আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে টাকা জমা করে শিরকতের পদ্ধতিতে ব্যবসা করব এবং লাভ সমানভাবে বণ্টন হবে। ব্যবসা করার দায়িত্ব আমি বহন করেছি। এর জন্য আমি কোনো বেতন নেই না। গত বছর এক লোককে তিন মাস পর ১০ মন ধান দিবে এ চুক্তিতে চার হাজার টাকা অগ্রিম দিই। পরে ঐ লোক থেকে টাকা বা ধান কোনোটাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এখন সংগঠনের বাকি সদস্যরা আমার কাছে এই টাকা দাবি করছে। জানার বিষয় হল, এই টাকার দায় কি শুধু আমার উপর আসবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সংগঠনের বিনিয়োগ বিষয়ক নীতি ও শর্ত মেনেই যদি যথাসাধ্য যাচাইয়ের পর ঐ ব্যক্তির সাথে লেনদেন করে থাকেন তবে এর ক্ষতি সংগঠনের সকল সদস্যকেই মূলধন অনুপাতে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো ক্ষতি আপনার উপর চাপানো জায়েয হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ১৩৫০
আমি একজন মুদি ব্যবসায়ী। গত বছর আমি অন্য এক ব্যবসায়ীকে দশ মন ধান করয দিয়েছিলাম। এ বছর তা আদায় করার কথা। এখন আমি চাচ্ছি, তার কাছ থেকে ধান না নিয়ে টাকা নিতে। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হলে কখনকার মূল্য হিসেবে সে টাকা দিবে? গত বছরের, না বর্তমান বাজারের?
করয লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, যে জিনিস করয দেওয়া হয় বিনিময়ে সেটাই নিবে। তাই এ বছর সমপরিমাণ ঐ ধানই আপনার প্রাপ্য। তবে হাঁ, করয দাতা-গ্রহিতা উভয়ের সম্মতিতে পাওনা বস্তুর বদলে তার মূল্যও লেনদেন করা যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ধানের পরিবর্তে মূল্যও নিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময়ের বাজার-মূল্য ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ তখন বাজারে ঐ মানের দশ মন ধান যত টাকায় পাওয়া যেত তত টাকা নিতে পারবেন। এর বেশি নেওয়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২৩
আমি নয় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান দিতে যাচ্ছি। যার মধ্যে চার লক্ষ নিয়েছি আমার এক বন্ধু থেকে। বন্ধুর শর্ত হল, মোট লভ্যাংশের অর্ধেক তাকে দিতে হবে। জানতে চাচ্ছি, এভাবে চুক্তি করলে সহীহ হবে কি না? ব্যবসার যাবতীয় কাজ কারবার দেখাশুনা আমার দায়িত্বে।
আপনার বন্ধুর মূলধন যেহেতু আপনার চেয়ে কম তাই সে যদি ব্যবসায় কোন শ্রম না দেয় তবে তার জন্য অর্ধেক লাভের চুক্তি করা বৈধ হবে না। সে তার মূলধন অনুপাতে সর্বোচ্চ শর্তকরা ৪৪.৪৪% লভ্যাংশ নিতে পারবে। এর বেশি লাভ নিতে পারবে না। তবে হ্যা, সেও যদি ব্যবসায় কিছু শ্রম দেয় তাহলে পুঁজি কম থাকলেও অর্ধার্ধি লাভের শর্ত করা সহীহ।
উল্লেখ্য যে, অংশিদারী ও যৌথ মূলধনী কারবারে শরঈ অনেক বিষয় থাকে, যেগুলো ব্যবসা শুরুর আগে কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নেয়া উচিত।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/৮৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪
আমাদের গ্রামে শাক সবজি ইত্যাদি চাষাবাদকারী কৃষকদেরকে ঢাকার বিভিন্ন আড়তদাররা উৎপাদনের প্রয়োজনে ঋণ দিয়ে থাকে। কৃষিপণ্য উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষকরা সেই ঋণ পরিশোধ করে দেয়।
এতে আড়তদাররা কোনো প্রকার সুদ নেয় না। তবে আড়তদাররা কৃষকদেরকে বলে দেয় যে, শাক সবজি উৎপন্ন হওয়ার পর আমাদের আড়তেই আনতে হবে। অন্য কোথাও নিতে পারবেন না। কৃষকরাও তা মেনে নেয়। জানার বিষয় হল এ ধরনের শর্ত করে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া জায়েয হবে কি না?
ঋণ প্রদান করে ঋণগ্রহিতা থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণদাতার আড়তে শাক সবজি আনার শর্ত দ্বারা ঋণ দাতা লাভবান হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে আড়তদার কৃষককে মূল্যও কম দিয়ে থাকে। তাই এ ধরনের শর্ত দিয়ে ঋণের আদান-প্রদান করা নাজায়েয। তবে যদি ঋণদাতার পক্ষ থেকে তার আড়তেই দেওয়ার শর্ত করা না হয়; বরং অন্যত্র বিক্রির ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে ছাড় থাকে, এরপর ঋণগ্রহিতা নিজ থেকেই কৃষিপণ্য ঋণদাতার আড়তে নিয়ে যায় তাহলে এতে অসুবিধা নেই।
-ংমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১০৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২
আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী, আমার প্রশ্ন হল
১. একজন সরকারী কর্মচারী এখন চাইলে মূল বেতনের কমপক্ষে ৫% বাধ্যতামূলক এবং সর্বোচ্চ ২৫% টাকা ঐচ্ছিক কর্তন করাতে পারেন। জিপি ফান্ডের সরকার প্রদত্ব অংশ বা সুদ নেওয়া জায়েয কি না?
২. আমি জিপি ফাণ্ডের সরকার প্রদত্ত অংশ বা সুদ নেব না। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া ঠিক হবে কি না। অথবা এই টাকা দিয়ে নিতান্ত অপারগতার কারণে অন্য কোনো সরকারী কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে পারব কি না?
