ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৬৭০৮
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়:

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং...

প্রশ্ন

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাই।

ক) খুতবার জন্য একটি মিম্বর এবং বয়ানের জন্য আরেকটি মিম্বর এভাবে দুটি মিম্বর স্থায়ীভাবে স্থাপন করার শরয়ী হুকুম কী? এটা সুন্নাহসম্মত কি না? আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির পরামর্শে বড় একটি মসজিদে এভাবে দুটি মিম্বর স্থাপন করা হয়েছে। যদি দুটি মিম্বর বানানো ঠিক না হয় তাহলে সাধারণ সময়ের বয়ানের জন্য চেয়ার ব্যবহার করার হুকুম কী?

খ) মসজিদে খুতবার মিম্বর তিন সিঁড়ির চেয়ে বেশি করার কী হুকুম?

গ) জুমআর দিন খুতবার পূর্বে যে বয়ান হয় তার ক্ষেত্রে

إذا دخل أحدكم والإمام على المنبر فلا صلاة ولا كلام .

হাদীসটি প্রযোজ্য হবে কি না? জনৈক আলেম বলেছেন প্রযোজ্য হবে।

উত্তর

ক) এক মসজিদে একাধিক মিম্বর স্থাপন করা ঠিক নয়; বরং এক মসজিদে একটি মিম্বার হওয়াই নিয়মসম্মত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি মিম্বারই স্থাপন করেছেন। উক্ত মিম্বারে তিনি জুমার খুতবা দিতেন এবং লোকদেরকে অন্যান্য সময়ে দ্বীনী তালীম, ওয়ায নসীহত করতেন। খুতবার জন্য পৃথক মিম্বার এবং বয়ানের জন্য ভিন্ন মিম্বার স্থাপন করেননি।

অতএব আপনাদের মসজিদে খুতবার মিম্বার ব্যতিত অন্য মিম্বার স্থাপন করা ঠিক হয়নি।

আর স্থায়ীভাবে অতিরিক্ত মিম্বার বানানো সহীহ না হলেও ওয়াজ-নসীহতের জন্য স্থানান্তরযোগ্য চেয়ার মসজিদে নেয়া যাবে এবং তাতে বসে ওয়ায নসীহত ইত্যাদি করা যাবে। কেননা মসজিদের ভেতর চেয়ারে বসে আলোচনা করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৬

উত্তর : খ) মসজিদের মিম্বার তিন তাক বিশিষ্ট হওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি তিন তাক বিশিষ্ট ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারটি ছোট আকারের ছিল এবং তা তিন তাক বিশিষ্ট ছিল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪১৯)

সুতরাং মসজিদের মিম্বার তিন তাকের বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

উত্তর : গ) প্রশ্নোক্ত হাদীসটি (অর্থ: তোমাদের কেউ যখন এমন সময় মসজিদে আগমন করে যখন ইমাম মিম্বারে আছে তাহলে সে যেন ঐ সময় কোন নামায না পড়ে এবং কথাবার্তা না বলে) জুমার খুতবার সাথে সম্পৃক্ত। খুতবার পূর্বের ওয়ায নসীহত ও আলোচনার সাথে এটি সম্পর্কযুক্ত নয়। উক্ত নিষেধাজ্ঞা যে জুমআর খুতবার সাথে সম্পৃক্ত তা এ সম্পর্কিত অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের খুতবা প্রদান অবস্থায় পাশের ব্যক্তিকে বলল “চুপ থাক ”সে একটি অনর্থক কাজ করল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৩৪

এছাড়া মুআত্তা ইমাম মালেক-এ সা‘লাবা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মিম্বারে বসার পরও কথাবার্তা বলতাম। অতপর যখন খুতবার জন্য আযান হত এবং উমর রা. খুতবা আরম্ভ করতেন তখন আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। -মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ৩৪৩

তাই খুতবার সময়ের উক্ত বিশেষ নিষেধাজ্ঞাকে খুতবার পূর্বের বয়ানের জন্য প্রয়োগ করা ঠিক নয়। তবে যে কোনো দ্বীনী আলোচনা চলাকালে উপস্থিত শ্রোতাদের জন্য তা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং আলোচক ও শ্রোতাদের বলা-শোনায় ব্যঘাত হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা যে জরুরী তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দ্বীনী আলোচনা চলাকালীন কেউ নামায পড়লে বা ব্যক্তিগত ইবাদত করতে চাইলে মজলিস থেকে দূরে করবে। যেন মজমার আলোচনার ব্যঘাত না ঘটে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ আজান-নামাজ