ফতোয়া: আদব-ব্যবহার

ফতোয়া নং: ৭৩১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ অবস্থায় কেউ শরীয়তসম্মত কোনো প্রয়োজনে যদি...

প্রশ্ন

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ অবস্থায় কেউ শরীয়তসম্মত কোনো প্রয়োজনে যদি বাইরে যায় তাহলে সে কাউকে সালাম ও এর জবাব দিতে পারবে কি না? আমাদের এখানে কেউ কেউ বলেন যে, তার জন্য সালাম দেওয়াও নাকি সহীহ নয়। আবার কেউ বলেন, সালাম দেওয়া যাবে। তাই এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

ইতিকাফকারী কোনো প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে গেলে সালাম বা সালামের জবাবের জন্য না থেমে রাস্তায় চলতে চলতে কিংবা প্রয়োজনীয় কাজটি সারতে সারতে সালাম ও সালামের জবাব দিতে পারবে। এতে তার ইতিকাফের কোনো ক্ষতি হবে না। হাদীস শরীফে আছে, আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় (প্রয়োজনে বাইরে গেলে) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে অতিক্রম করতেন তখন হাঁটা অবস্থাতেই ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়ে নিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭২)

-মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/৫২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; ইমদাদুল আহকাম ২/১৪৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২৩৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একদিন জুমার নামাযের আগে আমার রুমে পড়তে পড়তে ঘুম এসে...

প্রশ্ন

একদিন জুমার নামাযের আগে আমার রুমে পড়তে পড়তে ঘুম এসে যায়। সবাই মনে করেছে আমি মসজিদে গিয়েছি। সুতরাং কেউ আমাকে জাগায়নি। যখন আমি সজাগ হই তখন দ্রুত রওয়ানা দেই এবং নিয়ত করে বসা মাত্রই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দেন। আমি দাঁড়িয়ে মাসবুকের ন্যায় নামায পূর্ণ করি। জানতে চাই আমার ঐ জুমার নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের সালাম ফিরানোর আগেই যেহেতু আপনি জুমার নামাযে শরীক হয়েছেন তাই আপনার জুমার নামায সহীহ হয়েছে। হযরত শু‘বা রাহ. বলেন,

سَأَلْتُ الْحَكَمَ، وَحَمَّادًا، عَنِ الرَّجُلِ يَجِيءُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ الْإِمَامُ، قَالَا: يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ.

আমি হাকাম ও হাম্মাদ রাহ.-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে জুমার দিনে ইমামের সালাম ফিরানোর আগে (জুমার নামাযে) উপস্থিত হয়েছে। উত্তরে তারা বললেন, সে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৩৯৮)

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৫৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৫; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৯৯; ফাতহুল কাদীর ২/৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানের পূর্বে ট্রেনে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। মাঝে ফজরের সময় এক...

প্রশ্ন

রমযানের পূর্বে ট্রেনে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। মাঝে ফজরের সময় এক স্টেশনে ট্রেনটি থামে। ঐ স্টেশনে ট্রেন সাধারণত একটু দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। তাই আমি পস্নাটফরমের এক কামরায় ফজরের জামাতে শরিক হই। আমরা যখন বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ছি তখন ট্রেন ছাড়ার জান্য সংকেত দেওয়া হয়। তাই আমি তাড়াহুড়ো করে ইমামের আগেই সালাম ফিরিয়ে ট্রেনে উঠি। ইমামের আগে সালাম ফিরানোর কারণে কি আমার ঐ নামায নষ্ট হয়ে গেছে? ঐ নামায কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

আপনি যদি তাশাহহুদ পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে থাকেন তাহলে আপনি যেহেতু ওজরবশতকরেছেন তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। আর যদি তাশাহহুদ পড়ার পূর্বে সালাম ফিরিয়েথাকেন তাহলে ঐ নামায আদায় হয়নি। তা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, মুকতাদির জন্য নামাযের সালামেও ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। বিনাওজরে ইমামের পূর্বে সালাম ফেরানো মাকরূহে তাহরীমী। বিনা ওজরে এমনটি করলে উক্ত নামাযপুনরায় আদায় করতে হবে।

-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭২১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

গত রমযানে আমি একদিন জামাতের সাথে তারাবীতে নামায শেষ করে...

প্রশ্ন

গত রমযানে আমি একদিন জামাতের সাথে তারাবীতে নামায শেষ করে জরুরতে মসজিদের বাইরে যাই। ফিরে এসে ইমাম সাহেবকে বিতিরের তৃতীয় রাকাতে পাই। আমি তখন জামাতে শরিক হই। ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলে দুআ কুনূত পড়েন তখন আমিও তার সাথে দুআ কুনূত পড়ি। এরপর ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাত শেষ করে সালাম ফিরালে আমি দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট দু রাকাত পূর্ণ করি। তাতে পুনরায় আর দুআ কুনূত পড়িনি। নামায শেষে একজন মুসল্লি আমাকে বলেন, আপনার নামায আদায় হয়নি। কেননা প্রথমবার আপনি যখন ইমামের সাথে দুআ কুনূত পড়েছেন তা ছিল আপনার প্রথম রাকাত। ইমামের অনুসরণে তখন মূলত তা পড়েছেন। এরপর আপনার তৃতীয় রাকাত যেটা ছিল তাতে দুআ কুনূত পড়া তো আপনার জন্য ওয়াজিব ছিল। ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। হুজুরের কাছে বিষয়টির প্রকৃত সমাধান জানতে চাচ্ছি।

উত্তর

উক্ত মুসল্লির কথা ঠিক নয়। কেননা মাসবুক ইমাম সাহেবের সাথে দুআ কুনূত পড়লে কিংবা তৃতীয়রাকাত পেলে মাসবুকের দুআ কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায় এবং এটা তার জন্য তৃতীয়রাকাত হিসেবেই গণ্য হয়। তাই ইমামের সালামের পর পূর্বের দু রাকাত আদায় করতে হয়।সুতরাং আপনার বিতর নামায যথাযথভাবেই আদায় হয়েছে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৫; শরহুল মুনইয়াহ ৪২১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০-১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একবার আমি ইশার নামাযে মাসবুক হই। ইমাম সালাম ফেরানোর পর...

প্রশ্ন

একবার আমি ইশার নামাযে মাসবুক হই। ইমাম সালাম ফেরানোর পর যখন বাকি নামায পড়তে দাঁড়ালাম তখন কত রাকাত ছুটেছে তা বিলকুল মনে আসছে না। হঠাৎ মাথায় আসল পাশের মুসল্লি তো আমার সাথেই এসেছে। সে যত রাকাত পড়ে তত রাকাত পড়লে তো হয়ে যায়। এ বলে আমি তার মতো নামায পড়ে সালাম ফিরাই। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায পড়ার কারণে নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? আদৌ নামায হয়েছে কি না তাতেও আমি সন্দিহান।

উত্তর

কত রাকাত ছুটেছে তা মনে না থাকলে পাশের মুসল্লিকে লক্ষ্য করে সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করা জায়েয আছে। এভাবে নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যায়। তাই আপনার নামাযও সহীহ হয়েছে। এ নিয়ে সংশয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৯৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন জানাযার নামায পড়ানোর সময় ভুলে...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একদিন জানাযার নামায পড়ানোর সময় ভুলে ৩য় তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। মুসল্লিরা সাথে সাথে লোকমা দেয়। পরে ইমাম সাহেব পুনরায় শুরু থেকে জানাযা নামায পড়ালেন। জানতে চাই, তার এ কাজ কি ঠিক হয়েছে? দ্বিতীয় জানাযা কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা আদায় হয়নি। তাই দ্বিতীয়বার জানাযা পড়া ঠিক হয়েছে। জানাযা নামাযে চার তাকবীরই ফরয। একটি ছুটে গেলেই নামায হবে না। অবশ্য ইমাম সাহেব তৃতীয় তাকবীর শেষে ভুলে সালাম ফিরানোর পর কোনো কথাবার্তা না বলে যদি ছুটে যাওয়া তাকবীরটি বলে নিতেন এবং তারপর আবার সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতেন তাহলে প্রথম জানাযা নামাযটিই সহীহ হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় জানাযা নামাযটি আর পড়া লাগত না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৫২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

বিতর নামাযে কোন্ দুআ কুনূত পড়ব? অনেকে বলেন, আমরা যে...

প্রশ্ন

বিতর নামাযে কোন্ দুআ কুনূত পড়ব? অনেকে বলেন, আমরা যে দুআ কুনূত পড়ি-

)اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ (

সেটি সঠিক নয়। তারা অপর একটি দুআ কুনূত বলে। কোন্টি সঠিক?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত দুআ কুনূত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটিকে ভুল বলা ঠিক নয়। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৫

শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দু’টি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)

এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪

আর প্রশ্নোক্ত দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।

অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

(আরো দেখুন : আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/২১৮; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)

সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২১০, আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)

উল্লেখ্য, কুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, তাহল-

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২৫

ইমাম নববী রাহ. বলেন, আমাদের অনেকেই বলেন, উভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)

তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৪

তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১৪১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একবার আমি তিন দিনের জন্য তাবলীগে গিয়েছি। আমাদের আমীর সাহেব...

প্রশ্ন

একবার আমি তিন দিনের জন্য তাবলীগে গিয়েছি। আমাদের আমীর সাহেব গাশ্ত করার সময় এক হিন্দুকে দাওয়াত দিয়ে মসজিদে নিয়ে এসেছেন। আমীর সাহেব জানতেন না যে, এ লোক হিন্দু। আবার ঐ লোকও বলেনি পরে স্থানীয় লোকজন ঐ হিন্দু ব্যক্তিকে মসজিদে দেখে আমাদেরকে অনেক বকাবকি করেছেন। জানার বিষয় হল, হিন্দুরা মসজিদে প্রবেশ করা কি নাজায়েয?

উত্তর

দ্বীনী কথা শোনানো ও হেদায়েতের উদ্দেশ্যে হিন্দু বা বিধর্মীকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া জায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী সাকীফ গোত্রের কাফের প্রতিনিধি দলকে মসজিদে রেখেছেন (যাতে দ্বীনী কথা শুনে) তাদের অন্তর নরম হয়।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৯১৩

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ হিন্দুকে মসজিদে নিয়ে আসা অন্যায় হয়নি। এ ছাড়া আপনারা তো না জেনেই তাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। সুতরাং এ নিয়ে স্থানীয় লোকদের আপত্তি করা ঠিক হয়নি।

-শরহুস সিয়ারিল কাবীর ১/৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৬; আল বাহরুর রায়েক ৮/২০৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমার বাড়ির পাশে এক হিন্দু লোক থাকে। সে আর্থিকভাবে খুবই...

প্রশ্ন

আমার বাড়ির পাশে এক হিন্দু লোক থাকে। সে আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। আমি চাচ্ছি তাকে কিছু দান-সদকা করতে। এখন হুযুরের নিকট জানার বিষয় হল, আমি কি তাকে সদাকাতুল ফিতর বা মানতের টাকা দিতে পারব? আর তাকে নফল দান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর

অমুসলিমদেরকে নফল সদকা দেওয়া জায়েয এবং এতে সওয়াবও রয়েছে। তবে তাদেরকে সদকায়ে ফিতর বা মানতের টাকা দেওয়া যাবে না। কেননা সদকায়ে ফিতর বা মানতের টাকা বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী শুধু মুসলিম গরীবদের হক।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৫১২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১১৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

সফর অবস্থায় নামায কসর করা কি জরুরি? এক ব্যক্তি বলল...

প্রশ্ন

সফর অবস্থায় নামায কসর করা কি জরুরি? এক ব্যক্তি বলল কসর জরুরি নয়। কেউ চাইলে পুরো নামাযও পড়তে পারে আবার কসরও করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তার এ কথার পর বিষয়টি নিয়ে আমি সংশয়ে পড়ে যাই। দয়া করে আমাকে এর সমাধান জানাবেন।

উত্তর

মুসাফিরের জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে কসর করা জরুরি। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামায পড়া ঠিক নয়। ঐ লোকের বক্তব্য সহীহ নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ.

নামায ফরয করা হয়েছে মুকিম অবস্থায় এবং সফরে দুই দুই রাকাত করে। অতপর সফর অবস্থায় নামায দুই রাকাতই বহাল রাখা হয়েছে আর মুকিম অবস্থার নামাযকে দুই রাকাত বৃদ্ধি করা হয়েছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৮৫

সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

إِنِّي صَحِبْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السَّفَرِ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، وَصَحِبْتُ عُمَرَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ، ثُمَّ صَحِبْتُ عُثْمَانَ، فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ وَقَدْ قَالَ اللهُ: لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.

আমি সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হয়েছি। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের অধিক পড়েননি। এবং আবু বকর রা.-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উমর রা.-এর সঙ্গী হয়ে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। উসমান রা.-এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দুই রাকাতের বেশি পড়েননি। আর আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.

অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৮৯

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে সফরের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ، مَنْ خَالَفَ السُّنَّةَ كَفَرَ.

সফরের নামায দুই রাকাত। যে সুন্নাহকে পরিত্যাগ করল সে (এ হুকুমের) অমান্য করল।-মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪২৮১

সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ইরশাদ করেছেন,

صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللهُ بِهَا عَلَيْكُمْ، فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ.

(কসর নামায) সদকা, আল্লাহ তাআলা তা তোমাদের দান করেছেন। অতএব, তোমরা আল্লাহ তাআলার দানকে কবুল করে নাও। (হাদীস নং ৬৮৬)

সহীহ মুসলিমে মূসা ইবনে সালামা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,

سَأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ: كَيْفَ أُصَلِّي إِذَا كُنْتُ بِمَكَّةَ، إِذَا لَمْ أُصَلِّ مَعَ الْإِمَامِ؟ فَقَالَ : رَكْعَتَيْنِ سُنَّةَ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা-কে জিজ্ঞাসা করলাম মক্কায় অবস্থানকালে ইমামের পেছনে যখন নামায আদায় না করব তখন কীভাবে নামায পড়ব? তিনি বললেন দুই রাকাত পড়বে। এটা আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। (হাদীস ৬৮৮)

সফর অবস্থায় নামায কসর করা সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস রয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় সর্বদা নামায কসর পড়েছেন। সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

অনুরূপ এটাও জানা গেল যে সফর অবস্থায় নামায ফরযই থাকে কেবল দুই রাকাত করে।

এসকল হাদীস ও আছারের উপর ভিত্তি করে ফিকহবিদগণ বলেছেন মুসাফির যখন একাকী বা মুসাফির ইমামের পেছনে নামায পড়বে তখন তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায কসর করা ওয়াজিব।

হাঁ, মুসাফির যদি মুকীম ইমামের পেছনে নামায পড়ে সেক্ষেত্রে সে ইমামের অনুসরণে চার রাকাতই পড়বে। দুই রাকাত পড়বে না।

এক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য চার রাকাত নামায পড়া সাহাবা কেরামের আমল ও আছার দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে। যেমন :

নাফে রাহ. বলেন,

أنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُصَلِّي وَرَاءَ الْإِمَامِ، بِمِنًى أَرْبَعاً. فَإِذَا صَلَّى لِنَفْسِهِ، صَلَّى رَكْعَتَيْنِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মিনায় ইমামের পেছনে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন একাকী পড়তেন তখন দুই রাকাত পড়তেন। -মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৫০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭১০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি আমার বাড়ির ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকি। কয়েকমাস থেকে...

প্রশ্ন

আমি আমার বাড়ির ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকি। কয়েকমাস থেকে তা খালি পড়ে আছে। গত সপ্তাহে এক ভাড়াটিয়ার সাথে কথা হয়েছে যে, সে একটি ভাড়া নিবে। এখন জানতে পারি যে, সে হিন্দু। আমার জানার বিষয় হল, হিন্দুকে ঘর ভাড়া দেওয়া কি জায়েয?

উত্তর

জ্বী, অমুসলিমকে ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েয। এবং তার থেকে প্রাপ্ত ভাড়াও বৈধ। তবে এমন কাউকে ভাড়া দেওয়া যাবে না যার দ্বারা মুসলিম সমাজে বিধর্মীদের আচার-অনুষ্ঠান প্রচার পায় কিংবা যার দ্বারা মুসলমানদের দ্বীনী অনুভূতিতে আঘাত আসে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৯২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে তিন তাকবীর বলে সালাম ফিরিয়েছেন।...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে তিন তাকবীর বলে সালাম ফিরিয়েছেন। নামায শেষে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ইমাম সাহেব পুনরায় চার তাকবীরের সাথে নামায পড়ান। জানতে চাই, আমাদের প্রথম নামাযই বিশুদ্ধ ছিল কি না? নাকি দ্বিতীয়বার পড়া যথাযথ হয়েছে?

উত্তর

প্রথম জানাযায় তিন তাকবীর বলে সালাম ফিরানোর কারণে তা আদায় হয়নি। সুতরাং পরে আবার আদায় করা যথাযথ হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, জানাযা নামাযে চার তাকবীর ফরয। একটি তাকবীর কম হলেও নামায আদায় হবে না। উল্লেখ থাকে যে, জানাযা নামাযে তিন তাকবীরের পর ভুলে সালাম ফিরিয়ে নিলে কথাবার্তা না বলে থাকলে চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে। তাহলে নামায হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পুনরায় তা আদায় করতে হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩২২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি যোহরের নামাযের চতুর্থ রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হই। ইমাম...

প্রশ্ন

আমি যোহরের নামাযের চতুর্থ রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হই। ইমাম সাহেব তার কোনো ভুলের জন্য নামায শেষে সাহু সিজদা আদায় করেন। কিন্তু আমি সাহু সিজদা না দিয়ে বসে থাকি। কারণ আমি এক ব্যক্তির কাছে শুনেছিলাম, মাসবুক সাহু সিজদা না দিয়ে বসে থাকবে। কিন্তু নামাযের পর পাশের এক মুসল্লি বলল, মাসবুক ব্যক্তিও ইমামের সাথে সাহু সিজদায় শরিক হবে। অন্যথায় তার নামায সহীহ হবে না।

এখানে কার কথাটি সঠিক? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

মাসবুক ইমামের সাথে সাহু সিজদায় শরিক হবে- এটাই সঠিক। তবে সাহু সিজদার পূর্বে ইমাম যখন সালাম ফিরান তখন সে সালাম না ফিরিয়ে চুপ করে বসে থাকবে। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

إِذَا انْتَهَى إِلَى الْإِمَامِ وَقَدْ سَهَا قَبْلَ ذَلِكَ فَلْيَسْجُدْ مَعَ الْإِمَامِ، ثُمَّ لِيَقْضِ مَا سَبَقَ بِهِ .

কেউ যদি ইমামের সাথে নামাযে শরিক হয় এমন অবস্থায় যে, ইমাম পূর্বে কোনো ভুল করেছে, তাহলে মাসবুক যেন ইমামের সাথে সিজদায় শরিক হয়। অতপর তার ছুটে যাওয়া রাকাত আদায় করে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৯২

উল্লেখ্য, মাসবুক যদি কোনো কারণে ইমামের সাথে সাহু সিজদা না করে তাহলে নিজের ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের পর সাহু সিজদা করলেও নামায হয়ে যাবে। কিন্তু তাও যদি না করে তবে ঐ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু পরেও সাহু সিজদা করেননি তাই ঐ নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২০১, ২০২; মাবসূত, সারাখসী ১/২২৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২১; ৪২২ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি নিয়মিত নামায পড়ি। কিছুদিন যাবৎ প্রায়ই নামাযের মধ্যে রাকাত...

প্রশ্ন

আমি নিয়মিত নামায পড়ি। কিছুদিন যাবৎ প্রায়ই নামাযের মধ্যে রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়। তিন রাকাত হল না চার রাকাত। এ অবস্থায় আমি কীভাবে নামায আদায় করব? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রবল ধারণার উপর ভিত্তি করে বাকি নামায পূর্ণ করবেন।

আর যদি রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হয় তাহলে কম সংখ্যাটা ধর্তব্য হবে এবং এ হিসেবে বাকি নামায পূর্ণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের পর বৈঠক করে তাশাহহুদ পড়বেন। আর শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা দিবেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا سَهَا أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلَمْ يَدْرِ وَاحِدَةً صَلَّى أَوْ ثِنْتَيْنِ فَلْيَبْنِ عَلَى وَاحِدَةٍ، فَإِنْ لَمْ يَدْرِ ثِنْتَيْنِ صَلَّى أَوْ ثَلاَثًا فَلْيَبْنِ عَلَى ثِنْتَيْنِ، فَإِنْ لَمْ يَدْرِ ثَلاَثًا صَلَّى أَوْ أَرْبَعًا فَلْيَبْنِ عَلَى ثَلاَثٍ، وَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ

তোমাদের কারো যদি নামাযের মধ্যে সন্দেহ হয় ফলে সে জানে না যে এক রাকাত পড়ল না কি দুই রাকাত। তাহলে সে যেন এক রাকাত ধরে নিয়ে নামায পড়ে। আর যদি দুই রাকাত পড়ল না তিন রাকাত, তা না জানে তাহলে যেন দুই রাকাত ধরে নামায পড়ে এবং (এসব ক্ষেত্রে) সালাম ফেরানোর পূর্বে দুটি সিজদা আদায় করে। (অর্থাৎ সাহু সিজদা করে)

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৩-৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩০; কিতাবুল আছল ১/১৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমরা শুনেছি, যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত...

প্রশ্ন

আমরা শুনেছি, যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রতি ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক একবার পড়া ওয়াজিব এবং একের অধিক পড়া সুন্নত। এটা কি সঠিক?

উত্তর

যিলহজ্বের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর কোনো কথা বলার আগেই একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। পুরুষরা হালকা আওয়াজে পড়বে আর মহিলারা নিম্ন আওয়াজে পড়বে। একের অধিকবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। কোনো কোনো কিতাবে তিনবার পড়াকে সুন্নত বলা হলেও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তা সহীহ নয়।

উল্লেখ্য, এটি হল নামাযের পরে তাকবীরে তাশরীক পড়ার মাসআলা। এমনি তো ঐ দিনগুলোতে যিকির, তাকবীর ও তাহলীল বেশি বেশি পড়া সুন্নত। তবে এটি হল একটি ইনফেরাদি আমল। হাদীস শরীফে আছে,

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعَمَلُ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ، فَأَكْثِرُوا فِيهِنَّ مِنَ التَّهْلِيلِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّحْمِيدِ.

‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ পড়।’(মুসনাদে আহমদ ২/৫৭, হাদীস ৫৪৪৬)

-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; মুলতাকাল আবহুর ১/২৬০; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৭, ১৭৮ ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪৮৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

চিঠি বা মেইলে যদি কেউ সালাম লিখে পাঠায় তাহলে আমি...

প্রশ্ন

চিঠি বা মেইলে যদি কেউ সালাম লিখে পাঠায় তাহলে আমি উত্তর মনে মনে দিব, নাকি আমাকে সালামের উত্তর লিখে পাঠাতে হবে?

উত্তর

লিখিত সালামের জবাব লিখেও দেওয়া যায় আবার মুখে উচ্চারণ করেও দেওয়া যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি চাইলে জবাব লিখেও পাঠাতে পারেন অথবা নিজে নিজে মুখে জবাব দিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মৌখিক জবাব তাকে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয় এবং সালামের জবাবের জন্য তাকে পাল্টা উত্তর লেখা কিংবা ফোন করে জানানো কোনোটিই জরুরি নয়। বরং একাকী মুখে জবাব দিয়ে দিলেই হবে।

-ফয়যুল কাদীর ৪/৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একজন মুসলমান হিন্দু এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ...

প্রশ্ন

একজন মুসলমান হিন্দু এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নেয়। কিছুদিন পর হিন্দু লোকটি বাড়ি চলে আসে। এখন তার সাথে যোগাযোগ না থাকায় মুসলমান লোকটি পড়েছে বিপাকে। আমার জানার বিষয় হল, ঐ মুসলিম ব্যক্তি ঋণকৃত টাকা হিন্দু লোকটার নামে সদকা বা আল্লাহর রাস্তায় কল্যাণকর কাজে খরচ করলে ঋণমুক্ত হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কর্তব্য হল, যথাসম্ভব হিন্দু করযদাতার ঠিকানা বের করে তার হাতে পাওনা টাকা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করা। যথাযথ চেষ্টা করেও যদি তার কোনো সন্ধান পাওয়া না যায় তাহলে নিজের দায়মুক্তির নিয়তে টাকাটা গরিব-দুঃখীকে সদকা করে দিবে। এরপর পরবর্তীতে কখনো যদি ঐ হিন্দু করযদাতার সাথে যোগাযোগ হয় এবং সে তার টাকা দাবি করে তাহলে নিজ থেকে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। আর পরিশোধ করে দিলে পূর্বের সদকার সওয়াব মুসলমান ব্যক্তি পাবে।

-আহসানুল ফাতাওয়া ৬/৩৮৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০০৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে...

প্রশ্ন

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে বসে পড়েছেন। কিন্তু কেউ লোকমা দেয়নি। এরপর চতুর্থ রাকাতে ইমাম সাহেব না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান। কেননা তিনি ভেবেছেন, এটি তৃতীয় রাকাত। মুসল্লিরা শেষ বৈঠকে বসে লোকমা দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে আর ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়ে মুসল্লিরা বৈঠক ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। মাসআলা জানা থাকায় আমি ও কয়েকজন মুসল্লি শেষ বৈঠকে বসে ছিলাম। এরপর ইমাম সাহেব যখন পঞ্চম রাকাতের সিজদা করেছেন তখন আমরা সালাম ফিরিয়েছি। এরপর অবশ্য আমরাও সকলের সাথে সতর্কতাবশত পুনরায় আসরের নামায আদায় করে নিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের প্রথম নামায সহীহ হয়েছিল কি না।

উল্লেখ্য, তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব বসার কারণে যে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে আমরা তা আদায় করিনি।

উত্তর

নামাযের শেষ বৈঠক ফরয। তা তরক করলে বা ভুলে ছুটে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যায়। প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম সাহেব শেষ বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে এবং পঞ্চম রাকাতের সিজদার আগ পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে না আসার কারণে ইমাম-মুক্তাদি সকলের নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। যে সকল মুক্তাদি পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়ায়নি তাদেরও নামায হয়নি। কারণ ইমামের নামায ফাসেদ হয়ে গেলে মুক্তাদির নামাযও ফাসেদ হয়ে যায়। সুতরাং উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম ও সকল মুক্তাদির পুনরায় নাযায পড়ে নেওয়া সঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৭০০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় দেখা যায়, কাউকে সালাম দিলে উত্তরই দেয় না।...

প্রশ্ন

অনেক সময় দেখা যায়, কাউকে সালাম দিলে উত্তরই দেয় না। আবার অনেকে উত্তর দিলেও তা শোনা যায় না। শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে উত্তর দেয়। আমার জানার বিষয় হল, সালামের জবাব দেওয়া কী? এবং তা কি জোরে দেওয়া জরুরি, নাকি আস্তে দিলেও হবে?

উত্তর

সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। জবাব না দিলে ওয়াজিব লঙ্ঘনের গুনাহ হবে। আর সালাম প্রদানকারীকে জবাব শুনিয়ে দেওয়াও ওয়াজিব। তবে যদি দূরত্ব অথবা অন্য কোনো কারণে শুনিয়ে জবাব দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে জবাবের বাক্য উচ্চারণের পাশাপাশি হাত দ্বারা ইশারা করা যাবে এবং এর দ্বারা জবাব দেওয়ার হক আদায় হয়ে যাবে।

-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৮০৬; তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ ৪/১৯৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/৪৬৭; আলআযকার ৪০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৩; আলইখতিয়ার ৪/১৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/১১৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের বাজারে এক হিন্দু দোকানী আছে। কিছুদিন পরপর তার সাথে...

প্রশ্ন

আমাদের বাজারে এক হিন্দু দোকানী আছে। কিছুদিন পরপর তার সাথে দেখা হয়। তখন মুসাফাহা করার জন্য সে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি কখনো তার সাথে মুসাফাহা করি আবার কখনো করি না। জানার বিষয় হল, অমুসলিমদের সাথে মুসাফাহা করা বৈধ কি না?

উত্তর

মুসাফাহা কেবল মুসলমানদের সাক্ষাতের সময়ের অভিবাদনের জন্য নির্ধারিত। এর দ্বারা পরস্পরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا، وَحَمِدَا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، وَاسْتَغْفَرَاهُ غُفِرَ لَهُمَ.

যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয় এবং তারা মুসাফাহা করে আর তার সাথে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৬৯

তাই অমুসলিমদের সাথে মুসাফাহা হয় না। তাদের সাথে মুসাফাহার প্রচলন করা ঠিক নয়।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬২৩৯-২৬২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে একটি ব্রিক ফিল্ডের সাথে বিগত কয়েক বছর থেকে লাভজনক হারে দাদন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ব্রিক ফিল্ডের মালিক উক্ত মসজিদকে নির্দিষ্ট সিজনে যে পরিমাণ ইট সরবরাহ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তা মসজিদের পক্ষ হতে পাবলিকের নিকট লাভজনক হারে বিক্রি করে টাকা নিজ হাতে মসজিদের অনুমতিতে রেখে দেয়। মসজিদ পক্ষ পুনরায় আরো কিছু টাকা ব্রিক ফিল্ডের মালিকের নিকট দিয়ে উক্ত কার্যক্রমের নবায়ণ করে।

এখন আমাদের প্রশ্ন হল, উক্ত গৃহীত পদ্ধতি ইসলামী শরীয়তে বৈধ হয়েছে কি না? যদি উক্ত ব্যবস্থা শরীয়ত পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে সঠিক নিয়ম বিস্তারিত দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে উক্ত লেনদেন নাজায়েয হয়েছে। কারণ বাইয়ে সালাম তথা আগাম বিক্রিতে পণ্য আদায়ের সময় হলে পণ্য হস্তগত বা বুঝে নেওয়া জরুরি। পণ্য বুঝে নেওয়ার পূর্বে উক্ত বিক্রি চুক্তি সম্পন্নই হয় না। তাই পণ্য বুঝে নেওয়ার আগে ঐ পণ্য অন্যত্র বিক্রি করা বা বিক্রেতাকেই বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া সবই নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, হাকিম বিন হিযাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বিভিন্ন জিনিষ ক্রয় করে থাকি। তো কোন জিনিস আমার জন্য বৈধ আর কোন জিনিস অবৈধ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

يَا بْنَ أَخِي، إِذَا ابْتَعْتَ بَيْعًا فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.

‘হে আমার ভাতিজা! যখন কোনো কিছু ক্রয় করবে তখন ক্রয়কৃত বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করবে না।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০

উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إِذَا أَسْلَمْتَ فِي شَيْءٍ فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.

