হল, আসলেই কি তাদের জন্য দুআ করা জায়েয হবে না?

উত্তর

হাঁ, ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। কোনো ব্যক্তি কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার মাগফিরাতের জন্য বা পরকালে মুক্তির জন্য দুআ করা নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ

আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য নবী ও মুমিনদের ক্ষমা প্রার্থনা সংগত নয় যখন তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামী। -সূরা বারাআত (৯) : ১১৩

সুতরাং আপনি পরলোকগত অমুসলিম পিতামাতা ও অন্যান্য অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনের জন্য মাগফিরাত কামনা ও পরকালে মুক্তির দুআ করা থেকে বিরত থাকবেন।

-সূরা বারাআত (৯) : ১১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৭১; তাফসীরে কুরতুবী ৮/১৭৩; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১১/৩২; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমরা দুই ভাই। আব্বার মৃত্যুর পর কিছু জমি বণ্টন করা...

প্রশ্ন

আমরা দুই ভাই। আব্বার মৃত্যুর পর কিছু জমি বণ্টন করা হয়েছে। আর কিছু জমি এখনো বণ্টন করিনি। আমাদের মসজিদের পাশের জমিটিও বণ্টন করিনি। ইতিমধ্যে আমার ছোট ভাই ঐ জমি থেকে তার অংশ মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেয়। জানার বিষয় হল, তার অংশ কি ওয়াকফ হয়ে গেছে?

উত্তর

যৌথ জমি বণ্টনের আগে তা থেকে নিজের অংশ ওয়াকফ করা জায়েয। তাই আপনার ছোট ভাইয়ের ঐ ওয়াকফ সহীহ হয়েছে। এখন আপনাদের কর্তব্য হল, জমি বণ্টন করে মসজিদের অংশ আলাদা করে বুঝিয়ে দেওয়া।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৫; আলইসআফ ২৫; মাজমাউল আনহূর ২/৫৭৪; কিতাবুল ওয়াকফ ১০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার একজন আত্মীয় যে আর্থিকভাবে মোটামুটি সামর্থ্যবান। তার বাবা ব্যাংক...

প্রশ্ন

আমার একজন আত্মীয় যে আর্থিকভাবে মোটামুটি সামর্থ্যবান। তার বাবা ব্যাংক থেকে সুদী ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছে। যেটা ভাড়া দেওয়া হবে। ঐ আত্মীয় তার বাবাকে সুদী ঋণ নিতে নিষেধ করেও বিরত রাখতে পারেনি। আবার বাবা বাড়ি তৈরি করার সময় তার থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছে। যা ঐ বাড়িতে কাজে লাগিয়েছে। এখন তার প্রশ্ন হল, ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া সে গ্রহণ করতে পারবে কি না? সে কি ঐ বাড়িতে থাকতে পারবে? আর তার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে সে বাড়ি থেকে অংশ পেলে তা কি সে গ্রহণ করতে পারবে? উপরোক্ত সবগুলো ছূরতে যদি তার জন্য টাকা নেওয়া বৈধ না হয় তাহলে তার যে টাকা বাড়িতে লাগানো হয়েছে তা কি তিনি নিয়ে নিতে পারবেন? উত্তর জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

সুদের ভিত্তিতে ঋণ নেওয়া-দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ.

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৮-২৭৯

হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রা. বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীগণকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, (গুনাহের ক্ষেত্রে) তারা সবাই বরাবর।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ আত্মীয়ের বাবার সুদী ঋণ নেওয়া হারাম হয়েছে। এখন তার কর্তব্য হল, অবিলম্বে ব্যাংকের সকল ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা।

আর ঐ বাড়ি তৈরিতে যেহেতু তার ছেলের টাকা আছে এবং সে বাবাকে সুদী লোন নিতে নিষেধও করেছে তাই সুদী লোনের গুনাহ ঐ ছেলের উপর বর্তাবে না এবং ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত অংশে বসবাস করা এবং এর আয় গ্রহণ করা তার জন্য জায়েয হবে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার স্বামী আমাকে নিয়ে তার শশুরালয়ে অর্থাৎ আমার পিতার বাড়িতে...

প্রশ্ন

আমার স্বামী আমাকে নিয়ে তার শশুরালয়ে অর্থাৎ আমার পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঘটনাক্রমে সেখানেই তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত কোথায় পালন করব? আমার স্বামীর বাড়িতে না পিতার বাড়িতে? দয়া করে উত্তরটা জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিত্রালয়ে স্বামীর মৃত্যু হলেও আপনাকে স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করতে হবে।

কেননা ইদ্দত স্বামীর বাড়িতেই পালন করা জরুরি। একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,

امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.

তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪

আর ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশদিন অথবা অন্তসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; সূরা তালাক (৬৫) : ৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত রবিউল আওয়াল মাসের নয় তারিখে আমার আব্বু মারা যান।...

প্রশ্ন

গত রবিউল আওয়াল মাসের নয় তারিখে আমার আব্বু মারা যান। আর আমার আম্মু জীবিত আছেন। আর আমরা জানি, স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, আব্বু যেহেতু মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ইন্তেকাল করেছেন তাই এ অবস্থায় চার মাস দশ দিনের হিসাব কীভাবে করবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আব্বার মৃত্যু যেহেতু মাস শুরু হওয়ার পর হয়েছে তাই আপনার আম্মা এক শত ত্রিশ দিন ইদ্দত পালন করবেন। এক্ষেত্রে মাসের হিসাব ধর্তব্য হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪৯-৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২২৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার আম্মার বয়স সত্তরের ঊর্ধ্বে। গত দুমাস আগে তিনি আমাকে...

প্রশ্ন

আমার আম্মার বয়স সত্তরের ঊর্ধ্বে। গত দুমাস আগে তিনি আমাকে অসিয়ত করেছিলেন, তিনি মারা গেলে তার নামে ছয় কাঠা জমি গ্রামের মাদরাসায় ওয়াকফ করতে। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার ছোট বোন একটি বিপদে পড়ে, যা সারতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এখন আম্মা চাচ্ছেন, সেই ছয় কাঠা জমির দুই কাঠা বিক্রি করে টাকাটা বোনকে দিতে। জানতে চাই, তার জন্য ঐ জমি বিক্রি করা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

কেউ কোনো ওসিয়ত করলে তা কার্যকর হয় ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর। সুতরাং জীবদ্দশায় সে চাইলে তার কৃত ওসিয়ত বাতিল করতে পারে। অতএব প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার আম্মার জন্য জমির ঐ অংশ বিক্রি করে আপনার বোনকে টাকা দেওয়া জায়েয হবে।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩১৪৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৯৩; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৯/৩৬৪; রদ্দুল মুখতার ৬/৬৫৮; মাবসূত, সারাখসী ২৭/১৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের দুজন প্রতিবেশী মারা যান। তাদের...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের দুজন প্রতিবেশী মারা যান। তাদের দুজনের জানাযার নামায একসাথে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। এতে কিছু মানুষ আপত্তি করল যে, এক সাথে দুজনের জানাযার নামায পড়লে তা সহীহ হবে না। বরং প্রত্যেকের নামায আলাদা পড়তে হবে। এই নিয়ে তুমুল বাকবিত-া হয়। শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকের নামায পৃথকভাবে পড়া হয়।

আমার প্রশ্ন হল, একসাথে একাধিক মায়্যেতের উপর একবার জানাযার নামায পড়লে তা কি সহীহ হবে? নাকি প্রত্যেকের জন্য পৃথক নামায পড়তে হবে?

উত্তর

একসাথে একাধিক জানাযা উপস্থিত হলে যথাসম্ভব প্রত্যেকের পৃথক পৃথক জানাযা নামায পড়াই উত্তম। তবে একাধিক মায়্যেতের জানাযা একসাথে পড়াও জায়েয আছে এবং এর দ্বারা সকলের জানাযা আদায় হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধে দশ দশজন শহীদের জানাযা একত্রে পড়েছেন।Ñশরহু মাআনিল আসার ১/২৪২

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, ইবনে উমর রা. নয়জন পুরুষ ও নারীর উপর একসাথে জানাযার নামায পড়েছেন।

Ñসুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/৩২; কিতাবুল আসল ১/৩৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; শরহুল মুনইয়া ৬০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এলাকার...

প্রশ্ন

আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এলাকার সামাজিক কবরস্থানটা মুর্দা দাফন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন কি এ কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার মুর্দা দাফন করা যাবে? এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে, কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার দাফন করা যাবে। আবার কেউ বলছে, এখন প্রত্যেকে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানের ব্যবস্থা করে সেখানে দাফন করবে। দয়া করে এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন। আমরা শরয়ী সমাধানের প্রতীক্ষায় আছি।

উত্তর

কবর পুরাতন হওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সেখানে নতুন কবর দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের ঐ কবরস্থানের পুরাতন কবরের এলাকায় সংস্কার করে সেখানে নতুন করে কবর দেওয়া যাবে। অবশ্য কবর খননের সময় সেখানে কোনো হাড্ডি ইত্যাদি পাওয়া গেলে তা কবরের এক পাশে বা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দিবে।

তবে কম সময়ের কবর, যেগুলোতে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয়নি সেখানে বিশেষ ওজর ছাড়া নতুন করে কবর দেওয়া যাবে না।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যথারীতি জানাযা-দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যথারীতি জানাযা-দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর কিছু মুসল্লি বলাবলি করছে যে, ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে তিন তাকবীর বলেছেন। ইমাম সাহেব নিশ্চিতভাবে বলছেন যে, তিনি চার তাকবীরই বলেছেন। এভাবে তিন দিন গত হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো করণীয় আছে কি না জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চার তাকবীর বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে ইমাম সাহেব যেহেতু নিশ্চিত তাই তাঁর কথাই গ্রহণযোগ্য হবে এবং উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। এছাড়া মুসল্লিদের মাঝে সংশয় থাকলে তৎক্ষণাতই বলা কর্তব্য ছিল। তা না করে দাফনের পর বলাটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এখন এ নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহে লিপ্ত হওয়া ঠিক হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) মায়্যেতের গোসলদাতা ও দাফনকার্য সম্পাদনকারী যেমন, কবর খননকারী, বাঁশ...

প্রশ্ন

ক) মায়্যেতের গোসলদাতা ও দাফনকার্য সম্পাদনকারী যেমন, কবর খননকারী, বাঁশ কর্তনকারী ইত্যাদি লোকদেরকে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোনো বিনিময় দেওয়া যাবে কি না?

খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য আসবাবপত্রের হুকুম কী?

গ) মাইয়্যেতের দাফনকার্য শেষ হলে কবরের পাশে অবস্থান করে কী কী আমল করা যেতে পারে?

উত্তর

ক) হাঁ, মায়্যেতের গোসলদাতা, কবর খননকারী ও তার সহযোগীদেরকে বিনিময় দেওয়া জায়েয। তবে এসব কাজ বিনিময়হীনভাবে করাই উত্তম।

খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়, আসবাবপত্রও মীরাসের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলোও মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। তবে সকল ওয়ারিশ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগুলো দান করে দিতে চায় তবে তাও জায়েয আছে।

গ) মায়্যেতের দাফন শেষে কবরের পাশে অবস্থান করে নিম্নের আমলগুলো

করার কথা হাদীসে এসেছে।

১। মৃতের মাগফিরাতের জন্য এবং কবরের সওয়ালের জওয়াবে অটল থাকার জন্য দুআ করা। হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করো এবং (সওয়ালের-জওয়াবে) অটল থাকার জন্য দুআ করো। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩

২। মৃতের মাথার দিকে অবস্থান করে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষের কিছু অংশ তিলাওয়াত করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. লাশ দাফনের পর তার মাথার দিকে অবস্থান করে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষের অংশ পড়া পছন্দ করতেন। -সুনানে বায়হাকী ৪/৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৩৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয...

প্রশ্ন

আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। কিন্তু সেদিন আমাদের এলাকার এক লোক বললেন, ভক্তি-শ্রদ্ধার জন্য পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয। তার এ কথা কতটুকু ঠিক? দয়া করে কুরআন-হাদীসের দলিল-প্রমাণসহ জানাবেন।

উত্তর

সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। তা যে উদ্দেশ্যই হোক না কেন। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। গাইরুল্লাহকে সিজদা করা যে হারাম তা কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলিলাদি দ্বারা প্রমাণিত। অতএব যারা বলে, ভক্তি-শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয তাদের এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এটি হারাম হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কুরআন-হাদীসের কয়েকটি দলিল উল্লেখ করা হল।

১। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَّ اَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللّٰهِ اَحَدًاۙ

নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। -সূরা জিন (৭২) : ১৮

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা, তলক ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১

২। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার অভিশাপ ইহুদী-নাসারাদের উপর। তারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০

৩। হযরত জুনদুব রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ইন্তেকালের তিনদিন আগে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২

৪। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো জন্য (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। যদি কারো জন্য জায়েয হত অন্য কাউকে সিজদা করা তাহলে আমি স্ত্রীকে আদেশ করতাম স্বামীকে সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীর উপর স্বামীর অনেক বড় হক ন্যস্ত করেছেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৬১৪

সুতরাং ভক্তি-শ্রদ্ধার নিয়তেও মাযার বা কোনো ব্যক্তিকে সিজদা করা জায়েয নেই; সম্পূর্ণ হারাম।

-সূরা জিন : ১৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬৮; আলইলাম বিকাওয়াতিইল ইসলাম ২/৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৩; আলফাওযুল কাবীর ৬৫; তাকবিয়াতুল ঈমান ৫২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ইদ্দত পালন করছেন না। তিনি...

প্রশ্ন

বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ইদ্দত পালন করছেন না। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে বাসার বাইরে চলে যান। তাকে বললে তিনি শোনেন না। তাই ইদ্দত পালন না করলে কী আযাব এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা রয়েছে তা জানতে চাই। যাতে করে আমার মাকে জানালে তিনি সঠিকভাবে ইদ্দত পালন করতে পারেন।

উত্তর

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে চার মাস দশ দিন স্ত্রীর জন্য নিজ গৃহে ইদ্দত পালন করা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধান। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যায়, উক্ত স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে (ইদ্দত পালন করবে)। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৪

খুসাইফ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম,যে মহিলার স্বামী মারা গেছে সে (ইদ্দত অবস্থায়) কি ঘর থেকে বের হতে পারবে? তিনি বললেন,না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৯৮

সুতরাং বিনা ওজরে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করাই পাপ। আর পাপ বলতেই ঈমানের উন্নতির পথে বাধা এবং আখেরাত ও কবরের যিন্দেগী সুখময় হতে বাধা। মুমিনের জন্য শুধু এতটুকু কথাই কোনো ফরয-ওয়াজিব বিধান পালনের জন্য যথেষ্ট।

অবশ্য জীবিকা কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসা জরুরি। আর দিনে কোনো বিশেষ ওজরে বের হলেও রাতে অবশ্যই নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬-১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে তিন কাতার করার হুকুম কী? এটা কি সুন্নত-মুস্তাহাব...

প্রশ্ন

জানাযার নামাযে তিন কাতার করার হুকুম কী? এটা কি সুন্নত-মুস্তাহাব কিছু বা এতে কি বিশেষ কোনো ফযীলত আছে?

উত্তর

হাদীস শরীফে এসেছে, মালেক ইবনে হুবায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমান মারা যাওয়ার পর তার জানাযায় যদি তিন কাতার মুসলমান শরিক হয় তাহলে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত। সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদসহ বহু হাদীস গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

রেওয়াতে এটাও আছে যে, বর্ণনাকারী মালেক ইবনে হুবায়রা রা. যখন দেখতেন লোক সংখ্যা অল্প তখন তাদেরকে (উপস্থিত লোকদেরকে) তিন কাতার করে দিতেন।

ফকীহগণ এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে জানাযার নামাযে মুসল্লি সংখ্যা কম হলেও যথাসম্ভব তাদেরকে তিন কাতারে বিভক্ত করে দাঁড় করানো উত্তম বলেছেন। তবে মুসল্লি সংখ্যা অধিক হলে তিনের অধিক কাতারও করা যাবে। এবং এতে সেই ফযীলতও পাওয়া যাবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১০২৮; শরহুল মুসলিম নববী ৭/১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১৩; আলহাদিয়্যাতুল আলাইয়্যাহ ১২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের বাড়ির পাশে ১৯৬৮ সালে আমার দাদিকে কবর দেওয়া হয়।...

প্রশ্ন

আমাদের বাড়ির পাশে ১৯৬৮ সালে আমার দাদিকে কবর দেওয়া হয়। বর্তমানে যথাযথভাবে সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। এখন কবরটিকে ভেঙে তার উপর বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু প্রবল এবং প্রশ্নের বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কবরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় অবস্থিত তাই কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।

তবে কবরটি যদি ওয়াকফিয়া জায়গায় হত তাহলে পুরাতন হলেও তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হত না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; খানিয়া ৩/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭০-৪৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৮৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

নিম্মলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন :১. মুহাম্মাদ জামিল...

প্রশ্ন

নিম্মলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন :

১. মুহাম্মাদ জামিল তার শ্যালক থেকে উপহার হিসেবে ছয়টি এয়ার টিকেট গ্রহণ বকরেছেন, যার আর্থিক মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা। শ্যালক যদিও মুখে উপহার কথাটি উল্লেখ করেছেন; তবে মুহাম্মাদ জামিল সাহেব গ্রহনের সময় মনে করেছিলেন এটা একটা লোন অথবা করজে হাসানা। জামিল সাহেব সেই লোনটি যেভাবেই হোক এখন পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মটা কি?

২. জামিল সাহেবের স্ত্রীর রোগের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার থাকা খাওয়াসহ চিকিৎসা বাবদ আনুমানিক আট থেকে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। সেই টাকাটাও জামিল সাহেবের শ্যালক দিয়ে দিয়েছেন। তবে ধারণা যে, সেটাও তিনি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তবে শ্যালক মুখে সেটা উল্লেখ করেননি। এখন জামিল সাহেব সেই টাকাটাও পুনরায় দিতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম কী।

৩. জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েদের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা তার শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীর হাতে প্রদান করতেন। তবে শ্যালক কখনো জামিল সাহেবের হাতে সেই টাকা প্রদান করেননি এবং সেই টাকাও মনে হয় তিনি উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। তবে প্রদানের সময় তিনি কোন কথা উল্লেখ করেননি। উল্লেখ্য যে, শ্যালক জামিল সাহেবের শশুড়ের বাড়ীকে ইন্ডাস্ট্রি করেছিল যার মালিক ছিলেন সকল ভাইবোন। মনে হয় সেই বাড়ীর ভাড়া থেকেই শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতেন। তবে শ্যালক এই বোনকে দিতেন ৫০০০ টাকা ও অন্যান্য বোনদের দিতেন ৫০০ টাকা (অন্যান্য বোনদের আর্থিক সচ্ছলতা তার চেয়ে ভাল ছিল) এখন বর্তমানে জামিল সাহেব সে টাকাটা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে চান। এখন প্রশ্ন হল, এ টাকাটা তিনি কি তার শ্যালককে প্রদান করবেন নাকি স্ত্রীকে? এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?

৪. জামিল সাহেবের ছেলের বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনা বাবদ জামিল সাহেবের ভায়রা তার হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার একটি চেক উপহার বাবদ প্রদান করেন। কিন্তু জামিল সাহেব টাকাটা গ্রহণের সময় বলে নেন যে, এটা লোন। এখন জামিল সাহেব সেই লোনটি পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?

৫. জামিল সাহেবের বিয়ের ধার্যকৃত মোহর ছিল ১৫,০০০০ টাকা। তিনি আনুমানিক ৬০% প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ধার্যকৃত পুরো টাকাটা প্রদান করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?

৬. জামিল সাহেবের বড় ভাই নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি পাঁচটি ফ্ল্যাট রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, সহোদর দুই ভাই ও বিমাতা এক ভাই রেখে মারা গেছেন। দুই বোন ছিল, তারা তার মৃত্যুর পূর্বে মারা গিয়েছেন। এখন তার সম্পত্তির সঠিক বণ্টন কীভাবে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে জানতে চাই।

উত্তর

(১, ২, ৩) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যেহেতু উক্ত ছয়টি এয়ার টিকেট জামিল সাহেবকে সুস্পষ্টভাবে উপহার বলে প্রদান করেছেন এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান না করে গ্রহণ করে নিয়েছেন তাই এর দ্বারা ঐ এয়ার টিকেটগুলো তার ও তার পরিবারের জন্য হাদিয়া হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং তারা এগুলোর মালিক হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে টিকেটগুলো গ্রহণের সময় জামিল সাহেবের মনে মনে ঋণ হিসাবে গ্রহণের নিয়ত থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

অনুরূপ ২নং ঘটনাতে জামিল সাহেবের শ্যালক বোনের চিকিৎসা খরচ বাবদ যে টাকাটা প্রদান করেছেন প্রশ্নের ভাষ্যমতে তিনি তা সেচ্ছায় নিজ থেকেই বোনের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন তাই এ টাকাও তার পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে গণ্য হবে, ঋণ গণ্য হবে না।

আর তৃতীয় ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যে প্রতি মাসে নিজ বোনের হাতে পাঁচ হাজার করে টাকা প্রদান করত তা যদি বাবার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে বোনের প্রাপ্য অংশের ভাড়া হয়ে থাকে তবে তো সে প্রতি মাসে বোনের পাওনা ভাড়া পরিশোধ করেছে।

কিন্তু ঐ টাকা যদি ভাড়ার অংশের না হয়ে থাকে অথবা ভাড়ার টাকার সাথে নিজ থেকে অতিরিক্ত যোগ করে দেয়া হয়ে থাকে তবে ভাড়ার অতিরিক্ত অংশটা হাদিয়া বা উপহার হিসাবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রেও এ টাকা ফেরৎযোগ্য নয়।

সুতরাং উপরোক্ত তিন ঘটনাতেই শ্যালক থেকে প্রাপ্ত হাদিয়াকে ঋণ গণ্য করার সুযোগ নেই। অতএব তা পরিশোধ করা লাগবে না। জামিল সাহেব যদি শ্যালককে এখন নিজ থেকে কিছু দিতে চান তবে তা স্বতন্ত্র হাদিয়া হিসাবে ধর্তব্য হবে।

(৪) জামিল সাহেবের ভায়রা পাঁচ লক্ষ টাকার চেকটি তাকে উপহার বলে দিলেও জামিল সাহেব যেহেতু তা উপহার হিসাবে গ্রহণ করেননি; বরং তিনি তা সুস্পষ্ট লোন বলে গ্রহণ করেছেন, তাই ঐ টাকা উপহার হিসাবে গণ্য হবে না। বরং ঐ পাঁচ লক্ষ টাকা তার উপর লোন হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এ টাকা তার ভায়রাকে পরিশোধ করে দিতে হবে।

(৫) প্রশ্নের ভাষ্যমতে জামিল সাহেব যেহেতু মোহরানার প্রায় ৬০% স্ত্রীকে আদায় করে দিয়েছেন তাই বাকি অংশ হিসাব করে পরিশোধ করে দিলে তিনি মোহরানার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। বকেয়া অংশ থেকে অতিরিক্ত পরিশোধ করা জরুরি নয়। তবে তিনি যাদি স্ত্রীকে ধার্যকৃত মোহরানা থেকে অতিরিক্ত দিতে চান তাহলে সে এখতিয়ার তার রয়েছে।

(৬) প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির উপর কোন ঋণ থাকলে তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করতে হবে। অতপর তার যদি কোনো বৈধ অসিয়ত থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করতে হবে। এরপর বাকি সম্পত্তি তার মৃত্যুর সময় জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নোক্ত শতকরা হারে বণ্টিত হবে।

মৃতের স্ত্রী পাবে .................. ২৫%

সহোদর ভাই প্রত্যেকে........... ৩৭.৫ করে দুজনে মোট পাবে ............. ৭৫%

আর সহোদর ভাই বিদ্যমান থাকার কারণে বিমাতা ভাই কোন অংশ পাবে না।

উল্লেখ্য যে, মৃতের রেখে যাওয়া পাঁচটি ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য হিসাব করে উপরোক্ত ওয়ারিশ অর্থাৎ মৃতের স্ত্রী ও দুই সহোদর ভাইয়ের মাঝে তাদের উল্লেখিত প্রাপ্য অনুযায়ী ভাগ হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাসসাস ৪/২০; আলমাবসূত সারাখসী ১০/১৪৬; শরহুল মাজাল্লা ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮৮, ৭৭৪; এলাউস সুনান ১৬/৭০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার এক মেয়ে আমাদের কথার অবাধ্য হয়ে একটি ছেলেকে বিয়ে...

প্রশ্ন

আমার এক মেয়ে আমাদের কথার অবাধ্য হয়ে একটি ছেলেকে বিয়ে করে তার সাথে চলে গেছে। বর্তমানে আমাদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন হলÑ

ক) পিতামাতার এ ধরনের অবাধ্য সন্তান পিতামাতার সম্পত্তি থেকে মিরাস পাবে কি না?

খ) পিতামাতার জন্য তাকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা বৈধ হবে কি না?

উত্তর

কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে মিরাস বলে। মৃত্যুর পর উক্ত সম্পত্তি তার জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন হবে। এটি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বিধান। মৃত্যুর সাথে সাথে উক্ত সম্পত্তিতে জীবিত সকল ওয়ারিশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। জীবদ্দশায় সে কোনো ওয়ারিশের উপর অসন্তুষ্ট থাকলে বা তাকে সম্পত্তি না দেওয়ার কথা বলে গেলেও এ কারণে কোনো ওয়ারিশ মিরাস থেকে বঞ্চিত হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতামাতা জীবদ্দশায় ঐ সন্তানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে মিরাস থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করলেও সে মিরাস থেকে বঞ্চিত হবে না এবং অন্যান্য ওয়ারিশদের জন্য তাকে বঞ্চিত করাও জায়েয হবে না।

Ñরদ্দুল মুহতার ৭/৫০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৭১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

শহরের অনেক মসজিদেই জানাযার নামায আদায় করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে...

প্রশ্ন

শহরের অনেক মসজিদেই জানাযার নামায আদায় করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত মসজিদের বাইরে সামনের দিকে লাশ রাখার জন্য কিছু খালি জায়গা রাখা হয়। আর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদের ভেতরই নামাযে জানাযা আদায় করেন।

আমার জানার বিষয় হল, মসজিদে জানাযার নামায পড়ার হুকুম কী? লাশ মসজিদের ভেতরে রাখা বা বাইরে রাখার কারণে কি হুকুমের মাঝে কোনো পার্থক্য হবে?

উত্তর

লাশ মসজিদের ভেতরে রাখা হোক বা বাইরে রাখা হোক বিনা ওজরে মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ। নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তি মসজিদের ভেতর জানাযার নামায আদায় করবে তার কোনো সওয়াব হবে না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৮৪

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আছে, উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর হযরত সালেহ রাহ. বলেন, জানাযার মাঠে জায়গা না হলে সাহাবীরা ফিরে যেতেন। নামাযে শরিক হতেন না। Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২০৯৭

উল্লে­খ্য, মসজিদে নববী সংলগ্ন একটি খালি জায়গা ছিল যেখানে জানাযার নামায আদায় করা হত। দেখুন : আলমাওয়াহিবুল­দুন্নিয়্যা ৩/৩৯৬; ওফাউল ওফা ২/৫৩৪

অবশ্য অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদেও দুজন সাহাবীর জানাযার নামায আদায় করেছেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৩

এই দুই ধরনের হাদীসের মাঝে ফকীহগণ এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, স্বাভাবিক অবস্থায় জানাযার নামায মসজিদের বাইরেই আদায় করবে। আর কোনো ওজর থাকলে যেমন বৃষ্টি হলে অথবা বাইরে পড়ার মতো ব্যবস্থা না থাকলে মসজিদের ভেতরও আদায় করা যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরগুলোতে মসজিদের বাইরে জায়গা না থাকার কারণে মসজিদে জানাযার নামায আদায় করা হয়। তাই তা দোষণীয় হবে না।

Ñযাদুল মাআদ ১/৫০১; ইলাউস সুনান ৮/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ২/২২৬, ২/২২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮০; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; কিতাবুত তাজনীস ২/২১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৯৫; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৪৯৪ ফাতহুল কাদীর ২/৯০-৯২; উমদাতুল কারী ৮/২০-২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, কোনো বড়...

প্রশ্ন

আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, কোনো বড় ব্যক্তি মারা গেলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে। আমাদের এলাকার কয়েকজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ পদ্ধতিকে সঠিক বলেন। তারা বলেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবাশার বাদশাহ নাজাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন।

এখন জানার বিষয় হল, গায়েবানা জানাযা নামায বৈধ কি না? আর নাজাশীর ঘটনা দ্বারা গায়েবানা জানাযা প্রমাণিত হয় কি না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

জানাযা নামায আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাযা নামায সহীহ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর অসংখ্য সাহাবী মদীনার বাইরে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম থেকে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ার প্রমান নেই। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জানাযার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাযা নামায তার জন্য রহমত।-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩০৮৩

আর শুধু নাজাশীর জানাযা পড়াটা ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাযা জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে না। এছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহীহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাযা সম্পর্কিত একটি হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, নাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনেই উপস্থিত ছিল।

ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় করো। ইমরান রা. বলেন, অতপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আর আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২০০০৫;সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩০৯৮

এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসগণ নাজাশীর জানাযা সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হল, নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাযা পড়িয়েছেন।

আল্লামা যায়লায়ী রাহ., আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ. এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : নাসবুর রায়া ২/২৮৩; যাদুল মাআদ ১/৫০২; ফয়যুল বারী ২/৪৭০

উলামায়ে কেরাম এ ঘটনার আরো অন্যান্য ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন।

যা হোক, এটা ছিল নববী জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর উপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাযাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সাথে এটির কোনো মিল নেই।

এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাযার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাযা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাযা পড়ার একটি ঘটনাও হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০৯০; ফাতহুল কাদীর ২/৮০, ৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২০৯; ইলাউস সুনান ৮/২৮৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার নানার দুই ছেলে। বড় ছেলে সরকারি চাকরি করে। ছোট...

প্রশ্ন

আমার নানার দুই ছেলে। বড় ছেলে সরকারি চাকরি করে। ছোট ছেলে সিংগাপুর থাকে। ছোট ছেলে সিংগাপুর যাওয়ার পর নানা বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। ছোট মামা বলেছিল, বিল্ডিংয়ের পুরো টাকা সে পাঠিয়ে দিবে। আর বিল্ডিংটি নেওয়া হয়েছে তার কথা অনুযায়ী। কিন্তু সিংগাপুর যাওয়ার পর কিছু টাকা পাঠিয়ে আর কোনো টাকা দেয়নি। হয়তো তার স্ত্রী কোনো বদনাম করেছে এবং নানার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি নানীর সাথেও। বর্তমানে বংশের কারো সাথে কথা বলে না। তাই নানা রাগ করে ছেলেকে বাড়িতে আসতে মানা করে দিয়েছে। মামাও তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে নানা তার সকল সম্পত্তি বড় মামার নামে লিখে দিয়েছে।

প্রশ্ন হল, তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি রাখা কি ঠিক হয়েছে? আর নানার মৃত্যুর পর বড় মামা যদি উত্তরাধিকার হিসেবে ছোট মামাকে কিছু সম্পত্তি দিতে চায় তাহলে তা বৈধ হবে কি?

উত্তর

মা-বাবার সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করা সন্তানের কর্তব্য। কুরআন মাজীদে অনেক আয়াতে এবং অসংখ্য হাদীসে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, অর্থ, তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত তোমরা করবে না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তবে তুমি তাদের ‘উফ’ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে না; বরং তাদের সঙ্গে নম্রভাবেকথা বলবে। আর করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।

আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি কি তোমাদেরকে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ কী তা বলব? এভাবে তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ অবশ্যই বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (জঘন্যতম কবীরা গুনাহ হল) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭

এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে।

এছাড়া পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়াও কবীরা গুনাহ। এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ হবে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৫৬

আর আত্মীয় বা কোনো মুসলমানের সাথে কথা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য অপর ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৮

সুতরাং আপনার মামার কর্তব্য, তার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা,মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করা এবং তাদের দেখাশুনা ও খোঁজ-খবর নেওয়া। উল্লেখ্য, ছেলের উক্ত অপরাধের কারণে বাবার জন্যও তাকে মীরাস থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া এবং সব সম্পত্তি বড় ছেলের নামে লিখে দেওয়া ঠিক হয়নি। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত মীরাস থেকে কাউকে বঞ্চিত করল আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৪৬৮৮

তাই আপনার নানার কর্তব্য, উভয় ছেলেকেই সম্পত্তি দেওয়া। প্রয়োজনে বড় ছেলেরও এ ব্যাপারে পিতাকে সহযোগিতা করা উচিত। আবার সে নিজে থেকেও ছোট ভাইকে সম্পত্তির অংশ দিয়ে বাবাকে দায়মুক্ত করতে পারে।

Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার আব্বা দুই বিবাহ করেন। প্রথম পক্ষে তিন মেয়ে হওয়ার...

