ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৬৭৬৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়:

আমি ঢাকা থেকেই প্রথমেই মদীনা শরীফ যাই, সেখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু...

প্রশ্ন

আমি ঢাকা থেকেই প্রথমেই মদীনা শরীফ যাই, সেখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা মুবারক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ২/৩ দিন অবস্থান করি। তারপর মক্কা শরীফে ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি এবং আমি মদীনা থেকে অর্থাৎ মসজিদে নববী থেকে ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধি। গাড়িতে উঠলে বাঙ্গালী ড্রাইভার আমাকে বলল, মদীনা থেকে ওমরার নিয়ত করলে হবে না। জুল হুলাইফা মসজিদ থেকে ওমরার নিয়ত করতে হবে। আমি তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশের দুইজন বড় আলেমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে দুইজনের দুই রকম মতামত পাই। যেমন, একজন বললেন, যেহেতু মদীনা শরীফ ও মসজিদে নববী মীকাতের আগে তাই আপনার ওমরার নিয়ত করা ঠিক আছে। কিন্তু অন্যজন বললেন, যেহেতু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফ থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন তাই আপনাকে জুল হুলাইফা মসজিদে এসেই ওমরার নিয়ত করতে হবে। এমতাবস্থায় কোনটি সঠিক? উল্লেখ্য, যুলহুলাইফা মসজিদে এসে পুনরায় অযু-গোসল না করে (ইহরাম বাঁধা এবং অযু আগেই ছিল) ওমরার নিয়ত করেছি। যেহেতু আসরের নামাযের জামাত মাসবুক হিসেবে শরিক হই। তাই ইহরামের নামায না পড়েই শুধু নিয়ত করে নিয়েছি। এটা কি ঠিক হয়েছে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য মসজিদে নববী থেকে ইহরাম করা জায়েয় হয়েছে। কেননা হজ্ব ও উমরার জন্য মীকাত এবং মীকাতের আগে যে কোনো জায়গা থেকে ইহরাম করা জায়েয। কারণ ইহরামের জন্য যে মীকাত নির্ধারণ করা হয়েছে তার অর্থ এই যে, ইহরাম ছাড়া ঐ জায়গাগুলো অতিক্রম করা যাবে না। এ অর্থ নয় যে, মীকাতের আগে ইহরাম করা যাবে না।

একাধিক সাহাবী থেকে মীকাতের অনেক আগেই ইহরাম করা প্রমাণিত আছে। ইবনে আবী লাইলা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত আলী রা. মদীনা থেকে ইহরাম করেছেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৮৩২

নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বাইতুল মাকদিস থেকে ইহরাম করেছেন। -প্রাগুক্ত, হাদীস : ১২৮১৯

আবদুল্লাহ ইবনে সালামা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রা.-কে সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াত (তরজমা) আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্ব ও উমরা পূর্ণ করো।)-এর তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হজ্ব ও উমরা পূর্ণ করার অর্থ হল, নিজের ঘর থেকে ইহরাম করা।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৮৩৪; তাফসীরে তবারী ২/২১৩

এ ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., উসমান ইবনে আবীল আস রা., ইমরান ইবনে হুসাইন রা., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., তাউস রাহ.সহ আরো অনেক সাহাবা-তাবেয়ী থেকে মীকাতের আগেই ইহরাম করার কথা বর্ণিত হয়েছে। দেখুন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/৩৫-৪০

সুতরাং যুলহুলাইফা মসজিদে এসেই ইহরাম করতে হবে, মদীনা থেকে ইহরাম করা যাবে না- এ কথা ঠিক নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম করেছেন এটা যে মীকাত এ কথা বোঝানোর জন্য।

অতএব মদীনা থেকে আপনার ইহরাম করা ঠিক হয়েছে। যুলহুলাইফা এসে পুনরায় ইহরামের নিয়ত করার দরকার ছিল না। তবে পুনরায় নিয়ত করার কারণে কোনো সমস্যাও হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৬, ১৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭৭-৪৭৮

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ আদব-ব্যবহার