সরকারী প্রতিষ্ঠানে জিপি ফান্ডে বেতনের যতটুকু অংশ বাধ্যতামূলক কেটে রাখা হয় তার সাথে সরকার প্রদত্ত অতিরিক্ত অংশ কর্মচারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয। সরকার এটাকে সুদ বললেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা রিবা তথা সুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত জিপি ফান্ডে কর্তন করানো জায়েয নেই। যদি কেউ অতিরিক্ত কর্তন করে তাহলে স্বেচ্ছায় জমার উপর প্রাপ্ত অতিরিক্ত সকল টাকা গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
আর সুদের টাকা দ্বারা ট্যাক্স দেওয়া বা কাউকে ঘুষ দেওয়া জায়েয হবে না। ঐ টাকা গরীবদেরকে সদকাই করে দিতে হবে। কারণ ঐ টাকা দিয়ে টেক্স বা ঘুষ দিলে তা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া যে হারাম ও অভিশপ্ত কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
-আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৭৯
আমাদের দুই ভাইয়ের মীরাস সূত্রে পাওয়া একটি মালবাহী কার্গো আছে। কার্গোটি আমরা ভাড়ায় খাটাই। কার্গোটির যাবতীয় কাজ-কারবার, দেখাশোনা, গ্রাহকদের সাথে কথাবার্তা সবকিছু আমি করি। আমাদের চুক্তি হল, যা আয় হবে তার ৪০% ভাইয়ের, বাকিটা আমার, আমাদের এই বণ্টন কি সহীহ?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে দুই ভাইয়ের মালিকানা যেহেতু সমান তাই গাড়ির যাবতীয় আয় আপনাদের মাঝে সমান হারে বণ্টন হবে। আর এমন একটি গাড়ির যাবতীয় কাজ করাবার ও দেখাশোনার ন্যায্য পারিশ্রমিক যা হয় তার অর্ধেক আপনি আপনার ভাই থেকে পাওয়ার হকদার। এক্ষেত্রে আপনার পারিশ্রমিক শতকরা হারে নেওয়া সহীহ নয়। বরং পারিশ্রমিকটা অংকে নির্ধারণ করে নেয়া আবশ্যক।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬; দুরারুল হুক্কাম ৩/২৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১০৭৩
দুই বছর পূর্বে আমি আমার বড় ভাই থেকে আঠারো লক্ষ টাকা নিয়ে একটি কাপড়ের দোকান দিয়েছি। কথা ছিল, তার মূলধন দিয়ে আমি ব্যবসা করব। আর লভ্যাংশ আমরা সমানভাবে ভাগ করে নিব। কিন্তু দুই বছরে আমি তাকে কোনো লাভ দিতে পারিনি। কারণ, ব্যবসাটা যেহেতু মাত্র শুরু তাই ডেকোরেশন ও অন্যান্য খাতে প্রচুর খরচ হয়ে গেছে। আর মানুষের মাঝে তেমন পরিচিতিও হয়ে উঠেনি। এখন আমার ভাই এই ব্যবসা বাদ দিয়ে তার মূলধন ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছেন। আমি চাচ্ছি, ব্যবসাটা ধরে রাখতে। কেননা, আমার প্রবল ধারণা, ব্যবসাটা থেকে ভবিষ্যতে লাভ আসবে। আর এখন যদি ব্যবসাটা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আমার এত দিনের শ্রম সম্পূর্ণ বৃথা যাবে। তাই জানার বিষয় হল, আমার ভাই যদি স্বেচ্ছায় ব্যবসাটা রাখতে না চায় তাহলে তাকে তা অব্যাহত রাখতে বাধ্য করতে পারব কি না?
আপনার ভাইয়ের সাথে ব্যবসার উক্ত চুক্তিটি মোদারাবা চুক্তি। আর মুদারাবার মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগকারী চাইলে তার চুক্তি শেষ করে দেয়ার অধিকার রাখে। কারণ, ব্যবসা চলমান থাকলে যেমনিভাবে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে পুঁজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সুতরাং আপনার ভাই চাইলে তার পুঁজি ফেরত নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে চুক্তি রাখার জন্য তাকে বাধ্য করা জায়েয হবে না। বরং সে পুঁজি চাইলে দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য সেক্ষেত্রে বর্তমানে দোকানে বিক্রিযোগ্য সে সকল মালামাল রয়েছে সেগুলো বিক্রি হওয়া ও চূড়ান্ত হিসাব হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/১৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৫৫
ক. ট্রেনে চলাচলকালে অনেক সময় টিকেট না থাকলে ড্রাইভার কিংবা টিটিকে কিছু টাকা দিলে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। জানার বিষয় হল, এটা কি জায়েয?
খ. প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকুরী করা কি জায়েয?
ক) টিকেট নেওয়া ব্যতীত ট্রেনে যাতায়াত করা বৈধ নয়। নিয়মতান্ত্রিক রশিদ বা টিকেট গ্রহণ না করে ড্রাইভার কিংবা টিটিকে টাকা দিলেও তা ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে না। বরং সেটা হবে ঘুষ। যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। সুতরাং এভাবে কখনো ট্রেনে ভ্রমন করে থাকলে সমপরিমাণ মূল্যের সিট বিহীন টিকেট কেটে ছিড়ে ফেলবেন। এতে আপনি উক্ত অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭; ফাতহুল কাদীর৬/৩৫৯; তাফসীরে মাযহারী ৩/১৪৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৪৫
খ. প্রচলিত ধারার ব্যাংকের চাকরি সুদী কাজে সরাসরি সহযোগিতার শামিল। এতে চাকরি করলে শ্রমও হারাম এবং আয়ও হারাম হবে। মুসলমানদের জন্য এ ধরনের চাকরি থেকে বিরত থাক আবশ্যক। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, আলআশবাহ ওয়াননাযায়ের ৩/২৩৪
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে যৌথ মূলধন দিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করেছি। কথা হয়েছে দশ বছর
পূর্ণ হওয়ার পূর্বে আমরা কেউ এই ব্যবসা থেকে আলাদা হবো না। কিন্তু আমাদের একজন এখনই আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছে। ব্যবসাটির পরিচালনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ অবস্থায় সে আলাদা হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, আমাদের সম্মতি ব্যতীত সে ব্যবসা থেকে আলাদা হওয়ার অধিকার রাখে কি না?
একটি নির্ধারিত মেয়াদ ঠিক করে যৌথ মূলধনী কারবার শুরু করা হলেও কোনো অংশিদার চাইলে অন্যদের সম্মতিক্রমে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে আলাদ হয়ে যেতে পারবে। এমনিভাবে ওযরবশত অন্যদের সম্মতি ছাড়াও আলাদা হতে পারবে। তবে ওযর না থাকলে চুক্তির সময়ের চুক্তিকৃত মেয়াদকালের পূর্বে আলাদা হওয়া উচিত নয়। কোনো মুসলমানের জন্য বিনা ওযরে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করা ঠিক নয়।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির যদি কোনো ওযর থাকে তাহলে সে এখন আলাদা হয়ে যেতে পারবে। অন্যথায় তার উচিত- মেয়াদ পূর্ণ করা। এর পরও সে চলে যেতে চাইলে অংশিদারগণ তাকে থাকতে বাধ্য করতে পারবে না।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/১০৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৮
পূর্বকথা : মাসআলাটি জানা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমর চাচা ও আমরা কয়েক বন্ধু হালাল হারাম বিবেচনা না করে সংস্থাটির সাথে জড়িয়ে পড়ি এবং আমাদের কারণে আরো কয়েকজন বিষয়টির সাথে যুক্ত হয়। তাই মাসআলাটি যত দ্রুত সম্ভব জানা জরুরি।
আমি যে কোম্পানির কথা বলছি তার নাম তিয়ানশি। কোম্পানিটি চায়নার। তারা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করে :
১. সেবা
২. ব্যবসা
১. সেবা : মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য কোম্পানিটির রয়েছে কয়েক শত পণ্য। যা বাস্তবিক পক্ষেই মানুষের জন্য উপকারী এবং কার্যকরী। এসব পণ্য দিয়েই এর ব্যবসা সঞ্চালিত হয়।
২. ব্যবসা : তিয়ানশির ব্যবসা হচ্ছে নেটওয়ারর্কিং সিস্টেমে। অর্থাৎ আমি সুস্থ থাকার জন্য সর্বপ্রথম ৩০০ ডলারের (২৪০০০ টাকা) পণ্য ক্রয় করে ৩* (three stars) অর্জন করব। তারপর আমি কোম্পানির যেসব পণ্য ক্রয় করব তা থেকে ঐ পণ্যের মূল্যের ২০% হারে ছাড় পাব। নিয়মটা ঠিক এরকম, আমি নির্দিষ্ট দামেই পণ্য কিনব। তবে পরবর্তীতে তা থেকে মূল্যের ২০% আমার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে। আমার মাধ্যমে অন্য কেউ ক্রয় করলেও ঠিক এ রকম। এরপর আমি ৪ জনকে ৩* বানাব। আর তাদের থেকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট পেয়ে আমি হয়ে যাব ৪* (four stars) এতে আমি সরাসরি যা কিনব তা থেকে পাব ২৪%। আর আমি যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য থেকে পাব ৪%। এভাবে আমার ঐ ৪ জন ৪* হয়ে গেলে আমি হব ৫*। পণ্যের মূল্যের ২৪% লাভ পাব। আর আমার নিচের লোকদের থেকে পাব ৪% ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এক সময় তা ৪০% পর্যন্ত যায়। আর আমি কাজ করি না করি, জানি বা না জানি আমার নিচে যত শত শত হাজার হাজার লোক থাকবে তাদের কাছ থেকে ৪% মূল্যের দাম থেকে ওদের ভাষ্যমতে একজন ব্যক্তি ২০% থেকে ৪০% পর্যন্ত যে লাভটা পাবে সেটা হচ্ছে অন্যান্য কোম্পানি মধ্যস্তা অথবা শোরুম, টিভিতে এ্যাড, এজেন্ট, সাব এজেন্টের মত ৬/৭ টি হাত বদল হতে হতে পণ্যের দাম দ্বীগুণ অথবা তিনগুণ বেড়ে যায়। ওদের এসব মধ্যস্থতা নেই, যার ফলে ঐ বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে তারা কোম্পানির সদস্যদের দেয়। এখন আমার প্রশ্ন হল :
১. এই সিস্টেম/পদ্ধতিতে ব্যবসা কি জায়েজ। যদি জায়েজ না হয় তবে তা কেন? (দলিলসহ)
২. যদি জায়েয না-ই বা হয় তবে আমরা যে এতদিন এর থেকে লভ্যাংশ পেয়ে এসেছি তার জন্য বর্তমানে কী করা?