‘তুমি কোনো কিছুতে সালাম চুক্তি করলে ঐ বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করো না।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও তাই বর্ণিত হয়েছে। -প্রাগুক্ত, ২১২৪৫

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির ইট বুঝে নেওয়া ছাড়াই অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। বরং প্রথম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়া ছাড়াই লাভ নেওয়ার কারণে অনেকটা এমনই হয়ে গেল যে, মসজিদ কমিটি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে অল্প টাকা দিয়ে ইট ক্রয়ের নামে মেয়াদান্তে বেশি টাকা গ্রহণ করল। অথচ ইট ক্রয়ই সম্পন্ন হয়নি। ফলে এ কারবার অনেকটা সুদি কারবারের সাথেই মিলে গেছে।

এছাড়া প্রশ্নোক্ত লেনদেনে আগাম বিক্রিচুক্তির সাথে উক্ত পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার চুক্তিও যুক্ত আছে। আর এভাবে এক চুক্তির সাথে অন্য চুক্তিকে শর্ত করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি যেহেতু নাজায়েয হয়েছে তাই এর লাভ মসজিদের কাজে লাগানো যাবে না। তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইট নির্ধারিত তারিখে নেওয়ার চুক্তি করবে। এ সময় ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে ইট পুনরায় অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব দিবে না; বরং এ সময় শুধু আগাম বিক্রি চুক্তিই করবে। পরে যখন মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে তখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ইটগুলো বুঝে নিবে এবং তারাই অন্যত্র বিক্রি করে দিবে। আর নিজেদের পক্ষে তা বিক্রি করা সম্ভব না হলে তখন ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া যাবে। কিন্তু এ দায়িত্ব দিতে হবে নিজেদের ইট অন্যান্য ইট থেকে পৃথক করা ও বুঝে নেওয়ার পর। ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ ইট অন্যত্র বিক্রি করে টাকা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করবে।

উল্লেখ্য যে, আগাম বিক্রি তথা বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা : ১. চুক্তির সময় পণ্যের পরিমাণ নির্ধারিত করা ২. পণ্যের গুণগত মান নির্ধারিত করা ৩. মূল্য বাকি না থাকা; বরং চুক্তির সময়ই সমস্ত মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া ৪. পণ্য যদি এমন হয়, যা বহন করতে খরচের প্রয়োজন হয় যেমন, ইট ইত্যাদি তাহলে তা ক্রেতাকে কোথায় বুঝিয়ে দিবে তা নির্ধারিত করা ৫. পণ্য আদায়ের সময়সীমা নির্ধারিত করা এবং সে অনুযায়ী তা হস্তগত করা ইত্যাদি। আর এসব বিষয় উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। যাতে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে কোনো বিবাদ না হয়।

প্রকাশ থাকে যে, মসজিদের দানের টাকা দাতাগণ সরাসরি মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করার জন্যই দিয়ে থাকে। মসজিদের দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা করার প্রচলন আমাদের সমাজে নেই। এছাড়া বর্তমানে আমানতদারির খুব অভাব। এমন পরিস্থিতিতে মসজিদের সাধারণ দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা না করাই কর্তব্য। ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসার জন্য আলাদা ফান্ড গঠন করে সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে। আর মসজিদের টাকা এমন খাতে বিনিয়োগ করবে যাতে ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে।

-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪, ৬/১১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬২; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ২/১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ক. কোন ব্যক্তি যদি ঈদের নামাযে প্রথম তিন তাকবির শেষ...

প্রশ্ন

ক. কোন ব্যক্তি যদি ঈদের নামাযে প্রথম তিন তাকবির শেষ হওয়ার পর কেরাত অবস্থায় নামাযে শরীক হয় তাহলে তার তাকবীরের হুকুম কী?

খ. কোন ব্যক্তি যদি ঈদের নামাযের প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর মধ্যে শরীক হয় তাহলে সে তাকবীর কখন বলবে?

গ. কোন ব্যক্তি ঈদের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাত অবস্থায় শরীক হলে তার তাকবীরের হুকুম কী?

ঘ. আর কেউ যদি ঈদের নামাযে ইমাম সাহেবকে শেষ বৈঠকে পায় তাহলে তার তাকবীরের হুকুম কি?

দয়া করে জানারে উপকৃত হব।

উত্তর

ক. ঈদের নামাযে কোন ব্যক্তি যদি ইমামের সাথে প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীর না পায় বরং কিরাত অবস্থায় নামাযে শরীক হয় তাহলে সে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। -ফাতাওয়া তাতরখানিয়া ২/৬১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১

খ. ঈদের নামাযে ইমামকে প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর মধ্যে পেলে যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, দাঁড়ানো অবস্থায় অতিরিক্ত তাকবীর বলে সে ইমামের সাথে রুকুতে শরীক হতে পারবে, তাহলে তাকবীরে তাহরীমার পর দাঁড়ানো অবস্থায়ই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হবে। আর যদি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললে ইমামকে রুকুতে না পাওয়ার প্রবল ধারণা হয় তাহলে তাকবীরে তাহরীমার পর রুকুতে চলে যাবে। এবং রুকুতেই হাত উঠানো ছাড়া অতিরিক্ত তাকবীরগুরো বলে নিবে। এ ক্ষেত্রে রুকুর তাসবীহ না বললেও চলবে।

প্রকাশ থাকে যে, রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হওয়ার পর অতিরিক্ত তাকবীর বলার মত সময় না পেলে সে ক্ষেত্রে আর তাকবীর বলতে হবে না। ইমামের সাথে রুকু পাওয়ার কারণে সে ঐ রাকাত পেয়েছে এবং সাথে সাথে তাকবীরও পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। -ফাতওয়া তাতরখানিয়া ২/৬১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১

গ. ইমামকে দ্বিতীয় রাকাতের কেরাত অবস্থায় পেলে যথারীতি ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। এবং ইমাম যখন রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলবে সেও ইমামের সাথে তাকবীর বলবে। আর ইমামের সালাম ফিরানোর পর ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়বে তারপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯, ৬২১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৪

ঘ. যে ব্যক্তি ঈদের নামাযে শেষ বৈঠকে শরীক হবে তার কর্তব্য হল, সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই উভয় রাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়েই কিরাতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর অতিরিক্ত তাকবীর বলবে। -ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৯২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কোনো ব্যক্তি ঈদের নামাযে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সে...

প্রশ্ন

কোনো ব্যক্তি ঈদের নামাযে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সে ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানোর পর প্রথম রাকাত আদায়ের সময় অতিরিক্ত তাকবীরগুলো কখন বলবে?

উত্তর

ঐ ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি ঈদের নামাযে এক রাকাতের মাসবূক হয়েছে সে যে রাকাত পেয়েছ তাতে ইমামের সাথে তাকবীর বলবে। আর যে রাকাত পায়নি তাতে ইমাম সাহেবের দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় (অর্থাৎ রুকুর আগে) অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৮৬৩; মাবসূত, সারাখসী ২/৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সালাম ফিরানোর পর কখন দাঁড়াবে? অনেকে দেখা...

প্রশ্ন

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সালাম ফিরানোর পর কখন দাঁড়াবে? অনেকে দেখা যায় প্রথম সালামের পর দাঁড়িয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, দ্বিতীয় সালামের পর দাঁড়াতে হবে। কোনটি সঠিক।

উত্তর

সঠিক নিয়ম হল, ইমাম সাহেবের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর মাসবুক তার অবশিষ্ট নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াবে। ইমামের প্রথম সালামের পরই দাঁড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ ইমাম সাহু সিজদা দিলে মাসবুকেরও ইমামের সাথে সিজদা করা আবশ্যক। আর ইমামের সাহু সিজদা নেই এটা প্রায় নিশ্চিত হবে দ্বিতীয় সালামের পর। তাই দ্বিতীয় সালামের পরই মাসবুক দাঁড়াবে।

Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩১৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি আসরের নামাযে মাসবুক হই। শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেবের সালাম...

প্রশ্ন

আমি আসরের নামাযে মাসবুক হই। শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেবের সালাম শুনে অবশিষ্ট নামায আদায় করতে দাঁড়িয়ে যাই। পরে ইমাম সাহেবের তাকবীর শুনে বুঝতে পারি ইমাম সাহেব সাহু সিজদা করছেন। তখন আমি সাথে সাথে বসে যাই এবং ইমামের সাথে সাহু সিজদা আদায় করি। এরপর যথানিয়মে অবশিষ্ট নামায পড়ি। এখন জানার বিষয় হল, আমার ঐ নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, আপনার ঐ নামায সহীহ হয়েছে। দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর সাহু সিজদার তাকবীর শুনে সাথে সাথে বসে যাওয়া এবং ইমামের সাথে সাহু সিজদায় শরিক হওয়া ঠিকই হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, মাসবুকের জন্য ইমাম উভয় সালাম ফেরানোর পর দাঁড়ানো উচিত। যাতে করে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ইমামের নামায সমাপ্ত হয়েছে এবং তার উপর সাহু সিজদা নেই।

Ñফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর কখনো আমি সিজদায়ে সাহু...

প্রশ্ন

নামাযে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার পর কখনো আমি সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে যাই এবং সালাম ফিরিয়ে ফেলি। সালাম ফিরানোর পর মনে পড়ে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর

সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর ভুলবশত সিজদা না করে সালাম ফিরিয়ে ফেললে কর্তব্য হল, সালামের পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে সিজদায়ে সাহুর কথা মনে পড়ার সাথে সাথে সিজদা করে নিবে এবং যথানিয়মে তাশাহহুদ দুরূদ ও দুআ মাসূরা পড়ে নামায শেষ করবে। তবে সালাম

ফিরানোর পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করলে যেমন কথা বলে ফেললে সাহু সিজদা করার সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আদায়কৃত নামায পুণরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫১২; কিতাবুল আসল ১/২০০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২৪, ৩২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকে...

প্রশ্ন

জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় লক্ষ্য করা যায় যে, অনেকে এক সালামে এক হাত করে দুই সালামে দুই হাত ছেড়ে দেয়। এর সঠিক পদ্ধতি দলিলসহ বর্ণনা করলে উপকৃত হব।

উত্তর

জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় হাত কখন ছাড়বে- এ সম্পর্কে ফিকহবিদগণ থেকে দুই ধরনের মত রয়েছে। একটি মত হল, চতুর্থ তাকবীর বলার পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। আরেকটি মত হল, উভয় সালাম ফিরানো পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখবে। সালাম ফিরানোর পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে।

সুতরাং জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর সময় উপরোক্ত যে কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যেতে পারে।

আর প্রশ্নে যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ফিকহী দৃষ্টিকোণ থেকে তা ঠিক মনে হয় না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫; আসসিআয়াহ ২/১৫৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭-৪৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

গত রমযানে একদিন আমি বিতর নামায পড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে দুআয়ে...

প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন আমি বিতর নামায পড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাই। মুসল্লিরা সাথে সাথে পেছন থেকে লোকমা দিলে আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দুআয়ে কুনূত পড়ি এবং নামায শেষে সাহু সিজদা দেই। সালামের পর মুসল্লিদের কেউ কেউ বলল, সাহু সিজদা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ আমাদের দুআয়ে কুনূত ছুটেনি এবং রুকুতে গিয়েও তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তাদের কথা কি ঠিক? আমার জন্য কি সিজদায়ে সাহু করা ঠিক হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্তক্ষেত্রে আপনার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ঠিকই হয়েছে। সিজদায়ে সাহুর প্রয়োজন ছিল না- প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। কেননা দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণেই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়ে গেছে। তাই রুকু থেকে উঠে দুআ কুনূত পড়লেও সাহু সিজদা দিতে হবে। রুকুতে তিন তাসবীহ বিলম্ব হয়েছে কি না তা এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় নয়। কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে নিয়ম হল, কুনূতের জন্য আর না দাঁড়ানো। তাই এক্ষেত্রে মুক্তাদিগণ ইমামকে দাঁড়াতে বাধ্য করবে না। বরং যথানিয়মে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করে শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৯-১০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি এক মসজিদের ইমাম। ফজর ও আসরের নামাযের সালাম ফিরানোর...

প্রশ্ন

আমি এক মসজিদের ইমাম। ফজর ও আসরের নামাযের সালাম ফিরানোর পর কখনো দেখি, আমার বরাবর পেছনের কাতারে মাসবুক ব্যক্তি নামায পড়ছে। এ অবস্থায় আমার জন্য মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

মাসবুক যদি দ্বিতীয় কাতারে বা আরো পিছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে আর তার সামনে কেউ থাকে তবে ইমাম ঐ বরাবর মুখ করে বসতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু মাসবুকের সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা মাকরূহ

হবে। কেননা নামাযির সামনে কোনো আড়াল না থাকলে তার বরাবর মুখ করে বসা বা দাঁড়ানো মাকরূহ তাহরীমী।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২৩; শরহুল মুনইয়াহ ৩৪১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৭১-১৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

শেষ বৈঠকে মুকতাদীর দরূদ শরীফ বা দুআ মাসূর শেষ হওয়ার...

প্রশ্ন

শেষ বৈঠকে মুকতাদীর দরূদ শরীফ বা দুআ মাসূর শেষ হওয়ার আগেই যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরায় তাহলে মুকতাদীর করণীয় কী? দুআ-দরূদ শেষ করে সালাম ফিরাবে নাকি শেষ করার পূর্বেই ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুকতাদীর দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর শেষ না হলেও ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরাবে। কেননা, দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর পড়া সুন্নত আর ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে ইমাম সাহেবের উচিত একটু ধীর গতিতে পড়া যাতে মুসল্লিরা দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর শেষ করতে পারে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একবার ফরয নামায আদায় করার পর পুণরায় জামাতে ঐ ফরয...

প্রশ্ন

একবার ফরয নামায আদায় করার পর পুণরায় জামাতে ঐ ফরয নামায আদায় করা যাবে কি?

উত্তর

প্রতিটি ফরয নামায তার নির্দিষ্ট ওয়াক্তে একবারই ফরয। একবার আদায় করার পর ঐ ওয়াক্তে আবার আদায় করলে তা নফল গণ্য হবে।

তাই যোহর ও ইশার নামায আদায় করার পর নফলের নিয়তে জামাতের সাথে আবার পড়তে পারবে।

তবে ফজর ও আসরের ফরয আদায়ের পর নফলের নিয়তেও দ্বিতীয়বার পড়া যাবে না। কেননা ফজর ও আসরের পর নফল পড়া মাকরূহ। আর মাগরিবের পর যদিও নফল পড়া যায় কিন্তু তিন রাকাত নফল নেই। তাই ইমামের পিছনে নফলের নিয়তে মাগরিবে শরিক না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। একান্ত শরিক হলে ইমামের সালামের পর আরো এক রাকাত একাকী পড়ে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/৫১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৮০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ক) স্মরণশক্তি কেন বাড়ে কেন কমে (লেখক : মুফতী মুহাম্মাদ...

প্রশ্ন

ক) স্মরণশক্তি কেন বাড়ে কেন কমে (লেখক : মুফতী মুহাম্মাদ মুজীবুল হক) -এর ২৫ পৃষ্ঠায় স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ১টি কারণ উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত পানি পান করা। কারণ অতিরিক্ত পানি কফ তৈরি করে। আর তার প্রভাব পড়ে স্মরণ শক্তির উপর। প্রায় সত্তরজন নবী এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, অধিক বিস্মৃতি অধিক কফের কারণে হয়। আর অধিক কফ অধিক পানি পান করার কারণে হয়। আর অধিক পানি পান করতে হয় অধিক খাবার গ্রহণ করার কারণে। হুজুরের নিকট এ বিষয়ের তাহকীক জানতে চাই।

খ) লোকমুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা বর্ণের ছিল। পরবর্তীতে লোকদের চুম্বনে তাদের গুনাহ চুষে কালো হয়ে গেছে। এ বিষয়ের বাস্তবতা কি? জানতে চাই।

গ) লোকমুখে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে যে, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়। জানার বিষয় হল, কথাটার বাস্তবতা কী? মাকড়সা মারার হুকুম কি?

উত্তর

ক) পরিমিত পানি শরীরের জন্য দরকারি এবং উপকারী। তাই দৈনিক কী পরিমাণ পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন তা অভিজ্ঞ ডাক্তার থেকে জেনে নিবে।

আর প্রয়োজনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান চিকিৎসাবিদদের ভাষ্যমতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। এজন্য তারা মাত্রাতিরিক্ত পানি পানের পরামর্শও দেন না।

আর প্রশ্নে সত্তরজন নবী থেকে যে কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতিরিক্ত পানি পান প্রকারান্তরে অধিক বিস্মৃতির কারণ এটি ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো কথা কুরআন-হাদীসে নেই।

এ ধরনের একটি কথা তালীমুল মুতাআল্লিম কিতাবের হিন্দুস্তানী কপিতে পাওয়া যায়। যা সম্ভবত পাণ্ডুলিপিকারদের ভুলের কারণেই ঘটেছে। মূলত সঠিক বক্তব্য হল, اتفق سبعون طبيبا যার অর্থ হল, সত্তরজন চিকিৎসক একমত হয়েছেন। এ বক্তব্যে طبيبا শব্দটির স্থানে ঐ কপিতে نبيا এসে গেছে। যার ফলে অর্থ দাঁড়িয়েছে সত্তরজন নবী একমত হয়েছেন।

আমরা তালীমুল মুতাআল্লিমের দুটি তাহকীকী নুসখা দেখেছি। একটি হল বৈরুতের আলমাকতাবুল ইসলামী-এর নুসখা, যা ডক্টর মারওয়ান কুববানীর তাহকীককৃত। এ নুসখার ৯৭ নং পৃষ্ঠায় উক্ত বক্তব্য এভাবে আছে-

اتفق سبعون طبيبا

আরেকটি সুদানের ‘আদদারুস সুদানিয়া লিল কুতুব’-এর নুসখা। এর প্রথম সংস্করণ ১৪২৫ হিজরী, ২০০৪ ঈসায়ী। এ সংস্করণের ৪৬ পৃষ্ঠাতেও اتفق سبعون طبيبا -ই আছে।

বাকি থাকল কেন সত্তরজন চিকিৎসক এ বিষয়ে একমত হয়েছেন? প্রয়োজনে সেটিও একটি তাহকীকের বিষয়। এবং প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানে কথাটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য ছিল এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কতটুকু বাস্তবসম্মত- এসবই তাহকীকযোগ্য। যে কথা স্পষ্ট থাকা দরকার তা হল, নবীদের দিকে উক্ত কথাটিকে সম্বন্ধ করা ভিত্তিহীন। আর যে পরিমাণ পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন তা স্মৃতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না এটিই স্বাভাবিক।

উত্তর : খ) প্রশ্নোক্ত কথাটি সঠিক। হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা ধবধবে ছিল। অতপর চুম্বনকারী এবং ইস্তেলামকারীর গুনাহসমূহের প্রভাবে তা কালো হয়ে যায়।

হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। এটি দুধের চেয়েও অধিক শুভ্র ছিল। অতপর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ এটিকে কালো করে দিয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৩৩

উত্তর : গ) মাকড়সার জাল ঘরে থাকলে অভাব-অনটন দেখা দেয়- প্রশ্নের এ কথাটি অবাস্তব। কুরআন-হাদীসে এর কোনো প্রমাণ নেই। কোনো কোনো তাফসীরের কিতাবে আলী রা. থেকে এ ধরনের একটি কথা উল্লেখ আছে বলে পাওয়া যায়। কিন্তু এর সনদ মুনকার, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই মাকড়সার জাল এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা থেকে ঘর-বাড়িকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যে কর্তব্য তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।

আর মাকড়সা মারার ক্ষেত্রে হুকুম হল, মাকড়সা যদি ক্ষতিকর বা বিষাক্ত প্রকৃতির হয় তবে তা মেরে ফেলা জায়েয। কিন্তু যদি তা ক্ষতিকর না হয় সেক্ষেত্রে না মেরে বাসা-বাড়ি থেকে তা ঝেড়ে ফেলে দেয়াই শ্রেয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬১; আদ্দুররুল মুখতরা ৬/৪৭৪; আলমাওসুআতুল ফিকহিয়া, কুয়েত ১৭/২৮৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/৫১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কখনো কখনো আমি মাসবুক হই। কিন্তু ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর...

প্রশ্ন

কখনো কখনো আমি মাসবুক হই। কিন্তু ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর যখন বাকি নামায আদায় করতে দাঁড়াই তখন কখনো কখনো মনে থাকে না যে, ইমামের সাথে কয় রাকাত পেয়েছি আর কয় রাকাত ছুটেছে। সেক্ষেত্রে আমার পাশের ব্যক্তি যে আমার সাথেই নামাযে শরিক হয়েছে তাকে দেখে নামায আদায় করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করলেও কি নামায হয়ে যায়?

উত্তর

হাঁ, নিজের ছুটে যাওয়া রাকাতের (সংখ্যা) স্মরণ না থাকলে পাশের মুসল্লির নামাযের প্রতি খেয়াল করে নিজে নিজে সে অনুযায়ী নামায পড়লেও হয়ে যাবে। তবে নামায একাগ্রতার সাথে আদায় করা উচিত। বারবার এমনটি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কখনো আমি নামাযে মাসবুক হই। নামায শেষে ভুলক্রমে ইমামের সাথে...

প্রশ্ন

কখনো আমি নামাযে মাসবুক হই। নামায শেষে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। পরে অন্যদের দেখে মনে হয়। জানতে চাই, এক্ষেত্রে কি আমার নামায ভেঙ্গে যাবে? নামায না ভাঙ্গলে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

এক্ষেত্রে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর কারণে নামায ভঙ্গ হবে না। তবে এ অবস্থায় দেখতে হবে যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের সাথেই হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের পরে হয় তাহলে অবশিষ্ট নামায শেষে আপনাকে সিজদায়ে সাহু করে নিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর কোনো মুসল্লি যদি মসজিদে...

প্রশ্ন

ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর কোনো মুসল্লি যদি মসজিদে এসে বারান্দায় অথবা মসজিদের পেছনের দিকে ফজরের সুন্নত নামায পড়তে চান তা কি তার জন্য জায়েয হবে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে মাসআলাটি জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো ব্যক্তি মত প্রকাশ করে থাকেন যে, ‘‘ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নামায বা সুন্নত নামায (বিশেষ করে ফজরের সুন্নত) সম্পূর্ণ হারাম, সুন্নত বিরোধী।’’এ সম্পর্কে তারা একটি লিফলেট প্রচার করে থাকে। যাতে তাদের স্বপক্ষে কয়েকটি হাদীসও উল্লেখ আছে। উক্ত লিফলেটটি প্রশ্নের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হল।

উত্তর

কোন ব্যক্তি যদি ফজরের ইকামত চলাবস্থায় বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদে আসে আর তার কাছে মনে হয় যে সুন্নত পড়ে অন্তত এক রাকাত পাওয়া যাবে তাহলে এ ব্যক্তির জন্য মূল জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্নত আদায় করা জায়েয আছে।

একাধিক সাহাবা তাবেয়ীন থেকে ইকামত শুরু হওয়ার পর জামাত চলাবস্থায় ফজরের সুন্নত আদায় করা প্রমাণিত আছে। যেমন:

এক. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. একবার সাঈদ ইবনে আসের নিকট থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যে ফজর নামাযের ইকামত হয়ে গেল। তখন ইবনে মাসউদ রা. দু’রাকাত সুন্নত পড়ে লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন, আর আবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. কাতারে প্রবেশ করলেন। (শরহু মাআনীল আসার,১/২৫৫)

দুই. আবু মিজলায রাহ. বলেন আমি ফজর নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করলাম যে ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেন, তখন ইবনে আব্বাস রা. দু’রাকাত সুন্নত পড়ে ইমামের সাথে শরীক হলেন। আর ইবনে ওমর রা. ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়ে গেলেন। ইমাম সালাম ফেরানোর পর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকলেন অতপর উঠে দুরাকাত নামায আদায় করলেন। (প্রাগুক্ত ১/২৫৫)

তিন. আবু দারদা রা. বলেন আমি একদা লোকদের নিকট এমন সময় আসি যে তারা কাতারবদ্ধ হয়ে ফজর নামায আদায় করছিল। আমি তখন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত আদায় করি অতপর তাদের সাথে নামাযে শরীক হই। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৬৪৮২

চার. নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ইবনে ওমর রা. একদা ফজর নামাযের জন্য পোশাক পরিধান করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ইকামত শুনতে পেলেন, তিনি তখন কামরাতে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করলেন অতপর বের হয়ে লোকদের সাথে ফরয আদায় করলেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪০১৯

পাঁচ. আবু উসমান নাহদী রাহ. বলেন আমরা ওমর রা.-এর নিকট ফজরের সুন্নত না পড়ে এসে যদি দেখতাম যে তিনি ফজরের জামাতে আছেন তাহলে আমরা মসজিদের শেষ দিকে এসে সুন্নত পড়ে নিতাম অতপর জামাতে শরীক হতাম। -শরহু মাআনীল আছার ১/২৫৬

ছয়. বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরূক রাহ. মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন লোকেরা ফজর নামায পড়ছিল,তিনি এক কোনায় ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করেন অতপর জামাতে শরীক হন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৬৪৭২

সাত. মুজাহিদ রাহ. বলেন, যখন তুমি মসজিদে এসে লোকদেরকে ফজরের জামাতে দেখতে পাবে,আর তুমি ফজরের সুন্নত পড়নি তাহলে তুমি তা পড়ে নাও যদিও তোমার প্রথম রাকাত ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৬৪৭৯

তাবেয়ীদের মধ্যে আরো যাদের থেকে ফজরের জামাত চলাবস্থায় সুন্নত পড়া প্রমাণিত আছে তারা হলেন, সাঈদ ইবনে জুবাইর, হাসান বসরী, ইকরিমা, ইবরাহীম নাখায়ী রহ.। ইবনে বাত্তাল রহ. উমর রা. এর আমলও এমন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।

কোনো কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ইকামত বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদের অভ্যন্তরে ফজরের সুন্নত না পড়লেও মসজিদের বাহিরে বা মসজিদের দরজা সংলগ্ন স্থানে পড়ে নিতেন। তন্মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা., হাম্মাদ, আব্দুর রহমান ইবনে মা‘কিল, আতা, ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. উল্লেখযোগ্য।

উপরোক্ত সাহাবা, তাবেয়ীদের আছার, আমল ও ঘটনাবলী থেকে একথা সুপ্রমাণিত যে, ফজরের ইকামত চলার সময় বা ইকামতের পরও মসজিদের বাহিরে বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের বারান্দায় বা কোনায় কিংবা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্œত পড়া জায়েয আছে। মহান পূর্বসুরী এ সকল সাহাবা, তাবেয়ীদের বক্তব্য ও আমল থাকা সত্তে¡ও হাদীসের মর্ম ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না বুঝে ফজরের সুন্নত পড়াকে নাজায়েয, হারাম বা বিদআত বলা বড় অন্যায়। এমন কথা প্রকারান্তরে সাহাবা-তাবেয়ীদের আমলকেও বিদআত ও হারাম বলার নামান্তর।

এ কথা সত্য যে, কিছু সংখ্যক সাহাবা إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নত পড়তেন না; বরং জামাতে শরীক হয়ে যেতেন। যেমন, আবু হুরায়রা রা., হুযায়ফা রা. তাবেয়ীদের মধ্যে ইবনে সীরীন, ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীরসহ আরো প্রমুখ। কিন্তু যে সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ইকামত অবস্থায় বা পরে মসজিদে বা মসজিদের বাহিরে ফজরের সুন্নত পড়েছেন তাদেরকে তারা কোনোরূপ তিরস্কার করেননি। যেমন পূর্বে উল্লেখিত ইবনে মাসউদ, আবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা.-এর ঘটনা এবং আবু মিজলাযের বর্ণনায় ইবনে ওমর ও ইবনে আব্বাসের ঘটনা এবং আবু উসমান নাহদীর বর্ণনায় ওমর রা.-এর ঘটনা। এ সময় ফজরের সুন্নত পড়া যদি নাজায়েয, হারাম বা বিদআতই হত তাহলে সাহাবা কেরাম অবশ্যই এমন নাজায়েয ও হারাম কাজ করতে বাধা দিতেন। কেননা সাহাবা কেরাম কোনো নাজায়েয বা হারাম কাজকে কিছুতেই বরদাশত করতেন না।

মূলত এ মাসআলায় শুরু থেকেই সাহাবা তাবেয়ীনের মাঝে দুধরনের মত ও আমল চালু ছিল। তাদের এক জামাত إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর কোন নামাযের পূর্বে সুন্নত পড়তেন না। এমনকি ফজরের সুন্নতও না।

পক্ষান্তরে অনেক সাহাবা ও তাবেয়ীন ফজরের সুন্নত অন্য সকল সুন্নত অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন দিক থেকে ফজরের সুন্নত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ার কারণে তারা ইকামত শুরু হওয়ার পরও তা আদায় করে নিতেন এবং إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফজরের সুন্নতকে ভিন্ন মনে করতেন।

হাদীস শরীফে এসেছে :

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৫

দুই. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতকে অধিক গুরুত্ব দিতেন যতটা না অন্য কোনো নফল বা সুন্নতকে গুরুত্ব দিতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৬৩

এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেক সাহাবী ইকামত শুরু হওয়ার পর অন্য নামায পড়ার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে হাদীসটিকে এক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য মনে করতেন। তারা বরং ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য চার ওয়াক্তে ইকামতের সময় কোনো ধরনের সুন্নত-নফল শুরু না করার সাথে হাদীসটির বক্তব্য সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর ফজরের সুন্নত সম্পর্কিত হাদীসের কারণে তারা ইকামত শুরু হলেও ছোট সূরা দিয়ে অল্প সময়ের ভিতরে তা আদায় করে নিতেন। এতে উভয় হাদীসের উপরই আমল হয়ে যেত।

অবশ্য জামাত শুরু হওয়ার পর ভিন্ন নামায পড়ার দ্বারা যেন তার প্রতি অবজ্ঞা জাতীয় কিছু বোঝা না যায় এজন্য এ সুন্নত পড়তে বলা হয়েছে নিজ ঘরে বা মসজিদের বারান্দায় অথবা অনেক বড় মসজিদ হলে জামাতের স্থান থেকে অনেক দূরে পিছনে গিয়ে কোনো খুটির আড়ালে। যদি তৎক্ষণাৎ এমন জায়গা না পাওয়া যায় তাহলে ঐ সময় সুন্নত না পড়ে বরং জামাতেই শরীক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নিবে।

দ্বিতীয় বিষয় হল, কোনো ব্যক্তি যদি ফরযের পূর্বে সুন্নত পড়তে না পারে তাহলে সে তা কখন আদায় করবে?