প্রশ্ন

আমার আব্বা দুই বিবাহ করেন। প্রথম পক্ষে তিন মেয়ে হওয়ার পর ঐ স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে আমার আম্মাকে বিবাহ করেন। আব্বার প্রথম পক্ষের বড় মেয়ের মেয়ের মেয়ে তথা বড় মেয়ের নাতনীর সাথে আমি কিছুদিন পূর্বে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে কেউ কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠালে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হই।

অতএব মহোদয়ের কাছে আমি এ বিষয়ে মাযহাব বর্ণনাসহ ফকীহদের বিস্তারিত মতামত জানতে একান্ত আগ্রহী।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটি আপনার মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে আপনার বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। কুরআন মাজীদের সূরা নিসার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন,তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা ...।

উক্ত আয়াতে মাহরামের আলোচনায় যে ভগ্নিকন্যা এসেছে তাতে বোনের মেয়েসহ তার অধস্তন সকল কন্যা অন্তর্ভুক্ত। এতে আপন বোনের মেয়ে, বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে এবং বৈমাত্রেয় বোনের মেয়ে এবং এদের অধস্তন সকল কন্যার হুকুম সমান।

তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, এখনি পৃথক হয়ে যাওয়া এবং নিজেদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করা।

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হুকুমটি (ভগ্নিকন্যার অধস্তনগণ মাহরাম হওয়া) সর্বসম্মত মাসআলা। এতে কোনো ইমাম বা কোনো মাযহাবের দ্বিমত নেই।

Ñআহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১২৩; তাফসীরে মাযহারী ২/২৬৫; কিতাবুল আছল ৪/৩৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭; আল মাজমু ১৭/৩১৪; ফাতহুল বারী ৯/৫৮; আলইকনা ফী মাসাইলিল ইজমা ২/৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার স্বামী পৈত্রিক সূত্রে টিনশেড বাড়িসহ ৪.৬৭ শতক জমির মালিক...

প্রশ্ন

আমার স্বামী পৈত্রিক সূত্রে টিনশেড বাড়িসহ ৪.৬৭ শতক জমির মালিক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে ইন্তেকাল করেন। উক্ত সম্পত্তি ছাড়া তার আর কোনো সম্পত্তি ছিল না। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি উক্ত ৪.৬৭ শতক জমি (টিনশেড বাড়িসহ) ছোট মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে দান করে দেন এবং দখলও বুঝিয়ে দেন। ইন্তেকালের সময় তার ওয়ারিশদের মধ্যে আমি তার স্ত্রী, ৪ কন্যা, ২ ভাই ও ৩ বোন জীবিত ছিল।

আমার বর্তমানে নিম্নোক্ত সম্পত্তি আছে-

১ বিঘা জমি, ৪.১২ শতক জমির উপর ৪ তলা ভবন ও কিছু নগদ টাকা।

আমার উক্ত সম্পত্তির মধ্যে ৪ তলা বাড়ির ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা বড় তিন কন্যাকে দান করা হয়েছে। কেননা তারা পিতা থেকে কিছুই পায়নি। আর প্রথম তলা ভাড়া বাবদ অর্জিত অর্থের অর্ধেক আমাদের অবর্তমানে আমাদের নামে সদকা করা হবে। আর বাকি অর্ধেক অর্থ ভবনের মেরামত কাজে ব্যবহার করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। আমার ওয়ারিশদের মধ্যে ৪ কন্যা, ১ ভাই এবং ২ বোন আছে।

এ অবস্থায় আমার জানার বিষয় হল,

ক) আমার স্বামী ছোট মেয়েকে যে দান করেছেন এবং আমি বড় তিন মেয়েকে যে দান করেছি তা সহীহ হয়েছে কি না?

খ) এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে কি না?

গ) অন্য ওয়ারিশদের এতে আপত্তি করার সুযোগ আছে কি না?

ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া সদকা করার বিষয়টি সঠিক হয়েছে কি না?

যদি উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত মোতাবেক না হয় তাহলে আমার এবং কন্যাদের করণীয় কী হবে? অনুগ্রহপূর্বক জানিয়ে চিন্তামুক্ত করবেন।

উত্তর

ক, খ ও গ) আপনার স্বামী তার জীবদ্দশায় ছোট মেয়েকে যে সম্পদ দান করেছেন এবং আপনি পরবর্তীতে বড় তিন কন্যাকে যে তিনটি ফ্ল্যাট দান করেছেন এবং তাদেরকে উক্ত সম্পদের মালিকানাও বুঝিয়ে দিয়েছেন এর দ্বারা তারা ঐ সম্পদের মালিক হয়ে গেছে এবং এ দান পরবর্তীতেও বহাল থাকবে। পিতার জন্য সকল সম্পদ ছোট মেয়েকে দিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখার জন্য বড় তিন মেয়েকে তিন ফ্ল্যাট দেওয়া আপনার জন্য ঠিক হয়েছে।-উমদাতুল কারী ১৩/১৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৩৫৮

উত্তর : ঘ) ৪ তলা ভবনের নিচ তলার অর্ধেক ভাড়া আপনার অবর্তমানে গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করার যে

সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক আছে এবং উদ্যোগটি প্রশংসনীয়ও বটে। তবে এটি কার্যকর করার জন্য আপনার জীবদ্দশাতে ঐ অংশ নির্ধারিত খাতে ওয়াকফ রেজিষ্ট্রি করে দিতে হবে। যেন আপনার অবর্তমানে তা কার্যকর থাকে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু উপলক্ষ্যে বিবাহের ন্যায় খাবারের...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু উপলক্ষ্যে বিবাহের ন্যায় খাবারের আয়োজন করা হয় এবং জানাযার পর এলান করা হয় যে, খাবার না খেয়ে কেউ যেন না যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃতের বাড়িতে এমন আয়োজন করার বিধান কী? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কেউ মারা গেলে মৃতের বাড়িতে দাওয়াতের আয়োজন করা বিদআত। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ গণ্য করা হত। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা মৃতের দাফন কার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন) এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৯০৫

এ ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। কেননা দাওয়াতের আয়োজন তো করা হয় কোনো আনন্দ উৎসবের সময়, কোনো বেদনার মুহূর্তে নয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত তো হল মৃতের পরিবার-পরিজনদের জন্য প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা, যেন তাদেরকে মৃতের জন্য ব্যস্ততা ও শোকাহত থাকার কারণে অনাহারে থাকতে না হয়। আর প্রশ্নোক্ত কাজটি এর সম্পূর্ণ উল্টো ও বিপরীত। তাই এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০; ইলাউস সুনান ৮/৩২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক মহিলা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। তার...

প্রশ্ন

জনৈক মহিলা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর শিশুটির ছোট খালা তাকে লালন-পালন করেন এবং তাকে তার দুধও পান করান। কয়েক বছর পর শিশুটির খালু ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে ছেলেটির পিতা তার দুধ মা (খালা)-কে বিবাহ করতে চাচ্ছে। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকেও সম্মতি রয়েছে।

প্রশ্ন হল, তাদের এ বিবাহ কি শরীয়তসম্মত হবে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতার জন্য সন্তানের দুধ মাতা-খালাকে বিবাহ করা জায়েয হবে। কেননা কোনো মহিলা সন্তানের দুধ মা হলেই তার সাথে পিতার বিবাহ নাজায়েয হয়ে যায় না। তবে তাদের এ বিবাহ উক্ত মহিলার স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত শেষ হওয়ার পর হতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা থাকেন। তার দিকে লক্ষ্য করেই জানাযার সময় ঠিক করা হয়, কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তার জন্য অপেক্ষা করতে চাইলে লোকজন বিরক্তিবোধ করে। তাই আমি জানাযা পড়িয়ে দিই।

মেঝ ভাইও আলেম। তার সাথে জানাযা পড়ার জন্য অনেকেই প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি। জানাযা শেষ হওয়ার পাঁচ-সাত মিনিট পর মেঝ ভাই পৌঁছে যান। তখন যারা প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি তারা মেঝ ভাইকে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ানোর জন্য খুবই জোর করে। কিন্তু মেঝ ভাই তা করেননি। ফলে লোকজন তার সাথে খুবই রাগ করেন এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

এখন জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি মেঝ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে মৃত বড় ভাইয়ের জানাযা পড়ানো ঠিক বা জায়েয হয়েছে? আর মেঝ ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার ছিল কি না? তিনিও তো বড় ভাইয়ের ওলি এবং আমার চেয়ে যোগ্যও বেশি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আপনার মেঝ ভাই যেহেতু উপস্থিত হতে পারেনি তাই আপনার জন্য জানাযা পড়ানো ঠিক হয়েছে এবং জায়েযও হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মেঝ ভাইয়ের দ্বিতীয়বার জানাযা না পড়াও শরীয়তসম্মত হয়েছে। কেননা মৃতের এক ভাইয়ের উপস্থিতিতে জানাযা পড়া হয়ে গেলে অন্য ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার থাকে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০, ২/২২৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬২-৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মুসলিম, যারা কালিমা পড়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে ঠিকমতো ইবাদত করেনি।...

প্রশ্ন

মুসলিম, যারা কালিমা পড়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে ঠিকমতো ইবাদত করেনি। যেমন কখনো কখনো নামায পড়েছে, আবার পড়েনি। তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে? নাকি আযাবের পর জান্নাত লাভ করবে?

উত্তর

যেসব ঈমানদার ইসলামের বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেনি এবং গুনাহ থেকে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা আপন অনুগ্রহে ক্ষমাও করে দিতে পারেন অথবা তাদের কৃতকর্মের কারণে শাস্তিও দিতে পারেন। তবে গুনাহের কারণে তারা জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না; বরং এক সময় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানের কারণে নিজ অনুগ্রহে জান্নাত দিবেন। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করা ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে কেউ আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করল সে মারাত্মক অপবাদ আরোপ করল।-সূরা নিসা : ৪৮

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ বিশ্বাসের উপর মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মাবুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬

অপর হাদীসে আছে, আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতপর আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনো। তারপর তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতপর তাদেরকে বৃষ্টির নদীতে বা হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে। যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না,সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের বক্র হয়ে গজায়? -সহীহ বুখারী, হাদীস ২২; উমদাতুল কারী ১/১০৪;আলফিকহুল আকবার ৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৪৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কাসেম, শফিক ও দীন মুহাম্মাদ। তারা তিন ভাই একসাথে নৌকা...

প্রশ্ন

কাসেম, শফিক ও দীন মুহাম্মাদ। তারা তিন ভাই একসাথে নৌকা নিয়ে মাছ ধরত। দু’ এক মাস আগে সাগরের আবহাওয়া খারাপ হলে তারা তিন ভাই নৌকা ডুবে মারা যায়। তাদের মধ্যে কাসেমের এক স্ত্রী, দুই ছেলে, শফিকের এক স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আর দীন মুহাম্মাদ বিয়ে করেনি। তাদের মা-বাবা, এক ভাই, দুই বোন জীবিত আছে।

এখন ওয়ারিশগণ জানতে চায় যে, মৃত তিন ভাইয়ের মীরাস তাদের মধ্যে কীভাবে বণ্টন করা হবে?

উল্লেখ্য, তিন ভাইয়ের মৃত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে কার আগে কে মারা গেছে তা জানা যায়নি।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মৃত তিন ভাইয়ের রেখে যাওয়া নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে প্রথমে তাদের কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) সম্পন্ন করতে হবে। অতপর তাদের কোনো ঋণ থাকলে তা (নিজ নিজ সম্পত্তি থেকে) পরিশোধ করতে হবে। এরপর তাদের কারো কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা ঐ ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় করতে হবে। অতপর প্রত্যেকের অবশিষ্ট সম্পত্তি নিজ নিজ ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নে বর্ণিত তফসীল অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।

কাসেমের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের নিয়মে পাবে।

বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫% আর প্রত্যেক ছেলে ২৭.০৮৩% করে পাবে।

আর শফিকের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নের শতকরা হারে পাবে।

বাবা : ১৬.৬৬%, মা : ১৬.৬৬%, স্ত্রী : ১২.৫%, ছেলে : ৩৬.১১১% ও মেয়ে : ১৮.০৫৫%।

দীন মুহাম্মাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণ নিম্নোক্ত হারে পাবে-

বাবা : ৮৩.৩৩৩%, মা : ১৬.৬৬৬%।

উল্লেখ্য, মৃত তিন ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে তাদের ভাই-বোনেরা বাবা জীবিত থাকার কারণে কোনো হিস্যা পাবে না।

আরো উল্লেখ্য যে, এভাবে একাধিক লোক একত্রে মৃত্যুবরণ করলে যদি তাদের মধ্যে কে আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে তা জানা না যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারা নিকটাত্মীয় হলেও একে অন্যের থেকে কোনো মীরাস পায় না।

-সূরা নিসা (৪) : ১১; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৩২; সুনানে বায়হাকী ৬/২২২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৯, ৪৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৮, ৬/৪৫০, ৬/৪৫১, ৬/৪৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকার কিছু লোক স্টিমারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সাগরের মাঝে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার কিছু লোক স্টিমারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সাগরের মাঝে গিয়ে তাদের একজন মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় তাদের করনীয় কী-তা তাদের জানা ছিল না। তাই তারা ঐ মৃত ব্যক্তিকে নাকি সাগরে ফেলে দেয়।

তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, সাগরের মাঝে কেউ এভাবে মারা গেলে তার কাফন-দাফন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী?

উত্তর

নদী ও সমুদ্রপথে কেউ মারা গেলে সেক্ষেত্রে করণীয় হল, নৌযানের অবস্থান যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং তাতে অবতরণ করাও সম্ভব হয় অথবা লাশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটার আগে আগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় তাহলে তাকে যথানিয়মে ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি ভূমিতে অবতরণ করার আগেই লাশের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে এক্ষেত্রে নৌযানেই তার গোসল, কাফন এবং জানাযা নামায সম্পন্ন করা হবে। এরপর লাশ পানিতে ছেড়ে দিবে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে তার গায়ে কোনো ভারি বস্তু, যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে যেন লাশ পানিতে ভেসে না থাকে বরং নিচে চলে যায়।

-ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমি জানি যে, শাশুড়িকে বিয়ে করা যায় না। এখানে দুটি...

প্রশ্ন

আমি জানি যে, শাশুড়িকে বিয়ে করা যায় না। এখানে দুটি বিষয় একটু পরিষ্কারভাবে জানালে আমি উপকৃত হব :

১। বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে মিলন না হলেও কি শাশুড়িকে বিয়ে করা নাজায়েয হয়ে যায় এবং তার সাথে দেখা করা জায়েয হয়ে যায়?

২। স্ত্রী মৃত্যুবরণ করার পরও কি শাশুড়ি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত থাকে। তখনও কি তার সাথে দেখা-সাক্ষাত জায়েয?

উত্তর

জী, শুধু বিবাহের দ্বারাই শাশুড়ি (স্ত্রীর আপন মা) সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যায়। স্ত্রীর সাথে মিলন হোক বা না হোক এবং স্ত্রী জীবিত থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় শাশুড়ি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বিবাহ করা হারাম এবং তার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। এমনকি স্ত্রীর মৃত্যুর পরও তার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয।

কুরআন মাজীদে সূরা নিসার ৩২ নং আয়াতে শাশুড়ির সাথে বিবাহ হারাম হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ রূহুল মাআনীতে আল্লামা আলূসী রাহ. বলেন, কুরআন মাজীদে وأمهات نسائكم (স্ত্রীর মাতাগণ) এই আয়াতে স্ত্রীর সাথে মিলন হোক বা না হোক সব ধরনের স্ত্রীর মা উদ্দেশ্য। -তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫৭

একটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিবাহ করবে তার সাথে মিলন হোক বা না হোক (সর্বাবস্থায়) তার মায়ের সাথে বিবাহ নাজায়েয।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৬/২৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬০৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার এক স্ত্রী, কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে। আমার কিছু স্থাবর সম্পত্তি,...

প্রশ্ন

আমার এক স্ত্রী, কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে। আমার কিছু স্থাবর সম্পত্তি, জমা-জমি ও বাড়িঘর আছে। দেনাকর্জও আছে। এ অবস্থায় আমার উক্ত ওয়ারিশদের মধ্যে সহায় সম্পত্তি ইত্যাদি বণ্টন করে যেতে চাই। সামান্য নিজের নামে রাখতে ইচ্ছুক। এ অবস্থায় আমাকে শরয়ী আইন মোতাবেক কী করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বক্তব্য অনুসারে আপনার উপর যেহেতু মানুষের দেনা-পাওনা আছে তাই প্রথমে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে তথা সম্ভাব্য ওয়ারিশদেরকে দান করতে চাইলে সেক্ষেত্রে এটি যেহেতু আপনার উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মৃত্যুপরবর্তী মীরাছেরই পূর্ববণ্টন তাই এক্ষেত্রে মীরাছের নীতিমালা অনুসারে প্রত্যেককে তার অংশ লিখে দখল বুঝিয়ে দিবেন। আর আপনি নিজের নামেও কিছু সম্পত্তি রাখতে চাইলে রাখতে পারবেন।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ছাড়া আপনার আর কোনো ওয়ারিশ (এক্ষেত্রে পিতামাতা) না থাকলে এদের মাঝে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে সম্পদ বণ্টন করবেন। স্ত্রীকে শতকরা ১২.৫ অংশ। অতপর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মাঝে ‘ছেলে, মেয়ের দ্বিগুণ পাবে’- এই মূলনীতির ভিত্তিতে বণ্টন করবেন।

আর যতটুকু সম্পত্তি নিজের নামে রাখবেন, আপনার মৃত্যুর পর কেবল ঐ অংশের মধ্যে মীরাছের বিধান প্রযোজ্য হবে।

-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২৫৯-২৬০; আলমাদখালুল ফিকহিল আম ২/৯৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২৯/১৪০, ২৯/১৪৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জায়েদ ইন্তেকালের সময় মা, বাবা, দুই ছেলে, এক মেয়ে, একজন...

প্রশ্ন

জায়েদ ইন্তেকালের সময় মা, বাবা, দুই ছেলে, এক মেয়ে, একজন বাপ-শরিক ভাই, একজন মা-শরিক ভাই ও স্ত্রী রেখে যায়। মাননীয় মুফতী সাহেবের খেদমতে অধমের জানার বিষয় হল, জায়েদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কে কতটুকু পাবে?

উত্তর

মৃত জায়েদের স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ থেকে প্রথমে তার কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) সম্পন্ন করবে। অতপর তার কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। এরপর তার কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে পূর্ণ করতে হবে।

এরপর অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। এক্ষেত্রে জায়েদের বাবা ও মা প্রত্যেকে সমুদয় সম্পদের এক ষষ্ঠাংশ করে পাবে এবং স্ত্রী পাবে এক অষ্টমাংশ। তাদের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ তার ছেলেমেয়েগণ ‘‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান’’ হিসেবে লাভ করবে।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ

(তরজমা) আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। ... তার (মৃতের) সন্তান থাকলে তার পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পদের এক ষষ্ঠাংশ; ... আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক অষ্টমাংশ।-সূরা নিসা ৪ : ১১-১২

সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জায়েদের সমুদয় সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নবর্ণিত শতকরা হারে বণ্টিত হবে-

১। জায়েদের বাবা : শতকরা ১৬.৬৬৬ ভাগ ২। জায়েদের মা : শতকরা ১৬.৬৬৬ ভাগ ৩। জায়েদের স্ত্রী : শতকরা ১২.৫০ ভাগ ৪। জায়েদের প্রত্যেক ছেলে : শতকরা ২১.৬৬৬ ভাগ ৫। জায়েদের মেয়ে : শতকরা ১০.৮৩ ভাগ।

উল্লেখ্য যে, জায়েদের বাবা ও ছেলে জীবিত থাকার কারণে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তার বাপ-শরিক ভাই ও মা-শরিক ভাই কোনো অংশ পাবে না। -সূরা নিসা ৪ : ১১-১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে...

প্রশ্ন

কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে চেনার কোনো উপায় থাকে না যে সে মুসলমান, নাকি ভিন্ন ধর্মের?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুসলিম হওযার বাহ্যিক কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে যেমন নাম পোশাক ইত্যাদি কিংবা শারীরিক নিদর্শন যেমন খতনা ইত্যাদি থাকলে মুসলমানের লাশের মত আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ মুসলমানের লাশের মতই গোসল দিবে এরপর কাফন-জানাযা শেষে মুসলমানদের কবরস্থানেই দাফন করবে। আর যদি মুসলিম হওয়ার বাহ্যিক বা শারীরিক কোনো নিদর্শনই পাওয়া না যায় তাহলে মুসলমানদের এলাকায় এ ধরনের লাশ পাওয়া গেলে তাকেও মুসলমান গণ্য করা হবে এবং মুসলমানের লাশের মতই গোসল-জানাযা ও দাফন করবে। আর যদি এ ধরনের নিদর্শনহীন লাশ অমুসলিমদের এলাকায় পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে গোসল দিয়ে কোনোরকম কাফন পরাবে। তবে তার জানাযা পড়বে না। অতপর অমুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০১; শরহুল মুনইয়া ৬০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আশা করি ভালো আছেন। আমি ‘তাবেঈদের ঈমানদীপ্ত জীবন’ বইয়ে মুহাম্মাদ...

প্রশ্ন

আশা করি ভালো আছেন। আমি ‘তাবেঈদের ঈমানদীপ্ত জীবন’ বইয়ে মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ.-এর জীবনানোলচনায় দেখতে পেলাম যে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর তত্ত্বাবধানে তার দাসী সাফিয়্যাহকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তার জন্মালোচনায় বলা হয়েছে যে, তিনি হযরত উসমান রা.-এর খেলাফতের দুই বছর অবশিষ্ট থাকাকালে জন্মগ্রহণ করেন। আবার আলোচনার শেষদিকে বলা হয়েছে তিনি আনাস বিন মালিক রা.-এর অসিয়ত মুতাবিক তার জানাযার নামাযের ইমামতি করেছেন। একটু পরে বলা হয়েছে তিনি সাতাত্তর বছর বেঁচে ছিলেন। জানার বিষয় হল যিনি আবু বকর রা.-এর তত্ত্বাবধানে বিবাহ করেছেন তার জন্ম কীভাবে উসমান রা.-এর খেলাফতকালে হয়। আবার যদি সঠিক মেনে নেয়া হয় যে, তিনি আবু বকর রা.-এর তত্ত্বাবধানে বিবাহ করেছেন তাহলে আনাস বিন মালিক রা.-এর মৃত্যুকালে তার বয়স ৭৭ থেকে অনেক বেশি হয়। আর যদি তিনি ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন সঠিক হয় তাহলে উসমান রা.-এর খেলাফতকালে তার জন্ম মেনে নিতে হয়। এটি মেনে নিলে আবু বকর রা.-এর তত্ত্বাবধানে বিবাহ হওয়া অসম্ভব। এসব তথ্য নিয়ে আমি বিভ্রান্তিতে আছি।

উত্তর

আমাদের কাছে রাহনুমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘তাবেঈদের ঈমানদীপ্ত জীবন’-এর যে কপিটি রয়েছে তার ১২৭ পৃষ্ঠায় মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন শীর্ষক আলোচনা এসেছে। সেখানে মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে প্রথমে তাঁর পিতা সিরীন ও মাতা সাফিয়্যার পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিবাহ আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়।

বিবাহের প্রায় দীর্ঘ বিশ বছর পর উসমান রা.-এর খেলাফতের শেষ দিকে সিরীন ও সাফিয়্যাহর ঔরসে মুহাম্মাদ জন্মগ্রহণ করেন। ইনিই সেই বিখ্যাত তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন। যিনি শুধু ইবনে সিরীন নামেও পরিচিত।।

আমরা মূল কিতাব ছুয়ারুম মিন হায়াতিত তাবিয়ীন-এর সাথে অনূদিত কিতাবের ঐ অংশটি মিলিয়ে দেখেছি। মূল কিতাবের বক্তব্যের সাথে অনূদিত অংশের কোনো অমিল পাইনি।

সম্ভবত আপনার কপিটিতে সিরীনের সাথে সাফিয়্যাহর বিবাহের আলোচনার অংশে ছাপার ভুলের কারণে সিরীনের স্থলে ইবনে সিরীন বা মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন উল্লেখ হয়ে থাকতে পারে। এমনটি হয়ে থাকলে ঐ অংশটি ঠিক করে নিলেই আর কোনো অসামঞ্জস্যতা থাকবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৭৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার বোনের শাশুড়ি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে আমার...

প্রশ্ন

আমার বোনের শাশুড়ি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে আমার বোনকে বলেছিলেন, বৌ, আমার গলার হারটা তুমি নাও। আমার বোন তখন নেয়নি। বলেছিল, আম্মা, এখন রাখেন। পরে নিব। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি ইন্তেকাল করেন। এখন তার মেয়েরা বলছে যে, আম্মা ভাবিকে কখনো এমন কথা বলেনি। সুতরাং ভাবি এটা নিতে পারবে না। আমার প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় ঐ হারটি কি আমার বোন পাবে?

উত্তর

হেবাকৃত বস্তু হস্তগত করার পূর্বে তাতে মালিকানা সাব্যস্ত হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোনের শাশুড়ি যদি তাকে ঐ হারটি নেওয়ার কথা বলেও থাকেন তবুও সে ঐ হারটির মালিক হবে না। কেননা প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার বোন ঐ হারটি তখন গ্রহণ করেনি এবং পরবর্তীতে শাশুড়ির জীবদ্দশাতেও তা নেয়নি। তাই ঐ হারটি মরহুমার মীরাছের অন্তর্ভুক্ত হবে। সকল ওয়ারিশ তাদের অংশ অনুযায়ী এর মালিক হবে।

-শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৩৬২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় ব্যাপকভাবে রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তির ইন্তেকাল হলে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় ব্যাপকভাবে রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তির ইন্তেকাল হলে তার পরিবার খতমে কুরআন বা খতমে তাহলীলের ব্যবস্থা করে। এবং যারা পড়ে তাদের জন্য খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেক সময় টাকাও দেওয়া হয়।

জানার বিষয় হল, মৃতের উদ্দেশ্যে তাহলীল খতম পড়ে বা কুরআন তিলাওয়াত করে টাকা নেওয়া বা খাবার খাওয়া বৈধ হবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করে কিংবা কালিমা তায়্যিবা বা কোনো যিকির করে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করো না।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৫৫২৯

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়ো এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের

পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে বিনিময় চাইবে। -মুসনাদে আহমাদ,হাদীস : ১৯৯১৭

আরেক বর্ণনায় আছে, তাবেয়ী যাযান রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে মানুষ থেকে এর বিনিময় গ্রহণ করে সে যখন হাশরের মাঠে উঠবে তখন তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না। শুধু হাড্ডি থাকবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৮২৪

উক্ত হাদীসসমূহের আলোকে ফকীহগণ বলেন, কোনো কিছুর বিনিময়ে ঈসালে সওয়াবের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করলে কিংবা কোনো যিকির করলে কোনো সওয়াব হবে না। বরং বিনিময় নিয়ে পড়ার কারণে টাকাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ে গুনাহগার হবে।

উল্লেখ্য, যদি শুধু তিলাওয়াতকারী বা তাহলীল পাঠকারীর জন্যই খাবারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে এবং পাঠকারীর জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে। আর যদি ব্যাপকভাবে দাওয়াতের আয়োজন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে খতম পাঠকারীদের জন্য খাবার খাওয়াটা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে না।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৫৫২৯, ১৯৯১৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৮২৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক মহিলার স্বামী কুয়েতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। গত...

প্রশ্ন

জনৈক মহিলার স্বামী কুয়েতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। গত ২৫ রজব কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এক মর্মামিত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। প্রাথমিকভাবে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে উদঘটিত হয় যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তখন উভয় দেশের দূতাবাসের আলোচনার ফলে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়। গত ২৪ শাবান বাংলাদেশ দূতাবাস মৃত ব্যক্তির পরিবারকে খবরটি নিশ্চিত করে। জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী কবে থেকে ইদ্দত গণনা শুরু করবে? মৃত্যুবরণ করার সময় থেকে নাকি সংবাদ পাওয়ার পর থেকে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মহিলা মৃত্যুর দিন থেকেই ইদ্দত গণনা করবে। কেননা স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর খবর না পেলেও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। সুতরাং উক্ত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা না হলে স্বামীর মৃত্যুর দিন ২৫ রজব থেকে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করবে। আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্তইদ্দত পালন করবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৯২৪৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৫/২৪৮-২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫২০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার পিতার ইন্তেকালের সময় তার একজন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। তবে...

প্রশ্ন

আমার পিতার ইন্তেকালের সময় তার একজন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। তবে পিতার জীবদ্দশাতেই তার আরো দুইজন স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর সময় জীবিত স্ত্রীর এক ছেলে, মৃত স্ত্রী খোদেজা খাতুনের ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে এবং অপর মৃত স্ত্রী তমিজা খাতুনের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান। তারা সবাই আমার পিতারই ঔরসজাত। ২০০৭ সালে ওয়ারিসদের মাঝে মিরাস বণ্টন করা হয়েছে এবং মৃতের অপর দুই স্ত্রী আগেই ইন্তেকাল করার কারণে তাদেরকে কোনো অংশ দেওয়া হয়নি।

কিন্তু কিছুদিন আগে একজন বললেন, উপরোক্ত দুই স্ত্রী মৃতের আগে ইন্তেকাল করলেও তারা মৃতের ওয়ারিস হবে এবং জীবিত স্ত্রীর সাথে তারাও মিরাস পাবে। আর তাদের অংশটুকু তাদের সন্তানরা লাভ করবে।

এর ফলে আমাদের মাঝে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে শরীয়তসম্মত সমাধান কামনা করছি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় মৃতের বর্তমান স্ত্রী এককভাবে মৃতের সমুদয় সম্পদের এক-অষ্টমাংশ পাবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ। আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-অষ্টমাংশ; তোমরা যা অসিয়ত করবে তা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর।-সূরা নিসা (৪) : ১২

প্রকাশ থাকে যে, মৃতের পূর্বে কোনো ওয়ারিস মৃত্যুবরণ করলে সে মৃতের ওয়ারিস হয় না। কেননা ওয়ারিস ঐ ব্যক্তিকেই বলা হয়, যে সংশ্লিষ্ট লোকের মৃত্যুর সময় জীবিত থাকে। তাই এক্ষেত্রে মৃতের পূর্বে মৃত্যুবরণকারী দুই স্ত্রী স্বামীর সম্পদের অংশিদার হবে না। সুতরাং তাদের সন্তানদের জন্য মার অংশ দাবি করা অবৈধ হবে। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃতের সমুদয় সম্পদে তার জীবিত ওয়ারিসগণ নিম্নবর্ণিত হারে হিস্যা পাবেন-

১। স্ত্রী = শতকরা ১২.৫ ভাগ।

২। প্রত্যেক ছেলে = শতকরা ৭.৯৫৪ ভাগ।

৩। প্রত্যেক মেয়ে = শতকরা ৩.৯৭৭ ভাগ।

সুতরাং এ অনুযায়ী সকলের মাঝে সম্পদ বণ্টন করা হয়ে থাকলে কারো জন্য আপত্তি করা ঠিক হবে না। আর এক্ষেত্রে পূর্বে মৃত্যুবরণকারীনী স্ত্রীদের জন্য অংশ দাবি করার শরয়ী বা আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।

-সূরা নিসা (৪) : ১২; আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/৮০; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/৩৬৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত ১০ বছর পূর্বে আমার আববার ইন্তেকাল হয়েছে। তখন আমরা...