৩. যদি আমরা ব্যবসা না করে ওদের কাছ থেকে পণ্য কিনি তাহলে এর বিধান কি?
১. প্রচলিত এমএলএম পদ্ধতির কারবার জায়েয নয়। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী তিয়ানশি কোম্পানি যেহেতু এমএলএম অর্থাৎ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে পরিচালিত তাই এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা নাজায়েয। এমএলএম পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার মৌলিক ও শাখাগত অনেক কারণ রয়েছে। তন্মেধ্যে গারার, শ্রমবিহীন পারিশ্রমিক, এক চুক্তির সাথে আরেক চুক্তি শর্তযুক্ত হওয়া, অযাচিত মধ্যস্বত্ব ভোগ ও দালালদের অতিরঞ্জিত কথা বলে মানুষকে প্রভাবিত করা অন্যতম। সুতরাং উক্ত কোম্পানীর সাথে ব্যবসায় জড়িত হওয়া জায়েয হবে না। এ পদ্ধতির মার্কেটিংয়ের খারাবী ও নাজায়েযের দলীলসমূহ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক আল কাউসারের ২০১১ সালের জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ সংখ্যায় বিস্তারিত লেখা হয়েছে। প্রয়োজনে আলকাউসার দপ্তর থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো পড়ে নিতে পারেন।
২. যেহেতু এই পদ্ধতির ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েয, তাই এ থেকে অর্জিত লভ্যাংশও হালাল নয়। সুতরাং এ পর্যন্ত যত টাকা কমিশন পেয়েছেন তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
৩. এ ধরনের কোম্পানীর পণ্য নিজে পরিবেশক হওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও কোনো পরিবেশকের মাধ্যমে কেনা বৈধ নয়। কেননা, এতে নিজে ব্যবসায় জড়িত না হলেও নেটে অবস্থিত অন্যান্য লোকের এবং কোম্পানীর অবৈধ ব্যবসায় সহায়তা করা হয়।
-সূরাতুন নিসা (৪) : ২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪১৩, ১৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২
আমি এক লোককে একটি অটো রিকশা কিনে দিয়েছি। তার সাথে এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, এই রিকশা চালিয়ে তার যা আয় হবে তার অর্ধেক আমি আর অর্ধেক সে পাবে।
তার সাথে এভাবে চুক্তি করা আমার জন্য কি ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত চুক্তি বৈধ হয়নি। অটো রিকশা চালিয়ে ঐ লোক যে ভাড়া পাবে তার একক মালিক সেনিজেই। আর আপনি রিকশার ন্যায্য ভাড়া পাবেন।
এছাড়া আপনি চালকের সাথে এভাবেও চুক্তি করতে পারেন যে, সে নির্দিষ্ট সময় রিক্সা চালাবে।বিনিময়ে সে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পাবে। এক্ষেত্রে রিক্সার যাবতীয় আয় আপনার হবে। কিন্তু এই দুইপদ্ধতি ব্যতীত উভয়ের মাঝে আয়ের অংশিদারিত্বের চুক্তি করা সহীহ হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৭৭৫; কিতাবুল আসল ৪/১৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৬; আল মুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৭
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা বেজে যায়। এরপর খাবার-দাবার ও অন্যান্য কাজ শেষ করে ইশার নামায পড়তে পড়তে প্রায় বারোটা, সাড়ে বারোটা বেজে যায়। এর আগে পড়াটা একটু কঠিন হয়। জানতে চাই, আমার জন্য এত দেরি করে নামায আদায় করায় কোনো সমস্যা আছে কি?
বিনা ওজরে ইশার নামায আদায়ে এত বিলম্ব করা মাকরূহ। ইশার নামায রাতের প্রথম একতৃতীয়াংশের মধ্যে আদায় করে নেওয়া উত্তম। অবশ্য মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ে নিলে মাকরূহ হবে না।আমাদের দেশে মওসুমভেদে মধ্যরাত শুরু হয় কখনো এগারোটা থেকে, কখনো সাড়ে এগারোটাথেকে বা এর কয়েক মিনিট আগে-পরে (ঢাকার সময়ানুযায়ী)। তাই ওজর ছাড়া এর চেয়ে বিলম্বকরা মাকরূহে তানযীহী। সময়মতো নামায আদায়ের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়া কর্তব্য।
উল্লেখ্য, যে সকল দপ্তরে মুসলমান কর্মচারীগণ কাজ করে সেখানের কর্তৃপক্ষের উচিত নামাযেরনির্ধারিত সময়ে কর্মচারীদেরকে জামাতের সাথে নামায আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া। তবেসেখানে যদি জামাতের সুযোগ নাও থাকে তবে ছুটির পর অফিসে কিংবা বাইরে কোথাও নামাযপড়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২২৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৪৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৮; কিতাবুল আছল ১/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫২২
আমি কুমিল্লা ইপিজেডে একটি কোরিয়ান ফ্যাক্টরিতে চাকরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল ক্রয় করা। কাঁচামালগুলে যেসব কোম্পানি থেকে ক্রয় করি তারা অনেক সময় আমাকে প্রস্তাব করে যে, আমি তাদের থেকে পণ্য ক্রয় করলে তারা আমাকে শতকরা হারে কিছু কমিশন দিবে। যেমন আমার ফ্যাক্টরির ক্যাবল প্রয়োজন। ক্যাবল বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন, বিআরবি, বিবিএস, প্যারাডাইস ক্যাবল ইত্যাদি। তো ধরুন, বিআরবি কোম্পানি আমাকে প্রস্তাব করল যে, আমি যদি তাদের থেকে ক্রয় করি তাহলে তারা আমাকে ০.৫% কমিশন দিবে। এই কমিশনটা নেওয়া আমার জন্য জায়েয হবে কি না?