এক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণের আলোকে শক্তিশালী মত হল, এ ব্যক্তি ফজরের সুন্নত সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে। ফরযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করবে না। হাদীস শরীফে এসেছে:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারেনি সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৩

দুই. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তিনি সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নিতেন।

যেমন বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননি, তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৫

তিন. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৩

এ হাদীসে ব্যাপকভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে ফজরের সুন্নতও শামিল। এ থেকে ফজরের সুন্নতকে বাদ দেয়ার সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস নেই। ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন, সাহাবা ও তাদের পরবর্তী অধিকাংশ ফকীহের মত হল,তারা ফজর ও আসরের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফরযের কাযা ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন।

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের আমল ও নির্দেশনা এবং ঐ সময়ে সুন্নত নফল আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার হাদীস এবং সাহাবা তাবেয়ীনের অধিকাংশের বক্তব্য ও আমল দ্বারা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত যে, ফজরের সুন্নত ফরযের আগে পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের আগে তা পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।

আর প্রশ্নপত্রের সাথে সংযুক্ত লিফলেটে ফরযের পর সূর্যোদয়ের আগে সুন্নত পড়ার স্বপক্ষে যে হাদীস পেশ করা হয়েছে সনদের বিচারে তা সহীহ নয়। খোদ ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেছেন, এ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়। হাদীসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত তাইমী রাহ. কায়েস রাহ. থেকে কোনো হাদীস শুনেননি। সে মতে এ হাদীসটি منقطع যা পূর্বোক্ত মারফু মুত্তাসিল হাদীসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আর বায়হাকীর রেওয়ায়েতের বর্ধিত অংশ “ফজরের দুরাকাতও পড়া যাবে না” দলীলযোগ্য নয়। কেননা মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী এ অংশটি সহীহ নয়। স্বয়ং ইমাম বায়হাকী রাহ. এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন, আবু আহমাদ বলেন, মুসলিম ইবনে খালিদের সূত্রে আমর থেকে এ হাদীস যারা বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে নসর ব্যতিত অন্য কেউ তার বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেছে বলে আমি জানি না। তিনি আরো বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, আহমদ ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন নসর ইবনে হাজিব থেকে! কিন্তু এটা ভুল (وهم)।

এ ছাড়া নসর ইবনে হাজিব আল মারওয়াযী শক্তিশালী রাবী নন। তার পুত্র ইয়াহইয়াও অনুরূপ। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ২/৪৮৩)

প্রকাশ থাকে যে, লিফলেটে একটি মাসআলা বলা হয়েছে যে, মসজিদে এসে যদি দেখা যায় যে জামাতের দুই/এক মিনিট সময় বাকি আছে তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবে না।

প্রশ্ন হল, এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এ ধরনের কোনো কথা কি সাহাবা তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে?

হাদীস শরীফে তো ইকামত শুরু হলে সুন্নত নফল শুরু করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইকামত শুরুর দুই/ এক মিনিট আগে থেকে সুন্নত নফল শুরু করা যাবে না -এমন কথা তো হাদীস আসারে নেই। তিনি কী করে তা বললেন?

এর চেয়েও অধিক মনগড়া কথা হল “সুন্নত পড়া অবস্থায় যদি একামত শুরু হয়ে যায় আর সুন্নত আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম রাকাতে থাকে বা মাত্র প্রথম রাকাত শেষ হলো তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন” এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? এটা তো বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশনাولا تبطلوا أعمالكم(তরজমা. আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না) এর ব্যাপকতার বিরোধী।

ইমাম জাসসাস রাযী রাহ. বলেন, এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, যে ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্বসহ যে কোনো সওয়াবের কাজ শুরু করেছে তা পূর্ণ করার আগে বাতিল করা জায়েয নয়। (আহকামুল কুরআন ৩/৩৯৩)

অনুরূপ কথা ইমাম কুরতুবী রাহ.ও বলেছেন। (দেখুন, আল জামে লিআহকামিল কুরআন ১৬/১৬৮)

ইবনে কুদামা রাহ. বলেন, নফল পড়া অবস্থায় একামত হয়ে গেলে এবং জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে তা পূর্ণ করবে, তা বাতিল করবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ولا تبطلوا أعمالكم (আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না।)

-আলমুগনী ২/১২০; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৪১৩৬, ১০/৩২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৯৩৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ২৩৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি ঢাকা থেকেই প্রথমেই মদীনা শরীফ যাই, সেখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু...

প্রশ্ন

আমি ঢাকা থেকেই প্রথমেই মদীনা শরীফ যাই, সেখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা মুবারক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ২/৩ দিন অবস্থান করি। তারপর মক্কা শরীফে ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি এবং আমি মদীনা থেকে অর্থাৎ মসজিদে নববী থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধি। গাড়িতে উঠলে বাঙ্গালী ড্রাইভার আমাকে বলল, মদীনা থেকে ওমরার নিয়ত করলে হবে না। জুল হুলাইফা মসজিদ থেকে ওমরার নিয়ত করতে হবে। আমি তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশের দুইজন বড় আলেমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে দুইজনের দুই রকম মতামত পাই। যেমন, একজন বললেন, যেহেতু মদীনা শরীফ ও মসজিদে নববী মীকাতের আগে তাই আপনার ওমরার নিয়ত করা ঠিক আছে। কিন্তু অন্যজন বললেন, যেহেতু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফ থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন তাই আপনাকে জুল হুলাইফা মসজিদে এসেই ওমরার নিয়ত করতে হবে। এমতাবস্থায় কোনটি সঠিক? উল্লেখ্য, যুলহুলাইফা মসজিদে এসে পুনরায় অযু-গোসল না করে (ইহরাম বাঁধা এবং অযু আগেই ছিল) ওমরার নিয়ত করেছি। যেহেতু আসরের নামাযের জামাত মাসবুক হিসেবে শরিক হই। তাই ইহরামের নামায না পড়েই শুধু নিয়ত করে নিয়েছি। এটা কি ঠিক হয়েছে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য মসজিদে নববী থেকে ইহরাম করা জায়েয় হয়েছে। কেননা হজ্ব ও উমরার জন্য মীকাত এবং মীকাতের আগে যে কোনো জায়গা থেকে ইহরাম করা জায়েয। কারণ ইহরামের জন্য যে মীকাত নির্ধারণ করা হয়েছে তার অর্থ এই যে, ইহরাম ছাড়া ঐ জায়গাগুলো অতিক্রম করা যাবে না। এ অর্থ নয় যে, মীকাতের আগে ইহরাম করা যাবে না।

একাধিক সাহাবী থেকে মীকাতের অনেক আগেই ইহরাম করা প্রমাণিত আছে। ইবনে আবী লাইলা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত আলী রা. মদীনা থেকে ইহরাম করেছেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৮৩২

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বাইতুল মাকদিস থেকে ইহরাম করেছেন। -প্রাগুক্ত, হাদীস : ১২৮১৯

আবদুল্লাহ ইবনে সালামা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রা.-কে সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াত (তরজমা) আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্ব ও উমরা পূর্ণ করো।)-এর তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হজ্ব ও উমরা পূর্ণ করার অর্থ হল, নিজের ঘর থেকে ইহরাম করা।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৮৩৪; তাফসীরে তবারী ২/২১৩

এ ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., উসমান ইবনে আবীল আস রা., ইমরান ইবনে হুসাইন রা., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., তাউস রাহ.সহ আরো অনেক সাহাবা-তাবেয়ী থেকে মীকাতের আগেই ইহরাম করার কথা বর্ণিত হয়েছে। দেখুন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/৩৫-৪০

সুতরাং যুলহুলাইফা মসজিদে এসেই ইহরাম করতে হবে, মদীনা থেকে ইহরাম করা যাবে না- এ কথা ঠিক নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম করেছেন এটা যে মীকাত এ কথা বোঝানোর জন্য।

অতএব মদীনা থেকে আপনার ইহরাম করা ঠিক হয়েছে। যুলহুলাইফা এসে পুনরায় ইহরামের নিয়ত করার দরকার ছিল না। তবে পুনরায় নিয়ত করার কারণে কোনো সমস্যাও হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৬, ১৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭৭-৪৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় পার্কে হাঁটতে বের হই। সেখানে ভিক্ষুকরা কিছুদূর পরপর...

প্রশ্ন

অনেক সময় পার্কে হাঁটতে বের হই। সেখানে ভিক্ষুকরা কিছুদূর পরপর বসে থাকে। তারা পথচারীদেরকে সালাম দিতে থাকে।

জানতে চাই, ভিক্ষুকের সালামের উত্তর দেওয়া কি ওয়াজিব?

উত্তর

যে ভিক্ষুক ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সালাম দেয় তার ঐ সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে প্রকৃত অর্থে সালাম দেয় এবং সালামকে ভিক্ষার মাধ্যম না বানায় তার সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য কোন্ উদ্দেশ্যে সালাম দিচ্ছে তা যেহেতু জানা মুশকিল তাই সকল ভিক্ষুকের সালামের উত্তর দেওয়াই অধিক সতর্কতা।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৪৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানের শেষ দশকে কোনো ব্যক্তি ইতিকাফরত অবস্থায় পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের...

প্রশ্ন

রমযানের শেষ দশকে কোনো ব্যক্তি ইতিকাফরত অবস্থায় পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে বের হলে পথে সালামের আদান-প্রদান করতে পারবে কি না? তদ্রƒপ কারো শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবে কি না? আমাদের এখানে প্রচলিত আছে যে, ইতিকাফরত ব্যক্তি রাস্তায় কাউকে সালাম দেয় না এবং তাকে সালাম দিলে জবাব দেয় না; বরং কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলে প্রয়োজন সেরে মসজিদে চলে যায়। হুযুরের কাছে এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলাটি জানতে চাচ্ছি।

উত্তর

ইতিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। তদ্রƒপ এসময় পথ চলতে চলতে কারো সাথে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবে। এতে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় চলতে চলতে রোগীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু এর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতেন না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭২

তবে কারো সাথে কথা বলা বা কুশলাদি জিজ্ঞাসার জন্য মসজিদের বাইরে অল্প সময়ও দাঁড়ানো জায়েয হবে না।

Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/৫২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

(ক) আমরা জানি, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তিনটি সওয়াল করা হবে।...

প্রশ্ন

(ক) আমরা জানি, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তিনটি সওয়াল করা হবে। কিন্তু এমনও লোক আছে যাদের মৃত্যু হয় আকাশে বা সাগরে যাদের লাশ মাটিতে দাফন করার সুযোগ হয় না। তাদেরকে কোথায় সুওয়াল করা হবে?

(খ) অনেক মানুষের লাশ সাগরে দাফন করা হয়ে থাকে সেটিই বা বৈধ কতটুকু?

(গ) সাধারণ মানুষ তো আছেই অনেক আলেমকেও দুআর সময় বলতে শুনি, হে আল্লাহ! অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন। আসলে অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন হবে, নাকি হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিনÑ কোনটি সঠিক?

(ঘ) কবর যিয়ারতের সময় কোন দিকে ফিরে দুআ-দরূদ পড়ব?

(ঙ) কবর সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে কি?

উত্তর

ক) মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব এবং এর পরবর্তী প্রতিদান ও শাস্তি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব হওয়ার জন্য লাশ মাটিতে দাফন করা এবং লাশ অক্ষত থাকা জরুরি নয়; বরং এ সময়ে বান্দার দেহ যেখানে যেভাবে থাকুক আল্লাহ তাঁর কুদরতে ঐ দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক করে দিবেন এবং সওয়াল-জওয়াব ও শান্তি বা শাস্তি সব কিছুই হবে। লাশ মাটিতে দাফন করা হোক বা না হোক এবং লাশ অক্ষত থাকুক বা না থাকুক এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা.সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগে এক ব্যক্তি ছিল, যে মৃত্যুর সময় তার ছেলেদেরকে অসিয়ত করেছে যে, আমি তো আল্লাহর নিকট কোনো ভালো আমল জমা রাখিনি। জেনে রাখ,আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তোমরা আমার দেহকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিবে। অতপর ছেলেরা অসিয়তমতে মৃত্যুর পর তার দেহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরে আল্লাহ তাআলা ঐ ছাইগুলো জমা করে তাকে জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে এ কাজে কিসে প্ররোচিত করল? সে বলল, একমাত্র আপনার ভয়ই আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিলেন। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৬৪৮০, ৬৪৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৩৩৫৩; কিতাবুর রূহ ৭৪; মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০

খ) সাগরের মাঝে নৌযানে কারো ইন্তিকাল হলে নৌযানটি যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং অবতরণ করা সম্ভব হয় বা নৌযান গন্তব্যে পৌঁছার আগে লাশে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা না থাকে তাহলে লাশ ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি নৌযান থেকে ভূমিতে অবতরণ করার আগে আগে লাশে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে নৌযানেই তার গোসল, কাফন ও জানাযা দিয়ে লাশটি সাগরে ছেড়ে দিবে। সম্ভব হলে লাশের সাথে কোনো ভারি বস্তু যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে। যাতে লাশ নিচে চলে যায়। পানিতে ভেসে না থাকে। Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯

গ) মৃত্যুর পর শান্তি ও আযাব রূহ এবং দেহ উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো শুধু রূহের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। এটিই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। তাই কেউ যদি রূহের মাগফিরাত দ্বারা এমন উদ্দেশ্য করে যে, শাস্তি বা শান্তি শুধু রূহেরই হবে তাহলে সেটি ভুল হবে। তাই কথাটি এভাবে বলা উচিত হবে, হে আল্লাহ অমুকের মাগফিরাত করুন। রূহের মাগফিরাত করুনÑ এমনটি না বলাই ভালো। কেননা এতে কারো ভুল বোঝার আশঙ্কা রয়েছে। Ñকিতাবুর রূহ ৬৫-৬৭; ফাতহুল বারী ৩/২৭৫;মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০; শরহুস সুদূর ২৪৩

ঘ) কবর যিয়ারতের নিয়ম হল, মাইয়েতের চেহারার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সালাম দিবে। অতপর দরূদ শরীফ ও কুরআন মাজীদ থেকে তিলাওয়াত করতে চাইলে করতে পারবে। অবশ্য উক্ত নিয়মে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব সেভাবে দাঁড়াতে পারবে। যিয়ারত শেষে চাইলে কেবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে পারবে। Ñজমে তিরমিযী, হাদীস ১০৫৩; আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; মাজমাউল আনহূর ৪/২২০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৯

ঙ) কবরকে সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা জায়েয আছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার শিয়রে সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।

তাই কবরের সামনে কুরআন মাজীদ পড়া দোষণীয় নয়। তবে ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় নিয়ে কুরআন মাজীদ খতম করার যে প্রচলন রয়েছে তা সম্পূর্ণ বিদআত ও নাজায়েয। Ñআল মুজামুল কাবীর, তবারানী ১৯/২২০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬২; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৩১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৩৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের দেশে পুরুষদের মধ্যে সালামের সময় মুসাফাহা করার প্রচলন আছে।...

প্রশ্ন

আমাদের দেশে পুরুষদের মধ্যে সালামের সময় মুসাফাহা করার প্রচলন আছে। কিন্তু মহিলাদের পরস্পরের সাথে মুসাফাহা করার প্রচলন নেই।

হুজুরের নিকট জানতে চাই, মহিলাদের পরস্পরের সাথে মুসাফাহা করা জায়েয আছে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ , মহিলাদের জন্যও পরস্পরে মুসাফাহার বিধান রয়েছে। পুরুষের মতো তাদের জন্যও পরস্পরে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা সুন্নত।

-মুগনিল মুহতাজ ৩/১৭৫; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ৩৭/৩৫৭-৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭৩৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

বিতর নামায আমরা কোন নিয়মে পড়ব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

প্রশ্ন

বিতর নামায আমরা কোন নিয়মে পড়ব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বিতর নামায তিন রাকাত। ওয়াজিব। যা এশার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তা আদায়ের নিয়ম স্বাভাবিক নামাযের মতই। তবে এতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেমন এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। দ্বিতীয় রাকাত শেষে বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পর্যন্ত পড়বে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত উঠাবে। এরপর দুই হাত বেঁধে দুআ কুনূত পাঠ করবে, অতপর যথানিয়মে নামায শেষ করবে।

বিতর নামায আদায়ের উক্ত পদ্ধতি ও বিবরণ বিশুদ্ধ হাদীস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত। যেমন :

এক. সহীহ মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদীসে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রাত্রিযাপন করলেন। রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক, ওযু করে দীর্ঘ কেরাত ও রুকু-সিজদার সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। অতপর তিনি পুনরায় নিদ্রা যাপন করলেন। এরূপভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকাত আদায় করলেন অতপর তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন। Ñসহীহ মুসলিম, ১/২৬১

দুই. আয়েশা রা. হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন না। Ñসুনানে নাসায়ী ১/২৪৮

তিন. উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতির পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনত পড়তেন...। Ñসুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬৯৯; শরহু মুশকিলিল আসার ১১/৩৬৮

চার. উবাই বিন কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস ১১৮২; উমদাতুল ক্বারী ৭/১৯

পাঁচ. সাবেত আল বুনানী রাহ. বলেন, আমি আনাস রা.-এর ঘরে রাত্রি যাপন করেছি এবং তার সাথে নামায পড়েছি। তাঁকে দেখেছি রাতে দুই রাকাত করে নামায পড়েছেন এবং সবশেষে মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বিতর পড়লেন। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৬৩৬

ছয়. সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন, তারা (অর্থাৎ তাবেয়ীগণ) তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা পড়তেন দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফীরুন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। Ñসালাতুল বিতর লিল মারওয়াযী পৃ. ২৭৯

সাত. আসওয়াদ রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কেবল বিতর নামাযেই কুনূত পড়তেন। তিনি রুকুর আগে কুনূত পড়তেন, কেরাআত শেষ করে কুনূতের জন্য তাকবীর বলতেন। Ñশরহু মুশকিলুল আছার ১১/৩৭৪

মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আরো এসেছে যে, তিনি কুনূতের জন্য হাত উঠাতেন। Ñহাদীস ৭০২৭; জুযউ রাফইল ইয়াদাইন, ইমাম বুখারী, ৬৮-৬৯

আট. আসেম রাহ. বলেন আমি আনাস রা. কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, কুনূত পড়ার বিধান রয়েছে। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম রুকুর পরে না রুকুর আগে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক আমাকে বলেছে, আপনি নাকি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেন। তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশুধু একমাস কুনূত পড়েছিলেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১০০২

উলে­খ্য যে, বিতর নামাযে দুআ কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। আর হাদীসে বর্ণিত দুআই কুনূতের জন্য পাঠ করা উত্তম।

বি. দ্র. মাসিক আল কাউসারের মে/জুন/জুলাই-আগষ্ট ২০১০ সংখ্যায় বিতর নামায সম্পর্কে বিস্তারিত প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। প্রয়োজনে তা দেখা যেতে পারে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি যখন মুসাফির অবস্থায় থাকব তখন জামাতে নামায আদায় করা...

প্রশ্ন

আমি যখন মুসাফির অবস্থায় থাকব তখন জামাতে নামায আদায় করা যাবে কি? যদি যায় তাহলে আমি যদি ইমামের সাথে শেষ দুই রাকাত পাই তাহলে কি বাকি দুই রাকাত আদায় করতে হবে? মুসাফির হিসেবে তো আমি ইমামের সাথে দুই রাকাত পেয়েই গেছি। মাসআলাটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মুসাফিরের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় জামাতের সাথে নামায আদায় করাই নিয়ম। সফরের কোনো তাড়া না থাকলে মুসাফির জামাতেই নামায পড়বে। আর মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে চার রাকাত বিশিষ্ট নামায চার রাকাতই পড়া জরুরি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইমামের পিছনে পুরো চার রাকাত না পেলেও মাসবুকের ন্যায় ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো ইমামের সালামের পর আদায় করে নিতে হবে। নতুবা নামায হবে না।

উল্লেখ্য, মুসাফিরের জন্য চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়ার হুকুম কেবল তখনই যখন সে একাকী নামায পড়বে বা নিজে ইমামতি করবে কিংবা অন্য কোনো মুসাফির ইমামের পিছনে ইক্তিদা করবে। মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে ইমামের অনুসরণে তার উপরও চার রাকাত আদায় করা আবশ্যক হয়ে যায়।

-তাবয়ীনুল হাকাইক ১/৫১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৯৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের বাড়ির পাশেই এক হিন্দুর বাড়ি। খুব গরীব মানুষ তারা।...

প্রশ্ন

আমাদের বাড়ির পাশেই এক হিন্দুর বাড়ি। খুব গরীব মানুষ তারা। কুরবানীর সময় যখন গরীবদেরকে গোশত বণ্টন করি তখন সেও কখনো কখনো গোশত চায়। আর না চাইলেও সে যেহেতু আমাদের পাশেই থাকে আবার গরীব মানুষ তাই না দিতেও খারাপ লাগে। তাই আমি জানতে চাই ঐ হিন্দুকে কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

কুরবানীর গোশত অমুসলিমদের দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার পড়শী হিন্দুকে কুরবানীর গোশত দিতে পারবেন।

Ñইলাউস সুনান ১৭/২৫৮; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৮৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমরা হজ্বের বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি, ইহরাম করার আগে দুই রাকাত...

প্রশ্ন

আমরা হজ্বের বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি, ইহরাম করার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়া সুন্নাত। কিন্তু কিছুদিন আগে এক ভাই থেকে শুনলাম, ইহরামের আগে কোনো নামায নেই। বরং তা বিদআত। কথাটি শোনার পর বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী? দলীল প্রমাণসহ জানতে চাই।

উত্তর

একাধিক হাদীসে নামাযের পর ইহরাম করার কথা এসেছে। অতএব ফরয নামায আদায় করলে এরপর ইহরাম করবে নতুবা ইহরামের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে এরপর ইহরাম করবে। এটিই সুন্নত। সহীহ বুখারীতে আছে, উমর রা. বলেন, আকীক নামক স্থানে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আজ রাতে আমার রবের পক্ষ থেকে আগমনকারী (অর্থাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, এই বরকতময় স্থানে নামায পড়ুন এবং বলুন, আমি হজ্বের সাথে উমরার ইহরাম করলাম। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৩৪

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজ্বের বিবরণ সম্বলিত হাদীসগুলোতেও আছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফাতে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ইহরাম করেছিলেন। Ñদেখুন সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৮৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৮১৯

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে এক বর্ণনায় স্পষ্টভাবে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফার মসজিদে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ঐ মজলিসেই হজ্বের ইহরাম করেছিলেন। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৭৭০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৬৯৯

প্রকাশ থাকে যে, এই মাসআলায় চার মাযহাবের সিদ্ধান্ত এক ও অভিন্ন। ইমাম নববী রাহ.“আল মাজমূ শরহুল মুহাযযাব” লিখেছেন, ইহরাম করার সময় দুই রাকাত নামায পড়া উত্তম। এ ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে। Ñআলমাজমূ ৭/২৩২

সুতরাং ইহরামের পূর্বের নামাযকে বিদআত বলা সম্পূর্ণ ভুল ও মনগড়া কথা।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৮০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ক) নামাযে ইমাম রুকুতে থাকলে আগত মুক্তাদির করণীয় কী? এ...

প্রশ্ন

ক) নামাযে ইমাম রুকুতে থাকলে আগত মুক্তাদির করণীয় কী? এ সময় মুক্তাদি হাত বাঁধবে কি?

খ) ইমামের শেষ বৈঠকে মাসবুকের করণীয় কী? মাসবুক কি কিছু পড়বে? বিস্তারিত জানালে খুব উপকার হত।

উত্তর

ক) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরিক হবে। অতপর আবার তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর হাত বাঁধবে না এবং সানাও পড়বে না। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫২৮; ফাতাওয়ায়ে খানিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭; শরহুল মুনয়াহ ৩০১

খ) মাসবুক ব্যক্তি ইমামের শেষ বেঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে এবং কিছুটা ধীর গতিতে পড়বে। যাতে ইমাম সালাম ফেরানো পর্যন্ত তাশাহহুদ পড়া চলতে থাকে। আর যদি ইমামের সালামের আগে তাশাহহুদ শেষ হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে বাকি সময় তাশাহহুদের শেষে যে কালিমায়ে শাহাদাত আছে তা বার বার পড়তে থাকবে।Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৩০৯১; ফাতওয়া খানিয়া ১/১০৩; ইমদাদুল মুফতীন ২৯৬;আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকায় বহুল প্রচলিত একটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের নিকট জানতে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় বহুল প্রচলিত একটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের নিকট জানতে চাই। দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

সাধারণ লোকজন কবর ও মাযারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের ইশারায় বা কবরের দেয়াল স্পর্শ করে কবরবাসীকে সালাম দিতে দেখা যায়। এভাবে সালাম দেওয়ার প্রচলন শরীয়তসম্মত কি না?

উত্তর

কবরবাসীকে সালাম দেওয়া এবং যিয়ারত করার পদ্ধতি হাদীসে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। সে পদ্ধতি ছাড়া কবরবাসীর সাথে অন্য কোনো আচরণ বৈধ নয়। হাতের ইশারায় কিংবা কবরের দেয়াল ছুঁয়ে সালাম দেওয়া এবং কবরকে চুমু দেওয়া বিদআত ও নাজায়েয।

কবরবাসীকে সালাম দেওয়ার সহীহ পদ্ধতি বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে বাকী, কবরস্থানে যেতেন এবং বলতেন-

السلام عليكم دار قوم مؤمنين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون.

(অর্থ :) হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯

অন্য হাদীসে এসেছে, সুলায়মান রাহ. তার পিতা বুরায়দা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন, তারা যখন কবরস্থানে যাবে কবরবাসীকে যেন এভাবে সালাম দেয়-

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

(অর্থ:) হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসী! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে শান্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৪৭

অতএব হাদীসে বর্ণিত নিয়মেই কবরবাসীকে সালাম দিতে হবে। হাতের ইশারায় বা কবর ছুঁয়ে সালাম দেওয়া যাবে না।

-ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৯; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্জ ১/২৫৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কোনো কোনো ব্যক্তিকে সালাম দিলে তারা মুখে জবাব দেন না;...

প্রশ্ন

কোনো কোনো ব্যক্তিকে সালাম দিলে তারা মুখে জবাব দেন না; বরং মাথা কিংবা হাত নাড়িয়ে সালামের উত্তর দেন। প্রশ্ন হল, এভাবে ইশারার মাধ্যমে সালামের জবাব দেওয়া কি শরীয়তসম্মত? আশা করি উত্তর জানাবেন।

উত্তর

শুধু ইশারার মাধ্যমে সালামের আদান-প্রদান করা শরীয়তসম্মত নয়। সালাম আদান-প্রদানের সঠিক পদ্ধতি হল, মৌখিকভাবে দেওয়া। সালাম কোন শব্দে দিবে এবং কীভাবে দিবে তা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং এ ব্যাপারে কুরআন কারীমেও নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হয় তোমরা জবাব দাও তার চেয়ে উত্তম পন্থায় অথবা উত্তরে তাই বল। -সূরা নিসা ৪ : ৮৬

সুতরাং মুখে জবাব না দিয়ে শুধু ইশারা করলে সালামের উত্তর আদায় হবে না। এছাড়া সালামদাতা নিকটে থাকলে তাকে শুনিয়ে জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য সালামদাতা যদি বধির হয় কিংবা দূরে থাকে তাহলে মুখে উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ইশারার মাধ্যমেও জবাবের কথা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৮;আল আরফুশ শাযী ৪/১৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ব্যক্তি এক নামাযে মাসবূক হল এবং শেষ বৈঠকে ইমামের...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি এক নামাযে মাসবূক হল এবং শেষ বৈঠকে ইমামের পিছনে ভুলবশত তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেলল। উক্ত ব্যক্তির উপর নামায শেষে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর

মাসরূক ব্যক্তি ইমামের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের অতিরিক্ত পড়ে ফেললে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত তাশাহহুদের অতিরিক্ত না পড়াই ভালো। এক্ষেত্রে তাশাহহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। যেন তাশাহহুদ শেষ হতে হতে সালামের সময় হয়ে যায়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

হিন্দুদের সালামে কী বলব?

প্রশ্ন

হিন্দুদের সালামে কী বলব?

উত্তর

কোনো হিন্দু বা বিধর্মী সালাম দিলে জবাবে শুধু ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, কয়েকজন সাহাবী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলেন, আহলে কিতাব আমাদেরকে সালাম দিয়ে থাকে। আমরা তাদেরকে কীভাবে এর উত্তর দিব?তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬১১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় আমরা সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে একসাথে সালাম...

প্রশ্ন

অনেক সময় আমরা সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে একসাথে সালাম দিয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? একজন আলেম বলেছেন, এমন হলে উভয়কেই উত্তর দিতে হবে। তার কথাটি কি ঠিক? আর যেক্ষেত্রে একটু আগ-পর করে সালাম দেওয়া হয় সেক্ষেত্রেও কি উভয়কে উত্তর দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। দুজন পরস্পরকে একসাথে সালাম দিলে প্রত্যেককে অন্যের সালামের জবাব দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কারো সালাম আগে হলে পরবর্তী জনের সালাম জবাব হিসেবে ধর্তব্য হবে। উল্লেখ্য, সালামের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হল, কেউ সালাম দিলে (তিনি বড় ব্যক্তি হোন বা ছোট) অপর ব্যক্তি স্পষ্টভাবে শুনিয়ে সালামের জবাব দিবে। এক্ষেত্রে পাল্টা তাকে আবার সালাম দেওয়া নিয়ম পরিপন্থী কাজ।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৪১; শরহে মুসলিম, নববী ১৭/১৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৪৫৪, ৮/৪৬৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬০২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন লাইব্রেরির মাঝে এভাবে চুক্তি হয়ে থাকে...

প্রশ্ন

ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন লাইব্রেরির মাঝে এভাবে চুক্তি হয়ে থাকে যে, ঢাকার লাইব্রেরি মালিক চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিককে বলে, প্রেস থেকে বই ছেপে আসলে আপনাকে ৪০% কমিশনে বই দিব। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে দেন। তখন চট্টগ্রামের লাইব্রেরির মালিকগণ বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে আরো একটি লেনদেন হয়ে থাকে। তা এই যে, চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিকগণ বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে এই বলে টাকা নিয়ে থাকে যে, ঢাকায় অমুক লাইব্রেরি থেকে ৪০% কমিশনে বই কিনতে চাচ্ছি। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিতে হচ্ছে। আপনি আমাকে টাকা দেন যেন আমি বইয়ের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করতে পারি। বই কেনার পর আপনার টাকার সাথে ১০% কমিশন পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা আপনাকে দিব।

এখন আমার প্রশ্ন হল, উল্লেখিত লেনদেন দুটি শরীয়তসম্মত কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে কিভাবে শরীয়তসম্মত হবে?