প্রশ্ন

গত ১০ বছর পূর্বে আমার আববার ইন্তেকাল হয়েছে। তখন আমরা ছোট ছিলাম। আমার বড় ভাই লেখাপড়া শেষ করেছিলেন বিধায় আমার বড় মামা তাকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। ১০ বছর যাবৎ তিনি পরিবারের খরচ বহন করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি দেশে আসলে আমার আম্মা আমাদের মধ্যে জায়গা বণ্টন করে দিতে চাইলে তিনি দাবি করেন যে, তাকে জমির ভাগ বেশি দিতে হবে। কেননা তিনি গত ১০ বছর যাবৎ পরিবারের খরচ বহন করেছে। তাতে আমার আম্মা সন্তুষ্ট হয়নি। জানার বিষয় হল, আমার বড় ভাইয়ের দাবি কি সঠিক? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? দয়া করে বিসত্মারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বড় ভাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জমি দাবি করা শরীয়তসম্মত নয়। বরং এক্ষেত্রে আপনার বাবার সম্পত্তি শরীয়তের মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী সকল ওয়ারিসের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে। অন্যান্য ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি ছাড়া বড় ভাইয়ের জন্য বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৫২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের ঘরে একজন মহিলা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের ঘরে একজন মহিলা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার পেটে নয় মাসের সন্তান ছিল। সন্তান জীবিত আছে এ সন্দেহে ডাক্তার তার অপারেশন করেন। কিন্তু পেটের ভেতরেই সন্তানকে মৃত পাওয়া গেছে। তাই তা আর বের না করে সেলাই করে দেন। অতপর তার আত্মীয়-স্বজন তার গর্ভের ঐ সন্তানসহ তাকে কাফন-দাফন করে দেয়। জানার বিষয় হল, মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় মারা গেলে শরীয়তের বিধান কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় কোনো মহিলা মারা গেলে দেখতে হবে সন্তান জীবিত আছে কি না? যদি জীবিত থাকে তবে দ্রম্নত অপারেশন করে তা বের করতে হবে। অতপর মৃতের গোসল ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে হবে। আর গর্ভের সন্তান মৃত হলে গর্ভসহই মৃতকে দাফন করে দিতে হবে। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানটি মৃত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় রেখে দাফন করাটা ঠিক হয়েছে।

-আততাজনীস ২/২৪৫-২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকার এক লোক তার বাপ শরিক ভাই (বৈমাত্রেয় ভাই)...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক তার বাপ শরিক ভাই (বৈমাত্রেয় ভাই) -এর মেয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং তাদের ঘরে একটি ছেলেসন্তানও হয়েছে। তাদের এই বিয়ে নিয়ে আমাদের এলাকায় বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তাই আমার জানার বিষয় হল, তাদের এই বিয়ে কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? যদি না হয় তবে তাদের করণীয় কী? আর তাদের ছেলেসন্তানের হুকুম কী হবে? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে বিবাহ হারাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাতিজী ও ভাগ্নী...। -সূরা নিসা (৪) : ২৩

কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রাহ. তাফসীরে মাযহারীতে বলেন, উক্ত আয়াতে ‘ভাতিজী’ দ্বারা সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সন্তানাদি ও তাদের অধঃস্তন সকলেই উদ্দেশ্য। (তাফসীরে মাযহারী ২/২৬৫)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত লোকটির জন্য তার বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মেয়ের মেয়েকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। তাই এখনই তাদের পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরি। আর বিগত দিনগুলো একত্রে বসবাসের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট খাঁটিমনে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।

উভয়ে পৃথক হয়ে যাওয়ার পর থেকে মহিলাটির জন্য ইদ্দত পালন করা জরুরি। ইদ্দতকালীন সময়ে তার ভরণপোষণ ঐ ব্যক্তিকে বহন করতে হবে। ইদ্দতের পর মহিলাটি অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আর বিবাহ অবৈধ হলেও তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলেটির বংশপরিচয় তার পিতা থেকেই সাব্যস্ত হবে এবং পিতার মৃত্যুর পর ঐ সন্তান তার ওয়ারিস গণ্য হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৪/২৪, ৩/৫১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩, ১/৫২৬, ১/৫৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৬, ৫/২৬০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪২৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা...

প্রশ্ন

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযার নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

প্রায় ২৫ বছর আগে জনৈক ব্যক্তি এক ছেলে, দুই মেয়ে...

প্রশ্ন

প্রায় ২৫ বছর আগে জনৈক ব্যক্তি এক ছেলে, দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী রেখে ইন্তেকাল করেন। এত বছর পর্যন্ত তাদের স্থাবর সম্পত্তি (জমিজমা) ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করা হয়নি। এখন সে সম্পত্তি শরীয়ত মোতাবেক বণ্টন করা হবে।

অতীতে মরহুমের ছেলে ঐ স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু টাকা খরচ করেছে (কারণ কিছু জমি নিয়ে মামলা মুকাদ্দমা সংক্রান্ত ঝামেলা ছিল, যা নিষ্পত্তি করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে ইত্যাদি) তবে মেয়েরাও মাঝেমধ্যে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে খরচে শরিক হয়েছিল। এখন সম্পত্তি বণ্টনে ছেলে দাবি করছে যে, যত টাকা সে অতীতে খরচ করেছে তার সমান ভাগ মেয়েদেরকে নিতে হবে এবং ঐ টাকার যে অংশ তাদের ভাগে পড়বে তারা এর দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে। সে এর কারণ দেখাচ্ছে যে, অতীতের চেয়ে বর্তমানে টাকার মূল্য কমে গেছে।

তাই জানতে চাচ্ছি যে, ছেলের দাবি মোতাবেক মেয়েদেরকে তাদের অংশের চেয়ে বেশি আদায় করতে হবে কি? শরীয়ত মোতাবেক তারা এখন কত টাকা পরিশোধ করবে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ এজমালি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে যত টাকা খরচ হয়েছে অর্থাৎ ছেলে যা খরচ করেছে এবং মেয়েরা মাঝেমধ্যে যা দিয়েছে সবগুলো হিসাব করে প্রত্যেক ওয়ারিসের উপর তাদের হিস্যা অনুপাতে বর্তাবে। প্রশ্নোক্ত ওয়ারিসদের হিস্যা হল : স্ত্রী : ১২.৫%, ছেলে : ৪৩.৭৫% এবং প্রত্যেক মেয়ে : ২১.৮৭৫% করে।

অতএব মরহুমের স্ত্রী তার হিস্যা অনুসারে উক্ত খরচের এক অষ্টমাংশ বহন করবে। অতপর অবশিষ্ট খরচের দুই চতুর্থাংশ ছেলে, একভাগ প্রথম মেয়ে এবং অপর ভাগ দ্বিতীয় মেয়ে বহন করবে। মেয়েরা পূর্বে যা খরচ করেছে তা বাদ দিয়ে তাদের অংশের বাকি টাকা তাদের ভাইকে পরিশোধ করবে।

এজমালি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে ছেলে অন্যদের পক্ষ থেকে যা খরচ করেছে তা ঋণ হিসেবে ধর্তব্য হবে। তাই প্রত্যেক ওয়ারিসের হিস্যা অনুপাতে যত টাকা আসে তত টাকাই তার প্রাপ্য। এক্ষেত্রে টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ার অজুহাতে মেয়েদের থেকে তাদের হিস্যার অতিরিক্ত দাবি করা জায়েয হবে না। অবশ্য ছেলে সকলের পক্ষ থেকে নিজ টাকা দ্বারা কাজটি সমাধা করার জন্য সওয়াবের অধিকারী হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬২; রাসাইলে ইবনে আবেদীন ২/৬২; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ১৩০৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২৯/১৪৮; আসসিরাজী ফিলমিরাছ ১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যায়। ইন্তেকালের একমাস আগ...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যায়। ইন্তেকালের একমাস আগ থেকে তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় তার ছেলেদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। মারা যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে তার শহরের জমিটি জনৈক ব্যক্তির নিকট নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। এজন্য তিনি বায়না দেন এবং আংশিক মূল্যও গ্রহণ করেন। তবে এখনো সাব কবলা রেজিস্ট্রি হয়নি। ওয়ারিশগণ তার ইন্তেকালের পর বিষয়টি জানতে পেরে মনক্ষুণ্ণ হয় এবং তারা এ বিক্রয় কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, এখন তারা ঐ বিক্রয় বাতিল করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত জমি বিক্রির লোকসান যদি ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ সমপরিমাণ বা এর চেয়ে কম হয় তাহলে উক্ত বিক্রি কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিসগণের আপত্তি করার কোনো অধিকার থাকবে না। কেননা মূমুর্ষ অবস্থায়ও এক তৃতীয়াংশ সম্পদে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করার অধিকার তার আছে। আর যদি মৃতের এক তৃতীয়াংশ সম্পদের চেয়ে বেশি লোকসানের সাথে বিক্রি করা হয় তাহলে ওয়ারিসগণের অনুমতি বিহীন এ বিক্রি কার্যকর হবে না। তারা যদি অনুমতি না দেয় তাহলে ক্রেতা এক তৃতীয়াংশের চেয়ে অধিক লোকসানের অংশ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় ওয়ারিসগণ ঐ বিক্রয়চুক্তি বাতিল করে দিতে পারবে।

-শরহুল মাজাল্লাহ ২/৪১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/১০৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৭৯-৬৮০; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/৩২৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এই অসিয়ত করেছিল যে, তার জানাযা...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এই অসিয়ত করেছিল যে, তার জানাযা নামায তার নাতী পড়াবে। কিন্তু নাতীর পৌঁছতে দেরি করায় মৃত ব্যক্তির ছেলে জানাযা পড়ায়। প্রশ্ন হল, অসিয়ত ভঙ্গ করে ছেলের নামায পড়ানো কি ঠিক হয়েছে? উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তির ছেলেও নামায পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন।&

উত্তর

কারো ব্যাপারে জানাযার ইমামতির অসিয়ত করলে সে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি নয়; বরং মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ানোর ব্যাপারে শরীয়ত যাদেরকে প্রাধান্য দিয়েছে তারাই এর বেশি হকদার। অবশ্য হকদার ব্যক্তি যদি মৃতের অসিয়তকৃত ব্যক্তি বা অন্য কাউকে ইমামতির অনুমতি দেয় তবে সেটারও সুযোগ আছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতের অভিভাবক হিসেবে ছেলের জানাযা পড়ানো নিয়মসম্মতই হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা...

প্রশ্ন

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযা নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কোনো কবর পুরাতন হয়ে গেলে তাতে কি নতুন করে আবার...

প্রশ্ন

কোনো কবর পুরাতন হয়ে গেলে তাতে কি নতুন করে আবার কোনো লাশ দাফন করা যায়? আমাদের একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। যা প্রায় ৬০ বছর পুরোনো। এখন সেটির প্রায় সব জায়গাই কবর দ্বারা ভরে গেছে। নতুন কোনো লাশ দাফন করার মতো অন্য কোনো জায়গাও নেই। এ অবস্থায় আমরা কি কবরস্থানটির পুরাতন কবরগুলোতে নতুন করে আবার কবর দিতে পারব? যদি অনুমতি থাকে তাহলে কখনো কোনো কবরে হাড্ডি পেলে সেগুলো কী করব? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে পুরাতন কবরের লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় তা খনন করে সেখানে নতুল লাশ দাফন করা যাবে। কবর খনন করতে গিয়ে হাড় পাওয়া গেলে তা পৃথকভাবে দাফন করে দিবে। কিংবা খননকৃত কবরের একপাশে রেখে দিবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩-২৩৪; রমযুল হাকায়েক ১/৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার স্বামী মারা যান। তার ইন্তেকালের মাসখানেক পর...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার স্বামী মারা যান। তার ইন্তেকালের মাসখানেক পর আমার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমি ডিএনসি করাই। গর্ভটি ছিল খুব অল্প দিনের। এখনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি। কেবলমাত্র জমাট রক্ত হয়েছে। জানতে চাই, এক্ষেত্রে ডিএনসি করার দ্বারা আমার ইদ্দত পূর্ণ হয়েছে কি? যদি না হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু গর্ভটির কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি তাই এ গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ডিএনসি করার দ্বারা আপনার ইদ্দত পূর্ণ হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাকে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পুরো চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৪০০; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৪৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামায পড়ার সময় কিছু মানুষকে দেখা যায়, জুতার উপর...

প্রশ্ন

জানাযার নামায পড়ার সময় কিছু মানুষকে দেখা যায়, জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়ে। আবার কিছু লোক জুতা খুলে জমিনের উপর দাঁড়ায়।

জানার বিষয় হল, জুতার উপর দাঁড়িয়ে জানাযার নামায পড়লে সহীহ হবে কি? কেননা জুতার নিচে তো নাপাকি লেগে থাকার সম্ভাবনা থাকে।

উত্তর

উভয় পদ্ধতিই সহীহ। জুতা থেকে পা বের করে জুতার উপর দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে জুতার নিচে নাপাকি থাকলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩; শরহুল মুনইয়াহ ২০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনায় আমার এক মামা নিহত হন। আমরা তাঁর...

প্রশ্ন

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনায় আমার এক মামা নিহত হন। আমরা তাঁর শুধু কোমর থেকে উপরের অংশটা পেয়েছি। তখন আমরা ঐ অর্ধেক অংশের কাফন-দাফন ও জানাযার ব্যবস্থা করি। ঐ অর্ধেক অংশের উপর আমাদের নামায পড়া কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ অর্ধেক অংশের জানাযার নামায পড়া ঠিক হয়েছে। কারণ কোনো লাশের মাথাসহ অর্ধেক অংশ পাওয়া গেলে তার জানাযা পড়া জরুরি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতহুল কাদীর ২/৭৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

পিতা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করার ক্ষেত্রে ছেলে ও...

প্রশ্ন

পিতা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পদ বণ্টন করার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে কি না?

এ অবস্থায় এমদাদুল মুফতীনের ৯৫৮ নং প্রশ্নের উত্তরে ৮৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ছেলে ও মেয়েকে সমান সমান দিতে হবে। মিরাসের নিয়মে মেয়েকে অর্ধেক দিবে না বা দেওয়া উচিত নয়। এ মাসআলা কি সঠিক? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

পিতামাতা জীবদ্দশায় সন্তানদিগকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেওয়ার বিষয়টি দুভাবে হতে পারে।

এক. সন্তানদিগকে সম্পত্তির অংশবিশেষ প্রদান করা।

দুই. জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি সম্ভাব্য ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া।

প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি সন্তানদেরকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে কোনো কিছু প্রদান করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে সকলকে সমানভাবে দেওয়া কর্তব্য। শরীয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া তাদের মাঝে উলেখযোগ্য কমবেশি করা ঠিক নয়।

তদ্রূপ মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়া যাবে না। কেননা হাদীস শরীফে সন্তানদিগকে কোনো কিছু হেবা করার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

যেমন, নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে।

রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর।-সহীহ বুখারী ১/৩৫২

অবশ্য সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি পিতামাতার অধিক অনুগত হয় এবং তাদের খেদমত ও দেখাশোনার প্রতি অধিক যত্নবান হয় অথবা ইলম-আমল, তাকওয়া ও পরহেযগারিতে কোনো সন্তান অধিক অগ্রগণ্য হয় সেক্ষেত্রে পিতামাতা খুশি হয়ে তাকে কিছু বেশি দিতে চাইলে তা জায়েয।

এভাবে দেওয়া সাহাবা থেকে প্রমাণিত আছে। যেমন, আবু বকর রা. আয়েশা রা.-কে, উমর রা. আসেম রাহ.-কে এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. তাঁর কোনো কোনো সন্তানকে অধিক দিয়েছেন। (মুআত্তা, ইমাম মালেক পৃষ্ঠা : ৬৪৩; শরহু মাআনিল আছার ২/২২৫; ফাতহুল বারী ৫/২৫৪)

আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ পিতামাতা যদি মৃত্যুর পূর্বে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চায় তাহলে এক্ষেত্রেও যেহেতু তা মূলত হেবা বা দানেরই অন্তর্ভুক্ত তাই ফকীহগণের অনেকের মতে এ অবস্থায়ও ছেলেমেয়ে সকলকে সমহারে দিতে হবে। মীরাসের নীতি অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া যাবে না। ইমদাদুল মুফতীনে এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ মত অনুযায়ী কেউ সন্তানদের মাঝে সমুদয় সম্পত্তি সমহারে বণ্টন করে দিলেও তা অন্যায় হবে না।

তবে এক্ষেত্রে আরেকটি মত হল, জীবদ্দশায় সকল সম্পত্তি বণ্টন বাহ্যিকভাবে হেবা বা দান হলেও উদ্দেশ্যের দিক থেকে যেহেতু তা মৃত্যু পরবর্তী মীরাসের পূর্ববণ্টন তাই উদ্দেশ্যের বিবেচনায় মীরাসের নীতি অনুযায়ীই বণ্টন করা উচিত এবং ছেলেকে মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ দেওয়া উচিত। এটি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-

এর মত।

আর কিফায়াতুল মুফতী ও ফাতাওয়া রহীমিয়াতে একটি প্রশ্নের উত্তরে এ মত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। আর সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমেও এ মতকে গ্রহণ করা হয়েছে।

তাই উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে এ মত অনুযায়ী ছেলেকে মেয়ের চাইতে দ্বিগুণ দেওয়া উত্তম হবে। এছাড়া বর্তমানে যেভাবে নিজের সমুদয় সম্পদ পূর্বেই বণ্টন করে দেওয়ার প্রবণতা হয়েছে তাতে এই দ্বিতীয় মত অনুযায়ী বণ্টন করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ বর্তমানে অনেকেই নিজের জীবদ্দশাতেই সমুদয় সম্পদ ছেলেমেয়েদের নামে লিখে দিয়ে থাকে। এখন যদি প্রথমোক্ত বক্তব্যের উপর আমল করে সমান সমান দেওয়া হয় তাহলে পিতামাতার সম্পদে ছেলেমেয়েদেরকে শরীয়ত যেভাবে অংশ দিতে চেয়েছে তার উপর আর আমলের সুযোগই থাকে না। কারণ এক্ষেত্রে তার কোনো সম্পদই তো অবশিষ্ট থাকবে না।

-সহীহ বুখারী ১/৩৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭; আমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৬৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমি একদা আমার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে আমাকে জানাযা...

প্রশ্ন

আমি একদা আমার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে আমাকে জানাযা পড়াতে হয়। জানাযা শেষে মৃত ব্যক্তির ছেলে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে, হুজুর! এ টাকা আপনাকে হাদিয়া। আমি উক্ত টাকা গ্রহণ করিনি। জানাযা পড়ানোর পরে হাদিয়া বলে এভাবে টাকা দিলে সে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর

ঐ টাকা না নিয়ে আপনি ঠিকই করেছেন। কেননা জানাযা পড়িয়ে বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়। হাদিয়া বলে দিলেও নেওয়া যাবে না। তা মূলত জানাযা পড়ানোরই বিনিময়।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়া ২/১৩৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭১; ইমদাদুল আহকাম ৩/৫২৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৫৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে মসজিদের জায়গায় বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘর বিদ্যমান। মসজিদ কমিটি বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘরের উপরে ছাদ দিয়ে তাতে ইমাম-মুয়াযযিনের পরিবার নিয়ে থাকা, পাঠাগার ও কমিটির মিটিংয়ের জন্য রুম তৈরি করতে চাচ্ছে। এটা করা বৈধ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ইস্তেঞ্জা খানা ও লাশ রাখার ঘরের উপর ইমাম-মুয়াযযিনের স্বপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা এবং মসজিদের অফিস কক্ষ ও ইসলামী বই-পুস্তকের জন্য পাঠাগার করা জায়েয হবে। তবে ঐ অংশের জন্য আলাদা সিঁড়ি রাখা উচিত। যাতে করে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) ফজরের নামাযে আওসাতে মুফাসসাল পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে...

প্রশ্ন

ক) ফজরের নামাযে আওসাতে মুফাসসাল পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি? আর এই তিলাওয়াত নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি সমালোচনা করে যে, নামায হবে না তাহলে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে গুনাহগার হবে কি না?

খ) শরীয়তের মধ্যে কবর দেখভাল করার সঠিক পদ্ধতি কী? দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ক) ফজর নামাযে সাধারণ অবস্থায় তিওয়ালে মুফাসসালের সূরাগুলো থেকে তিলাওয়াত করা সুন্নত। অবশ্য তিওয়ালে মুফাসসালের সূরা সমপরিমাণ অন্য জায়গা থেকে পড়লেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় ফজর নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকেই তিলাওয়াত করতেন। আবার মুফাসসালাতের বাইরে থেকেও এ ধরনের লম্বা কিরাত পড়তেন। এ মর্মে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

সিমাক ইবনে হারব বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা.কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে সূরা কাফ এবং এ ধরনের অন্য সূরাও পাঠ করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আবু বারযা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাযে ষাট থেকে একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭

তাই কোনো ওজর না থাকলে ফজর নামাযে অধিকাংশ সময় তিওয়ালে মুফাসসাল থেকেই পড়া উচিত।

আর ওজর অবস্থায় কিংবা কখনো কখনো ফজর নামাযেও ছোট সূরা পড়া যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাযে কিসারে মুফাসসাল থেকে সূরা যিলযাল তিলাওয়াত করেছেন বলে প্রমাণিত আছে।-সুনানে আবু দাউদ ১/১২৩

অনুরূপ বাকি চার ওয়াক্তের কিরাতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো মুফাসসালাতের বাইরে থেকেও তিলাওয়াত করেছেন এমন বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে।&

তাই কোনো ইমাম কখনো যদি মুফাসসালাতের বাইরে থেকে তিলাওয়াত করেন তাহলে এ নিয়ে আপত্তি করা ঠিক নয়। আর এ কারণে নামায হবে না এমন কথা তো সম্পূর্ণ ভুল।

বিশেষত যেখানে মুসল্লীদের অধিকাংশ শ্রেণী এমন হয়, যাদের জন্য দীর্ঘ কিরাতে নামায পড়া কষ্টসাধ্য, যেমন অধিকাংশ মুসল্লী ফ্যাক্টরির শ্রমিক বা বয়োবৃদ্ধ সেক্ষেত্রে ইমামের জন্য তাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে কেরাত পড়া উচিত। (ইলাউস সুনান ৪/২৪)

তবে এ ধরনের মুসল্লীদেরকেও সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলত বলে কিরাতের ন্যূনতম পরিমাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

উত্তর : খ) কবর ও কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে জীবিতদের উপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল, কবর ও কবরস্থানকে সর্বপ্রকার শিরক-বিদআত ও শরীয়তবিরোধী কর্মকান্ড থেকে মুক্ত রাখা।

কবরকে সিজদা না করা, চুম্বন না করা, তাজীম-সম্মানার্থে মাথা না ঝুকানো, কবরওয়ালার কাছে কিছু না চাওয়া। কেননা কবরের সাথে এসব আচরণ করা সম্পূর্ণ হারাম এবং এগুলোর কোনো কোনোটি শিরক।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) আল্লাহ তাআলা ইহুদ-নাসারাকে ধ্বংস করুন! তারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৩০

অপর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা ঐ সকল লোকের প্রতি অভিসম্পাত করুন, যারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে।-সুনানে নাসায়ী ১/২২৩

তদ্রূপ কবরকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার উরস-উৎসব না করা, আলোকসজ্জা, মোমবাতি-আগরবাতি না জ্বালানো। কেননা কবরকে কেন্দ্র করে এগুলো করাও হারাম।

কবরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদের প্রতি হাদীস শরীফে অভিসম্পাত এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর লানত করেছেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২২৩

কবরকে পাকাপোক্ত ও চাকচিক্যময় না করা। কবরের উপর ছাদ না করা। কেননা হাদীসে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে পাকাপোক্ত ও চুনকর্ম করতে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭০

মোটকথা কবরকে সব ধরনের বিদআত রুসূমাত থেকে মুক্ত রাখা জীবিতদের কর্তব্য।

দ্বিতীয়ত কবরের বাহ্যিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকটি। সেক্ষেত্রে কর্তব্য হল মৃত ব্যক্তির সম্মানহানী হয় এমন কোনো আচরণ কবরের সাথে না করা। যেমন কবরের উপর চলাচল করা, বসা ইত্যাদি।

আবু মারসাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কবরে বসবে না এবং কবরকে সামনে রেখে নামায পড়বে না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭২

অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমারা ইবনে হাযম রা. বলেন, একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কবরের উপর বসা দেখতে পেয়ে বললেন, কবর থেকে নেমে যাও। কবরস্থ ব্যক্তিকে কষ্ট দিও না।-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী , মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৯১

জামে তিরমিযীতে জাবের রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর চলাচল করতে নিষেধ করেছেন।

অনুরূপ কবরে যেন গরু-ছাগল প্রবেশ না করে এবং কবর অপবিত্র না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা। কবরের উপর গাছ তরু-লতা বা ঘাস ইত্যাদি থাকলে তা না কাটা। কেননা এগুলোর তাসবীহাত দ্বারা মৃতের উপকার হতে পারে। অবশ্য ঘন জঙ্গল হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করা যাবে। অনুরূপ শুকনো ঘাস, ডালপালা থাকলে তা পরিষ্কার করা যাবে।-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭৬

বাহ্যিক পরিচর্যার আরেকটি বিষয় হল, বৃষ্টি বা কোনো কারণে কবরের মাটি সরে গেলে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি ভরাট করে দেওয়া যাবে। অনুরূপ কবরের চিহ্ন মুছে গেলে পাথরখন্ড বা কোনো কাঠ ইত্যাদি দিয়ে চিহ্নিতও করা যাবে। এরূপ চিহ্নিত করে রাখা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। দেখুন : সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩১৯৮

জীবিতদের প্রতি হাদীসের আরেকটি নির্দেশনা হল, কবর যিয়ারত করা। হাদীস শরীফে কবর যিয়ারতের প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা তা মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৬

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তা আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৬

তাই মৃত্যুর কথা স্মরণ হওয়ার দ্বারা একদিকে যেমন যিয়ারতকারীর ঈমানী ফায়েদা হয় তেমনি এতে মৃতেরও বড় উপকার হয়। কেননা মৃত ব্যক্তি যিয়ারতকারীর দুআ-ইস্তিগফার ও নেক আমলের ইসালে ছওয়াব দ্বারা উপকৃত হয়।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার মা ২০০৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর কিছু দিন...

প্রশ্ন

আমার মা ২০০৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর কিছু দিন পর বাবা এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করেন। ঐ বিধবা মহিলার বর্তমানে যিনি আমার সৎ মা আগের সংসারের একটি মেয়ে আছে। আমি কি ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটি আপনার মাহরাম নয় তার সাথে আপনার বিবাহ জায়েয। কেননা তার পিতা-মাতাও ভিন্ন এবং তার সাথে আপনার রক্তের কোনো সম্পর্কও নেই।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১; ফাতহুল কাদীর ৩/১২০; আননাহরুল ফায়েক ২/১৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার এক আত্মীয় কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। তাকে গোসল দেওয়ার...

প্রশ্ন

আমার এক আত্মীয় কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। তাকে গোসল দেওয়ার সময় হাতের নখগুলো বড় দেখে একজন তা কেটে দেয় এবং চুলও কেটে অাঁচড়ে দেয়। প্রশ্ন হল, মৃতের নখ বড় থাকলে তা কেটে দেওয়ার হুকুম কি?

উত্তর

মৃত ব্যক্তির নখ, চুল ইত্যাদি বড় থাকলেও তা কাটা যাবে না। এমনকি মৃতের শরীরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা বা চুলে সিঁথি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাই মৃতের নখ, চুল বড় থাকলেও তা না কেটে ঐ অবস্থায়ই তাকে দাফন করে দিবে।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এক মৃতের চুল আঁচড়ে দিতে দেখে বললেন, তোমরা মৃতের চুল কেন আঁচড়াচ্ছ? (কিতাবুল আছার ১/২৪২)

ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি মৃতের নাভীর নিচের পশম এবং নখ কাটা অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, অসুস্থ ব্যক্তির পরিবারের কর্তব্য হল, মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থায়ই তা পরিষ্কার করে ফেলা।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমরা মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়ে থাকি।...

প্রশ্ন

আমরা মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়ে থাকি। কিন্তু সেদিন একজন বলল যে, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়া বিদআত। তার একথা ঠিক কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করা উত্তম। সফওয়ান রাহ. বলেন, ‘কয়েকজন প্রবীন তাবেয়ী আমাকে বলেছেন যে, তারা সাহাবী গুযাইফ ইবনুল হারেস রা.-এর প্রচন্ড মৃত্যু যন্ত্রণার সময় তাকে দেখতে যান। তখন সাহাবী গুযাইফ রা. বললেন, তোমাদের মাঝে সূরা ইয়াসীন পড়তে পারে এমন কেউ আছে? তখন সালেহ ইবনে শুরাইহ আস সাকুনী ইয়াসীন পড়া শুরু করলেন। সফওয়ান রাহ. বলেন, প্রবীণ তাবেয়ীগণ বলতেন, মৃত্যু শয্যায় শায়িত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পড়া হলে মৃত্যু যন্ত্রণা লাঘব হয়।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬৯৬৯; আলইসাবা ৩/১৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় তিন তলাবিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে মসজিদের...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় তিন তলাবিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে মসজিদের জায়গায় বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘর বিদ্যমান। মসজিদ কমিটি বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘরের উপরে ছাদ দিয়ে তাতে ইমাম-মুয়াযযিনের পরিবার নিয়ে থাকা, পাঠাগার ও কমিটির মিটিংয়ের জন্য রুম তৈরি করতে চাচ্ছে। এটা করা বৈধ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ইস্তেঞ্জা খানা ও লাশ রাখার ঘরের উপর ইমাম-মুয়াযযিনের স্বপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা এবং মসজিদের অফিস কক্ষ ও ইসলামী বই-পুস্তকের জন্য পাঠাগার করা জায়েয হবে। তবে ঐ অংশের জন্য আলাদা সিড়ি রাখা উচিত। যাতে করে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) আমরা যখন মসজিদে নামায পড়ি তখন বৈদ্যুতিক বাল্ব-এর কারণে...

প্রশ্ন

ক) আমরা যখন মসজিদে নামায পড়ি তখন বৈদ্যুতিক বাল্ব-এর কারণে আমাদের নিজেদের ছায়া আমাদের সামনে পড়ে। আর তা আমরা নামাযে থেকে দেখতে পাই।

অতএব আমার প্রশ্ন হল, এই ছায়ার কারণে কি নামাযে কোনো ক্ষতি হবে?

খ) আমাদের মহল্লায় কয়েক মাস আগে এক মুরববী মারা যান। আমি তার জানাযার নামাযে শরিক হই। নামায শেষে দেখলাম যে, যিনি জানাযার নামায পড়িয়েছেন (ইমাম) তিনি সকল মুসল্লিকে ডেকে একত্র করলেন এবং সকলকে নিয়ে দরূদ শরীফ পড়ে তার পর লাশকে সামনে রেখে অল্প সময় দুআ করলেন। এরপর লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং লাশ দাফন করা হয়। দাফনের পর আরেকটি কাজ হুজুরকে করতে দেখি। তা হল, হুজুরের নির্দেশে চারজন লোক কবরের চার কোণায় দাঁড়ালেন। প্রত্যেকের হাতে ২ ইঞ্চি পরিমাণ গাছের ডাল। তার পর তারা চার কুল অর্থাৎ সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সূরা কাফিরূন পাঠ করেন। এরপর চার জন ডালগুলো চার কোণায় গেঁথে দিলেন। তারপর সকলে কবরস্থানের বাইরে গিয়ে দুআ করে চলে গেলেন। এখন আমার প্রশ্ন হল-

ক) জানাযার পর লাশকে সামনে রেখে দুআ করা সম্পর্কে কুরআন-হাদীস কী বলে? এ সম্পর্কে জানাবেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এরূপ কোনো ঘটনা আছে কি?

খ) চার কুল পড়ে কবরের চার কোণে ডাল গেড়ে দেওয়ার হুকুম কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেঈন থেকে কি এরূপ করা প্রমাণিত আছে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ক) না, ছায়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

খ) জানাযার পর দাফনের পূর্বে লাশের কাছে দরূদ পড়া ও দুআ করার প্রচলনটি বিদআত।

তদ্রুপ কবরের চার কোণে চার কুল পড়ে ডাল গেঁথে দেওয়ার বিষয়টিও সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিদআত।

কোনো হাদীসে বা সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এই দুই আমলের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই উভয় আমলই পরিহার করা জরুরি।

-মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৩; আলফাতাওয়াল বাযযাযিয়া ১/৮০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের এলাকার এক লোকের জানাযায় শরিক হই।...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের এলাকার এক লোকের জানাযায় শরিক হই। দাফন শেষ হওয়ার পর দেখলাম এক লোক মৃতের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আযান দিচ্ছে। তার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলল, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকেই এ আমলটি চলে আসছে। জানতে চাই, দাফনের পর মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আযান দেওয়ার প্রচলনটি কি ইসলামী শরীয়তে বৈধ?