আপনি যেহেতু ঐ ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে মালামাল ক্রয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাই বিক্রয়কারী কোম্পানির কাছ থেকে কোনো কমিশন নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। নিলে সেটা সম্পূর্ণ ঘুষ ও হারাম হবে। বিক্রেতা কোম্পানি যদি কখনো কোনো গিফট বা কমিশন দেয় তা আপনার ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে হবে। এই কমিশন বা গিফট পাওয়ার হকদার ক্রেতা কোম্পানি। ক্রেতা প্রতিনিধি নয়।
উল্লেখ্য, আপনার কর্তব্য হল আপনার প্রতিষ্ঠান কোনো ব্র্যান্ড নির্ধারণ করে দিলে তাদের থেকেই মালামাল নেওয়া। আর যদি নির্ধারণ না করে দেয় তবে যাদের থেকে কিনলে আপনার ফ্যাক্টরি সার্বিকভাবে লাভবান হবে তাদের থেকেই ক্রয় করা। এর ব্যতিক্রম হলে অন্যায় ও খেয়ানত হবে।
-জামেউল ফুসুলাইন ২/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৬০
আমরা তিনজন মিলে ১ লক্ষ করে মোট ৩ লক্ষ টাকা একজনকে ব্যবসা করার জন্য দেই। সে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রসিদ্ধ মিষ্টি, দই, রসমালাই ইত্যাদি এনে ঢাকায় বিক্রি করে। সে আমাদেরকে অর্জিত লাভের ২৩% করে দেওয়ার আর লস হলে একই হারে কেটে নেওয়ার চুক্তি করে। এক বছর পর সে নিজেও তাতে ১০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের উপরোক্ত কারবারটি সহীহ আছে কি?
প্রশ্নোক্ত লাভ বণ্টনের চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। কিন্তু লোকসানের ক্ষেত্রে একই হারে কেটে নেওয়ার চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কেননা আপনারা তার সাথে যে চুক্তিটি করেছেন ফিকহের পরিভাষায় একে মুদারাবা বলে। মুদরাবার ক্ষেত্রে নিয়ম হল ব্যবসায় ক্ষতি হলে বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ বিনিয়োগের হার অনুপাতে ক্ষতি বহন করবে। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনাকারীর ইচ্ছাকৃত ত্রুটি ছাড়া তার ক্ষতি হলে বা লোকসান হলে সে মূলধনের জরিমানা দিবে না। অবশ্য ব্যবসা পরিচালনাকারী নিজ থেকেও কিছু বিনিয়োগ করলে লোকসানের ক্ষেত্রে মূলধনের অনুপাতে সেও ক্ষতি বহন করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ১৩৬৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮
আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার বেশিরভাগ সহকর্মী ঘুষ গ্রহণ করে বা অসৎ উপায়ে আয় করে। তারা আমাকে বিভিন্ন সময় খাবারের দাওয়াত দেয়। তাদের এ দাওয়াত গ্রহণ করা কি ঠিক হবে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় দাওয়াতকারীর মূল চাকরি যদি হালাল হয় এবং তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হয় তবে আপনার জন্য তার দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তার খাবার খাওয়া জায়েয। তদ্রূপ হালাল আয় থেকেই দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছে বলে নিশ্চিত হলে তখনো দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে। তবে হারাম অর্থ দ্বারা দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছে জানা গেলে কোনোক্ষেত্রেই দাওয়াত গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৫
আমি আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হই যে, তিনি ব্যবসার যাবতীয় মূলধন সরবরাহ করবেন। আর আমি ব্যবসা পরিচালনা করব। লভ্যাংশ আমাদের মাঝে সমানহারে বণ্টিত হবে। কিছুদিন যাওযার পর ব্যবসা যখন বড় হতে শুরু করে তখন ভাইয়া পর্যাপ্ত মূলধন সরবরাহ করতে পারছিলেন না। অবশেষে ভাইয়ার সাথে পরামর্শক্রমে আমি আমার কিছু টাকা ঐ ব্যবসায় খাটিয়েছি। এখন আমরা লভ্যাংশ বণ্টন কীভাবে করব?
আপনি ঐ ব্যবসায় যত টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসার খরচ বাদ দেওয়ার পর আপনার টাকা অনুপাতে যে মুনাফা আসে তার মালিক এককভাবে আপনি। তা আপনি নিয়ে নিবেন। আর আপনার ভাইয়ের বিনিয়োগকৃত অংশের লভ্যাংশ আপনারা দুজন চুক্তি অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করে নিবেন।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯; মাজাল্লাতুল আহাকমিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১৪১৭
আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। দোকানের সামনে বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। সেখানকার অল্প কিছু জায়গায় এক লোক ঘড়ি মেরামতের জন্য ছোট্ট একটি দোকান দিতে চায়। মাসিক তিন শ টাকা ভাড়া দেওয়ার শর্তে আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। প্রশ্ন হল, আমার জন্য ঐ ভাড়া নেওয়া বৈধ হবে কি না? উল্লেখ্য, ঐ দোকানের কারণে আমার বেচাকেনা বা কাস্টমারের যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হয় না।
দোকানের সামনের জায়গার মালিক যেহেতু আপনি নন এবং জায়গাটি আপনার ভাড়ার অধীনেও নয় তাই ঐ জায়গা ভাড়া দেওয়া বা সেখান থেকে ভাড়ার নামে কোনো টাকা নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১০
আমি ও আমার বড় ভাই মিলে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার পরিচালানায় আছি। আমাদের এখানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে ভর্তি ইত্যাদি ফরম পূরণ করা হয়। আমার জানামতে, ব্যাংকে চাকরি করা জায়েয নয়। তবে আমাদের জন্য কি অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাংকে চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করা জায়েয হবে? নাকি নাজায়েয হবে? দয়া করে এর উত্তর দিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা নাজায়েয। কেননা এ ব্যাংকগুলোর প্রধান ও মূল কাজই হল সুদের আদান-প্রদান। সুতরাং ব্যাংকের চাকরির জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে দেওয়া নাজায়েয কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা গুনাহের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ করেছেন-
وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ ۪ .
