ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৪৭০৫
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৬
বিষয়:

হিজড়াদের জন্য ইসলামের বিধি-বিধান৷

প্রশ্ন
হুজুর,হিজড়ারাও এক ধরণের মানুষ। কিন্তু ওদেরও কি আমাদের মত বিচার হবে? ওদের উপরও কি ইসলামী বিধি-বিধান আছে? আমাদের নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওদের ব্যপারে কী বলেছেন? আমাদের আচরণ ওদের সাথে কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর
আমাদের সমাজব্যবস্থা জোর করে হিজড়াদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। সামাজিক সম্মান,শিক্ষা,কর্ম,বাসস্থান ইত্যাদির নূন্যতম অধিকার এ সমাজ থেকে ওদের দেয়া হয় না। সত্যিকারার্থে ওরা
প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিবন্ধীদের দেয়া সুযোগ-সুবিধাটুকুও ওদের দেয়া হয় না। আমাদের এ অবক্ষয়ের জন্য দায়ী আমাদের কুসংস্কার ও ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব। অথচ ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী হিজড়াগণ সাধারণ মানুষের মতই তাদের পূর্ণ অধিকার লাভ করবে। লেখা-পড়া, শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরী- বাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, উত্তরাধিকার, সম্পদের মালিকানা; ধর্ম কর্ম, সামাজিক ও উন্নয়ন কাজের সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য অধিকার ইসলাম স্বীকার করেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে তারা আলাদা কোনো লিঙ্গ নয়; বরং ইসলাম আধুনিক- বিজ্ঞানের মতই তাদেরকেও
নারী ও পুরুষের অন্তর্ভুক্ত করেছে। যার কারণে ইসলাম তাদের ব্যাপারে আলাদা কোন বিধান আরোপ করার প্রয়োজন মনে করে নি। এ ব্যাপারে ইসলাম একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেটা হল, দেখতে হবে হিজড়ার প্রস্রাব করার অঙ্গটি কেমন? সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? না নারীদের মত গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? গোপনাঙ্গ যাদের মত হবে হুকুম তাদের মতই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালী হয়, তাহলে পুরুষ। যদি নারীর মত হয়, তাহলে নারী। আর যদি কোনোটিই বোঝা না যায়, তাহলে তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। সেই হিসেবেই তাদের উপর শরয়ী বিধান আরোপিত হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে– হযরত আলী রা. রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রসূত বাচ্চা যে পুরুষ নারী তা জানা যায় না তার বিধান কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন যে, সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১২৯৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩০৪০৩৷
এ হাদীসে স্পষ্ট যে,পৌরুষপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ পুরুষদের বিধান প্রযোজ্য হবে। নারীত্বপ্রবণ হিজড়াদের জন্য সুস্থ নারীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। আর দুইয়ের মাঝামাঝি হিজড়াদের জন্য সুস্থ নারীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। সুতরাং ঈমান, ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত এমনকি বিয়ে- শাদীসহ সকল ইসলামী বিধিবিধান তাদের উপর নারী ও পুরুষ হিসেবেই বর্তাবে।
অনুরূপভাবে হালাল হারাম, ন্যায় অন্যায় ও জান্নাত জাহান্নামও তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
হাওয়াশী আল আশবাহ ওয়ান৷নাযায়ির-ইবনু নুজাঈম, ছায়্যিদ আহমাদ হামুভী; ফাতাওয়া আবদুল হাই লাক্ষৌনভী, পৃ ৪০১; ফাতাওয়ায়ে অযীযী,৷শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিছে দেহলভী, পৃ ৫৩৯৷
অতএব, তাদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
বদলাতে হবে। তারাও মানুষ। আমাদের মতই মানুষ। তবে যেমন অনেক মানুষের শারিরিক ত্রুটি থাকে। এটিও তাদের তেমনি একটি ত্রুটি। এ ত্রুটির কারণে তারা মনুষ্যত্ব থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতই তারা আরো বেশি স্নেহ, মমতা ও ভালবাসা পাবার অধিকার রাখে। তাদের ঘৃণা নয়, ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে সম্মানের সাথে বাঁচতে দেয়া
উচিত। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক গোনাহের কাজ।যেকোনো মুসলমানকে গালি দেয়া, তাচ্ছিল্য করা যেমন কবিরা গোনাহ, তেমনি তাদের গালি দেয়া, তাচ্ছিল্য করাও কবিরা গোনাহ।
উল্লেখ্য, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, হিজড়া হলো মনোদৈহিক বৈকল্য বা শরীরবৃত্তিয় ও মনোজাগতিক বিকাশের অপূর্ণতা। এটি হরমোনঘটিত একটি সমস্যা। শরীরের যে হরমোনের কারণে একজন মানুষ পুরুষ বা নারী বৈশিষ্টের অধিকারী হয়,৷সে হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকাই এর প্রধান কারণ। সুতরাং অত্যাধুনিক হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে এবং ক্ষেত্রবিশেষ শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে এর পুরোপুরি স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞ উলামায়ে
কিরামের সুচিন্তিত মতামত, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সরকারের সিদ্ধান্ত, প্রশাসনের সদিচ্ছা ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ জাকাত