উত্তর

দাফনের পর কবরের পাশে আযান দেওয়া বিদআত। এক্ষেত্রে আযান দেওয়া শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে দাফনের পর কবরে আযান দেওয়া প্রমাণিত নেই। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৩৫; ফাতাওয়াল কুবরা আলফিকহিয়্যাহ ২/১৭; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন হল আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। আর আমার শ্বশুর ইন্তেকাল...

প্রশ্ন

কিছুদিন হল আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। আর আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেছেন বছরখানেক আগে। আমার দাদা বাবাকে পুনরায় বিবাহ করাতে চাচ্ছেন এবং আমার বিধবা শ্বাশুড়িকেই বৌ হিসেবে নির্বাচন করেছেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এই বিবাহে কোন সমস্যা আছে কি না জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ছেলের বিধবা শ্বাশুড়িকে বিবাহ করা জায়েয। উভয় পক্ষ সম্মত হলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

-রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; ইলাউস সুনান ১১/২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি?

প্রশ্ন

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর

কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে এলাকাবাসীর কর্তব্য হল তার গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করা। এগুলো শরীয়ত কর্তৃক জীবিতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই দায়িত্ব আদায়ের সার্থে কেবলমাত্র সওয়াবের নিয়তেই তা করা উচিত। যে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির এলাকায় গোসলদাতা ব্যতীত এ কাজের উপযুক্ত অন্য কেউ না থাকে সেক্ষেত্রে তার জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয হবে না। অবশ্য মৃতের গোসল দেওয়ার মত অন্য লোক থাকলে সেক্ষেত্রে এর বিনিময় আদান-প্রদান নাজায়েয নয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ১৩/৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈকা মহিলার জানাযায় দেখলাম, তার পিতার উপস্থিতিতে তার পুত্র জানাযার...

প্রশ্ন

জনৈকা মহিলার জানাযায় দেখলাম, তার পিতার উপস্থিতিতে তার পুত্র জানাযার ইমামতি করছেন। অথচ তার পিতাও নামায পড়ানোর যোগ্য ছিলেন। এতে আমার মনে সংশয় সৃষ্টি হয় যে, বস্ত্তত এক্ষেত্রে নামায পড়ানোর বেশি হকদার কে? দয়া করে বিষয়টি জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

মৃতের পিতা ও পুত্র উভয়ে যদি ইমামতির যোগ্য হয় এবং দুজনেই উপস্থিত থাকে তবে সেক্ষেত্রে পিতাই জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার। অবশ্য এক্ষেত্রেও পিতা যদি মৃত ব্যক্তির পুত্রকে জানাযা পড়াতে অনুমতি দেন তাহলে তার জন্য জানাযা পড়াতে কেনো অসুবিধা নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতা অনুমতি দিয়ে থাকলে পুত্রের জানাযা পড়ানো অনুত্তম হয়নি।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৬৩৭০; কিতাবুল আছল ১/৪২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; ফাতহুল কাদীর ২/৮৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০০৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় কয়েকদিন আগে একজন মহিলা মারা গেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কয়েকদিন আগে একজন মহিলা মারা গেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে তার আত্মীয়স্বজনরা জানাযায় শরিক হওয়ার জন্য এসেছিলেন। মৃতের পরিবার অনেক বড়। আত্মীয়-স্বজন অনেক বেশি। আর তারা সম্পদশালীও। আগত আত্মীয়দের খানা খাওয়ানোর জন্য ঐ মহিলার স্বামী একটি গরু জবাই করে খানার ব্যবস্থা করেন। আর অনেকেই এখন এভাবে আয়োজন করে খানার ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঐ দিন আগত আত্মীয়দের জন্য এভাবে খানার আয়োজন করাটা বেদআত। তাদের এ কথা কতটুকু সঠিক? কুরআন-হাদীসের আলোকে প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

জানাযা ও দাফনের উদ্দেশ্যে দূর থেকে আগত আত্মীয়স্বজনের জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানাপিনার ব্যবস্থা করা নাজায়েয নয়। তবে এ ব্যবস্থা গ্রহণ শুধু এ ধরনের আত্মীয়স্বজনের প্রয়োজনে মেহমানদারির উদ্দেশ্যেই হতে হবে। মৃত্যু উপলক্ষে যেয়াফতের উদ্দেশ্যে না হতে হবে। কেননা কারো মৃত্যু উপলক্ষে যেয়াফতের উদ্দেশ্যে খানাপিনার আয়োজন করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা মৃতের বাড়িতে লোক সমাগম হওয়া এবং সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার আয়োজন করাকে ‘নিয়াহা’ (জাহেলীযুগের নিষিদ্ধ শোক-বিলাপ) গণ্য করতাম।-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/২৫২

প্রকাশ থাকে যে, দূর থেকে আগত আত্মীয়স্বজনের মেহমানদারির প্রয়োজনে খানাপিনার ব্যবস্থা করা যদিও জায়েয তথাপি এ সময় মৃতের পরিবার যেহেতু শোকাহত থাকে তাই মেহমানদারির দায়িত্ব তাদের উপর চাপানো উচিত নয়। বরং জানাযা ও দাফন শেষে দীর্ঘ সময় ঐ বাড়িতে অবস্থান না করাই বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে আগত আত্মীয়স্বজনদের উচিত নিজ উদ্যোগে মৃতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সাধ্য অনুযায়ী খানাপিনার এন্তেজাম করা। যেন তারা নিজেদের খানা প্রস্ত্তত করার ঝামেলা থেকেও বাঁচতে পারে।

-সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৫৫২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/৪৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার দাদির ১০ কাঠা জমি আছে, যা তিনি তার পিতা...

প্রশ্ন

আমার দাদির ১০ কাঠা জমি আছে, যা তিনি তার পিতা থেকে পেয়েছেন। তিনি গত বছর ঐ দশ কাঠা জমি মসজিদে দেওয়ার জন্য বড় চাচাকে ওসিয়ত করেছিলেন। এর কিছুদিন পর ছোট চাচা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। দাদি এখনো জীবিত। তাই তিনি উক্ত জমিটা বিক্রি করে ছোট চাচার চিকিৎসার জন্য দিতে চাচ্ছেন। তিনি ঐ জমিটা বিক্রি করতে পারবেন কি?

উত্তর

অসিয়ত কার্যকর হয় মৃত্যুর পর। তাই অসিয়তকারী চাইলে জীবদ্দশায় তা প্রত্যাহার করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার দাদি চাইলে ঐ জমিটি বিক্রি করে দিতে পারবেন। কেননা তার অসিয়ত এখনো কার্যকর হয়নি।

অবশ্য তার অন্য সম্পদ থাকলে মসজিদের জন্য কৃত অসিয়তটি বাতিল না করাই বাঞ্ছনীয় হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২২/৪২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

অনেকে বলে, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর কিছু সময় ধরে মৃতের...

প্রশ্ন

অনেকে বলে, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর কিছু সময় ধরে মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করতে হয়। আবার কেউ কেউ বলে, একটি উট জবাই করে তার গোশত কেটেকুটে বণ্টন করতে যতটুকু সময় লাগে কবরের পাশে ততটুকু সময় অপেক্ষা করতে হয়। সঠিক বিষয় জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের উভয় বক্তব্যই সঠিক। দাফনের পর কবরের পাশে কিছু সময় পর্যন্ত মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব। এটি হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।

উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। (অর্থাৎ আল্লাহ যেন তাকে ঈমানের উপর অটল রাখেন এবং সকল প্রশ্নের উত্তর দানের তাওফীক দান করেন।) কেননা এখনই সে জিজ্ঞাসিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৩)

আর উট জবাই করে গোশত বণ্টন করা পরিমাণ সময় অবস্থান করার কথা আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শামাসাহ আলমাহরী বলেন, আমর ইবনুল আস রা. যখন মুমূর্ষু অবস্থায় তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে কোনো বিলাপকারিনী এবং আগুন যেন আমার সঙ্গী না হয়। অতঃপর তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে তখন কবরে পর্যাপ্ত মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে (দুআ, তিলাওয়াত ও

ইস্তিগফার করার জন্য) অপেক্ষা করবে। যেন তোমাদের (তিলাওয়াত ও ইস্তিগফার-এর) মাধ্যমে আমার নিঃসঙ্গতা দূর হয় এবং আমার রবের ফেরেশতাদের জবাব দিতে পারি।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১/৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; ফাতহুল মুলহিম ১/২৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের গ্রামে ১৫-১৬ বিঘা জমির উপর ২০০ বছরের পুরাতন একটি...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে ১৫-১৬ বিঘা জমির উপর ২০০ বছরের পুরাতন একটি ওয়াকফিয়া কবরস্থান আছে। কবরস্থানের সব স্থানেই কবর। এ যাবত গ্রামবাসী গ্রামের মাদরাসা-স্কুল মাঠে কিংবা ঈদগাহে জানাযার নামায আদায় করছে। কিছুদিন আগে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ ঐ কবরস্থানের এক জায়গায় যেখানে ১৫-২০ বছর থেকে দাফন করা হয়নি। সেখানে জানাযার নামায আদায়ের জন্য সিমেন্ট দিয়ে পাকা মেঝে তৈরি করেছে। প্রশ্ন হল, এভাবে কবরের উপর মেঝে তৈরি করে জানাযার নামায আদায় করা জায়েয হচ্ছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরস্থানের বাইরে ঈদগাহে কিংবা মাদরাসায় মূল মাঠে জানাযার নামায পড়ার সুব্যবস্থা থাকলে কবরস্থানের ভিতর জানাযা আদায়ের পৃথক ব্যবস্থা করা উচিত হয়নি। কেননা ওয়াকফিয়া কবরস্থান কেবলমাত্র দাফনের জন্যই নির্ধারিত। অবশ্য পুরাতন কবরকে সমান করে দিয়ে তার উপর জানাযার নামায পড়লেও তা সহীহ হয়ে যাবে। সহীহ বুখারীতে আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, মসজিদে নববী যে স্থানে নির্মিত হয়েছে সেখানে কোনো এক সময় কবর ছিল। (দেখুন : সহীহ বুখারী ১/৬১)

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৭৯; শরহুল মুনইয়া ৫৬১; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার মা শেষ বয়সে আমার বাসাতেই থাকতেন। আমিই তার দেখাশোনা...

প্রশ্ন

আমার মা শেষ বয়সে আমার বাসাতেই থাকতেন। আমিই তার দেখাশোনা করতাম। তিনি অনেক দিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর এক মাস পূর্বে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং নানা রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তার বিবেক ঠিকমতো কাজ করত না। অতপর মা সে রোগেই মারা যান। তখন আমিই তার সেবা-শুশ্রূষা করি। অন্যান্য ভাইয়েরা শুধু মাঝেমধ্যে আসতেন। মা এতে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার পাঁচ ভরি স্বর্ণ আমাকে দিয়ে দেন। ভাইয়েরা বলছেন যে, আমি মাকে ফুসলিয়ে স্বর্ণ নিয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বর্ণ নেওয়া আমার জন্য জায়েয কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

আপনার মায়ের অন্যান্য ওয়ারিসগণ দিতে সম্মত না হলে ঐ স্বর্ণগুলো নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। কেননা মৃত্যু শয্যায় কোনো ওয়ারিসকে কোনো কিছু হেবা (দান) করলে সে হেবা গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ঐ স্বর্ণগুলোও ওয়ারিসদের মাঝে প্রত্যেকের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৬০; রদ্দুল মুহতার ৫/৬১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর পূর্বে আমাদের গ্রামে মৃতদের দাফনের...

প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর পূর্বে আমাদের গ্রামে মৃতদের দাফনের জন্য ২০ শতাংশ পরিমাণ একটি জমি ওয়াকফ করে কবরস্থান বানানো হয়। এ পর্যন্ত কিছু অংশ বাদে জমিটির বাকি অংশে মৃতদের দাফন করা হয়ে গেছে। হয়তবা এ বছর খালি অংশটুকুও ভরে যাবে।তাই প্রশ্ন হচ্ছে, পুরাতন কবরগুলো খনন করে তাতে নতুন করে দাফন করা দুরস্ত হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কবরস্থ লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সে স্থানে নতুন করে অন্য লাশ দাফন করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

উল্লেখ্য, পুরাতন কবরগুলোতে নতুন লাশ দাফন করার জন্য কবর খননের সময় আগের লাশের হাড় পাওয়া গেলে সেগুলো কবরের এক পাশে পৃথক করে রেখে দিবে কিংবা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দিবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/১০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আবদুল্লাহ আমার প্রতিবেশী। সামিয়া তার একমাত্র কন্যা। কিছুদিন আগে তার...

প্রশ্ন

আবদুল্লাহ আমার প্রতিবেশী। সামিয়া তার একমাত্র কন্যা। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছিল পাশের থানার এক লোকের সাথে। অনুষ্ঠান শেষে কনে নিয়ে ফেরার সময় বরের মাইক্রোবাসটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। বর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর কনে সামিয়া কুদরতিভাবে বেঁচে যায়। এই দুর্ঘটনার তিনদিন পরই উভয় পরিবার সামিয়াকে তার মৃত স্বামীর ছোটভাই সালমানের সাথে বিয়ে দিতে সম্মত হয়। এখন জানতে চাই, এমতাবস্থায় কি সামিয়ার উপর ইদ্দত পালন করা জরুরি? ইদ্দতের সময়ের ভেতরে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর কারণে সামিয়ার উপর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) আর তোমাদের মধ্যে যারা মারা যায় এবং স্ত্রীরদেরকে রেখে যায় এসব স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে।-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য বৈধ হবে না কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা। তবে যদি তার স্বামী মারা যায় তাহলে তার জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।-সহীহ বুখারী ১/১৭১; সহীহ মুসলিম ১/৪৮৭

অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিবাহ করল এবং তার সাথে সহবাস করার আগেই মারা গেল আর মহিলার মোহরও ধার্য করা হয়নি তাহলে মহিলা পূর্ণ মোহর পাবে এবং তার উপর ইদ্দত পালন করা আবশ্যক হবে। আর সে মীরাসও পাবে।-সুনানে আবি দাউদ, হাদীস : ২১১৪; জামে তিরমিযী ১/১৩৬

সুতরাং উক্ত মহিলার ইদ্দত চলা অবস্থায় স্বামীর ভাই অথবা অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না। যদি ইদ্দত অবস্থায় বিয়ে করে তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না।

কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইদ্দতের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের আকদ পাকা করার ইচ্ছাও করো না।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৫১, ২/৪৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

পাঁচ বছর আগে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন। তিনি ৩ ছেলে,...

প্রশ্ন

পাঁচ বছর আগে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন। তিনি ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে, মা, স্ত্রী ও ৫ ভাই রেখে যান। এ যাবত তার সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন হয়নি। এখন আমরা তা বণ্টন করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিসদের মাঝে কীভাবে বণ্টন করতে হবে?

উত্তর

মৃতের রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি থেকে প্রথমে তার কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতেহবে। এরপর তার শরীয়তসম্মত কোনো অসিয়ত থাকলে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকেতা আদায় করতে হবে। অতপর তার অবশিষ্ট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জীবিত ওয়ারিসদের মাঝেনিম্ন বর্ণিত হারে বণ্টন করতে হবে ।

১. মা : ১৬.৬৬%, ২. স্ত্রী : ১২.৫%, ৩. প্রত্যেক ছেলে : ১৫.৭৪০%, ৪. প্রত্যেক মেয়ে :৭.৮৭০%, ৫. ভাই : কোনো অংশ পাবে না।

এক্ষেত্রে মৃতের ছেলে থাকার কারণে মৃতের ভাই মীরাস পাবে না।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৮১; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার পিতা বেঁচে আছেন...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার পিতা বেঁচে আছেন এবং তার একটি ছেলেও রয়েছে। পিতা আলেম, ছেলেটিও মাদরাসায় পড়ে। তার জানাযার নামায তার পিতা পড়িয়েছেন। কিন্তু জানাযার পর কিছু লোক বলাবলি করছিল যে, ছেলের নামায পড়ানো উচিত ছিল। কারণ সে তার পিতার জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার। এখন জানতে চাচ্ছি যে, মৃত ব্যক্তির পিতা-পুত্রের মধ্যে তার জানাযার নামায পড়ানোর অধিক হকদার কে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতা যেহেতু আলেম তাই তার ইমামতি করা নিয়মানুযায়ী হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরপিতা ও ছেলে উভয়েই জানাযা পড়ানোর যোগ্য হলে পিতাই ইমামতির অধিক হকদার। তবে পিতাযদি মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে অবগত না হন আর পুত্র আলেম হয় সেক্ষেত্রে সে-ই ইমামতিরজন্য অগ্রগণ্য হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬১; রদ্দুল মুহতার ২/২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার দাদা অসিয়ত করেছেন যে, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার নাতি...

প্রশ্ন

আমার দাদা অসিয়ত করেছেন যে, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার নাতি আমার জানাযা পড়াবে।’ এখন তিনি শয্যাশায়ী। মৃত্যুর পর তার এই অসিয়ত পূর্ণ করা কি জরুরি? উল্লেখ্য, তার যোগ্য ছেলে আছে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু মৃতের যোগ্য ছেলে আছে তাই আপনার দাদার ঐ অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি নয়। বরং শরীয়ত কর্তৃক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার ছেলেই জানাযার ইমামতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। হ্যাঁ, ইমামতির হকদার ব্যক্তি যদি নাতিকে ইমামতির অনুমতি দেয় তবে সে তা করতে পারবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; ফাতহুল কাদীর ২/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৪৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার চাচা তার একটি দোতলা বাড়ি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে...

প্রশ্ন

আমার চাচা তার একটি দোতলা বাড়ি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। ওয়াকফ দলিলে লিখেছেন, বাড়িটি ভাড়া দিয়ে যে আয় হবে তা মাদরাসার কল্যাণে ব্যয় হবে। দলিলে এ শর্ত লিখেছেন যে, যত দিন জীবিত থাকবেন ততদিন তিনি দোতলার একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করবেন।

তার মৃত্যুর পর আত্মীয়দের কেউ তা ব্যবহার করতে পারবে না। তা মাদরাসার কল্যাণে ব্যয় হবে। আমার প্রশ্ন হল, চাচা একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করবেন এ শর্তে ওয়াকফ সহীহ হয়েছে কি? ওয়াকফ হয়ে থাকলে তিনি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতে পারবেন কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার চাচার ঐ দোতলা বাড়িটি মাদরাসার জন্য ওয়াকফ করা সহীহ হয়েছে। আর এক্ষেত্রে চাচার জীবদ্দশায় বাড়িটির একটি ফ্ল্যাট নিজে ব্যবহার করার শর্ত করাও জায়েয হয়েছে।

সুতরাং তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন দোতলার একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতে পারবেন। তার মৃত্যুর পর ঐ ফ্ল্যাটটিও পূর্ণরূপে মাদরাসার হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/৩৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/২২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৯৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৮৪; ইলাউস সুনান ১৩/১৩৯, ১৪৪; ফাতহুল বারী ৫/৪৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একজন ব্যক্তি এক জায়গায় শিক্ষকতা করতেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি বাড়ি...

প্রশ্ন

একজন ব্যক্তি এক জায়গায় শিক্ষকতা করতেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি বাড়ি যাওয়ার পর তার অভিভাবকগণ আত্মীয় এক মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে পড়িয়ে দেন। বিয়ের আকদের পরই তিনি আবার চাকরিস্থলে চলে আসেন। ঐ মেয়ের সাথে তার স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণ, এমনকি নির্জনবাসও হয়নি। কিন্তু চাকরিস্থলে আসার পর তার হঠাৎ ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, বিয়ের পর তাদের মাঝে তো নির্জনবাসও হয়নি। তাই এখন তার স্ত্রী কি মোহর পাবে? যদি পায় তাহলে পুরোটা পাবে, না আংশিক? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির স্ত্রী পূর্ণ মোহরই পাবে। কেননা বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর কেউ মারা গেলে যদিও তা নির্জনবাসের পূর্বে হয় স্ত্রী পুরো মোহরই পায়।

-আল আওসাত ৮/৩৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৪; ফাতহুল কাদীর ৩/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩; রদ্দুল মুহতার ৩/১০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে যে, কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়-স্বজনদের...

প্রশ্ন

বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে যে, কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতির জন্য মাইয়েতের গোসল, কাফন-দাফন, জানাযা ইত্যাদি বিলম্ব করা হয়।

জানার বিষয় হল, মাইয়েতের নিকটাত্মীয়ের জন্য কাফন-দাফন বিলম্ব করা যেতে পারে কি না এবং এভাবে প্রচলিত নিয়মে বিলম্ব করা বৈধ হবে কি না? উত্তর প্রদান করে উপকৃত করার আবেদন রইল।

উত্তর

কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুত সম্পাদন করা উচিত। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আর মৃতের নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদেরকে তার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া মুস্তাহাব। যাতে তারা জানাযায় শরিক হতে পারে। তবে কোনো আত্মীয়ের উপস্থিতি বা তাদের দেখানোর জন্য মৃতের দাফনে বিলম্ব করা অনুচিত। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা-আত্মীয় স্বজন যত দূরেই থাকুক, মৃতের মুখ দেখানোর অপেক্ষায় গোসল, কাফনদাফন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিনও বিলম্ব করা হয়-যা কোনো ক্রমেই শরীয়তসম্মত নয়।

-সহীহ বুখারী ১/১৭৫; ফাতহুল বারী ৩/২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৮৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানুুসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা...

প্রশ্ন

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানুুসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা হল, ‘যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ উভয় কিতাবে বলা হয়েছে যে, ইমাম নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি নাসায়ী শরীফে হাদীসটি খুঁজে পাইনি। মেহেরবানী করে জানাবেন যে, হাদীসটি নাসায়ী শরীফের কোথায় আছে। আর যদি নাসায়ী শরীফে না থাকে তাহলে হাদীসের কোন কিতাবে আছে আর হাদীসটির হুকুম কী?

উত্তর

উক্ত হাদীসটি ইমাম নাসায়ী রাহ. তাঁর ‘সুনানে কুবরা’ তে ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াললাইলা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হাদীস নং ৯৯২৮। আর দরসে নেযামীতে পঠিত নাসায়ী শরীফ নামে যে প্রসিদ্ধ কিতাব রয়েছে তা সুনানে কুবরা থেকে বাছাইকৃত সংকলন। এর নাম ‘আলমুজতাবা’। এই কিতাবে ওই হাদীসটি নেই। হাদীসটির একাধিক সনদসহ আলমুজামুল কাবীর, তবারানী (হাদীস : ৭৫৩২) ও আলমুজামুল আওসাত, তবারানী (হাদীস : ৮০৬৪) উল্লেখ আছে।

ইমাম মুনযিরী রাহ. হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বলেন, ‘ইমাম নাসায়ী রাহ. এবং তবারানী রাহ. একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি সনদ সহীহ। (আততারগীব ওয়াততারহীব হাদীস : ২৩৭৬)

মাজমাউয যাওয়াইদে একটি সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলা হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৮)

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৫৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার পিতাকে তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু কিছু জমি হেবা (দান)...

প্রশ্ন

আমার পিতাকে তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু কিছু জমি হেবা (দান) করেছিল। রেজিস্ট্রিও সম্পন্ন হয়েছে এবং জমির দখলও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পর ঐ লোক (হেবাকারী) মারা যাওয়ার পর তার ওয়ারিসরা ঐ জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছে। জানতে চাই, তাদের এ দাবি শরীয়তসম্মত কি না? আমাদের জন্য কি তা ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু জমিটির হেবা সম্পন্ন হয়েছে এবং দাতা জমিটি আপনার পিতাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন সুতরাং দাতার ওয়ারিসদের জন্য এখন তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করা বৈধ নয় এবং তাদের দাবি অনুযায়ী তা ফিরিয়ে দেওয়া আপনাদের উপর জরুরি নয়। কেননা, যেসব ক্ষেত্রে হেবা সম্পন্ন হওয়ার পর তা ফিরিয়ে নেওযা যায় না। তন্মধ্যে একটি হল, হেবা সম্পন্ন হওয়ার পর হেবাকারী বা হেবাগ্রহীতার ইন্তেকাল হওয়া।

খলিফাতুল মুসলিমীন উমর রা. বলেন, মাহরাম আত্মীয় ছাড়া অন্য কাউকে হেবা করলে সে হেবা ফিরিয়ে নেওয়া যায় যদি হেবার বিনিময় গ্রহণ না করে থাকে কিংবা দু’জনের কারো ইন্তেকাল না হয়ে থাকে।

-শরহু মাআনিল আছার ২/২২৩; ইলাউস সুনান ১৬/১২২; রদ্দুল মুহতার ৫/৭০১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার পিতা তার এক দরিদ্র বন্ধুর জন্য কিছু সম্পদের অসিয়ত...

প্রশ্ন

আমার পিতা তার এক দরিদ্র বন্ধুর জন্য কিছু সম্পদের অসিয়ত করেছিলেন। ঘটনাক্রমে ঐ বন্ধু পিতার পূর্বেই মারা যান। কিছুদিন পর পিতাও মারা যান। এখন ঐ বন্ধুর ওয়ারিসগণ অসিয়তের সম্পত্তি দাবি করছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের দাবি কি সহীহ ?

উত্তর

অসিয়ত কার্যকর হওয়ার জন্য অসিয়তকারীর ইন্তেকালের সময় যার জন্য অসিয়ত করা হয়েছে সে জীবিত থাকা শর্ত। যদি অসিয়তকারীর আগে তার ইন্তেকাল হয়ে যায় তাহলে কৃত অসিয়ত বাতিল হয়ে যায়।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতার (অসিয়তকারীর) পূর্বেই যেহেতু ঐ বন্ধু (যার জন্য অসিয়ত করা হয়েছিল)

ইন্তেকাল করেছে তাই অসিয়তটি বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং তার ওয়ারিসদের জন্য অসিয়তের সম্পত্তি দাবি করা বৈধ নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত ব্যক্তিকে মাটি দেওয়ার পর চার কোণে চার জন খেজুর...

প্রশ্ন

মৃত ব্যক্তিকে মাটি দেওয়ার পর চার কোণে চার জন খেজুর গাছের ডাল বা অন্য গাছের ডাল গেড়ে দেওয়া শরীয়তসম্মত কি না?

উত্তর

কবরে খেজুর গাছের ডাল পুঁতে দেওয়া রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরে আযাব হচ্ছে জানতে পেরে একটি খেজুর গাছের ডালকে দুই টুকরা করে কবর দুটিতে গেড়ে দেন। (সহীহ বুখারী ১/১৮২)

অন্য বর্ণনায় আছে, সাহাবী বুরাইদা আসলামী রা. মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে যান, যেন তার কবরে খেজুর গাছের দুটি ডাল গেড়ে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী ১/১৮১)

এসব বর্ণনা দ্বারা কবরে খেজুর বা অন্য কোনো গাছের ডাল গেড়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তাই কেউ চাইলে মৃত ব্যক্তিকে মাটি দেওয়ার পর কবরের উপর এক দুটি ডাল গেড়ে দিতে পারে। কিন্তু কবরের চার কোণায় ডাল দেওয়া আবার চারজন ব্যক্তি দ্বারা একাজ করানো দলীলবিহীন অতিরঞ্জিত কাজ। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

প্রকাশ থাকে যে, হাদীস ও আছারে কবরে যা কিছু করার কথা বলা হয়েছে তাই করা যাবে। নিজ থেকে এর অতিরঞ্জণ কোনো কিছু করাই বিদআতের শামিল।

-সহীহ বুখারী ১/১৮১; ইলাউস সুনান ৮/৩৪৪; তুহফাতুল মুহতাজ ৪/১৯০; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; উমদাতুল কারী ৩/১২১; হাশিয়াতুস সারী ১/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার চাচা ঢাকায় চাকরি করতেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল...

প্রশ্ন

আমার চাচা ঢাকায় চাকরি করতেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। ফলে সেখানে একবার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নামাযে চাচার ছেলেরা উপস্থিত ছিল। গ্রামের বাড়িতে লাশ আনার পর তার অন্যান্য আত্মীয়রা দ্বিতীয়বার জানাযার নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, তাদের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা আদায় করা জায়েয হয়েছে কি?

উত্তর

যে কোনো মাইয়েতের জন্য একবার জানাযা পড়াই শরীয়তের হুকুম। একাধিকবার জানাযা আদায় করা শরীয়তসম্মত নয়। অবশ্য কখনো যদি মৃতের অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে তাদের অনুমতি ছাড়া জানাযা হয়ে যায় তাহলে তাদের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অনুমতি আছে।

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও প্রথম জামাতে যেহেতু মৃতের ছেলেরা শরিক ছিল তাই আত্মীয়দের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়া ঠিক হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের বক্তব্য ও আমল দ্বারা বিষয়টি প্রমানিত। নাফে রা. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. যদি জানাযার নামায হয়ে যাওয়ার পর উপস্থিত হতেন তাহলে (মৃতের জন্য) দুআ করেই চলে আসতেন। দ্বিতীয়বার জানাযা পড়তেন না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৫১৯)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম রাহ. বলেন, এক মৃত ব্যক্তির দুবার জানাযা পড়া যায় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/৪২০)

অপর বর্ণনায় এসেছে, বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. যদি কখনো জানাযার নামায না পেতেন তাহলে মৃতের জন্য কেবল ইস্তিগফার করতেন। (প্রাগুক্ত)

সুতরাং যে কোনো মাইয়্যেতের জানাযা কেবল একবারই পড়া যাবে। আর যারা জানাযা পায়নি তারা সাহাবায়ে কেরামের নিয়ম অনুযায়ী মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার করবে। এটিই শরীয়তের শিক্ষা।

-ইলাউস সুনান ৮/২৮৮; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২১৮; আযযখীরা ২/৪৭২; কিতাবুল উম্ম ১/৩১৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/২২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় কবরে লাশ রেখে প্রায় ২ হাত উঁচুতে বাঁশ...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কবরে লাশ রেখে প্রায় ২ হাত উঁচুতে বাঁশ দেওয়া হয়। লোকদের ধারণা, সওয়াল-জওয়াবের জন্য মুর্দাকে যখন বসানো হবে তখন বসতে গিয়ে যেন মাথা বাঁশে না লাগে। ভালোভাবে যেন বসতে পারে। আর গভীরতার ক্ষেত্রে কেউ বেশি গভীর করে কেউ কম। তাই জানতে চাই, ক) কবরের গভীরতার পরিমাণ কতটুকু হওয়া উচিত? খ) মুর্দা বসতে পারে এ পরিমাণ কবরে ফাঁকা রাখা ঠিক কি না?

উত্তর

ক) কবরের গভীরতা এ পরিমাণ হওয়া উচিত যেন লাশের দুর্গন্ধ না ছড়াং এবং হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকেও লাশ হেফাযত থাকে। তাই অন্তত কোমর পরিমাণ গভীর করা উচিত। সম্ভব হলে পূর্ণ দেহ পরিমাণ গভীর করা উত্তম। খলীফাতুল মুসলিমীন উমর রা. ইন্তেকালের আগে তাঁর কবর একজন মানুষের দেহের দৈর্ঘ্য পরিমাণ গভীর করার অসিয়ত করেছিলেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/৩২৪)

খ) কবরে শায়িত ব্যক্তিকে বসানো, সওয়াল-জওয়াব করা এসব বরযখ নামক এক অদৃশ্য জগতে হবে। কাফন-দাফনের বিধানাবলির সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বরযখে মাইয়্যিত কিভাবে বসবে, ফেরেশতারা কোথায় থাকবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর হুকুম ও কুদরতেই এসব কিছু হবে। সুতরাং কবরে বেশি ফাঁকা না রেখে বাঁশগুলো লাশের কাছাকাছি রাখা নিয়ম।

-শরহুল মুহাযযাব ৫/২৫১; আলমুগনী ৩/৪২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৩; ইমদাদুল আহকাম ১/৮৩৯; খায়রুল ফাতাওয়া ৩/১৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় মৃতকে কবরে চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং শুধু...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মৃতকে কবরে চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং শুধু মুখ কেবলার দিকে করে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিটি কি ঠিক? নাকি ডান দিকে কাত করে শোয়াতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মৃতকে চিৎ করে কবরে রাখা সুন্নত নিয়ম নয়। বরং ডান কাত করে সীনা কেবলামুখী করে শোয়ানোই সুন্নত। আর এভাবে শোয়ানোর জন্য এমনভাবে কবর বানানো উচিত, যেন লাশ রাখার পর তা সহজেই কেবলার দিকে কাত হয়ে যায়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৩; আলইখতিয়ার ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ২/৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪২৮; আহকামে মাইয়্যেত ২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

সাত বছর বয়সের একটি মেয়েকে তার খালাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে...

