ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৪৫৩২
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়:

গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র৷

প্রশ্ন
ইসলামে গান বাজনা কি বৈধ? অনেকে বলে এগুলো নাকি বৈধ ৷ তাই মুফতী সাহেবের নিকট আকুল আবেদন, কুরআন হাদীসের
দলিল সহ সঠিক বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন৷
উত্তর
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ
‎ﻳَﺸْﺘَﺮِﻱ ﻟَﻬْﻮَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ-
‘মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে, যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথা খরিদ করে’ (লুক্বমান ৬) । ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে। আবূ আমির ও আবূ মালিক আল- আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ﻟَﻴَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦْ
‎ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﺃَﻗْﻮَﺍﻡٌ ﻳَﺴْﺘَﺤِﻠُّﻮﻥَ ﺍﻟْﺤِﺮَ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮَ ﻭَﺍﻟْﺨَﻤْﺮَ ﻭَﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑَ
‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা স্বাধীন মানুষের কেনা-বেচা, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য
করবে’।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ﻟَﻴَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻓِﻲْ ﻫﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺧَﺴْﻒٌ
‎ﻭَﻗَﺬْﻑٌ ﻭَﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﺫﻟِﻚَ ﺇِﺫَﺍ ﺷَﺮِﺑُﻮﺍ ﺍﻟﺨُﻤُﻮﺭَ ﻭَﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ
‎ﺍﻟْﻘَﻴْﻨَﺎﺕِ ﻭَﺿَﺮَﺑُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻤَﻌَﺎﺯِﻑِ- ‘অবশ্যই এই উম্মতের
মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’৷ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন৷ পূর্বসূরি আলেমগণ যেমন ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান- বাজনা এবং তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম। যেমন সারেঙ্গী, তানপুরা, রাবাব, মন্দিরা, বাঁশি, ফ্লুট বাঁশি, তবলা ইত্যাদি। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিষেধ বাণীর আওতায় পড়ে। যেমন- বেহালা, একতারা, দোতারা, হার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডেলিন ইত্যাদি। এই যন্ত্রগুলি বরং হাদীছে নিষিদ্ধ তৎকালীন অনেক যন্ত্র থেকে অনেক বেশী মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যাবে, হারামও কঠিন হবে। সেই সাথে গানের কথাগুলি যদি প্রেম-ভালবাসা, রূপচর্চা, যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি বিষয়ে হয় তাহলে তো মুছীবতের কোন শেষ
নেই।
এ কারণেই আলেমগণ বলেছেন, গান ব্যভিচারের বার্তাবাহক এবং অন্তরে কপটতা সৃষ্টিকারী। মোটকথা, বর্তমান কালে গানের কথা, সুর ও বাদ্য এক বিরাট ফিৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিকের এই সর্বগ্রাসী থাবা এখন শুধু গানেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং তা ঘড়ি, ঘণ্টা, ভেঁপু, শিশুখেলনা, কম্পিউটার ও টেলিফোন ও মোবাইলের মাঝেও বিস্তৃত হয়েছে। মনের দৃঢ় সংকল্প না থাকলে এসব থেকে বাঁচা বড়ই দুষ্কর। গান-বাজনার সঙ্গে পরিচিত নয় এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। গানের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কিন্তু কম্বলের লোম বাছা যেমন কষ্টকর তেমনি অসংখ্য হারাম গানের মধ্য হতে দু’একটি হালাল গান বের করাও কষ্টকর। গান দ্বারা যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রশংসা করা হয়, জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হয়, ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, চরিত্র গঠনের চেষ্টা করা হয়, পাপ- পংকিলতা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাহলে বাদ্যযন্ত্রবিহীন এ জাতীয় গান বৈধ হবে। উল্লিখিত ও অনুরূপ বিষয় ছাড়া গান হারাম - অনুবাদক। -তাফসীরে ইবনু কাছীর ৬/৩৩৩ পৃঃ, বুখারী; মিশকাত হাঃ ৫৩৪৩। তিরমিযী হাঃ ২১৮৫; সিলসিলা ছহীহাহ হাঃ ২২০৩, বায়হাক্বী, মিশকাত হাঃ ৪৫০৩; ছহীহুল জামে‘ হাঃ ১৭৪৭-৪৮, তিরমিযী হাঃ ১০০৫; ছহীহুল জামে‘ হাঃ ৫১৯৪। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ ফেইসবুক-মোবাইল