এবং নেকি ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং গুনাহের কাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। -সূরা মায়েদা (৫) : ২
অতএব ব্যাংকের ফরম পূরণে সহযোগিতা করা বৈধ হবে না।
একজন ইমাম সাহেব আমাকে সাথে নিয়ে পাইকারী দোকান থেকে ১ লক্ষ টাকার ফ্যান কিনে ইমাম সাহেবের নামেই ভাউচার করেন। অতপর ইমাম সাহেব ফ্যানগুলো নিজের আয়ত্তে দুই দিন রাখার পর উক্ত এক লক্ষ টাকার ঐ ফ্যানগুলো ছয় মাসের বাকি মেয়াদে ১ লক্ষ আঠারো হাজার টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেন।
উক্ত বেচাকেনাতে সুদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
আপনাদের লেনদেনটি যদি বাস্তবেই প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ ইমাম সাহেব প্রথমে ফ্যানগুলো নিজের জন্য খরিদ করে থাকেন এবং সেগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে থাকেন এরপর আপনার নিকট পৃথকভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে বা কিস্তিতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়েছে। এতে সুদের সম্পৃক্ততা নেই। তবে এক্ষেত্রে আঠারো হাজার টাকার লাভের পরিমাণটা বেশি। তা আরো কম হওয়া উচিত ছিল। যদিও এ কারণে ঐ ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয হয়ে যায়নি। আর ভবিষ্যতেও যেন কারবারটি সুদের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত থাকে সেজন্য নিম্নের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপনাকে টাকাগুলো পরিশোধ করে দিতে হবে। নির্ধারিত মেয়াদ থেকে বিলম্ব করা গুনাহ। তবে কোনো কারণে সময়মতো মূল্য পরিশোধ করা না হলে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা যাবে না এবং কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ করা যাবে না। অতিরিক্ত নিলেই তা সুদ হয়ে যাবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/১২২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ ২৪৫
আমি একজনের সাথে এভাবে চুক্তি করি যে, আমরা একটি ব্যবসা করব। ব্যবসার সমস্ত টাকা আমি দিব। আর সে ব্যবসা পরিচালনা করবে। দুজনের ভাগ হবে ৫০%। সাথে এ চুক্তিও রয়েছে যে, যদি কোনো কারণে ব্যবসার কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সব ক্ষতিপূরণ সে (যাকে আমি ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি) বহন করবে। আমাদের এ চুক্তি সহীহ হয়েছে কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে আমরা চুক্তিটা কীভাবে করতে পারি? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে তা ব্যবসায়ী বহন করবে- এ শর্তটি বৈধ হয়নি। কেননা আপনারা যে চুক্তি করেছেন ফিকহের পরিভাষায় তা হল মুদারাবা। আর মুদারাবার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে প্রথমত লভ্যাংশ থেকে ধরা হবে। তাতেও না হলে বাকিটুকু মূলধন থেকে পূরণ করা হবে। মুদারিব তথা ব্যবসা পরিচালনাকারী বহন করবে না। তাই উক্ত শর্ত বাতিলযোগ্য।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; আল ইখতিয়ার ২/৪৬১, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫২১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮
আমার এক বন্ধুর কাপড় তৈরির মিল আছে। সে তার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমার ইচ্ছা হল, তার থেকে মেশিনটি কিনে তার কাছেই আবার ভাড়ায় দিয়ে দিব।
আমার জন্য এটা জায়েয হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি সাময়িক সময়ের জন্য টাকা দিয়ে অতিরিক্ত গ্রহণই উদ্দেশ্য হয় এবং এর ছূতা হিসেবে লেনদেনটি করা হয় অর্থাৎ মেশিনটি ক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া সবই যদি ছূতা হিসেবে অবলম্বন করা হয় তবে তা বৈধ হবে না।
কিন্তু যদি এক্ষেত্রে লেনদেনটি ছূতা হিসেবে গ্রহণ করা না হয়; বরং প্রকৃত অর্থেই ক্রয়-বিক্রয় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা করা যাবে-
১। ক্রয়ের সাথে ভাড়ার শর্ত করা যাবে না। অর্থাৎ ক্রয়ের সময় এ কথা বলা যাবে না যে, মেশিনটি কিনব তবে শর্ত হল, তোমার কারখানায় এটিকে ভাড়া হিসেবে রাখতে হবে।
২। ক্রয়ের পর মেশিনটি আগে আপনার দখলে বুঝে নিতে হবে।
ক্রয়ের পর যে কারো কাছে ভাড়া দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেমনিভাবে অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন তদ্রূপ পূর্বের মালিকের নিকটও তা ভাড়া দিতে পারবেন। ক্রয়ের পর পূর্বের মালিকের কাছে ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে পৃথকভাবে ভাড়া চুক্তি করে নিতে হবে।
৩। কারখানার মালিক মেশিনটি ভাড়া না রাখতে চাইলে তাকে এর জন্য বাধ্য করা যাবে না।
৪। বাস্তবসম্মত মূল্যে বেচা-কেনা হতে হবে। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও ভাড়া ধরা যাবে না।
-আলমাআইরুশ শরইয়াহ ১৪৫; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪৭
বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় এক মাসের ভাড়া অগ্রিম নিতে পারবে কি না? যা ভাড়া-গ্রহিতা চলে যাওয়ার সময় শেষ মাসের ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে। আর এ টাকা বাড়িওয়ালা নিজের কাজেও ব্যয় করবে।
হাঁ, ভাড়াটিয়া সম্মত হলে এক দুই মাস বা আরো বেশি সময়ের অগ্রিম ভাড়া নেওয়া জায়েয। এবং অগ্রিম ভাড়া নেওয়া হলে তার মালিক বাড়িওয়ালা। তাই এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৩; ফাতহুল কাদীর ৮/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১০
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে- দুই বছর, চার বছরের জন্য সুপারি বাগান ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়াদাতা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে গাছের সুপারি ভোগ করে।
আমার জানার বিষয় হল, এভাবে সুপারি বাগান (জমি ও গাছসহ) ভাড়া দেওয়া জায়েয আছে কি?
ফল গ্রহণের উদ্দেশ্যে ফলবাগান ভাড়া দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। সুতরাং সুপারি বাগানের প্রশ্নোক্ত ভাড়া-চুক্তি বৈধ নয়।
বাগানের ফল গ্রহণ করতে চাইলে বিক্রি চুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ গাছে যখন ছোট ছোট সুপারি আসবে তখনই পুরো মৌসুমের সুপারি বিক্রি করা যাবে। এরপর ক্রেতা সুবিধামত সময়ে সুপারি পেড়ে নিতে পারবে। এভাবে প্রতি বছর গাছে সুপারি আসার পর তা বিক্রি করতে পারবে। তবে একত্রে কয়েক বছরের জন্য বিক্রি করে দেওয়ার কোনো সহীহ পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কারণ গাছে ফল আসার পূর্বে তা বিক্রি করলে সেটি হবে বাইয়ে মা‘দূম তথা অস্তিত্ব নেই এমন জিনিস বিক্রি করা। হাদীস শরীফে এ ধরনের বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে।
-কিতাবুল আছল ৪/১২; দুরারুল হুককাম ১/৪৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/১৯৮
আমরা শখ করে দেশীয় বিভিন্ন মুদ্রা (কাগজের, পয়সার) সংগ্রহ করি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত সব ধরনের মুদ্রাই সংগ্রহ করি। সে মুদ্রা যত টাকা মূল্যের আমরা তার চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করি। ইসলামের দৃষ্টিতে এর বিধান কী? কাজটা কি এভাবে বৈধ, নাকি অন্য কোনোভাবে এই বেচাকেনা করা যাবে?