প্রশ্ন

সাত বছর বয়সের একটি মেয়েকে তার খালাত ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে দাম্পত্যসুলভ কোনো আচরণ তাদের মাঝে হয়নি। মেয়েটির বয়স এখন আট বছর। এক সপ্তাহ পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এখন কি তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে?

উত্তর

হ্যাঁ, তাকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন-(তরজমা) আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী রেখে যায় তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। (সূরা বাকারা (২) : ২৩৪)

এই হুকুম প্রাপ্তবয়স্কা ও অপ্রাপ্তবয়স্কা সব ধরনের স্ত্রীর জন্য প্রযোজ্য, তাদের মাঝে দাম্পত্যসুলভ আচরণ হোক বা না হোক। হযরত আতা রাহ. বলেন, ‘যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে সে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। যদিও স্বামীর সাথে তার সহবাস না হয় এবং সে দুগ্ধপোষ্য বা সদ্য দুগ্ধছাড়ানো শিশুও হয়।’

হযরত মামার বলেন, আমাকে এক লোক সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি হযরত হাসান বসরী রাহ.কেও অনুরূপ বলতে শুনেছেন।

মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১২০৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার এক পরিচিতজনের দাদার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। তার পিতা...

প্রশ্ন

আমার এক পরিচিতজনের দাদার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। তার পিতা তার দাদার আগেই মারা গেছেন। প্রশ্ন হল, চাচাদের সাথে সেও তার দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ পাবে কি না? জনৈক এডভোকেট বলেছেন, অংশীদার হবে। এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা কী?

উত্তর

শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ বিধান হল, মৃত্যুর সময় কোনো ছেলে বেঁচে থাকলে নাতী-নাতনী দাদার মীরাছ পায় না। এক্ষেত্রে মৃতের অধিক নিকটবর্তী হওয়ায় পুত্র মীরাছের হকদার হয়। শরীয়তে মীরাছ বণ্টনের মৌলনীতি হল, মৃতের কাছের আত্মীয় থাকাবস্থায় দূরের আত্মীয় মীরাছ পায় না। কুরআন মজীদে আছে-পুরুষের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়রা রেখে যায় আর নারীদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়রা রেখে যায়। সে (পরিত্যক্ত) সম্পদ কম হোক বা বেশি। এ অংশ (আল্লাহর তরফ থেকে) নির্ধারিত। (সূরা নিসা : ৭)

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মীরাছ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমরা প্রথমে যাদের অংশ সুনির্ধারিত তাদের অংশ দিয়ে দাও। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ মৃতের নিকটতর পুরুষকে দাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৭৩৫)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা হল, মীরাছ বণ্টন হবে নিকটতর আত্মীয়দের মাঝেই। নিকট আত্মীয় থাকাবস্থায় দূরের আত্মীয় মৃতের সম্পদ পাবে না। এছাড়া বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রা. যার সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যায়েদ হল মীরাছের বিষয়ে উম্মতের মাঝে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী। (মুসনাদে আহমদ ৩/১৮৪) তিনি বলেন, দাদার সন্তানরা থাকতে নাতী দাদার মীরাছ পাবে না। (সহীহ বুখারী ২/৯৯৭)

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও নাতী দাদার মীরাছ পাবে না। (শরহু মুখতাসারিত ত হাবী ৪/৯২; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩০৭)

প্রকাশ থাকে যে, যদি কোনো ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার কোনো ছেলে সন্তানাদি রেখে মারা যায় এবং তারা অসচ্ছল থাকে তাহলে এক্ষেত্রে দাদার উচিত তাদের জন্য সম্পদের কিছু অংশের ওসীয়ত করে যাওয়া। অবশ্য কেউ যদি নিজ কর্তব্যে অবহেলা করে ওসীয়ত না করে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তারা সম্পদের হকদার হবে না।

-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৬/১৪; হামারে আয়েলী মাসাইল পৃ. ২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈকা মহিলার স্বামী সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করত। গত বছর...

প্রশ্ন

জনৈকা মহিলার স্বামী সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করত। গত বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখে ঐ দেশে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পায়নি। তাই ইদ্দতের সময় যা কিছু করতে হয় তা না করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ সে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়েছে। সে কি মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর ইদ্দত পালন করবে? উল্লেখ্য, উক্ত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা নয়।

উত্তর

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই স্ত্রীর ইদ্দত শুরু হয়ে যায় চাই স্ত্রী স্বামীর মৃত্যু সম্পর্কে অবগত থাকুক বা না থাকুক। তাই প্রশ্নোক্ত মহিলা স্বামীর মৃত্যুসংবাদ না পেলেও এবং ইদ্দতকালীন নিয়মকানুন পালন না করলেও মৃত্যুর পর থেকেই তার ইদ্দতের হিসাব হবে। বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরূক রাহ. বলেছেন, ‘‘স্ত্রীর অজান্তে স্বামী মৃত্যুবরণ করলে কিংবা স্ত্রীকে তালাক দিলে মৃত্যু ও তালাকের দিন থেকে ইদ্দত গণনা শুরু হবে।’’ তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে। মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর নতুন করে ইদ্দত পালন করতে হবে না।

-সূরা বাকারা : ২৩৪; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১০/১৩১; শরহু মুখতাসিরুত তাহাবী ৫/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ইজতেমার ময়দানে দেখা যায়, একই সাথে একাধিক মাইয়্যেতের জানাযার নামায...

প্রশ্ন

ইজতেমার ময়দানে দেখা যায়, একই সাথে একাধিক মাইয়্যেতের জানাযার নামায পড়া হয়। এভাবে কি একাধিক ব্যক্তির জানাযা এক সাথে পড়া যায়? যদি পড়া যায় তাহলে বালেগ পুরুষ/মহিলা ও নাবালেগ ছেলে/মেয়ের জানাযা একসাথে পড়লে কোন দুআটি পড়তে হবে?

উত্তর

সম্ভব হলে প্রত্যেক মাইয়্যেতের জন্য পৃথক পৃথক জানাযা পড়া ভালো। তবে একসাথে একাধিক মাইয়্যেতের জানাযার নামায পড়াও জায়েয আছে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী নাফে’ রাহ. বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. একসাথে নয়জনের জানাযার নামায পড়েছেন। সেদিন জামাতের ইমাম ছিলেন হযরত সাঈদ ইবনুল আস রা. এবং মুসল্লীদের মাঝে ইবনে ওমর রা. ও আবু হুরায়রা রা., আবু সাঈদ রা. ও আবু কাতাদা রা. (প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবীগণ) উপস্থিত ছিলেন।

একাধিক মাইয়্যেতের জানাযা একসাথে আদায় করলে এবং বালেগ-নাবালেগ উভয় ধরনের মাইয়্যেত থাকলে বালেগের নির্দিষ্ট দুআ এবং নাবালেগের নির্দিষ্ট দুআ পড়তে হবে।

-সুনানে নাসায়ী ১/২১৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/২৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩২৫; সুনানে বায়হাকী ৪/১৯৪; আলইসতিযকার ২/৫৬৩; ইলাউস সুনান ৮/২৮০, ৩৬৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫৭; মাবসূত, সারাখসী ২/৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৩৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয় বললেন,...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয় বললেন, মরহুমের নখগুলো বড় হয়ে গেছে। তা কেটে দিন। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ কাজটি কি ঠিক?

উত্তর

মৃত ব্যক্তির চুল, নখ বড় থাকলেও তা কাটা মাকরূহ। এক্ষেত্রে মৃতের পরিবারবর্গের উচিত, মৃত্যুর পূর্বেই ঐসব পরিষ্কার করে দেওয়া।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; কিতাবুল আছার ৬৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭/১৩৯; আলমুজামুল কাবীর, আওসাত ৫/৩৪৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫৭৯; ফাতহুল কাদীর ২/৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার মহল্লার এক মহিলার ইন্তেকালের পর স্বামী তাকে দেখতে আসলে...

প্রশ্ন

আমার মহল্লার এক মহিলার ইন্তেকালের পর স্বামী তাকে দেখতে আসলে লোকজন তাকে দেখতে দেয়নি এবং তারা বলে, স্বামীর জন্য তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা জায়েয নেই। জানতে চাই, স্ত্রীর ইন্তেকালের পর স্বামী স্ত্রীর চেহারা দেখতে পারে কি না? তেমনিভাবে স্বামীর ইন্তেকালের পর স্ত্রী তার চেহারা দেখতে পারবে কি?

উত্তর

মৃত স্ত্রীর চেহারা স্বামী দেখতে পারবে। তদ্রূপ মৃত স্বামীর চেহারাও স্ত্রী দেখতে পারবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটিকে তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখতে না দেওয়া অন্যায় হয়েছে।

-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ৭৭; ইলাউস সুনান ৫/২২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪০৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের গ্রামে কোনো মানুষ মারা গেলে পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে ঘুরে ঘুরে...

প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে কোনো মানুষ মারা গেলে পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে ঘুরে ঘুরে মাইকে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনানো হয়। এবং তার জানাযা নামাযে শরিক হওয়ার জন্য আহবান করা হয়। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ কাজটি কি বৈধ?

উত্তর

কেউ মারা গেলে তার মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা এবং জানাযার এলান করা জায়েয আছে। প্রয়োজনে মাইক দিয়েও প্রচার করা যাবে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকবে জানাযায় শরিক হওয়ার জন্য মানুষকে আহবান করা। তবে এতে মৃতের গুণগান প্রচার করা যাবে না। কেননা, হাদীসে মৃতের গুণগাণ ও বড়ত্ব বর্ণনা করে এলান করতে নিষেধ করা হয়েছে।

-সহীহ বুখারী ১/১৬৭; ফাতহুল বারী ৩/১৪০; উমদাতুল কারী ৭/২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

এক ব্যক্তি মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার কারণে তিনি শুয়ে মাথার ইশারায় নামায আদায় করেন। এভাবে তিনদিন নামায আদায় করার পর বাকি দুদিন মাথার ইশারা করেও নামায পড়তে পারেননি। কারণ এ দুদিন তার অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তিনি মাথাসহ শরীরের কোনো অঙ্গ নড়াচড়া করতে পারেননি। তবে তার হুঁশ ছিল। পঞ্চমদিন মৃত্যুবরণ করেন। প্রশ্ন হল, যে দুদিন নামায পড়তে পারেননি সে দুদিনের নামাযের ফিদয়া দিতে হবে কি না?

উত্তর

শুয়ে মাথা দ্বারা ইশারা করাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে নামায আদায় করা ফরয থাকে না। তাই লোকটির ঐ দুদিনের নামায কাযা পড়তে না পারার কারণে ফিদয়া দেওয়া লাগবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৭; মারাকিল ফালাহ ২৩৬; রদ্দুল মুহতার ২/৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৭০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একাধিক জানাযা একত্রিত হলে নামায পড়ার পদ্ধতি কী হবে? প্রত্যেকটির...

প্রশ্ন

একাধিক জানাযা একত্রিত হলে নামায পড়ার পদ্ধতি কী হবে? প্রত্যেকটির জন্য পৃথকভাবে নামায পড়া আবশ্যক? না একসাথে পড়ারও সুযোগ আছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

একাধিক জানাযা একত্র হলে প্রত্যেকটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামায পড়া উত্তম। তবে সবগুলো একত্র করে একসাথে নামায পড়ে নেওয়ারও অবকাশ আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ প্রান্তরে একত্রে দশ-দশজন শহীদের জানাযা নামায পড়িয়েছেন। হযরত ওসমান বিন আফফান রা., আবদুল্লাহ বিন ওমর রা ও হযরত আবু হুরায়রা রা. প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকেও একাধিক মাইয়্যেতের একত্রে জানাযা পড়ানো প্রমাণিত আছে।

-সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ১০৯; মারাসীলে আবু দাউদ ৪২৭-৪৩৫; শরহু মাআনিল আছার ৩২২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৪৮, হাদীস : ৩২৮২২; মুয়াত্তা মালেক ১/২৩০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪৬৫; সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪/৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর একান্তে সাক্ষাতের পূর্বেই যদি স্বামী মৃত্যুবরণ করে...

প্রশ্ন

বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর একান্তে সাক্ষাতের পূর্বেই যদি স্বামী মৃত্যুবরণ করে এবং মহরও নির্ধারিত থাকে তাহলে কি স্ত্রী পূর্ণ মহর পাবে, না নির্ধারিত মহরের অর্ধেক পাবে?

উত্তর

নির্জনবাসের আগেও স্বামী-স্ত্রীর কোনো একজন মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী নির্ধারিত মহরের পুরোটাই পাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৪, ৫৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ৩/১০২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

সাবেরা খাতুন নামে একজন মহিলা নিঃসন্তান অবস্থায় ১৯৯৭ ঈ. সালে...

প্রশ্ন

সাবেরা খাতুন নামে একজন মহিলা নিঃসন্তান অবস্থায় ১৯৯৭ ঈ. সালে ইন্তেকাল করেন। তার স্বামী পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। তার মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী ও তাদের উর্ধ্বতন নারী-পুরুষ এবং তার চাচা, ফুফু সকলেই পূর্বে মারা গেছেন।

সাবেরা খাতুনরা দুই ভাই, দুই বোন। বোন হাজেরা খাতুন। বড় ভাই ইউনুস আলী ও ছোট ভাই দানিশ। বোন হাজেরা খাতুন ও বড় ভাই ইউনুস আলী সাবেরা খাতুনের পূর্বেই মারা গেছেন। মৃত্যুকালে হাজেরা খাতুন এক ছেলে এবং ইউনুস আলী তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। এরা সবাই বর্তমানে জীবিত রয়েছেন।

ছোট ভাই দানিশ সাবেরা খাতুনের পর মারা যান। দানিশের স্ত্রী স্বামীর পূর্বেই মারা গেছেন। দানিশ দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। ছেলেমেয়ে সকলেই জীবিত রয়েছে। এখন সাবেরা খাতুনের সম্পদের বণ্টন কীভাবে হবে?

উত্তর

সাবেরা খাতুনের স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় সম্পদ থেকে প্রয়োজন হলে তার কাফন-দাফনের খরচ দিতে হবে। এরপর মৃতের কোনো ঋণ থাকলে তা আদায় করতে হবে। অতপর শরীয়তসম্মত কোনো অসীয়ত থাকলে অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে তা পূরণ করতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সকল সম্পদ প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মৃতের (মহিলার) ছোট ভাই দানিশ একাই পাবেন। কারণ মহিলার মৃত্যুর সময় দানিশই তার সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় ছিলেন। অন্য আত্মীয়স্বজন যারা জীবিত ছিলেন তারা কেউ দানিশের সমস্তরের নয়। তাই বোনের সমুদয় সম্পদ ভাই দানিশ পাবেন। আর এখন যেহেতু দানিশ বেঁচে নেই তাই তার সূত্রে এ সম্পদ তার জীবিত ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টন হয়ে যাবে প্রত্যেক ছেলে (সাবেরা খাতুনের ভাতিজা) ২৮.৫৭১ করে পাবে এবং প্রত্যেক মেয়ে (সাবেরা খাতুনের ভাতিজি) ১৪.২৮৫ করে পাবে।

সূরা নিসা : ১৭৬; সুনানে আবু দাউদ ২/৪০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৫১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৪৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২০৭, ৩৩৭; কিতাবুল মাবসূত ২৯/১৪০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের এবং হযরত আনাস বিন নযর রা....

প্রশ্ন

হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের এবং হযরত আনাস বিন নযর রা. কোন যুদ্ধে শহীদ হন তাদের শাহাদাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর

তাঁরা দু’জনই উহুদ-যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। হযরত মুসআব রা. ইসলাম গ্রহণের আগে অত্যন্ত বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর দুনিয়ার আরাম-আয়েশ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন। তিনিই ওই সাহাবী, যার জন্য পূর্ণ শরীর আবৃতকারী কাফনও ছিল না। পায়ের দিক ইযখির ঘাস দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

আনাস বিন নযর রা. বদর-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তাই উহুদ-যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে হযরত সাদ ইবনে মুআয রা.-এর সাথে দেখা হলে তাকে বললেন, হে সাদ! আমি উহুদের ঐ প্রান্ত থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। এ যুদ্ধেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শরীরে এত বেশি আঘাত পেয়েছিলেন যে, তার লাশ চেনা যাচ্ছিল না। তাঁর বোন আঙ্গুলের নখ বা তিলক দেখে তাঁকে সনাক্ত করেছিলেন।

-সহীহ বুখারী ২/৫৭৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে ধানক্ষেতে একটি লাশ পাওয়া যায়। লাশটি এতই নরম...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে ধানক্ষেতে একটি লাশ পাওয়া যায়। লাশটি এতই নরম ছিল যে, ডলে ডলে গোসল দিতে গেলে চামড়া খসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে লাশকে গোসল দেওয়া কি জরুরি? যদি জরুরি হয় তাহলে কীভাবে গোসল দিবে?

উত্তর

এ ধরনের নরম লাশকেও গোসল দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে শরীরের উপর শুধু পানি ঢেলে দিবে। ডলে ডলে ধোয়ার প্রয়োজন নেই।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮; মারাকিল ফালাহ ৩১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার আব্বা আমার ফুফা থেকে বিশ ডিসিম জমি ক্রয় করেছিলেন।...

প্রশ্ন

আমার আব্বা আমার ফুফা থেকে বিশ ডিসিম জমি ক্রয় করেছিলেন। তবে তা রেজিষ্ট্রি করা হয়নি। নিকটাত্মীয় ও বিশ্বস্ত মনে করে টাকা দিয়েছেন এবং এর সাক্ষীও রয়েছে অনেক। জমিটি প্রায় ১৫ বছর ধরে আব্বার দখলে আছে। কিন্তু পরে ফুফা তা বিক্রির কথা অস্বীকার করেন। আর টাকা নেয়ার কথাও অস্বীকার করেন। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপর ওয়ারিশগণ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি।

তার জানাযায় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে যে, অমুক ব্যক্তির (আমার পিতা) নিকট মৃত ব্যক্তি কিছু জমি পাবে বলে আমাকে ওসিয়ত করে গেছে। সন্তানদেরকে তা নেয়ার জন্য বলে। ফলে তাদের সঙ্গে আমাদের বিবাদ সৃষ্টি হয়।

এখন আমার প্রশ্ন, শরীয়তের দৃষ্টিতে তার সঠিক সমাধান কী? দয়া করে তা অবগত করলে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

বাস্তবেই যদি আপনার আব্বা ফুফা থেকে ঐ জমিটি ক্রয় করে থাকেন এবং সমুদয় মূল্যও পরিশোধ করে থাকেন তবে ঐ জমি আপনার আব্বারই। আপনার ফুফার এবং পরবর্তীতে তার ওয়ারিশদের এই জমি নিজেদের বলে দাবি করা মারাত্মক অন্যায়। তাদের কর্তব্য হল ঐ জমি আপনার আব্বার নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া।

প্রকাশ থাকে যে, সকল লেনদেন নিয়মমতো করা জরুরি। লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা এবং আস্থা থাকলেও প্রয়োজনীয় দলীল করে নেওয়া এবং লিখিত প্রমাণাদি রাখা জরুরি। এটা শরীয়তেরও হুকুম। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই হুকুম লঙ্ঘন করার কারণে বিবাদ হচ্ছে।

হচ্ছে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৬; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ২৬৬; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৬১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৪২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আশরায়ে মুবাশশারা অর্থাৎ যে দশজন সাহাবীর ব্যাপারে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ...

প্রশ্ন

আশরায়ে মুবাশশারা অর্থাৎ যে দশজন সাহাবীর ব্যাপারে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তাদের নাম, পরিচয় এবং কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে চাই।

উত্তর

দুনিয়াতেই যে দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন

১. হযরত আবু বকর রা.। তার আসল নাম আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আমর। তাঁর উপাধি আতীক, সিদ্দীক। তার মায়ের নাম উম্মুল খায়র। পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তার হাতে হযরত উসমান বিন আফফান, হযরত যুবাইর, হযরত তালহা, হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ প্রমুখ বড় বড় সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের সাথী। ইসলামের প্রথম খলীফা। ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

২. উমর বিন খাত্তাব রা. বিন নুফাইল বিন আবদুল উযযা। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীনের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম আমীরুল মুমিনীন খেতাবে ভূষিত হন। তার খেলাফতকাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। আল্লাহ তাআলা তার দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন।

৩. হযরত উসমান রা. বিন আফফান বিন আবিল আস। ইসলামের তৃতীয় খলীফা। তাঁর খেলাফতকাল এগার বছর এগার মাস কয়েক দিন।

৪. হযরত আলী রা. বিন আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিব। সাত বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবুক ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামের চতুর্থ খলীফা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামাতা।

৫. হযরত তলহা রা. বিন উবাইদুল্লাহ বিন উসমান বিন উমর। উহুদ যুদ্ধে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অত্যন্ত মজবুতভাবে অবস্তান নিয়েছিলেন। চব্বিশ স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রেখেছিলেন তলহাতুল খায়র। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।

৬. হযরত যুবাইর রা. বিন আওয়াম বিন খুয়াইলিদ। সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তরবারী চালিয়েছিলেন। তার আকৃতিতে ফেরেশতাগণ বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।

৭. হযরত আবদুর রহমান রা. বিন আউফ বিন আবদুল হারিছ। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

৮. হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা.। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তীর নিক্ষেপ করেন। উহুদ যুদ্ধে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তোমার উপর আমার মা, বাবা কোরবান হোক, তীর নিক্ষেপ কর। তিনি সকল যুদ্ধে শরীক হয়েছেন।

৯. হযরত সাঈদ বিন যায়েদ ইবনে উমর বিন নুফাইল। বদর যুদ্ধ ছাড়া অন্য সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১০. হযরত আবু উবাইদাহ আমের বিন আবদুল্লাহ বিন জাররাহ। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই উহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দিয়ে বের করেছিলেন। তখন তার সামনের দুই দাঁত পড়ে গিয়েছিল।

-আলমুজতবা মিনাল মুজতবা পৃ. ৪১-৪৪; জামে তিরমিযী ২/২১৫, হাদীস : ৩৯৯৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

নাবালেগ ছেলের জানাযার নামাযে ইমামতি করা জায়েয কি না? যদি...

প্রশ্ন

নাবালেগ ছেলের জানাযার নামাযে ইমামতি করা জায়েয কি না? যদি জায়েয না হয় আর সে ইমামতি করে ফেলে তাহলে কি নামায আবার পড়তে হবে?

উত্তর

অন্যান্য নামাযের মতো জানাযার নামাযেও নাবালেগের ইমামতি সহীহ নয়। তাই নাবালেগ জানাযার নামাযের ইমামতি করলে ঐ মাইয়্যেতের জানাযা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৩৯৮; তাকরীরাতে রাফেয়ী পৃ. ৭৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, ফরয নামাযের পর সুন্নত পড়া...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, ফরয নামাযের পর সুন্নত পড়া হয় এর পর জানাযা নামায আদায় করা হয। এই পদ্ধতি কি সঠিক? সঠিক সমাধান বরাতসহ জানতে চাই।

উত্তর

আপনাদের এলাকার ঐ নিয়মটি ঠিক আছে। বিশেষত যখন জানাযার নামায পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে হয় তখন সুন্নত পড়েই মসজিদ থেকে বের হয়ে জানাযা পড়া বাঞ্চনীয়। তবে সুন্নতের পূর্বে পড়াও জায়েয। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন জানাযার পরে সুন্নতে মুআক্কাদা পড়ে নেওয়া হয়।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৬/২৩৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৯৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা...

প্রশ্ন

তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা হল, ‘যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

উভয় কিতাবে বলা হয়েছে যে, ইমাম নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি নাসায়ী শরীফে হাদীসটি খুঁজে পাইনি। মেহেরবানী করে জানাবেন যে, হাদীসটি নাসায়ী শরীফের কোথায় আছে। আর যদি নাসায়ী শরীফে না থাকে তাহলে হাদীসের কোন কিতাবে আছে আর হাদীসটির হুকুম কী?

উত্তর

উক্ত হাদীসটি ইমাম নাসায়ী রাহ. তাঁর ‘সুনানে কুবরা’ তে ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াললাইল’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হাদীস নং ৯৯২৮। আর দরসে নেযামীতে পঠিত নাসায়ী শরীফ নামে যে প্রসিদ্ধ কিতাব রয়েছে তা সুনানে কুবরা থেকে বাছাইকৃত সংকলন। এর নাম ‘আলমুজতাবা’। এই কিতাবে ওই হাদীসটি নেই। হাদীসটির একাধিক সনদসহ তবরানী কাবীর (হাদীস : ৭৫৩২) ও তবরানী আওসাতে (হাদীস : ৮০৬৪) উল্লেখ আছে।

ইমাম মুনযিরী রাহ. হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বলেন, ‘ইমাম নাসায়ী রাহ. এবং তবারানী রাহ. একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি সনদ সহীহ। (আততারগীব ওয়াততারহীব হাদীস : ২৩৭৬)

মাজমাউয যাওয়াইদে একটি সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলা হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৮)

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৭৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমরা একটি গ্রামে কিছু জমি ক্রয় করি। জমির মালিক জমি...

প্রশ্ন

আমরা একটি গ্রামে কিছু জমি ক্রয় করি। জমির মালিক জমি মেপে আমাদের বুঝিয়ে দেন এবং দলিলও করা হয়। আমরা সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে পনের বছর যাবত বসবাস করছি। জমি বিক্রেতা ইন্তেকাল করেছেন। এখন প্রকাশ পেয়েছে যে, দলিলে উল্লেখিত দাগ নাম্বার অনুযায়ী আমাদের জমি অন্য স্থানে। যেখানে আমরা অবস্থান করছি সেখানে নয়। তাই বিক্রেতার উত্তরাধিকারীগণ আমাদেরকে এ জমি ছেড়ে দলিলে যে দাগ নাম্বার রয়েছে সেখথানে চলে যেতে চাপ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমি কি উক্ত জমি ছাড়তে বাধ্য?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এখন যে দাগে বাড়ি আছে এটাই যেহেতু জমির মালিক থেকে কিনেছেন এবং জমির মালিক নিজে তা বুঝিয়ে দিয়েছে এবং এর ভিত্তিতেই আপনি সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাই সে সময় বাস্তবেই এই জমিটি যদি বিক্রেতার সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে, দলিলে দাগ নাম্বার ভুল হয়েছে। অতএব শরীয়তের দৃষ্টিতে আপনি উক্ত জমি ছাড়তে বাধ্য নন; বরং বিক্রেতার ওয়ারিসদের কর্তব্য হল, আপনাদের নামে ভুল সংশোধনী দলিল করে দেওয়া। অবশ্য সমঝোতার ভিত্তিতে তারা যদি এ স্থান থেকে আপনাকে স্থানান্তর করতে অনুরোধ করে তবে এ কারণে যা ক্ষতি হবে তা দেওয়া তাদের উপর জরুরি হবে।

হেদায়া ৩/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২২৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৬২; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৬২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৭৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. কত বছর বয়সে ইনে-কাল করেন? তাঁর...

প্রশ্ন

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. কত বছর বয়সে ইনে-কাল করেন? তাঁর জানাযা কে পড়িয়েছেন? হযরত আয়েশা রা. হযরত ফাতেমা রা.-এর বড় না ছোট? তাদের বয়সের তফাত কত?

উত্তর

হযরত ফাতিমা রা. আম্মাজান আয়েশার চেয়ে ৫ বছরের বড় ছিলেন। আর আম্মাজান ৬৬ বছর বয়সে ৫৮ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাযা হযরত আবু হুরাইরা রা. পড়িয়েছেন।

আলইসাবা ৪/৩৪৭-৩৪৯; উসদুল গাবা ৪/৩৭৭, ৫/৩৪১; ইস্তিয়াব ২/৭৫২, ৪/১৮৮১; আলমুজতাবা ৬৩; সীরাতে সাইয়িদা আয়েশা রা. ১৫১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার দাদা কিছু জায়গা কবরস্তানের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন। তার...

প্রশ্ন

আমার দাদা কিছু জায়গা কবরস্তানের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর আমরা সে জায়গায় কিছু কাঠ গাছ লাগিয়েছিলাম। এখন সে গাছগুলো বিক্রি করে কবরস্তান সংরক্ষণের জন্য এর চারপাশে দেয়াল করতে চাই। এটা আমাদের জন্য বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, গাছগুলো বিক্রি করে সে অর্থ দ্বারা ঐ কবরস্তানের চারপাশে সীমানা-প্রাচীর করা জায়েয হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক আলেম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আ.-এর মাধ্যমে ফেরাউনকে...

প্রশ্ন

জনৈক আলেম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আ.-এর মাধ্যমে ফেরাউনকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলেন

ক) ঈমান গ্রহণ করলে কিয়ামত পর্যন্ত বাদশাহী দান করবেন।

খ) ঈমান গ্রহণ করলে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন ও যৌবন দান করবেন।

গ) মৃত্যুর পর জান্নাত দান করবেন।

উল্লেখিত কথাগুলো সঠিক সূত্রে প্রমাণিত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাদীস, তাফসীর ও তারীখের নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহে আমরা এই কথা খুঁজে পাইনি। তাই নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত হওয়া ছাড়া, এটা বলা এবং বয়ান করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কোনো অমুসলিম মারা গেলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’...

প্রশ্ন

কোনো অমুসলিম মারা গেলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা যাবে কি? আর প্রতিবেশী হলে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর

‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়তে হয় বিপদ-আপদ ও মসিবতের সময়। এতে মৃতের জন্য কোনো দুআ নেই। তাই অমুসলিম যদি বাহ্যত সমাজসেবী ও সৎ লোক হয় যার মৃত্যু মুসলমান আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের জন্য বাহ্যত মুসিবতের কারণ তাহলে সেক্ষেত্রেও ঐ দুআ পড়ার অবকাশ আছে।

অবশ্য ভূপৃষ্ঠ থেকে কাফেরের সংখ্যা কমল এবং নাফরমানী হ্রাস পেল এসব বিবেচনায় ঐ দুআ না পড়ারও অবকাশ আছে। সুতরাং ঐ দুআ পড়া বা না পড়া নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গি ও নিয়তের উপর। আর কোনো অমুসলিম পড়শী মারা গেলে সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিবারস্থ লোকদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার অবকাশ রয়েছে।

তাফসীরে রূহুল মাআনী ২/২৩; তাফসীরে কুরতুবী ২/১১৯ ও ১৮/৪০; আহকামুল কুরআন ৫/৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১৩/৫৬৫ ও ৭/৩৭৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৬/৪২; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ৬/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলমাবসূত সারাখসী ২/৫৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৮১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত্যুর মুখে পতিত বক্তিকে কিভাবে শোয়াবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

প্রশ্ন

মৃত্যুর মুখে পতিত বক্তিকে কিভাবে শোয়াবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

কারো মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে যেভাবে তার জন্য সহজ হয় সেভাবেই তাকে রাখা যাবে। যদি কষ্ট না হয় তবে উত্তম হল তাকে ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো। অথবা চিত করে শুইয়ে মাথার নিচে উঁচু কিছু দিয়ে সিনা কিবলামুখী করে দিবে। এক্ষেত্রে পা লম্বাভাবে কিবলার দিকে ছড়ানো থাকবে। তবে এ অবস্থায় তাকে নাড়া চাড়া করার কারণে রোগীর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হলে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবে।

মুসতাদারাকে হাকেম হাদীস ১৩৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১০৯৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২; ফাতহুল কাদীর ২/৬৮; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/৩৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একবার ছুটিতে গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ওয়ায়েজের...

প্রশ্ন

একবার ছুটিতে গ্রামের এক ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। সেখানে এক ওয়ায়েজের মুখে শুনলাম, হাদীসে নাকি আছে, হযরত আযরাঈল আ. যখন মূসা আ.-এর রূহ কবজ করতে এসেছিলেন তখন মূসা আ. তাকে এতো জোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন যে, তার চক্ষু বের হয়ে গিয়েছিল। জানতে চাই, এ সংক্রান্ত হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং তা বিশুদ্ধ কি না?