উত্তর

ঢাকার লাইব্রেরির সাথে চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিকের উক্ত চুক্তিটি বাই সালাম অর্থাৎ আগাম ক্রয় লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। তাই চুক্তিটি সহীহভাবে করার জন্য বইয়ের পুরো মূল্য চুক্তির সময়ই দিয়ে দিতে হবে এবং বইয়ের মান, পরিমাণ ও ধরন এবং বই হস্তান্তরের তারিখ চুক্তির সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে এ লেনদেন জায়েয হবে। মোটকথা বাই সালামের যাবতীয় শর্ত এক্ষেত্রে পাওয়া যেতে হবে। কিন্তু এ চুক্তির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য কারো থেকে এ ভিত্তিতে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না যে, তাকে এর বিনিময়ে প্রাপ্ত বইয়ের ১০% বা কিছু কমিশন দেওয়া হবে। কেননা কমিশন দেওয়ার শর্তে কারো থেকে টাকা নেওয়া সুদী লোনের অন্তর্ভুক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম।

উপরোক্ত পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে ক্রেতা কারো থেকে বিনিয়োগ নিতে চাইলে তাকে বই ক্রয়ে শরিক করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উভয়ে নিজ নিজ মূলধন অনুযায়ী বইয়ের মালিক হবে। বই হস্তগত হওয়ার পর তা বিক্রি করে অর্জিত লাভ তারা চুক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নিবেন। আর লোকসান হলে তা মূলধনের অনুপাতে ভাগ হবে।

উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে শরিক নিজের অংশ অপর শরিককে বিক্রি করে দিতে পারবে। তবে এই ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই বই হস্তগত করার পর হতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ১৩৬৭, ১৩৬৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে...

প্রশ্ন

আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। অনেকে এটিকে শুধু একটি সামাজিক প্রথা মনে করে থাকে। আবার অনেকে এটিকে শরীয়তের বিধান মনে করলেও এ ব্যাপারে এতটা যত্নশীল নয়। তদ্রূপ অনেকে এসব বিষয়কে কুসংস্কার বলেও মন্তব্য করে থাকে।

জানার বিষয় হল, আসলে এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর একজন স্ত্রীর এ ব্যাপারে করণীয় কী?

উত্তর

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বিধান।

সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৩৪

উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৯৮

আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮

সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রƒপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।

ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।

প্রকাশ থাকে যে, ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি জানি যে, হানাফী মাযহাবে ফজরের নামায ফর্সা হওয়ার পর...

প্রশ্ন

আমি জানি যে, হানাফী মাযহাবে ফজরের নামায ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা উত্তম। তাই আমাদের মসজিদেও দেরি করে ফজরের নামায শুরু হয়ে থাকে। কখনও কখনও সালাম ফেরানোর পর দেখি, সূর্য উদয়ের সময় একেবারেই নিকটবর্তী। এত বিলম্ব করে পড়া কি ঠিক? কতটুকু আগে জামাত শুরু করা উচিত। এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করলে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

সুবহে সাদিকের পর যখন অন্ধকার দূর হয়ে চারদিক ফর্সা হয় তখন ফজরের জামাত আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে আদায় কর। কেননা তা অধিক সওয়াবের কাজ। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫৪

সুতরাং ফজরের জামাত ফর্সা হওয়ার পরই শুরু করা উত্তম। তবে এতটা বিলম্বে শুরু করবে না যে জামাত শেষ করতেই সূর্যোদয় নিকটবর্তী হয়ে যায়। বরং এমন সময় শুরু করবে যেন কোনো কারণবশত যদি নামায নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সুন্নত-কেরাতসহ আবার স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে জামাত শুরু করা উচিত। এর বেশি বিলম্ব করা ঠিক নয়।

-কিতাবুল আছল ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮; ফাতহুল কাদীর ১/১৯৯; শরহুল মুনইয়াহ ২৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৮৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানে বিতরের জামাতে কেউ মাসবুক হলে কী করণীয়? বিস্তারিত জানালে...

প্রশ্ন

রমযানে বিতরের জামাতে কেউ মাসবুক হলে কী করণীয়? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কোনো ব্যক্তি যদি বিতর নামাযের দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে শরিক হয় তাহলে ইমামের সাথেই দুআ কুনূত পড়ে নিবে। এরপর ছুটে যাওয়া নামায স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করবে। অর্থাৎ অন্য নামাযে মাসবুক হলে যেভাবে আদায় করতে হয় সেভাবেই আদায় করবে।

আর যদি তৃতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তাহলে ঐ রাকাতের দুআ কুনূত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই এক্ষেত্রেও পরবর্তীতে আর দুআ কুনূত পড়বে না।

আর যদি শেষ রাকাতের রুকু না পায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত পড়বে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; শরহুল মুনইয়া ৪২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। ভুলে দ্বিতীয়...

প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। ভুলে দ্বিতীয় রাকাতের বৈঠকের পর সালাম ফিরিয়ে ফেলি। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? আমাকে কি বাকি দু’রাকাত কাযা করতে হবে?

উত্তর

ভুলে সালাম ফিরিয়ে দিলে নামায ভঙ্গ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায পরিপন্থী কোনো কাজ না করে থাকলে দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে সাহু সিজদা করত চার রাকাত পূর্ণ করে নিতে পারতেন। কিন্তু আপনি যেহেতু তা পূর্ণ করেননি তাই যে দু’রাকাত পড়া হয়েছে তা আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বাকি দুই রাকাত কাযা পড়তে হবে না। অবশ্য যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত যেহেতু আদায় হয়নি তাই জামাতের আগে সময় থাকলে তা পড়ে নিতে হবে। আর জামাতের আগে সময় না থাকলে জামাত শেষে দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের পর পূর্বের চার রাকাত পড়ে নিবে।

-কিতাবুল আছল ১/১৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭-৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩২, ২/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯০; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একজন কাগজ ব্যবসায়ী। দুই সপ্তাহ আগে আমি এক ব্যক্তিকে...

প্রশ্ন

আমি একজন কাগজ ব্যবসায়ী। দুই সপ্তাহ আগে আমি এক ব্যক্তিকে এ শর্তে দুই লক্ষ টাকা দিয়েছি যে, সে দুই মাস পর আমাকে ঐ টাকার বিনিময়ে ৭০ গ্রামের ১০০ রিম অফসেট কাগজ দিবে। এ মুহূর্তে আমার ঐ টাকার প্রয়োজন হলে আরেক ব্যক্তি থেকে এ শর্তে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি যে, দুই মাস পর কাগজ হস্তগত হলে তাকে চল্লিশ রিম কাগজ দিব।

জানার বিষয় হল, উপরোক্ত লেনদেন দুটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দুই মাস পর ৭০ গ্রামের ১০০ রিম অফসেট কাগজ দিবে এ চুক্তিতে অগ্রিম মূল্য দেওয়া সহীহ হয়েছে। এটাকে শরীয়তের পরিভাষায় বাইয়ে সালাম বলা হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি থেকে আপনার জন্য এ শর্তে টাকা নেওয়া জায়েয হয়নি যে, দুই মাস পর কাগজ হস্তগত হলে সেখান থেকে ৪০ রিম কাগজ দিবেন। কেননা ক্রয়কৃত পণ্য হস্তগত করার আগে তা বিক্রি করা নাজায়েয।

সুতরাং দ্বিতীয় চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি।

- সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫২৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১১৯; আমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ২৫/২১৮-২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫২৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমার ছোট ভাই মাদরাসায় পড়ে। একদিন ও একাকী বাসায় মাগরিবের...

প্রশ্ন

আমার ছোট ভাই মাদরাসায় পড়ে। একদিন ও একাকী বাসায় মাগরিবের নামায পড়ছিল। তাকে দেখে আমিও তার সাথে নামাযে শরিক হই। কিন্তু আমি নামাযে দাঁড়ানোর পরও সে আগের মতোই আস্তে আস্তে সূরা কিরাত পাঠ করে নামায শেষ করে। সালাম ফেরানোর পর তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমি তো তোমার ইমামতির নিয়ত করিনি। হুযুরের কাছে জানতে চাই, সে যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই ঐ দিনের মাগরিবের নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

মুক্তাদির নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের ইমামতির নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তাই সে ইমামতির নিয়ত না করলেও আপনার নামায সহীহ হয়েছে। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছোট ভাই যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই তার উপর মাগরিবের নামাযে কেরাত জোরে পড়া ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার ছোট ভাইয়ের নিম্নস্বরে কেরাত পড়াটা ভুল হয়নি এবং এ কারণে ইমাম মুক্তাদী কারো নামাযে ত্রম্নটিও হয়নি।

অবশ্য সে যদি আপনার ইক্তিদাকে লক্ষ্য করে ইমামতির নিয়ত করত তবে তখন জোরে কিরাত পড়া আবশ্যক হত।

-শরহুল মুনইয়া ২৫১, ৬১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৮৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

হুজুরের কাছে একটি মাসআলা জানতে চাই, অনেক সময় আমি নামাযে...

প্রশ্ন

হুজুরের কাছে একটি মাসআলা জানতে চাই, অনেক সময় আমি নামাযে মাসবুক হই, ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর আগমুহূর্তে গিয়ে জামাতে শরীক হই তখন আমি তাশাহহুদ শেষ না করে উঠে যাই। জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমার জন্য কী করা উচিত? তাশাহহুদ শেষ করে দাঁড়াবো নাকি তাশাহহুদ শেষ না করে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাবো?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দিলেও আপনি তাশাহহুদ শেষ করেই দাঁড়াবেন। অবশ্য তাশাহহুদ শেষ না করে দাঁড়ালেও নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা ঠিক নয়।

-রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬; তাতারখানিয়া ২/১৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৭১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

বেশ কিছুদিন আগে একদিন আসরের নামাযে আমি ও আমার আববু...

প্রশ্ন

বেশ কিছুদিন আগে একদিন আসরের নামাযে আমি ও আমার আববু একসাথে মাসবুক হই। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর বাকি নামায পড়তে যখন দাঁড়ালাম তখন নামায কত রাকাত পেয়েছি, কত রাকাত পড়তে হবে তা আমি ভুলে যাই। আববু আর আমি যেহেতু একই সাথে মাসবুক হয়েছি তাই তখন আববুকে দেখে দেখে বাকি নামায পূর্ণ করলাম। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?

উত্তর

জী, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায শুদ্ধ হয়েছে। কেননা ছুটে যাওয়া রাকাত সংখ্যা মনে না থাকলে পাশেরজনের প্রতি লক্ষ্য করে নিজের নামায স্মরণ করা এবং সে অনুযায়ী নামায পূর্ণ করা জায়েয আছে। এভাবে নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যায়। তাই আপনার নামাযও আদায় হয়ে গেছে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪২৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পিছনে না...

প্রশ্ন

যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পিছনে না পায় তাহলে অনেককে দেখা যায়, সালাম ফিরানোর পর এক রাকাত পড়ে বৈঠক করে। আবার অনেকে দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে এবং পরবর্তীতে বাকি নামায যথানিয়মে আদায় করে। এভাবে উভয় সুরতে নামায আদায়ের হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া নামাযের মধ্যে প্রথম রাকাত পড়ে বৈঠক করাই সহীহ। দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করার ব্যপারে একটি মত থাকলেও প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অবশ্য এক্ষেত্রে কেউ যদি দুই রাকাত পড়ে বৈঠক করে তাহলে দ্বিতীয় মত অনুসারে তার নামায আদায় হয়ে যাবে এবং সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪২৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

পবিত্র অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায় করার পর জনৈকা মহিলার হায়েয...

প্রশ্ন

পবিত্র অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায় করার পর জনৈকা মহিলার হায়েয শুরু হয়ে যায়। ফলে সে অপবিত্র অবস্থায় সায়ী করে। উক্ত মহিলার সায়ী কি আদায় হয়েছে? এই জন্য কি তাকে দম দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার সায়ী আদায় হয়েছে। কেননা সায়ীর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। তাই মহিলাদের জন্য এ অবস্থায় সায়ী করা জায়েয। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, তাওয়াফে যিয়ারাহ আদায়ের পর সায়ীর পূর্বে কোনো মহিলার হায়েয এসে গেলে সে যেন (এ অবস্থায়) সাফা-মারওয়ার সায়ী করে নেয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৫৮৩) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও হযরত উম্মে সালামা রা. থেকেও এমন বর্ণনা রয়েছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৮/৪৪১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯; যুবদাতুল মানাসিক, ১৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪২১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

এক ব্যক্তি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত প্রথম সিজদা করার পর...

প্রশ্ন

এক ব্যক্তি দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত প্রথম সিজদা করার পর মাত্র ছয় ইঞ্চি উপরে মাথা তুলে দ্বিতীয় সিজদা করত। এখন সে বৃদ্ধ। জানতে চাই, তার এত বছরের আদায়কৃত নামাযের হুকুম কী? আর এখন তার করণীয় কী?

উত্তর

দুই সিজদার মাঝে সোজা স্থির হয়ে বসা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে যথেষ্ট তাকীদ এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামায পড়ল। অতপর এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, ফিরে যাও। আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। সে পুনরায় নামায পড়ার পর এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়। কেননা তুমি তো নামায পড়নি। (তিনবার এরূপ হল)। সে বলল, যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার শপথ, আমি এর চেয়ে উত্তম তরীকায় নামায পড়তে জানি না। তাই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে, অতপর কুরআনের যতটুকু তিলাওয়াত করা তোমার জন্য সম্ভব ততটুকু তিলাওয়াত কর। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু কর। অতপর সোজা স্থির হয়ে দাঁড়াও। অতপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, এরপর ধীরস্থির হয়ে বস, তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা কর, তোমার পুরো নামায এভাবেই আদায় কর।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৯৩

উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম দুই সিজদার মাঝে স্থির হয়ে বসাকে ওয়াজিব বলেছেন। এ ওয়াজিব তরক করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদার জন্য ছয় ইঞ্চি পরিমাণ উঠার দ্বারা তার দ্বিতীয় সিজদার ফরয আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু সোজা হয়ে ধীরস্থিরভাবে বসার ওয়াজিব তরক করার কারণে নামায মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে। এখন তার কর্তব্য হচ্ছে, বিগত সময়ের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করা এবং এখন থেকে পরিপূর্ণ তরীকা মতো নামায আদায় করা।

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৮৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৩; আলইখতিয়ার লিতালীলিল মুখতার ১/১৭৯; শরহুল মুনইয়াহ ৩২২-৩২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪১৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি যখন নামাযে মাসবুক হই তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম...

প্রশ্ন

আমি যখন নামাযে মাসবুক হই তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শুরু করলেই বাকি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। আর অনেককে দেখি, ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম শেষ করলে তারপর দাঁড়ায়। প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেব প্রথম সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় সালাম শুরু করার আগে যদি দাঁড়িয়ে যাই তাহলে আমার নামায হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও আপনার নামায হয়ে যাবে। তবে ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর পরই দাঁড়ানো উত্তম। কেননা ইমাম সাহু সিজদা দিবেন না-এ কথা নিশ্চিত হওয়ার পর মাসবুকের জন্য দাঁড়ানো ভালো।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২২৫-২২৬; মারাকিল ফালাহ ২৫২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মাসবুক যদি ইমামের সালামের সাথে একদিকে বা উভয় দিকে সালাম...

প্রশ্ন

মাসবুক যদি ইমামের সালামের সাথে একদিকে বা উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে এর হুকুম কী এবং সিজদায়ে সাহু লাগবে কি না?

উত্তর

মাসবুক যদি ইমামের সালামের পূর্বে অথবা একেবারে সাথে সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে না। আর যদি ইমামের সালামের পর সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমার বয়স ৩৫ বছর। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি হিন্দু ধর্ম থেকে...

প্রশ্ন

আমার বয়স ৩৫ বছর। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি। হুজুরের নিকট জানতে চাই যে, এ বয়সে আমার জন্য খতনা করার হুকুম কি? আর খতনার জন্য ডাক্তারের সামনে সতর খোলা জায়েয হবে কি?

উত্তর

খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং শাআয়েরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের প্রতীকী বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। অতএব আপনাকে খতনা করে নিতে হবে। আর এজন্য ডাক্তারের সামনে প্রয়োজন পরিমাণ সতর খোলারও অবকাশ আছে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৫৬, ৬২৯৭; ফাতহুল বারী ১১/৯২; সুনানে নাসায়ী ১/৬৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭০; হেদায়া ৪/৪৪৩; কিফায়া ৮/৪৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একটি হাইস্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক। এ হাই স্কুলে অনেক হিন্দু...

প্রশ্ন

আমি একটি হাইস্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক। এ হাই স্কুলে অনেক হিন্দু ছাত্রও আছে। বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাতে হিন্দু ছাত্ররা আমাকে সালাম দেয়। প্রশ্ন হল, তাদের সালামের জওয়াব দেওয়া কি জায়েয হবে?

উত্তর

হিন্দু বা অমুসলিরা সালাম দিলে উত্তরে শুধু ওয়া আলাইকুম বলা যাবে। পুরো উত্তর দেওয়া যাবে না।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২০; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

গত রমযানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামায পড়াতে গিয়ে...

প্রশ্ন

গত রমযানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামায পড়াতে গিয়ে একসাথে চার রাকাত পড়ে ফেলে। দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং আরো দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরায়। এভাবে চার রাকাত পড়ার দ্বারা কত রাকাত আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এক সালামে চার রাকাত পড়লেও দুই রাকাতের পর বৈঠক করার কারণে চার রাকাতই তারাবীহ হিসেবে আদায় হয়েছে। তবে তারাবীহ নামায ইচ্ছাকৃতভাবে একসাথে চার রাকাত পড়া ঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদে উভয় ঈদের নামাযের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে উভয় ঈদের নামাযের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় এবং ঠিক সময়েই নামায শুরু করা হয়। যার কারণে অনেক মুসল্লি মাসবুক হয়। তাই আমি ঈদের নামাযের মাসবুক সম্পর্কে কিছু মাসআলা জানতে চাই।

ক) ইমাম সাহেবকে প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় পাওয়া গেলে তখন কী করবে?

খ) আর এক রাকাত ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কোন নিয়মে আদায় করবে?

গ) ইমাম সাহেবকে তাশাহহুদে পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ঈদের নামায পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে কি? হলে এক্ষেত্রে সালামের পর দু রাকাত কীভাবে আদায় করবে?

উত্তর

ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কিরাত অবস্থায় শরিক হলে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। অতপর বাকি নামায যথানিয়মে ইমামের সাথে আদায় করবে। আর ঈদের নামাযের এক রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে আগে সূরা-কিরাত পড়বে এরপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে।

আর কোনো ব্যক্তি ইমামের তাশাহহুদ অবস্থায় জামাতে শরিক হলে তার নামাযও সহীহ হবে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামায পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। অতপর সূরা-কিরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, আছর : ৫৮৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৩৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি দীর্ঘদিন যাবত মাছের ব্যবসা করছি। আমি মাছের আড়ৎ এর...

প্রশ্ন

আমি দীর্ঘদিন যাবত মাছের ব্যবসা করছি। আমি মাছের আড়ৎ এর মালিক। এই ব্যবসার পদ্ধতি হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ও সাগর পাড়ে একদল মাছ ব্যবসায়ী থাকেন, যাদের সাথে ঢাকাসহ জেলার মাছের আড়তদারগণ প্রতি এক বছরের জন্য একটি চুক্তি করে থাকেন যে, আড়তের মালিক পক্ষ ঐ নদীর পাড়ের মাছ ব্যবসায়ী-যাকে আমরা পার্টি/ব্যাপারী বলে থাকি-তাকে নির্দিষ্ট অংকের যেমন, পাঁচ অথবা দশ লক্ষ টাকা দিবে এই কথার উপর যে, ঐ পার্টি এক বছর ঐ আড়তদারকে মাছ দিবে। আর ঐ মাছ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য আড়তদার সেই ক্রয়-বিক্রয় থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবে। কিন্তু এই ক্রয়-বিক্রয়ের লাভ/লোকসানের সম্পূর্ণ মালিক হচ্ছেন ঐ পার্টি। আর ঐ যে পূর্বে ৫/১০ লক্ষ টাকা পার্টিকে দেওয়া হয়েছে সেটা আড়তদার এবং পার্টি অর্থাৎ উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে পার্টির কাছ থেকে আড়তদার (মালিক পক্ষ) এক বছরে প্রতিদিন কিছু কিছু করে কেটে রাখবে। এরপর বছর শেষে আবার নতুন করে হিসাব শুরু হবে। দেশের সমস্ত আড়তের কার্যক্রম এভাবেই চলছে। শত শত আড়তদারগণ এই নিয়মেই ব্যবসা করছেন। সম্মানিত মুফতীগণের নিকট আমার জিজ্ঞাসা এই ব্যবসাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত? হালাল নাকি হারাম? কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত লেনদেনটি জায়েয নয়। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে তা থেকে উপকৃত হওয়ার একটি পন্থা। কেননা এক্ষেত্রে আড়তদার মাছের ব্যবসায়ীকে ঋণ না দিলে ঐ ব্যবসায়ী তার কাছে মাছ নিয়ে আসত না এবং সে তা থেকে আড়তদারি কমিশনও পেত না। আর কাউকে ঋণ দিয়ে তার থেকে শর্ত করে উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। ফাযালা ইবনে উবাইদ রা. বলেন, প্রত্যেক ঋণ, যা লাভ নিয়ে আসে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৩৫০)

দ্বিতীয়ত এক্ষেত্রে আড়তদার মাছের ব্যবসায়ীকে ঋণ দিচ্ছে এ শর্তে যে, ব্যবসায়ী তার মাছগুলো আড়তদারের কাছে নিয়ে আসবে এবং সে এগুলো বিক্রি করে দিয়ে ব্যবসায়ী থেকে কমিশন নিবে। আর এভাবে এক কারবারের সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করা, বিশেষ করে ঋণ প্রদানের সাথে এভাবে অন্য লেনদেনের শর্ত করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কারবারে আরেকটি চুক্তির শর্ত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৩)

আরেক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একই কারবারে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১০৫৩)

আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের সাথে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি শর্তযুক্ত করা অবৈধ বলেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৪)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বৈধভাবে কারবার করতে চাইলে ব্যবসায়ীর সাথে মাছের আগাম খরিদের চুক্তি করা যেতে পারে। যাকে পরিভাষায় বাইউস সালাম বলা হয়। তখন এক বছরের জন্য মাছের ব্যবসায়ী থেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ অগ্রিম মূল্যে ক্রয় করে ব্যবসায়ীকে পুরো মূল্য নগদে পরিশোধ করে দিবে। এক্ষেত্রে মাছের প্রকার, সাইজ, মান ও পরিমাণ সবকিছু চুক্তির সময়ই ভালোভাবে ঠিক করে লিখে নিতে হবে।

এভাবে মাছের আগাম খরিদ চুক্তি করার পর মাছের ব্যবসায়ী যখন আড়তদারকে মাছ এনে দিবে তখন আড়তদার এগুলোর মালিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মাছ বিক্রির পর লাভ-ক্ষতি সব আড়তদারের হবে। যা লাভ হবে সে-ই পুরোটার মালিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মাছের ব্যবসায়ী যদি আগাম খরিদ চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত আরো মাছ নিয়ে আসে তবে আড়তদার তা বিক্রি করে দিতে পারবে এবং এর বিনিময়ে কমিশনও নিতে পারবে। কিন্তু বাইউস সালামের সাথে এমন কোনো শর্ত করা যাবে না।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১০৫৩; কিতাবুল আছার ২/৬৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১১; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৩৮৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩২২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের পাশের বাসায় এক হিন্দু পরিবার ভাড়া থাকে। একবার তাদের...

প্রশ্ন

আমাদের পাশের বাসায় এক হিন্দু পরিবার ভাড়া থাকে। একবার তাদের ছোট ছেলে অসুস্থ হলে আমি কিছু ফলমূল নিয়ে তাকে দেখতে যাই। আসার সময় বেশ কিছু টাকাও দিয়ে আসি। কিন্তু এখন আমি এটা ভেবে খুবই চিন্তিত যে, আমি একজন মুসলমান হয়েও হিন্দু ছেলেকে দেখতে যাওয়া এবং টাকা দেওয়া জায়েয হয়েছে কি না? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তাদের সাথে সদাচরণ করা, বিপদ-আপদে সাহায্য করা এবং অসুস্থতার সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের শিক্ষা। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ইহুদী বালক রাসূলুলা সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম তাকে দেখতে গেলেন। অতপর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী ২/৮৪৪)

তাই প্রশ্নোক্ত হিন্দুকে দেখতে যাওয়া এবং তাকে সাহায্য করা অন্যায় হয়নি। তবে বিধর্মীদের সাথে হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব কায়েম করা যাবে না। পবিত্র কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ইমদাদুল মুফতীন ৮৪৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৬৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মোকছুদুল মুমিনীন ও বেহেশতের কুঞ্জি এই কিতাবের চতুর্থ অধ্যায়ে আছে,...

প্রশ্ন

মোকছুদুল মুমিনীন ও বেহেশতের কুঞ্জি এই কিতাবের চতুর্থ অধ্যায়ে আছে, ‘‘ওমরি কাযা নামায আদায়ের বিবরণ :

রুকনে দ্বীন কিতাবে বর্নিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, যদি কোনো লোকের বহু দিনের নামায কাযা হইয়া থাকে এবং উহার সংখ্যা তাহার স্মরণ নাই, তাহা হইলে ঐ লোকটি শুক্রবার দিন জুময়ার নামাযের পূর্বে নিম্ন নিয়মে এক সালামে চার রাকায়াত নামায পড়িবে। ইহার প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরে ৭ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার সূরা কাওছার পাঠ করিবে। এই নামায কেহ আদায় করিলে তাহার ও তাহার পিতামাতার জীবনের কাযা নামায আল্লাহ তায়ালা মাফ করিয়া দিবেন।’’

আমার জানার বিষয় হল, উক্ত কথাটি আমি কখনো কোথাও শুনিনি। যদি বাস্তবেই তা সঠিক হয়ে থাকে এবং আপনি যদি জানাতেন তাহলে খুবই উপকার হতো।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত কথাটি হাদীস নয়। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। এটি শরীয়তের অনেক স্বতসিদ্ধ মৌলনীতির পরিপন্থী। মুহাদ্দীসগণ এসব বর্ণনাকে স্পষ্টভাষায় বাতিল ও জাল বলেছেন। (রদয়ুল ইখওয়ান আন মুহদাসাতি আখেরী জুমআতি রমাযান, আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী, পৃ. ৪০-৪৪)

তাছাড়া জীবনের ছুটে যাওয়া নামায কাযা করার শক্তি সামর্থ্য থাকলে কাযাই করতে হবে।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলিল প্রমাণ জানতে চাইলে মাসিক আলকাউসার ফেব্রুয়ারি ’০৫ সংখ্যাটি দেখুন। সেখানে এ বিষয়ে পৃথক একটি প্রবন্ধ লেখা হয়েছে।

আর কাযা নামাযের সংখ্যা স্মরণ না থাকলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী একটা সংখ্যা নির্ধারণ করে এর কাযা আদায় করতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, রুকনে দ্বীন, মোকছুদুল মুমিনীন ও নেয়ামুল কুরআন জাতীয় কিতাবাদি নির্ভরযোগ্য নয়। এগুলোতে অসংখ্য জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা আছে এবং তাতে প্রচুর ভুল মাসআলা-মাসায়েল রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অলিক ও ভিত্তিহীন কাহিনীও সেগুলোতে স্থান পেয়েছে’’। তাই এসব কিতাব পড়া ঠিক নয়। সঠিক মাসআলার জন্য বেহেশতী জেওর, মাসনূন দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ (ইমাম জাযারী রাহ. কৃত) ও বিভিন্ন বিষয়ের সুন্নত আমলের জন্য ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী রাহ.কৃত ‘উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পড়া যেতে পারে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমরা বিভিন্ন সময় আলেমগণ থেকে দরূদ শরীফ পড়ার বিশেষ ফযীলত...

প্রশ্ন

আমরা বিভিন্ন সময় আলেমগণ থেকে দরূদ শরীফ পড়ার বিশেষ ফযীলত শুনেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, দরূদ শরীফ কি নিজ থেকে বানিয়ে পড়লেও দরূদ আদায় হয়ে যাবে? নাকি হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদই পড়া শর্ত?

উত্তর

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল দরূদ শরীফ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো

পড়া সর্বাপেক্ষা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম আরবী ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কীভাবে দরূদ পড়বেন তা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনে নিতেন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, কাব বিন উজরা রা. বলেছেন, একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি সালাম পেশ করার পদ্ধতি তো জানলাম কিন্তু দরূদ কীভাবে পেশ করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বল-

اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.

(সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৭০)

অন্য একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড়)-

اللهم اجعل صلواتك وبركاتك على آل محمد كما جعلتها على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ৮৭২৬)

তাই যথাসম্ভব হাদীসে বর্ণিত দরূদ শরীফ পড়ার অভ্যাস করা উচিত।

এছাড়া কোনো কোনো সাহাবা থেকেও কিছু দরূদ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাঁর সঙ্গীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা এভাবে দরূদ পড়-

اللهم اجعل صلاتك ورحمتك وبركاتك على سيد المرسلين وإمام المتقين وخاتم النبيين محمد عبدك ورسولك، إمام الخير وقائد الخير ورسول الرحمة، اللهم ابعثه مقاما محمودا يغبطه به الأولون والآخرون، اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وآل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

(আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৮৫৯৪)

উপরোক্ত দরূদ শরীফ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে।

তাই সম্ভব হলে এগুলোও পড়বে।

অবশ্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজ থেকে দরূদ শরীফের বাক্য তৈরী করা বা বুযুর্গদের মামুল কোনো দরূদ পাঠ করারও অবকাশ আছে। যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে তা নিম্নরূপ :

ক) সালাত ও সালাম সম্বলিত বাক্য হওয়া এবং ভাষা বিশুদ্ধ হওয়া।

খ) দরূদে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশাপাশি তাঁর ‘আল’ ও ‘আযওয়াজ’ অর্থাৎ পরিবার পরিজন ও স্ত্রীগণকেও অন্তর্ভুক্ত রাখা। কেননা সালাত ও সালাম দ্বারা মূল দরূদ আদায় হয়ে গেলেও দরূদের পরিপূর্ণতার জন্য এগুলোও দরকার। (দেখুন : আলকাওলুল বাদী ৮৩)

এছাড়া প্রায় সকল হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদ শরীফে ‘আল’ কে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে ‘আযওয়াজ’ কেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সহীহ বুখারীতে (হাদীস : ৬৩৬০) এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড় –

اللهم صل على محمد وأزواجه وذريته كما صليت على آل إبراهيم، وبارك على محمد وأزواجه وذريته كما باركت على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

গ) তাওহীদ পরিপন্থী বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা পরিপন্থী কোনো বিষয় না থাকা।

ঘ) হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদের চেয়ে অন্য কোনো দরূদকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও বিশেষ ফযীলতপূর্ণ মনে না করা।

ঙ) যেসব ক্ষেত্রে শরীয়তের পক্ষ হতে বিশেষ বিশেষ দরূদ শরীফ নির্ধারিত আছে। যেমন নামাযে দরূদে ইবরাহীমী সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঐ দরূদ শরীফই পাঠ করবে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

পাগড়ি পরিধানের হুকুম সবিস্তারে জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, বিশেষ...