একই দেশের চলমান মুদ্রা পরস্পর লেনদেন করলে সমান সমান হওয়া জরুরি। কমবেশি করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই চলমান টাকা বা পয়সার বিনিময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন করলে সমান সমান করতে হবে। কমবেশি করে লেনদেন করা যাবে না।
তবে অচল নোট বা পয়সা গায়ের মূল্যের চেয়ে কমবেশি দামে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। কিন্তু এ ধরনের অহেতুক কাজে অর্থ ব্যয় করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়।
-হেদায়া ৩/৮১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ২/৫; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ১/১৬০
আমাদের কিছু দোকান আছে। আমরা সেগুলো একবছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াগ্রহীতা থেকে দোকানের সাইজ হিসাবে দুই-তিন লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি নিয়ে থাকি। শুনেছি, এ টাকা নাকি ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এক আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সিকিউরিটির টাকা অগ্রিম ভাড়া না ধরেও ব্যবহার করা যায়। তাই জানতে চাই, সিকিউরিটি বাবৎ ভাড়াগ্রহীতা থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা ব্যবহারের কোনো বৈধ পদ্ধতি আছে কি? একজন পরামর্শ দিয়েছেন, সিকিউরিটি মানি না নিয়ে ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঐ টাকা করয হিসাবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে। এ কাজ বৈধ হবে কি না? যদি বৈধ না হয় তাহলে অতীতে কেউ এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে তার করণীয় কী? বিষয়গুলো দলীল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
ভাড়াগ্রহীতা থেকে ভাড়া চুক্তির সময় অগ্রিম কিছু অর্থ গ্রহণের দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
১. ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে একটি অংকের অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ভাড়া-চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যাকে সিকিউরিটি মানি বলে। ২. ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি মাসেই এর থেকে কিছু কিছু করে ভাড়া কাটা হয়। যাকে এ্যাডভান্স বলে।
সিকিউরিটি মানি তথা জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহন করেছি। (এর কী হুকুম?) তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহন করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৫০৭১)
সুতরাং ভাড়াদাতার জন্য সিকিউরিটি মানি ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েয নয়। অতীতে এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে এজন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা-ইসতিগফার করতে হবে এবং এ টাকা দ্বারা কোনো লাভ অর্জন করে থাকলে তা সদকা করে দিতে হবে।
আর এক্ষেত্রে সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে বলে যে কথা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা সিকিউরিটি মানির টাকাকে ঋণ ধরা হলে যেক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে ঋণের কারণে ভাড়া কম নেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আর ঋণের কারণে কোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া এভাবে একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করে কারবার করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে করয হিসাবে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং ভাড়াদাতা নিজে ব্যবহারের জন্য ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ নিতে চাইলে তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে নিতে পারবে। যা চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে।
উল্লেখ্য, প্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ সিকিউরিটি মানি নিয়ে যেহেতু অনেকেই নাজায়েযভাবে তা ব্যবহার করে গুনাহে পড়েন তাই আমরা এক্ষেত্রে এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়ার পদ্ধতিটি গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহিত করে থাকি। এতে করে দোকান বা বাড়ির মালিক একত্রে বেশি টাকাও নিতে পারে এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধও বটে।
Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮
আমাদের কাপড়ের দোকান আছে। ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান হতে মাল আনা হয় ট্রাকযোগে। ট্রাক সমিতির মালিকগণ আমাদের সাথে চুক্তি করে যে, আপনাদের প্রয়োজনে পুরো বছর আমাদের থেকে ট্রাক নিবেন অন্য কারো থেকে নয়। এভাবে পুরো বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। এ চুক্তির হুকুম কী? আর এভাবে পুরো বছর তাদের থেকে ট্রাক নিলে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন হলে বছরান্তে কোনো মূল্যবান বস্তু গিফট দেয়। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম জানতে চাই।
মালিক সমিতির সাথে পুরো বছরের জন্য এভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত। এটা জায়েয আছে। পরবর্তীতে যখন তাদের থেকে ট্রাক নেওয়া হবে তখন ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেন কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে। আর পুরো বছর তাদের থেকে ভাড়া নেওয়ার কারণে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন গিফট দেওয়া হলে তা নেওয়া যাবে।
কেউ যদি সন্তান ভাই বা এ জাতীয় কারো থেকে টাকা কর্জ নেয় এবং দেওয়ার সময় নিজ থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে কি?
যদি কর্জ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত না থাকে এবং ঋণদাতার পক্ষ থেকে কোনো চাহিদা না থাকে এবং শর্ত ছাড়াই অতিরিক্ত দেওয়ার প্রচলনও না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে দেনা পরিশোধের সময় কর্জগ্রহণকারী যদি নিজ থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তবে তা বৈধ হবে। হাদীস শরীফে এমন ব্যক্তিকে উত্তম পরিশোধকারী বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৩
আরেক হাদীসে এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম- তিনি তখন মসজিদে ছিলেন- আল্লাহর রাসূল (আমাকে) বললেন, দু’রাকাত নামায পড়ে নাও। অতপর তার কাছে আমার পাওনা ছিল সেটা তিনি পরিশোধ করলেন এবং আমাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৪
তবে বর্তমান সময়ে যখন মানুষ সুদ ছাড়া ঋণ দিতে চায় না তখন এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা কাম্য। কেননা কোনো কোনো জায়গায় প্রচলন থাকে যে, ঋণ নিলে এ পরিমাণ অতিরিক্ত দিতে হবে বা অমুক সুবিধা দিতে হবে। এটাকে নীতি-নৈতিকতা মনে করা হয়। এমন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিলে বা অন্য কোনো সুবিধা দিলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সাহাবী ফাযালা ইবনে উবায়েদ রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে তা সুদের প্রকারসমূহের একটি।
-সুনানে বায়হাকী ৫/৩৫০; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২
আমার একটি ঘর লিজ দিয়েছিলাম এভাবে যে, লিজগ্রহীতা আমাকে ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকা এডভান্স দিবে এবং আমার ঘর সে ব্যবহার করবে। এজন্য আমাকে তার কোনো ভাড়া দিতে হবে না। আলকাউসারের মাধ্যমে জানতে পারলাম, এ পদ্ধতি নাজায়েয। এখন আমার জানার বিষয় হল, ক) এখন আমার কী করণীয়? খ) এ সকল ক্ষেত্রে বৈধ পন্থা কী? কারণ অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে এ রকম লেনদেনের প্রয়োজন হয়। আশা করি শরয়ী সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাধিত করবেন।
এখন আপনাদের উভয়ের কর্তব্য উক্ত চুক্তি বাতিল করে দেওয়া। আর সামনে থেকে ঐ ঘর ব্যবহার করতে চাইলে শরীয়তসম্মতভাবে ভাড়া চুক্তি করতে হবে । ঋণের চুক্তি করা যাবে না। যেমন, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বাড়িটি যত বছর ভাড়া দিতে হবে একসাথে তত বছরের জন্য বাড়িটি ভাড়া দিয়ে দিবেন এবং তত বছরের ভাড়ার টাকা ভাড়া গ্রহীতা থেকে অগ্রিম নিয়ে নিবেন। যেমন, আপনার বাড়ির মাসিক ভাড়া যদি ২০,০০০/- টাকা হয় তাহলে এক বছরের ভাড়া আসে ২,৪০,০০০/- টাকা। এ হিসেবে যত বছর ভাড়া দিলে আপনার প্রয়োজন পূরণ হবে তত বছরের জন্য বাড়িটি একসাথে ভাড়া দিয়ে দিবেন এবং তত বছরের সমুদয় ভাড়া একত্রে অগ্রিম নিয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ স্বাভাবিক ভাড়া থেকে প্রয়োজনে কিছুটা কমও নির্ধারণ করা যাবে। আর এটি যেহেতু ভাড়া চুক্তি তাই ভাড়ার মেয়াদ শেষে ভাড়াগ্রহীতা ঐ টাকা আর ফেরত পাবে না। অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি উভয়ে ভাড়া চুক্তি বাতিল করে দিতে চার তাহলে অবশিষ্ট মাসের ভাড়ার টাকা ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হবে। আর এ লেনদেনে বাড়িওয়ালা সিকিউরিটি মানি বা ঋণের নামে কোনো কিছু নিতে পারবে না।
আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেসে ভাড়া থাকি। একদিন আমাদের ঘুম থেকে উঠতে বিলম্ব হয়। ফলে সকলেরই ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। তখন আমরা ঐ নামায জামাতের সাথে আদায় করি। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য কাযা নামায জামাতের সাথে পড়া কি ঠিক হয়েছে? এবং এক্ষেত্রে কিরাত জোরে পড়তে হবে কি?
জী হাঁ। জামাতের সাথে কাযা পড়া ঠিক হয়েছে। একসাথে একাধিক ব্যক্তির নামায কাযা হয়ে গেলে জামাতের সাথেই কাযা পড়া উচিত। আর কাযা নামায জামাতের সাথে আদায় করলে উচ্চস্বরে কিরাতবিশিষ্ট নামাযে ইমামকে উচ্চস্বরেই কিরাত পড়তে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাযা আদায় করেছেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়েছেন। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. হাদীস ১৬৮
উল্লেখ্য যে, কাযা নামাযের জামাত করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য লোকজন নামায কাযা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।
-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩৩
জনৈক ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকে। তিনি দেশের এক ধান ব্যবসায়ীর কাছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এক লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছেন। তাদের মাঝে চুক্তি হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে লাভ হিসেবে প্রতি বছর পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে প্রতি বছর যে পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে তা কি জায়েয হবে, নাকি সুদ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়নি। কেননা এভাবে নিশ্চিত লাভ দেওয়ার শর্তে কাউকে টাকা দেওয়া সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি। আর তারা বৈধভাবে চুক্তি করতে চাইলে উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারণ করবে। যেমন, ব্যবসাতে যা লাভ হবে এর ৬০% পাবে টাকার মালিক আর ৪০% পাবে ব্যবসায়ী। অথবা উভয়ের সম্মতিতে লাভের অন্য যেকোনো হার নির্ধারণ করবে। ব্যবসায় লাভ হলে চুক্তিকৃত হারে উভয়ে লভ্যাংশ পাবে, লাভ না হলে কেউ কিছু পাবে না। আর ব্যবসায় লোকসান হলে পুঁজি বিনিয়োগকারী তা বহন করবে।
উল্লেখ্য যে, এ ধরনের কারবারে ব্যবসার পুরো হিসাব রাখা আবশ্যক। অনুমান করে লভ্যাংশ প্রদান করা অথবা লাভ-লোকসান যাই হোক নির্ধারিত পরিমাণ মুনাফা দেওয়া কোনোটিই বৈধ নয়।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ১৩৩
বর্তমানে আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাংকের সাথে লেনদেন অর্থাৎ টাকা জমা রাখতে হয়। তাই কোন্ ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ? দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার ব্যাংকসমূহে চলতি হিসাব তথা সুদবিহীন হিসাব খুলে লেনদেন করা জায়েয। তবে এসব ব্যাংকে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী বা মেয়াদী হিসাব খোলা জায়েয হবে না। প্রাপ্ত সুদ নিজে ভোগ না করলেও এসব সুদী একাউন্ট খোলাই জায়েয নয়। কেননা সুদী ব্যাংকে যে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খোলাই মূলত সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।
আর এদেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে নিজে মুনাফা গ্রহণ না করার প্রত্যয় নিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে। কেননা এসব ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো মুদারাবা ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে সুদী চুক্তি হয় না। তবে যেহেতু এই ধারার ব্যাংকগুলোর যথাযথভাবে শরীয়া পালনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে তাই এ ধরনের হিসাব থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, ১৫৯৯; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬১৯
আমি বীমার মেয়াদ শেষে সুদ পেয়েছি। এই টাকাগুলো আমি কী করতে পারি?
ঐ টাকাগুলো সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। আর প্রচলিত বীমায় সুদ, জুয়া উভয়টিই রয়েছে তাই এতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এ জন্য আপনাকে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
-সূরা বাকারা (২) : ২৭৫; সূরা মায়েদা (৫) : ৯০; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৬৭, ২৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা ২/২/৭৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫
একজন ছাত্র একটি বুক সেলফ কিনেছে। সে এটি অন্য এক ছাত্রের কাছে এ বলে বিক্রি করেছে যে, সে কিছু টাকা কম নিবে এ শর্তে যে, এই সেলফে খালেদ ও আবু বকর দু’জন ছাত্রকেও বই রাখতে দিতে হবে। ছাত্রটি তার দেওয়া শর্ত মেনে নিয়েই সেটি ক্রয় করেছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই শর্তের কারণে তারাও কি উক্ত বুক সেলফ ব্যবহার করতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের ব্যবহারের শর্তে সেলফটির বিক্রয় চুক্তি ফাসেদ তথা নাজায়েয হয়েছে। কেননা হাদীস শরীফে শর্তযুক্ত বিক্রিকে নিষেধ করা হয়েছে।
সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল, উক্ত ক্রয় চুক্তিটি বাতিল করে দিয়ে শর্তহীনভাবে আবার ক্রয়-বিক্রয় করা।
-ইলাউস সুনান ১৪/১৪৬; নাসবুর রায়াহ ৪/১৭-১৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯০-৯১; ফাতহুল কাদীর ৬/৭৮
প্রচলিত ব্যাংকে ট্রাঞ্জেকশন করা যাবে কি না? আর এসব ব্যাংকে চাকরি করা যাবে কি না, দয়া করে দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো সুদী অর্থনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সুদ আদানপ্রদানই এসব ব্যাংকের মূল ও প্রধান কাজ। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এসব ব্যাংকই হচ্ছে সুদের প্রচার ও প্রসারের প্রধান মাধ্যম। আর ব্যাংকে কর্তব্যরত ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে সুদী কারবারের সাথে সরাসরি জড়িত। সুদ দেওয়া-নেওয়া যেমন হারাম তেমনি অন্যের সুদী কারবারে জড়িত হওয়াও হারাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু সুদদাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেননি; বরং এর লেখক (অর্থাৎ সুদের হিসাব-কিতাবকারী) ও সাক্ষীগণকেও অভিসম্পাত করেছেন।
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী ও সুদ প্রদানকারী এবং সুদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়ের উপর লানত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮
সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা এবং এর বেতনাদি ভোগ করা বৈধ নয়।
আর সুদভিত্তিক হওয়ায় এসব ব্যাংকে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব বা বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলা কিংবা সুদের ভিত্তিতে যে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করা হারাম। কেউ এমন হিসাব খুলে ফেললে তা দ্রæত বন্ধ করে দিতে হবে এবং এ থেকে প্রাপ্ত সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।
অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকে চলতি হিসাব খোলা, টিটি, পে-অর্ডার ইত্যাদি সুদবিহীন লেনদেন করা জায়েয।
-তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/২১৯
আমাদের কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৫০% এবং চাকরিজীবীদের বেতন থেকে ৫০% ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। উক্ত টাকা চাকরি শেষে চাকরিজীবীদের প্রদান করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ৫০% এর উপর এফ.ডি.আর. করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ টাকাও চাকরির শেষে মূল ও বর্ধিত অংশসহ চাকরিজীবীদেরকে প্রদান করা হবে।
