ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ২৩২৯
তারিখ: ১-ডিসেম্বর-২০১৪
বিষয়:

শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা...

প্রশ্ন
শুনেছি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় দুআ আছে। কিন্তু কোনো বইতে এই দুআগুলো পাইনি। তাই দয়া করে দুআগুলো জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
রুকু থেকে উঠার সময় ইমাম যখন ﺳَﻤِﻊَ ‎ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বলবে তখন মুক্তাদীর
জন্য ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ বলা উত্তম। অতপর
সম্ভব হলে-
‎ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ ﻓِﻴْﻪِ দুআটিও
পড়া উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম যখন ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বলবে তোমরা তখন ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ বল। অন্য এক হাদীসে আছে, রিফাআ ইবনে রাফে রা. বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে যখন ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ‎ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩ বললেন তখন পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল
‎ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ
‎ﻓِﻴْﻪِ নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযে ঐ বাক্য কে বলেছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম ত্রিশের অধিক ফেরেশতা উক্ত দুআর ছাওয়াব নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে, কে আগে তার ছাওয়াব লিখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৯ আর দুই সিজদার মাঝে রাবিবগ
ফিরলী এবং ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ
‎ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ পড়া উত্তম। সুনানে নাসায়ীতে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে ‘রাবিবগফিরলী, রাবিবগফিরলী’ দুআটি পড়ার কথা এসেছে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে তা পড়তেন।- সুনানে নাসায়ী ১/২৯ আবার কখনো তিনি এ দুআটিও পড়তেন-
‎ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ
‎ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৫০ ফযীলতপূর্ণ এ দুআগুলো ইমাম- মুকতাদী সবার জন্য নফল-ফরয সব নামাযেই পড়া উত্তম। আর নফল ও তাহাজ্জুদে উপরোক্ত দুআ ছাড়াও আরো কিছু দুআ পড়ার কথা হাদীস শরীফে এসেছে। যেমন-রুকু থেকে উঠে নিম্নোক্ত দুআগুলো পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তেন-
‎ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ، ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ
‎ﻭﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ
‎ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺑَﻌْﺪُ অন্য বর্ণনায় এ দুআটি পড়ার কথাও
এসেছে-
‎ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ
‎ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ
‎ﺑَﻌْﺪُ ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻃَﻬِّﺮْﻧِﻲ ﺑِﺎﻟﺜَّﻠْﺞِ ﻭَﺍﻟْﺒَﺮَﺩِ،
‎ﻭَﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﺩِ ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻃَﻬِّﺮْﻧِﻲ ﻣِﻦَ
‎ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ ﻭَﺍﻟْﺨَﻄَﺎﻳَﺎ، ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻨَﻘَّﻰ ﺍﻟﺜَّﻮْﺏُ
‎ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺳَﺦِ -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৬ আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এ দুআটিও এসেছে- ‎ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻣِﻞْﺀُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ‎ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ، ﻭَﻣِﻞْﺀُ ﻣَﺎ ﺷِﺌْﺖَ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ
‎ﺑَﻌْﺪُ، ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺠْﺪِ، ﺃَﺣَﻖُّ ﻣَﺎ ﻗَﺎﻝَ
‎ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ، ﻭَﻛُﻠُّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﻋَﺒْﺪٌ: ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ ﻟَﺎ ﻣَﺎﻧِﻊَ ﻟِﻤَﺎ
‎ﺃَﻋْﻄَﻴْﺖَ، ﻭَﻟَﺎ ﻣُﻌْﻄِﻲَ ﻟِﻤَﺎ ﻣَﻨَﻌْﺖَ، ﻭَﻟَﺎ
‎ﻳَﻨْﻔَﻊُ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﺪِّ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﺠَﺪُّ -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪৭৭ ফকীহগণের ভাষ্যমতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দীর্ঘ দীর্ঘ দুআগুলো সাধারণত তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পড়তেন। তাই এ দুআগুলো বিশেষভাবে নফল নামাযে পড়া উত্তম। প্রকাশ থাকে যে, এসব দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ ইমাম জাযারী রাহ. কৃত কিতাবটি পড়া যেতে পারে। এটি দুআর একটি নির্ভরযোগ্য কিতাব।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ আজান-নামাজ