প্রশ্ন

পাগড়ি পরিধানের হুকুম সবিস্তারে জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, বিশেষ বিশেষ সময় বিশেষ বিশেষ স্থানে পাগড়ি পরিধান করে থাকেন। কেউ ফরয নামাযের সময়, কেউ আবার জুমার নামাযের সময় আর কেউ ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করেন। দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

পাগড়ি পোশাকের একটি সুন্নত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যেসকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের নিকট পাগড়ি একটি পছন্দনীয় পোশাক ছিল এটি আরবের একটি ঐতিহ্যও বটে।

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু’ একটি হাদীস উল্লেখ করা হল।

জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮

মুগীরা ইবনে শুবা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আমর ইবনে হুরাইস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিলেন। সে সময় তিনি কালো পাগড়ি পরিহিত ছিলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৯

তাঁর পাগড়ি পরিধান সংক্রান্ত এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।

সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী ১/৫৬

সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ রাহ. বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২

আবু উবাইদ রাহ. বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০

উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল।

তাই পোশাকের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অভ্যাসের অনুসরণ করা ভালো এবং তাদের মহববতে এই অনুসরণের কারণে ইনশাআল্লাহ সওয়াবও হবে।

তবে জেনে রাখা দরকার যে, পাগড়ি নির্দিষ্ট কোনো সময়, স্থান বা বিশেষ ইবাদতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। পাগড়িকে নামাযের জন্য অপরিহার্য মনে করা অথবা পাগড়িসহ নামায আদায় করলে বিশেষ ছওয়াব (যেমন, এক রাকাতে পঁচিশ রাকাত বা সত্তর রাকাতের সওয়াব) হবে-এমন ধারণা করা ভুল; বরং পাগড়ি পোশাকেরই একটি ঐচ্ছিক অংশ।

পোশাক হিসাবে তা পরিধান করা বা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো অনুষ্ঠানে পরা বা সকল নামাযের জন্য পাগড়ি পরা কিংবা জুমা-ঈদ ইত্যাদিতে বা কোনো কোনো নামাযে পরা সবই ঠিক আছে।

উল্লেখ্য, পাগড়িকে এমন সীমাবদ্ধতার সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়, যার কারণে বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় যে, পাগড়ি ঐ সময়ের একটি বিশেষ আমল। এমনভাবে সীমাবদ্ধ করে নেওয়া তার ব্যবহার রীতিরও পরিপন্থী। যেমনটি কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ফরয নামাযের ইকামত যখন শুরু হয় তখন পাগড়ি বাঁধে আবার সালাম ফেরানোমাত্রই তা খুলে ফেলে। পাগড়িকে এভাবে নামাযের সাথে সম্পৃক্ত মনে করা ঠিক নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, পাগিড় পরিধান করে নামায আদায় করলে ছওয়াব বেশি হওয়া সংক্রান্ত যেসকল বর্ণনা রয়েছে সেগুলোর কোনোটি সহীহ নয়।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২০৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

সালামের জওয়াবের হুকুম কি? সালামের জওয়াব মনে মনে দিব না...

প্রশ্ন

সালামের জওয়াবের হুকুম কি? সালামের জওয়াব মনে মনে দিব না সালামদাতাকে শুনিয়ে দিব? আর যেভাবে দিব তার হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

সালামের জওয়াব সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। শুধু মনে মনে উত্তর দেওয়া বা নিম্নস্বরে দেওয়া যথেষ্ট নয়।

অবশ্য সালামদাতা যদি এতটা দূরে থাকে যে, তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয় সেক্ষেত্রে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মৌখিক উত্তরের পাশাপাশি সম্ভব হলে হাত দ্বারা ইশারাও করবে। যেন সালামদাতা বুঝতে পারে যে, তার সালামের উত্তর নেওয়া হয়েছে।

-ফাতহুল বারী ১১/২১; তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৯৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের পরিবারে কুরবানীর গোশত দিয়ে গরীব মহিলাদেরকে দাওয়াত খাওয়ানোর রেওয়াজ...

প্রশ্ন

আমাদের পরিবারে কুরবানীর গোশত দিয়ে গরীব মহিলাদেরকে দাওয়াত খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু আমি ছোট বেলা থেকে লক্ষ্য করেছি, হিন্দু মহিলাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া হয় না। তাদের জন্য পৃথক গোশত আনিয়ে নেওয়া হয়। জানতে চাই, হিন্দুদেরকে কুরবানীর গোশত দিতে অসুবিধা আছে কি?

উত্তর

কুরবানীর গোশত হিন্দু বা অমুসলিমকেও দেওয়া জায়েয। এতে অসুবিধার কিছু নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; ইমদাদুল আহকাম ৪/২০৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কিছুদিন আগে আমি ঢাকা থেকে সিলেট টিলাগড় এলাকায় সফরে যাই।...

প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি ঢাকা থেকে সিলেট টিলাগড় এলাকায় সফরে যাই। সেখানে পৌঁছে আসর নামাযে স্থানীয় মসজিদের জামাতে শরিক হই এবং মুসাফির হিসেবে ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে ফেলি। পরে একজন মুসল্লি আমাকে বললেন, মুকীম ইমামের পিছনে মুসাফির ব্যক্তি নামাযের নিয়ত/ইক্তিদা করলে চার রাকাত বিশিষ্ট নামায চার রাকাতই পড়তে হয়।

এখন আমার এ নামাযের হুকুম কি? যদি পুনরায় আদায় করতে হয় তাহলে কত রাকাত আদায় করতে হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ওই ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলে তাকে পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে দুই রাকাত পড়লে নামায আদায় হবে না। অতএব আপনার ঐ নামাযও আদায় হয়নি। এখন ঐদিন আসরের ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত যদি আপনি মুসাফিরই থাকেন তবে আসরের দুই রাকাত ফরয কাযা করে নিতে হবে।

আর যদি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই আপনি মুকীম হয়ে গিয়ে থাকেন তবে আপনাকে ঐ দিনের আসরের চার রাকাত কাযা করতে হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২; কিতাবুল আছার ১/১৯৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৫৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১৫৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কিছুদিন পূর্বে একটি মাসিক পত্রিকায় একটি হাদীস পড়েছিলাম যে, এক...

প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে একটি মাসিক পত্রিকায় একটি হাদীস পড়েছিলাম যে, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুনিয়া আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং আমার নিকট আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ফেরেশতাদের দরুদ এবং মানবজাতির এই তাসবীহ দ্বারা কেন কল্যাণ অর্জন কর না, যার মাধ্যমে মানুষকে রিযিক প্রদান করা হয়? লোকটি নিবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি এরশাদ করেন, ‘‘তুমি সুবহে সাদিক হতে ফজরের নামায আদায় করা পর্যন্ত একশত বার

سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

পাঠ করিও। দেখবে দুনিয়া তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে। এর প্রত্যেকটি শব্দ দ্বারা আল্লাহ তাআলা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে কিয়ামত পর্যন্ত তার তসবীহ পাঠ করতে থাকবে এবং তুমি এর সওয়াব পেতে থাকবে।

আমার জানার বিষয় হল, এই হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং তা আমল যোগ্য কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ইমাম গাযালী রাহ. এহইয়াউ উলূমুদ্দীন গ্রন্থে ‘যিকিরের ফযীলত’ অধ্যায়ে সনদহীন উল্লেখ করেছেন।

এই রেওয়ায়াতটি রিজাল শাস্ত্রের একাধিক কিতাবে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারীর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীস বিশারদগণ এই বর্ণনাটিকে মওযু ও বাতিল বলেছেন।

ইমাম ইবনে হিববান রহ. ‘কিতাবুল মাজরুহীন’ গ্রন্থে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারির সূত্রে বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেছেন, এই হাদীসটি ‘মওযু’ এর কোনই ভিত্তি নেই। দেখুন : কিতাবুল মাজরুহীন ১/১৪৯

আল্লামা ইবনে হাজার রহ. লিসানুল মীযানে বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন, এটি একটি বাতিল রেওয়ায়েত। তিনি আরো বলেছেন, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ‘‘সানায় ’’ বসবাস করতেন। তাকে ইবনে আদী ‘‘মুনকারুল হাদীস’’ আখ্যায়িত করেছেন।-লিসানুল মীযান ১/৩৪৪

আরো দ্রষ্টব্য : আল লাআলিল মাসনূআ ২/২৮৭- তানযীহুশ শারীআ ২/৩১৮

সুতরাং উক্ত কথাটি হাদীস নয় এবং বর্ণিত ঐ ফযীলত প্রমাণিত নয়।

অবশ্য প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ও ফযীলত প্রমাণিত না হলেও এতে যে দুআ, যিকির-আযকার ও ইস্তিগফার উল্লেখ হয়েছে তা সহীহ। এসব যিকর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং একেকটি তাসবীহর একাধিক ফযীলত হাদীস শরীফে এসেছে।

মুসনাদে আহমাদে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন নূহ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন তোমাকে দুটি উপদেশ দিচ্ছি।

১. لا إله إلا الله পাঠের নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা সাত আসমান সাত যমীন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় لا إله إلا الله রাখা হয় তাহলে لا إله إلا الله এর পাল্লা ভারি হবে।

২. سبحان الله وبحمده পাঠ করবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্ত্তর সালাত এবং তাসবীহ এবং এর দ্বারা সৃষ্টিজীবকে রিযক পৌঁছানো হয়।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৮৩, ৭১০১

এছাড়া সহীহ বুখারিতে (২/১১২৯) এসেছে, দুটি কালেমা আল্লাহ তাআলার নিকট অতি প্রিয়, পড়তে খুব সহজ, মীযানের পাল্লায় অনেক ভারী তা হল

سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم

আর ইস্তিগফারের ফযীলত কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে তাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬১১৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একবার জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় তাকবীরের পর সালাম...

প্রশ্ন

একবার জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় তাকবীরের পর সালাম ফিরিয়ে দেন। কিন্তু সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই পেছন থেকে মুক্তাদীগণ লোকমা দেয়। তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম না বলে এ সময়ের দুআ পড়ে এবং চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরান।

জানার বিষয় হল, এ নামাযটি কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ জানাযা নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা ইমাম ভুলবশত সালাম ফিরানোর পর নামায পরিপন্থী কোন কাজ করার পূর্বেই যেহেতু চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরিয়েছেন তাই তা আদায় হয়ে গেছে; পুনরায় পড়তে হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩২২; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রাস্তা-ঘাটে অনেক সময় বেগানা মহিলারা পরপুরুষকে সালাম দেয়। এক্ষেত্রে তাদের...

প্রশ্ন

রাস্তা-ঘাটে অনেক সময় বেগানা মহিলারা পরপুরুষকে সালাম দেয়। এক্ষেত্রে তাদের সালামের জবাব দেওয়ার হুকুম কী?

উত্তর

এভাবে বিনা প্রয়োজনে পর পুরুষকে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। তাই কোনো মহিলা এভাবে পরপুরুষকে সালাম দিলে তার সালামের জবাব দিবে না। তবে মনে মনে জবাব দিতে পারবে। প্রকাশ থাকে যে, পরপুরুষের সাথে কোনো বেগানা মহিলার কথা বলার প্রয়োজন হলে তখন কথার শুরুতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। এক্ষেত্রে পর্দার বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া পরপুরুষের সাথে কথা বলার যে আদব কুরআন মজীদে আছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অর্থাৎ কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিকভাবে শুধু প্রয়োজনীয় কথা বলবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৭৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একজন কাঠমিস্ত্রি। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করি। কখনো...

প্রশ্ন

আমি একজন কাঠমিস্ত্রি। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করি। কখনো কখনো হিন্দু বাড়িতেও কাজ করতে হয়। আর কাজ দীর্ঘ হওয়ার কারণে অনেকদিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হয়। তখন হিন্দু বাড়িতেই খেতে হয়। এ অবস্থায় কি আমার জন্য হিন্দু বাড়িতে খাওয়া বৈধ হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

হিন্দু বা বিধর্মীদের তৈরি হালাল খাবার মুসলমানের জন্য খাওয়া জায়েয। আর প্রয়োজনে তাদের বাড়িতেও খানা খাওয়া জায়েয। তাই আপনি কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনে হিন্দু বাড়িতে খানা খেতে পারবেন। তবে তাদের যবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। তাই তাদের বাড়িতে মুরগী ইত্যাদির গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, বিধর্মীদের সাথে হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা ও বন্ধুত্ব হারাম। এটি কুরআন মজীদের সুস্পষ্ট বিধান। তাই কাজের প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে খাওয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাবশত তাদের বাড়িতে খানাপিনা করা ও তাদের দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৫৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একজন আলেমকে এক বয়ানে বলতে শুনলাম যে, জুতা-স্যান্ডেল বাম হাতে...

প্রশ্ন

একজন আলেমকে এক বয়ানে বলতে শুনলাম যে, জুতা-স্যান্ডেল বাম হাতে বহন করতে হবে। ডান হাতে বহন করা উচিত নয়। কেননা ডান হাতে বহন করা আদবের খেলাফ। তার এ কথা কতটুকু প্রমাণসিদ্ধ?

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ কথা সঠিক। ব্যবহৃত জুতা-স্যান্ডেল বাম হাতে বহন করাই উত্তম। কেননা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো ও উত্তম কাজে ডান হাত ব্যবহার করতেন। আর তুলনামূলক নিম্নমানের কাজে বাম হাত ব্যবহার করতেন।

তাছাড়া একটি বর্ণনায় একজন সাহাবী থেকেও এরূপ আমল বর্ণিত হয়েছে।

মুসনাদে আহমাদের একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, আনাস রা. বলেন, আমরা একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের কাছে এ পথ দিয়ে এক জান্নাতী ব্যক্তির আগমন ঘটবে।

বর্ণনাকারী বলেন, ইত্যবসরে এক আনসারী ব্যক্তি আগমন করল, যার দাড়ি থেকে অযুর পানি ঝরছিল। আর তিনি জুতা জোড়া বাম হাতে বহন করে রেখেছিলেন। অতপর তিনি সালাম করলেন।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১২৬৯৭; মিরকাত শরহে মিশকাত ৮/২৬৯; সুনানে আবু দাউদ-বযলুল মাজহূদ, ১৭/২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৫৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমরা জানি যে, মাসবুক অর্থাৎ ইমামের সাথে যে এক বা...

প্রশ্ন

আমরা জানি যে, মাসবুক অর্থাৎ ইমামের সাথে যে এক বা একাধিক রাকাত পায়নি, ইমামের উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হলে ইমামের সাথে তাকেও সাহু সিজদা দিতে হয়। জানতে চাই, এক্ষেত্রে সাহু সিজদার পূর্বে ইমামের সাথে মাসবুকও কি সালাম ফিরাবে? না শুধু সাহু সিজদা দিবে?

উত্তর

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদার জন্য সালাম ফিরাবে না। বরং সে ঐ সময় সালাম না ফিরিয়ে আপন অবস্থায় বসে থাকবে এরপর ইমামের সাথে সাহু সিজদায় শরিক হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৩৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একদিন এশার নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে...

প্রশ্ন

একদিন এশার নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যান। পরে আরো দুই রাকাত পড়ে যথারীতি উভয়দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করেন কিন্তু সাহু সিজদা দেননি। তবে বিষয়টি মনে পড়ার সাথে সাথে নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগে তিনি সাহু সিজদা দেন এবং পুনরায় শেষ বৈঠক করে নামায শেষ করেন। এখন জানার বিষয় হল, উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পরেও কি ইমাম সাহেবের সাহু সিজদা দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেহেতু তিনি সালামের পর নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগেই সাহু সিজদা করেছেন, তাই তা সহীহ হয়েছে এবং ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০৩৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একদিন যোহরের নামায পড়ছিলাম। দুরাকাত পড়ার পর ভুলে তাশাহহুদের...

প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের নামায পড়ছিলাম। দুরাকাত পড়ার পর ভুলে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ ও দুআ পড়ে চার রাকাত মনে করে সালাম ফিরিয়ে নিই। সালাম ফিরানোর পরপরই আমি দ্রুত সুন্নত পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যাই। সুন্নতের জন্য আলাদা নিয়তও বেঁধে ফেলি। কিন্তু এরপরই আমার স্মরণ হয়, আমার যোহরের ফরয পুরা হয়নি। তাই সুন্নতের নিয়ত বাদ দিয়ে মনে মনে ফরযের বাকি দু রাকাতের নিয়ত করে নিই। তারপর সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। এখন জানার বিষয় হল, আমার যোহরের নামায কি আদায় হয়েছে, নাকি পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার যোহরের নামাযটি আদায় হয়নি। তাই তা পুনরায় পড়ে নেওয়া জরুরি। কারণ দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরানোর পর সুন্নতের নিয়তে নামায শুরু করার দ্বারা যোহরের ফরয বাতিল হয়ে গেছে। অবশ্য ঐ নামাযগুলো নফল গণ্য হয়েছে।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬০০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একবার জানাযা নামাযে চার তাকবীরের পর...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একবার জানাযা নামাযে চার তাকবীরের পর ভুলে আরও এক তাকবীর বলে ফেলেন। জানতে চাই, ঐ জানাযা কি আদায় হয়েছে? আর এক্ষেত্রে মুকতাদিদের করণীয় কী?

উত্তর

জানাযা নামাযে চার তাকবীরের বেশি বলা ভুল। তাবে এ ভুলের কারণে নামায নষ্ট হয় না। তাই ঐজানাযা আদায় হয়ে গেছে।

আর ইমাম কখনো চার তাকবীরের বেশি বলে ফেললে মুকতাদিগণ অতিরিক্ত তাকবীরে ইমামের অনুসরণ না করে চুপ থাকবে। অতপর ইমাম যখন সালাম ফেরাবেন তখন মুকতাদিগণও তার সাথে সালাম ফেরাবে।

-শরহুল মুনইয়া ৫৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৯৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমার এক প্রতিবেশী ফল বিক্রেতা। সে আমার কাছ থেকে তার...

প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী ফল বিক্রেতা। সে আমার কাছ থেকে তার ব্যবসার জন্য ৮০০০/- টাকা ঋণ নিয়েছে। এখন তার থেকে ফল কিনলে সে দাম কিছুটা কম রাখে। ঋণ নেওয়ার পর সে দু একবার হাদিয়া স্বরূপ আমার বাসায় ফলও পাঠিয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে সে কখনো এমনটি করেনি। প্রশ্ন হল, আমার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি?

উল্লেখ্য, ঋণ প্রদানের সময় তার সাথে অতিরিক্ত কিছু দেওয়ার কথা হয়নি।

উত্তর

ঋণ প্রদানের আগে আপনাদের মাঝে যদি হাদিয়া আদান-প্রদানের সম্পর্ক না থাকে তাহলে ঋণ দেওয়ার পর তার পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। তদ্রূপ তার থেকে ফল কিনলে ন্যায্য মূল্য দিয়েই কিনতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে এই ছাড় এবং হাদিয়া ঋণের কারণে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যদি কারো সাথে আগে থেকেই হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তার হাদিয়া ও ছাড় গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই।

আবু বুরদা রাহ. বর্ণনা করেন, আমি মদীনায় এসে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা.-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বললেন, তুমি যদি আমার ঘরে একটু তাশরীফ আনতে, আমি তোমাকে ছাতু এবং খেজুর দ্বারা আপ্যায়ন করতাম। তিনি আরো বলেন, কারো কাছে যদি তোমার কোনো পাওনা থাকে এবং সে তোমাকে কিছু খড়, যব কিংবা ঘাস হাদিয়া দেয় তাহলে তুমি তা গ্রহণ করবে না। কারণ এটি সুদের অন্তর্ভুক্ত।

-সহীহ বুখারী ১/৫৩৮; উমদাতুল কারী ১৬/২৭৭; ফাতহুল বারী ৭/১৬৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৪৬৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৯০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদে বলেছেন-واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.উক্ত...

প্রশ্ন

আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদে বলেছেন-

واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.

উক্ত আয়াতে ‘আলইয়াকীন’ শব্দের অর্থ কী? কেউ কেউ এই শব্দের অর্থ মারেফত দ্বারা করে তদানুযায়ী আয়াতের ব্যাখ্যা করে থাকে। তাই হযরত মুফতী সাহেবের নিকট নিবেদন যে, নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে আয়াতের অর্থসহ সঠিক ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আয়াতের অর্থ : আপনি মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন।-সূরা হিজর : ৯৯

আয়াতের ‘আলইয়াকীন’ বলে মৃত্যুকেই বোঝানো হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কিত কিছু দলিল পেশ করা হল :

واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.

আয়াতের ‘আলইয়াকীন’ শব্দের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন আবদুললাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মৃত্যু। মৃত্যুকে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা নামকরণের কারণ হল, মৃত্যু একটি সুনিশ্চিত বিষয়।-তাফসীরে কবীর ১৯/২২১

ইমাম বুখারী রাহ. প্রশ্নোক্ত আয়াতের ইয়াকীন শব্দের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট সাহাবী সালেম ইবনে আবদুল্লাহ রাহ.-এর কথা র্বণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত্যু।-সহীহ বুখারী ২/৬৮৩

হযরত মুজাহিদ রাহ. হযরত কাতাদাহ রাহ. ও হযরত হাসান রাহ. প্রমুখ বিশিষ্ট তাবেয়ীগণ বলেছেন, আয়াতে ইয়াকীন শব্দটি মৃত্যুর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।-দেখুন তাফসীরে তবারী ৭/৫৫৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৬৮; তাফসীরে কুরতুবী ১০/৪২-৪৩

আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২/৮৬৮) বলেছেন, বাতিলপন্থীদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা ইয়াকীন শব্দ দ্বারা মারেফত উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সুতরাং যখন কেউ মারেফত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তার থেকে শরীয়তের বিধি-বিধান রহিত হয়ে যাবে।

(তিনি বলেন) এ ধরনের মতবাদ হল কুফরী, ভ্রষ্টতা ও মূর্খতা। কেননা সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম ও তাদের অনুসারীগণ সকল মানুষ অপেক্ষা আল্লাহকে অধিক ভালোভাবে জানতেন এবং আল্লাহর গুণাবলি ও সর্ববিষয়ে সবচেয়ে বেশি জানতেন। তথাপি তারাই ছিলেন সর্বাধিক ইবাদতকারী ও মৃত্যু পর্যন্ত সকল নেক কাজের প্রতি অগ্রগামী ও অটল-অবিচল। সুতরাং ইয়াকীন শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত্যু।

এমনিভাবে আল্লামা মাহমুদ আলুসী রাহ., আল্লামা কুরতুবী রাহ., ইমাম তবারী রাহ., ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহ., মুফতী শফী রাহ. ও আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী রাহ. প্রমুখ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ব্যাখ্যাকার উক্ত ব্যাখ্যাটিই গ্রহণ করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আয়াতের প্রকৃত অর্থ হল, আপনি মৃত্যু পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের ইবাদত করুন।

সুতরাং যারা ‘আলইয়াকীন’ শব্দের অর্থ মারেফত বলে এবং তাদের তথাকথিত মারেফত হাসিল হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করতে হয় এরপর আর প্রয়োজন নেই-এমন দাবি করে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত এবং এটি নিতান্তই একটি কুফরী মতবাদ।

এ বিষয়ে আরো জানতে দেখুন : তাফসীরে তবারী ৭/৫৫৪; তাফসীরে কুরতুবী ১০/৪২-৪৩; তাফসীরে ফখরে রাযী ১৯/২২১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১৪/৮৭; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৫/৩১৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯১৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় জানাযায় নামাযে বিলম্বে উপস্থিত হওয়ার কারণে এক বা...

প্রশ্ন

অনেক সময় জানাযায় নামাযে বিলম্বে উপস্থিত হওয়ার কারণে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে যায়। এ অবস্থায় ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হওয়ার পর দুআ পড়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যাই। শুরু থেকে পড়ব নাকি ইমামের অনুসরণ করব? কখনো কখনো ইমাম কোন তাকবীরে রয়েছে জানা যায় না। মেহেরবানি করে সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ জামাতে শরিক হলে নিয়ম হল, ইমাম সাহেব সর্বশেষ যে তাকবীর বলেছেন নবাগত ব্যক্তি ঐ সময়ের দুআই পড়বে। আর ইমাম কোন তাকবীর বলেছেন তা জানা না গেলে সানা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে দুআগুলো পড়বে। অতপর ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেললে চার তাকবীরের যে কয়টি সে ইমামের সাথে পায়নি সেই কয় তাকবীরগুলো খাটিয়া জমিন থেকে উঠানোর আগে আগে একাকি পড়ে সালাম ফিরাবে।

-মারাকিল ফালাহ ৩২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮০; শরহুল মুনইয়া ৫৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯১৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ব্যক্তি একজন হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছে এবং এখনো তারা...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি একজন হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছে এবং এখনো তারা বিবাহ বন্ধনে রয়েছে। এ অবস্থায় শরীয়তের দৃষ্টিতে সে কাফির না ফাসিক?

উত্তর

কোনো মুসলমানের জন্য কোনো হিন্দু নারীকে বিবাহ করা বৈধ নয়। কেউ বিবাহ করলৈও তা কার্যকর হবে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের একত্রে বসবাস করা ব্যভিচার হিসাবে গণ্য হবে। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘‘মুশরিক নারীগণ যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমান না আনে ততক্ষণ তাদেরকে বিবাহ করো না।’’ সূরা বাকারা-২২১

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হিন্দু নারীর সাথে ঐ ব্যক্তির বিবাহ সহীহ হয়নি। তাদের একত্রে ঘর-সংসার করাও অবৈধ ও ব্যভিচার হচ্ছে। ঐ মুসলমানের জন্য এক্ষুনি ঐ হিন্দু নারী থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরি। এবং অতীত কর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা ও ইস্তিগফার করা অপরিহার্য কর্তব্য।

-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫; রদ্দুল মুহতার ৩/১৩১, ১৩২; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ৮/১২৩; ইমদাদুল আহকাম ২/২৭২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৯১০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ অবস্থায় কেউ শরীয়তসম্মত কোনো প্রয়োজনে যদি...

প্রশ্ন

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ অবস্থায় কেউ শরীয়তসম্মত কোনো প্রয়োজনে যদি বাইরে যায় তাহলে সে কাউকে সালাম ও এর জবাব দিতে পারবে কি না? আমাদের এখানে কেউ কেউ বলেন যে, তার জন্য সালাম দেওয়াও নাকি সহীহ নয়। আবার কেউ বলেন, সালাম দেওয়া যাবে। তাই এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

ইতেকাফকারী কোন প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে গেলে সালাম বা সালামের জবাবের জন্য না থেমে রাস্তায় চলতে চলতে কিংবা প্রয়োজনীয় কাজটি সারতে সারতে সালাম ও সালামের জবাব দিতে পারবে। এতে তার ইতেকাফের কোন ক্ষতি হবে না। হাদীস শরীফে আছে, আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতেকাফ অবস্থায় (প্রয়োজনে বাইরে গেলে) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে অতিক্রম করতেন তখন হাঁটা অবস্থাতেই ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়ে নিতেন।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৭২) মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/৫২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আহকামে ইতেকাফ, মুফতী তকী উসমানী ৪০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৭৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

বাদ সালাম আরয এই যে, আমি বিগত জানুয়ারি মাসের মাসিক...

প্রশ্ন

বাদ সালাম আরয এই যে, আমি বিগত জানুয়ারি মাসের মাসিক আলকাউসারের প্রশ্নোত্তর বিভাগে ২৩৮৬ নং প্রশ্নের উত্তরে দেখতে পেলাম যে, সেখানে পাঁচ দিনের জন্যও বাইয়ে সালাম সহীহ বলা হয়েছে। উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে বাদায়েউস সানায়ে ও খুলাসাতুল ফাতাওয়ার। সেখানে এ ব্যাপারে শুধু ইমাম কারখী রাহ.-এর মত উল্লেখ আছে। কিন্তু উভয় কিতাবেই এরপরে এর সর্বনিম্ন মেয়াদ এক মাস উল্লেখ করা হয়েছে এবং সে মতটিকে তাসহীহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফিকহের আরো অনেক কিতাবে (যেমন আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ফাতহুল কাদীর ইত্যাদি) দেখলাম, এক মাসের মতটিকেই তাসহীহ করা হয়েছে।

সুতরাং ফতওয়া কোন মতের উপর-সেটি জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।

আর প্রশ্নে শুধু কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য আরো কিছু শর্ত আছে। অতএব কোন সূত্রে বলা হল যে, উক্ত নিয়মে অগ্রিম বেচা-কেনা বৈধ হবে? আর তা বাইয়ে সালামের অন্তর্ভুক্ত হবে?

উত্তর

আপনার ইলমী প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি ঠিকই বলেছেন। অনেক ফকীহ কর্তৃক বাইয়ে সালামের সর্বনিম্ন মেয়াদ এক মাস হওয়ার বিষয়টিকে তাসহীহ করা হয়েছে। তথাপি আলকাউসারে পাঁচ দিন মেয়াদী সালামকে জায়েয বলা হয়েছে। আলকাউসার মূলত বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমাম তহাভী, ইমাম কারখী, ইমাম জাসসাস প্রমুখ কাদীম ফুকাহায়ে কেরামের মতটিকেই অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করেছে। যেটির তাসহীহ করেছেন ছাদরুশ শহীদ ও সাহেবে ফতোয়া সিরাজিয়া প্রমুখ ফকীহগণ। আর এ মতটি গ্রহণ করেছেন এ যুগের আরব আলেম শায়েখ ছিদ্দিক মুহাম্মাদ আমীন আযযারীর এবং হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম প্রমুখ আলেমগণ।

আর হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রাহ. তো এক্ষেত্রে সরাসরি শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী যেকোনো মেয়াদের জন্য বাইয়ে সালামকে জায়েয বলেছেন।

যেহেতু বাইয়ে সালামের সর্বনিম্ন মেয়াদের বিষয়টি মানসূস আলাইহি নয় এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বল্প মেয়াদী বাইয়ে সালামের ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে তাই এক্ষেত্রে এক মাসের কম মেয়াদেও বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার ব্যাপারে যে সকল ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন তাদের কথার উপর আমল করা এবং ফতোয়া দেওয়ার অবকাশ রয়েছে বলে মনে হয়।

তাঁদের মতামত জানার জন্য নিম্নের কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে :

মুখতাছারু ইখতিলাফিল উলামা ৩/৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৮; আলবেনায়া ১১/২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১০৬; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, নবম সংখ্যা ১/৩৮৭, ৬৪৩, ৬৫১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/২১; ইসলামী বেনকারী কী বুনিয়াদে, মুফতী তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম, পৃষ্ঠা : ২০০

আরেকটি বিষয়ে আপনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তা হল, আলকাউসারের ঐ জবাবে বাইয়ে সালামের সকল শর্ত উল্লেখ করা হয়নি। আসলে বাইয়ে সালামের শর্তগুলো এর পূর্বেও আলকাউসারের একাধিক সংখ্যায় ছেপেছে। এখানে যেহেতু প্রশ্নকারীর জানার মূল বিষয় ছিল মেয়াদের বিষয়টি তাই সকল শর্ত উল্লেখ করা জরুরি মনে করা হয়নি। আপনার পর্যবেক্ষণের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৬৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি প্রতি বছরের যাকাত রমযানের শেষ দশকে আদায় করে থাকি।...