উত্তর

জ্বী, ঘটনাটি সত্য এবং এ সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মালাকুল মাউত (জান কবজকারী ফেরেশতা) কে মূসা আ.-এর নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি যখন এলেন তখন মূসা আ. তাকে জোরে থাপ্পড় মারলেন। যার ফলে মালাকুল মাউতের চক্ষু বের হয়ে পড়ল। তখন তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট আরজ করলেন, আপনি আমাকে এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যিনি মওত চান না। আল্লাহ তাআলা তখন (নিজ কুদরতে) তার চক্ষু আপন স্থানে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি আবার যাও এবং তাকে বল-আপনি একটি ষাড়ের পিঠে হাত রাখুন। ঐ হাতের নিচে যত পশম পড়বে আপনি চাইলে এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে আপনার হায়াত এক বছর করে দীর্ঘায়িত হবে। মূসা আ. এ কথা শুনে বললেন, এরপর কী হবে? আল্লাহ তাআলা বললেন, মৃত্যুই আসবে। মূসা আ. বললেন, তাহলে এখনি মৃত্যু দিন।

সহীহ বুখারী হাদীস : ৩৪০৭; সহীহ মুসলিম হাদীস : ২৩৭২ উল্লেখ্য, বিখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বলেন, মালাকুল মাওত মূসা আ.-এর অনুমতি না নিয়েই মানুষের বেশে তাঁর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। তখন তিনি তাকে না চিনতে পেরে বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করার কারণে চপেটাঘাত করেন।-ফাতহুল বারী ৬/৫০৮; শরহে নববী ১৫/১২৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৪৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একটি ইসলামী মাসিক পত্রিকায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ইসলামের...

প্রশ্ন

একটি ইসলামী মাসিক পত্রিকায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রা.। একজন আলেমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তথ্যটি সঠিক নয়। ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া রা.। জানতে চাই কোন তথ্যটি সঠিক?

উত্তর

ঐ আলেমের বক্তব্যই সঠিক। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রা. ইসলামের প্রথম শহীদ নন। তাঁর ইন্তেকাল/শাহাদত ৩৭ হিজরীতে। হিজরতের পূর্বে ইসলামে সর্বপ্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন তাঁর আম্মা হযরত সুমাইয়া রা.। এটি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩৬৯২০; আরো দেখুন : আলইসতীআব ফী মারিফাতিল আসহাব ১/১৮৬৩, ৩/১১৩৫; উসদুল গাবা ৩/৩১২, ৫/৩১৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি কোনো মৃতের কাফন-দাফনসহ তার জানাযায়...

প্রশ্ন

হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি কোনো মৃতের কাফন-দাফনসহ তার জানাযায় শরীক হল সে এক কীরাত ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি দাফন হওয়া পর্যন্ত থাকল সে দুই কীরাত ছওয়াব পাবে।

অন্য এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি কুকুর লালন করে তার আমলনামা থেকে দৈনিক এক কীরাত করে ছওয়াব কমতে থাকে। জানতে চাই, হাদীসে উল্লেখিত কীরাত দ্বারা কী উদ্দেশ্য? উভয় হাদীসেই কি একই অর্থ বুঝানো হয়েছে?

উত্তর

জানাযায় অংশগ্রহণ সম্পর্কিত হাদীসে কীরাত দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা মুসলিম শরীফের হাদীসেই উল্লেখ আছে।

এক হাদীসে আছে-‘কীরাত দু’টি বড় পাহাড় সমতুল্য।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘কীরাত হল উহুদ পাহাড় সমান।’-সহীহ মুসলিম ১/৩০৭

আর কুকুর লালনের ক্ষেত্রে এক কীরাত ছওয়াব কমে যায় এখানে কীরাত দ্বারা উদ্দেশ্য আমলের এক অংশ। ইমাম নববী রাহ. বলেন, এখানে কীরাত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ যা আল্লাহ তাআলা জানেন। উদ্দেশ্য আমলের একটি অংশ।

শরহে মুসলিম নববী ১০/২৩৯; উমদাতুল কারী ৫/১৫৮; মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ৪/২৫৫; ইকমালুল মুলিম ৫/২৪৬ #

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা ৫ বোন। আমাদের জন্য কি...

প্রশ্ন

আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা ৫ বোন। আমাদের জন্য কি শোক পালন করা আবশ্যক? যদি শোক পালন করা আবশ্যক হয় তাহলে কীভাবে ও কতদিন আমরা শোক পালন করব?

উত্তর

পিতার মৃত্যুতে আপনাদের শোক পালন করা আবশ্যক নয়। তবে তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করার অনুমতি আছে এবং এ শোকে সাজ-সজ্জা ত্যাগ করারও অবকাশ আছে।

মুসনাদে আহমদ ৬/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৭২; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের মসজিদের খতীব সাহেবের একটি বক্তব্য আমাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের খতীব সাহেবের একটি বক্তব্য আমাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করেছে। তা হল, আমি নিজ কানে শুনলাম, জুমআর নামাযের আগে ইমাম সাহেব বয়ানে বললেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যাননি। তিনি এখনও জীবিত আছেন এবং দুনিয়াতে এখনও কাজ করেন। ইমাম সাহেব দলীল হিসাবে বললেন, পাকিস-ানে এক ঈমানদার লোকের সামনে এক লোক হযরত ওমর রা.কে গালমন্দ করল। তখন ঐ লোকটি মনে মনে কষ্ট পেলেন। কিন' কোনো কিছু বলার সাহস পেলেন না। রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়লেন তখন হযরত রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এসে বললেন যে, তুমি মন খারাপ করে আছ কেন? ঐ লোকটি বলল, আমার সামনে হযরত ওমর রা.কে গালমন্দ করেছে এজন্য আমার মন খারাপ। তখন রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ওঠ, যাও। ঐ লোকটিকে হত্যা করে এসো। তখন ঐ লোকটি তার গলা কেটে আসল। কান্নার আওয়াজ শুনে লোকটির ঘুম ভেঙ্গে গেল তারপর লোকটি দেখতে পেল সত্যি সত্যি লোকটির গলা কাটা হয়েছে। এই ঘটনা দলীল হিসাবে আমাদের সামনে পেশ করলেন। জানতে চাই, রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই এখনো জীবিত আছেন এবং এখনো দুনিয়াতে কাজ করছেন? কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস-ারিত দলীলপ্রমাণসহ জানাবেন।

উত্তর

১১ হিজরী রবিউল আওয়াল মাসে নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়েছে এবং মদীনা মুনাওয়ারায় মসজিদে নববীর পাশে রওজা মুবারকে শায়িত আছেন। এটি দিবালোকের ন্যায় বাস-ব এবং অসংখ্য মানুষের বর্ণনা ও বিভিন্ন শরয়ী দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কারো পক্ষেই তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

তবে আম্বিয়ায়ে কেরামের একটি বৈশিষ্ট্য হল, তাঁদের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা তাঁদের শরীর মুবারক সম্পূর্ণ পূর্বের অবস'ায় হেফাযত করেন এবং শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক সৃষ্টি করেন। ফলে কবরের মধ্যে তাঁরা এক প্রকার জীবন লাভ করেন, যা শহীদদের জীবন থেকেও অধিক শক্তিশালী। কিন' এটা সম্পূর্ণ পার্থিব জীবনের মতো নয় এবং এর দ্বারা দুনিয়াবী কোনো কাজ-কর্মের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। প্রশ্নে জনৈক ব্যক্তির উদ্ধৃতিতে যা বলা হয়েছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু হয়নি তিনি এখনো জীবিত আছেন এবং দুনিয়াবী কাজ করেন। এটা সম্পূর্ণ বাস-ববিরোধী এবং শরীয়ত পরিপন'ী কথা। বেদআতীরা এ জাতীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে হাজারো শিরকের পথ উন্মুক্ত করে থাকে। এ ধরনের কথা বলা অথবা বিশ্বাস রাখা কবীরা গুনাহ। যার দ্বারা তাওহীদের আকীদা ক্ষতিগ্রস- হয়। তাই উক্ত ব্যক্তির এ থেকে তওবা করা জরুরি।

জরুরি।-নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত সংক্রান- দলীলসমূহ : সূরা যুমার : ৩০; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/২৫৪; সহীহ বুখারী ২/৬৩৯; নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হায়াত সংক্রান- দলীলসমূহ : শিফাউস সাকাম ফী যিয়ারাতি খায়রিল আনাম পৃ. ১৯১; ফয়যুল বারী ২/৬৪; ফাতহুল মুলহিম ১/৩২৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ২/২২৩ মৃত্যুবরণকারী দুনিয়াবী কাজ করতে পারে না-এ আকীদা সংক্রান- দলীলসমূহ : আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১/১৭৮ ও ১১/৪৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৪০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

সাধারণত পুরুষদের লাশে সুগন্ধি লাগানো হয়। এখন জানার বিষয় হল,...

প্রশ্ন

সাধারণত পুরুষদের লাশে সুগন্ধি লাগানো হয়। এখন জানার বিষয় হল, মহিলাদের লাশেও কি সুগন্ধি লাগানো যাবে?

উত্তর

হ্যাঁ, মহিলাদের লাশেও সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪১৬; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৫৭৯; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৬৭; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কামাল সাহেব তিন পুত্র রেখে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তার...

প্রশ্ন

কামাল সাহেব তিন পুত্র রেখে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তার মালিকানায় শুধুমাত্র ১টি সাবানের ফ্যাক্টরি ছিল। তার তিন ছেলে দীর্ঘ দিন যাবৎ ফ্যাক্টরির যা আয় হত তা সমানভাগে বন্টন করে নিত। বর্তমানে এক ছেলে পারিবারিক কলহে লিপ্ত হয়ে ফ্যাক্টরিটি বন্টন করতে চাচ্ছে। কিন্তু যদি তা বন্টন করা হয় তাহলে তা থেকে কোনো আয়ের সম্ভাবনা নেই। তাই অন্য ভাইরা বন্টনে সম্মত নয়। এ অবস্থায় এক ভাইয়ের দাবি অনুযায়ী ফ্যাক্টরিটি বন্টন করা জরুরি কি না? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু কারখানাটি উৎপাদন উপযোগী রেখে বন্টন করা সম্ভব নয় তাই এ পরিস্থিতিতে সকল মালিকের সম্মতি ছাড়া তা বন্টন করা যাবে না। শুধু একজনের দাবি মেনে তা বন্টন করা জরুরি নয়। কেউ অংশিদার না থাকতে চাইলে কারখানার ন্যায্য মূল্য হিসাব করে অন্য অংশিদারগণ তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিবে। কিংবা শরীকদের সম্মতিতে অন্য কারো কাছে তার শেয়ার বিক্রিও করে দিতে পারে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৪৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একজন কবিরাজ চিকিৎসার জন্য তিনটি পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা...

প্রশ্ন

একজন কবিরাজ চিকিৎসার জন্য তিনটি পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা পড়িয়ে দাফন করতে বলেছে। এভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা কি জায়েয?

উত্তর

কবিরাজের নির্দেশিত ঐ চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ শরীয়তপরিপন্থী। সুতরাং তার কথা অনুযায়ী আমল করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা এতে একাধিক শরীয়তবিরোধী কাজ রয়েছে। যথা-

১. পুতুল বানানো, যা নাজায়েয। হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন সতর্কবাণী এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রতিকৃতি তৈরি করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৫০

২. পুতুলের জানাযা পড়া। জানাযা শরীয়তের একটি নির্ধারিত ইবাদত, যা মৃতের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। কোনো পুতুলের জন্য জানাযা পড়া শরয়ী হুকুমের চরম বিকৃতি, যা বিদআত হওয়ার পাশাপাশি কুফরি তুল্য গুনাহ।

৩. চিত্র, মূর্তি, ভাস্কর্য সামনে রেখে পূজা-অর্চনা করা মুশরিক-পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের কাজ। পুতুল সামনে রেখে জানাযা পড়ার দৃশ্যটি সেসব শিরকী কাজের সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এভাবেই মূর্তিপূজার দ্বার উন্মোচন হয়।

৪. এছাড়া মৃত ব্যক্তির মতো করে পুতুল দাফন করা একটি গর্হিত কাজ, শরয়ী বিধানের সাথে ঠাট্টার শামিল। তাই কোনো ঈমানদারের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্পূর্ণ হারাম। আর এ ধরনের কবিরাজ থেকে ঝাড়-ফুঁক নেওয়া ও তদবীর গ্রহণ করাও নাজায়েয।

-সহীহ বুখারী, ১/১১২, হাদীস : ৪৩৪; আলইলাম, ইবনে হাজার হায়তামী ২/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; ফাতহুল বারী ১০/২০৬; মাজমাউল আনহুর ২/৫১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার স্বামী মৃত্যুশয্যায় শায়িত। আমি সবসময় তার খেদমতে নিয়োজিত। এখন...

প্রশ্ন

আমার স্বামী মৃত্যুশয্যায় শায়িত। আমি সবসময় তার খেদমতে নিয়োজিত। এখন আমার একান্ত ইচ্ছা, তার ইন্তিকালের পর তাকে নিজ হাতে গোসল দিব। আমি জানতে চাই, আমার জন্য এটা জায়েয হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, আপনার মৃত স্বামীকে আপনি গোসল দিতে পারবেন। বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত আবু বকর রা.-এর ইন্তিকালের পর তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস রা. তাকে গোসল দিয়েছিলেন।

(মুআত্তা মালিক, পৃ: ১৭৯); সুনানে আবু দাউদ ৪/৩০, হাদীস : ৩১৩৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩; আলমাবসূত সারাখসী ২/৬৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈকা মহিলা ইন্তেকালের সময় ওয়ারিশ বলতে শুধু দু’জন ভাই ও...

প্রশ্ন

জনৈকা মহিলা ইন্তেকালের সময় ওয়ারিশ বলতে শুধু দু’জন ভাই ও একজন দুধ মেয়ে রেখে যান। আমাদের জানার বিষয় হল, দুধ মেয়ে ওয়ারিশ হিসেবে ঐ মহিলার কোনো সম্পত্তি পাবে কি না? কেউ বলছে পাবে আবার কেউ বলছে পাবে না। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি।

উত্তর

দুধ সম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজন মীরাস পায় না। তাই দুধ মেয়ে উক্ত মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদের কোনো হিস্যা পাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৮; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/৩৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৬২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি বজ্রপাতে মারা গেছে। যেহেতু এ ধরনের...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি বজ্রপাতে মারা গেছে। যেহেতু এ ধরনের লাশ চুরি হয়ে যায়। তাই ওয়ারিশগণ স্থানীয় আলেমের পরামর্শে তার কবরের উপর চওড়া কাঠের তক্তা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর মাটি দিয়েছে। জানতে চাই, আমাদের এ কাজ কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশের হেফাযতের উদ্দেশ্যে কবরের উপর কাঠের তক্তা ব্যবহার করা ঠিক হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ অবস্থায় কবরে কাঠ ব্যবহার করা ঠিক নয়।

-মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৬/৩৫১-৩৫২ হাদীস নং ১১৮৯২, ১১৮৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৬৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় মৃতের রূহের মাগফিরাত কামনার উদ্দেশ্যে তিন, সাত, একুশ...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মৃতের রূহের মাগফিরাত কামনার উদ্দেশ্যে তিন, সাত, একুশ ও চল্লিশ ইত্যাদি তারিখে কুরআন খতম, মিলাদ ও দুআর অনুষ্ঠান করা হয় এবং জাঁক-জমকের সাথে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে বোঝা যায় না যে, রূহের মাগফিরাত না, বিবাহর অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রামবাসী ও এলাকার বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ, যেমন চেয়ারম্যান, মেম্বার, মাতবর, পার্টির নেতাসহ সবাইকে দাওয়াত করা হয়। এমনকি অনুষ্ঠানের দিন-ক্ষণ পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকায় ঘোষণা করা হয়। যা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় তামদারী, মজলিস, বেপার, ফয়তা, মিদুনী ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। যে এলাকাতে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, উদ্দেশ্যে অভিন্ন।

একশ্রেণীর আলেম এ ধরনের অনুষ্ঠান যথারীতি করে যাচ্ছেন। আরেক শ্রেণীর আলেম এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ভালো মন্দ কিছুই বলেন না। আরেক শ্রেণীর আলেম এই অনুষ্ঠানগুলোকে বিদআত ও নাজায়েয বলে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। কোনটা সহীহ আর কোনটা ভুল তা পার্থক্য করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন এই যে, এই পদ্ধতি শরীয়তসম্মত কি না। সহীহ পদ্ধতি কোনটা তা জানালে আমরা বিভ্রান্তির বেড়াজাল হতে বের হয়ে সেভাবে আমল করার জন্য সচেষ্ট থাকব।

উত্তর

মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য দুআ করা এবং বিভিন্ন নফল ইবাদত যেমন-দান-সদকা, তাসবীহ-তাহলীল, তেলাওয়াত ইত্যাদি করে তার সওয়াব মৃতকে পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল, যা হাদীস শরীফের বহু দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তবে এটি একটি ব্যক্তিগত আমল। কোনো দিন-তারিখ ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই যখন ইচ্ছা তখনই এ আমল করা যায়।

কিন্তু বর্তমানে এই সহজ আমলটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দান করে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের কাজে রূপান্তর করা হয়ে থাকে। যেমন-

১. তিন দিনা, সাত দিনা,একইশা, চল্লিশা এ সকল নামে এ অনুষ্ঠান যথাক্রমে মৃত্যুর ৩য়, ৭ম, ২১ শ ও ৪০ তম তারিখে করাকে জরুরি মনে করা হয় বা কমপক্ষে এরূপ ধারণা রাখা হয় যে, এ তারিখগুলোর বিশেষত্ব রয়েছে। অথচ শরয়ী দলীল-প্রমাণ ছাড়া বিশেষ দিন-তারিখ নির্ধারণ করে নেওয়া বিদআত ও নাজায়েয।

২. ঈসালে সাওয়াবের প্রচলিত পন্থায় আরেকটি বড় আপত্তিকর দিক হল এতে যিয়াফত তথা আড়ম্বরপূর্ণ দাওয়াত অনুষ্ঠানকেই ঈসালে সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অথচ শরীয়র্তে যিয়াফতের আয়োজনের কথা তো আছে আনন্দের মুহূতে, মুসিবতের মুহূর্তে নয়। হাদীস শরীফে এসেছে-হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তরজমা) ‘আমরা (সাহাবাগণ) দাফনের পর মৃতকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া ও খাবারের আয়োজন করাকে ‘নিয়াহা’ বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমদ ২/২০৪; ইবনে মাজাহ ১৬১২)

কোনো দিন-তারিখ নির্ধারিত না করে গরীব-মিসকীনদেরকে খানা খাওয়ানোটাও ঈসালে সাওয়াবের একটি বৈধ পন্থা। কিন্তু এমন যিয়াফতের আয়োজন করা যাতে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এটি আদৌ ঈসালে সাওয়াবের গ্রহণযোগ্য পন্থা নয়।

৩. হাফেযদের দ্বারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে কুরআন পড়ার বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয।

৪. অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যয়ভার নির্বাহ করা হয় মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া এজমালী সম্পদ থেকে, ওয়ারিশদের মাঝে কোনো নাবালেগ থাকলেও তার সম্পদ বাদ দেওয়া হয় না। অথচ নাবালেগের সম্পদ তার অনুমতি নিয়েও খরচ করা নাজায়েয। এমনিভাবে বালেগ ওয়ারিশদের ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ রাখা হয় না যে, তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি আছে কি না।

৫. এ ধরনের অনুষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রেই লোক দেখানোর জন্য বা সামাজিক রেওয়াজে প্রভাবিত হয়ে করা হয়। এটাও নাজায়েয। শরীয়ত বিরোধী এ জাতীয় আরো কর্মকান্ড এসব অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। ফলে এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকার হওয়া তো দূরের কথা উল্টো ব্যবস্থাকারীগণ গুনাহগার হয়ে থাকে।

সুতরাং ঈসালে সাওয়াবের প্রশ্নোক্ত পন্থা সম্পূর্ণরূপে পরিহারযোগ্য। মৃতের মাগফিরাত কামনা ও তাকে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে দান-সদকা, তেলাওয়াত, যিকির-আযকার ও নফল ইবাদতই যথেষ্ট এবং এটাই করণীয়। আর নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখের অপেক্ষা না করে নিজ নিজ তাওফীক অনুযায়ী এগুলো মাঝে মধ্যেই করা দরকার। দান-সদকা করার ক্ষেত্রে গরীব দুঃখীদেরকে নগদে প্রদান করা ভালো এবং সদকায়ে জারিয়া হয় এমন খাতে ব্যয় করা উত্তম।

-মুসনাদে আহমদ ২/২০৪; ইবনে মাজাহ পৃ. ১১৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/১৭০; শিফাউল আলীল ১/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৮১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একব্যক্তি জানাযার নামাযের জন্য অযু করে জানাযার নামায আদায় করে।...

প্রশ্ন

একব্যক্তি জানাযার নামাযের জন্য অযু করে জানাযার নামায আদায় করে। কিছুক্ষণ পর আসরের সময় হলে সে ঐ অযু দ্বারাই আসরের নামায আদায় করে। বিষয়টি একজনকে জানানো হলে সে বলল, জানাযার জন্য কৃত অযু দ্বারা অন্য নামায আদায় করা যায় না। তাই তার নামায হয়নি। আসল মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

লোকটির কথা ঠিক নয়। জানাযার উদ্দেশ্যে কৃত অযু দ্বারাও ফরয, নফল সব ধরনের নামাযই আদায় করা জায়েয। তাই ঐ অযু দ্বারা আদায়কৃত আসরের নামাযটি সহীহ হয়েছে। শরয়ী তরীকায় অযু করলে তা দ্বারা যে কোনো নামাযই আদায় করা যায় এবং ঐ সকল আমল করা যায় যার জন্য অযু জরুরি।

-ইমদাতুল ফাতাওয়া ১/৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

প্রায় এক যুগ গত হল আমি আমার এক নিকটাত্মীয়ের ব্যবসা...

প্রশ্ন

প্রায় এক যুগ গত হল আমি আমার এক নিকটাত্মীয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ( বেতনভুক্ত) করছি। আমি ব্যবসা পরিচালনার পর যে পরিমাণ মুনাফা আসে ইতিপূর্বে মালিক তার পিতা, ভাই-বোনদের নিয়ে ঐ পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। তাই মালিক আমাকে খুব বিশ্বাস করে এবং অনেক দিক দিয়ে সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে।

কয়েক বছর পূর্বে আমার মালিক ব্যবসায়িক কাজে দেশের বাইরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে মহা বিপদে পড়েন এবং ঐ বিপদ থেকে উদ্ধারে আমি সবচেয়ে বেশি মেহনত করে উদ্ধার করে আনি। ঐ সময় আমি আমার মালিকের সাথে তার বাসায় দেখা করতে গেলে তিনি সুস্থ, সজ্ঞান অবস্থায় আমাকে বললেন, ‘আজ থেকে তুমি আমার দোকানের ও ব্যবসার চার আনা পার্টনার।’ তোমাকে কিছু দিনের মধ্যে দলিল করে দিব। এরপর আমি এই পর্যন্ত লজ্জায় তাকে দলিল করতে বলিনি। তিনিও আমাকে দলিল করে দেননি। কিন্তু আমি চার আনা মালিক/পার্টনার হিসেবে টাকা হিসেব করে নিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হল, ক) আমি কি তার কথার দ্বারা পার্টনার হয়ে গেছি? খ) টাকা নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? গ) আমার পার্টনার কত দিন পর্যন্ত বহাল থাকবে? আমার মৃত্যুর পর কি পার্টনার বহাল থাকবে? ঘ) শেয়ার/পার্টনার হওয়ার জন্য কি কাগজের দলিল থাকা শর্ত? উপরোক্ত প্রশ্নগুলো বিস্তারিত জানিয়ে হারাম থেকে বেঁচে থাকার উপায় বাতলে দিবেন।

উত্তর

আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য আরো কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন। আপনি যেহেতু ঢাকাতেই আছেন তাই সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। অন্যথায় ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেন।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

সমাজের বাস্তবতা হল মেয়েদেরকে পিতার মীরাছ থেকে বঞ্চিত করা হয়।...

প্রশ্ন

সমাজের বাস্তবতা হল মেয়েদেরকে পিতার মীরাছ থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদি কেউ কখনও তার প্রাপ্য সম্পদ দাবি করে বা নিয়ে নেয় তাহলে তার জন্য ভাইদের দখলে থাকা বাপ-দাদার ভিটায় যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভাইদের কাছে বোনদের কোনো মূল্য থাকে না। ছেলে-মেয়েরা মামার বাড়িতে গিয়ে আদর পায় না। অনেক সময় এমন কথাও শুনতে হয়, যা পাওয়ার তা তো নিয়েই গেছ। এখন আবার জ্বালাতন করতে আস কেন?

এসব ভেবে অনেক মেয়েই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার প্রাপ্য সম্পদ দাবি করে না এবং ভাইয়েরাও দেওয়ার কোনো আগ্রহ প্রকাশ করে না। আর দিলেও সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমন করা ঠিক কি না? বাড়ির ভিটার অংশ মেয়েরা পাবে কি না?

উত্তর

পিতা-মাতার সকল সম্পদে ছেলের হিস্যা যেমন নিশ্চিত তেমনিভাবে মেয়ের হিস্যাও নিশ্চিত। পিতামাতার মৃত্যুর সাথে সাথে পরিত্যাক্ত সকল সম্পদে ছেলে-মেয়ে সবাই নিজ নিজ হিস্যা অনুযায়ী মালিক হয়ে যায়। সুতরাং বোনদের প্রত্যেকের অংশ পুরোপুরি দিয়ে দেওয়া ভাইদের উপর ফরয। বাড়ির ভিটা বসতবাড়িসহ মৃতের রেখে যাওয়া সব কিছুই মিরাছের অন্তর্ভুক্ত। যা নির্ধারিত হিস্সা অনুযায়ী বন্টনের নিয়ম অনুসারে প্রত্যেককে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাদের অংশ দিতে যদি বিলম্ব করা হয় কিংবা কম দেওয়া হয় তবে তাদের হক নষ্ট করার গুনাহ হবে। অন্যের সম্পদ আটকে রাখাটা অনেক বড় গুনাহ, যা জাহান্নামে যাওয়ারও কারণ হতে পারে। তাই বোনদের প্রাপ্য অংশ অবিলম্বে দিয়ে দেওয়া জরুরি। আর তাদের প্রাপ্য অংশ দিয়ে দিলে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাও মারাত্মক গুনাহ। হাদীস শরীফে আছে-কিয়ামতের দিন আত্মীয়তার সম্পর্ক নিজেই সম্পর্ক ছিন্নকারীর বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার দরবারে অভিযোগ করবে। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

-সূরা নিসা ৭-১৪; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/২৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৯০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মাস্টার আবদুর রউফের তিন ছেলে। বড় দুই ছেলেকে লেখা-পড়া করিয়ে...

প্রশ্ন

মাস্টার আবদুর রউফের তিন ছেলে। বড় দুই ছেলেকে লেখা-পড়া করিয়ে ও বিদেশ পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু ছোট ছেলের জন্য তেমন কিছু করতে পারেননি। এজন্য মৃত্যুর সময় স্ত্রীকে ডেকে বিশ্বরোড সংলগ্ন পাঁচ গন্ডা জমি ছোট ছেলের জন্য অসিয়ত করে গেছেন। বড় ছেলেরা বিদেশ থাকায় তাদেরকে বলে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তারা শুনে বলল, আমাদের ছোট ভাই হিসেবে আমরা তার সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তবে বাপ-দাদার মিরাসী সম্পত্তি তাকে এককভাবে দিতে পারব না। এখন প্রশ্ন হল, এ অসিয়ত পূর্ণ করতে হবে কি না? এ অসিয়ত অমান্য করতে কোনো সমস্যা হবে কি না?

উত্তর

ওয়ারিসের জন্য সম্পদের অসিয়ত শরীয়তসম্মত নয়। কেউ করলেও তা কার্যকর হয় না। তাই ঐ ব্যক্তির অসিয়তটি সহীহ হয়নি। তা আমলযোগ্য নয়। হ্যাঁ, সকল ওয়ারিস স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের অংশ থেকে মৃতের ছোট ছেলেকে অতিরিক্ত কিছু দিতে চায় তবে। এর অবকাশ আছে।

-সহীহ বুখারী ১/৩৮৩; সুনানে নাসাঈ ২/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৮২; তাকমিলা ফাতহুল কাদীর ৯/৩৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৫৫
তারিখ: ২৮-অগাষ্ট-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আত্মহত্যা কারীর শাস্তি কি? তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?

প্রশ্ন
মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে কি চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে?একজনকে বলতে শুনেছি, যে যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে সে চিরকাল সে পদ্ধতিতেই শাস্তি পেতে থাকবে৷ অর্থাৎ কেউ ফাসী লেগে আত্মহত্যা করলে জাহান্নামে সে চিরকাল ফাসীর মাধ্যমে শাস্তি পাবে৷ বিষ পান করে আত্মহত্যা করলে জাহান্নামে সে চিরকাল বিষ পান করবে ৷ এসব কথা কতটুকু সঠিক? জানালে উপকৃত হবো৷
উত্তর
মানুষের জীবন তার নিকট আল্লাহপ্রদত্ত আমানত৷ তা বিনষ্ট করার অধিকার মানুষের নেই৷ তাই আত্মহত্যা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।
-সূরা নিসা, আয়াত নং-২৯
প্রশ্নে উল্লেখিত বক্তব্যটি হাদীস শরীফে এভাবে বর্নিত হয়েছে যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে চিরদিন সেভাবেই লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে তার বিষ তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে সেখানে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২৷
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, আত্মহত্যাকারী যে
পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করবে, সেভাবে জাহান্নামে চিরকাল শাস্তি পেতে থাকবে।
অবশ্য এ হাদীস দ্বারা বাহ্যিকভাবে এটাও বুঝা যায় যে,আত্মহত্যাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। কিন্তু মুলত বিষয়টি এমন নয়। কারণ আত্মহত্যা করা কবিরাহ গুনাহ যা তৌবা করলে মাফ হয়ে যায় ৷ কিন্তু আত্মহত্যা কারীর যেহেতু সেই সুযোগ নাই তাই তাকে জাহান্নামের শাস্তি পাবে ৷ আর তৌবা না করলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছে করলে উক্ত ব্যক্তিকে মাফ করে দিতে পারেন৷ কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।
-সূরা নিসা-১১৬৷
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২৫৷
সুতরাং আত্মহত্যা কারীর মৃত্যুর সময় যদি ইমান বহাল থেকে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হতে পারে না। কেননা চিরস্থায় জাহান্নামী কেবল কাফের-মুশরিকরা হবে। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্যও এটাই। এবং আরবদের পরিভাষায়ও “চিরকাল” এর দ্বারা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন। উক্ত হাদীসেও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া উদ্দেশ্য ৷ চিরস্থায়ী হওয়া নয়।
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৮৮
তারিখ: ২০-জুন-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

পুরাতন কবরের উপর বসবাসের ঘর নির্মান করা ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব! আমাদের বাড়ির পাশে ত্রিশ/ চল্লিশ বছর আগের দুটি কবর আছে ৷ বাড়ি ভরাট ও বৃদ্ধি করায় কবর দুটি বাড়ির ভিতরে পড়ে গেছে ৷ জানার বিষয় হল, সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু প্রবল, তাই কবরের জায়গাটি ওয়াকফকৃত না হলে কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।
আর কবরের জায়গাটি যদি ওয়াকফকৃত হয়, তাহলে পুরাতন হলেও তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হবে না।
-খানিয়া ৩/৩১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৮০
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আত্বীয়-স্বজনের উপস্থিতি বা দেখানোর জন্য মৃতের গোসল, কাফন, জানাযা, দাফন বিলম্ব করা ৷

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক লোক মারা গেল ৷ তার ছেলেরা বিদেশে থেকে একদিন পর আসে ৷ ছেলেদের কে লাশ দেখানোর জন্য লাশটি ফ্রীজে রাখা হয় ৷ ফলে মাইয়েতের গোসল, কাফন-দাফন, জানাযা ইত্যাদি বিলম্ব করা হয়। জানার বিষয় হল, মাইয়েতের নিকটাত্মীয়ের জন্য কাফন- দাফন জানাযা বিলম্ব করা বৈধ কি না?
উত্তর
মানুষের মৃত্যুর পর তার গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুত করা উচিত। হাদীসে এ বিষয়ে গুরুত্বারুপ করা হয়েছে। আর মৃতের নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদেরকে তার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া মুস্তাহাব। যেন তারা জানাযায় শরিক হতে পারে। কিন্তু কোনো আত্মীয়ের হোক ছেলে মেয়ের উপস্থিতি বা তাদের দেখানোর জন্য মৃতের দাফনে বিলম্ব করা উচিত নয় । আত্মীয় স্বজন যত দূরেই থাকুক, মাইয়েতকে দেখানোর জন্য গোসল কাফন জানাযা দাফন বিলম্ব করা কোনো ভাবেই শরীয়তসম্মত নয়।
-সহীহ বুখারী ১/১৭৫; বাদায়েউস সানায়ে
২/২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৩৫
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

পুতুল বানিয়ে মানুষের মত জানাযা পড়ে দাফন করে কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহন করা ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমার বোন বহুদিন যাবত একটি বড় ধরনের রুগে আক্রান্ত ৷ কোন চিকিৎসা ই কাজে আসছে না ৷ কিছু দিন আগে তাকে এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে কবিরাজ পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা পড়িয়ে দাফন করতে বলেছে। জানার বিষয় হলো, এভাবে কবিরাজের কথা মেনে চিকিৎসা গ্রহণ করা জায়েয হবে কিনা?
উত্তর
শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করা সম্পুর্ন নাজায়েয ৷ তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবিরাজের নির্দেশিত ঐ পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করা কোনো ভাবেই জায়েয হবে না । কারন এতে বহু শরীয়তবিরোধী কাজ
রয়েছে। যেমন: ১৷ পুতুল বানানো, যা সম্পুর্ন নাজায়েয।
২৷ পুতুলের জানাযা পড়া। আর কোনো পুতুলের জন্য জানাযা পড়া শরয়ী হুকুমের চরম বিকৃতি, যা বিদআত হওয়ার পাশাপাশি কুফরি তুল্য গুনাহ।
এছাড়া মৃত ব্যক্তির মত করে পুতুল দাফন করা একটি গর্হিত কাজ, শরয়ী বিধানের সাথে ঠাট্টার শামিল। তাই কোনো মুমিনের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্পূর্ণ হারাম। আর এ ধরনের কবিরাজ থেকে ঝাড়-ফুঁক নেওয়া ও তদবীর গ্রহণ করাও নাজায়েয।
-সহীহ বুখারী, ১/১১২ ফাতহুল বারী ১০/২০৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; মাজমাউল আনহুর
২/৫১০৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮২১
তারিখ: ১২-মার্চ-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

দুধ সম্পর্কীয় আত্বীয়স্বজনের মিরাস ৷

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমার বড় বোন ইন্তেকাল করেন ৷ তার কোন সন্তানাদি নাই ৷ বোন জামাইও মারা গেছে ৷
ওয়ারিশ বলতে শুধু আমরা দু’জন ভাই ও বোনের একজন দুধ মেয়ে আছে । জানার বিষয় হল, দুধ মেয়ে ওয়ারিশ হিসেবে আমার বোনের কোনো সম্পত্তি পাবে কি না?
উত্তর
ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ সম্পর্কীয় যেসব আত্মীয়স্বজন আছে তার মীরাস তথা উত্তাধিকারি হয় না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোনের দুধ মেয়ে তার রেখে যাওয়া সম্পদের কোন অংশ পাবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৮/৪৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৬২৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৯২
তারিখ: ২-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মৃত ব্যক্তির নামে নির্ধারিত দিনে ইসালে সাওয়াব করা ও কুরআন খতম ও দোয়া করে বিনিময় আদান প্রদান করা ৷

প্রশ্ন
আমাদের দেশে মৃত্যুবরণের পর তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন, চল্লিশতম দিন এবং প্রতি বছর মৃত্যু তারিখে ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরআন খতম বা অন্য কোনো খতম উপলক্ষে খানার আয়োজন করা হয়। উক্ত খানা ধনীরা খেতে পারবে কিনা? মৃত ব্যক্তির নামে কুরআন খতম ও দোয়া করে বিনিময় আদান প্রদান করার বিধান কি? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো ৷
উত্তর
মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়তসম্মত ও অত্যান্ত পূণ্যের কাজ। তবে আমাদের দেশে যে, নির্দিষ্ট দিন তারিখ তথা মৃত্যুর তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন, চল্লিশতম দিন এবং প্রতি বছর মৃত্যু তারিখে যে খতম ও খানার আয়োজন করা হয়, তা সম্পূর্ণরূপে বিদ‘আত। ঈসালে সাওয়াব কোনো নির্দিষ্ট দিন তারিখে নয়, বরং সুবিধে মতো যে কোনো এক দিনে করা চাই।
ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম বা অন্য কোনো খতম ও দু‘আ করিয়ে বিনিময় আদান প্রদান এবং খানা খাওয়া ও খাওয়ানো সবই নাজায়িয। তবে দুটির যে কোনো একটি করতে পারবে । হয়তো শুধু
খতম বা দু‘আ। নতুবা শুধু খানা খাওয়ানো।
আর ঈসালে সাওয়াবের খানা নফল সদকার অন্তর্ভূক্ত বিধায় ধনী-গরীব সবার জন্যই খাওয়া জায়িয আছে। তবে গরীবদেরকে খাওয়ানোতে সাওয়াব বেশি।
আল বাহরুর রায়িক ২/২৪৬, ফাতাওয়া শামী ২/২৪০, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৭৭।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৭৭
তারিখ: ২৩--২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

লাশ দাফনের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করলে মৃত ব্যক্তি সাহস পায় ও প্রশ্নোত্তর সহজ হয় ৷

প্রশ্ন
লোক মুখে বলতে শুনা যায়, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দুআ করলে মৃত ব্যক্তি নিজে সাহস পান এবং ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়। তা কি ঠিক?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত কথাগুলোর প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য নির্ভরযোগ্য হাদীসে পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করলে তার একাকিত্বভাব দূর হয়।
আবদুর রহমান ইবনে শুমাছা আলমহরী রাহ. বলেন, আমর ইবনে আস রা. যখন মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন তার কাছে আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে আমাকে কবরে রেখে আমার উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে পরিমাণ সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন এর দ্বারা আমার একাকিত্বতার ভীতি দূর হয়ে যায় এবং আমি আমার রবের প্রেরিত দূতকে বুঝে-শুনে জবাব দিতে পারি।
সহীহ মুসলিম ১/৭৬, হাদীস : ১২১৷
অন্য হাদীসে এসেছে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে তার মাগফিরাত ও দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেজন্য দুআ করা হায়৷
উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং দুআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তাকে দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার তাওফীক দান করেন। কেননা সে এখনই জিজ্ঞাসিত হবে।
সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৯, হাদীস : ৩২১৩ বিস্তারিত দেখুনঃ ইলাউস সুনান ৮/৩৪২৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭২৯
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

নারি ও পুরুষের লাশে সুগন্ধি ব্যবহার করা৷

প্রশ্ন
মানুষ মৃত্যুর পর লাশে সুগন্ধি লাগানো হয়।
এখন জানার বিষয় হল, লাগানো শরীয়ের দৃষ্টিতে কেমন? এবং মহিলাদের লাশেও কি
সুগন্ধি লাগানো যাবে?
উত্তর
লাশে সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব৷ মহিলাদের লাশেও সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৪১৬; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৫৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭২০
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে তিন কাতার করা৷

প্রশ্ন
জানাযার নামাযে তিন কাতার করা জরুরি কিনা? অনেক জায়গায় দেখা যায়, এটাকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। তাই রেফারেন্সসহ জানালে ভাল হয়। জাযাকাল্লাহ।
উত্তর
জরুরি নয়; তবে মুসতাহাব। কেননা হাদীস শরীফে
এসেছে, মালিক ইবন হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যে কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য জীবিত মুসলমানরা তিন কাতার করে তার জানাযার নামায পড়লে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে
দেন ।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৫৮ ৷
বর্ণনাকারী বলেন, এ জন্য মালিক রহ. যখন কোন ব্যক্তির জানাযায় লোক কম দেখতেন, তখন তাদের তিন কাতারে বিভক্ত করে দিতেন। ফকীহগণ এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে জানাযার নামাযে মুসল্লি সংখ্যা কম হলেও যথাসম্ভব তাদেরকে তিন কাতারে বিভক্ত করে দাঁড় করানো মুসতাহাব বলেছেন। তবে মুসল্লি সংখ্যা অধিক হলে তিনের অধিক কাতারও করা যাবে। এবং এতে সেই ফযীলতও পাওয়া যাবে।
শরহুল মুসলিম নববী ৭/১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫৮৮৷
প্রয়োজনে
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭১৯
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে ১/২ তাকবীর ছুটে গেলে ছানা, দরুদ, দোয়া পড়ার নিয়ম৷

প্রশ্ন
অনেক সময় জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পরে আসার কারণে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে যায়। পরবর্তীতে ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হওয়ার পর দুআ পড়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যাই। শুরু থেকে পড়ব নাকি ইমামের অনুসরণ করব? কখনো কখনো ইমাম কোন তাকবীরে রয়েছে জানা যায় না। মেহেরবানি করে সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে উপকার করবেন।
উত্তর
জানাযা নামাযের কিছু অংশ ছুটে গেলে জামাতে অংশগ্রহণের পর ইমাম সাহেব কয় তাকবীর দিয়েছেন এবং কোন দুআ পড়ছেন তা জানা গেলে আগন্তুক ঐ সময়ের দুআই পড়বে। আর যদি তা জানা না যায় তাহলে শুরু থেকে ধারাবাহিক নিয়মে ছানা অতপর দুরূদ ও দুআ পড়বে। অবশ্য ইমামের সালামের পর জানাযা দ্রুত উঠিয়ে নিতে লাগলে খাটনী জমিনে থাকা
অবস্থায় অবশিষ্ট তাকবীরগুলো দুআ ছাড়াই আদায় করে নিবে।
-মারাকির ফালাহ পৃ. ৩২৬; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৫৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২০০৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭০৮
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা৷

প্রশ্ন
আমার প্রশ্ন হলো, অনেক দিনের পুরোনো অথবা অল্প দিনের পুরোনো কবরের উপরে বসত বাড়ি তৈরি করা কি বৈধ হবে?
উত্তর
কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা নাজায়েয ও নিন্দনীয় কাজ। এ কাজের দ্বারা কবরবাসীকে অপমান করা হয়। এমনকি কবরের উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না। ”
মুসলিম, হা/ ২১২২
ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন, ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, কবরের উপর মসজিদ,বাড়ি-ঘর ইত্যাদি করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করে গিয়েছেন ।
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫
তবে একান্ত প্রয়োজন হলে, এবং জায়গাটি কবরের জন্য ওয়াক্ফকৃত না হলে, বাড়ি-ঘর বানাতে পারবে৷ এক্ষেত্রে যদি কবর অল্প-পুরোনো বা নূতন হয় তাহলে লাশ উঠিয়ে অন্যত্র কবর স্থানান্তর করতে হবে৷
পক্ষান্তরে যদি কবর অনেক পুরাতন হয় তাহলে সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রেখে সমান করার মাধ্যমে কবর মিটিয়ে দিয়ে উপরে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন।
ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৫৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393



উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৫৮
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

তওবা করলেই কি ধর্ষণের অপরাধ মার্জিত হয়ে যায়?

প্রশ্ন
যে লোক ধর্ষণ করেছে, সে লোক তওবা করলে তাকে যদি আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন, তাহলে, ধর্ষিতা কি তার উপর নির্যাতনের কোন বিচার পাবে না আখেরাতে? আমি এই সম্পর্কে চাই ? হুজুর, একজন মুসলমান হিসাবে আপনার কাছে আমার দাবি এই যে, দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো দিবেন !
উত্তর
কাউকে ধর্ষণ করলে সেখানে দুইটি অপরাধ সংঘটিত হয়। একটি আল্লাহর হক। আরেকটি হল বান্দার হক। আল্লাহর হক হল জিনা করা নিষিদ্ধ। আর ধর্ষণ করার দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে। তাই এতে লোকটি কবীরা গোনাহ করেছে। আর কবীরা গোনাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কায়মানো বাক্যে সহীহ পদ্ধতিতে তওবা করার দ্বারা ক্ষমা হয়ে যায়। আরেকটি হল বান্দার হক। তথা এক্ষেত্রে ধর্ষণকারী ব্যক্তি মহিলার উপর জুলুম করেছে। যদি দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় উক্ত মহিলার কাছ থেকে ক্ষমা না চেয়ে নেয়, তাহলে জুলুমের শাস্তি আখেরাতে পাবে।
‎ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﺘَّﻮْﺑَﺔُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﺍﻟﺴُّﻮﺀَ ﺑِﺠَﻬَﺎﻟَﺔٍ ﺛُﻢَّ
‎ﻳَﺘُﻮﺑُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻳَﺘُﻮﺏُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ
‎ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﺣَﻜِﻴﻤًﺎ ‏[ ٤ : ١٧ ‏] ﻭَﻟَﻴْﺴَﺖِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺑَﺔُ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ
‎ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮَ ﺃَﺣَﺪَﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲ ﺗُﺒْﺖُ
‎ﺍﻟْﺂﻥَ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻤُﻮﺗُﻮﻥَ ﻭَﻫُﻢْ ﻛُﻔَّﺎﺭٌۚ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﺃَﻋْﺘَﺪْﻧَﺎ ﻟَﻬُﻢْ
‎ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﺃَﻟِﻴﻤًﺎ ‏[ ٤ : ١٨ অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}
‎ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
‎ﻭ ﺳﻠﻢ ﻻ ﻳﻠﺞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺭﺟﻞ ﺑﻜﻲ ﻣﻦ ﺧﺸﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺘﻰ
‎ﻳﻌﻮﺩ ﺍﻟﻠﺒﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻀﺮﻉ ﻭﻻ ﻳﺠﺘﻤﻊ ﻏﺒﺎﺭ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ
‎ﻭﺩﺧﺎﻥ ﺟﻨﻬﻢ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪২৭৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৪৩
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

দুধ মেয়ের মীরাস৷

প্রশ্ন
জনৈকা মহিলা ইন্তেকালের সময় ওয়ারিশ বলতে শুধু দু’জন ভাই ও একজন দুধ মেয়ে রেখে যান। আমাদের জানার বিষয় হল, দুধ মেয়ে ওয়ারিশ হিসেবে ঐ মহিলার কোনো সম্পত্তি পাবে কি না? কেউ বলছে পাবে আবার কেউ বলছে পাবে না। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
দুধ সম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজন মীরাস পায় না।
তাই দুধ মেয়ে উক্ত মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদের কোনো হিস্যা পাবে না। -আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৮৩; আলবাহরুর
রায়েক ৮/৪৮৮; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর
৪/৩৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৬২৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষনবাড়িয়া৷
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৩৯
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

নবীজী সাঃ এর পিতা মাতা কি জাহান্নামী নাকি জান্নাতি?

প্রশ্ন
জনাব,
আমি জানতে চায় যে রাসূল এর পিতা-মাতা কি কালেমা পড়েছেন / রাসূল এর প্রতি ঈমান এনেছেন নাকি ? দলিল সহকারে জানালে খুব খুশি হবো………………
উত্তর
এ বিষয়টি জেনে আপনি কী করবেন? এটা জানা কি আপনার জন্য খুবই জরুরী? এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা অহেতুক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সবচে’ উত্তম হল এ বিষয় চুপ থাকা। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন তাদের হালাত কি? এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাই সবচে’ নিরাপদ পদ্ধতি। বিজ্ঞ উলামাগণ এ ব্যাপারে তাই চুপ রয়েছেন। আর চুপ থাকাকেই নিরাপদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি এ ব্যাপারে কথা বলাকে নাজায়েজও বলেছেন
অনেকে।
রাদ্দুল মুহতার-২/১৮৫, কাফেরকে বিবাহ করার অধ্যায়, ফাতাওয়া রহিমীয়া-৩/৫২, আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৭২ তারপরও যেহেতু কিছু ভাই এ বিষয়ে বারবার বক্তব্য দিচ্ছেন। এটিকে মূল বানিয়ে মানুষের সামনে এ বিষয়টি নিয়ে আসছেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও দু’কলম লিখতে বাধ্য হলাম। বাকি আল্লাহ তাআলার কাছে অযথা কথন ও লিখনের গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিস্তারিত- রদ্দুল মুহতার-৩/১৮৫, ৪/২৩১, হাওয়ী লিলফাতওয়া-২/২০২} আসলে এ বিষয়ে ৫টি মত রয়েছে।
যথা-
১–
জাহান্নামী। যেহেতু তারা ঈমান আনতে পারেননি। [আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কথা বলা থেকে হিফাযত করুন!]
২ –
তারা মাজুর। তাই তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি আসবে না।
‎ﻣَّﻦِ ﺍﻫْﺘَﺪَﻯٰ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻬْﺘَﺪِﻱ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻪِۖ ﻭَﻣَﻦ ﺿَﻞَّ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻀِﻞُّ
‎ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎۚ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯٰۗ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻌَﺬِّﺑِﻴﻦَ
‎ﺣَﺘَّﻰٰ ﻧَﺒْﻌَﺚَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ‏[ ١٧ : ١٥ ] যে কেউ সৎপথে চলে,তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়,তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। [সূরা ইসরা-১৫] যেহেতু ঈসা আঃ এর পর রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্ব মুহুর্তে কোন নবী ছিলেন না। তাই এ সময়ে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা জাহান্নামী হবেন না।
৩-
কিয়ামতের ময়দানে তাদের পরীক্ষা করা হবে। সঠিক জবাব দিতে পারলে জান্নাতী হবেন। আর সঠিক জবাব দিতে না পারলে জাহান্নামী হবেন।
৪-
রাসূল সাঃ নবুওয়ত পাবার পর তাদের উভয়কে আবার জিন্দা করা হয়। তখন তারা উভয়ে ঈমান আনয়ন করেন। তারপর আবার ইন্তেকাল
করেন।
৫-
ইমাম রাজী রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা মূলত মিল্লাতে ইবরাহীমীর উপর ইন্তেকাল করেছেন। তারা মুর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। তাই তারা জান্নাতী হবেন। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না। যারা জাহান্নামী হবার দাবি করেন। তাদের দলীল হল মুসলিম, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের হাদীস। যাতে নবীজী সাঃ এর পিতামাতার জন্য নবীজী সাঃ এর দুআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং রাসূল সাঃ এক সাহাবীর পিতা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন যে, আমারও তোমার পিতা জাহান্নামী। এ হাদীসের জবাব হল, এটি রাসূল সাঃ বলেছেন তার পিতামাতার আসল হালাত সম্পর্কে তখন তিনি জানতেন না, তাই বলেছেন। আসলে তারা জান্নাতী। {রদ্দুল মুহতার, মুরতাদ অধ্যায়-৪/২৩১] আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় ও নাজুক বিষয়ে অহেতুক আলোচনা থেকে মুক্ত থেকে তার বন্দেগী করার তৌফিক দান করুন। আমীন। এ বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন- ‎1 ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻟﻤﻨﺔ ﻓﻲ ﺃﻥ ﺃﺑﻮﻱ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ
‎ﺍﻟﺠﻨﺔ
‎2 ﻭﻣﺴﺎﻟﻚ ﺍﻟﺤﻨﻔﺎ ﻓﻲ ﻭﺍﻟﺪﻱ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ‎3 ﻭﺍﻟﺪﺭﺝ ﺍﻟﻤﻨﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﺍﻵﺑﺎﺀ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ‎4 ﻭﺍﻟﻤﻘﺎﻡ ﺍﻟﺴﻨﺪﺳﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺴﺒﺔ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻮﻳﺔ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৩৮
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

নবীজী সাঃ এর পিতা মাতা কি জাহান্নামী নাকি জান্নাতি?

প্রশ্ন
জনাব,
আমি জানতে চায় যে রাসূল এর পিতা-মাতা কি কালেমা পড়েছেন / রাসূল এর প্রতি ঈমান এনেছেন নাকি ? দলিল সহকারে জানালে খুব খুশি হবো………………
উত্তর
এ বিষয়টি জেনে আপনি কী করবেন? এটা জানা কি আপনার জন্য খুবই জরুরী? এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা অহেতুক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সবচে’ উত্তম হল এ বিষয় চুপ থাকা। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন তাদের হালাত কি? এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাই সবচে’ নিরাপদ পদ্ধতি। বিজ্ঞ উলামাগণ এ ব্যাপারে তাই চুপ রয়েছেন। আর চুপ থাকাকেই নিরাপদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি এ ব্যাপারে কথা বলাকে নাজায়েজও বলেছেন
অনেকে।
রাদ্দুল মুহতার-২/১৮৫, কাফেরকে বিবাহ করার অধ্যায়, ফাতাওয়া রহিমীয়া-৩/৫২, আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৭২ তারপরও যেহেতু কিছু ভাই এ বিষয়ে বারবার বক্তব্য দিচ্ছেন। এটিকে মূল বানিয়ে মানুষের সামনে এ বিষয়টি নিয়ে আসছেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও দু’কলম লিখতে বাধ্য হলাম। বাকি আল্লাহ তাআলার কাছে অযথা কথন ও লিখনের গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিস্তারিত- রদ্দুল মুহতার-৩/১৮৫, ৪/২৩১, হাওয়ী লিলফাতওয়া-২/২০২} আসলে এ বিষয়ে ৫টি মত রয়েছে।
যথা-
১–
জাহান্নামী। যেহেতু তারা ঈমান আনতে পারেননি। [আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কথা বলা থেকে হিফাযত করুন!]
২ –
তারা মাজুর। তাই তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি আসবে না।
‎ﻣَّﻦِ ﺍﻫْﺘَﺪَﻯٰ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻬْﺘَﺪِﻱ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻪِۖ ﻭَﻣَﻦ ﺿَﻞَّ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻀِﻞُّ
‎ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎۚ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯٰۗ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻌَﺬِّﺑِﻴﻦَ
‎ﺣَﺘَّﻰٰ ﻧَﺒْﻌَﺚَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ‏[ ١٧ : ١٥ ] যে কেউ সৎপথে চলে,তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়,তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। [সূরা ইসরা-১৫] যেহেতু ঈসা আঃ এর পর রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্ব মুহুর্তে কোন নবী ছিলেন না। তাই এ সময়ে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা জাহান্নামী হবেন না।
৩-
কিয়ামতের ময়দানে তাদের পরীক্ষা করা হবে। সঠিক জবাব দিতে পারলে জান্নাতী হবেন। আর সঠিক জবাব দিতে না পারলে জাহান্নামী হবেন।
৪-
রাসূল সাঃ নবুওয়ত পাবার পর তাদের উভয়কে আবার জিন্দা করা হয়। তখন তারা উভয়ে ঈমান আনয়ন করেন। তারপর আবার ইন্তেকাল
করেন।
৫-
ইমাম রাজী রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা মূলত মিল্লাতে ইবরাহীমীর উপর ইন্তেকাল করেছেন। তারা মুর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। তাই তারা জান্নাতী হবেন। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না। যারা জাহান্নামী হবার দাবি করেন। তাদের দলীল হল মুসলিম, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের হাদীস। যাতে নবীজী সাঃ এর পিতামাতার জন্য নবীজী সাঃ এর দুআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং রাসূল সাঃ এক সাহাবীর পিতা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন যে, আমারও তোমার পিতা জাহান্নামী। এ হাদীসের জবাব হল, এটি রাসূল সাঃ বলেছেন তার পিতামাতার আসল হালাত সম্পর্কে তখন তিনি জানতেন না, তাই বলেছেন। আসলে তারা জান্নাতী। {রদ্দুল মুহতার, মুরতাদ অধ্যায়-৪/২৩১] আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় ও নাজুক বিষয়ে অহেতুক আলোচনা থেকে মুক্ত থেকে তার বন্দেগী করার তৌফিক দান করুন। আমীন। এ বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন- ‎1 ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻟﻤﻨﺔ ﻓﻲ ﺃﻥ ﺃﺑﻮﻱ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ
‎ﺍﻟﺠﻨﺔ
‎2 ﻭﻣﺴﺎﻟﻚ ﺍﻟﺤﻨﻔﺎ ﻓﻲ ﻭﺍﻟﺪﻱ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ‎3 ﻭﺍﻟﺪﺭﺝ ﺍﻟﻤﻨﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﺍﻵﺑﺎﺀ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ‎4 ﻭﺍﻟﻤﻘﺎﻡ ﺍﻟﺴﻨﺪﺳﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺴﺒﺔ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻮﻳﺔ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬১৮
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

হারাম জিনিষ দ্বারা কবিরাজী চিকিৎসা৷

প্রশ্ন
একজন কবিরাজ চিকিৎসার জন্য তিনটি পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা পড়িয়ে দাফন করতে বলেছে। এভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা কি জায়েয?
উত্তর
কবিরাজের নির্দেশিত ঐ চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ শরীয়তপরিপন্থী। সুতরাং তার কথা অনুযায়ী আমল করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা এতে একাধিক শরীয়তবিরোধী কাজ রয়েছে। যথা- ১. পুতুল বানানো, যা নাজায়েয। হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন সতর্কবাণী এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রতিকৃতি তৈরি করে।- সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৫০ ২. পুতুলের জানাযা পড়া। জানাযা শরীয়তের একটি নির্ধারিত ইবাদত, যা মৃতের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। কোনো পুতুলের জন্য জানাযা পড়া শরয়ী হুকুমের চরম বিকৃতি, যা বিদআত হওয়ার পাশাপাশি কুফরি তুল্য গুনাহ। ৩. চিত্র, মূর্তি, ভাস্কর্য সামনে রেখে পূজা-অর্চনা করা মুশরিক-পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের কাজ। পুতুল সামনে রেখে জানাযা পড়ার দৃশ্যটি সেসব শিরকী কাজের সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এভাবেই মূর্তিপূজার দ্বার উন্মোচন হয়। ৪. এছাড়া মৃত ব্যক্তির মতো করে পুতুল দাফন করা একটি গর্হিত কাজ, শরয়ী বিধানের সাথে ঠাট্টার শামিল। তাই কোনো ঈমানদারের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্পূর্ণ হারাম। আর এ ধরনের কবিরাজ থেকে ঝাড়-ফুঁক নেওয়া ও তদবীর গ্রহণ করাও নাজায়েয। -সহীহ বুখারী, ১/১১২, আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; ফাতহুল বারী ১০/২০৬; মাজমাউল আনহুর ২/৫১০৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৩৯
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে গেলে করনীয়৷

প্রশ্ন
অনেক সময় জানাযায় নামাযে বিলম্বে উপস্থিত হওয়ার কারণে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে যায়। এ অবস্থায় ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হওয়ার পর দুআ পড়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যাই। শুরু থেকে পড়ব নাকি ইমামের অনুসরণ করব? কখনো কখনো ইমাম কোন তাকবীরে রয়েছে জানা যায় না। মেহেরবানি করে সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ জামাতে শরিক হলে নিয়ম হল, ইমাম সাহেব সর্বশেষ যে তাকবীর বলেছেন নবাগত ব্যক্তি ঐ সময়ের দুআই পড়বে। আর ইমাম কোন তাকবীর বলেছেন তা জানা না গেলে সানা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে দুআগুলো পড়বে। অতপর ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেললে চার তাকবীরের যে কয়টি সে ইমামের সাথে পায়নি সেই কয় তাকবীরগুলো খাটিয়া জমিন থেকে উঠানোর আগে আগে একাকি পড়ে সালাম ফিরাবে। -মারাকিল ফালাহ ৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮০৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫৩৪
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামায তিন তাকবীরে পড়লে করনীয়৷

প্রশ্ন
একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাকে অবগত করার পর তিনি বলেন, সমস্যা নেই। নামায সহীহ হয়েছে। তাকবীর কম হলে নামায অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবকরা এ কথায় সন্তুষ্ট না হয়ে পরের দিন অন্য ইমাম এনে কবরের উপর নামায পড়েছে। প্রশ্ন হল, জানাযা সহীহ হয়েছে কি না? কবরের উপর দ্বিতীয় জানাযা পড়াতে কোনো অসুবিধা হবে কি না?
উত্তর
চার তাকবীরের কম হলে জানাযা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা নামাযে একটি তাকবীর কম হওয়ায় সেটি আদায় হয়নি। আর পরবর্তীতে কবরকে সামনে নিয়ে যে জানাযা পড়া হয়েছে তা আদায় হয়েছে এবং শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কারণ জানাযা ছাড়া দাফন করা হলে কিংবা আদায়কৃত নামায ফাসেদ হলে দাফনের পরও লাশ পচে যাওয়ার আগে কবরকে সামনে নিয়ে জানাযা পড়া যায়। -সহীহ বুখারী ১/১৭৭-১৭৮; সহীহ মুসলিম ১/৩০৯; উমদাতুল কারী ৮/১৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৫১৮
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুর জান্নাত জাহান্নাম৷

প্রশ্ন
আল্লাহ্ কেন সকল মানুষকে মুসলিম পরিবারে জন্ম না দিয়ে হিন্দু, খ্রিস্টান প্রভৃতি অমুসলিম পরিবারে জন্ম দেন? এতে ওই শিশুর কি দোষ?
উত্তর
অমুসলিম পরিবারে কোন শিশু জন্ম নেয়া কোন অপরাধ নয়। এতে শিশুটিরও কোন দোষ নেই। এ কারণেই হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে প্রতিটি শিশু যার ঔরষেই জন্ম গ্রহণ করুক না কেন, সে নাবালক থাকা অবস্থায় মুসলিমই থাকে। তারপর বড় হলে তার পিতা মাতা তাকে ইহুদী খৃষ্টান ইত্যাদি কাফির বানায়।
‎ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ
‎ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻛُﻞُّ ﻣَﻮْﻟُﻮﺩٍ ﻳُﻮﻟَﺪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻔِﻄْﺮَﺓِ،
‎ﻓَﺄَﺑَﻮَﺍﻩُ ﻳُﻬَﻮِّﺩَﺍﻧِﻪِ، ﺃَﻭْ ﻳُﻨَﺼِّﺮَﺍﻧِﻪِ، ﺃَﻭْ ﻳُﻤَﺠِّﺴَﺎﻧِﻪِ، ﻛَﻤَﺜَﻞِ
‎ﺍﻟﺒَﻬِﻴﻤَﺔِ ﺗُﻨْﺘَﺞُ ﺍﻟﺒَﻬِﻴﻤَﺔَ ﻫَﻞْ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺟَﺪْﻋَﺎﺀَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে [জন্মগত] কানকাটা দেখেছ? [বুখারী, হাদীস
নং-১৩৮৫]
উক্ত সন্তান যদি ঐ শিশু তথা নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতী হবে। কিন্তু বালেগ হবার পর, যখন তার বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হয়। তখন আল্লাহর দেয়া আকল দিয়ে তার রবকে চিনে নেয়া দায়িত্ব। মানুষকে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা করেছেন আকল দিয়ে। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কারণ হল, মানুষের আকল-বুদ্ধি, বিবেক আছে। অন্য কোন প্রাণীর তা নেই। একজন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন মানুষই বুঝতে পারবে যে, সামান্য একটি গাড়ি ইচ্ছেমত চলতে পারে না। নিজে নির্মিত হতে পারে না, এর জন্য নির্মাতা লাগে, গাড়ি চলতে ড্রাইভার লাগে। তো এ বিশ্ব চরাচর, এ সুবিশাল সৌর জগত, অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র এসব কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে না। নিশ্চয় কোন নিপূণ কারিগর তার সুনিপূণ হাতে নির্মাণ করেছেন। স্বাভাবিক বিবেকই ব্যক্তিকে এক মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যাবে। এরপর তার অনুসন্ধিৎসা সত্য ধর্ম খুঁজে নিতে সহায়তা করবে। এ কারণে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস করা ও তার সময়কার সত্য ধর্মের উপর ঈমান আনয়ন করা ছাড়াই মৃত্যু বরণ করে, তাহলেই কেবল সে জাহান্নামী হবে। নাবালেগ তথা শিশু অবস্থায় কাফির ব্যক্তির সন্তান মারা গেলে উক্ত শিশুর কোন শাস্তি নেই। সহীহ বুখারীর ১৩৮৬ নং বর্ণনায় একটি দীর্ঘ হাদীস এসেছে। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘ হাদীসের এক পর্যায়ে এসেছেঃ “আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক বালিকা ছিল।……..”। এর ব্যাখ্যায় পরে এসেছে-“গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি ইবরাহীম আলাইহি সালাম এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৮৬, ইফাবা-১৩০৩] উক্ত হাদীসে এসেছে মানুষের শিশু সন্তানরা জান্নাতে ইবরাহীম আঃ এর কাছে থাকবে। হাদীসে শব্দ হল, মানুষ। মানুষের মাঝে মুসলিম ও বিধর্মী সবাই শামিল। এ কারণেই ইমাম নববী রহঃ বিধর্মীদের নাবালগ মৃত সন্তানদের জান্নাতী হবার বক্তব্যকে বিশুদ্ধ বলেছেন।
‎ﻭﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺍﻟﺬﻯ ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻤﺤﻘﻘﻮﻥ
‎ﺍﻧﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏( ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﻴﺢ ‎ﻣﺴﻠﻢ - 2/337 উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৪০১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার ইমামতির অসিয়ত করলে সে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরী কিনা৷

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এই অসিয়ত করেছিল যে, তার জানাযা নামায তার নাতী
পড়াবে। কিন্তু নাতীর পৌঁছতে দেরি করায় মৃত
ব্যক্তির ছেলে জানাযা পড়ায়। প্রশ্ন হল, অসিয়ত ভঙ্গ করে ছেলের নামায পড়ানো কি ঠিক হয়েছে? উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তির ছেলেও নামায পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন।
উত্তর
কারো ব্যাপারে জানাযার ইমামতির অসিয়ত করলে সে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি নয়; বরং মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ানোর ব্যাপারে শরীয়ত যাদেরকে
প্রাধান্য দিয়েছে তারাই এর বেশি হকদার। অবশ্য
হকদার ব্যক্তি যদি মৃতের অসিয়তকৃত ব্যক্তি বা
অন্য কাউকে ইমামতির অনুমতি দেয় তবে সেটারও সুযোগ আছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতের অভিভাবক হিসেবে ছেলের জানাযা পড়ানো নিয়মসম্মতই হয়েছে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী
আলাল মারাকী ৩২৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৭৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একজন কবিরাজ চিকিৎসার জন্য তিনটি পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা...

প্রশ্ন
একজন কবিরাজ চিকিৎসার জন্য তিনটি পুতুল বানিয়ে মানুষের মতো জানাযা পড়িয়ে দাফন করতে বলেছে। এভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা কি জায়েয?
উত্তর
কবিরাজের নির্দেশিত ঐ চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ শরীয়তপরিপন্থী। সুতরাং তার কথা অনুযায়ী আমল করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা এতে একাধিক শরীয়তবিরোধী কাজ রয়েছে। যথা- ১. পুতুল বানানো, যা নাজায়েয। হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন সতর্কবাণী এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রতিকৃতি তৈরি করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস :৫৯৫০ ২. পুতুলের জানাযা পড়া। জানাযা শরীয়তের একটি নির্ধারিত ইবাদত, যা মৃতের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। কোনো পুতুলের জন্য জানাযা পড়া শরয়ী হুকুমের চরম বিকৃতি, যা বিদআত হওয়ার পাশাপাশি কুফরি তুল্য
গুনাহ।
৩. চিত্র, মূর্তি, ভাস্কর্য সামনে রেখে পূজা-অর্চনা করা মুশরিক- পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের কাজ। পুতুল সামনে রেখে জানাযা পড়ার দৃশ্যটি সেসব শিরকী কাজের সঙ্গেই সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এভাবেই মূর্তিপূজার দ্বার উন্মোচন হয়। ৪. এছাড়া মৃত ব্যক্তির মতো করে পুতুল দাফন করা একটি গর্হিত কাজ, শরয়ী বিধানের সাথে ঠাট্টার শামিল। তাই কোনো ঈমানদারের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্পূর্ণ হারাম। আর এ ধরনের কবিরাজ থেকে ঝাড়-ফুঁক নেওয়া ও তদবীর গ্রহণ করাও নাজায়েয। -সহীহ বুখারী, ১/১১২, হাদীস : ৪৩৪; আলইলাম, ইবনে হাজার হায়তামী ২/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭০; ফাতহুল বারী ১০/২০৬;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৫০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয...

প্রশ্ন
আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। কিন্তু সেদিন আমাদের এলাকার এক লোক বললেন, ভক্তি- শ্রদ্ধার জন্য পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয। তার এ কথা কতটুকু ঠিক? দয়া করে কুরআন- হাদীসের দলিল-প্রমাণসহ জানাবেন।
উত্তর
সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। তা যে উদ্দেশ্যই হোক না কেন। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। গাইরুল্লাহকে সিজদা করা যে হারাম তা কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলিলাদি দ্বারা প্রমাণিত। অতএব যারা বলে, ভক্তি-শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা জায়েয তাদের এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এটি হারাম হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কুরআন-হাদীসের কয়েকটি দলিল উল্লেখ করা হল। ১। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
‎ﻭَّ ﺍَﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺴٰﺠِﺪَ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺪْﻋُﻮْﺍ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﺍَﺣَﺪًﺍۙ
নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। -সূরা জিন (৭২) : ১৮ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা, তলক ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭6. ২। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার অভিশাপ ইহুদী-নাসারাদের উপর। তারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০ ৩। হযরত জুনদুব রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ইন্তেকালের তিনদিন আগে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২ -সূরা জিন : ১৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১; সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬৮;
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে তিন কাতার করার হুকুম কী? এটা কি সুন্নত-মুস্তাহাব...

প্রশ্ন
জানাযার নামাযে তিন কাতার করার হুকুম কী?
এটা কি সুন্নত-মুস্তাহাব কিছু বা এতে কি বিশেষ
কোনো ফযীলত আছে?
উত্তর
হাদীস শরীফে এসেছে, মালেক ইবনে হুবায়রা রা.
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমান
মারা যাওয়ার পর তার জানাযায় যদি তিন কাতার
মুসলমান শরিক হয় তাহলে তার জন্য (জান্নাত)
অবধারিত। সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদসহ
বহু হাদীস গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রেওয়াতে এটাও আছে যে, বর্ণনাকারী মালেক
ইবনে হুবায়রা রা. যখন দেখতেন লোক সংখ্যা অল্প
তখন তাদেরকে (উপস্থিত লোকদেরকে) তিন কাতার করে দিতেন। ফকীহগণ এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে জানাযার নামাযে মুসল্লি সংখ্যা কম হলেও যথাসম্ভব তাদেরকে তিন কাতারে বিভক্ত করে
দাঁড় করানো উত্তম বলেছেন। তবে মুসল্লি সংখ্যা
অধিক হলে তিনের অধিক কাতারও করা যাবে। এবং এতে সেই ফযীলতও পাওয়া যাবে৷ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৫৮; জামে তিরমিযী,
হাদীস ১০২৮; শরহুল মুসলিম নববী ৭/১৭; শরহুল মুনইয়াহ
৫৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১৩; আলহাদিয়্যাতুল
আলাইয়্যাহ ১২৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭৪০
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের বাড়ির পাশে ১৯৬৮ সালে আমার দাদিকে কবর দেওয়া হয়।...

প্রশ্ন
আমাদের বাড়ির পাশে ১৯৬৮ সালে আমার দাদিকে কবর
দেওয়া হয়। বর্তমানে যথাযথভাবে সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছে
না। এখন কবরটিকে ভেঙে তার উপর বসবাসের
উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না?
দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে
যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু
প্রবল এবং প্রশ্নের বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে
যে, কবরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় অবস্থিত তাই
কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং
সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।
তবে কবরটি যদি ওয়াকফিয়া জায়গায় হত তাহলে পুরাতন হলেও
তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হত না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫;
তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; খানিয়া
৩/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭০-৪৭১

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১৩
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকে...

প্রশ্ন
জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকে এক সালামে এক হাত করে দুই সালামে দুই হাত ছেড়ে দেয়। এর সঠিক পদ্ধতি দলিলসহ বর্ণনা করলে উপকৃত হব।
উত্তর
জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় হাত কখন ছাড়বে- এ সম্পর্কে ফিকহবিদগণ থেকে দুই ধরনের মত রয়েছে। একটি মত হল, চতুর্থ তাকবীর বলার পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। আরেকটি মত হল, উভয় সালাম ফিরানো পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখবে। সালাম ফিরানোর পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে। সুতরাং জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় উপরোক্ত যে কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যেতে পারে। আর প্রশ্নে যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ফিকহী দৃষ্টিকোণ থেকে তা ঠিক মনে হয় না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫; আসসিআয়াহ ২/১৫৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭-৪৮৮
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭১১
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

ক) মায়্যেতের গোসলদাতা ও দাফনকার্য সম্পাদনকারী যেমন, কবর খননকারী, বাঁশ...

প্রশ্ন
ক) মায়্যেতের গোসলদাতা ও দাফনকার্য সম্পাদনকারী যেমন, কবর খননকারী, বাঁশ কর্তনকারী ইত্যাদি লোকদেরকে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোনো বিনিময় দেওয়া যাবে কি না? খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়- চোপড় ও অন্যান্য আসবাবপত্রের হুকুম কী? গ) মাইয়্যেতের দাফনকার্য শেষ হলে কবরের পাশে অবস্থান করে কী কী আমল করা যেতে পারে?
উত্তর
ক) হাঁ, মায়্যেতের গোসলদাতা, কবর খননকারী ও তার সহযোগীদেরকে বিনিময় দেওয়া জায়েয। তবে এসব কাজ বিনিময়হীনভাবে করাই উত্তম। খ) মায়্যেতের পরিধেয় কাপড়, আসবাবপত্রও মীরাসের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলোও মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে। তবে সকল ওয়ারিশ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগুলো দান করে দিতে চায় তবে তাও জায়েয
আছে।
গ) মায়্যেতের দাফন শেষে কবরের পাশে অবস্থান করে নিম্নের আমলগুলো করার কথা হাদীসে এসেছে। ১। মৃতের মাগফিরাতের জন্য এবং
কবরের সওয়ালের জওয়াবে অটল থাকার জন্য দুআ করা। হযরত উসমান রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করো এবং (সওয়ালের-
জওয়াবে) অটল থাকার জন্য দুআ করো। কেননা এখনই তাকে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩
২। মৃতের মাথার দিকে অবস্থান
করে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষের কিছু অংশ তিলাওয়াত করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. লাশ দাফনের পর তার মাথার দিকে অবস্থান করে সূরা বাকারার শুরু এবং
শেষের অংশ পড়া পছন্দ করতেন। -সুনানে বায়হাকী ৪/৫৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭০৯
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এলাকার...

প্রশ্ন
আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এলাকার সামাজিক কবরস্থানটা মুর্দা দাফন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন কি এ কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার মুর্দা দাফন করা যাবে? এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে, কবরস্থানে মাটি সংস্কার করে আবার দাফন করা যাবে। আবার কেউ বলছে, এখন প্রত্যেকে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানের ব্যবস্থা করে সেখানে দাফন করবে। দয়া করে এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন। আমরা শরয়ী সমাধানের প্রতীক্ষায় আছি।
উত্তর
কবর পুরাতন হওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সেখানে নতুন কবর দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের ঐ কবরস্থানের পুরাতন কবরের এলাকায় সংস্কার করে সেখানে নতুন করে কবর দেওয়া যাবে। অবশ্য কবর খননের সময় সেখানে কোনো হাড্ডি ইত্যাদি পাওয়া গেলে তা কবরের এক পাশে বা ভিন্ন স্থানে দাফন করে দিবে। তবে কম সময়ের কবর, যেগুলোতে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয়নি সেখানে বিশেষ ওজর ছাড়া নতুন করে কবর দেওয়া যাবে না। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩৭০৮
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারি-২০১৬
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যথারীতি জানাযা-দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর...

প্রশ্ন
জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যথারীতি জানাযা-দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর কিছু মুসল্লি বলাবলি করছে যে, ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে তিন তাকবীর বলেছেন। ইমাম সাহেব নিশ্চিতভাবে বলছেন যে, তিনি চার তাকবীরই বলেছেন। এভাবে তিন দিন গত হয়েছে। এখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো করণীয় আছে কি না জানাবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চার তাকবীর বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে ইমাম সাহেব যেহেতু নিশ্চিত তাই তাঁর কথাই গ্রহণযোগ্য হবে এবং উক্ত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। এছাড়া মুসল্লিদের মাঝে সংশয় থাকলে তৎক্ষণাতই বলা কর্তব্য ছিল। তা না করে দাফনের পর বলাটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এখন এ নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহে লিপ্ত হওয়া ঠিক হবে না। -আলবাহরুর রায়েক ২/১০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৭৪
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম...

প্রশ্ন
একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাকে অবগত করার পর তিনি বলেন, সমস্যা নেই। নামায সহীহ হয়েছে। তাকবীর কম হলে নামায অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবকরা এ কথায় সন্তুষ্ট না
হয়ে পরের দিন অন্য ইমাম এনে কবরের উপর নামায পড়েছে। প্রশ্ন হল, জানাযা সহীহ হয়েছে কি না? কবরের উপর দ্বিতীয় জানাযা পড়াতে কোনো অসুবিধা হবে কি না?
উত্তর
চার তাকবীরের কম হলে জানাযা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা নামাযে একটি তাকবীর কম হওয়ায় সেটি আদায় হয়নি। আর পরবর্তীতে কবরকে সামনে নিয়ে যে জানাযা পড়া হয়েছে তা আদায় হয়েছে এবং শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কারণ জানাযা ছাড়া দাফন করা হলে কিংবা আদায়কৃত নামায ফাসেদ হলে দাফনের পরও লাশ পচে যাওয়ার আগে কবরকে সামনে নিয়ে জানাযা পড়া যায়।
-সহীহ বুখারী ১/১৭৭-১৭৮; সহীহ মুসলিম ১/৩০৯; উমদাতুল কারী ৮/১৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৭১
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা...

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই ইন্তেকাল করেছেন। মেঝ ভাই ঢাকা থাকেন। তার দিকে লক্ষ্য করেই জানাযার সময় ঠিক করা হয়, কিন্তু তিনি
নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে
পারেননি। তার জন্য অপেক্ষা করতে চাইলে লোকজন বিরক্তিবোধ করে। তাই আমি জানাযা পড়িয়ে দিই।
মেঝ ভাইও আলেম। তার সাথে জানাযা পড়ার জন্য অনেকেই প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি। জানাযা শেষ হওয়ার পাঁচ-সাত মিনিট পর মেঝ ভাই পৌঁছে যান। তখন যারা প্রথম জানাযায় শরীক হয়নি তারা মেঝ ভাইকে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ানোর জন্য খুবই জোর করে। কিন্তু মেঝ ভাই তা করেননি। ফলে লোকজন তার সাথে খুবই রাগ করেন এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি মেঝ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে মৃত বড় ভাইয়ের জানাযা পড়ানো ঠিক বা জায়েয হয়েছে? আর মেঝ ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার ছিল কি না? তিনিও তো বড় ভাইয়ের ওলি এবং আমার চেয়ে যোগ্যও বেশি।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আপনার মেঝ ভাই যেহেতু উপস্থিত হতে পারেনি তাই আপনার জন্য জানাযা পড়ানো ঠিক হয়েছে এবং জায়েযও হয়েছে। আর
এক্ষেত্রে মেঝ ভাইয়ের দ্বিতীয়বার জানাযা না
পড়াও শরীয়তসম্মত হয়েছে। কেননা মৃতের এক ভাইয়ের উপস্থিতিতে জানাযা পড়া
হয়ে গেলে অন্য ভাইয়ের জন্য দ্বিতীয়বার জানাযা পড়ার অধিকার থাকে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০, ২/২২৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬২-৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৬৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু উপলক্ষ্যে বিবাহের ন্যায় খাবারের...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু উপলক্ষ্যে বিবাহের ন্যায় খাবারের আয়োজন করা হয় এবং জানাযার পর এলান করা হয় যে, খাবার না খেয়ে কেউ যেন না যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃতের বাড়িতে এমন আয়োজন করার বিধান কী? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
কেউ মারা গেলে মৃতের বাড়িতে দাওয়াতের আয়োজন করা বিদআত। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ গণ্য করা হত। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা মৃতের দাফন কার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন) এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৯০৫ এ ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। কেননা দাওয়াতের আয়োজন তো করা হয় কোনো আনন্দ উৎসবের সময়, কোনো বেদনার মুহূর্তে নয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত তো হল মৃতের পরিবার- পরিজনদের জন্য প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা, যেন তাদেরকে মৃতের জন্য ব্যস্ততা ও শোকাহত থাকার কারণে অনাহারে থাকতে না হয়। আর প্রশ্নোক্ত কাজটি এর সম্পূর্ণ উল্টো ও বিপরীত। তাই এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬১২; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০; ইলাউস সুনান ৮/৩২৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২৫০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

মুসলিম, যারা কালিমা পড়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে ঠিকমতো ইবাদত করেনি।...

প্রশ্ন
মুসলিম, যারা কালিমা পড়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে ঠিকমতো ইবাদত করেনি। যেমন কখনো কখনো নামায পড়েছে, আবার পড়েনি। তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে? নাকি আযাবের পর জান্নাত লাভ করবে?
উত্তর
যেসব ঈমানদার ইসলামের বিধি- নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেনি এবং গুনাহ থেকে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা আপন অনুগ্রহে ক্ষমাও করে দিতে পারেন অথবা তাদের কৃতকর্মের কারণে শাস্তিও দিতে পারেন। তবে গুনাহের কারণে তারা জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না; বরং এক সময় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমানের কারণে নিজ অনুগ্রহে জান্নাত দিবেন। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করা ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে কেউ আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করল সে মারাত্মক অপবাদ আরোপ
করল।
-সূরা নিসা : ৪৮ হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ বিশ্বাসের উপর মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো মাবুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬ অপর হাদীসে আছে, আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতপর আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেন,
যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম হতে বের
করে আনো। তারপর তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতপর তাদেরকে বৃষ্টির নদীতে বা হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে। যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না,সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের বক্র হয়ে
গজায়?
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২২; উমদাতুল কারী ১/১০৪;আলফিকহুল আকবার ৫৭
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩২২৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে যে, কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়-স্বজনদের...

প্রশ্ন
বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে যে, কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতির জন্য মাইয়েতের গোসল, কাফন-দাফন, জানাযা ইত্যাদি বিলম্ব করা হয়। জানার বিষয় হল, মাইয়েতের নিকটাত্মীয়ের জন্য কাফন- দাফন বিলম্ব করা যেতে পারে কি না এবং এভাবে প্রচলিত নিয়মে বিলম্ব করা বৈধ হবে কি না? উত্তর প্রদান করে উপকৃত করার আবেদন রইল।
উত্তর
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুত সম্পাদন করা উচিত। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর মৃতের নিকটাত্মীয়, বন্ধু- বান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদেরকে তার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া মুস্তাহাব। যাতে তারা জানাযায় শরিক হতে পারে। তবে কোনো আত্মীয়ের উপস্থিতি বা তাদের দেখানোর জন্য মৃতের দাফনে বিলম্ব করা অনুচিত। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা-আত্মীয় স্বজন যত দূরেই থাকুক, মৃতের মুখ দেখানোর অপেক্ষায় গোসল, কাফনদাফন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিনও বিলম্ব করা হয়-যা কোনো ক্রমেই শরীয়তসম্মত নয়। -সহীহ বুখারী ১/১৭৫; ফাতহুল বারী ৩/২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০০৪
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকার কিছু লোক স্টিমারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সাগরের মাঝে...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার কিছু লোক স্টিমারে করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। সাগরের মাঝে গিয়ে তাদের একজন মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় তাদের করনীয় কী-তা তাদের জানা ছিল না। তাই তারা ঐ মৃত ব্যক্তিকে নাকি সাগরে ফেলে দেয়। তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, সাগরের মাঝে কেউ এভাবে মারা গেলে তার কাফন-দাফন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী?
উত্তর
নদী ও সমুদ্রপথে কেউ মারা গেলে সেক্ষেত্রে করণীয় হল, নৌযানের অবস্থান যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং তাতে অবতরণ করাও সম্ভব হয় অথবা লাশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটার আগে আগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় তাহলে তাকে যথানিয়মে ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি ভূমিতে অবতরণ করার আগেই লাশের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে এক্ষেত্রে নৌযানেই তার গোসল, কাফন এবং জানাযা নামায সম্পন্ন করা হবে। এরপর লাশ পানিতে ছেড়ে দিবে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে তার গায়ে কোনো ভারি বস্তু, যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে যেন লাশ পানিতে ভেসে না থাকে বরং নিচে চলে যায়। -ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া
৩/৮৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮৩২
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের এলাকায় ব্যাপকভাবে রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তির ইন্তেকাল হলে...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় ব্যাপকভাবে রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তির ইন্তেকাল হলে তার পরিবার খতমে কুরআন বা খতমে তাহলীলের ব্যবস্থা করে। এবং যারা পড়ে তাদের জন্য খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেক সময় টাকাও দেওয়া হয়।
জানার বিষয় হল, মৃতের উদ্দেশ্যে তাহলীল খতম পড়ে বা কুরআন তিলাওয়াত করে টাকা নেওয়া বা খাবার খাওয়া বৈধ হবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করে কিংবা কালিমা তায়্যিবা বা কোনো যিকির করে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নেই। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করো না।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৫৫২৯
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়ো এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে বিনিময় চাইবে। -মুসনাদে আহমাদ,হাদীস : ১৯৯১৭
আরেক বর্ণনায় আছে, তাবেয়ী যাযান রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে মানুষ থেকে এর বিনিময় গ্রহণ করে সে যখন হাশরের মাঠে
উঠবে তখন তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না। শুধু হাড্ডি থাকবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৮২৪
উক্ত হাদীসসমূহের আলোকে ফকীহগণ
বলেন, কোনো কিছুর বিনিময়ে ঈসালে সওয়াবের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করলে কিংবা কোনো যিকির করলে কোনো সওয়াব হবে না। বরং বিনিময় নিয়ে পড়ার কারণে টাকাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ে গুনাহগার হবে।
উল্লেখ্য, যদি শুধু তিলাওয়াতকারী বা তাহলীল পাঠকারীর জন্যই খাবারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে এবং পাঠকারীর জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে। আর যদি ব্যাপকভাবে দাওয়াতের আয়োজন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে খতম পাঠকারীদের জন্য খাবার খাওয়াটা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে না।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৫৫২৯, ১৯৯১৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৮২৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী
২৩/৪১
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮২৪
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমার বোনের শাশুড়ি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে আমার...

প্রশ্ন
আমার বোনের শাশুড়ি কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে আমার বোনকে বলেছিলেন, বৌ, আমার গলার হারটা তুমি নাও। আমার বোন তখন নেয়নি। বলেছিল, আম্মা, এখন রাখেন। পরে নিব। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এখন তার মেয়েরা বলছে যে, আম্মা ভাবিকে কখনো
এমন কথা বলেনি। সুতরাং ভাবি এটা নিতে পারবে না। আমার প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় ঐ হারটি কি আমার বোন পাবে?
উত্তর
হেবাকৃত বস্তু হস্তগত করার পূর্বে তাতে
মালিকানা সাব্যস্ত হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত
ক্ষেত্রে আপনার বোনের শাশুড়ি যদি তাকে ঐ হারটি নেওয়ার কথা বলেও থাকেন তবুও সে ঐ
হারটির মালিক হবে না। কেননা প্রশ্নের বর্ণনা
অনুযায়ী আপনার বোন ঐ হারটি তখন গ্রহণ
করেনি এবং পরবর্তীতে শাশুড়ির জীবদ্দশাতেও তা
নেয়নি। তাই ঐ হারটি মরহুমার মীরাছের অন্তর্ভুক্ত হবে। সকল ওয়ারিশ তাদের অংশ অনুযায়ী এর মালিক হবে। -শরহুল মাজাল্লাহ ৩/৩৬২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৭৪
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৮১৩
তারিখ: ১-মে-২০১৫
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে...

প্রশ্ন
কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে চেনার
কোনো উপায় থাকে না যে সে মুসলমান, নাকি ভিন্ন ধর্মের?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুসলিম হওযার বাহ্যিক কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে যেমন নাম পোশাক ইত্যাদি কিংবা শারীরিক নিদর্শন যেমন খতনা ইত্যাদি থাকলে মুসলমানের লাশের মত আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ
মুসলমানের লাশের মতই গোসল দিবে এরপর
কাফন-জানাযা শেষে মুসলমানদের কবরস্থানেই দাফন করবে। আর যদি মুসলিম হওয়ার বাহ্যিক বা শারীরিক কোনো নিদর্শনই পাওয়া না যায় তাহলে মুসলমানদের এলাকায় এ ধরনের লাশ পাওয়া গেলে তাকেও মুসলমান গণ্য করা হবে এবং মুসলমানের লাশের মতই গোসল-জানাযা ও
দাফন করবে। আর যদি এ ধরনের নিদর্শনহীন লাশ অমুসলিমদের এলাকায় পাওয়া যায়
তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে গোসল দিয়ে কোনোরকম কাফন পরাবে। তবে তার জানাযা পড়বে না। অতপর অমুসলিমদের কবরস্থানে
তাকে দাফন করবে। -আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০১; শরহুল মুনইয়া ৬০৬
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৪৬
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা...

প্রশ্ন
জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযার নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত। -আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩২৫
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের ঘরে একজন মহিলা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর...

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমাদের পাশের ঘরে একজন মহিলা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার পেটে নয় মাসের সন্তান ছিল। সন্তান জীবিত আছে এ সন্দেহে ডাক্তার তার অপারেশন করেন। কিন্তু পেটের ভেতরেই সন্তানকে মৃত পাওয়া গেছে। তাই তা আর বের না করে সেলাই করে দেন। অতপর তার আত্মীয়-স্বজন তার গর্ভের ঐ সন্তানসহ তাকে কাফন-দাফন করে দেয়। জানার বিষয় হল,
মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় মারা গেলে শরীয়তের
বিধান কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় কোনো মহিলা মারা গেলে দেখতে হবে সন্তান জীবিত আছে কি না? যদি জীবিত থাকে তবে দ্রম্নত অপারেশন করে তা বের করতে হবে। অতপর মৃতের গোসল ও কাফন- দাফন সম্পন্ন করতে হবে। আর গর্ভের সন্তান মৃত হলে গর্ভসহই মৃতকে দাফন
করে দিতে হবে। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় গর্ভস্থ
সন্তানটি মৃত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় রেখে দাফন করাটা ঠিক হয়েছে। -আততাজনীস ২/২৪৫-২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩১৫
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গত ১০ বছর পূর্বে আমার আববার ইন্তেকাল হয়েছে। তখন আমরা...

প্রশ্ন
গত ১০ বছর পূর্বে আমার আববার ইন্তেকাল হয়েছে। তখন আমরা ছোট ছিলাম। আমার বড় ভাই লেখাপড়া শেষ করেছিলেন বিধায় আমার বড় মামা তাকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। ১০ বছর যাবৎ তিনি পরিবারের খরচ বহন করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি দেশে আসলে আমার আম্মা আমাদের মধ্যে জায়গা বণ্টন করে দিতে চাইলে তিনি দাবি করেন যে, তাকে জমির ভাগ বেশি দিতে হবে। কেননা তিনি গত ১০ বছর যাবৎ পরিবারের খরচ বহন করেছে। তাতে আমার আম্মা সন্তুষ্ট হয়নি। জানার বিষয় হল, আমার বড় ভাইয়ের দাবি কি সঠিক? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? দয়া করে বিসত্মারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বড় ভাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জমি দাবি করা শরীয়তসম্মত নয়। বরং এক্ষেত্রে আপনার বাবার সম্পত্তি শরীয়তের মীরাসের নিয়ম অনুযায়ী সকল ওয়ারিসের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে। অন্যান্য ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি ছাড়া বড় ভাইয়ের জন্য বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৫৩
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

আমাদের দেশে বর্তমানে দেখা একই ব্যক্তির একাধিকবার জানাজার নামাজ পড়া...

প্রশ্ন
আমাদের দেশে বর্তমানে দেখা একই ব্যক্তির একাধিকবার জানাজার নামাজ পড়া হয়। আমার প্রশ্ন হল জানাজার একাধিক জামাত করা জায়েজ আছে কি?
উত্তর
না, জানাজার একাধিক জামাত করা জায়েজ নেই। তবে যদি মৃতব্যক্তির অলি (নিকটতম অভিভাবক) এর অনুমতি ব্যতিত অন্য কেউ জামাত আদায় করে তাহলে অলির জন্য ২য় বার জানাজার নামাজ পড়া যায়েয আছে।
সুত্রঃ মাবসুত(সারাখসি) -১/১২৬, তাতারখানিয়া-২/১৩৫, মাওসুয়া-১৬/৪০, গুনইয়া-৫৩৭, আলমগিরি-১/১৬৩, রহিমিয়া-৭/৪১।

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৫০
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাজার নামাযে কখন হাত ছাড়তে হবে? সালামের আগে না পরে?

প্রশ্ন
জানাজার নামাযে কখন হাত ছাড়তে হবে? সালামের আগে না পরে?
উত্তর
জানাজার নামাজে হাত ছাড়ার ৩ টি পদ্ধতি রয়েছে।
১-প্রথমে হাত ছেড়ে পরে সালাম ফিরানো।
২-ডানদিকে সালাম ফিরানোর সময় ডানহাত ও বামদিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম হাত ছাড়া।
৩- সালাম ফিরানোর পরে উভয় হাত ছাড়া। তবে প্রথমটি উত্তম। (-প্রথমে হাত ছেড়ে পরে সালাম ফিরানো)।
সুত্রঃ খুলাসাতুল ফতোয়া-১/১২৫, সে’আয়া-২/২২৫, শামি-১/৪৮৭, হেদায়া-১/১০২, আহসানুল ফতোয়া-৪/২২৭, মাহমুদিয়া-১৩/১০৪

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৪৮
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

গায়েবানা জানাযা কি জায়েজ? আমার এক বন্ধু বলেছে রাসুল সা;...

প্রশ্ন
গায়েবানা জানাযা কি জায়েজ? আমার এক বন্ধু বলেছে রাসুল সা; নাকি গায়েবানা জানাযা পড়েছেন?
উত্তর
না, গায়েবানা জানাযা জায়েয নেইৎঅবে রাসুল সা; গায়েবানা জানাযা পড়েছেনযে কথা হাদীসে বর্নিত হয়েছে সেটা কেবল নাজ্জাসির উপর ছিলো এবং এটা তার বৈশিষ্ট্য ছিল। অত এব বিচ্ছিন্ন এই ঘিটনার উপর ভিত্তি করে গায়েবানা জানাযার বৈধতা সঠিক নয়। কারন এই ঘটনা ছাড়া রাসুল সা; ও সাহাবারা কখনো গায়েবানা জানাযা পড়েন নি। অথচ অনেক সাহাবি মদিনার বাহিরে ইন্তেকাল করেছেন এবং তাদের দাফন ও হুজুরের অনুপস্থিতে মদিনার বাহিরে হয়েছিল।
দলিল;
আদ দুররুল মুখতার ২/২০৮,[সাইদ] বাদায়ে ২/৪৮, [দারুক কিতাব], আলমগিরি ১/১৬৪ আমিরিয়া, হাসিয়াতুত তাহতাবি পৃ; ৫৮২, ফেখুল হানাফি ১/৩৩৯, দারুল আহসানুল ফতোয়া ৪/২০০,

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০৩৪
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা...

প্রশ্ন
জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযা নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত। -আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২০১২
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
বিষয়: মৃত্যু-জানাজা

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যায়। ইন্তেকালের একমাস আগ...

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যায়। ইন্তেকালের একমাস আগ থেকে তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় তার
ছেলেদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। মারা যাওয়ার
সপ্তাহখানেক আগে তার শহরের জমিটি জনৈক ব্যক্তির নিকট নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। এজন্য তিনি বায়না দেন এবং আংশিক মূল্যও গ্রহণ করেন। তবে এখনো সাব কবলা রেজিস্ট্রি হয়নি। ওয়ারিশগণ তার
ইন্তেকালের পর বিষয়টি জানতে পেরে মনক্ষুণ্ণ
হয় এবং তারা এ বিক্রয় কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, এখন তারা ঐ বিক্রয় বাতিল করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত জমি বিক্রির লোকসান যদি ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ সমপরিমাণ বা এর চেয়ে কম হয় তাহলে উক্ত বিক্রি কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিসগণের আপত্তি করার কোনো অধিকার থাকবে না। কেননা মূমুর্ষ অবস্থায়ও এক তৃতীয়াংশ সম্পদে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করার অধিকার তার আছে। আর যদি মৃতের এক তৃতীয়াংশ সম্পদের চেয়ে বেশি লোকসানের সাথে বিক্রি করা হয় তাহলে ওয়ারিসগণের অনুমতি বিহীন এ বিক্রি কার্যকর হবে না। তারা যদি অনুমতি না দেয় তাহলে ক্রেতা এক তৃতীয়াংশের চেয়ে অধিক লোকসানের অংশ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় ওয়ারিসগণ ঐ বিক্রয়চুক্তি বাতিল করে দিতে পারবে। -শরহুল মাজাল্লাহ ২/৪১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/১০৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৭৯-৬৮০; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর
৪/৩২৮

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন