ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৬৫০৬
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়:

আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের কাছে জানতে চাই-১....

প্রশ্ন

আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের কাছে জানতে চাই-

১. মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়া কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

২. দাফনের পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআর সময় হাত তোলাও কি সহীহ? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর

(১) : হাঁ, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার মাথার নিকট সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আলা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে আমার আববা বলেছেন, বৎস! আমি যখন ইন্তিকাল করব আমার জন্য একটি লাহাদ কবর খনন করবে এরপর যখন আমাকে কবরে রাখবে তখন এই দুআ পড়বে بسم الله و على ملة رسول الله (অর্থ) ‘আল্লাহর নামে এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনের উপর আপনাকে দাফন করছি।’ তারপর আমার কবরে মাটি দিয়ে দিবে এবং আমার শিয়রে সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়বে। কেননা আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উক্ত আয়াতগুলো পড়তে শুনেছি। -তাবারানী কাবীর ১৯ : ২২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৬২; আসারুস সুনান, হাদীস ১১০৮

(২) : আর দাফন করার পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআ করার সময় হাত তোলাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ওসমান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং সওয়াল-জওয়াবের সময় অবিচল থাকার দুআ কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩

অন্য হাদীসে এসছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেন আজও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ যুলবিযাদাইন রা.-এর কবরে নেমেছেন, সাথে আবু বকর ও ওমর রা.-ও আছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাফন করার পর কেবলামুখী হয়ে দুহাত তুলে বলছেন- হে আল্লাহ আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান...। -হিলয়াতুল আউলিয়া ১: ১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৯

আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আয়শা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে আমার বাড়িতে ছিলেন। গভীর রাতে তিনি যখন বুঝলেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখন আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাহিরে বের হলেন। আমি তখনও ঘুমাইনি তাই আমি তাঁর পেছনে পেছনে বের হলাম এবং দেখলাম তিনি বাকীতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং (দুআর জন্য) তিনবার হাত তুললেন...। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. বলেন, হযরত আনাস রা. যখন কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুতরাং আপনি তাকে দয়া করেন এবং রহম করেন। হে আল্লাহ! তার কবরকে তার জন্য প্রশস্ত করে দিন এবং তাকে উত্তম রূপে কবুল করে নিন। হে আল্লাহ! সে যদি আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকে তাহলে তার ছাওয়াব আরো বাড়িয়ে দিন আর যদি সে গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৩৪; সুনানে বায়হাকী ৩/১৬২; মাজমাউয যওয়ায়েদ ৩/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ কুরআন