প্রশ্ন

আমি প্রতি বছরের যাকাত রমযানের শেষ দশকে আদায় করে থাকি। তখন মুসলমান ভাইদের পাশাপাশি হিন্দুরাও যাকাত চায়। হিন্দুদেরকে যাকাত দিলে কি আমার যাকাত আদায় হবে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

হিন্দু বা কোনো অমুসলিমকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুআয রা.কে লক্ষ করে বলেছেন, তুমি ধনী মুসলমানদের থেকে যাকাত নিয়ে তাদেরই দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ কর।-সহীহ মুসলিম ১/৩৬

এই হাদীস উল্লেখ করে ইমাম কাসানী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনী মুসলমানদের থেকে যাকাত নিয়ে দরিদ্র মুসলমানদেরকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া যাবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬১

আরো দেখুন : রদ্দুল মুহতার ২/৩৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৭; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৬২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একদিন ভুলে যোহরের ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে...

প্রশ্ন

একদিন ভুলে যোহরের ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা না মিলিয়ে রুকু-সিজদা করে ফেলি। পরের তিন রাকাত সাধারণ নিয়মে আদায় করি। অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ি। আর শেষ দু’ রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ি এবং তাশাহহুদ ইত্যাদি পড়ে সালাম ফিরাই। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায পড়ার কারণে আমার নামায নষ্ট হয়েছে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ফরযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা ওয়াজিব। ভুলবশত তা ছুটে গেলে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একটি সূরা মিলিয়ে নেওয়া মুস্তাহাব। আর তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা মিলানো হোক বা না হোক যথাস্থানে না পড়ার কারণে নামায শেষে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সাহু সিজদা করা আবশ্যক ছিল। কিন্তু যেহেতু সাহু সিজদা করা হয়নি তাই ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৭৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে...

প্রশ্ন

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে বসে পড়েছেন। কিন্তু কেউ লোকমা দেয়নি। এরপর চতুর্থ রাকাতে ইমাম সাহেব না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান। কেননা তিনি ভেবেছেন, এটি তৃতীয় রাকাত। মুসল্লিরা শেষ বৈঠকে বসে লোকমা দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে আর ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়ে মুসল্লিরা বৈঠক ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। মাসআলা জানা থাকায় আমি ও কয়েকজন মুসল্লি শেষ বৈঠকে বসেছিলাম। এরপর ইমাম সাহেব যখন পঞ্চম রাকাতের সিজদা করেছেন তখন আমরা সালাম ফিরিয়েছি। এরপর অবশ্য আমরাও সকলের সাথে সতর্কতাবশত পুনরায় আসরের নামায আদায় করে নিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের প্রথম নামায সহীহ হয়েছিল কি না।

উল্লেখ্য, তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব বসার কারণে যে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে আমরা তা আদায় করিনি।

উত্তর

নামাযের শেষ বৈঠক ফরয। তা তরক করলে বা ভুলে ছুটে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যায়। প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম সাহেব শেষ বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে এবং পঞ্চম রাকাতের সিজদার আগ পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে না আসার কারণে ইমাম-মুক্তাদি সকলের নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। যে সকল মুক্তাদি পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়ায়নি তাদেরও নামায হয়নি। কারণ ইমামের নামায ফাসেদ হয়ে গেলে মুক্তাদির নামাযও ফাসেদ হয়ে যায়। সুতরাং উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম ও সকল মুক্তাদির পুনরায় নাযায পড়ে নেওয়া সঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৫২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ব্যক্তি এক ব্যবসায়ী থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি এক ব্যবসায়ী থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১ হাজার গেঞ্জি চার মাস পর হস্তান্তর করার চুক্তিতে ক্রয় করেছে এবং বেচা-কেনার সময়ই তার মূল্য পরিশোধ করে দিয়েছে। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তার টাকার প্রয়োজন হয়েছে। তাই সে অন্য ব্যবসায়ীর নিকট গেঞ্জিগুলো বিক্রি করতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হল, এই বেচা-কেনা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

না, ওই গেঞ্জিগুলো হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা জায়েয হবে না। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

হাকীম ইবনে হিযাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করি। এর কোন পন্থাটি হালাল কোনটা হারাম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি কোনো পণ্য ক্রয় করবে তখন তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বিক্রয় করবে না। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৩১৬)

হযরত উমর রা. বলেন, যখন তুমি বস্ত্ততে সালাম-চুক্তি করবে তখন তা হস্তগত হওয়ার আগে অন্যত্র বিক্রি করবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/৩২)

-মুসনাদে আহমদ ৩/৪০২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/৩২; হেদায়া ৩/৯৭; ফাতহুল কাদীর ৬/১৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮৩০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তিলাওয়াতকারীর করণীয়...

প্রশ্ন

কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তিলাওয়াতকারীর করণীয় কী?

উত্তর

কুরআন মজীদ তিলাওয়াতে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। সালাম দিলে তার বিঘ্ন হবে এই আশঙ্কা থাকলে সালাম দেওয়া গুনাহ। তথাপি কেউ যদি তিলাওয়াতরত ব্যক্তিকে সালাম দেয় তাহলে তিলাওয়াত বন্ধ করে তার উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে উত্তর দিতে চাইলে ওয়াফকের জায়গা পর্যন্ত পড়ে সালামের উত্তর দিবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭-৬১৮, ৬/৪১৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৮২৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ইমাম মুসলিম রাহ. কার অনুরোধক্রমে তার সহীহ মুসলিম সংকলন করতে...

প্রশ্ন

ইমাম মুসলিম রাহ. কার অনুরোধক্রমে তার সহীহ মুসলিম সংকলন করতে আরম্ভ করেন? তাঁর নাম কি ছিল? এবং তার আবেদনের ভাষ্য কীরূপ ছিল? বরাতসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

তারীখে বাগদাদ, তারীখুল ইসলাম লিযযাহাবীসহ নির্ভরযোগ্য একাধিক তারীখ ও সিয়ারগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মুসলিম রাহ. তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আহমদ ইবনে সালামার (মৃত্যু : ২৮৬ হিজরী) অনুরোধে সহীহ মুসলিম সংকলন করতে আরম্ভ করেন। তারীখের ঐ সকল গ্রন্থে তার আবেদন হুবহু উদ্ধৃত হয়নি বলে আমরা তাঁর ভাষ্য কী ছিল তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তবে সহীহ মুসলিমের ভূমিকায় স্বয়ং ইমাম মুসিলমের বক্তব্য থেকে ঐ আবেদনের ভাষ্য সহজে অনুমান করা যায়।

-সহীহ মুসলিম ১/২; তারীখে বাগদাদ ৪/১৮৬; তারীখুল ইসলাম ওয়া ওফায়াতুল মাশাহির ওয়াল আলাম ২১/৪০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৭৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি যায়েদের সাথে ধান বিক্রির জন্য এ মর্মে অগ্রিম চুক্তি...

প্রশ্ন

আমি যায়েদের সাথে ধান বিক্রির জন্য এ মর্মে অগ্রিম চুক্তি করতে চাচ্ছি যে, সে আমাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিবে আর পাঁচ দিন পর আমি তাকে দশ মণ নির্দিষ্ট প্রকার ধান দিব। জানার বিষয় হল, উক্ত সময়ের জন্য অগ্রিম খরিদ লেনদেন করা বৈধ হবে কি?

উত্তর

হ্যাঁ, এত অল্প সময়ের জন্যও কারবারটি জায়েয হবে। কারণ প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বাইয়ে সালাম (অগ্রিম খরিদ) চুক্তি। আর বাইয়ে সালাম চুক্তি স্বল্প মেয়াদের জন্যও জায়েয।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৪; আলমাজমূ ১২/১৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৫৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একবার আমার নামাযে ভুল হয়েছিল, যার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব...

প্রশ্ন

একবার আমার নামাযে ভুল হয়েছিল, যার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। স্মরণ হয়েছে দুআ মাছুরা পড়ার পর। ঐ সময় আমি একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা আদায় করেছি। এরপর যথানিয়মে নামায শেষ করেছি। এখন আমি জানতে চাই, ঐ সময় সাহু সিজদা করাতে নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

উত্তর

না, সমস্যা হয়নি। আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৯১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭৫১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবার রয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্তের।...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবার রয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্তের। তাই অভাব-অনটনের কারণে তারা অনেক সময় মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়। জানার বিষয় হল, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে কি?

উত্তর

যাকাত কোনো অমুসলিমকে দেওয়া জায়েয নয়। তবে নফল সদকা অমুসলিমকেও দেওয়া যায়। সুতরাং উল্লেখিত হিন্দুদেরকে আপনারা নফল সদকার অর্থ প্রদান করতে পারেন।

বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, তাদেরকে (অমুসলিমদেরকে) যাকাত প্রদান করো না, নফল সদকা প্রদান কর।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫১৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭২৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী ও মাসীহ আ. ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি-এ সম্পর্কে...

প্রশ্ন

প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী ও মাসীহ আ. ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি-এ সম্পর্কে সহীহ দলিল জানতে চাই। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন করে জানালে আমাদের জন্য বুঝতে সহজ হবে।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইমাম মাহদী ও মাসীহ আ. একই ব্যক্তি হওয়া সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাজাহর বরাতে একটি হাদীস পেশ করে থাকে যে,

لا مهدي إلا عبيسى بن مريم

অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়ামই হলেন মাহদী। হাদীসটির তাৎপর্য ও ব্যাখ্যা জানতে চাই।

উত্তর

হযরত ঈসা আ. আল্লাহ তাআলার রাসূল। যিনি বনী ইসরাইলের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে দুনিয়ায় তাঁর আগমন হয়েছে। কুরআন মজীদে তাঁর পরিচয় ও ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। পক্ষান্তরে মাহদী রা. এখনও আবির্ভূত হননি। কিয়ামতের পূর্বে তার আবির্ভাব হবে। তিনি নবী হবেন না। আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় থাকবেন। হাদীস শরীফে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ হয়েছে।

কুরআন ও হাদীসের এ সকল দলিল থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হযরত ঈসা আ. ও মাহদী রা. ভিন্ন দুজন ব্যক্তি। তাদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যা বলা হয়েছে তা জানা থাকলে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এখানে কুরআন ও হাদীস থেকে তাদের প্রত্যেকের পরিচয় ও কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।

ঈসা আ.-এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ক) তিনি মারইয়াম রা.-এর পুত্র।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) সে মারইয়ামের পুত্র ঈসা। (সূরা মারইয়াম : ৩৪)

খ) ঈসা আ. আল্লাহ তাআলার কুদরতে পিতা ছাড়া শুধু নিজ মা (মারইয়াম) এর মাধ্যমে জন্মলাভ করেছেন।

কুরআন মজীদে আছে, (তরজমা) তিনি (মারইয়ামকে) বললেন, আমি তো তোমার প্রতিপালকের প্রেরিত তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মারইয়াম বলল, আমার পুত্র হবে কেমন করে, যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি নই কোনো ব্যভিচারিণী নারী? ফিরিশতা বলল, এভাবেই হবে। তোমার রব বলেছেন, আমার পক্ষে এটা একটা মামুলি কাজ। আমি এটা করব এজন্য যে, তাকে মানুষের জন্য (আমার কুদরতের) এক নিদর্শন বানাব এবং আমার নিকট হতে রহমতের প্রকাশ ঘটাব। (সূরা মারইয়াম : ১৯-২১)

গ) ঈসা আ. ছিলেন আল্লাহ তাআলার রাসূল। তিনি বনী ইসরাইলের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) স্মরণ কর সেই সময়কে যখন ঈসা ইবনে মারইয়াম বলেছিল, হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহ তাআলার রাসূল হয়ে এসেছি। (সূরা সাফ্ফ : ৬)

অন্যত্র বলা হয়েছে, হে নবী! আমি তোমার প্রতি ওহী নাযিল করেছি সেইভাবে যেভাবে নাযিল করেছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি। এবং আমি ওহী নাযিল করেছিলাম ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরগণ-ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। (সূরা নিসা : ১৬৩)

ঘ) ঈসা আ.কে আল্লাহ তাআলা আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। আখেরী যামানায় কিয়ামতের কিছুদিন পূর্বে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।

কুরআন মজীদে আছে, যখন আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে সহীহ সালামতে ওয়াপস নিয়ে নিব। তোমাকে নিজের কাছে তুলে নিব। এবং যারা কুফুরি অবলম্বন করেছে তাদের (উৎপীড়ন) থেকে তোমাকে মুক্ত করব। (সূরা আলইমরান : ৫৫)

অন্য আয়াতে আছে, তারা বলে আমরা আল্লাহর নবী ঈসা ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, শুলেও চড়াতে পারেনি। বরং তাদের বিভ্রম হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করেছে তারা এ বিষয়ে সংশয়ে নিপতিত। এবং এ বিষয়ে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের প্রকৃত কোনো জ্ঞানও ছিল না। সত্য কথা হচ্ছে তারা ঈসাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। (সূরা নিসা : ১৫৭)

ঙ) তিনি কিয়ামতের আগে আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিছুদিন দুনিয়ায় অবস্থান করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কসম সেই সত্ত্বার, যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, অতি নিকটবর্তী সময়ে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন মারইয়ামের পুত্র (ঈসা)। (সহীহ বুখারী ১/৪৯০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩৩)

চ) ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণের পর ৪০ বছর দুনিয়াতে থাকবেন।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং ৪০ বছর দুনিয়াতে থাকবেন। (মুসনাদে আহমদ ৬/৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৮৬২৯)

ইমাম মাহদীর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ক) ইমাম মাহদী ফাতেমা রা-এর বংশে জন্মগ্রহণ করবেন্

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী হবে ফাতেমার বংশধর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৮৬)

খ) মাহদী রা.-এর নাম হবে মুহাম্মাদ এবং তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাত্র একদিনও বাকি থাকে তবুও-আল্লাহ তাআলা ঐ দিনকে দীর্ঘ করবেন এবং আমার বংশের এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। তার নাম আমার নামের সাথে এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নামের সাথে মিলে যাবে। (অর্থাৎ তার নাম হবে মুহাম্মাদ ও তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩০)

উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর আগমনের বিষয়টি এবং তার নাম ও বংশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ) মাহদী রা. নবী হবেন না। তিনি হবেন একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন।

আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নেককার লোক বলে অভিহিত করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৭৭)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে মানুষ তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। (অর্থাৎ তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য তার হাতে হাত রেখে শপথ করবে।)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৫)

ঘ) মাহদী রা. সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন এবং দুনিয়াতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী আমার বংশের হবে। তার চেহারা উজ্জ্বল হবে। (তার দ্বারা) গোটা দুনিয়ায় ইনসাফ কায়েম হবে। যেমনিভাবে (ইতিপূর্বে) পুরো দুনিয়ায় অন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তিনি সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৪)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী (খলীফা হওয়ার পর) সাত বছর বেঁচে থাকবেন। এরপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা পড়বে। (সুনানে আবু দাউদ, হা: ৪২৮৬)

উপরে ঈসা আ. ও মাহদী রা. সম্পর্কে কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ থেকে যে তথ্যগুলো দেওয়া হল এগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ঈসা আ. ও মাহদী রা. ভিন্ন দুই ব্যক্তি। কিয়ামতের আগে মাহদী রা.-এর আবির্ভাব হবে এবং ঐ সময় ঈসা আ.ও আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিছুকাল তারা দু’জন একত্রেও থাকবেন।

সুতরাং তাদেরকে এক ব্যক্তি দাবি করার অর্থ, দু’জনের কোনো একজনকে অস্বীকার করা। অথচ ঈসা আ.-এর দুনিয়ায় আসা, তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া এবং কিয়ামতের আগে আবার দুনিয়াতে আগমন করার বিষয়টি কুরআন মজীদ ও মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তদ্রূপ কিয়ামতের আগে ইমাম মাহদীর আগমনও মুতাওয়াতির হাদীসে রয়েছে। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশধর হওয়া, একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হওয়া ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিবরণও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলন করে একটি আলাদা পুস্তিকাই লিখেছেন। যা তার আলহাভী লিলফাতাভী গ্রন্থের ২য় খন্ডে বিদ্যমান রয়েছে। তাতে ২১৩-২৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মোট ৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে। এরপর সুয়ূতী রাহ. লিখেছেন আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন বলেন, ইমাম মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে (৬/৫৬৯) লিখেছেন, আবুল হাসান মানাকেবুশ শাফেয়ী তে বলেছেন, ইমাম মাহদী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হবেন এবং ঈসা আ. তার পিছনে নামায পড়বেন। তার আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

সুতরাং ইমাম মাহদীকে অস্বীকার করার অর্থ, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা। অতএব এ ধরনের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রধান মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা দাবি করেছে। কোনো সময় নিজেকে নবী ও রাসূল, কোনো সময় আদম ও মারইয়াম হওয়ার দাবি করেছে। কখনো যুগের মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছে। এমনিভাবে নিজেকে ঈসা ও মাহদী বলেও দাবি করেছে।

এমন আরো অনেক দাবি সে করেছে যেগুলো কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট মিথ্যা ও ঈমান পরিপন্থী।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজের ব্যাপারে এ ধরনের দাবি করায় সে সময়ের সাধারণ লোকজনও বুঝতে পারত যে, লোকটি মিথ্যাবাদী। এক সময় যখন তাকে বলা হল, মাহদী ও মাসীহ তো দু’জন। আপনি একত্রে ঐ দুজন হলেন কীভাবে? তখন সে ঐ মিথ্যা দাবির সমর্থনে উক্ত বর্ণনাটি পেশ করে। অথচ ইতিপূর্বে কুরআন ও হাদীস থেকে ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর যে পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, তারা দু’জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঈসা বা মাহদী নয়। কারণ ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর বংশ পরিচয়ের সঙ্গে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বংশ পরিচয়ের কোনো মিল নেই।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পিতার নাম গোলাম মুর্তজা। সে পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক এলাকায় ১৮৩৯ মতান্তরে ১৮৪০ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে।

পক্ষান্তরে ঈসা আ. পিতা ছাড়া আল্লাহর কুদরতে নিজ মা মারইয়ামের মাধ্যমে জন্মলাভ করেছেন। তিনি বনী ইসরাইলের নিকট নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। কিয়ামতের আগে আসমান থেকে অবতরণ করবেন।

আর ইমাম মাহদী এখনো দুনিয়াতে আসেননি। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশে জন্মলাভ করবেন। তার নাম হবে মুহাম্মাদ। তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ। তাদের উভয়ের বংশ-পরিচয়, বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদীস থেকে বিস্তারিতভাবে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এ ধরনের দাবি ও বিশ্বাস মিথ্যা এবং ঈমান পরিপন্থী।

প্রসঙ্গ : সুনানে ইবনে মাজার হাদীস

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার দাবি-(ঈসা আ. ও মাহদী রা. এক ও অভিন্ন ব্যক্তি) এর সপক্ষে সুনানে ইবনে মাজাহ-এর যে বর্ণনাটি বলে থাকে, হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ বর্ণনাটিকে শরীয়তের অন্যান্য অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে মুনকার (অগ্রহণযোগ্য) বলেছেন। কেউ কেউ মাওযূও বলেছেন।

হাদীস বিশারদ ইমাম সাগানী রাহ. বলেছেন, উক্ত হাদীসটি মওযূ (জাল)। দেখুন : মীযানুল ইতিদাল ৪/১০৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১২/৩৫১; আলফাওয়ায়িদুল মাজমূআ, শাওকানী ২/১২৭; আলমানারুল মুনীফ ১৪১

লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, সুনানে ইবনে মাজাতেই ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। (দেখুন : সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৮৫, ৪০৮৬, ৪০৮৭)

সুতরাং হাদীস বিশারদগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেটি অগ্রহণযোগ্য বা মওযূ বর্ণনা, তার উপর ভিত্তি করে একটি অকাট্য আকীদাকে কখনো অস্বীকার করা যায় না।

আল্লাহ তাআলা সকলকে ঈমান ও হেদায়েতের উপর অবিচল রাখুন এবং ঈমান বিনষ্টকারী সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন। আমীন।

কাদিয়ানী সম্প্রদায় সম্পর্কে জানার জন্য আরো পড়তে পারেন :

ছুবুত হাজের হেঁ; আয়নায়ে কাদিয়ানিয়্যত, কাযিবাতে মির্জা, কাদিয়ানী কিউ কাফের হ্যায় (উর্দু)। কাদিয়ানী সম্প্রদায় : তত্ত্ব ও ইতিহাস, কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান, কাদিয়ানী মতবাদ ও উলামায়ে ইসলাম।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭২৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক মহিলা তাওয়াফ করার পর তার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়।...

প্রশ্ন

জনৈক মহিলা তাওয়াফ করার পর তার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। ফলে সে এ অবস্থায় সাঈ করে নেয়। জানার বিষয় হল, তার সাঈ কি আদায় হয়েছে? সাঈর জন্য কি হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত?

উত্তর

ঐ মহিলার সাঈ আদায় হয়ে গেছে। কেননা, সাঈর জন্য হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত নয়। নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও উম্মে সালামা রা. বলতেন, কোনো মহিলার বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ এবং তৎপরবর্তী দু’ রাকাত নামায আদায় করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে সে যেন সাফা-মারওয়া সাঈ করে নেয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৪১)

বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এবং অনেক জলীলুল কদর তাবেয়ীগণ এই মত পোষণ করেছেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৪১; মাবসূত, সারাখসী ৪/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭২২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

শুনেছি, যিনি কুরবানী করবেন তার জন্য যিলহজ্বের ১লা তারিখ থেকে...

প্রশ্ন

শুনেছি, যিনি কুরবানী করবেন তার জন্য যিলহজ্বের ১লা তারিখ থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত নখ, চুল না কাটা মুস্তাহাব। কথাটি কি সঠিক? হাদীসে কি এ ধরনের কথা আছে?

উত্তর

হ্যাঁ, কুরবানীকারীর জন্য ১লা যিলহজ্ব থেকে পশু কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত নখ, চুল না কাটার কথা হাদীসে এসেছে।

হযরত উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরবানী করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন যিলহজ্বের প্রথম দিন থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল না কাটে। (সহীহ মুসলিম ২/১৬০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৯১)

উল্লেখ্য, এই বিধান তখনি প্রযোজ্য হবে যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, সহীহ হাদীসে আছে, আনাস রা. বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে, আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি।

-সহীহ মুসলিম ১/১২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭২১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকায় কিছু হিন্দু পড়শী আছে, যারা কুরবানীর গোশত নিতে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কিছু হিন্দু পড়শী আছে, যারা কুরবানীর গোশত নিতে চায়। তাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, হিন্দু বা অন্যান্য বিধর্মীকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয। হাসান বসরী রাহ. ও ফকীহ ইবরাহীম ইবনে খালেদ আবু ছাওর রাহ. বিধর্মীকে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয বলেছেন।

-ফিকহুল ইমাম আবু ছাওর ৪০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৭০৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

শুনেছি, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রা.-এর জন্য জান্নাতে একটি বাঁশের...

প্রশ্ন

শুনেছি, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রা.-এর জন্য জান্নাতে একটি বাঁশের ঘর থাকবে। কথাটি কি সত্য? হাদীস শরীফে কি এমন কোনো বর্ণনা আছে? থাকলে সেই বাঁশ দ্বারা কি আমাদের পরিচিত বাঁশই উদ্দেশ্য, নাকি ভিন্ন কিছু? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

সহীহ হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার হযরত জিবরীল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে খাদীজা রা. আপনার কাছে আসছেন, তাঁর সাথে একটি পাত্র রয়েছে, যাতে তরকারি আছে বা (বর্ণনাকারী বলেন) খাবার অথবা পানীয়। তিনি আপনার কাছে এসে পৌঁছলে তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতে একটি বাঁশের ঘরের সুসংবাদ দিবেন, যেখানে কোনো শোরগোল এবং ক্লান্তি থাকবে না।-সহীহ বুখারী ৫৩৯; সহীহ মুসলিম ২/২৮৪

তবারানী শরীফের একটি রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ফাতেমা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ঘরটি কি (দুনিয়ার) এই বাঁশের তৈরি হবে? উত্তরে তিনি বলেছেন, না; তা হবে মুক্তা ও ইয়াকূত পাথরে গাঁথা বাঁশের দ্বারা তৈরি। (তবারানী, কাবীর, ১/২৭৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ৯/৩৫৮)

সুতরাং উক্ত হাদীসে বাঁশ দ্বারা দুনিয়ার সাধারণ বাঁশ উদ্দেশ্য নয়। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. আল্লামা ইবনুত ত্বীনী রাহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, হাদীসে বাঁশ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফাঁপা প্রশস্ত মণি-মুক্তা।

-ফাতহুল বারী ৭/১৭১; শরহু মুসলিম, নববী ১৫/২০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৬৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কাবলাল জুমআ চার রাকাত সুন্নত কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? যদি...

প্রশ্ন

কাবলাল জুমআ চার রাকাত সুন্নত কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? যদি প্রমাণিত হয় তাহলে এই সুন্নতের হুকুম কী? অনুগ্রহ করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জুমআর নামাযের আগে চার রাকাত নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস, আছার ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা এটি প্রমাণিত।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে যাওয়ার পর চার রাকাত নামায পড়তেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের নামায, যা আপনি নিয়মিত পড়েন? তিনি বললেন, এটি এমন একটি সময়, যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর আমি পছন্দ করি, যেন এ সময় আমার কোনো নেক আমল উপরে ওঠে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এর প্রতি রাকাতে কি সূরা মিলাতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এই নামায কি এক সালামে না দুই সালামে? তিনি উত্তর দিলেন, এক সালামে। (তিরমিযী ১/৭৭; আবু দাউদ ১/১৮০)

ইমাম তিরমিযী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এই হাদীসে উক্ত চার রাকাত নামায নিয়মিত পড়ার কথা আছে। জুমআর দিনসহ সপ্তাহের সকল দিন এই হাদীসের আওতাভুক্ত।

অন্যত্র সহীহ সনদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি জুমআর নামাযের আগে চার রাকাত নামায পড়তেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৪৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪/১১৪)

এভাবে হযরত আবদুর রহমান আসসালামী রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমআর আগে চার রাকাত নামায পড়তে দিতেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/২৪৭; আলআওসাত ৪/১০৫)

আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ‘‘ইলাউস সুনানে’’ বলেছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্যদেরকে এই নামাযের আদেশ করা ও শিক্ষা দেওয়া প্রমাণ করে যে, এটি সাধারণ সুন্নত নয়; বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এজন্যই সাহাবায়ে কেরাম এর উপর নিয়মিত আমল করতেন। যেমন হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম জুমআর নামাযের আগে চার রাকাত নামায পড়তেন। (তহাবী ১/২৩৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪/১১৪; মুসনাদে আহমদ ৩/৪১১)

এছাড়া সুনানে ইবনে মাজায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর নামাযের আগে এক সালামে চার রাকাত নামায পড়তেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৯)

এই বর্ণনার সনদে দুর্বলতা থাকলেও এর বক্তব্য পূর্বে বর্ণিত সহীহ রেওয়ায়েতগুলোর দ্বারা সমর্থিত।

এ সকল হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, অন্যান্য দিনের যোহরের নামাযের মতো জুমআর নামাযের আগেও চার রাকাত নামায রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম আদায় করতেন। এ সকল দলিলের ভিত্তিতেই ফকীহগণ এ নামাযকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।

তিরমিযী ১/৭৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৩৪৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৪৩০; ইলাউস সুনান ৭/১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২; নসবুর রায়াহ ২/২০৬; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫৬৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম...

প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাকে জানানোর পর তিনি বলেন, সমস্যা নেই। তাকবীর কম হলে নামায অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু মৃতের অভিভাবকগণ এতে সন্তুষ্ট না হয়ে পরের দিন অন্য ইমাম এনে কবরকে সামনে নিয়ে নামায পড়েছে। জানার বিষয় হল, প্রথম জানাযার নামায সহীহ ছিল কি না? আর কবরকে সামনে রেখে দ্বিতীয় নামায পড়া উচিত হয়েছে কি না?

উত্তর

জানাযার নামাযে চার তাকবীর বলা ফরয। একটি তাকবীর কম হলেও নামায আদায় হয় না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যেহেতু চতুর্থ তাকবীর না বলেই সালাম ফিরিয়েছেন তাই উক্ত নামায সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে দাফনের পূর্বেই পুনরায় সহীহ তরীকায় নামায পড়ে নেওয়া জরুরি ছিল। যেহেতু পড়া হয়নি তাই পরের দিন কবরকে সামনে নিয়ে জানাযার নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। কেননা জানাযা না দিয়ে দাফন করা হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে কবরকে সামনে নিয়ে জানাযা পড়ার বিধান রয়েছে।

-সহীহ বুখারী ১/১৭৭-১৭৮; জামে তিরমিযী ১/১২১; সহীহ মুসলিম ১/৩০৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮২; ফাতহুল কাদীর ২/৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫৮৬; বাদায়েউস সানায়ে২/৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৯

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫১৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কেউ যদি এইভাবে সালাম দেয়-স্লামু আলাইকুম- তাহলে কী এর উত্তর...

প্রশ্ন

কেউ যদি এইভাবে সালাম দেয়-স্লামু আলাইকুম- তাহলে কী এর উত্তর দিতে হবে? এক ব্যক্তি থেকে শুনেছি, এভাবে সালাম দিলে উত্তর দেওয়া লাগবে না।

উত্তর

এভাবে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। শুদ্ধ উচ্চারণে স্পষ্টভাবে সালাম দিতে হবে। তবে কেউ যদি প্রশ্নোক্ত অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেয় তবুও সালামের উত্তর দিতে হবে।

হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

ইমামের সালাম ফেরানোর আগেই যদি মুক্তাদির তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ...

