ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৪৫৩১
তারিখ: ১-অক্টোবর-২০১৬
বিষয়:

চেয়ারে বসে নামায আদায় সংক্রান্ত আহকাম৷

প্রশ্ন
ইদানিং শহরের মসজিদ গুলোতে চেয়ারে নামায আদায়কারী মুসল্লীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বরং যতবেশি অভিজাত এলাকা ততো বেশি চেয়ার দেখা যায়৷ সুতরাং আমার জানার বিষয় হলো চেয়ারে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে শরয়ী বিধান কি? প্রমান সহ বিস্তারিত জানতে চাই৷
উত্তর
( ক) কিয়াম রুকু ও সিজদা করতে সক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য নিচে বসে বা চেয়ারে বসে নামায আদায় করা বৈধ নয়৷ করলে নামায হবে না৷ কারন নামাযে দাড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা ফরজ৷ আর ফরজ ছেড়ে দিলে নামায হয় না৷
এমনি ভাবে যে ব্যক্তি কিছু সময় কিয়াম করতে পারে কিন্তু সে তা করে নি অথবা কোন কিছু সাথে টেক লাগিয়ে কিয়াম করতে পারে তা সত্বেও সে বসে নামায আদায় করে তাহলে তাক নামায হবে না৷ তদ্রুপ সাধারন কষ্টের কারনে কিয়াম ছাড়া যাবে না৷ ছাড়লে নামায হবে না৷
(খ) যে ব্যক্তি সিজদা করতে সক্ষম নয় তবে কিয়াম ও রুকু করতে পারে, সে কিয়াম ও রুকু করার পর জমিনে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করবে৷ যদি পরবর্তি রাকাত গুলোতে দাড়াতে সক্ষম হয় তাহলে প্রথম রাকাতের ন্যায় আদায় করবে৷ নতুবা পরবর্তি রাকাত বসে পড়বে৷ যদি প্রথম থেকেই চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু সিজদা করে নেয় তাও বৈধ হবে৷ তবে তা অনুত্তম৷ আর যদি এমন ব্যক্তি শুরু থেকেই জমিনে বসে অথবা চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তাহলে তা বৈধ হবে৷ তবে চেয়ারে না বসে নিচে বসে পড়াই উত্তম পদ্ধতি৷ আর নামাযের মত গুরুত্বপুর্ন ইবাদতটি উত্তম পদ্ধতিতেই আদায় করা উচিত৷
(গ) সে ব্যক্তি সিজদা করতে সক্ষম কিন্তু কিয়াম করতে অক্ষম৷, সে যদি চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করে তাহলে তার নামায হবে না৷ তাকে নিচে বসে পুরোপুরি সিজদা দিয়েই নামায আদায় করতে হবে৷
( ঘ) বসে নামায আদায় করার সময় যে যেভাবে বসলে নামাযী ব্যক্তির সুবিধা হবে সেভাবেই বসবে৷ তাশাহুদ অবস্থার মত বসা আবশ্যক নয়৷
(ঙ) বসে ইশারা করার মাধ্যমে সিজদা করে নামায পড়ার ক্ষেত্রে অন্য কোন জিনিষের উপর সিজদা করার প্রয়েজন নেই, ইশারার মাধ্যমে সিজদা করাই যথেষ্ট ৷ তবে কেউ অন্য কোন বস্তুর উপর সিজদা করলে নামায হয়ে যাবে৷ এমনিভাবে চেয়ারে নামায পড়ার ক্ষেত্রে এমনটি বৈধ৷ তবে এটা জরুরী মনে করা যাবে না, এবং এটা আসল সেজদার অন্তর্ভোক্ত হবে না৷ বরং আসল সেজদা ইশারার দ্বারা আদায় হয়ে যায়৷ হ্যাঁ যদি ঐ বস্তু বসার স্থান হতে এক বিঘত থেকে কম উচু হয় তাহলে বাস্তব সেজদা হিসেবে গন্য হবে৷ অন্যথায় বাস্তব সেজদা হিসেবে গন্য হবে না৷
(চ) চেয়ারে বসে নামায আদায় কারীর পেছনে রুকু সেজদা কারী ব্যক্তির নামায সহীহ হবে না৷
(ছ) বসে বা চেয়ারে নামায আদায় করার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় লক্ষ রাখা উচিত:
(1) রুকু সিজদা উভয় অবস্থায় হাতদ্বয় উরুর উপর থাকবে৷
(2) বসে ইশারার দ্বারা রুকু সিজদা আদায় করার সময় নিতম্বকে জমিন থেকে পৃথক করতে হবে না৷ বরং সিজদার ইশারার চেয়ে রুকুর ইশারার সময় মাথাকে একটু কম ঝুকাবে৷
দলিলঃ
সুরা বাকারা আঃ ২৩৮, সুরা হজ্ব আঃ ৭৭, বুখারী হাঃ ১১১৭,১১১৮, ১১১৯, তিরমিযি হাঃ ৩৬৯, ফতোয়াযে শামি ২/,১৩২, ৫৬৬, ৫৬৭, ৫৬৮, ৫৬৯, তুহফাতুল আহওয়াযি ২/৩০৬, ইলাউস সুনাম ৭/২০৭,২০৩,, নাহরুল ফায়েক ১/৩৩৭, তাতারখানিয়া ২/৬৬৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮৯৷
বর্তমানে চেয়ারে বসে নামায পড়া প্রচলন নিম্ন বর্নিত কারনে নিন্দনিয়:
১৷ অক্ষম ব্যক্তির জমিনে বসে নামায আদায় করা উত্তম বরং এটাই সুন্নত৷ এটাই সাহাবী তাবেয়ীর আমল৷
২৷ যে ব্যক্তি দাড়িয়ে রুকু সেজদা করে নামায আদায় করতে সক্ষম তার জন্য চেয়ারে বসে ফরজ ওয়াজিব নামায পড়া জায়েয নেই৷ নামায হবে৷
৩৷ চেয়ারের কারনে কাতার সোজা করতে সমস্যা হয়৷
৪৷ মসজিদে চেয়ারের আধিক্যতা গির্জা ও ইহুদিদের ইবাদতখানার সাদৃশ্য হয়ে যায়৷ কারন তারা চেয়ারে বসে ইবাদত করে৷
৫৷ নামায বিনয় নম্রতা প্রকাশক ইবাদত, সুতরাং চেয়ারে বসে পড়ার তুলনায় মাটিতে বসে পড়া বেশি নম্রতা প্রকাশ হয়৷
৬৷ নামাযের পর লোকেরা চেয়ারে বসে দুনিয়াবি কথা বার্তা বলতে থাকে৷ যা মসজিদের আদব পরিপন্থী৷
৭৷ চেয়ারে বসে নামায পড়লে অন্তরে অহমিকা ভাব আসার প্রবল সম্ভাবনা থাকে৷
উপর উল্লেখিত বিষয় সমূহের কারনে যতদূর সম্ভব নামাযে চেয়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক৷ চেয়ারে ব্যবহারের উপযুক্ত শুধু ঐ ব্যক্তিই হতে পারে যে জমিনের উপর বসে নামায বসে নামায আদায় করতে পারে না৷
( বিস্তারিত ফতওয়াযে দারুল উলুম) উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ হজ্ব