অতএব এ অবস্থায় উক্ত মূল ও বর্ধিত অংশ চাকরির শেষে গ্রহণ করা যাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ফান্ডে টাকা জমা রাখা যদি ঐচ্ছিক হয় অর্থাৎ কেউ চাইলে উক্ত ফান্ডের জন্য বেতন থেকে টাকা কেটে রাখতে পারে, আবার চাইলে পুরো বেতন উঠিয়েও নিতে পারে তাহলে এই ফান্ডে টাকা জমা করা জায়েয হবে না। যদি কেউ জমা করে ফেলে তবে টাকা উঠানোর পর মূল জমা অর্থাৎ নিজ বেতনের অংশ নিজে ব্যবহার করতে পারবে। আর এর অতিরিক্ত যা পাবে তা সুদ। সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদেরকে তা সদকা করে দিতে হবে।
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করা যদি ঐচ্ছিক না হয়; বরং এর জন্য প্রত্যেকের বেতন থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে টাকা কেটে রেখে দেয় তাহলে ব্যাংকে সুদীভাবে টাকা জমা রাখার দায় সরাসরি চাকরিজীবীদের উপর আসবে না। বরং এর গুনাহ কর্তৃপক্ষের হবে। আর এক্ষেত্রে তারা নিজ বেতনের অংশ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত টাকা ব্যবহার করতে পারবে। এর অতিরিক্ত টাকা সুদ। তা সদকা করে দিতে হবে।
-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১, ২৫১৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৫-৪৬৯; কেফায়াতুল মুফতী ১১/২৭৫; জাদীদ মাসাইল কে শরয়ী আহকাম ৬৫
গত বছর জুন মাসে এক বাড়িওয়ালার সাথে আমার এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রীম ও মাসিক তের হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে বাড়ি ভাড়ার কথা হয়। একই সময়ে বাড়িওয়ালা ঠিক সমান মাপ ও মানের একই তলার আরেকটি ফ্ল্যাট আরেক ব্যক্তির কাছে এ চুক্তিতে ভাড়া দেয় যে, অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে ভাড়া বারো হাজার আর ত্রিশ হাজার টাকা অগ্রীম জামানত দিলে মাসিক ভাড়া তের হাজার টাকা হবে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে অগ্রীম ত্রিশ হাজার ও মাসিক তের হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু আমি যখন জুলাই মাসে অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে যাই তখন তিনি সেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মাসিক ভাড়া বারো হাজার টাকা করেন। প্রথম দশ মাস অগ্রীম টাকা থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা কাটা যাবে। বাকী ত্রিশ হাজার টাকা জামানত হিসাবে রয়ে যাবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা ও অন্যদের সাথে কথা বলে এই কথা প্রায় নিশ্চিত যে, আমার ভাড়া এক হাজার টাকা কম হওয়া অগ্রীম টাকা অন্যজনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাসিক আলকাউসার ২০১৫ জুন-জুলাই সংখ্যায় ছাপাÑ রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপ শীর্ষক প্রবন্ধের তের নম্বরে বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বেশি দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া শিরোনামের অধীনে যে মাসআলা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই একহাজার টাকা কম দেওয়া সুদ বলে গণ্য হবে কি? যদি সুদ হয় তাহলে এখন করণীয় কী?
মাসিক আলকাউসারের উক্ত প্রবন্ধে সিকিউরিটি মানি সম্পর্কে যে মাসআলাটি বলা হয়েছে তা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কেননা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক আপনার ভাড়া একহাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছে দশ মাসের ভাড়া বাবত ১,২০,০০০/= টাকা অগ্রীম দিয়ে দেওয়ার কারণে। এই ১,২০,০০০/= টাকা সিকিউরিটি মানি নয়; বরং তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রীম ভাড়া। আর কিছু ভাড়া অগ্রীম পরিশোধ করে দিলে ভাড়াদাতা যদি মূল ভাড়ার পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছুটা কমিয়ে দেয় তবে তা নাজায়েয নয়। আর সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার নিকট ঋণ হিসাবে থাকে। তাই এই অর্থের কারণে ভাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত, যা সুদ ও হারাম।
-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/৫৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী, ১৪/৩৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ ৪৬৮; আলমাআয়ীরুশ শরইয়্যাহ পৃ. ১৪৮
ঢাকা শহরের এক শপিং সেন্টারে দশ বছর যাবৎ আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করছি। বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি যে, আমার পার্শ্ববর্তী দোকানটি বিক্রি হবে। ফলে আমি বিক্রেতার কাছে গিয়ে দোকানটি কেনার প্রস্তাব দিলাম। কিন্তু তিনি কোনো সায় দিলেন না। পরবর্তীতে তিনি কোনো এক ব্যবসায়ীর কাছে দোকানটি বিক্রি করে দিলেন। আমি কি এই দোকানটি প্রি-এমশনের ভিত্তিতে অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করব? এ ব্যাপারে শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রি-এমশন তথা অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করবেন না। কেননা ভাড়াটিয়া অগ্রক্রয়ের অধিকারী হয় না। অগ্রক্রয়ের অধিকারী কেবলমাত্র বিক্রিত সম্পত্তির শরীকগণ কিংবা এর পার্শ্ববর্তী বাড়ি বা ভূমি মালিকগণই হতে পারে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/১১২; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭
দুই বছর আগে আমরা পাঁচজন সাথী মিলে ছোট্ট একটি সমিতি করেছিলাম। মাসে ৫০০/- টাকা করে জমা করে দুই বছরে মোটামুটি একটি সঞ্চয় হয়েছে। সাথে এককালীন কিছু টাকাও আছে। সমিতি করার সময় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু টাকা জমা করা। কোথাও বিনিয়োগ করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এখন সবাই চাচ্ছে, এক বছরের জন্য এই টাকা দিয়ে ছোটখাটো একটি ব্যবসা করতে এবং সে দায়িত্বটা সবাই মিলে আমাকে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, লভ্যাংশ মূলধন হারেই বণ্টিত হবে। আমার জন্য অতিরিক্ত কোনো অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হল, এ টাকা দিয়ে ব্যবসা করার মতো এত সময় এখন আমার হাতে নেই। তাই আমি চাচ্ছি এই টাকা দিয়ে কারো সাথে ১ বছরের জন্য মুদারাবা চুক্তি করতে এবং তাতে আমার জন্য যে লাভ ধার্য করা হবে সেটা সবাই মিলে ভাগ করে নিব।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে কারবার করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না?
প্রশ্নের বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে সদস্যগণ আপনাকে এ টাকা দিয়েছে যেন আপনি নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাই এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি ব্যতীত টাকাগুলো অন্যের নিকট মুদারাবা ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। সদস্যগণ বা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ যদি অনুমতি দেয় তখন অন্যত্র মুদারাবা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
Ñশরহুল মজাল্লাহ ৪/৩০৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩০৭-৩০৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২০