প্রশ্ন

ইমামের সালাম ফেরানোর আগেই যদি মুক্তাদির তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ সমাপ্ত হয়ে যায় তাহলে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত কী করবে?

উত্তর

প্রথম কথা এই যে, নামাযে দুআ-দরূদ বুঝে-শুনে তারতিলের সাথে পড়া উচিত। এরপরও যদি ইমামের আগে মুক্তাদির দুআ-দরূদ সমাপ্ত হয়ে যায় তাহলে কুরআন-হাদীসের কোনো দুআ জানা থাকলে তা পড়তে থাকবে। যদি জানা না থাকে তাহলে

বারবার পড়তে থাকবে। একই দুআ বারবার পড়তে কোনো বাধা নেই; বরং সুযোগ থাকলে তাই করা উচিত। প্রকাশ থাকে যে, শেষ বৈঠকে শুধু

দুআটিই পড়তে হবে এমন নয়। কুরআন-হাদীসের যে কোনো দুআ অথবা অন্য কোনো ভালো দুআও পড়া যায়। কারণ হাদীস শরীফে আছে-

অন্য হাদীসে আছে

অর্থাৎ সালামের পূর্বে মুসল্লিরা যে দুআ করতে চায় করতে পারে। হাদীস শরীফের একটি দুআ এই

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৫০১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে যদি প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া...

প্রশ্ন

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে যদি প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া অবস্থায় ইকামত শুরু হয়ে যায় তাহলে করণীয় কী? সালাম ফিরিয়ে ফরয নামাযে শরীক হবে, নাকি চার রাকাত পূর্ণ করবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

এ অবস্থায় বাকি দুই রাকাত পড়বে না; বরং বৈঠক পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হবে। জামাত শেষ হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে পূর্বের চার রাকাত সুন্নতও পড়ে নিবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; ফাতহুল কাদীর ১/৪১১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৭৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

গুলশানে হিন্দুদের পরিচালিত একটি ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে তারা শুধু হিন্দুদেরকেই...

প্রশ্ন

গুলশানে হিন্দুদের পরিচালিত একটি ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে তারা শুধু হিন্দুদেরকেই চাকুরি দেয়। একজন মুসলমান সেখানে চাকুরি নেওয়ার জন্য নিজেকে হিন্দু বলে প্রকাশ করেছে। নিজের ও পিতার নাম হিন্দু নাম রেখেছে। ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে বলেছে যে, আমি মুসলমান না, হিন্দু।

জানতে চাই, এর কারণে তার ঈমানের ক্ষতি হয়েছে কি না? এভাবে বলা কতটুকু অপরাধ হয়েছে? লোকটি বিবাহিত।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ‘আমি মুসলমান নই, হিন্দু’ এভাবে বলা এবং হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেওয়া কুফরী কাজ হয়েছে। এভাবে বলার দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই লোকটির জন্য এক্ষুণি তওবা করত পুনরায় কালিমা শাহাদত পড়ে ঈমান আনা জরুরি এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চাকরি নেওয়া জরুরি, যেখানে নিজের ঈমান-আকীদা সংরক্ষণের স্বাধীনতা রয়েছে। ঈমান আনার পর স্ত্রীর সাথে বিবাহ দোহরিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ দু’জন স্বাক্ষীর সামনে নতুন মহর ধার্য করে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৩; জামিউল ফুসুলাইন ২/৩০১; ফাতাওয়া উসমানী ১/৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৬১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একটি ছোট্ট বইয়ে পড়েছি, খালি ঘরে প্রবেশের সময় এভাবে সালাম...

প্রশ্ন

একটি ছোট্ট বইয়ে পড়েছি, খালি ঘরে প্রবেশের সময় এভাবে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব-‘আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন।’ কথাটি কি সঠিক? কোন হাদীস থাকলে বরাতসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হ্যাঁ, কথাটি সঠিক। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘খালি ঘরে বা মসজিদে প্রবেশকালে এভাবে সালাম দিবে-‘আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন।’’

বিখ্যাত তাবেয়ী ইকরিমা রাহ. থেকেও এরূপ বর্ণিত আছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১৩/২২৩; আলআদাবুল মুফরাদ পৃ. ১০৫৫; ফাতহুল বারী ১১/২২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৪৬০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকার একজন আলেম সালাম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ‘আসসালামু...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকার একজন আলেম সালাম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ‘আসসালামু কাবলাল কালাম’ কথাটিকে হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলেও কি কথাটি হাদীস? হাদীস হলে তা কোন কিতাবে আছে উদ্ধৃতিসহ জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

উক্ত বাক্যটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে (বিশুদ্ধ সূত্রে) প্রমাণিত নয়। ইমাম তিরমিযী রাহ. তাঁর জামে তিরমিযীতে উক্ত বাক্যটি উল্লেখ করার পর বলেন,

هذا حديث منكر অর্থাৎ এটি মুনকার রেওয়ায়েত। অতএব বাক্যটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে সহীহ হাদীস হিসেবে বলা যাবে না। তবে সাধারণ আরবী বাক্য হিসেবে বলা যাবে। উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত বাক্যটি হাদীস না হলেও সাক্ষাতের সময় প্রথমে সালাম দেওয়ার বিষয়টি শরীয়তের অন্যান্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৮৪২; আততালখীসুল হাবীর ৪/১৯২১, হাদীস : ৪১৯৯; কাশফুল খাফা ১/৪০২; আলকামিল ফিযযুআফা, ইবনে আদী ৬/২০৪, ৫/২৯১; আলফুতুহাতুর রব্বানিয়া ৫/৩২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৯৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব আছর ও ফজর নামাযের সালামের পর...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব আছর ও ফজর নামাযের সালামের পর কিবলা থেকে ঘুরে মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসেন। এক্ষেত্রে যদি কোনো মাসবুক তার মুখোমুখী থাকে চাই সে যত দূরেই হোক তিনি তার মুখোমুখী বসেন না; বরং ডানে বা বামে একটু ঘুরে বসেন। যখন মাসবুকের নামায শেষ হয়ে যায় তখন তিনি সোজা হয়ে বসেন।

জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেব ও মাসবুকের মাঝে যদি কয়েক কাতার মুসল্লী থাকে যাদের নামায শেষ হয়ে গেছে তাহলে এর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও কি তার মুখোমুখী হয়ে বসা যাবে না? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ইমাম সাহেব ও মাসবুকের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আড়াল থাকলে ইমামের জন্য নামায শেষে ঐ মাসবুকের মুখোমুখী হয়ে বসা জায়েয আছে। তবে এক্ষেত্রেও মুখোমুখী না বসাই উত্তম। আর কোনো আড়াল না থাকলে মাসবুক বা নামাযী ব্যক্তি দূরে থাকলেও তার মুখোমুখী হয়ে বসা মাকরূহ।

হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১৭১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪১; আননাহরুল ফায়েক ১/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩১-৫৩২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কিছু কিছু মসজিদে দেখা যায়, ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবীহ...

প্রশ্ন

কিছু কিছু মসজিদে দেখা যায়, ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবীহ পড়ে। এরপরও এত দ্রুত পড়া হয় যে, রুকু-সিজদাও ঠিকমতো আদায় করা হয় না। আমি জানতে পেরে বললাম, এতো নামাযের নামে প্রহসন। হাদীস শরীফে এভাবে নামায পড়াকে মুরগের ঠোকরের সঙ্গে তুলনা দিয়ে তা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তখন একজন বলল, অনেকে তো নামাযই পড়ে না। তারা তো এই দ্রুত নামাযে শরীক হতে পারছে। তা মন্দ কি?

উত্তর

নামায ইসলামের অন্যতম রুকন। ঈমানের পর নামাযের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিয়ামতের দিন ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। তাই নামায সুন্দরভাবে আদায় করার প্রতি যত্নবান হতে হবে। রুকু-সিজদা এবং অন্যান্য রোকন বেশি দ্রুত আদায় করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদীসে আছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন, এ সময় অপর এক ব্যক্তিও মসজিদে এসে নামায আদায় করল। অতঃপর তাঁর নিকট এসে সালাম করল। তিনি উত্তর দিয়ে বললেন, যাও, নামায পড়। কেননা, তুমি নামায পড়নি। সে গিয়ে নামায পড়ে পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করল। এবারও তিনি বললেন, যাও, নামায পড়। কেননা, তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। এরপর লোকটি আরয করল, সেই সত্ত্বার কসম, যিনি আপনাকে হক দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আমি এর চেয়ে উত্তম নামায পড়তে পারি না। আপনি আমাকে নামায শিক্ষা দিন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, যখন তুমি নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন মজীদ থেকে যা পার পড়বে। এরপর যখন রুকুতে যাবে, পূর্ণ শান্তভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর শান্তভাবে সিজদা করবে। তারপর সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসবে। তুমি পুরো নামায এভাবে আদায় করবে। (সহীহ বুখারী ১/১০৯)

উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, রুকু ও সিজদায় সর্বনিম্ন এক তাসবীহ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা ওয়াজিব। এতটুকু বিলম্ব না করলে, অথবা রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে কিংবা দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে না বসলে ঐ নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব। কেননা, এভাবে নামায পড়লে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এটা যে কোনো নামায আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিমাণ। আর সুন্নত হল রুকু সিজদায় অন্তত তিন তাসবীহ আদায় করা।

আর তারাবীর নামায তো রমযানের রাতের ফযীলতপূর্ণ আমল। রমযানের খায়র-বরকত ও মাগফিরাত হাসিলের জন্য এই নামায দান করা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তাই তা যত্নসহকারে আদায় করা উচিত।

অতএব তারাবীর নামাযে রুকু-সিজদা, কেরাত ইত্যাদি অতি দ্রুততার সাথে আদায় করা অন্যায়। রুকু-সিজদায় সর্বনিম্ন যতটুকু বিলম্ব করতে হয় ততটুকুও যদি না করা হয় তবে ঐ নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং যেভাবে নামায পড়লে তা আদায় হবে, আল্লাহর দরবারে কবুল হবে সেভাবেই পড়া কর্তব্য। এ ব্যাপারে মুসল্লীদেরকে বুঝিয়ে নিতে হবে। প্রশ্নে যে বলা হয়েছে, অনেকে নামাযই পড়ে না, তারা এই উড়ন্ত নামাযে শরীক হতে পারছে এ ধরনের কথা ইবাদতের ক্ষেত্রে চলে না। কেননা, যারা নামায পড়ে না তারা তো গুনাহ করছেই এখন যারা নামায পড়বে তাদের নামাযও যদি যথাযথভাবে না হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে? সুতরাং নামায ভালো করেই পড়তে হবে। এটাই শরীয়তের নির্দেশ।

সহীহ বুখারী ১/১০৯; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ২৯৪; আলবিনায়া ২/২৬৫; মাআরিফুস সুনান ৩/১৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩২৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকায় এক মুসলিম সন্তান গত দুর্গা পুজায় হিন্দুদের সাথে...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক মুসলিম সন্তান গত দুর্গা পুজায় হিন্দুদের সাথে তালে তালে মূর্তিদের নাম নিয়ে তাদের মতো করে নমষ্কার করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায় যে, এগুলো দুষ্টুমি করে করেছি। জানতে চাই, এতে কোনো ক্ষতি হবে কি না?

উত্তর

পূজার সময় সেখানে অংশগ্রহণ করা মূর্তির সামনে তাদের মতো আচরণ করা এবং মূর্তির নাম নিয়ে নমষ্কার জানানো সব কিছুই কুফরি কাজ। দুষ্টুমি করে করলেও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঐ ব্যক্তিকে এক্ষুণি কৃত কর্মের জন্য তওবা-ইস্তেগফার করতঃ পুনরায় ঈমান আনতে হবে। এরপর সে বিবাহিত হয়ে থাকলে বিয়েও দোহরাতে হবে।

আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৩৯৭; শরহুল ফিকহিল আকবার ১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫৩০০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমরা জানি যে, নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু অনেক...

প্রশ্ন

আমরা জানি যে, নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু অনেক সময় সালাম ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি, আমার সোজা পিছনে একজন নামায আদায় করছে। এমতাবস্থায় আমি তার সামনে থেকে সরে যেতে পারব কি? এক্ষেত্রেও নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গুনাহ হবে কি?

উত্তর

কেউ যদি নামাযীর বরাবর সামনে থাকে তাহলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটা নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বিনা প্রয়োজনে এমন না করা উচিত। কেননা, এতে তার মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। আবার কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করারও আশংকা রয়েছে।

সহীহ ইবনে হিব্বান ৬/১২৯; ইলাউস সুনান ৫/৮২; ফাতহুল বারী ১/৬৯৮; উমদাতুল ফিকহ ২/১৩৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/২৫৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৬

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৪৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেকে বলে মাজারকে কবর বলা যাবে না। এতে করে ওলি...

প্রশ্ন

অনেকে বলে মাজারকে কবর বলা যাবে না। এতে করে ওলি আল্লাহদের অসম্মান হয়। আসলে কবর ও মাজারের পার্থক্য কী? কবরকে মাজার শরীফ ও মাজার শরীফকে কবর বলা যাবে কি? মাজার শরীফের উৎপত্তি কখন এবং কোথা হতে? আওলিয়ায়ে কিরামের মাজারকে কবর বললে তাদেরকে অসম্মান করা হয় কি না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে রওজা শরীফ বলা হয় কেন? মাজারকে সিজদা করা, চুমু দেওয়া, মাজারকে ভক্তি দেখিয়ে পিছন হয়ে বের হওয়া, মাজারে গিলাফ চড়ানো এবং মাজারের মধ্যে টাকা-পয়সা ফেলা, মাজারের সামনে গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালানো, আগরবাতি জ্বালানো, গোলাপ জল ছিটানো শরীয়তসম্মত কি না? না হলে ওলি আল্লাহদের মাজার বা কবরকে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও যিয়ারতের পদ্ধতি কী? কুরআন-হাদীসের আলোকে দলিলসহ বিস্তারিত জানালে দ্বীন পালনে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

উত্তর

কবর শব্দের অর্থ দাফনস্থল অর্থাৎ যে স্থানে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। আর মাযার শব্দের অর্থ দুটি : যিয়ারত করা এবং যিয়ারত স্থল। তাই যে কোনো মুসলমানের দাফনস্থলকে যেমন কবর বলা যায় তেমনি যে কোনো মুসলমানের কবরকে আভিধানিক অর্থে মাযারও বলা যায়। কেননা, সকল মুসলমানের কবরই যিয়ারত করা বৈধ। বুযুর্গ, নেককার ও ওলিদের দাফনস্থলকে কবর বলা যাবে না এমন কোনো বিধান শরীয়তে নেই। ওলি-বুযুর্গদের কবরের জন্য কুরআন-হাদীসে কোথাও মাযার শব্দ ব্যবহার হয়নি। হাদীসে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবীদের দাফনস্থলকেও কবর বলা হয়েছে। এমনকি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকেও কবর শব্দেই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘ইহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর লা’নত, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। (সহীহ বুখারী ১/১৮৬) এই হাদীসে নবীদের দাফনস্থলকে কবর বলা হয়েছে।

অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের ব্যাপারেই বলেন, আমার কবরকে তোমরা উৎসবের স্থান বানিও না। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৭৯)

সুতরাং বোঝা গেল, যত সম্মানিত ব্যক্তিই হোক তার দাফনস্থলকে কবর বলা দোষণীয় নয়। তাই ওলি-বুযুর্গদের দাফনস্থলকেও কবর বলা যাবে।

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাফনস্থলকে রওযা বলার কারণ হল, রওযা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওযা দ্বারা উদ্দেশ্য, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’

যেহেতু তাঁর কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওযা আতহার’ (পবিত্র বাগান) বলা হয়।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গ হচ্ছে কবরের সঙ্গে কৃত আচরণ

কবর ইবাদত বা উপাসনার স্থান নয়। কবর সংক্রান্ত যে সব বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন (যথা যিয়ারত, সালাম ও দুআ) সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করা বৈধ নয়। কবরকে সিজদা করা, চুমু খাওয়া, তাতে বাতি জ্বালানো-এগুলো বড় গুনাহ ও শিরকী কাজ। এ বিষয়ে শরীয়তের অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস বরাতসহ পেশ করা হল।

সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কতক উম্মত নিজ নবী ও বুযুর্গদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করছি। (সহীহ মুসলিম ১/২০১)

অন্য এক হাদীসে কবরের উপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনানে তিরমিযী ১/৭৩)

আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা.কে এই ফরমান দিয়ে পাঠালেন যে, কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে এবং কোনো মূর্তি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। (জামে তিরমিযী ১/২০৩)

ফিকহে ইসলামীর প্রসিদ্ধ কিতাব তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৪১ বলা হয়েছে, কবর মুছবে না, কবরে চুমু দিবে না এবং কবরকে স্পর্শ করবে না। কেননা, এটা নাসারাদের রীতি। (সামনে এ সংক্রান্ত আরো বরাত উল্লেখ করা হয়েছে।)

উল্লেখ্য কবরে চুমু খাওয়া, সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরের উপর ইমারত বানানো, গিলাফ চড়ানো, মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ইত্যাদি একদিকে যেমন শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ, অপরদিকে তা কবরবাসী ওলীদের প্রতি চরম অবিচার। কেননা, তাঁরা পুরো জীবন শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন অথচ মৃত্যুর পর তাদরে প্রতি ভক্তি নিবেদনের নামে ওই সব কাজ-ই করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ওলি-বুযুর্গদের পথ-নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ঈমান-আমল ঠিক করা, তাওহীদ ও সুন্নাহ্কে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক-বিদআত ও সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই তাদেরকে প্রকৃত সম্মান করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

কবর যিয়ারতের মাসনূন তরীকা

কবর যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হচ্ছে কবরের কাছে গিয়ে সালাম দিবে।

এরপর কবরকে পিছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে নিজের জন্য এবং কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে। এছাড়া কুরআন মজীদ থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করে কবরবাসীর জন্য ইসালে ছওয়াব করা যেতে পারে।- দেখুন :

(কবর অর্থ :) লিসানুল আরব ১১/৯; আলকামুসুল মুহীত ২/১৬০; তাজুল আরূস ৩/৪৭৮; তাহযীবুল লুগাহ ৭/১৪৮ মাযার অর্থ : লিসানুল আরব ৬/১১১; তাজুল আরূস ৩/২৪৫; (দাফনস'লকে কবর বলা :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; মুসনাদে আহমদ ২/২৪৬, ৩৬৭; কবরকে রওযা বলা : জামে তিরমিযী ২/৭৩; (কবরে নিষিদ্ধ কার্যাবলি :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; জামে তিরমিযী ১/৭৩; সুনানে নাসাঈ ১/২২২; সুনানে আবু দাউদ ২/৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/৪৫২-৪৫৪; রূহুল মাআনী ৮/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৭২; মাদখাল ইবনুল হাজ ৩/২৭৩-২৭৪; ইগাছাতুল লাহফান ১/২২২ (কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি :) সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; শরহু মুসলিম নববী ৭/৪৩; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; শরহুস সুদূর পৃ. ৩১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫-১৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০-৩৪৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২৩২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

লোকমুখে শোনা যায় যে, আহার অবস্থায় সালাম দেওয়া ঠিক নয়।...

প্রশ্ন

লোকমুখে শোনা যায় যে, আহার অবস্থায় সালাম দেওয়া ঠিক নয়। এমনিভাবে আগন্তুক এসে ঘরের লোকজনকে আহার অবস্থায় পেলে সালাম দিতে হয় না। প্রশ্ন হল, এই প্রচলিত কথাগুলো কি সঠিক?

উত্তর

আহারকারী অন্যকে সালাম দিতে পারবে। এ সময় অন্যকে সালাম দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। তদ্রূপ আহারকারীকেও সালাম দেওয়া বৈধ। তবে এ সময় সালাম দেওয়া যদি তার কষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয় তাহলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা, এমন হলে সে অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরূহ হবে।

রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭, ৬/৪১৫; আলমাজমূ’ ৪/৪৬৯; ফাতহুল বারী ১১/১৯-২১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫২২০
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একটি দোকানে আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। তখন জামাতের সময় হয়ে...

প্রশ্ন

একটি দোকানে আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। তখন জামাতের সময় হয়ে গেলে আমাদের একজন দোকানদারকে নামাযের দাওয়াত দিল। আমরা জানি সে মুসলমান। কিন্তু সে উত্তরে বলল, আমি নামায পড়ব না। আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু। তাকে বলা হল, আপনি এটা কেমন কথা বলছেন? সে আরো জোরের সঙ্গে বলল, হাঁ, আমি হিন্দু। যান, যান। প্রশ্ন হল, এ কথা বলার পর সে মুসলমান থাকবে কি না?

উত্তর

‘আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু’ এ ধরনের বাক্য কুফরী কথার অন্তর্ভুক্ত। স্বেচ্ছায় কেউ এমন কথা বললে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব এ কথা বলার কারণে ঐ ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। বিবাহিত হলে বিবাহ ভেঙ্গে গেছে। অতএব এক্ষুণি কালিমা শাহাদাত পড়ে ঈমান আনতে হবে এবং বিয়েও দোহরিয়ে নিতে হবে।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৪৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৫৭, ২৬৮ ও ২৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পরে আসার কারণে...

প্রশ্ন

অনেক সময় জানাযার নামায শুরু হয়ে যাওয়ার পরে আসার কারণে এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে যায়। পরবর্তীতে ইমাম সাহেবের সাথে শরিক হওয়ার পর দুআ পড়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়ে যাই। শুরু থেকে পড়ব নাকি ইমামের অনুসরণ করব? কখনো কখনো ইমাম কোন তাকবীরে রয়েছে জানা যায় না। মেহেরবানি করে সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে উপকার করবেন।

উত্তর

জানাযা নামাযের কিছু অংশ ছুটে গেলে জামাতে অংশগ্রহণের পর ইমাম সাহেব কয় তাকবীর দিয়েছেন এবং কোন দুআ পড়ছেন তা জানা গেলে আগন'ক ঐ সময়ের দুআই পড়বে। আর যদি তা জানা না যায় তাহলে শুরু থেকে ধারাবাহিক নিয়মে ছানা অতপর দুরূদ ও দুআ পড়বে।

অবশ্য ইমামের সালামের পর জানাযা দ্রুত উঠিয়ে নিতে লাগলে খাটনী জমিনে থাকা অবস'ায় অবশিষ্ট তাকবীরগুলো দুআ ছাড়াই আদায় করে নিবে।

নিবে।-মারাকির ফালাহ পৃ. ৩২৬; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৫৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৫৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রচলন আছে যে, কাউকে তার পক্ষ থেকে ডাকতে...

প্রশ্ন

আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রচলন আছে যে, কাউকে তার পক্ষ থেকে ডাকতে হলে বলে দেয় যে, তাকে গিয়ে আমার সালাম বলবে। এরূপ বললে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাকে ডাকা হচ্ছে তখন তিনি চলে আসেন। আবার কখনো সাধারণভাবে কাউকে ডাকতে পাঠালেও সে গিয়ে বলে, অমুকে সালাম জানিয়েছেন। আমার প্রশ্ন এই যে, সালামের এরূপ ব্যবহার জায়েয আছে কি না? এক্ষেত্রে সালামের জবাব দেওয়া জরুরি কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কাউকে ডাকার জন্য ‘অমুক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন’ এভাবে বলা জায়েয হলেও তা ঠিক নয়। কারণ ‘সালাম’ শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। শরীয়তের নির্ধারিত ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোথাও তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাউকে ডাকার জন্য এভাবে সালাম শব্দ ব্যবহার না করে অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

আর এক্ষেত্রে যেহেতু সালাম দেওয়া বা পাঠানো উদ্দেশ্য থাকে না তাই এর জবাব দেওয়াও জরুরি হবে না।

মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১৩/২২১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৪৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কোনো কোনো লোককে দেখা যায়, সালাম দিলে উত্তরে শুধু মাথা...

প্রশ্ন

কোনো কোনো লোককে দেখা যায়, সালাম দিলে উত্তরে শুধু মাথা নাড়ায়। মুখে জওয়াব দেয় না। প্রশ্ন হল, শুধু মাথা নাড়ালেই সালামের জওয়াব আদায় হবে কি না? জানাবেন।

উত্তর

সালামদাতাকে জওয়াব শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। জওয়াব না শুনিয়ে নিম্ন স্বরে দেওয়া যথেষ্ট নয়। আর মৌখিক জওয়াব না দিয়ে শুধু মাথা নাড়ানোর দ্বারা সালামের উত্তর আদায় হয় না। উল্লেখ্য যে, যদি সালামদাতা বধির হয় কিংবা দূরে থাকে যেখানে আওয়াজ পৌঁছবে না। তাহলে মৌখিক জওয়াবের পাশাপাশি ইশারাও করবে। যেন সালামদাতা বুঝতে পারে যে, তার সালামের জওয়াব দেওয়া হয়েছে।

-সূরা নিসা : ৮৬; সহীহ বুখারী ২/৯২৪; জামে তিরমিযী ২/৯৯; উমদাতুল কারী ২২/২৩০; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৩৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদে ইমাম সাহেব তারাবীর নামাযের শেষ বৈঠকে এ পরিমাণ...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে ইমাম সাহেব তারাবীর নামাযের শেষ বৈঠকে এ পরিমাণ বসার পর সালাম ফিরিয়ে দেন যে সময়ে শুধু তাশাহহুদ পড়া যায়। দুরূদ ও দুআ পড়া যায় না। এখন আমার জানার বিষয় হল, তারাবীর নামাযে ইমামের জন্য দরূদ ও দুআ পড়ার কি হুকুম? পড়বে, না পড়বে না।

উত্তর

অন্য নামাযের মতো তারাবীতেও শেষ বৈঠকে দুরূদ ও দুআ পড়া সুন্নত। ইমাম-মুক্তাদী সকলের জন্যই সুন্নত। ইমামের উচিত শেষ বৈঠকে দুআ-দুরূদ এমন ধীর গতিতে পড়া যেন ঐ সময়ের মধ্যে মুক্তাদীদের দুরূদ ও দুআ পড়া সম্ভব হয়। তারাবীহ নামাযে এগুলো পড়তে হবে না এমন কোনো নিয়ম নেই। ইমাম-মুক্তাদী সকলের জন্য তা পড়া সুন্নত।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৬৯; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৪০৮-৪০৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫১৩৫
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের মসজিদে তাবলীগ জামাতের গাস্তের দিন এক ব্যক্তি ঈমান-একিনের কথা...

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে তাবলীগ জামাতের গাস্তের দিন এক ব্যক্তি ঈমান-একিনের কথা শুনার জন্য এক হিন্দু ব্যক্তিকে মসজিদে নিয়ে আসে এবং সে দীর্ঘ সময় মসজিদে বসে দ্বীনী কথা শুনে। এখন আমার জানার বিষয় হল, অমুসলিম ব্যক্তির জন্য কি মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে? এবং উক্ত ব্যক্তি জেনেশুনে অমুসলিম ব্যক্তিকে মসজিদে এনে কি ঠিক কাজ করেছেন? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

দ্বীনী উদ্দেশ্যে হিন্দু বা বিধর্মীকে মসজিদে নিয়ে আসা জায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে,‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু ছাকিফ গোত্রের কাফের প্রতিনিধি দলকে মসজিদে রেখেছিলেন, যাতে তারা কুরআন শুনে দ্বীনের দিকে ধাবিত হয়। অতএব ঐ হিন্দু লোকটিকে মসজিদে নিয়ে এসে সে কোনো অন্যায় করেনি।

-শরহুস সিয়ারুল কাবীর ১/৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭; আলজামিউস সগীর ৪৮২; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৩; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/৮৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৮২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমি একবার জামাতে নামায আদায় করতে গিয়ে মাসবুক হলাম। ইমাম...

প্রশ্ন

আমি একবার জামাতে নামায আদায় করতে গিয়ে মাসবুক হলাম। ইমাম সাহেব নামায শেষে এক দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিলেন। কিন্তু তিনি যে সাহু সিজদা দিবেন এটা বুঝতে না পারার কারণে তার সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বাকি নামায আদায় করতে লাগলাম। পরে তার সিজদা দেওয়া দেখেও আমি আর সিজদা দেইনি। তবে নামায শেষে সাহু সিজদা দিয়েছি। আমার নামায হয়েছে কি? এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী ছিল?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামায শেষে সাহু সিজদা করার কারণে আপনার নামায আদায় হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে (অর্থাৎ ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাড়ানোর পর যখন ইমামকে সাহু সিজদা করতে দেখলেন তখন) আপনার উচিত ছিল ফিরে এসে ইমামের সাথে সিজদা করা এবং ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট নামায যথানিয়মে আদায় করা। উল্লেখ্য, ইমামের উভয় দিকে সালাম ফিরানো শেষ হওয়ার পর মাসবুক ছুটে যাওয়া রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। এটাই উত্তম নিয়ম।

-কিতাবুল আসল ১/২৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৬৩; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৪২; মাজমাউল আনহুর ১/২২২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৭২
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ব্যক্তি যোহরের নামায আদায় করেন। সালাম ফিরানোর পর তার...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি যোহরের নামায আদায় করেন। সালাম ফিরানোর পর তার পাশে নামায আদায়কারী ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি তিন রাকাত পড়েছেন। তখন তিনি বললেন, না। আমি চার রাকাতই পড়েছি। নিজের কথার উপর এখনও অসুস্থ। জানতে চাই, তিনি এখন নিজের উপর ভরসা করবেন, নাকি ঐ ব্যক্তির কথা অনুযায়ী আমল করবেন?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কথা শোনার পরও যদি নিজের কথা অর্থাৎ চার রাকাত পড়া হয়েছে-এ ধারণাই প্রবল থাকে তাহলে নামায পরিপূর্ণ হয়েছে বলেই গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কথা ধর্তব্য হবে না এবং তদনুযায়ী আমল করাও জরুরি হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; হাশিয়াতুত্ত্বাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৬৭
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

আমাদের এলাকায় এ পদ্ধতিতে ধান বেচাকেনা হয় যে, আপনি ১০০০/-টাকা...

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এ পদ্ধতিতে ধান বেচাকেনা হয় যে, আপনি ১০০০/-টাকা দিবেন। ৪ বা ৫ মাস পরে আপনাকে ৩ বা ৪ মণ ধান দেবে। আলেমগণ এভাবে ধান বেচাকেনাকে জায়েয বলেন। আমরা শুনেছি যে, ধান ক্ষেত থেকে এভাবে বিক্রি করা নাকি নাজায়েয। বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন। আমাদের এলাকার ওই পদ্ধতিতে ধান বেচাকেনা শরীয়তসম্মত হবে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওই কারবারটি বাইয়ে সালামের (আগাম খরিদ) অন্তর্ভুক্ত। বাইয়ে সালাম জায়েয হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন-

১. পণ্য ও মূল্য সুনির্দিষ্ট করা। অর্থাৎ ধান বেচাকেনার ক্ষেত্রে ধানের প্রকার, গুণগত মান এবং পরিমাণ সুনির্ধারিত হওয়া এবং সে অনুযায়ী মূল্যও চূড়ান্ত হওয়া।

২. পূর্ণ মূল্য চুক্তির সময়ই হস্তগত করা এবং পণ্য প্রদানের তারিখ ও স্থান নির্ধারিত করে নেওয়া।

৩. কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত না করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত করে আগাম বেচাকেনা করলে চুক্তি নাজায়েয হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নের শোনা কথাটি ঠিক আছে।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, বাইয়ে সালাম তথা আগাম বেচাকেনার ক্ষেত্রেও মূল্য হওয়া উচিত যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ের। অগ্রিম দাম দেওয়ার কারণে মূল্যের মধ্যে অনেক বেশি তফাত করা ঠিক নয়। এটি শরীয়তের ভাষায় গাবনে ফাহেশের অন্তর্ভুক্ত। ১০০০/-টাকার বিনিময়ে ৫/৬ মাস পরে ৩/৪ মণ ধান দেওয়ার বিষয়টি এ পর্যায়ে পড়ে।

-ইলাউস সুনান ১৪/৪১২; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬০; রদ্দুল মুহতার ৫/২১৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৫০৩১
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

জনৈক ব্যক্তি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ...

প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ে ভুলে দাড়িয়ে যায়। দাড়ানোর কিছুক্ষণ পর ভুল বুঝতে পারে এবং সাথে সাথে বসে পড়ে। বসে দরূদ শরীফ পাঠ করে সাহু সেজদা করে। অতঃপর তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ ও দুআ পড়ে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করে। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তির জন্য বসার পর দরূদ শরীফ পড়ে সাহু সেজদা করা ঠিক হয়েছে কি? আর তার নামায আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সেজদা করার কারণে নামায হয়ে গেছে। তবে দাড়ানো থেকে বসার পর দরূদ শরীফ পড়া নিয়মসম্মত হয়নি; বরং সঠিক নিয়ম হল শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর ভুলে দাড়িয়ে গেলে ভুল বুঝামাত্র বসে পড়বে। এরপর তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ ইত্যাদি কিছু না পড়ে সাহু সেজদার জন্য সালাম ফিরাবে এবং সাহু সিজদা করে তাশাহহুদ ইত্যাদি যথা নিয়মে পড়ে নামায শেষ করবে।

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/৮৭

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯৮৯
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম...

প্রশ্ন

একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাকে অবগত করার পর তিনি বলেন, সমস্যা নেই। নামায সহীহ হয়েছে। তাকবীর কম হলে নামায অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবকরা এ কথায় সন্তুষ্ট না হয়ে পরের দিন অন্য ইমাম এনে কবরের উপর নামায পড়েছে। প্রশ্ন হল, জানাযা সহীহ হয়েছে কি না? কবরের উপর দ্বিতীয় জানাযা পড়াতে কোনো অসুবিধা হবে কি না?

উত্তর

চার তাকবীরের কম হলে জানাযা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা নামাযে একটি তাকবীর কম হওয়ায় সেটি আদায় হয়নি। আর পরবর্তীতে কবরকে সামনে নিয়ে যে জানাযা পড়া হয়েছে তা আদায় হয়েছে এবং শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কারণ জানাযা ছাড়া দাফন করা হলে কিংবা আদায়কৃত নামায ফাসেদ হলে দাফনের পরও লাশ পচে যাওয়ার আগে কবরকে সামনে নিয়ে জানাযা পড়া যায়।

-সহীহ বুখারী ১/১৭৭-১৭৮; সহীহ মুসলিম ১/৩০৯; উমদাতুল কারী ৮/১৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৪

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৪৯২৬
তারিখ: ১১-জুলাই-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অমুসলিমকে সাথে নিয়ে ইফতার করা ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমরা অফিসে ৪/৫ জন মিলে ইফতার করি ৷ আমাদের মধ্যে একজন হিন্দু কলগিও আছে ৷ একজন বললেন, তাকে সাথে নিয়ে ইফতার করা ঠিক হবে না ৷ তাই জানতে চাই, হিন্দু ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ইফতার করতে কোনো সমস্যা আছে কি না? এবং তার কাছ থেকে যদি চাঁদা নেই তাহলে ঠিক হবে কি না?
উত্তর
ইসলামী শরয়ীয়তের দৃষ্টিতে অমুসলিমকে সাথে নিয়ে ইফতার করতে কোনো সমস্যা নাই ৷ এবং তার থেকে ইফতারী বাবত চাঁদাও গ্রহন করা যাবে ৷ অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনারা হিন্দু কলিগকে সাথে নিয়ে ইফতার করতে পারবেন ৷ অবশ্য এভাবে সবসময় অমুসলিমকে সাথে নিয়ে ইফতার না করা-ই উত্তম ৷
-বাদায়েউস সানায়ে, ৬/৪৩৯; মুহীতুল বুরহানী,৮/৬৮; ফতওয়ায়ে বাযযাযীয়া, ৬/৩৫৯ ; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫/২৪৭; রদ্দুল মুহতার,৬/৫২৪ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৯১৯
তারিখ: ১১-জুলাই-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

রমযানে বিতর নামাযে মাসবুক হলে করনীয় ৷

প্রশ্ন
হুজুর গতকাল তারাবীর নামায বিশ রাকাত শেষ হওয়ার পর আমার অযু ছুটে যায়৷ অতপর অযু করে আসতে আসতে এক রাকাত শেষ হয়ে যায়৷ ইমাম সালাম ফিরানোর পর অবশিষ্ট রাকাত আদায় করার সময় হাতও উঠাইনি৷ দুআ কুনুতও পড়েনি৷ তবে ইমামের সাথে দুআ কুনুত পড়ে নিয়েছি৷ জানার বিষয় হল, আমার নামায কি হয়েছে? রমযানে বিতরের জামাতে মাসবুক হলে করণীয় কি? শেষ রাকাতে দুআ কনুতের পরে শরীক হলে দুআ কুনূত পড়তে হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সূরতে আপনার নামায সহীহ হয়েছে ৷ বিতর নামাযের জামাতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকাতে সাথে শরিক হলে ইমামের সাথেই দুআ কুনূত পড়ে নিবে। এরপর ছুটে যাওয়া নামায স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করবে। অর্থাৎ অন্য নামাযে মাসবুক হলে যেভাবে আদায় করা হয় সেভাবেই আদায় করবে। এমনিভাবে তৃতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হলে ঐ রাকাতের দুআ কুনূত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই এক্ষেত্রেও পরে আর দুআ কুনূত পড়তে হবে না।
কিন্তু যদি শেষ রাকাতের রুকু না পায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর পড়বে এবং তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত পড়বে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; শরহুল মুনইয়া ৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৯০
তারিখ: ২০-জুন-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

তারাবীহ নামায আট রাকাত নাকি বিশ রাকাত? বিরোধীদের জবাবসহ একটি দালিলিক উত্তর ৷

প্রশ্ন
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব! আহলে হাদীসরা বলে তারাবীহ নামায আট রাকাত ৷ বিশ রাকাতের কোন দলিল নেই ৷ বুখারি শরীফে নাকি আট রাকাতের কথা উল্লেখ আছে ৷ এ বিষয়ে দলিল সহ বিস্তারিত জানালে ভাল হত ৷
উত্তর
তথাকথিত নামধারী আহলে হাদীসদের অজ্ঞতার নিদর্শনাবলির মধ্য থেকে একটি হল, বিশ রাকাত তারাবীহ এর কোন দলিল নেই দাবী করা ৷ দেখুন তারাবীহ নামায বিশ রাকাতের প্রমাণ:
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২; সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১ ৷
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ আনলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত নামায পড়ালেন। (চার রাকাত ইশা বিশ রাকাত তারাবীহ) আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন।
-তারীখে জুরজান-২৭ ৷
হাদীসে একটু দুর্বলতা থাকলেও যদি তার উপর উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল পাওয়া যায় তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
উম্মতের আমল:
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৩ ৷
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল।
-ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬ ৷
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ রাঃ বলেনঃ আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম।
-সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩ ৷
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। আর হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলে লম্বা কেরাতের কারণে লাঠির উপর ভর দিতেন।
-বায়হাকী-৪/২৯৬ ৷
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী রঃ বলেন, হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে ক্বারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন।
-বায়হাকী-৪/৪৯৬ ৷
হযরত আতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি লোকদের অর্থাৎ সাহাবী ও তাবেয়ীগণকে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়তে দেখেছি।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩ ৷
মদীনায় হযরত ওমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হতো। আজো মদীনা মুনাওয়ারায় মক্কা মসজিদে হারামে কুফা বসরায় বিশ রাকাত তারবীহই পড়া হয়। জুমহুরে সাহাবা তাবেয়ী চার ইমামের মাজহাবও বিশ রাকাতের স্বপক্ষে এভাবেই চলতে থাকে। ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বিকার করেননি। শুধু ইংরেজদের দালালরা হাজার বছর পর এসে বিশ রাকাত তারাবীহ কে অস্বিকার করে ৷
১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে বিশ্বের কোন মসজিদে রমজানে আট রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই। না মসজিদে নববীতে কোনদিন আট রাকাত তারাবীহ পড়া হয়েছে। না বাইতুল্লায়। না পৃথিবীর কোন মুসলিম পল্লিতে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।
তাদের অজ্ঞতার আরেকটি নিদর্শন হল, তারাবীহ নামায আট রাকাতের স্বপক্ষে যে, বোখারী শরীফের একটি হাদীস উল্লেখ করে থাকে। হাদীসটি হল, হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, রমযান মাসে নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত ? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রমযান ও রমযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় কলব ঘুমায়না।
-সহীহ বুখারী-১/১৫৪ ৷
তাদের দাবী হল, ১১ রাকাতের মধ্যে আট রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির ৷
এবার আসুন মূল রহস্যে;
উক্ত হাদীস দিয়ে তারাবীহ আট রাকাত প্রমান করা মুর্খতা বৈকিছু নয় ৷ দেখুন তাদের অজ্ঞতা ও মুর্খতার নিদর্শন:
১৷ উক্ত হাদীসে রমযান ও রমযানের বাহিরে এগার রাকাতের কথা উল্লেখ আছে, আর রমযানের বাহিরে কোনো তারাবীহ পড়ার কথা তারাও স্বীকার করে না। সুতরাং উক্ত হাদীস তারাবীর হতে পারে না।
২৷ সাহাবারা হাদীসের উদ্দেশ্য বেশী বুঝতেন, ওমর রাঃ এর জামানায় বিশ রাকাত তারাবীহ জামাতের সহিত হত সমস্ত সাহাবীর ঐক্কমতে। কেহ অস্বীকার করেন নি, আট রাকাতের কথাও বলেন নি। খুদ আয়েশা রাঃ ও অস্বিকার করেন নি ৷ আয়েশা রাঃ এর উক্ত হাদীস যদি
তারাবীর হত অবশ্যয় সাহাবীদের বিশ রাকাত পড়তে বাধা দিতেন বা অস্বীকার করতেন। অতএব একথা স্পষ্ট যে এটি তারাবীহ এর নয় ৷
৩ ৷ এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন। সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা কিভাবে দলিল দেয়া যায়?
৪৷ এই হাদিসটি কে ইমাম বুখারী রঃ কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে এনেছেন। এবং সিহাহ সিত্তার অন্যান্য ইমামগনও তাহাজ্জুদ বা অন্য অধ্যায়ে এনে তারাবীহ এর অধ্যায়ে না এনে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, এই হাদিসটি তারাবীর নয় ।
৫৷ এই হাদিসের শেষাংশে আছে "তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতির পড়ার আগে ঘুমান?" এ বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কিভাবে কল্পনা করা যায় যে, নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতির পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে ৷ নবীজী সাঃ তাহাজ্জুদ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবারা ফজর পড়ার জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন ৷
অতএব এই হাদীস দ্বারা কোনভাবেই তারাবীহ নামায প্রমান করা সম্ভব নয় ৷ যে হাদীস দ্বারা কোন মুহাদ্দীস ফকীহ ইমাম তারাবীহ বুঝেন নি ৷ খুদ হয়রত আয়েশা রাঃ এ হাদীস বর্ননা করা সত্তেও কোনদিন বিশ রাকাতের বিরোদ্ধে কথা বলেন নি ৷ এ হাদীসকে আট রাকাত তারাবীর স্বপক্ষে দলিল পেশ করাকত বড় মুর্খতা ও অজ্ঞতা হতে পারে আন্দাজ করুন ৷ এছাড়া আহলে হাদীস ভাইয়েরা আর একটি সহিহ হাদীসও আট রাকাত তারাবীর স্বপক্ষে দেখাতে পারবে না ৷ সুতরাং পুরা উম্মতের হাজার বছরের আমলকে ডিঙিয়ে মনগড়া আট রাকাতের দাবী ডাষ্টিবিনে নিক্ষেপ করা ছাড়া কোন উপায় নেই ৷
আল্লাহ সকলকে সহীহ বুঝ দান ফরমান ৷ আমীন ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৭৬
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

পরস্পর দুইজন একসাথে সালাম দিলে করনীয় ৷

প্রশ্ন
অনেক সময় আমরা সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে একসাথে সালাম দিয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? আর যদি আগ-পর করে সালাম দেওয়া হয় তখন কি করনীয় ? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
দুইজন পরস্পরকে একসাথে সালাম দিলে প্রত্যেককে অন্যের সালামের জবাব দিতে হবে। আর যদি কারো সালাম আগে হয় অপর জনের
সালাম জবাব দেয়া় আবশ্যক হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৬৬
তারিখ: ১২-জুন-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

'আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু' এমন কথা বললে ঈমান থাকবে কি না?

প্রশ্ন
আমরা কিছুদিন আগে এক চিল্লার জন্য বের হয়েছিলাম ৷ এক মহল্লায় দাওয়াত দেয়ার জন্য বের হওয়ার পর একটি লোককে নামাযের দাওয়াত দেয়ার পর সে উত্তরে বলল, আমি নামায পড়ি না। আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু। আমাদের রাহবার ঐ মহল্লার ই একজন ছিলেন ৷ তিনি তাকে বললেন, আপনি এটা কি বলছেন? সে আবারো বলল, হাঁ, আমি হিন্দু। যান, যান। রাহবার সাহেব পরে বললেন লোকটি তাবলীগ বিরোধী ৷ জানার বিষয় হল, এ কথা বলার কারণে সে মুসলমান থাকবে কি না?
উত্তর
'আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু’ এ ধরনের কথা কুফরী অন্তর্ভুক্ত। এমন কথা কেউ স্বইচ্ছায় স্বজ্ঞানে বললে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায় । অতএব প্রশ্নে বর্নিত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে এ কথা বলে থাকলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। বিবাহিত হলে তার বিবাহ ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং এক্ষুণি কালিমা পড়ে ঈমান আনা অপরিহার্য হয়ে গেছে ৷ এবং বিয়েও দোহরিয়ে নেওয়া আবশ্যক হয়ে পরেছে।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৪৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৫৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৫৭
তারিখ: ২১-মে-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে চুমু খাওয়া লবন, চাউল ইত্যাদি সদকা করা ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব! কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে আমরা অনুতপ্ত হই, সালাম করি, চুমু খাই ৷ আবার অনেকে বলে এক কেজি লবন চাউল ইত্যাদি বা তার সমমুল্য সদকা করতে হয় ৷ এগুলো কতটুকু সঠিক?
উত্তর
কুরআনে মাজীদের মত পবিত্র কিতাব হাত থেকে পড়ে গেলে অনুতপ্ত ভাব হওয়া ভাল লক্ষণ।
তবে এক্ষেত্রে সালাম করা, চুমু খাওয়া বা লবন চাউল ইত্যাদি সদকা করার কোন বিধান নেই। তবু যদি কেউ সুন্নত বা শরীয়তের বিধান মনে না করে এমনিতে সম্মানার্থে কুরআনে মাজীদ চুম্বন করে, তাহলে কোন সমস্যা নেই৷ কেননা হযরত ওমর রাঃ থেকে এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে তিনি কুরআনে কারীম প্রতিদিন সকালে হাতে নিয়ে চুমু খেতেন। আর বলতেন, এটা আমার রবের নির্দেশনা, এবং আল্লাহর প্রেরিত। এমনিভাবে হযরত উসমান রাঃ ও কুরআনে মাজীদকে চুমু খেতেন এবং চোখে বুলাতেন।
রাদ্দুল মুহতার-৫/২৪৬, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৫৯, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-৭/১৪৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮৪৯
তারিখ: ১৪-মে-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অমুসলিমকে সম্ভাষণ করার পদ্ধতি ৷ আদাব ও নমস্কার বলার বিধান ৷

প্রশ্ন
মুফতী সাহেব! আমাদের স্কুল, কলেজ লাইফের অনেক হিন্দু টিচার আছে ৷ তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে আদাব বলে সম্ভাষণ করি ৷ আবার অনেকে নমস্কার বলে সম্ভাষণ করে ৷ যেহেতু আমরা মুসলিমরা সালামের মাধ্যমে সম্ভাষণ জানাই ৷ তাদের ক্ষেত্রে তো সালাম দিতে পারি না ৷ তাই জানার বিষয় হলো, হিন্দু টিচারদের কে আদাব, নমস্কার বলে সম্ভাষণ করা যাবে কিনা? যদি জায়েয না হয় তাহলে দেখা হলে কিভাবে কুশলবিনিময় করব ? এবং তাদেরকে সালাম দেয়ার বিধান কি? জানিয়ে বাধিত করবেন ৷
উত্তর
অমুসলিমদের সাথে উঠা বসা এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের সুুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে । তাদের নীতিমালা মুসলমানদের জন্য গ্রহন করা বৈধ নয় ৷ অতএব হিন্দু টিচারদের সাথে সাক্ষাৎ হলে আদাব, নমস্কার ইত্যাদি বলে তাদেরকে সম্ভাষন করা যাবে না ৷ আদাব শব্দের শাব্দিক অর্থ বিবেচনায় যদিও একটু সুযোগ আছে, কিন্তু কোন ভাবেই তাকে নমস্কার বা
নমস্তে বলা যাবে না। তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য প্রদর্শন হিসেবে তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বা অন্য কোনভাবে যেমন হাতের দ্বারা ইশারা করে কুশলবিনিময় করবে ।
কোন বিধর্মীর সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দেওয়াও বৈধ নয় । সালাম শুধু এক মুসলমান আরেক মুসলমানকেই দিতে পারে। তবে যদি সে আগে সালাম দিয়ে ফেলে, উত্তরে ‘ওয়া আলাইকুম’ বা ইয়াহদীকুমুল্লাহ’ অথবা “আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে।
-সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস: ৬২৫৮; সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস: ২১৬৭; রদ্দুল মুহতার ৯/৫২৭; রহীমীয়া,৬/১২৬ কিফায়াতুল মুফতী ৯/১০৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮১৯
তারিখ: ১২-মার্চ-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সেজদা না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে করনীয় ৷

প্রশ্ন
হুজুর আমার পাশের ব্যক্তি আজ আসর নামায আদায় করতে গিয়ে মাসবুক হয়। ইমাম সাহেব নামায শেষে এক দিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিলেন। কিন্তু তিনি সাহু সিজদা না দিয়ে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বাকি নামায আদায় করতে লাগলেন৷ পরে ইমামের সাথে আর সিজদা দেয়নি। তবে নামায শেষে সাহু সিজদা দিয়েছে৷ জানার বিষয় হলো, ঐ ব্যক্তির নামায হয়েছে কিনা?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায শেষে সাহু সিজদা করার কারণে ঐ ব্যক্তির নামায আদায় হয়েছে। তবে তার উচিত ছিল ইমাম সাহু সেজদা দেয়ার পর ফিরে এসে ইমামের সাথে সিজদা করা এবং ইমামের সালামের পর বাকি নামায আদায় করা।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৪ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৮০৬
তারিখ: ২১-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

নামাযীকে সালামের পর পাশের ব্যক্তি কম পড়েছে বললে নামাযীর করনীয় ৷

প্রশ্ন
হযরত দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন ৷ আমি গতকাল যোহরের নামায আদায় কররে সালাম ফিরানোর পর আমার পাশে নামায আদায়কারী ব্যক্তি আমাকে বলল, আপনি তিন রাকাত পড়েছেন। তখন আমি বললাম , না। আমি চার রাকাতই পড়েছি। এবং আমার তা ই প্রবল ধারনা হচ্ছে ৷
জানতে চাই, আমি কি ঐ ব্যক্তির কথা অনুযায়ী আমল করবো? নাকি আমার ধারনা অনুযায়ী আমল করবো?
উত্তর
প্রশ্নে বর্নিত সূরতে ঐ ব্যক্তির কথা শোনার পরও যদি আপনার নিজের কথার উপর প্রবল ধারণা থাকে যে, আপনি চার রাকাত পড়েছেন, তাহলে আপনার নামায পরিপূর্ণ হয়ে গেছে বলেই গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কথা ধর্তব্য হবে না এবং তদনুযায়ী আমল করাও জরুরি হবে না।
-হাশিয়াতুত্ত্বাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ২৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৯০
তারিখ: ২-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়: আদব-ব্যবহার

তাহাজ্জুদ নামাযের রাকাত সংখ্যা ৷ 

প্রশ্ন
তাহাজ্জুদ নামায কত রাকাত? আমার আম্মু সবসময় বার রাকাত পড়েন ৷ তাহাজ্জুদ নামায নাকি বার রাকাত৷ এটা কতটুকু সঠিক ?
উত্তর
রাসূল সাঃ তাহাজ্জুদ নামায নামায কখনো চার রাকাত পড়তেন, কখনো ছয় রাকাত পড়তেন। কখনো আট রাকাত পড়তেন। কখনো দশ রাকাত পড়তেন।
তাহাজ্জুদের নামায ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া রাসূল সাঃ থেকে সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়।
যেমন,আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, আমি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত পড়তেন।
সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮৷
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতর কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের
কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না।
সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯৷
তবে দশ রাকাতের চেয়ে বেশি পড়া যাবে না, এমন নয়। যেহেতু তাহাজ্জুদ নফল নামায তাই যত বেশি পড়া যায় ততই সওয়াব। তাই আপনার আম্মু বার রাকাত পড়লে কোন কোন সমস্যা নেই, তবে তাহাজ্জুদ নামায বার রাকাত, এমন মনে করা যাবে না ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৬৯
তারিখ: ১৭--২০১৬
বিষয়: আদব-ব্যবহার

খানা খাওয়ার সময় সালাম ও তার জবাব দেয়া ৷

প্রশ্ন
অনেকে বলে খানা খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া ঠিক নয়। এমনিভাবে যারা খানা খাচ্ছে তাদেরকে সালাম দিতে হয় না। জানার বিষয় হলো, এ টা কি সঠিক?
উত্তর
আহার কারি ব্যক্তি খানার মাঝে অন্যকে সালাম দিতে পারবে। সালাম দেওয়া নাজায়েয নয়। এমনিভাবে আহারকারীকেও খানা খাওয়ার মাঝে সালাম দেওয়া বৈধ। তবে যদি আহার কারির সালাম দেওয়া বা জবাব দেওয়া কষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয় তাহলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। এবং এমন হলে সালাম দেওয়া মাকরূহ হবে। এমতাবস্তায় সালামের জবাব দেওয়াও ওয়াজিব নয়৷
রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭, ৬/৪১৫; আলমাজমূ’ ৪/৪৬৯; ফাতহুল বারী ১১/১৯-২১৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৫৩
তারিখ: ৩--২০১৬
বিষয়: আদব-ব্যবহার

হিন্দু বাড়িতে খানা খাওয়া৷

প্রশ্ন
আমার একজন কর্মচারী হিন্দু সে তার বাসায় অনেকদিন থেকে আমাকে দাওয়াত খেতে বলছে কিন্তু আমি বিভিন্ন ভাবে তাকে অজুহাত দিয়ে দাওয়াত গ্রহন করছি না এমতাবস্থায় সে খুব মন খারাপ করেছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, হিন্দুর বাসায় কি আমার দাওয়াত খাওয়া ঠিক হবে?
উত্তর
হিন্দু বা বিধর্মীদের তৈরি হালাল খাবার মুসলমানের জন্য খাওয়া জায়েয। আর প্রয়োজনে তাদের বাড়িতেও খানা খাওয়া জায়েয। তাই প্রয়োজনে হিন্দু বাড়িতে খানা
খেতে পারবেন। তবে তাদের যবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম।
কেননা,সূরা আনআ’মের ১১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিধান দিয়েছেন:
ﻓَﻜُﻠُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﺫُﻛِﺮَ ﺍﺳْﻢُ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻪِ ﻣُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
“অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর বিধানসমূহে বিশ্বাসী হও।”
সুতরাং তাদের বাড়িতে মুরগী ইত্যাদির গোশত খাওয়া থেকে৷বিরত থাকতে হবে।
আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭৪৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393


উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৭৫১
তারিখ: ৩--২০১৬
বিষয়: আদব-ব্যবহার

বেনামাজীকে সালাম দেয়া ও তার বাড়িতে খানা খাওয়া৷

প্রশ্ন
বেনামাজীকে সালাম দেয়া যাবে কি? এবং তার হাতে বানানো বা বেনামাজীর বাড়িতে খাওয়া যাবে কি?
উত্তর
সালাম শুধু অমুসলিমকে দেয়া যায় না। মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৫৷
আর বেনামাজী অমুসলিম নয়। সুতরাং তাকে সালাম দেয়া যাবে।
বেনামাজীর খানা হালাল হলে তার বাড়িতে খানা খাওয়াও জায়েয। খানার সাথে নামাজের সম্পর্ক নেই৷ তবে বেনামাজীকে নামাজের দাওয়াত দেওয়া উচিত৷
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,
১৷ তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে।
২৷ সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
৩৷ সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে, তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
৪৷যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
৫৷ যখন সে অসুস্থ হবে, তুমি তাকে দেখতে যাবে।
৬৷ এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।’
মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৭৮৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৪৬৬৩
তারিখ: ১-নভেম্বর-২০১৬
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের হোলি উৎসবে অংশগ্রহন করা৷

প্রশ্ন
মুসলিম ছেলে মেয়েদের হিন্দুদের হোলি উৎসবে অংশগ্রহণ বিষয়ে বিস্তারিত ফতোয়া জানালে উপকৃত হতাম।
উত্তর
কিছুতেই জায়েজ নয়। হাদীসে পরিস্কার ভাষায় এসেছে, যে ব্যক্তি যাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে। আর হোলী উৎসব এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব। যাতে অংশ গ্রহণ মানেই হল হিন্দুদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় উৎসবকে নিজের উৎসব হিসেবে গ্রহণ করা। যা কিছুতেই বৈধ হতে পারে না। এছাড়াও হোলী উৎসবটির ইতিহাস জানা থাকলে কোন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিই এ নোংরা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না। মূলত হোলী উৎসবের সূচনা হয়, ব্রক্ষ্মার আদেশে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণর কাছে নিজেকে সমর্পণ করলো রাধা। সারারাত কামসূত্রের চৌষট্টি কলা প্রয়োগ করলেন কৃষ্ণ। আবেগাপ্লুত অবস্থায় কৃষ্ণর দাঁত ও নখের আঁচড়ে এবং শ্রী রাধার কুমারিত্ব খণ্ডনে রাধা এমন লালে লাল হলেন যে, সকালে লজ্জায় আর বাইরে বেরোতে পারছিলেন না। সমস্যার সমাধানকল্পে কৃষ্ণ তার অনুসারীদের রঙ দিয়ে খেলার নির্দেশ দিলেন। সবাই যখন রঙে রঞ্জিত তখনই রাধা রক্তাক্ত কাপড় নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলেন এবং বাড়ি ফিরলেন। এই হলো হোলির ইতিহাস। এমন নোংরা কর্মের স্মৃতিবাহী একটি বিধর্মী উৎসবে কোন মুসলিমতো দূরে থাক, কোন ভদ্রলোক যেতে পারে বলেও আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। তাই এ উৎসবে অংশগ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
‎ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
‎ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০৫০
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আদব-ব্যবহার

হিন্দুদের সালামে কী বলব?

প্রশ্ন
হিন্দুদের সালামে কী বলব?
উত্তর
কোনো হিন্দু বা বিধর্মী সালাম দিলে
জবাবে শুধু ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবেন। হাদীস
শরীফে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, কয়েকজন সাহাবী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিকট আরয করলেন, আহলে কিতাব আমাদেরকে সালাম দিয়ে থাকে। আমরা তাদেরকে কীভাবে এর উত্তর দিব?তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ‘‘ওয়া আলাইকুম’’ বলবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭২; আদ্দুররুল মুখতার
৬/৪১২

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ৩০৪৯
তারিখ: ১-জুলাই-২০১৫
বিষয়: আদব-ব্যবহার

অনেক সময় আমরা সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে একসাথে সালাম...

প্রশ্ন
অনেক সময় আমরা সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে একসাথে সালাম দিয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? একজন আলেম বলেছেন, এমন হলে উভয়কেই উত্তর দিতে হবে। তার কথাটি কি ঠিক? আর যেক্ষেত্রে একটু আগ-পর করে সালাম দেওয়া হয় সেক্ষেত্রেও কি উভয়কে উত্তর দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। দুজন পরস্পরকে একসাথে সালাম দিলে প্রত্যেককে অন্যের সালামের জবাব দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কারো সালাম আগে হলে পরবর্তী জনের সালাম জবাব হিসেবে ধর্তব্য হবে। উল্লেখ্য, সালামের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হল, কেউ সালাম দিলে (তিনি বড় ব্যক্তি হোন বা
ছোট) অপর ব্যক্তি স্পষ্টভাবে শুনিয়ে সালামের
জবাব দিবে। এক্ষেত্রে পাল্টা তাকে আবার সালাম
দেওয়া নিয়ম পরিপন্থী কাজ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৪১; শরহে মুসলিম, নববী ১৭/১৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৪৫৪,
৮/৪৬৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া
১৮/৭৮
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
ফতোয়া নং: ২৩৪৮
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়: আদব-ব্যবহার

মাসবুক যদি ইমামের সালামের সাথে একদিকে বা উভয় দিকে সালাম...

প্রশ্ন
মাসবুক যদি ইমামের সালামের সাথে একদিকে বা উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে এর হুকুম কী এবং সিজদায়ে সাহু লাগবে কি না?
উত্তর
মাসবুক যদি ইমামের সালামের পূর্বে অথবা একেবারে সাথে সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে না। আর যদি ইমামের সালামের পর সালাম ফিরিয়ে থাকে তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার
১/৫৯৯
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন